যাকে ঘিরে এত আয়োজন, শোনা গিয়েছে নদীয়ার ওই ছাত্রীটি নাকি ভাল নেই একদম। খবরের কাগজ জানান দিচ্ছে, টিটকিরির শরশয্যার মধ্যেই সে শুয়ে রয়েছে আজকাল। ইউটিউবে ভিডিওটির জন্ম নেওয়ার পর থেকেই কার্যত সে ঘর বন্দি। মাত্র এ কদিনের মধ্যে তিন তিন বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার বাসনা কতটা উদগ্র হলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে কেউ তিন বার এমন কাজ করার চেষ্টা করে, তা আঁচ করা যায়। বাড়িতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েও যে ও বেঁচে গিয়েছে, তা বলা ভুল হবে। অজ্ঞতার জন্য হঠাৎ বিখ্যাত হয়ে ওঠা মেয়েটির বাড়ির সামনেও ভীমরুলের মত ছোবল মেরে চলেছে রঙ্গ ব্যঙ্গ টিটকিরি। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে জনতার একাংশ ছুঁড়ে দিচ্ছেন উল্টোপাল্টা মন্তব্য। ভার্চুয়াল দুনিয়ার কথা না হয় ছেড়েই দেওয়া গেল, মেয়েটির বাড়ির দেওয়ালেও হয়তো প্রতিদিনই লেখা হয়ে চলেছে অজস্র কমেন্ট। ... ...
অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ধ্বনির মধ্যে হয়তো আশা বেঁচেছিল তখনও। রাস্তার এপাশ ওপাশ দিয়ে, এ গাড়ি ও গাড়ি কাটিয়ে যখন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল সেই আপৎকালীন যান, রোগীর পরিবারের সদস্যদের মনে প্রায় নিভে আসা সলতের আগুনের মত হয়তো উষ্ণতা ভর করে ছিল, তখনও। দুটো হাসপাতাল ঘোরা হল। শয্যা পেলেন না হৃদরোগে ভোগা ৭৫ বছরের বৃদ্ধ। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের মধ্যে বিষাদ মাখছিল ক্রমশ। ... ...
আধুনিক নন্দনতত্ত্ব বিষয়ক ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘The work of art in the age of mechanical reproduction’-এ এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। আমরা মোটামুটিভাবে এই সূত্রকে কেন্দ্রে রেখে আলোচনা করব ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়ারোস্তামির (১৯৪০-২০১৬) মূলত দুটি ছবি নিয়ে, Certified copy (২০১০) এবং Like someone in love (২০১২)। ২০০০ সালে দেখা The wind will carry us(১৯৯৯)-র স্মৃতি আজও টাটকা। সেই আমাদের প্রথম কিয়ারোস্তামির ছবি দেখা। ... ...
এই আমলক, কলস, উল্টোনো পদ্মফুল- হিন্দু শিল্পরীতির প্রভাবগুলো কিন্তু মুঘল আমলের অনেক আগে থেকেই ভারতীয় মুসলিম শিল্পে দেখা যায়। সৈয়দ ও লোদী বংশের সমাধিসৌধগুলোতে এদের দেখা পাওয়া যায়। বরং সেইযুগের কিছু হিন্দু প্রভাব, যেমন মকরতোরণ তাজমহলে নেই। মকরতোরণ হল দরজার উপরে দুদিকে মকরের মত দেখতে ভাস্কর্য যা হিন্দু মন্দিরে বহুপ্রচলিত। ভারতীয় গম্বুজের সূচনা ত্রয়োদশ শতকে বলবনের সমাধির মাধ্যমে। প্রথমে অর্ধগোলক আকৃতি থেকে শুরু করে, ইউরোপীয় গম্বুজগুলি একটু সঙ্কুচিত হয়ে মোচার আকৃতি নেয়, কিন্তু ভারতীয় এবং রাশিয়ান গম্বুজগুলি তাদের মধ্যদেশকে কিছুটা স্ফীত করে পেঁয়াজের আকার ধারণ করে । হয়তো এই পেঁয়াজের আকারটা আসলে পদ্মের আকৃতি। মন্দিরের ছাদ থেকে ঝুলানো পাথরের বা পোড়ামাটির তৈরি উল্টানো পদ্ম এর অনুপ্রেরণা হতে পারে। তাজমহলকে শুধু শাহজাহানের সৃষ্টি বললে এর সঙ্গে যুক্ত ডিজাইনার, আর্কিটেক্ট আর ইঞ্জিনিয়ারদের অবজ্ঞা করা হবে। তাঁদের ব্যাপারেও জানা যাক। সব মিলিয়ে ৩৭ জন ডিজাইনার এবং আর্কিটেক্টের নাম মুঘল সরকারি নথি থেকে পাওয়া যায় যাঁরা তাজমহলের প্রধান স্থপতিদের মধ্যে ছিলেন। ... ...
