এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে:লাদাখ

    Sudipta
    অন্যান্য | ০৯ নভেম্বর ২০১০ | ৮৭৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 59.93.206.90 | ৩০ জানুয়ারি ২০১১ ১১:৫৩458157
  • সুদীপ্ত কাল কাগুর স্টলে দর্শন দিয়ে গেছে :)

  • siki | 122.162.75.143 | ৩০ জানুয়ারি ২০১১ ১৩:১৬458158
  • যা:, ওকে ক্যালাও নি?
  • siki | 122.162.75.117 | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ২১:৩৩458159
  • শৌভ এস্‌ছে দেখে আরেকবার তুলে দিলাম। ও শৌভ, আমারে একবার ফোনিও। তোমার নম্বরটা হাইরে ফেলেছি।
  • Souva | 122.177.179.238 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১০:৩৩458160
  • আজ-ই ফোনাবো তোমায়। সন্ধ্যেবেলর দিকে।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১০:৫৩458161
  • সুদীপ্ত, একটু দরকার আছে তোমার সাথে। আমাকে mukherjee.samik জিমেলে মেল করতে পারবে? বা নম্বর দিলে কল করে নিতে পারি।
  • Sudipta | 115.187.35.153 | ১১ মার্চ ২০১১ ০১:৫৯458162
  • বেশ ঝিমুনি ধরে এসেছিল, হঠাৎ দেখলুম ভলভোতে বসেও কুল কুল করে ঘেমে-নেয়ে একাকার! ঘোর কাটলে বুঝলুম, বাস নড়ছে না। ক্রমে সবাই জেগে উঠল; ড্রাইভার সাহেবের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, বাসের এ সি কাজ করছে না, অতএব তিনি কাছেই এক মেকানিক কে খবর দিয়েছেন, সে এসে সব ঠিক ঠাক করলে তবে ফের বাস চলবে! কি বিপত্তি! মেকানিক তো এসে পৌঁছোলেন, এদিকে তিনি শুধু রিমোট নিয়ে টেপাটিপি করে চল্লেন, খবর নিয়ে জানা গেল, এত রাতে তাঁর কাছে যন্ত্র পাতি নেই যে ড্যাশবোর্ড খুলে দেখবেন; দু'ঘন্টা ঠায় কাটার পর আমরা চার পাঁচজন বেশ চ্যাঁচামেচি শুরু করলাম, দু-চারজন বিদেশী পর্যটক ও এসে তাতে যোগ দিলেন, সবাই মিলে স্থির হল, এ সি ছাড়াই বাস চলুক, পৌঁছনো নিয়ে কথা এখন;বাস এবার যাত্রা তো শুরু করল, কিন্তু চল্ল ঠিক ৪০ কিলোমিটার ঘন্টা গতিতে, দুচারবার বলার পর ও কাজ না হওয়ায় আশা ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম, রাতে দু-চারবার ঘুম ভাঙতে পাশের এক বিদেশিনী-র বিরক্ত কন্ঠে 'প্যাথেটিক' শব্দটা বার চারেক শুনেছিলুম এটুকু মনে ছিল; ঘুম ভাঙল সকালে হিমাচলের এক ধাবায় বাস এসে দাঁড়াতে।

    এখানে ড্রাইভার বদল হতে সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচল, সেই 'প্যাথেটিক' বিদেশিনী তো রীতিমত হইহল্লা জুড়ে দিলেন আগের ড্রাইভারের ছুটি করানোর জন্য, তা দোষ দেওয়ার কিছু নেই, দেখ গেল, চার ঘন্টা মত দেরী তে চলছি আমরা। তা চোখে মুখে জল দিয়ে, আলুর পরোটা গরম গরম সাঁটিয়ে বেশ চাঙ্গা হয়ে নেওয়া গেল, নীলাঞ্জন অবিশ্যি কেকে-ই সারল; এবার যাত্রা শুরু হতেই লম্বা এক টানেল পড়ল পথে, এটা আবার পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে পাহাড় কেটে বানানো, চতুর্দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, শুধু বাসের হেডলাইটে যেটুকু দেখা যায়। প্রায় দেড় কিলোমিটার মত চলার পর বাইরে আসতেই চারদিকের ঝলমলে সবুজ চোখ ধাঁধিয়ে দিল; এরকম সবুজ কিছুটা হলেও চোখে পড়ে লোলেগাঁও যাওয়ার রাস্তায়, তবে এর কাছে কিছু-ই নয়, যেদিকেই তাকাই শুধু সবুজ চূড়া উঠে গেছে আর মাঝখানে যত্ন করে আগলে রেখেছে এক ফালি বিয়াস কে, এই রাস্তা টার সঙ্গে তিস্তার পাশ ধরে রাস্তা টা বেশ মেলে, তবে নদীর জল অনেক বেশী স্বচ্ছ এখানে; মাঝে মাঝে মেঘ আর কুয়াশা এসে ঢেকে দিচ্ছে , আবার রোদ ঝলসে উঠছে পরক্ষণেই, পাহাড়ের গায়ে রোদ আর মেঘের ছায়ার খেলা দেখতে দেখতে অনেকটা সময় কাটল; ইতিমধ্যে বেশ শীত শীত ভাব শুরু হয়েছে, দুজনেই গরম জামা চাপালাম গায়ে; এর মধ্যেই হঠাৎ প্রায় রাস্তার বাঁ দিক থেকে একটা ঝরণা যেন লাফিয়ে এসে পড়ল বাসের গায়ে, বেশ বড় ঝরণা, আর এত জল দেখে বেশ অবাক লাগল, নাম কেউ বলতে পারল ন, তবে এত জলের কারণ শুনলাম বৃষ্টি, গত এক সপ্তাহ ধরেই নাকি চলছে, আজ-ই একটু পরিষ্কার আকাশ;

    বেলা যখন প্রায় ১ টা, খিদে-য় পেটে ডন মারছে, ১৮ ঘন্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষ করে বাস এসে দাঁড়াল মানালির বাস টার্মিনাসে; নেমে আমাদের শ্যাম শর্মাকে ফোনালুম, দেখি তিনি ইতিমধ্যেই হাজির, বাসের পেট থেকে রুক্স্যাক গুলো বের করে পিঠে ফেলে হাঁটা দিলুম ম্যালের রাস্তা ধরে। অনেক ক্ষণ ধরে একটা কুল কুল শব্দ শুনছিলাম, একটা বাঁক ঘুরেই যা দেখলাম, মনের সব ক্লান্তি নিমেষে দূর হয়ে গেল!
  • Sudipta | 115.187.35.153 | ১১ মার্চ ২০১১ ০২:৩১458163
  • পাহাড়ি নদী অশান্ত হয় জানতাম, কিন্তু তার এত মনোরম শোভা হতে পারে, দুদিকে সবুজ বনানীতে ঢাকা পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে ছুটে চলা বিয়াস কে না দেখলে বোধ হয় জানতে পারতাম না; ইয়ুমথাং এর লাচুং নদী-ও খুব সুন্দর, কিন্তু সেখানে দুপাশের পাহাড়ের সারি বেশ কিছুটা দূরে, আর নদীর গতিপথ বিস্তীর্ণ উপত্যকার উপর দিয়ে, সেখানে জলে আকাশ দেখা যায়, দেখা যায় মেঘ, আর এখানে শুধু-ই সবুজ আর অবিশ্রান্ত ছুটে চলার ছন্দোময় শব্দের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি! বাঁক ঘুরে আমাদের একটা লোহার সাঁকো (ব্রিজ-ই বলা যায়, কারাণ গাড়ি-ও পার হচ্ছে দেখলাম) পার হয়ে দুমিনিট হেঁটে এসে একটু নিরিবিলিতে আমাদের হোটেল; নতুন হোটেল, ফলে ভাড়া অনেক কম, কিন্তু ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো, ঘরে এসে দেখি আর এক কান্ড, বিরাট বড় জানলার সামনে টেবিল আর মুখোমুখি দুটো চেয়ার, জানলা খুললেই গর্জন করে বিয়াস ছুটে চলেছে একেবারে হোটেলের গা দিয়ে, আর কোনো শব্দ কোলাহল নেই কোনো দিকে; ঠিক করাই ছিল আজ দিনটা বিশ্রাম, ঝটপট স্নান সেরে মোমো দিয়ে হালকা লাঞ্চ সেরে নিলাম (বেশী খিদে পেলে ভালো করে খাওয়া যায় না, কি আর করা); এবার ক্যামেরা নিয়ে দুজনে বেরিয়ে পড়লাম আশপাশের জায়গাগুলো এক্সপ্লোর করতে; পটাপট ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ খেয়াল হল, অতিরিক্ত রিচার্জেবল ব্যাটারি বা অ্যালক্যালাইন ব্যাটারি আনা হয় নি, লাদাখের অত ঠান্ডায় যদি কোনো সমস্যা হয়, তো সেসব কেনা হল (যদি-ও অদ্ভুত ব্যাপার আমার পুরনো ব্যটারি-ই দুর্দান্ত সার্ভিস দিয়েছে গোটা সফর জুড়ে, আর কিছুই লাগে নি!)। এবার শ্যাম শর্মার অফিসে গেলাম, আলাপ হল বিনোদের (ওরফে ভিনোদ) সঙ্গে; ও-ই আমাদের নিয়ে যাবে লে-তে, গাড়ি ঠিক হল সুমো, পরদিন ভোর ছটায় যাত্রা শুরু; শ্যাম শর্মা-ই উপদেশ দিলেন গুচ্ছ ইলেক্ট্রাল এর প্যাকেট আর এক গাঁটরি মিনারেল ওয়াটার নিয়ে নিতে সঙ্গে, বলে-ও দিলেন কোনো ওষুধ লাগবে না শুধু যদি রাস্তায় প্রচুর জল খান আর ঘন ঘন ছোটো কাজ সারেন, রক্ত চাপ স্বাভাবিক রাখাই শেষ কথা। তা সেসব কেনা হল; এইবার বাইরে এসে রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতেই চোখ পড়ল আপেলের দিকে; মানালির বিখ্যত আপেল, কিনে নিলাম এক কিলো মত, কিছু রাতে খাওয়া যাবে, কিছু রাস্তায়; আরো কিনলাম, চিপস, চকোলেট, কাজু, কেক ইত্যাদি। হাড়িম্বা টেম্পলের দিক থেকে ঘুরে আসছি, হঠাৎ চোখে পড়ল, এক পিস ওয়াইন শপ মাথা তুলে সগর্বে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করছে; হাতে রয়েছে কাজু আর আপেল, অত:পর নিজেদের অস্তিত্ব ভুলে দুজনেই ছুটলাম সরেস রেড ওয়াইনের অস্তিত্ব সন্ধানে; পাওয়া গেল পোর্ট ওয়াইন ১০০০, শুধু হিমাচলের বিক্রয় নির্দিষ্ট; তড়ি ঘড়ি করে ঘরে ফিরলাম, তর আর সইছিল না, সব কিছু প্লেটে সাজিয়ে ফেলা হল, নীলাঞ্জনের ছুরিতে অ্যালার্জি আছে, আমি কেটে ফেল্লুম আপেলগুলো, আর ও কাজু, চিপস; ছবি তোলা হল পটাপট, জানলা খুলতেই বিয়াসের এক ঝলক টাটকা বাতাস, আর গানের মেলা একের পর এক, কখন-ও আমি, কখন-ও নীলাঞ্জন, রাতে রুটি পনীর এর হালকা ডিনার সেরে শুতে যাওয়ার সময় ও মনের ভেতর বাজছিল
    "একি এ সুন্দর শোভা ..."
  • Manish | 59.90.135.107 | ১১ মার্চ ২০১১ ১৬:১২458164
  • সুদীপ্ত ব্যাক টু ফর্ম
  • Sudipta | 202.78.237.98 | ১২ মার্চ ২০১১ ২১:০৪458165
  • ভোর পাঁচটায় অ্যালার্ম দেওয়া ছিল; দুজনে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে নিয়েই ব্যাগ গুছিয়ে হোটেলের টাকা মিটিয়ে বের হতেই দেখি ভিনোদ হাজির। মালপত্র, জলের গাঁটরি সব গাড়ির পেছনের সিটে রেখে আরাম করে বসে যখন মানালি ছাড়ছি, ভোরের আলো সবে ফুটছে; এখানে বলে রাখি, শ্যাম শর্মার সাথে এরপর আমাদের আর দেখা হয় নি, লে-তে পৌঁছে শুধু ওনাকে খবর দিয়েছিলাম, সুদূর কলকাতা থেকে নেট ঘেঁটে ফোন নম্বর জোগাড় করে যাঁর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম, তা-ও এক দুর্যোগের সময়ে, তিনি যেভাবে আমাদের আপ্যায়ন বা অন্যান্য সহায়তা করেছিলেন (হোটেল, গাড়ি, সারচু-র টেন্ট), গাইড করেছিলেন, তাতে সত্যি-ই আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।

    যাক, মানালি থেকে বেরিয়ে বিয়াসের ধার ঘেঁষে আর-ও ওপরের দিকে ওঠা শুরু হল; প্রথমে পৌঁছব রোহতাং লা (লা হল পাস বা গিরিপথ)। প্রথম এক ঘন্টা বেশ মেঘ, কুয়াশা, দুদিকের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে অনেকটা পথ পেরিয়ে এলাম। দূর থেকে দেখা গেল বরফের চাদরে ঢাকা সোলাং ভ্যালির এক ঝলক অপূর্ব দৃশ্য। পাহাড়ি ছোটো ছোটো নদী আর ঝরণা-ও পড়ল পথে; কিন্তু তার পর শুরু হল রোহতাং এর প্রাণান্তকর রাস্তা, একে-ই তো দুর্গম বাঁক , তার ওপর কদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় আর ধ্বস নেমে রাস্ত ধুয়ে গেছে, আর কাদা প্রায় হাঁটু সমান এক জায়গায় দেখি একটা ইনোভা-ও আটকে পড়ে আছে কাদা-য়! একজন কে দেখলাম বাইক ঠেলে ঠেলে নিয়ে আসছে ঐ কাদায়; ভয় লাগছিল যে কোনো মুহূর্তে ইঞ্জিন বুঝি যাবে বন্ধ হয়ে আর রাস্তায় নেমে ঐ কাদা ভেঙ্গে গাড়ি ঠেলতে হবে, তা আমাদের ভিনোদ দেখলাম বেশ পাক্কা ড্রাইভার, ঠিক এদিক-ওদিক করে কসরৎ করে গাড়ি বের করে নিল, রোহতাং পাসের বাকি রাস্তা টুকু উঠলাম প্রায় আর-ও তিন ঘন্টা সময়ে; সেপ্টেম্বরে এখানে বরফ থাকবে না জানতাম (থাকলে অবিশ্যি যাওয়া-ও যেত না), কিন্তু গাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখি হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, আর কুয়াশা-য় চারপাশে কিছু দেখ-ই যাচ্ছে না; একটা গুমটি মত তাঁবু-দোকানে তে ঢুকে সবাই গরম গরম কফি নিলাম, আর সঙ্গে দুটো করে টোস্ট বানিয়ে দিল দোকানী; আশপাশে দেখি অনেক ঘোড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিরাট পাথুরে ভ্যালির একপাশে উঠে গেছে খাড়া পাহাড়, আর একদিকে খাদ, ভিনোদ আমাদের স্কিয়িং এর জায়গাটা ঘুরে দেখালো; দেখলাম একটা ছোটো মন্দির মত রয়েছে , তার ভেতরে ছোট্টো একটা পাহাড়ি ঝোরা উঠে এসেছে, হাত দিয়ে দেখলাম জল বেশ গরম, যদি-ও ঠিক উষ্ণ প্রস্রবণ বলে মনে হল না; যাই হোক, এখানে আধঘন্টাটাক কাটিয়ে রওনা হওয়া গেল, এরপরের গন্তব্য কেলং; এতক্ষণ চারিদিকে শুধু সবুজ ছিল, রোহতাং ছাড়ানোর পর ধীরে ধীরে পাহাড়ের রং বদলাতে শুরু হল; রোহতাং পরিয়ে প্রথমে আমরা অনেকটা নীচে নেমে এলাম, এবার আর-ও একটা নদীর দেখা পেলাম, নদীর নাম চন্দ্র; এ-ই হল চন্দ্রভাগার চন্দ্র, এর আর-ও কিছু পরে আছে ভাগা, দুয়ে মিলে চন্দ্রভাগা হয়ে সিন্ধু তে গিয়ে মিশেছে।
  • Sudipta | 202.78.237.98 | ১২ মার্চ ২০১১ ২১:৪৫458167
  • এতক্ষণ চলছিলাম চন্দ্র কে ডানদিকে রেখে, এবার গাড়িটা রোহতাং এর পাহাড় থেকে নেমে পাশের পাহাড়ে যেতেই, নদ্দে চলে এল আমাদের বাঁ দিকে; সঙ্গে নদীর ওপাশের আকাশ ছোঁয়া নাম-না-জানা ব্রপহের মুকুট পরে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় চূড়া; এই জায়গাটায়, মানে রোহতাং থেকে কেলং যাওয়ার রাস্তায় একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলাম; পাহাড়গুলো এমন ভাবে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একে অন্যের সঙ্গে আড়াআড়ি ভাবে যে একটার ছায়া অন্যের উপর পড়ছে, তার ফলে সূর্যের আলো এমনভাবে এসে পড়ছে যে পাহাড়গুলোর রং মনে হচ্ছে বদলে বদলে যাচ্ছে, এত সুন্দর লাগছিল, আমাদের দুজনের শাটার টেপার অন্ত ছিল না, কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে ধীর স্থির ভাবে ফোটো নেওয়ার সময় ছিল না, এই পথে বিশেষ থাকে-ও না, ড্রাইভারেরা আপত্তি জানায়, কারণ দুদিনের হিসেবে পথ অনেক অনেক বেশী, তার ওপর আমাদের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বেশী যেতে হবে (কারণ তো আগে-ই বলেছি)। রাস্তার ধারে মাঝে মধ্যে বেশ কিছু বরফ কঠিণ হয়ে পাহাড়ের গায়ে জমে থাকতে দেখলাম।তার মধ্যে বেশ কিছু অনেকদিন ধরে থাকার ফলে প্রায় কালো হয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে চারদিকে সবুজের ভাব কমে গিয়ে ধূসর হতে শুরু করেছে হিমালয়; হঠাৎ একটা বাঁক নিতেই দেখলাম নদী বিরাট চওড়া হয়ে গেছে, তারপরেই খেয়াল করলাম অন্য দিক থেকে আরেকটা নদী এসে মিশেছে চন্দ্র-র সাথে, বুঝলাম এই হল ভাগা, চন্দ্র ছিল বেশ স্বচ্ছ, কিন্তু ভাগার জল বেশ ঘোলাটে, দুটো নদী মিশে গেলেও জলের রং বেশ বোঝা যাচ্ছে সঙ্গমের জায়গায়। এবার আবার আমরা উঠেতে শুরু করলাম, মাঝে গাড়িতে-ই বিস্কুট, বাদাম, চকোলেট কিছু খাওয়া দাওয়া হল, চন্দ্র ভাগার ধারে খানিক বসে সবাই মিলে গল্প গুজব হল, হাত পা ছাড়ানো গেল; আরো ঘন্টা খানেক চলে প্রায় দুপুর বারোটায় আমরা পৌঁছোলাম কেলং। কেলং একটা ছোট্টো পাহাড়ি গ্রাম, থাকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল বাস স্ট্যান্ড; হিমাচল ট্যুরিজম এর বাস গুলো এখানে রাত্রিবাস করায় যাত্রী দের। আগে এরা রাত্রিবাস করাত সারচু তে, কিন্তু সেখানে জলের অসুবিধে থাকায় এখানে নামিয়ে আনা হয়েছে (যাত্রীদের দুর্ভাগ্য)। এখানে আমরা বেশীক্ষণ আর না দাঁড়িয়ে এগিয়ে চললাম দার্চা র দিকে।
  • siki | 122.162.75.235 | ১৩ মার্চ ২০১১ ১১:৩৭458168
  • বেলকাম ব্যাক।

    মানালির বিয়াস এক অসাধারণ জিনিস। শুধু বিয়াসের ধারে একটা দুটো গোটা দিন বসে থাক যায়।
  • M | 59.93.221.17 | ১৪ মার্চ ২০১১ ১৭:১৩458169
  • আবার হাজার দিনের অপেক্ষা করাসনে যেন।
  • Sudipta | 115.187.33.183 | ১৪ মার্চ ২০১১ ২২:৫৫458170
  • কেলং থেকে দার্চা প্রায় এক ঘন্টা মত লাগল, যেখানে গাড়িটা ভিনোদ দাঁড় করালো, আশেপাশে বেশ কিছু গুমটি দোকান; তিনজনের কারো-র তেমন খিদে হয় নি; তবে কিনা চোখের সামনে গরম গরম মোমো দেখলে মাথা, জিভ বা জিভের জল কোনোটাই আর ঠিক ঠাক রাখা বেশ মুশকিল হয়; দু প্লেট চিকেন মোমো নেওয়া গেল উইথ ঝাল ঝাল আচার; হলপ করে বলছি, অমন মোমো আমি কোত্থাও খাই নি, চিকেন মোমো-র এরকম স্বাদ পুরো স্বর্গীয়; প্লেট দুটো নিয়ে আমরা দোকান থেকে পাহাড়ের ঢালে একটু নেমে এলাম; অনেক নীচে একটা ক্ষীণকায়া নদী বয়ে যাচ্ছে, ওপরে ঝকঝকে নীল আকাশ, দু-একটা মেঘ কখন-ও সখন-ও পাহাড়ের চূড়াগুলোর ওপর ছায়া ফেলেই পালিয়ে যাচ্ছে; সামনের একটা পাহাড়ের গায়ে বেশ খানিকটা খেলানো সমতলে একটা বাচ্চা অনেকগুলো ইয়াক নিয়ে চরাচ্ছে দেখলাম। ইতিমধ্যে দোকানী আমাদের জন্যে কফি নিয়ে হাজির। সবাই মিলে গল্প গুজব হল খানিক; এই জায়গাগুলো পুরোপুরি পশুপালন আর পর্যটনের উপর নির্ভরশীল; বিশেষত: দোকানগুলো তো বটেই, কিন্তু এরা সব সময় বেশ হাসি খুশী আর খুব অতিথি পরায়ণ; পাহাড়ে গেলে বত্রিশ সিংহাসনের একটা গল্প মনে পড়ে, সেই যে এক চাষা যখন-ই মিনারের ওপর উঠত, খুব ভালো হয়ে যেত আর ভালো ভালো কথা বলত, আর নেমে এলেই গাল পাড়ত; সমতল আর পাহাড়ের তাফাৎটাও খানিক তেমন, এখানে লোক জন অধিকাংশ-ই তো দেখি সর্বক্ষণ তিরিক্ষে হয়ে রয়েছে :(

    যাক, দার্চা ছেড়ে বেরিয়ে পড়া গেল; এবার চারদিকে পাহাড়ের চেহারা বেশ বদলাতে শুরু করেছে, কখনো হলুদ, কখনো ধূসর,কখনো ছোটো ছোটো সবুজ ঘাসে ঢাকা, আবার কখনো ছোটো ছোটো ঝোপ; মাঝে একরকমের গাছ দেখিয়ে ভিনোদ বলল এটা থেকে ধূপ তৈরী করে স্থানীয় অধিবাসীরা আর মানালির বাজারে সেই ধূপ বিক্রি হয়; কেলং ছাড়ার পর থেকেই ঠান্ডাটা অনেক হালকা হয়ে গেছে, বাইরে আকাশ ও পরিষ্কার, রোদ-ও রয়েছে ভালো;মাঝে দু একটা করে গাড়ি বা আর্মির কনভয় হুস হাস করে বেরিয়ে যাচ্ছে,আর কোথাও কোনো জনমানব নেই, শুধু পাহাড়ী নি:সঙ্গতা।কোকসারে পৌঁছোতে প্রায় আড়াইটে হল; এবার বেশ খিদে পেয়েছে; বাইরে গেলে আমি সাধারণত: ভেজ মিল প্রেফার করি, কিন্তু এখানে দেখলাম ভেজ কিছু নেই, খাবার বলতে হাতরুটি আর পাঁঠার গরগরে ঝোল; শুনে তো বেশ লোভ-ই লাগল, কিন্তু মাংস এসব জায়গায় কেমন হবেসেই ভাবছিলাম; যাই হোক, অর্ডার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি ওমা! পাশেই একটা ব্রিজ লোহার, আর নীচ দিয়ে কুল কুল করে ছোটো খাটো একটা পাহাড়ী নদী এঁকে বেঁকে চলেছে। বেশী নীচে নয় নদীটা, কিন্তু বেশ পাথুরে উৎরাই; দুজনে মিলে হাঁচোড় পাঁচোড় করে নেমে এলুম , নদীর জলে হাত দিয়ে দেখি ভয়ঙ্কর ঠান্ডা, আঙুল কেটে নেওয়ার জোগাড়! নদীটা যতদূর দেখা যায় এঁকে বেঁকে সর্পিল গতিতে বহুডুর চলে গেছে, আর দুদিকে উঠে গেছে খাড়া পাহাড়; এখানে যেন পাহাড় দের মধ্যে উচ্চতার প্রতিযোগিতা চলছে, এ বলে আমায় দেখো, ও বলে আমায়, প্রতিটার পাশের চূড়োটা আগেরটার থেকে আর-ও একটু উঁচু, আর শেষ আট দশটা তো মাথায় সাদা বরফের টুপি পরে দাঁড়িয়ে আছে, কুচকুচে কালো পাহাড়ের মাথায় ধবধবে সাদা বরফটুপি, কি যে অদ্ভুত কনট্রাস্ট, ভাবা যায় না (এখানে মনে পড়ল, লাচুং এ আমরা রাতে যে গেস্ট হাউসে ছিলাম, তার ঠিক সামনেই ছিল এরকম একটা অদ্ভুত খাড়াকালো কুচকুচে পাহাড়, সকালে উঠে দেখেছিলাম, পুরো পাহাড়টা কালো, শুধু ওপরে একটু জায়গায় রাতে বরফ পড়ে সাদা মুকুট হয়ে গেছে, আর চারিদিকের পাহাড়গুলো ছিল পুরো-ই সাদা ,ব্যতিক্রম ঐ একটি)। যাই হোক, নদীর জলে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে নিতে নিতে দেখি ভিনোদ ডাকছে ওপর থেকে , আমাদের খাবার তৈরী; খেতে গিয়ে আর-ও এক চমক, পুরো যেন বাড়িতে তৈরী কচি পাঁঠার ঝোল; জিগাতে বলল এটা ভেড়ার মাংস, কিন্তু এই শীতের দেশে এত ভালো সেদ্ধ হয়েছে আর এমন স্বাদ অকল্পনীয়; হাপুস হুপুস করে চারখানা করে রুটি খেয়ে ফেললাম দুজনে, ভিনোদ নিল মাংসের ঝোল আর ভাত; খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলে ভিনোদ জানিয়ে দিল আর কোথাও থামা নেই, সোজা বরালাচা লা (প্রায় ১৬০০০ ফুট) পার হয়ে সারচু তে থামা, আমাদের দুর্গমতর পথের শুরু-ও হল এইখান থেকে। মাভৈ:!!
  • siki | 123.242.248.130 | ১৫ মার্চ ২০১১ ০৮:৫৩458171
  • চালাও পানসি বেলঘরিয়া।

    সুদীপ্ত, আমাকে তোর ফোন্নং টা একবার মেল করে দিবি? অথবা মিস্‌কলও মারতে পারিস, আমার নম্বর যদি থাকে তোর কাছে।
  • Manish | 59.90.135.107 | ১৫ মার্চ ২০১১ ১০:১৩458172
  • এই সুন্দর ভ্রমন কাহানির সাথে কিছু ছবি আপলোডানো গেলে আরো ভলো লাগতো।
  • Nina | 64.56.33.254 | ১৫ মার্চ ২০১১ ২১:৫০458173
  • বুম্বা কি আবার মাছ ভাজতে চলে গেল?? বিয়াসের ট্রাউট??
  • Sudipta | 202.78.237.22 | ১৯ মার্চ ২০১১ ০৯:১৪458174
  • মনীষের জন্যে: http://picasaweb.google.com/sudipta.bhattacharya83
    আগে-ও দেওয়া ছিল অবিশ্যি, সব ফোটো তে ক্যাপশান দেওয়া হয়ে ওঠে নি :(

    আজ-কালের মধ্যে আরো কিছুটা এগোতে চেষ্টা করব, এই সপ্তাহে আর হয়ে ওঠে নি।
  • siki | 122.162.75.34 | ১৯ মার্চ ২০১১ ১০:২৪458175
  • অপূর্ব ছবিগুলো।
  • Sudipta | 115.187.33.30 | ১৯ মার্চ ২০১১ ১২:৪৭458176
  • কোকসার ছাড়াতে আর তেমন সবুজ দেখা গেল না, ছোটো ছোটো ঝোপ ঝাড়, ঐ অবধি; হিমালয় এর ধূসর, রুক্ষ গগনচুম্বী উচ্চতা আর দিগন্তস্পর্শী বিশালতা বাকি পথে আমাদের সঙ্গী হল। ভালো রাস্তা পেয়ে ভিনোদ ও ৬০ এর কাছে গতি তুলল ঐ পাহাড়ি রাস্তাতেও; রাস্তায় অবশ্য তেমন গাড়ি দেখলাম না; চার পাঁচ কিলোমিটার, কখন-ও দশ-পনেরো কিলোমিটার অন্তর ছোটো ছোটো তাঁবু খাটিয়ে পাহাড় কাটার কর্মীরা (অধিকাংশ ই বি আর ও র কর্মী) কোদাল, শাবল বা কখন-ও সখন-ও একটা বুলডোজার নিয়ে কাজে মগ্ন; ভিনোদ কে জিগ্যেস করে জানা গেল, এরা যে সব সময় বি আর ও র লোক তা নয়, কনট্র্যাক্টে এই স্থানীয় লোক জন দের দিয়ে অনেক সময় পাহাড় কাটা বা রাস্তার কাজ করানো হয় সামান্য অর্থের বিনিময়ে; রাতের দিকে এখানে শূন্যের আশে পাশে তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে, আর ঐ তাঁবু,আগুন আর ছাং (এক ধরণের স্থানীয় বিয়ার, আমরা যারে কই বাংলা) সম্বল করে এরা রাত কাটায়; যাই, হোক, এবার রাস্তা ধীরে ধীরে দুর্গম হতে শুরু করল, অনেক জায়গাতেই দেখলাম রাস্তা ধুয়ে মুছে গেছে, শুধু বোল্ডারের ওপর দিয়ে যেতে হচ্ছে, এমনকি ছোটো খাটো একটা পাহাড়ি নদী-ও পেরোলাম আমরা। আমার কেমন সন্দেহ হচ্ছিল এটাই আসল রাস্তা কিনা! তাতে ভিনোদ বলে কিনা আপনারা তো মাত্তর দুজন, গাড়ি-ও হালকা আছে, তাই শর্টকাটে দিলুম চালিয়ে, বোঝো!!! এদিকে বোল্ডারের খাঁজে ভাঁজে আর খানা খন্দে পড়ে গাড়ি প্রায় উল্টে যাওয়ার জোগাড়, ভাবছিলুম এখন হঠাৎ করে যদি গাড়ি বন্ধ হয় বা টায়ার যায়, তবে কেমন কেলোটা হবে!! অবিশ্যি তখন-ও কি আর জানি আর-ও কত প্রাণান্তকর খেল দেখাবে আমাদের ভিনোদ বাবাজী (আমরা ওকে পাইলট নাম দিয়েছিলাম, ড্রাইভার শব্দটা ঠিক ওর জন্যে নয় আর কি!!) তা সে নদী পার হয়ে অনেক কষ্টে আসল রাস্তায় এসে পড়া গেল; আধঘন্টা টাক পার হতেই, গাড়ি আবার ওপরে উঠতে শুরু করল। এখানে একটা জিনিস বলে রাখি; আমরা লাদাখ এ ঢুকে পড়েছি দার্চার কিছু পর থেকেই; দারচা হল হিমাচলের শেষ আর জম্মু-কাষ্মীরের শুরু। ওখানে চেক পয়েন্টে এϾট্র করাতে হয়। যাক, এদিকে প্রায় ১৫০০০ ফুটের ওপরে উঠে এসেছি আমরা, এই একটা সম্য, পুরো ট্যুর এ এই একটা সময় আমরা দুজনেই একটু অস্বস্তি বোধ করেছিলাম, একটু যেন মাথা ঝিম ঝিম, সামান্য অক্সিজেনের অভাব এরকম; এটা চলল প্রায় দশ পনেরো মিনিট; দুজনেই বেশ খানিকটা জল গলায় ঢাললাম, গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষণ রইলাম। ভিনোদকে বলতে ও জানাল, এই জায়গাটায় অনেকের এরকম হয়, আশপাশে গাছপালা হঠাৎ একেবারে না থাকায় অক্সিজেনের স্তর এখানে খুব পাতলা, সেখানেই বিপত্তি। গাড়ি আবার চলতে শুরু করল, কিছুক্ষণ পর ঝিম ধরা ভাবটা কেটে গেল; এবার একটা পাহাড় থেকে আর একটা পাহাড়ে যাওয়ার আসল আঁকাবাঁকা রাস্তা ছেড়ে হঠাৎ ই ভিনোদ গাড়ি নামিয়ে দিল শর্ট কাটে আর দুদ্দাড় করে নুড়ি পাথর ডিঙিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে চালাতে শুরু করল। কিছুদূর গিয়ে গাড়ি গেল আটাকে, কিছুতেই আর বোল্ডারের খাঁজ থেকে চাকা বের হয় না; কিছুক্ষণ পর অনেক কষ্টে ব্যাকে এসে চাকা খুললে আর এক দিক দিয়ে গাড়ি ঘোরালো ভিনোদ; এদিকে ঝাঁকুনির চোটে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়! কোথায় যে আসল রাস্তা তা-ও জানা নেই; ভিনোদ হঠাৎ বলল সে-ও ঠিক বুঝতে পারছে না! আমাদের তো শুনে ভির্মি খাওয়ার অবস্থা! এরকম অবস্থায় হঠাৎ একটা বাঁক পার হতেই দেখলাম প্রায় ২০ ডিগ্রী মত ওপরে আসল রাস্তা দেখা যাচ্ছে; দেখা মাত্র আমাদের কিছু বলার আগেই সোজা রাস্তা লক্ষ্য করে গাড়ি ছুটিয়ে দিল ভিনোদ! অনেক কষ্টে আসল রাস্তায় এসে পড়ার পর ভিনোদ কে ভালো করে বোঝানো হল; তখন শুধু হাঁ হাঁ করে গেল! তখন-ও কি আর বুঝেছি, চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী! অবশেষে বরালাচা লা, প্রায় সাড়ে শোলো হাজার ফীটের ওপর, আশে পাশে রুক্ষ শুষ্ক হিমালয়ের ব্যাপ্তি, জল কোথাও এক ফোঁটা দেখলাম না এখানে, অথচ চারদিকে বরফ জমে কঠিণ হয়ে রয়েছে! বরালাচা লা পার হতেই আবার পাহাড়ের রং বদল শুরু হল;
  • Manish | 59.90.135.107 | ১৯ মার্চ ২০১১ ১৫:৫৯458178
  • সব কটা ছবি অসাধারন।
    ১৭ ন: ছবিটায় রঙের মেলা লেগে গেছে।দারুন।
  • Sudipta | 202.78.232.220 | ১৯ মার্চ ২০১১ ২১:৫৮458179
  • বরালাচা লা পার হয়ে আধঘন্টাটাক চলার পরেই দূর থেকে হঠাৎ চোখ ধাঁধিয়ে গেল একটা পাহাড়ের রং দেখে (Laadaakh 1 অ্যালবামে ৩২ নম্বর ও তৎ পরবর্তী ছবি পশ্য)। এতরকম রং একটা পাহাড়ে! সবুজ, হলুদ, বাদামী, ধূসর সে এক আশ্চর্য রঙের উৎসব! মনে হচ্ছে পাহাড়ের গায়ে যেন কেউ যত্ন করে আবির মাখিয়ে দিয়েছে, পড়ন্ত সূর্যের আলো-য় বহুদূর থেকে সেই রামধনু রঙা পাহাড়ের দৃশ্য কি যে অনুভূতি বয়ে আনল, সারাদিনের দুর্গম পাহাড়ী রাস্তার ধকল এক নিমেষে উধাও; দূরত্ব ছিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার আর আমরা এইটুকু পার হতে প্রায় বার আষ্টেক গাড়ি থামালাম পাহাড়টার ছবি নিতে। মাঝে মধ্যে পাশের পাহাড়টার আড়াল এসে যাচ্ছিল, সেটাও দারুণ সুন্দর, তার গায়ে আবার ঘন সবুজ আর ধূসর এর প্রলেপ; সবুজ কিন্তু ঘাস নয় মোটেই, পাথরের রং! আমাদের মনে হয়েছিল ছবি দেখে হয়ত অনেকেই বিশ্বাস করবে না ঐ রঙের পাথর হয়, তাই লাদাখ এক থেকে আমরা সংগ্রহ করে এনেছিলাম বিভিন্ন রঙের পাথর বিভিন্ন রঙের পাহাড় থেকে; অধিকাংশ ই পাললিক শিলা, হিমালয় কিনা। এখানে পাললিক শিলা চেনার একটা উপায় বলে দি-ই। পাথরে গায়ে মুখ হাঁ করে কিছুটা জলীয় বাতাস দাও (জল থাকলে জলেও ভেজাতে পারো), তার পর নাকে ধরে শুঁকে দেখবে জল পড়া মাটির সোঁদা গন্ধ, যেটা একেবারে অথেন্টিক পলি মাটির গন্ধ। এটা স্কুলে আমাদের ভূগোলের স্যার শিখিয়েছিলেন। আমরা এগিয়ে চললাম; প্রায় এক থেকে দু ঘন্টা চলার পর ঘড়ির কাঁটা যখন প্রায় পাঁচটা ছুঁই ছুঁই, আমরা ঢুকে পড়লাম এক নির্জন বিশাল প্রান্তরে, দুপাশে পাহাড়ের সারি, মাঝে ভ্যালি আর তার ঠিক বুক চিরে চকচকে সরু রাস্তা চলে গেছে, আর ভায়ঙ্কর হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া! ভিনোদ বলল আমরা এবার সারচু তে ঢুকে পড়েছি। আশে পাশে বেশ কিছু টেন্ট সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে; আমরা এসেছি সিজনের প্রায় শেষ দিকে, এই সময় এই রাস্তায় ট্যুরিস্ট খুব একটা থাকে না বললেই চলে। আমাদের টেন্টের কাগজপত্র ছিল ভিনোদের কাছে, বেশ কিছুটা চলার পর গোল্ডেন হাট এ গাড়ি ঢুকিয়ে দিল, সামনে একটা সাদা পতাকায় বড় করে লেখা রয়েছে সংস্থার নাম, আর যতদূর ওদের টেন্টের সারি (প্রায় দশ-বারোটা ছিল), সামনে ছোটো ছোটো সাদা পতাকা লাগানো। গাড়ি থেকে নামতেই টেন্টের ম্যানেজার ছুটে এসে যত্ন করে আমাদের নিয়ে গেলেন ক্যান্টিনে, আমাদের মালপত্র সব বাকি দুজন মিলে নামিয়ে নিয়ে গেল আমাদের জন্য নির্দিষ্ট টেন্টে। শুনলাম আমরা দুজন-ই একমাত্র গেস্ট এই শেষ এক সপ্তাহের মধ্যে!
  • aishik | 122.179.54.196 | ২০ মার্চ ২০১১ ১১:১৪458180
  • অসাধারন লেখা, আর খুব সুন্দর ছবি
  • Sudipta | 202.78.237.71 | ২০ মার্চ ২০১১ ১৯:১৯458181
  • তখন-ও সূর্যের শেষ আলোটুকু মিলিয়ে যায় নি; আমাদের দু'নম্বর টেন্ট টা দেওয়া হয়েছিল; ঢুকে দেখি বেশ খাসা ব্যবস্থা; এ'রকম জনমানবশূন্য জায়গায় এরকম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিছানা পাতা লোহার খাটে, ভাবা যায় না! সঙ্গে বসার চেয়ার, টেবিল। আবার ঘরের একপাশে একটা চেন লাগিয়ে পার্টিশন করা দেখে কৌতূহলী হয়ে ক্যানভাসের পর্দা সরাতেই দেখি, সেটা অ্যাটাচড বাথ! কমোড, বেসিন, এমনকি আয়না পর্যন্ত; এসব ব্যাপার স্যাপার দেখে দুজনেই তো ফিদা, তখন-ই হাজির গরম গরম কফি আর প্লেট ভর্তি কুকিজ। সেসবের সদ্‌গতি করে বেশ শরীর গরম করা গেল, বাইরে বেরিয়ে দুপাশের পাহাড়ের বেশ কিছু ছবি নেওয়া গেল, রাস্তার পাশে Wonder Land লেখা একটা অদ্ভুত পাথর দেখিয়ে ভিনোদ জানালো এটা নাকি ফিল্ম শ্যুটিং পয়েন্ট; থ্রী ইডিয়টস এর কিছু দশ্য এখানে তোলা হয়েছিল। এদিকে শেষ বিকেলের হলুদ আলো ফুরিয়ে যেতে যেতে এখন ঠিক বাঁদিকের পাহাড়গুলোর মাথায় একটুখানি নরম আভা ছড়িয়ে রেখেছে; যতদূর দেখা যায় কোথাও কিছু নেই। দুপাশের পাহাড়ের সারি অনেক দূরে যেখানে শেষ হয়েছে, ঠিক সেখানে মাঝখান বরাবর আর একটা পাহাড়ের শুরু হয়েছে। হঠাৎ ডানদিকের একটা পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে গাড় কমলা রঙের একটা গোলা টুপ করে গড়িয়ে যেন পড়ে গেল কোনো পাহাড়ী গর্তে, আর সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল দুদিকের পাহাড়ের গায়ে; মাঝের পাহাড়টার দিকে চোখ ফেরাতেই দেখলাম এক অপূর্ব রঙের খেলা, আলোর শেষ বিন্দুটুকু মুছে যাওয়ার আগে রামধনুর সাতটা রং যেন ছড়িয়ে দিয়েছে পাহাড়ের গায়ে; আকাশ ছিল ঝকঝকে পরিষ্কার, এবার আলো কমে আসতেই ঝাঁকে ঝাঁকে তারা ফুটে উঠল আর সঙ্গে থালার মত চাঁদ, পাহাড়ের দেশে এ এক অদ্ভুত আলো-ছায়া-রঙের খেলা! হাওয়া তো এতক্ষণ ছিল-ই, এবার সন্ধ্যা নামতেই, হু হু করে তাপমাত্রা কমে নেমে এল প্রায় শূন্যের কাছে। সেই অন্ধকারেই হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে দুজনে খানিকটা ঐ বিস্তীর্ণ উপত্যকায় পায়চারি করে বেড়ালুম, কি ভালো যে লেগেছিল!

    সাড়ে ছটা নাগাদ টেন্টে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলাম; স্নানের তো প্রশ্ন-ই ছিল না, আর হাড়কাঁপানি ঠান্ডা হাওয়ার চোটে আমাদের ক্যানভাসের তাঁবু প্রায় উড়ে যাওয়ার সামিল, আর পত পত করে সেকি একঘেয়ে এক টানা শব্দ, এসব চলেছিল সারা রাত ধরে। ঠিক সাতটায় আমাদের খাওয়ার ডাক পড়ল; ছোটো খাটো চেহারার যে ছেলেটি ডাকতে এল, কথায় কথায় জানা গেল, তার বাড়ি দার্জিলিং এ, নাম প্রেম। ওর জীবিকা-ই হল এরকম সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে বেড়ানো আর রান্নার কাজ করা; ভাত,ডাল, তরকারি আর ওমলেট দিয়ে আমাদের বেশ যত্ন করে খাওয়াল প্রেম, আমরা কলকাতা থেকে আসছি শুনে সে খুব খুশী, গল্প আর শেষ ই হয় না! খাওয়া শেষ ভেবে উঠে আসছি যখন, প্রেম হাজির ছোটো ছোটো বাটি নিয়ে, দেখি গোবিন্দভোগ চালের অথেন্টিক বাঙালী পায়েস! এ বস্তু যে এরকম সাড়ে চোদ্দো হাজার ফিটের ওপর বসে এরকম জনমানবশূন্য জায়গায় পাওয়া যেতে পারে, আমাদের কল্পনার অতীত, বাটি হাতে বাইরে এসে চাঁদের আলো-য় প্রেমের সঙ্গে গল্প করতে করতে রসনাকে পরিতৃপ্ত করা গেল; ইতিমধ্যেই দেখলাম, ডানদিকের পাহাড়গুলোর মাথায় একটা বরফের সাদা চাদর তৈরী হয়েছে; চাঁদের আলো পড়ে ঝিক মিক করছে। বহুদিনের স্বপ্ন ছিল এই পরিবেশে এরকম ঠান্ডায় টেন্টে রাত্রিবাস, যেখানে হুহু হাওয়ায় তাঁবু উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইবে, আর যত ইচ্ছে হিমালয়ের এই নৈসর্গিক শোভা উপভোগ করা যাবে, আকাশ ভরে থাকবে তারার দল, আর জ্যোৎস্নায় ছেয়ে যাবে চতুর্দিক; এতদিনে তার আস্বাদ মিলল;
  • Nina | 68.84.239.41 | ২০ মার্চ ২০১১ ২০:৪৮458182
  • যেমন লেখা ছবির মতন, তেমনই ছবিগুলো ও যেন কবিতার মতন--বুম্বার সবকিছুই একটি সুন্দর কবিতা!
  • santanu | 82.112.6.2 | ১২ জুন ২০১১ ১৩:৫৯458183
  • এই নিন, লাদাখের ছবি দ্যাখেন,
    https://picasaweb.google.com/CSANTANU/Ladakh?authkey=Gv1sRgCKWTiPzckKjUvQE#

    কঠিন প্রকৃতিপ্রেমী না হলে, লাদ্দাখ ভ্রমণে সামান্য চাপ আছে।

    লাদাখ যাবার জন্য Make My Trip এর প্যাকেজ না নিলেই ভালো।

    কিংফিশার সকাল পাঁচটার সময় প্লেনে প্রচুর খেতে দেয়।

    দিব্বি ইসে পাওয়া যায় লাদাখে।

    ওয়েদার একটু বেগোড়বাঁই করলে, লাদাখের গাড়ির ড্রাইভারদের বউরা ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে খবর নেয়, গাড়িটা আছে না খাদে পড়েছে।

    বাকি সব খবরাখবর তো ওপরে দেওয়াই আছে।
  • siki | 122.162.75.192 | ১২ জুন ২০১১ ১৫:৫৩458184
  • এত কমে তো চবলে না। সর্ষে আবার শুরু হোক। বিস্তারিত চাই।

    ততক্ষণ ছবিগুলো দেখি।
  • siki | 123.242.248.130 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ১৬:৩০458185
  • কেউ কথা রাখে নি।

    ক্ষেউ না!

    সুদীপ্ত কি এখন লাদাখেই থাকে? আর ফেরে নি?
  • Sudipta | 71.68.105.54 | ২৬ মার্চ ২০১২ ০০:০৪458186
  • আবার বছর কুড়ি পরে ইত্যাদি।।। ;)
    ------------------------------------

    হিমালয়ের বুকে রাত কাটানোর একটা বেশ অন্যরকম অনুভূতি আছে! চারিদিকে নিকষ অন্ধকার, জনমানবশূন্য, কিন্তু তবু আবছা একটা আলো-য় ছেয়ে থাকে গোটা মায়া উপত্যকা! আকাশ যদি পরিষ্কার মেঘমুক্ত হয়, তবে অজস্র তারা দিনের আলো-র গভীর থেকে মুক্তি পেয়ে মায়াবী নীলাভ আলো-র জরি তে মুড়ে দেয় আকাশ কে, চাঁদের উপস্থিতি এর সাথে অন্য মাত্রা যোগ করে, গুরু গম্ভীর হিমালয় কে স্নিগ্‌ধ করে।

    যাই হোক, রাতে আমাদের টেন্ট এ ফিরে তো এলাম, এদিকে দেখি প্রচন্ড ঠান্ডা-য় বিছানা জল হয়ে গেছে; অগত্যা ঠিক করা গেল, সব গরম জামা-কাপড় গায়ে রেখেই কম্বলের তলায় শরীর চালান দেওয়া যাক। এদিকে সারারাত সেই হাওয়ার দাপট আর পত পত শব্দ, মনে হচ্ছে এই বুঝি সব উপড়ে ফেলে দেবে! যাই হোক, কোনো রকমে আধা তন্দ্রা, আধা ঘুমে আধা গল্পে রাত শেষ হয়ে এল, আমার ঘুম ভাঙল ভোর প্রায় সাড়ে চারটে-য়, বাইরে এসে দেখলাম, তখন ও আলো লাগে নি পাহাড়ের গায়ে, কিন্তু আকাশ থেকে কালো-র ছোপ মুছে যাওয়া শুরু হয়েছে। এদিক ওদিক নরম ঘাসে একটু পায়চারি করছিলাম, দেখি নীলাঞ্জন ও বেরিয়ে এসেছে; সাড়ে পাঁচটা র দিকে প্রথম লালচে আভা দেখা গেলো আমাদের ঠিক সামনে দাঁড়ানো পাহাড়ের চূড়াটায়। রাতে বরফ পড়ে উপরটা ঠিক একটা সাদা শোলার টুপি-র মত দেখাচ্ছে আর তার ওপর লাল আর কমলা-র ছোপ। অনেক ক্ষণ ধরে দেখতে থাকা লাল রঙ্‌টা হঠাৎ করে গোটা উপত্যকা-য় ছড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যেতেই একটা লাল গোলা টুপুস করে ঠিক যেন পাহাড়ের গা বেয়ে ওপরে উঠে পড়ল; এই হল অমদের সানরাইজ অ্যাট সারচু! ছটা বাজতেই আমাদের ভিনোদ সাহেব হাজির। তড়ি ঘড়ি করে মুখে চোখে জল দিয়ে গরম গরম টোস্ট, মাখন আর ওমলেট দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম প্রেম আর টেন্টের অন্য কর্মীদের বিদায় জানিয়ে! এবার গন্তব্য পাং। আর আমাদের যাত্রাপথের সবচেয়ে ভয়াবহ অংশ ছিল এই সারচু থেকে পাং; আর প্রায় পুরো রাস্তাটাই ছিল ১৫ থেকে ১৭ হাজার ফিটের উচ্চতা, পাহাড়ের গা বেয়ে টালমাটাল রাস্তা আর ভিনোদের কিছু দু:সাহসিক কার্যকলাপ।
  • Sudipta | 71.68.105.54 | ২৬ মার্চ ২০১২ ০০:১০458187
  • সারচু ছাড়াতে না ছাড়াতেই আমাদের একটা আর্মি চেকপোস্ট পেরোতে হল। তারপর শুরু হল পাহাড়ে ওঠা! রাস্তা এত-ই সরু যে, উল্টো দিক থেকে গাড়ি এলে কোনো একজন কে আগু পিছু করে নিতে হচ্ছে যতক্ষণ না একটু চওড়া জায়গা পাওয়া যায় পাশ কাটানোর মত; আর গাড়ি বলতে শুধু-ই ছোটো ছোটো মাল বোঝাই ট্রাক (কোনো কোনোটা আর্মি-র), ট্যুরিস্টের দেখা নেই বললেই চলে, অবিশ্যি সেরকম ই ধারণা করে এসেছিলাম! কোথাও বা পাহাড়ের গায়ে ফালি কেটে রাস্তা তৈরী, মানে মাথা বের করে ওপরে দেখলে পাথরের চাঁই, নিচে তো রাস্তা, শুধু এক পাশে কাটা আর নীচে পনের হাজার ফিটের গভীর খাদ, যেখানে সরু রুপোলী ফিতের মত কোনো পাহাড়ী নদী বয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তা যেমন দুর্গম, তেমনি সবুজ-শূন্য, কিছু কিছু অবিন্যস্ত ঘাসের ঝোপ বাদ দিলে আর কিছু-ই নেই, রুক্ষ ধূসর হিমালয়, সামান্য জল পর্যন্ত মেলে না এ রাস্তা-য়! তাপমাত্রা শূন্য র আশে পাশে, ভয়ঙ্কর হাওয়া, এই ছিল আমাদের সঙ্গী! এক একটা হেয়ারপিন বেন্ড বেশ কয়েক মিটার করে উপরে তুলে দিচ্ছে আর নীচের রাস্তাটার দিকে তাকালে একেবারেই যে কোনো শিরশিরানি ধমনী তে সৃষ্টি হচ্ছে না এমনটা বলতে পারি না। একমাত্র ভিনোদ নির্বিকার 'দু:খেষ্বনুদ্বিগ্নমনা।।।' ইত্যাদি; হঠাৎ আমাদের একবার জিগ্যেস করল, পাহাড়ী রাস্তা-য় একটু শর্টকাট মারলে কোনো আপত্তি আছে কিনা, তা আমরা আর কি জানি, দুজনেই সায় দিলুম (আর কি কুক্ষণেই যে দিয়েছিলুম!); হঠাৎ এক জায়গায় দেখি পথ টা ইউ টার্ন নিয়ে নিয়ে ওপর উঠছে, সেখানে ইউ টার্ন এড়িয়ে ভিনোদ সোজা খাড়াই ধরল পাথর, বোল্ডার ডিঙ্গিয়ে! সামনে পরিষ্কার দেখছি, প্রায় ৪৫ ডিগ্রী খাড়াই অন্য রাস্তা টায় পৌঁছোতে হলে, বোল্ডার আর আলগা নুড়ি পাথরে গাড়ির চাকা নড়বড় করছেআর পেছনে দেখলে সোজা খাদ, দুজনেই কোনোক্রমে দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছি আর ভিনোদের কেরামতি দেখছি, কিছু বলতে-ও পারছি না পাছে মন:সংযোগ নষ্ট হয়, সে-ও এক বিপত্তি; পাঁচ মিনিট এরকম চলার পরেক জায়গায় এসে বড় এক পাথরে গাড়ি গেল আটকে, দেখছি গিয়ার খুলে হাতে চলে আসার জোগাড়! বাধ্য হয়ে ভিনোদ কে বললুম বাপু গাড়ি থামাও, উত্তরে বলে কিনা, এখন থামালে গাড়ি খাদে গড়িয়ে যাবে! ছোকরা বলে কি!!! সেই স্টার্ট দেওয়া অবস্থা তেই আমরা গাড়ি থেকে নামলুম, সে আর এক কেলো, এমন খাড়াই, থিক করে পা রেখে নাম-ও দায়, আর একটু পিছলে গেলেই বা আলগা পাথরে পা পড়লেই, সামে গড়িয়ে গিয়ে পনের হাজার হুট। সে যা হোক, কোনো ক্রমে প্রাণ হাতে করে নেমে গাড়ির চাকার ফাঁকে ফাঁকে পাথর গুঁজে দিলাম। এবার তার ওপর দিয়ে চালাতে গিয়ে গাড়ির চাকা গেল ঘুরে আর পাশ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল; শেষে তিন জনে পাথর বিছিয়ে মোটামুটি একটা পথ বানাতে হল ওপরের রাস্তা পর্যন্ত যার ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা দুটো ঠিক ভাবে যেতে পারবে; ঠিক হল ভিনোদ খালি গাড়ি নিয়ে উঠবে আর আমরা পাহাড় বেয়ে; অগত্যা সেভাবেই গন্তব্য রাস্তায় পৌঁছানো গেল কোনোমতে! এত মানসিক আর শারীরিক চাপ এ বেশ কাহিল হয়ে পড়েছিলাম সকলেই, রাস্তা-য় পা ছড়িয়ে বসে একটু জিরনো গেল, তার পর আবার শুরু হল যাত্রা! এসব ঘটনা যখন ঘটছে, তখন আমরা নাকীলা (১৫৫৪৭ ফিট) সবে পার হয়েছি; পরের গন্তব্য লাচুলুঙ লা (১৬৬১৬ ফিট)। সুতরাং আবার শুরু হল ওঠা।
  • Sudipta | 71.68.105.54 | ২৬ মার্চ ২০১২ ০৭:৫৬458189
  • লাচুলুং লা তখন-ও আসেনি; দেখলাম সেই ষোল হাজার ফিটের উপর রাস্তায় একজন ভিনদেশী পর্যটক সাইকেল নিয়ে চলেছেন, পেছনে বাঁধা টেন্ট এর জিনিস পত্র, শুকনো খাবার, জল ইত্যাদি! দেখে অবাক হলুম, এরকম নির্জন জায়গায় যেখানে মাইলের পর মাইল কোনো জল নেই, খাবার নেই, কোন সাহসে বুক বেঁধে শুধু সাইকেল সম্বল করে বেরিয়ে পড়েছেন! হাত নেড়ে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামনে এগিয়ে চলি আমরা। দেখতে দেখতে লাচুলুং লা এসে গেল; এখান থেকে ধীরে ধীরে আবার আমাদের নামা শুরু হল, রাস্তাটা-ও সহনীয় হল কিছুটা, ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম পাং। সারচু থেকে পাং এ আসতে মোটামুটি সময় লাগল ঘন্টা তিনেক। পাং সারচু র মত ই একটা ছোটো খাটো বিশ্রামের জায়গা; জায়গার নাম বটে, কিন্তু খুব বেশী পোক্ত ঘর বাড়ির অস্তিত্ব নেই, কিছু ঝুপড়ি দোকান তার ভেতরেই বসার, রাতে শোয়ার ব্যবস্থা। স্বাভাবিক ভাবেই জিনিস বা খাবারের দাম ও বেশ বেশী। এখানেই প্রথম আমরা থুকপা খেলাম। সঙ্গে গরম গরম বাটার টি; এবার বলি, আমরা যখন গেছিলাম তখন টাংলাং লা র রাস্তা বন্ধ ছিল সেই ক্লাউড বার্স্ট এর ঘটনার ফলে, তাই আমাদের ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বেশী সফর করতে হয়েছিল। ভিনোদের এই পাং থেকে সো-কর (একটি লেক) পর্যন্ত রাস্তা খুব ভালো জানা ছিল না, আগেই বলেছিল আমাদের। কিন্তু রাখে হরি মারে কে! আমরা যে দোকানে খেলাম, সেখান থেকেই একজন লামা আমাদের অনুরোধ করলেন যাতে তিনি চোগলামসার পর্যন্ত যেতে পারেন, তিনি সো-কর এর রাস্তা-ও বাতলে দিতে পারবেন। লামা সাহেব কে নিয়ে আবার হৈ হৈ করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম, এবার গন্তব্য সো-কর। পাং থেকে সো-কর পর্যন্ত রাস্তা শুধু দিগন্ত-বিস্তৃত খোলা মাঠ, আর মাঠের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। মাঠের দুধারে পাহাড়ের সারি আর তার গায়ে মেঘেদের ছায়ার খেলা। এইবার ভিনোদ কিছু স্পীড তুলল, হু হু করে ১০০ ছাড়িয়ে প্রায় ১২০ তে টানতে শুরু করল মাঠের মধ্যে দিয়ে প্রচন্ড ধুলোর ঝড় গাড়ির পেছনে তুলে। এই রাস্তা টা-য় ভয়ঙ্কর ধুলো, গাড়ির সব কাঁচ তুলে দেওয়া হল।প্রায় ঘন্টা তিনেক পর সো-কর দেখা গেল দূর থেকে; সময় বেশি নেই, আরো ঘন্টা ছয়েকের পথ বাকি; তাই আর বেশিক্ষণ এখানে না দাঁড়িয়ে রওনা হওয়া গেল।সো-কর পার হওয়ার পর একটা ব্রিজ পড়ল। ছোটো লোহার ব্রীজ, যেমন টা আর্মি বানিয়ে থাকে। সেটা পার হতেই একটা বিভাজিকা। পরিষ্কার লেখা, সেখান থেকে বাঁদিকে গেলে লে, ডানদিকে সো-মোরিরি আর যেদিক থেকে এসেছি সেদিকে মানালি। আর বেশিদূর নেই ভেবে মন ভরে উঠল খুশি তে। পাঁচ-দশ মিনিট এগোতেই, সিন্ধু নদ এসে আমাদের যাত্রাপথের সঙ্গী হল, কখন-ও বাঁদিকে (অধিকাংশ সময়), কখন-ও বা ডানদিকে। আর তার সঙ্গে নদীখাতের দুধার জুড়ে গগনচুম্বী পাহাড়ের সারি, তার এক একটার রং এক এক রকম। কোনোটা হলুদ, কোনোটা হলুদ-কালো ছিটে, কোনোটা ধূসর, কোনোটা বাদামী, লালচে, আবার কোনোটা ঘোর সবুজ (ঘাস নয় কিন্তু)। রাস্তা চলেছে সিন্ধুর ধার ধরে, কাদা-র কোনো চিহ্ন নেই, একবার গিয়ে জলে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম আমরা, কনকনে ঠান্ডা জল, কিন্তু কি পরিষ্কার। কোথাও কোথাও প্রচন্ড গর্জন করে প্রবল স্রোতে জলরাশি ধেয়ে চলেছে, আবার কোথাও হালকা ঢেউ তুলে।গাঢ় নীল আকাশ আর সূর্যের আলোয় ঝক ঝক করছে চতুর্দিক। এ পথের কোনো তুলনা নেই! এবার গন্তব্য উপশী।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন