বন্ধু সুদীপ্তার বিয়েতে গিয়ে খেয়েছিলুম পেনেটির গুঁফো। বন্ধুদের বাড়ি পানিহাটিতেই। কিন্তু ওরা এই মিষ্টির সন্ধান জানত না। খোঁজ দিয়েছিলেন মীনাক্ষী ম্যাডাম। মীনাক্ষী সিংহ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের পড়াতেন। এই সেদিন সুদীপ্তাই হোয়াটসঅ্যাপে একটা শর্টফিল্ম পাঠাল। তনুশ্রীশংকরের মেয়ে অভিনীত ছবি, ‘থার্ড আই’। তাতে দেখি, মীনাক্ষী ম্যাডামও অভিনয় করছেন। সুদীপ্তার বাবা ম্যাডামকে নেমন্তন্ন করতে গিয়েছিলেন। পানিহাটিতে বাড়ি শুনে ম্যাডামের স্বামী জানতে চেয়েছিলেন, ‘তাহলে গুঁফো খাওয়াবেন তো?’ সুদীপ্তার বাবা অবাক হয়েছিলেন। মিষ্টির এমন পুরুষালি নাম শুনে। তবে তিনি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। গুঁফো বেশ পুরনো যুগের মিষ্টি। এখনকার দোকানদার আর ওই মিষ্টি করেন না। উনি কিন্তু অনেক খুঁজেপেতে, পুরনো দোকানদারকে ধরে বিশেষ অর্ডার দিয়ে মেয়ের দিদিমণির স্বামীর অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন। গুঁফো আসলে সন্দেশ। কিন্তু ভিতরে রসালো পদার্থ থাকে। কামড় বসালে সেই রস রসিকের গোঁফে লেগে যায়। গোঁফে লাগে বলেই এমন নাম। ... ...
`আজকের অতিমারির সময়ে ১৯৩০-এর দশক থেকে গৃহীত ড্রপলেট এবং এরোসল সংক্রান্ত ধারণার জগতে করোনা ভাইরাসের Airborne Transmission-এর তত্ত্ব একটি প্যারাডাইম শিফট, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক বিষয়কে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অতীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ একটি অভ্যাসের পরিবর্তন এরকম প্যারাডাইম শিফট ঘটিয়েছিল অস্ট্রিয়ার চিকিৎসক-বিজ্ঞানী Ignaz Philipp Semmelweis-এর প্রবর্তন করা সার্জারির আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বাধ্যতামূলক অভ্যেস। তাঁর প্রবর্তিত অতি সামান্য (যেখানে কোন বড়ো প্রযুক্তির চেকনাই নেই) এই নতুন পদ্ধতি জন্মের পরে মায়েদের মৃত্যুর হার লক্ষ্যণীয়ভাবে কমিয়ে দিল। তাঁকে বলা হত “saviour of mothers”। ... ...
একথা নিশ্চিত যে, দ্রুতগামী যান, যেমন রেল, প্লেনই মারীর মহামারী বা অতিমারী হয়ে ওঠার মূল বাহন। আমরা যদি প্রাক ব্রিটিশ যুগের আর্থ-সামাজিক মডেল দেখি, এই সংগঠিত যান-চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলার বদলে দেশের শাসকদের লক্ষ্য থাকত সড়কপথ নিরাপদ রাখা, কিছু নির্ধারিত বাণিজ্য জলপথে চালানো। সমসত পণ্যের স্থানান্তরণ নয়। বাণিজ্যের সংগঠন উত্তর-ব্রিটিশ ধনতান্ত্রিক যুগের লক্ষণ এবং এই সংগঠনের পিছনে জনগণের শ্রমের মূল ভাগ নিয়োজিত হয়। প্রাক ব্রিটিশ বাংলা যখন পৃথিবীর এক বিশাল অংশে বস্ত্র সরবরাহ করত, সে বিকেন্দ্রিভূত, অসংগঠিত উৎপাদন এবং বাণিজ্যের এক মডেল চালাত। যার ফল হিসেবে দেখা যায়, সেইসময়ে বাংলায় মানুষ মোটের উপর স্বচ্ছল। আর, এই বাজারটা যুখন উত্তর-পলাশী যুগে ইংল্যান্ডে গেল, সেখানে স্থানীয় লোক বড় সংগঠিত উদ্যোগকেন্দের কাজ করতে শুরু করল, তাদের জীবনধারণ আগের থেকেও খারাপ হয়ে পড়ল (ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা, এংগেলস, ১৮৪৫)। হয়ত কিছুটা একই ভাবে সংগঠিত ধনতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র শহরগুলি গড়ে ওঠার সময়ে মানুষের ভালো থাকার মূল অক্ষগুলি অবহেলিত হল, কারণ এই শহরের বিকাশ হল কেবলমাত্র ঐ কেন্দ্রিভূত উদ্যোগ ও বাণিজ্যকে পুষ্ট করার স্বার্থে। তাই কি আমরা দেখতে পারি উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা হয়ে ওঠে এশিয়াটিক কলেরার বিশ্ব-আঁতুরঘর? ... ...
কোরোনা ভাইরাস চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে চীনের লেভেল - ৪ (সর্বোচ্চ সুরক্ষা স্তর) ভাইরাস গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। যেহেতু নিশ্চিত করে উৎপত্তির কারণ চিহ্নিত করা যায় নি, বাদুড়, সাপ বা প্যাঙ্গোলিন থেকে মানুষের দেহে সংক্রমণ ছড়িয়েছে আশংকা করা হচ্ছে তাই এর উৎপত্তির পেছনে ষড়যন্ত্রের একাধিক জোরালো তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে। ... ...
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে (এখানে ইউরোপ ধরে নিতে হবে) ১৮৪৮-এর রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন (বিশেষ করে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে) স্বাস্থ্যের জন্য একটি জাতীয় আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। নতুনভাবে জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং আইন-কানুন, সোশ্যাল মেডিসিন এবং এপিডেমিওলজির মতো স্বাস্থ্যের নতুন শাখা তৈরি হল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হল মেডিসিনের দর্শনের জগতে – নতুন করে বিশিষ্টতা পেলো প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বা আগাম রোগ-প্রতিরোধের বিষয়। টমাস কুনের অনুসরণে বলা যায় মানুষের গণ আন্দোলন এবং স্বাস্থ্যের দাবীতে সোচ্চার হওয়া মেডিসিনের দর্শন ও ভাবনার জগতে একটি “প্যারাডাইম শিফট” ঘটালো – বেড সাইড মেডিসিনকে অতিক্রম মেডিসিন এলো জনসমাজে এবং জনস্বাস্থ্য একটি আলাদাভাবে চিহ্নিত অবস্থান হল। ... ...
ক্ষমতার লোভ বরাবরই ছিল, তার ওপর বড় নেতা আর মন্ত্রী হওয়ার উচ্চাশা তাঁকে নিয়ে গেলো হিন্দু মহাসভায়। তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখছেন যে তৎকালীন সরকারে যোগ দেওয়া তাঁর মত সাচ্চা হিন্দুর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু দু'বছরের মধ্যেই, ১৯৪১ সালের ১২ই ডিসেম্বর, তিনি ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করলেন অর্থমন্ত্রী হিসেবে। রাজনৈতিক জীবনে বারংবার তাঁর দল বদল করা কিন্তু শ্যামাপ্রসাদের মনের অস্থিরতার পরিচয় দেয়না। বরং উল্টোটাই। অত্যন্ত 'বিচক্ষণতার' সঙ্গে মওকা বুঝে, হাওয়া যেদিকে যাচ্ছে, বিবেক বিসর্জন দিয়ে সেদিকে যেতে তিনি কখনোই পিছপা হননি। ... ...
- এক থাপ্পড় লাগাব অসভ্য মেয়ে, সিনিয়ারদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় জাননা ? - যাব্বাবা, আমি কোথায় ভাল মনে বলতে গেলাম, তোমার জীন্সটা ফ্যান্টা, আর তুমি চমকে দিলে ? দেখ, সিনিয়ার বলে অত এয়ার নিওনা, মোটে তো দুবছরের বড় – - চমকে দিলাম আবার কী ভাষা, ঠিক করে কথা বল। আমাকে কী বলে ডাকলে তুমি ? আমার নাম শুচিস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছোট করে, স্মিতা। বুঝলে ? - কী করে জানব দিদিভাই, দুনিয়ার লোক তোমায় শ্যামা বলে ডাকে শুনি, তাই আমিও বললাম, শ্যামাদি। খুব অন্যায় করেছি না? পায়ে ফায়ে ধরতে হবে নাকি? ... ...
আজ মুখোশে মুখ ঢেকে বড় রড হাতে নিয়ে জেএনইউ হস্টেলে ঢুকেছে গুন্ডাবাহিনি, যা ছাত্রদের অভিযোগ অনুযায়ী এবিভিপির। রাষ্ট্রপোষিত গুন্ডা। ফি বাড়ানোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, এনার্সি, সিএএ-র বিরুদ্ধে ছাত্রদের একতা, শাহিনবাগ ধর্ণা,গোটা দেশে বিশাল আন্দোলন, দেশবিদেশে বেইজ্জত হবার অপমান, আর কতো সইবে ফ্যাসিস্ট সরকার। জেএনইউয়ের অধ্যাপক, ছাত্র নির্বিশেষে আজ তাই রক্তাক্ত। নির্বাচিত ছাত্রসংসদ প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ সাংঘাতিকভাবে আহত। হাসপাতালে ভর্তি। অনেক সহযোদ্ধারও একই হাল। আহত অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন। জোর করে জয়শ্রীরাম বলানো হচ্ছে, আর তাও নাকি হচ্ছে সংঘপরিবারঘনিষ্ঠ অধ্যাপকের অংুলিহেলনে। ... ...
উচ্চশিক্ষায়তনগুলির ঝকঝকে দেওয়াল, চকচকে আসবাব, ছিমছাম পড়ুয়ার দল। ধূলো ঢোকে না - এমন পরীক্ষাগার, মাছি গলে না - এমন পাহারা। খাওয়া ভাল, হাওয়া ভাল, সবচেয়ে ভাল - পরিবেশ। সত্যিই কি সবই পাউরুটি আর ঝোলাগুড়? ছায়া পড়ে না, আলোকোজ্জ্বল করিডরের কোথাও? মেঘ জমে না - সাজানো ক্যাম্পাসের ওপর? নিঃসীম অন্ধকার নেই কোনো ঝলমলে মুখের আড়ালে? আছে হয়তো - খবরে আসে না। কিল খেয়ে কিল হজম করেন - কখনো ছাত্র, কখনো শিক্ষক। অনুচ্চারিত কোড আছে কোথাও - আর্মি ক্যাম্পসদৃশ। চোখের তলায় পরিশ্রমের কালি দেখা গেলেও, পিঠের বিশাল ডিপ্রেশনের বোঝা অদৃশ্যই থাকে। ঘনঘন নষ্ট হয় একেকটা স্বপ্ন। কদাচিৎ, একটা করে জীবনও শেষ হয়ে যায়। কোথাও তো দরকার, এই গুনগুন, ফিসফাস গুলোর জায়গা হওয়ার? অ্যাকাডেমিয়ার কণ্ঠস্বর অনেক, বক্তব্যও বিভিন্ন - এ সব কথা মনে রেখেই, শুরু হল গুরুর নতুন বিভাগ, "উচ্চশিক্ষার আনাচেকানাচে" ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী - উচ্চশিক্ষার অঙ্গনের যে সব কথা এতদিন জানাতে পারেননি কোথাও - লিখে পাঠান গুরুচণ্ডা৯-তে। নিজের কথা, পাশের কিউবিকলের কথা, পরিবারের লোকের কথা। এমন কাউকে চেনেন - যাঁর আছে এমন অভিজ্ঞতার সঞ্চয়? লিখতে বলুন তাঁদের। সব লেখাই প্রবন্ধ হতে হবে তার মানে নেই। প্রবন্ধ আসুক, অভিজ্ঞতার ভাগাভাগি হোক, বিতর্ক জমুক। ফিসফিসগুলো জোরে শুনতে পাওয়া গেলেই হল। আজকের লেখা - 'নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক' একজন প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা। ... ...
ঋণ অনাদায়ী হয়, যখন ঋণীরা ঋণ থেকে পাওয়া পুঁজিটি নিয়ে ফাটকা খেলেন বা তা অন্য ব্যবসায়ে লাগিয়ে দেন। আমাদের দেশের পশ্চিম প্রান্তে একটি রাজ্য রয়েছে। যেখান থেকে আসা বণিকরা সরকার নির্বিশেষে এদেশের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। অতীতে সব বৃহৎ অর্থনৈতিক কেলেংকারিই তাঁদের মগজের জোরে হয়েছিলো। এই তালিকাতেও তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফাটকাবাজি তাঁদের রক্তে রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে তাঁরা এককথায় কিনে রাখেন। প্রতি নির্বাচনের সময় যেসব লক্ষকোটি টাকা বেআইনি হাতবদল হয়, তার রাশটি তাঁদের হাতেই থাকে। যে দলই সরকারে আসুন না কেন, এই সব বণিক তাঁদের থেকে শাইলকের ভাগের মাংস উঁচু সুদসহ উসুল করে নেন। ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণও সেই ভাগের মাংস। ... ...
এই বিকারগ্রস্ত সময়ে কলিম প্রায়ই বলতেন, ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত থেকে এই বাংলাকে রক্ষা করছে তিনটি শক্তি। কী সেই ত্রিশক্তি? বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, একটি সরোবর কত বড়ো ছিল, বোঝা যায় সেটি শুকিয়ে গেলে। আমরা সেই শুকনো সরোবরের তীরে দাঁড়িয়ে আছি এখন। ট্র্যাজেডি হল, এখনও বুঝতে পারছি না বা চাইছি না ক-ত জল ছিল একদা সেই সরোবরে। ভাষা ও সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার হারিয়ে আমরা আজ ভিখারি। সুযোগ পেয়ে গো-রক্ষকদের তাণ্ডব তো চলবেই! রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'সভ্যতার সংকট'-এ লিখেছিলেন 'অতীতের সঙ্গে ভারতের নৃশংস আত্মবিচ্ছেদ'। নৃশংস শব্দ ছাড়া এই আত্মবিচ্ছেদকে সত্যিই বর্ণনা করা যায় না। আমরা ঐশ্বর্যহীন হয়েছি স্বেচ্ছায়, ফলত প্রতি পদে পদে সহ্য করতে হবে 'মুর্খ ভক্ত'দের তাণ্ডব। কলিম-বর্ণিত ‘ত্রি’ফলা’র ফলাগুলো নষ্ট করেছি বা করে চলেছি অহরহ। ... ...
সোজা চোখে দেখলে, বাংলা সিনেমা একরকম করে যে ধ্বংস হয়েছে, তার কারণ বাজার নয়, কারণটি রাজনৈতিক। বস্তুত একটি পদ্ধতিগত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বাংলা সিনেমার 'কলকাতা ঘরানা'টিকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর তাঁত শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন সম্পন্ন হয়েছিল ৩০ বছরের মধ্যে। সঙ্গে ছিল মন্বন্তর, এবং কিছুদিনের মধ্যেই হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পর, ৩০ বছরের মধ্যে সিনেমা শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন হয়ে গেছে, এবং একটু আগে থেকে হিসেব করলে মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, সবই ছিল সঙ্গে, শুধু কালানুক্রমটি একটু উল্টে পাল্টে গেছে। ... ...
৩৫ বছর এই রাজ্যে তথাকথিত বাম শাসন ছিলো, যেখানে বড় মাত্রায় সমাজের প্রায় প্রতিটি বর্গের মানুষ কোন না কোন ভাবে পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলো। রাজনৈতিক ভাবে কী হয়েছে, সে আলোচনা স্বতন্ত্র, কিন্তু আসলে গোটা সমাজ জুড়ে কোন দর্শন চারিয়ে গেছে তার দিকে নজর দিতে হবে। পার্টির সমর্থক পার্টির লোকাল কমিটির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে না, পার্টির লোকাল জোনালের বিরুদ্ধে, জোনাল জেলার বিরুদ্ধে, জেলা কমিটি রাজ্য কমিটির বিরুদ্ধে, রাজ্য কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটি পলিটব্যুরোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারবে না। পলিটব্যুরো যা ঠিক করছেন তা স্তরে স্তরে পালন করার নির্দেশ আসছে, এর মধ্যে দিয়ে ‘কেন্দ্র’র প্রতি আনুগত্য এবং নির্ভরশীলতা তৈরি হয়, সেই সমাজে সব থেকে যা শক্তিশালী হয়, তা ফ্যাসিবাদী মনোভাব। ... ...
হস্তিনাপুরের রাজপ্রাসাদ। অজমাংস রন্ধন গার্ডেন পার্টির ওপেন এয়ার কিচেনে চলছে জম্পেশ। তত্ত্বাবধানে দ্রৌপদী স্বয়ং। খুশবুতে তার চঞ্চল সমগ্র মহাভারত যেন। সে খুশবু মন্থন করেই বুঝি উঠে আসছে নানা জমজমাট মহাকিস্সা। তবে ষড় নয় বরং পঞ্চরসে আপ্লুত সে মহাভারতের খানা অমৃতসমান। লিখছেন শমিম আহমেদ। ... ...
হাজার বছর আগের কবিরা এমনকি আজকের ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট দেওয়া কবিদের সঙ্গেই যেন কিভাবে এক অলীক আত্মীয়তায় রয়েছেন। তাই , কাহ্নু, কৃত্তিবাস, জয়, বিনয় , সুনীল, মৃদুল, জয়দেব(বসু), সোমনাথ যেন নিরবচ্ছিন্ন কালপ্রবাহে একই সূত্রে বাঁধা, কিন্তু তাদের দেশ একই।সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রে।মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতায় সত্যজিৎ রায়ের কথা। মনে পড়ে গেল বিভূতি ভূষণ। অপুর হাতে ধরা গ্লোব, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতা আবৃত্তি করে অপু এই পুরস্কার জিতেছিল। সুদুরের পিয়াসী, কৌতূহলী, অপু এই গ্লোব সবসময় হাতে রাখত, সত্যজিতের ‘অপরাজিত’ সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু এও মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ: ' সত্যেন করতেন কিছু/যদি না ছুটতেন ছন্দের পিছু পিছু'। ... ...
যেভাবে বারবার 'পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসকারী' ইত্যাদি হালকাভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে – সেটাও খুব তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে নেই। পাওয়ার গ্রিডের বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি রয়েছে, ডিটেলে ক্ষতির পরিমাণ লিপিবদ্ধও করা আছে। সেগুলো মূলতঃ যখন টাওয়ার বসানো আর তার লাগানো হচ্ছে, সেই সময়কার এককালীন ক্ষয়ক্ষতি। কিন্তু কোথাও এমন উদাহরণ নেই যে চাষের জমির ওপর দিয়ে হাই ভোল্টেজ লাইন গেলে সেখানে আর চাষ করা যায় না। বা ফসলের উৎপাদন মারাত্মক ব্যহত হয়, মাছ মরে যায় – ইত্যাদি ইত্যাদি। বরং এই অভিযোগগুলোর স্বপক্ষে একটাও প্রামাণ্য কেস স্টাডি নেই। সায়েন্টিফিক কমিউনিটির (যারা বিজ্ঞান গবেষণার কাজ করে) মধ্যে এরকম কোনো কনসেন্সাস বা ঐক্যমত্য তো দূরস্থান, 'একাংশের মধ্যে সিরিয়াস কনসার্ন' – এরকম কিছুও শোনা যায় না । গোটা পৃথিবীজুড়ে লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার ব্যাপী হাই ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন আছে। চাষের জমি, পুকুর, ভেড়ি – এসবের ওপর দিয়েই আছে বহু দশক ধরে। চাষ, মাছের ভেড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে – এরকম অভিযোগ শোনা যায়নি। সত্যিই যদি যেত, যদি একটা অঞ্চলেরও বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তিত হয়ে থাকতো গত পঞ্চাশ বছরে, তাহলে সেটার প্রমাণ থাকতো চোখের সামনেই। সেটা একটা উদাহরণ হয়ে যেত। কিন্তু শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটা প্রযুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে আমাদের চোখ কান সবসময় খোলা রাখা উচিৎ। পৃথিবীতে চাকা আবিষ্কারের সময় থেকে শুরু করে আজ অব্দি একটাও এমন প্রযুক্তি বোধহয় নেই যার কোনো পরিবেশগত কুপ্রভাব নেই। আর বিজ্ঞান, প্রযুক্তি – এই কথাগুলো শুনলেই সেগুলোকে অন্ধভাবে ভক্তি শ্রদ্ধা করারও কিছু নেই। ভবিষ্যতে যদি কোনো ক্ষতি সত্যিই চোখে পড়ে সেগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে। ... ...
হ্যাঁ, নারীকে নিয়েই কথা আসে সারাবছর, অজস্র কথা। জীবন এফোঁড়-ওফোঁড় করে চলে যায় নানারঙের কথা। সেইসব কথার পিঠে চড়ে আসে ভাবনারা। প্রশ্নেরা। ঘুরে বেড়ায় আলগোছে। নারীদিবসের আশেপাশে এইসব ভাবনাগুলো জমাট বাঁধে, মাথায় চড়ে বসে। আমাদের তাগাদা দেয় পুরোনো পড়া ঝালিয়ে নিতে। আর সেই পুরোনো পড়া পুরোনো ভাবনা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই কোথাও কোথাও নতুন কথাও জুড়ে যায় জায়গামত। এবারের পুরোনো পড়া ঝালানোর সময়েই পড়লাম স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘ঘরোয়া’ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৮ই মার্চ)। খোদ নারীদিবসে দাঁড়িয়ে একজন নারীই যখন মেয়েদের ‘গুছিয়ে সংসার করার মোহে’র দিকে আঙুল তোলেন, তখন একটু ধাক্কা খেতে হয় বইকি, মানে এইটা ঠিক পুরোনো পড়ার সিলেবাসের মধ্যে ছিল না তো বরং (এই সাংবাদিকের লেখা) যেসব পুরোনো পড়া মনে পড়ে যায়, সেখানে উনিই সওয়াল করে এসেছেন মেয়েদের ঘরোয়া কাজের মূল্যায়নের পক্ষে; সারামাসের রান্নার লোকের মাইনের সঙ্গে বা বারো ঘন্টার আয়ার মাইনের সঙ্গে ড্রাইভার বা মিস্ত্রীর মাইনের একেবারে সোজাসুজি তুলনা করেছেন। তাহলে কি দুটোই সত্যি ! এইখান থেকে শুরু হয়ে যায় আমাদের লেখাপড়াশোনা যার সরল অর্থ হল আজকের পড়ার মধ্যে নতুন ও পুরোনো সবরকমের কথাই থাকবে, নারী ও আনাড়ি সকলের কথাই নামে ও বেনামে থাকবে। ... ...
চে-র টাট্টু খোদাই একজন অসৎ মানুষ বিজেপিতে গেছে বলে এতো এতো খিল্লি! তার মতোই আর কয়েকজনও বিজেপিতে গেছে। কিন্তু লেসার ইভিলে যে পাল্লা অনেক ভারি! পয়সা ছড়িয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে কিনে নিলে, ট্রেন্ড দেখে যার সম্ভাবনা খুবই বেশি বলে সবাই বলছে, তখন কী হবে? ... ...
অমন দূরত্ব নির্মাণের অদূরপ্রসারী ফল যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, বুদ্ধির বৈকল্যে তা যুদ্ধবিশারদদের কাছে ধরা পড়ে না। আমরাও হয়তো এইভাবে সমাজবিচ্ছিন্ন কোনও উৎকট জীবে পরিণত হয়ে যাব। আমরা কি অজান্তে সেই পথই খনন করে, নতুন অসভ্যতার রিহার্সাল দিচ্ছি? অথচ যুদ্ধের যে-কঠোর কৌশল আমরা এখন বাধ্য হয়ে মানছি তা এড়িয়ে যাওয়া যেত, যদি সময়মতো কর্তব্যগুলো কঠোরভাবে পালন করা হত। অন্তর্জলি যাত্রার দৃশ্যকল্প না-লিখে ভিয়েতনাম, কিউবা, থাইল্যান্ড বা দক্ষিণ কোরিয়া তা করে দেখিয়েছে। কারণ, সেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার কাঠামোটা মজবুত। আমরা নিধিরাম! গলাবাজী আর ধূর্তামি ছাড়া আমাদের রাষ্ট্রনীতিতে আছেই বা কী! ... ...
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং আরএসএস এর সমালোচনা করে গর্গ জানালেন, খুব সুকৌশলে হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থানের একটি প্রকল্প বাঙালির ওপর চাপানো হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বাংলায় কথা বলার জন্য অপদস্থ হতে হচ্ছে বাঙালিকে। এ ধরনের ঘটনার বিরোধিতায় বাংলা পক্ষ সর্বদা তৎপর থেকেছে বলে তাঁর দাবি। ... ...