প্রতিদিন কোথাও না কোথাও খবর আসছিল প্রতিবাদের। উত্তর-পূর্ব দিল্লীর জাফরাবাদ, চাঁদবাগ, খাজুরি খাস, পুরোনো মুস্তাফাবাদ, সেলামপুর, তুর্কমান গেট, করডমপুরি, সুন্দর নগরী, লালবাগ, উত্তর-পশ্চিম দিল্লীর ইন্দরলোক, দক্ষিণ দিল্লীর নিজামুদ্দিন, হৌজরানী, উত্তর দিল্লীর সদর বাজার। সারা দেশ দেখছিল জামা মসজিদ চত্বর, ইন্ডিয়া গেট- শ্লোগানে, গানে উত্তাল! উত্তাল সারাদেশ! তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। কলকাতাতেও পার্ক-সার্কাস, রাজাবাজারে আমরা দেখেছি শাহিনবাগের মতোই সংখ্যালঘু নারীসমাজের নেতৃত্বে নানাবিধ প্রতিকূলতাকে জয় করে দীর্ঘমেয়াদি অসামান্য প্রতিবাদী জমায়েত। ... ...
হজরত মহম্মদ সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী ছিলেন। অগ্নিপূজক পারসিকদের সমান সম্মানের সঙ্গে উপাসনার অধিকার দিয়েছেন। আর এখন কিছু মৌলবাদী অন্য ধর্মের উপাসনায় বাধা সৃষ্টি করে বাংলাদেশে। তিনি মনে করতেন, তিনি ঈশ্বরের প্রতিনিধি। কিন্তু যীশু মুসাদের বলা হতো ঈশ্বরের পুত্র। আদম থেকে যীশু পর্যন্ত সব 'মহাপুরুষ'-কে তিনি নবি বা ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে স্বীকার করেছেন। এবং বলেছেন, তিনিই ঈশ্বরের শেষ প্রতিনিধি। ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের যা কিছু ভালো তা নিয়েছেন। গ্রহণ করেছেন আরব বেদুইনদের কাব্যিক ভাষা। কোরান পৃথিবীর প্রথম লিখিত গদ্যগ্রন্থ। এবং তা অসম্ভব কাব্যিক ও তত্ত্বচেতনাময়। তবে অন্ধরা সব কোরানে আছে বলে বিপত্তি বাড়ান। যেমন একদল বলেন, সব বেদে আছে। ... ...
সাহিত্যে লিখে দেওয়া যত সহজ চলচ্চিত্রে করে ফেলা ততটাই কঠিন। চলচ্চিত্রে বিষয়টা সম্পূর্ণত ভাঁড়ামোয় পর্যবসিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। এব্যাপারটা আমাদের দেশে সত্যজিৎ রায়ের থেকে ভালো আর কেউ বুঝতেন না। এর কারণ শুধুমাত্র এই নয় যে সিনে-টেকনিক বা সিনে-প্রকরণবিদ্যার উপর তাঁর দখল ছিল ঈর্ষণীয়, এর সঙ্গে এটাও সত্যি যে তাঁর আঠাশটি পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের ছবির মধ্যে কমবেশি বাইশটিই অন্যের লেখা সাহিত্য থেকে করা! ফলত তুলসীর সহজাত অভিনয় ক্ষমতা ও মৌখিক-দৈহিক বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করে যতটুকু করা যায় তাই করেছিলেন সত্যজিৎ ... ...
জাহাঙ্গিরপুরী সি-ব্লক যেখানে মূলত ঝামেলা হয়েছে সেখানে প্রধানত বাঙালি মুসলিমদের বাস। এঁরা প্রায় প্রত্যেকেই চার দশক আগে রুটিরুজির টানে বাংলা ছেড়ে এখানে এসে বসবাস করছেন। এঁরা মূলত ছাঁট এবং অন্যান্য ছোট ব্যবসায় যুক্ত। যেমন আনোয়ার যাঁকে প্রধান অভিযুক্ত বলা হচ্ছে, তাঁর আদিবাড়ি হলদিয়ায়। আরেক অভিযুক্ত শেখ সোহরাবের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগণার সাগর অঞ্চলে। দুটি জায়গায় দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের লোক এসে ঘুরে গেছেন। এঁদের সবার বৈধ ডকুমেন্ট আছে। সোহরাব দিল্লি পুরসভার কর্মী, তাঁর বাবাও দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদে কাজ করেছেন। তবুও তাঁদের ভারতীয়ত্ব সন্দেহের মুখে; তাঁরা নাকি বাংলাদেশি; তাঁদের নথিপত্র সবই নাকি জাল, ভোটে ফায়দা নেওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের তৈরি করে দেওয়া। আজকের ভারতে মুসলিমরা নিত্য নতুন সংকটে জর্জরিত হচ্ছেন; আর যে মুসলিমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছেন তাঁদের সংকট তো আরও গভীর, তাঁদের তৎক্ষণাৎ বহিরাগত, বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে যাঁরা এই দেশে বাস করছেন তাঁদেরও বিদেশী তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে! শুধু দিল্লি নয়, সারা ভারতে আজকে এটাই ট্রেন্ড! এক ধর্মগুরু তো নিদান দিয়েই দিয়েছেন যে, বাঙালি হলেই সন্দেহের! ... ...
রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল সতী রেগুলেশন অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে বড়লাট লর্ড বেন্টিঙ্ক। উক্ত আইন বলে কোম্পানির আওতায় থাকা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সমস্ত অঞ্চলে সতীদাহ নিষিদ্ধ এবং সতীদাহে সাহায্য করা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষিত হয়। সেই সময় এই প্রেসিডেন্সির আওতায় মূলতঃ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা, উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চল ছিল। উক্ত অঞ্চলগুলিতে বিগত কয়েক বছরে সালপ্রতি প্রায় ৬০০ সতীদাহ হয়েছিল। বেন্টিঙ্ক ১৮২৯-এর এক রিপোর্টে লিখছেন সে বছর নথিভুক্ত ৪৬৩ জন সতীর মধ্যে ৪২০ জন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার এবং তার মধ্যে ২৫০ জনের বেশি কলকাতা-বিভাগের। লক্ষ্যণীয়, বোম্বে এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে সতীদাহের সংখ্যা এর থেকে অনেক কম ছিল। এবং এই বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা-বিভাগে সতীদাহের সংখ্যা মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, পাটনা বা বেনারসের থেকে দশগুণের বেশি। আরও গুরুত্বপূর্ণ উইলিয়াম কেরির রিপোর্ট, যেখানে তিনি বলছেন ১৮১৫ থেকে ১৮১৮-র মধ্যে এই এলাকায় সতীদাহের সংখ্যা বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছিল। এবং সাধারণ ধারণার উল্টোদিকে দেখা যায় সতীদের মধ্যে অধিকাংশ মোটেই ব্রাহ্মণ নয় বরং ১৮২৩ সালের রিপোর্টে ৫১% জাতিতে শূদ্র। ... ...
হয়তো নিজেদের অজ্ঞাতেই, আমরা (পদার্থবিদরা) পদার্থবিদ্যা-র পেশাকে, ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’-এর একটি উদাহরণ হিসেবে দেখি – যে রূপকে সর্বদাই, অনেক লড়াইয়ের পর, সবচেয়ে কেঁদো বাঘটিই জঙ্গলের রাজা হয়ে ওঠে। সেই কারণে, পড়ানোর বা আলাপচারিতার সময়, নিয়োগের সময় এবং সর্বোপরি নিজেদের মাথার মধ্যেই, আমরা পদার্থবিদদের একটি তালিকায় ক্রমানুসারে সাজাই, আর “সর্বোত্তম”-এর সন্ধান করতে থাকি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বোধ, রাশিবদ্ধ এবং অঙ্কের ভাষায় প্রকাশিত না হচ্ছে, আমাদের শান্তি নেই। স্বভাবতই, পদার্থবিদদের নিয়ে চিন্তা করতে বসেও, আমরা অভ্যাসবশত সেই চিন্তাকে ‘গাণিতিক’ মাপজোকে ফেলি। ঠিক তখনই আমাদের বক্তব্য হয়, “যদি আমাদের সাজানো লিস্টে শ্বেতাঙ্গ পুরুষ প্রার্থী ‘ক’, সংখ্যালঘু প্রার্থী ‘খ’-এর উপরে থাকে, তবে আমরা ‘ক’-কে নিতে বাধ্য, আর সেই কারণেই, ‘বৈচিত্র্যে’র জন্যে আমাদের পক্ষে কিস্যুটি করা সম্ভব নয়!” এর থেকে বড় ভুল কথা আর হয় না! ... ...
গান্ধিজী ১৯৩৫ সালে তাঁর হরিজন পত্রিকায় চকচকে পালিশ করা মিলের চাল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কারন ওই চাল খেয়ে ভারতবাসীর স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। আজকে তাঁর কথা মিলে গিয়েছে। মধুমেহ রোগ ঘরে ঘরে। অন্যান্য কারণের সঙ্গে আগাছা নাশক গ্লাইফোসেটও দায়ী। বিভিন্ন খাবার ও জলের মাধ্যমে গ্লাইফোসেটের অবশেষ শরীরে প্রবেশ করে এবং ইনসুলিন তৈরির প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেয়। সেটা মানুষের শরীরের উপর নির্ভর করে। অনেকের শরীরে হয় না বা দেরীতে হয়। তাছাড়া ওই বিষ কিডনির রোগ ও ক্যানসার সৃষ্টি করে। রেললাইনে ও সবজির ক্ষেতে ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। বিষমুক্ত খাবার নিয়ে কেউ সচেতন নয়। ... ...
বিনয় চৌধুরীর মণ্ডল কমিশনকে এই রাজ্যে পশ্চাদপদ শ্রেণি বা ওবিসি নেই চিঠি দিয়ে জানানোর প্রায় ২৩-২৪ বছর বাদে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওবিসি বা পশ্চাদপদ জাতির বা ওবিসিদের তালিকা তৈরি করতে শুরু করে। বলা যায় বাধ্য হয়ে এই কাজে হাত দেওয়া হয়। কারণ ততদিনে, অনেক রাজ্যেই ওবিসি এবং দলিতরা নির্বাচনে বড়ো ভূমিকা পালন করছে, তাঁদের নেতা-নেত্রীরাও বিভিন্ন রাজ্য-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। ওই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক মাপকঠিতে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণও ঘোষণা করা হয়। মুসলিমদেরও একটা বড়ো অংশ এই তালিকাভুক্ত হন। ২০১০-১১ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত এলাকায় একটি সমীক্ষা হয় পশ্চাদপদ জাতির সংখ্যা ঠিক মতো জানতে। যতটুকু সমীক্ষা হয়েছিল তা থেকে তখন একটা ধারণা হয়েছিল, গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশ ওবিসি। যদিও এটা সরকারি তথ্য নয়। ... ...
১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে বাংলা একাডেমী আয়োজিত বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে দুটো ব্যানার হোর্ডিং-এর লেখা শ্লোগান পড়ে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম—“শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলুন”, “শুদ্ধ বানানে বাংলা লিখুন”। তখনই মনে কয়েকটা প্রশ্নের উদয় হয়েছিল। শুদ্ধ ইংরেজি বলা বা লেখার জন্য আমরা যতটা আগ্রহ বোধ করি এবং যত্ন নিই, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে তার অভাব কেন? আমরা সকলেই কি বেশিরভাগ সময় শুদ্ধ বাংলা বলি বা লিখি? অথবা ব্যাপারটা কি এরকম যে বাংলা ভাষায় সব রকম বানানই চলে, এবং, শুদ্ধতার কথা বলা এক রকম স্পর্শকাতরতা বা ছুতমার্গ? নাকি, আমরা যে অনেক সময়ই ভুল বলি বা লিখি তা নিজেরাও জানি না বলেই এই সব ভাবি? ... ...
২৪শে অক্টোবর ১৯১৭, দুর্গা পুজোর মহানবমীর দিন আগুন লেগেছিল রায়বাগানের মতিলাল সেনেরবাড়িতে। সেখানেই থাকত রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানির সমস্ত ছবির ফিল্ম। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলভারতের প্রথম চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেনের সারাজীবনের পরিশ্রমের যাবতীয় ফসল। বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছিল এক অবিশ্বাস্য ইতিহাস! পরের এক শতাব্দী জুড়ে মান্যতা এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এক ঐতিহাসিক ভুল তথ্য! না! দাদাসাহেব ফালকে নন! ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রকৃত পথিকৃৎ ছিলেন এক বঙ্গসন্তান। তাঁর নাম হীরালাল সেন। ... ...
আনন্দবাই-এর জীবন বড়ো সুখের ছিলনা। মহারাষ্ট্রের কল্যাণে এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে জন্ম ৩১ মার্চ, ১৮৬৫। পরিবারের ১০ সন্তানের মাঝে ৬ নম্বর সন্তান তিনি। তাঁর আরও পাঁচ বোন এবং চার ভাই ছিল (অবশ্য দুজন পুত্র সন্তানের অকালমৃত্যু হয়)। মাত্র ৯ বছর বয়সে ৩১ মার্চ, ১৮৭৪ সালে বিয়ে হল তাঁর চেয়ে ২০ বছরের বড়ো গোপালরাও যোশীর সাথে। আনন্দবাই স্বামীর রাখা নাম – “হৃদয়ের আনন্দ”, বাবার বাড়িতে নাম ছিল যমুনা। আনন্দবাই-এর ১৪ বচর বয়সে অর্থাৎ ১৮৭৮ সালে এক সন্তানের জন্ম হয়। ১০ দিনের মাথায় সে সন্তান মারা যায়। তাঁর গভীর উপলব্ধি হল যে উপযুক্ত চিকিৎসক না থাকার জন্য শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা তাঁকে চিকিৎসক হবার ব্রতের দিকে যেতে উজ্জীবিত করে তুললো। সন্তানের মৃত্যুর পরে তাঁর উপলব্ধি আমাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায় – “একটি শিশুর মৃত্যু তার পিতার কোন ক্ষতি করেনা, কিন্তু মা চায় না তার সন্তান তাকে ছেড়ে চলে যাক।” ... ...
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মহিলা ছাত্রদের ভর্তি করা নিয়ে চিন্তাভাবনা ১৮৭৬ সাল থেকে শুরু হয়। সেসময়ের বাংলার লেফটন্যান্ট গভর্নর স্যার রিচার্ড টেম্পল এ বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন। ১৮৮১-তে প্রধানত ভর্তি হতে উৎসাহী ছাত্রীদের অভিভাবকদের চাপে এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় “discussing the question of accepting an inferior admission qualification for lady students.” (Centenary Volume, 1935, p.46) এই দলিলের ভাষ্য অনুযায়ী সম্ভবত ১৮৮৪ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে কাদম্বিনী গাঙ্গুলি অ্যাডমিশন নেন (বা বলা ভালো অ্যাডমিশনের অধিকার পান)। উল্লেখ করা দরকার যেহেতু অক্সফোর্ড এবং কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিলনা সেজন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ মহিলাদের ভর্তির ব্যাপারে গররাজি ছিল। ... ...
ফাইনম্যান নাসার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা নিয়ে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট লিখে মতামত দেন, যে এই ভেঙে-পড়া ব্যবস্থা ঠিক না হওয়া অবধি মহাকাশযাত্রা স্থগিত থাকুক। বলেন, “For a successful technology, reality must take precedence over public relations, for nature cannot be fooled”। রজার’স কমিশনের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও সে রিপোর্ট শেষমেশ প্রকাশ পায়, তবে একেবারে শেষে অ্যাপেন্ডিক্স-এফ হিসেবে। অথচ, থিওকল, বইসজলি আর তাদের সঙ্গীদের সমস্ত সাবধানবাণী ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে, নাসার ম্যানেজমেন্ট উৎক্ষেপণের আগে যে প্রি-লঞ্চ এস্টিমেটটি কষেছিলেন, তাতে বলা ছিল, লঞ্চে শাটল ফেল করার সম্ভাবনা ১০০,০০০এ মাত্র ১ – প্রায় নেই বললেই চলে। তাহলে? ... ...
বাংলা করে বললে, এই রাজ্যের শনির দশা চলছে। একের পর এক গ্রাম মফস্বল থেকে রাজনৈতিক কর্মী বা তার পরিবারের মানুষের হত্যার খবর আসছে। হত্যার বহর বাড়তে বাড়তে ঘরে আগুন দিয়ে গণহত্যার খবরও আমরা দেখতে বাধ্য হলাম, গতকাল, বীরভূমের বগটুই গ্রামে। ... ...
মেডিসিনের মানুষমুখী, মানুষের রোগ-মুখী নয়, হয়ে ওঠার জন্য আমরা পুনরায় পাঠ করছি “আরোগ্য-নিকেতন” ২০১৯ সালে! আরোগ্য-নিকেতন উপন্যাসে জনস্বাস্থ্যের কথা নেই, বরঞ্চ রয়েছে ব্যক্তি রোগীর চিকিৎসার কথাই। কিন্তু কেন্দ্রীয় চরিত্র জীবন মশায় এবং তাঁকে ঘিরে থাকা মানুষেরা এমনভাবেই সমাজে নোঙ্গর ফেলে আছে যে সমাজ-স্থিত ব্যক্তির চিকিৎসার মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্যেরও একটি রেখাচিত্র, ionchoate চেহারা ধরা পড়ে। ... ...
মেহমুদের সংসার জীবন অনুল্লেখিত, বোঝা যায় তার সচ্ছলতা আছে কিন্তু চিত্তে শান্তি নেই। রাতের একটি দৃশ্যে দেখানো হয় – ইউসুফ ও মেহমুদ দুজনেই দেখছে রান্নাঘরে ইঁদুর-কলে একটা ইঁদুর আটকে পড়েছে। ব্যাস, আর কিছু বলা হয় না। ঘর গৃহস্থালিতে এ খুবই সাধারণ ঘটনা, ফলে দৃশ্যটিকে মূল গল্পে আরোপিত বলে মনে হয় না। অথচ বহুবিধ অর্থের ব্যঞ্জনায় পরিপূর্ণ দৃশ্যটি। এই সৌন্দর্য-ব্যঞ্জনা কিন্তু শুধুমাত্র বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে তৈরি হয়নি, বরং নির্মাণ রীতিই অনেকাংশে একে দিয়েছে মহার্ঘ্যতা। পরিচালকের নাম ‘নুরি বিলজ সেলান’ (Nuri Bilge Ceylan) (১৯৫৯-)। ... ...
অন্যান্য শিল্পীর সঙ্গে জাঁ লুক গোদারের পার্থক্য যে তিনি এতে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন নি। তারঁ নিজের সঙ্গে সিনেমার সম্পর্ককে, ইমেজের সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্ককে, জীবনের সঙ্গে শিল্পের সম্পর্ককে বরাবর প্রশ্ন করে গিয়েছেন। তারই ফলশ্রুতি এই সিনেমা। গোদার নিজেই বলেছেন "এটা ফিল্ম নয়। ফিল্ম করার এক প্রচেষ্টা এবং সেইভাবেই এটা উপস্থাপিত।" এটা কি কোনো গিমিক? তা নয়, আসলে গোদারের মতে শুধু ফিকশন শিল্পীকে বাঞ্চিত স্পেস এবং তাঁর কণ্ঠস্বর দেয় না। এখানেই ফিকশনের অসম্পূর্ণতা। ... ...
একটু একটু করে পিছলে যাওয়া মেয়ের স্মৃতি, তারপর শুধু নিশ্ছিদ্র নিকষ আঁধার। একটাই আকুতি শেষ পর্যন্ত: পরিবার টা যেন ভেসে না যায়! সঙ্গে সঙ্গে আমার আরেকটি অনুভূতি হলো, নিজের জীবনে আমি লোকটা protagonist, কিন্তু এই পরিবারের জীবনের চলচ্চিত্রে আমি জীবনের এক অন্ধকার চৌমাথায় দাঁড়িয়ে থাকা এক চরিত্র। এক মহাজাগতিক উইপোকার ঢিপির অজস্র ক্রসরোডের একটা অকিঞ্চিৎকর মোড়ে এই পরিবারের সঙ্গে আমার দেখা। ছোট্ট কোণায় আমার জীবন বেঁচেছি, এদের জীবনও তেমনই আরেক কোণায় চলছে। এদের জীবনের ট্র্যাজেডি এরা সবটা দিয়ে অনুভব করছে, আমি তার খানিকটা পারছি। ... ...
নূতন সোভিয়েত সরকারের জাতি-উচ্ছেদ নীতি কিন্তু পুরোনো জার শাসিত রুশ সাম্রাজ্যেরই ধারাবাহিকতা। ঊনবিংশ শতকেই পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন উচ্ছেদের সূচনা হয়। সেই যুগে রাশিয়ার সামরিক পরিসংখ্যানবিদরা রীতিমত এই নিয়ে গবেষণা করে স্ট্রাটেজি বানাতেন – কোথা থেকে কাকে সরানো উচিত! যেটা পাওয়া যায়, সেটা হল “অবিশ্বাসযোগ্যতার ভৌগোলিক অভিমুখ”। এই কাজের জন্য মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় – স্লাভিক (রুশ এবং সমজাতীয় ভাষাগোষ্ঠীগুলি) ও অ-স্লাভিক (পশ্চিম ইউরোপীয়, মধ্য এশীয়, ইহুদি, ও ককেশাস পর্বতীয় জাতিগুলি)। তারপর কোন ভৌগোলিক অঞ্চলে কাদের অনুপাত কীরকম – তার ভিত্তিতে অঞ্চলগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য ও অবিশ্বাসযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়। তারপর হত অবিশ্বাসযোগ্য অঞ্চলগুলিকে বিশ্বাসযোগ্য বানানোর প্রক্রিয়া – মূলত রুশিকরণের মাধ্যমে। ... ...