গুগল ম্যাপ অনুযায়ী আমাদের ঘন্টা তিন চারের মধ্যেই পৌঁছানোর কথা। কিন্তু পৌঁছাতে রাত সাড়ে সাতটা বেজে গেল। মূলত আগস্টে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ধ্বসের ফলে কুলু মানালি অঞ্চলে যে নির্মম ধ্বংসলীলা চলেছে তাতে চারলেনের হাইওয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। নতুন করে তৈরী হওয়া সরু একফালি রাস্তায় দুই লেনে আপ ও ডাউন গাড়ি যাওয়া আসা করছে, ফলে যানবাহনের গতি ধীর। ধ্বংসের চেহারা দেখে হাড়ের ভেতর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। মানালির ভলভো বাসের স্ট্যান্ড, শহরের গাড়ি ট্যাক্সি পার্কিং এলাকা ভেঙেচুরে বিপাশা নদী খলখলিয়ে বয়ে যাচ্ছে। হাড় পাঁজরা বের করে কটা নিরূপায় গাড়ি, একটা ভলভোবাস বেঁকেচুরে উল্টেপাল্টে দাঁড়িয়ে আছে অজস্র বড় মাঝারি বোল্ডারের মধ্যে। ... ...
শীতল মরুভূমি স্পিতি উপত্যকায় সারে তিনদিন ... ...
তার পরেরদিন সকালে আবার মা উঠিয়ে দেয় ঘুম থেকে, তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিতে বলে, ভর্তি হতে যেতে হবে। আমি অবাক হয়ে ভাবি হিন্দু গার্লস কি এত সকালে ভর্তি নেবে? ওদের তো দুপুরে স্কুল, কিছু জিগ্যেস করার আগেই দাদু আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, সেই ভাগাড়পাড়ার স্কুলের দিকেই যাই আমরা। দাদু আমাকে নিয়ে ‘বালিকা শিক্ষা সদন জুনিয়র হাই' স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়, বিলবইতে লেখা ছিল নামটা, ইরাদিদিমণি হেডমিস্ট্রেস। কিন্তু এখানে কেন সেটা যদি কেউ একটু বুঝিয়ে দিত! জানুয়ারী মাসে তো তেমন ক্লাস হয় না, রোজই প্রায় দশটায় ছুটি। আমি বাড়ী ফিরে দেখি শুভ্রা, রিঙ্কু, শর্বরী, মিঠু, সাতুরা এ ওর বাড়ী গিয়ে ডাকাডাকি করে একজায়গায় হয়, তারপর একসাথে খুব মজা করতে করতে যায়, ইলু, শীলুও হীরালাল পালে ভর্তি হয়েছে এই বছর, ওরাও যায়। ওদের স্কুলে রোজ ড্রেস পরতে হয় না, বেশীরভাগ দিন ওরা পরিস্কার এমনি জামা পরে স্কুলে যায়, মাঝে মধ্যে সবুজ-সাদা স্কুলড্রেস পরে। আমার তো আর ওদের সাথে হইহই করে যাওয়া হয় না, আমি থেকে যাই ভাগাড়পাড়া স্কুলে ফেলের মধ্যে ফার্স্ট হয়ে। ... ...
মিনিট পঁয়তাল্লিশ বাদে তিনি উঠে দাঁড়ালেন, অর্জুন পাশের গাড়ি সরাতে বললেন আমরা রওনা দেব বাঘের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। রাস্তার (মানে জঙ্গলের ভেতরের কাঁচা পথ) দিকে খানিক এগিয়ে এসে এত গাড়ি দেখে বিরক্ত হয়ে তাড়ুবাবু আবার জঙ্গলের গহীন গহনে ঢুকে গেলেন। অর্জুন কিছু নির্দেশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেলেন এক জলাশয়ের পাশে, তাড়ু জঙ্গলের ভেতর দিয়ে দিয়ে এখানেই নাকি আসবে। আর সত্যিই এলোও। ধীরেসুস্থে এসে জলে নামল তারপর মুখ তুলে তাকালো। উফফ স্বাভাবিক পরিবেশে একদম খোলা জায়গায় খোলা গাড়িতে বাঘের সাথে প্রথম চোখাচোখি ... সে রোমাঞ্চ মানুষের জীবনে একবারই আসে, পরের পরের বারেরা শুধুই প্রথমবারের সাথে তূলনীয় হয়ে চলে। ... ...
আইজল যাবার জন্য সড়কপথ নয় আকাশপথই শ্রেষ্ঠ। সস্তা এবং সময় সাশ্রয়ী। হাফলং থেকে আইজল যাওয়ার প্ল্যান করাটা আমার একেবারেই ঠিক হয় নি। মিজোরাম বেড়াতে গেলে খ্রীস্টমাসের সময় না যাওয়াই ভাল কারণ এই চার পাঁচদিন প্রায় গোটা রাজ্যই ছুটি কাটায়। যদিও আইজল শহরের আলোকসজ্জা বা উৎসবের আবহ সত্যিই চমৎকার। মিজোরাম যথেষ্ট বড় রাজ্য। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার দূরত্বও যথেষ্ট আর রাস্তার অবস্থাও সর্বত্র ভাল নয়। অনেক জায়গায় রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে। ফলে হাতে অন্তত এক সপ্তাহ নিয়ে না এলে বিশেষ কিছু দেখা হবে না। প্রকৃতি ঢেলে সাজিয়েছে মিজোরামকে, তাকে দেখার জন্য সময় নিয়ে আসতে হবে। ... ...