একেই মন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে, তারপরে যাচ্ছেতাই রকমের ঠান্ডা পড়েছে! রাত পৌনে এগারটা বাজে, বিছানায় বসে একটা চিঠি লিখছি, সেটাও লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে। বাইরে কনকনে হাওয়া ঝাপটা দিয়ে যাচ্ছে। “ইস্পাত শীতল” বলে একটা কথা বইতে পড়েছি, সেটা বোধ হয় এই রকমই কিছু। চেকভ লিখেছিলেন, “মন যখন খুশি থাকে তখন লোকে খেয়ালও করে না শীতকাল চলছে, না গ্রীষ্ম।” তা লিখুন, মহামানবরা অমন অনেক কিছু লিখে টিখে থাকেন, যেগুলোর কোটেশন ছাড়া অন্য কোনও ব্যবহার নেই সাধারণজনের কাছে (এই যেমন আমি দিলাম)। ... ...
একা একা আধো অন্ধকারে বসে ভূতের কথা ভাবতে শাস্ত্রের নিষেধ আছে। তাই মোমের আলোতেই বুদ্ধদেব গুহর ‘সবিনয় নিবেদন’ বইখানা নতুন করে পড়ে ফেললাম। বাঘ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি টাইপের ব্যাপার। মনের জঙ্গল আর বনের জঙ্গল বেশ মেশাতে পারেন ভদ্রলোক। মনে হল যদি কোনও জঙ্গল থেকে ঘুরে আসতে পারলে ভাল হত। আসলে রুটিন থেকে বেরোন আর কি। রেল লাইনের বাঁধা পথে চলতে চলতে বিরক্ত হয়েই কি কামরাগুলো মাঝে মাঝে লাফিয়ে বেডিয়ে আসে? বাপ রে, কী সাংঘাতিক উপমা! নিজেই আঁৎকে উঠলাম। ... ...
হাঁটতে হাঁটতে আসছিলাম, হঠাৎ দেখি নীল চোখ, সোনালী চুলের এক সাহেব ফুটপাথের দোকানে বসে চা বেচছে। গায়ে ময়লা হয়ে যাওয়া প্যান্ট-শার্ট, কালো জুতো আর ছেঁড়াখোঁড়া জ্যাকেট। হাতে সময় ছিল, এক গ্লাস চা চাইলাম, হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দিল সে। দেখলাম সাহেবের মুখের ফর্সা রঙ রোদে পুড়ে কিঞ্চিৎ বাদামী হয়ে গেছে। দোকানের মালকিনকে জিজ্ঞাসা করলাম, এনাকে কোথায় পেলেন তিনি। ... ...
আমরা সবাই – মানে ছ’জনই - তো পরীক্ষা আর রেজাল্টের মাঝখানে ঝুলে আছি। আমাদেরই এক জন যে আরও একটা ব্যাপারে দিল্লি আর কলকাতার মাঝে ঝুলে আছে তা আর কে জানত। আর সেই ঝুলে থাকা মানে টেনিদার ভাষায় ‘পুঁদিচ্চেরি’ – মানে ব্যাপার অত্যন্ত সাংঘাতিক । অফিসের একজন বলেই ফেললেন যে এটা একেবারেই ‘অবিশ্বাস্য’। একেবারে জীবন আর মৃত্যুর ব্যাপার, ‘লাভ’ আর লোকসানের ব্যাপার। ... ...
‘’আপকা পেমেন্ট হো গয়া স্যার,’’ কাউন্টারের ভদ্রলোক জানালেন। মানে ? কে করল আমাদের পেমেন্ট ? ভদ্রলোক যাঁকে আঙুল তুলে দেখালেন, তাঁকে আমরা অনেকক্ষণ আগেই দেখেছি বসে আছেন একটা সোফায়। উনিই হলেন অমুক বাবু। আমরা অবাক হয়ে এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে, উনি উঠে দাঁড়ালেন। একটু হাসাহাসি হল এই নিয়ে যে প্রায় পাশাপাশি আধ ঘণ্টা থেকেও আমরা কেউ কাউকে চিনতে পারিনি। পারার অবশ্য কথাও নয়, আমরা একে অন্যকে কোনও দিন দেখিনি। ... ...
আমার বা তথার বাড়ি ফেরার উপায় নেই, তবু মন পুলকিত, অকারণেই। কাশ ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ দুর্গা পুজো। শিউলি ফুল আশেপাশে কোথাও নেই, তবু যেন কোত্থেকে তার গন্ধ ভেসে আসে। হলই বা কাঠখোট্টা মহানগর দিল্লি, তবু মনের মধ্যে বাংলার কোনও এক চন্ডীতলায় সনৎ সিংহের গানের মত গুড়গুড় করে ঢাকের বাদ্দি বেজে ওঠে - জা গি না, তাক তা ধিনা তাক তা ধিনা, তাক কুড় কুড়, কুড়ুর কুড়ুর তাক… ... ...
‘ইয়াদ’ মানে স্মৃতি নিয়ে গাদা গাদা লেখা আছে (তাদের মধ্যে এক পিস আপনি এই মুহূর্তে পড়ছেন), হেব্বি ভাল ভাল কথা আছে (কে যেন বলেছিল – সময় বয়ে যায় এক দিকে, আর স্মৃতি হেঁটে চলে উলটো পথে), স্মৃতি হারানো এবং/অথবা ফিরে পাওয়া নিয়ে দারুণ দারুণ সিনেমা আছে (‘হারানো সুর’, ‘সদমা’, ‘মেমেন্টো’ যার থেকে হিন্দিতে হয়েছিল ‘গজনি’)। আর এই সবের বাইরে রয়েছে একটা কোটেবল কোট, যা নাকি বলেছিলেন অ্যাব্রাহাম লিঙ্কন – ‘কোনও পুরুষ মানুষেরই এত ভাল স্মৃতিশক্তি নেই যাতে সে একজন সফল মিথ্যেবাদী হিসেবে গণ্য হতে পারে’। ... ...
কে যেন ভেতর থেকে গেয়ে উঠল, ‘’তুমি সুখ যদি নাহি পাও, / যাও, সুখের সন্ধানে যাও।‘’ চলে গেলাম সন্ধান করতে, একা নই অবশ্য, তথাগতও সাথে ছিল। সোজা গিয়ে এক গাদা গোলগাপ্পা দিয়ে ডিনার সেরে ফেললাম, আর মাইরি বলছি, বিস্তর সুখ পেলাম। দিব্যি গালার এই ‘মাইরি’ শব্দটা কিন্তু মোটেই জল অচল নয়। ইঞ্জিরি ভাষায় ‘বাই মেরি’ থেকে এসেছে। যাই হোক, গোলগাপ্পা খেয়ে মনে নবীন আশার সঞ্চার হল, প্রাণে ফের পুলক জাগল, আর শরীরে বেশ বল পেলাম। মনে হল গোলগাপ্পার ওপরে একটা কবিতা লেখা উচিত। সুতরাং আমার কলম দিয়ে বেরিয়ে এল - ... ...
রাজসভায় সম্রাট ষোড়শ লুই (১৭৫৪-১৭৯৩)-এর বসার জায়গাটা আসলে ছিল টু-ইন-ওয়ান – একাধারে সিংহাসন এবং কমোড। হ্যাঁ, যা পড়লেন ঠিক তাই। এই তথ্য সরবরাহ করেছিল সুলভ ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ টয়লেটস, দিল্লির পালাম এলাকায়। সেখানকার গাইড মহোদয় আমায় আর তথাকে জানিয়েছিলেন মহারাজ আহার করিতেন নিভৃতে, কিন্তু ইয়ে মানে পেট খালি করতেন প্রকাশ্যে – প্রমাণ হিসেবে রয়েছে তাঁর সিংহাসন যার রেপ্লিকা রাখা আছে ওই মিউজিয়ামে। ... ...
সে যার যার সঙ্গেই মিল পান, মনে রাখবেন আতঙ্কবাদীদের চেষ্টা থাকে মূলতঃ নিরীহ সাধারণ মানুষ মেরে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা, লোকে বাড়ি থেকে বেরোতে, অফিসে ব্যবসার কাজে যেতে, বাসে ট্রেনে চড়তে ভয় পায়। এর জন্য বিস্ফোরন ইত্যাদির ফলে সরাসরি সম্পত্তি নষ্ট হওয়া ছাড়াও দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। সম্ভাব্য মারাত্মক ঘটনার জন্য লোক যে কত ভয় পেতে পারে তা দেখেছিলাম এক বার বাসে, তবে সে কথা পরে হবে। ভয় কাটিয়ে উঠতেই হয়, নইলে জীবন চলে না। এই যে জ্ঞান বিতরণ করছি, সেই আমিও কি ভীত হইনি ? হয়েছি, সুকুমার রায়ের ষষ্ঠীচরণ তো আর নই, নিরীহ বঙ্গপুঙ্গব, জোর ভয় পেয়ে গেছিলাম। তবে লাজপত নগরের বিস্ফোরনের জন্য নয়। দাদাঠাকুরের মত ‘পেট্রিয়ট’ কেস। ... ...