ভ্যান্ডারলুস্ট। আর কোনো শব্দে ব্যাখ্যা করা যাবে না এ কাণ্ড। ১৯৭৫। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বেরিয়ে পড়লেন তিন তরুণ। দুনিয়া ঘুরে দেখতে হবে। সাইকেলে। ইন্টারনেট নেই। জিপিএস নেই। অর্থবল নেই। মাতৃভাষা বাংলা বই দুটি ভাষা জানা নেই। সম্বল স্রেফ স্বপ্ন। আর জেদ। হাল ছাড়লেন দুজন। কুছ পরোয়া নেহি। ঘুরতে থাকল তৃতীয়জনের সাইকেলের চাকা। ১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এ সফরনামা শুধু রুদ্ধশ্বাস নানা ঘটনার ভিড় নয়, নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া এক মুসাফিরের অনন্য জীবনবীক্ষা। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
বাঙালির দ্বিতীয় প্রজন্ম ক্রমশ বাংলাটা ভুলে যাচ্ছে। শুধু বিদেশে বা ভিন রাজ্যেই না, খোদ কলকাতা শহরেও। কিন্তু এসব নিয়ে বলতে গেলে বাঙালি নিজেই হাঁ হাঁ করে উঠবে। তারা সর্বভারতীয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক হচ্ছে। আরও কী-কী হচ্ছে, ঈশ্বরই জানেন। সেখানে এসব ছোটো মনের পরিচয় দেওয়াটা ঠিক না। যদিও, যুক্তি দিয়ে জিনিসটা বোঝা দুষ্কর। বাঙালি যদি দিল্লি কিংবা নিউ-ইয়র্কে গিয়ে হিন্দি কিংবা ইংরিজি ভাষী হয়ে ওঠে, সেটাই যদি দস্তুর হয়, তবে বাংলায় এসে অন্যভাষীদের বঙ্গভাষী হয়ে ওঠারই কথা। আবার অন্যভাষীরা বাংলায় এসে যদি নিজের ভাষা বজায় রাখে, বা রাখতে পারে, অন্যত্র বাঙালিদেরও তেমনই হবার কথা। এর কোনোটাই হয়না। ভারতীয় বাঙালির কাছে এর কোনো ব্যাখ্যাও নেই। সম্ভবত অস্বস্তিকর বলেই। আর সেই জন্য প্রশ্নটা তোলাই ট্যাবু। তুললে কঠিন-কঠিন ইংরিজি গালি বর্ষিত হতে পারে। ... ...
লকডাউন নিজে নিজেই কোনো সমাধান নয়। লকডাউন অসুখ সারায়ও না, অসুখের বিরুদ্ধে সমষ্টিগত প্রতিরোধের ক্ষমতাও তৈরী করে দেয় না। বাকি সব ব্যবস্থাগুলোর সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা গেলে লকডাউন, অবশ্যই, খুব কার্যকরী ব্যবস্থা - কার্যকরী মহামারীর ভয়াবহতা ঠেকানোর ক্ষেত্রে, কার্যকরী একজন মানুষ থেকে অন্যজনের শরীরে সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে, কার্যকরী অসুস্থ মানুষের সংখ্যা কমিয়ে রাখতে, যাতে আমাদের পরিকাঠামো দিয়ে সেই সীমিতসংখ্যক মানুষের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে - কার্যকরী, আরো প্রস্তুত হওয়ার জন্যে সময় কিনতে। কিন্তু, মনে রাখুন, এগুলো সবই হতে পারে - যদি লকডাউনের সাথে সাথে বাকি ব্যবস্থাগুলোও নেওয়া হয়, তবেই। ... ...
আমাদের এই ভাঙা-চোরা, কালি-ঝুলি মাখা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা যে গণতন্ত্র আছে সেটাকে রক্ষা করাই আমাদের এখন প্রধান কাজ। ভবিষ্যৎ প্রমাণ করবে, কিন্তু এই মুহূর্তে বলা যায়, সেই কাজে বাঙালি একটা বড় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করল, এবারের ভোটে বিজেপিকে রুখে দিয়ে। বাঙালি বজেপির বিরুদ্ধে একটা শক্তিকে চেয়েছিল। বিজেপিও তার বহুমাত্রিক, সর্বগ্রাসী আক্রমণ দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছিল কে তার প্রধান শত্রু। সিপিএমের ‘বিজেমূল’ প্রচারে মানুষ একেবারেই কান দেয়নি। বাঙালির কাছে এই মুহূর্তের বাস্তবতা এটাই যে, তৃণমূল নেত্রী মমতা ছাড়া তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনও শক্তি ছিল না। যারা তাঁকে ভোট দিলেন, তাঁদের অনেকেই তৃণমূল নেত্রী অতীতে কী কী বলেছেন, কী কী করেছেন এই সব অসংখ্য প্রশ্ন এবং তর্ক সরিয়ে রাখলেন। বিজেপির পরাজয় তারই পরিণতি। ... ...
শিল্প আর শিল্পী নাকি আলাদা। এই আবেগ ভ্যাদভ্যাদে মৃত্যুদিনে সেসব কথা ভাবতে ভালো লাগেনা। এ সব ব্যক্তিগত অনুভূতি বড়ই ব্যক্তিগত। ফিল্ম টিল্ম গোল্লায় যাক, গোল্লায় যাক শিল্পের শবসাধনা, কবিতার বদলে ট্রামে ছেঁচড়ে যাওয়া জীবনানন্দের ডেডবডি মনে পড়ে। সেই দশকে নাকি ওটাই ছিল একমাত্র ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যু। তাকে আপতিক ভাবতে অসুবিধে হয়, যেমন অসুবিধে হয় ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে একজন সফল ফিল্ম মেকারের মৃত্যু। আসলে তো তাঁকে নেই করে দেওয়া হল। টিভিতে, খবরের কাগজে, সোশাল মিডিয়ায় যত কলকাকলি আর হাহুতাশ দেখি, সব শুধু সিনেমা। সিনেমা সিনেমা আর সিনেমা। লোকটা কোথাও নেই। কিন্তু আজ তো সিনেমার দিন না। একটা লোক মারা গেছে। একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। সে শুধু সিনেমা নয়। নিজের আইডেন্টিটিকে সে কখনও সিনেমা দিয়ে ঢাকেনি। মেয়েলি দোপাট্টা পরে কানে দুল ঝুলিয়ে টিভি শোতে এসেছে। যত বয়স হয়েছে তত নরম হয়েছে তার গলার আওয়াজ, আর তীব্রতর হয়েছে তার আইডেন্টিটি। নমনীয়তাকে, নরম স্বরে কথা বলাকে আমরা পুরুষের দুর্বলতা বলে ধরে নিই। কিন্তু ঋতুপর্ণ জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, ব্যাপারটা অতো সোজা নয়। যতগুলো নতুন পুরস্কার ঝুলিতে ঢুকেছে, ততই মেয়েলি হয়েছেন তিনি। ততই নরম হয়েছে তাঁর কণ্ঠস্বর। মেয়েলিপনাকে শক্তি দিয়ে আগলে রেখেছেন। ছুঁড়ে দেওয়া ইঁটগুলোকে, "লেডিস ফিংগার" তাচ্ছিল্য আসবে জেনেও, আঁকড়ে ধরেছেন ওই মেয়েলি আলখাল্লাকে। সেই নরম সাহস, সেই এফিমিনেট দৃঢ়তা ছাড়া ঋতুপর্ণ নেই। হয়না। ... ...
বাস্তবের অন্তরালবর্তী হাজার অনুভূতির আবিষ্কার-পুনরাবিষ্কার কিংবা পরীক্ষণ-পুনর্নিরীক্ষণই হয়তো শঙ্খ ঘোষের কবিতার সহজ সংজ্ঞা। তাঁর নীচু গলার প্রায় প্রতিটি উৎসারণে যেন ধ্বনিত হয়েছে পাস্কেল-কথিত সেই অন্তহীন মহাশূন্যের আবহমান নীরবতা। তাঁর কবিতাময় উচ্চমানের গাম্ভীর্য, সন্দেহ নেই: কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়া-র অনায়াস ও স্বচ্ছন্দ প্রয়োগের দৃষ্টান্তগুলি এইরকমের— অনুভূতির সঙ্গে অনুভূতির খেলা, শব্দের সঙ্গে শব্দের এবং অনুপ্রাস আর অন্ত্যমিলের নিরবচ্ছিন্ন অন্বেষণের অভেদ তুলে আনে এক অনন্য সৃষ্টিশীলতা ... ...
বামরা অনেকদিন মাটির কাছাকাছি লোককে ফোকাসে আনেনি। টিভিতে যে মুখগুলি, সবই শিক্ষিত। যেটুকু নড়াচড়া, তাও শিক্ষিত অংশটিকে নিয়েই। কেন, সে অবশ্য বোঝা মুশকিল, দেবলীনা হেমব্রমের মতো নেত্রী থাকতেও। কিন্তু সে অন্য কথা। যে কোনো কারণেই হোক, আব্বাস, এই কাঁচা আনকোরা মাটির গন্ধটি সরবরাহ করছেন। তিনিই এখন পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের প্রতিভূ। ... ...
জিহাদীদের সিরিজ খুনের চাপাতির কোপ "নাস্তিক ব্লগার" এর পরিধি ছাড়িয়ে শিগগিরই বিদেশি, ভিন্ন ধর্মালম্বী, অধ্যাপক, হোমিও চিকিৎসক, সমকামী, এমনকি মসজিদের ইমাম, শিয়া ও পুলিশ পর্যন্ত গড়ালে শেষমেষ সরকার কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে অভিযানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃংখলা বাহিনী। অভিযানে ধরা পড়ে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী-জঙ্গি। অবশ্য আমরা মুক্তমনারা আগেই সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলাম, ব্লগার খুন হচ্ছে জিহাদের সূচনা মাত্র; খেলাফত, তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খোয়াবে মশগুল মুজাহিদরা শিগগিরই হত্যার পরিধি বিস্তৃত করবে। রাষ্ট্র দখল করাই যেহেতু তাদের লক্ষ্য, তাই তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর আঘাত হানবে শিগগিরই। আর সরকারি উদাসিনতায়, বলা ভালো, জিহাদীদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের হত্যাযজ্ঞ দেশজুড়ে ছড়াতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ... ...
সারা দেশ জুড়ে ভিন্ন মতের প্রতি অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরির অভিযোগ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে নতুন নয়। এই রাজনৈতিক দলটি এবং এদের শাখা প্রশাখা নানা সংগঠন একই সঙ্গে অসহিষ্ণুতার জয়গান করে এবং নিজেদের রাম ভক্ত বলে দাবি করে। অনেকেই মেনে নিয়েছেন, রামায়ণের ইজারা এখন এদেরই হাতে। কিন্তু সত্যিই কি রামায়ণ এমনই অসহিষ্ণুতার কথা বলে! ... ...
আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চাপে প্রতিটি দেশের, বিশেষ করে গরীব দুর্বল ও ছোট দেশগুলোতে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। এর জায়গা নিয়েছে কর্পোরেট হেলথ সেক্টর যেখানে স্বাস্থ্য নেই, রয়েছে বহুমূল্যে কেনা স্বাস্থ্য পরিষেবা। এ কারণে আফ্রিকার দেশগুলোতে এবোলা মহামারির চেহারা নিয়েছিলো যখন তখন স্বাস্থাকর্মীদের বেশিরভাগের কাছে একটি গ্লাভস কিংবা মাস্কও ছিলো না। এখনো ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকার মতো দেশে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষিত হবার বিষময় ফল ২০২০-র পৃথিবী দেখছে। ... ...
ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের মতন সার্স-কোভ২ ভাইরাসও সম্ভবত আমাদের সঙ্গে অনেক, অনেক দিন থাকবে ভাইরাস-শিকারী পিটার পিওট এর সঙ্গে আলাপচারিতা, সার্স-কোভ২ ভাইরাসের সঙ্গে আগামী দিনগুলোর বিষয়ে লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পিটার পিওট টেডমেড ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টরের করা ভাইরাসের উপর ১০০ টি প্রশ্নের উত্তর দিলেন। ... ...
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে শুরু হয় ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার। সকালে কোচবিহারের সোনারীতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ১৮১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে উক্ত বিচারকাজ শুরু হয়। বিএসএফ এর আইন The Border Security Force Act, 1968 অনুযায়ী গঠন করা হয় জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট। মোট পাঁচজন বিচারক বিচার প্রক্রিয়া চালান আর কোর্ট পরিচালনা করেন বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডি আই জি কমিউনিকেশনস সি পি ত্রিবেদী। ১৪ আগস্ট বুধবার থেকে শুনানি শুরু হয়। কনস্টেবল অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এই অমিয় ঘোষ তাঁর ৫ দশমিক ৫৬ মিলিমিটার ইনসাস রাইফেল থেকে গুলি চালিয়েছিলেন, যাতে নিহত হয় ফেলানী। ফেলানীকে হত্যার দায়ে বিএসএফের অভিযুক্ত কনস্টেবল অমিয় ঘোষ ঘটনার পর থেকেই ক্লোজ অ্যারেস্ট থাকেন। অর্থাৎ তিনি তাঁর ইউনিটের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের এলাকার মধ্যেই সীমিতভাবে ঘোরাফেরা করতে পারতেন। শুনানির শুরুতে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়। নিজের রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে ফেলানীকে হত্যা করলেও এর জন্য দোষ স্বীকার করেনি কনস্টেবল অমিয় ঘোষ। এরপর ১৯ আগস্ট ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আবদুল হানিফের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। জেনারেলসিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট ৬ সেপ্টেম্বর বিচারকাজ শেষ করে। রায়ে ভারত-বাংলাদেশসীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার মামলায় অভিযুক্ত সীমান্তরক্ষী অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। রায়ের পরে বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দ্য বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স অ্যাক্ট ১৯৬৮ অনুযায়ী জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টের রায়ের চূড়ান্ত ছাড়পত্রের জন্য বাহিনীর মহাপরিচালকের কাছে পাঠাতে হয়। সেই প্রক্রিয়া শুরুর কথাও জানানো হয়। ... ...
পুলাওয়ামা ঘটনার পর দেশপ্রেম আচমকা বেড়ে গেল সবার। তারিখটা আবার প্রেমের দিবসেরও। যাতে এইবার কেন জানি না ভগৎ সিং এর ফাঁসি ঠিক হয়ে ওঠেনি। তা, এই ঘটনার পর দেশের প্রধাণমন্ত্রী তো ভাষণে ফাটিয়ে দিতে থাকলেন। এক সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর বাইরে থেকে আওয়াজ পেয়ে বারান্দায় এসে দেখি মিছিল চলছে জনা পঞ্চাশ লোক, মোমবাতির বদলে হাতে মোবাইলের ফ্লাশলাইট। স্লোগান শুনলাম একবার ভারতমাতা কি জ্যায় পিছু পাঁচবার করে পাকিস্তান মুর্দাবাদ। বলা বাহুল্য পড়শী দেশের উল্লেখের সময়ে তাদের জোশ যেন ফেটে ফেটে বেরোচ্ছিল। পরে শুনি এই মিছিল ছোট ছোট করে সারা দেশে বেরিয়েছে, কলকাতাতেও। যেন রাস্তার ধারে পাকিস্তান বসে বিড়ি বাঁধছে বলে খবর, এরা খুঁজে বেড়াচ্ছে। ... ...
যুদ্ধের ক্ষেত্রে মাওবাদীদের অভিজ্ঞতা, সংযম ও পারদর্শিতা অন্যান্যদের চেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বেশি ছিল। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে লড়াইয়ের কারণে থ্রি নট থ্রি বুলেটের দাম ১২০ থেকে ১৮০ হয়ে গিয়েছিল, চাহিদা বাড়ার কারণে। তালপাটি খালের ওপার থেকে একবার বন্দুক ফুটলে আন্দোলনের স্থানীয় যোদ্ধারা দশ রাউন্ড ফায়ার করে দিচ্ছে উদ্দেশ্যহীন ভাবে, এই ছিল পরিস্থিতি। এই নৈরাজ্যবাদী অপচয় আটকাতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বুলেটের রাজনৈতিক মাহাত্ম্য ও খরচ বোঝাতে হয়েছিল কমরেড বাতাস আর গৌরাঙ্গকে। ... ...
তাই সবকিছুর পরেও এই বই সেই মানুষদের গল্প বলে, সেই ভূখণ্ডের গল্প বলে, আধিপত্যবাদের নিষ্পেষণে গুঁড়িয়ে যেতে যেতেও যা তুমুল জীবনের উদযাপনে বাঁচতে চায়। গ্রামের স্থানীয় মসজিদে গিয়ে সৌদির ক্যাম্প থেকে ফেরা কট্টর ইসলামিস্ট ছোকরা যখন চোখ-মুখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা’ (শ্রেষ্ঠ কে?) তার উত্তরে কেউ ‘আল্লাহু আকবর’ চেঁচিয়ে ওঠে না, বরং একে অন্যের মুখ চাওয়া-চায়ী করে। চেঁচাবে কি করে? আরবি জানলে তো! ছেলেপুলের কাছে তুমুল প্যাঁক খেয়ে চোখমুখ লাল করে সেই ইসলামিস্ট বুঝিয়ে দেয় যা এই স্লোগানের উত্তরে আল্লাহু আকবর বলাটাই নিয়ম। তারপর আব্বার চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা”। দুই একজন মিনমিন করে বলে ওঠে ‘আল্লাহু আকবর’। প্রোগ্রাম সুপারফ্লপ হবার পর এক বছর ধরে সেই ছোকরা আওয়াজ খেতে থাকে গ্রামের অন্য ছেলেপুলের কাছে। ততদিনে কিন্তু ধর্মের হাত ধরে রেজিস্টান্স পৌঁছে গেছে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে। পণ্ডিতদের মাস এক্সোডাস ঘটে গেছে, শ্রীনগরের রাস্তা উজিয়ে উঠছে আজাদ কাশ্মীরের দাবীতে, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে নিখোঁজ এবং ঘরছাড়া। কিন্তু জীবন যেখানে যেটুকু চেটেপুটে নেবার, নেবেই। আগ্নেয়গিরির চূড়ায় বসে পিকনিক করার নাম-ই কাশ্মীর, বারবার মনে করিয়ে দেয় এই বই। ... ...
‘আজাদি ঝুটা’ ছিল কিনা জানিনা, তবে তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসে ১৯৫০-র দশকের পটভূমিতে বাংলায় কলেরার বিবরণে, আর শরৎচন্দ্রের ব্রিটিশ আমলের বাংলায় কলেরার বিবরণের মধ্যে মূলগত কিছু ফারাক দেখা যায়। ‘আরোগ্য নিকেতন’-এ কলেরা আটকাতে ‘শিক্ষিত ছেলেরা’ ‘কোদালি ব্রিগেড’ নামে পরিশ্রুত জলের জন্য কুয়ো খুঁড়ছে। সরকারি ‘স্যানিটারি ইনস্পেক্টরেরা পুকুরে ব্লিচিং পাউডার গুলে দিয়ে জলকে শোধন’ করছে, ‘অ্যান্টি-কলেরা ভ্যাকসিন ইনজেকশন’ বা ‘কলেরার টিকে’ দিচ্ছে।৩ এই ধরণের জনস্বাস্থ্যের কিছু তৎপরতা ও জনসচেতনতা কিন্তু বাংলায় কলেরা মোকাবিলায় দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ককের ভিভরিও কলেরির বিষের ধারণার সাত দশক পরে স্বাধীন ভারতে ১৯৫১ সালে তা নিয়ে গবেষণায় এগিয়ে এলেন এক বাঙালিই। কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী শম্ভুনাথ দে। শম্ভুনাথ খরগোশে পরীক্ষা করে দেখলেন, কলেরার আক্রমণ স্থল অন্ত্র। ভিভরিও কলেরি থেকে তিনি কলেরার বিষ আলাদা করে খরগোশে প্রয়োগ করে ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম হলেন। এটা কলেরা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন এক দিশা দিল। এর আগে ধারণা ছিল, কলেরা টক্সিন আসলে ব্যাকটিরিয়ার কোষ প্রাচীরে থাকা এন্ডোটক্সিন থেকে হয়। শম্ভুনাথ প্রমাণ করলেন, কলেরা টক্সিন ব্যাকটিরিয়ার কোষ থেকে নিঃসৃত হয় (এক্সোটক্সিন)। তাই ব্যাকটিরিয়া ছাড়াও খালি এই বিষই ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম। শম্ভুনাথ দের এই আবিষ্কারের পর দু দশকের মধ্যেই কলেরা টক্সিনের গঠন, প্রকৃতি সবই জেনে ফেলা সম্ভব হয়। কোলকাতায় নিজের গবেষণাগারে যৎসামান্য যন্ত্রপাতির ওপর ভর করে ‘ভারতীয় কলেরা’র গবেষণায় বাঙালির এই অবদান স্বীকৃতি পায় বিশ্বে। ১৯৫৯ সালে বিখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর এই কাজ। তাঁর কাজ এতটাই আলোড়ন ফেলে যে নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জসুয়া লিডারবার্গ শম্ভুনাথকে নোবেল পুরস্কারের জন্যেও মনোনীত করেন। শম্ভুনাথের দেখান পথে হেঁটে পরবর্তী কালে কলেরা গবেষণার দৃষ্টিকোণ পালটে যায়। এবং পরের ষাট বছরে সারা পৃথিবীতে কলেরা টক্সিনের ওপর হাজার হাজার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। অবশ্য বাঙালি স্বাভাবিক ভাবেই শম্ভুনাথের কথা বিশেষ জানেও না, আর জানলেও মনেও রাখেনি। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। ... ...
