ওর আঙুলগুলোর দিকে তাকাই। লম্বা,সরু,ফিকে প্রবাল রঙের। ওই আঙুল আমার হাতের মুঠোর মধ্যে গুঁজে দিচ্ছে… কোথাও একটা প্রজাপতি আস্তে আস্তে ডানা ঝাপ্টাতে থাকে। কিম্বা দুটো? পাঁচটা? ফিরতে অনেক রাত হয়েছিলো। ভয়েডকে দেখতে পাইনা এসে। আজকাল মাঝেমাঝেই পাইনা। কোথায় যায় কে জানে?কখোনো জিজ্ঞেস করিনি। কোনো কোনোদিন অনেক রাত্রে আধোঘুমের মধ্যে গালের ওপর ওর নিঃশ্বাস টের পাই। ফিসফিস করে বলে “আই নো, ইউ হ্যাভ সামওয়ান এলস অন ইওর মাইন্ড”। আমি ওর কথার খেই ধরতে চাই – “আই নো…”, বাক্য শেষ হবার আগেই আধোচেতনা আমার জিভকে আচ্ছন্ন করে। আবল্লী আমাকে আস্তে আস্তে টেনে নিতে থাকে। যেন কেউ খুব নরম একটা কম্বল দিয়ে আমায় মুড়ে দিচ্ছে। বহুদিন হারিয়ে থাকা একটা কম্বল। আমি আবল্লীর মধ্যে তলিয়ে যাই। তলিয়ে যাওয়া বেশ ভালোই জিনিস। গভীরে। ... ...
লোকমান বুকের ভেতরটা বাষ্প হয়ে উঠে। সমস্ত দুনিয়াটাকে তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্রকারী বলে মনে হয়। এই আকস্মিকতা সে মেনে নিতে পারে না। বেপারী সাবে কেমতে মরে হ্যায় না মাত্র আইল হজ থিকা? মরণের তো একটা রকম আছে? এইটা কুনু কথা হইল? এইসবই যেন লোকমানকে জব্দ করার ফন্দি! শামসুদ্দিন দেখো কেমন ধোয়া ইস্তারি করা পাঞ্জাবী পইরা চইলা আসছে! দুনিয়ার সব মানুষ বেপারী সাবের মৃত্যুকে কী সুন্দর মেনে নিচ্ছে। অথচ লোকটা এই তো সক্কাল বেলা কইল, বিকালে আহিস, তর কথা শুনুম নে…। এখন লোকমানের কথাগুলি কে শুনবো?... বেপারী সাব আপনের পোলায় আমারে একটা ট্যাকাও দেয় নাই। উল্টা গাইল পারছে। দুইটা মানুষ কি খাইয়া বাচি কন দেহি! খালি আপনের ফিরনের আশায় বাইচ্চা আছি কোন মতে… তিনমাসের ঘর ভাড়া বাকী, ঘরে একটা খওন নাই…। ... ...
সাত্তার সাহেব সামান্য শব্দহীন হাসি হাসলেন। আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘পায়রা সম্পর্কিত তোমাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা কি?”আমরা হঠাৎ এই প্রশ্নে বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। আমরা কোন উত্তর দিতে পারলাম না। এবং এক পর্যায়ে বললাম,” ক্ষমা করবেন। আমাদের পায়রা সম্পর্কিত নিজস্ব কোন চিন্তাভাবনা নেই।” সাত্তার সাহেব তার সিগারেটে শেষ টান দিয়ে তা ফেলে দিলেন এবং ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “পায়রা হচ্ছে পৃথিবীর আত্মার প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি পায়রা আসলে পৃথিবীর আত্মার এক একটি অংশ। মানুষের জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে পায়রাদের জীবন। প্রতিটি মানুষের আত্মা আসলে এক একটি পায়রা অথবা কোন এক পায়রার প্রতিচ্ছবি যা পৃথিবীতে বসবাসরত এবং আকাশে উড্ডয়নরত অনেক অনেক পায়রার প্রভাবে প্রভাবান্বিত। এইসব পায়রাযুক্ত জীবন হয়ত যাপনকারী ব্যক্তি অনুভব করতে পারে না কিন্তু কারো অনুভব করা কিংবা না করার উপরে পৃথিবীর অমোঘ সত্যগুলোর কিছু আসে যায় না।” ... ...
সেই সাতক্ষীরের গল্প এখন মিলিয়ে গেছে। মেসো, মাসি এপারে এসে কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। বাবা, মা, কাকা কাকিরা নেই। বারাসতের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে গেছে। মাসতুতো ভাইদের সংসার কেমন চলছে জানে না বিমলেশ। ওপার থেকে আসা দুই ভাই খুব কষ্ট করেছে শুনেছিল সে। সাতক্ষীরের কথা তারা বলতে বলতে থেমে গেছে মনে হয়। বিমলেশ রবীন্দ্রসদন চত্বরে বাংলাদেশ বই মেলায় হাজির। সকলেই বাংলাদেশের প্রকাশক। বই সব বাংলাদেশের। “সাঁকোবাড়ি” একটি প্রকাশন সংস্থার নাম। কী সুন্দর নাম! সে বাংলাদেশের কিছু কিছু লেখকের বই পড়েছে। বই তার নেশাও। কিন্তু এই লেখকের নাম সে জানে না। সাতক্ষীরের লেখক, নাট্যকার। সে এতদিন বাদে জানল সাতক্ষীরে একজন লেখকের বাড়ি। হয় তো আরো আছে। এত বছরে সে জানে না। খবরের কাগজে দেখেছে সৌম্য সরকার এবং মুস্তাফিজুর রহমান নামে দুই ক্রিকেটারের বাড়ি সাতক্ষীরে। তাতে আহ্লাদ হয়েছিল বটে, কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে তার আগ্রহ খুব নেই। সে ঢুকতেই দেখল সাঁকো বাড়ি। সাঁকো বাড়ির স্টলে এক বিরল কেশ প্রবীণ বসে আছেন। ময়লা রঙ। চোখের চশমার পাওয়ার কম নয়। ইনিই কি তার ফেসবুকের বন্ধু আমিরুল বাশারের অগ্রজ। তারই বয়সী হবেন, কিংবা তার চেয়ে বেশি। সে কুন্ঠিত গলায় জিজ্ঞেস করল, খায়রুল বাশার মশায় কি আপনি, লেখক খায়রুল বাশার। ... ...
এই প্রথম তার সাথে আমার কথা হয়। এর পর যখনই ছাদে যেতাম তখন তার সাথে বিভিন্ন রকমের গল্প হত। আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতাম তাই সাধারণত সকাল বেলা চায়ের কাপ হাতেই ছাদে যেতাম বেশি। ছুটির দিনে কখনো কখনো বিকেলের দিকে। বিকেলের আকাশ আমার খুব ভালো লাগে। এই সময়ে আকাশ আস্তে আস্তে রং বদলায়। এর বৈজ্ঞানিক কিছু কারণ আছে। সূর্যরশ্মির বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিচ্ছুরণ।। কিন্তু ওসব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। বিকেলের পশ্চিম আকাশ যখন নিজের রং বদলাতে বদলাতে সন্ধ্যার দিকে ধাবিত তখন আমার একে মনে হয় কিছু মধ্যবিত্ত অসম্পূর্ণ স্বপ্নের অব্যক্ত প্রগাঢ় বেদনার সম্মিলিত রূপ। যখন সময় পেতাম তখন আমি এই বেদনার গাঢ় রং বোঝার চেষ্টা করতাম, যদিও আমার জীবনযাপনের সাথে এর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। ... ...
শহর কোলকাতা থেকে অনতিদূরে মৌবনীদের সবুজ-মেরুন দোতলা বাড়ি। এর আগে যদিও লাল-হলুদ ছিল। প্রমিতা ওপারের মেয়ে, তায় তার ঢাকা নিবাসী মাসতুতো বোনের ছেলে এখানে থেকে এমবিএ পড়ছিল কিছুদিন। বাপের বাড়ির সদস্য পেয়ে শ্রীমতীদের মনের জোর বেড়ে গেলে গৃহশান্তির জন্য পুরুষমানুষকে অনেককিছুই করে ফেলতে হয় যা তাদের নীতিবিরুদ্ধ। তবে ওই, রাখে বাবা অদ্বৈতানন্দ তো মারে কে! মানে, মৌবনী সবে এমএসডব্লু শেষ করে চাকরিতে ঢুকবে ঢুকবে, ওমনি তার ভালোবাসাবাসি হলো বিভাসের সাথে। এ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। কেজি স্কুল থেকে আজ পর্যন্ত এই নিয়ে মৌবনী দুটি ছেলে ও একটি মেয়ের হাত ধরে বাড়ি এলো। প্রমিতা প্রথমবার সোনার বোতাম গড়ালেন, দ্বিতীয়বার সাদা পাথর দেওয়া আংটি ও তৃতীয়বার মানে অধ্যাপিকা বান্ধবীটির বেলায় পত্রপাঠ বাড়ি থেকে বার করে দিলেন। মাস্টার্স-এর সময়টায় মৌবনী পেয়িং গেস্ট থাকছিল যোধপুর পার্কের একটা ফ্ল্যাটে। কাজের সুবাদে তাদের উল্টোদিকের ফ্ল্যাটটিতে নিয়মিত আসত বিভাস। এভাবেই একদিন মুখোমুখি-চৌকাঠ পেরিয়ে তেলরং-ক্যানভাস সমেত হুড়মুড় করে ঢুকে পড়া মৌবনীর হৃদয়ে। প্রতিমার অবিশ্যি ছেলেটির পেশা টেশা দেখার চেয়ে পুলকের কারণ এই ছিল যে, সে পুরুষ। বিভাসের মা ছন্দা আবার কোন এক অদ্বৈতানন্দের দীক্ষিতা। তিনি পুত্র ও বাবাজী সমেত মৌবনীর বাড়িতে- এলেন দেখলেন জয় করলেন। ... ...
বুড়া ঠেসান দিয়ে বসে থাকে কুয়োর ধারে। চারদিকে মানুষের কথা বয়ে যাচ্ছে ফিসফিস ফিসফিস, কিছুই ধরতে পারছে না সে! হঠাৎ তার বাপের একটা কথা মনে পড় যায় বিজলিচমকের মত। যখন আঁধার নামে, তাজা লোমড়ির রক্ত খেয়ে জেগে ওঠেন মারী দেবী, তাঁকে খুশি করতে পারলে যা চাই তাই দেন মা । জরুরি কাজ মনে পড়ে যাবার মত করেই ধড়মড় করে উঠে বসে। “আমি যতক্ষণ না ফিরি, নিয়ে যাবি না ওদের” ব’লে খ্যাপা মোষের মত বেরিয়ে যায় বুড়া। জমায়েত একধারে সরে গিয়ে পথ করে দেয়, নিবারণ হাহুতাশ করে, পাগলে গেছে গো বুড়াটা। বুড়া ততক্ষণে পিছনের মাঠ পেরিয়ে সোজা খেত বরাবর নারান বাবুর মাঠে। লোমড়িটা ওদিকেই গেছে নিশ্চই খরগোশ ধরতে, এসময় এগুলো বেশ গায়ে গতরে হয়ে ওঠে। ... ...
গাড়ির বর্ণনায় এতটুকু বলা যায়ঃ গাড়িটি চলছে মন্থর; মন্থর। তার ওপর গাড়ি ছাড়ার মুহূর্তে এমন এক বান্ধবীর অবির্ভাব যার সাথে অনেকদিন দেখা নেই, যে সীল মাছ পছন্দ করত। সীল মাছের মসৃণ ত্বক দেখার বাসনায় সে বিয়ে করেছিল চিড়িয়াখানার এক বড় কর্মকর্তাকে। তা, সেই বান্ধবীর ফিরে আসা তাই প্রতীকের কাছে গোলকধাঁধার মতো মনে হয়। পুরো ব্যাপারটা ছিল নিছক একটা দুর্ঘটনা। হয়তো কোনো আত্মীয়কে সি-অফ করতে এসেছিল সে। কিন্তু যখন সে প্রতীককে বলে, সে তার কাছেই এসেছে, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে, ব্যাপারটা এমন যেন কোনো পোষা বিড়ালকে ফেউ-লোকেরা বস্তাবন্দি করে অনেক দূরে ছেড়ে এসেছিল আর সেই বিড়াল বিশ্বস্ত আত্মার মতো, কুকুরের মতো ঘ্রাণশক্তির গুণে পুরনো মালিকের কাছে ফিরে এসেছে - তখন পুরো ইতিহাসটি আবারো উঠে আসে। কী কারণে সে চলে গেলো? কেনই বা ফিরল? আর এমন একটা সময়েই বা কেন? যখন সে আটকুড়িয়া যাবে বলে সব কিছু গুছিয়ে এনেছিল। তার বাস তো ছাড়তে গিয়েও পেছন থেকে লাগাম টেনে ধরা গরুর মতো আটকে ছিল, যেন সময়ের দড়িটি ছিঁড়বে-ছিঁড়বে অবস্থা, এমন সময় তা লোহার শেকলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে; বাতাসের জলীয় কণা তার শরীরে প্রবল বেগে আছড়ে পড়ছে, মুহূর্তে মরিচা ধরে খয়ে যাচ্ছে, আবার কোনো দৈব কারসাজিতে নিকেলের হাসি হেসে শক্তপোক্ত হয়ে উঠছে ঝনঝনিয়ে। ... ...
বেগুনের ভরের চেয়েও, বেগুনের জিন এর এই গুরুত্ব কিন্তু এর আগে বোঝা সম্ভব হয় নি। আসলে ভেবে দেখতে গেলে, জিএম বেগুনের জিনে এত বেশি রকমের তারতম্য, যে এগুলি বেগুনের উপসর্গ মাত্র। প্রকৃত প্রস্তাবে, এটি একটি সম্পূর্ণ নূতন প্রজাতির সিন্থেটিক সব্জি। এই তো কদিন আগেই বিদেশমন্ত্রী জুবেদা খাতুন রাষ্ট্রসংঘের বক্তৃতায় বললেন যে অর্গ্যানিক বেগুন চাষ বাংলাদেশের কৃষি স্বাধীনতা এবং সামাজিক পছন্দ (সোসাল চয়েস) এর দৃঢ় প্রতীক। কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত জিএম বেগুন যে শুধু মুনাফালোভী চক্রান্ত তাই নয়, সেগুলি বেগুনই নয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সদ্ভাব রক্ষা ও গবেষণায় সম্পূর্ণ সাহায্যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মহামান্য আদালতের রায়ের পরে আশা করা যেতে পারে যে এ নিয়ে কোনওরকম ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না ও প্রকৃতির দান প্রকৃতির কাছেই থাকবে। এ নিয়ে যেন দুই দেশের মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্ববোধে আঘাত না লাগে। এমন কি তিনি এও বললেন - লেট বাইগনস বি বাইগনস। ... ...
রঙের খেলা, কথার মেলা ওদের কলমে, পেনসিলে। লেখার মুন্সীয়ানা হার মানাবে যে কোনও চন্ডালকে, আমাদের সাধ্যি কি তাতে কলম চালাই? আমরা শুধু লাইন টেনে দিতে পারি, আর পারি সব্বাইকে পড়ে শোনাতে। ... ...
জনির মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো................................. ছেলেটাকে দেখলেই বড়রা ওকে বলত, "খাও খাও। বেশি বেশি খাও । ভালো ভালো খাবার খাও।".............................. আইসক্রিমের কোণ চাটতে চাটতে দুগ্গা ঠাকুর দেখছিলাম। এমন সময় পকেটে কি যেন খরখর করে উঠলো........ ... ...
ও চোখ দুটো বন্ধ করল। খুব আবছা হাসির টুকরো ঠোঁটের কোণে। মেনে নেওয়ার হাসি। একেবারে নিজস্ব। আর ঠিক তখনই আমার মনে ঝিলিক দিয়ে গেল, ও যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে... এই মুহূর্তে তা আমাদের দু'জনের। দু'জনকেই ভাগ করে নিতে হবে। তা না হলে এই যে আলো ..দোদুল্যমান আলো .. আমাদের যাপনে এখন...তা নিভে যাবে। ফুসমন্তরে । আলো -আঁধারিতে দেখি ওর চোখের পাতা কেমন তিরতির করে কাঁপছে। নিজেকেই বুঝি স্তোক দিয়ে যাই, হয়ত অনেক করে চাওয়া এক দু'কণা সুখের কুচি এখনও পড়ে আছে কোথাও। ওর মনের কোণের বাইরে। মাথাটা একটু নামিয়ে একটা চুমু খেলাম । ওর বন্ধ চোখের পাতায়। ... ...
একদিন একটা ভূত ছিল। ভূতটার অন্নপ্রাশন ছিল, মাংস আর খিচুড়ি রান্না করেছিল। ভূতের মা বলল, "তুঁই কিঁ চঁকলেঁট খেঁয়েঁছিঁস?' ভূত বলল, "হ্যাঁ, খেঁয়েঁছি।' ... ...
এ সময় বিলের মাঝখান থেকে চাঁদ ওঠে। একটু জলে ভেজা। জলের গন্ধ পেয়ে ঝুপ করে লাফ মেরে ওঠে লবটুলি মাছ। মাছের পেটের কাছে লাল। কাটা দাগ। তাই দেখে বাঁশঝাড় থেকে দুটো পাতা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে ঝরে পড়ল। দরিয়াবানু পাতা দুটো কুড়োয়। তক্ষকের ছায়া খসে পড়ে। দরিয়াবানু যত্ন করে ছায়াটি কুড়োয়। আকাশ থেকে শুয়াচান পাখির মায়া ঝরে পড়ে। দরিয়াবানু ঝিমুতে ঝিমুতে মায়াটুকু কুড়িয়ে নেয়। এই মায়ার মর্ম অপার। সোনাবরুর চোখেমুখে এই মায়াটুকু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ধরণী, দ্বিধা হও গো মা জননী। এ প্রাণ রাখি কেমনে। ... ...
ঘন জঙ্গলের মধ্যে বজ্রযোগিনীর মন্দির থেকে তখনো কাঁসরঘন্টার আওয়াজ ভেসে আসছিল বাতাসে। দিগন্তজোড়া গাছগাছালির মধ্যেকার ফাঁকফোকর দিয়ে অতি অল্প যেটুকু দৃশ্যগোচর হয়, তাতে কেবলমাত্র মন্দিরের আকৃতি টুকুই বোঝা যায়। সন্ধ্যার অন্ধকারে নাটমন্দিরের জ্বলন্ত প্রদীপমালায় কিছু দুর্বোধ্য অক্ষরের আভাস পাওয়া যায়। সন্ধ্যারতির সময় কিছু ভক্তসমাগম হয়, নারী পুরুষ, বালক, বালিকা সকলেই আসে, ভক্তিভরে অঞ্জলিপ্রদান করে তারা যে যার ঘরে ফিরে যায়। তারপরে শুরু হয় দেবদাসীদের পিশাচিনী নৃত্য। মন্দিরের অনতিদূরে মৃতদেহ সৎকার করতে আসা আত্মীয় পরিজন রা অতি সম্ভ্রমে দূর থেকে এই ডাকিনী নৃত্য দর্শন করে। কখনো বা মৃতদেহ সৎকার সম্পুর্ণ না করেই পালিয়েও যায়। কিছুক্ষন আগেই যে এই সব দেবদাসীরা স্বাভাবিক ভাবে ভক্তবৃন্দের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলো তা বিশ্বাস করাই দুষ্কর হয়ে ওঠে। তাদের দু এক প্রহর আগেও দেখলে মনে হতে পারে তারা আপন আপন গৃহস্থী সামলাতেই ব্যাস্ত। তারা সকলেই কৃশকায়, পরনের লালপেড়ে সাদা শাড়িটি রাঢ় বঙ্গের রীতি অনুসারে পরা। নদীমাতৃক বঙ্গভূমিতে শাঁখ ঝিনুক ইত্যাদির অভাব নেই তাই তাদের আভরণেও শঙ্খের প্রাধান্য। কদাচিৎ বিশেষ তিথিতে পোড়ামাটির গয়নায় সর্বাঙ্গ ঢেকে এই যুবতীরা একসাথে শ্মশানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীবক্ষে নগ্নিকা নৃত্য করে। কিছু নিজ অভিজ্ঞতা কিছু জনরব আর বাকীটা কল্পনার পাঁচমিশেল-- এই সবে মিলে এই বজ্রযোগিনীর মন্দিরটি চূড়ান্ত রহস্যজালের সৃষ্টি করে সাধারণ গ্রামবাসীর কাছে ... ...
-"শুনেছিস?" -"হুঁ, শুনলাম।" -"কখন? কে বলল?" -"এই তো একটু আগে। মিসেস চৌবে ফোন করেছিল। অনুপমকেও কে জানি ফোন করেছিল।" -"ছি: ছি:, কী লজ্জা বলতো? আমরা বাঙালীরা আর কারো কাছে মুখ দেখাতে পারব? সবাই তো মওকা পেয়ে নিন্দের বন্যা বইয়ে দেবে। বলবে "বঙ্গালীলোগ এয়সে হী হোতে হ্যায়"। ছি:" রুমেলা বিরক্ত হল। যা হয়েছে তা খুবই বাজে ঘটনা, শুনে অবধি তার মেজাজ খারাপ, তবু এসময়ে দেবযানীর এইসব টীকাটিপ্পণী সহ বক্তব্য আর নেওয়া যাচ্ছেনা। সে ফোনপর্ব শেষ করার ইঙ্গিত দেয়, -"ওসব ভেবে কী লাভ। যাদের যা বলার তারা এমনিতেও বলবে, অমনিতেও বলবে। ওতে কান না দেওয়াই ভালো। যাক শোন, অনুপম অফিস বেরোবে। ব্রেকফাস্ট রেডি হয়নি এখনো। এখন রাখ, সারাদিন পড়ে আছে। এসব আলোচনা পরে হবে।" ... ...
পৃথিবী জুড়ে এত বিপ্লবের মহোত্সব, অলি! তুই তো আমায় দেখাতিস স্বপ্নের দিকে উড়ে চলার রাস্তা. আর তুই আছিস বলেই না আমার মনে হত শেষ সিঁড়িতে এখান থেকেও পা রাখা যায়! অনন্তপুর থেকে স্টোনওয়াল খুব বেশি দূর নয়. আর কোনো এক দিন একটা বৃষ্টির বিকেলে আকাশে জোড়া রামধনু উঠবে যখন, রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে তোর ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে পারব, নিশ্চয়ই। সিকিওরিটি কি ইলিউশন? না কি সে সত্যি ই আছে? কোথায় সবচেয়ে সিকিওরড আমি? ধুস, আমি ওসব বিপ্লব টিপ্লব জানিনা অলি! আমি শুধু তোকে আমার পাশে দেখতে চাই, সকালে, বিকেলে, শুনতে চাই তোর ইষৎ অন্যমনস্ক গলায় গুনগুনানি. ছুঁয়ে থাকতে চাই তোকে.এইটুকু চাইবার জন্য বিপ্লব করতে হবে? ... ...
অনীতার কথা এইবেলা বলে নেওয়া ভালো কেননা, অনীতা প্রেমে পড়েছে। সেটা খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়, আকছার পৃথিবীর প্রতিটি কোণেই চৌদ্দ থেকে চব্বিশ বয়সী একগাদা মেয়ে কিশোরী মায় উদ্ভিন্নযৌবনা পর্যন্ত প্রেমে পড়ছে, শুধু পড়ছে না, বলা ভালো ধপাধপ আছাড় খাচ্ছে। প্রেমের মতো এমন একটা সঘন স-আবেগ তদুপরি সলজ্জ ব্যাপারের সাথে আছাড় খাওয়ার মতো অমন আনকুথ ক্রিয়াশীলতার কথা ভাবতেই কেমন যেন তেতো অনুভূতি হয় মুখের মধ্যে ওর, কিন্তু ব্যাপার টা ঠিক ঐ রকমই আনকুথ বলা যায় একেবারে বিশ্রী রকমের আনকুথ হয়ে গ্যাছে। কারণ অনীতা, আমাদের সুন্দরী ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া চোখে হাফ কাট রিডিং গ্লাস দেওয়া, লেয়ার কাট চুল, স্মুথ হেয়ার সিল্কি শাইনিং স্কিন অনীতা, টম ক্রুজ লুক আর রালফ লরেন পোলো টি শার্ট বিশেষজ্ঞ অনীতা, সর্বোপরি শোভা দে আর সিডনী শেলডন গোগ্রাসে গিলে খাওয়া অনীতা হঠাৎ করে আছাড় খেয়েছে, থুক্কু, মন প্রাণ সবই সঁপে বসে আছে এই দর্জিকে! ... ...
শুভ যোগ বলুন আর ত্রহ্যস্পর্শ মাইনাস ওয়ান, এমন কেলোর কীর্তি এর আগে হয়েছে কি? নারীদিবস আর দোল এবার পিঠোপিঠি। ওদিকে গালে রঙ কত জমেছে কে জানে, আমাদের লেখা জমে গেছে বিস্তর। টেকনিকাল টিমের হুড়কোয় এতদিন চুপচাপ থাকলেও এই মওকা আর ছাড়া গেলনা। জমে যাওয়া জিনিসপত্তর থেকে তুলে নিয়ে কিছু ছড়ানো-ছেটানো লেখা তোড়ায় বেঁধে হাজির করা হল এবারের স্পেশাল বুলবুলভাজায়। নতুন ভার্সানে নতুন গুরু এলে নতুন বুলবুলভাজা আবার বেরোবে। কিন্তু তার আগেই, এই সুযোগ, আর ছাড়াছাড়ি নেই। কত বাড়ি দেখা হল। এখনও তো বেশি বড় হইনি। যখন মায়ের মতন হব তখন আরো কত বাড়ি দেখব। কত ভাল কত খারাপ। মায়ের মতন বড় হওয় অব্দি কি বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতেই থাকব? না আমি ভাবি যে বাবাকে বলব আমকে বিয়ে দিও না, আমাকে তোমার পার্টিতে নিয়ে নাও। দাদা আছে, আমিও থাকব। আমাকে ঐ চক্চকে সানাইএর মত বাঁশিগুলো বাজাতে দেবে। আমি তো বাজাতে পারি। যখন বাবা থাকে না, আমি একএকদিন বাজাই। জামাইদাদাও এগুলোই বাজায়। ওরা যা বাজাতে বলে সব বাজাতে পারি। আমি তো আর দাদার মতন নেশা খাব না, দুটো পয়সা পেলে ঘরেই আনব। বলব বাবাকে। ... ...
১৪৩০ এর শারদপ্রাতে এই সব হ্যান্ডবিলে লেখা থাকছে- কুমুদি পুরস্কার - নবীনদের বাংলা গল্প লেখার আহ্বান। ... ...