ইমতিয়ার শামীম। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্বর। সম্প্রতি সম্মানিত হলেন বাংলাদেশের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে। তাঁর কলমে ঘুরে ফিরে বারবার উঠে আসে শেখ মুজিবুর রহমান-হত্যার পরবর্তী বাংলাদেশের সমষ্টিগত আঘাত। সে ক্ষত বিশেষ ভাবে প্রতিভাত হয় ‘আমরা হেঁটেছি যারা’ উপন্যাসে। লিখছেন স্বাতী মৈত্র ... ...
বিমানবাবুরা জামায়েত উলেমায়ে হিন্দের পদাধিকারী বলে সিদ্দিকুল্লাকে সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি মনে করেন। পড়াশোনা করার জন্য বিখ্যাত কমরেডরা ‘জামায়েত উলেমায়ে হিন্দ’ শব্দবন্ধের মানে জানে না, সংস্থাটির ইতিহাস জানে না। চাড্ডিমান্য সংজ্ঞা অনুযায়ী দাড়ি আর টুপি ছাড়া সিদ্দিকুল্লার কোন নেড়েগুণ নাই। অধুনা রাজনৈতিকোচিত হার্মাদপনা, বাটপাড়ি অবশ্যই আছে। তবু, বিমানদা যখন বলেছেন, তখন সিদ্দিকুল্লা জামাতে উলেমায়ে হিন্দের পদাধিকার বলেই সাম্প্রদায়িক। তাই বিমানদার এককাঠি সরেস, নিরেট, একেবারে একটা আস্ত জ্যান্ত পীরজাদা চাই! উলেমায়ে হিন্দ বনাম স্বয়ং শ্রীমান পীরজাদা! ইহা ধ্রুপদী প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। ... ...
লাবণ্যপ্রভা আমার বউদির দিদিমা । তিনি ছিলেন সাগরদাড়ির কন্যা। মাইকেল মদুসূদন দত্ত ছিলেন তাঁর সম্পর্কিত দাদু। মানকুমারী বসু তাঁর পিসিমা। বউদির বাবা আমার বাবার বাল্যবন্ধু। সেই সূত্রে তাঁর শ্মশ্রুমাতার বেলগাছিয়ায় আসা ছিল নিয়মিত। জামাইয়ের বন্ধু তো। আর পূর্ববঙ্গের শিকড়ও ছিল। অদ্ভুত তিনি। ওপার থেকে তেমন কিছুই আনতে পারেননি। অল্প বয়সে বিধবা। থাকতেন বসিরহাটে। তাঁর পুত্রটি তহসিলদার। খাজনা আদায় করেন। তখন এই বৃত্তি ছিল খুবই কষ্টের। তহসিলদার অন্য রাজ্যে তহসিলের শাসনকর্তা, এই রাজ্যে ছিল খাজনা আদায়ের কমিশিন এজেন্ট। যত আদায় তত আয়। যেতেন আবাদ অঞ্চলে। আবাদ অঞ্চল মানে সুন্দরবন এলাকা। মাসিক বেতন ছিল না। তো তিনি আবার ছিলেন আলাভোলা মানুষ। মুখখানি মনে পড়লে এখন মায়া জন্মায়। ... ...
প্রফেসরের ধারণা এর নিচে লুকানো আছে আরো নানা রহস্যময় ও অজানা জিনিস। তাঁর অনুমান সঠিক বলেই প্রাথমিকভাবে দেখা গেল। সেই মন্দিরের নিচে সন্ধান পাওয়া গেল অমূল্য সম্পদের এক গলির৷ সেই দেওয়াল জুড়ে অজানা হায়রোগ্লিফিকস্৷ ... ...
কমিউনিস্ট বলতে জনমানসে এক বিচিত্র স্টিরিওটাইপ রয়েছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত সৎ হবে, তারা বহুজনহিতায় জীবন উৎসর্গ করবে, তারা সর্ববিষয়ে আদর্শ হবে, তারা প্রতিস্রোত হবে, নীরব সেবাব্রতী হবে ইত্যাদি প্রভৃতি। সমস্যা হল সর্বগুণে গুণান্বিত সিপিএমের এই নব্যপ্রজন্ম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে নি। ফলে এই বিচিত্র স্টিরিওটাইপ তাদের অধিগতও নয়, আকাঙ্ক্ষিতও নয়। তারা অনেক বেশি বাস্তববাদী। ... ...
ঘুমের অতলে হঠাৎ জেগে ওঠে হলুদ আলোর চাঁদ। আমি আর ঠাকুমা সেই আলোয় নিশ্চিন্তিপুরের পথে। ক্ষেতের আইল, নদীর ঘাটে ভাঙা বাড়ি, মরিচের ক্ষেত, আমবাগান সব পেছনে রেখে আমি আর ঠাকুমা ছুটছি। আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি যে! ঠাকুমা আর আমি বারবার একই ক্ষেতের আইলে ঘুরপাক খাচ্ছি। কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে তাঁত মাকুর আওয়াজ। চাঁদের আলোয় আরেক পোচ হলুদ জমলো। বাতাস কেটে ভেসে এলো সুর। বাঁশির সুর। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। এ কিস্তিতে উঙ্গেরেঙ্গেরি নদী পার হয়ে মিকেসেহে নামের একটি গ্রামের অভিমুখে যাত্রার কথা। তরজমায় স্বাতী রায়। ... ...
খানা-সংস্কৃতি ভাই! ইদানীং ফ্যাশন ওইটাই! শুধু খেলে হাঁসফাঁস করে হবেনি কো, জানতে হবে ইতিহাস, ঝাড়তে হবে দেরিদা-ফুকো! কিন্তু যদি উলতো গাই? এ বাজারে এট্টু অপোসংস্কিতি ফলাই! রাখুন ও সব লবচবানি, রাঁধুন মাটন কেওরামি! কে বলে তাতে পড়বে ঢিঢি? রেসিপি দাতা স্বয়ং ডিডি ... ...
পঞ্চদশ ষোড়শ শতকের এক আশ্চর্য কুকবুক সুপশাস্ত্র। খিচুড়ির খোঁজে সেখানে আমাদের প্রবেশ করতেই হবে। কিন্তু তার আগে একটু সাঁতার ঘোর রহস্যময় সংস্কৃত শব্দ ‘সুপ’-এর সরোবরে। সত্যে ডুব দিয়ে কিছু মিথ ভাঙা দরকার। আর সেই সন্তরণেই আমরা পেয়ে যাই ভোজ কী হওয়া উচিত বাল্মীকি রামায়ণে তার আশ্চর্য সংজ্ঞা। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
শুরু অনেক আগেই হয়েছে। সে কারণেই সম্ভবত গুজরাট দাঙ্গার সময়ে যিনি দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সেই কে আর নারায়ণন অবসরের পর বলেছিলেন, তিনি সব থেকে বেশি পীড়িত হয়েছিলেন এটা দেখে যে, এত বড় একটা গণহত্যা ঘটে গেল, সারা দেশ ছিল প্রায় নীরব। সেই সাক্ষাৎকারে ইউটিউবে যে কেউ দেখে নিতে পারেন। ... ...
এই যে বিভিন্ন দল এলজিবিটিকিউদের নিয়ে কথা বলে, তারা নিজেরা কতটা আন্তরিক? আপনি বলতেই পারেন, খেতে পেলে শুতে চায়। রাজনৈতিক সমাবেশে খান দুই রামধনু পতাকা ওড়াতে দিয়েছি, একজন বক্তা এলজিবিটিকিউদের জন্য একটা বাক্য বলেছেন, এই না কত। এটুকুই বা কে করে? ... ...
মানসিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে পুলিশ প্রথমত অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে, দ্বিতীয়ত অনেক সময় আদৌ নেওয়াই হয় না। পুলিশ চায় আপোষ মীমাংসা করে নেওয়া হোক, ক্ষতিপূরণ দিয়ে মিটিয়ে ফেলা হোক। সুতরাং পুলিশি চিন্তা ভাবনারও বদল চাইছেন ওঁরা। চাইছেন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। ... ...
উপরে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিলেন গালিলিও। বিজ্ঞানের অগ্রগতির এক মাইলফলক। তাঁরও পূর্বে মধ্যযুগ থেকে একেবারে আধুনিক কাল পর্যন্ত সে অগ্রগতির রূপরেখা দু-মলাটে ধরা সহজসাধ্য নয়। বাংলায় তো তেমন বই দুর্লভ। সেই বিরল সাধ্যসাধন করা হয়েছে একটি বইয়ে। তাও সাধরণ পাঠকের বোধগম্য সহজ ভাষায়। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কর্মসচিব, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ... ...
শ্রেষ্ঠ হিন্দি সাহিত্য অতি ক্ষুদ্র অংশেই পৌঁছোয় বাঙালি পাঠকের কাছে। তরজমার অভাবে। যদিও বহুধা প্রবাহিত সেই সাহিত্য প্রায়শই আন্তর্জাতিক সেরা সাহিত্যসৃষ্টির সঙ্গে তুলনীয়। গত শতকের প্রথম ছয় দশকে জন্ম, এমন নয় লেখকের এক ডজন গল্পের তরজমা। পড়লেন সাহিত্যিক ও তরজমাকার তৃষ্ণা বসাক ... ...
কার্ল মিকেল। জার্মানির সাহিত্যিক। কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক। শৈশব-কৈশোর কেটেছে নাৎসি দল ও হিটলারের উত্থান ও শাসনকাল দেখে। দেখেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা—নিজের শহর ড্রেসডেনের বোমারু বিমান-হামলায় গুঁড়িয়ে যাওয়া। যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্বে দেখেছেন পূর্ব জার্মানিতে দমবন্ধ-করা সোভিয়েত-রাশিয়া সমর্থিত কমিউনিস্ট শাসন। তাঁর কবিতা পড়লেন ও জার্মান থেকে তরজমা করলেন কবি হিন্দোল ভট্টাচার্য ... ...
এতো সমৃদ্ধ এবং এতো প্রাচীন ভাষার নিজস্ব কোন লিপি নেই। সংস্কৃতের কন্যা নয়, অতএব উত্তরভারতীয় ভাষাগুলোর মতো দেবনাগরী-সম্ভূত লিপি গড়ে ওঠেনি সাঁওতালি ভাষার জন্যে। লিপিহীন এই কথ্য ভাষা তাই হোঁচট খেতে খেতেই চলতে বাধ্য হচ্ছে ভারতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতির জগতে। এই অবস্থার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন ভাষাবিদ এক শিক্ষিত লড়াকু সাঁওতাল, তাঁর নাম রঘুনাথ মুর্মু। শুধু লিপি তৈরি করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, ছাপাখানার কাজ শিখে, একটা একটা করে তৈরি করেছেন সাঁওতালি অক্ষর – জন্ম নিয়েছে অলচিকি লিপিমালা। তাঁর একনিষ্ঠ শিষ্যদের মধ্যে জলধর একজন, সে সাঁওতালি এবং বাংলা, দুটি ভাষাতেই সমান স্বচ্ছন্দ, দুটি ভাষাতেই কবিতা লেখে। রঘুনাথ নামে একটি মাসিক পত্রিকা চালায় সে, পত্রিকাটি দ্বিভাষিক – সাঁওতালি আর বাংলা – সে-ই সম্পাদক এবং প্রকাশক। এই পত্রিকায় মাঝে মাঝে লেখে নিলীন এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহকর্মী কয়েকজন। ... ...
পরের দিন সকালে কারারক্ষীরা বুড়োকে ছুটি হয়ে যাবার আদেশ শুনিয়ে বাইরে নিয়ে যাবার জন্য এল। তারা তাকে বিছানার এককোণে বিধ্বস্ত, এলোমেলো, অবস্থায় আবিষ্কার করল৷ সঙ্গে বদ্ধ উন্মাদের মত বুনো চাউনি। ডান হাতের আঙুলগুলো দিয়ে কিছু একটা গণনা করছিল সে, আর বাঁ হাতটা অনবরত এদিক সেদিক ঘোরাচ্ছিল৷ ... ...
যে কোনও সময়কালে, যে কোনও প্রেক্ষাপটে সত্যিকারের প্রেম বা ট্রু লাভ সবসময় লারজার দ্যান লাইফ। নাহলে সেটা প্রেমই নয়, সম্পর্কের সমঝোতা মাত্র। ওয়েব সিরিজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে, প্রেম যদি এভাবে, এত ঠুনকো হয়ে ধরা দেয়, তবে তা দুশ্চিন্তার। ... ...
সব একসময় কোনসময় লাইন হয় বিচ্ছেদ পেতে স্ট্যাম্প পেতে বালুঘড়ি নৌকাসফরেও প্রতিশব্দ অভিধান নেই অমিল একটা কাটাকুটি ঘর সুডোকু হচ্ছে না হাওয়া ভর্তি প্যাকেট ফাটিয়ে কটা ছড়ানো খাওয়া ফুলফল এই ভাঙা লেটারবক্স ছোঁয়া বিসিসিতে কয়েক লাইন মাত্র নীল গোলাপি পিল জড়িয়ে সাদাকালো ধূসর নোঙর পোঁতা পোর্ট পোর্ট পোর্ট পোর্ট পোর্ট একটা লক ডাইরি বন্ধ দেখা শতকরা শতাংশ ভগ্নাংশ মোরামজমা ঘষা স্ফটিক হাউই উড়ছে ক্যালেন্ডার লগঝোলা নতুন চাদর মাঠ বারান্দা বাঁধা জল ভাঙছে থিসিস ডিফেন্ড কীভাবে করা যাবে? ... ...