`রাত আড়াইটের সময় ট্রেন জলগাঁও পৌঁছাল। জলগাঁও থেকে ফর্দাপুর পঞ্চাশ মাইল। অজন্তা সেই সময় জঙ্গলাকীর্ণ। মুকুলকে চার মাইল দূরে ফর্দাপুরে থাকতে হবে। ১৯৬৫ সালে যখন নারায়ণ সান্যাল অজন্তা আসছেন তখন এই রাস্তায় বাস চলে। ১৯১৭-তে বলা বাহুল্য কোনো বাস নেই। বাইশ বছরের মুকুল অজন্তা দেখার উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছেন। তিনি এক মুহূর্তও নষ্ট করবেন না। রাত আড়াইটেতেই তাঁর টাঙা চাই। সে অবশ্য পাওয়া গেল না। ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল। টাঙাওয়ালা ভাড়া নিল ছাব্বিশ টাকা। হাওড়া থেকে জলগাঁও ট্রেন ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ। টাঙা থেকে দেখা পশ্চিম ভারতের গ্রামের চমৎকার বিবরণ মুকুলের বইতে আছে। নেরি নামের এক গ্রামের কথা আছে যেখানে মাত্র কিছুদিন আগেই প্লেগ হওয়ায় গ্রামের সবাই বাড়ি ফেলে পালিয়েছে। সাজানো-গোছানো লালিত্যময় সে গ্রাম। দরজায় নকশা আঁকা। খাঁ খাঁ করছে। ... ...
স্বাস্থ্যের জগতে দু’ধরনের নাগরিকত্ব (health citizenship) তৈরি হল। একটি পূর্ণ রাশি ১, আরেকটি ০। আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও এরকম integer দেখা হয় – হয় ০ কিংবা ১। এখানে ভগ্নাংশের কোন জায়গা নেই। যেমনটা আজকের ভারতে এবং বিশ্বে দেখছি আমরা। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল যে স্বাস্থ্যের পরিবর্তে শিক্ষার চোখ দিয়ে দেখলেও আমরা একইরকম অবস্থান দেখতে পাবো। ১৯শ শতাব্দিতে আধুনিক রাষ্ট্র তৈরির শুরু থেকেই রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল মানুষ যাতে “স্বাভাবিক (normal)” এবং “অস্বাভাবিক (pathological)” এই দ্বৈত বিভাজনের গবাক্ষ দিয়ে দেখতে শেখে, সড়গড় হয়ে ওঠে। কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়োত্তর গবেষণা সবকিছুর মধ্য দিয়ে এ শিক্ষা চারিয়ে যায় প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের বোধের মধ্যে। ... ...
৫০০-১০০০ এর নোট বাতিল কেন ? মোদীর এবং সরকারী যুক্তি - ফেক ভারতীয় কারেন্সির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী,ড্রাগ এবং আর্মস স্মাগলারদের মত সরকারবিরোধী কার্যকলাপের অর্থের স্রোত বন্ধ করে দেওয়া । ৭০ বছর ধরে চলে আসা কালো অর্থ ব্যবস্থার মাজা ভেঙ্গে দেওয়া ইত্যাদি । কিন্তু যদি ধরুন আমাদের নূতন নোট ছাপবার দ্বায়িত্ব সরকার এমন এক কোম্পানির ওপর ন্যস্ত করে যাঁদের ভারত সরকার ইতিমধ্যে পাকিস্তানে নকল ভারতীয় টাকা ছাপানোর কাজে সহায়তা করবার অপরাধে ব্ল্যাক লিস্টেড করে রেখেছে ? চমকে উঠবেন না ! পড়তে থাকুন, আপনার -আমার বিপদের কথা । ... ...
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। মহাবিজ্ঞানী। কিন্তু মানুষটি কেমন ছিলেন? ১৯২২-২৩ সালে এশিয়া-আফ্রিকায় ভ্রমণকালে তিনি যে ডায়েরি লিখেছিলেন তার পাতায় পাতায় মেলে অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য। ২০১৮ সালে এ ডায়েরি প্রকাশিত হয়েছে বই হয়ে। পড়লেন চিকিৎসক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। ... ...