ইদানীং সুপ্রিম কোর্টের একটি বক্তব্য নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত নাকি পুলিশ প্রশাসনকে বলেছে ভারতে যৌনকর্মীদের সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলতে, মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করতে, কথায় কথায় ওদের টানা হ্যাঁচড়া করে অপদস্থ না করতে। ওরা একটি পেশায় রয়েছে, কোন অপরাধ তো করেনি। আর নিজের পছন্দমত জীবিকা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত। তাহলে? ... ...
বহু সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, বহুদিন ধরে কাজ করছে, রিপোর্ট জমা দিচ্ছে। নীতি নির্ধারণ হচ্ছে, আইনকানুন লেখা হচ্ছে। তবু কেন মেটে না সমস্যা? তাবৎ বিশ্বের সব দেশ হাতে হাত রেখে চলতে কেন এতো অপারগ? কারণ, যেমন বাড়ির মধ্যে আমি আর আমার গৃহসহায়িকার দায়িত্ব আর ভূমিকা একরকম নয়, তেমনিই ধনী আর দরিদ্র দেশগুলির গপ্পোগুলোও আলাদা আলাদা। ... ...
সুন্দরবনের একটা একদম অন্যরকম, অন্যত্র না-দেখা-যাওয়া সমস্যাও আছে। প্রতিবার সেখানে সাইক্লোন ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয় আর মানবতার খাতিরে প্রচুর ব্যক্তি/ সংস্থা সেখানে ত্রাণ দিতে এগিয়ে আসেন। কিন্ত সমস্যা হল এই ত্রাণের সঙ্গে আসা প্লাস্টিক। কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ নামের একটি এনজিও একটি প্রাথমিক সার্ভে করে জানিয়েছেন যে আমফান বিপর্যয়ের পরে কমপক্ষে ২৬ মেট্রিক টন প্লাস্টিক সুন্দরবনে এসে জমা হয়েছে। ইয়াসের পরেও, তুলনায় ছোট স্কেলে হলেও, এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। বিপর্যয়ের ত্রাণ হয়ে যাচ্ছে ত্রাণের বিপর্যয়। ... ...
আবারও বলছি, চুক্তিপত্রের কোথাও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বলা নেই। অনিচ্ছুক শ্রমিকদের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণের টাকা ধরা হয়েছে কিনা, হলে তার পরিমাণ কত – সেটা বলা হয়নি। কোথাও বলা নেই – এই চুক্তিটি, এই আশ্বাস – কত সময়ের জন্য বলবৎ থাকবে। কোনো প্রতিশ্রুতির কোনো আইনগত প্রভিশন নেই, কোনো টাইম-ফ্রেম নেই। সমস্ত দায়িত্বটাই ন্যস্ত করা হয়েছে কোম্পানির সদিচ্ছার ওপর। সরকারের দায়িত্ব শুধুমাত্র কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আইনে কোম্পানিগুলিকে অধিকার দেওয়া হয়েছে অপ্রয়োজনীয় শ্রমিকদের ছাঁটাই করার। অনতিদূর ভবিষ্যতে কোম্পানি যে তার এই অধিকার প্রয়োগ করে শ্রমিক ছাঁটাই করবে না – তার গ্যারান্টি কী? এবং তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এই ধারাটিকে এই রকম শূন্যগর্ভ অর্থহীন শব্দ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কেন? ... ...
