এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পুজোর ডায়েরি: ২০১১

    chanDaal
    অন্যান্য | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ | ৭৮০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • siki | 123.242.248.130 | ১৪ অক্টোবর ২০১১ ১৩:১৭485005
  • আমি মোটেই ফুট খাওয়াই নি। আমি এত ভুলভাল জিনিস খাওয়াই না। :(
  • a | 125.16.135.194 | ১৪ অক্টোবর ২০১১ ১৩:২৪485007
  • আরে লিখে ফেলেন লিখে ফেলেন, ল্যালাদের কাছে আবার বিনয় কেন?
  • PT | 203.110.247.221 | ১৪ অক্টোবর ২০১১ ১৩:২৪485006
  • কোলাঘাট অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে কাশফুল দেখেতে পাবেন - ট্রেনে বসেই। ৩৪ বছর আগে আরও বেশী ছিল, ৩৪ বছর ধরেও ছিল, এ বছরেও আছে।
  • Netai | 121.241.98.225 | ১৪ অক্টোবর ২০১১ ১৩:৫৮485008
  • আমি তো এট্টুশখানি ঠ্যাং ছুঁয়েছি। তেমন জোরে টানাটানি করিনিতো কই?

    বিজয়ার প্রনাম কুমুদি।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৪ অক্টোবর ২০১১ ১৭:৩০485009
  • আজ একেবারে ওক্যা-র পাশটি দিয়ে ঘুরে এলাম, মন আনচান করে উঠল, তবু ঢোকা হল না।

    ইসে, আমাদের কলিভাটের ছবি ম-মামী তুলেছিল না? ওগুলো আপলোডানো যাবে কোথাও?
  • shrabani | 117.239.15.67 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১১:৫৪485010
  • দূর্গা অষ্টমীর সকাল। এখনও এত বছর বাদেও বম্বে রোডে গাড়ি এলেই একটা চাপা আনন্দ চোখে মুখে খেলতে থাকে, মন কেমন গাড়ির আগে ছুটে ছুটে যেতে চায়। মনের কথা টের না পেলেও ড্রাইভার গাড়ি ছুটিয়েছে তীরগতিতে তার আপন তাগিদেই। কলকাতায় ফিরে আবার তাকে ঠাকুর দেখানোর খেপ শুরু করতে হবে, দিন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতভর। এই গাড়িতে আমরা দুজন মহিলা, সঙ্গে কতগুলো কচিকাঁচার দল, অষ্টমীর দিনে কেন ডিমের চপ খাওয়া যাবেনা তা নিয়ে জোর তর্ক বিতর্ক চলছে তখন দুই জেনারেশনে, তর্কের ফাঁকে ফাঁকে নানা স্মৃতিচারণ বিশেষ করে যখনই কোনো বিশেষ স্মৃতিঘেরা জায়গা আসছে, কোলাঘাট, রূপনারায়ণ তীরের বাংলো!
    এসবের মাঝে হঠাৎ একজায়গায় এসে ড্রাইভার ব্রেক কষে সজোরে, "এবার কোন দিকে যাব?"
    কলকাকলি থামিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি দুইদিকে দুই রাস্তা গেছে বেঁকে, কিন্তু এরকম কোনো প্রশ্নচিহ্ন তো আমাদের পথে আসার কথা নয়! ছোটোরা চুপ, বড়দের মধ্যে একজন বাড়ির বউ,সে পথঘাট অত ভালো চেনেনা যদিও আসে প্রতি বছর, কিন্তু অন্যজন? যে কিনা সেই কোন জন্ম থেকে এ পথে আসছে, এই রাস্তার প্রতিটি ধুলোকণা শিরায় শিরায় জড়িয়ে সে বেঁচে থাকে, তার কী করে ভুল হয়?
    না ভুল হয় না, তাই ড্রাইভারকে সে বলে গাড়ি ঘোরাতে একটু বিরক্ত হয়ে, এত জোরে গাড়ি চালাচ্ছে ছেলেটা, কোথায় যেতে হবে ঠিকঠাক জানেনা তো আগে থেকে জেনে নিতে কী হয়েছিল!

    যাইহোক এমন দিনে বিরক্তি, রাগ সবই এই নীল আকাশের সাদা মেঘের মতো, ক্ষণস্থায়ী। বেশীদুর এসে পড়িনি, মিনিট পাঁচেক উল্টোপথে চলার পরেই এল সেই চিরচেনা মোড় যেখান থেকে বাড়ির রাস্তায় ঢুকবে গাড়ি। কিছুটা চলার পর কুচোগুলোর কথায় খেয়াল হল, তাইতো, চপের দোকানও তো পিছনে ফেলে আসা হয়েছে! ছোটরা ক্ষুব্ধ, আমরা শান্তি পাই, এমনিতে ডিমের চপ খাওয়া নিয়ে একটা টানাপোড়েন তো চলছিলই, পৌঁছে আবার অঞ্জলি দেওয়া আছে। চপের দোকান তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না, খেলেই হবে আশ মিটিয়ে ফেরার দিনে!
    বাসস্ট্যান্ডের চেনা ময়রা দোকান থেকে প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট ভরে ভরে (মুখে শালপাতা বাঁধা মিষ্টির হাঁড়ির দিন কবে যেন চলে গেল?) কমলাভোগ নেওয়া হল আর ছোটোদের চপের দু:খ আপাতত গরম মুচমুচে রসালো জিলিপীর রসে ডোবানো হল। লাল ধুলো, তেলচিটে গন্ধ, গাড়ির ধোঁয়া, জয়বাংলা (দোকানের নাম) সব মিলিয়ে এই জায়গাটার এতদিনেও কোনো পরিবর্তন নেই (ভাগ্যিস!) আর তাই কেমন এখান থেকেই শুরু হয়ে যায় সময় যন্ত্রে চড়ে ফিরে দেখার পালা।
    ফোন বেজে উঠল, বাজার থেকে ফুলকপি নিয়ে যেন ঢুকি নাহলে ছোলার ডাল বেগুন ভাজার সঙ্গে শুধু পনীরের তরকারি দিয়ে অষ্টমীর লুচি খেতে হবে। এই পনীর শব্দটা এদেশে দাঁড়িয়ে কেমন বিজাতীয় ঠেকে, নাআআ আ, শুধু পনীর, কিছুতেই নয়!

    অষ্টমীর দুপুরে ঘরে যদি ছাঁকা তেলে ফুলকপি ভাজার গন্ধ আর তার সাথে ছোলার ডালের ঘি গরম মশলার গন্ধ না মেশে, তাহলে পুজোর আমেজটাই যে আসবেনা! তাই ড্রাইভারের বেজার মুখের দিকে দৃকপাত না করে গাড়ি নিয়ে যাই বাজারের দিকে।

    সকাল দশটাতেই চড়চড়ে রোদ্দুর,বাসরাস্তার দুধারে বসা বাজার প্রায় ভাঙার মুখে। দুই মহিলায় নেমে পড়ি, গাড়িতে বসে ধুলো ধোঁয়ার গন্ধ যতই নস্টালজি তে ধুনো দেওয়ার কাজ করুক, রাস্তায় নেমে আর মুখে মাথায় চাপা না দিয়ে চলতে পারিনা। এদেশে কদিন আগেও বন্যার জল ছিল, আসার পথে রাস্তার খানাখন্দ কিছুটা মালুম দিয়েছে, সবজি বাজারে আবার তার প্রতিফলন, আকাশছোঁয়া দাম, শহরের চেয়েও বেশী। দাম হতে পারে, কিন্তু রূপ, গন্ধ সেসব আনাজের? হাতে নিলে মনে হয় যেন মাঠে জমিতে দাঁড়িয়ে আছি, বাজারে নয়। এই অবেলায় খালি একটি বউয়ের কাছেই ফুলকপি পেলাম,আর সবার শেষ। শুধু কেনা তো নয়, দুদন্ড গল্প, পুজোর দিনের কথা, আমাদেরই দেশের বউ, আমি যে এখানেরই মেয়ে!
    কী হিসেব করে ছটার জায়গায় আটটা নিতে হল, বুঝলাম না, বুঝতে চাইলামও না। ঐ কালো রূপ, হলুদ লাল ছাপা ন্যাতানো শাড়ি আটপৌরে করে পরা, রোদে ঘামে মেটে সিঁদুরে মাখামাখি লাল মুখে ছড়ানো হাসির ছটা। কত চেনা কত জানা একান্ত অথচ রোজের থেকে আলাদা, এ দৃশ্যের আনন্দ নিতে গিয়ে ফুলকপির তুচ্ছ দরদামের হিসেব কে আর করে!

    দেরী হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি পা চালাই গাড়ির দিকে, আরও কত জন বসে আছে পশরা নিয়ে, "পুজোর দিনে, নিয়ে যাও না দিদি।" ইচ্ছে থাকলেও, পুজোর বাড়ির খাওয়াদাওয়ার কী ব্যবস্থা হচ্ছে কিছুই জানা নেই, অবেলায় এসব নিয়ে কী করব, তাই হেসে পেরিয়ে যাই তাদের। শুধু একজায়গায় এসে থমকে যায় নজর। ময়লা চিটে ধরা শাড়ি, সরু পাড়টা সবুজ ছিল না নীল এখন আর বোঝা যায়না। সামনে পাতা ছেঁড়া প্লাস্টিকের ওপর রাখা খান ছয়েক চালতা। চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি ঘোলাটে দৃষ্টি, উদাস দুরের পানে, যেন এই পৃথিবীতেই নেই সে। রোদ, ঘাম,বাজারের শোরগোল কোনো কিছুই স্পর্শ করছে না তাকে, সামনের সুবেশা শহুরে ক্রেতারাও নয়।
    "মাসি কত দাম তোমার চালতার"? যেচেই কথা বলি। সঙ্গিনীর চোখ গোল গোল, "চালতা কিনবি? আমাদের বাড়িতে তো এসময় চালতার অম্বল হয় না। তোর দাদা কাল এত টমেটো কিনে দিয়েছে দিদিদের সাথে।" আমি তাকে পাত্তা দিই ই না।
    "দু টাকা", চোখের দৃষ্টি অমন, কিন্তু মুখের ভাষা যাকে বলে খরখরে, বিরক্তিভরা। কেন গোল কর সব,চালতা নিয়ে বাজারে বসেছে বলেই বাপু এসে কিনতে হবে এমন কিছু দিব্যি সে তোমাদের দেয়নি!
    একটা রেখে বাকী পাঁচটা তুলে নিই, দশটাকার নোটটা নিয়েও কোনো কৃতজ্ঞ করুণ দৃষ্টি নেই, অন্য নোটটা হাতেই রয়ে যায়। নিজের দেশে ফিরে আজকের দিনে মা অন্নপূর্না কে ভিক্ষে দিতে যাওয়ার ধৃষ্টতা করব এমন অধম মেয়ে আমি হতে পারিনা!

    এ বাজারে প্ল্যাস্টিক থলি করে সওদা দেওয়ার চল নেই,আর আমাদের কাছে বাজারের থলি নেই। তাই দুজনে দু হাত ভরে ফুলকপি আর চালতা ও আরও যেন কতকিছু, কতসুখ, কত আনন্দ বুকজুড়ে নিয়ে ব্যালান্স করতে করতে পথ চলি। পথের লোকে দামী শাড়ি, সালওয়ারে, সানগ্লাসে সজ্জিতা শহুরে মা লক্ষ্মীদের এহেন শোভাযাত্রা দেখে হাসি মুখে, নির্মল আনন্দে। পুজোর ঝকঝকে তকতকে নীল আকাশের মতই আমার গ্রামের লোকেদের, আমার নিজের লোকেদের সে দৃষ্টিতে কোথাও কোনো মলিনতার চিহ্ন দেখিনা!
  • byaang | 122.172.227.135 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১২:০০485011
  • শ্রাবণী, মন ছুঁয়ে গেল লেখাটা। আজকাল এত কম লেখ কেন? অপেক্ষায় থাকি যে!
  • pharida | 61.16.232.26 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১২:২৩485012
  • অসাধারণ! শ্রাবণীর লেখা একটা অন্যতম গর্বের জায়গা।
  • kumu | 122.160.159.184 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১২:৪১485013
  • একটি অসাধারণ ছোটবেলা পেয়েছিল বলেই শ্রাবণী শ্রাবণী হয়েছে।
    হায়,আমি যদি পেতাম,এতটা না হলেও একটু,অল্প একটু?
  • siki | 123.242.248.130 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১৩:০২485015
  • বল্লে হবে? দিল্লি যে -সে জায়গা নয়, হুঁ-হুঁ বাওয়া।
  • Netai | 121.241.98.225 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ১৩:২৮485016
  • শ্রাবণীদি যাস্ট অসা।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ২২:০৭485017
  • শ্রাবণী
    বলার জন্য কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছিনা---মন যখন এভাবে ভরে উঠে---মন জুড়ে তখন শুধু চুপকথাদের আনাগোনা!!!!

    দিল্লীতে তোমার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে খুউউউব!
  • titir | 128.210.80.42 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ২৩:৩৫485018
  • শ্রাবণী,
    বম্বে রোড, কোলাঘাট, রূপনারায়ণ তীরের বাংলো ফিরিয়ে নিয়ে যায় বড় চেনা যায়গায়। মন কেমন করতে থাকে।
    ঐ বাজার, রাস্তাঘাট, অন্নপূর্না সবাইকে চিনি। তোমার চোখ দিয়ে আবার দেখে নিলাম তাদের।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ২৩:৫৮485019
  • শ্রাবণী
    অন্যটার জন্যে ও হয়ে আছি হন্যে--:-))
    তাড়া দিচ্ছিনা---শুধু অশা করছি ওটার দেখা পাব :-))
    take your time :-))
  • Bratin | 117.194.100.76 | ২২ অক্টোবর ২০১১ ০৯:৫৭485020
  • শ্রাবণী দি,মন ছুঁয়ে যাওয়া, মন খারাপ করা লেখা।
  • shrabani | 59.94.96.237 | ২২ অক্টোবর ২০১১ ১০:৩৮485021
  • সবাইকে ধন্যবাদ, ব্যাং, নিনা, কুমু......লিখতে শুরু করেছি.....এখনো নবমী বাকি আছে আশাকরি:-)
    তিতির, এবার পুজোয় গিয়ে অনেকবছর পরে এমন কিছু জায়গায় গেলাম প্রায় বছর কুড়ি পরে..... তুমি তো বোধহয় আমাদের ওদিকেরই....
  • Bratin | 117.194.103.214 | ২২ অক্টোবর ২০১১ ১১:৪২485022
  • শ্রাবণী দি আমাকে ধন্যবাদ দেয় নি :-((
  • madhuchhanda paul | 14.96.213.235 | ২৪ অক্টোবর ২০১১ ২২:৫১485023
  • ছোটবেলা -১
    বিহারের মফস্বল সহরে জন্ম আর বেড়ে ওঠা । বাড়িতে অনেক ঘর, বারান্দা,উঠোন,ছাদ অনেক লোকজন, পুরণ জীর্ণদশাগ্রস্থ অনেক প্রবাসী, ভারতবর্ষ, শনিবারের চিঠি আর কিছু অচল পত্র ,সচিত্র ভারত। এই বইগুলো দিয়েই আমার ১০/১১ বছর বয়সে গল্প বই পড়ার শুরু । এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে ছিল কিছু জন্তু জানোয়ার ,একটা কালিন্দী নামের ভাল্লুক, চিলিম্পা নামের বাঁদরী আর একটা শেয়াল ,তার নাম মনে নেই।অসে থাকতো রান্নাঘরের সামনে উঠোনে একটা বিশাল উনুনের গর্তে ,উনুনটায় মনেহয় বছরে একবার আগুন পড়তো ,একটা বিশাল বড় হাঁড়িতে জল ফুটত তার ওপর । সামনের চোঙদিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে জমত অন্যপাত্রে , distilledwater হত বাড়ীতেই বাড়ীতে বেশকিছু ডাক্তার আর দুটো ডাক্তারখানার চাহিদা মেটা । শেয়ালটা উঠোনেই থাক , বাড়ীর অন্য কোথাও যেতনা ,মাঝে মাঝে রাতের দিকে গর্ত থেকে বেরিয়ে আকশের দিকে মুখ তুলে হুক্কাহুয়া করে ডাকতো । কখন যদি আমাদের পো কুকর উঠোনে গিয়ে পড়ত দুজনে সাঙ্ঘাতিক ঝটাপটি বেঁধেঁ যেত ,সে সময় ওদের আলাদা করা খুব শক্ত ব্যপার ছিল ।
    আর একটা দৃশ্য মনে পড়ছে , আমার এক জ্যাঠতুত দাদা গলায় একটা সাপ ঝুলিয়ে ( নির্বিষ ঢোঁড়া অথবা হেলে হবে নিশ্চয় ) ঠাকুর ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আর আমাদের এক মাঝবয়সী ,নিরীহ ,হাসিখুশি, রসিক জামাইবাবু ভেতর থেকে নানা সম্ভব অসম্বব শপথ করে চলেছেন যেমন "আমি তোর কেনা হয়ে থাকব , তোর চাকর হয়ে থাকব (,এবং আরও সেগুল বলা ঠিক হবেনা এখান।) ।অতুই এটাকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়েযা ভাই "।
    এটা আমার শোনা কথা ,দেখা নয়। আমার সবচেয়ে ডাকাবুকো জ্যঠামশায় কি উদ্দেশ্যে কেজানে একটা মাটীর হাঁড়ীর মধ্যে জ্যেন্ত কাঁকড়াবিছে জমা করছিলেন , একদিন দুপুরে আমাদের ঠাকুমা সেই বিপজ্জনক হাঁড়ী জলন্ত উনুনে বসিয়ে তাদের ভবলীলা সাঙ্গ করেন । কাচের লম্বা বাক্সে chemicale ডোবান ছোট মাপের ঘড়িয়াল দেখেছি ,যখন জ্যন্ত ছিল বাইরের উঠোনের বড়ো চৌবাচ্চায় থাকতো শুনেছি ।
  • shrabani | 124.124.86.101 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ১৬:০৯485024
  • দূর্গা নবমীর দুপুর:
    বেলা তিনটের সময় শেষ পাতটি উঠল। খিড়কী ঘাটে নামার পথের ধারে কলাপাতার স্তুপে আর আমগাছের তলায় মাংসের হাড় নিয়ে পাড়ার কুকুরদের কেঁউ কেঁউ ঝগড়ার কলরবে বিরক্ত হবার মত শক্তি টুকুও আর নেই বাড়ির মেয়ে বউদের। নীচে ঘরের বিশাল খাট জোড়া বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে সবাই, পুজোর আর খাওয়াদাওয়া জনিত কাজকম্মের পরে ক্লান্তিতে খোশগল্পেও উৎসাহ নেই কারো।
    যারা অবশ্য শুধু খাওয়ার কাজ করেছে বাড়ির সেই পুরুষকূল, ওপরের ঘরে বারান্দায় গ্যাঞ্জাম করে সিগারেটের ধোঁয়ায় দেশ বিদেশ সব উদ্ধার করছে, কিন্তু তা নিয়েও অন্যদিনের মত মহিলাদের মাথাব্যথা করতে দেখা যাচ্ছেনা। কিছুক্ষণ এই অবস্থায়, দু চোখে সবার নিদ্রাদেবী আগত প্রায়, ভগ্নদূত এল এক ছোট্ট মানুষের রূপে।
    "এই যে পিপি, গাড়ি আসবে চারটেয়, জেঠু তৈরী হয়ে নিতে বলল, গাড়িকাকু বেশীক্ষণ অপেক্ষা করবেনা, তোমাদের পরে তার আবার অন্য জায়গায় যাওয়ার আছে"।
    গাড়ি কেন, কিসের গাড়ি? এখন আবার কারা কোথায় যাবে?
    সকলেরই কাঁচা ঘুম চটকানোর উপক্রম, মাথায় ঢুকছেনা কিছুই। পিপি অবশ্য জেগেছে পুরোপুরিই এবং যদিও শোয়া অবস্থায় মুখের ভাব কেউ দেখতে পেলনা, গলার স্বরে যথেষ্টই অপরাধীর ভাবভঙ্গী। "মানে ঐ আর কী, প্রতিবারেই তো বাড়ির ঠাকুর ছাড়া আর কোনো কিছু দেখা হয়না, তাই ভেবেছিলাম এবারে একটু ঘুরতে যাব এদিক ওদিক।"
    এর পরে আর ঘুমিয়ে থাকা যায়! বড় দিদি বৌদিরা পুরোদমে জেগে হাঁইহাঁই করে উঠল, "আজকের দিনে ঘুরতে যাওয়া মানে ঠাকুর দেখতে যাওয়া? একটু পরেই সন্ধ্যে হয়ে যাবে, বাড়ির ঠাকুরের শেষ আরতি, হোমের ফোঁটা, শান্তিজল। আজ কেউ বাড়ি ছেড়ে বেরোয়, তায় আবার ঘুরতে? আক্কেল কী বাড়িতে রেখে এসেছিস, পাগল কোথাকার।"
    নানা সুরে, নানা ধরণের ধিক্কারপর্ব শুরু হয়ে গেল, তারই মধ্যে ওপর থেকে আর একদফা তাড়া, "তৈরি হও, তৈরী হও, গাড়ি এল বলে।"
    "তৈরী হও মানে, এখন কেউ কোত্থাও যেতে পারবেনা। সারাদিন যা গেল,কারুর এখন নড়ে বসার ক্ষমতা নেই।
    "কেন? যে গাড়ি ডেকেছে সে যাবে।" মীরজাফরের জাতভাইয়েদের তো অভাব নেই কোনোকালেই,কোনোদেশে। এদিনও তাদেরই প্ররোচনায় এরকম একটা নিষ্ঠুর রায় দিয়ে সবাই আবার শুয়ে পড়ল। উঠতে হল অপরাধীকে একা।
    "আমি একা যাব? কেউ অন্তত আমার সঙ্গে চলুক, আমি তো রাস্তাঘাটও চিনতে পারব না এতকাল বাদে।"
    এই করুণ আর্তিতেও কারোর মন ভিজলনা,উল্টে বিরক্ত সবাই।
    তবু কেউ কেউ বিরক্ত হয়েও সাড়া দিতে বাধ্য হয়, আদরের বোন ও ননদিনী বলে কথা, নাহয় একটা ভুল করেই ফেলেছে!
    "ঐ বাচ্চা গুলোকে নিয়ে যা। রাস্তা চেনার কী আছে, ড্রাইভার নিয়ে যাবে ঠিক। আমরাই বা কে অত রাস্তা চিনি, সবারই তো বছরে একবার আসা।"
    বাচ্চাদের মধ্যে তিনজন ছেলে ও একটি মেয়ে। মেয়েটিকে নিয়ে অসুবিধে নেই। সে পিপি যখন থেকেই কলকাতার মাটিতে নামে, তখন থেকেই পিপির আঁচল ধরা, যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাবে। ছেলেগুলো সজোরে আপত্তি জানায়, তারা এখানে আসে সকাল থেকে সন্ধ্যে সামনের মাঠে ফুটবল ক্রিকেট পেটাতে আর সন্ধ্যে হলে বাজি ফাটাতে। ঠাকুর দেখা ওসব কলকাতায় সারা হয়ে গেছে। এখানের সব পচা ঠাকুর, শেষ দিনে খেলা ছেড়ে ঘুরতে যাওয়াতে তাদের কোনো উৎসাহ নেই। শুধু আপত্তি নয়, ব্যাপার দেখে তারা যাকে বলে সেই বাড়ি থেকেই হাওয়া হয়ে গেল কোনো ঝুঁকি না নিয়ে, এমনকী গাড়ি এসে গেছে সেই খবরটা দিতেও আর কেউ বাড়িতে ঢুকলোনা।

    শেষমেশ বড় দাদা, বৌদি ও সবার বড় ভাইপোটি সঙ্গী হল কারণ বাড়িতে সে একাই, তার বয়সী সঙ্গী নেই, খুবই বোর হচ্ছে তাই রাজী হয়ে গেল, নতুন করে আর কত বোর হবে। তানানানা করে করে ফুলদিও বেরিয়ে পড়ল বোনের করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে। আর বাকী সবাই যাদের মানে নিয়ে যাওয়া যায় বা বড়রা ধরে পাঠিয়ে দিতে পারে সেসব বৌ মেয়েরা রান্নাঘর বাথরুম এধরণের নিরাপদ আড়ালের শরণ নিল এবং দলটি বাড়ির বার হয়ে গেলে তবেই আবার বেরিয়ে বিছানায় ফিরে গেল!

  • shrabani | 124.124.86.101 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ১৬:২১485026
  • বড় একখান গাড়িতে ঠুং ঠুং করে ছয় জন, দলটির মিলিত উৎসাহের ঘাটতি ড্রাইভার একাই পূরণ করে দেবার পণ করেই বোধহয় ঝমঝমিয়ে ডেক চালিয়েছে, তাতে এমন সব গান চলছে তা বাংলা ভাষার গান হলেও হতে পারে, ভোজপুরী হলেও ক্ষতি নেই এরকম ব্যাপারস্যাপার, মানে বেশ একটা ইউনিভার্সাল অ্যাপীল আছে গানগুলির!
    সদ্য অতিবৃষ্টির পরের রাস্তার যা অবস্থা তাতে না চাইলেও যাত্রীরা প্রায় গানের তালেই নাচতে নাচতে চলেছে। এই যাত্রাটির পরিকল্পনা যার মাথা থেকে বেরিয়েছে, ছেলেমেয়েদের সেই পিপির মাথা প্রায় ঝুঁকে পড়েছে বুকের কাছে, কারো দিকে তাকাতে পারছেনা, তাকালেই নানারকম দৃষ্টির সামনা করতে হচ্ছে। সেই সব দৃষ্টিতে করুণ ,রুদ্র, এরকম নানা রসের ধারা।

    গ্রামের চত্বর থেকে গাড়ি বেরোলে গুরুজন দাদাই প্রথমে পরিবেশটি একটু সহনীয় করতে উদ্যোগী হন। প্রথমে এমনিই শুরু হয়, এই শাবাজারের মোড়ে অমুকের দোকান ছিল আমাদের ছোটোবেলায়, সে পরে অমুক যুদ্ধে চলে গিয়েছিল। তারপরে অজান্তেই কখন কৌতূহলে উৎসুক কান,রাস্তার দুধারের নানা ইতিহাস, সেসব কোনোদিন কোথাও লেখা হয়নি, হবেওনা, কত অনামী লোকের নাম এসে পড়ছে, যাদের আর কেউ মনেই করেনা। পরিত্যক্ত মন্দির, বাজারের কোণ, যে শ্মশানের ধার এলে গা ছমছম করত একদিন, এখন সেখানে ধারে ধারে পরিস্কার হয়ে বাড়ি উঠছে। বাজার পোস্ট অফিস থানার মত শ্মশানও উঠে গেছে নতুন ঠিকানায়।

    বাসস্ট্যান্ডে দুটি নম নম ঠাকুরের প্যান্ডেল, পড়ন্ত বেলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের করুণ সুরে ঝিমোনো আকাশ বাতাস। সঙ্গীত মনকে চাঙ্গা যেমন করে তেমন সেরকম হলে উল্টোটাও হতে পারে, অবশ আবেশে উৎসাহী অল্পবয়সীদেরও গাছাড়া ভাব, এই ঠাকুর দেখতে কেউই গাড়ি থেকে নামতে রাজী হয় না। বাসস্ট্যান্ড হল সেই স্থান যেখানে একদিকে কলকাতা, যেদিক থেকে আমরা আসি ও অন্যদিকে মহকুমা শহর, এইদিকে কারোর আর বড় একটা যাওয়া হয় না, অথচ একসময় হত। দলবেঁধে সিনেমা দেখতে, বাবা মার সঙ্গে বাজার করতে বা ঠাকুর দেখতে অথবা কারোর বাড়ি দেখা করতে, নিমন্ত্রন রক্ষা করতে।
    ড্রাইভার কলকাতার দিকে যেতে বেশী আগ্রহী, ঐদিকে নাকি ভালো ঠাকুর হয়েছে। তার কিছু নমুনা আমরা আসার পথে দেখে এসেছি, প্যান্ডেলের ধারে বোর্ডে দক্ষিন ভারতের মন্দিরের নাম (না লিখে দিলে অবশ্য বোঝার উপায় ছিলনা) এবং শিল্পী, কলকাতা স্টাইলে। একটি বিশাল শিবমূর্তি (সেটিই প্যান্ডেল, শিবের পেটের মধ্যে দুর্গা। কোন মাথা থেকে এমন যুগান্তকারী আইডিয়া বেরিয়েছে সেটা আর খেয়াল করে দেখিনি।), এছাড়া ছুটছাট তাজমহল ইত্যাদি।

    আমরা না গেলেও, এদিককার লোকেদের মহকুমা শহরে যেতে হয় নিত্যদিনই, ভালো স্কুল, কলেজ, অফিস কাছারি, এছাড়া বাজার দোকান তো আছেই। তাই তারা অন্যদিকে যেতেই পছন্দ করে একটু মুখ বদলের আশায়, ড্রাইভারের দোষ নেই। এক্ষেত্রে আমরা তার সুপরামর্শকে অবহেলা করে উল্টোদিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সে বেশ অখুশী হয়েই গজ্‌গজ করতে থাকে। অবিশ্যি গাড়ির ভেতরের উদ্দাম গীতবাদ্যে তার অভিযোগের আওয়াজ চাপা পড়ে যায় অচিরেই।
    কিন্তু আমি একী দেখি! সেই রাস্তাটা যে রাস্তায় প্রায় বছর কুড়ি পরে আবার চলেছি, সেটা সেই সেরকমই আছে। রাস্তার লাল ধুলো, দুধারের ইউক্যালিপটাসের সারি আর দিগন্তবিস্তৃত মাঠের সবুজ সেই একই ভাবে আমাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে দেখে আনন্দে আত্মহারা। উঙ্কÄল মুখে পাশে সেদিনের সাথীর হাতে হাত রেখেই বুঝতে পারি সেও সেই এক কথাই ভাবছে। অন্যদের বিরক্তিকে পাত্তা না দিয়ে, জানালায় দুচোখ রেখে মনপ্রাণ ভরে নিতে থাকি দুপাশের রূপগন্ধকে। যেন মনে হয় এখুনি সেই মোড়টা আসবে, সেই একই ধুতি গেঞ্জি পরা লোক হ্যান্ডপাম্প পাম্প করে জল নিতে থাকবে গণেশ তেলের খালি টিন ভরে, পানের দোকানে সেই কালো মোটা মুখরা বুড়িই বসে পান সেজে দেবে অপেক্ষমান বাসযাত্রীদের আর তেলেভাজার দোকান থেকে সেই একটু বিচ্ছিরি তেলের গন্ধের মাঝে রাখা থাকবে লোভনীয় স্তুপীকৃত বেগুনি ফুলুরির ঝুড়ি!

    ড্রাইভার আর আমাদের মতামতে আস্থা রাখতে পারেনা। হঠাৎ কিছু জিজ্ঞেস না করেই বড় রাস্তা থেকে নেমে পড়ে মাঠের মাঝের মোরামঢালা কাঁচা রাস্তায়। "একী, কোথায় যাচ্ছি আমরা?" একটুও গতি কম না করে জানায় আমরা এদিকের এবছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ঠাকুরটি দর্শন করতে যাচ্ছি। অল্পবয়সীরা একটু উৎসুক, তাদের দিকে তাকিয়ে আমরা বর্তমানে ফিরে আসি। মাঠের মাঝখানে, নীল আকাশের কপালে একটি কমলা টিপের মত সূর্য, ক্যামেরা সক্রিয় হয়। একটি প্রকৃত গ্রামীণ পরিবেশ, মাঝে আবার একটা বাঁশের সাঁকো আসে, তাতে মাটি চাপা, গাড়ি পেরিয়ে যায় অল্প টাল খেয়ে।
    সাইকেলে, পায়ে হেঁটে, হলুদ গোলাপী নতুন জামায় বাবা কাকাদের সাথে কচিকাঁচারা মহা উৎসাহে চলেছে ঠাকুর দেখতে মোরামে লাল ধুলো উড়িয়ে। মাথায় নতুন ফিতে, চোখে টানা ধ্যাবড়া কাজল, পায়ে নতুন জুতোয় লাল ধুলো!
    আছে, এখনও আমাদের সেই গ্রাম আছে। এ জায়গায় এখনও শহুরে ছাপ পড়েনি সেভাবে অথচ কত আর দুরে! নাম কী জায়গার, বদ্যিপুর। দ্যাখো, এমন একটা সুন্দর জায়গা আছে এতকাছে, জানতামও না, আবার এখানেই নাকি এদিকের সবচেয়ে ভালো ঠাকুর। এধারে পুকুর, ওধারে পুকুর, মাঝখানের সরু রাস্তা পেরিয়ে এক বাঁশবনের সামনে একটি জমিতে এক বিশাল সিংহ। এই সিংহের পেটের ভেতরে ঢুকে তার প্রায় লেজ অবধি গেলে দেখা মিলবে মা দুর্গার। পেটের মধ্যে ঢুকলে আবার নানা স্বরে গর্জন শোনা যাচ্ছে রেকর্ডেড, আমাদের শহুরে পোড়া মনে কৌতুক, কিন্তু স্থানীয় ছেলে বুড়ো সবাই বেশ চম্‌ৎকৃত এহেন শিল্পের নিদর্শনে। এই পেটের ভেতরে ঠাকুর ব্যাপারটা ওদিকে বেশ হিট যাচ্ছে দেখলাম, এক জায়গায় অসুরদলনীকে অসুরের পেটের মধ্যেও দেখা গেল!
  • PM | 86.96.228.84 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ১৬:২৯485027
  • ভাই শ্রাবনি, আপনি প্লিজ অন্য টই তে মন দেবেন না..... সিগগির প্রতিচ্ছায়ার পরের কিস্তি দিন। মানুষ্কে দু:খ কষ্টে রাখা মোটেই ভাল কথা নয়। :)
  • shrabani | 124.124.86.101 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ১৬:৩১485028
  • ফিরে আবার সেই বড় রাস্তায়, তিন ভাইবোন ছাড়া বাকীরা এতেই মিইয়ে পড়েছে, তবে আমরা উত্তেজনায় আর তাদের কথা ভাবছিনা। এই তো হাসপাতাল এসে গেল, দাদার একটু ধন্দ, সে বোধহয় আমাদেরও আগে এসেছে শেষবার, এটা পুরনো হাসপাতাল না নতুন!
    এটাই পুরনো আবার এটা নতুনও, দাদার হিসেবে। এই তো কলেজ, কলেজ গ্রাউন্ডে একটা পুজো হত না, বড় করে, মেলা বসতো?
    ড্রাইভার দেখালো পথের ধারের সারি সারি দোকানের ফাঁকে, সেই পুজো, মেলাও বসেছে। অতি সাধারন প্যান্ডেল, ছোট্ট একটা মেলা, নাগরদোলা। এখন ছোট হয়ে গেছে, না, আমাদের দেখার চোখ বদলে গেছে? মেলা পুজো সব যা ছিল তাইই আছে, বদলে গেছে যা তা হল নজরিয়া। এই তো বাস টার্মিনাস, এই জায়গাটা সত্যিই বদলেছে, দোকানপাট অনেক বেশী এখন।
    "কিন্তু এটা তো আর বাস টার্মিনাস নেই, বাস টার্মিনাস সেই পুল পেরিয়ে, নদীর ওধারে"। ড্রাইভারের কথায় কেমন প্রথমে বিশ্বাস হয়না, কিন্তু সত্যিই, একটাও বাস দাঁড়িয়ে নেই এখানে। আবার দুই বোন চোখাচোখি। এখানে শেষ আসার ঘটনাতে জড়িয়ে আছে এই জায়গাটা।

    কলেজের গরমের ছুটিতে এসে বাড়ির পাঁচজন মেয়ে মিলে সিনেমা দেখতে আসা, তিনটে ছটার শোয়ে। বড়রা বললেও কোনো ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে আসেনি, বাড়িতে না বলে হিন্দি সিনেমা দেখা হবে বলে। নদীর ওপারে নতুন পাকা ব্রিজের (কাঠের ভাসা পোলের তুলনায়, নাহলে সে তখনও নতুন ছিল না) এধারে এক হল, সেখানে শুধুই বাংলা ছবি আসে। অন্যধারে বাজারের ভেতরে আরেক, সেখানে তখন মাঝে মাঝে হিন্দি সিনেমা আসত।
    সিনেমা দেখে, অনিল কাপুরকে নিয়ে বিশদ আলোচনা ও সিনেমা হলের পাশে পর্দা ঢাকা কেবিনে মফস্বলে নতুন আমদানী মোগলাই পরোটা খেয়ে বেশ একটা অনেক বড় হনু,এমন পাকা ভাবভঙ্গী করে হেঁটে হেঁটে বাস টার্মিনাসে পৌঁছে মেয়েগুলোর মাথায় হাত।
    লোকে লোকারণ্য জায়গাটা, যেন বাজার বসেছে, দুপুর থেকে কোথায় কী গন্ডগোল হয়ে বাস ধর্মঘট, কোনোদিক থেকে বাস আসছেনা। অফিস কাছারির লোকেরা আগেই এসেছে ও যত রিক্সা ভ্যান ছিল সব ডবল ভাড়ায় নিয়ে বেরিয়ে গেছে। অন্ধকার নেমে এসেছে, অনেকেই হাঁটা দিচ্ছে কিন্তু এদের সে সাহসও নেই। কান্না কান্না মুখগুলোতে এখন সত্যিই গাল বেয়ে চোখের জল নেমে আসতে শুরু করেছে।
    কয়েকজন স্থানীয় যুবক এগিয়ে এল, রাস্তায় ওপর দাঁড়িয়ে একটি দুটি যা গাড়ি যাচ্ছে তাদের অনুরোধ করতে থাকল এদের পৌঁছে দিতে। এদের ব্যবস্থা না হলেও অন্য অনেকেরই ব্যবস্থা তারা করছিল। শেষে যারা বাকী রইল তাদের নিয়ে যেতে রাজী হল এক বিশালাকায় পাঞ্জাবী লরি। সেই লরির পিছনে মোটামুটি সবাই উঠে পড়ল যুবকদের অনেক আশীর্ব্বাণী শুনিয়ে আর ধন্যবাদ দিয়ে, শুধু দুই বোন ছাড়া। বড় উঠে পড়ল, ছোট উঠল না। সে কিছুতেই ঐ লরিতে ওভাবে দাঁড়িয়ে যাবেনা। তাই শেষে বড়কেও নেমে আসতে হল।
    উপকারীরা দিশেহারা, দেরি হয়ে যাচ্ছে,সবাই গাড়ি ছাড়তে বলছে, কী করা! অনেক ভাবনা চিন্তা, আলাপ আলোচনার পর ঠিক হল এরা সামনে বসবে ড্রাইভারের সঙ্গে। এবারেও বড়জন উঠে পড়ল কিন্তু ছোটজন লাফিয়েও ঐ বড় লরিতে উঠতে পারেনা। শেষে ছেলেদের মধ্যে একজন এসে তার দুহাত পেতে দিল, "এই হাতে পা দিয়ে আপনি উঠুন, কোনো ভয় নেই, পড়লে ধরে নেব।" সেই সময় কারো দিকে তাকানোর মত অবস্থা নেই, তাই কার হাতে পা দিয়ে উঠল তার মুখটা দেখার কথাও মনে নেই, শুধু দেখেছিল একটা উঙ্কÄল সাদার ওপরে লাল স্ট্রাইপ, সিগন্যালের (টুথপেস্ট) মত টীশার্ট আর ঝাঁকড়া চুলো মাথা, কারণ হাত দুটো পেতে মাথা নীচু করে ছিল সে।
    পরে সঙ্গীনিরা বলেছিল, কী দারুন সিনেমার হীরোর মত দেখতে,তোকে একেবারে উদ্ধার করে লরিতে ওঠালো। শুনে একটু আফশোষ, এমন হীরোর মুখটাই দেখলাম না!
    মনে ছিলনা এতদিন অথচ ড্রাইভার দাদাকে মনে ছিল। মনে আছে সেদিন প্রথমে ভেবেছিল লরির ড্রাইভার, নিশ্চয়ই খুব বিশাল চেহারার মদে চুরচুর একটা লোক, ভয় পেলেও, এতটুকু রাস্তা, পেছনে অত লোক, তাই উঠেছিল। কিন্তু কী ভালো সেই ড্রাইভার,কত গল্প করল ঐটুকু রাস্তায় আর একটুও মদের গন্ধ নেই!

    আজ এই বাস টার্মিনাস উঠে গেছে শুনেই কিন্তু প্রথমে মনে পড়লো সেই সিগন্যাল শার্ট আর ঝাঁকড়া চুলো মাথা, ইস, মুখটাও দেখা হয়নি!
  • shrabani | 124.124.86.101 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ১৬:৪৭485029
  • ড্রাইভার এতক্ষণে হাল ছেড়ে দিয়েছে, এরা কোথায় যেতে চায় সে কিছুই বুঝতে পারছে না। কলেজের মাঠের অমন বিখ্যাত ঠাকুর তাও দ্যাখে না।
    "বাঁধের ওপর ওপর দিয়ে যাব, শহরের ভেতরে ওদিকে দু একটা ঠাকুর থাকতে পারে"?
    ভাই বোনেদের চোখে চোখে কথা, বাঁধের ওপর দিয়ে গাড়ী যায় নদীর ধার দিয়ে দিয়ে? চল তাহলে, দেরী কেন। অন্যরা ভাগ্যবশত এমনিই চলেছে, এই যাত্রা থেকে তাদের কোনো আশাই নেই, তারা এখন প্রায় নির্বাণ মোডে চলে গেছে, কোনো কিছুতেই তাদের উৎসাহ বা আপত্তি কোনোটাই নেই আর।
    শিলাইয়ের ধার সেই একই আছে প্রায়, অনেকটাই এক। ঘাটগুলোও চেনা লাগছে। এদিকের লোকেরা নদীকে ডাকে শিলাই, কাঁসাই, সব আদরের ডাকনামে। মনে পড়ে ছোটোবেলায় খুব দু:খ হয়েছিল, শিলাবতী কংসাবতীর ডাকনাম আছে, সূবর্ণরেখার নেই, সেও তো আমাদেরই, তাকে কেউ ভালোবাসেনা। অনেক ভেবেটেবে নিজেই নাম রাখলাম সোনাই, বাবাকে খুব ধরেছিলাম, সবাইকে বলে যেন সূবর্ণরেখাকে সবাই ঐ নামে ডাকে, সবাইকে জানিয়ে দিতে!

    ঠাকুর কী কী দেখা গেল খেয়াল করিনা, দেখি কোর্ট, স্কুল, বাংলো, বাড়িঘর। পুরনো শহরটা তার সব পুরনো শেওলা সবুজ রঙ মেখে এখনো তেমনিই আছে, নদীর ঘাটের সিঁড়িগুলোর মতই। রাস্তা গলি চিনতে কোনো অসুবিধেই হয়না, দাদারও। তার খুব ছোটোবেলায় বাবা কিছুদিন এখানে চাকরি করেছে।
    "এটা আমাদের কোয়ার্টারের রাস্তা, এই গলিটা দিয়ে বাবার পিওন দামুদাদের বাড়ি যেতে হত।" ছোটবোনের খুব একটা স্মৃতি নেই এসবের কিন্তু অন্যজনের মনে আছে,"হ্যাঁ দাদা, ঐ দামুদার মা ই তো বাবাকে ছেলে বলে ডাকত। পুজোর সময় এলে মা এসেছে এখানে আমাকে নিয়ে ঐ ঠাকুমার বাড়ি। আমি দেখেছি ওনাকে।"
    "এখন যাবে?" দাদার মুখ ম্লান হল, কবে মারা গেছে যারা আমাদের চিনত তারা, এখন আর কোথায় যাব!

    ঘুরে ঘুরে আশ মেটেনা, কতটুকুই বা এলাকা, ঐ দেখা যায় এক দাদার শ্বশুরবাড়ি, একটুও বদলায়নি বাড়িটা, আমরা বরযাত্রী এসেছিলাম। বউদি আমায় কোলের কাছে বসিয়ে গান গেয়েছিল, "বন্ধু তোমার আসার আশাতে"। আমি মুগ্‌ধ হয়ে কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, বিয়ে দেখিনি। পরদিন বিশাল ছাতে গ্রুপ ফোটো তোলা হয়েছিল। বাবা মা পুজোর সময় এলে ঐ মাসি মেসোর বাড়িও যেত কখনো সখনো। ওদের ছেলেটা ফুলদির থেকে কিছুটা বড়, সবসময় আমাদের সঙ্গে খেতে বসত যে কোনো কাজ বাড়িতে, খুব লাজুক ছিল,বৌদি ওকে আমাদের সঙ্গে থাকতে বলত। পরে সেই লাজুক ছেলেটা নাকি শহরের সব থেকে খারাপ ছেলে হয়েছিল, বখাটে। পরে খুব কল্পনা করার চেষ্টা করতাম, বখাটে হয়ে ও কেমন হয়েছে, পারতাম না, সবসময় সেই লাজুক মুখটাই ভাসত।

    "আপনারা বিশালাক্ষীর মন্দিরে যাবেন? এসময় অনেকে যায়।" ড্রাইভার একবার শেষ চেষ্টা করে আমাদের পথে নিয়ে আসতে। "বিশালাক্ষী মন্দির? সে তো বরদায়, অনেক দুর না?" ঐ কয়েক কিলোমিটার শুনে কেমন যেন ইচ্ছে হয়, এত কাছে অথচ কোনোদিন যাইনি। দাদা এসেছে ছোটোবেলায় মায়ের সাথে, ভোগ খেয়ে গেছে। অনেক পুরনো ঠাকুর, পুরো দূর্গা মূর্তি, মন্দির নতুন হয়েছে কিন্তু মূর্তি সেই আদি। কোন এক রাজার প্রতিষ্ঠা করা ঠাকুর, এদিকের খুব নাম করা স্থান। শুনে অন্য সঙ্গীরাও নড়েচড়ে বসে, ক্যামেরার ঢাকনা খোলা হয়। এই রাস্তায় আগে কখনো আসিনি, সুর্যের শেষ আলোয় মাঠের পারে নানা রঙের খেলা। শহর থেকে একটু দুরে, পেরিয়ে যাই সেই বিখ্যাত চাতাল যা প্রতিবছর বর্ষায় ডুবে এদিককে বিচ্ছিন্ন করে দেয় ওদিক থেকে।
    বিশালাক্ষী মন্দিরও দেখা হল, মূর্তি দেখে মনেই হয়না অত প্রাচীন, চোখদুটি সত্যিই বিশাল আর পরিবারের সাধারণ সদস্যরা ছাড়াও আরো কিছু লোকজন আছে দুর্গার সাথে, তারা কারা ঠিক জানা গেলনা, ধরে নিলাম জয়া বিজয়া টিজয়া হবে!

    অনেক হল, এবার ফিরতি পথ ধরা হোক। আরতির আগেই ফিরতে হবে, আজই শেষ আরতি, সঙ্গীরা বেশ ক্লান্তও হয়ে পড়েছে। আমরা অবশ্য তরতাজা পুরনো স্মৃতিতে চুমুক দেওয়ার আমেজে। এদিকে রাস্তায় একটা ঠিকঠাক চায়ের দোকানও পাওয়া যাচ্ছেনা ড্রাইভারের মতে। তাকে দোকান দেখালেই সে বলছে, "ওখেনে আপনারা খেতে পারবেন না।"

    একটু শুধু বাকী রয়ে যাচ্ছে,ফুলদি আমার দিকে তাকায় আমি ওর দিকে। পাকা ব্রিজ আসার আগেই ড্রাইভারকে, "দাদা গাড়িটা এখানে একটু দাঁড় করাবেন, মানে একটু বাজারে যাব।" সবাই বিস্ময়ে বিরক্তিতে তাকায়। "বাজারে কেন? বাজার সেরকম খোলা নেই আজ। যা কিনবেন, ও আমাদের ওখানেও পাবেন।"

    ড্রাইভারের পরের ট্রিপের সময় হয়ে যাচ্ছে। এবার দাদাও সাথে নেই, সবারই বক্তব্য, অনেক হল, এবার চলো। বেশী কথা বলিনা, কারণ যা নিজেরাই ভালো বুঝিনা তা অন্যকে বোঝাব কেমন করে! কেন যে নদীর এপারের ঐ সরু রাস্তার ভেতরের দুর্গন্ধময় ঘিঞ্জি বাজার আমাদের টানছে!
    তাও গাড়ি থামতেই সেই ছোটোবেলার মতই আর কিছু না বলে, বড় বোন ছোটর হাত টেনে নিয়ে প্রায় দৌড়েই সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাজারের রাস্তা ধরে। মুখেই সেই মিষ্টির দোকানটা নেই যেখানে বাবা বালুশাহী কিনত। আর একটু এগিয়ে যাই, সেই কোন ছোটোবেলার সারের আর কীটনাশকের গন্ধ ভরা রাস্তাটা একই আছে, গন্ধটাও পেলাম যদিও দোকানগুলো বন্ধ। দুদিকের সারি সারি কাঁসা পিতলের বাসনের দোকানও বন্ধ আজ। শুনি আজকাল নাকি এখানে আর আগের মত কাঁসা পিতলের বাসন তৈরী হয়না।
    এই গলির মধ্যে ঢুকেই তো স্বদেশ জেঠুর বাড়ি আর ডাক্তারখানা। ঢুকে আর দেখা হয় না, প্রতিবছর বাবা মার সাথে এলে জেঠু আমাকে দেখলেই টনিক লিখে দিত, রোগা মেয়ে। সেই সব টনিক দারুন খেতে হত, মিষ্টি মিষ্টি, টক টক। সেই সব খেয়েই আমি যে এই ধেড়ে লম্বা হয়ে গেলাম অথচ মোটা হলাম না, এ নিয়ে বাবা মাকে অনেক কথা শুনিয়েছি পরে!

    হাতে সময় নেই, সবাই অপেক্ষা করছে, কিন্তু যাচ্ছে কোথায় দুই বোনে! ভাসা পোলে যাবার গলি পেরিয়ে সেই গেট দিয়ে ঐ দিকে যাই, রাজারানী বস্ত্রালয় একদিকে আর অন্য দিকে স্টমিজাইম আর দিলীপ কাকুর দোকান। বাবা মা এলে খুব খাতির করত রাজারানীতে, কী সব পারিবারিক চেনাজানা, অত বুঝতাম না। প্রতিবারেই মাকে খুব সাধত কাকুগুলো ভালো শাড়ি নিতে, অনুযোগ করত ভালো শাড়ি কলকাতায় কেনে বলে। বাবা মা শুধু এখানকার দেওয়া থূ য়ার জামাকাপড় কিনত। কখনো এখানে আসার পরে কেউ যদি টাকা দিত আমাদের সেই টাকায় একটা দুটো জামা কেনা হত আমাদেরও। কেনাকাটি যাই হোক, বাবা মাকে চা খাওয়াত, আমাদের মিষ্টি।

    আমরা দুজনে দাঁড়িয়ে রইলাম স্টমিজাইম আর দিলীপ বিপনির মাঝে। আমার পরণে যেন সেই ড্যান্সিং ফ্রক সাদা র ঙের, ফুলদিরটা গোলাপী। দুজনেরই পায়ে কালো জুতো সাদা মোজা, একজনের চায়না কাট, অন্যজনের পনিটেল। আমি পায়ের পাতা টাকে একটু তুলে আধখানা ঘুরে যাচ্ছি নাচের ভঙ্গীমায়, ফ্রক মাহাত্ম্যে আর বড় আমাকে হাত টেনে টেনে সোজা দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। ভেতরে মায়ের খোঁপার ওপর আলগোছে ঘোমটা, চানাচুর কিনছে টেস্ট করে, নানা রকম লজেন্স। আমাদের বাড়িতে বয়াম ভর্তি লজেন্স থাকে, লেবু কমলা টক ঝাল। মা নিজে খেতে ভালোবাসে, সবাইকে দেয়ও। আরো কী কিনছে মা, আমি দেখিনা, আমার নজর শুধু চানাচুর আর লজেন্স এ। সারাবছরের খবর দেওয়া নেওয়াও চলছে সুধীর কাকু আর দিলীপ কাকুর সঙ্গে। এখুনি বাবা এসে পড়বে বাজারের দিক থেকে লক্ষীকাকাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে।
    একটি ছেলে এগিয়ে আসে, "কী চাই দিদি? যান দোকানের ভেতরে যান।"
    একটু যেন উথালপাথাল ভাব দুজনেরই, কোথায় আছে, কোন সময়ে, সব যেন কেমন ওলট পালট।
    -"না, মানে আমরা অনেক আগে এখানে আসতাম। আমাদের মা বাবার সাথে, এই দোকান গুলোতে, দিলীপ কাকু, সুধীর কাকু।"
    নামগুলো চিনতে পারে কী পারেনা বোঝা যায়না, ক্রেতা নয় শুনে উৎসাহ হারিয়ে দোকানে ঢুকে যায় ছেলেটি।..............................

  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ১৭:১৩485030
  • ভালো লাগলো শ্রাবণী। মধুছন্দাকে স্বাগত।
  • kumu | 122.160.159.184 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ১৭:২৪485031
  • এতো ডিটেলের কারুকাজ?যেন খুব যত্ন করে ছবির পর ছবি আঁকা-
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ১৯:১৯485032
  • শ্রাবণী
    ধনতেরাসের সেরা গিফ্‌ট দিলে---তোমার হাতটি সোনা দিয়ে বাঁধানো---আমরা সবাই সোনা পেয়ে আপ্লুত :-)

    মধুছন্দা
    আরও শোনান। আমিও বিহারের মেয়ে তো, বিহারের গল্পে বড় নেশা :-)
  • madhuchhanda paul | 14.99.54.52 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ২১:৩৯485033
  • আমাদের আত্মীয় হয়তো ছিলেননা । এত বেশী দেখতাম তাদের যে কোনদিনই তাঁদের নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি মনে । আসলে সেই সময় সমাজের মানুষ প্রয়োজনে একে অপরকে ঠেকা দিয়ে নিজের ও অপরের পড়ে যাওয়া আটকাত । অনেক পরে বুঝতে পেরেছি এঁরা আমাদের বাড়ী থেকে নিয়মিত সাহায্য পেতেন ।
    কারো কারো কথা বেশ ভালো মনে আছে । একজন পঞ্জাবী মহিলা আসতেন । অনেক বয়স , মুখে বলীরেখা ভর্তি । খুব ফর্সা রঙ , পরিস্কার সালোয়ার কুর্তা পরা । বাংলায় কথা বলতেন , মোটা গলায়। দুপুরের দিকে আসতেন । মা, পিসীমা, কাকীমা, জ্যাঠাইমা সবাইয়ের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে দেখা করতেন । যার যা দেওয়ার দিলে, বিকেলের দিকে চা খাবার খেয়ে ফিরে যেতেন । একজন আসতেন আমরা বলতাম ক্লাস সেভেনের দিদিমনি । দিদিরা যখন স্কুলে , ক্লাস সেভেনে পড়ত তখন ওদের ক্লাস টিচার ছিলেন । উনিও দুপুরের দিকেই আসতেন ,সঙ্গে থাকতো ভাইপো রতন । ছোটছেলে । আমরা ওনাকে দেখতে পেলেই লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম । আমাদের দেখতে পেলে পড়া ধরতেন, অঙ্ক কষতে দিতেন । উনিও বিকেল পর্যন্ত থাকতেন , মনে হয় ওঁকে চাল দেওয়া হত । বস্তা করে চাল নিয়ে রিক্সায় উঠতে দেখেছি । আর আসতে দেখতাম গিরীন বাবুর মেয়েদের । তিনটি মেয়েকে আসতে দেখতাম । ১৫/১৬ থেকে ৭/৮ বছর বয়স হবে । ওরা এসে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো । ছোট মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসত । লুকিয়ে পড়ত থামের পেছনে , মনে হয় খেলতে চাইত । আমি কোনোদিন কথা বলেছি বলে মনে পড়েনা ।
    একজন দূর সম্পর্কের বিধবা জ্যাঠাইমা এসে থাকতেন , বছরের মধ্যে বেশ কয়েকমাস সঙ্গে এক আধ পাগল ছেলেকে নিয়ে । সেই ব্রজদা ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুতনা , ভাত খেয়ে এঁটো হাতে মুখে যেখানে দিদি, বউদিরা বসে গল্প করছে বা বোনা , সেলাই করছে সেখানে গিয়ে স্বামীজির মত করে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে পড়ত । ওরা আড়ালে হাসাহাসি করত ।
    বিশুদা কার সুত্রে আমাদের বাড়ী এসেছিল জানিনা । সদ্য পূর্ববাংলা থেকে আসা । কথা বোঝা যেতনা ভালো করে , বলতওনা কথা বেশী । খুব গুটিয়ে থাকতো । নিচের একটা ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছিল ,ওখানেই থাকতো বেশিরভাগ সময় । বড় কোন বিপর্যয় পার হয়ে এসেছিল , শুনতাম । বেশ অনেক দিন পর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল , আমাদের ডিসপেনসারিতে কম্পাউন্ডার হল । বেশ কয়েক বছর কাজ করার পর সাঁওতাল পরগনার কোন গ্রামে গেল ভাগ্য পরীক্ষা করতে । ডাক্তার হয়ে বসলো ওখানে । কিছুদিন পর শোনা গেল কোন নারী ঘটিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে ওখানেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে । এর বেশ কিছুদিন পর এক দুপুরে পিসিমার নামে একটা পোস্টকার্ড এল বিশুদার লেখা । পিসীমা শুয়ে কাগজ পড়ছিল আমায় বলল পড়ে শোনাতে । বিশুদা কিকি লিখেছিল মনে নেই ।অশুধু মনে আছে আমাদের বাড়ীতে বউ সমেত ফিরে আসতে চায় । এত বছর পরেও শেষ লাইনটা মনে আছে “ সে তো আপনাদেরই বধুমাতা ।‘’’ আর কোনদিন বিশুদাকে দেখিনি ।
    ২৫/১০/১১
  • siki | 122.177.181.116 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ২৩:৪২485035
  • শ্রাবণীকে অনেক ধন্যবাদ, আমার খানিক ছোটোবেলা ফিরিয়ে দেবার জন্য। চিনতে পারছি সেই ভাসাপুল, শিলাই নদীর ওপর, এদিকে ঘাটাল বাসস্ট্যান্ড, ওদিকে বাজারের মধ্যে মোতি সিনেমাহল, হিন্দি সিনেমা আসত, আর অন্যদিকে ভারতী সিনেমাহল। কেবলই বাংলা সিনেমা আসত সেখানে। খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন, হারানো সুর আরও কী কী সব সিনেমা যেন দেখেছিলাম।

    ছেড়ে আসার পর আর যাওয়া হয় নি। অনেকদিন বাদে ছবিটা ভাসিয়ে দিল শ্রাবণী। থ্যাংকিউ।
  • madhuchhanda paul | 14.99.65.21 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ২৩:৩৬485037
  • ছোটবেলা ২
    বাড়িতে রাখা কিছু অদ্ভুত জিনিষ দেখে দেখে অভস্ত্য ছিলাম আমরা ছোট থেকে, কখন মনে সে গুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি ,যেমন বাড়িতে অনেকদিন ধরে থাকা একটা আসবাব দেখে আমরা সেটা নিয়ে ভাবিনা সেরকম !
    আমাদের দোতলার কলঘরের জানলায় একটা মানুষের মাথার আস্ত খুলি ওপরের চোয়ালের দাঁত সমেতরাখা ছিল অনেকদিন পর্যন্ত । ,ওটা আমার এক জ্যাঠামশাইয়ের সংগ্রহ কাউকে ভয় দেখনর জন্যে , ওটার চোখে ব্যাটারি দিয়ে আলো লাগান হয়েছিল শুনেছি । আমাদের কোন রকম বিকার ছিলনা ,দিব্যি যাওয়া আসা করতাম। আমাদের ডিসপেনসারি আর বাড়ির মাঝখানে একটা দরজা ছিল ওটা খোলাই থাকতো সবসময় ডিসপেনসারিতে ঢুকেই একটা শোকেশের ওপরে একটা বড় কাচের জারের মধ্যে একটা অপুষ্ট ,অপরিণত মানব ভ্রূণ chemicale ডোবান ।অআমরা দুপুরবেলা, বিশ্রামের জন্য বাড়ির সবাই ওপরে চলে গেলে ফাঁকা ডিসপেনসারি তে ঢুকে হলদে টিনের কৌটো থেকে glucose খেতাম ,কিছু মনেই হতনা ও একটু ঘাড় বেঁকিয়ে বসে থাকতো ।
    আমরা এর মধ্যেই বড় হয়েছি ,আমার মার কিন্তুঅনেকদিন মামারবাড়িতে কাটিয়ে বাড়ি ফিরতে খুব খারাপ লাগত । মা বলত জন্তু জানর এর গন্ধে মার অসুবিধে হত ।অবাড়িতে ঢূকেই বাইরের উঠনে পায়রাদের ঘর। কাঠের কাঠামোয় জাল দিয়ে ঘেরা বেশ বড় ঘর একটা । ,ওটা ছিল আমাদের সব চাইতে বড় জ্যাঠামশাএর সম্পত্তি ,অনেক রকম পায়রা ছিল ,আমাদের শোবার
    ঘরের পেছনের বারান্দা ছিল ঐ উঠোনের দিকে, মাঝে মাঝে জ্যাঠামনি আমাদের ঘরের দিকে মুখ তুলে আমদের দুই বোনের নাম ধরে ডাকতেন আর আমরা দুড়দাড় করে নেমে আসতাম , পায়রার ডিম সেদ্ধ খেতে। । পায়রার ডিম সেদ্ধ হলে আমরা খেতাম আর পায়রার খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হত ,ওদের পুষ্টি হবে বলে । পায়রার ডিম খেতে মুরগীর ডিমের মতই , দেখতে একটু অন্যরকম সাদা অংশটা স্বচ্ছ ।
    মধুছন্দা পাল ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন