ফলত, এই ২০১১ থেকে আফগানিস্তানের দুর্গম গ্রামগঞ্জ ভরে যেতে শুরু করে খোঁড়া, কানা, বিকলাঙ্গ মানুষে। এছাড়াও মাটির নিচে জমতে থাকে লাশ। আর কচি কচি বাচ্চারা ফুঁসতে থাকে প্রতিশোধের আকাঙ্খায়। তালিবান এদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল। মার্কিন বাহিনীর প্রতিটি বন্দুকের গুলি, প্রতিটি খুন, প্রতিটি সম্পত্তি নষ্ট, প্রতিটি ড্রোন আক্রমণ, এভাবেই জন্ম দিতে থাকে আরও অনেক অনেক তালিবানের। তারা তখন লড়ছিল প্রতিশোধের লড়াই। আর মার্কিনীরা কোনোক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখছিল। ... ...
পরে অবশ্য জানা যায়, যে, হেলিকপ্টারে আদৌ মৃতদেহ ঝুলছিলনা। কান্দাহারের প্রশাসক-ভবনের পাশে লম্বা কিছু পতাকার খুঁটি ছিল। হেলিকপ্টারে ঝুলে একজন তালিবান কর্মী তাতে তালিবান পতাকা লাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা ব্যাপারটি জানান। পরে একটি ভিডিওও আসে। দুনিয়া জুড়ে সংবাদমাধ্যমের বিখ্যাত ব্যক্তিরা, যাঁরা খবরটি ছড়াচ্ছিলেন, তাঁদের কেউ-কেউ নিজেদের সামাজিক মাধ্যমে করা পোস্ট মুছেও দেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমগুলি, যারা সোৎসাহে খবরটি ছাপছিল, তাদের কাউকে সেভাবে ভুল স্বীকার করতে দেখা যায়নি। ... ...
অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র একবার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণায় লিখেছিলেন, যে, দিল্লির যোজনা কমিশনের সহসচিবকে তিনি বলেছিলেন, কলকাতা থেকে দিল্লি এলে তাঁর মনে হয়, গ্রাম থেকে শহরে এলেন। অস্যার্থঃ পশ্চিমবঙ্গ থেকে সম্পদ চুষে নিয়েই দিল্লি এবং পশ্চিমাঞ্চলের রমরমা। অশোক মিত্রের বর্ণনা অনুযায়ী সে বছর যোজনা কমিশনের অবশেষে পশ্চিমবঙ্গকে তার যথাযথ ভাগ দিতে সুপারিশ করে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সেই সুপারিশ খারিজ করেন। এ কোনো রাজনৈতিক স্লোগান বা লাইন নয়, কিন্তু মূল ন্যারেটিভটি ছিল এইরকমই। যা লোকে বিশ্বাস করত। ... ...
শিক্ষাচার্য বিদ্যুৎকুমার মধ্যাহ্নের দিবাস্বপ্ন দেখছিলেন। এমন সময় প্রধানসেবক এসে কাঁচুমাচু মুখে জানালেন -- চারদিকে কি লেখা হচ্ছে জানেন স্যার? বিদ্যুতের বড্ড তেজ করে দেব লো ভোল্টেজ। শুনে বিদ্যুৎকুমারের স্থির ভ্রূ কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হল। তিনি দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, লো-ভোল্টেজ? দেখাচ্ছি তোদের। যন্ত্রবিদ, ইধার আও। আজ থেকে গোটা বিশ্বভারতীতে সারা রাত গনগন করে আলো জ্বলবে। কোথাও কোনো আলো নিভলেই, তোমার চাকরি নট। ... ...
এই ন্যারেটিভের প্রথম লক্ষণ হল, আফগানিস্তানকে আফগানিস্তান বানানোর জন্য পাকিস্তান, চিন এবং কখনও সখনও দুষ্টু রাশিয়াকে দায়ী করা। আর আমেরিকাকে স্রেফ একটু ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করা। আমেরিকা আফগানিস্তানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাট করেছে, সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু উদ্দেশ্য তো ভালোই ছিল, গণতন্ত্রই তো গড়তে গিয়েছিল। মানুষকে ধর্মান্ধতা থেকে স্বাধীনতা দিয়েছিল, মেয়েদের দিয়েছিল ওড়ার আকাশ। কাইট রানার সেই পশ্চিমী স্বাধীনতার প্রতীক, মালালা হল মুখ। এখন আমেরিকার পিছিয়ে আসায় সে আকাশ ভেঙে পড়ে যাচ্ছে, এবার অ্যাসিড বৃষ্টি আসন্ন -- এরকম একটা ভাব। তো, এ ন্যারেটিভ এতই মোটাদাগের, এবং এতটাই অলীক, যে, আলাদা করে সমালোচনা করার এমনি কোনো কারণই নেই। তবু লেখা যখন হচ্ছে, তখন সংক্ষেপে, স্পষ্ট করেই বলা যাক, বাস্তবতা থেকে এসব অনেক দূরে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আফগানিস্তান হয়ে আরব পর্যন্ত মৌলবাদীদের উত্থানে সক্রিয় ভূমিকা, মদৎ ছিল কাদের তা কোনো গোপন তথ্য নয়। আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের প্রশিক্ষণ, সৌদি আরবের অগাধ কনট্র্যাক্ট, এবং তালিবানদের সঙ্গে চলমান আলোচনা, এসব নিশ্চয়ই গণতন্ত্র এবং নারীর অধিকারের স্বার্থে করা হয়নি। বস্তুত জঙ্গী ইসলাম, মূলত প্রত্যক্ষভাবে পশ্চিমের তৈরি। ... ...
তথাগতবাবু এবং তিওয়ারিজির এইসব কাজকর্ম, বলাবাহুল্য, পাহাড়প্রতিম মূর্খামি ছাড়া আর কিচ্ছু না। তাঁরা জানেনই না, বিজেপি এবং আরএসএস তো হিন্দুত্বকে আদৌ কোনো ধর্ম মনে করেনা। সে কথা বহুবার সজোরে বলাও হয়েছে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত স্বয়ং বলেছেন, হিন্দুত্ব কোনো ধর্ম নয়, একটি জীবনচর্যা। অর্থাৎ জীবন যাপনের পদ্ধতি। যা আদৌ ধর্মই নয়, তাতে আঘাত করলে ধর্মীয় ভাবাবেগে কীকরে আঘাত করা হয়, মাননীয় তথাগত বা তরুণজ্যোতি কি তা বলতে পারেন? আরএসএস কী মনে করে, তাঁরা কি সেসবের ধার ধারেননা? নাকি আদৌ জানেনই না? ... ...
১৯৫৬ সালের কথা। বাংলা-বিহারকে জুড়ে দিয়ে পূর্বপ্রদেশ নামক একটি রাজ্য তৈরি করার প্রস্তাব আনল তৎকালীন রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিধান চন্দ্র রায়। বাংলা ভাগের সর্বনাশ করার পর, পশ্চিমবঙ্গকে হিন্দি বলয়ের অংশ বানিয়ে ফেলার চেষ্টার সেই শুরু। সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন, ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৫৬, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কৃষ্ণ সিংহ, এক যৌথ বিবৃতিতে এই সংযুক্তির প্রস্তাবকে সমর্থন করলেন। সর্বশক্তিমান কংগ্রেস হাইকম্যান্ড প্রস্তাবে শিলমোহর দিল। এ প্রস্তাব কার্যকরী হলে বাঙালিজাতির বিপর্যয়ের ষোলকলা পূর্ণ হত, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তখনও বিহার টুকরো হয়নি, চার কোটি বিহারবাসীর সঙ্গে, আড়াই কোটি বাঙালিকে যোগ করলে নতুন রাজ্যে বাঙালিরা সংখ্যালঘু হতেন। বাঙালিরা সব দখল করে নেবে, বিহারবাসীদের এই আতঙ্কের কথা তখনই শোনা যাচ্ছিল, বছর-বছর নিশ্চয়ই বাড়ত। তার উপর পূর্ব বাংলা থেকে আসছিলেন অসংখ্য উদ্বাস্তু। দেশভাগের দায় তাঁদের নয়, কিন্তু দায়িত্ব পুরোটাই নিতে হচ্ছিল। হিন্দুদের পরিত্রাতারা তখন কাঁথাকম্বল জড়িয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। এই অবস্থায় আরেকটা আসাম তৈরির ছক একদম পাকা ছিল, যেখানে ভূমিপুত্রদের আতঙ্কের দোহাই দিয়ে দশকের পর দশক ধরে বাঙালি খেদানো চলবে এবং বছর পঞ্চাশ-ষাট পরে খানিক গণহত্যা, আর তারপর সর্বদলসম্মত এন-আর-সি করে পাকাপোক্তভাবেই খেদিয়ে দেওয়া হবে। ... ...
এর চেয়েও প্রলয়ঙ্কর হল গানের ব্যবহার। সহনায়িকা এখানে গুণগুণ করে গায় রবিবাবুর গান। মোটামুটি ১৮৯৫ সাল নাগাদ। কী গান? সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে। যে গান লেখা হবে এর বছর তিরিশেক পরে। বাঙালি হলেই একটু রবীন্দ্রনাথের পাঞ্চ দিতেই হবে, বাঙালি রবীন্দ্রনাথের জন্মের আগে থেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়, এ তো জানা কথা। যেকোনো দিন পলাশীর যুদ্ধের দৃশ্যায়নেও সিরাজদৌল্লাকে 'ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে' গুণগুণ করতে দেখা যেতে পারে। বলিউডি ওয়েবসিরিজ/সিনেমার কারবার বলে কথা। এর আগে একটি সিরিজে দেখা গিয়েছিল বাঙালি নায়িকা সঙ্গমকালে 'শেষের কবিতা' থেকে আবৃত্তি করে। বলিউডি প্রযোজক-পরিচালকদের নির্ঘাত ধারণা ওতেই বাঙালির অর্গ্যাজম। ... ...