এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • শাপলা আর বালিহাঁসের খোঁজে

    Lama
    অন্যান্য | ২৩ মে ২০১২ | ৪১৯৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Lama | 127.194.231.104 | ১৬ জুন ২০১২ ০৭:৫২552471
  • পথ আসে। পথ যায়। সময় আসে, সময় যায়। ছবি এঁকে রাখে শিশু চোখ।

    সময় বদলায়। পথ বদলায়। এ পথের পর সে পথ, তারপর অন্য পথ। এ নদীর পর সেই নদী। তারপর অন্য কোনো নদীর ধারে চাষ হয় মানবজমিন। অথবা হয় না। ভোকাট্টা জীবন লাট খেতে খেতে গ্রামশহর পেরিয়ে চলে।

    কখনো কখনো জীবন সদয় হয়। এপথ ও পথ ঘুরতে ঘুরতে সেই পথের বাঁকে এসে দাঁড়ায় মধ্যবয়স। ছবির সঙ্গে দৃশ্য মিলিয়ে দেখতে চায়। বদলে যাওয়াগুলো তাকে অবাক করে। বদলে না যাওয়াগুলোও অবাক করে।

    যেখানে শ্মশান ছিল সেখানে গজিয়ে ওঠে শপিং মল। ধুধু মাঠ শেষ হয়ে আকাশ যেখানে শুরু হত সেখানে আজ কারখানার পাঁচিল। অমুকবাবুর ভিটেতে তমুক সওদাগরী অফিস।

    মাঝবয়েসী চোখ জানে, এই সময় পালটে গেছে। তবু সেই সময়কে পালটাতে পারে নি।
  • | 24.96.109.19 | ১৬ জুন ২০১২ ১২:০৯552472
  • ফাঁকিবাজী পোস্ট
  • Lama | 127.194.238.148 | ১৬ জুন ২০১২ ১২:২১552473
  • ঃ)
  • Lama | 127.194.238.148 | ১৬ জুন ২০১২ ১৩:০৮552474
  • চোরকুঠুরী ব্যাপারটার ওপর খুব আকর্ষণ ছিল। আমরা ছোট খুরপি দিয়ে একটা গর্ত খোঁড়া শুরু করলাম। রোজ বিকেলে একটু একটু করে খুঁড়ি, আর মেপে দেখি একজন ঢোকার মত হয়েছে কিনা। দুজনের কয়েক মাসের চেষ্টায় ফুটতিনেক ব্যাসের আর আড়াইফুট গভীর একটা গর্ত তৈরি হয়েছিল। ইচ্ছে ছিল, বেশ বড়সড় গর্ত হয়ে গেলে বাবাকে বলে ইঁটের দেয়াল আর ছাদ বানিয়ে নেব। তার আগেই বাড়িটা ছেড়ে দিতে হল।

    কিছুদিন পরে গিয়ে দেখেছিলাম আমাদের ভাড়াটেরা আমাদের চোরকুঠুরিটাকে গোবর রাখার জন্য ব্যবহার করছে। গরু পুষত ওরা।

    আরেকটা স্মৃতি- সামনের উঠোনে পিসেমশাইয়ের লাঠিখেলার কসরত। আমাদের জন্মের আগেই বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিল ছোটপিসি। একটা স্কুলের পড়াত। ঠিকমত ইস্তফা না দিয়েই পিসেমশাইয়ের সঙ্গে চলে গিয়েছিল কলকাতায়। সেই সময় আমাদের এক পিসতুতো ভাইয়ের অকালমৃত্যু হয়, কয়েকমাস বয়েসে। অনেক বছর পর পিসেমশাইয়ের কারখানায় লক`আউট হয়ে যাবার পর সেই পুরনো চাকরিটার খোঁজ পড়ে। আর বিস্তর মন্ত্রীসান্ত্রীদের ধরাধরি করে আর পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরিটা ফেরতও পাওয়া যায়, তবে অন্য স্কুলে। সেই স্কুলটা ছিল আমাদের এই শহরে। তারপর থেকে পিসি আমাদের সঙ্গেই থাকত। তারপর একদিন পিসির সঙ্গে দেখা করতে পিসেমশাই এলেন। খুব মজা হল সেবার। পিসেমশাইয়ের কাছে কাগজের জাহাজ বানানো শিখলাম, লাঠিখেলার কসরত দেখলাম। পরে জানতে পেরেছিলাম, সেই সময় পিসেমশাই পরিপূর্ণ বেকার। সেই সময় একদিন সন্ধ্যায় একটা বড়সড় কাগজের প্লেন বানিয়ে পিসেমশাইকে দেখাতে গিয়ে দেখেছিলাম প্রায় অন্ধকার বারান্দায় পিসি আর পিসেমশাই বসা। দুজনের চোখেই জল।

    একবার অফিসের কাজে বাবা গেল রাজধানী শহরে। আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এল আমার খুড়তুতো দাদাকে। দাদা কয়েকদিন ছিল আমাদের সঙ্গে। তার পরের রবিবার আমরা সবাই দাদা, পিসি সহ পিকনিক করতে গেলাম ভুবনেশ্বরী মন্দিরের পাশের জঙ্গলে, যেখানে বহু বছর আগে নরবলি হত। তার কিছুদিন আগেই পূজোসংখ্যায় বেরিয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "জঙ্গলের মধ্যে গম্বুজ" যার একটি চরিত্র সবসময় অজানা বিপদের জন্য প্রস্তুত থাকে, আর মোজার ভেতরে ব্লেড লুকিয়ে রাখে। পিকনিক থেকে ফেরার পথে দাদার জুতোর ফিতে আলগা হয়ে গিয়েছিল। ফিতেটা বাঁধতে গিয়ে দাদার মোজার ভেতরে পিসি একটা ব্লেড আবিষ্কার করে। তারপর বাবার কাছে আমাদের বেশ একচোট হেনস্থা হয়।

    বাড়িটা খুব তাড়াহুড়ো করে ছাড়তে হয়েছিল। ভাড়াটেদের আসার দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আসবাবপত্র জলের দরে বিক্রি করে, কাউকে কাউকে উপহার দিয়ে বা দান করে কিছুটা বোঝা কমানো হল। শুধু মা আর ভাই অশোককাকুদের নতুন তৈরি বাড়িতে ভাড়াতে হিসেবে থেকে গেল। ওদের দরকার হবে এরকম সামান্য কিছু আসবাব আর বাসনপত্র রেখে দেওয়া হল।

    আর অল্প কিছু জিনিস নিয়ে একদিন আমি আর বাবা বাসে চড়ে বসলাম।

    আমার জ্ঞান হবার পর থেকে বাসস্ট্যান্ডে এক বৃদ্ধ পাগলকে দেখতাম, যে শতচ্ছিন্ন নোংরা পোষাক পরে সবার কাছে পয়সা চেয়ে বেড়াত। খুব ভয় পেতাম তাকে। কিন্তু সেদিন যখন এল তখন মনে পড়ল- ওকে তো আর কোনোদিন দেখতে পাব না। বাবাকে বললাম "ওকে একটু পয়সা দাও"
  • Lama | 127.194.236.182 | ১৬ জুন ২০১২ ২০:৫৪552475
  • বেলা বাড়ছিল। আমার বেশ কিছু ছবি তোলা হয়ে গিয়েছিল। ফিরে আসতে ইচ্ছে করছিল না। তবু সময় চলে যাচ্ছিল বলে বেরিয়ে আসতে হল।

    ভাবলাম পুরনো পাড়ার লোকেরা কে কোথায় আছে একটু খোঁজ নেবার চেষ্টা করি। কর্মকার জেঠুরা কলকাতায় শুনেছি। আর শুনেছি অশোককাকুরা নিউ জার্সিতে, ছেলের কাছে। বাকিদের একটু খবর নেওয়া যাক।

    চলে গেলাম উকিলবাবুর নেমপ্লেট লাগানো বাড়িটায় যেখানে এককালে আমাদের খেলার মাঠ ছিল। এক ভদ্রলোক কালো কোট পরে স্কুটারে স্টার্ট দিচ্ছেন। তার মানে ইনিই আইনজীবি মহাশয়।

    "নমস্কার। আমি কলকাতা থেকে আসছি। আগে আপনার পাশের বাড়িটাতে থাকতাম। আপনি কি বলতে পারেন অমুক, তমুক আর অমুক এখন কোথায় আছেন?"

    "আপনার নাম?"

    বললাম।

    "এখন কোথায় থাকেন?"

    বললাম।

    "কি করেন?"

    বললাম।

    "এখানে কোন বছর থেকে কোন বছর থেকেছেন?"

    বললাম।

    "আপনি যাঁদের নাম করলেন তাঁদের আমি চিনি না। কিন্তু পাড়ার একজন পুরনো বাসিন্দা অশোকবাবু এখন এখানেই আছেন। উনি অবশ্য অনেক বছর ছিলেন না। কদিন আগে এসেছেন। ঐ বাড়িটা।"

    এটা আমার কাছে একটা বড় খবর। উকিলবাবুর দেখানো বাড়িটার দরজায় গিয়ে কড়া নাড়লাম। এককালে এই বাড়িতে আমরাও ছিলাম ভাড়াটে হিসেবে। ঠিক আমরা নয়, মা আর ভাই।
  • Lama | 127.194.236.182 | ১৬ জুন ২০১২ ২১:২৫552476
  • অশোককাকুদের দেখা পেলাম। কাকিমাকে অনেক অন্যরকম দেখতে লাগছে। অশোককাকু আগের মতৈ, শুধু গোঁফটা নেই। শুনলাম এই বাড়িটা ওঁদের মেয়ে ববিদিদিকে দিয়েছেন। ববিদিদির ওখানেই বিয়ে হয়েছে। আমরা চলে যাবার সময় ববিদিদি ক্লাস সেভেনে পড়ত। আর এবার তার ছেলে উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছে। অশোককাকুরা আমেরিকায় অনেকদিন কাটানোর পর দেশে এসেছেন কদিন মেয়ের কাছে থাকবেন বলে। ওঁরা মিষ্টি না খাইয়ে কিছুতেই ছাড়লেন না। তাতে অবশ্য অনেক সময় নষ্ট হল। কিন্তু জোর করে চলে আসতে খারাপ লাগল।

    এবার গন্তব্য সেই পুরনো মন্দির- শহরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর।

    এই মন্দিরে আমরা যেতাম খুব ঘনঘন। আমাদের শহরের রেয়াজই ছিল যে কোনো শুভ উপলক্ষ্যে একবার মন্দিরে যাওয়া। বাবার স্কুটারে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমি। পেছনের সিটে ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে মা। হেলমেট টেলমেটের কোনো বালাই ছিল না- আমাদের শহরে ও জিনিস তখনো কেউ চোখে দেখে নি।

    সেটা আজ পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে সোজা রাস্তা। সামনের দিকে তাকালে অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। যতদূর দু চোখ যায় কৃষ্ণচূড়ার সারি। লালে লাল। রাস্তাটা আর তার বাঁ পাশের বাড়িগুলোর মাঝখানে একটা চওড়া খাল। তাই প্রায় সব বাড়ির সামনেই একটা করে বাঁশের বা কাঠের সাঁকো। কোনো কোনো বাড়ির সামনে খেলনার মত ছোট্ট একটা নৌকো বাঁধা।

    ডানদিকে দিগন্তবিস্তৃত ধানক্ষেত আর বিল। বিলের জলে বকের ধ্যান আর মাছরাঙার উড়াল। আর অনেক অনেক দূরে যেখানে ক্ষেত, বিল, মাঠ সবকিছুর শেষ সেখানে একসারি ধোঁয়াটে গাছ। আর তারপরেই আকাশ। ঐ গাছগুলোর তলায় যাদের বাড়ি তারা রোজ সকালে মেঘ দিয়ে দাঁত মাজে।
  • Lama | 127.194.236.182 | ১৬ জুন ২০১২ ২১:৪৭552477
  • স্কুটারে যেতে যেতে পথের ধারে পড়ত বাবার বন্ধু নন্দীকাকুর বাড়ি। তাঁকে আমি ডাকতাম 'ন'। শহর থেকে এতদূরে ফুলফলের বাগানঘেরা ছায়া সুনিবিড় ঠান্ডা ঠান্ডা বাড়িখানা। তার ঠিক উল্টো দিকে ধানক্ষেতের মধ্যেই ছোট এক শ্মশান আর তার ওপর দুটো খুব পুরনো মন্দিরের মত কি যেন। পর পর কয়েক বছরের মধ্যে ওখানে আরো দুটো মন্দির গজিয়ে উঠেছিল। পরে শুনেছিলাম ওটা কাদের যেন পারিবারিক শ্মশান আর মন্দিরগুলো হচ্ছে তদানীন্তন গৃহকর্তার প্রয়াত ঠাকুর্দা ঠাকুমা বা মা বাবা অথবা অন্যকোন প্রিয়জনের স্মৃতিতে। এবার গিয়ে ওখানে এরকম গোটাছয়েক মন্দির দেখলাম।

    কালীপূজোর সন্ধ্যায় মন্দিরে যাওয়াটা ছিল প্রত্যেক বছরের ব্যাপার। আর মন্দির থেকে ফিরে নন্দীকাকুদের বাড়ি একবার ঢুঁ মারা- এর কখনো কোনো অন্যথা হয় নি। প্রতি বছর দেওয়ালীর সন্ধ্যায় নন্দীকাকুদের উঠোনে দাঁড়িয়ে দেখতাম ঐ দুটো মন্দিরে এক এক করে প্রদীপ জ্বালিয়ে দিচ্ছেন একজন একাকী মানুষ।

    এই মন্দির শাস্ত্রমতে একান্ন পীঠের এক পীঠ। মন্দিরের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মন্দিরের পেছনের দীঘি যেখানে থাকে দানবীয় চেহারার অসংখ্য মাছ আর একশো দুশো তিনশো বছরের সব বুড়ো কচ্ছপ। তাদের গায়ে বহু বছরের পুরনো সবুজ সবুজ শ্যাওলা। তাদের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে তারা আগে থেকে জানতে পারে, আর দীঘি থেকে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে টিলার ওপর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে দাঁড়ায় চিরকালের মত। তাদের শরীর থেকে প্রাণ বেরিয়ে যাবার পর সেই জায়গাটাতে একটা ছোট্ট পিরামিডের মত করে দেওয়া হয়। এই করে করে চাতালটার ওপর এরকম বেশ কিছু পিরামিড হয়ে গেছে- কত পুরনো কেউ জানে না।

    তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল- এই কচ্ছপেরা জল থেকে মুখ বাড়িয়ে আমাদের হাত থেকে বিস্কুট আর প্যাঁড়া খায়।
  • Nina | 78.34.167.250 | ১৬ জুন ২০১২ ২১:৫৫552478
  • বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়----
  • Lama | 126.203.172.145 | ২৭ জুন ২০১২ ১৯:৩২552479
  • যেতে যেতে ডানদিকে পি ডাব্লিউ ডি অফিস পড়ল। এখানে একটা ব্যাডমিন্টন কোর্ট ছিল। সন্ধ্যের পর বাবা মাঝে মাঝে আসতেন বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে। আমিও আসতাম সঙ্গে। অবাক হয়ে দেখি, ব্যাডমিন্টন কোর্ট এখনো আছে। দেখেই বোঝা যায়, এখন আর খেলা হয় না। সরকারী অফিসাররা নিশ্চয় আজকাল ছুটির পর বাড়ি গিয়ে টিভি দেখেন, তাই আর ঐ ধরণের সামাজিকতার দরকার হয় না হয়তো।

    ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লালসবুজ রং করা কাঠের ঘরগুলো এখনো আছে। আর আছে জার্মান দেববর্মার হাতি বাঁধার লোহার খুঁটিটা। তবে কাত হয়ে আছে। কে জানে, হাতির কাজ আজকাল হয়তো যন্ত্রেই করে। হাতি নাকি ষাট সত্তর বছর বাঁচে। আর তাদের স্মৃতিশক্তি হয় প্রখর। কেন জানি না, আশা করেছিলাম হাতিটাকে দেখতে পাব আর সে আমাকে চিনতেও পারবে।

    মন্দিরের রাস্তার ধারে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো এখনো আছে। রাস্তার বাঁ দিকের খাল আর সাঁকোওয়ালা বাড়িগুলোও। যা নেই, তা হল ডানদিকের সেই দিগন্তবিস্তৃত জলাভূমি আর ধানক্ষেত। আকাশের সঙ্গে কথা বলা ধোঁয়াটে গাছের সারি উধাও। তার বদলে গ্যারেজ, মাছভাতের হোটেল, কীটনাশকের বিজ্ঞাপন।

    ডানপাশে সেই শ্মশানটা পড়ল। ওখানে দুটো ছোট ছোট মন্দির বা স্মৃতিসৌধ ছিল। এখন পাঁচটা। উল্টোদিকে স্মৃতিবিজড়িত নন্দীকাকুর বাড়ি। দড়িতে একটা শাড়ি ঝুলছে। সবজিক্ষেত যেখানে ছিল সেখানে একটা কাকতাড়ুয়ার উঁচু মাথা দেখতে পাচ্ছি, বাঁশের বেড়ার বাইরে থেকেও। গেটের কাছের ফনীমনসা গাছটা একই আছে। ফনীমনসা কত ব্ছর বাঁচে? এটা কি সেই গাছটাই না অন্য একটা? কে জানে ও বাড়িতে এখন কারা থাকে। অপুত্রক নন্দীকাকুর চার মেয়েরই বিয়ে হয়েছে বাইরে। কাকু মারা গেছেন কলকাতায়।

    শ্মশানের ধারে কিছুক্ষণ দাঁড়াই। একদা নির্জন রাস্তায় হুস হুস করে গাড়ি চলে যাচ্ছে একের পর এক। শ্মশানের পাশে জলাজমির খানিকটা এখনো টিঁকে আছে। একমনে দাঁড়িয়ে আছে একটা বক। ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে জনমানবের দেখা নেই।

    এ জীবনে এই পথে আর ফেরা হবে কোনদিন ভাবি নি। যদি বা আসা হল, গলার কাছে কি আটকাচ্ছে বুঝতে পারি না।

    একটি দূরে একটা পেট্রল পাম্প। তার সামনে একটা কি যেন গাছ। সেই গাছটা থেকে একঝাঁক টিয়াপাখি উড়াল দিল। যেদিকে ধোঁয়াটে গাছের সারি ছিল এককালে সেদিকটায় মিলিয়ে গেল।

    "আয় রে পাখি লেজ ঝোলা... আয়রে পাখি লেজ ঝোলা..."- আজও কি টিয়াপাখি দেখিয়ে শিশুদের ভোলায় তাদের মায়েরা? পাখিরা কোথায় যায়?
  • Nina | 22.149.39.84 | ২৭ জুন ২০১২ ২০:২৯552481
  • ছোট্ট একটি আফিমের গুলি খাইয়ে লামা আবার হাওয়া হবে--ততক্ষণের নেশার খোরক দিয়ে গেল
  • Rit | 213.110.243.21 | ২৭ জুন ২০১২ ২০:৪৪552482
  • লামাদা আমার জীবনী লিখছে। আমি কত বিখ্যাত ভাবো তাহলে। ঃ)
    লামাদা তোমার বাড়ি যাব। কবে নিয়ে যাবে বল?
  • Lama | 126.202.201.247 | ২৭ জুন ২০১২ ২৩:১২552483
  • যেদিন খুশি ঃ)
  • I | 24.99.227.223 | ২৭ জুন ২০১২ ২৩:৩২552484
  • আহা, লামার হাত সোনা বাঁধানো হোক।
  • hu | 22.34.246.72 | ২৮ জুন ২০১২ ০২:৩৮552485
  • না না, সোনা দিয়ে হাত বাঁধিয়ে কাজ নেই। এমনিতেই এত ধীরে লেখে। তার চেয়ে সোনার নিবের ঝরনা কলম দেওয়া হোক লামাদাকে।
  • Lama | 126.202.200.10 | ১১ আগস্ট ২০১২ ১৭:৫৯552486
  • গাড়িতে উঠে বসি।ডানদিকের জলাজমিগুলো আর নেই, তবু একটা বাড়ির সামনে কেন জানি না একটা নৌকো উপুড় করে রাখা। কৃষ্ণচূড়ার ছাওয়া পথের শেষে টিলার ওপর মন্দিরের চূড়া উঁকি দেয় আগের মতই। গাড়ি থেকে নেমে ঠিক কোনদিকে বাঁধানো সিঁড়ি আছে আমি জানি- হ্যাঁ, এত বছর পরও। সিঁড়ি বেয়ে টিলার ওপরে উঠলাম। ছোটবেলার সেই প্যাঁড়ার দোকান। 'মনাবাবুর প্যাঁড়া' শহরে বিখ্যাত ছিল। এই সেই দোকান কোনো সন্দেহ নেই। কারণ দোকানের মাথায় সাইনবোর্ডে লেখা আছে 'বিখ্যাত মনোরঞ্জন রায়ের (মনা-দা) প্যাঁড়ার দোকান)'।

    দোকানে উঠে এলাম। দোকানের মেঝে তখন মাটির ছিল, এখন সিমেন্ট বাঁধানো। মনাবাবু তখনই অতি বৃদ্ধ ছিলেন, তাঁকে এখানে আশাও করি নি। তাঁর জায়গায় বসে আমারই বয়েসী একজন।

    "নমস্কার। আমি কলকাতা থেকে আসছি। প্রায় পঁয়্ত্রিশ বছার আগে বাবার সঙ্গে এই দোকানে প্যাঁড়া কিনতে আসতাম। মনাবাবু তখন এখানে বসতেন।"

    "আমি ওনার ছোট ছেলে। হাত মুখ ধুয়ে নিন।"

    দোকানের সামনে প্লাস্টিকের টুলের ওপর ঝকঝকে করে মাজা পেতলের ঘটি রাখা। আমি জানি এখন আমাকে জুতো খুলে বেঞ্চের তলায় রাখতে হবে। তারপর ঘটির জলে হাতমুখ ধোয়া।

    ঘটিটা হাতে নিয়ে পেছন ফিরতেই মনাবাবুর ছোট ছেলের সঙ্গে চোখাচুখি হল।

    ভদ্রলোক আমার প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছেন।

    "হ্যাঁ, এটা সেই ঘটিটাই। কাঠের টুলটা ভেঙ্গে গিয়েছিল।"

    ঘটিটা ঝকঝক করছে। ঘটির গায়ে আমার মুখের প্রতিফলন- বালক আমি মাঝবয়েসী আমাকে ফিচেল হেসে শুধায়- "কিরে, কোথায় ঘুরছিলি এতদিন?"
  • শঙ্খ | 118.35.9.186 | ১১ আগস্ট ২০১২ ২২:২৭552487
  • উফ... অসা!!
  • nina | 78.34.167.250 | ১১ আগস্ট ২০১২ ২৩:৫৩552488
  • হাতটা সোনার আর কলমটাও সোনার--তাই খুব ভারী--তাই নড়তে খুব সময় লাগে----
  • sp | 86.116.65.19 | ১২ আগস্ট ২০১২ ০১:১০552489
  • লামাঃ দারুন হচ্ছে আপনার লেখাটা। একবারে পড়্লাম। একান্ন পীঠের এক মন্দির প্লাস পুকুর উইথ কচ্ছ্প -এই কম্বিনেশান চেনা চেনা .. এটা কি উদয়্পুর বাই এনি চান্স ?
  • Lama | 127.194.225.149 | ১২ আগস্ট ২০১২ ০১:১৭552490
  • sp, হ্যাঁ।

    কি আশ্চর্য! ভাবতে পারি নি কেউ বুঝতে পারবে।
  • sp | 86.116.65.19 | ১২ আগস্ট ২০১২ ১৯:০৩552492
  • ছোটোবেলা গেছিলাম, ছোটোমাসীর বাড়ী আগরতলা/খোয়াই তে ছিল।
  • শঙ্কু | 127.223.199.173 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১০:২০552493
  • ভাই লামা, আপনি কি বিদেশে? আপনার মেলটা দিন না... lat24u ইয়াহু.ইন -এ। দুটো কতা কয়ে প্রান জুড়োই!
  • Lama | 127.194.235.218 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১০:৪৪552494
  • দিলাম ঃ)
  • Lama | 127.194.236.77 | ১৭ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৪৩552495
  • মনাবাবুর ছোট ছেলের কাছ থেকে দু হাঁড়ি প্যাঁড়া কেনা গেল। মন্দিরে পূজোটূজো দেবার কোন ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু মনাবাবুর ছেলে জোর করলেন বলে কিছু ধূপকাঠি, মোমবাতি, ফুল আর বেলপাতা কিনতে হল। পরে কোথাও ফেলে দিলেই চলবে। আমার আগ্রহ শুধু প্যাঁড়াতেই। প্যাঁড়ার হাঁড়ি বগলদাবা করে টিলার চূড়োয় উঠলাম।

    শেষবার যখন এসেছিলাম, মন্দির চত্ত্বর ছিল সাদামাটা, শান্ত। তকতকে মাটিলেপা উঠোনকে ঘিরে কিছু টিনের চালওয়ালা অনাড়ম্বর দোকানঘর। এখন দেখছি বেশ জমজমাট। কালীঘাট বা কামাখ্যার মত- অজস্র দোকান। তাতে বিক্রি হচ্ছে ঠাকুরের ছবি, ধর্মগ্রন্থ, খেলনা- কি নেই। সবাই চিৎকার করে খদ্দের ডাকতে ব্যস্ত। নাটমন্দিরে পাঁঠাবলি হচ্ছে। এক কোনে অন্ততঃ শ খানেক পাঁঠা বাঁধা রয়েছে। রক্তাম্বর পরনে একজন লোক ‘বত্রিশ’, ‘তেত্রিশ’ এইসব নম্বর ডাকছে আর পাঁঠাদের মালিকেরা যার যার পাঁঠার গলার দড়ি ধরে হাঁড়িকাঠের কাছে নিয়ে আসছে। আশ্চর্য, নিজের পালা আসতেই পাঁঠাগুলো কিছু একটা আঁচ করতে পেরে প্রবল আরতনাদ করছে। দর্শণার্থীর ভিড়ে বীভৎস দৃশ্যটা দেখা যাচ্ছে না, শুধু ভিড়ের মাথার ওপর দিয়ে ঝকঝকে খাঁড়াটাকে একবার উঠতে আর একবার নামতে দেখা যাচ্ছে- একটা করুণ আর্তনাদসহ। একটা নালা দিয়ে সরু রক্তের ধারা বয়ে যাচ্ছে। একজন লোক ভিড় থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ব্যাকআপ খাঁড়াটাতে একমনে শান দিয়ে চলেছে।

    টিলার মাথা থেকে ছোটপিসির সেই পুরনো স্কুল দেখা যায়। বাঁশের বেড়া, খড়ের চাল- দীন চেহারার গ্রাম্য স্কুল, পিসির ব্যর্থ জীবনের মতই অনেকটা। পিরামিডের মত দেখতে কচ্ছপের সমাধিগুলো আগের মতই আছে। আমাদের ধনকুবের সুন্দরদাদু, বাবার মেসো, এই মন্দিরের একজন বড়সড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। শেষ জীবনে গুপ্তধনের সন্ধান আর তন্ত্রসাধনা করতে করতে এক রহস্যজনক রোগে তাঁর স্মৃতিভ্রংশ হয়। আর তারপর তাঁর বিশাল সম্পত্তি পাঁচ ভূতে লুটেপুটে খায়। পিরামিডওয়ালা চাতালটার ওপর একটা পাথরের ফলকে তাঁর নাম লেখা দেখতে পেলাম।

    টিলার অন্যদিকের সিঁড়ি বেয়ে দীঘির ধারে এলাম। দীঘির পাড়ের দোকানগুলো অন্যরকম- শুধু মুড়ি আর বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে, নিশ্চয় মাছদের খাবার জন্য। এখানকার কচ্ছপদের নিয়ে কত গল্প চালু ছিল। একবার কারা যেন এখানকার এক কচ্ছপকে চুরি করে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছিল। মন্দিরের এক নিয়মিত ভক্ত বাজার করতে গিয়ে প্রাণীটাকে চিনতে পেরে উদ্ধার করে আনেন। আর একবার কোথা থেকে যেন একদল বেদে এসে কচ্ছপ মারার জন্য দীঘির পাড়ে ঝোপের এক ধরণের ছোট বোমা রেখে দিয়েছিল। নন্দীকাকুর সহকর্মী মুখার্জিকাকুর ছেলে দেবুদা সেই বোমা কুড়িয়ে পেয়ে বল ভেবে খেলতে গিয়ে হাতের দুটো আঙুল খুইয়েছিল। সবচেয়ে বড় আর বুড়ো কছপটার পিঠটা ছিল প্রায় আমার পড়ার টেবিলটার মত বড়, পিঠভর্তি শ্যাওলা, আর মাথার ওপরদিকটায় শ্বেতীর মত দাগ। দিব্যি জল থেকে গলা বাড়িয়ে আমাদের হাত থেকে বিস্কুটের গুঁড়ো খেত। আমার দাদুর চেয়েও বয়স্ক একজনকে বাচ্চাদের মত বিস্কুট খেতে দেখে বেশ মজা পেতাম সেই বয়েসে।

    পুকুরঘাটে দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। মাছ প্রচুর দেখলাম। কিন্তু একটাও কচ্ছপ ভেসে উঠল না। স্থানীয় একজন জানালেন কচ্ছপেরা আজও আছে। কিন্তু সরকার থেকে পাড় বাঁধিয়ে দেবার পর থেকে তারা আর ঘাটের দিকে আসে না।

    এত দূর থেকে এসেও দেখা হল না। কচ্ছপেরা তো অনেকদিন বাঁচে। আশা করি আমার বাল্যবন্ধুও বেঁচে আছে, ভাল আছে।
  • Lama | 127.194.245.30 | ১৭ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৪৪552496
  • যাঃ, ডুবে যাসসে
  • শ্রাবণী | 69.94.104.84 | ১৭ নভেম্বর ২০১২ ২০:০৭552497
  • ভাসিয়ে রাখছি কিন্তু তাড়াতাড়ি লেখা হোক!
  • Lama | 127.194.249.72 | ১৮ নভেম্বর ২০১২ ০১:৩৬552498
  • ঘটনা দু হাজার বারোর মার্চ মাসের। ঠিক যে জায়গাটা থেকে আমার বাল্যস্মৃতির শুরু সেই জায়গাটাকে খুঁজে বার করে খুব উত্তেজিত ছিলাম। লেখা শুরু করেছিলাম মে মাসে। উদ্দেশ্য ছিল সেই উত্তেজনাটাকে সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া।

    এখন নভেম্বর। প্রথম দিকে লেখাটা তরতরিয়ে এগোচ্ছিল। স্মৃতিগুলো, বা বলা ভালো স্মৃতির স্মৃতিগুলো ছিল টাটকা। এখন নভেম্বর। এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। মাঝখানে চাকরি নিয়ে টানাটানি হওয়াতে টইটা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। ক মাস পর ফিরে এসে দেখছি কাহিনী তার স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। যেন শ্যাওলা গজিয়ে গেছে জায়গায় জায়গায়। আমার কচ্ছপদের পিঠের মত।

    আরো একটা উপলব্ধি ধীরে ধীরে হচ্ছে। প্রত্যেক মানবজীবন একটা গল্প। কেউ কেউ চায় তার গল্পটা কেউ লিখে রাখুক। যারা নিজের জীবনটাকে একটা গল্প বলে চিনতে পারে না তারা বড় অভাগা। কারো কারো গল্প লেখা হয়, কারো হয় না। কারো গল্প অন্যে লিখে দেয়, কেউ নিজে লেখে। বড় জটিল পার্মুটেশন কম্বিনেশন। আমি নিজে লেখার চেষ্টা করছি। কিন্তু কলমের সেই জোর নেই। একটা মফস্বল শহরের একটা বিশেষ জায়গায় পৌঁছতে পেরে নিজের ভেতরে যে ধুকপুকটা হয়েছিল সেটা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে গেলে যে দম লাগে তা এই কলমের নেই।

    কিন্তু শুরু যখন করেছি, শেষ তো করতেই হবে। গল্পটাকে, অতএব, সংক্ষেপে শেষ করে টইটাকে তার স্বাভাবিক মৃত্যুর দিকে পাঠানো যাক।

    তো, কচ্ছপের দীঘি দেখে এসে ছোটবেলার স্মৃতি জড়ানো আরো অনেকগুলো জায়গায় গেলাম স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে করে - ভুবনেশ্বরীর মন্দির, যেখানে ছোটবেলায় পিকনিক করতে আসতাম, সেখানকার নরবলির রক্ত বয়ে যাওয়া নালা দেখলাম। শাজাহানের ছেলে শাহ সুজার তৈরী ভুলে যাওয়া মসজিদ দেখলাম যেখানে আমাদের অসুখ করলে মা মানত করত। ওটা তখন হিন্দু মুসলমান দু দলেরই তীর্থস্থান ছিল। এখন নাকি হিন্দুরা আর আসে না। নদীর ধারে বাঁশঝাড়ে ঘেরা ভুতুড়ে মসজিদে বসে থাকা মৌলবী গোছের এক প্রৌঢ় আমাকে দেখে প্রথমে অবাক হলেন, তারপর আমার উদ্দেশ্য শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন।

    সেই বাড়িটাকে খুঁজে বার করলাম যার কলতলা বাঁধানোর সময় ভেজা সিমেন্টে কাঠি দিয়ে দু ভাইয়ের নাম লেখা হয়েছিল। খুব ইচ্ছে করছিল বাড়ির এখনকার বাসিন্দাদের অনুমতি নিয়ে কলতলাটা একবার দেখে আসতে। সাত পাঁচ ভেবে আর গেলাম না। ওইটুকু অজানাই থাকুক।

    এবার বাকি রইল দীঘির পাড়ের সেই বাড়ি। যেখানে শাপলা ফুটত, বালিহাঁস আসত। আর সম্ভবতঃ শনশন করে হাওয়া দিত।

    লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে করে দীঘির পাড়ে টিলার ওপর পৌঁছনো তো গেল। কিন্তু, কি করে বুঝব কোন কোয়ার্টারটা আমাদের ছিল? নাম্বার তো নেই, বাবারও মনে নেই। একটু ঘোরাঘুরি করার পর বুঝলাম, ওখানে একটাই কোয়ার্টার রয়েছে যার ডানদিকে দাঁড়ালে জেলখানার অর্ধচন্দ্রাকার পাঁচিল আর দীঘির শাপলাফোটা কোণটা একসঙ্গে দেখা যায়। তাহলে হিসেব অনুযায়ী ওটাই ছিল আমাদের বাড়ি।

    কিন্তু মনটা খুঁতখুঁত করছিল। ওটাই যে আমাদের বাড়ি ছিল তার একটা শক্তপোক্ত প্রমাণ চাই। হঠাৎ মনে পড়ল, আমাদের বাড়ির পেছনদিকে দোলনা টাঙানোর একটা লোহার ফ্রেম ছিল যেটা অন্য কোন কোয়ার্টারে ছিল না। শুধু ফ্রেম, দোলনা নয়। কিন্তু এত বছর পর সেটা কি আছে? আর থাকলেও সেটা রয়েছে পেছনদিকে যে দিকটা দেখা যাচ্ছে না।

    দরজায় কড়া নাড়ালাম। এক ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এলেন।

    "আপনাদের বাড়ির পেছনদিকে কোন দোলনা বা দোলনার ফ্রেম আছে?"

    "কি?"

    আমি যে পাগল বা বদমাস নই সেটা বোঝাতে বেশ বেগ পেতে হল। আমার প্রশ্নটা এবং আমার আসার উদ্দেশ্য বোঝাতে আরো বেশি বেগ পেতে হল। কিন্তু এইটা জানা গেল, যে এই কোয়ার্টারের পেছন দিকে দোলনা আছে, অন্য কোনটার পেছনে নেই।

    "দোলনাটা একবার দেখতে দেবেন?" গলাটা কি একটু কেঁপে গেল?

    "জুতো খুলে আসবেন।"

    ভদ্রমহিলার সঙ্গে পেছনের উঠোনে গেলাম। লোহার তারের জাল দিয়ে তৈরি বেড়ার ধারে দাঁড়িয়ে দীঘির জলে শাপলাগুলো আরো ভাল দেখা যাচ্ছে। সূর্যটা এই মূহুর্তে জেলখানার অর্ধবৃত্তাকার পাঁচিলটার ঠিক পেছনে। ওদিকে ভাল করে তাকানো যায় না, চোখ ধাঁধিয়ে যায়। জলে তিরতির ঢেউ দিচ্ছে।

    আমি যেখানটায় দাঁড়িয়ে, তার পাশেই নাম না জানা কয়েকটা গাছ। লক্ষ্য করলাম, বোঁটাগুলোর রং কালচে বেগুনি।

    আর তক্ষুনি বুঝতে পারলাম, শনশন আওয়াজটা আমার মগজের ভেতর হচ্ছে না, দীঘির দিক থেকে সত্যি সত্যি হাওয়া দিচ্ছে।
  • siki | 24.140.82.133 | ১৮ নভেম্বর ২০১২ ১০:১৩552499
  • ধ্যাত্তেরি, রোব্বার সকালে এইসব পড়াবার কোনও মানে হয়? রোব্বার যে আমার আপিস থাকে!
  • গান্ধী | 69.93.202.245 | ১৮ নভেম্বর ২০১২ ১০:৫৬552500
  • খুব বাজে হচ্ছে
  • siki | 24.140.82.133 | ১৮ নভেম্বর ২০১২ ১১:০৫552501
  • মানে ... একেবারে যাচ্ছেতাই ...
  • Manish | 126.193.129.75 | ১৮ নভেম্বর ২০১২ ১২:৪৯552503
  • লামাভাই মনটা ভিজিয়ে দিলি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন