প্রয়াত হলেন প্রদীপ চৌধুরী। হাংরি আন্দোলনের পুরোধা এই কবি তাত্ত্বিক ভাবে কবিতাকে বুঝতে চেয়েছিলেন। শিক্ষিত ও মুখরোচক শব্দের প্রতি তাঁর কোনো আনুগত্য নেই। নান্দনিকতার অজুহাতে কবিতায় যা কিছু বর্জন করা হয়, তাদেরই নিজের কবিতায় স্থান করে দিতে চেয়েছেন। লিখছেন রাহুল দাশগুপ্ত ... ...
কমলা দাস। ছদ্মনাম মাধবীকুট্টি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর কমলা সুরইয়া। লিখেছেন মালয়ালম্ ও ইংরেজিতে। তাঁর আত্মজীবনী। অনাবৃত—কলকাতার শৈশব, মালাবারের বাড়ি, বম্বের যাপন, সমকাম, শরীরী প্রেম, যৌনতা, বিষাক্ত দাম্পত্য...। বাংলা তরজমায় পড়লেন তৃষ্ণা বসাক ... ...
দুই মলাটের মধ্যে গ্রন্থিত তিনটি আখ্যান। তিনটিরই বিষয় স্বাধীনতা লাভের সময়ে বাংলার বিভাজন ও অগণিত মানুষের জীবনের ওপর তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব । লেখক তানভীর মোকাম্মেল। পড়লেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। ... ...
'কাদামাটির হাফলাইফ' -- একটি অনন্যসাধারণ রচনা। অনন্যতা নামকরণে। হৃদয়ে বিরাজ করা ভাবনা নির্বাচনে। অনবদ্য জীবনকথা উচ্চারণে। বৈঠকি মেজাজে সত্যোচ্চারণ করার অভূতপূর্ব ভঙ্গিমায়। ১১৬ পর্বে বিন্যস্ত জীবনে জীবন যোগ করার অবিস্মরণীয় সাহিত্যকর্ম 'কাদামাটির হাফলাইফ' সাহিত্যকর্ম তো বটেই, অন্তত আমার নিবিড় পাঠ অনুভবে। বইটির প্রতিপাদ্য বিষয়ের সঙ্গে ষোলআনা একাত্মতায়। আমরা জানি কোনো প্রচারধর্মী, রাজনৈতিক, সামাজিক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থেকে জাত হতেই পারে না প্রকৃত সাহিত্য। ভাবে ভাষায় ও রূপে তার নির্মাণ এক 'হয়ে ওঠার' বৃত্তান্ত। মার্কিন কবি আর্চিবল্ড ম্যাকলিশের কথায় : " A poem Should not mean / But be." ইমানুল হকের 'কাদামাটির হাফলাইফ' ঠিক তেমনই গ্রামবাংলার নির্ভেজাল ও 'কান্না হাসির দোল দোলানো পৌষ ফাগুনের পালা'-র সার্থক সাহিত্যরূপ। ... ...
বয়স্ক জার্মান ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, আমিই সেই জার্মান সৈনিক। ডেভিড সেটা বুঝলেন। কারও মুখে কোনো কথা নেই। উনচল্লিশ বছর আগে ইলিনয়ের ডেভিড দে ফ্রিস অস্ত্র হাতে জার্মানির হেসেনের এক পরাস্ত জার্মানের মুখোমুখি হয়েছিলেন। চারদিকে যখন খুন কা বদলা খুন হচ্ছে, সেখানে অস্ত্রহীন জার্মানকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন তার ওপরওয়ালার অফিসে। তার পরিচয়পত্র নাম ইত্যাদি নথিবদ্ধ করে, তাকে যুদ্ধবন্দির সম্মান দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের শেষে বিজেতারা ফিরেছেন শিকাগো ইলিনয়, আর বিজিত ফিরেছেন হেসেন, জার্মানি। জার্মান ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন প্রথমে। ডেভিডও ততক্ষণে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে পড়েছেন। চার দশক আগের দুই শত্রু। একে অপরকে আলিঙ্গন করলেন। ... ...
পা রসবোধ তো টইটম্বুর হয়ে চলকে চলকে পড়ছে। যাকে এতদিন সাহিত্যের মনযোগী ছাত্রী জানতাম সে তো একেবারে সরস গল্পের পাত্রী। রম্যরচনার মূল কথা হল, উইট বা হিউমার কখনওই টস্কাবে না যেন বলশয় ব্যালে। তেড়ে বুড়ো আঙুলের উপর দাঁড়িয়ে তিন চার পাক খাবেন কিন্তু তাতেও আপনার পায়ে ব্যথা হবে না, কপালে সামান্যতম্য ভাঁজ দেখা যাবে না। লেখিকার নিবেদন থেকে উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না। “ ‘তবুও শান্তি, তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে, তবু প্রাণ নিত্যধারা…’ বারে বারে আর আসা হবে না, এমন মানব জনম আর পাবে না। মাত্র একবার পাওয়া এই মরজীবনের সময়সীমাও বড়ো কম। ভালোবেসে তৃষ্ণা মেটে না, বিরহদহনে পূর্ণতা আসে না, দুঃ দিয়ে বা পেয়ে তৃষ্ণা যায় না…” এতোগুলো নঞর্থক বাক্যবন্ধনী দিয়ে আসলে জীবনকেই প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস। “তবু ক্লান্ত পথিক ক্ষণকালের জন্য আনন্দ পাক, কয়েকটি মুহূর্ত ভরে উঠুক স্মিতহাসির প্রসন্নতায়- বহু পথ পার হয়ে এসে এখন এইটুকু সাধন নিয়েছি।“ বইটা কেমন সেটা নিয়ে আলাদা করে আর বলে দিতে হবে না, তবে রসবোধ যখন জীবনবোধের হাত ধরে চলে তখন ক্ষণিক সরে সেলাম করে যেতেই হয়। ... ...
আরো অনেক গল্প শোনার ছিলো কুমুদি'র কাছে। ভেবেছিলাম একদিন সময় করে বসে বলবো "বলো এবার বড়কুমার ছোটকুমারের তারপর কী হলো'। আর আরো বাকিসব। কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই, কুমুদি গিয়ে উঠলেন তাঁর নৌকোয়। এখন আমাদের এই ঘাটে আর খেয়াতরী বাইবেন না! এর কোনো মানে হয়? তবে তারার পানে চেয়ে তাঁকে ডাকতে হয়না আমার। যে অমন করে মনের ভেতরের কলসীটা ভরে দিতে পারে, তাকে আবার বাইরে কোথাও খুঁজতে যেতে হবে নাকি? ... ...
মেঘনাদ সাহা। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জগতে স্মরণীয় নাম। কঠোর দারিদ্র ও ‘নিচু’ জাত হওয়ার অভিশাপ— এ দুয়ের সঙ্গে লড়াই করে বিজ্ঞানচর্চার শীর্ষ পরিসরে পৌঁছনর জীবনকাহিনি সমসাময়িক বঙ্গীয় সমাজের এক অনবদ্য দলিলও বটে। ঝরঝরে ভাষায় লেখা একটি বই। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক সুমিত্রা চৌধুরী ... ...
বুদ্ধিদীপ্ত বেজায় মজাদার একটি বই যেখানে কল্পনা, বাস্তব, রহস্য আর খ্যাপামি দিব্যি মাখামাখি হয়ে বসে আছে! পড়তে পড়তে মনে পড়ে যাচ্ছিল লীলা মজুমদার, নবনীতা দেব সেন, শিবরাম, জেমস থারবারকে... কিন্তু ওইটুকুই, বাস্তবে স্টাইলটা লেখিকার একান্তই নিজস্ব। আমি বলি কি, ভূমিকা পড়ে সময় নষ্ট করবেন না; ঝাঁপিয়ে পড়ুন মূল বইয়ের পাতায়। একটা সতর্কবার্তা – সিরিয়াস রামগরুড়ের ছানাদের জন্য এই বই নয়।' ... ...
এই হচ্ছেন কুমুদি! সেই প্রথম আলাপের দিন থেকে শুরু, তারপরেও বহুবার দেখা হয়েছে বিভিন্ন আড্ডায়, আর বারবার দেখেছি আমরা সবাই যখন আড্ডা-হা-হা-হি-হি তে মশগুল হয়ে যেতাম, কুমুদি বরাবর ওই নরম গলায় আমাদের কর্তব্য-কর্ম মনে করিয়ে দিতেন, যদিও গুরুজনসুলভ হম্বিতম্বির লেশমাত্র দেখিনি কখনো। নারী-স্বাধীনতা নিয়ে গুরুগম্ভীর কথাও বলতেন না কখনো, নিজের কৃতিত্বও ঢাক পিটিয়ে বলেননি কখনো – কিন্তু ভাবলে অবাক লাগে, সংসার, গবেষণা, লেখালেখি ... এই প্রবাসে একা হাতে কত কী-ই না সামলেছেন! কোথাও কোনও মেয়ের কৃতিত্ব দেখলে বা অন্য কারুর কাছে শুনলেও কী অপরিসীম খুশি হতেন। মনে আছে ... ছন্দা গায়েন যখন হিমালয়ের বুকে হারিয়ে গেল চিরতরে, তা নিয়ে ভাটিয়ালির পাতাতে কুমুদির লেখায় যে হাহাকার দেখেছি, তা একেবারে মনের গভীর থেকে উঠে আসা, কোন কৃত্রিমতা ছিলনা তাতে। ... ...
বইটি পড়া শেষ করে মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে এবং মনে হচ্ছে যে এই বইটি না পড়ে মরে গেলে বড্ড অন্যায় হয়ে যেতো। প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বারবার মনে হয়েছে যে এই বই আমার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোকে মনে করে লেখা হয়েছে। এই বই আমার একান্ত নিজস্ব জীবন দলিল বললেও হয়তো অত্যুক্তি হবে না। ... ...জীবন মানেই উৎসব, জীবন মানেই সম্ভাবনা। আপনার লেখাগুলো প্রতি মুহূর্তে সেই জীবনেরই জয়গান গেয়েছে। কাদামাটির হাফলাইফ জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই জীবনকে উপলব্ধি করতে শেখাবে, এই বিশ্বাস জারি থাকল। ... ...
কুমুদি চলে গেলেন, ছয় মাস হল। কুমুদি রয়ে গেলেন। তাঁর গ্রন্থিত , অগ্রন্থিত গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়। কুমুদি রয়ে গেলেন স্মৃতিতে। আজ গুরুচণ্ডা৯ র 'মনে রবে' তে কুমুদি, এবং শুধুই কুমুদি। ... ...
এরকম আকস্মিক চলে যাওয়ার ঘটনা আমি কানে বহুবার শুনে থাকলেও কখনও চোখে দেখিনি।। এমন একজন মানুষ যিনি আগের মুহূর্তে ছিলেন প্রাণমন দিয়ে জিজ্ঞাসু, ছিলেন হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল, একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি বলে বেরিয়ে গেলেন হলের বাইরে, তারপর প্রায় হাঁটতে হাঁটতে পাড়ি দিলেন কোন নক্ষত্রলোকের উদ্দেশে সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আজও খুঁজছি। নিশ্চয়ই আরও অনেকেই খুঁজছেন। ... ...
বাংলাভাষায় জনসাধারণের জন্য বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় নিয়ে আলোচনা একেবারেই চোখে পড়ে না। সেই দিক দিয়ে সুদীপ্তর এই চেষ্টা খুবই প্রশংসার দাবী রাখে। আর সেই সঙ্গে বলতে হবে সুদীপ্তর সহজ করে বোঝানোর বিষয়টিও। সেই কাজটা দেখলে যতই সহজ মনে হোক, আসলে তো সেটা মোটেই সহজ না। এবং সেই বোঝানোর কাছে সুদীপ্ত যে ধরণের ঘটনার সাহায্যে তাদের ব্যাখ্যা করেছেন, তা পড়ার ইচ্ছে বাড়ায়। ... ...
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। কাহিনির নির্মাণ ও বিষয়বস্তু উভয় নিরিখেই তাঁর রচনা সমসাময়িক সাহিত্যধারা উপেক্ষা করে প্রবাহিত হয়েছে ভিন্ন খাতে। একদিকে তাতে যেমন প্রতিফলিত হয় মানুষের অস্তিত্বরক্ষার অবিরত সংগ্রামের ছবি, তেমনই উঠে আসে প্রতিটি চরিত্রের অন্তর্বিরোধ। এককথায় তাঁর সাহিত্যসৃষ্টি বহুমাত্রিক। সেসবই আলোচিত একটি সাম্প্রতিক গ্রন্থে। পড়লেন লেখক রাহুল দাশগুপ্ত। ... ...
প্রমদারঞ্জন রায়ের বনের খবর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের রীতি, নীতি ও দুর্নীতি - দুটি বই নিয়ে আলোচনা করলেন দিব্যেন্দু সিংহ রায়। ... ...
গাছের যে অংশ থাকে মাটির ওপরে তাই আমরা দেখি। অর্থাৎ কাণ্ড , শাখা, ডালপালা আর পাতা - ফুল - ফল। আর যা থাকে মাটির নীচে, সেটা অদৃশ্যগোচরই রয়ে যায়। যেমন, শিকড়। শিকড় সন্ধান করতে লাগে.... খুঁজলে পাওয়া যায়। আর না খুঁজলে, বিস্মৃতির অতলে। আমাদের আদত যাপন চিত্রের এক অনুপুঙ্খ ধারা - বিবরণ হিসেবে নয়, ধারণ করে রাখে যে সব পাতা, সে সব পাতাগুলো এক জায়গায় জড়ো করলে হয় ইতিহাস। ইমানুল হকের লেখা 'কাদামাটির হাফলাইফ' সে অর্থে ইতিহাস। ... ...
এখন যখন আমরা পত্রিকার পাতায় পড়তে বাধ্য হই তিন দিনের সদ্যজাত শিশুকে ডাস্টবিন হতে তুলে বাঁচাল ক্ষুধার্ত কুকুর, তখন আমাদের মনে পড়ে যায় ৬১ বছর আগে লেখা হাসান আজিজুল হকের ‘শকুন’ নামের গল্পটির কথা। যদিও সেই গল্পে কাদু শেখের বিধবা বোনকে চিহ্নিত করা গিয়েছিল, চিহ্নিত করা গিয়েছিল শকুনদের, কিন্তু এই ২০২১ সালে যখন নগরের ডাস্টবিনে বা নালায় মাঝে মধ্যেই সদ্যজাত শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তখন সেই মা-দের আর চিহ্নিত করা যায় না। চিহ্নিত করা যায় না শকুনদেরও। এই ৬১ বছরের ব্যবধানে দেশটা ছেয়ে গেছে কাদু শেখের বিধবা বোন আর অসংখ্য শকুনে! কিন্তু হাসান আজিজুল হক আর নেই! ... ...
একগুচ্ছ প্রবন্ধ। বত্রিশ বছর সময়কালে রচিত। বিষয়ের নিরিখে চার ভাগে বিভক্ত—সাহিত্য, ইতিহাস, শিল্প, সমাজ। লেখক অরুণ নাগ। ভাবনার জগতে নাশকতা ঘটানো লেখাগুলির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। পড়লেন শুভময় মণ্ডল ... ...
একের বিপরীতে অন্য কাউকে দাঁড় করানো যে আমাদের শেষ পর্যন্ত ঠেলে দেয় ২০১৬ সালের পহেলা জুলাইয়ের ঢাকা শহরে, ইলিয়াসের মতো সর্বদ্রষ্টা লেখক তা জানতেন। তিনি কেবল করেছেন সেই কাজটিই, যা করতে পারেন সৎ এবং মহৎ সাহিত্যিকেরাঃ ভাষাহীনকে ভাষা দেওয়া। কালাম মাঝি হোক, কি শরাফত মণ্ডল; কম্যুনিস্ট পার্টির ছোকরারা হোক কিংবা মুসলিম লীগের চ্যালারা; ইলিয়াস ব্যাক্তির ওপর কোনো সত্য আরোপ করেননি। তিনি কেবল সমষ্টির মাঝে ব্যক্তির আকাঙ্খার সাথে সমাজের বৈষম্যের পার্থক্যটাই এঁকে গেছেন। লেখার টেবিলকে ইলিয়াস পল্টনের ময়দান করে তোলেননি। ফলে, উদ্দিষ্ট এই উপন্যাস প্রকৃতপক্ষে বঙ্কিমের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের এন্টি-থিসিস; এমন কথা যে ইদানিং শুনতে পাই, সাহিত্যের পাঠক হিসেবে তখন আহত না হয়ে আর উপায় থাকে না। ... ...