মুশকিল হচ্ছে দু'জায়গায়। এমনটা নয় যে আমাদের রাজ্যে খুব শান্তিপূর্ণ ভোট হয় এবং স্থানীয়রা বুথে গিয়ে ঝামেলা করেনা। কিন্তু, শীতলকুচির ঘটনায় যতগুলো ন্যারেটিভ বাজারে ঘুরছে তাতে আমরা মেনেই নিচ্ছি যে স্থানীয়রা ওখানে ঝামেলা করেছিল। এখন অব্দি কোনো প্রমাণ নেই। স্থানীয়রা এরকম কোনো ঘটনার কথা স্বীকার করছেন না। কিন্তু আমরা, ব্যানানা রিপাবলিকের ম্যাঙ্গো পাবলিকেরা প্রকারান্তে মেনে নিচ্ছি যে তারা ঝামেলা করেছিলেন। এবং এরাজ্যে যেহেতু, সংখ্যালঘুদের একটা অংশ বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টির মাসলম্যান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাতে এ ভাবনা আরও প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের মাসলম্যান হিসেবে ব্যবহার করার তালিকায় মুসলিম বিদ্বেষী প্রচার চালানো বিজেপিও পিছিয়ে নেই। চব্বিশ পরগণার ত্রাস ফিরোজ কামাল গাজী ওরফে বাবু মাস্টার এইমুহুর্তে বিজেপির সম্পদ। প্রসঙ্গত, আমাদের রাজ্যের সংখ্যালঘুরা প্রায়ই গলা ফাটান যে তাদের রাজনৈতিক দলগুলি ব্যবহার করে থাকে এবং অভিযোগটি অসত্য নয়। সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেরা কোন যুক্তিতে নিজেদের এতদিন ধরে ব্যবহৃত হতে দিচ্ছেন তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। ... ...
পরিশেষে এসেছে আমার আপনার নাম। হ্যাঁ, নাগরিক সমাজ। ব্যক্তিগতভাবে যে কথাগুলো আমি সুযোগ পেলেই আপনাদের গেলাবার চেষ্টা করি, সেই আমার মন কী বাত- পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে জনসাধারণকে যুক্ত করা। বিশ্ব জুড়ে এখন ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার কথা বলা হচ্ছে। শুধু সরকার, কমিটি আর কমিশন নয়, পরিবেশ বাঁচানোর লড়াই লড়তে হবে আমাদের সবাইকে। তাই বাম জোটের ইশতেহারে পরিবেশের নীল নকশা দেখে আশান্বিত হলাম। ... ...
এআইএডিএমকে-র এই ফল কিন্তু আগামী দিনে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তামিল রাজনীতিকে। নানাভাবে। পশ্চিমবঙ্গে যেমন দুই প্রধান দল মিলে ভোট পেয়েছে ৮৬%-এর মত, তামিলনাড়ুতেও ছবিটা একই রকমের। সেক্ষেত্রে দুই প্রধান জোট ভোট পেয়েছে ৮৫%-এর বেশি। দুই প্রধান দ্রাভিড়িয়ান পার্টির মধ্যেই তাই প্রধানত ওঠাপড়া করেছে তামিল সমর্থনের ভিত্তি। ... ...
সাধারণভাবে তামিলদের দুর্নীতি নিয়ে তত সমস্যা নেই। জনতা জানে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল দুর্নীতিগ্রস্ত, এবং সে নিয়ে তাদের খুব কিছু যায় আসে না। এ ব্যাপারে কামাল হাসানের উদাহরণ উপযুক্ত হতে পারে। তিনি স্বচ্ছ রাজনীতির কথা বলেছিলেন, বলেছিলেন বিকল্প রাজনীতির কথা। তিনি নিজে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন, তাঁর দল একটি আসনও পায়নি। তাঁদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ২.৫ শতাংশ। ... ...
সব ভালো জিনিসই এক সময় শেষ হয়। ভোটদান শেষ হলো। আবারো নানাবিধ হিসাবনিকাশ ও কাগজপত্রের পর, এবার ফেরার পালা। সব পাখী ঘরে ফেরে, কবি এরকম অযৌক্তিক দাবি করে থাকলেও, সব ভোটকর্মী ঘরে ফিরবেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। ফেরার সময় হলে দেখা যায়, সোনার তরীর মত ট্রেকারের স্থান অকুলান। আসার সময় একটা ট্রিপে পাঁচজনকে নিয়ে এসেছে ট্রেকার, ফেরার সময় পাঁচজন এবং খেলার ফল সমেত ইভিএম ---সবার জায়গা নেই। ... ...
বাস্তবে কী হয় সেটা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুন্ডে। ইন্ডিয়া টুডের খবর অনুসারে, ২০১৩ সালে তিনি প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন যে ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার খরচ হয়েছিল মাত্র ৯০০০ টাকা আর ২০০৯ সালের নির্বাচনে তাঁর কেন্দ্রে তিনি ৮ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন। আলোড়ন উঠেছিল তাঁর এই কথায়। ২০০৯ সালে তাঁর কেন্দ্রে খরচের উর্ধ্বসীমা ছিল ২৫ লাখ টাকা। মজা এই যে, নির্বাচনী কমিশনের কাছে মুন্ডের খরচের যে হিসেব জমা দেওয়া হয়েছিল, তাতে তাঁর নির্বাচনী খরচ বলা হয়েছিল মাত্র ১৯ লাখ টাকা। ... ...
আমরা খুব কম শুনি। আমরা অনেক বেশি বলি। আমরা বলতে ভালোবাসি। আমরা বলতে চাই। বলাটা খুব জরুরি। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের শোনাটাও তো ভীষণ জরুরি। এবং আমরা বহুলাংশে শুধু আমাদের কথা শুনি। এমনকি, আমাদের যে সব রাজনৈতিক দল শ্রমজীবী মানুষের রাজনীতি করেন বলে মনে করেন, দাবি করেন— সে দাবি হয়তো অনেকাংশে সত্যিও বটে— তাঁরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষকে তাঁদের কথা বলেন, শ্রমজীবী মানুষের কথা তাঁরা তুলনায় অনেক কম শোনেন। আমার মনে হয়, এই শোনার অভ্যাস এখন আমাদের অনেক বেশি তৈরি করতে হবে। যদি সেটা তৈরি করতে পারি, তা হলে দেখা যাবে, আমাদের রাজনৈতিক প্রচারের মধ্যে, আমাদের রাজনৈতিক কথোপকথনের মধ্যে প্রথমত আমরা কী নিয়ে কথা বলব এবং দ্বিতীয়ত, আমরা সেই কথাগুলো কীভাবে বলব, দুটোর ক্ষেত্রেই হয়তো আমরা আরও অনেক বেশি মানুষের কাছে অনেক বেশি করে পৌঁছতে পারব। ... ...
সাধারণভাবে বিজেপিকে হারানোর আহবান এবং নিজেদের প্রার্থী বা অন্য কমিউনিস্ট দলগুলিকে ভোট দেওয়ার আহবান আমাদের বিচারে স্ববিরোধী নয়। কারণ বিজেপিকে হারানোর পাশাপাশি আমাদের কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তিকে নির্বাচনী সংগ্রামেও টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব রয়েছে। কারণ শেষ বিচারে ফ্যাসিবাদী বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে হারানোর ক্ষমতা কমিউনিস্ট বিপ্লবীদেরই রয়েছে। অন্যান্য মূলধারার দলগুলিকে ব্যবহার করে বিজেপিকে সাময়িকভাবে ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে মাত্র, কিন্তু চূড়ান্ত অর্থে পরাজিত করা সম্ভব নয়। ... ...
এই রাজ্যের অন্যতম প্রধান "নিরপেক্ষ" সংবাদ পত্রটি এ হেন সংবাদ পরিবেশনের আগে সলতে পাকিয়ে গিয়েছেন অনেক দিন আগে থেকেই। সাম্প্রদায়িক, চুড়ান্ত পুরুষতান্ত্রিক অসভ্য নেতা নেতৃবৃন্দের পুঙ্ক্ষানুপুঙখ দৈনিক কার্যকলাপ তারা সংবাদপত্র দ্বারা প্রচারিত করে গিয়েছেন। তা ছাড়াও যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছেন ঋণে জর্জরিত একঝাঁক সিরিয়াল ও সিনেমার মধ্যমানের তারকারা। যখনই তারা এই দুটি দলের ছাতার তলায় এসেছেন বা দল বদল করেছেন। তাদের পছন্দ অপছন্দ প্রেম বা প্রেমহীনতার সবটুকু গিলিয়ে খাইয়েছেন সংবাদপত্রে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। এর চেয়ে জনকল্যানকারী অন্য কোনও পথ এরা পান নি - বলে বিশ্বাস হয় নি। ... ...
আড়া হয়ে মুচিপাড়া ফেরার পথে, আড়া হোস্টেল মোড়ের কাছে মাঝের পাড়ার আর একটা পথ। রিক্সায় বসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব চালক। নাম অজয় যাদব। কাকে ভোট দেবেন? "দেবো। কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল, দেব একজনকে।" প্রতিবার এক একটা দলকে সে ভোট দেয়। এবার এখনও সে ঠিক করেনি কাকে ভোট দেবে। ... ...
জলপাইগুড়ির রূপান্তরকামীদের বিষয়টি কানে গিয়েছে খোদ নারী ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজার কানেও। তিনি জেলাশাসককে চিঠিও দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। দু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আপাতত, ভোট হওয়া বা না হওয়া কোন দিক থেকেই রূপান্তরকামীদের আশা প্রত্যাশার যোগ বিয়োগের হিসাব নেই বললেই চলে ... ...
দেড় বছর ধরে যে অতিমারী চলছে, তার মোকাবিলায় রাজ্যের তৃণমূল সরকার আর কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মধ্যে কোন তফাত দেখলেন কি ভোটাররা? তারও উত্তর রবিবার নির্বাচনের ফলে থাকবে হয়ত। নাকি থাকবে না? সিপিএমের কমিউনিটি ক্যান্টিন কি ভোটারদের প্রভাবিত করেছে? নাকি বিপদের সময়ে ত্রাণমূলক কাজ করার সঙ্গে সরকার চালানোর যোগ্যতার কোন সম্পর্ক নেই --- এমনটাই ভোটারদের রায়। সে প্রশ্নের জবাবও খুঁজছিলাম। টিভিতে জনমত সমীক্ষা দেখানোর সময় যেভাবে ইস্যুভিত্তিক মত দেখানো হত, বুথফেরত সমীক্ষায় তেমন দেখলাম না। ফলে এ প্রশ্নের উত্তরও পেলাম না। ... ...
এই ২০২১ সালের মার্চ মাসের ১৬ তারিখে 'টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া' কাগজে একটা খবরে চোখ আটকে গেল। খবরটির মোদ্দা কথা হল, নোটা চালু করার অনুমতি দেওয়ার আট বছর পরেও আমাদের মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, সেন্টার এবং ইলেকশন কমিশনের কাছে জানতে চাইছেন, নোটার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা কোনোভাবে কোনো কেন্দ্রে সর্বাধিক হয়ে দাঁড়ালে, আইনত, সেই কেন্দ্রের দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোট পেয়ে জয়ী প্রার্থীকে কি পরাজিত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে! ... ...
থ্রি নট থ্রি রাইফেল বাগিয়ে ধরে আড়ষ্ট কনস্টেবল বললেন- 'স্যার, আমাকে একটু গার্ড দিয়ে রাখুন। গুলি চালানোর অর্ডার নেই, শুনেছি এইসব অঞ্চলে বন্দুক ছিনতাই হয়। বন্দুক গেলে চাকরিতে টান পড়বে' ২০২৩ এর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে আসা রাজ্যপুলিশের নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় অস্থির, ভোটার বা ভোটকর্মী কোন ছাড়? অঞ্চলটি আমডাঙা। পুলিশের মুখে এ-কথা শুনে ভোটকর্মীরা হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠে পারছেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশা তাঁদের। ... ...
ধরা যাক আমাদের n-সংখ্যক ভোটার আছে, n বিজোড় সংখ্যা (অর্থাৎ “টাই” অসম্ভব)। প্রত্যেক ভোটারের ঠিক বিকল্পে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা ধরা যাক pc, এবং সবার ভোট পড়ে গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে “মেজরিটি রুল” অনুযায়ী, অর্থাৎ যে সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, সেটিই আমাদের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। কনডরসে-র উপপাদ্যে এও ধরে নেওয়া হয়, যে, প্রত্যেক ভোটার ‘স্বতন্ত্র’, ‘দক্ষ’ এবং ‘আন্তরিক’। ‘স্বতন্ত্র’ – অর্থাৎ যে যার নিজের ভোট দিচ্ছেন বা একজনের পছন্দ আরেকজনকে প্রভাবিত করে না। ‘দক্ষ’ – অর্থাৎ, প্রত্যেকের ঠিক বিকল্প খুঁজে নেওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেকের থেকে বেশি, যত সামান্যই হোক, এক্কেবারে র্যান্ডম গ্যেস অর্থাৎ ইকির-মিকির-চামচিকির করে আন্দাজে যা-ইচ্ছে-তাই একটা বোতাম টিপে দেওয়ার থেকে তার প্রজ্ঞা বা দক্ষতা একচুল হলেও বেশি। আর শেষ অ্যাজ়াম্পশনের কথা আগেও লিখেছি, ভোটার-রা ‘আন্তরিক’, সিরিয়াস-ও বলা যায়—কেউ ইচ্ছে করে ভুলভাল ভোট দিয়ে নষ্ট করছেন না। ... ...
উপরোক্ত কথাগুলো বলা এই কারণে যে যতটা সম্ভব সুষ্ঠু ভাবে ভোট করা যায় যদি একজন শক্ত, বজ্রকঠিন ব্যক্তি, যিনি নিয়ম জানেন, সংবিধান জানেন, তিনি যদি পুরো প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকেন। সরকার, তা সে যত শক্তিশালিই হোক, তাদের খেয়াল খুশি মতো সেই ব্যক্তিকে পরিচালিত করতে পারে না। আমাদের রাজ্যে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়িয়ে গেছে যে নির্বাচন, বিশেষ করে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলেই খুনোখুনি হবে, বহু লোক মারা যাবে। এটা যেন ভবিতব্য, এর অন্যথা যেন হতে পারে না! ... ...
কর্মস্থল বাঁকুড়ায়, ভোট হুগলীতে। আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম ভোট দিতে যাবো না। বাঁকুড়া থেকে সিঙ্গুরে গিয়ে ভোট দিয়ে সেই দিনেই ফেরা পোষাবে না। পরে মতবদল হল। সিদ্ধান্ত নিলাম যাব। কারণ কয়েকটা বিশেষ কারনে আমাকে একবার বাড়ি ফিরতেই হবে। তাই ভোটের দিনেই ফিরি, রথ দেখা কলা বেচা একসাথে হবে... সেদিন সকাল সাড়ে ছটায় বের হলাম। এখান থেকে দুর্গাপুর স্টেশন ৩০ কিমি প্রায়। রাস্তায় পুরো শান্ত পরিবেশই পেলাম। দিকে দিকে নানা দলের দলীয় পতাকা উড়ছে। ট্রেনে চলেছি, সেদিন ট্রেনটাও অনেকটা ফাঁকা, তাই জানালার ধারে বসে, মাঠ ঘাট দেখতে দেখতে... কোথাও ভোট হচ্ছে, ভোটের লাইন দেখা যাচ্ছে ... দূর থেকে অন্তত কোনো গন্ডগোল চোখে পড়ল না। ... ...