এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৮৮৪০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ইসলাম সম্পর্কে আলাদা করে দু-চার কথা

    মৌলবাদ নিয়ে এই ধরনের একটা লেখায় যদি কেউ ঘোষণা করেন যে, এইবার ইসলাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা হবে, তখন পাঠকের সে নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। কাজেই, এখানে গোড়াতেই সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলে রাখা দরকার, না হলে পাঠক হয়ত বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হবেন। সম্ভাব্য প্রত্যাশাটি এই রকম যে, মৌলবাদের স্বরূপ নিয়ে যখন চর্চা হচ্ছে, এবং তার মধ্যেই আলাদা করে ইসলাম নিয়ে চর্চার ঘোষণা হচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দেশে দেশে ইসলামীয় মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে, বিভিন্ন স্থান-কালে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ বিশেষ বৈচিত্র্যের উল্লেখ পাওয়া যাবে, এবং অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে তার মিল ও অমিল এবং তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিষয়ক অনুসন্ধান ও তার ফলাফলও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এখানে তা করতে পারলে ভালই হত, কিন্তু তার উপায় নেই। সেটা করতে গেলে আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদের কার্যকলাপ নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখতে হত, তবেই তার প্রেক্ষিতে ইসলামীয় মৌলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারত। দুঃখের বিষয়, সে পরিসর এখানে ছিল না, এখানে তো এতক্ষণ মৌলবাদ নিয়ে শুধু কতকগুলো অতি সাধারণ কথাই বলেছি। বলে রাখা দরকার, এখানে আমি সরাসরি সেইসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব না, যদিও যা আসলে বলব তার মধ্যে এ বিষয়ে আমার মতামত ও চিন্তাভাবনারও কিছু ইঙ্গিত হয়ত মিলবে। এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই।
     
    ওপরে বলেছি, যাঁরা ধার্মিক নন বরঞ্চ ‘ধর্ম’ জিনিসটার সমালোচক, তাঁদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে দু রকমের ভাবনা বেশ পরিচিত। অনেকে মনে করেন, এই ‘মৌলবাদ’ সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে শুধুই ইসলামের সমস্যা, আর কারুরই নয় --- ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি আর মারদাঙ্গা মূলত মুসলমানেরাই করছে। অন্যদের যদি আদৌ কিছু সমস্যা থেকেও থাকে, তো সেটা শুধু ইসলামি জঙ্গিপনার প্রতিক্রিয়া মাত্র। আবার, এ অবস্থানটি অন্য অনেকের দুশ্চিন্তারও কারণ। ইসলামি জঙ্গিপনার বিপদ স্বীকার করেও তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্দোষ ও নিরীহ আম মুসলমানের ঢালাও খলনায়কীকরণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষ ও হিংস্রতা। প্রথম ভাবনাটি ভুল, কেন তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে আছে।
     
    আর ওই দ্বিতীয় প্রকারের যে দুশ্চিন্তা, আমি এবং আমার মত অনেকেই যার শরিক, তার এক প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত আমার হাতে এসেছে কয়েকদিন আগে, আমার এক তরুণ বন্ধুর সাথে ফেসবুকীয় কথোপকথনে। তিনি কে, সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না, কিন্তু তিনি আমাকে যে সব প্রশ্ন করেছেন তা বোধহয় অতিশয় প্রাসঙ্গিক। এখানে সেগুলো হুবহু উদ্ধৃত করলে হয়ত আমাদের আলোচ্য প্রশ্নগুলোকে সুনির্দিষ্ট আকার দিতে সুবিধে হবে। অবশ্য, এখানে উদ্ধৃত প্রত্যেকটি প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও নিষ্পত্তিমূলক উত্তর দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য ততটা নয়, যতটা হল মূল প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমস্যাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে তোলা। নিচে রইল সেই তরুণ বন্ধুর দুশ্চিন্তা-জারিত প্রশ্নগুলো।
     
    দাদা,

    একটা বিষয় একটু বিস্তারিত জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যদি সময় করে একটু ডিটেইলসে উত্তর দেন, খুব উপকৃত হই। অনেকদিনই এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি, কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ, আর প্রশ্নটা একটু বিস্তারে করতে হবে।

    ছোটবেলা থেকেই (ক্লাস ওয়ান থেকে) আমি দেখে এসছি, আমার পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র ধর্মে মুসলিম হওয়ার জন্য মানুষকে সন্দেহের চোখে, বিদ্বেষের চোখে দেখা হয়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে "কীরে, খুব আনন্দ বল!" বলে টন্ট কাটা হয়, কেবল নাম দেখে বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়, এমনকি মুসলিম ছাত্র ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করলেও "আশ্রম থেকে শেষে মুসলিম ফার্স্ট হবে" এরকম কথা খোদ টিচারের মুখেই শুনেছিআমি ঘটনাক্রমে মুসলিম পরিবারে জন্মাইনি, কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকেই আমার মুসলিম বন্ধু বা প্রতিবেশীদের এভাবে সামাজিক হেট ক্যাম্পেনিং এর মুখে পড়াটা ভীষণ দুঃখজনক লাগে। এই খারাপ লাগাটা ক্লাস ওয়ান থেকেই শুরু হয়েছিল, তো তখন তো আমি ধর্ম ভাল না খারাপ, যুক্তিবাদ ভাল না খারাপ, এতকিছু তো বুঝতাম না।

    এখন মুসলিমবিদ্বেষকে যারা জাস্টিফাই করে, তাদের থেকে যে যুক্তিগুলো উঠে আসে, সেগুলো -

    ১) আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?

    ২) "ওরা" (মুসলিমরা) সংখ্যায় বাড়লেই ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, সংখ্যায় কমলেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়।

    ৩) সব ধর্মে সংস্কার হয়েছে, কিন্তু "ওরা" এখনও মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

    ৪) সব ধর্মেই বহুবিবাহ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু "ওদের ধর্মে" বহুবিবাহ আজও জায়েজ, ওদের ধর্মে নারীর অবস্থা সবচাইতে খারাপ।

    ৫) "ওরা" নিজেদের বাঙালি মনে করে না, মননে চিন্তনে আরব, ওদের কাছে ধর্মই সব।

    ৬) ধর্মের নামে মানুষ হত্যা "ওদের ধর্মের মত কোন ধর্মই করেনি।"

    ৭) "ওদের" বাড়াবাড়ির জন্যই বিজেপির মত দলের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল।

    ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত এই কটাই মনে পড়ছে।

    এখন আমার প্রশ্ন

    ১) মুসলিমবিদ্বেষীদের এই দাবিগুলো কি তথ্যগতভাবে সত্যি?

    ২) সত্যিই কি ইসলাম আর পাঁচটা ধর্মের থেকে ব্যতিক্রমী ভায়োলেন্ট? এখন তো যুক্তি, তথ্য, পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মেথডলজি দিয়ে অনেক বিষয় কম্পারেটিভ স্টাডি করা যায়। "ইসলাম অন্য পাঁচটা ধর্মের থেকে ভায়োলেন্ট" - এই বিষয়টা কি যুক্তি, তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায়? মানে আমার প্রশ্ন, দাবিটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?

    ৩) ধরে নিলাম, ইসলাম সবচাইতে ভায়োলেন্ট ধর্ম। কিন্তু তাতে করেই কি মুসলিমবিদ্বেষ জায়েজ হয়ে যায়?

    ৪) একজন নাস্তিক হিসাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণ করা হলে তার প্রতিবাদ করা কি অন্যায়?

    ৫) হিন্দু মৌলবাদ কি সত্যিই ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল? ইসলামিক মৌলবাদ না থাকলে সত্যিই কি হিন্দু মৌলবাদ বলে কিছু থাকত না?

    ৬) আইসিস বা তালিবানের মত মুসলিম লিগ বা বর্তমানে মিমকে কি মৌলবাদী বলা যায়? নাকি "সাম্প্রদায়িক, কিন্তু মৌলবাদী নয়"-এমনটা বলা উচিত?

    আমার প্রশ্ন করার মূল কারণটা কিন্তু কোনভাবেই ইসলামকে ডিফেন্ড করা বা তার ভয়াবহতাকে লঘু করা নয়। আমিও ধর্মহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মত ইসলামের অবসানও আশা করি।

    কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্তরে ইসলামের সমালোচনাটা যেভাবে হয়, তার টোনটা ঠিক যুক্তিবাদের নয়, টোনটা বিদ্বেষের। এখন রিলিজিয়াস ক্রিটিসিজমকে ঢাল করে বুঝে বা না বুঝে অনেক প্রগতিশীল মানুষও বিদ্বেষের টোন ব্যবহার করছেন। এটা খুব আশঙ্কার।

    এখন, এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটাকে আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা না করে বরং এ প্রসঙ্গে কতকগুলো সাধারণ কথা ভেবেচিন্তে দেখি। তাতে করে সমাধান না আসুক, অন্তত সমস্যাটার চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারে কিনা, দেখা যাক। হতে পারে, ভাবতে গিয়ে হয়ত ওপরের দু-একটা প্রশ্ন শেষতক বাদই পড়ে গেল, বা উল্টোভাবে, যে প্রশ্ন এখানে নেই তেমন কিছু এসে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    প্রথমেই বলা দরকার, অনেকে আধুনিক মৌলবাদী উত্থানকে মুসলমান জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে এক করে দেখেন, যা মোটেই সঠিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রধান ধর্মীয় ধারাগুলোর সবকটির মধ্যেই মৌলবাদী উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন মাত্রা, ভঙ্গী ও ধরনে। আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীদের কথা আমরা জানি, জানি ইসরায়েলের ইহুদী মৌলবাদীদের কথা, জানি ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের কথা, এবং জানি এই ভারতেই আশির দশকে তেড়েফুঁড়ে ওঠা শিখ মৌলবাদীদের কথাও --- যাদের হাতে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন। ‘অহিংসার ধর্ম’ বলে কথিত বৌদ্ধধর্মও এ প্রবণতার বাইরে নয় মোটেই। থাইল্যান্ড, বর্মা ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের তরফেও জঙ্গি প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আজ অনেকেরই হয়ত আর মনে নেই, দুহাজার এক সালের কুখ্যাত ‘নাইন ইলেভেন’-এর ঘটনার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নাশকতার ঘটনা বলে ধরা হত উনিশশো পঁচানব্বই সালের দুটি ঘটনাকে। তার একটি ঘটেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা সিটি-র ‘ট্রেড সেন্টার’-এ, যাতে বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে ওই ভবনটিতে ধাক্কা মেরে প্রায় দেড়শো লোকের প্রাণনাশ করা হয়েছিল, এবং সেটা ঘটিয়েছিল কতিপয় খ্রিস্টান মৌলবাদী। অন্যটি ঘটেছিল জাপানে, যেখানে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে বিষাক্ত সারিন গ্যাসের কৌটো ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বিষাক্ত গ্যাসে সরাসরি যত না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এবং গুরুতরভাবে জখম হয় সুড়ঙ্গের ভেতরে আতঙ্কগ্রস্তদের দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে --- এবং সেটা ঘটিয়েছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী। আমরা বৌদ্ধধর্মটা অন্তত অহিংস বলে জানতাম, তাই না? তার দু বছর আগে উনিশশো তিরানব্বই সালে ভারতে সংঘটিত কুখ্যাত ‘বম্বে বিস্ফোরণ’ অবশ্যই একটি বৃহৎ নাশকতা, এবং সেটা ঘটিয়েছিল মুসলমান জঙ্গিরাই। কিন্তু, মুসলমান মৌলবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটা ছিল তার এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া। বলা বাহুল্য, এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকেও আবার মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বলেই দেখানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা কোনও সাম্প্রতিক ‘অত্যাচার’-এর প্রতিক্রিয়া ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীদের নিজেদের দাবি অনুযায়ীই, এটা নাকি মোগল সম্রাট বাবরের তরফে ঘটে যাওয়া পাঁচশ বছরের পুরোনো এক অন্যায়ের প্রতিকার মাত্র! এবং, এই বাবরি মসজিদের ধ্বংসও আবার এ দেশে ধর্মীয় নাশকতার প্রথম ঘটনা নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও নয়। এ দেশে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় নাশকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে যদি কোনও বিশেষ ঘটনাকে ধরতেই হয়, তো সেটা সম্ভবত উনিশশো চুরাশি সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার ঘটনা। সেটা মুসলমানেরা ঘটায়নি, ঘটিয়েছিল শিখ মৌলবাদীরা।

    ধর্মের সমালোচনা যে আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সমালোচনা মানে সব ধর্মেরই সমালোচনা, ইসলামেরও।  কিন্তু, ইসলাম ধর্মের সমালোচনায় একটি ভুল আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা বলি, ইসলাম ধর্ম (এবং সেইহেতু ওই ধর্মাবলম্বীরাও) তো হিংস্র হবারই কথা, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার উপাদান খুব বেশি আছে। হয়ত সত্যিই আছে, কিন্তু যুক্তিটা তা সত্ত্বেও ভুল, এবং দুটো দিক থেকেই ভুল। কারণ, প্রথমত, সব ধর্মশাস্ত্রেই হিংসার উপাদান কমবেশি আছে। এবং দ্বিতীয়ত, যে ধর্মের শাস্ত্রে হিংসার উপাদান কিছু কম আছে সে ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আচরণে হিংসা কম থাকবেই --- এ প্রত্যাশার ভিত্তিটাও বোধহয় খুব পোক্ত নয়।
     
    হিংস্রতার বর্ণনা ও তার নৈতিক সমর্থন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে কোরানের চেয়ে কিছু কম নেই। কম নেই বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও, যদিও, হয়ত বা সত্যিই কিছু কম আছে নিউ টেস্টামেন্টে।  আবার, শাস্ত্রগ্রন্থে হিংস্রতার বর্ণনা কম থাকলেই যে ধার্মিকেরা কিছু কম হিংস্র হবেন, এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। যুদ্ধলিপ্সা, হত্যা এবং হিংস্রতায় যিনি প্রবাদপ্রতিম, সেই চেঙ্গিস খান কিন্তু মোটেই মুসলমান ছিলেন না, 'খান' পদবী দেখে যা-ই মনে হোক।  খ্রিস্টানরা ষোড়শ-সপ্তদশ শতক জুড়ে আমেরিকাতে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের যাবতীয় ক্ষমার বাণী সত্ত্বেও, তা ইতিহাসে বিরল। মধ্যযুগের শেষে এবং আধুনিক যুগের গোড়ায় 'ক্ষমাশীল' খ্রিস্টানদের ডাইনি পোড়ানোর হিড়িক দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন না, এমন কেউই কি আছেন এ যুগে? 'ইসলামিক স্টেট' তার ঘোষিত 'বিধর্মীদের' হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই, বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে, এবং সেটা সারা জগতের লোককে ডেকে দেখানোর জন্যেও বটে। দেখ হে, আমরা কত ভয়ঙ্কর, কত বড় বীর, এই রকম একটা ভাব। কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টানরা ডাইনি মারত ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে, এবং যন্ত্রণা দেওয়াটাই সেখানে মূল উদ্দেশ্য, যাতে অকথ্য অত্যাচার করে তার মুখ থেকে অন্য আরেক ‘ডাইনি’-র নাম বার করে আনা যায়। এই কাজটির জন্য তারা বিচিত্র ও বীভৎস সব কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিল। কাজেই, বিশেষ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় হিংস্রতার সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় অনুমোদনের একটা সহজ সরল সম্পর্ক ধরে নেওয়াটা বোধহয় সব সময় খুব নিরাপদ নয়।

    মুসলমানদের হিংস্রতার মতই আরেকটি বাজে গল্প আছে মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে। মুসলমানদের হুহু করে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং দ্রুত তারা হিন্দুদেরকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দেশটাকে দখল করে ফেলবে, এই মিথ্যে আতঙ্কটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু, বহু মানুষই যা সরলমনে বিশ্বাস করেন। এখানে বলে নেওয়া দরকার, মুসলিম জনসংখ্যা যে বাড়ছে এবং তার হার যে হিন্দুদের চেয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বেশিই বটে, এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। মিথ্যে হল এই প্রচারটা যে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের চেয়ে তাদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে যাবে, এবং তারাই দেশটাকে গ্রাস করে ফেলবে। আসলে ঘটনা হল, সব ধর্মের জনসংখ্যাই বাড়ছে, এবং সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সব দেশেই সংখ্যাগুরুদের চেয়ে সামান্য একটু বেশি হয়, যদি সেখানে সংখ্যালঘু নিধন না চলে, এবং বিশেষত যদি সে সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হয়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির আসল যোগটা ধর্মের সঙ্গে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যেও গরিবদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি যদি আলাদা করে হিসেব করা হয় তো দেখা যাবে যে তা সচ্ছল হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পন্নরা ভাল রোজগার করতে চায়, ভালভাবে থাকতে চায়, এবং সন্তানের জীবনযাপনও যাতে সে রকমই হয়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। তারা জানে যে সেটা করতে গেলে সন্তানকে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া দরকার, তার পেছনে ভাল করে যত্ন ও খরচাপাতি করা দরকার, এবং সেটা করার ক্ষমতাও তাদের আছে। ছেলেপুলে বেশি হলে তা সম্ভব নয়, এবং তাতে করে বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে, মা ঘরের বাইরে গিয়ে পেশাগত কাজকর্ম করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে না। ফলে, তারা বেশি সন্তান একদমই চায় না। উল্টোদিকে, গরিবরা এত কথা জানেও না আর তাদের সে ক্ষমতাও নেই। ফলে তারা যত বেশি সম্ভব সন্তান চায়, সেটা মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও। গরিবরা জানে তাদের সন্তান দুধেভাতে থাকবে না, এবং শেষপর্যন্ত কোনও শ্রমসাধ্য কাজেই যোগ দেবে যাতে শিক্ষা বা 'স্কিল' সেভাবে লাগে না। ফলে, সন্তানের সংখ্যা বেশি হলে দুরবস্থা আর অযত্নের মধ্যেও হয়ত রোগভোগ মৃত্যু এড়িয়ে কেউ কেউ টিঁকে যাবে, আর পরিশ্রম করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে, যৎসামান্য হলেও। অথচ এদেরই যখন অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তখন এরা মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখাতে চাইবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে কেরানি-আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল এইসব বানাতে চাইবে, ফলে স্বল্পসংখ্যক সন্তান চাইবে, এবং মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। একটু ভাল করে খোঁজখবর করলেই জানা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে কিন্তু আসলে ঠিক তাইই, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ক্ষেত্রেই। এবং, মুসলমানরা পিছিয়ে আছে বলেই তাদের অগ্রগতিও দ্রুততর। তাদের জন্মহারের বৃদ্ধি কমছে কিছু বেশি দ্রুতলয়ে। এভাবে চললে আর দেড় দুই দশক পরেই হয়ত হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে, এবং মুসলমানদের ভারত দখলের কুৎসিত অশিক্ষিত গল্পতেও তখন আর কেউই পাত্তা দেবে না। ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি এই দিকেই।
     
    এখানে 'অগ্রগতি' বলতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বুঝিয়েছি। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই কমিয়ে আনাটা হিন্দুদের চেয়ে বেশি হারে ঘটছে (বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে জনসংখ্যা কমে যাওয়া নয় কিন্তু, এ হার কমতে কমতে শূন্যের নিচে নামলে তবেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে)। এই কমে আসাটা উন্নয়নের পরোক্ষ সূচক। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন বাদে যে হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।  পিছিয়ে আছে বলেই অগ্রগতি বেশি তাড়াতাড়ি হচ্ছে --- এ কথাটা হয়ত অনেককে বিস্মিত করতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার কারণ আছে। নিশ্চয়ই জানেন, ভারত চিন ব্রাজিলের মত একটু এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশি। এর কারণ হচ্ছে, একবার উন্নত হয়ে গেলে একই গতিতে আরও আরও উন্নত হতে থাকাটা ক্রমশই আরও বেশি বেশি করে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই উন্নয়নের প্রথম দিকে বৃদ্ধির যে গতি থাকে পরের দিকে আর তত গতি থাকে না। মুসলমানদের জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও তাইই ঘটছে, এবং আরও ঘটবে (ও দুটোকে খুব নিখুঁতভাবে মেলানোর দরকার নেই, যদিও)।

    আমরা যারা এই বিষয়গুলোকে এইভাবে ভাবার চেষ্টা করি, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে প্রায়শই, ফেসবুকে সে গর্জন রোজই শোনা যায়। এখন, এটা তো সত্যি কথাই যে, পশ্চিমবাংলার যুক্তিবাদীদের লেখালিখিতে, এবং যথারীতি আমার নিজের লেখাতেও, হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনাই বেশি আসে, মুসলমান মৌলবাদের কথা বাস্তবিকই আসে অনেক কম। ঠিক এই অভিযোগটি সেক্যুলারদের প্রতি হিন্দু মৌলবাদীরা করে থাকেন নিয়মিতই (বস্তুত, প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরাই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজের সেক্যুলারদের প্রতি এই একই অভিযোগ করে থাকে)। কিন্তু একটু ভাবলে বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এবং, অন্যরকম কিছু হলেই বরং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত হত, এমন কি অন্যায়ও হত। কেন, তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ যে মৌলবাদী হুমকিটির মুখোমুখি, সেটা তো হিন্দু মৌলবাদই, অন্য কোনও মৌলবাদ নয়। শিক্ষা-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার ধর্মীয়করণ, সংবিধানকে পাল্টে দেবার পরিকল্পনা, ভিন-ধর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্মের জিগির তুলে তার আড়ালে সরকারি সম্পত্তি পাচার --- এ সব তো মুসলমানরা করছে না, হিন্দুত্ববাদীরাই করছে। অতএব, তাদের মুখোশ খোলাটাই এখানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। মুসলমান জঙ্গিরা নাশকতা ঘটালে তার মোকাবিলার জন্য পুলিশ-মিলিটারি আছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা মৌলবাদীদের রোখবার দায়িত্ব তো আর পুলিশ-মিলিটারি নেবে না, সেটা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের কাজ। আমি যে দেশে এবং যে ধর্মীয় সমাজের মধ্যে বাস করি, সেখানে যারা অন্ধত্ব ও হিংস্রতা ছড়াচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে বিনাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই তো আমার পক্ষে স্বাভাবিক, তাই না? বাংলাদেশি মুক্তমনারা যদি মুসলমান ধর্ম ছেড়ে হিন্দুদেরকে গালি দিতে থাকতেন, বা বার্ট্র্যান্ড রাসেল যদি 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ ক্রিশ্চান' না লিখে 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' লিখে বসতেন, তাহলে যেমন উদ্ভট অসঙ্গত কাজ হত, এখানে আমরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান নিয়ে পড়লেও ঠিকই একই ব্যাপার হবে (যদিও বাংলাদেশি মুক্তমনারা ঠিক যা বলেন এবং যেভাবে বলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে, তবে সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না)। দ্বিতীয়ত, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মুক্তমনা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা হিন্দু সমাজে জন্মেছি বলেই সে সমাজ ও তার ধর্ম শাস্ত্র রীতিনীতি আচার বিচার এইসব অনেক বেশি জানি, ফলে সে ব্যাপারে আমাদের সমালোচনা অনেক বেশি নিরেট, নির্ভুল এবং অর্থবহ হয়, যা ভিনধর্মী সমাজে যারা জন্মেছে তারা পারবেনা। ঠিক একই কারণে, মুসলমান সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে মুসলমান সমাজে জন্মানো যুক্তিবাদীদের সমালোচনা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ হয়। যদিও, এর মানে মোটেই এই নয় যে এক ধর্মে জন্মানো লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করতেই পারবেনা --- যে কোনও মানুষের যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে, এবং করা উচিত। তবে কিনা, নিজের সমাজের অন্ধত্ব অযুক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে সোচ্চার হওয়াটা যে কোনও মানুষেরই ‘স্বাভাবিক’ অধিকার, কর্তব্যও বটে।
     
    আচ্ছা, তা সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল --- মুসলমানেরা ধর্মান্ধতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, না পিছিয়ে? এসব ঠিকঠাক বলতে গেলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল চাই, না হলে সবটাই চায়ের দোকানের আড্ডা হয়ে যাবে। আপাতত আছে কি সে সব, আমাদের হাতে? সুখের বিষয়, সে সব আছে। এই কিছুদিন মাত্র আগেও সেভাবে ছিল না, কিন্তু এই একুশ শতকে বেশ ভালভাবেই আছে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সংস্থা এখন মানুষের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রামাণ্য সমীক্ষা করে থাকে, তার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসও পড়ে। এইসব সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা নানা গভীর গবেষণাও করে থাকেন, এবং তাতে তেমন চমকপ্রদ কোনও ফলাফল পাওয়া গেলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সে নিয়ে আলোড়ন উঠে যায়। এই রকমই একটি সংস্থা হল ‘উইন গ্যালাপ’। তারা সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিখ্যাত সমীক্ষা চালিয়েছিল ২০১২ সালে, তাতে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য, ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা, এইসবের হিসেব ছিল। তাতে কি দেখা গেল? নিচে দেখে নিন ২০১২ সালের পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল, সুন্দর করে সারণিতে সাজানো। এখানে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন অথচ ধার্মিক বলে দাবি করেন না --- এমন মানুষের অনুপাত মুসলমানদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। কারা কবে সমীক্ষাটি করেছে, এবং তা কোন নথিতে প্রকাশিত, সব তথ্যই পাবেন এখানে।
     
     
    এবার একটি ইসলামীয় দেশকে নিয়ে ভাবা যাক, যেখানে প্রায় সর্বাত্মক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ইসলামীয় রাষ্ট্র আছে। ধরুন, ইরান। এই  দেশটা সম্পর্কে আপনি কী জানেন? জানি, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই একই কথা বলবেন। ছিয়ানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ (সরকারি সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী) মুসলমান অধ্যুষিত একটি ধর্মান্ধ দেশ, যার মধ্যে আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা শিয়া মুসলমানদের। কট্টর মৌলবাদীরা সেখানে দেশ চালায়, প্রশ্ন করলেই কোতল হতে হয়, মুক্তচিন্তা কল্পনাতীত। সম্প্রতি সেখানে হুলুস্থুলু ঘটে গিয়েছে, সে সব খবরাখবর আপনারা দেখেছেন। একটি মেয়েকে ইসলাম-সম্মত পোশাক না পরার অপরাধে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তাই নিয়ে প্রবল আন্দোলন হলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে এসেছে দমন-পীড়ন, এবং সদ্য-সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীর সামনে তার প্রতিবাদ করায় সে দেশের জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে মৌলবাদের দাপটের ছবিটা একদমই স্পষ্ট, আবার গণমানুষের আপত্তিটাও খুব আবছা নয়।

    আসলে, এখানে ধর্মীয় রাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপের তলাতেই লুকিয়ে আছে অন্য এক বাস্তবতা। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা (GAMAAN), ইরানই যাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু, তারা ২০২০ সালে  ইরানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে। সে সমীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্বাস করতে হয়, তো সেখানে সাঁইত্রিশ শতাংশ মত লোক নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন (শিয়া-সুন্নি মিলিয়ে), যাঁরা কোনও ধর্মীয় পরিচয় দিতে রাজি নন তাঁরা বাইশ শতাংশ, যাঁরা পরিষ্কারভাবে নিজেকে নাস্তিক-অজ্ঞাবাদী-মানবতাবাদী এইসব বলে পরিচয় দেন তাঁরা সব মিলিয়ে প্রায় সতেরো শতাংশ, যাঁরা নিজেকে শুধুই 'স্পিরিচুয়াল' বলেন তাঁরা প্রায় সাত শতাংশ, এবং বাকিরা আরও নানা বিচিত্র ধর্মের মানুষ। নিচের ছবি দুটোয় সমীক্ষার ফলাফল এক নজরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ বন্ধু, একুশ শতকে পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং হয়ত বিশ শতকের চেয়েও দ্রুত গতিতে! এবং, ইসলামীয় দেশগুলো কোনওভাবেই এ প্রবণতার বাইরে নয়। নিচে সে সমীক্ষার ফলাফল দেখুন, চিত্রাকারে।
     
     
    ধর্ম, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, অবতার ইত্যাদি ধ্যানধারণা বিষয়ে ইরান-বাসীদের বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) ঠিক কী রকম, সে চিত্রও উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। নিচে দেখুন।
     
     
     
    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ধর্মপ্রীতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে যেসব জনপ্রিয় ধ্যানধারণা আছে, তার সমর্থন এইসব সমীক্ষার ফলাফল থেকে মিলছে না মোটেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইঙ্গিত এখান থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নাকি একটা সম্পূর্ণ আলাদা উল্টোপাল্টা কিছু। সেটা বুঝতে গেলে বর্তমান শতকের বিগত কয়েকটি দশকে গোটা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি এক নজরে দেখে নেওয়া দরকার। এমনিতে সেটা একটু মুশকিল, কারণ, তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার করা অনেকগুলো সমীক্ষা-কর্ম খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর প্রাসঙ্গিক ফলাফলটুকু বেছে নিয়ে তুলনা করতে হবে। সেইজন্যে, আমি যতটা পেরেছি সেগুলোকে সাজিয়ে একটা মাত্র সারণিতে নিয়ে এসেছি, তাতে পাঠিকের কিছু সুবিধে হবার কথা। সেটা নিচে দিলাম, দেখুন। সারণির কোন সংখ্যাটি কোন সংস্থার করা কবেকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, সেটা ওখানেই দেওয়া আছে। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য কোনও সংস্থার তরফে দেওয়া নয়। এটি দিয়েছিলেন সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান, তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টুকরো সমীক্ষার ফলাফল এক জায়গায় করে।
     
     
     
     
    এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আসলে, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, সব ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেই ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে প্রবণতা রয়েছে, মুসলমানরা কোনও মতেই সে প্রবণতার বাইরে নয় (অবশ্যই, এ হিসেব সামগ্রিক ও বৈশ্বিক, এবং অঞ্চল ও অন্যান্য পরিস্থিতি-ভেদে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।

    কেন এই জগৎজোড়া প্রবণতা? আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বলবে, সবই যুগের হাওয়া। মানে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র-মানবতাবাদ-যুক্তিবাদ এইসবের প্রভাবই এর কারণ। কথাটা সত্যি, কিন্তু সমাজবিদেরা এর চেয়েও বড় কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা আজ সুপ্রচুর তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, মানব সমাজের উন্নতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিপ্রতীপ। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে, সমাজকল্যাণে সরকার বেশি বেশি খরচা করলে, অর্থনৈতিক অসাম্য কমলে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ভাল হলে ধর্মের রমরমা কমতে থাকে (এখানে আর বিস্তারে যাব না, যদিও আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পরেও করব)। সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়ম মুসলমান সমাজের ওপরে প্রযোজ্য হবে না, এমনটা  ভেবে নেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ইরানে যা ঘটছে, সেটা সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়মের চাপেই। নেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই দেখতে পাবেন, ইরানের মাথাপিছু উৎপাদন ভারতের প্রায় আটগুণ, বাজেটের শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচ প্রায় সাতগুণ এবং শিক্ষাখাতে তা দেড়গুণেরও বেশি, এবং নারী ও পুরুষ উভয়েরই আয়ু আমাদের থেকে ভাল (গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের দশা শোচনীয়, যদিও)। কাজেই, ইরানে মৌলবাদী রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর কেন গণ-অসন্তোষের চাপ আছে এবং পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে কেন তা ততটা নেই --- এইটা বুঝতে পারা খুব কঠিন না।

    বলা প্রয়োজন, সমাজ-বিকাশজাত এই চাপের খেলা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোতেও, বিশেষত এই একুশ শতকে। এই সেদিন পর্যন্ত আমেরিকা আর আয়ার্ল্যান্ডে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য ছিল অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধার্মিক সমাজবিদেরা তাই দেখিয়ে বলতেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেই ধর্মের রমরমা কমবে, এটা হচ্ছে গিয়ে প্রগতিবাদীদের বানানো একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিষয়টা জলের মত স্বচ্ছ হয়ে আসছে, এবং আপত্তি তোলবার পরিসর হয়ে আসছে অতিশয় সঙ্কুচিত। মার্কিন সমাজে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনটা দেখতে পাবেন এক নজরেই, নিচের লেখচিত্রে। লক্ষ করে দেখুন, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমেরিকাতে যখন খ্রিস্টানরা এসে ঠেকেছে ৮৫ শতাংশ থেকে ৬৯-এ, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যখন মোটের ওপর একই আছে, তখন ধর্মহীনদের শতকরা অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে শূন্য থেকে একুশে (অন্য কিছু সমীক্ষায় এটি প্রায় তিরিশ বলে দেখানো হয়েছে, যদিও)।
     
     
     
    আর, এই শতকের প্রথম দশকে আয়ার্ল্যান্ড-বাসীর ধর্মবিশ্বাসে যা ঘটেছে, সেটা দেখে নিন নিচের সারণিতে। আয়ার্ল্যান্ড হল গোঁড়া ক্যাথোলিক অধ্যুষিত একটি দেশ। একটা উন্নত পশ্চিমী দেশের পক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে, এই সেদিন পর্যন্তও এই দেশটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল, এবং গর্ভপাতের দরকার পড়লে আইরিশ নারীদেরকে পার্শ্ববর্তী ব্রিটেনে গিয়ে হাজির হতে হত। তারপর উন্নত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্ম-সংস্কৃতির দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলাফল তখনই সারা বিশ্বের নজরে এল, যখন দু হাজার আঠেরো সালে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়ে গেল (আয়ার্ল্যান্ড নিয়ে আমার আলাদা একটি লেখা ‘গুরুচণ্ডালি’-তে পাবেন)।
     
     
    বলা বাহুল্য, মোটের ওপর এই একই ঘটনা ঘটবার কথা মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও, এবং ঘটছেও তাইই। বেশ কয়েকটি ধর্ম-শাসিত রক্ষণশীল দেশে কমছে কঠোর ধর্মীয় বাধানিষেধ, বাড়ছে ধর্মহীনতা, এবং সাধারণ্যে কমছে ধর্মের প্রতি আনুগত্য, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা  এখনও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। বিষয়টাকে যদি খুঁটিয়ে নজর করা হয়, তাহলে এমন অনেক কিছুই হয়ত জানা যাবে, যে ব্যাপারে আমরা আগে সচেতন ছিলাম না। যেমন, ইরান-ইরাক-আফগানিস্তান যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়ে গেল, এবং যেভাবে তুর্কি দেশটিতে ক্রমেই শক্ত হচ্ছে মৌলবাদের মুঠি আর টলমল করছে ধর্মনিরপেক্ষতার আসন, সে নিয়ে আমরা প্রায়শই দুশ্চিন্তিত হই। ঠিকই করি। কিন্তু, আমরা কখনই খেয়াল করে দেখিনা যে, এই ধরাধামে একান্নটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে একুশটিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই চলছে (সে ধর্মনিরপেক্ষতার দশা প্রায়শই আমাদের চেয়ে খুব একটা ভাল নয় যদিও, তবে সেটা তো অন্য চর্চা)। এবং, ধর্মনিরপেক্ষীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চালু, সে তালিকায় এই সেদিনও যুক্ত হয়েছে সুদান।

    তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে, এবং আসবেও, জানা কথা। ওপরে উদ্ধৃত আমার তরুণ বন্ধুর ভাষায়, সে প্রশ্নটা এ রকম --- “আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?”। সত্যিই তো, প্রশ্ন হতেই পারে। ওপরে ব্যাখ্যা করেছি (এবং পূর্ববর্তী পর্বগুলোতেও), মৌলবাদী উত্থান সব ধর্মেই হয়েছে, শুধু ইসলামে নয়। এবং, জঙ্গি ক্রিয়াকলাপও কম বেশি হয়েছে সব ধর্মের তরফেই। সেই সত্যে ভর করে আমি হয়ত তর্ক করতে পারতাম, অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের তফাতটা তাহলে গুণগত নয়, নিছকই পরিমাণগত। এরা কম, ওরা কিছু বেশি, এটুকুই মাত্র। কিন্তু, এ তর্ক শেষতক দাঁড়াবে না। পাথরের নুড়ির সঙ্গে পাথরের টিলার গুণগত পার্থক্যকে স্রেফ পরিমাণের দোহাই দিয়ে নস্যাৎ করাটা বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামীয় জঙ্গিপনার নিবিড়তা, ঘনত্ব, প্রচণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিকতা, এ সবকে নিছক কম-বেশির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। যদি বলি, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিলেও আসল সমস্যাটা রয়েই যায়। সব মুসলমানই তো আর মৌলবাদী জঙ্গি নন, তার এক অতি ক্ষুদ্র অংশই কেবল মৌলবাদী জঙ্গি। কাজেই, এই জঙ্গিপনাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকে, ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটির কোনও মৌল উপাদান থেকেই কি এই বৈশিষ্ট্যটি উৎসারিত হচ্ছে, নাকি, মুসলমান অধ্যুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রগুলোর  কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিই এ বৈশিষ্ট্যের নির্মাতা?
     
    কেউ কেউ এ প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিয়ে ফেলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, এ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটিরই মৌল উপাদান থেকে নিঃসৃত, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার অনুমোদন আছে। এ যুক্তিটি যে ভুল, সে আলোচনা ওপরে করেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর তবে কীভাবে খোঁজা যায়? আজকের দিনে বিজ্ঞানে, বিশেষত সমাজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এ ধরনের প্রশ্নের সমাধানের জন্য যা করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ এক্সপেরিমেন্ট’। সমাজের ওপর তো আর পরীক্ষা চলবে না, অতএব সেখানে দরকার ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি একই রকম করে তৈরি (বা সংগ্রহ) করে রাখা দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটিতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক উপাদান যোগ করে (বা একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে), এবং অপরটিতে তা না করে, শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রটিতে কোনও এক নির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফল এলো কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, যাতে ওই নির্দিষ্ট উপাদানটির (বা প্রক্রিয়াটির) সঙ্গে ওই ফলাফলটির কার্যকারণ সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেমন একই ধরনের দু দল রুগির মধ্যে একদলকে সে ওষুধ দিয়ে এবং অন্যদলকে তা না দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে দ্বিতীয় দলের তুলনায় প্রথম দলের কিছু বেশি উপকার হল কিনা, এও তেমনি। মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি? এই ধরনের অনুসন্ধান হয়ত আমাদেরকে এ ধরনের প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রসঙ্গে এ রকম গবেষণার কথা আমাদের জানা নেই।
     
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়। মুসলমান সমাজ ও দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি, বিকাশের সুনির্দিষ্ট অবস্থা, তাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের তরফে নানা মতাদর্শ ও গোষ্ঠী-পরিচিতি নির্মাণের খেলা, এবং কখন ঠিক কোন তাড়নায় তারা কোন বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, আর কোন বৃহৎ শক্তিই বা তাদেরকে সামলানো বা ব্যবহার করার জন্য ঠিক কী চাল চালছে --- এই সবের ভাল বিশ্লেষণ ছাড়া বিষয়টা ঠিকভাবে বোঝাই যাবে না। তাছাড়া, এই দেশগুলোতে 'সেক্যুলার' শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও প্রায়শই শাসকরা স্বৈরাচারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেন, এবং, কেনই বা মৌলবাদীরা বারবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থাকার ভাণ করতে পারে, এটাও এ প্রসঙ্গে গভীরভাবে বোঝার বিষয়।  

    বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নে যথার্থ ও যথেষ্ট বিশ্লেষণ এবং নিষ্পত্তিমূলক উত্তর এখনও আসেনি সমাজবিজ্ঞানীদের তরফ থেকে। যতদিন তা না আসে, ততদিন আমরা কী করতে পারি? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারি, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা জানা গেছে সে সব জানার চেষ্টা করতে পারি, যুক্তিসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার অভ্যাস করতে পারি …………… আর কিছু পারি কি?

    হ্যাঁ, পারি বোধহয়। মন থেকে অকারণ সন্দেহ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ এইসব চিহ্নিত করে তা বর্জন করার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে পারি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৮৮৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debasis Bhattacharya | ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৪০515321
  • guru-সহ অনেকেরই অনেক সাড়া না দেওয়া কথা পড়ে আছে, পাপের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে। আসলে, ছুটকো ছাটকা মন্তব্য ছাড়া একটু বড়, সিরিয়াস ধরনের মন্তব্য মোবাইলে করতে পারিনা, কেমন একটা অস্বস্তি হয়। দুটো হাত মস্ত কীবোর্ডের ওপরে না রাখলে যেন মনের মধ্যে কথা তৈরিই হতে চায়না। এদিকে, একমাত্র কম্পিউটার-টি পুত্রের দখলে, তার পরীক্ষা-প্রস্তুতির কারণে।‌ তাই, সুযোগের অপেক্ষায়। মাঝরাতে, বা কাল সকালেই আরেক দফা নামিয়ে দেব।
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০২:০০515324
  • সাড়াগুলো দিন সময় সুযোগ পেলে, আমরাও সমৃদ্ধ হই। এইরকম এত সক্রিয় ও পরিচ্ছন্ন তর্কবিতর্ক আর কোনো লেখায় দেখি নি সাম্প্রতিক অতীতে। অনেক ধন্যবাদ।
  • dc | 2401:4900:231c:128a:b99d:8144:5a48:bd8b | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:১৭515325
  • আধুনিকতার খোঁজের লেখা "আচ্ছন্ন ডিস্টোপিয়ার দেশ" পড়লাম। ডিস্টোপিয়ান সমাজ নিয়ে অবশ্যই অনেক লেখা হয়েছে, যেমন ব্লেডরানার, নিউরোম্যান্সার, অলটার্ড কার্বন, হাংগার গেমস ইত্যাদি। অরকম বহু লেখায় কল্পিত ডিস্টোপিয়ান সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ব্যাক্তির স্বাধীন চিন্তার ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন। এটা মনে রেখে ওপরের লেখার সাথে অনেক ক্ষেত্রে আমার দ্বিমত আছে, সেগুলো লিখি। 
     
    প্রথমত, কনটেম্পোরারি পৃথিবীতে চিন্তার ওপর রাষ্টের আরোপিত শৃঙ্খল খুব বেশী জায়গায় আছে বলে মনে হয়না। কয়েকটা উদাহরন মনে আসছে, যেমন নর্থ কোরিয়া, চীন, বা ইরান। কিন্তু দেখুন, চীনেও কিছুদিন আগে এমন প্রোটেস্ট হলো যে সরকার বাধ্য হলো জিরো কোভিড পলিসিস থেকে সরে আসতে। ইরানেও প্রচুর প্রোটেস্ট হচ্ছে, এমনকি আফগানিস্তানেও তালিবানদের বিরুদ্ধে প্রোটেস্ট হচ্ছে। রাশিয়াতেও প্রচুর নিষেধ, আর পুটিন তো বিরোধীদের গুমখুনে অভ্যস্ত, কিন্তু ডিস্টোপিয়ান সমাজের মতো অবস্থা মনে হয়না এখনও হয়েছে বলে। আগের চাইতে টেকনোলজিকাল সার্ভেইল্যান্স অনেক বেড়েছে এতে কোন সন্দেহই নেই, কিন্তু এসব নিয়ে নানান চিন্তাভাবনাও হচ্ছে, আমেরিকা, ইইউ, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশে নানারকম লিগাল ফ্রেমওয়ার্কও আনা হচ্ছে। 
     
    "আমরা নেহাতই পুঁজির হাতে বোতলবন্দি। পুঁজিবাদ আমাদের প্রকৃতি, সমাজজীবন, সম্পর্ক, জ্ঞান, আমাদের শ্রম এমনকি আমাদের নিজের সত্তা থেকেই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সে মেশিন, রোবট ও গ্যাজেটে ভরা এক দুঃস্বপ্নের সমাজ তৈরি করেছে। "
     
    একেবারেই একমত নই। প্রথমত, আপনি ব্যপারটা এতোই জেনারালাইজ করে ফেলেছেন যে এটা নিয়ে মন্তব্য করা শক্ত। অনেকটা ক্লাস টেনের রচনার মতো হয়ে গেছে। আমার মতে মেশিন, রোবট আর গ্যাজেটে ভরা অতি সুসময়ে আমরা বাস করছি। ট্রাভেল আর কমিউনিকেশান টেকনোলজির অসাধারন উন্নতি হয়েছে। শুধুমাত্র গুগল ম্যাপ আমাদের জীবনযাত্রা কতোখানি পরিবর্তন এনেছে, ভেবে দেখতে পারেন। এছাড়াও আমরা গ্লোবাল সাপ্লাই চেন তৈরি করেছি, পৃথিবীর বেশীর ভাগ দেশ আজকে ফ্রি ট্রেডে অংশগ্রহন করছে, যদিও ট্রেড ব্যারিয়ার আর ট্যারিফ অবশ্যই আরও কমানো উচিত। গ্লোবাল হেল্থ কেয়ার সিস্টেমের প্রভূত উন্নতি হয়েছে, গত পঞ্চাশ বছরে মানুষের লাইফস্প্যান বেড়েছে, চাইল্ড মর্টালিটি কমেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। লিটারেসি বেড়েছে, কোয়ালিটি অফ লাইফ আগের থেকে বেড়েছে। এসব নিয়ে অনেক ডেটা আছে, বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ডেটা ব্যাংক তো আছেই। এছাড়াও আপনাকে অনুরোধ করবো সময় পেলে https://ourworldindata.org/ সাইটটা ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখতে। 
     
    অবশ্যই পভার্টি আর ইনইকুয়ালিটি এখনও বিরাট বড়ো সমস্যা, বিশেষ করে ইনইকুয়ালিটি বহু ক্ষেত্রেই বাড়ছে। তবে এর ভিত্তিতে বর্থমান সময়কে ডিস্টোপিয়ান বলা যেতে পারে বলে মনে হয় না। 
     
    "প্রযুক্তি দিয়ে মানুষের শ্রমকে যখন পুঁজিবাদ অদূর ভবিষ্যতেই প্রতিস্থাপিত করে দিতে পারবে তখন এই বিশাল সংখ্যক প্রতিরোধহীন বাতিল, অপাংক্তেয় মানুষকে পুঁজিবাদ কী চোখে দেখবে"
     
    এরকম জেনারালাইজড স্টেটমেন্ট নিয়ে আলোচনা করা যায়না। আপনার কাছে যদি ডেটা থাকে তো অবশ্যই আলোচনা করতে রাজি আছি :-)
     
    "ল্যাবেই তৈরি হোক বা প্রকৃতি থেকেই আসুক, এই কোভিড ১৯ ভাইরাসটি যে এই প্রাকৃতিক ভারসাম্যের বিরুদ্ধেই পুঁজিবাদের অবিচ্ছিন্ন মুনাফাকেন্দ্রিক ব্যবস্থার ফলাফল— এক তৈরি করা মহা অবিন্যাসের ফলাফল— তা তো আজ প্রমাণিত"
     
    এই ব্যাপারটা কিভাবে প্রমাণিত হলো জানালে আলোচনায় সুবিধে হয়। সাধারনভাবে বলতে পারি যে প্যান্ডেমিক মানুষের ইতিহাসে বহুবার এসেছে। বরং কোভিড প্যান্ডেমিকের বিরুদ্ধে যেরকম দ্রুততার সাথে ভ্যাক্সিন তৈরি করা হলো, তা আগে সম্ভব হয়নি। আর এতো তাড়াতাড়ি ভ্যাক্সিন তৈরি করা সম্ভব হলো মলিকিউলার বায়োলজি, জেনেটিক্স, স্ট্যাটিস্টিকাল বায়োলজি ইত্যাদি ফিল্ডে প্রভূত উন্নতির ফলে। আমি নিজে যেহেতু ডেটা অ্যানালিসিস করে রুটি আর মাখন রোজগার করি, তাই এই স্ট্যাটিসটিক্স বেসড ড্রাগ ডিসকভারি ব্যপারটা আমার ভারি ভালো লাগে। 
     
    আমার মনে হয় যদি স্পেসিফিক ডেটা ও উদাহরন সহযোগে আলোচনা করেন তো অবশ্যই অংশগ্রহন করবো। আপনার লেখাটা বড্ডো বেশী সিমপ্লিসটিক মনে হলো, ওটা নিয়ে খুব একটা আলোচনা চালানো যায় না।  
     
    এই হলো গিয়ে আমার মতামত, অবশ্যই আমি ভুল হতে পারি :-)
  • dc | 2401:4900:231c:128a:b99d:8144:5a48:bd8b | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৯515326
  • গ্লোবাল পভার্টি রিডাকশান সংক্রান্ত একটা গ্রাফ দিঃ 
     
     
     
    ওপরের ওয়েবসাইট থেকে একটু টুকেও দিলামঃ 
     
    Here we see the share of worldwide population which is in poverty — defined as household income of no more than $1.90 per day — as implied by the populations, per-capita household incomes, and Gini coefficients of inequality from the Swedish foundation Gapminder.[1]

    For the first half of the nineteenth century, progress in poverty reduction was relatively slow. Over those 50 years, this poverty rate fell three percentage points or less than one percentage point every 15 years.

    Then, from 1850 to 1990, progress was reasonably steady but for the periods of world war, falling more than 34 percentage points — or about one percentage point every four years.

    Finally, poverty has fallen more rapidly in the last 25–30 years. Going forward, a fall of more than a percentage point every year is clearly not sustainable. The poverty rate cannot drop below zero, and the last few percentage points of poverty will surely take much longer to eliminate.
     
    এবার বড়ো করে একটা ডিসক্লেমার দিয়ে দিঃ পভার্টি আর ইনইকুয়ালিটি এখনও অনেক দেশেই বিরাট বড়ো সমস্যা। বিশেষ করে, অনেক দেশেই ইনইকুয়ালিটি বাড়ছে, জিনি ইনডেক্স দেখলেই বোঝা যাবে। তবে পভার্টি রিডাকশানও আস্তে আস্তে হচ্ছে, বিশেষত লাস কুড়ি তিরিশ বছরে গ্লোবাল প্রোডাক্টিভিটি দ্রুত বাড়ার ফলে আর হাইলি কানেক্টেড গ্লোবাল সাপ্লাই চেন তৈরি হওয়ার ফলে অবস্থা একটু ভালো হচ্ছেঃ 
     
    After a slow, decades-long decline, the concentration of the world’s population just at the poverty line rose steadily through the 1980s and 1990s and peaked in 1999. Therefore, growth was most effective at reducing the poverty rate at that particular time.

    As it happens, between 1997 and 2006, China, India, Ethiopia, Myanmar, Uganda, and Nepal all had poverty rates that crossed below 50 percent. Nearly two-thirds of the world’s poor in 1997 lived in those six countries, and their poverty rates fell by half in only nine years.

    Unsurprisingly, the bulk of the poor of these six countries — 93 percent — lived in China and India.
     
  • dc | 2401:4900:231c:128a:b99d:8144:5a48:bd8b | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:১৭515327
  • গত একশো আর পঞ্চাশ বছরে লিটারেসি রেট বেড়েছে, প্রাইমারি ও হায়ার স্কুল অ্যাটেন্ড্যাস বেড়েছে, চাইল্ড ও ম্যাটারনাল মর্টালিটি কমেছে, প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, ও টার্শিয়ারি হেল্থ কেয়ার বেড়েছে, গ্লোবাল পপুলেশানের অনেক বেশী শতাংশ হেল্থ কেয়ারের আওতায় এসেছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ডেটা ব্যাংক থেকে এগুলোর ওপর গ্রাফ বানাতে পারেন। 
     
    আইএমএফ এর তৎকালীন এমডি ক্রিস্টিন লাগার্ডের দুয়েকটা পেপার পড়েছিলাম বেশ কিছু বছর আগে, এখন খুঁজে পাচ্ছিনা। পেলে সেখান থেকে কোট করতাম। তবে এসব বিষয়ে পেপারের অভাব নেই। এস্থার ডুফলো আর অভিজিতবাবুর লেখালিখি তো আছেই, রঘুরাম রাজন এর অনেক পেপার আছে, তাছাড়াও স্টিগলিট্জ ইত্যাদিরাও আছেন। মনে হয় বর্তমান সময়ের অনেক ভালো আর খারাপ ব্যাপার নিয়ে সহজেই আলোচনা করতে পারবো। তবে হ্যাঁ, ডেটা ড্রিভেন আলোচনা হলে ভালো হয়, "আচ্ছন্ন ডিস্টোপিয়ার দেশ" খুব একটা অলোচনার যোগ্য লেখা মনে হলো না :-)  
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 2402:3a80:198b:d304:e217:697:6943:458e | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩১515328
  • @dc 
    অতিমারি নিয়ে আমার বক্তব্য থেকে আমি পরে অনেকটাই সরে এসেছি। ওটা শুরুর দিকের আতঙ্কের পরিবহে অনেকটাই ইম্পাল্স থেকে লেখা। তখনো দেবাশিসবাবুর e সংক্রান্ত লেখাগুলো পাইনি। আমি জানিয়ে রাখি আমি কোনোভাবেই তথ্যসমৃদ্ধ লোক নোই. নিজের ধারণাকে পাল্টাতে আমার কোনো অসুবিধে নেই। সেই জন্যই আপনাদের কাছে আসা। কিন্তু এই সময়েও  পুঁজিবাদি ডিস্টোপিয়া গুলি ফুটে উঠতে শুরু করেছে  বলে আমার বিশ্বাস। সেটার ব্যাপারে আমি স্পেসিফিক্যালি আপনাকে জানাবো। তখন একপ্রস্থ আবার আলোচনা করতে পারবো। তখন যদি মনে হয় এ আমার একান্তই দুরাশা তা নিঃসংকোচে মেনে নেব। এখন একটু গরুখাটা চলছে।  আবার অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য। 
     
     
  • dc | 2401:4900:231c:128a:b99d:8144:5a48:bd8b | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৪১515329
  • আধুনিকতার খোঁজে, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পরে সময় করে মন্তব্য করবেন, অসুবিধে নেই। আর নিজের ধারনা পাল্টাতে আমারও কোন অসুবিধে নেই, অন্যজনের কথা যুক্তিপূর্ণ মনে হলে সেটা মেনে নিতেও কোন অসুবিধে নেই। এ ব্যাপারে কবি (অনেকে বলেন কেইনস, তবে সেটা বোধায় ঠিক না) বলেছেনঃ When the facts change, I change my mind. What do you do, sir? আর মার্ক্স ভাই বলেছেন, These are my principles. If you don't like them, I have others. 
     
    কাজেই এসব ব্যাপারে ফ্লেক্সিবল হতে কোন অসুবিধে নেই :-)
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 2402:3a80:198b:d304:e217:697:6943:458e | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৪৯515330
  • @dc 
    Osadharon ,
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৫০515331
  • dc কিন্তু তথ্য এবং যুক্তি দুটোই চমৎকার দিচ্ছেন। ওই সাইটেই যুদ্ধ নিয়ে ভাল তথ্য আছে, হয়ত উনি বা অন্য কেউ দিয়ে দেবেনও। যদি মিস করেন, আমি দিয়ে দেব এখানে। 
     
    তবে, এত কিছুর পরেও আধুনিকতা নিয়ে চিন্তা থাকে, থাকাই উচিত। সব যুগেরই কিছু নির্দিষ্ট দুশ্চিন্তা থাকার কথা, এবং আমাদের যুগ বিরাট ব্যতিক্রম কিছু হবার কথা না। এবং, ঠিকঠাক দুশ্চিন্তা করবার ক্ষমতাটাও আমাদের বেশি, পূর্বসূরিদের চেয়ে। সে ক্ষমতাটা ব্যবহার না করার কারণ নেই। মনের মধ্যে আত্মতুষ্ট কেয়ারফ্রি দশা ঠিক না। যদিও, আধুনিকতার ভুলভাল সমালোচনা এবং রোমান্টিক পশ্চাৎমুখিতাকে আগে কমব্যাট করা দরকার, না হলে সমালোচনার মধ্যে ব়্যাশোনালিটি এবং অবজেকটিভিটি থাকবেনা, সমালোচনা দিকভ্রষ্ট হবে।
     
    তাই, আধুনিকতার যে রোমান্টিক সমালোচনাগুলো এখানে এসেছে, সে সব নিয়ে ভাল করে কথা হয়ে যাক আগে। 
  • Yours Faithfully | 42.105.141.70 | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৫৮515332
  • poverty — defined as household income of no more than $1.90 per day
    এই সংজ্ঞায় সমস্যা আছে। ১২২২ সাল ব্যাপী এটা দরিদ্রসীমার নির্ণায়ক রোজগার? প্রতি বছরের ইনফ্লেশান আর অন্য নানা সামাজিক ফ্যাক্টর দিয়ে বছর বছর দেশে বিদেশে এই সংখ্যা আলাদা হবে। দারিদ্র সীমা নিজেই এই সময়কালব্যাপী একটা কার্ভ হবে সরলরেখা নয়। যে লোক নিজের খেতের ফসল পুকুরের মাছ, গরু ছাগলের দুধ, মুরগির ডিম মাংস দিয়ে স্বাবলম্বী, তার আলাদা কোনো রোজগার না থাকলেও সে দরিদ্র নয়। আবার শহরের ভাড়াবাড়িতে থাকা লোক যাকে প্রতিদিন ব্যবহারের প্রতিটি জিনিসই কিনতে হবে, তারক্ষেত্রে এই মানদণ্ড আলাদা। যত পিছনদিকে যাওয়া যাবে, সামাজিক সুরক্ষা, রাষ্ট্র প্রদেয় ভরতুকি, রাষ্ট্রচালিত কম মুনাফার উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে মুনাফাপ্রধান বেসরকারীকরণের ফলে সমাজজীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন এসবের এফেকটই দারিদ্রসীমার মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুনতে হবে। কেউ গোনে না। দেশে দেশে রাজ্যে রাজ্যে এই মাপ আলাদা। কোনো সংস্থাই সেসব ভেবে বুঝে গ্রাফ আঁকে না। ডিসি এসব জানেন না তা নয়। তবু ডেটা অ্যানালিস্ট তো। চাট্টি স্ট্যাটিস্টিক্সের ঢপ বেচে নিজের ৮০-৯০ বছর জীবনকাল আরাম সুখে কাটানোর জাস্টিফিকেশন দিতে বসলে এসব দুগগিবাজি করতেই হবে।
    ভাই, চরম স্বার্থপর যে মানুষেরা নিজে বেশি রোজগার করছি কীভাবে আরো বেশি করব, চারপাশের চড়ুই শকুন থেকে ন্যাদোশ, খলসে, বোয়াল, ভামবেড়াল কচ্ছপ থেকে বাঘ শুশুক কিংবা সিণকোনা সোনাঝুরি গাছ থেকে টোটো জাতি সব বিলুপ্ত হয়ে যাক, আমি ও আমার সন্ততি আমাদের সারাজীবন হাইরাইজের এসি ঘরে বসে চশমা এঁটে পানু দেখব, রকমারি ওষুধ মিশিয়ে চারবেলা দেশবিদেশের কুইসিন ভালোমন্দ খাব আর টুকটাক অপারেশন সেরে স্বয়ংচালিত যানে চড়ে দেশবিদেশ ঘুরে বেড়াব - বেঁচে থাকা উপভোগ করার অর্থ এটাই বোঝে - তারা শুধু অপরাধবোধে না ভোগার উপায় হিসেবে কীবোর্ড নেড়ে সেই স্বার্থপরতার জাস্টিফিকেশন দিতে বসলে আর নেওয়া যায় না। 
    নিজের স্বার্থপরতা নিজের কাছে রেখেই ভালো থাকুন। কতজনের কত ক্ষতি করে, কত শব কঙ্কাল মাড়িয়ে এগুলো অর্জন করেছেন সে খতিয়ানে ঢোকাটা খুব একটা স্বস্তির হবে না। আপনার মায়োপিক ইন্টারেস্টের পৃথিবীর কালপরিধি খুব বেশি হলেও আগামী পঞ্চাশ-একশো বছর। তারপর কী হল না হল তাতে আপনার আগ্রহ তথা স্বার্থ নেই (সায়েন্সফিকশন বা নবআবিষ্কারের সংবাদ পাঠসুলভ কিউরিওসিটি থাকতেই পারে, সে কথা হচ্ছে না)। এর মধ্যে আরো বেশি ধনী ও ক্ষমতাশালীদের স্বার্থরক্ষার কারণে ভাইরাস- বা অন্য কন্ট্রোলিং মেশিনারি ব্যবহার করে  গ্লোবাল পরিস্থিতি বিশাল কিছু পালটে না গেলে আপনার উদবেগের কিছু নাই।
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:০৪515333
  • এখানে এখন ইতিমধ্যে এত লোকজন এত বিষয় নিয়ে এত মন্তব্য করে ফেলেছেন (এটি সম্ভবত আড়াইশোতম), যে, প্রত্যেকের প্রত্যেকটি কথা আলাদা করে অ্যাড্রেস করা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা শুধু যে ব্যক্তি বিষয় ও মন্তব্যের সংখ্যার কারণেই, তা মোটেই না, আরও নানা কারণ আছে। যেমন, বিভিন্ন মন্তব্যের মধ্যে প্রায়শই বক্তব্যের ওভারল্যাপিং হচ্ছে, এবং সে ওভারল্যাপিং-এর মধ্যে আবার মতামত ও অবস্থানের নানা শেড আছে, এবং একজনের একটি বিশেষ শেড সম্পর্কে অন্য নানাজনের আবার নিজস্ব পারশেপশন আছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি একটু জটিল। এ পরিস্থিতি এড়াতে এক কাজ করা যাক --- মন্তব্যকে না ধরে মন্তব্যে উঠে আসা বিষয়গুলোকে ধরা যাক। dc ইতিমধ্যেই খানিকটা তাইই করছেন, তবে আলোচ্য বিষয়গুলোর লিস্টি বানাননি এখনও। কাজেই, সে চেষ্টা করে দেখা যাক এবার।
  • guru | 103.135.228.219 | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:০৫515334
  • @আধুনিকতার খোঁজে 
     
                                আপনি যে ধরণের ডিস্টোপিয়ার কথা বলছেন সেই নিয়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ গুলোতেও আলোচনা হচ্ছে এবং তার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ভাবার কথা হচ্ছে |  এই ভিডিওটি দেখতে পারেন | 
     
     
    আপনার মন্তব্যের অপেক্ষাতে রইলাম |
  • dc | 2401:4900:231c:128a:b99d:8144:5a48:bd8b | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:১৪515335
  • আরে, আমি চশমা পরি, ইওর্স ফেথফুলি কি করে জানলেন? হুমমম laugh
     
    দেবাশীষবাবু, "এত কিছুর পরেও আধুনিকতা নিয়ে চিন্তা থাকে, থাকাই উচিত। সব যুগেরই কিছু নির্দিষ্ট দুশ্চিন্তা থাকার কথা, এবং আমাদের যুগ বিরাট ব্যতিক্রম কিছু হবার কথা না" - সে তো অবশ্যই। পরিবেশ ধ্বংস, ইনইকুয়ালিটি, রাইট উইং প্রবণতা বাড়া ইত্যাদি আমাদের সময়ের চিন্তার দিক। আরও আছে নিশ্চয়ই, সেসব আলোচনায় উঠে আসবে। 
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:২৬515336
  • Yours Faithfully,
     
    কী করতে পারলে আপনি খুশি হতেন? মনে করুন যদি প্রাগৈতিহাসিক জঙ্গলে মহাবৃক্ষের সুউচ্চ ডালে গুছিয়ে ন্যাজ পাকিয়ে বসে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত পরিবেশে চোখ বুজিয়ে কচি পাতা চিবোতে পারতেন, যাতে আপনার ফেলো শাখামৃগটিও অন্য আরেকটি ডালে বসে নিশ্চিন্তে একই কাজ করতে পারে, সেটাই কি সবচেয়ে ভাল লাগত আপনার?
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:২৮515337
  • আলোচ্য বিষয়ের লিস্টি তৈরির লক্ষ্য থেকে সামান্য বিচ্যুত হলাম, সবাই মাফ করবেন।
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৩২515339
  • বিষয়ের তালিকাটা এবার নামিয়ে দিই, সবাই একমত হতে পারেন কিনা দেখুন।
     
    (১) আধুনিকতা কি, প্রাগাধুনিক সময়ের তুলনায়, বেশির ভাগ মানুষকে আগের চেয়ে বেশি বিপন্ন করে তুলেছে, অতি অল্প কিছু মানুষকে আগের চেয়ে অনেক বেশি ধনী ও ক্ষমতাশালী বানাবার বিনিময়ে?
     
    (২) আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের মধ্যে কি কোনও ক্ষমতা-তান্ত্রিক হিংস্রতা অন্তর্নিহিত আছে?
     
    (৩) ঔপনিবেশিকতা, যুদ্ধ, গণহত্যা, দাস-ব্যবসা, পরিবেশীয় বিপর্যয় এবং ইউরোপ-কেন্দ্রিকতা কি আধুনিকতার অনিবার্য ও অপরিহার্য উপাদান?
     
    ইসলামোফোবিয়া বাদ দিচ্ছি।
     
    এই তালিকাটি সম্পর্কে কার কী বক্তব্য? এইটা ধরে এগোলে আলোচনা আরেকটু সংহত হতে পারে কি?
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৪515340
  • আধুনিকতার খোঁজে,
     
    আপনার লিঙ্ক-গুলো পড়ে নিয়ে কাল ফিডব্যাক দিতে পারব আশা করি।
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৪২515341
  • guru,
     
    আপনি আমার কল্পবিজ্ঞান সংক্রান্ত কিছু লেখালিখির লিঙ্ক চেয়েছিলেন, কিন্তু দ্রুত সাড়া দিতে পারিনি, মাফ করবেন। এবার পাপ-স্খালনের চেষ্টা করছি। 
     
    বলে রাখি, আমার কল্পবিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখালিখি যৎসামান্য, তবে তিন কিসিমের। এক, মৌলিক গল্প (নেটে মাত্র একটিই, অন্যত্র আছে আরও দুয়েকটি)। দুই, বিদেশি ওস্তাদদের লেখা গল্পের অনুবাদ (গুটি দশেক হলেও হতে পারে)। এবং তিন, কল্পবিজ্ঞান সংক্রান্ত দুটি আলোচনা, এ দুটিই নেটে পাবেন।
     
    এক এক করে লিঙ্ক নিচে দিচ্ছি, যতটা নেটে পাওয়া যায়।
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৫৩515342
  • এটা হচ্ছে আমার নিজের লেখা গল্পের লিঙ্ক
     
     
     
    এরই ধারেকাছে পেয়ে যাবেন অনুবাদগুলো, আমার ব্লগ অ্যাকাউন্টে হানা দিলেই। আর্থার সি ক্লার্ক, আইজ্যাক আসিমভ, ফ্রেডরিক ব্রাউন, হোর্হে ল্যুই বোর্হেস, এঁদের লেখার অনুবাদ। সব একই জায়গায় আছে বলে আর আলাদা করে লিঙ্ক দিচ্ছি না।
     
    বুলবুলভাজা-তে আরেকটি আছে, নিচে দিচ্ছি।
  • guru | 103.135.228.219 | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:০১515344
  • @দেবাশীষ বাবু 
     
                            এখানে প্রথমেই আপনাকে সাধুবাদ জানাই ইতিহাস ও আধুনিকতাকে তথ্য দিয়ে এক্সপ্রেস করতে চাইবার জন্য আপনার নিচের লেখাটিতে | আপনি সত্যি এব্যাপারে খুব খেটে খুবই ভালো কাজ করেছেন |
     
     
    আপনার লেখাটি নিয়ে কতগুলো প্রশ্ন আছে যেইগুলো আপাতত মনে এলো | পরে হয়তো ভুলে যাবো তাই এখনই লিখে রাখছি | আপনি সময় পেলে জানাবেন | আপনার উত্তরের অপেক্ষাতে থাকবো | আপনার ছেলের পরীক্ষাতে ভালো হোক কামনা করি |
     
    ১ | আপনি আপনার লেখাটিতে মুঘল আমলের ইনকাম ইকুয়ালিটি দেখিয়েছেন (আনুমানিক ১৭৫০ সালের ) (চিত্র ৪ ) যে টপ ১ % জমিদার মনসবদারদের হাতে ১৫ % ইনকাম থাকতো |  এখন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি ২০১৭ সালের এই লেখাটিতে ভারতের ইনকাম ইকুয়ালিটি দেখাচ্ছেন যে টপ ১ % এর হাতে ২২ % ইনকাম আছে |
     
    "Based on their analysis of historical data—from tax sources, surveys and national accounts statistics—the duo shows that the share of the top percentile (or top 1%) in India’s national income pie is at its highest level (22%) since 1922. "  (সোর্স https://www.livemint.com/Politics/iATqx10XSWaThxs0PBwHRO/Is-Thomas-Piketty-right-about-inequality-in-India.html) 
     
    অর্থাৎ যদি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি সত্যি হন তাহলে বলতে হবে ১৯২২ সালে (অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলের ভারতে ) ও স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতেও (২০১৭ - )  মুঘল আমলের থেকে বেশী ইনকাম ইনইকোয়ালিটি হয়েছিলো | আপনি কি তাহলে এটা মনে করেন যে আপনার নিজের ও টমাস পিকেটি দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভারতে ব্রিটিশ আমলে ও স্বাধীনতার পরেও ইনকাম inequality মুঘল আমলের তুলনাতে বেড়ে গেছিলো ??
     
    এখানে আরো কয়েকটি কথা বলার আছে | প্রথমতঃ মোঘল আমলে কোনো পার্মানেন্ট জমিদার ও জায়গীরদার সিস্টেম ছিলোনা | একজন সেনাপতি বা warlord যুদ্ধে মোঘল বাদশাহকে সাহায্য করে জমিদারি পেতেন কিন্তু চিরস্থায়ী ভাবে নয় | পরবর্তী যুদ্ধ ও রাজস্ব আদায়ে তার পারফরমেন্স ভালো না হলে তার জমিদারি জায়গীর বা অনেক সময়ে তার প্রাণ পর্যন্ত যেতে পারতো | এর একটি বড় উদাহরণ যে স্বয়ং সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রিয়তমা পত্নী নুরজাহান জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পরে সর্বস্ব হারিয়ে কাশ্মীরে খুব দীনহীন ভাবে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটান | এই বিষয়ে বাংলাতে "শাহযাদা দারাশুকো " বইটি খুব ভালো একটি রেফারেন্স | অর্থাৎ যুদ্ধে ভালো পারফরমেন্স দেখতে পারলে খুব দীনহীন ব্যক্তিরও জমিদার বা জায়গীরদার হবার একটি সম্ভাবনা ছিল |
     
    মোঘল আমলের ইকোনমিক সিস্টেম বুঝতে গেলে আরেকটি রেফারেন্স নিচের এই ইউটিউবের প্রোগ্রামটি থেকে |(10:10 মিনিট থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত দেখলেই হবে | দীর্ঘ পুরো ভিডিওটি দেখার প্রয়োজন নেই |)
     
     
    ভারতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মুঘল আমলের আরো অনেক পরে লর্ড ওয়ারেন হাস্টিংস প্রথমে বাংলাতে ও পরে ব্রিটিশরা সারা ভারতে সেটি আস্তে আস্তে চালু করেন |
     
    দ্বিতীয়তঃ মুঘল আমলের যে সময়টি (আনুমানিক ১৭৫০ সালের ) দেখানো হয়েছে সেটি তখন চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় | তখন শেষ পরাক্রান্ত মুঘল সম্রাটের (আওরঙ্গজেব) এর মৃত্যুর পরে ৪০ বছর কেটে গেছে সাম্রাজ্যের আফগান ও পাঞ্জাব সীমান্তে আফগান ও ইরানি হানাদারেরা আঘাত করছে ওদিকে সাম্রাজ্যের দক্ষিণ ও মধ্য ভারতে মারাঠা শক্তি শক্তিশালী হচ্ছে এবং আস্তে আস্তে বাংলাতেও কেন্দ্রীয় মোঘল শাসন দুর্বল হচ্ছে | এই চরম  রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়টিকে কেন বেছে নেওয়া হলো রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে ইনকাম ইনইকোয়ালিটি দেখানোর জন্য ? 
     
    আর যদি এই বছরটিকেই রেফারেন্স পয়েন্ট ধরি কয়েক শতাব্দী ব্যাপী সমগ্র মুঘল শাসনের ইনকাম ইনইকোয়ালিটি দেখার জন্য তাহলে কি বলতে হবে ১৯২২ সালে বা ২০১৭ সালে যখন সেরকম কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিলোনা , ওই সময়ে ইনকাম ইনইকোয়ালিটি রাজনৈতিকভাবে unstable মোঘল সময়ের তুলনাতে বেড়ে গেছিলো ?
     
    আপনি কি বলেন ?
     
    ২ |  চিত্র ৫ এর ১৫০০ - ১৯১৩ সালের জিডিপি পার ক্যাপিটা যে হিসাব দেখানো হচ্ছে  সেখানে একটু ডিটেইলেড ডাটা দিলে ভালো হতো | যেমন হঠাৎ জাপান ও এশিয়া (জাপান বাদে ) এইরকম দুটো ক্যাটাগরি কেন কি ভেবে করা হলো ? ১৫০০ সালে এশিয়াতে অর্থনীতি বলতে পশ্চিম এশিয়া, (যেখানে আস্তে আস্তে অটোমান সাম্রাজ্য গড়ে উঠছে ) চীন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া , দক্ষিণ এশিয়া এবং জাপান অন্তত এই ৫ টি ক্যাটাগরি করা উচিত ছিল যেহেতু এই প্রত্যেকটি এশীয় ভূখণ্ডে একটি স্বতন্ত্রঃ সাম্রাজ্য ও আর্থিক সিস্টেম ছিল সেই সময়ে |  হঠাৎ করে (জাপান বাদে )সমগ্র এশিয়া নামক একটি ক্যাটাগরি করলে এশিয়া নামক এই ভূখণ্ডটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র ঠিকঠাক ফুটিয়ে তোলা এবং য়ুরোপের সঙ্গে তার ঠিকঠাক তুলনা করা অসম্ভব | 
     
    এই একই ভাবে আফ্রিকা কি করে একটি সিঙ্গেল ক্যাটাগরি হয় যেইখানে উত্তর আফ্রিকাতে তুর্কি ও মামলুক শাসনে মিশর  প্রভৃতি ভূখণ্ডের অর্থনীতির সিস্টেম (যারা তখনো ভীষণভাবেই ইউরোপের ইতালি গ্রীস প্রভৃতি উপকূলবর্তী দেশের সঙ্গে প্রচুর বাণিজ্য করতো ও সেই সংক্রান্ত আর্থিক সাপ্লাই চেইনের অংশ ছিলো )  ও সাব সাহারা আফ্রিকার বিভিন্ন প্রাগাধুনিক উপজাতি (আধুনিকতার খোঁজের ভাষায় কাদামাটির মানুষের ) অর্থনীতি সিস্টেম সম্পূর্ণ ভিন্নতর ?
     
    ল্যাটিন আমেরিকা, ইস্টার্ন ইউরোপ & USSR এই ক্যাটাগরি গুলোর ক্ষেত্রেও সেই একটি কথা প্রযোজ্য যে তাদের আর্থিক ও রাজনীতি গত সিস্টেমিক বৈচিত্র কেবলমাত্র একটি ফিগারে কি পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা গেলো ? 
     
    সবচেয়ে বড় কথা যে পশ্চিম ইউরোপেও সর্বত্র একই ধরণের হোমোজেনিয়াস ইকোনমিক সিস্টেম ছিল এটা কিভাবে বলা যায় ? তাহলে তার জন্যে কি একটি সিঙ্গেল ক্যাটাগরি দেখানো যায় ? 
     
    ৩ | সবচেয়ে বড় কথা এই জিডিপি পার ক্যাপিটা বস্তুটি দিয়ে কি সঠিকভাবে একটি অর্থনৈতিক সিস্টেম কে বোঝানো যায় ? অনেক অর্থনীতিবিদ যাদের মধ্যে বাংলার অমর্ত্য সেনও আছেন তারা একটি অর্থনৈতিক সিস্টেম কে বোঝাতে জিডিপি পার ক্যাপিটা ছাড়াও অন্য কোনো মেট্রিকের পক্ষপাতী | যেমন ধরুন ক্ষুদ্র মুসলিম প্রধান দেশ কাতার এই পার ক্যাপিটা বস্তুটিতে আম্রিকা ও ইংল্যান্ডের থেকে অনেক এগিয়ে নিচের এই তালিকা অনুযায়ী | তাহলে কি আপনি কাতারকে আম্রিকার তুলনাতে বেশি আধুনিক মনে করেন ?
     
    (প্রসঙ্গতঃ এই নিচের ওয়েবসাইট কোবিদ সংক্রান্ত তথ্য খুব ভালো ভাবেই দিয়েছে )
     
     
    ৪ | UN এখন ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স ,ইনিকোয়ালিটি ইন্ডাক্স ,জাস্টিস ইনডেক্স জাতীয় অনেক ইনডেক্স প্রকাশ করছে | আপনি কি সেইরকম কিছু দেখাতে পারবেন এই ঐতিহাসিক সময়গুলোর ক্ষেত্রে ? তাহলে ব্যাপারটি বুঝতে অনেক সুবিধা হয়ে যায় আমার মতো অজ্ঞ ব্যক্তিদের পক্ষে |
     
    ৫ |  (চিত্র-৭) যেইখানে আপনি দেখিয়েছেন যে ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাদবাকি ইউরোপের অনেক বেশি বাণিজ্য ছিল ভারতের তুলনাতে | তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে ভারতের মতো একটি স্বল্প উন্নত দেশে কলোনী স্থাপন না করে পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে অগ্রসর ইংল্যান্ডের উচিত ছিল তো somogro ইউরোপে একটি আর্থিক হেজিমোনিক মনোপলি সিস্টেম তৈরী করা যেটি পরবর্তীকালে প্রথমে নেপোলিয়ন পরে হিটলার ও সবশেষে আম্রিকা ন্যাটোর মাধ্যমে করতে চেয়েছে | তা না করে তারা কলোনী তৈরী করতে ভারতকে বেছে নিলো কেন ?
  • guru | 103.135.228.219 | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:১০515346
  • @দেবাশীষ বাবু 
     
                          অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার ফিক্শন লেখাগুলোর শেয়ার করার ব্যাপারে | তবে পড়তে দুএকদিন সময় লাগবে কর্মব্যস্ততার জন্য | ফিডব্যাক পরে দেব |
     
                          আপনি আলোচনার যে টপিক লিস্ট শেয়ার করে দিয়েছেন অনেক ধন্যবাদ এর ফলে আলাপ আলোচনাতে অনেকটা প্রাসঙ্গিকতা তৈরী হবে | এখন গুরুর সবাই এটি ফলো করলেই হলো |
     
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:২২515348
  • guru,
     
    এখানে লিঙ্ক-গুলো দিয়ে রাখলাম, এবার আপনার সময় মত ফিডব্যাক দেবেন, তাড়া কীসের? 
     
    আপনি অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন করেছেন, সেগুলো চিত্তাকর্ষকও বটে। তার সব কিছুরই উত্তর আমার কাছে থাকবে, এ গ্যারান্টি দেওয়া কঠিন। তবু, যতটা জানি বলার চেষ্টা করব। না জানলে অন্তত এটুকু তো বলতে পারব যে, না মশায়, এইটা আমার জানা নেই! তখন অন্য কেউ হয়ত উত্তর দিয়ে দেবেন, এবং আমারও জ্ঞানবৃদ্ধি হবে।
  • guru | 103.135.228.219 | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৫৪515349
  • @দেবাশীষ বাবু 
     
                           অনেক অনেক ধন্যবাদ | আপনার সঙ্গে আলোচনা করে অনেক অজানা বিষয়ে ঋদ্ধ হবার সুযোগ পাওয়া যায় সে আমাদের মতপার্থক্য থাকলেও |
     
                            আপনার ওই চিত্র ৫ টি থেকে আরেকটি জিনিস আমার মাথায় এলো হঠাৎ করেই | দেখুন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ে ভারতসহ প্রায় সমগ্র এশিয়া ও আফ্রিকা ইংল্যান্ডের সঙ্গে একটি কোর পেরিফেরি সম্পর্কে যুক্ত ছিল যেইখানে ইংল্যান্ড হচ্ছে কোর ও ভারত পেরিফেরী | তাহলে আমরা ওই আপনার পার ক্যাপিটা মেট্রিকটিকেই ব্যবহার করে কোর পেরিফেরী ইকোনমিক ইনকাম ডিফারেন্স বলে একটি মেট্রিক কি দেখতে পারি অর্থাৎ যেখানে কোর পেরিফেরী ইকোনমিক ইনকাম ডিফারেন্স হচ্ছে (১৫০০ - ১৯১৩ ) CE সময়কালে ইংল্যান্ডের পার ক্যাপিটা মাইনাস ভারতের পার ক্যাপিটা  | এই একই ভাবে ওই একই সময়কালে অন্যান্য ইউরোপিয় দেশ ও তাদের কলোনিদের মধ্যেও কোর পেরিফেরী ইকোনমিক ইনকাম ডিফারেন্স মেট্রিক পরিমাপ করা যেতে পারে |
     
                          মুঘল সাম্রাজ্য , অটোমান সাম্রাজ্য , রাশিয়া এই সব ইমপেরিয়াল সিস্টেম গুলোর ক্ষেত্রেও মনে হয় এই আমার প্রস্তাবিত  কোর পেরিফেরী ইকোনমিক ইনকাম ডিফারেন্স মেট্রিকটি ব্যবহার করা যেতে পারে যেহেতু এই প্রত্যেকটি সাম্রাজ্য খুব বিস্তৃত ভূখণ্ডের মধ্যে কোর পেরিফেরী সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল যেমন মুঘল সাম্রাজ্য এর সময়ে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে কোর পেরিফেরী সম্পর্ক ছিল | অটোমান সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রে তো কোর পেরিফেরী সম্পর্কে প্রায় সমগ্র পশ্চিম এশিয়া , উত্তর অফ্রিকার অনেকাংশ ও ইউরোপের বলকান প্রভৃতি অনেকাংশ যুক্ত ছিল | 
     
                       ভারতের ক্ষেত্রে মনে হয় এইভাবে কোর পেরিফেরী ইকোনমিক ইনকাম ডিফারেন্স মেট্রিকটি ব্যবহার করে ব্রিটিশ কলোনী ভারত ও মুঘল সাম্রাজ্যের ভারতের একটি আর্থিক তুলনা করা যেতে পারে বলে আমি মনে করি | এর ফলে বোঝা যেতে পারে ইকোনমিক ইনকাম ডিফারেন্স ভারতের ক্ষেত্রে কি হয়েছিল মুঘল ও ব্রিটিশ কালে |
     
                       আরো একটি ব্যাপার রাশিয়ার ক্ষেত্রে ১৫০০ থেকে ১৯১৩ সালে এই কোর পেরিফেরী ইকোনমিক ইনকাম ডিফারেন্স মেট্রিকটি ব্যবহার করে জার সাম্রাজ্য ও সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার আর্থিক তুলনা করা যেতে পারে | 
     
                     আপনি কি বলেন ?
  • guru | 103.135.228.219 | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:০৭515350
  • @দেবাশীষ বাবু 
     
                          ধরুন মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ে ভারত কোর ও মধ্য এশিয়া হলো পেরিফেরী যেটি ঐতিহাসিক ভাবেই সত্য |abar ব্রিটিশ আমলে ভারত ছিল পেরিফেরী ও ইংল্যান্ড কোর | কাজেই এই খানে আমার প্রস্তাবিত  কোর পেরিফেরী ইকোনমিক ইনকাম ডিফারেন্স মেট্রিকটি ব্যবহার করা গেলে আমরা হয়তো একটা সুযোগ পেতে পারি ক্যাপিটাল ফ্লো এর ব্যাপারে যে সত্যি সত্যি মুঘল আমল ও ব্রিটিশ আমলে ক্যাপিটাল ফ্লো এর চরিত্র বুঝতে | কি বলেন ?
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৪৮515351
  • guru,
     
    আপনি তো অনেক ইনফো, অনেক রিসোর্স দিয়েছেন। ভাল করে দেখে নিই, একটু সময় দিন প্লিজ।
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 2402:3a80:198b:aeed:94b0:e70e:90a6:f899 | ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৫৫515367
  • @দেবাশিসবাবু 
    আপনার বানানো লিস্ট আমার দিক থেকে ঠিকই তো মনে হয়েছে। আপনাকে ধন্যবাদ। অন্যরাও বলুন। 
     
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 2402:3a80:198b:aeed:94b0:e70e:90a6:f899 | ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৫৬515368
  • @গুরু 
    আপনার পাঠানো ভিডিওটি দেখে আপনাকে জানাবো। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন