এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গুলবস্তা

    pharida
    অন্যান্য | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ | ৬৩৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • de | 180.149.51.67 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬:২৯511519
  • ব' না দ' ? :)
  • pharida | 61.16.232.26 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬:৩০511535
  • যা আঙুলের ডগায় আসে আসে তাই লিখুন - খেয়াল রাখবেন তাতে যুক্তিপরম্পরা থাকলেই কিন্তু আপনি ফেল :))

    আমার প্রিয় এস্কিমো নিয়ে রচনা লিখুন। বা একটি আরোশোলাকে ঝোলাগুড় খেয়ে সর্দিগর্মি করার প্ররোচনা দিন। - দিন রাত - যখন খুশি।
  • pharida | 61.16.232.26 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ১৭:০৪511546
  • আমাদের রাজার নাম নৃপতি। মাসমাইনেতে তার আর চলে না বলে আজকাল ঠিকে কাজ খুঁজছিল - তা লাগালাম। কিন্তু সে রাজা - কাজে আসবে রোলস রয়েসে চেপে তার সান্ত্রী পাইক পেয়াদা শিঙে ফুঁকবে। এদিকে সকাল সকাল না বেরোলে আমার ফাস্ট ট্রেন মিস, পরের লোকালে হরি, রবি, পঞ্চানন তিন তিনখানা বাড়তি লজেনওলা জুটে গিয়ে আমার বিক্কিরি অর্ধেক করে দেবে। ভাবছি, এই ব্যবসা ছেড়েই দিই শালা।

    প্ল্যান করছি একটা ইস্কুল খুলি দিল্লিতে - যেখানে সমুদ্রে সাঁতার কাটা শেখানো হবে, পিঁপড়েদের গায়ে রং লাগিয়ে পরীক্ষা করা হবে তারা স্থল প্রজাপতি হতে পারে কিনা। একবার ক্লিক করে গেলেই কেল্লা ফতে - আমি রাজা হয়ে যাব।

    তা সব হল একদিন। এবার রাজা হওয়া আটকায় কে বলে বগল বাজিয়ে রাজসভায় গেলাম। দারোয়ান বল্ল - কি চাই?
    বল্লাম - রাজা হতে এসেছি
    সে খইনি ডলছিল - খানিক দেখল, খইনিটা আরো খানিক ডললো, তারপর ফটাফট তালি - খৈনির ধুলোয় হাঁচি পাচ্ছিল আমার কিন্তু রাজা হতে এসেছি হাঁচলে চলবে কিনা জানিনা তাই চেপে গেলাম।

    সে ব্যাটা এইভাবে তিন মিনিট দাঁড় করিয়ে শেষমেষ বল্ল - পাশের খুপরিতে গিয়ে ফর্ম নিতে।

    উরিব্বাস সে কী লাইন।
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.132.218 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ২২:২৬511557
  • আমার জীবনের ট্‌র্‌যাজেডি। লেখার চেষ্টা করছি বটে, কিন্তু লেখা টেখা আমার দ্বারা হয় না। অনেক চেষ্টা করেছি, যারাই পড়ে-নেহাত সৌজন্যের খাতিরে ভালো বলে। আদপে পড়েই না। পরীক্ষায়,বাংলা রচনা মুখস্থ করেও সেই দশে তিন কি চার! বাবা বলল- ছাড়! ইংরেজী? আর বলবেন না!!!! কিছুতেই Ihaswent ছাড়া লিখতেই পারলাম না। এয়াকদিন বাড়ীতে ছিলাম না। মা গেছিলেন, পূজো দিতে। ফিরে এসে বাবাকে জিগ্গেস করেছিলেন- রামু কই?
    বাবা নাকি উত্তর দিয়েছিলেন- Ramuhavewenttoforest. তারপর দাঁতকপাটি লেগে হসপিটালাইজড । পরে ডাক্তার শুনে বলেছিলেন, বাবাকে- আপনি এয়াতো বড় স্কলার আর আপনিও কিনা ভুল ইংরেজী বললেন? বাবা বলেছিলেন- “One পচা কলা পচেস দি Whole কাঁদি। তাই ভবি কাঁদসে। সঙ্গদোষে শিলা ভাসে।”
    অনেক পরে, ছোট ভাই যখন আয়মেরিকা থেকে এক, ও দেশী বন্ধু কে নিয়ে এদেশে এলো, সেই বন্ধুটিকে জলযোগের দই খাইয়েছিলাম। অনুজকল্প সেই ভ্রাতৃবন্ধুটি দই খেয়ে তারিফ করে বলল-WhatisDoi? (নাকি সুরে) এদিক ওদিক তাকিয়ে ছোটভাই নেই দেখে বলেছিলাম –Sleepingmilkinthenight, morningtight. ও কি বুঝল কে জানে!!!! গম্ভীর হয়ে গেল।
    তা, নেট এসে খুব সুবিধে হয়েছে। যা খুশি, তাই লিখি, আর ছাপার অক্ষরে দেখে, নিজেই নিজের পিঠ চাপড়াই।
    আমার অনুজ কল্প বন্ধু বুকী ঘোষ, আমার এই দু:খটা বুঝতে পারে। আমার সমব্যাথী বলে, ওর দোকানে বেচাকেনার পর আমাদের সান্ধ্য আসর বসে। অগ্রজ কল্প কবি সৌমেন দাও আমাদের আড্ডার নিয়মিত খদ্দের। আমাকে দুজনেই ভালোবাসেন আর আমার নিত্যনতুন বোকামিকে ক্ষমা ঘেন্না করে বুঝিয়ে দেন, ঠিক কোন জায়গায় ভুল করি আমি। কিন্তু ওঁদের চেষ্টাটা যে বৃথা, সেটা পরে বুঝে, দন্তরুচি কৌমুদি হয়ে বসে থাকেন। যেমন, একদিন সৌমেন দা বললেন- রামকেষ্টো, আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণের মধ্যে পার্থক্য কি?
    আমি যথারীতি ভ্যাবাচ্যকা খেয়ে গেলাম। একটু হেসে সৌমেন দা বললেন- আমগাছের তলায় মন্ত্রণা= আমন্ত্রণ,আর নিমগাছের তলায় মন্ত্রণা=নিমন্ত্রণ। বুকী যোগ করল- কুলগাছের তলায় মন্ত্রণা= কুমন্ত্রণা।
    যাই হোক, রবিবারের এক বসন্তের সকাল। জোর আড্ডা হচ্ছে বুকীর ওখানে। পাশেই এক বাঁধানো পুকুর। হঠাৎ, হইহই। আমরা ছুটে গেলাম। শুনলাম, এক গামছা পরা ভদ্রলোক স্নানের জন্য পুকুর পারে দাঁড়িয়ে, দাঁতে গুড়াখু ঘসছিলেন। হঠাৎ, বাজারের “ভোলা” ষাঁড় এসে পেছনে গুঁতো মেরে জলে ফেলে দেয়। এরপর আমাদের প্রবেশ। দেখি, ভদ্রলোক কোমোর জলে দাঁড়িয়ে, আর ওনার ছেলে হাত বাড়িয়ে বলছে- বাবা উইঠ্যা আসো।
    বাবা- দ্যাখোস না! শুয়ারের বাচ্চা, ঐ বলদাটার শিংয়ে আমার গামছাডা রইয়া গেসে! উঠুম কেমনে?
    বুকী বলল-বোজসেন ঘনাদা, আপনারও গামছাডা চইল্যা গেসে গিয়া। হের লাইগ্যা, আপনের এই দশা!
    দোকানে ফিরে এলাম। একজন একটা ৫০০ টাকার নোট বুকিকে দিল। বুকী, সোজা আমার হাতে চালান করে দিয়ে বলল- কয়েন দেহি, হেই নোটটা জাল না আসল?
    হাতে নিলাম, কিছুই বুঝলাম না। বুকি বলল- খাড়ান! লোটডারে ভাঁজ কইরা টেবিলে রাহেন।
    রাখলাম।
    -এই বার লোটডার উপরি জুর জুর ঘুঁসি মারতে থাহেন।
    মারতেই থাকলাম। মারতেই থাকলাম।অমারতেই থাকলাম।
    মেরে মেরে হাত টনটন!
    বুকী এবার নোটের ভাঁজ খুলল! বলল- না:! ভাঙ্গে নাই
    -কি?
    -বাপুজীর চশমা। জালি হইলে ভাইঙ্গা যাইতো গিয়া।
    বুঝলাম, গামছাটা হাতছাড়া। মনের দু:খে, জালি রামকেষ্টো ভশ্চাজ havewenthome!
  • Sankha | 198.45.19.95 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ০০:২২511568
  • পচা কলা পচেস ?? :))

    লীলা মজুমদার মনে পড়ে গেল: দি চোখ ইজ জ্বলজ্বলিং! বলুন তো কোন গল্প? :)
  • kk | 76.114.73.71 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ০১:১৫511579
  • যা:,শঙ্খ, এত সোজা কুইজ দেয় না ! পদিপিসির বর্মীবাক্স।

    রামকৃষ্ণদা'র লেখার স্টাইলটা আমার ভালো লাগছে। সব থ্রেডেই। জানিয়ে গেলাম।
  • Sankha | 198.45.19.95 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ০১:৪৪511590
  • kk,
    :-)) একদম ঠিক বলেছেন।

    আচ্ছা এইটে বলুন:

    'হয়েং গেল, হয়েং গেল, সবকিছুং ঠিকঠাকং হয়েং গেল। কাকাং বাবু কেমং আছেং?'
    কোন গল্পের শেষ লাইন? এই ভাবে কেন বলছিলো, সেটা বলতে পারলে সোনায় সোহাগা।
  • Netai | 121.241.98.225 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ০৯:৪৯511601
  • রামকৃষ্ণবাবুর লেখায় প্রথম তিন চার লাইন গুল ছিল।
    পড়তে ভালো লাগছে (এটা গুল নয়)। :)
  • Ho | 121.242.160.180 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ১০:৪২511612
  • ফরিদারটা কিন্তু আমার বেশ কবিতামেশানো গুল মনে হল। চাইলে এর ভেতর থেকে 'গো-ও-ভীরে যাও আরো গো-ও-ও-ভীরে যাও' করে অন্য মানে বার করা যাচ্ছে। :))
  • ranjan roy | 14.97.126.208 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:২৭511520
  • HO এবং Netai এর সাথে সহমত। ফরিদা এবং রামকৃষ্ণবাবুর লেখার স্টাইলের ফ্যান হয়ে গেলাম।
  • Ho | 121.242.160.180 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:৩৭511526
  • ইস্কুলে সমুদ্রে সাঁতার কাটা শেখানো - এটা শিক্ষার বা জ্ঞানের সমুদ্র ভাবতে কোনোই বাধা নেই।

    পিঁপড়ের গায়ে রং লাগিয়ে স্থল প্রজাপতি - আমরা মনেপ্রাণে চাই, চেষ্টা করি কত কী হতে, কিন্তু কারো কারো প্রজাপতি হওয়া আর হয় না, শুঁয়োপোকাই রয়ে যাই, 'অবিশ্বাস্য রূপান্তর' পাওয়া আর হয় না।

    রাজা হবার লাইন - সকলের চাই অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি। ক্ষমতা থাক বা না থাক, সবার আগে গিয়ে দাঁড়াতে হবে লাইনে।

    কাজেই গভীরে যাও করলে লজিক ঠিকই একটা রয়ে যাচ্ছে। :))
  • PM | 86.96.228.84 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:৪০511527
  • রামকৃষ্ণ -বাবু, দারুন। এতোকাল কোথায় ছিলেন। আপনাকে তো কাল্টিভেট করতে হচ্ছে মশাই। আপনি আর কোথায় লেখেন?
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.132.14 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ২০:৫০511528
  • মদনের আসল নামটা সবাই ভুলে গেছে। সকাল থেকে, মদ , অন করে থাকে বলে ওর নাম মুখে মুখে মদন হয়ে গেছে।অপাঁচশ টাকার নোটটা অনেকক্ষণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল, মুদি দোকানদার মদন! এই নিয়ে প্রায় বার দশেক হয়ে গেল! দুরু দুরু বুকে দাঁড়িয়ে আমি! একবার মিউ মিউ করে বললামও:- এইমাত্র ব্যাংকের এ.টি. এম থেকে তুলে এনেছি রে, মদন! মনে হয় না, জাল নোট হবে।
    থামুন তো! ঝাঁজিয়ে উঠল মদন! আজকাল এ.টি. এম থেকেও জাল নোট বেরুচ্ছে! খবর টবর রাখেন না নাকি?
    ক্ষেতু বাগচী এসে বসে, হাত বাড়িয়ে সকালের খবরের কাগজটা টেনে নিলেন। হেডলাইন থেকে প্রিন্টার্স লাইন পর্যন্ত খুঁটিয়ে পড়ে, মুখস্থ করা তাঁর রোজকার অভ্যেস। এককালে একটা জাঁদরেল চাকরী করতেন। সেই সুবাদে বিদেশেও গেছেন বেশ কয়েকবার! সব ব্যাপারেই, তাঁর শেষ মত দেবার অধিকার আছে বলে, ক্ষেতু বাগচী মনে করেন। তিনি বেশ জাঁক করেই বলেন- অভিজ্ঞতার একটা দাম আছে হে! তাঁর অভিমতই যে শেষ কথা, সেটা আমরা সবাই মেনেও নিয়েছি!! যতই হোক! বিদেশ ফেরতা বলে কথা!!!!!!!!
    আজ, ক্ষেতু বাগচীকে আসতে দেখেই, “বল হরি” ( ওর আসল নাম হরি) চায়ের গ্লাসটা ঠক করে মদনের দোকানের কাউন্টারের ওপর রাখল। আমিও একটা চায়ের গ্লাস পেলাম। মদন, রোজ খাতির করে ক্ষেতুদাকে চা খাওয়ায়!
    জলদ গম্ভীর স্বরে ক্ষেতুদা বললেন:- চা অন্যমনস্ক ভাবে বানিয়েছিস তো রে, বল হরি!
    বল হরি, একটা কলগেট হাসি দিয়ে বলল;- আর ভুল হয় ছ্যার??
    আমি অবাক হয়ে তাকাতে, ক্ষেতুদা আমার অজ্ঞতাটা ভাঙ্গলেন!!!!!
    বল হরি যদি মন দিয়ে চা করে, তবে সেটা আর মুখতব্য থাকে না, মানে মুখে দেওয়া যায় না! বুয়েচ? তাই এই অন্যমনস্কতার টোটকা!
    বা:! বা:! হাততালি দিয়ে উঠল মুদি মদন!
    তা স্যার! এটার একটা রিআর্সাল নিশ্চয়ই দিয়ে রেখেছিলেন আগে থেকেই!!!
    তা আর বলতে!!! ক্ষেতুদা উবাচ!
    জানৈ তো! আমি বাড়ীতে বাঘ! অবশ্য তোমাদের বৌদি রিং মাষ্টার! সে যাকগে!!!!!কিছুদিন হল, যা রান্না করছিল না, তোমাদের বৌদি, তাতে আমাকে খেতে বসার সময় জিজ্ঞেস করতে হচ্ছিল- কোনটা কি !!
    বৌদি বলত- এটা ডাল, আমি ডাল মনে করে খেতাম।
    বৌদি বলত- এটা মাছ! আমি মাছ মনে করে খেতাম!!!
    করে করে সবই বলে দিচ্ছিলেন তোমাদের বৌদি আর আমি সেটা মনে করেই খাচ্ছিলাম। শেষে, জিজ্ঞেস করলাম! তুমি কি খুব মন দিয়ে রান্না কর?
    আমার বৌ বলল- হ্যাঁ!
    আমি বললাম- তা এক কাজ কর! আজ থেকে একটু অন্যমনস্ক হয়ে রান্না কর। ব্যাস!!!! কেল্লা ফতে! এবার আরাম করে, সব পদ চিনে, চিনে, খেতে শুরু করলাম! সেই টোটকাটাই আমি খগেন কে দিয়েছি!
    মদন এবার আর চুপ করে থাকতে পারে না! বলে ওঠে:-তা হলে তো অন্যমনস্ক হলে, প্রচুর ভালো ভালো কাজ করা যায়!!!!!!!
    সে আর বলতে!, ক্ষেতুদা আয়েস করে একটা সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়ার রিং ছাড়তে ছাড়তে শুরু করলেন:- এই যে ধর, কিছুদিন আগে, দুধের ট্যাংকারে কষ্টিক সোডা পাওয়া গেছিল, এটা তো অন্যমনস্কতারই ফল! অন্যমনস্ক হওয়াতে পাবলিকের কত সুবিধে হলো বলো দেখি!
    কি রকম! এবারে আমি বললাম।
    কি ফটফটে সাদা দুধ, একবার ভাবো!!! গরুও অমন দুধ দিতে পারে না! সোডা দিয়ে কাপড় কাচলে, জামাকাপড় যেমন ধবধবে সাদা হয়, ঠিক সেই রকম! অঙ্কটা পরিস্কার! পেটও সাদা, দুধও সাদা!!!!! একটানা বলে ক্ষেতুদা দম নিলেন।
    দম নিয়ে আবার শুরু করলেন:-তবে সব সময় যে ভালো হয়, তা কিন্তু নয়!
    - কি রকম? আমার জিজ্ঞাসা।
    - এই দ্যাখো না! পিন্টু আর সুকুরের কথা শুনেছ?
    - পিন্টু? আমাদের পাড়ার? সুকুরকে তো ঠিক চিনলাম না!
    - বলি, কাগজ তো রাখো বাড়ীতে, পড় কি?
    - তা পড়ি!
    - ঘোড়ার আণ্ডা! পড়লে আর এই রকম বিদঘুটে প্রশ্ন করতে?
    - কি রকম?
    - পিন্টু হচ্ছে চোর! চুরি করতে গিয়ে ফ্যানের হাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিল!
    - তারপর?
    - তার আর পর নেই!
    - এই দেখুন! হেঁয়ালী করতে শুরু করলেন তো!!!!!!!
    - হেঁয়ালী করবো কেন? চুরী করতে গেছিল পিন্টু, তারপর ঘুমিয়ে পড়ে! উঠে দ্যাখে বাড়ীর মালিক হাজির! তারপর বেদম ধোলাই খেল!
    - আর সুকুর?
    - ওরও একই কেস! তবে ও ঘুমিয়েছিল মোবাইলের দোকানে! তারপর পিন্টুর হাল! বুঝলে হে!! অন্যমনস্ক হওয়ার বিপদও আছে!!!!
    আমার মোবাইল দুবার বেজে বন্ধ হয়ে গেল! মোবাইলটা বের করে দেখলাম, গিন্নী মিস কল দিয়েছেন!!!! বুঝলাম, দেরী হচ্ছে দেখে, এই চেতাবনী!
    ক্ষেতুদা জিজ্ঞেস করলেন:- কে মিস কল দিলা হে ঘনা?????????
    - মিসেস!!!!
    - বা:! এই বয়সেও তোমার মিসেস, তোমায় মিস কল দিচ্ছেন? খুব স্বাস্থকর ব্যাপার! তোমার তো দুধ জমে ক্ষীর আর ক্ষীর জমে প্যাঁড়া !!!!!!!!
    মুচকী হাসি ছাড়া এসব ক্ষেত্রে আর কোনো উপায় থাকে না!
    - তা, হ্যাঁ হে!!! তোমার মিসেসের কি মিস কল দেওয়াই অভ্যেস?
    - না, না!!!!!!!
    - তবে???????
    - ঐ! আমাকে ওয়ার্নিং দিতে হলে, মিস কল দ্যায়!
    - তা ভালো!!!! আমার শ্যালক বাহাদুর বুড্ডা, আবার একটা গোটা করল না জীবনে! সামনের বাড়ীতে একবার আগুন লেগেছিল!!!!! তা তিনি সমানে দমকলকে মিস কল দিয়ে গেছিলেন!!!!!!!!!
    - তা দাদা, আপনার কোনো মিস কলের অভিজ্ঞতা?
    - ভূরি, ভূরি! তোমাদের বৌদি প্রায়ই তাঁর মোবাইলটা অন্যমনস্ক হয়ে এখানে সেখানে রেখে দিয়ে আর খুঁজে পান না! আমাকেই ওনার মোবাইলে মিস কল দিয়ে, রিং টোনের উৎস ধরে মোবাইলটা বের করতে হয়!
    - ওটা তো আমারও হয়!
    - সে তো বুঝলাম! কিন্তু, কিছুদিন আগে তোমাদের বৌদি চশমাটা হারিয়ে, আমাকে বললেন, মিস কল দিয়ে চশমাটা খুঁজে বের করতে!!!!!!!!!!
    - কি করলেন আপনি?
    - কি আর করবো!!! চশমাটা কোথায় ছিল, একটু খুঁজেই দেখতে পেয়েছিলাম! তাই মিস কলের ভান করে চশমাটা বের করে দিলাম! শুধু টর্চের জন্য কেনা নতুন চারটে ব্যাটারীর কিছু করতে পারি নি!!
    - ব্যাটারী?????????
    - হ্যাঁ! ব্যাটারী!!!!! নতুন ব্যাটারীগুলো ভালো থাকবে বলে, তোমাদের বৌদি ওগুলো ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলেন! ঐ অন্যমনস্কতার ফল!!!!! বুঝলে কিছু!!!!!

    আবার গিন্নীর মিস কল!!! আমি মদনকে বললাম- কি রে! মালগুলো দিয়ে দে! দেখছিস না , বারে বারে মিস কল আসছে!!!!!!!
    দিতে তো অসুবিধে নেই, রামুদা!!!! ঐ নোটটাই যত নষ্টের গোড়া! বুঝতেই পারছি না, নোটটা আসল না জাল!
    ক্ষেতু বাগচী বললেন:- প্রবলেমটা কি?
    মদন:- কিছুই না, রামুদা একটা পাঁচশ টাকার নোট দিয়েছেন! নোটটা আসল না জাল, বুঝতেই পারছি না!
    - ও!ও! এই ব্যপার! এ তো খুব সোজা!- ক্ষেতুদা বললেন।
    - আমার কাছে নোট চেক করার মেশিন যে নেই স্যার!
    - দরকার নেই! এক কাজ কর হে মদন! গাঁধীজির ছবিটা ভেতরে রেখে- নোটটাকে দু ভাগে ভাঁজ কর!
    - করলাম!
    - বেশ, এবার ঐ ভাঁজ করা নোটের ওপর জোরে জোরে ৫ বার ঘুঁসি মারো!
    - মারছি! বলে মদন শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ভাঁজ করা নোটের ওপর জোরে জোরে ৫ বার ঘুঁসি মেরে হাতটা ঝাঁকাতে লাগলো!
    - আহা! খুব লেগেছে বুঝি, মদন!
    - তা আর বলতে! হাত টা টনটন করছে ব্যাথাতে!
    - ঠিক আছে! এবার নোটটার ভাঁজ খোলো!
    - খুললাম, মদনের উত্তর!
    - খুব ভালো! এবার দ্যাখো, গাঁধীজির চশমাটা ভেঙ্গেছে কি!!!!
    - না তো! মদন খুব ভালো করে দেখে বলল!
    - তা’লে, রামুর দেওয়া নোটটা আসল! নকল হলে গাঁধীজির চশমাটা ভেঙ্গে যেত!!!!
    - ওরে কানাই! রামুদার মালগুলো রতনের রিক্সো ডেকে তুলে দে! মদনের হুকুম হলো।
    - আমিও যাই! ক্ষেতুদা বললেন। সকাল থেকে পেটে একটাও গোটা কল আসে নি! এবার ঘনঘন মিস কল দিচ্ছে! আর তো থাকা যাচ্ছে না! এই চেতাবনী উপেক্ষা করলে মুশকিল! চলো হে রামকেষ্ট!
    ক্ষেতুদা আমার সাথে রিক্সোয় চেপে বসলেন। আসার সময় দেখলাম, মদন তখনও ডান হাতটা ঝাঁকিয়েই চলেছে, ঝাঁকিয়েই চলেছে , ঝাঁকিয়েই চলেছে !!!!!!
  • Sumit Roy | 68.192.185.249 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ২৩:৫৮511529
  • @রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য: আপনি কি "বর্ণচোরা ঠাকুর ও অন্যান্য"-এর রামকৃষ্ণ?
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.134.120 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ০৯:৫৯511530
  • সুমিত বাবু,
    আপনার অনুমান ভুল। আমি সেই “ রামকৃষ্ণ” নই।অশুধু নামের মিল ছাড়া, আমাদের মধ্যে কোনো মিলই নেই। অনেকেই এই ভুলটি করে।
    তিনি একজন নামকরা লেখক। আমি একজন সামান্য ব্যক্তি।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১০:০৬511531
  • উত্তাল হচ্ছে।

    একটা টিপ: যতিচিহ্নের পর একটা স্পেস দেবেন, না হলে একটা বাড়তি "অ' জুড়ে যায় পরের শব্দের আগে।
  • ppn | 202.91.136.71 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১০:৩৫511532
  • তুমুল!

    কোতায় ছিলে ওস্তাদ, তুমি কোতায় ছিলে?
  • Update | 123.242.248.130 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:৫৫511533
  • Name:ranjanroyMail:Country:

    IPAddress:115.118.211.1Date:15Dec2011 -- 11:41AM

    জয় গুরু! জয় গুরু!

    Name:ranjanroyMail:Country:

    IPAddress:115.118.211.1Date:15Dec2011 -- 11:42AM

    জয় গুরু! জয় গুরু!

    Name:RamkrishnaBhattacharyaMail:[email protected]Country:

    IPAddress:223.223.135.97Date:15Dec2011 -- 12:33PM

    প্রায় দুই শতাধিক ব্‌ৎসর পর রামদাস বাবাজী, যোগনিদ্রা হইতে গাত্রোত্থান করিলেন!
    যোগের প্রভাবে তাঁহার গৌরাঙ্গ কান্তি, অনিন্দ্যসুন্দর! দেখিলে, ত্রিংশ ব্‌ৎসরীয় যুবার ন্যায় প্রতিভাত হইতেছে।
    মৃত্তিকা গহ্বরে প্রোথিত পেটিকা হইতে দেহকে নিষ্ক্রামিত করিয়া শির উপরে নেওয়ার জন্য চেষ্টিত হইলে, কঠিন প্রস্তর সদৃশ কিছুতে মস্তক বাধাপ্রাপ্ত হইল। কিয়্‌ৎক্ষণ চেষ্টা করিলেও যখন হইলো না, তখন রামদাস, যোগবলে মৃত্তিকার ওপরে নিজেকে প্রক্ষিপ্ত করিলেন।
    রাত্রি ধরিত্রীর ওপর নামিয়া আসিয়াছে। রাকার ক্ষপা হইলেও চন্দ্রমার দর্শন না পাওয়াতে রামদাস বিব্রত হইলেন! চতুর্দিক আলোকঙ্কÄল কিন্তু, ইহার উৎস কি! তাহা রামদাসের বোধগম্য হইল না।
    রাজপ্রাসাদের ন্যায় চারিপার্শ্বে সুরম্য বাটীসকল দর্শনে সুখ বোধ হইতেছে! অকস্মাৎ একটি অশ্ববিহীন সকট সশব্দে রামদাসের নিকট দণ্ডায়মান হইলে, সকটের বাতায়ন হইতে এক ব্যক্তি, জিহ্বা ঈষ্‌ৎ জড়িত অবস্থায় বিজাতীয় বঙ্গভাষায় রামদাসের প্রতি বাক্য প্রয়োগ করিল। রামদাস প্রথমে বুঝিতে পারিলেন না।
    এই শালা! ধিনিকেষ্টর মত মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি করছিস বে! একটু হলেই শ্লা কেস খেতাম! শ্লা, খালি গায়ে আবার লাল কাপড় পরেছে! ফিল্ম শুটিং নাকি বে!
    রামদাস এইরূপ মিশ্রিত যাবনিক বঙ্গ ভাষা শ্রবণ করিয়া, হতবুদ্ধি হইলেও মুহূর্তে নিজেকে সামলাইয়া লইয়া কহিলেন- মহাশয়! এই স্থানটিতে আমি নবাগত নহি, তথাপি এইসকল পরিবর্তন দেখিয়া আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়! আমি বর্তমানে কোথায়?
    - শ্লা!!!! রাত দুটোর সময় হাতিবাগানে লাটক করছে! আয়াই কি ভাষায় কথা বলছিস বে?
    - এই স্থান, হাতিবাগান?
    - আবে! সর তো! যেতে দে! পুলিস দেখলে কেস খাবো! সর বে!
    রামদাস পথি পার্শ্বে সরিয়া গেলেন। পরে বুঝিলেন, ব্যক্তিগণের সকলেই সুরাপ্রভাবে এইরূপ বাক্য প্রয়োগ করিয়াছে। সাতিশয় পিপাসার্ত বোধ করিতেছেন, রামদাস!! কিঞ্চিৎ ক্ষুধারও উদ্রেক হইতেছে। ইচ্ছায়া নিরঙ্কুশত্বাচ্চ !! মনে পড়িল! অর্থাৎ- ইচ্ছার নিয়ামক নাই। জল এবং খাদ্যের জন্য তিনি অত্যন্ত লালায়িত। তিনি বুঝিলেন, তাঁহাকে নিরন্তর ক্লেশ সহ্য করিতে হইবে। যোগনিদ্রা কালে এইসকল ক্লেশ অনুপস্থিত ছিল। অকস্মাৎ এক দিব্যপুরুষ তাঁহার নিকট দেবতার ন্যায় আবির্ভূত হইলেন। তিনি কহিলেন : - হে রামদাস! আপনি সিদ্ধপুরুষ। কলিকাতা শহরের তথা রাজ্যের বর্তমান অবস্থায় আপনার প্রয়োজন হেতু আপনার যোগনিদ্রা ভঙ্গ করিয়াছি। আপনার কতর্ব্যসমূহ আমি পরে নিবেদন করিব। এক্ষণে, আপনি এই তপোবন সুলভ ফল এবং সুশীতল জল গ্রহণ করুন। রামদাস ফল এবং সুশীতল জল গ্রহণ করিয়া, ক্ষুধানিবৃত্তি এবং পিপাসাশান্তি করিলেন।
    ক্ষুধানিবৃত্তি ও পিপাসানিবৃত্তি হইলে পরে, সেই দেবোপম পুরুষ কহিলেন : -
    হে, যোগরাজ! আপনার, অতি অদ্ভূত মনোহর মূর্ত্তি এবং প্রভূতমাধুরীপূর্ণ ভাবভঙ্গী দৃষ্টি নন্দন হইলেও আপনার বেশভূষা সাধকের। এইরূপ বেশভূষা, বর্তমানে, কিছু ব্যক্তি স্বীয়কে ; দৈবজ্ঞ বলিয়া প্রচার করত:, ধারণ করে। উহারা তস্কর জাতীয়। এতদ অঞ্চলে এইসকল ব্যক্তিদের প্রাদুর্ভাব হইয়াছে। আপনাকে, আমি কিছু ইঙ্গরেজী বেশভূষা প্রদান করিতেছি। বর্তমানে এই জম্বুদ্বীপ ইঙ্গরেজী কবলমুক্ত। জম্বুদ্বীপের এই অঞ্চলটি,আপনি যাহাকে বঙ্গদেশ বলিয়া জানেন, তাহা দ্বিখণ্ডিত। বঙ্গদেশের পূর্বাঞ্চলটি বর্তমানে বাংলাদেশ নামক একটি সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র।
    দেবোপম পুরুষের দীর্ঘ ভাষণ শ্রবণে, রামদাস ক্লান্তি বোধ করিতেছিলেন। তিনি কহিলেন : -
    হে মহাপুরুষ! আমি, অকন্টকে ও সুখে যোগনিদ্রায় সমাহিত ছিলাম। অপরাপর লোকে, যেরূপ পার্থিব সুখসম্ভোগের অভিলাষ করে, তাহা হইতে মুক্তি পাইতে এবং ব্রহ্মজ্ঞান লভিবার জন্য , আমি এই সাধনায় রত এবং তদ্বিষয়ে পূর্ণাভিলাষ পাইতে ইচ্ছুক! আমাকে এই চরম, সর্বজনপ্রার্থনীয়,অনির্বচনীয় সুখ হইতে কেন বঞ্চিত করিতেছেন?
    দেবোপম পুরুষ কহিলেন : -হে তপস্বী! আপনি বিচলিত হইবেন না! যথাসময়ে আপনার অভিলাষ পূর্ণ হইবে। বর্তমানে আপনি ক্লান্ত! আমি যোগবলে আপনার শয়নের ব্যবস্থা করিতেছি। গভীর নিদ্রা সহকারে আপনি বাকী রাত্রিযাপন করুন। আমি, প্রভাতে আপনার কল্যবর্ত লইয়া আসিব। ত্‌ৎপরে, আপনার প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দিব।
    এই বলিয়া, দেবোপম পুরুষটি অন্তড়িত হইলেন। রামদাস তপস্বীও সেই দেবোপম পুরুষের কৃত ব্যবস্থাতে গভীরভাবে নিদ্রাকর্ষিত হইয়া শয়ন করিলেন।
    প্রভাতে রামদাস তপস্বীর নিদ্রাভঙ্গ হইল। প্রাত:কৃত্য সমাপন করিতে হইবে। সেই দেবপোম পুরুষটি পুনরায় আবির্ভূত হইলেন।
    কহিলেন : - হে সাধু! আপনার বিপরীতে যে কক্ষটি দেখিতেছেন, তাহাতে প্রবেশ করুন। কক্ষটিতে, উষ্ণ এবং শীতল জলের, মলত্যাগের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থাদি উপস্থিত।
    রামদাস কহিলেন : - মহাশয়, কিন্তু এই স্থানটিকে কি বলে?
    - ইহাকে ইঙ্গরেজীয় ভাষায় হোটেল কহে। যাহাকে আপনি সরাইখানা কহেন। বর্তমানে বঙ্গীয়গণ আর সরাইখানা শব্দটি ব্যবহার করেন না! হোটেল শব্দটিও সর্বজনসম্মতভাবে বঙ্গ ভাষায় স্থান করিয়া লইয়াছে। আর যে কক্ষটির কথা কহিলাম- তাহাকে বাথরুম বা টয়লেট কহে। উভয় শব্দই- ইংলণ্ডীয় যাবনিক!
    রামদাসের তলদেশের চাপ অসহ্য হওয়াতে, সত্বর ঐ বাথরুমে প্রবেশ করিলেন।আচাপমুক্ত হওয়ার পর, রামদাসের জলের প্রয়োজন। স্নানও করিবেন!!! কিন্তু তিনি বুঝিতে পারিতেছেন না, কোথা হইতে জল পাওয়া যাইবে!!!!!!! অগ্রভাগে একটি বর্তুলাকার শিরস্ত্রাণ সহ নালিকা রহিয়াছে। অন্যমনস্ক ভাবে সেই বর্তুলাকার শিরস্ত্রাণটি দক্ষিণাবর্তভাবে আবর্তন করিতেই, ধারাপাতের ন্যায়, অবিরাম জল পড়িতে লাগিল। রামদাস, পরিচ্ছন্ন হইলেন। দন্তমার্জন করিতে হইবে! নিকটে দেখিতে পাইলেন একটি মুকুর! উহাতে, কঙ্কতিকা সহ আরও কিছু পদার্থ রহিয়াছে। বুঝিতে পারিতেছেন না কি করিবেন! অকষ্মাৎ দৈববাণী হইল! ( পরে জানিয়াছিলেন- উহা ইঙ্গরেজীয় ভাষায় লাউডস্পীকার )
    মহাশয়, আপনার সামনে একটি নাতিদীর্ঘ বর্তুলাকার, রক্তিম শিরস্ত্রাণ সহ পদার্থ রহিয়াছে। উহাকে টুথপেষ্ট কহে। আরও একটি অনতিদীর্ঘ বস্তু রহিয়াছে- উহাকে টুথব্রাশ কহে। টুথব্রাশ টুথপেষ্ট লইয়া দন্তমার্জন করুন। রামদাস আশ্চর্য হইলেন! নিম্ববৃক্ষের নাতিদীর্ঘ শাখার প্রয়োজন দন্তমার্জনে আর নাই!
    এক্ষণে স্নান করিতে হইবে। উঠিয়া দেখিতে পাইলেন-অবিকল সেইরূপ আর একটি বর্তুলাকার শিরস্ত্রাণ! সেইটি আবার, দক্ষিণাবর্তভাবে আবর্তন করিতেই, ধারাপাতের ন্যায় তাঁহার মস্তকের উপর জল পতিত হইতে লাগিল!
    অহো! বাথরুমের কি মহিমা!
    নিকটে পুষ্করণী, দিঘী বা নদী নাই, তথাপি জলধারা! ইহারা কি ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করিয়াছে? যদি, তাহাই হয়, তা হইলে আর আত্মার হিতসাধনে কষ্ট করিয়া সাধনার প্রয়োজন কি?
    এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে, পুনরায় বামাবর্ত ভাবে বর্তুলাকার শিরস্ত্রাণটি আবর্তন করিতেই, জলপ্রপাত বন্ধ হইল। রামদাস সদ্যোজাত শিশুর ন্যায় আনন্দে উচ্ছলিত হইলেন। এক্ষণে, গাত্রমার্জন করিতে হইবে! নিকটেই একটি কুলুঙ্গি সদৃশ থাকে কার্পাস বস্ত্র দেখিতে পাইলেন! উহা দ্বারাই গাত্রমার্জন সম্পূর্ণ হইল। ঐ কার্পাস বস্ত্রটি ই পরিধান করিয়া তিনি বাথরুম হইতে নির্গত হইলেন!
    নির্গত হইতেই রামদাস দেখিলেন, সেই দেবপোম পুরুষটি একটি অন্যরকমের কেদারাতে উপবেশন করিয়া আছেন। তাঁহার সন্মুখে একটি কাষ্ঠনির্মিত উচ্চাসন। তদুপরি বিভিন্ন স্ফটিক সদৃশ থালিকায় প্রভূত খাদ্যবস্তু! তবে, একমাত্র অণ্ড ব্যতীত সবই তাঁহার অজানা। স্ফটিক সদৃশ কিছু উচ্চ পাত্রে বিভিন্ন বর্ণের জলীয় পদার্থ রহিয়াছে। একটি থালিকায়, পীতবর্ণের গোলাকার ভর্জিত বস্তু রহিয়াছে! তাহার উপর পলাণ্ডু ও মরিচের ফালিকা শোভাবর্দ্ধন করত:, সুঘ্রাণে, কক্ষটি আমোদিত!
    ত্রিকোণাকার বেশ কয়েকটি শুভ্র বস্তু দেখিতে পাইলেন। বাকীগুলি, খাদ্যগ্রহণ কালে জানিয়া লইবেন বলিয়া মনস্থ করিলেন। গতরাত্রে, ফলাহার করিয়া, ক্ষুন্নিবৃত্তি হইলেও, উদর পূর্ত্তি হয় নাই!
    স্নানান্তে, অলক অবিন্যস্ত রহিয়াছে। তিনি অদূরেই দেখিলেন, একটি উচ্চাসনে মুকুর এবং কঙ্কতিকা! মুকুরের সন্মুখে, তিনি কঙ্কতিকা সহযোগে কেশ পারিপাট্য সমাপন করিলেন।
    দেবপোম পুরুষটি আর একটি কেদারা রামদাসের সন্মুখে রাখিলেন। রামদাস অবাক হইয়া দেখিলেন- কেদারার তলদেশে চারিটি চক্র রহিয়াছে। বিস্ময় আর প্রকাশ করিলেন না। বুঝিলেন- আরও বিস্ময় বাকী রহিয়াছে।
    দেবপোম পুরুষটি কহিলেন- প্রভু রামদাস! আপনি কি কুক্কুট মাংস ভক্ষণ করিবেন?
    রামদাস কহিলেন- শাস্ত্রে, বিবিধ মাংসাদি ভক্ষণের উপর কোনোরূপ নিষেধাজ্ঞা নাই! তবে, উহা ইষ্টদেবতাকে নিবেদন করিয়া ভক্ষণ করিতে হইবে এবং স্ত্রীপশুর মাংস ভক্ষণ নিষেধ।
    - আপনি যদি এই বিষয়ে আলোকপাত করেন, তাহা হইলে দেবকুলও বাধিত হইবে।
    - বিভিন্ন শক্তিপূজাতে যে অষ্টবিধ মহামাংস নিবেদন করিবার প্রথা আছে, তন্মধ্যে প্রথমেই বিধান রহিয়াছে ; গোমাংসের! তবে, বর্তমানে আমি ক্ষুধার্ত। কল্যবর্ত্য ভক্ষণ করিয়া ক্ষুন্নিবৃত্তি পূর্বক আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিব।
    - মহাশয়, কল্যবর্ত্য কহিলে কেহ বুঝিবে না! ইহাকে বর্তমানে বঙ্গীয় সমাজ ব্রেকফাষ্ট কহে।
    প্রথমেই রামদাস বলিলেন- আমি পিপাসার্ত! কিরূপ পানীয় গ্রহণ করিতে পারি?
    - আপনি, আপনার সন্মুখে যে পানপাত্রগুলি দর্শন করিতেছেন,তাহাতে বিবিধ পানীয় রহিয়াছে। ইচ্ছামত পান করুন।

    - বুঝিলাম। কিন্তু এই স্ফটিক সদৃশ পানপাত্রগুলিকে বর্তমান বঙ্গীয় সমাজ কি নামকরণ করিয়াছে?
    - ইঙ্গরেজীয় ভাষায় ইহাদিগকে গ্লাস বলে। কিন্তু, ইহা সমধিক পরিচিত গেলাস হিসাবে।
    - কারণ?
    - উচ্চারণে জিহ্বার জড়তা হেতু! আপনি সম্যক রূপে অবগত আছেন, বঙ্গীয় সমাজ আলস্যপ্রিয়, সেইহেতু, জিহ্বাতেও আলস্য প্রতীয়মান!
    - হুম! ঐ গ্লাসে পীত বর্ণের তরল পদার্থটি কি পানীয়!
    - হ্যাঁ! তপস্বী! উহা সহকার নির্য্যাস। ব্রেকফাষ্ট গ্রহণকালে নির্য্যাস অবশ্য গ্রহণীয়।
    - সহকারের অর্থ যে আম্র, তাহা কি বঙ্গীয় সমাজের বিদিত না, অবিদিত!
    - সাধারণ বঙ্গীয় সমাজ বর্তমানে সংস্কৃত ভাষায় পারঙ্গম নহে। ইঙ্গরেজীয় ভাষা শিক্ষা করিতে গিয়া, তাহাও সম্যক রূপে আয়ত্ত করিতে পারে নাই, আর মাতৃভাষাও সম্যক কহিতে পারে না! সংস্কৃতের দিন অস্ত গিয়াছে! কতিপয় লোক ইহাকে শিক্ষা করিতে চেষ্টা করিতেছেন বটে, তবে তাহাদের মানসিক ভারসাম্যহীন রূপে প্রতীয়মান করিতে সবাই সচেষ্ট।
    - কিছু বর্তমান বাংলা ভাষার উদাহরণ দিতে পারিবেন?
    - স্বচ্ছন্দে!
    - বলুন। অবগত হই!
    - প্রথমেই আমি শিক্ষিত বঙ্গীয় সমাজের বাংলার উদাহরণ দিতেছি। সম্যক শ্রবণ করুন।
    - যথা?
    - আমাদের এই পুওর ইণ্ডিয়াতে, কাল্টিভেশন আয়াণ্ড ইনডাস্ট্রিয়ালাইজেশন সাইমেলটেনিয়াসলি মেনটেইন করা উচিত।
    - আমি তো মাত্র চারটি বাংলা শব্দ বুঝিতে পারিলাম। আমাদের , এই , করা এবং উচিত । বাকীগুলি মনে হয় ইঙ্গরেজীয় ভাষা। যোগনিদ্রায় যাইবার পূর্বে এই শব্দগুলি শুনিয়াছিলাম, এমত বোধ হইতেছে।
    - ঠিক, প্রভু! ইণ্ডিয়া অর্থ ভারত, কাল্টিভেশন অর্থ কৃষি, আয়াণ্ড অর্থ এবং, ইনডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অর্থ শিল্পায়ন, সাইমেলটেনিয়াসলি অর্থ একসঙ্গে, মেনটেইন অর্থ পালন করা।
    - হুম! এযে কৃষরান্ন!!!!!!!!!
    - হ্যাঁ প্রভু! খিচুড়িই বটে! কৃষরান্ন অর্থাৎ খিচুড়ি খাইতে যেরূপ সুমধুর, সেইরূপ এই কৃষরান্ন স্বরূপ বাক্যগুলি অনর্থক কর্ণ কণ্ডুয়ন করে!!!!!
    - হুম! বুঝিলাম!
    রামদাস পানপাত্রের সহকার নির্য্যাস কিছুটা গ্রহণ পূর্বক বলিলেন।
    - মহোদয়! আপনি অপরাপর বর্তমান বঙ্গভাষার উদাহরণ দিন!
    - কাল যা কিচাইন হলো না মাইরী! বাড়ীতে বডি গ্যারেজ করেছি আর শালার বউ আমার ঘ্যাচাং করে ধরেছে! প্রচুর মাল টেনেছিলাম তো! কি কেলো!! আমি শালা খণ্ড ত। বউয়ের কাছে আর মাইরী পেঁয়াজী করতে পারলাম না! কোথায় শালা মাল খেয়ে- দিল বাগ বাগ হয়ে যাবে, তা নয়- হোল নাইট খালি ভ্যাদারাং ভ্যাদারাং শুনে লাইফটা হেল হয়ে গেল!
    - হুম। অর্থ বলুন!
    - হে তপস্বী! ইহার অর্থ কহিতে গেলে আমি নিজেই অযোগবাহ বর্ণ হইয়া যাইব। আপনি বরং ম্‌ৎ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ইহার অর্থ বুঝিয়া লহেন।
    - হুম! বুঝিলাম। কিন্তু এইরূপ ভাষা প্রয়োগের কারণ?
    - শ্লা! গুষ্ঠি মারি তোর এই কারণের!!!
    - ইহা কি ভদ্রজনোচিত ভাষা?
    - না প্রভু! ইতরজনের ভাষা বা কহিতে পারেন- সুরাপানের প্রভাবের ফল!
    - আপনি কি প্রভাতেই সুরাপান করিয়াছেন?
    - কি করিতে পারিতাম প্রভু! ইঙ্গরেজীয় ভাষায় একটি প্রবাদ আছে- Amanisknownbythecompanyhekeeps !
    - আপনার প্রদঙ্কÄ ক্ষমতাবলে ইহার অর্থ বুঝিলাম! কিন্তু, এ স্থলে যে Company শব্দটির প্রয়োগ করিলেন, তাহা কি ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী?
    - নিকুচি করেছে ( স্বগতোক্তি) প্রভু, আপনি কি স্যাণ্ডউইচ ভক্ষণ করিবেন না?
    - স্যাণ্ডউইচ? অর্থাৎ-বালির ডাইনী?
    - এই গেঁড়েটাকে আমার ক্ষমতা দেওয়াটাই ভুল হয়েছে!
    - কিছু কি কহিলেন?
    - না! না! ঐ ত্রিকোণাকার বস্তুটি স্যাণ্ডউইচ! দুখানি ব্রেডের ভেতর কুক্কুট মাংসের পুরু স্তর!
    - বেড না ব্রেড!!!!!
    - পূর্বে, পর্তুগীজ প্রভাবে ইঙ্গরেজীয়রা ইহাকে লোফ কহিত। বর্তমানে ইহাকে ব্রেড কহিয়া থাকে!
    ( বুঝলিরে গেঁড়ে! উফ)
    রামদাস সেই দেবোপম পুরুষটিকে কহিলেন- প্রভু, আপনার শুভ নামটি জানিতে পারি কি?
    - আমি সোমদত্ত! এই নিন আমার কার্ড।
    রামদাস চমকিত হইয়া , সেই আয়তাকার কাগজটি গ্রহণ পূর্বক, প্রথমে কিছু বুঝিতে পারিলেন না! পরে, সোমদত্ত প্রদত্ত ক্ষমতা বলে পড়িতে পারিলেন। চম্‌ৎকার ভাবে লেখা আছে : -
    SOMDUTTA
    CorrespondentandAdvisertoLordShiva
    ( Region: - WestBengal , India , Earth )
    Cell#0000420840 ( Tollfree )
    রামদাস কহিলেন
    - মহাশয়, আপনার হস্তলিপি মনোহর, ইহাতে সন্দেহ নাই!
    - প্রভু, আপনার প্রমাদ হইতেছে। ইহা স্বীয় হস্তলিপি নহে! যন্ত্রগণকের দ্বারা মুদ্রিত।
    - অতীব আশ্চর্যের! এই যন্ত্রগণক কি?
    - প্রভু! আপনার ব্যাকরণ জ্ঞান প্রশ্নাতীত! পাণিণির প্রত্যাহার সূত্রের অবলম্বনে এই যন্ত্রগণক নির্মিত। এই যন্ত্রগণক ; দেব, দেবর্ষি,ব্রহ্মর্ষি, যক্ষ,উরগ,প্রভৃতির দ্বারা প্রকীর্ত্তিত। যন্ত্রগণক,সত্য-পবিত্র-মঙ্গলপ্রদ-পরিচ্ছেদাতীত-কালত্রয়ে অধিকৃত-জ্যোর্তিময়-সনাতন। পণ্ডিতেরা এই যন্ত্রগণকের অলৌকিক কর্মসকল কীর্তন করিয়া থাকেন। যতিগণের আর সমাহিত হইবার প্রয়োজন পড়ে না।
    - তাহার পর?
    - ধ্যন এবং যোগবলের আর প্রয়োজন নাই। পণ্ডিতেরা এই যন্ত্রগণকের দ্বারা দর্পণতলগত প্রতিবিম্বের ন্যায় নিজেকে প্রত্যক্ষ করেন।
    রামদাস দীর্ঘনিশ্বাসত্যাগ পূর্বক এই যন্ত্রগণকের প্রতি মোহাবিষ্ট হইয়া কহিলেন
    -সোমদত্ত, আমি বৃথাই যোগনিদ্রায় সমাহিত ছিলাম। এই সকল বৃত্তান্ত শুনিয়া এবং রসনাসুখকর এই সব খাদ্যসম্ভারে উদর পূর্ত্তি হইয়াছে। এক্ষণে, স্বীয় কর্তব্য কি?
    সোমদত্ত কহিলেন
    -হে তপস্বী, আপনাকে প্রথমে বেশভূষা বদল করিতে হইবে। আমি, আপনার নিমিত্ত বর্তমান বঙ্গীয় সমাজ যে সকল বেশ পরিধান করে, তাহা লইয়া আসিয়াছি!
    - কি বার্তা শুনাইলেন!
    - হ্যাঁ প্রভু! বর্তমানে বঙ্গীয় সমাজ আর ধূতি, শাড়ী, মেরজাই পরিধান করেন না!
    - পরিবর্তে কি পরিধান করেন, তাঁহারা?
    - বর্তমানে, ইউনিসেক্স বেশ প্রকীর্তিত।
    -এই ইউনিসেক্স কি?
    - ইউনিসেক্স অর্থ- উভলিঙ্গ। এই সকল বেশ পরিধান করিলে, পশ্চাৎ ভাগ হইতে, কে মহিলা আর কেই বা পুরুষ ; নির্ধারণ করিতে পারিবেন না! পুরুষগন মহিলাদের ন্যায় অলকরাজি বিস্তৃত করিয়া রাখেন আর মহিলারা পুরুষগণের ন্যায় দামসকল মস্তকে শোভিত রাখেন। আপনি, শাস্ত্রজ্ঞ-মেধাবী-বুদ্ধিমান- ত্রিগুণাতীত ও পরম প্রাজ্ঞ। আপনাকে আর অধিক কি কহিব?
    - হুম! ধূতি, শাড়ী, মেরজাই- তোমাদের দিন গিয়াছে!
    - না প্রভু! দিন যে চলিয়া গিয়াছে, এমত নহে! কেবল- বিবাহ, রবীন্দ্রজন্মদিনে, একলা বৈশাখে থুড়ি পয়লা বৈশাখে, দোলপূর্ণিমায় এবং কিছু কিছু বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে, শিক্ষক / শিক্ষিকা, অধ্যাপক / অধ্যাপিকাগণ এই সমস্ত পরিধান করেন। মনে রাখিবার জন্য ইঁহারা সর্বদা সচেষ্ট!
    - হুম! দাও কি লইয়া আসিয়াছ!
    সোমদত্ত কহিলেন
    - প্রভু, আপনাকে একটি দু:সংবাদ দি! এই কলিকাতা নগরে, রামকেষ্ট ভশ্চাজ নামক এক দুস্কৃতিকারী যন্ত্রগণকের দ্বারা আমাদের এই সকল কার্যকলাপ এবং বার্তাসকল লোকচক্ষে আনিবার নিমিত্ত লিপিবদ্ধ করিতেছে।
    - এই রামকেষ্ট ভশ্চাজটি কি রকম ব্যক্তি?
    - মহামূর্খ-চতুর। নিজেকে মহাপণ্ডিত ভাবে! গদ্য একদমই লিখিতে পারে না! অথচ আমাদের কথপোকথন লিপিবদ্ধ করিতেছে। ত্‌ৎসম শব্দবহুল এই সকল কথপোকথন সঠিক লিপিবদ্ধ করিতে পারিবে কিনা, সন্দেহ আছে। তদুপরি, সুরাপ্রভাবে তাহার নয়নদ্বয় সর্বদা পঞ্চদল বজ্রপুষ্পের ন্যায় রক্তিম!!!! অতএব আমরা বর্তমান বাংলা ভাষায় কথপোকথন করিলে উত্তম হইবে।
    - এই রামকেষ্ট ভশ্চাজটিকে রোধ করা যাইবে না?
    - অসম্ভব! যন্ত্রগণকের অপার বলে, সে বলীয়ান! ইতমধ্যেই সে আমাকে দূরভাষে, পঞ্চদল বজ্রপুষ্পের অর্থ জিজ্ঞাসা করিয়াছে!
    - তুমি কি উত্তর দিলে?
    - কি আর বলব? বললাম- ওরে রামকেষ্ট!!! পঞ্চদল বজ্রপুষ্পের মানে হলো পাঁচ পাপড়ীর জবাফুল!রামদাস বললেন : -
    - আচ্ছা! এই রামকেষ্ট ভশ্চাজের জীবিকা কি?
    - পুরুতগিরি!
    - বলো কি হে!
    - হ্যাঁ! ঠিকই বলছি! সরস্বতী আর লক্ষ্মী পূজোর সময়ে পুরুতের অভাব পড়ে! বুইলেন তো!
    - হুম!
    - তো সেই সময়, ব্যাটা সারা বছরের ইনকাম টা করে নেয়!
    - কি রকম?
    - আমি একবার গিয়েছিলাম, পূজো করাতে!
    - কি বলল?
    - বলল, দক্ষিণা কত?
    - কত দিতে হবে?
    - হাজার টাকা আর ঠিক আড়াই মিনিট পূজো করবো, রাজী?
    - তুমি রাজী হলে?
    - উপায় কি বলুন? কোনো পুরুতই তো আর রাজী হয় না!
    - তারপর?
    - ব্যাটা তো, সকাল ৮ টায় আসবে বলে, বেলা ১২ টায় এলো! এসেই ভুলভাল মন্ত্র পড়া শুরু! তো আমি বললাম- রামকেষ্ট দা আপনি মন্ত্রের মানে জানেন?
    - কি বলল?
    - বলল, হ্যাঁ জানি!
    - তো কি বলল?
    - বলবে আর কি? ব্যাটা চশম খোর! বলে কি- আরও পাঁচশ টাকা লাগবে!
    - কি বললে তুমি?
    - রাজী হলাম, ওর বিদ্যের দৌড়টা দেখতে!
    - শুরু করল! ওঁ বিষ্ণু, তদ্বিষ্ণু: পরমংপ্রদং, সদা পশ্যন্তি শুরয়, দিবীব চক্ষুরাততম।
    - মানেটা কি বলল?
    - ওঁ বিষ্ণু = একটা বাঁশ, তদ্বিষ্ণু: পরমংপ্রদং = তার চেয়েও বড় বাঁশ পরমভাবে প্রদান কর, সদা পশ্যন্তি শুরয় = সব সময় দেখে শুনে দিবি, দিবীব চক্ষুরাততম = দিবি, দিবি, চক্ষুলজ্জা করবি না!
    - আমি বললাম, এটা কি হলো?
    - বলল, কি আর হবে? তোকে বাঁশ দিয়ে দেড়হাজার টাকা গাপ করে দিলাম! আমাদের ঋষি- মুনিরা ভবিষ্‌য়্‌ৎদ্রষ্টা ছিলেন।
    আমার মা বলল- রামকেষ্ট দা, একটু ফল টল খেয়ে যান!
    কি বলল জানেন?
    কি?
    বলল- কর্মণ্যে বাধিকারস্তে, মা ফলেষু কদাচন!
    মা গদগদ হয়ে বলল- এর মানে কি, রামকেষ্ট দা?
    কর্মে অকর্মণ্য হয়ে পড়লে মাকে আর ফল দেবে না!
    মা খুশী হয়ে আরও পাঁচশ টাকা দিয়ে দিল!
    বল কি হে!!!
    তবে, আর বলছি কি? তবে . রামদাসবাবু, আর PNPC নয়, যান, এবার ড্রেস আপ করে নিন।
    সোমদত্ত, রামদাসের দিকে প্রথমে একটি আট পকেটের ফেডেড জিন্সের ট্রাউজার এগিয়ে দিল!
    রামদাস জিজ্ঞেস করলেন- কিভাবে পরিধান করিব?
    - আবার সাধু বাংলা বলে!!! ও! ও! ও!
    - আচ্ছা, আচ্ছা, চালু বাংলাই বলছি, কিন্তু ঐ ও! ও! ও! টা কি?
    - বকা দিলাম আপনাকে!
    - বুঝেছি! কিন্তু কোমোরে যে ঢলঢল করছে!
    - কুছ পরোয়া নেহী! আমি আপনাকে বেল্ট পরিয়ে দিচ্ছি!
    - বেল্ট?
    - আরে বাবা, চর্ম কোমোর বন্ধনী!
    - আচ্ছা!
    - এই নিন লাল টি শার্ট
    - পরলাম!
    - এই নিন গগলস!
    - এটা আবার কি?
    - রোদচশমা! যাতে রোদ চোখে না লাগে! তাছাড়া! আপনাকে বেশ স্মার্ট লাগবে!
    - বেশ!
    - বা:! আপনাকে তো এয়াকেবারে যৌবনের উত্তমকুমার লাগছে!
    - উত্তমকুমার?
    - সে অনেক কথা! তবে উনি কিন্তু এখনও বাঙালী এবং বাংলার নয়নের মণি! উনি একজন মহাগুরু অভিনেতা! এখন অবশ্য একজন আছেন!
    - কে!
    - পোসেনজিৎ
    - সেটা আবার কে?
    - ঐ অভিনেতা! তবে ইদানীং লালন ফকির করে বেশ নাম করেছে।
    - আচ্ছা, আচ্ছা!
    - কিন্তু, রামদাস বাবু, আপনাকে কিন্তু ঝক্কাস লাগছে! মেয়েরা আপনাকে দেখলে এয়াকেবারে চটকে চৌষট্টি হয়ে যাবে!
    - ঝক্কাস!!!!!!!! চটকে চৌষট্টি!!!!!!!
    - এসব, এখন বাংলা এবং বাঙালীর নতুন লব্জ!
    - আরও কিছু বল তো সোম, শিখে নি!
    - হুম! বিন্দাস লাইফ,লাইফ ঘেঁটে গেছে, কেস জণ্ডিস, ইলু ইলু, খাল খিঁচে নেওয়া। এরকম আরও অনেক আছে! কত আর বলব?
    - আচ্ছা, আচ্ছা!
    - আপনি ট্রাউজারসের জিপটা লাগিয়ে নিন!
    - সেটা আবার কি?
    - ঠিক আছে, আমিই লাগিয়ে দিচ্ছি। বলে জিপটা টেনে দিল সোমদত্ত!
    রামদাস বেশ অবাক হলেও দু:খ পেলেন না! দেশাচার, সমচার- সবই মানতে হবে! যুগের নিয়মও তাই! না হলে যে মডার্ণ হওয়া হবে না!
    বেশ আনন্দেই সোমের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, রামদাস!!!! পায়ে নাইকির স্নিকার! হাঁটতে কোনো কষ্টই হচ্ছে না! বেশ আরাম। আগের মত আর পায়ে কাটার ভয়ও নেই।
    হোটেলের ঠাণ্ডা থেকে বেরুতেই, একঝলক গরম হাওয়া এসে তাঁর মুখে ধাক্কা মারল! সোম বলল- এসি থেকে বেরিয়েছেন তো! একটু কষ্ট তো হবেই!
    চারপাশে অজস্র চিৎকার আর বিভিন্ন রকমের গাড়ীর আওয়াজে এক অসহ্য শব্দ! কর্ণপটহ বিদারিত হইতেছে! থুড়ি কানের পর্দা ফেটে যাচ্ছে! চারিদিকে রঙ্গীন কাগজ লাগান!
    সোমের কাছে জিজ্ঞেস করে জানলেন, এগুলো ভোটের পোষ্টার! ভোট কি, আর পোষ্টারও কি জেনে নিলেন!
    আচ্ছা, সোম এই যে ভোট টা হচ্ছে ; এটা তো একটা লড়াই! তাই তো?
    হুম! ঠিকই ধরেছেন!
    তা কার, কার মধ্যে লড়াই?
    সোম জবাব দেওয়ার আগেই, বিকট আওয়াজে একটা গান ভেসে এলো!
    খোকা বাবু যায়! লাল জুতো পায়!
    -এটা কিসের গান? সোমদত্ত?
    -বাংলা চলচিত্রের আধুনিক গান!
    - আমাদের সময়ের টপ্পা, কবির লড়াই- এসব কি উঠে গেছে!
    - টপ্পাটা রামকুমার বাবু বজায় রেখেছিলেন, কিন্তু তিনি গত হবার পর আর চল নেই!
    - এখনকার কিছু গান বলবে?
    - বলাই যায়! তোমার দেখা নাই রে !
    -কার দেখা নেই?
    - সেটা তো কারও জানা নেই, তবে দুধওয়ালার গোঁফে মাছি , এটা জানি!
    -এই সব কি ভাবে বাজানো হয়?
    - আগে কলের গানে বাজানে হত,তবে আজকাল CDPlayer এ বাজানো হয়! তাই এগুলো গানের বদলে GUN !
    - তা এনাদের কি, গায়ক বলা হয়!
    - আরে না না! এরাও ইউনিসেক্স! এরা GUNNER নামে পরিচিত!
    - হুম! তোমার এই GUN এবং GUNNER এর গুঁতোয় আমি ভোটের লড়াইটা কাদের মধ্যে, সেটা জিজ্ঞেস করতে ভুলেই গেছিলাম। একটু বলবে?
    - ওটাই তো! আমরা তো বুঝতেই পারছি না! আর সেই জন্যই তো আপনাকে ডাকা!
    - যদি কিছু বুঝতে পারেন! তাই, আমার BOSS শিবুদা আপনাকে যোগনিদ্রা থেকে উঠিয়েছেন!
    - শিবুদা?
    - ঐ দেবাদিদেব মহেশ্বর!
    - তাই বলে, শিবুদা!!!!
    - দেখুন, আজকাল সব দাদা, দিদিদের যুগ! তাই, শিবুদা!
    রামদাস, আর অবাক হচ্ছেন না! হাঁটতে, হাঁটতে একটা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন!
    ঘরের ওপরে লেখা আছে নির্বাচনী কার্যালয় । সোমদত্তের সঙ্গে ঢুকে পড়লেন, রামদাস!
    কয়েকজন ছেলে- ছোকরা, এদিক- ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছিল! ওঁদের দেখে একজন বলে উঠল : -
    - আবে! তোরা কে বে?
    - আমরা, আপনাদের এই নির্বাচনী কার্যালয় দেখতে এসেছি!
    - এটা দেখার কি আছে বে? দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অফিস! বুয়েছিস?
    - স্বাধীনতা সংগ্রাম?
    - এলোমেলো করে দে মা লুটে পুটে খাই! এবার আমাদের লুটের পালা! তাই, স্বাধীনতা সংগ্রাম!!!!!!
    - ব্‌ৎসগণ! স্বাধীনতা সংগ্রাম মানেই কি লুট?
    - আব্বে! বেশী জ্ঞান মারাস না তো!!! এটা পরিবর্তনের যুগ!
    - তাহা তো বুঝিলাম! কিন্তু, পরিবর্তন তো প্রচুর হইয়াছে, ব্‌ৎস!
    - ক্কি! কোত্থেকে এয়েছিস বে, লালটু সেজে! কি ভাষায় কথা বলছিস! সব শ্লা, মাথার ওপর পিলেন হয়ে উড়ে যাচ্চে! ঠিক করে কথা বলেতা!
    সোমদত্ত, রামদাসকে বের করে নিয়ে এলেন! বললেন- না:! আপনার দেখছি কাণ্ডজ্ঞান নেই! এবারই ক্যালানি খেতেন!
    -ক্যালানি?
    - হ্যাঁ! ক্যালানি!!!!
    - সেটা কি?
    - মার!
    আজকাল আর একটা লব্জ হয়েছে, খিস্তি আর ক্যালানির বিকল্প নেই!
    - রামদাস প্রতিজ্ঞাই করেছেন, আর অবাক হবেন না!
    হাঁটতে থাকলেন! কিছু দূরে আর একটি নির্বাচনী কার্যালয় । ওঁদের দেখে, এখানকার লোকেরা একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন!
    - আপনারা কারা? নির্বাচন কমিশনের লোক?
    - না না! আপনারা বিচলিত হইবেন না! আমরা দেখতে বেরিয়েছি, এই ভোটের বাজার!
    - ও! ও! আপনারা বাজারী কাগজের লোক?
    - মানে?
    - ও সব ভ্যানতাড়া করবেন না! আমরা বুঝি, কে কিভাবে এখানে আসে! গত ৩৫ বছর আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। আমরা জনগণ দেখলেই বুঝি! আমরা না ওরা!
    - আমরা না ওরা!
    - হ্যাঁ! আমরা না ওরা! যে জনগণ আমাদের সাথে আছে, তারাই আমরা! আর যারা নেই, তারাই ওরা! এই ওরা দের ওপর আমাদের মাতব্বরী জন্মগত অধিকার! অধিকারের জন্য আমাদের লড়াই! এই লড়াইয়ের জন্য আমরা এবারও জিতব! সব মানুষকে অধিকার পাইয়ে দেওয়াই আমাদের বিপ্লব !
    - আপনারা কি শাক্ত?
    - এটা আবার কি! খায় না মাথায় দেয়?
    - মানে, আপনারা কি শক্তির পূজারী?
    - আরে না! শক্তি তো ওনাদের একচেটিয়া!
    - না! আমি ঠিক ওটা বোঝাতে চাই নি! আমি, বলছি- আপনারা কি দেবীর পূজা করেন?
    - বুঝেছি! আপনি ম্যাও!
    - না মহাশয়! আমি মার্জার নই!
    - আমরা মার্জারিত নই! জর্জরিত! ঐ ম্যাওরা! না থাক! আপনারা সব দালাল! বুর্জোয়াদের! আমরা নিপীড়িত জনগণের প্রতিনিধি!
    এত কথা বলে, লোকটি একটি ক্লাসিক সিগারেট ধরালেন!
    রামদাসের মনে পড়িল- চতুর্ণামপি বর্ণণামেষ ধর্ম্ম: সনাতন: । কলিকালে, চারিবর্ণেরই এই সকল সনাতন ধর্ম্ম! ব্যাখ্যাও, মনে পড়িল। ইহারা নিরন্তর পাপকর্মকেই ধর্ম বলিয়া গ্রহণ করিবে।
    তাঁহার আরও কিছু মনে পড়িল।
    কৃষিবদ্বাণিজ্যশিল্পয়োরপি কলৌ বর্ণচতুস্টয় সাধারণ ধর্ম্মত্বং দর্শয়িতুং বাণিজ্য শিল্পকমিত্যুক্তম।
    সংক্ষেপে, কলিযুগে কৃষির ন্যায় বাণিজ্য ও শিল্পকর্ম চারিবর্ণের সাধারণ ধর্ম।
    ইহাতে দোষের কি হইল? উভয় পক্ষ কি পরাশর সংহিতা আদ্যোপান্ত পাঠ করিয়াছেন? না, অনিষ্ট বিষয়েই সর্বদাই সচেষ্ট?
    উভয় পক্ষের-ই কি শিষ্টসমাজে বিশিষ্ট গণ্য হইতে অনিষ্টে নিবিষ্টতাই কি উৎকৃষ্ট লক্ষণ?
    রামদাসকে অন্যমনস্ক দেখে, সোমদত্ত সবই বুঝতে পারল!
    - চলুন! সিগারেট খাবেন?
    - সিগারেট কি?
    - শ্বেত ধূম্রশলাকা! তাম্বাকু সহ গোলাকার বস্তু!
    - হুম! চলুন। আজকাল তো আর হুঁকো পাওয়া যায় না! একটু মগজে ধোঁয়া দিলে যদি মাথাটা চাঙ্গা হয়!
    - চলুন দোকানে! ও ভাই! দুট্টো ভালো সিগারেট দেখি!
    - এই নিন! কিন্তু, ৫ টাকার বদলে ৭ টাকা দেবেন!
    - কেন ভাই? বাজেটে তো সিগারেটের দাম বাড়ে নি!
    - আরে, বাড়বে বলে তো কিনে রেখেছিলাম! বাড়ে নি তো আমার কি করার আছে? নেবেন তো নিন! না হলে বেশী বিলা করবেন না!
    আপণালয়ের সত্বাধিকারীর এইরূপ বাক্যপ্রয়োগে, রামদাস, পুনরায় ব্যথিত হইলেন। মহামতি মনুর শ্লোক মনে পড়িল।
    প্রিয় বাক্য প্রদানেন সর্বে তুষ্যন্তি জন্তব:।
    তস্মাত্তদেব বক্তব্যং বচনে কা দরিদ্রতা।আ।
    প্রিয় বাক্য বললে, মানুষ তো কোন ছার! পশুপাখিও তুষ্ট হয়! তাই প্রিয় বাক্য প্রয়োগই উচিত, ইহাতে কৃপণতা বা দারিদ্‌র্‌য কিসের?
    আগেই জেনেছিলেন- লাউডস্পীকারের সাহায্যে বক্তব্য আরও পরিস্কার এবং জোরে শোনা যায়!
    কিন্তু, এ কি? এরা তো, একে অপরকে নিন্দা এবং গালিগালাজেই ব্যস্ত!
    সত্যং মৃদু প্রিয়ং ধীরো বাক্যে হীতকরং বদ্যেৎ।
    আত্মোৎকর্ষন্ত নিন্দাং পরেষাং পরিবর্জয়েৎ।আ।
    সজ্জন ব্যক্তি, সর্বদা বিনম্রভাবে, সত্য, প্রিয় এবং কেবল লোকের হিতকারী হয়, এমন বাক্যেই কথা বলবেন। তিনি, নিজের যেমন প্রশংসা করবেন না,তেমনি অপরের সমালোচনা বর্জন করবেন।
    কিন্তু, নিন্দা সমালোচনা করিতেই হয় তাহা হইলে?
    এক্ষেত্রে, ব্যক্তির গুণের প্রশংসা অগ্রভাগে করে,অতি স্নেহের সঙ্গে কাজের গঠনমূলক ভাবনা সহ নিন্দা করা উচিত!
    রামদাস বুঝলেন- এখন, একে অপরের নিন্দাই করবে। মরে গেলেও অপরের প্রশংসা করবে না! এই ভাবে কি রাষ্ট্র চলে? সমস্ত প্রজা এই সংস্কৃতিতেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে, আর হয়েছে-ও!
    তারই প্রতিফলন- রাজ্য পরিচালনা, শিক্ষা এবং সব ক্ষেত্রেই!
    হা হতোস্মি!!!!!!
    যুগ- যুগান্তর ধরে ক্ষমতার লড়াই চলে এসেছে! মহাভারত বা রামায়ণেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়! ছলে, বলে, কৌশলে ক্ষমতায় থাকতে ,আত্মপ্রচার করা দরকার! এর জন্য ,ষড়যন্ত্র, চরিত্রহনন, মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া, দরকার হলে গুপ্তহত্যা পর্যন্ত করতে হবে! ভারতের এটাই দস্তুর!
    রামদাস, তাই বিচলিত হলেন না! মহামতি মনু, যতই স্মৃতিশাস্ত্র লিখে যান- সেটা মানার কোনো প্রয়োজনই পড়ে না!
    যোগনিদ্রার যাবার আগেও, তিনি ভারতের এই অবস্থা দেখে গেছিলেন।
    ক্ষমতা মানেই- অর্থ, ভোগ! কিছু ব্যতিক্রমও আছে, কিন্তু কে না জানে- বিধিই, ব্যতিক্রমের নিয়ামক!
    সোমদত্ত বুঝতে পারছেন, রামদাসের মনের অবস্থা!
    রামদাস, বললেন- এক্ষণে,নগর কলিকাতা দর্শন এবং শাস্ত্র পাঠান্তে আমি যা বুঝিয়াছি, তাহা কথন করিতেছি। আপনি শ্রবণ করুন!
    ইহলোকে, যে চারিপ্রকার যুগ বর্ণিত হইয়াছে, তাহা শুধু মাত্র সভ্যতার মাত্রা নির্ণয়ের নিমিত্ত!
    আমাদের সৌভাগ্য- এই চারিযুগেই, কিছু মণীষী, যথার্থ বিদ্বান ও অপরাপর অশেষগুণালঙ্কৃত ব্যক্তিরা আবির্ভূত হইয়াছেন।
    কার্যকাল সমাপ্ত হইলে- তাঁহারা লীন হইয়া যান। কিন্তু, জনসাধারণ তাঁহাদের উপদেশ স্মরণে রাখেন না!
    পার্থিব সুখই তাদের কাম্য। শাস্ত্র- সাহিত্য-সঙ্গীত- বিজ্ঞান ধর্ম্ম-অর্থ- কাম ও ত্‌ৎপ্রতিপাদক বিবিধ শাস্ত্র,পণ্ডিত ব্যক্তিগণ রচনা করিয়া গিয়াছেন এবং অদ্যাবধি তাহার নিরঙ্কুশ চর্চ্চা চলিতেছে। ইঁহারা ক্ষমতার জন্য লালায়িত কদাপি ছিলেন না, এখনও নহেন। আমোদের সহিত লক্ষণীয়, ইঁহারা ক্ষমতাবান দ্বারা চিরকাল ব্যবহৃত। কিছু পণ্ডিত, জ্ঞানত এবং কিছু অজ্ঞানত এই ব্যাবহার মানিয়া লন!
    এই সকল ভাস্করতুল্য ব্যক্তিগণ, জ্ঞানাঞ্জন শলাকা দ্বারা বাংরবার মোহাবরণ নিরাকরণ করিয়া আমাদিগের নেত্রোল্মীলনের নিমিত্ত নিরন্তর চেষ্টিত।
    মনুষ্যহিতকর কার্য্যসমূহ পাপজনক নহে, এই সমস্ত অসদভিপ্রায় দূষিত হইলেই পাপজনক হয়!
    বর্তমানে সারা জম্বুদ্বীপ সহ এই খণ্ডিত বঙ্গদেশে যাঁহারা শাসন করিতেছেন / করিবেন, তাঁহারা এই সমস্ত অসদভিপ্রায় দূর করিবার জন্য চেষ্টিত না হইলে ; সমস্ত জনগণ- কালসর্পদিগের দ্বারা পরিবেষ্টিত হইবে!
    অতএব, সোমদত্ত! আপনি দেবাদিদেব মহাদেব কে এই বার্তাই দিবেন।
    বুঝিলাম আমার দ্বারা এই দূরূহ কার্য্য সমাপন করিবার নিমিত্ত, দেবাদিদেব মহাদেব আমার যোগনিদ্রা ভঙ্গ করাইয়াছেন। আমি, আজি হইতে এই কার্য্যে ব্রতী হইলাম। ইহাতেই মদীয় এবং জাতির মোক্ষ! আমি আর যোগনিদ্রায় যাইব না! নিরন্তর, এই সকল কার্যের প্রতিবাদ এবং সমাজ সংস্কারে ব্রতী হইলাম।
    মানবতার জয় হউক!

    (সমাপ্ত)

  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.142.124 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৩:১৭511534
  • @ সিকি
    আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। সব সময় করে উঠতে পারছি না। তবে চেষ্টা করছি।
    কিন্তু, যুক্ত বর্ণের সমস্যাটা রয়েই যাচ্ছে। কি করি বলুন তো?????????????
  • siki | 123.242.248.130 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৩:৩৯511536
  • কোন কোন যুক্ত বর্ণে সমস্যা হচ্ছে একটু জানাবেন? সাহায্য করতে পারি তা হলে।
  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.142.124 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:০৭511537
  • @ সিকি
    ত এ ত এ। বা ব ফলা এটা কিন্তু, ওয়ার্ডে ঠিকই আসছে। পেষ্ট করলেই বিপদ হচ্ছে।

  • Ramkrishna Bhattacharya | 223.223.142.124 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:১৮511538
  • আরও একটা সমস্যা। ষ এ ৎ দিলে গুলিয়ে যাচ্ছে। য ফলা দিলেও তাই।
  • Ho | 121.242.160.180 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:১৯511539
  • এইসব তো কবে থেকে বলছি, কানেই নেয় না তো কী বলব। শুধু ওটা না, আরো আছে, ক্রমে ক্রমে প্রকাশ পাবে।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:৪৮511541
  • ষ্য
  • siki | 123.242.248.130 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:৪৮511540
  • টেস্ট করছি ইউনিকোডে।

    ত্ত
    ভবিষ্‌য়্‌ৎ
  • siki | 123.242.248.130 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:৫০511542
  • উড়িষ্যা
    ভবিষ্যত
    ভবিষ্‌য়্‌ৎ
  • siki | 123.242.248.130 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:০১511543
  • হুঁ। মূর্ধণ্য ষ আর যফলায় প্রবলেম হচ্ছে যখন তার পরে খণ্ডীয় ত পড়ছে। এমনিতে ঠিকই আসছে।

    আর তয়ে তয়ে ঠিকই আসছে। প্রবলেম হয় তিন অক্ষর সমেত যুক্তাক্ষরে। তয়ে তয়ে ব, বা জয়ে জয়ে ব।

    পরে ঠিক হয়ে যাবে। (কবে হবে জানি না অবশ্য, তবে খুব শিগগিরই হবে)
  • Ho | 121.242.160.180 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:২২511544
  • অ্যায় সেই এক্কতা ! ক্রমে আসিতেছে, শীঘ্রই আসিতেছে। অথচ বছর ঘুরিয়া যায়, তবু তোমার দেখা নাই রে তোমার দেখা নাই।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৪৬511545
  • আশায় বাঁচে চাষা। আমরা তো নিতান্তই চণ্ডাল।
  • pi | 72.83.83.28 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৫০511547
  • ঘনাদা, ( ইয়ে, আপনাকে রামকৃষ্ণদা ডাকতে গেলে আসলে হোঁচট খাচ্ছি, ঐ ডাকে অনভ্যস্ত বলে শুধু না, ঘনাদাই আপনাকে বেশ মানায়ও :)), কথা হবেনা !

    এবার অন্য লেখাপত্তরও আসতে আসতে আসতে থাকুক :)

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন