এবারের অধিবেশন দুব্রভনিক। ক্রোয়েশিয়ায় আমার যাতায়াত আছে, জাগ্রেবের সঙ্গে মোলাকাত হলো কয়েকবার। তবে দুব্রভনিক একবারে আলাদা। এক অসামান্য শহর যাকে ভূমধ্যসাগরের মুক্তো বলা হয়—পাথরের দেয়াল দিয়ে ঘেরা। লাল টালির ছাত! প্রথমবার ছবি দেখেই মনে হয়েছিল সমুদ্রের ভেতরে গিয়ে শহর ও কেল্লা বানানোর কি প্রয়োজন ছিল? ডাঙ্গায় জমিজমা কি অপ্রতুল? অনেক ঝড় ঝাপটা বিশেষ করে সাড়ে চারশো বছর আগের বিধ্বংসী ভূমিকম্প, ১৯৯২-১৯৯৫ সালের গৃহযুদ্ধ – এই সব সামলেও দুব্রভনিক একবারে পিকচার পোস্টকার্ডের শহর। কাশীকে হার মানানো সরু সরু গলি। সেখানে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানিরা। চলমান জনতার স্রোত। সকল ইউরোপীয় ভাষা শোনা যায়! স্ত্রাদুন নামক ৩০০ মিটারের সদর পথে হাঁটলে মনে হয় একটা রূপকথার ভেতরে ঢুকে পড়েছি স্বপ্নে। ঘুম ভাঙলেই হয়তো দেখব লন্ডন টিউবে বসে আছি! ... ...
জাগ্রেবের দুই শিল্পী, অলিঙ্কা ও দ্রাঝান একদিন অনুভব করলেন তাঁদের কণ্ঠে জড়ানো গভীর ভালবাসার মন্দার মালিকা ম্লান হয়ে এসেছে – এবার কি খেলা ভাঙার খেলা? ভালবাসার স্বর্গ হতে বিদায় নেওয়ার কাল আসন্ন হলে দ্রাঝান বলেন, “আচ্ছা, আমাদের এই চারটে বছরের প্রেমের, এক অন্তহীন খুশির দিনগুলির স্মৃতি কি হারিয়ে যাবে? তুমি আমি একসঙ্গে হয়তো কিছু কিনেছি, ছবি এঁকেছি তোমার। ভোলার পালা শুরু হলে এই ছবি, ওই পেয়ালা তারা কি চলে যাবে জঞ্জালের স্তূপে?” ... ...
শিয়ারশোলের ইশকুলে যখন ভর্তি হলুম, কাজি বলতে থাকে, তখন আমার কবিতা নজরে পড়ল হেড স্যর নগেন্দ্রবাবুর। তিনি মাঝে-মাঝেই আমার কবিতার খাতা দেখতে চাইতেন; দেখে, ছন্দ-টন্দ নিয়ে খানিকটা আলোচনাও করতেন। মাঝে মাঝে এক-আধটা শব্দ এক-আধটা লাইন বদলিয়ে দেবার উপদেশও দিতেন স্যর। তিনিই স্কুলের আর একজন মাষ্টারমশাই, সতীশবাবু স্যর, সতীশ কাঞ্জিলাল – শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা করতেন তিনি নিয়মিত – তাঁর কাছে আমার কথা বলেছিলেন। কাঞ্জিলাল স্যর আমাকে তাঁর বাড়ীতে নিয়ে গেছেন অনেকবার। তাঁর কাছে সঙ্গীতের গোড়ার কথা কিছু কিছু শিখেছি। ... ...
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপের ভয়াবহ ধর্মযুদ্ধে আশি লক্ষ মানুষ (ইউরোপীয় জনসংখ্যার দশ শতাংশ) মারা যান। সে সময়ে ক্যাথলিক ক্রোয়েশিয়ার সৈন্য ফরাসিদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বিধর্মী প্রটেস্টান্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আজকের বিচারে ভাড়াটে সৈন্য কিংবা রাশিয়াতে এই ভাগনারের মতন মারসিনারি হিসেবে। ফরাসি সমর বাহিনির পোশাক পরার অধিকার তাদের নেই - যুদ্ধক্ষেত্রে তারা নামে নিজেদের ইউনিফরম পরে আর গলায় রঙ্গিন রুমাল বেঁধে,আমাদের যুবাকালে দেব আনন্দ যেটাকে স্টাইলে পরিণত করেছিলেন! রুমাল বাঁধার ফলে জ্যাকেটের ওপরের বোতাম থাকে টাইট, সেটি কারণে অকারণে খুলে গিয়ে অস্ত্র চালনায় বাধা সৃষ্টি করে না – এই তাদের ভাষ্য। ... ...
প্রায়-তিরিশের কাজি যেন সদ্য-প্রেমোন্মত্ত কিশোর। পরের দিন সকালেই কৃষ্ণনগর, আর সেই বিকেলেই আবার চিঠি লিখতে বসে কাজি। এবার আর কোন কাব্যিক ব্যঞ্জনা ছল-চাতুরী নয়; স্পষ্ট ঘোষণা, সে ডুবেছে। প্রেমোন্মাদের চিরকেলে বিলাপের মতোই এই তিরিশ-ছুঁই-ছুঁই নব কিশোর যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করে প্রিয়াকে লিখতে পারে না সোজাসুজি; মোতাহারকে লেখে, এ চিঠি শুধু তোমার এবং আর একজনের। একে secret মনে করো। আর একজনকে দিও এই চিঠিটা দুদিনের জন্য। ভাবা যায়! ... ...
দাল মে কুছ কালা হ্যায় যারা বলেন তাঁদের আমরা সামগ্রিকভাবে বংশীবাদক—হুইসলব্লোয়ার—আখ্যা দিয়ে থাকি, যুগে যুগে তাঁদের দেখা পাওয়া গেছে। খুব কম ক্ষেত্রেই তাঁদের কথা মানুষ শুনেছে। তবে এক্ষেত্রে বাজারি কানাকানির ভিত্তিতে মিউনিকের টনক নড়ে। তাঁদের তাড়ায় অতি দ্রুত রিয়েচকা বাঙ্কার তদন্তকারি অফিসাররা খাতাপত্র দেখে আবিষ্কার করলেন সব্বোনাশ, এডুয়ার্ড নদিলো বিগত চার বছর (১৯৯৮ থেকে) ডলারের দামের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফাটকা খেলেছেন। অনেক লোকসান লুকিয়ে রেখেছিলেন বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রার ব্যাবসায়ের আবরণে—তাঁর বসেরা টের পাননি। ... ...
নাসির সাহেবের ভাষায়, “ধর্মের নামে যে সমস্ত ভণ্ড সমাজহিতৈষী কথায় কথায় বিরুদ্ধবাদীদের কাফের ও ইসলামের শত্রু আখ্যা দিয়ে সমাজের অশিক্ষিত জনসাধারণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছে, নানা তহবিলের সৃষ্টি করে যে সমস্ত প্রবঞ্চকের দল সে সব তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করে সম্পত্তি ক্রয় করছে, ঐ সব ধর্মব্যবসায়ীদের ভণ্ডামির মূলোৎপাটনই সওগাতের উদ্দেশ্য।” ... ...
হলফ করে বলতে পারি নিজের চোখে দেখা—কনটিনেন্টাল ব্যাঙ্ক ফ্রাঙ্কফুর্টের অফিসার জামিনদাতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পরে তাঁর বিবরণীতে (কল নোট) লিখছেন: “আমাদের দীর্ঘ মধ্যাহ্ন ভোজনের শেষে, কফি পান করার সময়, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সি-ই-ও জামিনদাতা—হের ফিশার—বললেন, তাঁরা এই কোম্পানির সমর্থনে আছেন ও থাকবেন”। তখন ঠিক কটা বাজে, কোন দিন, কফির আগে না পরে এই রূপ আশ্বাসবাণী দেয়া হয়েছিল, তার ফিরিস্তি দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল কে জানে। জার্মানি ছেড়ে আসার আগেই এই আশ্বাসবাণী যে ঋণ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি, তার বহুত নমুনা দেখে এসেছি। ... ...
কারা টাকার অ্যানাউন্স করেছিল ওই ছিন্নভিন্ন শরীরগুলোর পিছু। কাদের ভোট পাওয়ার আশা ছিল ওই লাশগুলো দেখিয়ে। এই আশপাশের ভিড়ের ভেতর কোন মুখগুলোর যেন চাকরি পাওয়ার আশা জেগেছিল ওই লাশ সাজানোর মঞ্চের মাইকের ঘোষণা থেকে। চাকরি হবে কি হবে না! আর হল না বোধহয়। ভেবেছে তারা অনেকদিন। যাদের লাশের কথা বলা হয়েছে তারা অনেকেই ছিল পরিবারের রোজগেরে। রোজগেরে মানুষের না থাকায় বে-রোজগেরে বাচ্চারাও কীভাবে রোজগার করে বেঁচে গেছে। লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত ভোট পার হয়ে গেছে। আসল ভোট, ছাপ্পা ভোট মিলে ভোট কাউন্টিং হয়ে জিতে গেছে। তারিখ-সন পার হয়ে গেছে। চাকরি হয়নি। ... ...
কলকাতায় রাজরাজেশ্বরী মন্দিরে কোন ধর্মীয় মিছিলকে উপলক্ষ করে শুরু হয়ে গেল হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। কলকাতার সঙ্গে কাজির নিত্য-যোগাযোগ, দাঙ্গার খবরে বিপর্যস্ত সে। এবারের সম্মেলন উপলক্ষে সে যে উদ্বোধন সঙ্গীত রচনা করল – পরে সেই সঙ্গীত বিশ্বখ্যাত হয়েছে, সুভাষচন্দ্র সদর্পে বলেছেন, আমরা জেলেই থাকি বা জেলের বাইরে, এই গান আমাদের সব সময় উদ্দীপিত করবে, সব সময় এই গান আমরা গাইব। লিখেই তার বন্ধু দিলীপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে, একটা গান লিখেছি, স্বরলিপি পাঠাচ্ছি তোমায়। এখনকার এই দাঙ্গার সময়ে, এই গান আমরা দুজনে একসঙ্গে গাইব এবারের প্রদেশ কংগ্রেসের উদ্বোধনে: দুর্গম গিরি কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার। ... ...
আগাথা ক্রিস্টির মার্ডার অন দি ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (অ্যান্ড দেয়ার ওয়্যার নান—যা থেকে হিন্দি ছবি গুমনাম—এর পরেই সবচেয়ে জনপ্রিয় রহস্য উপন্যাস) যাঁরা পড়েছেন, অবিলম্বে এই দৃশ্যটি চিনতে পারবেন। প্রথম চলচ্চিত্র ভার্শনটি (১৯৭৪) দেখেছিলাম—তাতে মেগাস্টার কাস্ট: আলবার্ট ফিনি (যাঁকে আগাথা ক্রিস্টি এরকিউল পোয়ারোর চরিত্রে একেবারে পছন্দ করেননি), শন কোনারি, জন গিয়েলগুড, ইনগ্রিড বেরগমান, ভেনেসা রেডগ্রেভ, জ্যাকেলিন বিসে এবং আরও অনেকে। পরে জেনেছি গার দে লেস্ত, প্যারিস থেকে বাইশশো কিলোমিটার দূরের ইস্তানবুলগামী ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ইউরোপের পয়লা দূরপাল্লার ট্রেন। সময় লাগত তিন দিন। সেকালে খুব কম ট্রেন তার আপন দেশের গণ্ডির বাইরে গিয়ে স্টিমের ধোঁয়া ছেড়েছে। ... ...
খিলাফত আন্দোলনের ব্যর্থতার পর হিন্দু-মুসলমানের উদ্বায়ী প্রীতিভাব এখন ক্রমহ্রাসমান, মালাবারে নায়ার জমিদার হত্যা এবং ধর্মান্তরকরণের খবর আসছে, এই সময় সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পের সংক্রমণ রোধ করাই সবচেয়ে জরুরী। ডাক পড়েছে বাঁকুড়ায়। সেখানে ক্রীশ্চান কলেজের খদ্দরপরিহিত অধ্যক্ষ সস্ত্রীক ব্রাউন সাহেব বিপুল-সংখ্যক ছাত্রদের সঙ্গে রেলস্টেশনে এসে অভ্যর্থনা জানালেন কাজিকে। ছাত্রদের অভ্যর্থনাজনিত চন্দনচর্চিত নজরুল কামালপাশা আবৃত্তি করে হৃদয় জয় করল তাদের। তারপর গঙ্গাজলঘাঁটি। এখানকার জাতীয় বিদ্যালয়ের অমর নামের এক স্বেচ্ছাসেবকের স্মৃতিতে অমর-কানন নামে এক আশ্রমের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, নজরুল উদ্বোধন করল সেই আশ্রমের। ... ...
উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গের আকাশে লাশগুলোর ওপর ভোর থেকে বিকেলে তিনদিন ধরে সূর্য ছিল নানা পজিশনে। কালো প্লাস্টিকের ভেতর শুয়ে থাকা আধপোড়া, বেশি পোড়া, ঠান্ডা ঠান্ডা লাশগুলোর শরীর হয়ে উঠছিল গরম। কখনও রাতের অন্ধকারে কালো-কালো, উঁচু-নীচু, রোগা-মোটা প্লাস্টিকের উপর আধ-খাওয়া চাঁদের আলো এসে পড়ছিল। ভোররাতের দিকে আবার কিছুটা তাপ ছাড়ছিল ওই স্থবির শরীরগুলো। ঠান্ডা আস্তে আস্তে আরও বেড়েছিল। ... ...
জলে ঝাঁপাচ্ছে যে শিশুর দল, তাদের কেউ প্রশ্ন করে তার পরিচয় কী? সে বসনিয়াক না সার্ব না ক্রোয়াট? জিজ্ঞাসে কোনজন? পথের দু-পাশ সবুজে ভরে আছে। আকাশ কী উজ্জ্বল! বিশ বছর আগে এই রাস্তায় দেখা গেছে ট্যাঙ্কের সারি, জ্বলন্ত বাড়ির আড়ালে আড়ালে স্নাইপারের ছায়া, কখনো আকাশে সারবিয়ান বোমারু বিমান, কোনো বাড়ির উঠোনে বসে সেই বিমানের দিকে বন্দুক তাক করছে এক যুবক। সারি সারি দেহকে একই সঙ্গে গোর দেওয়া হচ্ছে, কোথাও ক্যাথলিক কোথাও অর্থোডক্স ক্রসের নিচে। দু-হাত দূরে মুসলিম মাজার। এই সেদিন। ... ...
বৈশাখ মাসের ভারতীতে নজরুল ইসলাম লিখল বিদ্রোহী বাণী নামে এক কবিতা। লোকের মুখে মুখে এই কবিতা প্রচার হয়ে এমন আবেগের সৃষ্টি করল যে সত্যাগ্রহের উদ্বোধনের দিন মাঠে আর লোক ধরে না। আন্দোলনের উদ্বোধনের দিন সকাল থেকেই মন্দির-সংলগ্ন বিশাল মাঠে জনসমাগম। আর সেই সমাগমকে ঘিরে আছে সত্য ও তার দলবল। কর্তৃপক্ষের সঙ্কেত পেলেই শুরু হবে নিধনযজ্ঞ। নির্দিষ্ট সময়ে কাজির দিকে তাকিয়ে দেশবন্ধু বললেন, সত্যাগ্রহ শুরু হোক কাজির উদ্বোধন সঙ্গীত দিয়ে। দৃপ্ত কণ্ঠে কাজি গান ধরে।লাঠিয়ালরা প্রস্তুত। সঙ্কেতমাত্র ঝাঁপিয়ে পড়বে। মন্দিরের পাশেই এই গান! এ কি ভাবা যায়! এই মঞ্চেরই এক কোণে দাঁড়িয়ে সত্য নিজে, নীরব। অনেকগুলো চোখ তার দিকে। গান শেষ হলে সে বলে, কাজি, আর একবার গাও। ... ...
বিংশ শতাব্দীর শুরু ও শেষ এইখানে। সারায়েভোতে। গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের পিস্তলের গুলি—দুটি নয়, বহু কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। খুন কা বদলা খুনের খেলা শুরু হল — চলবে গোটা শতাব্দী জুড়ে। ইতিহাসে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের স্থান বার বার পরিবর্তিত হয়েছে—কারো চোখে তিনি সন্ত্রাসবাদী, কখনো বা জাতীয়তাবাদের পুরোধা। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই সহিংস প্রতিবাদ যে ঘটনাচক্রের সূচনা করল, তা হয়তো বদলে দিয়েছে বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের ভবিষ্যতকে। ... ...
জেল থেকে বেরিয়ে অবধি কাজির মনে পড়ছে দুলির কথা। সমস্তিপুর থেকে কুমিল্লায় ফিরেই গ্রেপ্তার হয়েছিল ও। সে সময় মাসিমাকে ও বলে এসেছিল, ছাড়া যখনই পাব, চলে আসব আমি, সে যতদিনেই হোক না কেন। কাগজ-পত্রে জানতে পারবেন সবই। দুলিকে বলবেন, ওর জন্যে আমি অপেক্ষা করে থাকব। দুলি অপেক্ষা করে আছে, ওকে যেতেই হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ... ...
এখন ২০২২ শেষ হয়ে ২০২৩। মাল্টিন্যাশনাল ফোনের কোম্পানি ফোনে কথা বলার ফ্রিডম প্ল্যানের বড় বড় ফ্লেক্স হোর্ডিং করে। শহর মুড়ে দেয় ফ্রিডম প্ল্যানের বিজ্ঞাপনে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ঘোষণা করে। সেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া থেকে লেবার হয়ে চলে যায় অসংখ্য মানুষ দেশ ছেড়ে। কী কাজে যাচ্ছে—বেশিরভাগের জানা থাকে না। যাদের কথা বলা নিষেধ হয়। যাদের বাড়ি ফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। যাদের ইচ্ছেমতো মারা যায়। ইচ্ছেমতো শাস্তি দেওয়া যায়। দেশ থেকে যাদের খোঁজ রাখা হয় না। ভোটার লিস্টে নাম থাকা এই মানুষগুলোর নামের পাশে ভোট পড়ে যায়। ... ...
মনে হল, হঠাৎ কী যেন একটা মজার প্রসঙ্গ এসে পড়ল এই ভাঙাচোরা উঁচুনীচু ভাগীরথীর পলি দিয়ে গড়া পাড়াটাতে। চারিদিকে বাকি দর্শকেরাও হাসতে শুরু করল। পুরুষ-মহিলা কন্ঠে নানারকম হাসি। হঠাৎ মনে হল ষাট-বাষট্টির আনিকুল যেন বাচ্চা একটা ছেলে। যেন আনিকুলের টিফিন টাইমে ইস্কুল পালানো বা রাগী স্যারের টিউশন থেকে প্রেম করতে পালানোর মতো বেশ একটা মজার ব্যাপার নিয়ে এক্ষুনি কথা হচ্ছে। ছেলেটা খিক খিক আওয়াজ করে হাসতে হাসতেই বলে চলেছে, পালাতে নিয়েছিল তো কয়বার! পেরেছে নাকি! পেরেছে নাকি! ... ...
সারি মস্ত আবার তৈরি হয়েছে – কিন্তু সে কি পারে মানুষকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনতে? তিন বছরের গৃহযুদ্ধ বিনষ্ট করেছে পাঁচশো বছরের সহাবস্থান। ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলেমেয়েরা একই স্কুলে যায়, কিন্তু আগের মতো এক ঘরে একই ক্লাসে বসে না: সিলেবাস এক, ভাষা এক। কিন্তু ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলে মেয়েদের স্কুলে ঢোকার গেট আলাদা – মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। ক্লাসরুম আলাদা। এক নতুন বৈষম্য। ... ...