প্রথমটা হল সিলুরে, জিজিরা যাকে সিংগা বলে। স্থানীয়দের কথা অনুসারে চার, এমনকি ছ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আমি যেটার ছবি এঁকেছিলাম, সেটা সাড়ে আটত্রিশ ইঞ্চি লম্বা, ওজন দশ পাউন্ড, তবে কিনা এটা ছোট মাছ হিসাবেই বিবেচিত হয়েছিল। অত্যন্ত চর্বিযুক্ত মাছ, পিঠের রং গাঢ়-বাদামী, আর পেটের দিকটা হালকা বাদামী, প্রায় সাদাই হয়ে যাওয়া। এই মাছ আঁশবিহীন। নদীতে হ্রদে যেরকমটা আমরা পেয়ে থাকি, এটা সেই রকমেরই। গোম্বে নদীতে শ’য়ে শ’য়ে এই মাছ ধরা হয়, কাটাকাটি করে শুকানো হয় আর আরব, আচারে-ব্যবহারে মুসলমান হয়ে যাওয়া নিগ্রো ও সোয়াহিলিদের কাছে বিক্রির জন্য উন্যানেয়েম্বেতে নিয়ে যাওয়া হয়। ... ...
২০ জানুয়ারি, ১৮৭২। আজ আমাদের যাত্রা স্থগিত ছিল। শিকারের জন্য বেরোতে গিয়ে দেখি এগারোটা জিরাফের একটা পাল। এরকম একটার চামড়া পেলে কী ভালই না হত! এমপোকওয়া নদী পেরিয়ে আমি তাদের একজনের দেড়শ গজের মধ্যে আসতে পেরেছিলাম আর এটাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাই; কিন্তু, এটা আহত হলেও, পেড়ে ফেলতে পারিনি। ... ...
নিজের চার্টখানা বার করলাম - আমি নিজেই সেটা তৈরি করেছিলাম - তার উপর আমার অটুট ভরসা। উন্যানয়েম্বে যাওয়ার এমন একটা পথ খুঁজে বার করলাম যে পথে একটাও কাপড় নজরানা দিতে হবে না - আর জঙ্গল ছাড়া আর কিছু খারাপ জিনিসও পথে পড়বে না। সেই পথ ধরে চললে ভিনজাদের আর লুঠেরা হহাদের পুরো এড়ানো যায়। আর এই শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ পথটি দক্ষিণে চলেছে জলের ধার দিয়ে দিয়ে, উকারাঙ্গা ও উকাওয়েন্দির উপকূল ধরে কেপ টংওয়ে পর্যন্ত। কেপ টংওয়েতে যেখানে পৌঁছব, সেটা উকাওয়েন্দির ইউসাওয়া জেলার ইটাগা, সুলতান ইমরেরা গ্রামের বিপরীতে ; এর পরে আমরা আমাদের পুরানো রাস্তায় পড়ব। যে রাস্তা ধরে আমি উজিজি যাওয়ার জন্য উন্যানয়েম্বে থেকে পাড়ি দিয়েছিলাম। ডাক্তারকে এই রাস্তার কথা বললাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এর সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যাপারটা বুঝলেন; আর যদি আমরা ইমরেরায় পৌঁছাই, আমার যেমন মনে হয়েছিল, তাহলে তো প্রমাণই হয়ে যাবে যে আমার চার্ট ঠিক না ভুল। ... ...
উকাওয়েন্দি জায়গাটা দেখা গেল প্রায় জনবসতিহীন। এবড়োখেবড়ো জমি, জঙ্গলে ভরা, অগণিত সূক্ষ্ম জলধারা-জালিকা অঞ্চলের সব জল বয়ে নিয়ে যায়। উর্বর, অজস্র প্রাণী ও উদ্ভিদের ভরা একটা অনুকূল ক্ষেত্র। জন বসতিগুলোর মধ্যে তবু উল্লেখ যোগ্য উত্তরের মানা মেসেঙ্গে বা টাঙ্গানিকার ধারে, পশ্চিম দিকের এনগোন্ডো এবং টংওয়ে; মাঝখানের রুসাওয়া; দক্ষিণে পামবুরু ও দক্ষিণ-পূর্বে উটান্ডা। ... ...
উভিনজায় ঢুকতেই যে সম্ভাষণ শুনতে পাই তার থেকেই বোঝা যায় যে এক নতুন উপজাতি, নতুন রীতিনীতির সঙ্গে এবার পরিচিত হতে যাচ্ছি। দুজন ভিনজার মধ্যে প্রথম পরিচয় একটি ভয়ানক ক্লান্তিকর ব্যাপার। পরস্পরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা দুহাত বাড়িয়ে দেয় আর ‘‘জাগো, জাগো’’ বলতে থাকে। তারপরে, একে অপরের কনুই আঁকড়ে ধরে হাত ঘষতে থাকে আর দ্রুত বলতে থাকে, ‘‘জাগো, জাগো, জেগে ওঠো, জেগে ওঠো,’’ যার শেষটা হয় "হু, হু" দিয়ে। তাতে পারস্পরিক তৃপ্তি বোঝায়। মেয়েরা এমনকি কাঁচা বয়সের ছেলেদেরও অভিবাদন করে। সামনে পিঠ ঝুঁকিয়ে, আঙ্গুলের ডগা দিয়ে পায়ের আঙ্গুল ছুঁয়ে। অথবা পাশে ঘুরে, হাততালি দিয়ে বলে, ‘‘জাগো, জাগো, জেগে ওঠো, জেগে ওঠো, হুহ, হুহ’’। পুরুষরাও হাততালি দেয় আর একই শব্দে জবাব দেয়। ... ...
পরের দিন আমাদের কিরাঙ্গোজির নির্দেশ মেনে পূর্ব দিকে এগোলাম; তবে যে রাস্তা দিয়ে সে আমাদের নিয়ে যাচ্ছিল তার থেকে এটাও বোঝাই যাচ্ছিল, যে সে এই দেশটার কিছুই জানে না। যদিও সে এতই বকর বকর করছিল যে মনে হবে যেন সে এনগোন্ডো, ইয়ম্বেহ এবং পুম্বুরুর এলাকাগুলোর সম্বন্ধে একদম দিগগজ পণ্ডিত। কাফেলার মাথার দিক থেকে আমাকে ডাকা হল। তখন আমরা সিধা লোয়াজেরির খর স্রোতে নামতে যাচ্ছি, আর সেটা পেরলেই তিন থাক দুর্গম পর্বতমালা, সেগুলোকে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে পেরোতে হবে। মোটেই আমাদের নির্দিষ্ট পথের দিকে না সেটা। ... ...
উন্যামওয়েজিতে মাত্র দুটি জলধারাই নদী নামের যোগ্য। সেগুলো হল উত্তর ও দক্ষিণ গোম্বে। উত্তরের নদীটা কোয়ালা নামে পরিচিত। কখনও কখনও একে ওয়াল্লাও বলা হয়। কুবুগার দক্ষিণে এর উৎসমুখ। উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি বাঁক ঘুরে তাবোরার উত্তরে গোম্বেতে গিয়ে ঢোকে। এখানেও এটা বেশ বড় মাপের, গুরুত্বপূর্ণ একটা নদী। বর্ষার শেষদিকে ভালো হালকা নৌবহর নিয়ে, একজন খুব সহজেই - তাবোরা থেকে আট মাইল বা তারও বেশি দূরের থেকে দলবল নিয়ে নৌকা চেপে সানন্দে টাঙ্গানিকা হ্রদ অবধি ভেসে যেতে পারে; অবশ্যই, যদি সমস্ত উপজাতির লোকেরা ইচ্ছুক হয়। একটা সঠিকভাবে প্রস্তুত অভিযান এইরকমভাবে বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। ... ...
এখানকার উপজাতিরা ধাতুর মধ্যে চেনে বলতে তামা আর লোহা। তামা আসে রুয়া থেকে, আর উপকূলের থেকে। আর রট আয়রন আসে উসুকুমা বা উন্যামওয়েজির উত্তরের এলাকা থেকে, ও উভিরা থেকে। আফ্রিকার অন্দরের বাসিন্দারা যে সমস্ত পিতলের অলঙ্কার পরে, কাফেলাগুলোর সঙ্গে আনা মোটা পিতলের তার থেকে স্থানীয়রা সেই সব গয়না তৈরি করে। যদিও লৌহ আকর প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, এমনকি উন্যামওয়েজি ও উজিজির মধ্যে অনেক জায়গায় মাটির উপরে দেখাও যায়-তবুও তা খুব কমই কাজে লাগে; যদিও উকোনঙ্গো ও উভিনজাতে, স্থানীয়রা আকরিক লোহা গলিয়ে নিজেদের দরকারের লোহা তৈরি করে এমন উদাহরণ আছে। ... ...
যাত্রা শুরু করলাম সকাল আটটায়। আরবরা ছিল। আর তাদের সঙ্গে ভিড় জমিয়েছিল যত উটকো কৌতূহলী লোকের দল। সবাই হাত নেড়ে নেড়ে আমাদের বিদায় জানাচ্ছিল। আমরাও তাদের সবার দিকে হাত টাত নেড়ে বিদায় জানালাম। দু-একটা লোক বিশেষত মোহাম্মদ বিন সালির মতন প্রমাণিত বদমাইশ অবশ্য বেশ আবেগপূর্ণ কথাবার্তা বলার চেষ্টা করা করেছিল। তার কথায় বা তার লোক দেখানো হাত ধরে ঝাঁকানোয় অন্তত মুখে কোন অপ্রীতিকর ভাব প্রকাশ করিনি। ১৮৬৯ সালে লিভিংস্টোনের সঙ্গে সে যা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তারপরে তার সঙ্গে চিরবিচ্ছেদের সম্ভাবনায় একটুও দুঃখিত হইনি। আমাকে বারে বারে বলা হয়েছিল যে উন্যানয়েম্বের সবাইকে অনেক অনেক সালাম জানাতে। তবে সে যেমন চেয়েছিল তেমনটা করলে সবাই আমাকে ভয়ানক গাধা ভাবলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। ... ...
সামনের ডান পায়ের খুর থেকে তার মাথার উপর প্রান্ত অবধি জিরাফটা মাপে ১৬ ফুট ৯ ইঞ্চি। এই গোত্রের সবচেয়ে বড় আকারের গুলোর মধ্যের একটা। যদিও এক একটা ১৭ ফুটের বেশি মাপেরও পাওয়া গেছে। সারা গায়ে বড় কালো, প্রায় গোল গোল দাগ। খামিসিকে মৃত জন্তুর দায়িত্ব দিয়ে আমি শিবিরে ফিরে গেলাম। সেখান থেকে লোক পাঠাতে হবে জিরাফ কাটা ও আমাদের গ্রামে মাংস বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু খামিসি সিংহের ভয়ে একটা গাছে উঠে বসেছিল আর সেই ফাঁকে শকুনের দল জিরাফের উপর এসে বসেছিল। ... ...
এই উপত্যকাগুলোর মধ্যে একটাতে এইদিন আমরা লালচে দাড়িওয়ালা বানরদের একটা দলের মুখোমুখি হয়েছিলাম। কাফেলা দেখে তাদের চিৎকার, চেঁচামেচি গোটা এলাকা জুড়ে শোনা যাচ্ছিল। তারা গাছ বেয়ে তরতরিয়ে অনেক উপরে উঠে যাচ্ছিল আর চেঁচিয়ে-মেচিয়ে যেন যুদ্ধের ডাক দিচ্ছিল - ফলে তাদের কাছে ঘেঁষতে পারিনি। তবে তারপরেও আমাদের এগিয়ে যেতে দেখে তখন আবার মাটিতে নেমে এলো; ওদের পিছনেই পড়ে থাকতাম যদি না হঠাৎ মনে পড়ত যে আমার অনুপস্থিতি আমাদের অভিযানকেও থামিয়ে রেখেছে। ... ...
কত রকমের যে ঝাউ আর বাবলা পাওয়া যায় সে একেবারে দেখার মত, একটু খানি জায়গা পেলেই হল। বাবলা গাছ তো সর্বত্র আর এমন ভাবে তারা ডালপালা ছড়ায় যে কাফেলাগুলোর জন্য তারা ভারি যন্ত্রণার! কাঁটাগাছ ও গঁদের গাছগুলো অভিযাত্রীদের জন্য সবচেয়ে ঝামেলার। কাঁটাগাছের প্রজাতিগুলো সমস্ত রকমের মারাত্মক কাঁটায় ভরা! আমার দোভাষী সেলিম একদিন আমাশায় কাতর হয়ে ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিল, তার ঘাড়ের একেবারে শিরার খুব কাছে বাবলার কাঁটায় এমন বিচ্ছিরি ভাবে কেটে যায় যে সেই দাগ তার মৃত্যুদিন অবধি রয়ে যাবে। ... ...
গ্রামের মাতৃস্থানীয়রা যখন এটা-ওটা-সেটা নিরীহ কথা কানাকানি করে , তখন পরিবারের কর্তাদের পাওয়া যায় ছেলেদের আড্ডায়। সেখানে জিনিসপত্রের দাম, এলাকার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা চলে। সম্ভবত আরো অনেকটা সভ্য দেশে একই ধরণের জায়গায় যতটা বিচক্ষণতা ও বোধের সঙ্গে এই ধরণের আলোচনা হয়, এখানকার আলোচনাও সেই একই গোত্রের। কিন্যামওয়েজি গ্রামের সকলের একত্রিত হওয়ার জায়গাকে ওদের ভাষায় "ওয়ানজা" বা উওয়ানজা বলা হয়। এটা সাধারণত গ্রামের চৌকোনো জায়গার একটেরেতে থাকে। ফাঁকা সময়ে- অবশ্য ব্যস্ততা খুব কমই থাকে - তারা উবু হয়ে বসে ধূমপান করে, আর সম্ভবত মায়েদের মুখে একটু আগে যে আলোচনা শোনা গেছে, সেই একই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে । সদ্য আগত সাহেবটি হল সেই বিষয় । ... ...
ন্যামওয়েজিদের কিছু অদ্ভুত রীতি আছে। একটা বাচ্চার জন্মের পরে তার বাবা পিতা নাড়িটা কেটে ফেলে আর সেটা নিয়ে রাজ্যের সীমানায় গিয়ে সেখানে মাটিতে পুঁতে দেয়। যদি সে জায়গাটা একটি নদী হয়, তাহলে নদীর পাড়ে পুঁতে দেয়; তারপর একটা গাছের শিকড় নিয়ে সে ফিরে আসে, আর বাড়ি ফিরে নিজের দরজার চৌকাঠে সেটা পুঁতে দেয়। তারপর সে তার বন্ধুদের জন্য একটা ভোজের বন্দোবস্ত করে। একটা বলদ বা গোটা ছয়েক ছাগল মারে, পোম্বে বিলোয় সবাইকে। যমজ সন্তানের জন্ম হলে, তারা কখনই একজনকে মেরে ফেলে না, বরং সেটা আরও বড় আশীর্বাদ মনে করে। ... ...
খড়গপুর চৌরঙ্গী থেকে শুরু হয়ে সদ্য শেষ হওয়া ফোর লেনের জাতীয় সড়ক সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। রাস্তা জুড়ে অজস্র আন্ডারপাশ সমস্ত চেনা জায়গাকে আড়াল করে অচেনা করে দিয়েছে। নিমপুরায় পথের পাশেই থাকা সিঙাড়া সিংয়ের ধাবা কিংবা মুন হোটেল এখন পথের নীচে, লোধাশুলির মাহাত হোটেলও নজরে পড়েনি। মোহনপুরের যে ঘন জঙ্গলের জন্য জাতীয় সড়কের ওপর সূর্যের আলো পড়তনা তাও এখন নির্বিরোধী, ফর্সা। ঘাটশিলারও তাই অবস্থা। তারই মধ্যে আন্দাজে দ্বিতীয় আন্ডারপাশের পাশ দিয়েই বেঁকে জাদুগোড়া-মুসাবনির রাস্তা ধরেছি। ৩৭ বছর পরেও এরাস্তা বড় চেনা! ঝাঁপানো বৃষ্টির মধ্যেই একটুও অসুবিধা হয়নি রাস্তা চিনতে। ডানদিকে টুমানডুংরি আর মৌভান্ডারক আর বাঁয়ে হিন্দুস্থান কপার লিমিটেডকে রেখে দিব্যি আমরা উঠে পড়লাম সুবর্নরেখা সেতুর ওপর। ... ...
নিজেদের কালো ভালুক-চামড়া, উজ্জ্বল পারস্য দেশীয় কার্পেট ও পরিষ্কার নতুন মাদুরের উপর গুছিয়ে বসে ভারি আরাম হল। দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে আরামসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমাদের পিকনিকের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে গল্প শুরু হল। লিভিংস্টোন আমাদের রুসিজির যাত্রাকে পিকনিকই বলে থাকেন। মনে হচ্ছিল পুরোন সুখের স্মৃতিচারণ করা দিনগুলো ফিরে এসেছে। যদিও আমাদের বাড়িটা নেহাতই সাধারণ, চাকরবাকরেরাও নেহাতই সামান্য, নগ্ন, বর্বর; তবু উন্যানিয়েম্বে থেকে সেই ঘটনাবহুল যাত্রার পর এই বাড়ির কাছেই আমার লিভিংস্টোনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল— এই বারান্দাতে বসেই টাঙ্গানিকা হ্রদের পশ্চিমপারের বহুদূরের, মনোমুগ্ধকর জায়গাগুলোর সম্বন্ধে তাঁর বিস্ময়কর গল্পগুলো শুনেছিলাম; ঠিক এই খানেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়; আর সেই থেকে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়েই চলেছে আর তিনি যখন বললেন যে আমার প্রহরায়, আমার খরচে আর আমারই পতাকার তলায় তিনি উন্যানিয়েম্বে যেতে চান, আমি তো সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে গেলাম। ... ...
উন্যানিয়েম্বে জায়গাটা এখন আমার কাছে মাটির পৃথিবীতে স্বর্গের মতন। লিভিংস্টোনও কম খুশি নন; তিনি একটা আরামদায়ক ঘরে ছিলেন, উজিজিতে তাঁর কুঁড়েঘরের তুলনায় সেটা একটা রাজপ্রাসাদ। আমাদের ভান্ডারের জিনিসপত্র এসেছে বাগামোয়ো থেকে, দেড়শও বেশি কুলির মাথায় চেপে। কাপড়, পুঁতি, তার ও হাজার-একটা ভ্রমণ সংক্রান্ত লটবহর তো আছেই। এছাড়াও অজস্র ঐহিক বিলাসদ্রব্যে ভরা সে ঘরগুলো। আমারই পঁচাত্তর বস্তা হরেক রকম জিনিস আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী এখন লিভিংস্টোনের হাতে তুলে দেওয়া হবে, নীল নদের উৎসের দিকে তাঁর অভিযানের জন্য। ... ...
পরের দিনেও আমরা ওখানেই ছিলাম, এখানে এত বিভিন্ন রকমের পশুর সমাবেশ যে শিকারের পিছনে ধাওয়া করার জন্য আমি খুবই উৎসুক। সকালের কফিপানের পর আমার বন্ধু সেই অ্যামোনিয়া-বোতল খ্যাত মামান্যারার জন্য উপহারসহ কয়েক জনকে পাঠানো হল। তারপরই আমি আরও একবার মাঠের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। শিবির থেকে পাঁচশো গজ দূরেও যাইনি, হঠাৎ আমি ও আমার দলবল খুব কাছেই, সম্ভবত পঞ্চাশ গজ বা তার চেয়েও কম দূরত্বে, একটা সমবেত গর্জন শুনে থেমে গেলাম। ... ...
উপরের (এর আগের কিস্তিতে প্রকাশিত) চিঠিতে আমার আর নতুন করে জোড়ার কিছুই নেই - এটা নিজেই সব বলে দিয়েছে; তবে তখন আমি ভেবেছিলাম যে এটা আমার সাফল্যের সব থেকে বড় প্রমাণ। আমার নিজের কথা বলতে, আমার তাঁর আবিষ্কার সম্পর্কে এক বিন্দুও মাথাব্যথা নেই, একমাত্র যতক্ষণ না যে সংবাদপত্র আমাকে এই অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিল, তারা সেই বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে। তবে একথা সত্যি যে তাঁর ভ্রমণের ফলাফল সম্পর্কে কৌতূহল ছিল; তবে, তিনি যখন স্বীকার করেছেন যে তাঁর শুরু করা কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি, তখন থেকে আমি স্বেচ্ছায় যতটুকু বলেন তার বেশি এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কুণ্ঠাবোধ করেছি। ... ...
প্রিয় স্যার - সাধারণতঃ অদেখা কাউকে চিঠি লেখাটা খানিকটা কঠিন কাজ - অনেকটা কোন একটা বিমূর্ত ধারণাকে সম্বোধন করার মতই বলা যায় - তবে আপনার প্রতিনিধি, মিঃ এইচ এম স্ট্যানলির, এই দূরের দেশে উপস্থিতি আপনার সঙ্গে আমার অপরিচয়ের ব্যবধান ঘুচিয়েছে। উনি না এলে আমি অবশ্যই এই চিঠি লিখতে কিন্তু কিন্তু করতাম। তবে ওঁকে পাঠিয়ে আপনি যে অসীম দয়া দেখিয়েছেন সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি লিখতে খুবই স্বচ্ছন্দ বোধ করছি। ... ...