আসামের বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলায় “ডলু চা বাগান” রাজ্য সরকার আংশিকভাবে অধিগ্রহণ করেছে। ১২ই মে ২০২২-এর কাকভোরে ২৫০০ বিঘা জমি, প্রায় ত্রিশ লক্ষ চা গাছের ঝোপ এবং কয়েক সহস্র ছায়া গাছ উপড়ে ফেলে জমি পরিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য বিজেপি সাংসদ বলেছেন, ডলুতে কোনও উচ্ছেদ হয়নি, যা হয়েছে জমি অধিগ্রহণ। এদিকে দুই হাজার চা শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেছে। স্থানীয়, রাজ্য এবং জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলি এই বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। কিন্তু তারপর থেকে সেখানে নেমে এসেছে এক শ্মশানের স্তব্ধতা। কোনও সংবাদ বাইরে বেরোচ্ছে না। কাউকে ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ... তথাকথিত উন্নয়নবিরোধীর তকমা যাদের গায়ে সেঁটে দেবার চেষ্টা হয়েছিল, তাদেরই কয়েকজন ... কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে – কেন ডলু? কেন পাশের বিশাল খালি জমি খরিল নয়? ... ...
ব্যাপারটা নিছক ব্যক্তিগত হলে দরকারই ছিল না এত কথার। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে কবিতার নামে কী দেখছি আমরা? স্বকাম-মর্ষকাম কিম্বা ভঙ্গিসর্বস্বতা। একটু অন্যরকম ভাবেন যাঁরা, তাঁদেরও, যোগ থাকলেও আত্মীয়তা নেই জনগণের সাথে। অথচ, সমস্যার কি অন্ত আছে দেশে? কোথায় সেই ক্রোধ ও ফরিয়াদ? কঠিন কঠিন কথায় কীসব নিদান দেন মনীষী কবিরা! আর ক্লীব হলে যা হয়, প্রকৃত প্রেম, নির্মল আনন্দ থেকেও বঞ্চিত আধুনিক কবিকুল। প্রেমের কথা উঠলই যখন – বেশি ফেনিয়ে-গেঁজিয়ে না ভেবে, নরনারীর প্রেমকে যদি স্বাভাবিক চোখে দেখি, গানে-কবিতায় অদ্বিতীয় নজরুল। ... ...
শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর কেচ্ছা নিয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী টুঁ শব্দটি করছেন না। প্রকারান্তরে, সিবিআই বা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সম্পর্কে তাঁর তীব্র অসন্তোষ আর চাপা দিয়ে রাখতে পারেন নি। এতো বড় লজ্জাজনক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পরও কেউ মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করলেন না। এমনই এই সরকারের নীতি নৈতিকতা। ... ...
যেখানে যেখানে নক্সালবাড়ির কৃষক বিদ্রোহ ছড়িয়েছিল সেখানে বর্গা নথিভূক্তির কাজ আরম্ভ হয় আগে। গোপীবল্লভপুরে ডেবরায়, উত্তরবঙ্গে...সর্বত্র। জমির চাষী কে ? খুঁজে বের কর, নাম নথিভুক্ত করে তাদের চাষের অধিকার পোক্ত কর। অপারেশন বর্গা। আমিও সান্ধ্য মিটিং করেছি গোপীবল্লভপুরের গ্রামে। সারাদিন চাষীর তাদের কাজে ব্যস্ত। তাদের তখন সময় কোথায় ? সন্ধ্যায় ইস্কুলবাড়ি কিংবা অমনি কোথায়, এমন কি গাছতলায় হেজাক জ্বেলে মিটিং। ভয় নেই। তুমি কোন দাগের চাষী বলো, জমির রেকর্ড হাজির। তার নাম লিখে নিয়ে পরদিন জমিতে গিয়ে দাগ দেখিয়ে দিতে বললে তবে সে সাহস পেল। দুয়ারে সরকারকে যেতেই হয়। না গেলে অপারেশন বর্গা সফল হত না। কিন্তু ইতিমধ্যে বাবুরা, আমরা বুঝে গেছি কী করতে হবে। দলবদল করলাম নিঃশব্দে। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় এসে বর্গাদারকে নিবৃত্ত করলাম নথিভুক্ত হতে। অনেক বছর বাদে, একুশ শতকের আরম্ভে মেমারি পেরিয়ে এক গঞ্জে গিয়েছিলাম পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। অমুক সামন্তবাবুর বদান্যে সেই অনুষ্ঠান। সারাদিন সব হয়ে গেলে তাঁর বাড়িতে মধ্যাহ্নের আহার শেষ বেলায়। তিনিও কানুনগো ছিলেন। পরে প্রমোশনে উপরে উঠেছিলেন অনেক। তাঁর পুত্র এম এ পাশ। মোটর সাইকেলে চেপে চাষবাস দেখে। বর্গাদার নেই জমিতে। ... ...
দোহাই পাঠককুলকে, ভুল বুঝবেন না। এই লেখার প্রতিটি চরিত্রই জলজ্যান্ত। সব কটি অক্ষরই নিতান্ত ব্যক্তিগত। এটাকে নৈর্ব্যক্তিক ইয়ার্কিমুখী কাল্পনিক কথোপকথন ভাববেন না। এটি এক সিরিয়াস দলিল, মন দিয়ে পড়লে দুই প্রজন্মের বিভেদ ও বিভাগের সব রহস্যের চাবি কাঠি একেবারে আপনার হাতের মুঠঠিতে, হুঁ। ... ...
"সুকান্তর রানার কবিতাটি পড়ে সে চমকে উঠেছিল। কোনোদিন তো ভাবেনি, পিঠে চিঠির পাহাড় আর টাকার বোঝা নিয়ে ছুটে চলা ডাকহরকরার কথা? পিঠে বোঝা নিয়ে সারা রাত দৌড়ে যায় সে, মানুষের চিঠি, টাকা গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছে দেয় সূর্য ওঠার আগেই। তাকে কি কেউ চিঠি লেখে? যৎসামান্য অর্থে দিন-গুজরান, অভাব যার নিত্যসঙ্গী, সেই রানার নিজেও কি কোনোদিন ভেবে দেখেছে তার দুঃখের কথা? না কি তার সব বোধ, অনুভূতি গেছে অসাড় হয়ে? এ কবিতা পড়ে সলিলের চোখ খুলে গিয়েছিল। তখন থেকেই গান বাঁধার ইচ্ছে, রানারের ছুটে চলার গান। " ... ...
ঈর্ষান্বিত হলেন কিছু মানুষ। নজরুলের উল্কার মত উত্থান তাঁরা মোটেই ভালো চোখে দেখলেন না। কোথাকার কোন ভুঁইফোঁড় ছোকরা, পল্টন থেকে ফিরেই সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়ে জনপ্রিয় কবি হয়ে গেল? প্রতিষ্ঠিত কবি মোহিতলাল মজুমদার বললেন, নজরুল নাকি তাঁর 'আমি' নামে একটি লেখার ভাব চুরি করেছেন। একবছর আগে ‘মানসী’ পত্রিকার পৌষ সংখ্যায় বেরিয়েছিল তাঁর 'আমি' লেখাটি। সে যুক্তি ধোপে টিঁকল না। লোকে হেসেই উড়িয়ে দিল, মোহিতলাল কি 'আমি' কথাটার পেটেন্ট নিয়েছেন? আর কেউ 'আমি' ব্যবহার করে কিছু লিখতে পারবে না? হাস্যকর দাবি সন্দেহ নেই। 'ভবকুমার প্রধান' ছদ্মনামে সজনীকান্ত ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্যারোডি লিখলেন কামস্কাটকীয় ছন্দে।'ব্যাঙ' কবিতাটি ভূমিকাসহ শনিবারের চিঠিতে প্রকাশিত হল এবং বেশ জনপ্রিয়ও হল। বিশেষ করে কবি মোহিতলাল মজুমদার ‘ব্যাঙ’ কবিতাটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন এবং জনে জনে শুনিয়ে বেড়াতে লাগলেন। ঈর্ষার কী বিচিত্র রূপ! ষড়রিপুর ষষ্ঠ রিপুটি অনেককেই জ্বালাতন করেছিল, সন্দেহ নেই। ... ...
কাহিনীর সারাংশ হচ্ছে হিন্দু রাষ্ট্রের প্রকল্প যত এগোচ্ছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা ততো বিঘ্নিত হচ্ছে। মুসলিমরা সব সময়ই টপ টার্গেট, নানা ফন্দি করে তাঁদের টাইট দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত। বিভিন্ন রাজ্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে কে কত এই সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করতে পারে। কেউ সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করে দিচ্ছে, কেউ প্রকাশ্যে নামাজ পড়া বা মসজিদের মাইক লাগানো নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে, কেউ কসাইখানা বন্ধ করে গোশালা খুলছে... ... ...
এফএম প্রচার তরঙ্গে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য সেই সময়, নয়ের দশকের মাঝামাঝি, ডেকে নেওয়া হল কলকাতা বেতারে ড্রামা অডিশন পাশ করা শিল্পীদের। প্রাথমিকভাবে কর্তৃপক্ষ ধরে নিলেন, যাঁরা আকাশবাণীতে শ্রুতিনাটক বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের সঠিক বাংলা উচ্চারণ আর কণ্ঠস্বর নিয়ে কোনও দ্বিধা বা সংশয়ের কারণ নেই। এই প্রসঙ্গে জানাই, রেডিওর নাটক বিভাগে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই জানেন – বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য হয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটক অবলীলায় ছুঁয়ে যেতে হয় এই পরীক্ষায়। বিভিন্ন বাংলা শব্দের সঠিক উচ্চারণ শোনার জন্য চোখা কান পেতে থাকেন পরীক্ষকরা। আজও এই পরীক্ষা দুরূহ। এই পরীক্ষা-পারাবার পার হয়েও অবশ্য তারপরে অনেকে আর সেভাবে সুযোগ পান না অভিনয়ের খামতির জন্য, তবে সে প্রসঙ্গ এখানে গৌণ। এখানে মূল উপজীব্য, কণ্ঠস্বর, পরিবেশনা, উপস্থাপনা। .... শ্রোতাকে আকৃষ্ট করার মত বিষয় ভাবতে হবে, কথার মধ্যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার গর্হিত অপরাধ, ইংরেজির ঝোঁকে বাংলা বলা অমার্জনীয়। অনুষ্ঠানের নাম ‘টক শো’। অবশ্যই ‘লাইভ’। তাকে নানান চেহারায় ‘কণ্ঠদান’ করতে এগিয়ে এলেন বাংলা ভাষার দক্ষ ‘কথাশিল্পী’রা। ইংরেজিতে তাঁরা ‘টক শো প্রেজেন্টার’, বাংলায় ‘অনুষ্ঠান উপস্থাপক’। হে পাঠক, লক্ষ্য করুন, ‘আর জে’ বা ‘রেডিও জকি’রা তখনও ঝাঁপিয়ে পড়েনি বাংলা সংস্কৃতিতে। ... ...
মজাটা আসলে এখানেই। আমরা যে দুর্নীতিটা দেখতে পাচ্ছি এবং তা নিয়ে ধিক্কার ও প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠছে, তা আসলেই একতরফা। দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারী আধিকারিকদের প্রত্যেকের কঠোর শাস্তির দাবিতে তো সকলেই সরব। সমাজমাধ্যমে আমজনতা থেকে শুরু করে বিকাশভবনের সামনে বিরোধী রাজনৈতিক দল – সকলেই বিক্ষোভে সামিল। এবং সে দাবি অত্যন্ত ন্যায্যও বটে। কিন্তু পাশাপাশি যারা ঘুষ দিয়ে অথবা অন্য অনৈতিক যোগাযোগ খাটিয়ে চাকরি হাসিল করেছেন, তাদেরও যে একইরকম শাস্তি পাওয়া দরকার – তেমন কোনো দাবি কিন্তু গণমাধ্যমে বা সমাজমাধ্যমে কোথাও চোখে পড়ছে না। ... ...
কোলকাতা বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ড এর মুখপত্র ‘পুস্তক মেলা’য় প্রকাশিত এই লেখাটিকে লোপাট করা হয়েছিল।পৃষ্ঠা কেটে সেখানে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল অন্য বইয়ের সমালোচনা।‘পুস্তক মেলা’য় একই সংখ্যার (ষষ্ঠ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, বৈশাখ – আষাঢ় ১৪০৯ ) দুটি কপিই আমাদের হাতে আছে ঐতিহাসিক প্রমাণ হিসাবে। – তুষার ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘অপ্রকাশিত মরিচঝাঁপি’ থেকে। ... ...