এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:১২484427
  • আলোচনাটি লক্ষ্য করছি প্রথম থেকেই। ঋত্বিককে কেন্দ্র করে মনস্তঙ্কÄ, নন্দনতঙ্কÄ, চিত্রনির্মাণ ইত্যাদি নানা বিষয়ের উদ্দীপক চর্চা চলেছে কয়েকদিন থেকে। একজন প্রকৃত শিল্পী মানুষের মনোজগতের কতোটা গভীরে পৌঁছে যান, ঋত্বিক আবার তার একটা পরিচয় দিলেন।

    ব্যক্তিমানসের বিবর্তনে ইতিহাস, ঐতিহ্য বা মিথস্ক্রিয়ার ভূমিকা, ব্যক্তি তথা সমষ্টির সৃজনশীলতার প্রক্রিয়ায় তার প্রতিফলন এবং এ প্রসঙ্গে য়ুং সাহেবের তঙ্কÄ, তার উত্তর আধুনিক পরিপ্রেক্ষিত ও ভারতীয় শিল্পবোধের নিরিখে তার ব্যাখ্যা, যা সৈকতের লেখায় এসেছে আমার বেশ প্রাসঙ্গিক লেগেছে। খুব সমৃদ্ধ আলোচনা। তবে কল্লোলদা যা কিছু লিখেছেন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে, তার সঙ্গে আমার ধারণা এতোটাই মেলে যে আমি নিজে কিছু লেখার থেকে সংযত ছিলুম। তবু একটু প্রলুব্ধ হচ্ছি কিছু যোগ করতে। ঋত্বিককে সামনে রেখে যে শোভাযাত্রা, সেখানে একটু পা মেলাতে না পারলে বোধ হয় একটু অপরাধী লাগে।

    ঋত্বিক যে মানিকবাবুর মতো হলিউডি মডেলে বিশ্বাস করেননা এবং তাঁর রচনার সঙ্গে রুশ ক্ল্যাসিক ছবিগুলি মেলে তা স্বয়ং মানিকবাবুই বলে গেছেন, তাই তা জজেও মানে। ঋত্বিক আজীবন দেশভাগের যন্ত্রনা থেকে সৃজনশীলতার ক্যাথার্সিস খুঁজেছেন তাও মানিকবাবু উল্লেখ করেছেন। যে ছবিগুলি তাঁর কীর্তির মাইলফলক, সেই সবগুলিই কোনও না কোনও ভাবে ছিন্নমূল, মাতৃবিযুক্ত সন্তানের বিষাদবেদনায় ধূসর। যে দেশ তিনি ছেড়ে এসেছিলেন তাকে কখনই মৃণ্ময় ভেবে সান্ত্বনা পাননি, তা চিরকাল অত্যন্ত প্রকটভাবে তাঁর কাছে চিণ্ময় হয়ে থেকে গেছে। তাঁর 'দেশ'মাতৃকার সঙ্গে তাঁর নাড়ি সম্ভবত পঞ্চাশ বছর ধরেই কেউ ছিন্ন করতে পারেনি। তিনি যতোদূরে যেতে চেয়েছেন ততো বেশি নাড়িতে টান লেগেছে এবং তিনি ব্যথাকাতর হয়ে পড়েছেন। তাঁর ব্যক্তিজীবন, শিল্পীজীবন, রাজনীতি, উৎকেন্দ্রিকতা, কেউই তাঁকে এই বেদনা থেকে মুক্ত করার উপযুক্ত শূশ্রূষা দিতে পারেনি। তাঁকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, তাই এই মূহুর্তে এই নিয়ে আর কথা বাড়াচ্ছি না।

    তাঁর রচনার বিরুদ্ধে আমাদের যে প্রধান অভিযোগ, সেই নিয়ে এক আধটি কথা, যে রকম বুঝেছি তাই বলি।
    'মেলোড্রামা' শব্দটির মূল ঊনিশ শতকের ফরাসি গীতিনাট্য, মূলত অপেরার পরিবেশনার সঙ্গে জড়িত। যেহেতু প্রসেনিয়াম থিয়েটার বা ছায়াছবি দুইই আমাদের ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার, তাই এই শব্দটিকে আমরা 'অতি'নাটকের আখ্যা দিতে ব্যবহার করি। তা এই 'অতি' নাটকের উপাদান কী কী?
    . সমাপতনের ঘনঘটার প্রতি অধিক নির্ভরতা।
    . যেকোন মানুষী সংবেদ প্রকাশ করার সময় মন্দ্রসপ্তকের প্রতি ভরসা না রেখে তারসপ্তকের প্রতি অধিক বিশ্বস্ত হয়ে পড়া।
    . নীতিকথা প্রতিষ্ঠা করার অদম্য উৎসাহে পরিবেশনার সূক্ষ্মতর দিকগুলির প্রতি উদাসিন থাকা।

    এই লক্ষণগুলি পরিহার করার প্রতি অতিরিক্ত মনোনিবেশ করার প্রয়োজনীয়তা আমরা পশ্চিম থেকে শিখেছি। যেহেতু সিনেমা একটি সম্পূর্ণ পশ্চিমী মাধ্যম, তাই দীর্ঘদিন আমরা বিশ্বাস করেছি যে পশ্চিমের তৈরি করা ( বিশেষত হলিউডের) 'ভালো সিনেমা'র মডেলটিই আমাদের অনুসরন করা উচিৎ। ঋত্বিক এই মডেলটির প্রামাণ্যতা অনেকাংশেই স্বীকার করেননি, তাই মারি সিটনকে তিনি প্রভাবিত করতে পারেন না।

    'এপিক' শব্দটি ঋত্বিকের লেখায় বহুবার এসেছে। আমাদের দেশে যাবতীয় সৃজনশীল সৃষ্টির মূল উৎস দুটি। রামায়ণ ও মহাভারত। 'মেলোড্রামা' নামক শব্দটি সৃষ্টি হবার বহু হাজার বছর আগেই আমাদের শিল্প ও নন্দনশাস্ত্রে এই তথাকথিত 'মেলোড্রামা'র লক্ষণগুলি খুবই প্রকট। যেকোনও 'এপিক' শিল্পে আমরা এই 'অতি'বাদের প্রতি নির্ভরতা অতি প্রকটভাবে পাই। এই 'অতি'বাদের লক্ষণগুলি উপরে লিখেছি।

    য়ুরোপে গ্রিক যুগ থেকে রনেশাঁস যুগের শেষ পর্যন্ত এবং আমাদের দেশে পুরাণযুগ থেকে ইংরেজ আসা পর্যন্ত, যেকোনও শিল্প সৃষ্টির অন্তসলিল উদ্দেশ্য ছিলো, রামকৃষ্ণ পরমহংসের ভাষায় 'লোকশিক্ষে'। শুধু 'শিল্প' সৃষ্টির জন্যেই শিল্প সৃষ্টি এই ধারণাটিকে আমাদের দেশে কখনও মূলস্রোতে আসতে দেওয়া হয়নি। Art for art's sake আমাদের দেশে চিরকালই অজানা ব্যাপার। যেকোনও শিল্পপ্রচেষ্টার প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য থেকেছে বৃহত্তর মানবসমাজের কাছে কোনও কল্যাণকর বার্তা পৌঁছে দেওয়া। এ জন্যই আমাদের দেশে ব্যক্তির জীবনে সমষ্টির ভূমিকা এতো প্রকট। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ নামক ধারণাটি আমাদের কাছে স্বার্থপর অসামাজিকতার নামান্তর ছিলো। ঋত্বিকের পূর্ববঙ্গীয় শিকড় ও বামপন্থার জল তাঁকে এপিক ভারতীয়ত্ব, অর্থাৎ ব্যক্তিমানসের রূপায়ণে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মিথস্ক্রিয়ার অমোঘ ভূমিকার প্রতি চিরকাল বিশ্বস্ত রেখেছে। ভারতশিল্পের মূল্যায়ণ, ফ্রয়েড সাহেবের সরলরৈখিক, ব্যক্তিভিত্তিক, একমুখী বিশ্লেষণ থেকে করা সমীচীন নয়। তাই য়ুংসাহেবের ব্যাখ্যা আমাদের এপিক মূল্যবোধের অনেক কাছাকাছি এবং ঋত্বিকের কাজে আমরা এর পরিচয় পাই। শুধু চরিত্র রূপায়ণের ক্ষেত্রেই নয়, যাবতীয় অন্যতর ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রেও ঋত্বিক হয়তো য়ুরোপীয় ও মার্কিন মানদন্ডে অতিরিক্ত 'উচ্চকিত' ছিলেন। যখন একই সময়ে মানিকবাবু এই সব মানদন্ডের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। তাই 'অপুর সংসার' শেষ করার সময় তিনি বিভূতিভূষণের 'ভারতীয় পাঁচালি'র মতে সমে ফিরে আসার প্রক্রিয়াটিকে গ্রহণ করেননি। তাকে য়ুরোপীয় সরলরেখায় অগ্রসর পথে এগিয়ে দিয়েছিলেন। ঋত্বিক তো আপত্তি করবেনই।
  • PT | 203.110.243.23 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:১৬484428
  • রাতের রাণীর চরিত্রের অভিনয়ের একটি অনবদ্য অংশ।


    কেন জানিনা তিতাস একটি নদীর নাম ছবিতে স্বপ্নের দৃশ্যে দূর্গার রূপে মায়ের চরিত্রের আবির্ভাবের কথা মনে পড়ে যায়।

  • Nina | 12.149.39.84 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২০:৩৪484429
  • PT আমার একটি অনুরোধ--প্লিজ " উদয়ের পথে" সিনেমাটি দেখার খুব ইচ্ছে--কোথাও খুজে পাইনি। আপনি কি একটু হদিস দেবেন , প্লিজ।
    আগ্রাম ধন্যযোগ--ও অপেক্ষায়--
  • kc | 178.61.96.29 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২০:৪৪484430
  • নীনাদি, ভেবেছেনটা ক্ষী? অ্যাঁ? পড়াশোনা একেবারেই করবেননা নাক্ষি?

    এই ল্যান, উদয়ের পথে,

    http://www.bharatmovies.com/bengali/watch/udayer-pathey-movie-online.htm
  • nyara | 122.172.163.63 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২০:৫০484431
  • শম্ভু মিত্র সম্বন্ধে একটা পুরোনো লেখা থেকে:

    যেমন 'ইমোশন আর সেন্টিমেন্ট' নিয়ে বলছেন -
    "আমরা কীরকম ভয় করি ইমোশনকে, হ্যাঁ? ভাবি যে, কোনো শক্ট ইমোশান বা কোনো
    শক্ট জাজমেন্ট তো আছে, তাকে নিয়েই মানুষ বাঁচে | সেইগুলো ঢুকলেই যেন খারাপ হয়ে
    যাবে, তখন, যখনই করি, তখন একটা ডি-হাইড্রেটেড চেষ্টা করি - ডি-হাইড্রেটেড রূপের চেষ্টা
    করিzএবং সেইটেকে মনে করি খুব ইন্টেলেকচুয়াল ব্যাপার হল |
  • Nina | 12.149.39.84 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:১১484432
  • ওহ! কেসি, অনেক অনেক ধন্যযোগ :-) মার কাছে এত শুনেছি --আর তারপর সিনেমাতে গানগুলো মেয়ের গলায় যিনি গেয়েছেন , তিনি এখানে এসেছিলেন---তাঁর মেয়ে এখানে থাকে--কিন্তু খুঁজে পাইনি নেটে--আবার অনেক অনেক ধন্যযোগ!আজকেই দেখব বাড়ী গিয়ে :-))
  • nyara | 122.172.163.63 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:১৬484433
  • মহিলার গানগুলো বিনতা রায়ের গাওয়া নয়? আমি সে যখন বাছুর ছিলাম, তখন দেখেছিলাম।
  • kallol | 220.226.209.2 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১০:৩২484434
  • শিবাংশু অসাধারণ।

  • SUVRA BHATTACHARYA | 217.212.230.76 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১১:১৫484435
  • কল্লোল সৈক্‌ৎ ও সীবাংশুকে আবারো আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই! বিষয়টি শুরুর সময় ধারণা ছিলনা এমন সমৃদ্ধ আলোচনায় ঋদ্ধ হব! বাকি সকলকেও ভালোবাসা আন্তরিক. প্রত্যেকেই তাদের মননশীলতায় বিস্তৃত চিন্ময়ী দিগন্তের উৎসরণে শিল্পী ঋত্বিকে নতুন করে আবিষ্কার করতে সাহায্য করলেন কোমলগান্ধারের প্রেক্ষিতে! শুভেচ্ছা অনন্ত!
  • saikat | 202.54.74.119 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১১:১৬484436
  • এই মেলোড্রামা নিয়ে আমার একটা বক্তব্য আছে। আসছে। সঙ্গে থাকুন।
  • pi | 72.83.92.218 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১১:২২484438
  • রইলাম।
  • saikat | 202.54.74.119 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১২:৩৬484439
  • ভারতীয় "পপুলার" সিনেমায়, সেই আদিযুগ থেকেই মেলোড্রামার ছড়াছড়ি। সিনেমা আসার আগে যেহেতু গণবিনোদনের প্রধাণ মাধ্যম ছিল যাত্রা, সেই যাত্রাশিল্পের প্রভাব, তার মেলোড্রামা আর উচ্চকিত ভাবের প্রভাব সিনেমায় এসেছিল। ৫০-৬০-এর দশকে যখন ঋত্বিক ঘটক সিনেমা বানাচ্ছেন তখন তো একদিকে উত্তমকুমারের যুগ, অন্যদিকে গুরু দত্ত। মেলোড্রামার বহুল প্রকাশ ঐ সব সিনেমায়। এখন এই সব মেলোড্রামাটিক দৃশ্যগুলোর, হাসি-কান্না-রাগ-অভিমান মাখানো এইসব দৃশ্যগুলোর উদ্দেশ্য তো এটাই যে দর্শককে ঐ সব দৃশ্যগুলোর সাথে, চরিত্রদের সুখ-দু:খর সাথে একাত্ম করে ফেলা। সেখানে কিন্তু পরিচালকের বক্তব্য প্রকাশ পায় না, একটা বানানো গল্পের চরিত্রগুলোই দর্শককে টেনে ধরে রাখে।

    কিন্তু ঋত্বিক ঘটক তো সেই জন্য সিনেমা বানান না। একটা সাক্ষাৎকারে বলেন -

    "ঐ গল্পের মধ্যে involve করিয়ে দিলাম - দুমিনিটেই ছবির কথা তারা ভুলে গেল....এর মধ্যে আমি নেই। আমি প্রতি মূহুর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বোঝাব it is not an imaginary story। প্রতি মূহুর্তে আপনাকে hammer করে বোঝাব যে যা দেখছেন তা একটা কল্পিত ঘটনা কিন্তু এর মধ্যে যা বোঝাতে চাইছি আমার সেই থিসিসটা বুঝুন - সেটা সম্পূর্ন সত্যি - সেটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্যই আমি আপনাকে alienate করব প্রতি মূহুর্তে...... এই alienation সকল আধুনিক চলচ্চিত্র বা অন্য শিল্পেরও লক্ষ্য।"

    আর "সুবর্ণরেখা" নিয়ে একটা লেখায় লেখেন -

    "এই ছবিটিকে মেলোড্রামা বলা হয়েছে এবং তাতে ভুল কিছু হয়নি। সমালোচকদের স্মরণে থাকা উচিত ব্রেশটের কথা। তিনি কিন্তু মূলত বিচিত্র-পরম্পরার উপরে নির্ভর করেছেন, এবং "বিচ্ছিন্ন অনুভূতি"র একটা ব্যাপার তৈরী করেছিলেন, কথাটা মনে রাখা ভালো।"

    তাহলে কী দাঁড়াল ?

    ঋত্বিক ঘটক সিনেমায় বক্তব্য প্রকাশ করবেন।
    সেই বক্তব্য প্রকাশের জন্য তিনি দর্শককে alienate করবেন।
    এই alienate করাটা ব্রেশ্‌টীয় alienation পদ্ধতির সাথেই যুক্ত।

    অর্থাৎ আমার মতে, অনেক ক্ষেত্রেই ঋত্বিক ওনার সিনেমায়, অতি-আধুনিক ব্রেশ্‌টীয় alienation পদ্ধতিকে স্থাপন করার জন্যই বহুল প্রচলিত এবং ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে প্রাচীন, মেলোড্রামাকে ব্যবহার করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, এই মেলোড্রামার ব্যবহার যখনই ঘটছে তখন কোন না কোন বক্তব্য প্রকাশ হচ্ছে। মনে হচ্ছে, শিবাংশুদা বা কল্লোলদা মেলোড্রামাকে যেভাবে দেখছেন আমি পুরোপুরি সেইভাবে দেখছি না। ঐতিহ্যের সাথে বা প্রাচীন এপিক মনোভাবের সাথে যুক্ত হয়ে থাকার অংশ হিসেবেই ঋত্বিক মেলোড্রামাকে ব্যবহার করেছিলেন এটা না বলে আমি তাঁর সিনেমায় মেলোড্রামার ব্যবহারকে দেখতে চাইছি পাশ্চাত্যর অতি-আধুনিক নন্দনতত্বর প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে।
  • kallol | 220.226.209.2 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৪:১৮484440
  • নাহ। বোঝা গেলো না। মেলোড্রামাকে মেলোড্রামা হিসাবেই ব্যবহার করে বিযুক্তি তৈরী করা, বোঝা গেলো না।
    একবার বলছেন - ইহা কল্পিত গল্প নহে, আবার বলছেন - গল্পটি কল্পিত, কিন্তু থিসিসটি বুঝুন। কোনটা ধরবো?
    যেসব চড়া ও স্টাইলাইজড অভিনয়, সিচুয়েশন উনি সৃষ্টি করেছেন, তাতে মানুষ involvedই হয় alienate করে না। সেটার মধ্য দিয়ে একটা মেসেজ তৈরী হয়, সেটা communicateও করে। নীতা কাশতে কাশতে রক্ত উঠে আসে রুমালে। অনিলের হাতে রুমাল ভাঁজ হওয়া রক্তমাখা রুমাল। আর ক্যামেরা হঠাৎ করে ছ্যাঁচা বেড়ার ঘরটি ছেড়ে আকাশে উঠে যায়, গোটা কলোনীর উপর দিয়ে প্যান করে চলে। ব্যক্তি নীতা নয় নীতাদের ক্ষয় রোগ, সারা সমাজের ক্ষয়রোগ...............। কিন্তু এখানে alienation কোথায়?
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৫:০৭484441
  • কল্লোলদা,
    আমার মনে হয় সৈকত যেটা বলতে চাইছেন সেটা হচ্ছে alienation from the narratives। কারণ, যখন শিল্পী বলছেন যে তিনি দর্শককে 'ধাক্কা' দিতে চাইছেন বা hammer করতে চাইছেন, তার মানে তিনি তাদের আখ্যানের আরামদায়ী গৃহকোণ থেকে বার করে রোদজলবৃষ্টিঝড়ের নিষ্ঠুর নিসর্গের মধ্যে ফেলে দিতে চাইছেন। তিনি এটা বোঝাতে চাইছেন এই বিপর্যয় বা বিড়ম্বনা একটি গল্পের চরিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, এ তোমার পাপ, এ আমার পাপ। তুমি হল থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজেকে এই দায়িত্ব থেকে মুক্ত করতে পারোনা। আমাদের দেশের যে নীতিশাস্ত্র, সেখানে এই তাড়নাটিকে শাশ্বত স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এমন কি এক জীবনে এই পাপ থেকে মুক্ত হতে না পারলে 'পরজন্মে' তোমাকে এটা বহন করে বেড়াতে হবে। অঙ্ক মেলাবার জন্য 'পরজন্ম' বা 'জন্মান্তর' নামক এক্স ফ্যাক্টরকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই পাপ আসলে কী? একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে তুমি যখন এক জন্মে তোমার প্রতি সমাজসংসারের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছোনা, তখন তোমাকে আরও জন্ম নিতে হবে এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য। বুদ্ধজাতকের গল্পের কথা ভাবুন, পরে যেটাকে সনাতন ধর্মেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে গীতা, ভাগবতে। সেখানে আমরা দেখি সমাপতনের কী চূড়ান্ত ঘনঘটা। কেউ যদি অন্যায় ভাবে একটি মৃগবধ করে তবে 'পরজন্মে' তাকে মৃগ হয়ে জন্মগ্রহণ করে নিহত হতে হবে। এই চক্রবৎ পরিবর্তন্তে বা সেই বিমল মিত্রের উপমায় 'যমুনাকি তীর' বার বার ফিরে ফিরে আসবে এটাই ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের ঐতিহ্য । ভারতীয় নন্দনশাস্ত্র তৈরিই হয়েছিলো এই নীতিশাস্ত্রকে 'ধাক্কা' মেরে বা hammer করে মানুষের মনে স্থাপন করার জন্য। এই ধাক্কা মেরে ইম্প্যাক্ট তৈরি করাই তো 'মেলোড্রামা'র উদ্দেশ্য, যা আমরা বারম্বার বিভিন্ন এপিকের মধ্যে পাই । ঋত্বিক তো সেই কাজই করেছেন। ব্যক্তির ক্ষয়রোগ ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না , তা সমগ্র সমাজের ক্ষয়রোগের অংশ। দর্শকও তার থেকে অব্যাহতি পাবে না। নীতিশাস্ত্র তো এই কথাই বলে। এই রোগের জীবাণু দ্যাবাপৃথিবীতে একভাবে প্রভাবী হয়ে রয়েছে ।

    ক্যামেরা প্যান করে পৃথিবী থেকে আকাশের দিকে চলে যায়। আর কীই বা করতে পারে....?
  • kallol | 220.226.209.2 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৬:১৭484442
  • শিবাংশু।
    ঐত্তো। তুমি যে বিচ্ছিন্নতার কথা বলছো, সেটা কদাপী ব্রেখ্‌শটিয় বিচ্ছিন্নতা নয়। সেটি পশ্চিমী মতে মেলোড্রামা। যে বস্তুটির প্রতি ব্রেখ্‌শট সায়ের বিরাগ প্রকাশ করে গেছেন। যাকে উনি বলছেন জড়িয়ে পড়া। দর্শক/অভিনেতা/পরিচালক যদি সৃষ্টির মধ্যে জড়িয়ে যায়, তবে সে বাইরে থেকে সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখবে কি করে? আর সৈকত ও আপাত:ভাবে ঋত্বিক যা বলছেন সেটা ব্রেখ্‌শটিয় বিচ্ছিন্নতা। দুটোকে মেলানো যায় কি?
    এখানে স্রষ্টা সৃষ্টি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিতে পারেন। ব্যাস মহাভারতকার হয়েও মহাভারতের একজন চরিত্রও বটে। তারপরেও তারই পরিবারের কথা নির্মোহভাবে বলতে পারেন। বাল্মিকী রামায়ণের স্রষ্টা হয়েও তারই একটি চরিত্রও বটে, যিনি লব-কুশকে রামায়ণ গান গাইতে পাঠান রামের কাছে। এই যে থেকেও না থাকা - এটা ভারতেই সম্ভব। হোমার আর যাই হোন ইলিয়ড বা অডিসির চরিত্র নন। আর এখানে বারবার করে স্রষ্টা ভনিতায় আসেন সৃষ্টির অংশ হতে ও তার থেকে বিচ্ছিন্ন হতেও।
    মহাভারতের কথা অমৃত সমান / কাশীরাম দাস ভনে শুনে পূণ্যবান বা কহতো কবীর শুনো ভাই সাধো............
    আখ্যানটি আমার নয়, আমি বয়াতী মাত্র। আখ্যানটি অমৃত সমান, যে শোনে সে সাধু বা পূণ্যবান - আমায় দিয়ে বলানো হলো মাত্র। এইভাবে রস ও রসভোক্তার মধ্যে সেতু বেঁধে স্রষ্টা নিজেকে অকিঞ্চতকর বলে বিচ্ছিন্ন করে নেন।

  • PT | 203.110.243.23 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৬:৫২484443
  • ঋত্বিক কি আদৌ সমালোচক তৈরি করতে চেয়েছিলেন? নাকি নিজের চিন্তা-ভাবনা দিয়ে দর্শককে আবিষ্ট করতে চেয়েছিলেন? তখন তো ছিন্নমূল মানুষের আশ্রয় খোঁজার সময় - মাথার ছাদ এবং রাজনৈতিক তত্ব, দুটই। তখন দল পাকিয়ে থাকাটাই প্রত্যাশিত।

    সিনেমার থেকে আরও শক্তিশালী মাধ্যম পেলে সিনেমাকে ""লাথি মেরে"" চলে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন ঋত্বিক। নিজের কিছু কথা বলার জন্যেই তো তাঁর সিনেমা তৈরি করা - সেটি তাঁর কাছে ভাব প্রকাশের একটি মাধ্যম মাত্র।

    তাহলে তিনি দর্শককে তাঁর সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন কেন?
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:১৫484444
  • কল্লোলদা,
    একেবারে ঠিক। আমাদের এপিকে narratornarrative এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে দুজনকে আলাদা করতে গেলে পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো হয়ে যাবে। বহুস্তর সভ্যতার এটাই বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সৈকতের লেখায় আমার মনে হয়েছে তিনি পশ্চিমী narratives ধারণাটি নিয়েছেন। আমারও ধারণা ব্রেশটিয় বিচ্ছিন্নতার পরিভাষায় ঋত্বিককে হয়তো ধরা যাবেনা। PT যেমন বলেছেন।
  • saikat | 202.54.74.119 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:৪৪484445
  • এ:, অনেক কিছু লেখা হয়ে গেছে। আমি একটু যোগ করি।

    হাফ-কুকড ধারণা হলেও হতে পারে।

    ঋত্বিক থেকে ব্রেশ্‌ট-এ পৌছন গেছে। আরও একটু পেছোই। স্তানিশ্লাভস্কি। নাটকের অন্যতম সেরা থিওরেটিসিয়ান। ন্যাচারাল অভিনয়, ন্যাচারাল সেট-সেটীংস ওনার নাট্যধারণার প্রধান বৈশিষ্ট্য। মেলোড্রামা সম্পূর্ণ বর্জনীয়। উপরন্তু স্টেজের তিন দেওয়াল ছাড়া অদৃশ্য একটা চতুর্থ দেওয়াল তৈরী করা হোল দর্শক আর অভিনেতার মাঝে। দর্শক দেওয়ালের ওপাশে একটুকরো রিয়ালিটি দেখবে।

    ব্রেশ্‌ট ওনার নাটকে দুটো জিনিস ভাঙার কাজ করেছিলেন। প্রথমত, নাটকে তৈরী হওয়া ক্যাথারসিসকে ভাঙা, যাতে দর্শক চরিত্রগুলোর সাথে একাত্ম না হয়ে যায় এবং যা ঘটছে সব কিছুকে অপরিপর্তনীয় না ধরে নেয় এবং দ্বিতীয়ত, স্তানিশ্লাভস্কির তৈরী করা চতুর্থ দেওয়ালটাকে ভাঙা। এর জন্য নানারকম প্রপস ব্যবহার করা হয়েছে - অভিনেতা এগিয়ে এসে দর্শকদের বলে যায় "ওহে তোমরা নাটক দেখছ, ভুলো না কিন্তু", উঙ্কÄল আলোর ব্যবহার, প্ল্যাকার্ডের ব্যবহার ইত্যাদি। এর সাথে কিন্তু মেলোড্রামা ও গানের ব্যবহারও করেছেন। পরিমানমত। মেলোড্রামাকে স্তানিশ্লাভস্কির মত সম্পুর্ণ বর্জন না করে, যদি সেই মেলোড্রামা নাটকের বক্তব্য পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, তাহলে সেটাও করেছেন। "ককেশিয়ান চক সার্কল", এপিক থিয়েটারের একটা প্রধান নিদর্শন, কিন্তু কোইনসিডেন্সে ভর্তি। এগুলো কিন্তু বাদ দেন নি। মনে হয়েছিল, যে দর্শকদের জন্য নাটক করছেন তাদেরকে নিজের বক্তব্য বোঝানোর জন্য এটাই দরকার। এবং গান। অপেরা মাধ্যমটাকে নিজের মত ব্যবহার করেছেন, গান গুঁজে দিয়েছেন। এতসব করার ফলে যেটা হয়েছিল, ব্রেশ্‌ট-এর আশা মতো, সব নাটকের ক্ষেত্রে এরকম ঘটেনি যে দর্শকরা প্রচন্ড যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে নাটকটা বিচার করে, তারপর হল ছেড়েছে। সেই সময়ের "মাদার কারেজ" নাটকে করা প্রধান অভিনেত্রীর অভিনয়ের সাথে কিন্তু দর্শক emotionally যুক্ত না হয়ে পারেনি। এটা কিন্তু হওয়ারই কথা। মহৎ শিল্পকর্মের গূণই এই যে দর্শক সম্পুর্ণ empathyহীন ভাবে সেটার রসগ্রহণ করতে পারে না।

    আর একটা দিক দেখুন। ধরুন, গ্যালিলিও নাটকটা যেখানে গ্যালিলিও তার মতামত ফিরিয়ে নেবে। এটা কিন্তু একটা মেলোড্রামাটিক দৃশ্য, কিন্তু ফল হয় উলটো। এটা কিন্তু দর্শককে alienate করে, স্টেজে যা ঘটছে সেটার থেকে নয় , কিন্তু চরিত্রটার থেকে তার যা চাহিদা যে গ্যালিলিও খুব সাহসী আচরণ করবে, নায়কে পরিণত হবে, এই আশাটা ধাক্কা খায়। দর্শক তার চাহিদাটা থেকে alienated হয়। এটা কিন্তু আরও বড় উদ্দেশ্য। কারণ, এরপর তো সেই বিখ্যাত ডায়লগ। এবং এর ফলে দর্শক বুঝতে পারে আসল সমস্যাটা কোথায়। গ্যালিলিও-র ভেঙে পড়ার চেয়েও বড় হয়ে ওঠে ঐ আসল সমস্যার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ। অর্থাৎ ব্রেখটের নাটকেও কিন্তু মেলোড্রামা সম্পূর্ণ বর্জিত হয়নি। মেলোড্রামার ব্যবহার করা হয়েছে, নাট্যকারের বিশেষ বক্তব্য বোঝানোর জন্যই। মেলোড্রামার অতিপ্রকোপ কমানো হয়েছে যাতে দর্শক শুধুই তার মধ্যে ঢুকে না যায়। এবং alienation-এরও রকমফের আছে, ব্রেখটের নাটকেই এবং সেই alienation দর্শককে সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করা তো নয়ই।

    তো আমার বক্তব্য এটাই যে ঋত্বিকও কিন্তু (ব্রেখটের মতই) মেলোড্রামাকে ব্যবহার করছেন। গান ব্যবহার করতেও কোন অসুবিধে নেই, lyric থেকে শুরু করে যা কিছুই ব্যবহার করতে পারেন, বন্ধু পরিচালকদের মধ্যে যে অনেকেই গানের ব্যবহার "নফরৎ" করেন, কিন্তু নিজের সিনেমায় যে গানের ছড়াছড়ি সে কথাও জোর গলাতেই বলছেন। সুতরাং নিজের বক্তব্য সোচ্চার ভাবে বলতে যা "অস্ত্রের" দরকার হয়, সবই ব্যবহার করবেন, এই রকমই বক্তব্য। এই সব পড়েশুনে মনে হয়, এই সব ফর্মগুলো ব্যবহারের মধ্যে একটা ব্রেশ্‌টীয় প্রভাব ছিল। কিন্তু ব্রেখটের নাটকের মতই এমন ঘটে না যে দর্শক শিল্পের আবেদনে ভেসে যান না। একই সাথে চরিত্রর সাথে একাত্ম বোধ করে আবার "আই অ্যাকিউজ"-এর মত নাটকীয় মূহুর্তে একটু থমকে যায়, কারণ আঙুলটা তার দিকেই তোলা আছে।

    এই সব আর কী !
  • Nina | 12.149.39.84 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:৪৫484446
  • এইখানে এই বিদগ্‌ধ জনের আসরে কথা বলার ধৃষ্টতা করিনা--শুধু শুনি সবার কথা--আর শিখি।
    আমার সাদামাটা মনে একটা কথা তবু বলে যাই--কাল আবার বহুদিন পর ' সুবর্ণরেখা" দেখলাম--
    সবশেষে ঐ তিনটে লাইন
    মানুষের জয় হোক
    নবজাতকের জয় হোক
    চিরজীবিতের জয় হোক

    অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম-----এত ভাল একটা ক্ষণকে আঁকড়ে ধরে।
  • kallol | 220.226.209.2 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:৫৭484447
  • আসলে ব্রেখশটিয় বিযুক্তির ধারণা নিয়ে কিছু ভুল বোঝা আছে। ব্রেখশট মনে করছেন দর্শক সৃষ্টির সাথে একাত্ম হয়ে গেলে তার পক্ষে সৃষ্টিকে নিজের বিচার বুদ্ধির ছাঁকনিতে ছেঁকে গ্রহন করার ক্ষেত্রে বাধা হবে। তাই দর্শক যাতে তাঁর বিচার বুদ্ধির প্রয়োগ করতে পারেন তার জন্য সৃষ্টির ভিতরেই বিচ্ছিন্নতার উপাদান ঢুকিয়ে রাখতে হবে, যাতে দর্শক চিন্তা করার অবকাশ পায়।
    কিন্তু সেটা পশ্চিমের পক্ষে গ্রহনযোগ্য হলেও আমাদের মতো বহুত্ববাদী সভ্যতায় তা দুর্বোধ্য আঙ্গিক হয়ে যায়। কারন আমাদের রসগ্রহনের ধারনাই পশ্চিমের চেয়ে আলাদা। তাই আমরা সৃষ্টির সাথে একাত্ম হয়েও তার বিরোধাভাস গড়ে তুলতে পারি। অনেকটা শত্রুভাবে ভজনার মতো।
  • PT | 203.110.243.23 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৯:৫৪484449
  • মনে হচ্ছে যে ঋত্বিকের ব্যক্তিজীবনটাকে বাদ দিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে আলোচনা করলে একটা মস্ত গলদ রয়ে যাবে। ব্রেখশটিয় বিযুক্তির কথা জানি কিন্তু তাঁর ব্যক্তিজীবনের কথা জানি না। কিন্তু ঋত্বিক তাঁর স্ত্রীকে চিঠি লিখে তলায় সই করার বদলে শুধু লেখেন-"ঘৃণা"। কিংবা যুক্তি-তক্ক-গপ্পের প্রিমিয়ারে ছবি শুরুর অনেক পরে ঘোর মাতাল হয়ে হলে ঢুকে চীৎকার করে বলছেন -""কিস্যু হয়নি""। আর কজন ভারতীয় শিল্পী এমন অতিনাটকীয় জীবন-যাপন করেছেন? মোৎজার্টের শেষ জীবনের সৃষ্টি আর সেই সময়ের অবক্ষয়ী জীবন যাপনের সঙ্গে তুলনা করলে ব্যাপারটা খানিকটা বোঝা যাবে। কিংবা ভ্যান খখ - কান কেটে পাঠালেন প্রেমিকাকে - সেইরকম।

    কাজেই ঋত্বিকের সৃষ্টিতে অতিনাটকীয়তা অতি অবশ্যই আসবে। সেটাই ঋত্বিকের স্বাভাবিক সৃজন ছন্দ!!
  • SUVRA BHATTACHARYA | 217.212.230.88 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:৪৩484450
  • কবিরে পাবে না তার জীবনচরিতে! বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ. তবু পাঠক কবি জীবনের অন্দরে কবি ও কাব্যের সামঞ্জস্য সন্ধানে ব্যাপৃত হয়. ঋত্বিকের জীবন ও সিনেমা তেমনি তাঁর ঋত্বিক হয়ে ওঠার এক কাহিনী! সেই কাহিনী যদি তাঁর সৃষ্টিকে আমাদের অনুভবে পূর্ণতর করে তোলায় সহায়ক হয় তাহলে
    যেতে হবে তার জীবনীর কাছে. কিন্তু সাবধান
  • SUVRA BHATTACHARYA | 217.212.230.88 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:৪৪484451
  • কবিরে পাবে না তার জীবনচরিতে! বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ. তবু পাঠক কবি জীবনের অন্দরে কবি ও কাব্যের সামঞ্জস্য সন্ধানে ব্যাপৃত হয়. ঋত্বিকের জীবন ও সিনেমা তেমনি তাঁর ঋত্বিক হয়ে ওঠার এক কাহিনী! সেই কাহিনী যদি তাঁর সৃষ্টিকে আমাদের অনুভবে পূর্ণতর করে তোলায় সহায়ক হয় তাহলে
    যেতে হবে তার জীবনীর কাছে. কিন্তু সাবধান
  • SUVRA BHATTACHARYA | 217.212.230.88 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২২:০৫484452
  • কারণ স্রষ্টার জীবনীর দিকে ঝোঁকটা যদি বেশি পড়ে যায়
    তাহলেই সৃষ্টির যে নিজস্ব সত্তায় উদ্ভাসন, সৃষ্টির নিজস্বতার যা স্রষ্টাকে ছাড়িয়ে যায় এগিয়ে, সেই খানে আমরা পৌঁছাতে পারিনা.
    তাই কোমলগান্ধার সম্পূর্ণ দেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে ঋত্বিক যদি আমাদের চেতনা আচ্ছন্ন করে রাখেন!

    কোমলগান্ধারের একটা নিজের ভর আছে!
  • ridhdhiman | 108.194.169.197 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১২:৩৯484453
  • কোমলগান্ধার দেখলাম | পোষালো না | যেমন ঋত্বিকের অন্যান্য ছবি | শিবাংশু লিখলেন , অনেক কিছু খুব উচ্চকিত , হালিউদ ঘরানার তুলনায়| এই 'উচ্চকিত' পনা তাকে অন্যভাবে নিতে হবে , একটা আলাদা ভাষা , মিথ ফিথ জড়িয়ে আছে, দেশজ ভঙ্গি ইত্যাদি .
    সেই পয়েন্ট টাকে এস্টাবলিশ করতে থেকে এল ভারতবর্ষে নারী মূর্তির ভালুপ্‌শাস্নেস - আমাদের সব কিছু একটু বেশি বেশি, এই আধিক্য একটা আলাদা ঘরানা, খারাপ ভালো কিছু নয়|

    আমাকে একটা কথা যুক্তি দিয়ে বোঝাবেন? - রং দে বাসন্তী বা কহু না পর হ্যা ও কিন্তু ওরকম | অনেক গান , দেশজ মেটেরিয়াল মিলে মিশে একটা ফোক-টাইপ যাত্রাপালা তৈরী হয়. আর তার সাথে উচ্চকিত অভিনয় | আমি রিত্তিকের ছবির সাথে এটার কোন তফাত পাই না. তফাত আছে কি? একইভাবে 'উচ্চকিত' সাহিত্য র প্রসংগ এসে যায়| গাদ্‌গাদে কবিতা, আর জীবনাননদ আলাদা ঘরানার কিন্তু দুটৈ নিজের দিক থেকে দারুন বলবেন ?
    আমি শিল্প ফিল্প বুঝি না - একটা জিনিস জানি, কোন কিছু দাগ কেটে বলে দেয়া বুদ্ধি খাটানোর সুযোগ দেয় না | তবে শিল্প তো রিডল নয়, যে বৌধিক চ্যালেঞ্জ তাই আসল | এটা মানি. তাই ভাল শিল্প খারাপ শিল্প বলছি না| তবে এটা বলছি যে রিত্তিকের ছবি অন্য বলিউডি ছবির ইকুইভেলেস্ন ক্লাসে আছে | শুধু আ সানাম যা সানাম এর বদলে দেশভাগ নিয়ে ডায়ালগ , কিন্তু একই ট্রিটমেন্ট|
  • Ishan | 117.194.45.42 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৫:৫৮484454
  • এই যে
  • saikat | 202.54.74.119 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:১২484455
  • না:, কল্লোলদা, টইটা আর একবার তুললাম। আপনি প্রথম দিকে লিখেছিলেন যে ঋত্বিক ঘটক বলতেন যে ব্রেখটের থিওরী ভারতে প্রয়োগ করা যাবে না। এটা ঠিক কোথায়, কীভাবে বলতেন তার কোন তথ্য দিতে পারবেন? আসলে আমি ঋত্বিক ঘটকএর নাটক-সিনেমা নিয়ে যাবতীয় লেখালেখি, সাক্ষাতকার ইত্যাদি উল্টেপাল্টে দেখছিলাম। সেখানে দেখলাম, ব্রেখটকে নিয়ে গোটা একটা লেখা ছাড়াও অন্যান্য লেখাতেও একাধিক বার ব্রেখটের উল্লেখ করছেন। সেই গণনাট্য সংঘের খসড়া থেকে শুরু করে নিজের সিনেমা এবং সমসাময়িক সিনেমা প্রসঙ্গে লেখায় ব্রেখটের কথা আসছে। এর মধ্যে "সুবর্ণরেখা" নিয়ে যে উদ্ধৃতিটা দিয়েছিলাম , সেটা থেকে ২-টো লাইন বাদ গেছিল। সেখানে লিখেছেন যে উনি নিজে এবং ওনার পেশার আরও কেউ কেউ ব্রেখটের মতই কিছু একটা করতে চাইছেন। সুতরাং ঋত্বিকের চিন্তাভাবনায় ব্রেখট ভালমতই ছিল বলে মনে হয়। বিশেষ করে চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকের একজন বামপন্থী আর্টিস্ট হিসেবে ব্রেখটের প্রভাব থেকে দূরে থাকা বেশ অসুবিধাজনক।এই প্রসঙ্গেই আমার "থীসিস"টা নিয়ে আসি । :-) ব্রেখটের তঙ্কÄকে যেভাবে গোদারের সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে অথবা মৃণাল সেনের সিনেমায়, সেখানে ব্যাপারগুলো খুব স্মার্ট হয়েছে কিন্তু খুব গভীর কিছু হয়েছে কিনা সেই ব্যাপারে আমার অন্তত সন্দেহ আছে। বড় কোন শিল্পসৃষ্টি করতে হলে, দর্শককে ক্রমাগত alienate করলে চলে না। ঋত্বিক সিনেমায় একই সাথে দর্শককে ইমোশনালি যুক্ত করা আবার ভাবানো, এই দুটোই করতে চেয়েছিলেন। এবং মেলোড্রামা ও কোইন্সিডেন্সের ব্যবহার সেইজন্যই ঋত্বিকের সিনেমার ভাষা।

    এই রকম মনে হয় আর কী !
  • SUVRA BHATTACHARYA | 80.239.242.185 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:৪৯484456
  • সৈকতের ভাবনার সাথে সহমত! সত্যই তাই, প্রকরণ যাই হোক অনুষঙ্গ যাই হোক ঋত্বিকের শিল্প সাধনার উদ্দশ্যই ছিল দর্শককে জীবনের সাথে শিল্পের সাথে সময়ের সাথে সম্পৃক্ত করা এবং বিষয়টি ভাবানো!

    সেই কাজে তিনি যে পথ নিয়েছন সে পথেই তাঁর সিদ্ধি!
  • kallol | 119.226.79.139 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১২:০৯484457
  • সৈকত। না, আমার কাছে কোন তথ্য প্রমাণ নেই। আমাদের এখানে ব্রেখ্‌শট হবে না এটা ঋত্বিক বলতেন ৭৬-৭৭এ। তার কিছু আগে মৃণাল সেন কোরাস করেছেন। তাতে প্রচুর ব্রেখ্‌শট ও গোদারীয় অনুশীলন ছিলো। মানুষ বেশ ভেবলে গেছিলেন। মানুষ বলতে সে সময়ের মৃণাল-ঋত্বিক-সত্যজিত দেখা পাব্লিক। সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিলো বিজনদার রিহার্সলের আড্ডায়। তখন ঋত্বিক ঐ কথা বলেন। যে দেশে মানুষ একই নাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মোটামুটি একই সুরে গেয়ে গেলে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে, সেখানে বিযুক্তি সম্ভব নয়। একই কথা উৎপল দত্তও বলতেন।
    আপনার শেষ লাইনের সাথে একমত। মেলোড্রামা ও কোইন্সিডেন্স (পাশ্চাত্য মতে)কে, ঋত্বিক তার ফিল্মের ভাষা হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। তবে আপনি তা ব্যবহারের যে পদ্ধতির কথা বলছেন, তা নিয়ে ভাবার আছে। হতেও পারে ঋত্বিক কোথাও একটা সিনথিসিস বার করে এনেছিলেন।
  • i | 124.171.62.97 | ১৬ অক্টোবর ২০১১ ১০:১৬484458

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন