“আগামী শনিবার পদ্মদিদির বিয়ে l হরিহরপুরের অনেকটা ভেতরে, একটা ছোট গ্রামে l ছেলেটার নাম পল্টু l ভ্যান চালায় আর বাজারে সবজি বিলি করে l পল্টুর মা খুব দাপুটে l মা জগদম্বা গোছের একটা ব্যাপার l পূর্ণিমা অমাবস্যায় ভর টর হয় l নিদান দেয় l মা আর দিদুন পদ্মদিদির দিদি জামাইবাবুর সাথে দেখতে গিয়েছিল পল্টুকে l ফিরে এসে গল্প বলেছে আমাদের l মোদ্দা কথা কারোরই তেমন অপছন্দ হয়নি l এই সম্বন্ধটা পদ্মদিদির ভাই সনাতন ঠিক করেছে l বাবা যখন পদ্মদিদিকে গ্রামের বাড়িতে ফেরত দিতে গেল, সেই সময় l পদ্মদিদি কিন্তু একটুও কাঁদেনি সেব ... ...
“নাগরদোলাটা ঘুরছিল l খুব জোরে, গোল গোল l ঠিক যেমন পৃথিবী তার অক্ষের চারদিকে ঘোরে l এমনি নাগরদোলার মতো দেখতে না যদিও l খেলনা এরোপ্লেন l সুভাষ ময়দানে ক্রিসমাসের ছুটিতে বিরাট মেলা বসত l আমি, দাদা, আর পদ্মদিদি মিলে গেছিলাম সেবার l একটা চ্যাংড়া মতো ছেলে আরো চার-পাঁচটা বাচ্চাকে চাপিয়ে বোঁ করে ঘুরিয়ে দিল l পদ্মদিদি আমার চেয়ে বারো বছরের বড় আর দাদা পাঁচ l আমি তখন ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়ালে আপার কেজিতে পড়ি l প্লেনের ঘোরাটা আসতে থেকে জোরে হয়ে যাচ্ছিল, তারপর আরও জোরে l আমি খুব ভয় পেলাম, বললাম- দাদা আমায় বাঁচ ... ...
“অক্ষত সকালগুলো আমরা কখনও ভুলিনা যা ক্ষতগুলোকে জিইয়ে রাখে l অথচ এভাবেও বলা যেতে পারতো- চল্ সবাই মিলে বাড়ির কাজে হাত লাগাই, কেন মা একা কষ্ট করবে দিনের পর দিন- কিন্তু বলা হয়নি l ভোর পাঁচটায় পায়ে একটা লাথির মতো আঘাত এলো l ঘুমের ঘোরে আমার নাইটি উঠে যেতো থাই পর্যন্ত l একা ঘরে শুতাম তাই ঢেকে রাখার অভ্যেস গড়ে ওঠেনি l আপাতত আমার একা শোয়া বারণ l খবরের কাগজে পড়া তুলিকা দাস-কাণ্ডের মতো আমিও আমার মা এমনকি দিদুনকে মিষ্টির সঙ্গে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে পারি, কারণ আমার প্রেমিক আমার চেয়ে বয়সে অনেকটা বড় আর তার বাড়ি ... ...
“তুমি গুছিয়ে ঠিক কথা বলতে পারো না/ শুধু সময় নিজের গল্প বলে যায়” (শ্রীজাত) l সময় গল্প বলে l সু-সময় আর দুঃ-সময়ের গল্প l প্রেম-বিচ্ছেদ-প্রেম বিচ্ছেদ-প্রেমের এক চক্রাকার আবর্তনের গল্প l এক? নাকি একাধিক? বৃত্তগুলো আঁকতে থাকি l হিজিবিজি l ক্লাস ইলেভেনের ফিজিক্স নোটের শেষ পাতায়- কলেজের থার্ড বেঞ্চে- ব্যালান্স শিটের নিচে, এককোণে- একাধিক বৃত্ত l কিছু সম্পূর্ণ হয় l কিছু হয়না l আসলে তো চাই অসম্পূর্ণ থাক l অতৃপ্তিটা থাকুক l চারিয়ে যাক ক্রমশ l বৃত্তগুলো জট পাকাক l একের ঘাড়ে অন্যে চাপুক l পরস্পর পৃথক হোক l স্ ... ...
দেখা হয়নি কয়েক চান্দ্রমাস l দেখা হবে না, এমনটাই জানি এখন l অথচ কী আশ্চর্য – দেবলীনার এই ছবিটার মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে তোমাকেই মনে পড়ছে কেন যে... ! বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী ছিল l আর পূর্বনির্ধারিত ছিল এই মনোলোগ যা তোমাকে লেখার অজুহাতে আরও একবার রামধনু হয়ে উঠতে পারে পরতে পরতে l
১.
“আমাদের এই ভালোবাসাটা ওরা মেনে নেয়নি l সবসময় আমাদের খারাপ চোখে দেখেছে, সন্দেহ করেছে l তাই আমি ঠিক করেছি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব l” (স্বপ্নার চিঠি)
পড়তে পড়তে স্বরূপের বাবার উচ্চারণ থেমে যায়, সুমিতার ট্যাক্সি থমকে ... ...
জ্বর বাঁধানোর যাবতীয় অপচেষ্টায় লেটার মার্ক্স সমেত পুনরায় উত্তীর্ণ l বিশদ ব্যাখ্যায় যাবো না l কারণ যারা ভোররাতে ঘুমুতে যাবার আগে চান, ভিজে চুলে ঠান্ডা মেঝেয় গড়াগড়ি, বৃষ্টিতে ছাতাহীনতা-জাতীয় নিয়মমাফিক জীবনে আশৈশব অভ্যস্ত, তারা চটজলদি বুঝেই যাবেন এসবের মাহাত্ম্য l আর যারা বুঝবেন না, তারা ছোট ছিলেন, ছোট থাকবেন ও মার কথা শুনে সস্তা সাবান মেখে কাটিয়ে দেবেন জীবন l
জ্বর নিয়ে ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিতে অ্যাত্তো লেখা, যে রোগ নয়, লক্ষণ, আর মাধব নিদান অথবা চরক সংহিতাতে তো আরোই অ্যাত্তো অ্যাত্তো l অথচ য ... ...
সেইরকমই তিনটে চরিত্র- দামিনী গান গায়, সরকারী চাকরি করে- সর্বজিত সুপুরুষ, অভিনেতা- শান্তনু দামিনীর সঙ্গী, অন্যরকম, অন্য মনের l সর্বজিত উভয়ের বন্ধু l আরবান ডিক্শনারিতে মিউচুয়াল ফ্রেন্ড এখন খুব পরিচিত শব্দ l সর্বজিত অনেকটা তাই l তবে সে যে প্রাথমিকভাবে দামিনীর বন্ধু সেকথা শান্তনু জানে না এমনটা নয় l আমরা সবাই সব জানি l ব্রেনের হেমিস্ফিয়ারগুলো, লোবগুলো, থ্যালামাস, হাইপোথ্যালামাস l জানি এসব l জেনে গেছি প্রথম ক্রেনিয়াল নার্ভ অলফ্যাক্টরি আমাদের গন্ধ চেনায় l ঘ্রাণের বোধ ব্রেনের সেনসরি ক্রিয়া l পরিচিত ... ...
একটি রুপোলি আলোয়ান গায়ে জড়িয়ে
ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে সালেমানের মা
শরীরে এখনও সদ্য-প্রসবিনীর শৈথিল্য
এ নিম্নগামী পথ তার আপনার নয়
দু'হাতে আঁকড়ে রাখা সন্তানের কোল বদল হয় নিয়ত
অনাদরে, অবজ্ঞায়
মাসিক মন্দার সুরাহা হলেও হতে পারে আজ
তাই পিঁচুটি পড়া চোখের কোণ ধুয়ে
সালেমানের মা এগিয়ে আসছে চৌহদ্দির ঈশান কোণের ঘরে
যেখানে অপেক্ষারত অর্থ-সংবাহক
যার বয়স-ধর্ম-পেশা-রুচি
এ সকল জানা বাধ্যতামূলক নয়, কখনও ছিল না
অথচ টেবিলের দু’প্রান্তে বসে থাকা অন্যস ... ...
বৃহস্পতি দি l আমার রান্নাঘর সামলায় l বয়স সাঁইতিরিশ-আটতিরিশ হবে l সঠিক হিসেব তো ওদের মা বাবাও রাখেন নি l দেখে ওইরকমই মনে হয় l কিশোরীবেলায় বিয়ে l তারপর পুত্রসন্তান l তিন বছরের মাথায় বেকার মদ্যপ ‘স্বামী’কে কাঁচকলা দেখিয়ে ব্যাক টু দ্য ভিটে মাটি l বাবা মারা যাবার আগে নিজের ভাগের একটা ঘর লিখিয়ে নিয়ে এখন ছেলেসমেত সেখানেই থাকে l রান্না করে, বাসন মাজে l নিজে নাম সই ছাড়া বিশেষ কিছু জানে না, কিন্তু ক্লাস এইটের ছেলে ইশকুল কামাই করলে বাড়ি ফিরে তুমুল ঠ্যাঙায় আর বলে- "বাপের মতো হবি তো চাবকে চামড়া খুলে নেবো" l ... ...
দ্যাখো পথঘাট এখনো তেমনই আছে
বড়জোর দুটো সেতু বা উড়ালপুল
পুলিশবিহীন সিগনালে ক্যাকোফোনি
বোম মারবার অধিকারে মশগুল -
বরং তোমার দেশ বদলাও ভাইয়া !
দ্যাখো সবুজেরা মিলিয়ে যাচ্ছে অথচ
নীল সাদা রঙে শহর মানানসই
বিনা নোটিসের অবরোধ ছিল, থাকবে
চাকরি হচ্ছে, বেকার কমছে কই -
বরং তোমার দেশ বদলাও ভাইয়া !
আকছার ঘটে দুর্নীতি আর হত্যা
যেমন ঘটতো ওদেরও সময়কালে
নারীধর্ষণ শিশু মৃত্যুর কড়চা
উলু খাগড়ার প্রাণ যায় বেখেয়ালে -
বরং তোমার দেশ বদলাও ভাইয়া ! ... ...