হুররে! এই তো লিভিংস্টোন! নিশ্চয়ই লিভিংস্টোন! আর কেউ হতেই পারে না; তবে কিনা - অন্য কেউ হতেও তো পারে - পশ্চিম উপকূলের থেকে আগত কেউ - বা হয়তো তিনি বেকার! উঁহু; বেকারের মুখে তো সাদা দাড়ি নেই। কিন্তু এবার আমাদের দ্রুত এগোতে হবে, পাছে আমরা আসছি শুনে তিনি আবার পালিয়ে যান। ... ...
লিভিংস্টোন এখনও অধরা। এদিকে রসদ ফুরিয়ে আসছে। স্থানীয় সর্দারদের ভেটের দাবি এড়াতে গ্রাম এড়িয়ে গোপনে চলার চেষ্টা। উহহাদের এলাকা পার। ... ...
১০ই নভেম্বর। শুক্রবার। সমুদ্রের ধারের বাগামোয়ো থেকে ২৩৬তম দিন। আর উন্যানয়েম্বে থেকে ৫১তম দিন। মোটামুটি পশ্চিম-নৈর্ঋত কোণে উজিজি। হাঁটার সময়, ছয় ঘণ্টা। দারুণ সুন্দর, আনন্দের সকাল। তাজা, ঠান্ডা বাতাস। ধরিত্রী আর তার সন্তানদের দিকে আকাশ ভালোবাসার হাসি ছড়িয়ে দিচ্ছে। গভীর অরণ্যের মাথায় উজ্জ্বল তাজা পাতার মুকুট; জঙ্গলে ঢাকা নদী পাড়ের পান্না-সবুজ ছায়ায় ছায়ায় এমুকুটির জলস্রোত কলকল শব্দে ছুটে চলেছে, যেন আমাদের চ্যালেঞ্জ করছে, কে আগে উজিজি পৌঁছাতে পারে। ... ...
বাসগুমটির কাউন্টারের কাকুর কথামত ঠিক তিন ঘন্টাতেই বাস এসে পৌঁছালো নামখানায়। একটা গঞ্জ মত জায়গা, নদীর পারের গঞ্জ। অনেকটা মেঘনাপারের ভৈরববাজারের মত। এই নদীটির নাম হাতানিয়া দোয়ানিয়া। দেখে আশ্চর্য হলাম, নদীতে সেতু নেই। কলকাতার এত কাছে এই রকম একটা জায়গা আছে, যার এপার-ওপার দুপারেই বাস চলে কিন্তু নদী পেরুতে হয় নৌকায় করে! ভাবতে পারিনি সত্যিই। ... ...
৭ই অক্টোবর, শনিবার, শিবির গোটানো হল। মাংস-প্রেমী পেটুক এনগোয়ানাদের খুবই দুঃখ। তারা ভোরবেলা আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য বোম্বেকে ধরেছিল। ওখানে আরও একদিন থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানানোর জন্য। সবসময়ই এরকম হয়। মাংস পাওয়া গেলে আর কাজ করতে ইচ্ছে করে না। ... ...
এক রাতে আমার নোট-বই বের করলাম, আর তাঁর মুখ থেকে তাঁর ভ্রমণ সম্পর্কে বক্তব্য শোনার জন্য বসলাম; নিঃসংকোচে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বললেন। তার একটি সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হল। ডাঃ ডেভিড লিভিংস্টোন ১৮৬৬ সালের মার্চ মাসে জাঞ্জিবার দ্বীপ থেকে রওনা দেন। পরের মাসের ৭ তারিখে তিনি সদলবলে কিন্ডিনি বে থেকে আফ্রিকার অভ্যন্তরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাঁর দলে ছিল বোম্বাই থেকে আসা বারোজন সিপাই, কোমোরো দ্বীপপুঞ্জের জোহানার নজন লোক, সাতজন মুক্তি পাওয়া দাস, আর দু'জন জাম্বেজির লোক। তাদের পরীক্ষামূলক ভাবে দলে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ছটা উট, তিনটে মোষ, দুটো খচ্চর আর তিনটে গাধা। এইরকম মোট ত্রিশজন লোক সঙ্গে ছিল, যাদের মধ্যে বারোজন যেমন সিপাই ছিল, যারা দলকে পাহারা দেবে। তাদের বেশিরভাগই এনফিল্ড রাইফেল দিয়ে সজ্জিত । সেই রাইফেলগুলো বোম্বাই-এর সরকার ডাক্তারকে উপহার দিয়েছিল। ... ...
এইভাবে যতদূর সম্ভব গবেষণা করে, এলিফ্যান্টাইন বা তার থেকেও দূরে গিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আর অন্যের মুখের কথা থেকেও এইটুকুই জানতে পেরেছি। এলিফ্যান্টাইন শহর পেরিয়ে আরও উজানে যেতে গেলে এলাকাটা খাড়া উপরের দিকে উঠে গেছে, তাই, এখানে, নৌকার দুদিকে দড়ি বেঁধে এগোতে হয়, যেমনটা লাঙ্গলে বলদ জোতার সময় করতে হয়; কিন্তু দড়ি ছিঁড়ে গেলে স্রোতের টানে নৌকা ভেসে চলে যায়। এইভাবে চার দিনের পথ চলা। এখানে নীল নদ এঁকেবেঁকে চলে। বারো শোয়েনি পথ এইভাবে চলতে হয়; আর তারপরে একটা সমভূমি আসে, সেখানে নীল নদ একটা দ্বীপের চারপাশে প্রবাহিত হয়; এর নাম ট্যাকোম্পেসো। এলিফ্যান্টাইনের লাগোয়া উজান এলাকায় ও দ্বীপটার অর্ধেকাংশে ইথিওপিয়ানরা বাস করে; বাকি অর্ধেক অংশে মিশরীয়রা থাকে। এই দ্বীপের কাছেই একটা বিস্তীর্ণ হ্রদ রয়েছে, যার সীমানা বরাবর ইথিওপিয়ান যাযাবরদের বাস। ... ...
১৮৬৯ সালের অক্টোবরে আমাকে লিভিংস্টোন আবিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মিঃ বেনেট টাকা নিয়ে বসে ছিলেন আর আমিও যাওয়ার জন্য তৈরি। পাঠক, লক্ষ্য করবেন যে আমি কিন্তু সরাসরি তাঁকে খুঁজতে চলে যাইনি। এই কাজ শুরু করার আগে আমার আরও অনেক কাজ ছিল, অনেক হাজার মাইল পেরোতে হয়েছিল। ধরুন যে, প্যারিস থেকে সোজা জানজিবারে পৌঁছে গেলাম, সাত বা আট মাস পরে, সম্ভবত, উজিজিতে আমাকে পাওয়া যেত তাহলে, কিন্তু লিভিংস্টোনকে তখন সেখানে পাওয়া যেত না; তিনি তখন লুয়ালাবাতে ছিলেন; এবার আমাকে তাহলে মান্যুয়েমার আদিম বনের মধ্য দিয়ে, লুয়ালাবার আঁকাবাঁকা পথ ধরে, তাঁকে ধাওয়া করে কয়েক শত মাইল ঘুরে ঘুরে মরতে হত। ... ...
লিভিংস্টোন ও আমি, টাঙ্গানিকা হ্রদের উত্তর প্রান্ত দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করার পরে যদি জিজিদের অযৌক্তিক দাবি বা ভয়ের কাছে নতি স্বীকার করে, রুসিজি নদীর সমস্যার সমাধান না করেই উন্যানয়েম্বেতে ফিরতে বাধ্য হতাম, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দেশে ফিরে সকলের ঠাট্টা তামাশার পাত্র হতাম। কিন্তু জানতাম যে জিজিদের, বিশেষ করে ওই হাস্যকর বর্বর কানেনা সর্দারকে দলে নেওয়ার জন্যেই ক্যাপ্টেন বার্টন ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই আমরা সতর্ক ছিলাম। বুঝেছিলাম যে এই ভৌগলিক সমস্যাটার সমাধানের ক্ষেত্রে এই ধরনের লোকেরা আমাদের কোন সাহায্যই করবে না। আমাদের সঙ্গে কয়েকজন ভাল নাবিক ছিল, খুবই অনুগত। ভাবলাম, শুধু একটা ক্যানো ধার করতে পারলেই সবকিছু ঠিকঠাক হবে। ... ...
উত্তরকাশী জেলায় ৩০২৪মিটার উচ্চতায় প্রাকৃতিক হ্রদ ডোডিতাল-এখান থেকেই জন্ম নিয়ে আশিগঙ্গা নদী মিশেছে গঙ্গাতে।পথ শুরু হয়েছে উত্তরকাশী থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের সঙ্গমচট্টি থেকে।আগোডা,বেবরা হয়ে ডোডিতাল।প্রথমদিন পেরোতে হবে ৮ কিলোমিটার,গন্তব্য বেবরা গ্রাম, এপথের শেষ গ্রাম।থাকা যায় আগোডাতেও,গ্রামের লোকের বাড়িতে হোম-স্টে প্রথায় অথবা নিজেদের তাঁবুতে।ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ গিয়েছে।প্রথম দু কিলোমিটার অবশ্য ‘পথ’ কিনা তা নিয়ে ঘোর সংশয় জাগে।গাইড জানালেন ২০১৩ সালের বৃষ্টি,ধ্বসে ভেঙ্গে গিয়েছে পথ।এখন তো সবে ২০১৮,সারানোর সময় হয়নি বোধহয়।মনে পড়ল –হৃষিকেশ থেকে শুরু করে সারা রাস্তা জুড়ে দেখে এসেছি কর্মকাণ্ড,চারধামের জন্য তৈরি হচ্ছে সুপ্রশস্ত রাজপথ পাহাড় কেটে, গাছ কেটে।সময় কোথায় গ্রামের পথের দিকে নজর দেওয়ার, হোক না সে গ্রামের একমাত্র পথ।সে যাক,দু কিলোমিটার পর ‘পথ’ চোখে পড়ল। ... ...
সবাই জানে যে হাতির দাঁতের ব্যবসা কেন্দ্রগুলো নীল নদের পেথেরিকের নামাঙ্কিত শাখা ধরে প্রায় ৫০০ মাইল অবধি ছড়ানো। এই কথাটাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে যখন বলা হয়েছিল যে গোন্ডোকোরো, ৪° উত্তর অক্ষাংশে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুট উপরে অবস্থিত আর এদিকে যে জায়গায় থামা হয়েছিল সেই ৪° দক্ষিণ অক্ষাংশের জায়গাটারও উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে ২০০০ ফুটের সামান্য বেশি। দুটো নদীই সমুদ্র থেকে ২০০০ ফুট উঁচুতে, একে অপরের থেকে ৮° অক্ষাংশ দুরে, অথচ দুটোকে এক ও একই নদী বলা হচ্ছে, এই ব্যাপারটা কিছু মানুষের কাছে একটা ভারি আশ্চর্য কথা বলে মনে হতে পারে। তবে বিস্ময় প্রকাশে লাগাম পড়ানো ভাল, এটা বুঝতে হবে যে এই বিপুল, বিস্তৃত লুয়ালাবা মিসিসিপির চেয়েও চওড়া, এটা একটা হ্রদজাত নদী; মাঝে মাঝেই এত বিপুল-পরিমাণ জল একেকটা ছড়ানো হ্রদ তৈরি করে ফেলেছে; তারপর আবার খানিক সরু হয়ে চওড়া নদীর চেহারা নিয়েছে, আবার আরেকটা হ্রদ তৈরি করেছে, আর সে কারণেই, ৪° অক্ষাংশ বা তার থেকেও উত্তরে ডাক্তার আবার একটা বড় হ্রদের কথা শুনেছিলেন। যতক্ষণ না লুয়ালাবা, যেখানে ডাক্তার থেমেছিলেন আর বাহর গজলের দক্ষিণতম বিন্দু, যেখানে পেথেরিক এসেছিলেন, এই দুটি নদীর উচ্চতা নিখুঁত নির্ভুল ভাবে জানা যায়, ততক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। ... ...
শিবিরে পৌঁছানোর সামান্য আগে আমি একটা চিতাবাঘের দিকে গুলি ছুঁড়লাম, কিন্তু মারতে পারলাম না, ব্যাটা ছুটে পালাল। রাতভর এমটাম্বু নদীর কাছে সিংহেরা গর্জন করতে থাকল। ঘন জঙ্গলের গহীন গোধূলিবৎ-ছায়ায় আমরা হাঁটতে থাকলাম।লম্বা পথ হাঁটায় বনের ছায়া আমাদের প্রখর তপনতাপ থেকে রক্ষা করেছিল। পরের দিন আমরা শিবিরে পৌঁছালাম। উজিজি থেকে আগত একদল আরব এই শিবিরটা সদ্যই তৈরি করেছে। তারা এই রাস্তা ধরে উন্যানয়েম্বের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। এতটা আসার পর মিরাম্বো আর আরবদের মধ্যে যুদ্ধের খবরে শঙ্কিত হয়ে তারা ফিরে যায়। আমাদের পথ ছিল রুগুফু নদীর ডানধার ধরে। একটা চওড়া মন্থর জলস্রোত, মাটাটা নলিকা ও প্যাপিরাসের ঝোপে আটকা-পড়া জলধারা । সর্বত্র মোষদের পায়ের ছাপ আর গাদা গাদা নাদা পড়ে আছে। যা সব চিহ্ন তাতে কাছাকাছি যে গন্ডারও রয়েছে তা পরিষ্কার। নদীর কাছেই একটা ঘন গাছের ঝোপড়ার মধ্যে একদল দাড়িওয়ালা, সিংহ সদৃশ বানরের দেখা পেলাম। ... ...
লিভিংস্টোন এখনও অধরা। এদিকে রসদ ফুরিয়ে আসছে। স্থানীয় সর্দারদের ভেঁটের দাবি এড়াতে গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গোপনে চলেছে কাফেলা। ... ...
আরবরা যে দেশেই যাক না কেন, নিজের জাতের নাম ডোবাতে তারা সবসময় মুখিয়ে থাকে। তবে এর কারণ অবশ্য আরবের প্রকৃতি, গায়ের রং বা জাত নয়, এর একমাত্র কারণ হল কেবলমাত্র দাস-বাণিজ্য। যতদিন জাঞ্জিবারে দাস-ব্যবসা চলবে, ততদিন এই এমনিতে উদ্যমী আরবদের বিরুদ্ধে গোটা আফ্রিকার আদিবাসীদের ঘৃণা জেগে থাকবে। জাঞ্জিবার থেকে আফ্রিকার অন্দরে যাওয়ার মূল পথ বরাবর এই নিষ্ঠুরতার কাহিনীগুলো অজানা, তার কারণ এই যে এখানকার স্থানীয়দের হাতে বন্দুক ছিল, সেই সঙ্গে কীভাবে সেই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে হয় তাও তাদের শেখানো হয়েছিল, আর সেই বন্দুকের ব্যবহারে মোটেই তারা পিছপা ছিল না। ... ...
বাবিসা সর্দারের গ্রামে থাকাকালীন, হ্রদের পশ্চিম তীরের থেকে এক মিশ্র-বর্ণের আরব এসে পৌঁছায় ও খবর দেয় যে মাজিতুর একটা দল তার সব কিছু লুঠ করেছে। ঘটনাটা এমন একটা জায়গায় ঘটেছে যেটা তারা এখন যেখানে আছেন তার থেকে কমপক্ষে ১৫০ মাইল উত্তর-বায়ু (উত্তর-উত্তর-পশ্চিম) কোণে। ডাক্তার ও জোহানাদের সর্দার মুসা দু'জনেই সেটা খুব ভাল করে জানেন। মুসা খুব আগ্রহ নিয়ে আরবদের গল্প শুনেছিল আর সেটা পুরো বিশ্বাস করেছিল। তার অবশ্য অন্য কারণ ছিল, সেটা এখনই বলব। ... ...
দু'জন আরবও এই ধাতুর আশায় রুয়ার কাটাঙ্গা নামের জায়গাটাতে হাজির; তবে সংকীর্ণ গিরিখাতে খননের বিষয়ে তাদের কিছুই জানা নেই, অতএব তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা খুবই কম। এইসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় আবিষ্কারগুলি করার ঠিক আগে ডাঃ লিভিংস্টোন ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন, তার সঙ্গীরা আর এক পাও এগোতে রাজি নয়। একটা বড় দল ছাড়া তারা এগোতে ভয় পাচ্ছিল; আর, মান্যুয়েমায় দলবল জোগাড় করা সম্ভব ছিল না, ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডাক্তার উজিজির দিকে মুখ ফেরাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ... ...
এই দুটো কাজ সুসম্পন্ন হলে, একমাত্র তারপরই, নীল নদের রহস্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব। হ্রদের থেকে জন্ম নেওয়া লুয়ালাবা নদী অজস্র হ্রদের মধ্যে দিয়ে বিপুল জলধারা নিয়ে যে দুটি দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে, সেই দেশদুটি হল রুয়া (স্পেক যাকে বলেছেন উরুওয়া) ও মান্যুয়েমা। এই নদীর বিপুল জল রাশি দেখলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। ইউরোপ এই প্রথম জানল যে ট্যাঙ্গানিকা ও কঙ্গো নদীর পরিচিত উৎসগুলির মধ্যে লক্ষ লক্ষ নিগ্রো জাতির বসবাস। যে সাদা মানুষেরা আফ্রিকার বাইরে এমন শোরগোল তোলে, তাঁদের এই নিগ্রোরা কখনও চোখেও দেখেওনি, তাদের কথা শোনেওনি। অসাধারণ শ্বেতাঙ্গদের প্রথম প্রতিভূ হিসেবে ডাঃ লিভিংস্টোনকে দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়েছিল, তিনি মনে হয় তাদের মনে একটা অনুকূল ধারণা তৈরি করতে পেরেছেন। ... ...
সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি বেশ কটা গ্রাম রয়েছে। সমুদ্রের তীরে লোকের ভিড় দেখলে জায়গাটা কত জনবহুল তা বোঝা যায়। কিসুনওয়ে ও মুরেম্বওয়ে নামের অন্তরীপ দুটোর মাঝামাঝি বিকারি নামের একটা জায়গা আছে - আসলে বেশ কটা গ্রামের সমষ্টি। সেখানকার এক মুটওয়ারের আবার ভারি নজরানার উপর লোভ। বদবুদ্ধিওলা কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে দর কষাকষি করতে পারব না। তাই জিজিদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না এমন গ্রামগুলো এড়িয়ে চলছিলাম। কিন্তু আমাদের জিজি পথপ্রদর্শকও পথ ভুল করল আর একাধিকবার আমাদের এইসব বিপজ্জনক জায়গাতে নিয়ে গিয়ে হাজির করেছিল। ... ...
এটা সত্যিই দুঃখজনক যে, আবিষ্কারকরা যেটাকে অবিসংবাদিত সত্যি বলে জেনেছেন, সেটাও বলতে পারবেন না, বললেই তাঁদের দাগিয়ে দেওয়া হবে যে তাঁরা দেশের ভৌগোলিকদের প্রিয় তত্ত্বগুলির বিরোধিতা করার জন্য দল বেঁধেছেন। বা অভিযোগ করা হবে যে সুপরিচিত তথ্যগুলোকে তাঁরা বিকৃত করছেন। বিদগ্ধ মিঃ কুলি' একজন আরবের কথার ভিত্তিতে একটা গোটা মধ্য আফ্রিকা জোড়া বৃহৎ হ্রদের রূপরেখা এঁকেছিলেন। সেই হ্রদ নিয়াসা, টাঙ্গানিকা ও এন'ইয়ানজা ইত্যাদি বেশ কয়েকটা হ্রদকে জুড়ে রয়েছে। এদিকে লিভিংস্টোন, বার্টন, স্পেক, গ্রান্ট, ওয়েকফিল্ড, নিউ, রোশার, ইয়োন্ডারডেকেন এবং বেকার যখন প্রমাণ করলেন যে, এগুলো একটা না অনেকগুলো আলাদা আলাদা হ্রদ, আলাদা আলাদা নামের, দূরে দূরে ছড়ানো, তখন কেন তিনি একবারও স্বীকার করবেন না যে তিনি ভুল করেছেন? ... ...