এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • d | 14.96.228.169 | ২১ মার্চ ২০১২ ২০:২৭533746
  • দু রাত্তির?
  • kc | 178.61.96.29 | ২১ মার্চ ২০১২ ২০:৩৪533780
  • এক মহা খাজা উপন্যাস।
  • achintyarup | 59.93.246.255 | ২২ মার্চ ২০১২ ০৪:৪৯533791
  • দুরাত্তির আর হল কোথায়, দেড় রাত হতে না হতেই টেনে নিয়ে এল তো (বিরাট দীর্ঘশ্বাসের ইমোটিকন)
  • achintyarup | 59.93.246.255 | ২২ মার্চ ২০১২ ০৫:১৩533802
  • অনেক দিন হয়ে গেছে, সবকিছু বিশেষ মনে-টনেও নেই। যা মনে আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, তিনটে দামড়া প্যাটার্ণের প্রায়-বেকার যুবকের সঙ্গে একটা মেয়ে দুদিনের ছুটিতে ট্রেনের রিজার্ভেশন না করে এবং থাকার জায়গা-টায়গা কিছু বুক না করেই বেরিয়ে পড়েছিল। আরেকটা কথা মনে পড়ছে, তার দশদিন পর মেয়েটার বিয়ে ছিল এবং তার হবু বর সেই দলে ছিল না এবং ওই তিন প্রায়-বেকার যুবকের একজনকে মেয়েটি আগে কোনোদিন চোখেই দেখেনি। এসব কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা বলে তখন মনেও হয়নি। অবশ্য তখন চালের দামও কম ছিল। আগেকার দিনে যেমন সব হয়ে থাকে।

    (কিন্তু সুকন্যার হবু বরের সমর্থন ছাড়া সে যেতেই পারত না আমাদের সঙ্গে। তার মা-ই খুব আপত্তি করছিলেন যদ্দুর শুনতে পাই। কিন্তু সৌগত নাকি বলেছিল, বন্ধুদের সঙ্গে যেতে চাইছে, আপনি কেন বাধা দিচ্ছেন মাসিমা?

    (সে যাগ্গে। তবে তখন সৌগতকে আমি চিনতামও না -- যদিও সে এখন আমার সহকর্মী -- এবং সুকন্যার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা তো হল বড় ঘড়ির নিচে। এবং আজ বিকেলেও তার সঙ্গে অলিপাবে গিয়ে হুস্কিল খেয়ে এসেছি। আর তখনই না এই লেখাটা লেখার কথা ভাবা হল।)
  • achintyarup | 59.93.246.255 | ২২ মার্চ ২০১২ ০৫:৩২533813
  • ডিসেম্বর মাস ছিল কি? না, জানুয়ারি। কারণ ছাব্বিশে জানুয়ারির ছুটির সঙ্গে আরেক দিন জুড়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম, মনে পড়ছে। মনে আছে ট্রেনের ইঞ্জিনের মাথায় তেরঙ্গা উড়ছিল। ছবিও আছে তার।

    হাওড়া স্টেশনে সবাই যখন গিয়ে জড়ো হলাম, তখন রাত্তিরবেলা, সেটা মনে আছে। কেউ একজন দেরি করে এল, যেমন সব সময় হয়ে থাকে, কিন্তু কে সেটা মনে পড়ছে না। ভাবা গিয়েছিল জানুয়ারি মাসে ময়ূরভঞ্জের পাহাড়-জঙ্গলে বেশ ঠাণ্ডা হবে, তাই কিছু গরম জামা-টামাও নিয়েছিলাম ব্যাগে ভরে, যদিও সে সব কিছু আমার অন্তত কোনো কাজেই লাগেনি। (দিব্যি মনে আছে দেখছি।)

    তারপর যেমন হয়, কেউ একজন গিয়ে টিকিট কেটে আনল, আর আমরা গিয়ে ট্রেনে উঠে পড়লাম।

    আমাদের গন্তব্যে পৌঁছনোর পথ ও পদ্ধতি ছিল বিচিত্র। আমরা শুধু এইটুকু জানতাম যে পশ্চিমবাংলার সীমানা পেরিয়ে খানিকদূর যাওয়ার পর ছোট্ট একটা স্টেশনে নামতে হবে, যেখানে বড় বড় ট্রেন থামে না। তারপর সেখান থেকে শুঁয়োপোকার সাইজের ছোট্ট একটা রেলগাড়ি ধরে ঝিকঝিক করতে করতে পৌঁছতে হবে বাংরিপোসি।
  • b | 125.20.82.164 | ২২ মার্চ ২০১২ ০৯:২৪533824
  • রূপসা জংশন। খড়গপুর-ভুবনেশ্বর লাইনে।
  • d | 14.99.32.114 | ২২ মার্চ ২০১২ ১২:২৬533835
  • আচ্ছা উমকি নাকি কোথায় মেঠো সাপ নাকি ধেনো ইঁদুরের (কিম্বা দুটোরই, গুরুতেই লিখেছিল একবার) মাংস খেয়েছিল, সে কি এই বাংরিপোসিতেই?
  • Papiss | 121.241.218.132 | ২২ মার্চ ২০১২ ১৮:০৫533857
  • উমকি = সুকন্যাদি
  • achintyarup | 115.111.248.134 | ২২ মার্চ ২০১২ ১৮:০৫533846
  • উমকি কে? বাংরিপোসির দুরাত্তির আমার পড়া হয়ে ওঠেনি।
  • kumu | 122.160.159.184 | ২২ মার্চ ২০১২ ১৮:১৭533747
  • আচ্ছা,সেই যে গতজন্মে এক প্রজেক্টে শালের বীজ,তেল ই: সংগ্রহ করে এনেছিলুম,সেটা কি বাংরিপোসি ছিল?
  • Nina | 12.149.39.84 | ২২ মার্চ ২০১২ ১৯:৩৫533758
  • আচ্ছা আজকাল আর উমকি কে দেখি না তো--কোথাও? নাকি অন্য নামে লিখছেন?
  • kd | 59.93.196.157 | ২৩ মার্চ ২০১২ ০০:২৪533769
  • দেখলে চিন্টুবাবু, বল্লুম না তুমি উমকির সঙ্গে আড্ডা মারতে যাচ্ছো। তো তুমি বল্লে - না, সুকন্যার সঙ্গে। আমি আবার সুকন্যা বলতে শুধু সুতোকেই চিনি। হ্যাঁ, ঝুমকুও, কিন্তু তুমি আবার তাকে চেনো না।

    তো, আসল কথা তো জানা হ'লো না। ক'টা?
  • achintyarup | 115.111.248.6 | ২৩ মার্চ ২০১২ ০০:২৮533773
  • পাঁচে পাঁচ, কাবলিদা। আর পেগের হিসেবে যদি মাপেন, তাহলে সাড়ে তিন। আর তার পরেও মাঝ রাত পর্যন্ত অফিস
  • achintyarup | 59.93.255.203 | ২৩ মার্চ ২০১২ ০৫:০৪533774
  • তখনও, যদ্দুর মনে পড়ে, হাওড়া স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্স হয়নি। পুরোনো স্টেশনেরই একেবারে শেষের দিকের কোনো প্লাটফর্ম থেকে সাউথ ইস্টে যাওয়ার ট্রেনগুলো ছাড়ত। আমরা পুরী প্যাসেঞ্জারের টিকিট কেটেছিলাম। জেনারেল কম্পার্টমেণ্ট। সে এক নিদারুণ যাত্রা। একে রিজার্ভেশনহীন কামরা, তার ওপর সামনে ছুটি, রাশি রাশি মানুষ ঠেলে উঠেছে গাড়ির ভেতর। তিলধারণের জায়গাটুকু শুধু আছে। বেঞ্চিতে, ওপরের তাকে, মেঝেতে, বাথরুমে, সর্বত্র মানুষ। থিকথিক করছে। আর অনবরত দক্ষিণী কি ঔড্র ভাষায় প্রচুর হস্তপদসঞ্চালনপূর্বক নানা রকম আলোচনা করছে। করেই যাচ্ছে। অবশ্য আমরাও কিছু চুপ করে ছিলাম না।

    যাত্রীদের বেশিরভাগই, মনে পড়ছে, কোনো চটকল বা ওইরকম কোনো কারখানার শ্রমিক। এবং আমাদের কামরায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই গাঁজা খেতে দারুণ ভালবাসেন বোঝা গেল। এবং পাছে কোনো ফোকর দিয়ে শীত ঢুকে পড়ে, সেইজন্য কামরার দরজা-জানালা সব এঁটে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে শতাধিক মানুষের ঘাম, বিড়ি-সিগারেট-গাঁজার ধোঁয়া, এবং দরজা-খোলা বাথরুম থেকে আসা মূত্র-পুরীষদির খোশবোতে ম ম করছিল রেলগাড়ি।

    কোনোক্রমে একখানা বেঞ্চিতে জনা তিনেকের বসার জায়গা যে কি করে যোগাড় করেছিলাম মনে পড়ে না। নাকি দুজনের জায়গা ছিল, আর পালা করে বসা হচ্ছিল? তারই মধ্যে কি করে যেন সুকন্যা গুটিশুটি মেরে খানিক ঘুমোনোর চেষ্টায় ছিল। সম্মিলিত উদ্যোগে সাফল্যের সঙ্গে সে চেষ্টা ব্যর্থ করা গিয়েছিল মনে হয়।
  • achintyarup | 59.93.255.203 | ২৩ মার্চ ২০১২ ০৫:২৪533775
  • এইভাবে, আধো-ঘুমে আধো-জাগরণে, খানিক দাঁড়িয়ে, খানিক পরস্পরের কোলে কোলে বসে রাত মোটামুটি কাটিয়ে দেওয়া গেল। (এইখানে হঠাৎ আমার বাণী বসুর কথা মনে পড়ে গেল। তাঁর কোনো লেখায়, বোধ করি দিদিমাসির জিন-এ, শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার সময় এক দঙ্গল ছেলেমেয়ের ছোট্ট একটা খড়ের ঘরে শীতের রাত কাটানোর বর্ণনা ছিল। সে ঘরে অতগুলি লোকের শোয়ার জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল না। ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন যে স্থানীয় মানুষটি, তিনি বলেছিলেন কলে কলে শুয়ে যান। অর্থাৎ কিনা একজন অন্যজনের কোলে, আরেকজন তার কোলে -- এইভাবে শুয়ে পড়ুন। আমরাও প্রায় সেই রকমই পরস্পরের কলে কলে বসে ঝিমোতে ঝিমোতে, গল্প করতে করতে রাত কাবার করে দিলাম।)
  • umki | 122.176.65.176 | ২৩ মার্চ ২০১২ ১৩:০৩533776
  • খাসা হচ্ছে লেখাটা।
  • dd | 110.234.159.216 | ২৩ মার্চ ২০১২ ১৩:২৫533777
  • এটা কি জেনুইন উমকি নাকি ? মরি মরি।
  • achintyarup | 141.0.10.55 | ২৩ মার্চ ২০১২ ১৫:৫৮533778
  • জেনুইন উমকিই বটে
  • ranjan roy | 122.168.58.51 | ২৩ মার্চ ২০১২ ১৭:১০533779
  • সুকন্যা/উমকির কাছে প্রার্থনা-- খালি উঁকি-ঝুঁকি না মেরে রেগুলার লিখুন, আমরা অপেক্ষায়।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৩ মার্চ ২০১২ ২০:৪১533781
  • একেবারে--রঞ্জন ভাউএর সঙ্গে ১০০% সহমত--উমকির লেখা চাই, শুধু উঁকি নয় :-))
  • nk | 151.141.84.239 | ২৩ মার্চ ২০১২ ২১:২৪533782
  • "ঘরের চাবি" তো শুনলাম আর নাকি মাসীমা নেই, সেই পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এখন তো বেশ খোলা হাতে খোলা মনে পিটিয়ে খেলতে পারেন, প্রচুর রানের লম্বা ইনিংস। কই তিনি? :-)
  • achintyarup | 59.93.246.101 | ২৪ মার্চ ২০১২ ০৫:১৭533783
  • ভোর। পুরী প্যাসেঞ্জার গড়াতে গড়াতে এসে থামল রূপসা ইস্টিশনে। আকাশের রং তখন ঘাসফড়িং-এর ডানার মত হয়ে উঠছে সবে। পাশে কোনো বাড়িতে সদ্য ঘুম-ভাঙ্গা মোরগ ডেকে উঠছে -- কোঁকর কোঁ। কোথাও উনুন ধরিয়েছে কেউ, কয়লা-পোড়া ধোঁয়ার গন্ধ এসে লাগছে নাকে। বাতাসে হাল্কা হিমের আমেজ। এখানে গাড়ি বদল। ছোট লাইনের বাংরিপোসি প্যাসেঞ্জার ধরতে হবে। টিকিট কাটা হল। জংশনের এক কোনায় ছোট্ট প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোট্ট সেই তিন কামরার ট্রেন। আমরা চারজন ছাড়া যাত্রী বিশেষ কেউ নেই।

    কয়লার ইঞ্জিন ছিল কি? ধোঁয়া বেরোচ্ছিল কি ভস ভস করে? হুস করে স্টিম ছাড়ছিল মাঝে মাঝে? মনে পড়ে না। তবে এটুকু মনে আছে, প্রচণ্ড খিদে পেয়েছিল আমাদের চারজনেরই। আগের দিন সন্ধেবেলায় বাড়ি থেকে চাট্টি খেয়ে বেরোনো, তারপর থেকে তো এতক্ষণ পেটে দানাটি পড়েনি। ফলে জীবাত্মা কুলকুণ্ডলিনীর পাকের ভেতর থেকে মাঝে মাঝেই গলা বার করে কোঁ কোঁ আওয়াজ করছিলেন। অবিলম্বে তাঁকে শান্ত করা প্রয়োজন। কারণ রূপসা থেকে বাংরিপোসি যেতে লাগবে কমসে কম সাড়ে চার ঘণ্টা।

    স্টেশনের ঠিক বাইরেই পুরী ভাজার আয়োজন হচ্ছে, সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে গরম গরম আলুর তরকারি। লাইন পেরিয়ে গিয়ে নিয়ে এলেই হয়। কিন্তু ট্রেন ছাড়ার সময়ও হয়ে গেছে। অগত্যা ড্রাইভারকে গিয়ে ধরি। এই একটুকখানি অপেক্ষা করুন দাদা, পুরীটা ভাজা হয়ে গেলেই দৌড়ে এসে ট্রেনে উঠে পড়ব আমরা। ড্রাইভার অভয় দেন। বলেন নিশ্চিন্তে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিন। আপনারা না ওঠা পর্যন্ত ট্রেন ছাড়ব না আমি। এত দরদী ট্রেন ড্রাইভার আর কখনো চোখে পড়েনি। ফলত, পুরী-তরকারি কেনা হয়, আরাম করে খাওয়া হয়, তারপর জলটল খেয়ে ড্রাইভারকে ধন্যবাদ জানিয়ে রেলগাড়িতে চড়ে বসি আমরা।
  • achintyarup | 59.93.247.148 | ২৫ মার্চ ২০১২ ০৪:২৪533784
  • মনে আছে নিশ্চয়ই, টেনিদা বলেছিল, রেখে দে তোর টাইমটেবিল। ও তো রেল কোম্পানির একটা হাসির বই। তা বই আর কিই বা বলা যায়? আমাদের টিপিন-ফিপিন খাওয়া হলে শেষমেশ ট্রেন যখন ছাড়ল, ঘড়িতে তখন প্রায় সাতটা। ভোরের কুয়াশা কেটে সকালের কমলাটে রোদ্দুর ঝিমঝিম করছে চারদিকে। ঠিক সেই সময় বোঁ-ও-ও-ও করে হুইস্‌ল্‌ বাজিয়ে রওয়ানা হল আমাদের তিন-কামরার গাড়ি। নির্ধারিত সময়ের প্রায় মিনিট পঁতাল্লিশ পরে। একটু কম-বেশি হতেই পারে। এতদিন আগেকার কথা, আগেই বলেছি সব ভাল মনে নেই। তা হলেই বা কি? মোটকথা ট্রেন ছাড়ল। একটা কম্পার্টমেণ্টে শুধু আমরা চারজন। যে কয়জন গেঁয়ো যাত্রী রূপসা থেকে উঠেছিল, কাঁধে ক্যামেরা বাবু-বিবি টাইপের লোকজন দেখে শুরুতে আমাদের কামরার দিকে ঘেঁষেনি তারা। পরে অন্যান্য স্টেশন থেকে কয়েকজন অবশ্য উঠেছিল। সুকন্যা গেট আগলে দাঁড়িয়ে রিজার্ভ হ্যায়, রিজার্ভ হ্যায় বলা সঙ্কেÄও। কি আর করা যাবে। সব কিছু তো আর সবসময় আইন মেনে হয় না। তবে বলে রাখা ভাল, এই প্যাসেঞ্জার ট্রেনে রিজার্ভেশনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

    জীবনে নানা জায়গায় নানা রকম ভাবে রেলগাড়িতে চড়েছি। কিন্তু রূপসা টু বাংরিপোসির ওই সাড়ে চারঘণ্টার ধারেকাছে আসার মত অভিজ্ঞতা হয়েছে খুব কমই। (বছর কয় আগে, লালুজী রেলমন্ত্রী থাকার সময়, ওই মিটার গেজের লাইনটিকে ব্রডগেজে কনভার্ট করিয়ে দেন। স্থানীয় যাত্রীদের নিশ্চয়ই খুবই সুবিধা হয়েছে তাতে, কিন্তু যাত্রাপথের রোমাঞ্চ যে শতকরা আশিভাগ কমে গেছে, সে আমি পরবর্তীকালে সেখানে না গিয়েও বলতে পারি। আমার ধারণা, আমার সঙ্গে বাকি যে তিনজন ছিলেন তাঁরাও এ বিষয়ে একমত হবেন।)
  • achintyarup | 59.93.247.148 | ২৫ মার্চ ২০১২ ০৪:৪৭533785
  • বালেশ্বর জিলা পেছনে রেখে আমরা এগোচ্ছি ময়ূরভঞ্জের দিকে। জানালার বাইরে মাটিতে পাথুরে ভাব বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোদ্দুর। কে বলবে জানুয়ারি মাস। যার গায়ে যা গরম জামা-টামা ছিল, খুলে ফেলে বস্তাবন্দী করা হল। তবে হ্যাঁ, হাওয়া ছিল হুহু। কিন্তু ঠিক ফাগুন করিছে হাহা টাইপের কিছু নয়। বরং রোদের তাতে একটু যেন অগ্নিবাণের ছোঁয়া। তা হোক। লাগছিল বেশ। ছোট লাইনের ছোট গাড়ি টুকটুক ঝুকঝুক করে চলে, মাঝে মাঝে দাঁড়ায় নাম-না-শোনা গাঁয়ের ছোট্ট স্টেশনে। বোতাম-ছেঁড়া জামা পরা ছেলে, নাক দিয়ে সর্দি গড়ানো কোলের বাচ্চা নিয়ে আটহাতি শারি-পরা আদিবাসী মেয়ে উঠে আসে কামরায়। শিশুটির সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে সুকন্যা। বাংলাতেই। বলে, জানিস, আমি তোর মাসি হই? (এমন কি মেজোমামাও হতে পারি, বাইরের অনন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করি আমি। সুকন্যা কটমট করে তাকায়। হেসেও ফেলে কি? এতদিন আগের ব্যাপার, মনে নেই ঠিক।)
  • achintyarup | 59.93.243.217 | ২৬ মার্চ ২০১২ ০৫:২৭533786
  • তারপর ট্রেন চলে। চলতেই থাকে, আর মাঝে মাঝে থতমত খেয়ে থমকে থেমে যায় প্লাটফর্মহীন ইস্টিশনে। কলা, আতা, পেয়ারা, ছোলা-বাদাম নিয়ে কখনো উঠে আসে ফিরিওয়ালা। নেমে যায় পরের স্টেশনে। ধু ধু মাঠের মধ্যে দিয়ে ট্রেন চলে। মাঠের মাঝে একলা গাছ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওয়ার সাথে কথা বলে। দূরে দেখা যায় আঁকাবাঁকা লালচে মাটির রাস্তায় একা একা চলেছে আদিবাসী মেয়ে, মাথায় একবোঝা কাঠকুটো।

    দেখতে দেখতে মাঠ পেরিয়ে জঙ্গলে ঢোকে আমাদের রেলগাড়ি। কোথাও ছোট আর মাঝারি গাছের ঝাঁটি জঙ্গল, কোথাও শাল-মহুয়ার ঘন বন। রোদের তাপ যেন কম লাগে গায়ে। দুপাশে ঘন হয়ে আসা গাছে ধাক্কা খেয়ে দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসে ট্রেনের শব্দ। গেটের মুখে সিঁড়ির ওপর গিয়ে বসি। ঝিকিঝিকিঝিকিঝি ট্রেন চলে। জঙ্গলের মধ্যে টিনের চালা দেওয়া স্টেশনে দম নেয়। আবার চলে। ঝিকিঝিকিঝিকিঝিকি... চলতে চলতে চলতে চলতে বন পেরিয়ে মাঠ, মাঠ পেরিয়ে গাঁ, আবার মাঠ। বেলা বাড়ছে। মাঠের মাঝে ঘূর্ণি তুলছে তেতে-ওঠা হাওয়া, দূরে চোখে পড়ে ছাই রঙের পাহাড়।
  • nk | 151.141.84.239 | ২৬ মার্চ ২০১২ ২০:৫৮533787
  • অপেক্ষায় আছি অচিন্ত্য। থামবেন না।
  • achintyarup | 59.93.244.245 | ২৭ মার্চ ২০১২ ০৫:০১533788
  • সেখানে অনেক পথ খুঁজে, পৃথিবী শুয়েছে চোখ বুঁজে, এলিয়ে হৃদয়। শিয়রে শিমুল শুধু একা কথা কয়। এই শেষ জানুয়ারিতেই ফুলের বাহার শিমুলের মাথায়, সাঁওতাল মেয়েদের মত। তাকে বাঁয়ে রেখে চলে যায় ট্রেন। সামনে বারিপদা। জমজমাট স্টেশন, চায়ে গ্রাম, পান-বিড়ি-সিগ্রেট... এখান থেকে আরও প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার যেতে হবে আমদের।

    শহর ছাড়িয়ে, রুখু মাঠ পেরিয়ে, এলোমেলো জঙ্গলের ছায়া মাড়িয়ে চলতে থাকে ট্রেন। সারারাত দুচোখে ঘুম নেই, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় বসা, তবুও ক্লান্তি নেই। দরজার মুখে পা ঝুলিয়ে বসে দুলতে দুলতে, দেখতে দেখতে, ঝিকঝিকঝিকঝিক শুনতে শুনতে এক সময় পৌঁছে যাই বাংরিপোসি।
  • achintyarup | 59.93.244.245 | ২৭ মার্চ ২০১২ ০৫:১০533789
  • বিশ্বাস কর, এক্কেবারে মনে নেই কেমন দেখতে ছিল বাংরিপোসি স্টেশন। এ যাত্রায় আমার মন জুড়ে যে স্টেশনের ছবি রয়ে গেছে, সে হল রূপসা। বাংরিপোসি স্টেশনের চেহারা স্মৃতির কোন অতলে তলিয়ে গেছে কে জানে।

    রিকশা নেওয়া হয়েছিল। চারজনের জন্যে দুখানা। থাকার জায়গা কোথায় আছে আশেপাশে? রিকশাওয়ালারা বাংলা বোঝে, হিন্দি বলে। মিলিয়েমিশিয়ে জানায় কাছেই ওড়িশা টুরিজমের লজ আছে। সেখানেই গিয়ে উঠতে হবে আমাদের।
  • achintyarup | 141.0.10.10 | ২৭ মার্চ ২০১২ ১৩:৫৯533790
  • *চোখ বুজে
  • umki | 122.176.65.176 | ২৭ মার্চ ২০১২ ১৮:৪০533792
  • আহা, রূপসার সেই ছোট্ট স্টেশনের ছোট ট্রেনের সামনে মন কেমন করা দাঁড়ানোটা এখনো মনে আছে।

    সারা রাত জাগা, ক্ষুধার্ত, হাক্লান্ত চার খান ছেলে মেয়ে রিক্সায় চড়ে ঐ গনগনে রোদে শেষমেশ বাংরিপোসির ট্যুরিস্ট লজে এসে পৌঁছেছিলাম। পুরনো রাজবাড়ি (নাকি জমিদার বাড়ি, মনে নেই এখন) সরকারি তদারকিতে হাত বদল শেষে নতুন ভাবে নির্মিয়মাণ। একটি মাত্র আস্ত ঘর, তাতে একটি মাত্র আস্ত খাট এবং সঙ্গে একটি মাত্র বাথরুম। অতএব বৃথা বাক্য ব্যয় না করে চারজনে ঘরের দখল নিলাম।

    আর ঠিক তখনই খিদেতে জ্ঞান হারানোর আগের মুহূর্তে শুনতে পেলাম বাকি তিনের ঘোর আলোচনা মহুয়ার বোতল ঠিক কখন কীভাবে পাওয়া যাবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন