রোজিকে পালাতেই হত। চোদ্দ বছরের বিবাহিত জীবনে নর্মান তাকে শুধুই শারিরীক অত্যাচার করেনি। ধর্ষণ করা, কয়েকটা দাঁত ফেলে দেওয়া (যার একটা আবার রোজি গিলেও ফেলেছিল) অথবা কিডনি নষ্ট করে দেওয়া বা একবার লাথি মেরে গর্ভপাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না নর্মানের অত্যাচার। নর্মান ধীরে ধীরে তাকে এটা বুঝিয়ে দিচ্ছিল যে এটাই রোজির নিয়তি। কারণ সে একটা মেয়ে। তার শক্তি নেই এই অত্যাচার কেটে বেরোবার। এই মানসিক নিষ্ক্রিয়তা পুরোপুরি চেপে বসবার আগেই রোজ ড্যানিয়েলসকে পালাতে হত। নাহলে সে একদিন শরীরে এবং মনে বিকলাংগ হয়ে যেত।
< ... ...
তারপর একদিন আমরা জেগে উঠি দীর্ঘ নিদ্রার পর। রূপকথার মতো, নারীর মতো, প্রেমের মতো সেইসব প্রথম ভোরের আলোয় সত্যের মুখ দেখা যায়। সেই অনাস্বাদিত ভোরবেলায় আমি ফিরে আসি গন্তব্য ছেড়ে, লাস্ট ট্রেন মিস করে নিজের শিকড়ের কাছে। সে আমার নিজস্ব মাকন্দো। আমার দক্ষিণ কলকাতা। প্রথম প্রেমের মত যাকে লুকিয়ে রাখতে হয় টেস্টপেপারের পাতার ভাঁজে। সেই প্রেম তাত্বিকতার খবর রাখে না। তা ছিল নিতান্তই সমর্পণ। তাতে সরলতা ছিল।
আমরা যারা গদার বর্ণিত মার্ক্স ও কোকাকোলার সন্তান, তাদের নব্বই দশকের প্রেমে তুমু ... ...
ম্যাজিক রিয়ালিজম নিয়ে প্রশ্ন করাতে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ একবার বিরক্ত হয়ে উত্তর দিয়েছিলেন “ম্যাজিক আবার কি? ইউরোপীয়ানদের কাছে যেটা ম্যাজিক রিয়ালিজম আমাদের কাছে সেটাই বাস্তবতা। আমাদের বাস্তবতায় ঝড়ে একটা গোটা সার্কাস উড়ে গিয়ে আমাজন নদীতে পড়া অথবা তিনমাথা ওয়ালা শিশুর জন্ম নেওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। আপনারা বুঝবেন না”।
কলকাতায় নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা, জলাজমি বুজিয়ে ফেলা, জংগুলে জমি ভরাট করে রিয়েল এস্টেটের অশ্লীল মাথা তোলার প্রতিবাদে যদি আমার মনে হয় প্রকৃতি আস্তে আস্তে দখল নিয়ে নিচ্ছে আমার ... ...
টি-২০ আসার পর ক্রিকেট দেখা সম্বন্ধে সব উৎসাহ হারিয়ে গেছে। কাল যে ইডেনে ম্যাচ ছিল সেটাও কাল দুপুরবেলা জেনেছি। কিন্তু ইডেনের ম্যাচ থাকলেই আমার ১৯৯৬ সালের এক বিকেলের কথা মনে পড়ে যায়। তখন আমি ১৪, এবং ভারতের যে কোনো টেস্ট ম্যাচ হলেই টিভির সামনে বসে যেতাম বাধ্য ছাত্রের মত। মায়ের বকাবকি পরীক্ষার চাপ সব কিছু অগ্রাহ্য করেই।
টেস্ট-ম্যাচটা ছিল ইন্ডিয়া বনাম সাউথ আফ্রিকা্র। আমার ম্যাচটার কথা মনে আছে হ্যান্সে ক্রোনিয়ের জন্য। সেই ম্যাচে ক্রোনিয়ে খুব খারাপ খেলেছিলেন। ফার্স্ট ইনিংসে সম্ভবত দশের নিচ ... ...
যখন কার্গিল যুদ্ধ বাঁধে আমি তখন সবে মাধ্যমিক দিয়েছি। কিন্তু মাঝেমাঝে এটা ওটার কারনে স্কুলে যাই। সেই সময় যুদ্ধের ফান্ড বিষয়ে স্কুলে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সরকারী স্তর থেকে না হলেও সম্ভবত শিক্ষকেরা নিজেরাই এগিয়ে এসেছিলেন এবং ছাত্রদের কাছে আবেদন করেছিলেন ডোনেট করতে। আমি টাকা দিইনি। না, সেই বয়েসে দেশদ্রোহ যুদ্ধোন্মাদনা এসব ভারী ভারী চিন্তার বশবর্তী হইনি। দিইনি, কারণ বাবা যে কুড়ি বা তিরিশ টাকা দিয়েছিলেন সেটা আমি নিজেই সরিয়ে ফেলেছিলাম বিড়ি-সিগারেট খাব বলে।
যে শিক্ষক ইনিশিয়েটিভটা নিয়ে ... ...
এই জে এন ইউ কাণ্ডের সময় ফেসবুকে এখানে ওখানে কিছু লেখা লিখেছিলাম। পাইদি বলল সব একজায়গায় করে তুলে রাখতে। তো রইল।
**********************************************
সত্যজিৎ রায় মারা যাবার পর পশ্চিমবংগ সরকার থেকে ওনার ওপর একটা বিশেষ সংখ্যা করা হয়েছিল। সেখানে একটা লেখায় উৎপল দত্ত একটা ইন্টারেস্টিং গল্প শুনিয়েছিলেন। যখন হীরক রাজার দেশে শুটিং হচ্ছে, উৎপল দত্ত-র প্রথম দিনের শুটিং-এ কয়েকটা ডায়ালগ থ্রো করার পর মাণিকবাবু ওনার কানে কানে বললেন “উচ্চারণে একটু গ্রাম্যতা আর অশিক্ষার ছাপ আনো। ‘করেছিল’ ন ... ...
সময়টা ছিল ২০০৩-এর ডিসেম্বর অথবা ২০০৪-এর জানুয়ারি। আমি তখন একুশ এবং কলেজের ফাইনাল ইয়ার। কলেজ থেকে পিকনিকে গেলাম আমরা ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা দল বেঁধে। জায়গাটা ছিল বাটানগর ছাড়িয়ে গংগার ধারে এক মরে যাওয়া টাউনশিপ, যেখানে কোনো এক সময়ে একটা কারখানা ছিল এবং তাকে ঘিরে লোকালয়। এখন শীতকাল, এখানে সন্ধ্যে নেমে যায় সকাল হতে না হতেই, এবং সারা অঞ্চল জুড়ে একটা কালচে কুয়াশার চাদর।
সেই মৃত জনপদ আসলে গোটা কারখানা জুড়েই। তার বড় রাস্তার পাশে বন্ধ কোয়ার্টারের সারি, তার ভাংগা দেওয়াল জুড়ে বর্ষার ড্যাম্প, নিঃঝুম পানে ... ...
প্রতিবছর শীতকাল পড়লেই অবধারিতভাবে চোখে ভেসে ওঠে আমার পাড়া থেকে এক কিলোমিটার দুরের সিরিটি শ্মশানের ছবি। মনে পড়ে যায় তার কারণ এখানে এক ডিসেম্বরের সন্ধেবেলায় আমি প্রথম লাশ দেখেছিলাম। পুড়তে নয়, ভেসে যাচ্ছিল আদি গংগার গা বেয়ে। তখন কুয়াশা জড়ানো সন্ধ্যে। দুই পাশের মেয়ে বউরা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে বলছিল “আহা গো, কার বডি?” লাশ “আমি স্বেচ্ছাচারী” বলেছিল কি না খবরে প্রকাশ নেই।
বস্তুত আমাদের পাড়ায় এই জীবিত মৃতের কথোপকথন, কুয়াশার মনোরম মনোটনাস ম্যাজিক মোমেন্ট, রহস্য কথকতা প্রবাদ এসব জিনিস শুরু হয়ে যায় সত্তর ... ...
খাটের ডিভান আমার কাছে সর্বদাই একটা ম্যাজিক প্লেস ছিল যেখানে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে লুকিয়ে রাখা যেত নিজের সমস্ত সিক্রেট। আমার সেমেট্রি অফ ফরগটেন বুকস ছিল আমার খাটের ডিভান। গত কুড়ি বছর ধরে নিজের প্রত্যেকটা দিন একটু একটু করে রেখে দিয়েছিলাম ওখানে। কাল খাট শিফট করার সময় যখন ডিভান খোলা হল বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। মনে হল এক মৃত সভ্যতার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যে বই খাতা হারিয়ে গেছে, মরে গেছে-সেই সব নিভে যাওয়া দিনগুলোকে কবর দিয়ে রেখেছিলাম ওখানে। একে একে বেরতে থাকল সবকিছু। মার্সেল প্রুস্ত বলতেন তাঁর পুরনো দিনের কথ ... ...
বাংলাদেশে ব্লগার হত্যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন কেন লিবারালেরা হিন্দু মৌলবাদ নিয়ে যত সরব মুসলিম মৌলবাদ নিয়ে নয়। এখানে অনেকে বলেছেন যে সেই সেলফ প্রোক্লেমড লেফট লিবারালেরা নাকি খুনেদের অ্যাপলজিস্ট। এই প্রসংগে চাড্ডী (অন্য অর্থে নয়, মানে খান চারেক) কথা।
অনেকে, মানে শুধু চাড্ডীরাই নয়, অনেক লিবারাল প্রগতিশীল মানুষেরাও প্রশ্ন তুলেছেন যে সেকু-মাকুরা হিন্দু মৌলবাদ নিয়ে যতটা সরব মুসলিম মৌলবাদ নিয়ে কেন ততখানি নয়। এর উত্তরে বলার, খুব স্বাভাবিক কারণেই মুসলিম মৌলবাদ নিয়ে সরব হওয়া উচিত নয়। এক তো ভারত ... ...