চিররহস্যের আড়াল থেকে মনকে অনাবৃত করার প্রচেষ্টা দার্শনিকেরা করেই চলেছেন। গত পঞ্চাশ বছরে কম্পিউটার ও স্নায়ু বিজ্ঞানের অগ্রগতি মনোদর্শনের চর্চাকে যে ভাবে উজ্জীবিত করেছে, তার অভিঘাত বাংলা প্রকাশনার জগতে সে ভাবে পড়েনি বললেই চলে। বহু বিচিত্রপথে বিশ্বের জ্ঞানচর্চার জগতে প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া আলাপ-আলোচনার সঙ্গে বাংলাভাষার আগ্রহী পাঠকদের পরিচয় হবে এই গ্রন্থটির মাধ্যমে। অমিতাদেবী ভূমিকাতেই রবীন্দ্রনাথ থেকে ডেনেটের উক্তি তুলে ধরে দেখিয়েছেন, তাঁর উদ্দেশ্য মনোদর্শনের সরটুকু কল্পগল্পে ফুটিয়ে তোলা। প্রশ্ন ওঠে, গল্পের আগে কল্প কেন? এখানেও লেখক রবীন্দ্রনাথের শরণ নেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গল্পমাত্রেই কি কল্পলোকের অধিবাসী নয়? ক্বচিৎ কখনও গল্প যদি সত্য হওয়ার দাবি রাখে, তবে অধিকাংশ গল্পই কেবল সত্য নয়, ‘আরও-সত্যি’।’’ ... ...
গামছা-সুকানকে চিনতে হলে আপনি হাওড়া থেকে বর্ধমানের মেন লাইনের লোকালে চেপে বসুন। মেমারির গায়ে গায়ে একটি ছোট স্টেশন নিমো। আগে ছিল দুটো লাইন – আপ-ডাউন প্ল্যাটফর্ম, ইদানীং মাঝে একটা তিন নম্বর শুরু হয়ে লোকের ভোগান্তি বেড়েছে। কারণ, পুরুষানুক্রমে যে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব সামলায়, সে হরদম অন্যমনস্ক হয়ে ভুল প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা করে। আর শেষ মুহুর্তে তার কোর্স-কারেকশনের পাল্লায় পড়ে বুড়োবুড়ি-মেয়েমদ্দ সবার হেনস্থা, দৌড়োদৌড়ি। তাই দৌড়তে দৌড়তে বাউরি বউ চেঁচিয়ে ঘোষণা করে – এবার গোপালকে ক্যাল দিতে হবে। নিমো গ্রামের গল্প - পড়লেন রঞ্জন রায়। ... ...
পা রসবোধ তো টইটম্বুর হয়ে চলকে চলকে পড়ছে। যাকে এতদিন সাহিত্যের মনযোগী ছাত্রী জানতাম সে তো একেবারে সরস গল্পের পাত্রী। রম্যরচনার মূল কথা হল, উইট বা হিউমার কখনওই টস্কাবে না যেন বলশয় ব্যালে। তেড়ে বুড়ো আঙুলের উপর দাঁড়িয়ে তিন চার পাক খাবেন কিন্তু তাতেও আপনার পায়ে ব্যথা হবে না, কপালে সামান্যতম্য ভাঁজ দেখা যাবে না। লেখিকার নিবেদন থেকে উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না। “ ‘তবুও শান্তি, তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে, তবু প্রাণ নিত্যধারা…’ বারে বারে আর আসা হবে না, এমন মানব জনম আর পাবে না। মাত্র একবার পাওয়া এই মরজীবনের সময়সীমাও বড়ো কম। ভালোবেসে তৃষ্ণা মেটে না, বিরহদহনে পূর্ণতা আসে না, দুঃ দিয়ে বা পেয়ে তৃষ্ণা যায় না…” এতোগুলো নঞর্থক বাক্যবন্ধনী দিয়ে আসলে জীবনকেই প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস। “তবু ক্লান্ত পথিক ক্ষণকালের জন্য আনন্দ পাক, কয়েকটি মুহূর্ত ভরে উঠুক স্মিতহাসির প্রসন্নতায়- বহু পথ পার হয়ে এসে এখন এইটুকু সাধন নিয়েছি।“ বইটা কেমন সেটা নিয়ে আলাদা করে আর বলে দিতে হবে না, তবে রসবোধ যখন জীবনবোধের হাত ধরে চলে তখন ক্ষণিক সরে সেলাম করে যেতেই হয়। ... ...
বিত্তহীন একটি পরিবারের সবচেয়ে বড় বিত্ত হল আবেগ। কাঁধ-উঁচো থালাখান, ছিক্ষেত্তরের বাটিখান, তেঁতুলের আচারের ঠিলেডা বা পুরনো একটু ঘি --সবকিছু বস্তায় ভরে নিয়ে গেলেও, ওদের মন-মগজে স্মৃতি জট পাকিয়ে রয়। কী যেন ফেলে যাচ্ছে! পুরুষ-পুরুষের পায়ের ছাপ পড়ে আছে যে বাড়ির আনাচেকানাচে, তার ধুলোটুকুও যেন আগল হয়ে সামনে দাঁড়ায়।....গল্প এগোয়। এগোয় কুঁড়োরামের পরিবার। ... ...
বুদ্ধিদীপ্ত বেজায় মজাদার একটি বই যেখানে কল্পনা, বাস্তব, রহস্য আর খ্যাপামি দিব্যি মাখামাখি হয়ে বসে আছে! পড়তে পড়তে মনে পড়ে যাচ্ছিল লীলা মজুমদার, নবনীতা দেব সেন, শিবরাম, জেমস থারবারকে... কিন্তু ওইটুকুই, বাস্তবে স্টাইলটা লেখিকার একান্তই নিজস্ব। আমি বলি কি, ভূমিকা পড়ে সময় নষ্ট করবেন না; ঝাঁপিয়ে পড়ুন মূল বইয়ের পাতায়। একটা সতর্কবার্তা – সিরিয়াস রামগরুড়ের ছানাদের জন্য এই বই নয়।' ... ...
খোর্খে ভোলপি। মেক্সিকোর বিখ্যাত লেখক—ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। বয়স মাত্র বাহান্ন, এর মধ্যেই লিখেছেন ৭৪টি বই। বহু সাহিত্যসম্মানে ভূষিত এবং পাঠকমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর বিপুল সাহিত্যসৃষ্টির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য উপন্যাসত্রয়ী—‘ইন সার্চ অফ ক্লিংসর’, ‘দ্য এন্ড অফ ম্যাডনেস’ এবং ‘সিজন অফ অ্যাশ’। মূল স্প্যানিশে পড়লেন স্প্যানিশ ভাষার শিক্ষক ও তরজমাকার জয়া চৌধুরী। ... ...
২০১৯ র দিল্লি বইমেলাতে কুমুদির এতাবৎ প্রকাশিত লেখাগুলোর থেকে কিছু লেখা একসঙ্গে করে একটা বই বেরোল। কুমুদির রোমহর্ষক গল্পসমূহ। গুরুচন্ডা৯-র থেকেই। এই বইতে সব গল্পই অতি প্রিয়। আর বইটা নিয়ে কথা বলতে গেলে আমার ইচ্ছে করে পুরো বইটাই কোটেশন হিসেবে তুলে দেই। গল্পগুলো মানে প্লটগুলো মজাদার তো বটে, কিন্তু প্লটের অন্তর্নিহিত মজা আর চরিত্র বর্ণন কুমুদির অননুকরণীয় সরস বর্ণনায় যে কোথায় উঠে গেছে তা আর কি বলব। ই যেমন ধরুন না সাইকেল চালাতে শেখার গল্পটাই – প্রথম সাইকেল চালাতে শেখার অনেক মজার মজার গল্প আমাদের অনেকেরই স্টকে আছে, কিন্তু সেই গল্পই একবারটি পড়ে দেখুন কুমুদির বয়ানে, “একটি সাইকেল ও দেহলিজ” । দেখবেন কখন যেন আপনিও আওড়াতে শুরু করেছেন, “ডরাইলেই ডর”। কোন গল্প ছেড়ে কোন গল্পের কথা বলি! কেবলীর কলেজ জীবন, গোবু মহারাজের সঙ্গে তার প্রেম জীবন এবং বিবাহপর্ব - এসব তো আমাদেরই গল্প, শুধু নিজেরা যেন দেখতে শিখি নি – কুমুদি হাতে ধরে দেখিয়ে দিলেন। ... ...
আরো অনেক গল্প শোনার ছিলো কুমুদি'র কাছে। ভেবেছিলাম একদিন সময় করে বসে বলবো "বলো এবার বড়কুমার ছোটকুমারের তারপর কী হলো'। আর আরো বাকিসব। কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই, কুমুদি গিয়ে উঠলেন তাঁর নৌকোয়। এখন আমাদের এই ঘাটে আর খেয়াতরী বাইবেন না! এর কোনো মানে হয়? তবে তারার পানে চেয়ে তাঁকে ডাকতে হয়না আমার। যে অমন করে মনের ভেতরের কলসীটা ভরে দিতে পারে, তাকে আবার বাইরে কোথাও খুঁজতে যেতে হবে নাকি? ... ...
লেখক যত্ন নিয়ে দেখিয়েছেন যে ইংরেজ আসার আগে মোগল আমলে ভারতে বিচারপদ্ধতি কী ছিল ও কলোনিয়াল শাসক তাতে কী কী পরিবর্তন করল। উনি বিস্তারিত আলোচনা করে দেখাতে চেয়েছেন যে হিন্দু আইন কতটুকু শাস্ত্র মেনে তৈরি হয়েছিল বা তার কোন অংশটুকু সাহেবরা নিজেদের স্বার্থে বিকৃত করেছে এবং তার ফলে মেয়েরা এবং বিধবারা তাদের প্রাচীন প্রথায় যতটুকু সম্পত্তির অধিকার ছিল তাও হারিয়েছে। এবং সর্বশেষে এই আইন প্রণয়নে এবং তাঁর সংশোধনে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ঠিক কী ছিল। ... ...
শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘বৃত্তরৈখিক’ উপন্যাসটি, এক অর্থে, সেই প্রাচীন প্যারাবলের আধুনিক রূপ। এই ধারাবাহিক উপন্যাস ৫৮টি পর্বে বিধৃত। ছোটখাট এপিকের মত এই উপন্যাসটির কালখণ্ডের বিস্তারও কয়েক দশক ধরে। প্রাক-স্বাধীনতা থেকে নব্বইয়ের দশক। দুটো এলাকার মধ্যে পাঠক ঘোরাফেরা করবেন—রাঢ়বাংলায় ঝাড়খণ্ডের সীমান্তের আদিবাসীবহুল এলাকার বনভূমি, সেখানকার বান্দোয়ান ব্লকের একটি অবহেলিত বনগ্রাম খুশিঝোরা, এবং মহানগর কোলকাতা। ... ...
The Economics of Biodiversity: The Dasgupta Review সেই সচেতনতা শিক্ষণের পাঠ নিয়ে এসেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রকাশিত এই রিপোর্টটি জীববৈচিত্র্যের অর্থনীতি বিষয়ে একটি পথপঞ্জী। প্রথম যে বইটি হাতে নিয়ে পরিবেশের অর্থনীতি শিখতে শুরু করেছিলাম, তার নাম The Control of Resources, লেখক পার্থ দাশগুপ্ত। তারপর ওঁর অনেক লেখা পড়েছি, বক্তৃতা শুনেছি। ইংল্যান্ডবাসী স্যার পার্থ দাসগুপ্ত পরিবেশের অর্থনীতি চর্চায় একটি অনিবার্য নাম। ব্রিটিশ সরকারের জন্য তৈরি এই রিপোর্টটি তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও অসীম মনীষার স্বাক্ষর বহন করে। বর্তমান সংকটের মুহূর্তে এই রিপোর্টটি দিগ্দর্শন করে, মানবজাতিকে এগিয়ে চলার পথ দেখায়। ... ...
খালের প্রসঙ্গ ধরে কলকাতার ইতিহাসে প্রবেশ করার গুস্তাখি মাফ; আমি নিরুপায়। যা পড়েছি, তাই বলছি: সতেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে যখন মারাঠা বর্গিরা বারবার বাংলায় হানা দিচ্ছে, গঙ্গাপ্রান্তের এই শহরকে বাঁচানোর জন্য শহরের মাঝবরাবর একটা বিরাট খাল কাটা হয় (যাকে বুজিয়ে দিয়ে তৈরি হয়েছে আজকের সার্কুলার রোড)। বৃথাই খাল-কাটা! বর্গি এল না কলকাতা ঘুরতে, উল্টে সেই পরাক্রমশালী খাল ডিঙিয়ে সিরাজের সৈন্যদল হাহা করে এসে শহরের সবচেয়ে পুরোনো নাট্যশালা 'ওল্ড প্লে হাউজ' ভাঙচুর করে চলে গেল ১৭৫৬ নাগাদ। এতকিছুর পর বোধ হয় অনেকের মনে হয়েছিল, এতবড় একটা খাল কাটলাম, একেবারে কোনোই কাজে আসবে না? সে থেকেই অনুবর্তী নবজাগরণ -- 'খাল-কাটা' টু ‘ক্যালকাটা’। ... ...
গোকারাকন্ডা নাগা সাইবাবা, একজন শিক্ষক, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী, দলিত ও আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনে যুক্ত একজন সমাজকর্মী। জীবনসঙ্গিনী বসন্ত কুমারির জন্মদিনে একটি চিঠিতে তিনি তাঁর বিস্ময় ব্যক্ত করেন। বলেন, আমরা তো সামান্য কর্মী, সামান্য উপায়ে সামান্য মানুষদের জন্য কাজ করি! তাহলে এই পরাক্রমশালী রাষ্ট্র কেন আমাদের আশা, আমাদের ভালোবাসা, আমাদের স্বপ্নকে ভয় পায়? আমরা কি কাউকে কোনও ভাবে কষ্ট দিয়েছি? কারো ক্ষতি করেছি? কেন আমাদের জীবনের ওপর এই আক্রমণ? কেন আমাদের স্বপ্নগুলোকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়? কেন আমাদের আশা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়? ... ...
উনি শেষ পর্যন্ত যখন ‘দ্য মেটামরফোসিস' পাঠটিতে এলেন আমি তখন এটুকু জেনে গেছি যে কিছুই আগে জানা হয়নি আমার। যত দূর মনে হয়, এই ছোটোগল্প পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকেই বোধহয় কাফকার উপন্যাস ‘দ্য ট্রায়াল’-ও পড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওটা পাঠ্য ছিল না বলে পড়বার দরকার নেই এমন তো না। এ যুগের স্যারেদের মতো বেশি তথ্য দিলাম ফলে সব জমিয়ে রাখা জ্ঞানটুকু খরচ হয়ে গেল সেই ভয় ওনার ছিল না। জীবনদর্শনই ছিল জানা ও জানানোর। সিলেবাসে যা আছে, যতটা পড়ানোর কথা, তার থেকে সবসময় বেশি পড়িয়ে দিতেন। অনেক পরে দেখেছিলাম মেপে কাজ করা, মিতব্যয়িতা ও যৌক্তিকতা এইসব সামান্য খোপের মধ্যে আটকে পড়ে থাকার মতো মানুষ উনি নন। ... ...
আনি আর্নো। এ সময়ে ফরাসি সাহিত্য-নক্ষত্রদের অন্যতম। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁর আত্মজৈবনিক লেখাগুলি। তেমনই একটি বই ‘লেজ়ানে’, ‘বছরগুলো’। বিশ্ববন্দিত। পড়লেন পার্থপ্রতিম মণ্ডল ... ...
এই হচ্ছেন কুমুদি! সেই প্রথম আলাপের দিন থেকে শুরু, তারপরেও বহুবার দেখা হয়েছে বিভিন্ন আড্ডায়, আর বারবার দেখেছি আমরা সবাই যখন আড্ডা-হা-হা-হি-হি তে মশগুল হয়ে যেতাম, কুমুদি বরাবর ওই নরম গলায় আমাদের কর্তব্য-কর্ম মনে করিয়ে দিতেন, যদিও গুরুজনসুলভ হম্বিতম্বির লেশমাত্র দেখিনি কখনো। নারী-স্বাধীনতা নিয়ে গুরুগম্ভীর কথাও বলতেন না কখনো, নিজের কৃতিত্বও ঢাক পিটিয়ে বলেননি কখনো – কিন্তু ভাবলে অবাক লাগে, সংসার, গবেষণা, লেখালেখি ... এই প্রবাসে একা হাতে কত কী-ই না সামলেছেন! কোথাও কোনও মেয়ের কৃতিত্ব দেখলে বা অন্য কারুর কাছে শুনলেও কী অপরিসীম খুশি হতেন। মনে আছে ... ছন্দা গায়েন যখন হিমালয়ের বুকে হারিয়ে গেল চিরতরে, তা নিয়ে ভাটিয়ালির পাতাতে কুমুদির লেখায় যে হাহাকার দেখেছি, তা একেবারে মনের গভীর থেকে উঠে আসা, কোন কৃত্রিমতা ছিলনা তাতে। ... ...
সারা ভারত জুড়ে বছরভর যে মাইলের পর মাইল পদযাত্রা চলে এগুলো তারই সামান্য কয়েকটা টুকরো দেখলাম আমরা। এরকম আরো অজস্র হেঁটে-চলার, হাঁটতে হাঁটতে বসে পড়ার, পড়ে মরে যাবার নির্মম কাহিনী রয়েছে সমৃদ্ধ দত্তর লেখা ‘হাঁটার গল্প’ বইয়ে। এই লকডাউনে যারা হেঁটে গেল দেশজুড়ে তারা কজন পৌঁছল গন্তব্যে? কেমন ছিল সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরন্তর হাঁটার অপমানগুলোর কাহিনী? কত রকমের মাইগ্রেশান হয় দেশে? শিক্ষার নিরিখে একেবারে নীচের দিকে থাকা বিহার আর একদম উপরে থাকা কেরলে মাইগ্রেশানের হার এত বেশি কেন? কী সেই অন্তর্নিহিত সমীকরণ যার ফলে দলে দলে মানুষ বাইরে যায়? এইরকম নানা প্রশ্নের উত্তর এই বইতে খোঁজার চেষ্টা করেছেন লেখক। ... ...
ডঃ অনিরুদ্ধ কালা, পেশায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পারিবারিক ও কর্মসূত্রে খুব কাছ থেকে দেখেছেন দেশভাগের শিকারদের। দেখেছেন দেশভাগ কী গভীর ক্ষত রেখে গেছে মনোরোগীদের মধ্যে। ডঃ কালা মাতৃগর্ভে সীমান্ত পেরিয়েছিলেন, স্বাধীনতার কয়েক মাস পরে জন্ম তাঁর, বড় হওয়া ‘রিফিউজি বাচ্চা’ হিসেবে। ছোটবেলায় দাঙ্গা সম্পর্কে জিগ্যেস করলে তাঁর মায়ের বাঁধা উত্তর ছিল ‘আমাদের গ্রামে ওসব হয় নি, অন্য গ্রামে হয়েছে’। এলাকার অন্য বাচ্চাদের মায়েরাও একই কথা বলতেন তাদের। ঐতিহাসিক পার্থ চ্যাটার্জি যাকে বলেছেন একটু সরে সরে বলা। বড় হয়ে বুঝেছেন এ আসলে ভয়াবহ আতঙ্ক ও মানসিক আঘাত থেকে বাচ্চাদের এবং নিজেদেরও সরিয়ে রাখার জন্য বলা। ... ...
এবারে আসি বই প্রসঙ্গে। সবগুলো গল্পই পড়েছি। তিন চারটে গল্প দু-বার করে পড়তে হয়েছে অনুধাবন করার জন্য। তবুও সম্যকভাবে রসাস্বাদন যে করতে পেরেছি সেটি জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে কাহিনীগুলি পড়ে বেশ ভাল লেগেছে। মনে হল এগুলি তিনি গভীরভাবেই গবেষণা ও ক্ষেত্র সমীক্ষা করেই রচনা করেছেন। দেশের ভিন্ন ভিন্ন মানুষের, নানা জনপদের, বিবিধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের, রকমারি যাপিত জীবনের অসম্ভব নিখুঁত নির্মাণ করেছেন দক্ষ প্রকৌশলীর মত। ... ...
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি দেখেছি। আমি নিজেই বিস্মিত হই, আমাদের গদ্য সাহিত্যের তিন স্তম্ভ, তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্য দু'জনকে আমি দেখিনি, তারাশঙ্করকে আমি দেখেছি। দেখাটা আশ্চর্য ব্যাপার মনে হয়। ঈশ্বরকে দেখা যায়, সৃষ্টিকর্তাকে? বড় লেখক তাে সৃষ্টিকর্তা। তিনি চারপাশের বাস্তবতা থেকে নানা উপাদান সংগ্রহ করে নিজের মতাে করে একটি জগৎ নির্মাণ করেন। যা দেখেছেন লেখক তা দিয়ে তাঁর পৃথিবী নির্মাণ করেন, তার ভিতরে আমাদের না দেখা এক পৃথিবী গড়ে ওঠে। বড় লেখক, বড় শিল্পী তা করেন। বাস্তবতা আর কল্পনা মিলে মিশে যায় সেখানে। সীমাহীন কল্পনাই তাে এই ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিসূত্রে নিয়ে গেছে। ... ...