এতক্ষণ যা লিখলাম সে নিতান্ত ভূমিকা মাত্র। আসল যাত্রাপথের বিবরণ চমকপ্রদ, রোমহর্ষক। সবচেয়ে বড় কথা হল সেই পৃথিবী, পৃথিবীকে আবিষ্কারের সেই বিস্ময় আমরা ফেলে এসেছি বহু বছর আগে, এখন আর চাইলেও সেরকম যাত্রা করা সম্ভব নয়। পদে পদে প্রাকৃতিক বাধা বিপত্তি, চৈনিক প্রহরা সে যাত্রাকে করে তুলেছিল রোমহর্ষক, বিপদসংকুল। ঋতু হিসেবে তখন গ্রীষ্মের শুরু হলেও অধিকাংশ জায়গায় বরফ তখনো গলে নি, রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের অনেকটা নীচে। এই অবস্থায় অধিকাংশ যাত্রাপথ লেখক কাটিয়েছেন জুতো এমনকি মোজা ছাড়া। অনেকদূর এগিয়ে তবে এক তিব্বতি যাযাবর দলের থেকে তিব্বতি উলের মোজা কেনেন, আরো পরে প্রায় লাসা পৌঁছিয়ে কেনেন জুতো। আস্তে আস্তে অভ্যাস করেন নুন মাখন মেশানো চা খাওয়া, সম্পূর্ণ অন্ধকারে পাহাড়ি পথে হাঁটা আর কোনও প্ররোচনাতেই মুখ না খোলা, মৌনী হয়ে থাকা। ... ...
চারটে দশের ঘন্টা পড়তে গিয়ে তাই নিজেকেই ফিরে পড়ি। মনে হয় এ কোনো বিশেষ ব্যক্তির স্মৃতি-গাথা নয়, বরং সত্তর আশির দশকে ব্যাপ্ত মফস্বল তার সমস্ত কাহিনি নিয়ে এইখানে জ্যান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ অরহান পামুকের স্মৃতিকথা ইস্তানবুলের মতোই এতে শুধু ব্যক্তি নয়, প্রাধান্য পেয়েছে বিশেষ সময় এবং স্থান। নাই বা হলো সে কোনো বিখ্যাত শহর, কিন্তু মেদিনীপুরের কাঁসাই কী মন্ত্রবলে উত্তরবঙ্গের মানসাই নদীকে স্মৃতির জলোচ্ছ্বাসে মিলেমিশে একাকার করে দিয়েছে। ... ...
মুর্শিদাবাদের সালারের মহরমের বৈচিত্র্য, ব্যান্ডেল গির্জার মা মেরির মূর্তির কাহিনি, পেনেটির দণ্ডমহোৎসবের শ্রীচৈতন্যের প্রিয় গঙ্গাজল নাড়ুর কথা, বাঙালির হেঁশেলে পটলের দোলমা চালু করায় কলকাতার আর্মানি সম্প্রদায়ের মানুষের অবদান। দুই মলাটের মধ্যে ধরা পশ্চিমবঙ্গের নানা অঞ্চলের ইতিহাস ও ইতিকথা। একটি সাম্প্রতিক বই। পড়লেন রামামৃত সিংহ মহাপাত্র। ... ...
দুই লেখক। দুটি সংকলন। একটি আখ্যান সিরিজ। একটি গল্পসমগ্র। উঠে আসে সমাজ ও সামাজিক ধ্বস্ততার ছবি। যাপনের অনুপুঙ্খতায় শহুরে, আধা-শহুরে মধ্যবিত্ত জীবন। পড়লেন সাত্যকি হালদার ... ...
লেখক সঠিকভাবে দেখিয়েছেন যে বৃটিশ কলোনিয়ালিস্টদের ভারত দখল করার লড়াইয়ে ক্রমশঃ দিল্লির মুঘল, দাক্ষিণাত্যের টিপু আদি মুসলিম শাসক ও বঙ্গে সিরাজদৌল্লাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাদের কাছে মুসলিম শাসকেরা ছিল ভবিষ্যতের কাঁটা। সেই মানসিকতায় এশিয়াটিক সোসাইটিতে উইলিয়ম জোন্সের নেতৃত্বে ভারতাবিদেরা গড়ে তোলে হিন্দু রাজত্বের স্বর্ণিম যুগ ও মুসলিম রাজত্বের মধ্যযুগীয় অন্ধকারের এক সরলীকৃত আখ্যান যা চলে আসে ২০০ বছর ধরে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে। এদিকে হ্যালহেড বাংলাভাষার কাঠামো বাঁধতে গিয়ে ব্যাকরণ লিখলেন, কিন্তু প্রচলিত বাংলাভাষার থেকে (অশুদ্ধ?) ফারসী ও দেশি শব্দ ছেঁটে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের কন্যা সিদ্ধ করে সংস্কৃত শব্দ ঢুকিয়ে ‘শুদ্ধ’ করতে উঠে পড়ে লাগলেন। এ’ব্যাপারে তাঁদের প্রবল সমর্থক ও সহায়ক হলেন ফোর্ট উইলিয়ম ও সংস্কৃত কলেজের পন্ডিতেরা। এঁদের চোখে ভাষাকে হতে হবে উচ্চবর্ণের এলিট, কাজেই সংস্কৃত ঘেঁষা। ... ...
সম্প্রতি প্রকাশিত তিনটি বইয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। লিখেছেন নবকুমার ... ...
মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় এর "প্রাগিতিহাস - ভারতবর্ষে পরিযান ও জাতিগোষ্ঠী গঠন" সম্বন্ধে বিশিষ্ট জিন-তাত্ত্বিক অধ্যাপক পার্থ পি মজুমদার বলেছেন, “এটি মানব-বিবর্তন, মানুষের পরিযান এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক সম্পর্ক নিয়ে বাংলা ভাষার প্রথম বই। বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে লেখা নির্ভরযোগ্য এবং অসাধারণ পাঠ যোগ্য এই বই।” সেই বইয়ের আলোচনা করলেন জয়ন্ত দাস। ... ...
অনুবাদের পাশাপাশি এইসমস্ত অসামান্য প্রবন্ধের মধ্যে দিয়ে মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দেখাতে থাকেন লাতিন আমেরিকার রক্তাক্ত ইতিহাস ও তার থেকে নতুন এক লাতিন আমেরিকাকে গড়ে তোলার স্বপ্ন কীভাবে সেখানকার সাহিত্যে ভাষা পাচ্ছে। লাতিন আমেরিকার বিদ্রোহী কবি কথাকারেরা ইউরোপীয় আখ্যান জগৎ থেকে সচেতনভাবে স্বতন্ত্র হতে চেয়েছেন। সেটা রচনার বিষয় ও প্রকৃতি উভয় দিক থেকেই। তাঁদের লেখায় রয়েছে এক বিশেষ ধরনের রাজনৈতিকতা, যা তাদের লেখার বিষয়বস্তু ও রীতিকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। তাঁরা লাতিন আমেরিকার ইতিহাস জুড়ে যে শোষণ চলেছে ঔপনিবেশিক ও নয়া ঔপনিবেশিক যুগে, তাকে ও তার প্রতিক্রিয়াকে নানাভাবে ধারণ করতে চান তাঁদের গল্প উপন্যাসে। সম্পদের লুঠতরাজ, শ্রম শোষণ, স্বৈরতন্ত্র এবং সে সবের প্রতিক্রিয়াজাত দ্রোহ রাজনীতির ব্যাপারটি লাতিন আমেরিকান সাহিত্যে কীভাবে উঠে আসছে অনুবাদ ও প্রবন্ধের মাধ্যমে বাঙালি পাঠককে তার সাথে নিরন্তর পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মানববাবু। ... ...
শব্দখেলায় সোমনাথের পটুত্ব আরও নানা কবিতায় ছাপ রেখে গেছে। ‘মাধব মথুরা মত যাও’ -তে শুধু অনুপ্রাসের চমৎকার ব্যবহারে চমৎকৃত হই না, অবাক দেখি ব্রজবুলির মধ্যে অবলীলায় জায়গা করে নিচ্ছে স্টেশন, গাড়ি, স্টিমার শব্দগুলি। বেখাপ্পা তো নয়ই, বরং অন্য শব্দ বসানো যাবে না এমন অমোঘ। শব্দ বার বার এই পদগুলিতে ব্রহ্ম হয়ে এসেছে, কারণ যে শব্দ, সেইই মাধব! ... ...
এই বইটাতে সুদীপ্ত দু’টি দুরূহ কাজ সম্পন্ন করেছে। প্রথমত সহজে বিজ্ঞান বলা, আর দ্বিতীয়ত বাংলায় বিজ্ঞান বলা। এই দু’টিই যে কতটা কঠিন কাজ – সেটা যারা কখনো চেষ্টা করেছেন, তাঁরাই জানেন। সেই কাজটা আরো কঠিন হয়ে যায়, যখন আপনি এমন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে বসেন, যার অনেকটাই এখনো কুয়াশায় ঢাকা। সমকামিতার কারণ এখনো তর্কাতীতভাবে জানা যায়নি। এর পেছনের একটা কারণ বিষয়টির জটিলতা, অপর কারণটি রাজনৈতিক। সমকামিতা জেনেটিক না এপিজেনেটিক না হরমোনাল না সামাজিক এই নিয়ে বহু পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব আছে। এই জট পাকানো বিষয়টিকে বইটিতে সুন্দরভাবে গুছিয়ে ধাপে ধাপে পরিবেশন করা হয়েছে, যাতে সহজে গ্রহণ করা যায়, কোথাও ধাক্কা খেতে না হয়। যেখানে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে সুদীপ্ত খুব সুন্দরভাবে একদম গোড়ার কথাগুলোও পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ... ...
একগুচ্ছ প্রবন্ধ। বত্রিশ বছর সময়কালে রচিত। বিষয়ের নিরিখে চার ভাগে বিভক্ত—সাহিত্য, ইতিহাস, শিল্প, সমাজ। লেখক অরুণ নাগ। ভাবনার জগতে নাশকতা ঘটানো লেখাগুলির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। পড়লেন শুভময় মণ্ডল ... ...
বাংলাভাষায় জনসাধারণের জন্য বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় নিয়ে আলোচনা একেবারেই চোখে পড়ে না। সেই দিক দিয়ে সুদীপ্তর এই চেষ্টা খুবই প্রশংসার দাবী রাখে। আর সেই সঙ্গে বলতে হবে সুদীপ্তর সহজ করে বোঝানোর বিষয়টিও। সেই কাজটা দেখলে যতই সহজ মনে হোক, আসলে তো সেটা মোটেই সহজ না। এবং সেই বোঝানোর কাছে সুদীপ্ত যে ধরণের ঘটনার সাহায্যে তাদের ব্যাখ্যা করেছেন, তা পড়ার ইচ্ছে বাড়ায়। ... ...
ভালো লেখা যে পাঠকের চোখে পড়বেই, কখনোই তাকে উপেক্ষা করে চাপা দিয়ে রাখা যাবে না – তার প্রমাণ বহুদিন ধরে নিজের লেখালেখির জগতে নীরবে কাজ করে যাওয়া প্রতিভা, যাঁকে আবিষ্কার করতে আমাদের বাঙালি পাঠকের বেশ দেরি হয়েছে। দেরিতে হলেও, প্রতিভা has arrived – এ কথা তো অনস্বীকার্য। ইতিমধ্যেই গল্প বাদ দিয়েও, আমি তাঁর প্রচুর নন-ফিকশন নিবন্ধ পড়েছি নেট দুনিয়ার এদিকে ওদিকে, কোথাও কোথাও বিষয়ের প্রচণ্ড অভিঘাতে স্তব্ধ হয়েছি। গুরুচণ্ডালির পাতায় তাঁর এই বইয়ের অধিকাংশ নিবন্ধ আগে পড়া ছিল, তথাপি তারা আবার আক্রান্ত করল আমাকে, পাঠক হিসেবে। বৃক্ষহত্যা, জল নষ্ট করা, নদীখনন/ নদী হনন, বে-আইনি খাদানে মাইনিং, নিলামে তোলা কয়লা ব্লক, পরিবেশ দূষণ, আলোক দূষণ, অতিমারী, অতিমারীতে মেয়েদের অবস্থা, অতিমারীর লকডাউন ও তাতে প্রশাসনের ভূমিকা, পরিযায়ী শ্রমিকদের চূড়ান্ত দুরবস্থা। নানা বিষয়ে লিখিত ১৯টি লিখন এখানে এক মলাটে। ... ...
কবিতার সঙ্গে আপোষহীন এই মানুষটিকে তাই পড়তেই হবে বর্তমান এবং উত্তর প্রজন্মকে। নিন্দিত এবং নন্দিত হওয়া যেকোনো সৃজনশীল মানুষের যাত্রাপথের পাথেয়, কেউ হয়তো ইচ্ছে করেও অধিক আলোচিত হওয়ার জন্য নিজেকে নিন্দিত এবং সমালোচিত হতে দেন, এসময়টা তখনই আসে যখন সৃজনশীলতার গতিপথে সামান্য ছায়া ঘনিয়ে ওঠে, একজন কবির কাছে এই সময়টা হলো সবচেয়ে কঠিন এবং অন্ধকারতম সময়। কোনো কোনো কবি তখন স্তব্ধ থাকেন, সরিয়ে রাখেন নিজেকে, কেউ বা অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠেন, সমস্ত বিষয়েই আক্রমনাত্মক বিচ্ছুরণ, কবিতা তখন শ্লেষ, বিদ্রুপ এবং কবির স্বভাবগত তীক্ষ্ণ মেধা ও শব্দের ওপর আসুরিক ও ঐশ্বরিক দখলে এক একটি যন্ত্রণাদায়ক উল্কির মতো বিঁধতে থাকে পাঠককে, এই চলমান সময়ে কবি প্রবুদ্ধসুন্দরের লেখাকে আমার তাই মনে হয়েছে। ... ...
সম্প্রতি প্রকাশিত তিনটি বইয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। প্রথম দুটি লিখেছেন রন্তিদেব। তৃতীয়টি লিখেছেন নবকুমার ... ...
এরকম আকস্মিক চলে যাওয়ার ঘটনা আমি কানে বহুবার শুনে থাকলেও কখনও চোখে দেখিনি।। এমন একজন মানুষ যিনি আগের মুহূর্তে ছিলেন প্রাণমন দিয়ে জিজ্ঞাসু, ছিলেন হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল, একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি বলে বেরিয়ে গেলেন হলের বাইরে, তারপর প্রায় হাঁটতে হাঁটতে পাড়ি দিলেন কোন নক্ষত্রলোকের উদ্দেশে সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আজও খুঁজছি। নিশ্চয়ই আরও অনেকেই খুঁজছেন। ... ...
সুদীপ বসুর কবিতা। অন্যায়ের প্রতিস্পর্ধী চিৎকার। স্বতন্ত্র কাব্যভাষায় এ কবিতা মানবীয় অভিজ্ঞতাকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাকে জাদুর মোড়ক দিয়ে নানা অর্থব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে। লিখছেন কথাকলি জানা ... ...
মনে হয়, আন্তরিকতা একটা চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য। এ ঠিক অভ্যাসসাধ্য নয়, বরং জন্মসূত্রে অর্জিত। সেই আন্তরিকতার সোনার কাঠির যাদু-স্পর্শ যেখানে যেখানে ছোঁয়, তারা সব জ্যান্ত হয়ে ওঠে। ভালো লেখা থেকে মহৎ সাহিত্যে উত্তরণের হয়ত একটা ধাপ এটা। আন্তরিকতাটুকু তার কমণ্ডলু থেকে মন্ত্রপূত জল ঢেলে দিল তার লেখার খসড়া খাতায় – আর তাতেই সে লেখার ভিতরের স্কুল ঘরের ভিত খোঁড়া হ’ল, গাঁথনি হ’ল সিমেন্টের, ছাত ঢালাই, দেওয়ালের ইট, প্লাস্টার, দরজা-জানলা স্থাপন, চুনকাম, জানলার বাইরের মাঠ, তাতে মাঝখানের নিমগাছ – স-ও-ব। অন্য দিকে, সেই স্কুলে পড়া সব ক্লাসের সব সব ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্কুলের অন্যান্য কর্মচারী, মায় হজমি-ওয়ালা। স্কুলে পৌঁছনোর রাস্তা, স্কুল যাওয়ার বাস, বাসের ড্রাইভার, কন্ডাক্টর – সব সব কিছু জ্যান্ত হওয়ার পর, তবে সেই স্কুলের অনুষ্ঠানে একটি রিহার্সালের দিন আসবে। আমরা গোগ্রাসে পড়তে পড়তে যাতে হারিয়ে যেতে পারি, এত স্পষ্ট যে ছুঁয়ে দেখতে পারি সেই স্কুলের দেওয়াল। আর সেই একটা ঘর থেকে ভেসে আসা আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানের রিহার্সালের শব্দ। আর এমনই এক রিহার্সালে হঠাৎ চলে আসেন ভুলো-দিদিমণি চিত্রলেখাদি - আমরা প্রতিটি পাঠক নিজ নিজ ভাবে অনায়াসে প্রবেশ করি “একটি ত্রেতাযুগের ইশকুলের গল্প” তে। অবাধ। অনায়াস। ... ...
দেলিরিও। ইংরেজি তরজমায় ‘ডিলিরিয়াম’। বাংলায় অর্থ ‘প্রলাপবিকার’। লেখক লাউরা রেস্ত্রেপো। প্রথমজীবনে স্কুলশিক্ষক। পরে সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। এ উপন্যাসে মেলে নারকো-টেররিস্ট পাবলো এস্কোবার কীভাবে একটি দেশের সর্বনাশ করেছিল তার ছবি। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের মতে, সাংবাদিকতা, তদন্ত এবং সাহিত্যগুণ তিনটির সম্মিলন ঘটিয়েছেন লেখক এই উপন্যাসে। পড়লেন জয়া চৌধুরী ... ...
মাটি ভাগ হয়, দেশ ভাগ হয়, মানুষ, পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জন্ম জন্মান্তর ধরে গড়ে ওঠা গ্রাম, ঝিল, পুকুর, বনবাদাড়, ঘরবাড়ি বিদীর্ণ করে দেয় দিল্লির শাসকের কাঁচি। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী আসিফ সামিনার পরিবার এপার-ওপার হয়ে যায়, তাদের সদ্য প্রস্ফুটিত প্রেমের মাঝে রাষ্ট্র খুঁটি পুঁতে দেয়। প্রবল ঝুঁকি নিয়ে তারা খণ্ডিত হয়ে যাওয়া নাজির বিলের কাছে দেখা করে, সুখী দাম্পত্যের স্বপ্ন দেখে, তারপর একদিন সীমান্তরক্ষীর গুলিতে দুই উজ্জ্বল তরুণ তরুণী পাচারকারীর লাশ হয়ে যায় .... সম্পাদক বিমল চক্রর্তীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, কারণ ত্রিপুরার দেশভাগের গল্প একসাথে গ্রন্থিত হয়েছে এরকমটা অন্তত এই প্রতিবেদকের আগে কখনো নজরে আসেনি। সেদিক থেকে এই সংকলনটি অনন্য ... ... ...