এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৫০৩৭৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ইসলাম সম্পর্কে আলাদা করে দু-চার কথা

    মৌলবাদ নিয়ে এই ধরনের একটা লেখায় যদি কেউ ঘোষণা করেন যে, এইবার ইসলাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা হবে, তখন পাঠকের সে নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। কাজেই, এখানে গোড়াতেই সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলে রাখা দরকার, না হলে পাঠক হয়ত বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হবেন। সম্ভাব্য প্রত্যাশাটি এই রকম যে, মৌলবাদের স্বরূপ নিয়ে যখন চর্চা হচ্ছে, এবং তার মধ্যেই আলাদা করে ইসলাম নিয়ে চর্চার ঘোষণা হচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দেশে দেশে ইসলামীয় মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে, বিভিন্ন স্থান-কালে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ বিশেষ বৈচিত্র্যের উল্লেখ পাওয়া যাবে, এবং অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে তার মিল ও অমিল এবং তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিষয়ক অনুসন্ধান ও তার ফলাফলও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এখানে তা করতে পারলে ভালই হত, কিন্তু তার উপায় নেই। সেটা করতে গেলে আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদের কার্যকলাপ নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখতে হত, তবেই তার প্রেক্ষিতে ইসলামীয় মৌলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারত। দুঃখের বিষয়, সে পরিসর এখানে ছিল না, এখানে তো এতক্ষণ মৌলবাদ নিয়ে শুধু কতকগুলো অতি সাধারণ কথাই বলেছি। বলে রাখা দরকার, এখানে আমি সরাসরি সেইসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব না, যদিও যা আসলে বলব তার মধ্যে এ বিষয়ে আমার মতামত ও চিন্তাভাবনারও কিছু ইঙ্গিত হয়ত মিলবে। এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই।
     
    ওপরে বলেছি, যাঁরা ধার্মিক নন বরঞ্চ ‘ধর্ম’ জিনিসটার সমালোচক, তাঁদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে দু রকমের ভাবনা বেশ পরিচিত। অনেকে মনে করেন, এই ‘মৌলবাদ’ সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে শুধুই ইসলামের সমস্যা, আর কারুরই নয় --- ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি আর মারদাঙ্গা মূলত মুসলমানেরাই করছে। অন্যদের যদি আদৌ কিছু সমস্যা থেকেও থাকে, তো সেটা শুধু ইসলামি জঙ্গিপনার প্রতিক্রিয়া মাত্র। আবার, এ অবস্থানটি অন্য অনেকের দুশ্চিন্তারও কারণ। ইসলামি জঙ্গিপনার বিপদ স্বীকার করেও তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্দোষ ও নিরীহ আম মুসলমানের ঢালাও খলনায়কীকরণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষ ও হিংস্রতা। প্রথম ভাবনাটি ভুল, কেন তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে আছে।
     
    আর ওই দ্বিতীয় প্রকারের যে দুশ্চিন্তা, আমি এবং আমার মত অনেকেই যার শরিক, তার এক প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত আমার হাতে এসেছে কয়েকদিন আগে, আমার এক তরুণ বন্ধুর সাথে ফেসবুকীয় কথোপকথনে। তিনি কে, সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না, কিন্তু তিনি আমাকে যে সব প্রশ্ন করেছেন তা বোধহয় অতিশয় প্রাসঙ্গিক। এখানে সেগুলো হুবহু উদ্ধৃত করলে হয়ত আমাদের আলোচ্য প্রশ্নগুলোকে সুনির্দিষ্ট আকার দিতে সুবিধে হবে। অবশ্য, এখানে উদ্ধৃত প্রত্যেকটি প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও নিষ্পত্তিমূলক উত্তর দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য ততটা নয়, যতটা হল মূল প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমস্যাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে তোলা। নিচে রইল সেই তরুণ বন্ধুর দুশ্চিন্তা-জারিত প্রশ্নগুলো।
     
    দাদা,

    একটা বিষয় একটু বিস্তারিত জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যদি সময় করে একটু ডিটেইলসে উত্তর দেন, খুব উপকৃত হই। অনেকদিনই এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি, কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ, আর প্রশ্নটা একটু বিস্তারে করতে হবে।

    ছোটবেলা থেকেই (ক্লাস ওয়ান থেকে) আমি দেখে এসছি, আমার পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র ধর্মে মুসলিম হওয়ার জন্য মানুষকে সন্দেহের চোখে, বিদ্বেষের চোখে দেখা হয়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে "কীরে, খুব আনন্দ বল!" বলে টন্ট কাটা হয়, কেবল নাম দেখে বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়, এমনকি মুসলিম ছাত্র ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করলেও "আশ্রম থেকে শেষে মুসলিম ফার্স্ট হবে" এরকম কথা খোদ টিচারের মুখেই শুনেছিআমি ঘটনাক্রমে মুসলিম পরিবারে জন্মাইনি, কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকেই আমার মুসলিম বন্ধু বা প্রতিবেশীদের এভাবে সামাজিক হেট ক্যাম্পেনিং এর মুখে পড়াটা ভীষণ দুঃখজনক লাগে। এই খারাপ লাগাটা ক্লাস ওয়ান থেকেই শুরু হয়েছিল, তো তখন তো আমি ধর্ম ভাল না খারাপ, যুক্তিবাদ ভাল না খারাপ, এতকিছু তো বুঝতাম না।

    এখন মুসলিমবিদ্বেষকে যারা জাস্টিফাই করে, তাদের থেকে যে যুক্তিগুলো উঠে আসে, সেগুলো -

    ১) আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?

    ২) "ওরা" (মুসলিমরা) সংখ্যায় বাড়লেই ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, সংখ্যায় কমলেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়।

    ৩) সব ধর্মে সংস্কার হয়েছে, কিন্তু "ওরা" এখনও মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

    ৪) সব ধর্মেই বহুবিবাহ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু "ওদের ধর্মে" বহুবিবাহ আজও জায়েজ, ওদের ধর্মে নারীর অবস্থা সবচাইতে খারাপ।

    ৫) "ওরা" নিজেদের বাঙালি মনে করে না, মননে চিন্তনে আরব, ওদের কাছে ধর্মই সব।

    ৬) ধর্মের নামে মানুষ হত্যা "ওদের ধর্মের মত কোন ধর্মই করেনি।"

    ৭) "ওদের" বাড়াবাড়ির জন্যই বিজেপির মত দলের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল।

    ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত এই কটাই মনে পড়ছে।

    এখন আমার প্রশ্ন

    ১) মুসলিমবিদ্বেষীদের এই দাবিগুলো কি তথ্যগতভাবে সত্যি?

    ২) সত্যিই কি ইসলাম আর পাঁচটা ধর্মের থেকে ব্যতিক্রমী ভায়োলেন্ট? এখন তো যুক্তি, তথ্য, পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মেথডলজি দিয়ে অনেক বিষয় কম্পারেটিভ স্টাডি করা যায়। "ইসলাম অন্য পাঁচটা ধর্মের থেকে ভায়োলেন্ট" - এই বিষয়টা কি যুক্তি, তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায়? মানে আমার প্রশ্ন, দাবিটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?

    ৩) ধরে নিলাম, ইসলাম সবচাইতে ভায়োলেন্ট ধর্ম। কিন্তু তাতে করেই কি মুসলিমবিদ্বেষ জায়েজ হয়ে যায়?

    ৪) একজন নাস্তিক হিসাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণ করা হলে তার প্রতিবাদ করা কি অন্যায়?

    ৫) হিন্দু মৌলবাদ কি সত্যিই ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল? ইসলামিক মৌলবাদ না থাকলে সত্যিই কি হিন্দু মৌলবাদ বলে কিছু থাকত না?

    ৬) আইসিস বা তালিবানের মত মুসলিম লিগ বা বর্তমানে মিমকে কি মৌলবাদী বলা যায়? নাকি "সাম্প্রদায়িক, কিন্তু মৌলবাদী নয়"-এমনটা বলা উচিত?

    আমার প্রশ্ন করার মূল কারণটা কিন্তু কোনভাবেই ইসলামকে ডিফেন্ড করা বা তার ভয়াবহতাকে লঘু করা নয়। আমিও ধর্মহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মত ইসলামের অবসানও আশা করি।

    কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্তরে ইসলামের সমালোচনাটা যেভাবে হয়, তার টোনটা ঠিক যুক্তিবাদের নয়, টোনটা বিদ্বেষের। এখন রিলিজিয়াস ক্রিটিসিজমকে ঢাল করে বুঝে বা না বুঝে অনেক প্রগতিশীল মানুষও বিদ্বেষের টোন ব্যবহার করছেন। এটা খুব আশঙ্কার।

    এখন, এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটাকে আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা না করে বরং এ প্রসঙ্গে কতকগুলো সাধারণ কথা ভেবেচিন্তে দেখি। তাতে করে সমাধান না আসুক, অন্তত সমস্যাটার চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারে কিনা, দেখা যাক। হতে পারে, ভাবতে গিয়ে হয়ত ওপরের দু-একটা প্রশ্ন শেষতক বাদই পড়ে গেল, বা উল্টোভাবে, যে প্রশ্ন এখানে নেই তেমন কিছু এসে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    প্রথমেই বলা দরকার, অনেকে আধুনিক মৌলবাদী উত্থানকে মুসলমান জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে এক করে দেখেন, যা মোটেই সঠিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রধান ধর্মীয় ধারাগুলোর সবকটির মধ্যেই মৌলবাদী উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন মাত্রা, ভঙ্গী ও ধরনে। আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীদের কথা আমরা জানি, জানি ইসরায়েলের ইহুদী মৌলবাদীদের কথা, জানি ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের কথা, এবং জানি এই ভারতেই আশির দশকে তেড়েফুঁড়ে ওঠা শিখ মৌলবাদীদের কথাও --- যাদের হাতে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন। ‘অহিংসার ধর্ম’ বলে কথিত বৌদ্ধধর্মও এ প্রবণতার বাইরে নয় মোটেই। থাইল্যান্ড, বর্মা ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের তরফেও জঙ্গি প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আজ অনেকেরই হয়ত আর মনে নেই, দুহাজার এক সালের কুখ্যাত ‘নাইন ইলেভেন’-এর ঘটনার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নাশকতার ঘটনা বলে ধরা হত উনিশশো পঁচানব্বই সালের দুটি ঘটনাকে। তার একটি ঘটেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা সিটি-র ‘ট্রেড সেন্টার’-এ, যাতে বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে ওই ভবনটিতে ধাক্কা মেরে প্রায় দেড়শো লোকের প্রাণনাশ করা হয়েছিল, এবং সেটা ঘটিয়েছিল কতিপয় খ্রিস্টান মৌলবাদী। অন্যটি ঘটেছিল জাপানে, যেখানে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে বিষাক্ত সারিন গ্যাসের কৌটো ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বিষাক্ত গ্যাসে সরাসরি যত না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এবং গুরুতরভাবে জখম হয় সুড়ঙ্গের ভেতরে আতঙ্কগ্রস্তদের দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে --- এবং সেটা ঘটিয়েছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী। আমরা বৌদ্ধধর্মটা অন্তত অহিংস বলে জানতাম, তাই না? তার দু বছর আগে উনিশশো তিরানব্বই সালে ভারতে সংঘটিত কুখ্যাত ‘বম্বে বিস্ফোরণ’ অবশ্যই একটি বৃহৎ নাশকতা, এবং সেটা ঘটিয়েছিল মুসলমান জঙ্গিরাই। কিন্তু, মুসলমান মৌলবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটা ছিল তার এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া। বলা বাহুল্য, এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকেও আবার মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বলেই দেখানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা কোনও সাম্প্রতিক ‘অত্যাচার’-এর প্রতিক্রিয়া ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীদের নিজেদের দাবি অনুযায়ীই, এটা নাকি মোগল সম্রাট বাবরের তরফে ঘটে যাওয়া পাঁচশ বছরের পুরোনো এক অন্যায়ের প্রতিকার মাত্র! এবং, এই বাবরি মসজিদের ধ্বংসও আবার এ দেশে ধর্মীয় নাশকতার প্রথম ঘটনা নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও নয়। এ দেশে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় নাশকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে যদি কোনও বিশেষ ঘটনাকে ধরতেই হয়, তো সেটা সম্ভবত উনিশশো চুরাশি সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার ঘটনা। সেটা মুসলমানেরা ঘটায়নি, ঘটিয়েছিল শিখ মৌলবাদীরা।

    ধর্মের সমালোচনা যে আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সমালোচনা মানে সব ধর্মেরই সমালোচনা, ইসলামেরও।  কিন্তু, ইসলাম ধর্মের সমালোচনায় একটি ভুল আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা বলি, ইসলাম ধর্ম (এবং সেইহেতু ওই ধর্মাবলম্বীরাও) তো হিংস্র হবারই কথা, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার উপাদান খুব বেশি আছে। হয়ত সত্যিই আছে, কিন্তু যুক্তিটা তা সত্ত্বেও ভুল, এবং দুটো দিক থেকেই ভুল। কারণ, প্রথমত, সব ধর্মশাস্ত্রেই হিংসার উপাদান কমবেশি আছে। এবং দ্বিতীয়ত, যে ধর্মের শাস্ত্রে হিংসার উপাদান কিছু কম আছে সে ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আচরণে হিংসা কম থাকবেই --- এ প্রত্যাশার ভিত্তিটাও বোধহয় খুব পোক্ত নয়।
     
    হিংস্রতার বর্ণনা ও তার নৈতিক সমর্থন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে কোরানের চেয়ে কিছু কম নেই। কম নেই বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও, যদিও, হয়ত বা সত্যিই কিছু কম আছে নিউ টেস্টামেন্টে।  আবার, শাস্ত্রগ্রন্থে হিংস্রতার বর্ণনা কম থাকলেই যে ধার্মিকেরা কিছু কম হিংস্র হবেন, এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। যুদ্ধলিপ্সা, হত্যা এবং হিংস্রতায় যিনি প্রবাদপ্রতিম, সেই চেঙ্গিস খান কিন্তু মোটেই মুসলমান ছিলেন না, 'খান' পদবী দেখে যা-ই মনে হোক।  খ্রিস্টানরা ষোড়শ-সপ্তদশ শতক জুড়ে আমেরিকাতে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের যাবতীয় ক্ষমার বাণী সত্ত্বেও, তা ইতিহাসে বিরল। মধ্যযুগের শেষে এবং আধুনিক যুগের গোড়ায় 'ক্ষমাশীল' খ্রিস্টানদের ডাইনি পোড়ানোর হিড়িক দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন না, এমন কেউই কি আছেন এ যুগে? 'ইসলামিক স্টেট' তার ঘোষিত 'বিধর্মীদের' হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই, বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে, এবং সেটা সারা জগতের লোককে ডেকে দেখানোর জন্যেও বটে। দেখ হে, আমরা কত ভয়ঙ্কর, কত বড় বীর, এই রকম একটা ভাব। কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টানরা ডাইনি মারত ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে, এবং যন্ত্রণা দেওয়াটাই সেখানে মূল উদ্দেশ্য, যাতে অকথ্য অত্যাচার করে তার মুখ থেকে অন্য আরেক ‘ডাইনি’-র নাম বার করে আনা যায়। এই কাজটির জন্য তারা বিচিত্র ও বীভৎস সব কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিল। কাজেই, বিশেষ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় হিংস্রতার সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় অনুমোদনের একটা সহজ সরল সম্পর্ক ধরে নেওয়াটা বোধহয় সব সময় খুব নিরাপদ নয়।

    মুসলমানদের হিংস্রতার মতই আরেকটি বাজে গল্প আছে মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে। মুসলমানদের হুহু করে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং দ্রুত তারা হিন্দুদেরকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দেশটাকে দখল করে ফেলবে, এই মিথ্যে আতঙ্কটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু, বহু মানুষই যা সরলমনে বিশ্বাস করেন। এখানে বলে নেওয়া দরকার, মুসলিম জনসংখ্যা যে বাড়ছে এবং তার হার যে হিন্দুদের চেয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বেশিই বটে, এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। মিথ্যে হল এই প্রচারটা যে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের চেয়ে তাদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে যাবে, এবং তারাই দেশটাকে গ্রাস করে ফেলবে। আসলে ঘটনা হল, সব ধর্মের জনসংখ্যাই বাড়ছে, এবং সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সব দেশেই সংখ্যাগুরুদের চেয়ে সামান্য একটু বেশি হয়, যদি সেখানে সংখ্যালঘু নিধন না চলে, এবং বিশেষত যদি সে সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হয়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির আসল যোগটা ধর্মের সঙ্গে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যেও গরিবদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি যদি আলাদা করে হিসেব করা হয় তো দেখা যাবে যে তা সচ্ছল হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পন্নরা ভাল রোজগার করতে চায়, ভালভাবে থাকতে চায়, এবং সন্তানের জীবনযাপনও যাতে সে রকমই হয়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। তারা জানে যে সেটা করতে গেলে সন্তানকে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া দরকার, তার পেছনে ভাল করে যত্ন ও খরচাপাতি করা দরকার, এবং সেটা করার ক্ষমতাও তাদের আছে। ছেলেপুলে বেশি হলে তা সম্ভব নয়, এবং তাতে করে বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে, মা ঘরের বাইরে গিয়ে পেশাগত কাজকর্ম করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে না। ফলে, তারা বেশি সন্তান একদমই চায় না। উল্টোদিকে, গরিবরা এত কথা জানেও না আর তাদের সে ক্ষমতাও নেই। ফলে তারা যত বেশি সম্ভব সন্তান চায়, সেটা মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও। গরিবরা জানে তাদের সন্তান দুধেভাতে থাকবে না, এবং শেষপর্যন্ত কোনও শ্রমসাধ্য কাজেই যোগ দেবে যাতে শিক্ষা বা 'স্কিল' সেভাবে লাগে না। ফলে, সন্তানের সংখ্যা বেশি হলে দুরবস্থা আর অযত্নের মধ্যেও হয়ত রোগভোগ মৃত্যু এড়িয়ে কেউ কেউ টিঁকে যাবে, আর পরিশ্রম করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে, যৎসামান্য হলেও। অথচ এদেরই যখন অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তখন এরা মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখাতে চাইবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে কেরানি-আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল এইসব বানাতে চাইবে, ফলে স্বল্পসংখ্যক সন্তান চাইবে, এবং মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। একটু ভাল করে খোঁজখবর করলেই জানা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে কিন্তু আসলে ঠিক তাইই, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ক্ষেত্রেই। এবং, মুসলমানরা পিছিয়ে আছে বলেই তাদের অগ্রগতিও দ্রুততর। তাদের জন্মহারের বৃদ্ধি কমছে কিছু বেশি দ্রুতলয়ে। এভাবে চললে আর দেড় দুই দশক পরেই হয়ত হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে, এবং মুসলমানদের ভারত দখলের কুৎসিত অশিক্ষিত গল্পতেও তখন আর কেউই পাত্তা দেবে না। ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি এই দিকেই।
     
    এখানে 'অগ্রগতি' বলতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বুঝিয়েছি। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই কমিয়ে আনাটা হিন্দুদের চেয়ে বেশি হারে ঘটছে (বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে জনসংখ্যা কমে যাওয়া নয় কিন্তু, এ হার কমতে কমতে শূন্যের নিচে নামলে তবেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে)। এই কমে আসাটা উন্নয়নের পরোক্ষ সূচক। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন বাদে যে হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।  পিছিয়ে আছে বলেই অগ্রগতি বেশি তাড়াতাড়ি হচ্ছে --- এ কথাটা হয়ত অনেককে বিস্মিত করতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার কারণ আছে। নিশ্চয়ই জানেন, ভারত চিন ব্রাজিলের মত একটু এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশি। এর কারণ হচ্ছে, একবার উন্নত হয়ে গেলে একই গতিতে আরও আরও উন্নত হতে থাকাটা ক্রমশই আরও বেশি বেশি করে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই উন্নয়নের প্রথম দিকে বৃদ্ধির যে গতি থাকে পরের দিকে আর তত গতি থাকে না। মুসলমানদের জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও তাইই ঘটছে, এবং আরও ঘটবে (ও দুটোকে খুব নিখুঁতভাবে মেলানোর দরকার নেই, যদিও)।

    আমরা যারা এই বিষয়গুলোকে এইভাবে ভাবার চেষ্টা করি, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে প্রায়শই, ফেসবুকে সে গর্জন রোজই শোনা যায়। এখন, এটা তো সত্যি কথাই যে, পশ্চিমবাংলার যুক্তিবাদীদের লেখালিখিতে, এবং যথারীতি আমার নিজের লেখাতেও, হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনাই বেশি আসে, মুসলমান মৌলবাদের কথা বাস্তবিকই আসে অনেক কম। ঠিক এই অভিযোগটি সেক্যুলারদের প্রতি হিন্দু মৌলবাদীরা করে থাকেন নিয়মিতই (বস্তুত, প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরাই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজের সেক্যুলারদের প্রতি এই একই অভিযোগ করে থাকে)। কিন্তু একটু ভাবলে বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এবং, অন্যরকম কিছু হলেই বরং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত হত, এমন কি অন্যায়ও হত। কেন, তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ যে মৌলবাদী হুমকিটির মুখোমুখি, সেটা তো হিন্দু মৌলবাদই, অন্য কোনও মৌলবাদ নয়। শিক্ষা-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার ধর্মীয়করণ, সংবিধানকে পাল্টে দেবার পরিকল্পনা, ভিন-ধর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্মের জিগির তুলে তার আড়ালে সরকারি সম্পত্তি পাচার --- এ সব তো মুসলমানরা করছে না, হিন্দুত্ববাদীরাই করছে। অতএব, তাদের মুখোশ খোলাটাই এখানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। মুসলমান জঙ্গিরা নাশকতা ঘটালে তার মোকাবিলার জন্য পুলিশ-মিলিটারি আছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা মৌলবাদীদের রোখবার দায়িত্ব তো আর পুলিশ-মিলিটারি নেবে না, সেটা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের কাজ। আমি যে দেশে এবং যে ধর্মীয় সমাজের মধ্যে বাস করি, সেখানে যারা অন্ধত্ব ও হিংস্রতা ছড়াচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে বিনাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই তো আমার পক্ষে স্বাভাবিক, তাই না? বাংলাদেশি মুক্তমনারা যদি মুসলমান ধর্ম ছেড়ে হিন্দুদেরকে গালি দিতে থাকতেন, বা বার্ট্র্যান্ড রাসেল যদি 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ ক্রিশ্চান' না লিখে 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' লিখে বসতেন, তাহলে যেমন উদ্ভট অসঙ্গত কাজ হত, এখানে আমরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান নিয়ে পড়লেও ঠিকই একই ব্যাপার হবে (যদিও বাংলাদেশি মুক্তমনারা ঠিক যা বলেন এবং যেভাবে বলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে, তবে সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না)। দ্বিতীয়ত, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মুক্তমনা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা হিন্দু সমাজে জন্মেছি বলেই সে সমাজ ও তার ধর্ম শাস্ত্র রীতিনীতি আচার বিচার এইসব অনেক বেশি জানি, ফলে সে ব্যাপারে আমাদের সমালোচনা অনেক বেশি নিরেট, নির্ভুল এবং অর্থবহ হয়, যা ভিনধর্মী সমাজে যারা জন্মেছে তারা পারবেনা। ঠিক একই কারণে, মুসলমান সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে মুসলমান সমাজে জন্মানো যুক্তিবাদীদের সমালোচনা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ হয়। যদিও, এর মানে মোটেই এই নয় যে এক ধর্মে জন্মানো লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করতেই পারবেনা --- যে কোনও মানুষের যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে, এবং করা উচিত। তবে কিনা, নিজের সমাজের অন্ধত্ব অযুক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে সোচ্চার হওয়াটা যে কোনও মানুষেরই ‘স্বাভাবিক’ অধিকার, কর্তব্যও বটে।
     
    আচ্ছা, তা সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল --- মুসলমানেরা ধর্মান্ধতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, না পিছিয়ে? এসব ঠিকঠাক বলতে গেলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল চাই, না হলে সবটাই চায়ের দোকানের আড্ডা হয়ে যাবে। আপাতত আছে কি সে সব, আমাদের হাতে? সুখের বিষয়, সে সব আছে। এই কিছুদিন মাত্র আগেও সেভাবে ছিল না, কিন্তু এই একুশ শতকে বেশ ভালভাবেই আছে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সংস্থা এখন মানুষের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রামাণ্য সমীক্ষা করে থাকে, তার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসও পড়ে। এইসব সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা নানা গভীর গবেষণাও করে থাকেন, এবং তাতে তেমন চমকপ্রদ কোনও ফলাফল পাওয়া গেলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সে নিয়ে আলোড়ন উঠে যায়। এই রকমই একটি সংস্থা হল ‘উইন গ্যালাপ’। তারা সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিখ্যাত সমীক্ষা চালিয়েছিল ২০১২ সালে, তাতে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য, ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা, এইসবের হিসেব ছিল। তাতে কি দেখা গেল? নিচে দেখে নিন ২০১২ সালের পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল, সুন্দর করে সারণিতে সাজানো। এখানে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন অথচ ধার্মিক বলে দাবি করেন না --- এমন মানুষের অনুপাত মুসলমানদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। কারা কবে সমীক্ষাটি করেছে, এবং তা কোন নথিতে প্রকাশিত, সব তথ্যই পাবেন এখানে।
     
     
    এবার একটি ইসলামীয় দেশকে নিয়ে ভাবা যাক, যেখানে প্রায় সর্বাত্মক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ইসলামীয় রাষ্ট্র আছে। ধরুন, ইরান। এই  দেশটা সম্পর্কে আপনি কী জানেন? জানি, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই একই কথা বলবেন। ছিয়ানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ (সরকারি সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী) মুসলমান অধ্যুষিত একটি ধর্মান্ধ দেশ, যার মধ্যে আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা শিয়া মুসলমানদের। কট্টর মৌলবাদীরা সেখানে দেশ চালায়, প্রশ্ন করলেই কোতল হতে হয়, মুক্তচিন্তা কল্পনাতীত। সম্প্রতি সেখানে হুলুস্থুলু ঘটে গিয়েছে, সে সব খবরাখবর আপনারা দেখেছেন। একটি মেয়েকে ইসলাম-সম্মত পোশাক না পরার অপরাধে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তাই নিয়ে প্রবল আন্দোলন হলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে এসেছে দমন-পীড়ন, এবং সদ্য-সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীর সামনে তার প্রতিবাদ করায় সে দেশের জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে মৌলবাদের দাপটের ছবিটা একদমই স্পষ্ট, আবার গণমানুষের আপত্তিটাও খুব আবছা নয়।

    আসলে, এখানে ধর্মীয় রাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপের তলাতেই লুকিয়ে আছে অন্য এক বাস্তবতা। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা (GAMAAN), ইরানই যাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু, তারা ২০২০ সালে  ইরানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে। সে সমীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্বাস করতে হয়, তো সেখানে সাঁইত্রিশ শতাংশ মত লোক নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন (শিয়া-সুন্নি মিলিয়ে), যাঁরা কোনও ধর্মীয় পরিচয় দিতে রাজি নন তাঁরা বাইশ শতাংশ, যাঁরা পরিষ্কারভাবে নিজেকে নাস্তিক-অজ্ঞাবাদী-মানবতাবাদী এইসব বলে পরিচয় দেন তাঁরা সব মিলিয়ে প্রায় সতেরো শতাংশ, যাঁরা নিজেকে শুধুই 'স্পিরিচুয়াল' বলেন তাঁরা প্রায় সাত শতাংশ, এবং বাকিরা আরও নানা বিচিত্র ধর্মের মানুষ। নিচের ছবি দুটোয় সমীক্ষার ফলাফল এক নজরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ বন্ধু, একুশ শতকে পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং হয়ত বিশ শতকের চেয়েও দ্রুত গতিতে! এবং, ইসলামীয় দেশগুলো কোনওভাবেই এ প্রবণতার বাইরে নয়। নিচে সে সমীক্ষার ফলাফল দেখুন, চিত্রাকারে।
     
     
    ধর্ম, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, অবতার ইত্যাদি ধ্যানধারণা বিষয়ে ইরান-বাসীদের বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) ঠিক কী রকম, সে চিত্রও উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। নিচে দেখুন।
     
     
     
    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ধর্মপ্রীতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে যেসব জনপ্রিয় ধ্যানধারণা আছে, তার সমর্থন এইসব সমীক্ষার ফলাফল থেকে মিলছে না মোটেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইঙ্গিত এখান থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নাকি একটা সম্পূর্ণ আলাদা উল্টোপাল্টা কিছু। সেটা বুঝতে গেলে বর্তমান শতকের বিগত কয়েকটি দশকে গোটা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি এক নজরে দেখে নেওয়া দরকার। এমনিতে সেটা একটু মুশকিল, কারণ, তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার করা অনেকগুলো সমীক্ষা-কর্ম খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর প্রাসঙ্গিক ফলাফলটুকু বেছে নিয়ে তুলনা করতে হবে। সেইজন্যে, আমি যতটা পেরেছি সেগুলোকে সাজিয়ে একটা মাত্র সারণিতে নিয়ে এসেছি, তাতে পাঠিকের কিছু সুবিধে হবার কথা। সেটা নিচে দিলাম, দেখুন। সারণির কোন সংখ্যাটি কোন সংস্থার করা কবেকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, সেটা ওখানেই দেওয়া আছে। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য কোনও সংস্থার তরফে দেওয়া নয়। এটি দিয়েছিলেন সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান, তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টুকরো সমীক্ষার ফলাফল এক জায়গায় করে।
     
     
     
     
    এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আসলে, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, সব ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেই ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে প্রবণতা রয়েছে, মুসলমানরা কোনও মতেই সে প্রবণতার বাইরে নয় (অবশ্যই, এ হিসেব সামগ্রিক ও বৈশ্বিক, এবং অঞ্চল ও অন্যান্য পরিস্থিতি-ভেদে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।

    কেন এই জগৎজোড়া প্রবণতা? আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বলবে, সবই যুগের হাওয়া। মানে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র-মানবতাবাদ-যুক্তিবাদ এইসবের প্রভাবই এর কারণ। কথাটা সত্যি, কিন্তু সমাজবিদেরা এর চেয়েও বড় কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা আজ সুপ্রচুর তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, মানব সমাজের উন্নতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিপ্রতীপ। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে, সমাজকল্যাণে সরকার বেশি বেশি খরচা করলে, অর্থনৈতিক অসাম্য কমলে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ভাল হলে ধর্মের রমরমা কমতে থাকে (এখানে আর বিস্তারে যাব না, যদিও আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পরেও করব)। সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়ম মুসলমান সমাজের ওপরে প্রযোজ্য হবে না, এমনটা  ভেবে নেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ইরানে যা ঘটছে, সেটা সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়মের চাপেই। নেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই দেখতে পাবেন, ইরানের মাথাপিছু উৎপাদন ভারতের প্রায় আটগুণ, বাজেটের শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচ প্রায় সাতগুণ এবং শিক্ষাখাতে তা দেড়গুণেরও বেশি, এবং নারী ও পুরুষ উভয়েরই আয়ু আমাদের থেকে ভাল (গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের দশা শোচনীয়, যদিও)। কাজেই, ইরানে মৌলবাদী রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর কেন গণ-অসন্তোষের চাপ আছে এবং পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে কেন তা ততটা নেই --- এইটা বুঝতে পারা খুব কঠিন না।

    বলা প্রয়োজন, সমাজ-বিকাশজাত এই চাপের খেলা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোতেও, বিশেষত এই একুশ শতকে। এই সেদিন পর্যন্ত আমেরিকা আর আয়ার্ল্যান্ডে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য ছিল অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধার্মিক সমাজবিদেরা তাই দেখিয়ে বলতেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেই ধর্মের রমরমা কমবে, এটা হচ্ছে গিয়ে প্রগতিবাদীদের বানানো একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিষয়টা জলের মত স্বচ্ছ হয়ে আসছে, এবং আপত্তি তোলবার পরিসর হয়ে আসছে অতিশয় সঙ্কুচিত। মার্কিন সমাজে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনটা দেখতে পাবেন এক নজরেই, নিচের লেখচিত্রে। লক্ষ করে দেখুন, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমেরিকাতে যখন খ্রিস্টানরা এসে ঠেকেছে ৮৫ শতাংশ থেকে ৬৯-এ, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যখন মোটের ওপর একই আছে, তখন ধর্মহীনদের শতকরা অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে শূন্য থেকে একুশে (অন্য কিছু সমীক্ষায় এটি প্রায় তিরিশ বলে দেখানো হয়েছে, যদিও)।
     
     
     
    আর, এই শতকের প্রথম দশকে আয়ার্ল্যান্ড-বাসীর ধর্মবিশ্বাসে যা ঘটেছে, সেটা দেখে নিন নিচের সারণিতে। আয়ার্ল্যান্ড হল গোঁড়া ক্যাথোলিক অধ্যুষিত একটি দেশ। একটা উন্নত পশ্চিমী দেশের পক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে, এই সেদিন পর্যন্তও এই দেশটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল, এবং গর্ভপাতের দরকার পড়লে আইরিশ নারীদেরকে পার্শ্ববর্তী ব্রিটেনে গিয়ে হাজির হতে হত। তারপর উন্নত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্ম-সংস্কৃতির দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলাফল তখনই সারা বিশ্বের নজরে এল, যখন দু হাজার আঠেরো সালে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়ে গেল (আয়ার্ল্যান্ড নিয়ে আমার আলাদা একটি লেখা ‘গুরুচণ্ডালি’-তে পাবেন)।
     
     
    বলা বাহুল্য, মোটের ওপর এই একই ঘটনা ঘটবার কথা মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও, এবং ঘটছেও তাইই। বেশ কয়েকটি ধর্ম-শাসিত রক্ষণশীল দেশে কমছে কঠোর ধর্মীয় বাধানিষেধ, বাড়ছে ধর্মহীনতা, এবং সাধারণ্যে কমছে ধর্মের প্রতি আনুগত্য, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা  এখনও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। বিষয়টাকে যদি খুঁটিয়ে নজর করা হয়, তাহলে এমন অনেক কিছুই হয়ত জানা যাবে, যে ব্যাপারে আমরা আগে সচেতন ছিলাম না। যেমন, ইরান-ইরাক-আফগানিস্তান যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়ে গেল, এবং যেভাবে তুর্কি দেশটিতে ক্রমেই শক্ত হচ্ছে মৌলবাদের মুঠি আর টলমল করছে ধর্মনিরপেক্ষতার আসন, সে নিয়ে আমরা প্রায়শই দুশ্চিন্তিত হই। ঠিকই করি। কিন্তু, আমরা কখনই খেয়াল করে দেখিনা যে, এই ধরাধামে একান্নটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে একুশটিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই চলছে (সে ধর্মনিরপেক্ষতার দশা প্রায়শই আমাদের চেয়ে খুব একটা ভাল নয় যদিও, তবে সেটা তো অন্য চর্চা)। এবং, ধর্মনিরপেক্ষীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চালু, সে তালিকায় এই সেদিনও যুক্ত হয়েছে সুদান।

    তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে, এবং আসবেও, জানা কথা। ওপরে উদ্ধৃত আমার তরুণ বন্ধুর ভাষায়, সে প্রশ্নটা এ রকম --- “আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?”। সত্যিই তো, প্রশ্ন হতেই পারে। ওপরে ব্যাখ্যা করেছি (এবং পূর্ববর্তী পর্বগুলোতেও), মৌলবাদী উত্থান সব ধর্মেই হয়েছে, শুধু ইসলামে নয়। এবং, জঙ্গি ক্রিয়াকলাপও কম বেশি হয়েছে সব ধর্মের তরফেই। সেই সত্যে ভর করে আমি হয়ত তর্ক করতে পারতাম, অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের তফাতটা তাহলে গুণগত নয়, নিছকই পরিমাণগত। এরা কম, ওরা কিছু বেশি, এটুকুই মাত্র। কিন্তু, এ তর্ক শেষতক দাঁড়াবে না। পাথরের নুড়ির সঙ্গে পাথরের টিলার গুণগত পার্থক্যকে স্রেফ পরিমাণের দোহাই দিয়ে নস্যাৎ করাটা বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামীয় জঙ্গিপনার নিবিড়তা, ঘনত্ব, প্রচণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিকতা, এ সবকে নিছক কম-বেশির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। যদি বলি, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিলেও আসল সমস্যাটা রয়েই যায়। সব মুসলমানই তো আর মৌলবাদী জঙ্গি নন, তার এক অতি ক্ষুদ্র অংশই কেবল মৌলবাদী জঙ্গি। কাজেই, এই জঙ্গিপনাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকে, ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটির কোনও মৌল উপাদান থেকেই কি এই বৈশিষ্ট্যটি উৎসারিত হচ্ছে, নাকি, মুসলমান অধ্যুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রগুলোর  কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিই এ বৈশিষ্ট্যের নির্মাতা?
     
    কেউ কেউ এ প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিয়ে ফেলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, এ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটিরই মৌল উপাদান থেকে নিঃসৃত, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার অনুমোদন আছে। এ যুক্তিটি যে ভুল, সে আলোচনা ওপরে করেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর তবে কীভাবে খোঁজা যায়? আজকের দিনে বিজ্ঞানে, বিশেষত সমাজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এ ধরনের প্রশ্নের সমাধানের জন্য যা করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ এক্সপেরিমেন্ট’। সমাজের ওপর তো আর পরীক্ষা চলবে না, অতএব সেখানে দরকার ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি একই রকম করে তৈরি (বা সংগ্রহ) করে রাখা দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটিতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক উপাদান যোগ করে (বা একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে), এবং অপরটিতে তা না করে, শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রটিতে কোনও এক নির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফল এলো কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, যাতে ওই নির্দিষ্ট উপাদানটির (বা প্রক্রিয়াটির) সঙ্গে ওই ফলাফলটির কার্যকারণ সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেমন একই ধরনের দু দল রুগির মধ্যে একদলকে সে ওষুধ দিয়ে এবং অন্যদলকে তা না দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে দ্বিতীয় দলের তুলনায় প্রথম দলের কিছু বেশি উপকার হল কিনা, এও তেমনি। মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি? এই ধরনের অনুসন্ধান হয়ত আমাদেরকে এ ধরনের প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রসঙ্গে এ রকম গবেষণার কথা আমাদের জানা নেই।
     
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়। মুসলমান সমাজ ও দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি, বিকাশের সুনির্দিষ্ট অবস্থা, তাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের তরফে নানা মতাদর্শ ও গোষ্ঠী-পরিচিতি নির্মাণের খেলা, এবং কখন ঠিক কোন তাড়নায় তারা কোন বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, আর কোন বৃহৎ শক্তিই বা তাদেরকে সামলানো বা ব্যবহার করার জন্য ঠিক কী চাল চালছে --- এই সবের ভাল বিশ্লেষণ ছাড়া বিষয়টা ঠিকভাবে বোঝাই যাবে না। তাছাড়া, এই দেশগুলোতে 'সেক্যুলার' শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও প্রায়শই শাসকরা স্বৈরাচারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেন, এবং, কেনই বা মৌলবাদীরা বারবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থাকার ভাণ করতে পারে, এটাও এ প্রসঙ্গে গভীরভাবে বোঝার বিষয়।  

    বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নে যথার্থ ও যথেষ্ট বিশ্লেষণ এবং নিষ্পত্তিমূলক উত্তর এখনও আসেনি সমাজবিজ্ঞানীদের তরফ থেকে। যতদিন তা না আসে, ততদিন আমরা কী করতে পারি? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারি, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা জানা গেছে সে সব জানার চেষ্টা করতে পারি, যুক্তিসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার অভ্যাস করতে পারি …………… আর কিছু পারি কি?

    হ্যাঁ, পারি বোধহয়। মন থেকে অকারণ সন্দেহ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ এইসব চিহ্নিত করে তা বর্জন করার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে পারি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৫০৩৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • আধুনিকতার খোঁজে | 122.163.77.190 | ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৯515158
  • @:-(
    আপনার মতোই আমিও চাই যে মাদ্রাসা ও আরএসএস পাঠশালার মগজধোলাই এখনই বন্ধ হোক। তবে লালনের গান আর রুমির কবিতা আর বাখের চার্চ সংগীত আমাদের থেকে দূরে চলে যাক তাও চাই না। আমার প্রশ্ন ছিল ইউরোসেন্ট্রিক বিজ্ঞান ও অতি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মও ক্ষেত্র বিশেষে হাত ধরাধরি করে ফেলে। খোমেইনির সাঙ্গোপাঙ্গদের হাতে ইরানের মেয়েদের হাল দেখুন। শিক্ষার হার বেশি হলেও কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের হার বিশ্বমানে একদম নিচের দিকে। অথচ সেই ইরানেই মেয়েদের মধ্যে রাইনোপ্লাস্টির হার ভীষণ বেশি এবং এ ব্যাপারে প্রযুক্তিগত দিক থেকেও ইরান যে কোনো অত্যাধুনিক দেশকে টেক্কা দিতে পারে। ইরানের মেয়েদের সৌন্দর্যবর্ধন তাদের অধিকারের মধ্যেই পরে। কিন্তু হিজাব বোরখার নিচে টক্সিক পুরুষতান্ত্রিক মোল্লাতন্ত্রের ব্যক্তিমালিকানায় এই প্রযুক্তিগত বর্ধিত সৌন্দর্য ব্যক্তিমালিক মোল্লাটিরও আল্হাদের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। এবং এতে তার মোল্লাতন্ত্র একটুও তসকায়না। (হিজাব বিরোধী আন্দোলন আশা করি ইরানের এই হিসাব পালটে debe.) তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে সেটাও আধুনিকতার একটি জরুরি প্রশ্ন। এই লেখাটিতে সেই প্রশ্নের জায়গা আছে বলে আমার মনে হয়েছিল। 
  • আধুনিকতার খোঁজে | 122.163.77.190 | ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১৮515159
  • @দেবাশিসবাবু 
    ধন্যবাদ। আমি নিজেও যৎসামান্য লেখালিখি করি তাই খানিকটা আন্দাজ করতে পারি একটা সৎ লেখার পেছনে লেখকের কতটা প্রচেষ্টা শামিল থাকতে পারে। সেখানে আল পটকা মন্তব্য যদি বিষয়ের বা ভাষার যোগ্যতামান না পেরোতে পারে তবে সে দায় মন্তব্যকারীর নিজের অর্থাৎ আমার। সেখানে ব্যক্তিগত অভিমানের জায়গা নেই। 
    কয়েকদিন হয়তো আসা হবে না। শেষোক্ত মন্তব্যটিকে গ্রহণ করে আপনি যখন সাহস দিয়েছেন তখন একটি গল্প শেয়ার করতে চাই।  আপনি নিশ্চয়ই ত্রুগানিনির কথা জানেন। তাসমানিয়ার আদিম জনজাতির ছিল ৬৫ হাজার বছরের ইতিহাস। ১৮০০ সালের শুরু থেকেই ব্রিটিশ সেটলার, নির্বাসিত শ্বেতাঙ্গ কয়েদি, তিমিশিকারীদের দাপটে হু হু করে আসতে থাকে তাদের সংখ্যা। ১৮২৪ সালে জর্জ আর্থারের আমলে কয়েক বছরের মধ্যেই একাধিক জেনোসাইডে প্রায় উবে যায় শিকারী কুড়ুনি জাতিটি। বেঁচে থাকা শেষ কয়েকজনের মধ্যে একজন ছিল ত্রুগানিনি। জলকন্যার মতোই সমুদ্রের গভীর থেকে বিদ্যুৎচমকে তুলে আনতে পারতো সুস্বাদু মাছ, সেজে উঠবার মতো ঝিনুকের দানা। প্রকৃতি ও শিকারী কুড়ুনি সমাজে যে কোনো পুরুষের থেকে কিছু কম স্বাধীনতা ছিল না তার। কিন্তু পশ্চিমী আধুনিকতার কাছে সে ছিল নিতান্তই কুৎসিতদর্শনা এক আদিম অপর। যাই হোক জর্জ অগাস্টাস নামে এক মিশনারি কলোনিয়াল সরকারের সাথে সংঘাত এড়িয়ে চেষ্টা করেন শেষ কয়েকশো মানুষকে বাঁচানোর। ত্রুগানিনির মধ্যস্থতায় অগাস্টাস দূরে ফ্লিন্ডার্স আইল্যান্ডে ইউরোপীয় পরিবেশে তাদের বসতি তৈরি করেন। খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টাও করেন। তাঁর সে চেষ্টা সফল হয়নি। একটি মানুষও দিক্ষিত হয়নি। উল্টে এক নিদারুন বিষন্নতার শিকার হয় তারা। এবং দশ বছরের মধ্যে শেষ জীবিত প্রতিনিধি ত্রুগানিনি সমেত ফৌত হয়ে যায় তাসমানিয়ার আদিম জনজাতি। আধুনিকতা তাসমানিয়ায় পা দেওয়ার মাত্র পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই। 
    ইউরোসেন্ট্রিক আধুনিকতা কীভাবে কোথায় কোন স্তরে গিয়ে গ্রহণযোগ্য হয়ে ঊঠতে পারে বা তার সেই নৈতিক বল আছে কিনা, বিজ্ঞানের সেখানে কী ভূমিকা হওয়া দরকার সেটার ব্যাপারে আপনার আলোকপাত কাম্য। উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি পেরেছি। ভাষার ত্রুটি মার্জনীয়। আপনার প্রাসঙ্গিক নাই মনে হতে পারে। তাহলে ইগনোর করবেন। 
     
  • dc | 2401:4900:231c:128a:6870:7b5e:48f5:41eb | ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৯515160
  • আধুনিকতার খোঁজের পোস্ট পড়ে মনে দুইটা প্রশ্ন এলো :-) 
     
    প্রথমত, আপনি বেশ কিছু উদাহরন দিয়েছেন যেখানে য়ুরোপীয় দেশগুলো অন্যান্য দেশে গিয়ে সেখানকার সভ্যতা-সংস্ক্রিতি-জীবনযাপনের পদ্ধতি ধংস করেছে আর নিজেদের ধর্ম বা ওয়ে অফ লাইফ চাপিয়ে দিয়েছে। উদাহরনগুলো অতি যথার্থ, না মেনে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। কিন্তু, আমি যদিও ইতিহাসে একেবারেই পাতিহাঁস, তবুও আমার যেন মনে হচ্ছে এই একইভাবে নানান এশিয়ান সভ্যতাও, তারা যখন নিজেদের সভ্যতার শিখরে ছিল, তখন গিয়ে অন্য দেশের সভ্যতা একইরকম ভাবে ধংস করেছে আর নিজেদের কালচার চাপিয়ে দিয়েছে। যেমন এক সময়ে জাপান চীন দেশ দখল করেছিল, আবার চীনও যেন অন্যদের সাথে এরকম কান্ড করেছিল বলে মনে হচ্ছে। আরও পিছিয়ে গেলে দেখতে পাই ইনকারা অন্যদের ওপর অত্যাচার করতো, রোমান আর গ্রিকরাও করতো, ব্যাবিলনিয়নরাও করতো, ইজিপ্সিয়ানরাও করতো, পর্সিয়ানরাও করতো। যদ্দুর মনে হয়, মানুষের ইতিহাসে এমন কোন জাতি বা সভ্যতা নেই যারা নিজেদের সুসময়ে অন্যদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেনি আর তাদের কালচার ধ্বংস করেনি। তাহলে কি এরকম ভাবা যেতে পারে যে আধিপত্য বিস্তার করাটা বেসিক হিউম্যান নেচার, হাজার হাজার বছর ধরে চলছে, এর সাথে ঠিক আধুনিকতার প্রশ্ন নেই? 
     
    দ্বিতীয়, আপনি ইউরোসেন্ট্রিক আধুনিকতার কথা বলেছেন। কিন্তু আমার তো মনে হয়েছে যে আধুনিকতা একটা প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে গেছে, সেই সময়ের নিরিখে যে সভ্যতা ডমিন্যান্ট হয়েছে সেই সভ্যতাই অন্যদের তুলনায় আধুনিক হয়েছে আর সেই আধুনিকতার সুযোগ নিয়ে অন্যদের ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে। যেমন ধরুন চীনেরা এক সময়ে গানপাউডার আর কামান আবিষ্কার করেছিল, সেই সময়ে তারাই ছিল আধুনিক। আবার এক সময়ে ইসলামিক সভ্যতাগুলোয় প্রচুর অংক, বিজ্ঞান ইত্যাদির চর্চা হতো, তখন তারাই ছিল অত্যাধুনিক। তারপর য়ুরোপীয় দেশগুলোয় বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির চর্চা বাড়লো, সেগুলো হয়ে উঠলো আধুনিক। তাহলে প্রশ্নটা এরকমঃ আধুনিকতা, যা কিনা আমার মতে আসলে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো আর জীবনযাত্রার মান বাড়ানো, একেক সময়ে একেক সভ্যতায় এসেছে? এখন হয়তো য়ুরোপীয় সভ্যতাগুলো আধুনিকতার ধারক হয়ে উঠেছে, কিন্তু স্রেফ য়ুরোপীয় সভ্যতাকে আধুনিকতার সাথে এক করে দেওয়াটা কি ঠিক হবে? 
     
     (লাস্টে ডিসক্লেমার দিয়ে দি বাবা। আমি ইতিহাসে বিশেষভাবে অজ্ঞ। আর আমি ক্যাপিটালিজমের সমর্থক আর মুনাফা করার প্রবল সমর্থক)।   
  • dc | 2401:4900:231c:128a:6870:7b5e:48f5:41eb | ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪১515161
  • আরও একটা ডিসক্লেমার দিয়ে দি, মাঝখানের অনেক পোস্ট পড়তে পারিনি। দেবাশীষবাবুর লেখাটা পড়লাম আর লাস্টের কয়েকটা পোস্ট পড়লাম। আর কয়েক দিন আগে গুরুর খোরাকগুলো পড়েছিলাম। আমার প্রশ্নগুলো নিয়ে আগেই আলোচনা হয়ে গিয়ে থাকলে উত্তর দেওয়ার দরকার নেই। 
  • r2h | 192.139.20.199 | ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩৫515163
  • ডিসির সঙ্গে একেবারে একমত। মানবসভ্যতার ইতিহাস মোটের ওপর রক্তস্নাত।
    আর একেক সময় একেকটা সভ্যতা ফ্লারিশ করে, তার সঙ্গে একটু দিবে আর নিবে না করে বাক্সবন্দী হয়ে থাকলে বিশেষ উপকার হয় না। পাশ্চাত্য, বা যেকোন ডমিনেন্ট সভ্যতার নানান অসভ্যতা থাকে, কিন্তু পৃথিবীর একটা অংশে মানুষের খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা স্বাস্থ্য আইনী অধিকার ইত্যাদি অন্য অংশের থেকে বেশি সুরক্ষিত থাকলে সেটার কারনগুলি দেখাও জরুরী।
     
    • dc | ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৯
    • ...একইভাবে নানান এশিয়ান সভ্যতাও, তারা যখন নিজেদের সভ্যতার শিখরে ছিল, তখন গিয়ে অন্য দেশের সভ্যতা একইরকম ভাবে ধংস করেছে আর নিজেদের কালচার চাপিয়ে দিয়েছে।...

      ....যে আধুনিকতা একটা প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে গেছে, সেই সময়ের নিরিখে যে সভ্যতা ডমিন্যান্ট হয়েছে সেই সভ্যতাই অন্যদের তুলনায় আধুনিক হয়েছে আর সেই আধুনিকতার সুযোগ নিয়ে অন্যদের ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে। ...এখন হয়তো য়ুরোপীয় সভ্যতাগুলো আধুনিকতার ধারক হয়ে উঠেছে, কিন্তু স্রেফ য়ুরোপীয় সভ্যতাকে আধুনিকতার সাথে এক করে দেওয়াটা কি ঠিক হবে? 
     
     
  • :-( | 223.29.193.4 | ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:২৮515167
  • কারণ তো কলোনাইজেশন। পোকো পোমো মামুর ফেবারিট টপিক। কিন্তু এই ব্যস্ততার মরশুমে মামুকে এখেনে পাওয়া যাবে?
  • &/ | 151.141.85.8 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৩২515169
  • খুব ভালো লাগছে। মাঝে কিছু ট্রোল ঢুকেছিল উপদ্রব করতে, কিন্তু তারা হটেছে। এখন আলোচনা আবার ঠিক রাস্তায় ফিরেছে। খুব চমৎকার আলোচনা হচ্ছে। মন দিয়ে পড়ছি।
  • &/ | 151.141.85.8 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৩৪515170
  • শঙ্কু সম্পর্কিত লেখাটার লিংক দিতে পারেন কি অনুগ্রহ করে? ওদের সাইটে গিয়ে সাম্প্রতিক সংখ্যা পাচ্ছি, সেখানে শঙ্কু পেলাম না। অন্য সংখ্যায় আছে সম্ভবত।
  • Debasis Bhattacharya | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০২:০৫515177
  • dc  এবং  r2h,
     
    'আধুনিকতার খোঁজে' যা বলেছেন তার জবাব মোটামুটি আপনাদের লাইনেই দেব। ভাষা, এমফ্যাসিস, ডিটেল --- এইসবে হয়ত তফাত হতে পারে। সামান্য মতপার্থক্যও থাকতে পারে দু-এক জায়গায়। 

    ইতিমধ্যে, 'আধুনিক' শব্দটিকে নিয়ে কিছু ধোঁয়াশা পরিষ্কার করে রাখাটা বোধহয় জরুরি। অন্য অনেক শব্দের মতই, এই শব্দটিও আমরা নানা সময়ে নানা অর্থে ব্যবহার করে থাকি। আলোচনার সময়ে ঠিক কখন কোন অর্থে কথাটা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা কথক ও শ্রোতা উভয়ের কাছেই পরিষ্কার না থাকলে আলোচনা ঘেঁটে যেতে পারে।

    প্রথমত, শব্দটিকে স্রেফ 'বর্তমান' বা ‘সমকালীন’ অর্থে ব্যবহার হতে পারে। অর্থাৎ, এই অর্থে সব সময়ই শুধুমাত্র শেষতম কালখণ্ডটুকুই 'আধুনিক', বাকিটা প্রাচীন। এই অর্থে, এটা কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক কালখণ্ড নয়। আবার, 'আধুনিক' বলতে ইউরোপে পঞ্চদশ শতক থেকে বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়কাল এবং ভারতীয় উপমহাদেশে উনিশ ও বিশ শতককে বোঝাতে পারে। অর্থাৎ, এই অর্থে এটা কিন্তু একটা বিশেষ ঐতিহাসিক কালখণ্ডই। আবার, এই দ্বিতীয়োক্ত বিশেষ কালখণ্ডে পশ্চিমে উদ্ভূত কয়েকটি বিশেষ মূল্যবোধগত, মতাদর্শগত ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, যথা, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী মনন ও আশাবাদ, গণতান্ত্রিক ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী আকাঙ্ক্ষা, ধর্মমুক্তি, সব মানুষের মৌল মর্যাদা ও সাম্য --- এই লক্ষণগুলো যে সমাজ বা ব্যক্তির মধ্যে দেখা যাচ্ছে তাকেও ‘আধুনিক’ বলে অভিহিত করবার চল আছে (উত্তর আধুনিক চর্চায় আধুনিকতাকে যেভাবে পশ্চিমী আগ্রাসন ও ঔপনিবেশীকরণের সমার্থক বলে ধরা হয়, সেটা এই অর্থেরই এক ঋণাত্মক দর্পণ-প্রতিবিম্ব)। আবার, একটু লঘু আলগা ও অগভীর অর্থে, যে লোকটির পোশাক আশাক কথাবার্তা ভাবভঙ্গিতে সমকালীনতার ছাপ রয়েছে তাকেও আমরা আধুনিক বলি। 
     
    এখন, আমরা যদি অসচেতন থাকি, তাহলে আলোচনার সময়ে শব্দটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থে হাজির হয়ে প্রবল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

    আমি এ লেখায় ‘আধুনিক’ বা ‘আধুনিকতা’ কথাদুটোকে মোটামুটিভাবে উপরোক্ত তৃতীয় অর্থে ব্যবহার করেছি, ঋণাত্মক প্রতিবিম্বটি বাদ দিয়ে (তা না হলে ‘মৌলবাদ’-কে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছি তা পারতাম না মোটেই)। অর্থাৎ, আমার লেখায়, দ্বিতীয়োক্ত অর্থে যে ঐতিহাসিক কালখণ্ড ইঙ্গিত করা হচ্ছে সেটা এবং তার পরের সমস্ত সমাজ ও ব্যক্তিই আধুনিক যদি তার মধ্যে ওই লক্ষণগুলো থাকে, যদিও, সমাজ ও ব্যক্তির মধ্যে প্রাগাধুনিক সংস্কৃতির জের এবং আধুনিকতার প্রতিক্রিয়াটুকু ‘আধুনিক’ নয়। জানিনা, ঠিকঠাক বোঝাতে পারলাম কিনা।
  • Debasis Bhattacharya | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০২:২৫515178
  • dc-র ডিসক্লেমার-গুলো কিন্তু হেব্বি লাগে। ক্যাপিটালিজমের সমর্থক, মুনাফার সমর্থক। হাঃ হাঃ হাঃ!
  • &/ | 151.141.85.8 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০২:৫১515179
  • রা কা, শঙ্কুর লিংকের জন্য ধন্যবাদ। একটু পরেই পড়ে ফেলব।
  • &/ | 151.141.85.8 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০২:৫৭515180
  • তৃতীয় পর্বে যে এমন আলাপ আলোচনার ঝড় বইবে, বুঝতে পেরেছিলেন? তবে, সম্ভাবনা একটা ছিলই। ঃ-)
  • &/ | 151.141.85.8 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৩:০৬515181
  • একটা প্রশ্ন আছে, খানিকটা পলিটিকালি ইনকারেক্ট হতে পারে, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ক্যাপিটালিজম ও মুনাফাকে সত্যি সত্যি (সভায় সমিতিতে দেবার জন্য বানানো বক্তৃতায় নয়)অস্বীকার করার সেরকম কোনো জায়গা কি আছে? যেকোনো একটা মুভমেন্টের(সে প্রতিবাদ আন্দোলন হোক কিংবা বড় বিপ্লব চেষ্টা কিংবা অন্য কিছু) আয়োজন করতে গেলেই তো ফান্ডিং দরকার হচ্ছে, সেও তো আসছে ওই কোনো না কোনো ক্যাপিটালিজম ও মুনাফা নির্ভর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে (মানে টাকা নাহলে কীভাবেই বা আসবে? ব্রজেশ্বরের বাবা যেমন বলেছিলেন বাপু ডাকাতির টাকা বলে যদি না নিই, জপতপের টাকাই বা পাবো কোথা? এইরকমই কিছু একটা। ঃ-) )।
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 122.163.77.190 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৩:২৭515182
  • আবার, এই দ্বিতীয়োক্ত বিশেষ কালখণ্ডে পশ্চিমে উদ্ভূত কয়েকটি বিশেষ মূল্যবোধগত, মতাদর্শগত ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, যথা, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী মনন ও আশাবাদ, গণতান্ত্রিক ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী আকাঙ্ক্ষা, ধর্মমুক্তি, সব মানুষের মৌল মর্যাদা ও সাম্য --- এই লক্ষণগুলো যে সমাজ বা ব্যক্তির মধ্যে দেখা যাচ্ছে তাকেও ‘আধুনিক’ বলে অভিহিত করবার চল আছে 
    এখানে আরো ​​​​​​​কতক ​​​​​​​বৈশিষ্ট্য ​​​​​​​যোগ ​​​​​​​হবে না? যেমন জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, শ্রম বিভাজনের সামাজিক হায়ারার্কি, ডিকন্টেক্সচুয়ালাইজেশন অর্থাৎ লোকাল সংস্কৃতিগুলির যাবতীয় ট্রাডিশনাল প্রাকটিস ও বিশ্বাসের অবলোপ, বিচ্ছিন্নতা, জীবন ও প্রকৃতির সবকিছুকেই পণ্যায়িত করে দেখার সংস্কৃতি, অতি নগর মনস্কতা ...
    ভুল লিখলে শুধরে দেবেন। 
     
  • &/ | 151.141.85.8 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫২515183
  • এখানেই বলে যাই, শঙ্কুকাহিনিগুলোর বিশ্লেষণমূলক লেখাটি খুবই ভালো লেগেছে। খুবই যথাযথ আলোচনা ও বিশ্লেষণ। সবচেয়ে দুঃখের কথা হল, শঙ্কু-পরবর্তীকালেও বাংলায় কল্পবিজ্ঞানের নামে ভূত প্রেত দত্যি দানো রাক্ষস খোক্কসের কাহিনিই চলছে বেশিরভাগ, জনপ্রিয়তা পায় ওইগুলোই। ওইধরণের অধিকাংশ লেখার মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা দূরের কথা, অনেকসময় বাস্তববুদ্ধিও অমিল। হুট করে কোথা থেকে একশোটা শুঁড়ওয়ালা কিম্ভূত প্রাণী এসে হাজির হচ্ছে, নাকি তাঁরা এক ভয়াল ভয়ঙ্কর 'দেবতা'র ঘুম ভাঙার ব্যাপার। কোনো যুক্তি দেওয়া বা এটা কি কোনো রূপক নাকি সেসব বোঝানো---কোনো ব্যাপারই নেই। ঃ-)
  • guru | 103.211.133.210 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫৯515184
  • @ আধুনিকতার খোঁজে
     
    অনেক ধন্যবাদ তাসমানিয়ার এই উদাহরণটি দেবার জন্য |
     
     
    @dc
     
    "প্রথমত, আপনি বেশ কিছু উদাহরন দিয়েছেন যেখানে য়ুরোপীয় দেশগুলো অন্যান্য দেশে গিয়ে সেখানকার সভ্যতা-সংস্ক্রিতি-জীবনযাপনের পদ্ধতি ধংস করেছে আর নিজেদের ধর্ম বা ওয়ে অফ লাইফ চাপিয়ে দিয়েছে। উদাহরনগুলো অতি যথার্থ, না মেনে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। কিন্তু, আমি যদিও ইতিহাসে একেবারেই পাতিহাঁস, তবুও আমার যেন মনে হচ্ছে এই একইভাবে নানান এশিয়ান সভ্যতাও, তারা যখন নিজেদের সভ্যতার শিখরে ছিল, তখন গিয়ে অন্য দেশের সভ্যতা একইরকম ভাবে ধংস করেছে আর নিজেদের কালচার চাপিয়ে দিয়েছে। যেমন এক সময়ে জাপান চীন দেশ দখল করেছিল, আবার চীনও যেন অন্যদের সাথে এরকম কান্ড করেছিল বলে মনে হচ্ছে। আরও পিছিয়ে গেলে দেখতে পাই ইনকারা অন্যদের ওপর অত্যাচার করতো, রোমান আর গ্রিকরাও করতো, ব্যাবিলনিয়নরাও করতো, ইজিপ্সিয়ানরাও করতো, পর্সিয়ানরাও করতো। যদ্দুর মনে হয়, মানুষের ইতিহাসে এমন কোন জাতি বা সভ্যতা নেই যারা নিজেদের সুসময়ে অন্যদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেনি আর তাদের কালচার ধ্বংস করেনি।"
     
    একেবারে ভুলভাল generalization করার চেষ্টা | দেখুন আমি বলতে চাই এখানে য়ুরোপীয় দেশগুলোর অত্যাচার এর মধ্যে জেনোসাইড একটি এমন অনন্য ও ইউনিক বৈশিষ্ট্য (ঠিক যেইভাবে তাসমানিয়ার বিলুপ্ত জনগোষ্ঠীর উদাহরণ যেটি আধুনিকতার খোঁজে দেখিয়েছেন ) যেটি অন্য কোনো সভ্যতার ক্ষেত্রে আছে বলা খুবই মুশকিল | আসলে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে এই জেনোসাইডাল মানসিকতাটি অন্য কোনো সভ্যতার মধ্যে আছে এটি বলা খুবই মুশকিল |
     
    দ্বিতীয়তঃ য়ুরোপীয় দেশগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সর্বাত্মক ভাবে ব্যবহার করে জেনোসাইড করেছে ও সেগুলিকে ইন্টেলেকচুয়াল ভাবে যথার্থ বলে চালাতে চাইছে বা জাস্টিফাই করতে চেয়েছে ঠিক যেমন ভাবে আপনি এখানে করতে চাইছেন ইউরোপীয় দেশগুলোর জেনোসাইড করার প্রচেষ্টা | ব্যাবিলনীয় পার্সিয়ানরাও আর ইজিপ্সিয়ানরা ঠিক একই ভাবে ইউরোপীয়দের মতো জেনোসাইড করতো একটা উদাহরণ দিন তো ! উল্টে আমি পার্সিয়ানদের বা ইরানিয়ানদের সম্রাট Cyrus এর উদাহরণ দিতে পারি যিনি ইহুদিদের জেরুসালেম পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন করতে সাহায্য করেছিলেন ও পৃথিবীর প্রথম হিউমান রাইটস চার্টার তৈরী করেছিলেন | 
     
    রোমান আর গ্রিকরা ইউরোপীয়ানদের পূর্বসূরি যারা কার্থেজ ট্রয় ও পার্সিপোলিস ধ্বংস করে জেনোসাইড করেছিলো | 
    জাপানের চীনে আগ্রাসন পুরোপুরিভাবে জাপানের উনিশ শতকের শেষে ওয়েস্টার্ন আধুনিকতাকে পুরোপুরী গ্রহণ করার কুফল অর্থাৎ ইউরোপীয়দের দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত জাপানের চীনে গণহত্যা |  আর চীন কবে কোন দেশে আগ্রাসন করে জেনোসাইড করেছে কাইন্ডলি একটি উদাহরণ দিন তো !
     
    আপনি এইখানে যখন ইতিহাসে পাতিহাঁস তখন ইতিহাসকে ব্যবহার করে কুযুক্তি দিচ্ছেন তাও আবার ইউরোপিয়ানদের জেনোসাইডকে সমর্থন করতে | আপনি তো হিরেনবাবুর লেখা পড়েন হিরেনবাবুর আফ্রিকার উপরে বইটি পড়ুন বিশেষ করে জার্মানির নামিবিয়ার উপরে জেনোসাইড এর তারপর এই ইউরোপীয় জেনোসাইড কে সমর্থন করে  খোরাকগুলো পোস্ট করবেন |
     
     
  • guru | 103.211.133.210 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:০৯515185
  • @ডিসি 
     
    আমিও ক্যাপিটালিজম এর সারপ্লাস তৈরির পক্ষে কিন্তু অন্যকে ধ্বংস করে সারপ্লাস তৈরী সমর্থন করতে পারিনা | 
  • guru | 103.211.133.210 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৪515186
  • &/
     
    "হুট করে কোথা থেকে একশোটা শুঁড়ওয়ালা কিম্ভূত প্রাণী এসে হাজির হচ্ছে, নাকি তাঁরা এক ভয়াল ভয়ঙ্কর 'দেবতা'র ঘুম ভাঙার ব্যাপার। "
     
    এইগুলো সায়েন্স ফিক্শন নয় আসলে lovecraftian হরর এর বাংলা সংস্করণ | এদের মূল অনুপ্রেরণা HP Lovecraft এর cthulu সত্যজিতের প্রফেসর শঙ্কু নয় |
  • Debasis Bhattacharya | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:১০515189
  • আমি কিন্তু dc-র ডিসক্লেমার-কে বিদ্রূপ করতে চাইনি, বরং তার সোজাসাপটাপনার প্রশংসাই করতে চেয়েছি। যুক্তিহীন পোলিটিক্যাল আদিখ্যেতার যুগে এটা কম কথা নয়।
     
    জরুরি এবং চিত্তাকর্ষক অনেক কথাই এখানে হচ্ছে, কিন্তু আমি 'আধুনিকতার খোঁজে'-র কথাগুলোকে আগে অ্যাড্রেস না করে নিয়ে অন্য কথায় যাব না।
     
    নিজের লেখার থ্রেডে নিজের অংশগ্রহণটাই বোধহয় সবচেয়ে ধীরগতিতে হচ্ছে। দুঃখিত, আবারও!
  • Debasis Bhattacharya | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:২৮515190
  • প্রফেসর শঙ্কু নিয়ে আমার লেখাটি ভাল লেগেছে বলে যাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদেরকে ধন্যবাদ। তবে, এতে শুধু একটা বিষয়ই আলোচিত হয়েছে --- বিজ্ঞানবোধ এখানে কতটা কীভাবে সুরক্ষিত বা বিপর্যস্ত। কিন্তু অনেকে বলেন, এ চর্চাটাই নাকি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক (ওই লেখাটির থ্রেডে গেলেই তেমন নমুনা হাতেগরম পেয়ে যাবেন), কারণ, এটা তো আসলে সাহিত্য, বিজ্ঞান নয় মোটেই। কাজেই, এর সাহিতগুণই নাকি একমাত্র বিবেচ্য, বিজ্ঞানের টেক্সবুকের সঙ্গে এর তুলনা নাকি নিতান্ত বেরসিকের কাজ।
     
    এই প্রশ্নটাকে অ্যাড্রেস করে একটা আলাদা লেখার ইচ্ছে দীর্ঘদিনই আছে, কিন্তু সে আর পেরে উঠছি না!
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 122.163.77.190 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৫৪515191
  • .  @ডিসি এবং র২হ

    দেবাশীষবাবু আধুনিকতা অর্থাৎ মডার্নিটি বলতে ইতিহাস ও সোসিওলজি-র আধারে যে সময়খন্ডটিকে বোঝানো হয় সেটা চিহ্নিত করে দিয়েছেন। সুতরাং বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। এই সময়খন্ডটি বাস্তবিক ভাবেই আগের সমস্ত যুগের থেকে একেবারেই আলাদা।  এই সময়ে ইউরোপীয় ভূখণ্ডে অনেকগুলি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে।  যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল ইউরোপ-এ 'এজ অব এনলাইটেনমেন্ট' এর বিকাশ। যার কান্ডারি ছিলেন মেকিয়াভেলি থেকে শুরু করে দেকার্ত, ফ্রান্সিস বেকন, জন মিল্টন, ডেভিড হিউম প্রমুখ যাদের হাত ধরেই আধুনিক যুক্তিবাদের উত্থান, ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সাম্য-মৈত্রী চেতনার উন্মেষ।  আমার ধারণা দেবাশিসবাবু এই আধুনিকতা মৌলবাদকে ঠেকানোর ক্ষেত্রে মূল হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন।  দেবাশিসবাবু বলবেন।  
    কিন্তু একই সঙ্গে বিশেষত পশ্চিম ইউরোপ-এ চমকপ্রদ উত্থান ঘটে ক্যাপিটালিজম-এরও। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ এই আধুনিকতার সুচনাবিন্দু হিসেবে ১৪৯২ সালটিকে চিহ্নিত করেছেন।  অনেক গুলো মোড় ঘোরানো ঘটনা ইউরোপ-এ এই সালটিতে ঘটলেও তার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি হলো ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকার মাটিতে পা রাখা অর্থাৎ কনকোয়েস্ট অব নিউ ওয়ার্ল্ড। এবং ইউরোপ তার পুঁজিবাদী বিকাশের অন্যতম শর্ত আদিম পুঁজি সঞ্চয়নের গুপ্তরাস্তার হদিশ পেয়ে যায়। এখানেই সে টেক্কা দিয়ে দেয় অন্যান্য মহাদেশগুলিকে।  এই আদিম পুঁজি সঞ্চয়নের যে ভয়ংকরতা বাকি পৃথিবীকে সামনা করতে হয়, না, আগের প্রাগাধুনিক পৃথিবীতে এই এতটা মাস স্কেলে মানুষ নামক প্রজাতিকে প্রত্যক্ষ করতে হয়নি। এই বিভীষিকাময় অনৈতিকতার ওপর ভর করে যে এনলাইটেনমেন্ট হলো তার ফলে বিশ্বব্যবস্থায় ইউরোপ হয়ে দাঁড়ালো সেন্টার আর বাকি বিশ্ব হয়ে দাঁড়ালো তার পেরিফেরি। বিশ্বব্যাপী সমস্ত পূর্বজ এবং সমকালীন সমাজ ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা এই বলে নাকচ হয়ে গেল যে একমাত্র এনলাইটেনড ইউরোপ-ই ইনোভেটিভ তাই বাকি পৃথিবীর উচিত বিনা বাক্যব্যায়ে তাকে ইমিটেট কর। পুঁজিবাদী পশ্চিমি রাশনালিটি-ই শেষ কথা।  rationalization নিয়ে পরে অনেক আলোচনায় উঠে এসেছে তা কিভাবে সমাজকে dehumanized করেছে। Theodor Adorno বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এই প্রগ্রেস ফর প্রগ্রেস-এর উন্মাদনায় ভয়ঙ্কর industrialization কীভাবে ডেকে এনেছে আধুনিক জীবনের বিচ্ছিন্নতা, ভয়ঙ্কর কমোডিটি ফেটিসিজম এমন কি holocaust পর্যন্ত। আমি এই জায়গাটাতেই দেবাশিসবাবুকে অনুরোধ করবো আলোকপাত করতে।  মৌলবাদের বীজ আমার ধারণা ইউরোসেন্ট্রিজম-এর মধ্যেও রয়েছে। বোঝাতে পারলাম কিনা জানি না।

    @গুরু
    আপনাকেও ধন্যবাদ।  যদিও আমি ইসলামোফোবিয়াকে যাকে বলে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বলতে নারাজ। :) তাসমানিয়া একটি উদাহরণ মাত্র।  আধুনিকতা এরকম নিদর্শন ফেলে ছড়িয়ে রেখেছে গোটা পৃথিবী জুড়েই। আপনি আগ্রহী হলে ৪ নং-এ আফ্রিকা নিয়ে এই অধমের একটা ধারাবাহিক আছে। পড়ে দেখতে পারেন।  
     
     
     
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 122.163.77.190 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৩515192
  • @গুরু 
    একমত যে জেনোসাইড কলোনিয়ালিজমের একটা ইউনিক বৈশিষ্ট্য . হিটলারি হলোকস্টএর পর মডার্নিটিও সে দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না। 
     
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 122.163.77.190 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫১515193
  • @ডিসি 
    আগের সব সভ্যতাই নিজের ক্ষমতামত হেজিমনি চাপিয়ে গিয়েছে একথা কিয়দংশে সত্যি বটে কিন্তু সর্বাংশে নয়। এবার দেখুন আজকের পৃথিবীতে পুরো  আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিলান্ড বস্তুতঃ এক্সটেন্ডেড ইউরোপ মাত্র। এটা ভেবে দেখতে অনুরোধ করবো। স্পেন অনেকদিন তুর্কি অধিকারে ছিল। সাংস্কৃতিক মিলমিশ-ও ছিল। কিন্তু স্পেনকে কোনোভাবেই কি এক্সপেন্ডেড তুর্কি বলা যায় কি? 
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 122.163.77.190 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৩515194
  • সরি typo. এক্সটেন্ডেড হবে। এই টাইপ করাটা খুব চাপের। :)
  • &/ | 107.77.236.35 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৭515195
  • ১৯৭১ এ পাকিস্তান যা করল বাংলাদেশ এ !!! ঘোরতর জেনোসাইড . ত্রিশ লাখ লোককে  মাত্র কয়েক মাসে শেষ করল !!!! অকল্পনীয় !!!! পাকমনপেয়ারু রা মানে না, বলে সংখ্যাটা নাকি বানানো!!!! 
  • Debasis Bhattacharya | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৫৭515197
  • আধুনিকতার খোঁজে,

    আধুনিকতার কনসেপ্ট-টা নিয়ে ছোট্ট করে আরেকটু রগড়ে নিই, যেহেতু এ নিয়ে আপনি ইতিমধ্যে একটি মন্তব্য করেছেন, এবং যেহেতু এতে করে পরবর্তীকালে আলোচনায় কিছু সুবিধে হতে পারে বলে আমার মনে হয়।
     
    আপনি প্রস্তাব করেছেন, আধুনিকতার যে কটি বৈশিষ্ট্যের কথা আমি বলেছি, তার ওপরে এইগুলোকেও যোগ করা হোক --- “জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, শ্রম বিভাজনের সামাজিক হায়ারার্কি, ডিকন্টেক্সচুয়ালাইজেশন অর্থাৎ লোকাল সংস্কৃতিগুলির যাবতীয় ট্রাডিশনাল প্রাকটিস ও বিশ্বাসের অবলোপ, বিচ্ছিন্নতা, জীবন ও প্রকৃতির সবকিছুকেই পণ্যায়িত করে দেখার সংস্কৃতি, অতি নগর মনস্কতা ...”
     
    না, এগুলোকে আমি আধুনিকতার পক্ষে ‘এসেনশিয়াল’ বলে মনে করছি না, এগুলোর সঙ্গে আধুনিকতার ঘনিষ্ঠতা মেনে নিয়েও। আধুনিকতার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলোকে আমি মোটাদাগে চারটি ভাগে ভাগ করতে চাই। এক, আধুনিকতার পক্ষে ‘এসেনশিয়াল’ ব্যাপারগুলো, অর্থাৎ যেগুলো না থাকলে আজ আধুনিকতা বলতে আমরা যা বুঝি সেই ব্যাপারটাই হত না (মানে, আমি যেগুলোর কথা বলেছি)। দুই, আধুনিকতার ‘ইনসিডেন্টাল’ বা ‘অ্যাক্সিডেন্টাল’ উপাদান, যা কিনা স্বতন্ত্র নানা সমান্তরাল সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে ওই একই সময়ে এবং আধুনিকতার সঙ্গে সমাপতিত হয়ে নানা যৌগ নকশা তৈরি করেছে (যেমন, জাতীয়তাবাদ)। তিন, আধুনিকতার নানা ‘বাই-প্রোডাক্ট’ বা উপজাত বস্তু, যেগুলো আধুনিকতার ফলেই তৈরি হয়েছে তার গৌণ প্রভাব বা বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায়, কিন্তু যাকে তার মূল উপাদান বা লক্ষণ বলে ধরা চলেনা (যেমন উপনিবেশ, মৌলবাদ, বিচ্ছিন্নতা, পণ্য-সংস্কৃতি, নগর-মনস্কতা)। এবং চার, যেগুলো বহু আগে থেকেই ছিল কিন্তু আধুনিকতার কালে এসে বিশেষ গতি বা রূপ পেয়েছে (যেমন শ্রম বিভাজন এবং স্থানীয় সংস্কৃতির অবলোপ)।
     
    বলা বাহুল্য, আমি শুধু প্রথম ধরনের বিষয়গুলোকেই আধুনিকতার ‘এসেনশিয়াল’ উপাদান বলে গ্রহণ করছি, এবং বাকিগুলোর প্রাসঙ্গিকতা স্বীকার করে নিয়েও সেগুলোকে গৌণ বলে সাব্যস্ত করতে চাইছি। কারণ, আমার ধারণা, বাকিগুলো ছাড়াও আধুনিকতা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারত, আর তাছাড়া সেগুলো ঐতিহাসিকভাবে স্থায়ীও নয়, অনিবার্যও নয়। ফলত, আমার মতে, আধুনিকতার যে সমস্ত সমালোচনা আমরা সাধারণত দেখে থাকি, সেগুলো মূলত আধুনিকতার মূল উপাদান থেকে আকস্মিক/গৌণ উপাদানগুলোকে পৃথক করতে পারার ব্যর্থতাজাত। ঠিক একই ঘটনা ঘটে থাকে আধুনিক বিজ্ঞানের সমালোচনার ক্ষেত্রেও, যা ঘটেছে এখানেও।
     
    মনে হচ্ছে, এর পরে অন্তত আমার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশাটা থাকবে না, আমার মত মানা-না-মানা তো পরের ব্যাপার। কাজেই, এবার মুল প্রশ্নগুলোতে চলে যেতে পারব বোধহয়।
     
    ‘guru’ তাঁর শেষতম মন্তব্যে যা বলেছেন সে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না, অন্তত এই মুহূর্তে। তবে, দুটো ছোট্ট কথা বলি। এক, নানা ছোট-বড় হত্যাকাণ্ডের নিদর্শন বহু প্রাচীন কাল থেকেই আছে সারা পৃথিবী জুড়ে, শুধু ইউরোপ নয়। খোঁজ করলেই পাবেন, এবং এই অন্তর্জালের যুগে খোঁজ করা অত্যন্ত সহজ (এমন কি, শুধু রামায়ণ-মহাভারত পড়লেও একটা আঁচ পাবেন)। দুই, যদি ধরুন এইটা সত্যিই হয়ে থাকে যে, ইউরোপীয়রা বাস্তবিকই অন্যান্যদের চেয়ে খুনখারাপিটা অনেক বেশি করে আসছে সেই অনাদি অনন্তকাল থেকেই, তাহলে ইউরোপের ঘাড়ে দোষ চাপাতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু ‘আধুনিকতা’ বস্তুটিকে আর কোনও দোষ দিতে পারবেন কি? ইউরোপের খুন খারাপি যদি তাদের সুপ্রাচীন বদ চরিত্রের লিগ্যাসি মাত্র হয়, তাহলে বেচারা ‘আধুনিক’ আলাদা করে আর কী এমন দোষ করল? আপনি সম্ভবত ‘আধুনিকতার খোঁজে’-র আধুনিকতা-বিরোধী অবস্থানকে সমর্থন জোগাতে পারছেন ভেবে আনন্দে আছেন। কিন্তু, সত্যিই সমর্থন জোগাচ্ছেন তো?

    আর একটা মাত্র কথা বলি। বিজ্ঞান, পশ্চিমী আগ্রাসন, শিল্প-বিপ্লব, পশ্চিমী অর্থনীতির উত্থান ইত্যাদির সম্পর্ক নিয়ে একটা লেখা এই গুরু-তেই লিখেছিলাম। যতটা পারা যায় নির্দিষ্ট তথ্য-যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছিলাম সেখানে। ফলত, এ বিতর্কের সবটা না হলেও অন্তত কিছু নির্দিষ্ট অংশ এখানে আলোচিত হয়েছিল।  এখানে অনেকে সেটা দেখেও থাকতে পারেন, তবু লিঙ্ক-টা দিলাম নিচে। যদি কারুর কাজে লাগে, এই ভেবে আর কি।
     
  • Debasis Bhattacharya | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১০515202
  • আধুনিকতার খোঁজে,

    নিউটন আইনস্টাইন ডারুইন ডিরাক হাইজেনবার্গ ক্রিক প্রমুখের আবিষ্কারগুলোকে স্রেফ টুলমনে হল কেন  --- আমার এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি যা বলেছেন সেটা যদিও ছয় নম্বরে রেখেছেন, কিন্তু, যেহেতু আপনি দাবি করেছেন যে এই বিষয়টির উত্তর আপনি আপনার আগের মন্তব্যেই দিয়ে দিয়েছেন, তাই এটাকেই আমি প্রথম ধরছি।
     
    বিজ্ঞানের নিজের মধ্যেই আপনি এক অন্তর্নিহিত অযুক্তি ও অমানবিকতা দেখেছেন। তার প্রমাণ হিসেবে আপনি দুটি ঘটনা পেশ করেছেন। এক, ইসরো-র বিজ্ঞানীদের তিরুপতি-তে পুজো দেওয়া (অযুক্তি)। এবং দুই, আইনস্টাইনের তত্ত্ব থেকে পরমাণু বোমা বানিয়ে ফেলা (অমানবিকতা)। এর উত্তর কিন্তু খুব সহজ এবং সরল।
     
    প্রথম দৃষ্টান্তটি বিজ্ঞানের নিজস্ব অযুক্তির প্রমাণ নয়, কারণ, ‘বিজ্ঞান’ মানে ব্যক্তি-বিজ্ঞানীর রুচি-মতামত-বিশ্বাস-আচরণ নয় মোটেই। বিজ্ঞানী হাতে জ্যোতিষের আংটি এবং কপালে তিলক সহকারে গবেষণাগারে যেতে পারেন, দুপুরে টিপিনের অবকাশে হনুমান চালিশা আওড়াতে পারেন, সন্ধেবেলার পার্টিতে গ্লাস হাতে নিয়ে গানের তালে তালে নাচতে পারেন, এবং রাতে টিভি-তে ‘এক্সরসিস্ট’ দেখে ঘুমিয়ে পড়ার পরে হঠাৎ হিসি পেয়ে জেগে উঠলে ভূতের ভয়ে একা একা টয়লেটে যেতে ভয় পেতে পারেন, কিন্তু এগুলো কোনওটাই ‘বিজ্ঞান’ নয়। গবেষণাগারে যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করার সময়ে এইসব বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটলে বা রিসার্চ পেপারে এইসব লিখলে তাঁর সায়েন্টিফিক কেরিয়ারের দফারফা হয়ে যাবে (বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে অবশ্য তা না-ও হতে পারে, তবে সেটা অন্য গল্প)।
     
    দ্বিতীয় দৃষ্টান্তটিও বিজ্ঞানের নিজস্ব অমানবিকতার প্রমাণ নয়, কারণ, বিজ্ঞানের সারসত্তা থেকে তা নিঃসৃত হয়না। আইনস্টাইন-আবিষ্কৃত শক্তি ও বস্তুর তুল্যমূল্যতার তত্ত্ব আমাদের জ্ঞানবৃদ্ধি ছাড়াও আরও নানা জরুরি কাজে লাগে, এবং অতি শীঘ্রই হয়ত সেই দিন আসতে চলেছে যেখানে এই তত্ত্বজাত প্রযুক্তি ছাড়া আমরা আর এক পা-ও চলতে পারব না। সেটা দিয়ে বোমাও বানানো যায়, ঠিকই। কিন্তু বোমা বানানোটা তো রাষ্ট্রের সামরিক সিদ্ধান্ত, ফিজিক্সের গবেষণাপত্র আর বইগুলোতে তো আর বোমা বানানোর সিদ্ধান্ত লেখা থাকেনা! লোহার ধাতব ধর্মের জন্যই আমরা তা দিয়ে তরোয়াল বানিয়ে শত্রুর মুণ্ডু উড়িয়ে দিতে পারি। কিন্তু, সেই কারণে কি ধাতু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানটাকে নিষ্ঠুর অমানবিক এইসব বলেন? ধাতু সম্পর্কিত জ্ঞানের কথাটাই বললাম, কারণ, এটা আধুনিকতার বহু যুগ আগের ব্যাপার। 
     
    ঠিক একই ভাবে, জলে ডুবে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়, জলোচ্ছাসেও হয়। তার জন্য কি জলকে নিষ্ঠুর অমানবিক সাব্যস্ত করেন?

    ভেবে দেখবেন।
     
    বাকি কথাগুলোও হবে, একটু ধীরেসুস্থে।
  • আধুনিকতার খোঁজে | 2402:3a80:1cd3:822b:17c5:f81a:3829:8e2d | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৩৮515206
  • @দেবাশিসবাবু
     
    আমার মন্তব্যগুলি নিয়ে সময় দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার অন্য লেখাটা পড়লাম। ভারী লেখার মধ্যেও আপনার একটা দারুন উইট থাকে যা ভীষণ উপভোগ্য। লেখাটা পড়ে আমার মনে হলো এই আলোচনাটা ওখানেও হতে পারতো। ধীরে সুস্থেই আলোচনা হোক, কোনো অসুবিধে নেই।  

    কিন্তু একটা বোধহয় বোঝার ভুল থেকে যাচ্ছে।  আমি-ই বোধহয় বোঝাতে পারিনি। বিজ্ঞানের নিজের মধ্যেই অন্তর্নিহিত অযুক্তি ও অমানবিকতা থাকে এটা আমি বলিনি।  হয়তো আমার কথায় সেটা ফোটেনি।  আপনার লিংক দেওয়া লেখায় একটি মত দেখলাম যা বলছে বিজ্ঞানের নিজের মধ্যেই হিংস্রতা আচে। আমি সেরকম ভাবি না।  একই অয়েল পেন্টিং পদ্ধতিতে কেউ নরেন মোদির পোর্ট্রেট-ও আঁকতে পারে আবার কেউ গ্যেরনিকা।  কি বেরিয়ে আসবে সেটা একান্তই আর্টিস্ট-এর ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞান আমার কাছে সত্য অনুসন্ধানের একটি জ্ঞান নির্ভর পদ্ধতি। বিজ্ঞান যেমন আইনস্টাইনকে উপহার দিয়েছে তেমনি ফ্যাটম্যান-ও বানিয়েছে এরকম 'বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ' টাইপের কথা আমি বলিনি।  আমি বলেছি আধুনিকতা যেমন আইনস্টাইনকে উপহার দিয়েছে তেমনি ফ্যাটম্যান-ও বানিয়েচে। দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।  আমি ইউরোসেন্ট্রিক আধুনিকতাকে একটি সোসিও-কালচারাল দিক থেকে দেখতে চাইছি। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকটা তো জুড়ে থাকবেই, তবে সেগুলি প্রধান নয়।  

    বরং আধুনিকতা যেভাবে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছে আমি বিজ্ঞানকে ঠিক সেইটুকু গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে বা সেটাই শেষ কথা ভাবতে রাজি নোই।  নানা আদিম সমাজ-ও বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছে তার নিজস্বতায়। নানারকম syllogism এর মধ্যে দিয়ে ডিডাক্টিভ রিসনিং-এ পৌঁছানোর তথাকথিত পিছিয়ে থাকা বিজ্ঞান কে আমার এখনো যথেষ্ট রেলেভেন্ট মনে হয়। বস্তুবাদ আমাদের বলে যে এই আদিম syllogism এর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক মার্ভেল পৃথিবী পেয়েছে।  কিন্তু বিজ্ঞানকে সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্য নিয়োজিত করতে গেলে যে নৈতিক বল দরকার, আমার দৃঢ় বিশ্বাস তা পশ্চিমি আধুনিকতার নেই। সে শুধু তার ক্যাপিটালিস্ট নেচারের জন্যই নয়, তার চরম ইউরোসেন্ট্রিক বোঝাপড়ার জন্য-ও যা সে চাপিয়ে চলে পেরিফেরির ওপর, হ্যাঁ, এক টোটালিটেরিয়ান অসত্যের হেজিমনি।  ইউরোপ সেন্টারটি-ই সভ্যতার শেষ এই ধ্রুবকল্পটি প্রতিষ্ঠা করে চলে। যেটা বিজ্ঞানসম্মত-ও নয়, অন্তত আমার কাছে। (অথচ এমন কি হেগেল-ও এই ইউরোসেন্ট্রিজম-এর বাইরে নন।)

    একটা উদাহরণ দিলে বোধহয় ভালো হয়।  
    ডিডাক্টিভ রিজনিং দিয়েই আমাদের, আপনার মতে হয়তোবা পিছিয়ে থাকা, মধ্যযুগীয় রায়ত শ্রেণী আমার মতে এক অসাধারণ sustainable কৃষি-জ্ঞান আয়ত্ব করেছিল যা আমার মতে অত্যন্ত সৃজনশীল এবং একই সঙ্গে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞান। তাছাড়া উৎপাদনের প্রকৃতির কারণেই মানুষের বা উপভোক্তার consuming প্যাটার্ন-ও ছিল অনেক বেশি যৌক্তিক। হ্যাঁ, আমি যুক্তিবাদকে মাথায় রেখেই কথাটা বললাম। এরপর পশ্চিমি আধুনিকতার অতি উৎপাদন তত্বের প্রাদুর্ভাবে মাটিতে রাসায়নিক সার ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হল। যেমন আমাদের সবুজ বিপ্লব। প্রাকৃতিক ভাবে এবং প্রাচীন কৃষকের অভিজ্ঞতার জ্ঞানে পুষ্ট তিন ফসলি জমি ক্রমশ এক ফসলি এমনকি বন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এখন যেই উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেলো প্রোগ্রেস ফর প্রোগ্রেস রীতি মেনে অতি উৎপাদনকে জারি রাখার জন্য আধুনিকতার নবতম উপহার হলো জেনেটিক্যালি মডিফায়েড বীজের চাষ। সবুজ বিপ্লবের কিছুকাল পরে পাঞ্জাবের একটি ট্রেনের নাম-ই হয়ে গিয়েছিলো ক্যান্সার এক্সপ্রেস। এবার আরো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। মহারাষ্ট্রের কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা দিয়ে তার পদধ্বনি শুনছি। পৃথিবীটাকে আরেকটু বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখার জন্য পশ্চিমি আধুনিকতার ঠিক করে দেওয়া কৃষি-বিজ্ঞান নাকি পিছিয়ে থাকা পেরিফেরির মধ্যযুগীয় রায়তের sustainable অভিজ্ঞতা কেন্দ্রিক কৃষি-জ্ঞান, কে বেশি যুক্তিযুক্ত, আপনার আধুনিক যুক্তিবাদের কী মতামত জানার অভিপ্রায় থাকবে।    

    আপনার মূল্যবান সময়ের কথা ভেবেই মনে হলো এই কথাগুলো আগে ক্লিয়ার করে নেওয়া ভালো। আপনার আলোচনার সুবিধের জন্য এই কথাগুলো জরুরি মনে হলো। আপনার পরে যাতে সময় নষ্ট না হয়।  
     
  • dc | 2401:4900:231c:128a:d5df:cc75:2a89:7bb7 | ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:২৮515207
  • আধুনিকতার খোঁজেকে অনেক ধন্যবাদ উত্তর দেওয়ার জন্য। "আজকের পৃথিবীতে পুরো  আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিলান্ড বস্তুতঃ এক্সটেন্ডেড ইউরোপ মাত্র" - এ ব্যাপারে একমত। আজকের পৃথিবী অনেকটাই ওয়েস্টার্ন বা য়ুরোপিয়ান হেজেমনির আন্ডারে (চুপি চুপি বলে রাখি, এই ব্যবস্থাটা আমার বেশ ভালোই লাগে)। 
     
    আর জেনোসাইডের ইতিহাস জানার জন্য উইকিদাদুর শরণাপন্ন হলাম। আগেই বলে রাখি, উইকি অ্যাকাডেমিয়ায় স্বীকৃত নয়, সেখানে অরিজিনাল সোর্সকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাও, আমাদের মতো যারা ইতিহাস মূর্খ তাদের উইকির কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কাজেই আমি যদি ভুল লিখি তো অবশ্যই ধরিয়ে দেবেন। এবার জেনোসাইডের এই লিস্টটা দেখুনঃ 
     
     
    এখানে যেমন য়ুরোপিয়ানদের দ্বারা আয়োজিত অনেকগুলো জেনোসাইডের কথা বলা হয়েছে (হলোকস্ট যার অন্যতম), সেরকম দেখছি যে এশিয়া বা আফ্রিকাতেও নন-য়ুরোপিয়ান দেশগুলোতে এরকম বেশ কিছু জেনোসাইড হয়েছে। যেমন দেখতে পাচ্ছি রোয়ান্ডার জেনোসাইড, যেখানে হুটুরা টুটসিদের মেরেছিল; কম্বোডিয়ার জেনোসাইড, যেখানে পল পট কম্বোডিয়ানদের নিকেষ করেছিল; বাংলাদেশের জেনোসাইড, যেখানে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশিদের মেরেছিল; প্রথম কংগো ওয়ার, যেখানে হুটুদের মারা হয়েছিল; উগান্ডান ম্যাসাকার; ইন্দোনেশিয়ার ইস্ট টিমর ম্যসাকার; ইত্যাদি। জাংগার বা Dzungar জেনোসাইড, যেখানে qing ডাইনাস্টির রাজারা মংগোলদের সাবড়ে দিয়েছিল (হায় চেংগিস!) 
     
    আবার এই লিংকটাও দেখুনঃ 
     
     
    এখানে এক লক্ষ বা তার বেশী মানুষ মারা গেছে, এরকম সব যুদ্ধের লিস্ট আছে। এটা যদি ক্রোনোলজিকালি সর্ট করি, তাহলে দেখতে পাচ্ছি সেই যিশুবাবার জন্মের আগে থেকে ১৭০০ সাল অবধি অনেকগুলো যুদ্ধের কথা আছে, আবার ১৭০০ সালের পর থেকেও আছে। অবশ্যই, এখন লোক মারা যতোটা সোজা হয়েছে আগে অতোটা সোজা ছিলনা, তাই প্রাচীনকালে এক লক্ষর বেশী মানুষ একটা যুদ্ধে মারা যাওয়াটা বোধায় আরও বেশী উল্লেখযোগ্য। 
     
    আমার মনে হচ্ছে, সারা পৃথিবীর সমস্ত দেশে, সমস্ত সময়ে, সমস্ত সভ্যতা এক অপরের ওপর অত্যাচার করেছে। শুধুমাত্র আধুনিক সময়ে জেনোসাইড হয়েছে, আর শুধুমাত্র য়ুরোপিয়ানরা জেনোসাইড করেছে, এই ধারনাটা বোধায় ঠিক না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন