ধান জমি নাই শালকুর বাপের। মুখ ঢাকা রোগটার সময় থেকেই, যেবার শালকুর বউটার কাশি ধরলো, সেদিন থেকেই শালকু বুড়া বাপ মা কে আলাদা করলো হাঁড়ি সমেত। বাঁচাতে নাকি মারতে কে জানে। বুড়ো বুড়ির নতুন হানিমুন তখন থেকেই। শুনলাম সামন্ত দের লোকটা তখন থেকেই নাকি রেশন ফাঁকি দেয় এবাজারেও। তাও ক্ষুদ চাল আর সকালে মাহাতদের জমির লাল শাক। তাতেই বুড়া বুড়ির চেহারা ঠিক ... ...
শালকু হেমব্রম বাঁশ ডালটা অনেকক্ষণ ধরে নাড়াচাড়া করেও যখন বাগাতে পারলো না, তখন প্রায় কাঁদোকাঁদো মুখে ব্যুধা মাহাত কে চোখের ইশারায় কাজটা বাগিয়ে দিলে হাঁফ ছাড়লো মনে হয়। ব্যুধা মাহাত এ দিক দিয়ে তাগড়াই বড়। বিড়ি ধরিয়েই এক নিমেষে বাঁশ খান এক্কেবারে ওকে করে খিস্তি মারলো খানিক, - 'শালো শালকুর বাচ্চা, পার্বিনি বাঁশ কাটতে, উঠে যাবি রাত ... ...
এমন হয় না, গ্রামের নাম অচিনপুর .. শাল পিয়ালের জঙ্গল ঢাকা । কালো মেয়েগুলো চকচকে শরীর নিয়ে জংলী ফুল কুড়িয়েছে পাতা সমেত । ভোট বাবুকে দিবে বলে ভোট পরবে...কিম্বাহতে পারতো,একদল সৌম্যকান্তি যুবক ,একহাজার আঁকিবুকি আঁকা জীর্ণ অতীতের হাতে হাত রেখে নজরুল নামে শপথ নিত ,স্লোগানের আওয়াজে নয় , রবি মাধুর্যে গনতন্ত্র নামতো কোন এক ধূসর বিকেলে...একদল ক্ষেপাটে বাউল , লালন আওড়াত , আরধর্ম দোকানিদের দোকান থেকে একগোছা জুঁইফুল নিত রজনীগন্ধার বদলে । খোঁপায় গুঁজে...যদি আসরের আজানে শান্তি নামতো আরো দু রাকাতে, পরব শেষের ...বদলে মৃত্যু, কান্না , ভয় আর ভেকদের দোয়ামন্ত্র খালি ,#রক্ত পরব শেষ হোক এবার , ... ...
চড়া রোদে তরতর করে ঘামছিল বুড়ো লোকটা। মে মাসের শেষ হলেও এখনো রোদের বড্ড তেজ। লাইনটাও বড়। সবাই ব্যস্ত। একটা ডাউস মার্কা ব্যাগ ভর্তি রোগা রোগা কিছু সবজি আর হলুদ কালো মেশান কয়েকটা আম আর লিচুর ডাল দেখলাম হাতে। কিলো খানেক হবে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছিল লোকটা সুস্থ নয়। ভাবতে ভাবতেই গেল গেল রব। লোকটা পড়ল, আমার পায়ের কাছেই, অজ্ঞান ... ...
গ্রামে দুটো মাত্র প্যান্ডেল হত। ছোটখাটো। দুটোরই মঞ্চে যারা থাকতেন তাদের জন্যই আপনি গালি খেতেন। সিক্সে জানতাম আপনি ঠাকুর। দাঁড়িবালা ঠাকুর। হেব্বি লাগতো স্টাইলটা। চাচা নাখুস ছিল। বলতো সালা কুজাতের লোক, মুসলমানদের মত দাঁড়ি রাখে। ঈমান নাই। তখন থেকেই মনে হয় ধর্মে খড়ি। তখন থেকেই কাফের মনে হয়। আপনিই ... ...
আজ নাকি নারী দিবস ...আমাদের সময় ছিল না,আমাদের...সুবল কাকার বাড়ি ছিল , সাথে কাকিমার সাথে হেব্বি ঝগড়া ছিল । কাকিমার বাপের বাড়ি ছিল সেই বাঁকুড়ায় । পুরো তিনদিন …মাঝের দিন গুলো কাকার ঝুলে থাকা মুখ ছিল , তারপর সোজা বাসে বাঁকুড়ার লাল মাটি ।ফিরে আসার সময় কাকিমার মুখে খয়ের পানে লাল রঙ ছিল ,আর সুবল কাকার কালো গালে ,লজ্জায় বুঝি ।আমাদের নারী দিবস ছিল না ,আমাদেরইলিয়াসের নতুন বউ ছিল , আমাদের ভাবি ছিল , ইলিয়াসের গর্ব ছিল সুন্দরীর জন্য । আরআমাদের স্নেহ , লাচ্ছা , পায়েস , আর অপার বিস্ময় মাখান চিনচিনে বুক টনটন...জুম্মা নামাজের পর দুগালে টোল তোলা অন্য দিকের চোখে ... ...
"একটা কাঁধ দেবে সাঁই…একটু কাঁদবো…সব্বাই সব দেয় গো…অনেক অনেক দেয় । শুধু ,কেউই কাঁদতে দেয় না ।" কিচ্ছু গোছাতে পারি নি। সে স্কুলের বাক্স হোক আর জীবনের হিসেব । সব এলোমেলো হয়ে যাওয়াটাই মনে হয় স্বাভাবিক আমার কাছে । বউ বলে তোমার গ্রহে দোষ আছে , হতে পারে । ভূগোলে আমি বরাবরই দুর্বল, গ্রহ নক্ষত্র বরাবর আমার দুর্বোধ্য । তবে একটা জিনিস খেয়াল করেছি যাই হোক না কেন আমি উল্টো জিনিসকে ... ...
পুরোনো কিছু ছাড়তে বড্ড মায়া হয় আমার ,পুরোনো জামা , সাইকেল , ব্যাগ ,পেন , ক্যালেন্ডার , এমনকি পুরানো পাড়ার গাবলু গাবলু নেড়ি কুকুরটাও যখন হাড়গিলে পুরানো হয়ে সবার বিরক্তির হয় ,তখনও পুরানো ছাড়তে কষ্ট হয় আমার …নতুনেসকালের ধোঁয়ায় , অমলের চায়ের দোকানে , নতুন কেনা সাদা কাঠির জ্বলন্ত নিকোটিনের সুবাসে , এমনকি একান্ত গোপন বাথরুমেও নিরাভরণ শরীরের গন্ধ নিয়ে বুঝতে চাই ' নতুন ' কিছু এলো কিনা নতুনে…ভাগ্যিস আসেনা….নতুনেঘরময় ফর্সা পর্দা দেয় সঙ্গিনী , উজ্জ্বল হয় আরো সংসার , চোখ বুজে থাকি , আলোয় বড্ড একলা লাগে নিজের , আলো আশা আনে অনেক নতুন , ঘরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ... ...
আমাদের বড়দিন ছিল ...ভূগোলে, সান্তা ইতিহাসে তারপর গাঁয়ের শেষে নদীর পাড় ছিল , বালির ..পয়সা ছিল , পকেট কানা ।মা দিদিমারা হেঁসেল ভরতো কারো ঘরের চাল,কারো ডাল তো কারো সবজি ।নেতা ছিল ,দল না ।নিয়ম করে মশলা বাজার ছিল ।হিসেব কে কত ভালো জানে তার পরীক্ষা ছিল , ওজন বুঝে ব্যাগ বওয়া ছিল ,সাথে লাল হৃদয় -' দুজনের চাঁদা ছাড় '...চাঁদা ছাড়ের লজ্জা ছিল নাকি মনখারাপ বুঝিনি , বুঝেছিলাম চাঁদা ছাড়লে সব করতে হয় , আলুর খোসা ছাড়ানো, নদী থেকে জল আনা , শেষে খাওয়া .. সওওব । চোদ্দ জনের টিমে আটটা গ্রুপ ছিল ...কুছ কুছ হোতা হে থেকে অরলি চুনারিয়াও রবিঠাকুর আর রবিশঙ্কর ও ছিলবেসুরো ... ...
(১) পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন ….. রাস্তাটা শেষ হচ্ছেই না। সেই যে শুরু করেছিলাম এখনো একই ভাবে চলছে। কখনো তেঁতুলতলার পাশে মাঠের মধ্যে দিয়ে নদীর ধারে, কখনো বা গ্রামের মধ্যে, ক্ষেতের ধার বরাবর, আম জাম বাগানের পাশ দিয়ে কোন্ গাঁয়ে গিয়ে কখন যে কোথায় পৌঁছেছি নিজেই জানি না। কখনো কেউবা সঙ্গ দিয়েছে কখনো আবার পুরো একা। কত মুখ কত মুখোশ। কত রঙ, কত রূপ, কত রস। কোন একদিন এই পথকে মনে হয়েছিল একান্ত আমারই পথ, একান্তই আমার; আষ্টেপৃষ্টে বাঁধার পর বুঝেছি এ পথ শুধু চলার পথ, ফেরার পথ নয়। তাও মাঝে ... ...