এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • হেমাঙ্গ বিশ্বাস: গণসঙ্গীতের কবি। বর্তমান প্রজন্ম কতটা চেনে?

    Debashis
    অন্যান্য | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ | ১২৩০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kiki | 59.93.210.104 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:৩৬508994
  • কল্লোলদা আবার আমার কোশ্নে প্রসঙ্গ খুঁজছেন। ক্ষী চাপ! ও কল্লোলদা কোনো প্রসঙ্গতো ছিলো না। আসলে ও পাড়ায় ঋত হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান জমাচ্ছে। সেখেনে নেট শুনে টুকতে গিয়ে কিছু শব্দ বুঝতে পারছিলামনা। তাই। (কাঁচুমাচু স্মাইলী ও ভয়ের চোটে পলায়ন)
  • kallol | 119.226.79.139 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:৫৮508995
  • কিকিয়া রে!
    ওরে বব্বা। আমিই তো কাঁচুমাচু হয়ে তোকে লিখলুম, যে কেসটা কি বুঝতেই পাচ্ছি না তো কর্বো কি? এই অ্যাতোক্ষোনে বুঝলুম। ওপাড়ায় আমার যাতায়াত নাই, তাই বুঝতে পারিনি কি চাইছিস।
    নাহ। এই গানটা আমি শুনিনি। তাই একটু কলকাতার বন্ধুদের সাহায্য নিতে হবে।
  • pi | 72.83.83.28 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:৫৯508996
  • লালন 'মুসলমান' ছিলেন, সম্প্রীতির কথা বলেন নি, এই 'ফকির' লালন শাহ আসলে নির্মাণ, একথা তো এঁরা বলে থাকেন। তাই নিয়ে সুশান্তদার কী মত ?
  • kallol | 119.226.79.139 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:১৮508997
  • সুশান্ত।
    যখন আপনি নিজেকে অধিকারী ভাববেন, ভাববেন। তার আগে কি আমাদের মতো আনাধিকারী অভাজন এট্টু পেসাদ পেতে পারে না?
    কামাখ্যা ও প্রাগজ্যোতিষপুর নিয়ে জানতে চাই।
    শুনেছি সিকন্দর সায়েব (গ্রীকেরা তো সায়েবই) গঙ্গাহৃদি ও প্রাগজ্যোতিষপুরের যুদ্ধপটু হস্তিযূথের কথা শুনে - চ চ বাড়ি যাই, বলেছিলেন। তার কিছু আগে/পরেই মৌর্য/গুপ্ত যুগে মহাভারত ""লেখা"" হয়। সেখানে প্রাগজ্যোতিষের অধিপতি ভগদত্ত কৌরবদের হয়ে যুদ্ধ করেন। কারন ভীম রাজসূয় যজ্ঞের সময়ে ওনাকে পরাজিত করেন। কুরুক্ষেত্রে অর্জুনের হাতে নিহত হন। উনি হাতিতে চড়ে যুদ্ধ করতেন।

  • Debashis | 89.147.0.172 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:২৬508998
  • সুশন্ত বাবু

    আপনার লেখায় এক জায়গায় দেখলাম আপনি লিখেছেন "সাম্প্রদায়ীকতা আমার কাছে কেবল ঐ বিজেপি-আর এস এস বা দাঙ্গা নয়"। আবার আপনিই নেলীর তথ্য দেখিয়ে প্রমাণ করতে চান অসমও গুজরাতের মতই সাম্প্রদায়ীক। নেলী-গোহপুর-মোকালমোয়া আমার কাছে শুধু নীরস তথ্যই। কোনও সাম্প্রদায়ীক বা অসাম্প্রদায়ীক যে কোনও দাঙ্গাই লাগে ক্ষণিকের উত্তেজনায়। সাম্প্রদায়ীক মনোভাবই তার একমাত্র কারন হয় না। আমার কাছে সাম্প্রদায়ীকতা হল এই সাম্প্রদায়ীক মনোভাব। রাজস্থানে তো দাঙ্গা খুব কমই হয়েছে। তার মানে কি এই যে রাজস্থান অসাম্প্রদায়ীক! না কি কাশ্মীর অসাম্প্রদায়ীক। সাম্প্রদায়ীকতা মানে আমার কাছে, মনোভাব। গুজরাতে বা রাজস্থানে হিন্দুদের সঙ্গে কথা বলে বা এই সৌদিতে এসে কাশ্মীরী/পাকিস্তানি(pok) মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি সাম্প্রদায়ীকতা কি। শুধু অন্য ধর্মের হওয়ার কারনে এত ঘৃণাও মানুষ মানুষকে করতে পারে বলে জানা ছিল না। অসমিয়াদের আপনি আমার থেকে অবশ্যই বেশী দেখেছেন, তাই হয়তো ভালো বলতে পারবেন। আমি কিন্তু অসমে এই মনোভাব দেখিনি, কি হিন্দু, কি মুসলিম নির্বিশেষে। তাই তুলনায় অসাম্প্রদায়ীক বলেছি।

    আপনি লিখেছেন "ডিগবৈ অসমিয়া অভিজাত মধ্যবিত্তের ঘাঁটি।" আপনি শুধু বোধহয় ইণ্ডিয়ান অয়েলের কর্মচারীদের গণ্য করেছেন ডিগবৈ এর বাসিন্দা হিসেবে। কিন্তু IOCL এর বাইরেও আরেকটা ডিগবৈ আছে। সেখানে মানুষ রিক্সা চালায়, রাস্তার পাশে বসে সব্জী/মাছ/মাংস বিক্রী করে, ছোট গলির ভেতরে তস্য ছোট মুদিখানা চালায় আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে। তাদের অধিকাংশই অবশ্য অসমিয়া বা বিহারী। বাঙালী এই লিষ্টে খুবই কম (আপনার অন্য লেখার একটি লাইন এক্ষেত্রে বড়ই প্রাসঙ্গিক। "অসমীয়াই বাঙালীক এক উচ্চস্থানত আরু নিজকে নিম্নস্থানত দেখিবলৈ পাইছিল। শিক্ষকজন হৈছে বাঙালী আরু ছাত্রজন অসমীয়া । চিকিৎসকজন বাঙালী, রোগীজন অসমীয়া। উকীলজন বাঙালী, বিচারাধীনজন অসমীয়া। দোকানীজন বাঙ্গালী আরু গ্রাহকজন অসমীয়া। সরকারী বিষয়াজন বাঙালি আরু আবেদনকারীজন অসমীয়া।' । উদ্ধৃতি দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। এ কথা বোধহয় এখনও খাটে)। প্রসঙ্গত জানাই আপনার ঐ লেখাটির সঙ্গে আমি একমত। সমস্যাগুলি নিয়ে আপনার ভাবনা অবশ্যই মূল্যবান। কিন্তু কিছু প্রশ্নও থেকে যায়। যাক, সে কথা ভবিষ্যতে, অন্য টইয়ে নাহয় আলোচনা করা যাবে।

    জাতি বা বর্ণের ভিত্তিতে সংরক্ষণ বামেরা সমর্থন করেনি কারন তা বামেদের তাঙ্কিÄক আদর্শের পরিপন্থী। বরং এই যে নির্বাচনের আগে মুসলমানদের জন্য ১০% আসন সংরক্ষণের ঘোষণা, তা আমায় একটু অবাক করেছিল। যে কোনও ধরনের জাতি বা বর্ণগত সংরক্ষণ জাতিবাদকেই আরও উস্কে দেয়, বিভাজনকেই প্রকট করে। সেই জন্যই মণ্ডল কমিশনের রিরুদ্ধে এতগুলি প্রাণ আত্মবলিকৃত হয়। তাই আর্থিক শ্রেণীবিন্যাসে সংরক্ষণ সমর্থনযোগ্য, জাতিগত বিন্যাসে নয়। অন্তত: আমার মতে। তাই এক্ষেত্রে বামেরা খুব ভুল কিছু করেছে বলে বলতে পারছি না।

    আর হেমাঙ্গ বিস্বাস অসমের প্রতি বা অসমিয়া বাংলাভাষীদের প্রতি ন্যায় না অন্যায় করেছেন সেটা আমার বিচার্য ছিল না। আমার বিচার্য ছিল যে পশ্চিমবাংলাকে উনি তাঁর রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সেখানের লোকে তাঁকে কতটা জানে।

    হ্যাঁ, এটা আমি মানতে রাজি যে বামেরা আমাদের দেশের লোকমানস না বুঝেই আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাঁরা ঐ য়ুরোপের সরলরৈখিক সমাজব্যবস্থাকে মাপকাঠি ধরেই ভারতে আন্দোলনের চেষ্টা চালিয়েছেন। স্বাভাবিক কারনেই তা ব্যর্থ হয়েছে। যার জন্য উত্তর ভারত লালু/রাবড়ি বা মুলায়ম-মায়াবতীর মত আপাদমস্তক দূর্নিতীতে ডুবে থাকা মানুষদের নেতা বলে মনে নেয়, তুলনায় অনেক সৎ ও স্বচ্ছ বাম নেতাদের ছেড়ে। তাই ভারতে বাম আন্দোলনের সবথেকে বড় ট্র্যাজিক পয়েন্ট। তবে তাকে একেবারে ফাঁকা বলাটা মনতে পারছি না। C P M বামপন্থী হোক বা নাই হোক তারা কিন্তু এই বামপন্থী আন্দোলনের ফসলই গোলায় তুলেছিল কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরায়। তাই কিছু দাগ এই আন্দোলন রেখে গেছে বইকি!

  • pi | 72.83.83.28 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:৩২508999
  • আরে দেবাশিসবাবু, বাংলাপ্লেনের মধ্যে কীকরে ইউনিকোড লিখলেন ?

    আর শুভও দেখি লেখেন, বাংলাপ্লেনে ইউনিকোড ফন্ট দেখায়। কীকরে কেজানে।
  • kallol | 119.226.79.139 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:৩৮509000
  • ফারহাদ মজহারের জন্মের বহু আগেই, চৈতণ্য, লালন, হাসন, দুদ্দু শাহ, ঈদম শাহ, দূরবীণ শাহ, শাহ জালাল এবং বাংলার অগনিত বাউল-ফকির বর্ণ হিন্দু ও উচ্চ কোটির মুসলমান মৌলবী মোল্লাদের ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধে তাঁদের মতো করে রুখে দাঁড়িয়েছেন। শাহ জালাল তো সামন্ত প্রভুদের বিরুদ্ধে অস্ত্রও ধরেছেন।
    এঁরা কোথাওই দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারকে আড়াল করতে চান নি। চিরকাল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভেদের বিরুদ্ধে লাঠি ও কলম ধরেছেন।
    ফলে আজকে ফারহাদ মাজহার আর নতুন কি বলবেন। তিনি তো এতোকাল বয়ে আসা গানগুলোকে পাল্টে দিতে পারবেন না।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:৫৬509001
  • শুভ / শুভাকে আমিও কত জিজ্ঞেস করলাম, কেং কয়ে ইউনিকোড লিখছেন বাংলাপ্লেনের ভেতর, তা কিছুতেই বলছেন না।
  • ppn | 216.52.215.232 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:১৯509002
  • সিকি, খুব সোজা৷ একটু মাথা ঘামাও বেরোবে৷ :)
  • siki | 123.242.248.130 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:২৯509004
  • টেস্ট

    মাথা ঘামালাম। বেরলো কি?
  • siki | 123.242.248.130 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৩০509005
  • না:, এই শীতে আর মাথা ঘামছে না।
  • vc | 121.241.218.132 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৩১509006
  • ইউনিকোডে বাংলা প্লেন
    হাট্টিমা টিম টিম

  • Debashis | 89.147.0.172 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৪৮509007
  • pi দি ও সক্কল কে

    খুবই সহজ লেখা :)। কোথাও unicode এ লিখে নিয়ে অ্যাঙ্গুলার ব্র্যাকেটের মধ্যে copy-paste করুন। ব্যস! হয়ে গেল :)।
  • vc | 121.241.218.132 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৫১509009
  • হইলো না তো!
  • vc | 121.241.218.132 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৫১509008
  • হাট্টিমা টিম টিম
  • siki | 123.242.248.130 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৫৮509011
  • আবার দেখি হয় কিনা
  • siki | 123.242.248.130 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৫৮509010
  • ঠিক সেটাই করেছিলাম, তাতে হয় নি।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৫৯509012
  • হয়েছে। বালেনক-তে হবে না। এবিআমদি-তে হচ্ছে।
  • maximin | 59.93.194.246 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৭:০৩509013
  • সশান্তবাবু বলেছেন আমরা কি কম্যুনিজমকেও দি গোল অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট হিসেবেই ভাবতে অভ্যস্ত নই? মার্ক্স থেকে যেটুকু উদ্ধৃত করা হয়েছে তাতে তিনি খুব জোর দিয়েই বলছেন না কমিউনিজম গোল নয়, কমিউনিজম ইজ এ ফেজ। কমিউনিজমের পরে আসে নেক্সট পিরিয়ড অফ হিস্টোরিকাল ডেভেলপমেন্ট। মানবজাতির জয়যাত্রার পথে। ঐ মহামানব আসে ইত্যাদি।

    কিন্তু পথটা তো ভাববাদী হলে চলবে না বোধ হয়। নাকি?
  • maximin | 59.93.194.246 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৭:১৫509015
  • কমিউনিজম যদিও একটা ফেজ মাত্র, তার বেশি নয়। কিন্তু কমিউনিজমে যাওয়ারও পথ আছে, সেই পথটা ভাববাদী হলে চলবে কি?
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:৩৯509016
  • ফরহাদ মজহার: নাস্তিক মোল্লা
    রিপন মোস্তাফিজ

    চিরদিনই মূল স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটেছেন ফরহাদ মজহার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে যুক্ত হয়েছিলেন বাম রাজনীতির সাথে। আর সত্তুরের দশকের শুরুতে ভারতের নকশাল আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে যুক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশের সর্বহারা বিপ্লবে। এরপর আমেরিকাতে প্রায় এক দশক স্বেচ্ছা-নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে এসে মাওবাদী দলগুলোকে এক করার উদ্দেশ্যে গঠন করেছিলেন 'ঐক্য প্রক্রিয়া'।. কিন্তু বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রীদের ঐক্য স্বপ্নই থেকে গেছে। ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গের মতৈ ফরহাদ মজহারের সমাজতান্ত্রিক আদর্শের মোহভঙ্গ ঘটেছে।

    মূল স্রোতের যতই বাইরে সাঁতার কাটুন না কেন- ফরহাদ মজহার সবসময়ই ছিলেন উচ্চকিত, একরোখা আর নিজ যুক্তিতে অটল। ফরহাদ মজহার এখন দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও তিনি বরাবরের মতৈ রাজনীতির আঙ্গিনাতেই শয্যা পেতে আছেন। ১৯৯৪ সালে, বিএনপি শাসনামলে বাংলাদেশে আনসার বিদ্রোহের সমর্থনে তার নিজের পত্রিকা 'পাক্ষিক চিন্তা'য় একটি নিবন্ধ রচনা করে কারাবন্দী হন। তিনি আনসার বিদ্রোহে 'শ্রেণী সংগ্রাম'-এর মৌলিক উপাদানগুলো লক্ষ্য করেছিলেন। আন্তর্জাতিক চাপে ফরহাদ মজহারকে দ্রুত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ সরকার। ফরহাদ মজহার বিএনপি'র ডান ঘেঁষা রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন এককালে। আর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতে ইসলামীর আঁতাতকে কচুকাঁটা করেছেন তাঁর কলামগুলোতে। ফরহাদ মজহার অনেক ঘাটের জল ঘোলা করে এখন ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছেন। তাঁর আজকের এই অবস্থান কি স্ববিরোধী, নাকি যেকোন উপায়ে সামাজিক পরিবর্তনকে দেখতে চাওয়ার আজন্ম স্বপ্ন?

    সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন মুল্লুকে এক দশক পার করলেও ফরহাদ মজহারের মনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী একটি চেতনা দিন দিন দানা বেঁধেছে। বাম রাজনীতির সুবাদে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতায় তাঙ্কিÄক জ্ঞানের অভাব ঘটেনি তাঁর। ফরহাদ মজহারের এই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মানসিকতা এতোটাই প্রকট আকার ধারন করেছে যে, উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ কিংবা বাংলাদেশে বার্ড-ফ্লু'র বিস্তারকেও দাতাদেশগুলোর চক্রান্ত বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের ধর্মীয় মৌলবাদের বিস্তাররোধে যে মূহুর্তে খুব জরুরী ভূমিকা গ্রহন করা উচিত- ফরহাদ মজহার তখন 'মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের' নিয়ে স্বপ্ন দেখেন মার্কিন আগ্রাসন প্রতিরোধ করার। আর এরই সূত্রধরে, যে ব্যক্তি নারী মুক্তির জন্য উবিনিগ, প্রবর্তনা, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা'র মতো প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছেন- তিনি সম্পদে নারীর সমাধিকার দানকে উস্কানীমূলক বলে প্রচার করেন। বেশ কিছুদিন ধরে চালবাজ কাঠমোল্লাদের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ইসলামী শাসন কায়েমের স্বপ্নও বুনছেন ফরহাদ মজহার। আর অবাক করা কাণ্ড, আমি নিশ্চিত যে ফরহাদ মজহার নিজেও বুঝতে পারছেন না তাঁর 'এবাদতনামা' তিনি নিজেই উল্টোদিক থেকে পাঠ শুরু করেছেন হঠাৎ।

    ফরহাদ মজহার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতার নামে মৌলবাদকে ধারন করেছেন, মৌলবাদকে উৎসাহিত করছেন এবং মৌলবাদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন প্রচার মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, তিনি মনে করছেন যে সকল ব্যক্তি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী তারা বুশ-ব্রাউনের এজেণ্ট। ফরহাদ মজহারের ভাষায়, 'এদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ বলা আর গলায় সাপকে ফুলের মালা বলা একই কথা'।. বাংলাদেশের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক চেহারা, আর্থ-সামাজিক আচার, আর ধর্মীয় চেতনা আর যাই হোক পাশ্চাত্য থেকে আমদানী হয়নি। ফরহাদ মজহার আজ যাদের সাপ বলে অভিহিত করতে চাইছেন, তারাই তাঁর এককালের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ বিনির্মানের সহযোদ্ধা ছিলেন। ইউরোপের চার্চ থেকে পৃথক হওয়া রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থাকে ফরহাদ মজহার ঐতিহাসিক বিবেচনায় সমর্থন করলেও- বাংলাদেশে আসন্ন ইসলামী বিপ্লবের অনিবার্যতাকে তিনি এড়াতে পারেন না। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে কিছুটা ঘুরিয়ে ফ্যাসিবাদ বলে ভাবেন এবং মনে করেন, বাংলাদেশে ইসলামের যুদ্ধটা এই ফ্যাসিবাদ আর পরাশক্তির সমর্থকদের সাথেই ঘটবে।

    ফরহাদ মজহার একটি জনযুদ্ধের স্বপ্ন দেখছেন আজীবন। সব কিছু দেখে শুনে মনে হয়- তাঁর কাছে আজ যুদ্ধটিই একটি প্রধান বিষয়। তিনি ভুলে গেছেন, যে বাম মতাদর্শকে আজ তিনি পচনশীল মনে করছেন এবং কাল্পনিক প্রতিপক্ষ দাঁড় করে ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছেন সেটি তাঁর অসংখ্য চিন্তার বৈপরিত্যের নমুনামাত্র। একদিন তিনি জোর গলায় ঠিক এর উল্টৈ প্রচার করেছেন। একথা সত্য যে, বাংলাদেশে মৌলবাদীদের মনোরঞ্জনে তিনি এখন অদ্বিতীয়; আর মৌলবাদের প্রথম শিকারটিও তিনিই হবেন।
  • pi | 128.231.22.133 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ০৮:৩৪509017
  • কুলদাদা, যে লেখাগুলিতে মৌলবাদকে উৎসাহিত করেছেন, ধর্মনিরপেক্ষদের সমালোচনা করেছেন, সেগুলো পাওয়া যাবে ?
  • Sushanta | 117.198.57.21 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:০৫509018
  • উত্তর দেবার মতো অনেকগুলো বিষয় এসে গেছে। এদিকে আমার সময় বড্ড কম। এই দুদিন সম্ববত নেট ঠেকে দূরেই থাকব। তবু লিখছি। দেবাশিস বাবুর সঙ্গে আপাতত অনক্য সহ সন্ধি করতে পারি। ডিগবয়ের অন্য সমাজটাও যেকোনো জায়গার মতৈ সত্য বটে। সাম্প্রদায়িকতা আমার মতেও একটি মনোভাব। দাঙ্গা তার সর্বোচ্চ প্রকাশ মাত্র। যে সমাজে এই মনোভাব থাকে না, সেখানে ক্ষণিকের উত্তেজনাতেও গণহত্যা হতে পারে না। নেলি বা গুজরাটে গণহত্যা হয়েছিল দাঙ্গা নয়। আর আপনি যে সৌদির মুসলমানদের নজির দিলেন, সেকি শ্রমিক-সাধারণের? সাম্প্রদায়িকতার নিয়ন্ত্রণে থাকে মধ্যবিত্ত। যদিও মানসিকতাটা চুইয়ে নিচে অব্দি গড়ায়। আদিবাসি মেয়েকে মুসলমানের ছেলে নিয়ে গেলে তারাও হাতিয়ার নিয়ে যুদ্ধে তৈড়ি হয়। আর নেলির রাজনীতির ধারাবাহিকতা এখনো কেমন অসমে প্রবল তার নমুনা, আজকের যুগশঙ্খের প্রথম সংবাদটি দেখুন:http://www.jugasankha.net/ghy/page_1.html
    "তাই আর্থিক শ্রেণীবিন্যাসে সংরক্ষণ সমর্থনযোগ্য, জাতিগত বিন্যাসে নয়। অন্তত: আমার মতে।" এই জায়গাটা আপনার সঙ্গে আমার মৌলিক বিরোধের জায়গা। এখানে ঐক্যমতের সম্ভাবনা নেই, তাই আপাতত কথা বাড়াচ্ছি না। আমার মতে এই মোলিক বিরোধই বামেদের ব্যর্থতার কারণ হয়ে থাকবে। নির্বাচনী ব্যর্থতা নয়, বিপ্লবী লক্ষ্যের কথা বলছি। হেমাঙ্গকেও তাই অসম ছেড়ে যেতে হয়েছিল। দিশে হারিয়ে। এমনকি আমার ধারণা সরকারি বামেরাও তাঁকে মনে রাখেনি, তাঁর নকশাল সান্যিধ্যের জন্যে। অসমে মনে রাখে, কারণ তিনি অসমীয়াতে বেশ গেয়েছিলেন , লিখেছিলেন। তাঁকে দিয়ে 'বাম' অসমিয়া জাতীয়তাবাদ দাঁড় করানো যায়। ওখানে কেউ শ্রেণি তত্ব মনে রাখে না। শ্রেণি তত্ব আসে, কিছু মনে করবেন না, কেবল দলিত অধিকার দমন করবার বেলা। এই ভুল শ্রেণি তত্বের জন্যেই মুসলমানদের জন্যে ১০ % আসন সংরক্ষণের অনান্তরিক সুবিধেবাদ অবলম্বন করতে হয়, যা আপনাকে বাক করে। কেবল সততা কোনো বিপ্লবী লক্ষ্যে পৌঁছুবার কোনো গ্যারেন্টি দেয় না। আর সততা ব্যাপারটা আপেক্ষিক। খবর নিলে দেখা যাবে কিষেণজীও হয়তো স্‌ৎই ছিলেন। তারপরেও তবে সরকারি বামেরা তাঁর মৃত্যুতে হ্লাদিত কেন? কারণ, তাঁর রাজনীতি তাদের কাছে বিপজ্জনক। ( আমার কাছেও খুব সঠিক নয়, কারণ তাঁদের কোনো গণ উদ্যোগ নেই)
    pi, "একথা তো এঁরা বলে থাকেন। " কারা? মাজহারত নয়! তাঁর লেখাতে তেমন পাইনি তো উল্টোটাই পেলাম।
    maximin, "কিন্তু পথটা তো ভাববাদী হলে চলবে না বোধ হয়। নাকি?" আপনার কি মনে হল আমি ভাববাদী কোনো পথের কথা বলছি? মাজহারও বোধহয় বলছেন না। আমি তাঁকে পড়ছি মাত্র। আমি ঐ 'অপ্রয়োজনের জীবন' আরম্ভ করবে মানুষ--ইত্যাদি বলাতে বা রবীন্দ্রনাথের 'লীলা' শব্দটি ব্যবহার করাতে আপনার সেরকম মনে হয় নি তো? 'অপ্রয়োজনের জীবন' ইত্যাদি কথা মার্ক্সের পাঠেই অন্যত্র আছে। আর আমি মাজহারের কোত্থাও ঈশ্বর পাই নি এখন অব্দি। রবীন্দ্রনাথের 'লীলা'ও অনৈশ্বরিক। হ্যাঁ, কিন্তু 'ভাববাদী' না হওয়া কি এতৈ সহজ? আমি ভুরি ভুরি মার্ক্সবাদী তাত্বিক দেখাতে পারি যারা আসলে 'ভাববাদী', মার্ক্সবাদী স্লোগান দেখাতে পারি যেগুলো ভাববাদী। অই যেমন, ভারতে প্রচলিত সরকারী মার্ক্সবাদীদের শ্রেণিতত্ব--এটা আসলে ইংরেজি বইপড়ে পাওয়া ভাববাদ। ভারতীয় বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না। আবার উল্টোটা 'বস্তুবাদী' না হওয়াও কি এতো সহজ? আপনার সঙ্গে একটু আমোদে মজা করা যাক। আপনি যদি ভারতীয় পৌরণিক চরিত্র ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের পারস্পারিক আচরণ লক্ষ্য করেন, দেখবেন এঁরা প্রত্যেকেই পরষ্পরের সঙ্গে দেখা হলে অন্যকে শ্রেষ্ট জেনে প্রণাম করেন। এর মধ্যে কটি বস্তু জ্ঞান লুকিয়ে আছে। আমরা ভাবতে পারি কি? চেষ্টা করি কি? আমার কাছে মাজহার বা তাঁর মতো তাত্বিকেরা এর জন্যেই শ্রদ্ধেয় যে এঁরা কোন সিদ্ধিতে শেষ অব্দি পৌঁছুলেন তাঁর থেকেও বড় কথা তাঁরা ঔপনিবেশিক সূত্রে পাওয়া আমাদের কিছু বাঁধা বুলির থেকে বের করে আনতে চাইছে। ভারতীয় (উপমহাদেশ) বোধ আর মেধা নিয়ে বস্তুবিশ্বের দিকে তাকাতে বলছেন। মাজহারের একটা লেখা দেখাই, দেখুতো এখানে ভাববাদ কতটা আছে ( আছে কিন্তু...) : -----
    মে দিবসের কাব্য অথবা মাও জে দং সম্পর্কে একটি নোট
    PublishedOn29-04-2010

    ফরহাদ মজহার

    ‘হে শ্রম

    হে পুরুষ ও নারী শ্রম

    হে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক শ্রম

    এমনকি হে শিশু ও বালকদের শ্রম

    আমার কবিতা তোমাদের ইতিহাস

    আমি শ্রম ও শ্রমিকতার কবি…’

    অকস্মাৎ রফতানিমুখী নারীশ্রমিক (১৯৮৫)

    পহেলা মে বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসকে সামনে রেখে এই লেখাটি লিখছি প্রথমত, বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রতি সংহতি জানাবার জন্য। দ্বিতীয়ত, নিছকই ‘দিবস’ হিসেবে যারা পালন করেন তাদের কষে নিন্দা করবার বাসনায়; না, নিন্দা জানাচ্ছি এতটুকুই যথেষ্ট, এর বেশি কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।

    বাংলাদেশের শ্রমিক কথাটি যখন বলি, তখন দেশের অভ্যন্তরে যারা রক্ত ও ঘাম দিয়ে উৎপাদনে নিয়োজিত তাদের কথা তো অবশ্যই বলি, কিন্তু একই সঙ্গে গোলকায়নের এই যুগে অভিবাসী শ্রমিকদেরও একই নি:শ্বাসে উচ্চারণ করছি। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এরাই টিকিয়ে রেখেছেন।

    এখন আমার চোখে ভাসছে বিশেষভাবে পোশাক কারখানার লাখ লাখ শ্রমিক, প্রত্যুষে ছোট ছোট মেয়ে ও কিশোরীদের ঢাকার পথ ধরে হল্লা করতে করতে যাবার দৃশ্য। এই ছবি আশির দশকে আমার বুকে এমনভাবে বিঁধে গিয়েছিল যে, আমি একটি কবিতা লিখেছিলাম :‘অকস্মাৎ রফতানিমুখী নারী মেশিন।’ কবিতাটি লেখার পেছনে এই ভাবনা কাজ করেছিল যে, কবিতার পক্ষে তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ নামক ব্যাপারের সমালোচনা বা পর্যালোচনা আদৌ সম্ভব কিনা। ফলে কবিতাটি ছিল একদিকে রফতানিমুখী পোশাক তৈরি কারখানার কিশোরী শ্রমিকদের প্রতি নিবেদিত, কিন্তু মূলত রফতানিমুখী উন্নয়ন নীতি আমাদের কী দুর্দশায় ফেলবে এবং তার পরিণতি কী হতে যাচ্ছে তারই একটি আগাম বন। কিন্তু ওর মধ্যেও তো কুয়াশা ভেদ করে সকাল আসে – সেই আশাও ছিল। আজ যখন পঁচিশ বছর পর পেছনে তাকাই তখন আবারও বলতে ইচ্ছে :

    ‘তোমরা এখন শ্রম

    তোমরা এখন আমুন্ডুনখাগ্র নারীমেশিন

    তোমরা এখন সেলাইকল ও মোটরচালিত সুঁই

    তোমরা এখন রফতানিমুখী মুনাফা

    তোমরা এখন আপদমস্তক ঘাম ও মেহনতের যন্ত্র

    শ্রম ও শ্রমের জিনিসপত্র রক্তমাংসহীন মেহনত

    নির্মানবিক শ্রম।’

    এরপর আজ ২০১০ সালের মে দিবসে নতুন কী আর বলার আছে?

    শ্রম বা শ্রমিকতার উদযাপন পহেলা মে নামক তারিখে খচিত আছে, জানি – কিন্তু এখন সেটা নিছকই অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে, কোন মূল্য আর অবশিষ্ট আছে কিনা সন্দেহ। পহেলা মে শুধুই একটা দিবস। এর অন্য কী আর তাৎপর্য আছে? তবু শ্রম, শ্রমিকতা এবং শ্রমিককে ভুলি কি করে? পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিপ্লবী রাজনীতির যে প্রচলিত তঙ্কÄ তার অনুমান শ্রম, শ্রমিকতা ও শ্রমিককে ঘিরে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল আর চীন পথ ধরলো পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে – তখন ধারণাগুলোর মুখোমুখি হবার সাহস আমরা করিনি। সেই হিম্মত কি আমরা অর্জন করেছি? প্রতিপক্ষ অবশ্য অনায়াসেই ধারণাগুলোকে বাতিল গণ্য করা শুরু করলো। মার্কস, লেনিন বা মাও জে দং দ্রুত প্রাচীন ইতিহাসে পরিণত হয়ে গেলেন। বামপন্থা নামে বুর্জোয় নির্বাচনী রাজনীতির মধ্যে একটি রাজনৈতিক ধারা স্থিতিস্থাপকতার দোষে টিকে আছে বটে, শহুরে মধ্যবিত্তের দাবি তাদের দল শ্রমিক, কৃষক নিপীড়িত শ্রেণীর পক্ষে। কিন্তু শোষক ও শাসক শ্রেণীর রাজনীতি থেকে তাদের রাজনীতি আলাদা করবার উপায় নেই। অধিকাংশই আওয়ামী রাজনীতির পরিমন্ডলে আওয়ামী পরিবার হয়েই রয়েছেন। আওয়ামী লীগ নিজেও এই ধারাকে সামাজিক ন্যুইসেন্সের বেশি অধিক মর্যাদা দিতে নারাজ।

    বাংলাদেশে লেনিনের শিক্ষা আশ্রয় করে তাৎপর্যপূর্ণ শ্রমিক রাজনীতি গড়ে উঠলেও তার কো-বৈপ্লবিক অভিপ্রকাশ ঘটেনি। সমাজতাঙ্কিÄক দিক থেকে এর তাৎপর্য গবেষণার বিষয়। কিন্তু বুর্জোয়া গণমাধ্যমের ক্রমাগত অপপ্রচার এবং নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে আইনবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া সঙ্কেÄও বাংলাদেশে মাওবাদ নিশ্চিহ্ন না হওয়াটা বাংলাদেশের বিপ্লবী রাজনীতির জন্য সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। সেই কারণে দার্শনিক অর্থে শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতি যারা করেন তাদের মধ্যে মাওবাদীদের প্রসঙ্গ আলাদাভাবে বিচারের দাবি রাখে। এখানে সেই প্রসঙ্গ আলোচনার সুযোগ নেই। তবে মে দিবসকে সামনে রেখে রাজনৈতিক-দার্শনিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে কয়েকটি কথা বলে এই নোটটি শেষ করবো।

    মাওয়ের চিন্তা শিল্পোন্নত দেশে গড়ে ওঠেনি। গড়ে উঠেছে জঙ্গি কৃষক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। লেনিন যদি পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার দুর্বল জায়গা শনাক্ত করে সাম্রাজ্যবাদকে আঘাত হানবার বিদ্যা শিখিয়ে থাকেন, মাও তারও চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে বললেন, শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারণাটা দার্শনিক অর্থে সঠিক, কিন্তু নতুন সমাজ তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়। তার ‘জনগণতান্ত্রিক’ বা ‘ন গণতান্ত্রিক’ বিপ্লবের ধারণা আমরা আরো ঘনিষ্ঠভাবে বিচার করে দেখতে পারি। নতুন সমাজের চিন্তা পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে তৈরি হয়ে থাকা চিন্তা দিয়ে সম্ভব নয়। কিন্তু কিভাবে সেই নতুন মানুষের জন্ম দেয়া সম্ভব? কিভাবে জনগণের মধ্যে নতুন চিন্তার জন্ম দেয়া যায়? মাও বিপ্লবী রাজনীতির জন্য এই দিক থেকে নতুন প্রশ্ন তুললেন।

    সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ এবং সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে জনগণকে একত্র করবার বিদ্যা ও কাজ করবার পদ্ধতি প্রয়োজন আছে, বলাই বাহুল্য। ইতিহাসের গতিপ্রক্রিয়া ও অভিমুখ সম্পর্কে অগ্রসর চিন্তা ও এই মুহূর্তের কাজ শনাক্ত করতে যারা সক্ষম সেই শ্রেণীসচেতন ‘শ্রমিক’ বা সোজা কথায় বিপ্লবী গ্রুপ, গোষ্ঠী, দল বা যে নামেই তাদের আমরা ডাকি না কেন তাদের আবির্ভাব জরুরি। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্যে বিদ্যমান বাস্তবতাকে মনে রেখে তারা এখনকার কর্তব্য নির্ধারণ করতে সক্ষম। এককথায় মাও জে দংয়ের এ চিন্তা ‘গণলাইন’ বলে পরিচিত। এই গণলাইনকে হতে হবে গণশক্তি উদ্বোধনের প্রক্রিয়া, সৈনিকতা ও সামরিকতা থেকে তাকে কোনভাবেই বিচ্ছিন্ন ভাবা যাবে না।

    কিন্তু আমি যতটুকু মাও জে দংকে বুঝেছি, তার কাছে সেটাও যথেষ্ট নয়। বিপ্লব হচ্ছে এমন একটা ব্যাপার যার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘নতুন মানুষ’ গড়ার বিষয়টিই হতে হবে মুখ্য। এ ধারণাও নতুন। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেসব খাদক ও ভোক্তা তৈরি করে সেই মানুষদের নিয়ে তো আর সমাজতন্ত্র হবে না। তাদের বদলাবার পথ কি? গণলাইনের প্রয়োজনীয়তা এ কারণেও বোঝা যায়। বিপ্লবী গণলাইন হচ্ছে নতুন মানুষ গড়ার প্রক্রিয়াও বটে। নতুন মানুষ গড়া। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। মাও জে দং নতুন বৈপ্লবিক ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।

    এ ধারণা থেকে দেখলে আমরা বুঝব, ক্ষমতাসীন শাসক ও শোষক শ্রেণীকে বিপ্লবী কায়দায় উৎখাত করে সেখানে শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতারোহণ বিপ্লবী প্রক্রিয়ার একটি মুহূর্ত মাত্র। জনগণ সচেতন হয়ে উঠলে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে গণাভ্যুত্থান, নতুন সংবিধান সভা আহবান, নতুন ধরনের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য সংবিধান প্রণয়ন ইত্যাদি ব্যাপার তো থাকবেই। ঘটবেও বটে। কিন্তু মাও জে দং শেখালেন বৈপ্লবিক কায়দায় ক্ষমতাসীনদের উৎখাত করা ও গণমানুষের ক্ষমতা দখলকে দেখতে হবে দীর্ঘস্থায়ী বিপ্লবী প্রক্রিয়ার মুহূর্ত হিসেবে বিপ্লবের শেষ লক্ষ্যবস্‌ত্‌ত শুধু রাজনৈতিক ‘বিপ্লব’ নয়। হতে পারে না। এ প্রক্রিয়া নিরন্তর। এমনকি যারা বিপ্লব সংগঠিত করেছে তাদেরও ক্রমাগত নিজেদের ভেতরে বিপ্লবী চেতনা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সংগ্রাম চালাতে হবে। সে ক্ষেত্রে ‘পার্টি’ নয়, বরং জনগণই বিপ্লবী প্রক্রিয়ার মূল ক্ষেত্র। জনগণের মধ্যে থাকা এবং জনগণ থেকে শিক্ষা লাভ করা মাওবাদী রাজনীতির খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক। পার্টিকে কোনভাবেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে সামরিক লাইন চর্চার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা- জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়। লেনিন পার্টিকে জনগণের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন বলে যে সমালোচনা আমরা শুনি, মাও জে দংয়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা হলো তিনি জনগণকে পার্টির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলাকেও বৈপ্লবিক প্রক্রিয়া অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে দরকারি মনে করেছিলেন। এই সমালোচনাগুলো কতটুকু সঠিক তা বিচার করার অবসর আমরা এখানে পাব না। তবে বিপ্লব বলতে আমরা যদি একটি রাজনৈতিক ঘটনা মাত্র বুঝি এবং বিপ্লবের ফল বলতে শ্রমিক শ্রেণীর পার্টিকে ক্ষমতায় যাওয়া বুঝি তাহলে মাও জে দংকে অনুধাবন বা মাওবাদ বোঝা কোনটাই সহজ হবে বলে মনে হয় না। বিপ্লবী রাজনীতিতে মাও জং দয়ের অন্যান্য অসামান্য অবদান ছাড়িয়ে একালে যে কয়েকটি দিক ক্রমাগত উঙ্কÄল হয়ে উঠছে তার মধ্যে রয়েছে এক. গণলাইনের রাজনৈতিক দার্শনিক ও সামরিক তাৎপর্য এবং দুই. বিপ্লবী প্রক্রিয়ার চর্চার মধ্য দিয়ে ‘নতুন মানুষ’ তৈরি করা।

    বিপ্লবী রাজনীতির সঠিকতা বিচারের জন্য সব সময়ই ‘গণলাইন’ অনুসরণের তাগিদ এবং বিদ্যমান ব্যবস্থাকে বৈষয়িকভাবে বদলানো বা রূপান্তরের সঙ্গে একই নি:শ্বাসে ‘নতুন মানুষ’ তৈরি বা মানুষের রূপান্তর ঘটাবার কর্তব্য নির্ধারণ খুবই জরুরি ধারণা। বিপ্লবী রাজনীতিতে ‘নতুন মানুষ’ তৈরির ব্যাপারটি মাও জে দংয়ের নতুন সংযোজন। শোষক ও শাসক শ্রেণীর ক্রমাগত হামলার মুখে নিরন্তর যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পরেও যে কারণে মাওবাদ বারবারই ভস্ম থেকে ডানা ছড়িয়ে আবার আকাশে উদিত হয়, তার অন্যতম কারণ ‘গণলাইন’। পরিস্থিতি ভেদে বহু মাওবাদী দল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ধারণাটি একদিকে গভীর দার্শনিক তাৎপর্যে সমৃদ্ধ অথচ অতিশয় সহজ ও সরল। বিপ্লব করতে হলে মানুষের মধ্যে যেতে হবে, তাদের বাস্তব জগ্‌ৎ ও মনোজগতে বাস করার মধ্য দিয়েই তাদের বিপ্লবী পথে অনুপ্রাণিত করতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক ও সামরিক লাইন নির্ণয়ের –‘নতুন মানুষ’ গড়ে তুলবার শর্ত।

    নেপালে মাওবাদের যে শক্তি আমরা দেখছি তার মাত্রা মাও জে দংয়ের গণলাইন অনুসরণের মাত্রা দিয়ে অতি অনায়াসেই বিচার করা সম্ভব। আজ ভারতের শাসক শ্রেণী বলছে, মাওবাদীরাই ভারতের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি। ঠিক। শুধু ভারতে নয় – পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়। অরুন্ধতী রায় সম্প্রতি মাওবাদীদের সঙ্গে কয়েক দিন থেকেছেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ভারতে মাওবাদ মানে আদিবাসীদের লড়াই, কিংবা আদিবাসীদের লড়াই মানে মাওবাদ। গণলাইন কথাটিরই একটি কংক্রিট ব্যাখ্যা তার এ ব্যাখ্যায় ফুটে উঠেছে। আদিবাসী, নীচু বর্ণের মানুষ, নারী বা নিপীড়িত জনগণের চেতনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে তাদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য লড়াইয়ের নীতি ও কৌশল অনুসরণ করার ফলে মাওবাদকে অরুন্ধতী রায়ের কাছে আদিবাসীদের ন্যায্য লড়াই বলেই প্রতিভাত হয়েছে। সামরিক লাইন সম্পর্কে তার মন্তব্য ছিল কাকে শান্তি আর কাকে সহিংসতা বলব সেই সীমারেখা নির্ণয় করা কঠিন। যেখানে পুরো ব্যবস্থাটাই সহিংসতার ওপর দাঁড়ানো সেখানে ‘শান্তি’র কথা বলা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দুনিয়াব্যাপী সহিংসতাকেই সমর্থন করা নয় কি? রাষ্ট্র নিজেই যেখানে জঙ্গি এবং দুনিয়াব্যাপী যেখানে অনন্ত যুদ্ধ বা ‘জঙ্গ’-এর কথাই সারাক্ষণ বলা হচ্ছে – সেখানে নিপীড়িতদের বিদ্রোহকে জঙ্গিবাদ বলা খোদ জঙ্গিবাদের পক্ষেই অবস্থান নেওয়া হয়ে যায়।

    অরুন্ধতী আগে ভাবতেন যুদ্ধ নারীর জন্য নীপিড়নমূলক। কিন্তু মাওবাদীদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে তিনি বুঝলেন, বিপ্লবী যুদ্ধ নারীকে বরং নতুন মুক্তির স্বাদ দেয়। বিপ্লবী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নতুন মানুষ তৈরির প্রক্রিয়ার কথাই তো অরুন্ধতীর বনে শুনলাম।

    গণলাইন ও নতুন মানুষ তৈরির প্রক্রিয়া – মে দিবসে এ দুটো ধারণা যদি ধরতে পারি তাহলে শ্রমিক শ্রেণী বহুদূর এগিয়ে যেতে পারবে। নিশ্চয়ই। আমরাও।

    ১৪ বৈশাখ ১৪১৬। ২৭ এপ্রিল ২০১০। শ্যামলী

  • Sushanta | 117.198.57.21 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:১০509019
  • এই লেখাতে মাজহারের ভাববাদ এতোটুকুই যে তিনি ভারতের মাওবাদীদের নেপালের মাওবাদীদের সঙ্গে এক করেছেন। এদের স্বাতন্‌ত্‌র্‌য ধরতে পারেন নি। অন্যথা ঠিকই লিখেছেন, "নেপালে মাওবাদের যে শক্তি আমরা দেখছি তার মাত্রা মাও জে দংয়ের গণলাইন অনুসরণের মাত্রা দিয়ে অতি অনায়াসেই বিচার করা সম্ভব।"
  • kallol | 119.226.79.139 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:০৬509020
  • আমি বিপ্লবে বিশ্বাসী কিন্তু হিংসায় নই।
    মাও যাকে বলেন নতুন মানুষ তৈরী করা, সেটার জন্য সমাজ জুড়ে তর্ক চাই, আন্দোলন চাই, তার সাথে চাই পরমতসহিষ্ণুতা।
    আমি সেই মাওয়ের ভক্ত, যে মাও সদর দপ্তরের সবচেয়ে বড়ো দপ্তরী হয়েও বলতে পারেন - সদর দপ্তরে কামান দাগো। নিজের পায়ের তলার জমি পাথর হয়ে গেলে, যিনি হেলায় তার থেকে একলাফে নেমে আসেন কাদামাটিতে নতুন জমি তৈরীর স্বপ্ন নিয়ে। পারেন নি। অসফল মাও ফিরে এসেছেন পুরোনো পার্টিতে, চার চক্রীর ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে। এই পরাজয় আসলে হিংসাকে বুঝতে না পারার ফল। হিংসাকে বেশী বড়ো করে, মহান করে দেখেছিলেন।
    যে কথা হচ্ছিলো নতুন মানুষ গড়া। ধণতন্ত্র থেকে সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদে যাওয়ার এটা একটা বড় পদক্ষেপ। নতুন মানুষ চাই।
    ধণতন্ত্র আমাদের লোভকে, ঈর্ষাকে, পরশ্রীকাতরতাকে মান্যতা দিয়েছে। এগুলোকে দোষ নয় গুণ হিসাবে তুলে ধরেছে। এগুলোই নাকি দুনিয়ার চালিকা শক্তি। লোভ, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা না থাকলে বেশী টাকা, বেশী ক্ষমতা, বেশী নাম চাইবে কেন কেউ। আর এগুলো চাইলে তবেই না আর্ন্তপ্রানিওরশিপ জেগে উঠবে, তবে না শিল্প-কারখানা-চাকরী-মুনাফা-আরও শিল্প-আরও কারখানা-আরও চাকরী-আরও মুনাফা হবে। তবে না মানুষ আগে বাঢ়বে।
    এটা যে আসলে ফাঁদ, পুঁজিবাদের ফাঁদ তা বুঝতে মার্কস হতে লাগে না।
    পুঁজিবাদ কায়েম হয়েছে ১৭৮৯ - ১৭৯৯ সালে ফারাসী বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে। এই ২১১ বছরে, মানবজাতি অজস্র যুদ্ধ, ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান ফারাক। দারিদ্ররেখাকে বারবার পুণর্সংজ্ঞায়িত করার মধ্য দিয়ে মূলস্রোতের হিসাবে দারিদ্র ও দারিদ্র ক্রমেই কমছে, এরকম একটা তঞ্চকতাময় ভাবনা আমাদের মাথায় গজাল মেরে ঢোকানো হচ্ছে। এখানেই নতুন মানুষের প্রয়োজন।
    একসময়ে চীনে মাও-চৌ থেকে সব নেতাই সাইকেল ব্যাবহার করতেন। গাড়ি চাই না, সাইকেলেই হবে। নতুন মানুষকে ঐ না চাওয়ার দর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শুনতে কেমন ভারতীয় ত্যাগের আদর্শের মতো লাগে। লাগলে আমি নাচার। আমি সব ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়ে যেতে বলছিনা, মাওও বলেন নি। আমি বলছি না ""ফিরে দাও সে অরণ্য"", বলার কথা যেটা, লোভ কমাও, চাহিদা কমাও। এখান থেকেই মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন ও বন্টনের বিকল্প বের হতে পারে।
    ঠিক জানিনা এই টইতে এটা পোস্ট করা ঠিক হলো কিনা।
    অত ঠিক থাকা পোষাও না সবসময়ে। নতুন মানুষের উল্লেখ দেখে সামলানো গেলো না।
  • aranya | 144.160.5.25 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:৩৫509021
  • খুব ভাল লিখেছেন, কল্লোল-দা। 'নতুন মানুষ' - শব্দ দুটো বড় নাড়া দেয়।
  • PT | 203.110.246.230 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১৩:০০509022
  • ""....না চাওয়ার দর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে"" কথাটা খুব জরুরী আর এই নিয়ে ভাবার সময় অনেকদিনই হল এসেছে। পশ্চিমা বিশ্বে গ্রীন পার্টিগুলো natural resource-এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ শুরু করে কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করেছিল একসময়ে - কিন্তু তাদের রাজনৈতিক দর্শনের দৌর্বল্যের কারণে তারা ক্রমশ: ক্ষীয়মাণ হয়ে পড়েছে। মনে হয় বাম দলগুলোর তাদের সমবন্টনের রাজনৈতিক দর্শনের প্রচারের সঙ্গে natural resource-এর সীমাবদ্ধতার তথ্যকে আরও জোরদার ভাবে মানুষের নজরে আনার কাজ শুরু করা উচিৎ। সেই দিক থেকে ""না চাওয়ার"" দর্শন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
  • aranya | 144.160.5.25 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১৩:০৯509023
  • খাঁটি কথা, পিটি। এই ধরণের দর্শন/আন্দোলনের সাথে পরিবেশ রক্ষা, সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধ - এ সবকে জড়িয়ে নিতে হবে।
  • kallol | 119.226.79.139 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:১০509024
  • পিটি। কোথাও খুব আনন্দ হচ্ছে। অন্তত: একটা বিষয়ে আমরা একমত।
    আমি যে বারবার বলি বাজারের বাইরে বের হতে হবে, মুনাফার বাইরে বের হতে হবে, সেটা এই জায়গা থেকেই। এমন একটা উৎপাদন ব্যবস্থা যা মুনাফার জন্য নয়। এমন একটা বন্টন ব্যবস্থা যা মুনাফার জন্য নয়।
    আসলে আমরা ভুলে গেছি বা আমাদের ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে এই মুনাফা ভিত্তিক ব্যবস্থার বাইরেও একটা ব্যবস্থা ছিলো। সেই ব্যবস্থাগুলোকে আমরা ""পিছিয়ে থাকা""ব্যাবস্থা হিসাবে চিনতে শিখেছি। আমরা মাছ ধরে খেতাম, ধান ফলিয়ে খেতাম, দুধ দুইয়ে খেতাম। অতিরিক্ত মাছ, চাল, দুধ বেচে জামা কাপড়, ঘর দুয়ার ইত্যাদির খরচ সামলাতাম। সেখানে অনেক সময় বিনিময় প্রথাও চলতো। বলা হলো - ওটা ""পিছিয়ে পড়া ব্যবস্থা""। চাল, দুধ, মাছ সবই বাজারে বেচতে হবে। বিক্রির লাভ থেকে মাছ, দুধ, চাল, জামা, ঘর বাড়ি, নানান পরিসেবা কিনতে হবে। এটা নাকি ""এগিয়ে চলা""।
    এই চক্করটা ভাঙ্গতে পারে চাহিদা কমানোর দর্শন, না চাওয়ার দর্শন।
    লড়াইটা একদমই দার্শনিক স্তরে। একদিন যদি মুনাফার বাইরে থাকা যেতো, তো, আবার একদিন থাকা যাবে, অবশ্যই অন্যতর আঙ্গিকে।
  • maximin | 59.93.216.225 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৪৪509026
  • এরকম নতুন মানুষ ইয়রোপেও আছেন। হল্যান্ড বললে আমাদের ওলন্দাজ দস্যুর কথা মনে হয়। অথচ রটারডামে একটি জুটিকে দেখেছি তারা লাল-রঙা মোটা চালের (ঢেঁকিছাঁটা? ওদেশে কি ঢেঁকিছাঁটা চাল তৈরি হয়, আমাদের দেশে তো হয়না) ভাত খান, নেমন্তন্ন খাওয়ালে অতিথিকেও সেই ভাতই খেতে দেন, মেয়েটি নিরিমিষ খায় ছেলেটি ডিম খায়, খাওয়ার অন্য পদগুলো সবই খুব সাদামাটা, সাইকেল ছাড়া চড়েন না, দুটো বাচ্চাকে অ্যাডপ্ট করেছেন। আরও একটূ বলি, এখানে আমাদের বাড়িতে কয়েকদিন থাকবে শুনে মেয়েটাকে বললাম তুমি শুধু ফ্রুট জুসারটা নিয়ে এসো। যে কদিন রইল আমাদের বাড়ির সবাইকে ফলের রস করে খাওয়ালো। কিন্তু নেদারল্যাণ্ডসের প্রোডাকটিভ টেকনোলজি কি আলাদা হয়েছে অথবা হবে?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন