হেরিটেজ ওয়াকে দেখানো হয় না এই কলকাতা। কলকাতা-বিশেষজ্ঞ কলমচিদের অধিকাংশ কেতাবের গালভরা গল্পে এ কলকাতা অনুপস্থিত। শহরের শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সৌন্দর্যের যুক্তিতে এ কলকাতার অস্তিত্বই অস্বীকার করেন, যেমনটা দেখিয়েছিল ‘অপারেশন সানশাইন’। এ কলকাতা বাস করে ফুটপাথে। গৃহহীনদের কলকাতা। ভিখিরিদের হোটেলের কলকাতা। জঞ্জাল-কুড়ুনি শিশুদের কলকাতা। রাস্তায় দাঁড়ানো গণিকার কলকাতা… একটি বই। পড়লেন শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য। ... ...
২০১৯ ছিল কবি ও গদ্যকার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ। সেই উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ— দুই বাংলা থেকে প্রকাশিত হয় দুটি স্মারক-গ্রন্থ। এবারের প্রথমপাঠ বিভাগে আলোচিত হল দুটি গ্রন্থই। ... ...
"উদ্বাস্তু কলোনি পত্তন ঘিরে কংগ্রেস-কমিউনিস্ট, ডান-বাম রাজনৈতিক বিরোধ, দলাদলি, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত কোঁদল, নেতাদের দাপট- দুর্নীতি- ধান্দাবাজি ছিল। কিন্তু সেটাই সমাজে নির্ধারক ছিল না। জমিদারের গুন্ডা-পুলিশের সঙ্গে যুঝে রাতপাহারার ফাঁকে জলজংলা, পতিত জমি দখল করে নয়া বসত পত্তন ও ভিটেমাটির বিলি-বন্দোবস্তের কালে নানা মতের পূর্বপুরুষদের যূথবদ্ধ অস্তিত্বের লড়াই এখন পুরাকথার সামিল।" উদ্বাস্তু কলোনির কথা : একটি স্মৃতিকথা সংকলন - বইটি নিয়ে লিখলেন বিশ্বজিৎ রায়। ... ...
বন্ধুরা বলেন--একুশ শতকে ভারতের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের সমাজে পিতৃতন্ত্রের ভিত এখন অনেক দুর্বল, থাম গুলোয় ফাটল দেখা দিচ্ছে। মেয়েরা এখন পুলিশ- মিলিটারি- প্রশাসন - সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় সবেতেই উঁচু পদে বসছেন। তাই কি? একজন ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বা একজন এ পি জে আবদুল কালামের রাষ্ট্রপতি হওয়ার উদাহরণ দেখে কি ভারতে মেয়েদের এবং অল্পসংখ্যকদের বাস্তবিক অবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত টানা যায়? আইনের চোখে তো মেয়েরা পুরুষের সমান—সেই সংবিধান প্রণয়নের দিন থেকেই। রয়েছে নারীপুরুষের ভোট দেবার সমান অধিকার। কিন্তু গাঁয়ের দিকে ক’জন ঘরের বৌ নিজের ইচ্ছের ক্যান্ডিডেটকে ভোট দিতে পারে? বেশির ভাগের ভোট দেবার নির্ণয় কী আগে ভাগে পরিবারের কর্তাব্যক্তিটি ঠিক করে দেন না? ... ...
জেম্স র্যান্ডি। প্রয়াত হলেন সম্প্রতি। পেশায় দুরন্ত জাদুকর, ম্যাজিশিয়ান। হুডিনি-র একটি রেকর্ড ভেঙেছিলেন। কিন্তু নেশায় ও মননে ছিলেন জ্যোতিষী, সাইকিক ইত্যাকার অলৌকিক শক্তির দাবিদারদের বুজরুকি ফাঁস করে দেওয়ার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। এরিক ফন দানিকেন থেকে উরি গেলার পর্যন্ত বহু বুজরুকের মুখোশ খুলে দিয়ে লিখেছেন একাধিক বই। সেগুলির মধ্যে একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম—ফ্লিম-ফ্ল্যাম! পড়লেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান পরিষদের সচিব, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ... ...
মিশেল উয়েলবেক। ইসলামোফোবিয়া থেকে পর্নোগ্রাফি, পুরুষতান্ত্রিকতা—বারংবার উঠেছে নানা অভিযোগ। তবু তিনি এ মুহূর্তের ফরাসি সাহিত্যের উজ্জ্বলতম তারকাদের একজন। ছত্রিশটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে তাঁর সাহিত্য। মার্সেল প্রুস্ত বা অন্দ্রে জিদ-এর সাহিত্যশৈলীর পরম্পরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তিনি। গতবছরই দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘লিজিয়ঁ দ’নর’ প্রাপ্ত এই লেখকের ‘প্লাতফর্ম’ উপন্যাসে উঠে আসে ইউরোপীয় সমাজের অন্তঃসারশূন্যতার হাড়-হিম-করা ছবিও। পড়লেন ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক পার্থপ্রতিম মণ্ডল। ... ...
শঙ্খ ঘোষ কেন স্বতন্ত্র তা বোঝা যায়, অনুভব করা যায়, এবং সর্বোপরি অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের উপর তাঁর নিবন্ধ, কবিতাগুলি পড়লে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, ক্ষমতার স্পর্ধার নিরলস বিরোধিতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সপক্ষে সোচ্চার থেকেছেন আজীবন। কে পাশে আছে তার তোয়াক্কা করেননি। লিখছেন সুজাত ভদ্র ... ...
সম্প্রতি প্রয়াত হলেন চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত। অত্যন্ত সীমিত সুযোগ-সুবিধা ও গবেষণার পরিকাঠামো সত্ত্বেও তিনি একাধিক পুস্তক ও প্রবন্ধে যেমন রেখে গিয়েছেন পশ্চিমরাঢ়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতির তথ্যসমৃদ্ধ ব্যাখ্যা, তেমনই বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে গড়ে তুলেছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা। খ্যাতি বা অর্থ নয় এই কাজেই ছিল তাঁর প্রাণের আনন্দ। তাঁর কাজের যথাযথ মূল্যায়ন জরুরি। জানালেন প্রত্নতত্ত্ববিদ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবেকানন্দ চেয়ার প্রোফেসর অফ সোশাল সায়েন্স রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়। ... ...
রিচার্ড ডেভিড উল্ফ। মার্কসবাদী অর্থনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক। সহজ ভাষাতে আমজনতার কাছে মার্কসবাদ তুলে ধরতেও সচেষ্ট তিনি। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একটি বই ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং মার্কসিজম’। এবার বাংলা তরজমায়। পড়লেন অর্থনীতির অধ্যাপক দেবর্ষি দাস। ... ...
আমাদের ছোটবেলায় একজাতের বই বাড়িতে এবং স্কুলে অবশ্য পাঠ্য ছিল – মহাপুরুষদের জীবনী। তাতে ক্ষুদিরাম, নেতাজি ও সূর্য সেনের মত স্বাধীনতা সংগ্রামী, রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও আম্বেদকরের মত সমাজসংস্কারক, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের মত সাহিত্যিক এবং চৈতন্য, রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের মত ধর্ম সংস্কারক সকলেই একসারিতে জায়গা পেতেন। এঁদের জীবনীর একটি ছাঁচ আছে। এঁরা কোন বিশেষ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে প্রেরিত। এঁদের জন্মসূত্রেই প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায়। এঁরা কখনও ভুল করেন না। কাজেই ভুল স্বীকার করার প্রশ্ন ওঠে না। ... ...
তিন নবীন কবির তিনটি বই। ‘এই প্রজন্মের নারীকবিদের কালো কবিতা এসব। মুখ গুঁজে বসে থাকতে হয় মেয়েদের এই যাপনের মধ্যে।’ পাঠ করে লিখছেন কবি চৈতালী চট্টোপাধ্যায়। ... ...
‘সন্দীপন পাঠশালা’র আগে তারাশঙ্কর তাঁর ছোটগল্পে শিক্ষক-মহাশয়দের কথা অল্প অল্প তুলে ধরেছেন। ১৯৩৩ সালে বঙ্গশ্রীর অগ্রহায়ণ সংখ্যায় ‘মধু মাস্টার’, ১৯৩৬ সালে দেশ পত্রিকার চৈত্র সংখ্যায় ‘পণ্ডিত মশাই’ এবং ১৯৪১ সালে প্রবাসীর বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘হরি পণ্ডিতের কাহিনি’। ‘পণ্ডিত মশাই’এর যতীন চাটুজ্জে এবং ‘হরি পণ্ডিতের কাহিনি’র হরিনাথ চাটুজ্জে যে একই ব্যক্তি তা বুঝতে পাঠকের অসুবিধা হয় না। দুজনেই পল্লীগ্রামের পণ্ডিত। দুজনেরই পাঠশালা বসে জমিদারের কাছারি বাড়িতে। ছেলে পড়ানোর চাকরির অঙ্গ হিসেবে দুজনকেই গ্রাম দেবতার পুজো করতে হয় এবং জমিদারের আগমন হলে রাঁধুনির ভূমিকা পালন করতে হয়। এঁদের দুজনেরই কাজে প্রবল নিষ্ঠা। খেটেখুটে একেকটি ছেলেকে এঁরা তৈরি করেন বৃত্তি পরীক্ষার উপযুক্ত করে। আর পার্শ্ববর্তী পাঠশালা সেই ছাত্রকে লোভ দেখিয়ে ভাঙিয়ে নিয়ে যায় পরীক্ষার আগেই। তাই এঁদের পাঠশালা সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতায় পিছিয়ে থাকে। যতীন অথবা হরি পণ্ডিতকে এই কারণে লোকে ‘কাক-পণ্ডিত’ বলে। চিরকাল কাকের মতো তাঁরা অপরের বাচ্চাকে উপযুক্ত করেই যান। ... ...
কুমুদি রইলেন তাঁর গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়, স্মৃতিতে। স্মৃতিস্তম্ভের স্থবিরতাকে ভালবাসিনি আমরা, চাইছি স্মৃতির চলমানতা। অক্ষর বেয়ে বেয়ে পরের প্রজন্মে পৌঁছে যাক কুমুদি- তারা চিনুক আমাদের কুমুদিকে, ভালবাসুক, লেখা পড়ুক, পড়াক বন্ধুদের। কুমুদিও তাদের চিনতে চাইবেন- বলাই বাহুল্য। স্মিত সহাস্য মুখে জিগ্যেস করবেন- কই , কী লিখচ , শোনাও দেখি। এই সব অলীক চেনাজানাকে বাস্তব করতে গুরুচণ্ডা৯ শুরু করছে বার্ষিক 'কুমুদি পুরস্কার' - কিশোর কিশোরীদের গল্প লেখার প্রতিযোগিতায়। ... ...
‘খবর’ শীর্ষক কবিতায় যে দৃশ্যপট চোখে পড়ে, তা এমন— সব জায়গায় কাঁপিয়ে ঢোকে খবর। আধা খোলা দরজা ঠেলে ভেতরে কে ঢোকে? না, খবর। জানালার ধার ধরে ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ে কে? না, খবর। এদিক-ওদিক, যে দিকে হেলান দিলে চেপে ধরে কে? না, খবর। ঘরে বাইরে সর্বত্র খবরের রাজ। ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলে স্তূপের মতো উপরে চেপে বসে খবর। রুদ্ধ হয়ে যায় নিশ্বাস। মৃত শরীরের উপর খবর নাচে আহ্লাদে, নেচে চলে। গভীর শ্লেষ থেকে নিমেষেই পরিহাস তুলে আনেন শঙ্খদা অনায়াসে, যেমন ‘কোমা’ থেকে চেতনায় ফিরে আসে চেতনাহত। ... ...
বাংলার সমাজে জাতপাত ভিত্তিক উচ্চনীচ ভেদাভেদের বিরুদ্ধে চৈতন্যদেব যে এক বিপুল সাড়া জাগান আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন - এমনটাই প্রচলিত ধারণা। কিন্তু কেমন ছিল চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব যাপন? গৌড়ীয় বৈষ্ণবমণ্ডলে কি অবহেলিত ছিলেন চৈতন্যদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী? ইত্যাকার নানা বিষয় চর্চিত একটি বই। পড়লেন অঞ্জন সেন ... ...
“সমস্ত মৃত নক্ষত্রেরা কাল জেগে উঠেছিল—আকাশে এক তিল ফাঁক ছিল না”—কবির এ উচ্চারণেও আছে বিজ্ঞানের অনেক লুকোনো কথা। কিংবা ভিন্দেশের নানা ডাকটিকিটের ছবিতে। সেইসব ক্লু ধরে ধরেই সরল ভাষায় অনেক জটিল বিষয়ে আলোচনা। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে এমন কেতাব বাংলায় বিরল। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কর্মসচিব, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ... ...
বিশিষ্ট কিছু বিজ্ঞানীর কথা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্বর্ণযুগের কাহিনি, গণ-আন্দোলনে বিজ্ঞানীদের অবস্থান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক প্রচারে অপবিজ্ঞানের জনপ্রিয় ব্যবহার, গণ-মারণাস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের ভূমিকা। বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে একগুচ্ছ প্রবন্ধের সংকলন। পড়লেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী বিষাণ বসু। ... ...
শঙ্খ ঘোষের কবিতা পড়া এক গভীর কৌতূহলোদ্দীপক, আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। আমি মূলের ভাষা বা তার নান্দনিকতা নিয়ে কিছু বলতে তো পারি না, শুধু এটুকু বলতে পারি, তরজমায় যে কবিকে পাই তিনি গভীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সূক্ষ্ম সংবেদনশীল, গভীর আবেগময়, নির্ভুল পর্যবেক্ষণকারী এবং পরিশীলিত ভাবনার মানুষ। তিনি কবিতা-শিল্পটিকে করায়ত্ত করেছেন ন্যূনতম শব্দ খরচ করে সর্বাধিক সম্ভব ভাবপ্রকাশের পারদর্শিতায়। তাঁর কবিতার কথোপকথনের ভঙ্গিমা এবং বিবিধ উত্তর তুলে ধরা আমাকে প্লেটো-র ‘রিপাবলিক’, এবং পারসিক কাব্যের ‘কথোপকথন’ (ডায়ালগ) গোত্রের কবিতার কথা মনে করায়। আমার কাছে তিনি বিপুল পড়াশোনা করা একজন কবি, যাঁর এক চক্ষু নিবদ্ধ বিশ্বসাহিত্যের উপর। ... ...
২০১৯ ছিল কবি ও গদ্যকার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ। সেই উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ— দুই বাংলা থেকে প্রকাশিত হয় দুটি স্মারক-গ্রন্থ। এবারের প্রথমপাঠ বিভাগে আলোচিত হল দুটি গ্রন্থই। ... ...
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। সংকীর্ণতার পরিধি অতিক্রম করে কবিতার দুনিয়ায় তিনি বিশ্বনাগরিক। দুঃখী মানুষের মুখ নিরন্তর সঙ্গে রেখে বারবার ফিরে আসতে চেয়েছেন দেশ ও মাটির কাছে। আবার পরিভ্রমণ করেছেন গোটা বিশ্বে। আলোচনায় লেখক রাহুল দাশগুপ্ত ... ...