আসলে হাওয়ার রাত ছিল সেদিন। ফুলশয্যার খাটে ঘন নীল মশারি ফুলে ফুলে উঠছিল। তখন নীলকমলকে হাতির গল্পটা বলেছিল স্বপ্না। নীলকমল হাসিমুখ করে শুনছিল তারপর বলেছিল -ধ্যাত, সরু গলিতে হাতি ঢুকবেই না। হাতি বিষয়ে নীলকমল সবই জানে-এরকমই মনে হয়েছিল তার নতুন বৌয়ের। তখন স্বপ্না অন্য গল্প বলবে ভাবছিল- বিরাট উঠোনে জ্যোৎস্নায় লক্ষ্মীপ্যাঁচা নামত, সেই গল্প। নীলকমল ততক্ষণে সুকুমারের গল্প শুরু করেছিল। চাঁদ আর জ্যোৎস্না দিয়েই শুরু করেছিল নীলকমল। বলেছিল সুকুমারের আশ্চর্য বাড়ির কথা। বলেছিল, চাঁদ উঠলে সুকুমারের বাড়ির সামনের রাস্তায় আইসক্রীম ট্রাক আসে। লাল নীল আলো জ্বলে,ঘন্টা বাজায়। নীলকমল বলেছিল সুকুমার আইসক্রীম ভালোবাসে। স্বপ্নারও একটা গল্প ছিল আইসক্রীমের। প্রাচীন এক আইসক্রীমের রেসিপির- যা ও এক মেমসাহেবের থেকে পেয়েছিল কুচবিহারে-ওর বাপের বাড়ির পাড়ায়। জীর্ণ এক বাড়িতে থাকত সেই মেম আর তার অন্ধ কুকুর। স্বপ্না অবশ্য সে গল্প বলে নি তখন। সুকুমারের গল্প শুনেছিল চুপ করে। এক বছর শুনেছিল সুকুমারের গল্প। তারপর বছর ঘুরতেই কুচবিহার গিয়ে রুফাসকে নিয়ে এসেছিল। বলেছিল বাপের বাড়ির কুকুর। বলেছিল ছোটোবেলায় ও ইংরিজি শিখেছিল এক মেমের কাছে। ইংরিজি শিখত আর রান্না। রুফাস আর রান্নার বই এনেছিল কুচবিহার থেকে। বলেছিল মেম দিয়েছে। নীলকমল রান্নার বই উল্টে দেখেছিল। সমস্ত উপকরণ, মাপামাপির হিসেব অচেনা ঠেকেছিল নীলকমলের। বলেছিল -এসব এদিকের বাজারে পাওয়া যায় না। বলেছিল - সুকুমারকে বলে দেব, দেশে এলে নিয়ে আসবে। স্বপ্না সে বই তুলে রেখেছিল। রুফাস তখন ছোটো। স্বপ্না বলেছিল মেমের অন্ধ কুকুরের নাতি রুফাস। মেমই নাম রেখেছে। পরে একদিন তুমুল ঝড় জলে শিয়ালদায় স্বপ্নার পিসতুতো দাদার সঙ্গে নীলকমলের দেখা হয়েছিল। দার্জিলিং মেল ধরার কথা দুজনেরই। ট্রেন লেট ছিল সেদিন। অনেকক্ষণ গল্প করেছিল ওরা। মেমের কথা কিছু জানে না স্বপ্নার পিসতুতো দাদা, বরং, সেদিন সে রুপুর কথা বলেছিল আচমকা। বলেছিল, রুপু স্বপ্নার প্রেমিক ছিল কুচবিহারে। বাড়ি ফিরে স্বপ্নাকে সে সব কিছু বলে নি নীলকমল। প্রথম ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়ে সুকুমারের ট্রেন আটকে পড়েছিল পাটনায়-সে গল্প বলেছিল। ... ...
আমি আর সন্দীপ কোনো এককালে সাইকেল করে এয়ারপোর্ট দেখতে আসতাম। ভি. সি কলেজে পড়ি তখন। কলেজ কেটে , বলাই বাহুল্য। মাঝেমধ্যে সুবর্ণও আসতো। সাইকেল চেপে ঘুরতাম, সে তো কত জায়গাতেই। ক্লাশ না পালিয়েও আসতাম পরের দিকে। যেমন শীতের ভোর ভোর কুয়াশায়, যখন নীলগঞ্জ রোডের ধারে চায়ের দোকানে সবে উনুনে আঁচ পড়ছে, বাসিমুখ দোকানী হাই তুলতে তুলতে প্রাণপণে হাওয়া দিচ্ছে; ধোঁয়া আর কুয়াশায় মিলিয়েমিশিয়ে জট পাকিয়ে একাকার। দাওয়ায় মাদুর পেতে পড়তে বসেছে বাচ্চা ছেলে, গায়ে নস্যি রং চাদর না আলোয়ান কেবা জানে; উঠোনে রোগাভোগা বেড়াল-ছানার মত ফালি রোদ ডুরে শাড়ির পায়ে পায়ে ঘোরে। ... ...
দুগ্গাপূজা নিয়ে অত বলাবলির বা কি আছে, অত আনন্দেরই বা কি আছে। সেসব বলবে পাল্লিনের মত কচিকাঁচারা। আমায় কেন, বৃদ্ধ মানুষ ! শুধু ছোটবেলায় একবার লাল জামা কিনে দেওয়া হয় নি বলে গড়িয়ে গড়িয়ে কেঁদেছিলাম। নালেঝোলে মেখে, মাটি চেটে , মেঝের শানে ঠাঁই ঠাঁই করে মাথা ঠুকে গুগলু বানিয়ে তবে ক্ষান্ত দিইছি। আর ক্যাপ ফোটানোর একটা ব্যাপার ছিল। ক্যাটকেটে কালো পিস্তলগুলো সব, নারকেল তেলের গন্ধমাখা। তায় আবার রোল ক্যাপগুলো কিছুতেই ফাটতে চাইত না। আর সেবার কে যেন একটা ঝিনচ্যাক রূপোলী পিস্তল কিনে দিল। দেবদূত-ফেবদূত কিছু একটা ভেবেছিলাম, লোকটাকে। ... ...
একটা ঢিল ছোড়া যাক। ঢিলটা কাক-ওড়া সরলরেখা ধরে যেতে থাক। যদিও কাকেরা সরলরেখায় ওড়ে, বিষয়টা এমন, মানে, প্রামাণ্য নয়। বিষয়টা কাক নয় ঢিল, ঢিলটা মহাজাগতিক দ্রুতগতিতে সাঁই সাঁই ধাবমান, সরলরেখা কিম্বা প্যারাবোলায়। সরলরেখা, প্যারাবোলা বা নেহায়েৎ ছাপোষা বক্ররেখা ধরে যেতে যেতে ঢিল টাল খেতে বা লড়খড়াতে পারে, নাও পারে। বিষয়টা সেটা নয়। মানে, ঢিলটা কি আদৌ আছে? থাকলেও সেটা কি দৌড়োচ্ছে? আরো মোদ্দা কথা যেটা, সেটা কি ছোড়া হয়েছে? এ সব প্রশ্নের মীমাংসা ধীরে ধীরে হবে, কিম্বা আদৌ, কখনোই হবে না। ... ...
মাঝে মাঝে এই এক দুদিনের জন্য ঝটিকা সফরে গিয়ে অন্য সব শহরে পাঁচতারা হোটেলগুলোতে থাকা অচিনের বিশেষ পোষায় না। তবু পরিচালক হিসেবে তার নিজেরই বানানো ছবি আর ওয়েব সিরিজের প্রচারের দায়িত্ব ফেলে দেওয়াও যায় না, তাই সেগুলো মুক্তির কয়েক সপ্তাহ আগে সময়মতন প্রযোজকদের অফিস থেকে ফোন পেলে ছোট কেবিন ব্যাগটা নিয়ে তাকে বেরিয়ে পড়তে হয়। সব ব্যবস্থা তারাই করে রাখে , অচিনকে শুধু তাল মেলাতে হয়। ... ...
হলটায় রোজ রোজ একটাই সিনেমা চলে। মিনিটরা আরো মিনিটদের ডাকে, ঘন্টারা আরো ঘন্টাদের, দিন,সপ্তা,মাস,বরষ ডাকে। আরো সব দিন, সপ্তা,মাস, বরষকে। সবার চোখের মণি জুড়ে এই একটা সিনেমাই চলে। মানুষ গুলো তাতে হাঁটে, বসে, ঘোরে, ফেরে। মানুষগুলোর চারপাশে হাওয়ায় ধুলোর কণার মত কথা ওড়ে। ছোটছোট গোলগোল কথা, বড়মত কোণাচে কথা, ভাঙাভাঙা গুঁড়োগুঁড়ো কথা।ওড়ে। সিনেমাটায় ঠিক এত ঘন্টা এত মিনিট পরে একটা মেরুন রঙের ট্রাম চলে যায়, সেই সময়েই রাস্তা পেরোয় একটা হলুদ ছাতা, আকাশ জুড়ে বিষ্টি থরথর ক'রে কাঁপতে থাকে। ... ...
এই ঘরটায় স্টেগো থাকতো, আর ঐ ঘরটায় আমি থাকতাম। স্টেগোকে নিয়ে যত ভাবতে যাই, স্মৃতি ততই প্রতারণা করে। কিন্তু হ্যাঁ, এ কথা স্পষ্ট মনে পড়ে যে এই চেয়ারে বসে থেকে থেকে তার বাঁকা পিঠ বাঁকতে বাঁকতে একদিন মচ্ করে এমনই বেঁকে গেলো যে তারপর থেকে সে স্টেগো হয়ে যায়। এর পর ওর ঘরে আর যারা যারা থাকতো, মানে ডিপ্লো আর ব্রন্টো, তাদেরও সরে যেতে হলো কারণ কে না জানে যে এক জঙ্গলে দুটি শের থাকতে পারে না। অবশ্য ডিপ্লো আর ব্রন্টোও তখনও ডিপ্লো আর ব্রন্টো হয়নি। কিন্তু খুব শিগ্গিরি হবে হবে করছে। ... ...
আবার মহাকালের রথে চেপে আমরা যদি অতীততর ধূসরতায় প্রবেশ করি, তাহলে সেই পাশা উলটে যাওয়ার দিনে কৈকেয়ীর কাছে নির্মম সত্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দশরথ যতই ঘন ঘন জ্ঞান হারান, বুকে করাঘাত করে বিলাপ করুন, কৈকেয়ীকে অভিসম্পাত দিন,কৌশল্যার প্রতি হঠাৎ উদবেলে হাহাকার করে উঠুনএমনকী তাঁকে বন্ধন করে রাজ্যভার গ্রহণ করতে রামকে পরামর্শ দিন না কেন, রাম যদি পিতৃসত্য না রক্ষা করতেন, তাহলেই কি দশরথের মান থাকত? অত দুঃখের মধ্যেও দশরথের দার্শনিক সত্ত্বাটির নাগাল রাম নিশ্চিত পেয়েছিলেন। দুই পিতার চোখের মণি দুই পুত্র দুই মহাকাব্যের পথ ধরে গিয়েছেন দুই সম্পূর্ণ বিপরীত রাস্তায়। কার শেষে আলো, কার শেষে অন্ধকার, সে জানে রসিক – হৃদয়; পাঠক-সত্ত্বা। ... ...
ছোট্ট বেলা থেকে বাচ্চাগুলোকে ভূগোলের নামে পড়ানো হয় জেলার নাম। আঁকানো হয় লাল দগদগে আন্তর্জাতিক সীমারেখা। যে মেয়ে নিজের উঠোনের থেকে লাফ মেরে প্রাচীর ডিঙিয়ে পাশের বাড়ির পেয়ারা গাছে দোল খায়, সে কী করে খুঁজে পাবে দাগ, প্লট! অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশর খোপ খোপ অংশগুলো তো তার কাছে কিতকিত কিম্বা এক্কাদোক্কা খেলার কোর্ট। তবুও সে পড়ায় স্বাধীনতা উত্তর ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যের বন্টন, তবুও তাকে চেনাতে হয় মাটির বুক চিরে চিরে খন্ড খন্ড করে তৈরি হওয়া দেশ। কারণ সে তো একজন সামান্য দিদিমণি। ... ...
উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম দিবসে বাবার হাত ধরে আমিও যেতাম সেই সব রোমহর্ষক সংগ্রামে। তখন-ও ‘দিনেরাতে মুলে রাখে কান’ মোবাইল ছিল না পকেটে-পকেটে, তবুও ঘাবড়াইনি কোনোদিন, জানতাম রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে পকেটে একটা নাম-ঠিকানা লেখা চিরকুট থাকলেই চলে, হারিয়ে গেলেও কেউ খুঁজে পেয়ে আমাকে ক্যুরিয়ার করে দেবেন। তবে কি না, ছোটোবেলায় হারাইনি কোনোদিন-ই, ইচ্ছে ছিল একবার অন্তত হারিয়ে গিয়ে বাবার নাম ধরে মনের আনন্দে চ্যাঁচাবো, সেই গোপালের ছেলে যেমন চিল্লিয়েছিল “অ্যাই গোপাল, গোপাল”! কিন্তু সে শখ আর পূর্ণ হল না কোনোদিন। তবে হারিয়ে একবার গেছিলাম, তাও আবার আধদামড়া, হিজল-দাগড়া বয়সে। সে-ও সেই অভিশপ্ত সপ্তমীর দিনটাতেই। সেই গল্প বলছি। ... ...
বিধ্বস্ত ইউরোপ ছেড়ে বাইবেল হাতে ডাচ একদিন বাসস্থান খুঁজেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, বন্দুকের ডগায় উচ্ছেদ করেছিলেন আদি বাসিন্দাদের। এমনটা আমরা দেখেছি আমেরিকায় অস্ট্রেলিয়ায় কানাডায় সেখানকার আদি বাসিন্দাদের মেরে ইউরোপীয়রা বানালেন আপন রাষ্ট্র। ১৯৭৮ সাল অবধি আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের কোন রিচুয়াল পালন বেআইনি ছিল; অস্ট্রেলিয়া তাদের রেখেছিল র্যাবিট হ্যাচে। আলোকিত সভ্য সমাজের বিবেক বিচলিত হয় নি। ... ...
দেশের রাজার ভারী অসুখ করেছে। মুখে হাসি নেই, চোখের তলায় কালি, মাঝেমাঝেই কাতরে কাতরে ওঠে আর বলে, ‘ও হো হো, আমি আর বাঁচব না।’ আমেরিকা থেকে সাহেব ডাক্তার এল। টিপেটুপে দেখে বলল, ‘মহারাজ, বেদনাটা চিনচিন না ঝনঝন, উপর থেকে নীচে, না পাশ থেকে মাঝে?’ রাজা রেগে গিয়ে বলল, ‘সবই আমি বলে দিলে তোমাকে হাওয়াই জাহাজের টিকিট কেটে আনা হল কেন হে?’ ... ...
একটা থ্রিলার দেখবো ভেবে দেখতে বসলে, ওয়েব সিরিজের ধর্ম অনুযায়ী প্রথম এপিসোড সেভাবে টানটান না লাগতেই পারে, এমন কী প্রথম এপিসোডের শেষে পরের এপিসোডের শেষে যাওয়ার যে অব্যর্থ "হুক" সেটাও আপনি পাবেন না প্রথম বা দ্বিতীয় এপিসোডে....আসলে এটা বর্তমানে বহুল প্রচলিত, অকারণ গুলি এবং গালি " সমৃদ্ধ" ওয়েব থ্রিলার সিরিজ নয়। এটা মাথায় রাখলে সিরিজ দেখতে বসার আগেই একটা প্রাক নির্ধারিত এড্রেনালিনের ক্ষরণ সম্ভাবনা সরিয়ে রেখে ধীরে ধীরে গল্পের ভেতরে ঢোকার পদ্ধতিটা আপনি উপভোগ করতে পারবেন হয়ত। ... ...
সারাদিন অপেক্ষা করে নওশাদ, কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। রাতে ঘুম ভেঙে গেলে নওশাদের মনে পড়ে তার কী করা উচিত, সে রেডিওর ডায়াল ঘুরিয়ে ১২০ কিলোহার্টজ বেছে নেয়। তারপর কয়েকবার “নওশাদ বলছি” বলে। ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে রেডিও প্রাণ পায়। বেলার কন্ঠ, “আপনি সেন্ট্রাল রোডের পেছনের বাড়িগুলির মধ্য দিয়ে কাঁটাবন পার হবেন। আজিমপুর দিয়ে লালবাগে ঢুকবেন। নদী আপনাকে সাঁতরে পার হতে হবে রাতে।” নওশাদ রুদ্ধশ্বাসে বলে, “তারপর?” আবার সারাদিন নিস্তব্ধতা। সন্ধ্যায় নওশাদ ৮০ কিলোহার্টজে বার্তা পাঠায়, “নদীর ওপাড়ে কি প্রতিরোধ কমিটির কেউ থাকবে?” ভোরে বেলার কন্ঠ ভেসে আসে, “না আপনাকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত হেঁটে আসতে হবে, আমি সেখানেই আছি।” ... ...
অনেকক্ষণ ধরে জল ফোটায় শিউলি। চাপাতা। দুধ। চিনি। সব ফুটলে একটা আরামের গন্ধ পাওয়া যায়। পায়ের পাতা টনটনায়। কড়া হয়ে গেছে পা। ফাটা জায়গাগুলোতে হাত বোলাতে বোলাতে চায়ের ঘ্রাণ নেয়। এইসময়টা তার একেবারে নিজের। মোতি বা পার্বতী থাকতে পারে। রচনা থাকতে পারে। কিন্তু তারা যেন নিজের মনে কথা বলে যায়। শিউলি জবাব দিল কি না দিল, কিছুই এসে যায় না। ... ...
যশপতি সিংহের বুকের মধ্যে অনেকগুলো কাশফুল ডিজে মিক্সের তালে নাচছিল। পুজোর বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। আজ আমদানি ভালই হল। দু'লাখ লাগিয়েছিলেন সকাল সাড়ে নটায়। বারোটার মধ্যেই বেড়ে হয়ে গেল দু'লাখ আশি। মানে ফর্টি পার্সেন্ট। শেয়ার বাজার কি জয়! প্রাণ ভরিয়ে ঝিঙ্গালালা ধ্বনি বাজছিল। অ্যাপ থেকে অর্ডার করে বিখ্যাত দোকানের কিং সাইজ বিরিয়ানি আনালেন। সাঁটিয়ে খেলেন। সঙ্গে ছিল মাটন চাঁপ, স্পেশাল রায়তা আর ফিরনি। তার পরে গ্লাসে কোল্ড ড্রিঙ্ক ঢাললেন। দু-প্যাকেট জলজিরা মেশালেন। গ্লাসের অন্তঃস্থল থেকে উঠে এল আনন্দ বুড়বুড়ি। ... ...
আমড়াগাছের নীচে একটি সভা বসেছে। এখন মাঝ রাত্তির। সভায় উপস্থিত বকচ্ছপ, বিছাগল, হাঁসজারু, গিরগিটিয়া, হাতিমি, মোরগরু, সিংহরিণ। একটু উঁচু জায়গায় বসে আছে প্যাঁচানি, সে এই সভার সভাপতি। সকলেরই চোখে জল, সমবেত চাপা কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন সময় হাত তুলে প্যাঁচানি উপস্থিত সবাইকে শান্ত হবার ইঙ্গিত দেয়, এক মুহূর্তে কান্নার শব্দ থেমে যায়, প্যাঁচানি হুট হুট শব্দে সকলের আচরণ অনুমোদন করে। এমন সময় ঘুম-ভেঙে-উঠে-আসা হরু চোখ কচলাতে কচলাতে প্রবেশ করে। ... ...
শহরে ঢুকে বিজয়ী জেনেরাল দেখেন একটা এলাকা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। জানতে চাইলেন, এটা কি? এর পিছনে কি আছে? তাঁকে বলা হলো ‘ঘেটো*। এখানে শহরের দশ হাজার ইহুদি বাস করে। ভেনিসের নাগরিকদের পাশাপাশি তাদের বাস করা মানা’। তিনি বললেন ‘তারা ভেনিসে বাস করে কিন্তু নাগরিক নয়? কামান দিয়ে উড়িয়ে দাও এই দেওয়াল, এখুনি’। দু মাসের মধ্যে ইহুদিদের একঘরে বা আলাদা করার রীতি বর্জিত হলো চিরতরে। ১৭৯১ সালের ফরাসি সংবিধানে ইহুদিদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেওয়া হয়েছিল, ইউরোপে সেই প্রথম। ... ...
কফির কাপ হাতে নিয়ে রিচারড গোল্ডস্টোনের সামনে হাজির হয়ে সুপ্রভাত জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছেন? বললেন কেপ টাউন। ইতিমধ্যে রোদিকা যোগ দিয়েছে বলতে শুরু করলো সে তাঁর রিপোর্ট পড়েছে, তার মনে হয়েছে অনেক স্পষ্ট কথা সেখানে বলে হয়েছে। বাকি সময়টুকু তিনি আমাদের কথা নিয়ে কাটিয়ে দিলেন, আমরা কে, কোথাকার, কখনো দক্ষিণ আফ্রিকা গেছি কিনা। এই সুযোগে জানালাম কাজে কর্মে তো বটেই, এমনকি ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখতে জোহানেসবুরগ গেছি। বিনীত অনুরোধ জানালাম, আপনার সঙ্গে আমার স্ত্রীর ছবি তুলতে পারি কি? তখুনি রাজি হলেন। তারপর আমরা ফ্রাঙ্কফুর্ট, তিনি কেপ টাউনের পথে। রোদিকা বললে কিছু জিজ্ঞেস করাই হলো না! বললাম দুঃখ পাবার কারণ নেই। আমাদের সঙ্গে কথা বললেন এই ঢের। অমন ডাকসাইটে আইনজ্ঞ বলে কথা। ... ...