লেখক যত্ন নিয়ে দেখিয়েছেন যে ইংরেজ আসার আগে মোগল আমলে ভারতে বিচারপদ্ধতি কী ছিল ও কলোনিয়াল শাসক তাতে কী কী পরিবর্তন করল। উনি বিস্তারিত আলোচনা করে দেখাতে চেয়েছেন যে হিন্দু আইন কতটুকু শাস্ত্র মেনে তৈরি হয়েছিল বা তার কোন অংশটুকু সাহেবরা নিজেদের স্বার্থে বিকৃত করেছে এবং তার ফলে মেয়েরা এবং বিধবারা তাদের প্রাচীন প্রথায় যতটুকু সম্পত্তির অধিকার ছিল তাও হারিয়েছে। এবং সর্বশেষে এই আইন প্রণয়নে এবং তাঁর সংশোধনে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ঠিক কী ছিল। ... ...
ইব্লিসের আত্মদর্শন। ছয় দশক আগে প্রথম প্রকাশে বাংলা কবিতামহলকে চমকিত করেছিল। সার্থক দীর্ঘ কবিতার অনেক উদাহরণ বাংলা কবিতায় থাকলেও সে কবিতাটি তার প্রকরণগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখনও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক৷ আমরা ইব্লিসের পাঠকরা এই কবিতায় মহাকাব্যিক সেই প্রবণতার সন্ধান পাই যা আধুনিক উপন্যাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য৷ লিখছেন রাজীব সিংহ ... ...
ইসমত চুগতাই। এমন উচ্চারণ তাঁকে মানায়। জীবনে ও সাহিত্যে মেরুদণ্ড অটুট থেকেছে তাঁর। পর্দা মানতেন না। প্রশ্নহীন আনুগত্য তাঁর স্বভাবে ছিল না। ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থান, দেশভাগের নিদারুণ বাস্তব ছাড়াও ইসমতের সংবেদী দৃষ্টি ছুঁয়ে গেছে প্রান্তিক মানুষের একদিন-প্রতিদিন। একগুচ্ছ গল্প। বাংলা তরজমা এমনই সাবলীল, পাঠকের মনে হবে না অনুবাদ পড়ছেন। তরজমাকার সঞ্চারী সেন। পড়লেন তৃষ্ণা বসাক ... ...
‘আমার জার্মানি’ বইটা পড়ে শেষ করার পর খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ বলেন যে আমি এই বইটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করেছি তাহলে তাঁকে বলতেই হবে যে ক্ষমা করবেন মহোদয়, আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হচ্ছে’, কারণ ওটা সম্ভব নয়। এ বই পড়তে হবে থেমে থেমে , রসিয়ে রসিয়ে, অনুভব করে করে, প্রত্যেকটা অনুচ্ছেদের মর্ম অনুধাবন করে। ... ...
হাট। বাঙলার গ্রামীণ ও গঞ্জ-সংস্কৃতির এক দুরন্ত জমায়েত। হরেক কিসিমের সামগ্রী কেনা-বেচা সেই বিচিত্র ক্রিয়াকাণ্ডের একটি অংশমাত্র। তবেই না হাট ঘিরে এমন অজস্র প্রবচন মুখে মুখে ফেরে বাংলা ভাষায়। নদীয়ার হাটের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে বোনা এক রঙিন সাংস্কৃতিক ছবি। একটি বই। পড়লেন রামামৃত সিংহ মহাপাত্র ... ...
জীবনানন্দ দাশের অসংখ্য অপ্রকাশিত রচনার পুনরুদ্ধারের প্রকল্পে তন্নিষ্ঠ গবেষক ভূমেন্দ্র গুহের সহযোগী ছিলেন গৌতম মিত্র। সে অভিজ্ঞতাজনিত বোধ ও ভাবনা থেকে নির্মিত দু-খণ্ডের একটি বই। পড়লেন কবি যশোধরা রায়চৌধুরী। ... ...
বিজ্ঞানী অমলকুমার রায়চৌধুরীর সমীকরণের সূত্র ধরেই ১৯৬৫ সালে রজার পেনরোজ তাঁর বিখ্যাত উপপাদ্য প্রকাশ করেন। তাকে খুব সহজ করে বলা যায় যে বস্তুর নিজের উপর মাধ্যাকর্ষণ যদি যথেষ্ট বেশি হয়, তাহলে তার অন্তিম পরিণতি অবশ্যই কৃষ্ণগহ্বর। এ বছর এই কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণার জন্যই পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন রজার পেনরোজ, আন্দ্রেয়া ঘাজ ও রেইনহার্ড গেনজেল। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সচিব, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়। ... ...
তিন নবীন কবির তিনটি বই। ‘এই প্রজন্মের নারীকবিদের কালো কবিতা এসব। মুখ গুঁজে বসে থাকতে হয় মেয়েদের এই যাপনের মধ্যে।’ পাঠ করে লিখছেন কবি চৈতালী চট্টোপাধ্যায়। ... ...
ফেসবুক। দুনিয়া জুড়ে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২২৭ কোটি। ভারতে ২২ কোটি। মানুষের মনের জমিন দখলে ব্যস্ত, নব্য উপনিবেশবাদী ক্রিয়াকাণ্ডের দোসর এই প্ল্যাটফর্মটির আসল চেহারা প্রকাশের লক্ষ্যে লেখা একটি বই। পড়লেন সাংবাদিক রজত রায় ... ...
দুই লেখক। দুটি সংকলন। একটি আখ্যান সিরিজ। একটি গল্পসমগ্র। উঠে আসে সমাজ ও সামাজিক ধ্বস্ততার ছবি। যাপনের অনুপুঙ্খতায় শহুরে, আধা-শহুরে মধ্যবিত্ত জীবন। পড়লেন সাত্যকি হালদার ... ...
স্টিফেন ভাইনবার্গ। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী। তাঁর লেখা বিজ্ঞানের ইতিহাস। কখনও কৌতুক, কখনও বিদ্রূপ মেশানো তাঁর লেখার ভঙ্গি চমৎকার। সাবধান করেছেন, প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের সমস্ত ধারণাই ঠিক নাও হতে পারে। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কর্মসচিব, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ... ...
প্রত্যেক গানের এক বা একাধিক গল্প থাকে। কখনও তা লিখিত হওয়ার গল্প, কখনও সুরারোপের, কখনও-বা পরিবেশনের। আবার যেসব গান কিংবদন্তি হয়ে যায় সেগুলি ঘিরে গড়ে ওঠে নানা কাহিনি। তেমনই গল্পের সমাহারে তৈরি একটি বই। পড়লেন শুভদীপ সাহা। ... ...
গোগা। একটা গল্প। যা আসলে একটা আশ্চর্য উপন্যাস শুরু হওয়ার (অথবা শুরু না-হওয়ার) ঘোষণামাত্র। ইস্তেহার। প্যামফ্লেট। শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের মুখপত্র ‘এই দশক’ পত্রিকায় প্রকাশিত ১৯৭০ সালে। রচনা— রমানাথ রায়। নিবিড়পাঠে কবি ও গল্পকার সুদীপ বসু ... ...
লেখক সঠিকভাবে দেখিয়েছেন যে বৃটিশ কলোনিয়ালিস্টদের ভারত দখল করার লড়াইয়ে ক্রমশঃ দিল্লির মুঘল, দাক্ষিণাত্যের টিপু আদি মুসলিম শাসক ও বঙ্গে সিরাজদৌল্লাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাদের কাছে মুসলিম শাসকেরা ছিল ভবিষ্যতের কাঁটা। সেই মানসিকতায় এশিয়াটিক সোসাইটিতে উইলিয়ম জোন্সের নেতৃত্বে ভারতাবিদেরা গড়ে তোলে হিন্দু রাজত্বের স্বর্ণিম যুগ ও মুসলিম রাজত্বের মধ্যযুগীয় অন্ধকারের এক সরলীকৃত আখ্যান যা চলে আসে ২০০ বছর ধরে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে। এদিকে হ্যালহেড বাংলাভাষার কাঠামো বাঁধতে গিয়ে ব্যাকরণ লিখলেন, কিন্তু প্রচলিত বাংলাভাষার থেকে (অশুদ্ধ?) ফারসী ও দেশি শব্দ ছেঁটে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের কন্যা সিদ্ধ করে সংস্কৃত শব্দ ঢুকিয়ে ‘শুদ্ধ’ করতে উঠে পড়ে লাগলেন। এ’ব্যাপারে তাঁদের প্রবল সমর্থক ও সহায়ক হলেন ফোর্ট উইলিয়ম ও সংস্কৃত কলেজের পন্ডিতেরা। এঁদের চোখে ভাষাকে হতে হবে উচ্চবর্ণের এলিট, কাজেই সংস্কৃত ঘেঁষা। ... ...
মুর্শিদাবাদের একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস ছিল। একসময় দিল্লিকে পাল্লা দেবার ক্ষমতা রাখত মুর্শিদাবাদ। ব্যাংকিং হাউস হিশেবে তার এতো প্রতিপত্তি ছিল যে খোদ দিল্লির বাদশা তার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সুরম্য সৌধ মিনার অট্টালিকা, নহবতের সুর, আড়ম্বর বিলাসব্যসন নিয়ে যে একটি জবরদস্ত জনপদ গড়ে উঠছিল ভাগীরথীর তীরে তার ছায়া বিলীনপ্রায়। সংরক্ষণের অভাব কেড়ে নিচ্ছে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। সংরক্ষণের জন্য সচেতনতার অভাব তার থেকে অনেকগুণ বেশি। কত মূল্যবান স্মারক এইভাবেই আমরা হারাতে বসেছি এককালীন বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে। ... ...
‘আমার সমসময়ই মনে হত, আমাদের তাৎক্ষণিক চাহিদায় বা নিতান্তই সঙ্গসুখলোভে আমরা ওঁর যে সময়টা গ্রাস করে নিই, সেই নষ্ট সময়েই তো তৈরি হতে পারত অনন্ত সম্পদ—কিছু লেখায় রূপ নিত, কিছু ওঁর অপারসক্রিয় ভাবনায় মথিত হত— যা থেকে যেত কত কালের আস্বাদনের জন্য। তাঁর বাড়ির সপ্তাহান্তিক বিখ্যাত আড্ডায় আমি কখনও যাইনি, ওই ভাবনা থেকেই।’ শরণাপন্ন হয়েছেন অবশ্য সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনে। তেমনই দুই অভিজ্ঞতার কথা লিখলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় ... ...
উপন্যাসটি আশ্চর্যজনকভাবে একজন প্যারানয়েড, নিজের জালে আটকে পড়া শাসকের চরিত্র চিত্রায়িত করেছে। যখন জাবিবা বলেছেন, “আপনার প্রাসাদের দিকে তাকান: মোটা দেয়াল, জানালা প্রায় নেই, অন্ধকার, বাইরের বাতাস ঢুকতে পারেনা, বাঁকানো করিডোর। এখানে থেকে আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো এক দানবের বাড়িতে বাস করছি। এখানে শুধু রাক্ষস বাস করতে পারে, এখানে ষড়যন্ত্রের বীজ অঙ্কুরিত হয়। রাজার দুর্গ তার কাছে কারাগারে পরিণত হয়েছে: যেমন মোটা দেয়াল আপনাকে বাইরে কী চলছে তা শুনতে বাধা দেয়, ঠিক যেমন আপনি খুব কমই দিনের আলো বা তাজা বাতাস পেতে পারেন, তেমনি বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য আপনার আর্তনাদ কখনই শোনা যাবে না। তার উপর আপনার পালানোর পথ অবরুদ্ধ, এবং আশেপাশে এমন কেউ নেই যে আপনাকে সাহায্য করবে।” ... ...
সংস্কৃত প্রথম প্রেম। ইতিহাস দ্বিতীয়। ১৯৩০-এর দশকে খ্রিশ্চান মহিলাদের পক্ষে সংস্কৃত শেখা ছিল এক দুরূহ লড়াই। জিতেছিলেন। প্রথাগত পড়াশোনা ইংরেজি ও সংস্কৃততে। বল নাচের ক্লাস বয়কট করে চেয়েছিলেন উদয়শঙ্করের নৃত্যশৈলীর তালিম। হয়নি। বিপ্লবীদের গোপনে সাহায্য। বাড়িতে লুকিয়ে কমিউনিস্ট কর্মীদের আশ্রয়। এবং নিজের লেখালিখির কথা। স্কুলজীবন থেকে শেষ বয়স—স্মৃতিচারণ। আলাপে ইতিহাসের অধ্যাপক কুমকুম রায় ... ...
সতেরোটি গল্প। প্রাতিষ্ঠানিক খ্যাতির প্রসাদধন্য নয়। কিন্তু প্রত্যেকটি কাহিনিই লেখকই তার নিজস্ব বাকশৈলী ও বক্তব্যের গুরুত্বে গভীরে নাড়া দিয়ে যায় পাঠকমন। বিস্মৃতির গর্ভে লুপ্ত হওয়া থেকে এগুলিকে উদ্ধার করে উপযুক্ত সম্পাদনায় গ্রন্থবদ্ধ করেছেন সাহিত্যিক অমর মিত্র। পড়লেন লেখক বিপুল দাস ... ...
কোনো পাঠক যদি মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কৃত জুল ভের্নের অনুবাদ গল্পগুলি পড়েন, তিনি বুঝবেন এই অনুবাদ আসলে কতখানি রূপতৃষ্ণা নিয়ে ওই বিখ্যাত লেখকটির রচনার প্রত্যেক শব্দকে নিজের জন্যই যেন সাজাচ্ছে, যেন জুল ভের্নের মধ্যে আছে এক আশ্চর্য জগতের চাবিকাঠি এবং মানবেন্দ্র প্রত্যেক দুটি শব্দের মধ্যবর্তী ফাঁকে সেই চাবিকাঠিকেই খুঁজছেন, আর সঙ্গে নিয়েছেন নিজের পাঠককে, যে পাঠকের মধ্যে ঠিক তাঁর মতোই এক বিস্ময়পাগল চিরকিশোর লুকিয়ে আছে। ... ...