একদিন অফিস সেরে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলে তুমি। হঠাৎ দেখলে সামান্য দূরে রাস্তার পাশে যে বালির ঢিবি, তার ওপর দাঁড়িয়ে একটা সাড়ে তিন বছরের মেয়ে হাপুস নয়নে কাঁদছে। হয়তো রাস্তার বা কোয়ার্টারের কোন কাজ হবে বলে বালি ঢিবি করে রাখা ছিল। সেখানেই বেশ কিছু চার/পাঁচের বাচ্চা ছেলেমেয়ে উঠে হুটোপুটি করছিল। একবার চূড়ায় উঠছে নামছে। যখন খেলা শেষ করে সবাই নেমে চলে গেছে। তখন সেই মেয়েটি নামতে পারছিল না। কেবলই ভয় পাচ্ছে আর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে সেই বালুর ঢিবিতে দাঁড়িয়ে। মেয়েটির চোখের জলে, নাকের জলে কাজল ধুয়ে লেপ্টে মুখে মাখামাখি। চেনার উপায় নেই। এগিয়ে গেলে তুমি। চিনতে পেরে হাত ধরে নামিয়ে ... ...
ঋষভ গম্ভীর হল - “শুধু কাগজের পাতায় লিখে, ফেসবুকে হাজারটা লাইক, কমেন্ট পেয়ে আল্টিমেট কি লাভ বলুন তো? এতো বিজ্ঞান মঞ্চের মানুষেরাও করে। চতুর্দিকে প্রচার করে ‘গাছ লাগান, গাছ লাগান’, কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি তাঁরা নিজেরা একটাও গাছ লাগায় না। আরে বাবা, অনেক তো জনগণকে জাগানো হল! আর তাঁদের জাগাবার দরকার নেই। তাঁরা জাগবার হলে অনেক আগেই জাগতো। ছাড়ুন ওসব তত্ত্বকথা। এবারে ইমপ্লিমেন্টেশন দরকার!” ... ...
'সোজা তাকাও, এবার চোখের পাতা বন্ধ করো, আবার সোজা তাকাও চোখের পাতা বন্ধ করো, শরীরকে রিল্যাক্স করে রাখো, একদম লুজ। এক মিনিট, দু মিনিট, পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট - এভাবে একসময় চোখের পেশি ক্লান্ত হয়ে যাবে, ধীরে ধীরে ঘুম এসে যাবে। রাতে বিছানায় শুয়ে কিছুতেই ঘুম আসছে না? একবার চেষ্টা করে দেখো' - বলেছিল আমার এক ফিজিওথেরাপিস্ট বন্ধু। আগে আমার ঘুমের সমস্যা ছিল না, শুলেই ঘুম এসে যেতো। ইদানীং ঘুম আসে না সহজে, আমি পাশ ফিরে শুয়ে খোলা জানলা দিয়ে আকাশ দেখি, চোখ বন্ধ করি, আবার আকাশ দেখি, চোখ বন্ধ করি, শরীর রিল্যাক্স করার চেষ্টা করি - তবু ঘুম আসে না। ... ...
একটি নির্বাসন কথা#মৌসুমী_ঘোষ_দাস# নদীর এই দিকটাতে কোন লোকালয় নেই। ঘন জংগল, মাঝেমধ্যে দু-একটি ক্ষুদ্র পাতার কুটির রয়েছে । এই নিরালায় নির্জনে এই কুটিরগুলোতে স্বল্পসংখ্যক তপস্বীর বাস। নদীর এই ঘাটেই একটি নৌকো এসে ভিড়ল। নৌকা থেকে নেমে এলো এক অসামান্যা সুন্দরী নারী আর সুন্দর এক পুরুষ। সম্পর্কে তাঁরা দেবর বৌদি। দেবরটি অতি সন্তর্পণে এক হাঁটু কর্দম পেরিয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বৌদিকে এনে বসালো ঘাট থেকে সামান্য উঁচুতে অবস্থিত একটি ছায়াশীতল বৃক্ষের নিচে। নিজে দাঁড়িয়ে রইল শুষ্ক, বিষন্ন, বিচলিত মুখে। যেন কিছু একটা বলতে চায়, কিন্তু কিছুতেই বলতে পারছে না। দেবরের শুষ্ক বিষন্ন মুখ দেখে এবারে মেয়েটি ভারি চিন্তিত হল। সে ... ...
মা আমার পূর্ববঙ্গের মানুষ। ঢাকা বিক্রমপুরের। দেশভাগের সময় সামান্য কিছু সম্বল নিয়ে পরিবারের সঙ্গে এপারে চলে আসেন। এপারে এসে প্রথম দিকে কোন স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। বিভিন্ন জায়গায় রিফিউজি ক্যাম্প বদলে বদলে অবশেষে ময়না গুড়ির নিকটবর্তী পানবাড়ি বলে এক জায়গায় কিছু জমিজমা কিনে কোনো মতে বসবাস শুরু করেন। এই পানবাড়ি থাকাকালীন মায়ের বাবা মানে আমার দাদুর নিমোনিয়া হয়ে আকস্মিক মৃত্যু হয়। মা'য়ের বয়স তখন পাঁচ। দাদু মারা যাবার আগে স্ত্রী ছেলেদের বলে গিয়েছিলেন, "কলকাতার বাটানগরে আমার বহু আত্মীয় স্বজন আছে, আমার কিছু হয়ে গেলে তোমরা ওখানে চলে যেও"। ... ...
হারানো-প্রাপ্তি // মৌসুমী ঘোষ দাস গায়ের রঙ শ্যামলা, পরনে একটা রংচটা কুর্তি আর সালোয়ার। কুর্তির বুকের কাছে চুমকি জরির মত কাজ। কুর্তির পেছনের দুটো বোতাম খোলা, বোধহয় বোতাম ছিঁড়ে গেছে। মাথার চুল উস্কোখুস্কো। বোঝা যাচ্ছে তেল-জল পড়েনি অনেকদিন। হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ, তাতে একটা অপরিষ্কার সোয়েটার। উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। বয়স পনেরো/ষোলো মত হবে, সঙ্গে কেউ নেই। খুব সম্ভবত ভবঘুরে অথবা পাগলী। -মেয়েটাকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না অনন্যা। মামাতো দিদি গোপাকে নিয়ে গিয়েছিল নার্সিং হোমে। জাতীয় সড়কের দুই ধারে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নার্সিং হোম, যেগুলো বেশিরভাগই কিছুদিন আগে পর্যন্ত হোটেল ছিল, তারই একটাতে ভর্তি রয়েছে মামাতো দিদির জা। ... ...
জানলার কাঠের পাল্লাটা একটু ঠেলে খুলে দিল পদ্ম। ওপারের আমগাছটার ডাল পাতার ফাঁক দিয়ে হেমন্তের এক মুঠো নরম রোদ এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল স্যাঁতস্যাঁতে বিছানাটার ওপর। বিছানার একদিকে পাশ ফিরে শুয়ে আছেন অষ্টাশি বছরের প্রাণতোষ বাবু। বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়াও শারীরিক ও মানসিক দুই দিক দিয়েই একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছেন তিনি। অথচ একসময়ে পরিবারে তাঁর প্রবল প্রতাপ ছিল। আজ থেকে আঠারো বছর আগে এক শীতের সন্ধ্যায় আচমকাই গিন্নী চলে গেছেন। আর তারপর থেকেই ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়েছেন। সারাদিন শুয়ে বসে থাকতে থাকতে এখন আর পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াবার জন্য জোর পান না। ... ...