ছেলেটার নাম অ্যারন বুশনেল। বয়স ২৫। খবরটা পড়ে, দেখে, এবং শুনে, প্রথমেই মনে হল, তা বলে এইভাবে? অন্য কিছু কি করা যেতনা? তারপর মনে হল, ধাক্কা কত বেশি হলে, তবেই এ জিনিস করা যায়। এ ছেলে ছিল সামরিকবাহিনীতে সাইবারডিফেন্স অপারেশন স্পেশালিস্ট। যেটা ঝপ করে মনে করিয়ে দেবে এডওয়ার্ড স্নোডেনের কথা। তিনিও ছিলেন, যদ্দূর জানা যায়, সাইবার নজরদারির কাজে।ওইসব গোপন কাজে, এমন কিছু থাকে, যা, মানুষের মাথাই ওলটপালট করে দেয়। বুশনেল বলেছে প্যালেস্তাইনে গণহত্যা। স্নোডেনের সময় ছিল আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের উপর একটা সিনেমা দেখছিলাম, তাতে গ্রামকে গ্রাম লোক, ড্রোনহানায় হয় নেই, নয়তো পঙ্গু। একটা গ্রামে ড্রোন হত্যা করেছিল এক মুরুব্বিকে। তারপর তাঁর সমাধির অনুষ্ঠানে আবার ড্রোনহানা। মরে আরও কিছু লোক। ... ...
কিন্তু কথা হল, সব চ্যানেল-ট্যানেল কিনে ফেলেও, অপছন্দের সিনেমাকে আটকে, এজেন্সি দিয়ে ভয়-টয় দেখিয়েও গোদীবাবুর ঠিক শান্তি নেই। পিছনে পাপ লেগে থাকলে যা হয়। এখনও দুচাট্টে লোক এদিক সেদিক খুচরো ট্যাঁফোঁ করে চলেছে, কে কখন বলে দেয় 'রাজা তুই ন্যাংটো' তার ঠিক নেই। এই আমার মতো কিছু তেএঁটে আছে, যারা মিডিয়ার শত প্ররোচনাতেও গোদীবিরোধিতা থেকে কিছুতেই নড়বেনা। তাদের থামাতে এবার এসে গেছে ভারতের নতুন সম্প্রচার বিলের খসড়া। পাশ হলে তার আওতায় এসে যাবে প্রায় সবকিছু। টিভি, কেবল তো ছিলই, ওটিটি, ইন্টারনেট, সমাজমাধ্যম। খুব সম্ভবত এই লেখাটা, নতুন বিল এলে 'সম্প্রচার'এর আওতায় পড়বে। এসব কাপড় খুলে দেওয়া লেখা, তাই বিলে বলা আছে, খবর বা সাম্প্রতিক বিষয়ে সম্প্রচার করতে হলে সব্বাইকে 'নিয়ম' বা কোড মেনে চলতে হবে। কী নিয়ম? না, সেটা বলা নেই। সরকার বা কর্তৃপক্ষ যখন যা ঠিক করে দেবে তাই। নইলে জেল-জরিমানা, সবই আছে। ... ...
মধ্যশিক্ষাপর্ষদের সাইট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যবোর্ডের বাংলা মাধ্যম মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২৭৬৮ খানা। হিন্দি মাধ্যম ১১৬, ইংরিজি মাধ্যম ৪৫। সব মিলিয়ে মোটামুটি ধরুন ৩০০০। সিবিএসইর সাইট অনুযায়ী, সিবিএসই অনুমোদিত বিদ্যালয় ৪৫০। আইসিএসইর সাইটে পরিসংখ্যান পাইনি, অন্যত্র দেখলাম শ চারেক। দুটো যোগ করে, মোটামুটি ধরুন ১০০০। অর্থাৎ কিনা পশ্চিমবঙ্গের চারভাগের একভাগ স্কুলই কেন্দ্রীয় বোর্ডের। ... ...
কিন্তু গপ্পো না হলেও, মোটা দাগের ঘটনাবলীও কম রোমাঞ্চকর নয়। এর পরের বছর, অর্থাৎ ৫৪ সালেই ঘটে আরও এক কান্ড। সিনেমা নিয়ে নেহরুর ধারণা এবং তাতে সোভিয়েত মদতের কথা আগেই বলা হয়েছে। এর আগে থেকেই সেই ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। অর্থাৎ জনপ্রিয় সিনেমা হবে, কিন্তু তাতে শ্রমিক-কৃষক সংক্রান্ত 'বাম' ধারণা গুঁজে দেওয়া হবে। ১৯৫১ সালে এই ঘরানার প্রথম দিকের একটা ছবি রিলিজ করেছিল, যার নাম আওয়ারা। এর চিত্রনাট্যকার ছিলেন, খাজা আহমেদ আব্বাস, যিনি একাধারে আইপিটিএর লোক, নেহরুর খুবই ঘনিষ্ঠ, ক্রুশ্চেভের সঙ্গে ভুল রাশিয়ানে আড্ডা দেন, গ্যাগ্যারিনে মহাকাশ থেকে ফিরলে যেকজন প্রথম দেখা করেন তাঁদের মধ্যে একজন, এবং সর্বোপরি ৪৮ সালের পার্টি-লাইনে বিরক্ত - এই প্রকল্পের পক্ষে আদর্শ। তিনি এবং রাজকাপুর দুজনেই "আওয়ারা" সিনেমাটাকে "প্রগতিশীল" বা "ভবঘুরে জন্মায়না, তৈরি করা হয়" জাতীয় আখ্যা দিয়েছিলেন সে সময়। এবং বস্তুত চিনে এক ঝটিকা-সফর সেরে এসে আব্বাস এই সিনেমায় হাত দেন। এর পরের বছরই তিনি বানান রাহি। আওয়ারা ছিল হিট এবং রাহি ফ্লপ। ... ...
কেশকর তো রেডিও থেকে হিন্দি সিনেমাকে বহিষ্কার করলেন, কিন্তু গ্ল্যামার-শিল্পপতিরা কি ছেড়ে দেবার লোক? খোদ কংগ্রেসেই উল্টোদিকের জোরালো মত ছিল। তার পুরোধা ছিলেন সদাশিব পাতিল। তিনিও মারাঠি, খাস বোম্বের লোক, এবং আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ। পাতিলকে নিয়ে গুচ্ছের কথা শোনা যায়, যেমন, ভারতে 'ব্রিফকেস রাজনীতি'র জনক, বা সিআইএর সরাসরি এজেন্ট। কিছু পরোক্ষ সাক্ষ্যও আছে, কিন্তু প্রমাণিত সত্য বলা কঠিন। সত্য হলেও ব্রিফকেসওয়ালারা তো লিখে রেখে যাবেনা, বা সিআইএ সেইসব নথি খুলেও দেবেনা। যেগুলো মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য, তা হল, তিনি বোম্বের উচ্চকোটি মহল এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন। এবং তৎকালীন বোম্বে কংগ্রেসের সর্বেসর্বা। খোদ সিআইএর খুলে দেওয়া নথিতেই একাধিকবার পাতিলকে বোম্বে কংগ্রেসের বস, বা বোম্বের পার্টি বস, বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খোলা অর্থনীতি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তাঁর মতের মিল ছিল, এও কার্যপ্রণালী থেকে দেখতেই পাওয়া যায়। ... ...
রামমোহন রায়ের বাড়ির অনুষ্ঠানেই ভারতবিখ্যাত নিকি বাইজি এসেছিলেন, ফ্যানি তাঁর পোশাকেরও বর্ণনা দিয়েছেন। সাটিনের পোশাক (শাড়ি নয়), সঙ্গে পাজামা। এবং সঙ্গে মাতাল করা নাচ। সে নাচ নাকি এতই উদ্দীপক, যে, বিলিতি মহিলারাও ওই পোশাক পরে নিজেদের জমায়েতে ওই নাচ নাচার চেষ্টা করতেন। এবং গরমের দেশে গলদঘর্ম হয়ে, কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এতই গুরুতর বিষয় হয়ে গিয়েছিল, যে, এই পোশাক পরতে বারণ করে একটি নোটিসও জারি হয়েছিল। ... ...
নেহরুর নীতির রূপরেখা ঠিক কেমন ছিল, আজ এতদিন পরে আন্দাজ করা অসম্ভব। তবে অনেক পরে আশির দশকে রাষ্ট্রীয় দূরদর্শনের সম্প্রচারের ঘরানা দেখে, ব্যাপারটার খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যায়। সরকারি দূরদর্শনে, সেই সময়েও জনপ্রিয় সিনেমার জন্য বরাদ্দ ছিল সপ্তাহের সামান্য কিছু অংশ। বাকি সঙ্গীত এবং সিরিয়াল, সবাইকেই একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি টপকে আসতে হত। ভাষার প্রশ্নে হিন্দির ভাগ অবশ্য অনেক বেশি ছিল, বস্তুত সার্বজনীন বাধ্যতামূলক হিন্দিশিক্ষার চলই দূরদর্শন থেকে, নেহরু জমানায় হিন্দির এত প্রাধান্যের কথা আদৌ ভাবা হয়নি, সেটা বেতারের কার্যক্রম দেখলেই বোঝা যায়। এবং কেশকরের সময় সিনেমা আর ক্রিকেট মূলত বন্ধ করে দেবার অভিমুখেই এগোনো হচ্ছিল। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ব্যাপারটা ছিল এই, যে, যদিও হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছিল, পুঁজিপতিদের দেওয়া হয়েছিল খোলা মাঠ, ভাষাভিত্তিক রাজ্য তৈরিরও কোনো নীতি ছিলনা, আধিপত্যের সূচনাও তখনই হয়েছিল, কিন্তু তার পরেও সেই আধিপত্যের রূপরেখা আজকের মতো করে নেহরু কল্পনা করেননি। বরং তথাকথিত 'আঞ্চলিক' ভাষার সম্প্রচারে জোর দেওয়া হত। 'ভারতীয়' এক বিকল্প সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল সংস্কৃতি এবং সঙ্গীতে। সিনেমাকে করে তোলার ইচ্ছে ছিল জনমুখী। সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি সহই, হিন্দির আধিপত্য সত্ত্বেও, হিন্দি-বলিউড-ক্রিকেট কেন্দ্রিক আজকের যে দানবীয় ব্যবস্থা, তা ভারতের সূচনাবিন্দুতে অকল্পনীয় ছিল। ... ...
৫১ সালের নির্বাচনের অন্যতম বিষয় ছিল ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠন। নেহরু এবং প্যাটেল সেই সময় সেটা প্রয়োজন মনে করেননি। সমস্যার শুরু সেখান থেকেই, যেটা প্রথম দেখা গেল দক্ষিণ ভারতে। তেলুগুদের জন্য পৃথক অন্ধ্র রাজ্যের দাবী ছিল আগেই। কিন্তু কেন্দ্র তাতে রাজি হয়নি। গান্ধিবাদী শ্রীরামালু এই দাবীতে অনশন করেছিলেন, কিন্তু নেহরু-প্যাটেল-সীতারামাইয়ার তৈরি কমিটি, নতুন রাজ্য নির্মাণে অস্বীকৃত হয়। ফলে শ্রীরামালু আবার অনশন শুরু করেন ৫২ সালের অক্টোবর মাসে। এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন ডিসেম্বর মাসে। এর আগে এইভাবে মারা গিয়েছিলেন যতীন দাশ। ... ...
১। ভারতে কোনো সাধারণ ভাষা বা সাধারণ জাতীয়তা নেই। ব্রিটিশ শাসনের চাপে একটা বহির্মুখী ঐক্য গড়ে উঠেছে, কিন্তু তার ভিতরে যা সাংস্কৃতিক মিল, তা ইউরোপের বা মধ্যপ্রাচ্যের নানা জাতির মধ্যের মিলের চেয়ে বেশি কিছু না। ফলে ভারতবর্ষকে একটা জাতি হিসেবে ভাবা যাবেনা। ২। ভারতবর্ষের সুনির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীগুলোর একটা তালিকা করেন তিনি। পূর্বে বাঙালি, ওড়িয়া, অসমীয়া। পশ্চিমে গুজরাতি, মারাঠি। দক্ষিণে চারটি - তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালি। এবং খুবই কৌতুহলোদ্দীপক, পাঞ্জাবি এবং হিন্দুস্তানিদের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, যে, এদের জাতিনির্মাণ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। একই তালিকায় পাহাড়ের জনজাতিরাও আসে। ৩। দেশভাগের পর, বাংলা নিয়ে আলাদা করেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেহেতু বাঙালি একটা আস্ত জাতি, তাই কৃত্রিম ভাগাভাগির পরও দুই টুকরোর মিলনের পক্ষে ছিলেন দিয়াকভ। তিনি প্রায় ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যে, কোনো সন্দেহ নেই, ভারত এবং পাকিস্তান, দুই দিকেই বাঙালি সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে রাষ্ট্রশক্তিকে। এই ভবিষ্যদ্বাণী, বলাবাহুল্য সত্য হয়েছে। নকশালবাড়ি, মুক্তিযুদ্ধ, উদ্বাস্তু, এনআরসি, সব মিলিয়ে বাঙালি সমস্যা এবং বাঙালি ট্র্যাজেডি চলেছে, চলেছে রক্তগঙ্গাও। ... ...
স্তালিনের মৃত্যুর পরেরদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত নেহরু ভারতীয় সংসদে স্মৃতিচারণ করে লম্বা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেন, যে, স্তালিনের গুরুতর অসুস্থতার কথা যখন কানে আসে, তখন তিনি মস্কোর ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের পাঠানো একটা প্রতিবেদন পড়ছিলেন। সেই শেষ সাক্ষাৎকারে স্তালিন কথা বলেছিলেন ভারতের নানা ভাষা নিয়ে। তাদের শতকরা বিন্যাস, প্রভাব, সম্পর্ক, এইসব নিয়ে। এতটাই বিশদে, যে, নেহরু স্তালিনের জ্ঞানে কিঞ্চিৎ বিস্মিতও হন। ... ...