- 'দ' য়ের হইল মাথায় ব্যথা। দাদু শ্লেটে চক পেনসিল দিয়ে একটা বড় করে 'দ' আঁকলেন। -- চন্দ্র আইলেন দেখতে। এবার দ'য়ের পাশে একটা চন্দ্রবিন্দু আঁকা হল। -- তাইন দিলেন বাইশ টাকা। দাদু দয়ের পেটের নীচে বিচ্ছিরি করে ২২ লিখলেন। ... ...
এই গাঁয়ে ‘কানা’ বোলে তো পন্ডিত রাধেলাল। ওর একটা চোখ অন্যটির চেয়ে ছোট, তাই ‘গঁজহা’র দল ওকে কানা বলে ডাকে। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য হল- এক হিসেবে আমাদের সবকিছুই প্রাচীন ঐতিহ্য — কেউ বাইরে, মানে অন্য রাজ্যে, যাবে তো কথায় কথায় বিয়ে করে নেবে। অর্জুনের সঙ্গে চিত্রাংগদা আদি উপাখ্যানে তাই হয়েছিল। ভারতবর্ষের প্রবর্তক রাজা ভরতের পিতা দুষ্যন্তের সঙ্গেও তাই। যারা আজকাল ত্রিনিদাদ কি টোবাগো, বর্মা কি ব্যাংকক যাচ্ছে তাদের সঙ্গেও ঠিক ওইসব হচ্ছিল। এমনকি আমেরিকা বা ইউরোপে গেলেও একই হাল। সেই হাল হল পন্ডিত রাধেলালের। ... ...
আমাদের সেই পঞ্চাশের দশকে অক্ষর পরিচয় হতেই ধারাপাত নামের একটা লম্বাটে পাতলা বই খুলে এইসব শুভংকরের আর্যা আর কড়া-গন্ডা-পণ জোরে জোরে দুলে দুলে মুখস্থ করতে হত। "কুড়োবা কুড়োবা কুড়োবা লিজ্জে, / কাঠায় কুড়োবা কাঠায় লিজ্জে। / কাঠায় কাঠায় ধূল পরিমাণ, / বিশগন্ডা হয় কাঠার সমান।" ... ...
কোপারেটিভ ইউনিয়নের তবিল-তছরূপের ঘটনাটি বড্ড সাদামাটা ঢঙের, বড্ড সরল। রোজ রোজ চারদিকে যে শত শত তছরূপ হচ্ছে তার থেকে এ একেবারে আলাদা। এর সৌন্দর্য্য এর সরলতায়। এ একেবারে বিশুদ্ধ তছরূপ; কোন প্যাঁচ নেই। এতে কোন জাল দস্তখতের গল্প নেই, না কোন জালি হিসেব, না কোন নকল বিল দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।এমন তছরূপ করতে বা ধরে ফেলতে কোন টেকনিক্যাল যোগ্যতার দরকার নেই। যা দরকার তা’হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ... ...
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পার্কসার্কাসের ধাঙড় বাজারের সার্কাস হোটেল। সামনের ফুটপাথে একটা হাইড্রেন, তার থেকে মুখ খুলে হোসপাইপ লাগিয়ে কর্পোরেশনের লোক রোজ ভোরে রাস্তা ধুয়ে দেয়। সময়টা যে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি। তোড়ে যে জল বেরিয়ে আসে তা কিন্তু গঙ্গার ঘোলা জল, আর ফুটপাথে থেকে তিন ধাপ সিঁড়ি ভেঙে বারান্দায় উঠলেই খোলা উনুন বসানো। সেখানে ঝকঝকে শিকে গেঁথে পোড়ানো হচ্ছে মশলা মাখা লালচে হলুদ রঙের মাংসের টুকরো। তৈরি হচ্ছে শিককাবাব। তার পাশেই দু'জন ময়দা মেখে লেচি বানিয়ে সেঁকছে রুমালি রুটি আর ভেজে তুলছে পরোটা। ... ...
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কোলকাতার ছবির কোলাজ, ব্যক্তিগত স্মৃতির টুকরো। ইতিহাস হওয়ার দায় নেই। ... ...
দেখতে দেখতে চার-পাঁচ দিনেই সারা দুনিয়া ববাসীরের বাজি রেখে সারিয়ে তোলার দম্ভের সামনে নতজানু হল।চারদিকে ওই বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। রঙ্গনাথ হতভম্ব, একই বিজ্ঞাপন একটি দৈনিক খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে! কাগজটি রোজ সকাল দশটা নাগাদ শিবপালগঞ্জে পৌঁছিয়ে লোককে জানান দেয় যে স্কুটার ও ট্রাকের সংঘর্ষ কোথায় হয়েছে, আব্বাসী নামক তথাকথিত গুন্ডা ইরশাদ নামের কথিত সব্জিওলাকে তথাকথিত ছুরি দিয়ে কথিত রূপে কোথায় আঘাত করেছে। ... ...
শিবপালগঞ্জ গাঁ বটে, কিন্তু বসেছে শহরের কাছালাছি বড় রাস্তার ধারে। অতএব বড় বড় নেতা ও অফিসারকুলের এখানে আসতে কোন নীতিগত আপত্তি হওয়ার কথা নয়। এখানে শুধু কুয়ো নয়, টিউবওয়েলও আছে। বাইরে থেকে দেখতে আসা বড় মানুষেরা তেষ্টা পেলে প্রাণসংশয় না করেই এখানকার জল খেতে পারেন। এইসব ছোটখাট অফিসারের মধ্যে কোন না কোন এমন একজন দেখা দেন যে তাঁর ঠাটবাট দেখে স্থানীয় লোকজন বুঝে যায় যে এ এক্কেবারে পয়লা নম্বরের বেইমান। ... ...
দূরবীন সিংযের একটি বৈশিষ্ট্য হল উনি কখনও কারও ঘরে সিঁদ দিতেন না, সোজা পাঁচিল টপকে ঢুকতেন। উনি সুযোগ পেলে যেকোন রাজ্যে পোলভল্ট চ্যাম্পিয়ন হতে পারতেন। গোড়ার দিকে টাকাপয়সার টানাটানি হলে কালেভদ্রে পাঁচিল টপকাতে যেতেন। পরের দিকে এ’ধরণের কাজকম্মো কখনো সখনো শুধু নতুন চ্যালাদের প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং দেবার জন্যে করতেন। সে যুগে চোর শুধু চোরই হত, আর ডাকাতেরা ডাকাত। ... ...
ছাতের কামরাটি সংযুক্ত পরিবারের পাঠ্যপুস্তকের মত সবসময় খোলা পড়ে থাকে। ঘরের কো্নে একজোড়া মুগুর, মানে সরকারিভাবে ঘরটার মালিক বড়ছেলে বদ্রী পালোয়ান। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরাও নিজেদের ইচ্ছেমত ঘরটার ব্যবহার করে থাকে। মহিলারা নানান কিসিমের কাঁচের বয়াম ও মাটির পাত্রে নানাধরণের আচার ভরে ছাতে রোদ খাইয়ে বিকেল হবার মুখে ঘরটার মধ্যে ভরে দেন। ছাতে শুকুতে দেয়া কাপড়চোপড়েরও একই হাল। ... ...