এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • হেমাঙ্গ বিশ্বাস: গণসঙ্গীতের কবি। বর্তমান প্রজন্ম কতটা চেনে?

    Debashis
    অন্যান্য | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ | ১২৩১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debashis | 94.98.154.34 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০২:০৫508912
  • অনেকদিন ধরেই চেষ্টা ছিল হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে নিয়ে কিছু লেখার। কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখলাম, বড় মুশকিল। সেরকম তথ্য কোথাও নেই যেটা দেখে মোটামুটি একটা লেখা খাড়া করা যেতে পারে। প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম। এমন সময় প্রায় অযাচিতভাবেই যা চাইছিলাম প্রায় সেরকম তথ্যই হাতে চলে এল। তথ্যের সোর্স গোপনই থাক :)।

    হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্ম ১৯১২ এর এই ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে। অর্থাৎ গতকালই ছিল তাঁর শততম জন্মদিন। এর আগে বাংলালাইভে তাঁকে নিয়ে লিখেছি ও একটি তথ্য বিভ্রাট ঘটিয়েছি। সেখানে লিখেছিলাম তাঁর জন্ম অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত হবিগঞ্জে। কিন্তু আসলে তাঁর জন্ম হবিগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত মিরাশী গ্রামে। তাঁর ছোটবলাও এখানেই কেটেছে। বাবা হরকুমার বিশ্বাস, মা সরোজিনী দেবী।

    প্রথম জীবন, মানে তাঁর আঠের বছর বয়সের আগে পর্যন্ত সেরকম কোন তথ্য পাইনি। প্রথম তাঁর উল্লেখযোগ্য তথ্য পেলাম, লবন আইন অমান্যের গ্রেফতারিতে। এই কারাবাস স্থায়ী হয়েছিল প্রায় ছ মাস। এবং তখনকার মতো সাবধান করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটি বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল এই গ্রেফতারির ফলে। তাঁর প্রথাগত শিক্ষায় যবনিকা নেমে আসে এই সময়েই। লবন আইন অমান্যের অপরাধে শ্রীহট্টের মুরারীচাঁদ কলেজ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তিকালে ঘরোয়া আলাপচারিতায় এ নিয়ে তাঁকে আক্ষেপ করতেও শোনা গেছে।

    কিন্তু যে সময় দেশের যুবক সমাজ বার বার নিজেদের ভবিষ্যত ভুলে দেশের মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে স্বাধীনতার যুদ্ধে, সে সময় কি আর এক ১৮ বছরের এক ছেলে কোনও ধমকিতেই ঘরে বসে থাকতে পারে। সুতরাং আবারও একবার আন্দোলনের সমর্থনে পথে নামলেন তিনি এবং আবারও গ্রেপ্তার হলেন। ১৯৩২ সাল। চট্টগ্রামে ততদিনে মাষ্টারদার নেতৃত্বে সেই ঐতিহাসিক সাহসিকতার ঘটণা ঘটে গিয়েছে। সুতরাং পুলিশ আর শুধু সাবধান করে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। তাই এবার আড়াই বছরের কারাবাস এবং তার সঙ্গে চলল অত্যাচারও। চূড়ান্ত অনিয়মের ফলে এই সময়েই আক্রান্ত হলেন যক্ষ্মায়। তবে এই সময় জেলে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গী ছিল অসমিয়া লোকগানের এক শিল্পী। রোগ আর গান, দুইই ছোঁয়াচে। হেমাঙ্গ বিশ্বাস সুর রোগেও আক্রান্ত হলেন। তখন তাঁর বয়স কুড়ি বছর।

    ছাড়া পেলেন ১৯৩৫ এ। ততদিনে জেলেই আলাপ হয়েছে বামপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী রজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে। গানের ছোঁয়াচের সঙ্গে সঙ্গে আদর্শের ছোঁয়াচও লেগেছে মনে। সুতরাং আর নয়। এবার আর গান্ধীর ডাক নয়। নতুন পথের সন্ধানে ১৯৩৮ সালে আবেদন করলেন ভারতীয় কম্যুনিষ্ট পার্টির সদস্যপদের জন্য। তখন তিনি শিলং এ। ঘরের গান্ধীবাদী আদর্শের সঙ্গে তাঁর আদর্শ আর মিলছে না। দূরত্ব বেড়েই চলেছে। অবশেষে ১৯৪০ সালে পাকাপাকি ভাবে ঘর ছাড়লেন তিনি। এই মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যেই ততদিনে তিনি মেতে গেছেন সুরসৃষ্টির খেলায়।

    এরপর '৪০ এর দশক থেকে '৬০ এর দশক, বাংলা সাক্ষী থাকল এক অনন্য তরুনের কালজয়ী সৃষ্টির। একে একে তাঁর হাত দিয়ে বেরিয়ে এল The Internationale এর বাংলায় অনুবাদ, 'জন ব্রাউনের দেহ শুয়ে', 'আমরা করব জয়'। 'ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না' সুর দিলেন এবং গাইলেন পল রোবসনের জন্য। ড্রামের ওপর কম্পোজ করলেন 'কমরেড লেনিনের আহ্বান'। চীন থেকে ফিরে কম্পোজ করলেন 'আমি যে দেখেছি সেই দেশ'। সাঁওতাল বিদ্রোহ স্মরনে লিখলেন 'উর্‌র তাং তাং'।

    ষাটের দশকের প্রথমেই ঋত্বিক ঘটকের দুটি কালজয়ী ছবি মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০) আর কোমল গান্ধারের (১৯৬১) সুরকার হিসেবে বাংলা চলচিত্র মঞ্চে তাঁর আত্মপ্রকাশ। ১৯৬৫ তে সুর দিলেন উৎপল দত্তের কল্লোলে। একে একে সুর দিলেন তীর, লাল লন্ঠন, লেনিন, পদ্মা নদীর মাঝি, লালন ফকির প্রভৃতি নাটক ও সিনেমায়। তবু আমার ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সেরা সৃষ্টি লাগে হিরোশিমা দিবস স্মরণে "শঙ্খচিল", আর "হবিগঞ্জের জালালি কইতর সুনামগঞ্জের কুড়া,/ সুরমা নদীর গাংচিল আমি শূণ্যে দিলাম উড়া"। এছাড়াও "দেহতরী দিলাম ছাড়ি" ও আমার খুব প্রিয় গানগুলির মধ্যে একটি।

    যদিও তাঁর আন্তর্জাতিক সঙ্গীতে প্রচুর জ্ঞান ছিল ও তাঁর প্রথম দিকের প্রায় সবকটি সুরসৃষ্টিই পাশ্চাত্য সঙ্গীতের অনুবাদ বা ধারা পুষ্ট, তবুও তাঁর মূল অনুরাগ ছিল দেশের লোকগান। হয়তো অসমের লোকগানেই তাঁর সঙ্গীতে প্রথম পরিচয়ের ফলেই লোকসঙ্গীতের প্রতি তাঁর এই দূর্বলতা, তবু এ অস্বীকার করা যায় না, তিনি তাঁর কম্পোজ করা গণসঙ্গীতে বাংলা ও অসমের লোকগানের সুরের সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর সহযোদ্ধা সলিল চৌধুরির থেকে এক কদম এগিয়েই। গণসঙ্গীতে পাশ্চাত্য সুর না লোকগানের সুর কিসের প্রয়োগ বেশী জরুরী এই নিয়ে সলিল চৌধুরির সঙ্গে তাঁর তাত্বিক দন্দ্বও ভোলার নয়। এ কথা বলা যেতেই পারে তাঁদের এই দন্দ্বের ফলে আখেরে বাংলা গানে মনিমুক্তোর সংখ্যার বৃদ্ধি বই হ্রাস ঘটে নি।

    যদিও তুলনামূলক আলোচনা করাটা আমার মতো অর্বাচীনের পক্ষে সমুচিৎ নয় তবুও এই দুই মহারথীর ক্ষেত্রে লোভ সামলাতে পারছি না। গানের জগতেও আমার আনাগোনা হাতে গোনা। তবুও......... কুঁজোরও তো চিৎ হতে শুতে ইচ্ছে হয়!

    সলিল চৌধুরী মূলত: বাংলার সঙ্গীতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেল ঘটিয়েছেন। বরং কিছুটা পাশ্চাত্য ধর্মী। কিন্তু লোকগানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান খুব বেশী উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। বরং ছান্দিক সুরের প্রতি তাঁর আগ্রহ তুলনামূলক অনেক বেশী ছিল। এবং তিনি প্রথমত: ছিলেন সঙ্গীতকার ও পরে অন্য কিছু। গান ছিল তাঁর কাছে যাকে বলে First priority। তাই শুধু গণসঙ্গীতই নয়, রোম্যান্টিক গান, শিশুদের গান, সমস্ত ধরনের গানই লিখেছেন ও কম্পোজ করেছেন।

    তুলনায় (একেবারেই আমার মতে) গান এবং সুরের ক্ষেত্রে অনেক বেশী আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গীর অধিকারী হয়েও হেমাঙ্গ বিশ্বাস তাঁর পার্টি ও আদর্শের কাছে দায়বদ্ধতার কারনে গণসঙ্গীতের ঘেরাটোপেই আবদ্ধ হয়ে থাকলেন। যদিও তাঁর সৃষ্ট কিছু লোকগান ও ভাটিয়ালি কালজয়ী, তবু তিনি মূলত: গণসঙ্গীতকার ও পার্টিকর্মী। হয়তো তাই আমরা হেমাঙ্গ বিশ্বাসের প্রতিভার পূর্ণ প্রকাশ থেকে বঞ্চিত হয়েই রইলাম। যদি তিনি এই মায়াজাল কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারতেন তাহলে হয়ত পিট সীগার ও পল রোবসনের এই একনিষ্ঠ ভক্তটিকেও আমরা সলিল চৌধুরীর সঙ্গে একই নি:শ্বাসে স্মরণ করতাম।

    বাংলা গণসঙ্গীতে তিনিই শ্রেষ্ঠ এ কথা বলার জন্য এমন কিছু বুকের পাটা লাগে না। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছিলেন এক সঙ্গীত প্রশাসকও। ১৯৪২ সালে তিনি তাঁর প্রথম দল তৈরী করেন পার্টিরই নির্দেশে। নাম "সুরমা ভ্যালি কালচার‌্যাল স্কোয়াড"। ১৯৪৩, গঠিত হল গণনাট্য সঙ্ঘ। এই গণনাট্য সঙ্ঘ ও প্রগতি লেখক সঙ্ঘের মাধ্যমেই হেমাঙ্গের কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগের শুরু। ১৯৪৬ সালে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ গঠিত হলে হমাঙ্গ অসম প্রাদেশিক শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। তবে তাঁর সর্ববৃহৎ কীর্তি ১৯৭১ সালে গণসঙ্গীতের দল "মাস সিঙ্গার্স" এর গঠন। তাঁর মানসপুত্র ছিল এই মাস সিঙ্গার্স গোষ্ঠী। আমৃত্যু তিনি একে লালন করে গেছেন।

    চল্লিশের দশক থেকেই নিবিড় ভাবে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে থাকেন তিনি। চা শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, রেলওয়ে ও রিক্সা চালক শ্রমিক আন্দোলনে তাঁর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতার পরেই তাঁকে কিছুদিনের জন্য আত্মগোপনও করতে হয়।

    তিনবার চীন সফরেও যান আমৃত্যু বামপন্থী এই মানুষটি। প্রথমবার ১৯৫৭ সালে যক্ষ্মার চিকিৎসার জন্য তাঁকে আড়াই বছর চীনে থাকতেও হয়েছিল। এছাড়া ১৯৭৪ এ কোটনিস মেমোরিয়্যাল কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে ও ১৯৭৯ তে চীন সরকারের অতিথি হিসেবে সস্ত্রীক তিনি চীনে যান। লোকসভায় ১৯৭৪ এ চীনের ওপর ভাষণও দেন তিনি।

    সবশেষে একটু পাওনা দেনার হিসেব করি। আমরা বাঙালীরা নিজেদের বামপন্থী আদর্শের লালনকর্তা বলে গর্ব অনুভব করি বা করেছি। শুধুমাত্র শ্রোতা হিসেবেও হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কাছে আমাদের অনেক ঋণ জমা আছে। কিন্তু তাঁর জন্য আমরা কি করেছি? তাঁর জীবদ্দশায়ই হোক বা তাঁর স্মরণে। ১৯৮৭ তে তাঁর মৃত্যুর পর ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের অসম শাখা হেমাঙ্গ বিশ্বাস মেমোরোয়্যাল অ্যাওয়ার্ড দেয় প্রতি বছর উদীয়মান সঙ্গীত শিল্পীদের। কিন্তু তিনি যাদের মাতৃভাষায় গান সৃষ্টি করে গেছেন সেই আমরা বাঙালীরা তাঁর জন্য তেমন কিছু করে ওঠার সময় পাই নি আজও এখনও। তাঁর মৃত্যুর পর তেইশ বছর ক্ষমতায় থেকেও যে আদর্শে বিশ্বাস করে তিনি তাঁর ভবিষ্যতের পরোয়া করেন নি সেই বামপন্থীরাও তাঁর স্মরণে উল্লেখ করার মতো কিছুই করেনি। ১৪ ই ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন আর ২২ শে নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদিন নিরবে আসে, নিরবেই পেরিয়ে যায়।

    "দেহতরী দিলাম ছাড়ি ও
    গুরু তোমার নামে
    ভব তরী দিলাম ছাড়ি ও
    গুরু তোমার নামে
    আমি যদি ডুবে মরি
    কলঙ্ক তোমার নামে"

    এর চেয়ে সত্য আর কিছু নেই। আজকের প্রজন্ম যদি হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে না চেনে কলঙ্ক আমাদেরই বাঙালী বামপন্থীদের নামে। তাই তাঁকে চেনানোর দায় আর কেউ নিক চাই নাই-ই নিক, বামপন্থীদের নিতেই হবে। এটা আদর্শগত দায়ীত্ব।
  • Debashis Chakrabarty | 94.98.154.34 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০২:০৮508959
  • যদি কেউ আরও তথ্য দিয়ে হেমাঙ্গ বিশ্বাস সম্পর্কে কিছু লেখেন, খুব ভালো লাগবে।
  • Biplab Pal | 63.118.38.200 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০২:০৮508948
  • কেন চিনবে?

    গণ সংগীত জন প্রতিরোধের সঙ্গীত। এই সঙ্গীতের ভিত্তি তখনই দৃঢ় হয় যখন তা জনগণের প্রতিরোধের হাতিয়ার হয়। এটাই ইতিহাস দেখেছে ওয়ারশতে, স্টালিনগ্রাডে ।অ।অ।

    ভারতের বাম আন্দোলনের ইতিহাসে না এসেছে এই ধরনের কোন ঐতিহাসিক আন্দোলন ( যেকটা ছোট খাট নাম শোনা যায় সেগুলো অকিঞ্ছিতকর) -না তারা পেরেছেন বাম চেতনাকে বৃদ্ধি করতে। নইলে কৃষ্ণনগরের মতন শহরে, কালকেই শুনলাম কন্যা সন্তান হয়েছে বলে সদ্যোজাত সন্তানকে বারান্দায় ছুড়েছে। এর পরে আছে বাঙালীর টনটনে সাম্প্রদায়িক মন আর " শ্রেনী" অবস্থান। সেই বাম এনলাইটমেন্ট বাঙালীদের কোথায়? কোন বামনেতার বাড়িতে ঝি চাকর নেই?? "বামপন্থা" বলতে খুব নীচু মানের একটা জগাখিচুরি টানেল ভিশনের কথা ছেড়েই দিলাম।

    ভারতের বামআন্দোলনের ইতিহাসে কিছু নেই-ফাঁকা- এদের কথা, কে কেন মনে রাখবে? যে জাতির টনটনে শ্রেণী অবস্থান, সাম্প্রদায়িক মন, কুসংস্কারে অগাধ বিশ্বাস-সেই জাতির ইতিহাসে কোন গণআন্দোলন বা বাম আন্দোলন এসেছে, এ মানতে আমি রাজী না। সেই বিপ্লবীদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত যা হয়েছে তা কিছু মধ্যবিত্তের হজুগবাতি।
  • Debashis | 94.98.154.34 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০২:২০508970
  • বিপ্লব বাবু

    যদি সারা ভারত ঘুরে দেখেন, দেখবেন বোধহয় উত্তর-পূর্ব ভারত ছাড়া পশ্চিমবঙ্গই সবথেকে বেশী অসাম্প্রদায়ীক। উত্তর-পূর্ব ভারতের জাতিগত শ্রেণীবিন্যাস মূল ভূখণ্ডের মতো নয়, এবং সংস্কৃতিও। এর অসাম্প্রদায়ীক মনোভাবের পেছনের কারনও একই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সে কথা খাটে না। তবুও পশ্চিমবঙ্গ আপেক্ষিকভাবে যে অসাম্প্রদায়ীক তার কৃতিত্ব বামপন্থী আন্দোলন দাবী করতে পারে বইকি। তাই সারা ভারতের ক্ষেত্রে তা যতই অকিঞ্চিৎকর হোক না কেন, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বামপন্থী আন্দোলন পুরোদস্তুর প্রাসঙ্গিক। সেটা বামেদের নিরবিচ্ছিন্ন ৩৪ বছরের ক্ষমতায় থাকায় প্রমানিতও।
  • Debashis | 94.98.154.34 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০২:২৯508981
  • এই প্রথম গুরুতে এ ধরণের লেখা লিখলাম। ভয়ে ভয়ে আছি, কি প্রতিক্রিয়া হয়।
  • kallol | 115.241.98.158 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০৬:০৯508992
  • দেবাশিসবাবুকে ধন্যবাদ, হেমাঙ্গদাকে নিয়ে লেখার জন্য।
    শুধু একটা ছোট্ট ভুল আছে তথ্যে। ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না - গানটির সুরকার হেমাঙ্গদা নন। নামটা এখনই মনে পড়ছে না। একটু সময় চাই। এই গানটির কথা সামান্য পাল্টে, সুর প্রায় একই রেখে ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যর গাইতো ১৯৭৭-৭৮ সালে, নিজেদের সুর বলে। সেটা নিয়ে কোর্টকাছারীও হয়। হেমাঙ্গদা সেই সুরকারের হয়ে বলেছিলেন।
    একটা সময় হেমাঙ্গদার বাড়িতে মাস সিঙ্গার্সের রিহার্সলে প্রায়ই যেতাম। অনেক বন্ধুই ওখানে গাইতো। প্রসাদ, প্রীতি, বাবলু আরও অনেকে। কোটনিস কমিটির সভাগুলোতে মাস সিঙ্গার্সের গান হবেই হবে। আমরাও যেতাম ঐ গানের টানে।

  • kallol | 119.226.79.139 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০৮:৫৬509003
  • হ্যাঁ, মনে পড়েছে। ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না - গানটির সুরকার ও গীতিরূপ কমল সরকারের। কমলবাবুর আরও কিছু গান তখন খুব গাওয়া হতো - রুখবে কে আর / উদ্দাম এই প্রাণের জোয়ার / হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতিয়ার / আজ আমরা মিছিলে এসেছি। আর একটা গান তার শুরুটা ছিলো প্রাণের মিছিল আজও চলছে.....
    আসলে ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না নিয়ে ইয়ুথ কয়্যারের সাথে বিতর্কে হেমাঙ্গদা কমলবাবুর সপক্ষে খুব বড়ো একটা ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাইতে অনেকে ভাবতেন ওটা হেমাঙ্গদার সুর। মামলা শেষ পর্যন্ত হয় নি। তবে কথা হয়েছিলো। আমরা যারা তখন মাঠে ময়দানে গান গাইতাম, সমস্ত অনুষ্ঠানে এই গানটি গাইতাম ইয়ুথ কয়্যারের বাপান্ত করে।
  • Sushanta | 117.198.48.60 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০৯:১০509014
  • প্রথমত দেবাশিস বাবুকে ধন্যবাদ, জন্মদিনে হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে স্মরণ করবার জন্যে। বেশ তথ্যপূর্ণ লেখা। আমি আর যোগ দিতে পারলে ভালো লাগত। ছিলও, কিন্তু এই মুহূর্তে সময় দিতে পারছিনা। তবে দুই একটি দিক নিয়ে ভাবতে বলব। এটি ঠিক যে তিনি পার্টি কর্মী হিসেবে শুরুটা করেছিলেন। তার ফল দিয়েছিল অসমে। তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের যে বিশাল কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল তাতে জড়িয়েছিলেন জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা, বিষ্ণুরাভা, ভূপেন হাজারিকার মতো বিশাল ব্যক্তিত্ব। কিন্তু শেষদিকে তিনিও কি ছিলেন কোনো পার্টির অধীন? তবে সেই অধীনতা তাঁর বৈচিত্রে কোথাও বাঁধা হয়েছিল বলা যাবে না। যদি বাঁধা পড়েছিলেন তবে সেটি তাঁরই নিজের তাত্বিক ঘেরা টোপে। তিনি মুম্বাইতে নিজেকে বিক্রয়যোগ্য ভাবেননি। এই মাত্র। তাঁর পূর্বসূরী সলিল চৌধুরী বা ভূপেন হাজারিকা সেটি করেছিলেন, তাই লোকে তাঁদের আজ বেশি চেনে। লোক সঙ্গীতকে নেয়ে তাঁর পরীক্ষা নিরীক্ষাই আরো বড় আকার নিয়েছিল, বিকশিত হয়েছিল ভূপেন হাজারিকার গানে। এটা ভালৈ হয়েছিল। কিন্তু এই যে আপনি লিখলেন,"উত্তর-পূর্ব ভারতের জাতিগত শ্রেণীবিন্যাস মূল ভূখণ্ডের মতো নয়, এবং সংস্কৃতিও। এর অসাম্প্রদায়ীক মনোভাবের পেছনের কারনও একই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সে কথা খাটে না। তবুও পশ্চিমবঙ্গ আপেক্ষিকভাবে যে অসাম্প্রদায়ীক তার কৃতিত্ব বামপন্থী আন্দোলন দাবী করতে পারে বইকি" এমন বিশ্বাসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ব্যর্থতাও। কে বললে উত্তরপূর্ব অসাম্প্রদায়িক? সাম্প্রদায়িকতা যদি মুসলমান বিদ্বেষমাত্র বোঝায় তবে এখানেই প্রতিনিয়ত মুসলমানেরা বিদেশি বলে হেনস্তা আর দাঙ্গার স্বীকার হবার আতঙ্ক নিয়ে জীবন যাপন করেন। ষাটের দশকে হেমাঙ্গ ভূপেনকে যে হারাধন-রঙমেনের গান নিয়ে গোতা সমে ভ্রমণ করতে হয়েছিল, বা ৮৩র দাঙ্গার সময় সে রকম কিছু না করতে পেরে তাঁর যে হতাশা হলো, তা ঐ সাম্প্রদায়িকতার জন্যেই। বামপন্থা ঠেকাতে পারেনি। আর প্রতিনিয়ত জাতিদাঙ্গার স্বীকার হচ্ছে যে পূর্বোত্তর , একে সাম্প্রদায়িকতা বলা যাবে না? এই যে মণিপুর আজ দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে একে সাম্প্রদায়িকতা বল যাবে না? হেমাঙ্গভূপেনরা এই সাম্প্রদায়িকতার চরিত্র কিছুই বুঝতে পারেন নি। তাই হেমাঙ্গ যেমন ডানাকাটা পাখিটি হয়ে কলকাতাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, ভুপেনও তেমনি আশ্রয় নিয়েছিলেন আসু বিজেপির কোলে। পশ্চিম বাংলাতে বামেরা সাম্প্রদায়িকতা আটকে দিয়েছে, কিসে বোঝা যাবে? নরেন্দ্রমোডীর মতো দাঙ্গা হয়নি বলে? কাটারা মসজিদের কথা না হয় তুললামই না। কিন্তু সাচার কমিটির প্রতিবেদন কি বলে না যে বামেরা সাম্প্রদায়িকতা আর বর্ণবিদ্বেষের এক অত্যাধুনিক স্টাইল রপ্ত করেছিলেন? 'বামে'রা মূলত 'কেরালা' বাদ দিলে একটি বিশুদ্ধ বাঙালি বর্ণহিন্দু দল। আর তাই তারা অসম থেকে প্রায় সম্পূর্ণই উচ্ছেদ হয়ে গেলেন। পশ্চিম বাংলাকে যদি আপাত 'গুজরাট-মিরাট-ভাগলপুরহীন' দেখে অসাম্প্রদায়িক বলতে হয়ে তবে তাঁর কৃতিত্ব পুরোটাই মুসলিমলীগের আর সেইসব কংগ্রেস-জনসঙ্ঘীদের যাদের দৌলতে দেশ ভাগ হলো, আর মুসলমান জনসংখ্যা ২৫%এর ধারে কাছে নেমে গেল। মুসলমানরা যেখানে আর শাসন ক্ষমতাতে প্রতিদ্বন্দ্বি নয়, সেখানে 'গুজরাট না নেলি 'হবেই কেন? আমারও ক্ষোভ রয়েছে, হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে অসমে অসমীয়ারা যতটুকু মনে রেখেছেন বাঙালিরা ততটাও নয়। মাঝে মধ্যে ভাবি কেন রাখবে বলুন? 'অসমিয়া-বাঙালি'র নির্বিরোধ ঐক্যের তত্বতো অসমিয়া শাসকদের স্বার্থেই যায়। বাঙালির অধিকারের কী হবে? ইতিহাসের সবচে মর্মান্তিক আক্রমণ যখন বাঙালি হিন্দু মুসলমানের উপর হচ্ছিল তখনতো হেমাঙ্গ কলকাতার নিরাপদ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজেও এখানে টিকটে পারেন নি, অথচ এই নিয়ে তাঁর ভাবনা এগোয় নি, 'বাম' বিশ্বাসের কাছে মেধাবন্দি হয়ে আটকে ছিল। আর তা যদি না হবে, তবেতো বলতেই হবে 'প্রতিষ্ঠান' কলকাতা তাঁকেও টানছিল। মোহ ছাড়তে পারছিলেন না। আমার মতে দুটৈ সত্যি। তাঁর ছেলেমেয়েরা বাম জমানার সেই প্রতিষ্ঠার সুবিধে নিয়েছিলেন প্রচুর। শুনেছি তাঁর মেয়েটি অধ্যাপিকা। ছাত্র পড়ানোতে একেবারেই ফাঁকিবাজ। পরিবর্তন জমানাতে কেমন আছেন জানি না। বাম জমানাতে সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন ত্রাশ। এবারেই আমি, যাদবপুরে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কথা অত্যন্ত গৌড়বের সঙ্গে বলছিলাম। আমাদের অসমে প্রথম যুগের এক উল্লেখযোগ্য কবিও তিনি। 'সীমান্ত প্রহরী' নামে তাঁর একখানা বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থও রয়েছে। কিন্তু তাঁর গলপ করবার বেলা অন্য অধ্যাপকেরা তাঁর পুত্র কন্যাদের অনেক 'সুকীর্তি'র কথা আমাকে শুনতে হলো। তাঁর পুত্রকে আমার শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল গেলবার। একবার ইচ্ছে হয়েছিল , আলাপ করি। পরে পিছিয়ে এলাম। কেন জানেন। আমার মন বলছিল, ইনি আমাদের ঘরের 'ত্যাজ্যপুত্র'। আমাদের বিশ্বাসকে পণ্য করে দেউলিয়া করে দিয়েছেন।
  • Ramkrishna Bhattacharya GHANADA | 223.223.141.223 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০৯:৫১509025
  • হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ওপর এই টইটি খুবই তথ্যমূলক। আজকের প্রজন্ম তাঁকে চেনে না! আমরাই বা কতটুকু জেনেছি!!!!!!!!!
    যাই হোক, এটা সত্যি, তাঁর ছেলেমেয়েরা বাবার নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের যা করার করে নিয়েছেন।
    ৫৭ বর্ষ, জানুয়ারী ১৯৮৮ র পরিচয় পত্রিকায় ( ১৪- ২৩ পৃষ্ঠা), হেমাঙ্গ বিশ্বাসের একটা সাক্ষাৎকার বেরিয়েছিল। এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন- সৌরী ঘটক।
    এখন সময় নেই, তবে আমি এই লেখাটা আমি এখানে টাইপ করবো। তা হলে, একটু কিছু ওনার নিজের মুখ থেকে জানা যাবে।
  • kallol | 119.226.79.139 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১০:০৩508913
  • হেমাঙ্গদাকে একেবারে ভুলে যায়নি সকলে। জন্মদিনের সন্ধ্যায় তারা বাংলায় একটা অনুষ্ঠান হয়। মৈনাক (হেমাঙ্গদার পুত্র), ক্ল্যান সেন বরাট আর কালিকাপ্রসাদ হেমাঙ্গদাকে নিয়ে কথা বলেন।

    এই প্রজন্মের হেমাঙ্গদাকে মনে রাখার কোন কারন নেই। হেমাঙ্গদার গান একটা বিশেষ সময়ের গান। যদি সাল তারিখের হিসাবে আসি, তবে ১৯৪০ থেকে ১৯৮০ এই চল্লিশ বছর জুড়ে ওনার গান প্রাসঙ্গিক ছিলো। তবে এই প্রাসঙ্গিকতা এসেবারেই বাম রাজনীতি করা, বিশেষ করে নকশাল রাজনীতি করা মানুষদের কাছে। তার বাইরে উনি নিজেই পা বিশেষ রাখেন নি। আজ যখন বাম রাজনীতিই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পরেছে, তখন আজকের প্রজন্ম কেনই বা হেমাঙ্গদাকে মনে রাখবে।

    হেমাঙ্গদা অন্য একটা পরিচয়ে অনেক বেশী পরিচিত হতে পারতেন, লোকসঙ্গীতের গায়ক ও গবেষক হিসাবে। কিন্তু তাতেও উনি খুব উৎসাহিত ছিলেন না। খালেদ চৌধুরী যেমন নাটকের মঞ্চ সজ্জা নিয়েই থেকে গেলেন, লোক সঙ্গীত বরাবরই ওঁর কাছে মেজছেলেই রয়ে গেলো, হেমাঙ্গদাও গণসঙ্গীতের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে লোকসঙ্গীতকে দুয়োরানী করেই রাখলেন। নইলে নির্মলেন্দু, কালী দাশগুপ্ত, রণেন রায়চৌধুরী, দীনেন রায়চৌধুরীর সাথে লোকসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ হিসাবে হেমাঙ্গদার নামও থাকতো।

    হেমাঙ্গদা মারা যাবার পর পর দেশ পত্রিকায় ওনার একটা সাক্ষাতকার বের হয়েছিলো। সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন নাট্য সঙ্গীতের এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা দেবাশিস দাশগুপ্ত। সাংঘাতিক সব কথা বলেছিলেন তাতে হেমাঙ্গদা। যে লোকসঙ্গীতকে চিরকাল ""ব্যবহার"" করে গেলেন তিনি, তাকেই গণসঙ্গীতের মর্যাদা দিয়েছিলেন। মনে আছে, নামাজ আমার হৈল না আদায় নিয়ে বলেছিলেন, এটা তো একজন গ্রামের খেটেখাওয়া মানুষের যন্ত্রনার কথা, এই গানটিকেই কেন গণসঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া হবে না।
    এটা হেমাঙ্গদার আগেকার মতের ১৮০ডিগ্রি উল্টো দিকের কথা। উনি স্বীকার করেছেন, যে ওনারা যে লোকসঙ্গীতকে ব্যবহার করে গণসঙ্গীত বানিয়েছেন, সেগুলো গ্রামের মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হয় নি তার কথার কারনে। কাস্তেটারে দিও জোরে শান / কিষান ভাই হে বা আমরা তো ভুলি নাই শহীদ - এই গানগুলো লোকসঙ্গীতের আধারে শহরের বামপন্থী মধ্যবিত্তের গান হয়ে গেছে।
    আমাদের দুর্ভাগ্য এগুলো নিয়ে আর হেমাঙ্গদার সাথে কথা হতে পারলো না।
    ঐ সাক্ষাতকারেই স্বীকার করেছিলেন সলিল চৌধুরীর সাথে ওনার বিতর্কে, সলিল অনেকটাই ঠিক ছিলেন। বলেছিলেন, তখন হারমনির প্রয়োগ নিয়ে যা ভাবতাম সেটা ঠিক ছিলো না।
  • kallol | 119.226.79.139 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১০:২৯508924
  • হেমাঙ্গদার কিছু অসাধারণ সৃষ্টি:
    কালো বস্তির পাঁচালী : কবিতা বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুর হেমাঙ্গ বিশ্বাস। এই গানটি মৌসুমী ভৌমিকের প্রথম রেকর্ড হাওয়া গান।
    শঙ্খচিল : কথা ও সুর হেমাঙ্গ বিশ্বাস। চীনা সুর নিয়ে অসাধারণ নিরীক্ষা।

    আমরা তো ভুলি নাই শহীদ : কথা ও সুর হেমাঙ্গ বিশ্বাস। এই গানটা প্রীতি নামে একটি মেয়ে গাইতো। আমরা ওকে গণসঙ্গীতের লতা বলতাম।

    বাঁচবো বাঁচবোরে আমরা : কথা ও সুর হেমাঙ্গ বিশ্বাস। এটা বিজন ভট্টাচার্যের খুব প্রিয় গান। উনি নিজে খুব গাইতেন। ওনার কোন একটা নাটকে ব্যবহার করেওছিলেন।

    মাউন্টব্যাটন মঙ্গল কাব্য : কথা ও সুর হেমাঙ্গ বিশ্বাস / ভূপেণ হজারিকা। এটি সুরের দিক থেকে একটা অসামান্য কাজ, বিহু-ভাটিয়ালী ফিউশন।
  • vc | 121.241.218.132 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১০:৫০508935
  • জন হেনরীর বাংলা ভার্সনটা যেটা আমরা শুনি সেটা ইংরিজী ভার্সন (বেলাফন্তে এবং পীট সীগার দুজনের গলায় শুনেছি) থেকে অনেকটাই আলাদা। এটাও পুরোটা - কথা এবং সুর - কি হেমাঙ্গ বিশ্বাসের?
  • Ramkrishna Bhattacharya GHANADA | 223.223.141.223 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১১:০৫508941
  • ".... আমাদের প্রধান কাজ হলো সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে উত্তরণ। আমাদের সমাজে সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রভাব যে কত বেশী, তার উদাহরণ পাওয়া যায়- এখনও জাতপাতের লড়াই, ধর্মীয় সংঘাত, হরিজনকে পুড়িয়ে মারার মত প্রভৃতি ঘটনা। এই সমস্ত সামন্তবাদী চিন্তা এবং ধ্যানধারণা আমাদের ভেতর লুকিয়ে থাকে। আমরা PoliticalEconomics এর চেয়ে ClassStruggle ভালো বুঝি। কিন্তু সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্বটা খুব কমই বুঝি। এই দ্বন্দ্ব সম্পর্কে তখনও আমাদের কোনো পরিস্কার ধারণা ছিল না, এখনও নেই।"
    ..........................................হেমাঙ্গ বিশ্বাস
  • Bratin | 122.248.183.1 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৩:৩৭508942
  • দেবাশিস বাবু ধন্যবাদ। আমি এই বিষয়ে কিছু জানতাম না। আলোকিত হলাম। ভালো থাকবেন।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:০৫508943
  • খুব আলাদা তো কিছু না। কথাও তো প্রায় একই। হ্যাঁ, বাংলাটা হেমাঙ্গ বিশ্বাসের।
  • kallol | 119.226.79.139 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:১৭508944
  • জন হেনরীর সুর তো প্রচলিত ইংরেজি আমেরিকান ব্যালাডের সুর। যদিও জন হেনরীর একাধিক ব্যালাড আছে। আমি দুটো জানি। দুটোই বেলাফন্তের গাওয়া। একটা যেটা বাংলায় হয় সেই সুরের মতো, অন্যটা ছাদ পেটানোর মতো ওয়ার্ক রিদমে। শুরু হয় হে র‌্যাটলার হে র‌্যাটলার বলে। এটা ধুয়ো। তার সাথে সাথে গল্পটা গাওয়া।
    জন হেনরীর বাংলা অনুবাদ রঞ্জন প্রসাদের। সেটাই হেমাঙ্গদারা গাইতেন।
    আমরা ঐ অনুবাদটাকে রেখেই একটু পাল্টে নিয়েছিলাম।
    জন হেনরীর চির প্রিয় সঙ্গিনী / নাম তার মেরী ম্যাকডোলিন / সুরঙের কাছে এসে কান পেতে শুন তো সে হেনরীর হাতুড়ির বীণ - এই স্তবকটা আমরা বাদ দিয়েছিলাম। আর শেষ স্তবক : প্রতি মে দিবসের গানে গানে / নীল আকাশের তলে দূর / মজুরের জয়গানে কান পেতে শোনো ঐ / হেনরীর হাতুড়ির সুর - এটাও বাদ দিয়েছিলাম।
    কারন মূল গানে (বেলাফন্তের গাওয়া) এগুলো ছিলো না। ছিলো :
    John Henry had a sweet little wife
    Her name was Polly Ann
    When Johnnie got sick and
    He had to go to bed
    Poly drove that steel just like a man
    Lawd, Lawdy Poly drove that steel just like a man

    জন হেনরীর চির প্রিয় সঙ্গীনী / নাম তার পলি অ্যান / হাতুড়িটা তুলে নিয়ে / ঝাঁপিয়ে পড়লো কাজে / নয় সে কারও চেয়ে কম

    শেষ স্তবক :

    John Henry was a steel driving man
    He drove steel all over this land
    And every time a train goes rumbling by his grave
    They say 'Down yonder lies a Steel driving man!'
    Lawd Lawdy Yonder lies a steel driving man.

    জন হেনরীর সমাধির পাশে ঐ / যতোবার ট্রেন যায় ঝম ঝম /সব্বাই বলে হেঁকে শুয়ে আছে ঐখানে / মহান শ্রমিক একজন / শুয়ে আছে আমাদের জন জন জন / মহান শ্রমিক একজন।

  • siki | 123.242.248.130 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:৩৭508945
  • বাপ রে! এটা শুনি নাই।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:৪০508946
  • আচ্ছা, রঞ্জন প্রসাদ শুনে মনে পড়ল, পথের প্রান্তে ঐ সুদূর গাঁয়ে, এটাও কি রঞ্জন প্রসাদের লেখা? জামাইকা ফেয়ারওয়েল?
  • PT | 203.110.246.230 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬:০৯508947
  • জন হেনরীর ব্যালাডের সঙ্গে সদ্য প্রয়াত শম্ভু ভট্টাচার্যের নাচ দেখেছি - অনবদ্য।
  • vc | 121.241.218.132 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬:২০508949
  • বেলাফন্তের একটা ভার্সন যেটা আমি শুনেছি তাতে হেনরীকে হোয়াইট হাউজে কবর দেওয়ার কথা আছে! এটার শুরু

    When John Henry was a little baby
    Sitting on his daddy's knees...

  • kallol | 119.226.79.139 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬:৪০508950
  • বেলাফন্তের যেটা শুনেছি সেটার শুরু
    John Henry he could hammer
    He could whistle he could sing
    Picked up his hammer early in the morning
    Just hear his hammer ring
    Lord o lord just hear his hammer ring

    তাতে এই স্তবকটাও ছিলো
    When John Henry was a little baby
    Sitting on his daddy's knees...

    আসলে জন হেনরী খুব জনপ্রিয় ব্যালাড। ফলে এর নানান ভার্সন আছে।
  • vc | 121.241.218.132 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬:৪৬508951
  • হ্যাঁ, এটাই।
  • kallol | 119.226.79.139 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬:৫৯508952
  • হেমাঙ্গদার বাসায় রিহার্সল শুনতে শুনতে আলু-মুড়ি মাখা ও চায়ের সাথে প্রচুর আড্ডা হতো। মাঝে মাঝে জর্জদা আসতেন। তখন ১৯৭৫ খুব টালমাটাল চলছে। জেপির আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে বিহারে। এখানে বামেরা দোলাচলে। কারন জেপি দলহীণ গণতন্ত্রের কথা বলছেন। এর মধ্যে কথা চলছে কিভাবে শাসনকে বোকা বানিয়ে গান গাওয়া যায়।
    তো, জর্জদা শুরু করলেন।
    - ৬২তে চীন-ভারত যুদ্ধের পরে তো খুব কড়াকড়ি। কমিউনিষ্টি মার্কা গান চলবে না। আগুন জ্বালো গাইবার দ্যায় না, মরা গাঙ্গে বান এসেছেও আটকাইত্যাছে। আমি তখন গিয়া গাইয়া আইলাম - ওরে ভীরু তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার। হেইডা পাস হইয়া গেলো।
    আমরা জানতে চাইলাম ঐ গানে কি এমন আছে যে আটকাতেও পারতো।
    - ছ্যামড়া, বুঝেও না। ঐ কইতে আছে না - পশ্চিমে তুই দেখ না চেয়ে মেঘে আকাশ ডোবা - মানে কি, ইউরোপ আমেরিকার আকাশ ম্যাগে ডাকা। হের পর কয় কি - আনন্দে তুই পূবের দিকে দেখ না তারার শোভা - মানে কি, র‌্যাড স্টার উভার সাইনা!
    বোঝো।
  • kallol | 119.226.79.139 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৭:০৩508953
  • সিকি - হ্যাঁ ঐ সেই রঞ্জন প্রসাদ। তোর বাসায় গেয়েছিলাম ওর গান - জনহীন জাতীয় সড়ক। বাংলায় প্রথম রক অ্যান্ড রোল প্রচেষ্টা।
    প্রসাদদা প্রচুর অনুবাদ করেছে। জামাইকা ফেয়ারওয়েলের অনুবাদ ওঁরই করা।
  • Debashis | 2.89.224.254 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৮:৫১508954
  • @ সুশান্ত বাবু

    আমার অসমে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল কিছুদিন, কর্মসূত্রে। ডিগবৈ আর গুয়াহাটি এই দুই জায়গায়। ইণ্ডিয়ান অয়েল কোম্পানির একটি প্রোজেক্টের সূত্রে প্রথম যখন ডিগবৈ পৌঁছাই সঙ্গে ফ্যামিলি ছিল। বার বার করে আমার কোম্পানির লোকজন সাবধান করে দিয়েছিল যাতে করে প্রথমেই ফ্যামিলি না নিয়ে যাই। ঘরেও আতঙ্ক। অসম মানেই আলফা, বোমাতঙ্ক আর খুন..... এই ছিল সকলেরই ধারণা। ছিল বলছি কেন, এখনও তাইই আছে। সারা ভারতের। আমার বাড়িও ব্যতিক্রম নয়।

    আপনারা ভাবতে পারেন হেমাঙ্গ বিশ্বাসের টইয়ে আমার অসম ভ্রমণের গল্প লিখছি কেন! লিখছি এই কারনে, যে আমি অসমকে যে ভাবে, যে চোখে দেখেছি, সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমার উত্তর-পূর্বাঞ্চল সম্পর্কে ঐ উক্তি। আর জাতি বৈরিতার কথা বলে শুধু দোষরোপ করলে বোধহয় সমগ্র অঞ্চলটির প্রতি অন্যায়ই করা হবে। কারনে আসছি।

    অসমে প্রথমদিনেই ড্রাইভারের সঙ্গে বাড়ির সন্ধানে বেরিয়ে প্রথমে যে বাড়িটি পছন্দ হল তার মালিকের নাম ইয়াকুব আলি। ভদ্রলোকও ইণ্ডিয়ান অয়েলের কর্মী। সুতরাং ঠিক করলাম এখানেই থাকব। যদিও ইণ্ডিয়ান অয়েলের কোয়ার্টারে থাকার কথাই সবাই বলেছিল, কিন্তু আমার প্রথম এϾট্র বারাউনি রিফাইনারি ছাড়া আর কোথাও আমি কলোনিবদ্ধ জীব হয়ে বেঁচে থাকতে চাইনি। মাঝখানে জামনগরের রিলায়েন্স ছিল ব্যতিক্রম। তাই গুজরাতকে আমার ভালো করে চেনা হল না দু বছর বাস করেও।

    হ্যাঁ! কলোনি আমি পছন্দ করি না, তার কারন কলোনির লোকেরা সবসময় স্থানীয়দের থেকে আলাদাই হ'ন। একটু সরে থাকতেই পছন্দ করেন এবং ভাইস-ভার্সা। তাই কলোনিতে থাকলে সেই জায়গাতে থাকা হয় বটে, কিন্তু চেনা হয় না। কিন্তু আমি যে জায়গায় থাকি সেইজায়গার সমস্ত ধুলো, মাটি, হাওয়া, রোদ, জল সবকিছু গায়ে জড়িয়ে বাঁচতে চাই। তাই ডিগবৈতেও ঠিক করলাম এ ঘরই আমি নেব।

    চেন্নাই থেকে সোজা পৌঁছেছি। সব মালপত্র ট্রান্সপোর্টে আসছে। প্রায় একমাস নেবে আসতে। তো ইয়াকুব ভাই প্রথম দিনেই তাঁর ঘরের যা যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস ছিল সবই আমাদের দিয়ে দিলেন ব্যবহারের জন্য। মায় গ্যাস সিলিণ্ডার, ওভেন সমেত। আমার ভ্রাম্যমান জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা। অন্য জায়গায় ঘরের মালিকরা ভাড়াটিয়াদের সাবধান করে দেয়, এ সব আমার জিনিস, আপনার ফ্লোরে আছে, কিন্তু ভুল করেও ব্যবহার করবেন না বলে। আর ইনি দেখি উল্টো। যা হ'ক, বিস্ময় সামলে ধন্যবাদ জানাতে আরেক বিস্ময়। বলেন, আজই তো এলেন। বিশ্রাম নিন। রান্না আর করতে হয় না। আমার ঘরেই খেয়ে নেবেন। আমার ওয়াইফ হিন্দু বাঙালী। আপনাদের অসুবিধে হবে না।

    হ'তে পারে প্রথমদিনের এই ইম্প্যাক্টেই আমি অসমিয়াদের প্রতি বায়াসড্‌। কিন্তু যতদিন ডিগবৈয়ে ছিলাম অন্য অসমিয়া বা বাংলাভাষীদের সঙ্গেও আলাপ পরিচয়ে এই একই ব্যবহার পেয়েছি। আরও দেখেছি অন্তত: ডিগবৈয়ে হিন্দুর সঙ্গে মুসলমানের, মুসলমানের সঙ্গে খ্রীশ্চানের, হিন্দু বাঙালীর সঙ্গে নেপালী উপজাতির আন্ত:বিবাহ হয়েই থাকে। আমরা যে পাড়ায় থাকতাম তার ৭০ ভাগই ছিল মুসলমান। কিন্তু দীপাবলীতে আমাদের সঙ্গে তারাও মোমবাতি জ্বালত, বাজী ফাটাত। দূর্গা পুজোয় আমি বাড়ি ছিলাম না বলে আমার চাঁদার টাকা ইয়াকুবদা ই দিয়েছিলেন। ঈদে যেমন বড়দিনেও তেমনই উৎসবে মাতত আমাদের পাড়া। এবং আমরা সবাই ছিলাম বিভিন্ন ভাষাভাষী। অসমিয়া আর বাঙালী তো ছিলই, মনিপুরি বা নাগারাও থাকত সেখানে। এদের কি করে সাম্প্রদায়ীক বলি বলুন তো।

    উত্তর পূর্বাঞ্চলে যদি কেউ মূল ভূখণ্ড থেকে যান, বিশেষত: গুজরাত বা দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে, তাহলে পরিষেবার হাল দেখে মনে হতেই পারে ১৯৪৭ এর পরে আর কোনও উন্নতি বোধহয় এখানে হয়নি। দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পাওয়ার কাট এখানে দৈনিক ব্যাপার। রাস্তার হাল দেখে মনে হয় চষা জমিতেও এর থেকে ভালো ভাবে গাড়ি চালানো যাবে। পানীয় জলের সরবরাহ তো গ্রামগুলিতে আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। প্রায় ৮০ শতাংশ লোকের কোনও কাজ নেই গ্রামাঞ্চলে। আলফা সন্দেহে সেনার অত্যাচারের কথা তো ছেড়েই দিলাম। এরপরেও যে সমগ্র অসমবাসী আলফাকে সমর্থন করেনি, তা তাদের ভারতের সঙ্গে একাত্মতাকেই প্রমাণ করে। এরপরেও যে অসমবাসীরা ভোট দেয় তা তাদের গণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয়।

    হ্যাঁ, অত্যাচার হয় অসমে বাংলাভাষীদের ওপর। এখনও হয়, কিন্তু সেটা রাষ্ট্রীয় অত্যাচার। তার জন্য অসমীয়ারা দায়ী নয় হয়তো। কারন গোগৈ সরকারে অনেক বাংলাভাষী আছেন, এবং বেশ গুরুদায়ীত্বেই। তাই বাংলাভাষীদের ওপর অত্যাচারের দায় তাঁদেরও নিতে হবে বৈকি! এর জন্য অসমিয়াদের সাম্প্রদায়ীক বলে দেগে দিতে আমি রাজি নই। আরও এক কারন বাংলাভাষীদের অসমের সঙ্গে একাত্ম না হতে পারা। নিজস্ব আইডেন্টিটি তৈরি করতে গিয়েই বাঙালীরা বিপদে পড়েছে অসমে। ত্রিপুরার থেকে শিক্ষা নিয়েছে অসম।

    এই অঞ্চলের অন্য রাজ্যগুলির হাল আরও খারাপ। সমস্ত জিনিষপত্রের দাম দেশের মধ্যে সবথেকে বেশী এখানেই। তার ওপর শিক্ষার অভাব, প্রায় না থাকার মতো পরিষেবা, বেকারত্ব, সেনাবাহিনীর অত্যাচার আর কেন্দ্রীয় অবজ্ঞা এই অঞ্চলের লোকেদের খুব স্বাভাবিক ভাবেই অসহিষ্ণু করে তুলেছে। এর জন্য এদের সাম্প্রদায়ীক বলা বোধহয় অতিসরলীকরণ হয়ে যাবে।

    পশ্চিমবঙ্গকে আমি আপেক্ষিক ভাবে অসাম্প্রদায়ীক বলেছি। কাটরা মসজিদের ঘটণা বাদ দিলে সেরকম কোনও বড় ঘটণা এখানে ঘটেনি বিগত ৩৪ বছরে। একটি কাটরা মসজিদের ঘটনা এটা প্রমাণ করে না বামপন্থা সাম্প্রদায়ীকতা আটকাতে ব্যর্থ। বরং ১৯৯২ এ সারা দেশ যখন জ্বলছে, তখন অপেক্ষাকৃত শান্ত পশ্চিমবঙ্গ বামপন্থী আন্দোলনের কৃতিত্বই দাবী করে। তবে বামপন্থী বাংলার সবথেকে বড় কৃতিত্ব হল মুসলীম লীগ বা আর এস এসের মতো মৌলবাদী সংগঠন গুলিকে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া, যা বামপন্থী কেরালা করে দেখাতে পারে নি কংগ্রেসের মুসলীম লীগের সঙ্গে সাথ দেওয়ায়। বাকি রইল জনগণের ভেতরের কথা। যদি আম গুজরাতি বা আম রাজস্থানী হিন্দুদের সঙ্গে কথা বলেন তাহলে মুসলীমদের সম্পর্কে ঘৃণা তাদের ভেতর থেকে ঠিকরে বেরোয়। হ্যাঁ, আমি শিক্ষিত লোকেদের কথাই বলছি। সুখের কথা বামপন্থী বা দক্ষিণপন্থী নির্বিশেষে আম বাঙালী সেরকম নয়। কিন্তু ৩৪ বছর আগেও কি তাই ছিল? আমি জানি না। সত্যিই জানি না। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বামপন্থী বাংলাকেই দেখে এসেছি। কখনও সমর্থন করেছি, কখনও বিরোধীতা তাদের মত কে। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য একদিনের জন্যও শিক্ষিত বাঙালী বুদ্ধীজীবী হিন্দু বামপন্থীর গলায় মুসলমান বিদ্বেষ উচ্চারিত হতে শুনিনি। সারা দেশে সাম্প্রদায়ীকতার বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন ভাবে প্রতিবাদ করেছে বামপন্থীরাই। কোনও বামপন্থী হিন্দু নেতা/নেত্রী তিলক লাগিয়ে রাম মন্দিরের শিলান্যাসও করেন না বা মাথায় কাপড় দিয়ে মুসলমান প্রধান জায়গায় গিয়ে নামাজ আদায়ও করেন না। এই কৃতিত্ব তাঁদের দিতে হবে বৈকি।

    হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ওপর অসমিয়া বাংলাভাষী মানুষের অভিমান/রাগ থাকতে পারে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরাও তাঁকে বিস্মৃত হন দেখে কষ্ট হয়। মানুষ হিসেবে মনে না রাখলেও শুধু সুরকার হিসেবেও তো তিনি অনেক ঋণের বোঝা চাপিয়েছেন আমার মতো শ্রোতাদের কাঁধে। কিন্তু তাঁর গানে বার বার অসমের লোকগানের সুর ও কথা ফিরে ফিরে এসেছে। তিনি অসম থেকে দূরে এসেও অসমকে ভুলতে পেরেছিলেন কি? তাই তো তিনি লিখতে পারেন "হবিগঞ্জের জালালি কইতর, সুনামগঞ্জের কুড়া" র মতো গান। তিনি ডানা ভেঙে কলকাতায় পড়েছিলেন, ডানা মেলে নামেন নি। এ যন্ত্রণা ধরা পড়ে এই গানে, তাই নয় কি?

  • Debashis | 2.89.224.254 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৮:৫৪508955
  • কল্লোল দাকে "ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না" সংশোধনীটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
  • Debashis | 2.89.224.254 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:০৫508956
  • আর ও হ্যাঁ। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। ভারতবর্ষে যতগুলি যায়গায় বাস করেছি তার মধ্যে অন্যতম শান্তিপ্রিয় জায়গা হল ডিগবৈ। আমার ভীষণ প্রিয় ঐ অঞ্চলের মানুষগুলি। হৃদয় দিয়ে অভ্যর্থনা ওখানের মানুষেরাই করে। বাকি ভারত বোধহয় মুখে :)।
  • kiki | 59.93.222.224 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:২২508958
  • জুবেল? :)

  • kiki | 59.93.222.224 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:২৪508960
  • কল্লোলদা,
    "মশাল জ্বালো" গানটার সেকেন্ড স্ট্যানজা থেকে বেশ কিছু শব্দ বুঝতে পারছিলাম না,গানটা একটু লিখে দেবেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন