এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • রাগ দরবারীঃ শ্রীলাল শুক্লা

    ranjan roy
    বইপত্তর | ২৪ অক্টোবর ২০১২ | ৭১৬৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 24.99.130.57 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ১৭:৪০574588
  • [ কিছুদিন আগে গত হয়েছেন হিন্দি সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক শ্রীলাল শুক্লা। তীক্ষ্ণ ব্যংগাত্মক দৃষ্টি আর সুগভীর জীবনবোধ তাঁর উপন্যাসগুলোয় আলাদা স্বাদ এনেছে। স্বাধীনতাপরবর্তী উত্তরভারতে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় তাঁর রচনার বিষয়। তাঁর চলার পথ আলাদা। চাবুক চালিয়েছেন কিন্তু মুখে লেগে আছে হাসিটি। ১৯৬৮তে প্রকাশিত তাঁর "রাগ দরবারী" উপন্যাসটি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত। ১৯৯১ এর মধ্যেই দশম সংস্করণ জনপ্রিয়তার বিরল উদাহরণ।
    পাঠক অনুভব করবেন প্রথম বা দ্বিতীয় অধ্যায় শেষ হতে না হতেই শিবপালগঞ্জ নামক গ্রামটি গো-বলয়ের সমগ্র গ্রামজীবনের প্রতিভু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার আধখেঁচড়া অনুবাদে যদি কোন পাঠকের মনে মূল হিন্দি বইটি পড়বার আগ্রহ জাগে তাহলেই আমার শ্রম সার্থক।]
  • ranjan roy | 24.99.130.57 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ১৮:২৯574623
  • অধ্যায়-১
    ----------
    শহরের সীমানা । ছাড়িয়ে একটু এগোলেই গ্রাম-ভারতের মহাসাগরের ঢেউ।
    ওখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি ট্রাক। ওটাকে দেখলেই মনে হয় যে শুধু সড়কের সাথে বলাৎকার করার জন্যেই এর জন্ম। সত্যের যেমন নানা রং, তেমনি এই ট্রাকেরও। ওদিক থেকে দেখলে পুলিসের মনে হবে যে ওটা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। আবার এদিক থেকে দেখলে ড্রাইভার ভাববে যে ও তো রাস্তার একপাশে দাঁড় করানো রয়েছে। চালু ফ্যাশনের হিসেবে ড্রাইভার ওর ডানদিকের দরজাটা খুলে ডানার মত ছড়িয়ে রেখেছে। এতে ট্রাকের সৌন্দর্য নিঃসন্দেহ বেড়ে গে্ছে, আর ওর পাশ কাটিয়ে কোন গাড়ি যে এগিয়ে যাবে তার ভয় ও এড়ানো গেছে।
    রাস্তার এক দিকে পেট্রল পাম্প, উল্টো দিকে খাপরা, কাঠ, আর টিনের পচে যাওয়া টুকরোটাকরা নিয়ে নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী তৈরি কিছু দোকানের চালাঘর। একবার চোখ বোলালেই বোঝা যায় যে এগুলোকে দোকানের মধ্যে গন্য করা মুশকিল। সবগুলোতে জনগণের প্রিয় একটি পানীয় পাওয়া যায়-- যা কিনা ময়লা, কালো, চা বানাতে বার কয়েক ব্যবহৃত পাতা আর গরম জলের মিশ্রণ মাত্র। এর মধ্যে বারকোশে কিছু মেঠাই আপনার চোখে পড়বে যেগুলো রাত-দিন ঝড়-ঝঞ্ঝা-বৃষ্টিপাত ও মশা-মাছির হামলার বাহাদুরের মত মোকাবিলা করে টিঁকে আছে। এগুলো আমাদের দেশি কারিগরের হস্তশিল্প ও বৈজ্ঞানিক বুদ্ধির নমুনা বটে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে যদিও আমরা এখনো ভালো ব্লেড বানাতে পারিনি কিন্তু আবর্জনাকে সুস্বাদু খাদ্য পদার্থে পরিবর্তিত করার দক্ষতা গোটা দুনিয়ায় শুধু আমাদেরই আয়ত্ত্বে।
    ট্রাকের ড্রাইভার ও ক্লিনার একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিল।
    রঙ্গনাথ দূর থেকে ট্রাকটাকে দেখতে পেয়েছে, অমনি ও জোরে পা চালাতে লেগেছে। আজ রেঅওয়ে ওকে ধোঁকা দিয়েছে। লোক্যাল প্যাসেঞ্জার ট্রেনটাকে ও রোজকার মত দু'ঘন্টা লেট ধরে নিয়ে ঘর থেকে রওনা দিয়েছিল। গিয়ে দেখল সে ব্যাটা আজ মাত্তর দেড় ঘন্টা লেট। নালিশ-বইয়ের কথাসাহিত্যে নিজস্ব যোগদান করে আর রেলওয়ের অফিসারদের চোখে বোকা সেজে ও স্টেশন থেকে বেরিয়ে এসেছিল। রাস্তায় চলতে চলতে ট্রাক দেখতে পেয়ে ওর মন-- সেটা শরীরের যে জায়গাতেই থাকুক না- নেচে উঠল।
    ট্রাকের কাছে পৌঁছে গিয়ে দেখল ড্রাইভার ও ক্লিনার চায়ের শেষ চুস্কি-চুমুক নিচ্ছে। ও এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের খুশি ঢেকে, ড্রাইভারকে একটু নির্বিকার ভাবে জিগাইল," কি গো ড্রাইভার সাহেব, ট্রাক শিবপালগ`
  • ranjan roy | 24.99.130.57 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ১৮:২৯574612
  • অধ্যায়-১
    ----------
    শহরের সীমানা । ছাড়িয়ে একটু এগোলেই গ্রাম-ভারতের মহাসাগরের ঢেউ।
    ওখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি ট্রাক। ওটাকে দেখলেই মনে হয় যে শুধু সড়কের সাথে বলাৎকার করার জন্যেই এর জন্ম। সত্যের যেমন নানা রং, তেমনি এই ট্রাকেরও। ওদিক থেকে দেখলে পুলিসের মনে হবে যে ওটা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। আবার এদিক থেকে দেখলে ড্রাইভার ভাববে যে ও তো রাস্তার একপাশে দাঁড় করানো রয়েছে। চালু ফ্যাশনের হিসেবে ড্রাইভার ওর ডানদিকের দরজাটা খুলে ডানার মত ছড়িয়ে রেখেছে। এতে ট্রাকের সৌন্দর্য নিঃসন্দেহ বেড়ে গে্ছে, আর ওর পাশ কাটিয়ে কোন গাড়ি যে এগিয়ে যাবে তার ভয় ও এড়ানো গেছে।
    রাস্তার এক দিকে পেট্রল পাম্প, উল্টো দিকে খাপরা, কাঠ, আর টিনের পচে যাওয়া টুকরোটাকরা নিয়ে নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী তৈরি কিছু দোকানের চালাঘর। একবার চোখ বোলালেই বোঝা যায় যে এগুলোকে দোকানের মধ্যে গন্য করা মুশকিল। সবগুলোতে জনগণের প্রিয় একটি পানীয় পাওয়া যায়-- যা কিনা ময়লা, কালো, চা বানাতে বার কয়েক ব্যবহৃত পাতা আর গরম জলের মিশ্রণ মাত্র। এর মধ্যে বারকোশে কিছু মেঠাই আপনার চোখে পড়বে যেগুলো রাত-দিন ঝড়-ঝঞ্ঝা-বৃষ্টিপাত ও মশা-মাছির হামলার বাহাদুরের মত মোকাবিলা করে টিঁকে আছে। এগুলো আমাদের দেশি কারিগরের হস্তশিল্প ও বৈজ্ঞানিক বুদ্ধির নমুনা বটে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে যদিও আমরা এখনো ভালো ব্লেড বানাতে পারিনি কিন্তু আবর্জনাকে সুস্বাদু খাদ্য পদার্থে পরিবর্তিত করার দক্ষতা গোটা দুনিয়ায় শুধু আমাদেরই আয়ত্ত্বে।
    ট্রাকের ড্রাইভার ও ক্লিনার একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিল।
    রঙ্গনাথ দূর থেকে ট্রাকটাকে দেখতে পেয়েছে, অমনি ও জোরে পা চালাতে লেগেছে। আজ রেঅওয়ে ওকে ধোঁকা দিয়েছে। লোক্যাল প্যাসেঞ্জার ট্রেনটাকে ও রোজকার মত দু'ঘন্টা লেট ধরে নিয়ে ঘর থেকে রওনা দিয়েছিল। গিয়ে দেখল সে ব্যাটা আজ মাত্তর দেড় ঘন্টা লেট। নালিশ-বইয়ের কথাসাহিত্যে নিজস্ব যোগদান করে আর রেলওয়ের অফিসারদের চোখে বোকা সেজে ও স্টেশন থেকে বেরিয়ে এসেছিল। রাস্তায় চলতে চলতে ট্রাক দেখতে পেয়ে ওর মন-- সেটা শরীরের যে জায়গাতেই থাকুক না- নেচে উঠল।
    ট্রাকের কাছে পৌঁছে গিয়ে দেখল ড্রাইভার ও ক্লিনার চায়ের শেষ চুস্কি-চুমুক নিচ্ছে। ও এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের খুশি ঢেকে, ড্রাইভারকে একটু নির্বিকার ভাবে জিগাইল," কি গো ড্রাইভার সাহেব, ট্রাক শিবপালগ`
  • ranjan roy | 24.99.130.57 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ১৮:৫৮574634
  • --কি গো ড্রাইভার সাহেব, ট্রাক শিবপালগঞ্জের দিকে যাবে?
    ড্রাইভার খাচ্ছিল চা আর দেখছিল চা-ওয়ালিকে; দায়সারা জবাব দিল--যাবে।
    " আমাকে সঙ্গে নেবেন? পনের মাইলের মাথায় নেমে যাবো। শিবপালগঞ্জ পর্য্যন্ত ।"
    ড্রাইভার এতক্ষণে চা-ওয়ালির মধ্যে নিহিত সমস্ত সম্ভাবনাকে জরিপ করে নিয়েছে। এবার চোখ ফিরেছে রঙ্গনাথের দিকে। আহা! চেহারা বটে! নব্কঞ্জলোচন-কঞ্জমুখ--করকঞ্জ-পদকঞ্জারুণম্‌!। পায়ে খদ্দরের পাজামা, মাথায় খদ্দরের টুপি, গায়ে খদ্দরের পাঞ্জাবী। কাঁধে ঝুলছে বিনোবা ভাবের ভূদানী-ঝোলা। হাতে চামড়ার অ্যাটাচি। ড্রাইভার ওর দিকে অবাক হয়ে দেখতেই থাকল। তারপর কিছু ভেবে বলল-- বসুন শিরিমানজী, এক্ষুণি রওনা দেব।

    ঘরঘরিয়ে চলছে ট্রাক। শহরের আঁকাবাঁকা মোড়ের প্যাঁচ থেকে ফুরসত পেয়ে একটু এগোতেই অনেক দূর পর্য্যন্ত জনহীন পরিষ্কার রাস্তা। ড্রাইভার প্রথমবার টপ গিয়ার লাগালো, কিন্তু সেটা পিছলে পিছলে নিউট্রাল হতে শুরু করল। প্রতি একশ'গজ চলতেই গিয়ার পিছলে যেতে লাগল আর অ্যাকসিলারেটরে চাপ থাকায় গাড়ির ঘর-ঘর আরো বেড়ে গেল।
    রঙ্গনাথ বলল," ড্রাইভার সাহেব, তোমার গিয়ার তো একদম দেশের সরকারের মত"।
    ড্রাইভার মুচকি হেসে এই সার্টিফিকেট গ্রহণ করল। রঙ্গনাথ ভাবল যে নিজের বক্তব্যটি আরো একটু স্পষ্ট করে দেয়। --" ওকে যতই টপে চড়াও না কেন, দু'গজ যেতে না যেতেই পিছলে ঠিক নিজের পুরনো খাঁচায় ফিরে আসে।"
    ড্রাইভার হেসে উঠলো " অনেক বড় কথা বলে দিলেন শিরিমানজী।"
    এইবার ও গিয়ার কে টপে নিয়ে নিজের এক পা' প্রায় নব্বই ডিগ্রি কোণে বেঁকিয়ে গিয়ারের জঙ্ঘার নীচে চেপে দিল। রঙ্গনাথ ভাবল যে বলে- দেশ শাসনের স্টাইলও এমনিই হয়। কিন্তু কথাটা বড্ড বেশি বড় হয়ে যাবে ভেবে চুপ করে রইল।
  • pipi | 139.74.191.152 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ১৯:২৯574645
  • খাসা হচ্ছে! চলুক! চলুক!
  • শঙ্খ | 169.53.46.143 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ২০:১৯574656
  • রঞ্জনদা,

    নিপুণ স্যাটায়ার। কি উপমা একেকটা!! এই টাইপের লেখা আমার অত্যন্ত প্রিয়। মূল হিন্দি কোনদিনই পড়ে উঠতে পারবো না, এলেম নেই, কিন্তু আপনার সাবলীল অনুবাদ সেই ক্ষোভ রাখতে দেবে না, আমি নিশ্চিত।

    বিজয়ার শুভেচ্ছা রইলো।
  • ranjan roy | 24.99.102.112 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ২০:৪৫574667
  • ইতিমধ্যে ড্রাইভার নিজের ঠ্যাংখানা গিয়ারের জঙ্ঘার থেকে সরিয়ে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।আর গিয়ারের ওপর ও একটা কাঠের লম্বা টুকরো গুঁজে দিয়ে ওর আর এক মাথা প্যানেলের নীচে ঠুকে দিয়েছে।
    ট্রাক দৌড়ুচ্ছে ভীমবেগে। ওটাকে দেখামাত্র সাইকেল-আরোহী, পথচারী, এক্কাগাড়ি সবাই ভয়ের চোটে অনেক দূর থেকেই রাস্তা ছেড়ে নীচে নেমে যাচ্ছে। ওদের পালানোর স্পীড দেখে মনে হচ্ছে যে ওটা ট্রাক নয়, কোন দাবানল, বঙ্গোপসাগরের ঘুর্ণিঝড়, অথবা পিন্ডারি দস্যু-দলের হামলা।
    রঙ্গনাথ ভাবছিল যে অনেক আগেই হাঁকা পাড়া উচিৎ ছিল--- গ্রামবাসী শোনো! নিজেদের পশু ও বাচ্চাদের ঘরের ভেতর আটকে রাখো। শহর থেকে এক্ষুনি একটা ট্রাক বেরিয়েছে।
    এবার ড্রাইভার বলল, " বলুন শিরিমানজী! কী খবর? অনেক দিন পরে গাঁয়ের দিকে যাচ্ছেন।"
    রঙ্গনাথ শিষ্টালাপের জবাবে একটু মুচকি হাসলো। ড্রাইভার বললো," শিরিমানজী, আজকাল কি করছেন?"
    --"ঘাস কাটছি।"
    ড্রাইভার হেসে ফেললো। কপাল খারাপ, একটা ন্যাংটো-পুঁটো বাচ্চা ট্রাকের নীচে চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে গেল আর পাশের নয়ানজুলিতে টিকটিকির মত আছড়ে পড়ল। ড্রাইভার অ্যাকসিলারেটরে চাপ বাড়িয়ে দাঁত বের করে বলল," কি কথাই বল্লেন! একটু খুলে বলুন।"
    --" বল্লুম তো, ঘাস কাটছি। একেই ইংরিজিতে রিসার্চ বলে। গত বছর এম এ পাশ করেছি, এবছর রিসার্চ শুরু করেছি।"
    ড্রাইভার যেন ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমীর গল্প শুনছে। মুচকি হেসে বললো," তো শিবপালগঞ্জে কি করতে যাচ্ছেন?"
    -" ওখানে আমার মামা থাকেন। অসুখে পড়েছিলাম। কিছুদিন গাঁয়ে থেকে শরীর ভাল করে আসব।"
    এবার ড্রাইভার অনেকক্ষণ হাসতে থাকলো," কি যে গল্পো বানিয়েছেন শিরিমানজী?"
    রঙ্গনাথ ওর দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো," এর মধ্যে গল্প বানানোর কি হল?"
    ড্রাইভার ওর সারল্যে হাসতে হাসতে বিষম খেল। " কি যে বলেন! আচ্ছা, কাটিয়ে দিন ওসব। বলুন, মিত্তাল সাহেবের কি অবস্থা? ওই পুলিশের গারদে খুনের ব্যাপারটা কদ্দূর?"
    রঙ্গনাথের রক্ত শুকিয়ে গেছে। শুকনো গলায় বললো," আরে, আমি কি জানি এই মিত্তাল কে?"
    ড্রাইভারের হাসিতে ব্রেক লেগে গেছে। ট্রাকের গতি কিছু কমেছে। রঙ্গনাথের দিকে কড়া করে তাকিয়ে ও জিগ্যেস করলো," আপনি মিত্তাল সাহেবকে চেনেন না?"
    -" না তো।"
    --" আর জৈন সাহেবকে?"
    --" একদম না।"
    ড্রাইভার এবার ট্রাকের জানলা দিয়ে বাইরে থুতু ফেলে সাদা গলায় বলল," আপনি সি আই ডি বিভাগে কাজ করেন না?"
    রঙ্গনাথ এবার ক্ষেপে গিয়ে বলল," সি আই ডি? সেটা কি জিনিস? খায় না মাথায় দেয়?"
  • ranjan roy | 24.99.102.112 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ২১:২৫574678
  • ড্রাইভার বেশ জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে সামনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইল। ক'টা গরুর গাড়ি যাচ্ছে। একটি জনপ্রিয় থিয়োরি হল যখ্ন যেখানে জায়গা পাবে, ঠ্যাং লম্বা করে দখল নেবে। গাড়োয়ানের দল ওই থিয়োরি মেনে গরুর গাড়ির ওপর মুখ ঢেকে পা লম্বা করে শুয়ে আছে। গরুগুলো নেহাৎ অভ্যেসবশে গাড়িগুলো রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়েও 'জনগণ-জনার্দন' মার্কা ডায়লগ আছে, কিন্তু রঙ্গনাথের মুখ খোলার সাহস হল না। সি আই ডিওলা কথায় ওর মেজাজ খিঁচড়ে গেছে। ড্রাইভার প্রথমে রবারের হর্ন বাজালো। তারপর এমন একটা হর্ন বাজালো যা সঙ্গীতের আরোহ-অবরোহ সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বড় ভয়াবহ। কিন্তু গরুর গাড়ি আপন মনে আগের মতই যাচ্ছিল। ড্রাইভার বেশ স্পীডে ট্রাক চালাচ্ছিল, ভাবখানা যেন গাড়িগুলোর ওপর দিয়ে পার করবে। হটাৎ ওর আক্কেল হল যে ও ট্রাক চালাচ্ছে, হেলিকপ্টার নয়। তাই আচমকা ব্রেক কষলো, প্যানেলে ঠুঁসে রাখা কাঠের টুকরোটাকে ফেলে দিয়ে গিয়ার বদলে গরুর গাড়িগুলোকে প্রায় ছুঁয়ে দিয়ে আগে বেরিয়ে গেল। এবার ও ঘেন্নার চোখে রঙ্গনাথের দিকে তাকিয়ে বলল," সি আই ডি না হলে অমন খাদির কাপড় কেন পরেছ?"
    এই আচমকা আক্রমণে রঙ্গনাথ হড়বড়িয়ে গেল। কিন্তু এটাকে সামান্য কথাবার্তা ভেবে সহজভাবে বলল," খদ্দর তো আজকাল সবাই পরে।"
    --"দূর! কোন ঢঙের লোক এইসব পরে নাকি?" তারপর ও আবার জানলা দিয়ে থুতু ফেলে টপ গিয়ারে গাড়ি চালাতে লাগল।
    রঙ্গনাথের পার্সনালিটি কাল্ট শেষ হয়ে গেছল। খানিকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর ও ঠোঁট গোল করে সিটি বাজাতে লাগল। ড্রাইভার ওকে কনুই দিয়ে গুঁতিয়ে বললো-- দেখো জী! চুপচাপ বসে থাকো, এটা সংকীর্তনের জায়গা নয়।"
    রঙ্গনাথ চুপ করল। তখন ড্রাইভার বিরক্তির সঙ্গে বলল," এই গিয়ার হতচ্ছাড়া বারবার পিছলে গিয়ে নিউট্রাল হয়ে যাচ্ছে। দেখছ কি? একটু ধরে থাক না!"
    একটু পরে আবার চটে গিয়ে বলল, " আরে অমনি করে নয়, এমনি করে! ভালকরে চেপে ধরে বসে থাকো।"
  • ranjan roy | 24.96.36.228 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ২৩:১৭574689
  • ট্রাকের পেছন থেকে বার বার হর্নের আওয়াজ ভেসে আসছে। রঙ্গনাথ শুনতে পাচ্ছিল, কিন্তু ড্রাইভার না শোনার ভান করছিল। এমন সময় ক্লীনার ঝুলতে ঝুলতে এসে ড্রাইভারের কানের পাশের জানলায় খট খট করতে লাগল। ট্রাকওয়ালাদের ভাষায় এই কোডের নিশ্চিত কোন গূঢ় ভয়ংকর মানে আছে। কারণ, ড্রাইভার তক্ষুণি স্পীড কম করে ট্রাককে বাঁদিকের একটি লেনে চালান করে দিল।
    হর্নের আওয়াজ এমন একটি স্টেশন-ওয়াগন থেকে আসছিল যেগুলো আজকাল বিদেশের আশীর্বাদে শ'য়ে শ'য়ে আমাদের দেশের প্রগতির জন্যে আমদানি হচ্ছে। স্টেশন-ওয়াগনটি ডানদিক দিয়ে এগিয়ে গিয়ে স্লো হয়ে একপাশে থামছিল। ওর থেকে বেরিয়ে আসা একটি খাকি হাত ট্রাককে থামতে ইশারা করছিল। এবার দুটো গাড়িই থেমে গেল।
    স্টেশন-ওয়াগন থেকে নামল একজন অফিসারের মত দেখতে চাপরাশি আর চাপরাশির মত দেখতে এক অফিসার। খাকি পোশাকে গোটা দুই সেপাই ও নেমে পড়েছে। দলটা এসেই পিন্ডারী-দস্যুদের মত লুটপাট শুরু করে দিয়েছে। কেউ কেড়ে নিয়েছে ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স, তো কেউ নিয়েছে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কার্ড।কেউ ব্যাক-ভিউ মিররের নড়া ধরে নেড়ে দেখছে , তো কেউ ট্রাকের হর্ন বাজিয়ে দেখছে। তারপর এরা ব্রেক দেখল, ফুটবোর্ড নাড়িয়ে দেখল, লাইট জ্বালালো, ব্যাক করার সময় যে ঘন্টি বাজে তাও বাজালো। ওরা যা নেড়েচেড়ে দেখল তাই খারাপ। যেটাকে ছুঁলো সেটাতেই বিগড়ে গেল। এই ভাবে চারজনের দলটি চারমিনিটে প্রায় চল্লিশটি দোষ খুঁজে বের করল। তারপর একটা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ডিবেট শুরু করল যে এই শত্রুর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিৎ?
    রঙ্গনাথ বুঝে গেল যে এই দুনিয়ায় কর্মবাদের সিদ্ধান্ত, 'পোয়েটিক জাস্টিস' আদি গল্প--সব সত্যি। এখন ট্রাকের চেকিং হচ্ছে আর ওকে অপমান করার জন্যে ভগবান ড্রাইভারকে শাস্তি দিচ্ছে, হাতে হাতে । ও নিজের সীটে বসেছিল। এক ফাঁকে ড্রাইভার ওকে বললো--"শিরিমানজী, একটু নীচে নেমে আসুন। এখন আর গিয়ার ধরে বসে থেকে কি লাভ?"
    রঙ্গনাথ নীচে নেমে অন্য একটি গাছের নীচে দাঁড়িয়ে রইল। ওদিকে ড্রাইভার আর চেকিং স্কোয়াড ট্রাকের এক-একটা পার্টস্‌ নিয়ে তর্ক জুড়েছে। দেখতে দেখতে তর্ক ট্রাক ছেড়ে দেশের পরিস্থিতি ও আর্থিক দুরবস্থা পর্য্যন্ত পৌঁছে গেল। আর একটু পরেই ওখানে উপস্থিত জনগণের মধ্যে ছোট ছোট সাব-কমিটি তৈরি হয়ে গেল। তারা আলাদা আলাদা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে এক একটি বিষয় নিয়ে এক্স্পার্ট ওপিনিয়ন দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অনেক তর্ক-বিতর্কের পরে সবাই মিলে একটি গাছের নীচে ওপেন সেশন শুরু করে দিল। আর একটু পরে বোঝা গেল সবার দম ফুরিয়ে এসেছে, সেমিনার সমাপ্ত প্রায়।
    সব শেষে রঙ্গনাথের কানে এল অফিসারের মিনমিনে কন্ঠস্বরঃ
    -- কি গো মিয়াঁ আশরফ, কি ভাবছ? ছেড়েই দিই?
    চাপরাশি বলল,-- আর কি করবেন হুজুর! কহাঁ তক চালান-টালান বানাতে থাকবেন? এক-আধটা ভুলচুক হলে না হয় চালান করতেন?
    এক সেপাই বলল,-- চার্জশীট ভরতে ভরতে রাত কাবার হয়ে যাবে।
    কিছু আশকথা-পাশকথার পর অফিসারটি বলল,--- যা ব্যাটা বন্টা সিং, তোকে এবার মাপ করে দিলাম।
    ড্রাইভার খোশামুদে স্বরে বললো-- এটা শুধু শিরিমানজী বলেই করতে পারলেন।
    অফিসার অনেকক্ষণ ধরে দূরে একটি গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা রঙ্গনাথকে দেখছিলেন। কাছে এসে বল্লেন," আপনিও এই ট্রাকে চড়ে যাত্রা করছেন?"
    --আজ্ঞে হ্যাঁ।
    --- কোন ভাড়া-টাড়া দেন নি তো?
    -- আজ্ঞে না।
    - - সে আপনার পোশাক দেখেই বুঝেছি। তবু জিগ্যেস করা আমার কর্তব্য।
    রঙ্গনাথ ওকে একটু খ্যাপাবার জন্যে বলল,-- এটা আসল খদ্দর ভেবেছেন নাকি? এতো মিলে তৈরি খাদি।
    কিন্তু অফিসারটি বেশ শ্রদ্ধার সঙ্গে বলল, " খাদি খাদিই হয়, তার আর আসল-নকল!
  • ranjan roy | 24.96.36.228 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ২৩:৪৯574589
  • অফিসার চলে যেতেই চাপরাশি আর ড্রাইভার রঙ্গনাথের কাছে এল। ড্রাইভার বলল, "দুটো টাকা বের কর দিকি!"
    ও মুখ ঘুরিয়ে কড়া সুরে বলল," ব্যাপারটা কি? আমি কেন টাকা দিতে যাব?"
    ড্রাইভার তখন চাপরাশির হাত ধরে বলল," আসুন শিরিমানজি, আমার সঙ্গে এদিকে আসুন।" যেতে যেতে ও রঙ্গনাথকে শুনিয়ে দিল," তোমার জন্যেই আমার চেকিং হল, আর আমার বিপদের সময় তুমিই এমন ব্যভার করলে? এই লেখাপড়া শিখেছ?"
    বর্তমান শিক্ষা-পদ্ধতি হল রাস্তায় শুয়ে থাকা কুকুরের মত, যার ইচ্ছে দুটো লাথি মেরে যাবে। ড্রাইভারও যেতে যেতে ওর ওপর দুটো ডায়লগ ঝেড়ে চাপরাশির সঙ্গে ওর ট্রাকের দিকে এগিয়ে গেল।
    রঙ্গনাথ দেখল--- সন্ধ্যে নেমে আসছে, ওর অ্যাটাচি ট্রাকে তোলা রয়েছে, শিবপালগঞ্জ এখনো মাইল পাঁচেক হবে, ফলে ওর এখন মানুষের সহানুভূতির একান্ত দরকার। ও ধীরে ধীরে ট্রাকের দিকে এগিয়ে গেল। এদিকে স্টেশন-ওয়াগনের ড্রাইভার বার বার হর্ন বাজিয়ে চাপরাশিকে তাড়া দিচ্ছে। রঙ্গনাথ ড্রাইভারকে দুটো টাকা দিতে চাইল। ও বলল," যদি দেবেই তো আর্দালি সাহেবকে দাও। আমি তোমার টাকা নিয়ে কি করব?"
    বলতে বলতে ওর গলার স্বরে সেই সব সন্ন্যাসীর প্রত্যয় এসে গেল, যাঁরা কারো পয়সা নিজের হাতে ছুঁয়ে দেখেন না, শুধু অন্যদের বলতে থাকেন- আরে, তোমার পয়সা তো হাতের ময়লা মাত্র। চাপরাশি টাকা ট্যাঁকে গুঁজে বিড়ির সুখটান দিয়ে ওটার আধজ্বলা টুকরোটা প্রায় রঙ্গনাথের পাজামার ওপর ছুঁড়ে ফেলে সটান স্টেশন-ওয়াগনের দিকে চলে গেল। ওরা রওনা হয়ে গেলে ড্রাইভারও স্টার্ট দিল আর আগের মত টপ গিয়ারে গিয়ে রঙ্গনাথের হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর কী জানি কী ভেবে মুখ ছুঁচলো করে শিস দিয়ে সিনেমার গানের সুর ভাঁজতে লাগল। রঙ্গনাথ চুপচাপ শুনছিল।
    একটু পরে রাস্তার দুপাশে ধোঁয়া ধোঁয়া অস্পষ্টতার মাঝে কিছু যেন কাপড়ের গাঁঠরি মতন দেখা যাচ্ছে। এরা হল গাঁয়ের মেয়েছেলের দল, লাইন বেঁধে রাস্তার দুপাশে বসে আছে। এরা নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে বসে বাক্যালাপ চালিয়ে যাচ্ছে, হাওয়া খাচ্ছে আর হয়ে যায় তো মলমূত্র ত্যাগও করছে। রাস্তার নীচে নোংরা ছড়িয়ে আছে আর তার দুর্গন্ধের ভারে সন্ধ্যের হাওয়াও কোন গর্ভবতী নারীর মতন আলস্যভরা চালে বয়ে চলেছে। একটু দূর থেকে কুকুরের খ্যাঁক-খ্যাঁক শোনা যাচ্ছে। চোখের সামনে ধোঁয়ার একটি জাল ছড়িয়ে পড়ছে। কোন সন্দেহ নেই যে আমরা একটি গাঁয়ের সীমানায় এসে পড়েছি। হ্যাঁ, এটাই শিবপালগঞ্জ।

    -----------------------**********------------------------------------
  • ranjan roy | 24.96.36.228 | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ২৩:৫১574600
  • শঙ্খ,
    বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। তোমার আস্থার সম্মান রাখতে চেষ্টা করব।
  • ranjan roy | 24.96.36.228 | ২৫ অক্টোবর ২০১২ ০০:২১574604
  • অধ্যায়-২
    ------------
    শিবপালগঞ্জ থানাতে একটি লোক দারোগাজীকে বলছে--- "আজ-কাল করতে করতে অনেক দিন গড়িয়ে গেছে হুজুর! আমার চালান পেশ করতে আর দেরি করবেন না।"
    এই আরামকেদারাটি বোধ্হয় মধ্যযুগীন কোন সিংহাসন ছিল, ঘষে ঘষে আজ এই হাল। দারোগাজী ওতে বসে ছিলেন, আবার শুয়েও ছিলেন। এমন কাতর আবেদন শুনে মাথা তুলে বললেন," চালানও হয়ে যাবে, তাড়া কিসের? কিসের বিপদ?"
    লোকটি আরামকেদারার পাশে পড়ে থাকা একটি প্রাগৈতিহাসিক মোড়ায় চেপে বসে বলতে লাগল," আমার জন্যে তো সমূহ বিপদ। আপনি আমায় চালান করে দিন, তো ঝঞ্ঝাট মিটে যায়।"
    দারোগাজী গুজগুজ করতে করতে কাউকে গালি দিতে লাগলেন। একটু পরে বোঝা গেল যে উনি বলছেন--- কাজের ঠ্যালায় চোখে অন্ধকার দেখছেন। এত কাজ যে অপরাধের তদন্ত হচ্ছে না, মামলার চালান পেশ হচ্ছে না, আদালতে সাক্ষী যাচ্ছে না। এত কাজের বোঝা যে একটা কাজও হচ্ছে না।
    মোড়া ঘষটে আরামাকেদারার গা ঘেঁষে এল। বলল, " হুজুর, শত্রুরা বলাবলি করছে যে শিবপালগঞ্জে দিনেদুপুরে জুয়োর আড্ডা বসছে। পুলিস কাপ্তেনের কাছে বেনামী চিঠি গেছে। আর আপনার সঙ্গে তো আমাদের সমঝোতা ছিলই যে বছরে একবার চালান করবেন। এই বছর চালান করতে করতে অনেক দেরি হয়ে গেধ্হে। এই সময় করে ফেলুন, তো লোকের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।"

    শুধু আরামকেদারা কেন, সবকিছুই মধ্যযুগের। তক্তপোষ, তার ওপর শতচ্ছিন্ন শতরঞ্জি, কলমদান, কালি -শুকোনো দোয়াতের সারি, কোনা- মোড়া ময়লা রেজিস্টার-- সব কিছুই কয়েক শতাব্দী আগের মনে হচ্ছে। এই থানাতে এখনো ফাউন্টেনপেন আসেনি। প্রগতি এইটুকুই যে খাগের কলম গেছে। এই থানাতে টেলিফোনের ব্যবস্থা নেই। হাতিয়ার বলতে কিছু প্রাচীন রাইফেল। দেখলে মনে হয় --হয়ত সিপাহীবিদ্রোহে ব্যবহার হয়ে থাকবে। তবে, সেপাইদের দৈনন্দিন কাজের জন্যে কিছু বাঁশের লাঠি রাখা আছে। উহাদের সম্বন্ধে কবি কহিয়াছেন যে উহারা নদী-নালা পার করিতে এবং সহসা কুক্কুরদিগকে আক্রমণ করিতে যথেষ্ট উপযোগী। এই থানার জন্যে কোন জীপের অস্তিত্ব নেই। যাত্রা হেতু জনা দুই-তিন চৌকিদারের স্নেহে লালিত্ব অশ্ব আছে। ইহারা শের শাহের সময়েও অস্তিত্বে ছিল।
  • Blank | 180.153.65.102 | ২৫ অক্টোবর ২০১২ ১৩:৩১574605
  • রঞ্জন দা, এটা কিন্তু অনুবাদ যে বোঝা যাচ্ছে। তোমার নিজের গল্প উপন্যাসের যে সাবলীল ফ্লো সেটা কিন্তু আসছে না।
  • ranjan roy | 24.99.67.92 | ২৬ অক্টোবর ২০১২ ০০:০০574606
  • ব্ল্যাংকি,
    অনেক ধন্যবাদ ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্যে। খুব চেষ্টা করবো, কিন্তু তবু না উতরোলে বলতে দ্বিধা কোর না। কৃতজ্ঞ থাকবো।
    সেকেন্ড চ্যাপটার শেষ হলে বলবে কিছু উন্নতি হল কি না!
  • ranjan roy | 24.99.67.92 | ২৬ অক্টোবর ২০১২ ০০:১৪574607
  • আগের পোস্টের দ্বিতীয় ভাগটা আবার লিখছিঃ

    " শুধু আরামকেদারা কেন, সবকিছুই যেন মধ্যযুগের। তক্তপোষটা, ওর ওপরে বিছিয়ে দেয়া ছেঁড়াখোড়া শতরঞ্জি, শুকনো খটখটে দোয়াত,কোনামোড়া আধময়লা রেজিস্টার --- সবগুলো যেন কয়েকশ' বছর আগের থেকে রাখা আছে।
    এখানে বসে চারদিকে চোখ ঘোরালেই মনে হবে যেন ইতিহাসের কোন কোণায় দাঁড়িয়ে আছি। এখনো এই থানায় ঝর্ণাকলমের আমদানি হয় নি, তবে খাগের কলম বিদায় নিয়েছে। টেলিফোন আসেনি। অস্ত্রশস্ত্র বলতে কিছু পুরনো রাইফেল, মনে হয় সিপাহীবিদ্রোহের সময় কব্জা করা। এমনিতে সেপাইদের জন্যে অনেকগুলো বাঁশের লাঠি আছে। কবি বলেছেন যে ওগুলো নদী-নালা পেরোতে বা খেঁকি কুকুর ঠ্যাঙাতে বেশ কাজে লাগবে।
    থানার জন্যে কো জীপ-টিপ নেই। তবে বাহন হিসেবে জনাকয় চৌকিদারের আদরে টিঁকে থাকা ঘোড়া আছে। সে তো শেরশাহের আমলেও ছিল।''
  • Blank | 69.93.193.160 | ২৬ অক্টোবর ২০১২ ০০:২২574608
  • আমি একটা উদাহরন দিচ্ছি রঞ্জন দা। যেমন এই লাইন টা,
    " কিন্তু আবর্জনাকে সুস্বাদু খাদ্য পদার্থে পরিবর্তিত করার দক্ষতা গোটা দুনিয়ায় শুধু আমাদেরই আয়ত্ত্বে"।

    আমার মনে হয়েছে যে তুমি যদি নিজে লিখতে তাহলে এই ধরনের শব্দ চয়ন বা বাক্য গঠন করতে না। - অবশ্যই আমার নিজের মতামত এটা।
  • Blank | 69.93.193.160 | ২৬ অক্টোবর ২০১২ ০০:২৫574609
  • আগের প্যারা যে রিরাইট করেছো সেটা অনেক ভাল হয়েছে ঃ)
  • ranjan roy | 24.99.67.92 | ২৬ অক্টোবর ২০১২ ০১:০৮574610
  • আগেই বলেছি যে থানার ভেতর ঢুকলেই মনে হবে যেন হুড়মুড়িয়ে কয়েক্শ' বছর পেছনে এসে পড়েছি। আমেরিকান থ্রিলার পড়ার অভ্যেস থাকলে তো প্রথমেই মনে হবে কোথায় আঙুলের ছাপ দেখার আতসকাঁচ, কোথায় ক্যামেরা আর ওয়ারলেসওলা গাড়ি? তার জায়গায় যা যা আছে সেতো বলাই আছে।
    আরও আছে--- সামনে তেঁতুলগাছের নীচে বসে একটা আধল্যাংটা ল্যাংগোটপরা লোক, ভাঙ্গের শরব্ত বানাচ্ছে। একটু পরে জানতে পারা যাবে যে একা ওই একটা লোক বিশটা গ্রামের দেখাশুনোর জন্যে আছে। ও যেমন আছে তেমনি অবস্থায় ওখানে বসে বসেই বিশ গাঁয়ের ক্রাইম ঠেকাতে পারে, ঘটনা ঘটে গেলে তার খোঁজখবর করতে পারে, আর কিছু না ঘটলে কিছু করিয়ে দিতে পারে। আতসকাঁচ, ক্যামেরা, কুকুর, ওয়্যারলেস ওর জন্যে নিষিদ্ধ বস্তু। দেখলে কিন্তু থানার পরিবেশ বেশ রোম্যান্টিক আর অতীতদিনের গৌরব নিয়ে মজে থাকার অনুকূল। যেসব রোম্যান্টিক কবি হারিয়ে যাওয়া অতীতের কথা ভেবে ভেবে কষ্ট পান, তাঁদের এখানে কিছুদিন থাকতে বললে ভালো হয়।
    তবে জনগণের আশা-ভরসা বলতে থানার ওই দারোগাজী আর তার কুল্যে গোটা দশ-বারো সেপাই। থানাটির অধীনে প্রায় আড়াই থেকে তিনশ' গাঁ; তবু যদি আট মাইলের মধ্যে কোন গাঁয়ে সিঁধ পড়ে তবে জনতা আশা করবে যে এই সেপাইদের মধ্যে থেকে কেউ না কেউ নিঘ্ঘাৎ দেখে ফেলেছে। আর যদি মাঝরাতে বারো মাইলের মধ্যে ডাকাতি হয় তাহলে পুলিশ নিশ্চই ডাকাতদের আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। এই বিশ্বাসের জন্যেই কোন গাঁয়ে একটা-দুটো বন্দুক ছাড়া কোন হাতিয়ার রাখতে দেয়া হয় নি।
    আর ভয় আছে যে গাঁয়ে হাতিয়ার রাখার অনুমতি দিলে ওখানের বর্বর-অসভ্য লোকজন হাতিয়ার চালানো শিখে নিজেদের মধ্যে দাঙ্গা বাধাবে,খুনজখম শুরু হবে, রক্তের নদী বইবে। আর ডাকাতদের থেকে নাগরিকদের বাঁচানো? সেসব দারোগাজী আর তাঁর দশ-বারো সেপাইয়ের জাদুকরী-ক্ষমতার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
    এঁদের এই ম্যাজিক পাওয়ারের সবচেয়ে বড় প্রমাণ খুনের মামলায় দেখা গেছে। ফলে বিশ্বাস জন্মেছে যে তিনশ' গাঁয়ে কার মনে কার জন্যে ঘৃণা জন্মেছে, কার সঙ্গে কার শ্ত্রুতা, কে কাকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে চায়-- তার খুঁটিনাটি খবর আগে থেকেই এদের কাছে আছে। তাই এঁরা আগে থেকেই এমন চাল চালবেন যে কেউ কাউকে মারতে না পারে, আর মারলেও চটপট ধরা পড়ে যায়।
    কোথাও খুন হলে এঁরা হাওয়ার বেগে অকুস্থলে গিয়ে খুনীকে ধরে ফেলবেন, শবদেহ নিজেদের কাস্টডিতে নেবেন, রক্তে-ভেজা-মাটি হাঁড়িতে ভরে ফেলবেন আর প্রত্যক্ষদর্শীদের এমন দিব্যদৃষ্টি দেবেন যে তারা যেকোন আদালতে মহাভারতের সঞ্জয়ের মতন যা ঘটেছে তার হুবহু বর্ণনা করতে পারে।
    সংক্ষেপে বলতে গেলে দরোগাজী আর তার সেপাইরা মানুষ নয়, আলাদীনের প্রদীপ থেকে বেরিয়ে আসা দৈত্য। এদের এমনি বানিয়ে রেখে ইংরেজ ১৯৪৭ এ এদেশ ছেড়ে নিজেদের দেশে ফিরে গেছে। তারপরে ধীরে ধীরে রহস্য ফাঁস হল যে এরা দৈত্য নয় মানুষ, আর এমনি মানুষ যারা নিজেরাই দৈত্য বেরিয়ে আসবে এই আশায় প্রদীপ ঘষেই যাচ্ছে।
  • ranjan roy | 24.99.67.92 | ২৬ অক্টোবর ২০১২ ০১:১৩574611
  • ব্ল্যাংকি,
    ঠিকই বলেছ। আমি সহমত। চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
  • ranjan roy | 24.99.67.92 | ২৬ অক্টোবর ২০১২ ০১:৫০574613
  • শিবপালগঞ্জের জুয়াড়ি কোম্পানীর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বেরিয়ে গেলে দারোগাবাবু একবার চোখ তুলে চারদিক দেখে নিলেন। সর্বত্র শান্তি। তেঁতুলগাছের নীচে ভাঙ্গ ঘুটতে থাকা ল্যাংগোটছাপ সেপাইটা পাশে স্থাপিত শিবলিঙ্গের ওপর ভাঙ্গের সরবত ঢালছে, জনৈক চৌকিদার ঘোড়ার পাছায় দলাই-মলাই করছে, লক-আপের ভেতর এক ডাকাত জোরে জোরে হনুমান-চালিশা পড়ছে আর বাইরের ফটকে ডিউটি-রত সেপাই- সম্ভবতঃ সারারাত্তির জেগে থাকার ফলে---একটা থামের গায়ে হেলান দিয়ে ঢুলছে।
    দারোগাবাবু একটা ছোট্ট ভাত-ঘুম মারবেন বলে খালি চোখ বন্ধ করতে যাচ্ছিলেন, দেখতে পেলেন রূপ্পনবাবু আসছে। উনি গজগজ করতে লাগলেন-- একটু চোখ বন্ধ করব তার জো নেই!
    রূপ্পনবাবু ঢুকতেই উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন আর 'জনতার সঙ্গে ভদ্র-ব্যবহার সপ্তাহ' অনেক আগে চলে গেলেও উনি বেশ বিনম্র ভাবে হ্যান্ডশেক করলেন। রূপ্পনবাবু বসতে বসতেই শুরু করলেন, " রামাধীনের বাড়িতে লাল কালিতে লেখা চিঠি এসেছে। ডাকাতের দল পাঁচহাজার টাকা চেয়ে পাঠিয়েছে। লিখেছে অমাবস্যার রাতে দক্ষিণের টিলার ওপরে--"।
    দারোগাবাবু মুচকি হেসে বললেন," এতো মশায় বড্ড বাড়াবাড়ি! কোথায় পুরনো দিনে ডাকাতেরা নদী-পাহাড় ডিঙিয়ে এসে টাকা নিয়ে যেত, আর এখন চায় কি ওদের ঘরে গিয়ে টাকা দিয়ে আসতে হবে!"
    রূপ্পনবাবু বল্লেন," যা বলেছেন। যা দেখছি এত ডাকাতি না, ঘুষ চাওয়া।"
    দারোগাবাবু একসুরে বল্লেন, " ঘুষ, চুরি, ডাকাতি---আজকাল সব এক হয়ে গেছে। ---পুরো সাম্যবাদ।"
    রূপ্পনবাবু," আমার বাবাও তাই বলছিলেন।"
    --"কী বলছিলেন?"
    --" এই, সব সাম্যবাদ হয়ে যাচ্ছে।"
    দুজনেই হেসে উঠলেন।
    এবার রূপ্পন বললেন, " না, আমি ঠাট্টা করছি না। সত্যি সত্যি রামাধীনের ঘরে এমনি চিঠি এসেছে। বাবা আমাকে তাই পাঠালেন। উনি বলেছেন যে রামাধীন আমাদের বিরোধী হতে পারে, কিন্তু ওকে এমন করে বিরক্ত করা উচিৎ হবে না।"
    --" সুন্দর বলেছেন। বলুন, কাকে কাকে বলতে হবে,- বলে দেব।"
    রূপ্পনবাবু গর্তে ঢোকা চোখ কুঁচকে খানিকক্ষণ দারোগার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
    দারোগা চোখ নামান নি। হেসে বল্লেন," ঘাবড়াবেন না। আমি থাকতে ডাকাতি হবে না।"
    রূপ্পনবাবু আস্তে আস্তে বল্লেন, " তা জানি। চিঠিটা জাল। আপনার সেপাইদেরও একটু জিগ্যেস করে দেখবেন। হতে পারে ওদেরই কেউ লিখেছে।"
    " হতে পারে না। আমার সেপাইগুলোর মধ্যে কেউ লিখতে জানে না। এক-আধটা হয়তো খালি নাম সাইন করতে পারে।"
    রূপ্পন আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, ওনাকে থামিয়ে দিয়ে দারোগাবাবু বল্লেন," এত তাড়া কিসের? আগে রামাধীন এসে রিপোর্ট তো লেখাক। চিঠিটা তো সামনে আসুক।"
  • ranjan roy | 24.96.73.217 | ২৭ অক্টোবর ২০১২ ০০:১৫574614
  • খানিকক্ষণ দুজনেই চুপ। দারোগাবাবু যেন কি ভেবে বল্লেন," সত্যি বলতে কি আমার তো এর সাথে শিক্ষাবিভাগের কোন সম্পক্ক আছে বলে মনে হচ্ছে।"
    -" কি করে"?
    -" আরে শিক্ষাবিভাগ-টিভাগ মানে আপনার কলেজের কথাই বলছি।"
    এবার রূপ্পনবাবু রেগে গেলেন। " আপনি তো আমার কলেজের পেছনে আদাজল খেয়ে লেগেছেন।"
    --" সে যাই বলুন, আমার তো মনে হয় রামাধীনকে ওই ভয়-দেখানো চিঠিটি আপনার কলেজের কোন ছোকরার কীর্তি, আপনি কী বলেন?"
    --" আপনাদের চোখে তো সমস্ত ক্রাইম কেবল স্কুলের ছোকরাদের কীর্তি! আপনার সামনে কেউ বিষ খেয়ে মরে গেলেও সেটাকে আপনি আত্মহত্যা না বলে বলবেন যে বিষ-টিষ কোন স্কুলের ছোঁড়াই এনে দিয়েছে।"
    --" ঠিক বলেছেন রূপ্পনবাবু! দরকার পড়লে বলব বই কি! আপনি হয়ত জানেন না যে আমি বখ্তাবর সিং এর চ্যালা!"
    এরপর শুরু হল সরকারী চাকরি নিয়ে কথাবার্তা--- ঘুরে ফিরে একটাই গান যার ধূয়ো হল সরকারী কর্মচারি আগে কেমন ছিল আর আজকাল কেমন! শুরু হল বখ্তাবর সিং এর গল্প। এক বিকেলে দারোগা বখ্তাবর সিং একা একা বাড়ি ফিরছিলেন। পার্কের পাশে ওনাকে ঘিরে ধরল দুই খাঁটি বদমাশ---ঝগরু আর মঙ্গরু। তারপর দে দনাদন্‌।
    কথা চাপা রইল না, তখন উনি থানায় গিয়ে নিজের ঠ্যাঙানি খাওয়ার রিপোর্ট লিখিয়ে দিলেন।
    পরদিন দুটো বদমাশ এসে ওনার পা' জড়িয়ে ধরল। বল, " হুজুর আমাদের মা-বাপ! বাচ্চা যদি রাগের মাথায় মা-বাপের সঙ্গে বেয়াদপি করে বসে তখন তাকে মাপ করে দেয়াই দস্তুর।"
    বখতাবর মা-বাপের কর্তব্য করে ওদের মাপ করে দিলেন। ওরাও ছেলের কর্তব্য পালন করে ওনার বুড়োবয়সের খাওয়া-পরার ভালমত ব্যবস্থা করে দিল।মামলা ভালয় ভালয় মিটে গেল।
  • ranjan roy | 24.96.73.217 | ২৭ অক্টোবর ২০১২ ০০:৩৫574615
  • কিন্তু পুলিস কাপ্তেন রেগে কাঁই, ইরেংজ যে!
    রেগেমেগে বখতাবর সিং কে বলল," টুমি শালা নিজের মামলাটারও ঠিক করে তদন্ত করতে পারলে না,টো অন্যদের কি বাঁচাবে? অন্ধকার ছিল তো কি? কাউকে চিনতে পারোনি? তাতে কি? টুমি কাউকেই চিনতে পারোনি, তো কী? কাউকে সন্দেহ তো করতে পারো! করলে ঠেকাচ্ছে কে?"
    তখন বখ্তাবর সিং তিনজনকে সন্দেহের বশে জেলে পুরলেন। তিনজনের সঙ্গেই ঝগরু- মঙ্গরু'র পুরুষানুক্রমে শত্রুতা। ওরা কেস খেল। মামলা চলল। ঝগরু-মঙ্গরু আদালতে বখতাবর সিংয়ের পক্ষে সাক্ষী দিল। কারণ ওরা দেখেছে! হ্যাঁ, ওরা দুজনেই নাকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বাহ্য করতে পার্কে ঢুকেছিল। তিন ব্যাটারই জেল হল।
    ঝগরু-মঙ্গরুর দুশমনের গতি দেখে পাড়ার বেশ ক'টা ছোকরা রোজ এসে ধর্না দিতে লাগল--" হুজুর! মাই-বাপ! একবার আমাদেরও সুযোগ দিন। আপনাকে ভালো করে প্যঁদাবো। "
  • ranjan roy | 24.97.136.159 | ২৯ অক্টোবর ২০১২ ০৬:০৮574616
  • কিন্তু বখ্তাবর সিংহ দেখলেন যে বুড়োবয়সের খাওয়াপরার জন্যে ঝগরু আর মঙ্গরুই যথেষ্ট। উনি আর ছেলেপুলের সংখ্যা বাড়াতে চাইলেন না।
    গল্পটা শুনে রূপ্পনবাবু খুব হাসলেন। দারোগাবাবু খুশি --- একটা চুটকি গপ্পেই রূপ্পনবাবু কাত। আর দরকার নেই। বাকি চুটকিগুলো অন্য লিডারদের হাসাতে কাজে লাগবে। হাসি ফুরোলে রূপ্পন বল্লেন,---" তো আপনি সেই বখ্তাবর সিংয়ের চেলা?"
    --" ছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে। কিন্তু এখন তো আমরা জনগণের সেবক। আমাদের গরীবের দুঃখকষ্টের ভাগ নিতে হবে। নাগরিকদের ---"।
    রূপ্পন দারোগার হাতে খোঁচা মেরে বললেন," ওসব ছাড়ুন, এখানে শুধু আপনি আর আমি, আপনার বক্তিমে শুনবে কে?"
    কিন্তু দারোগা দমার পাত্র ন'ন। বলতে লাগলেন," বলছিলাম কি আজাদীর আগের যুগে বখ্তাবর সিংয়ের চেলা ছিলাম। এ যুগে আপনার পিতাশ্রীর চেলা হয়েছি।"
    রূপ্পনবাবু সৌজন্য দেখিয়ে জবাব দিলেন," এটা আপনার মহত্ব, নইলে আমার বাবা এমন কি তালেবর?"
    এবার উনি গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন। রাস্তার দিকে চোখ যেতে বল্লেন," দেখুন তো,মনে হচ্ছে রামাধীন এদিকেই আসছে, আমি চলি। ওই ডাকাতির চিঠিটা একটু ভাল করে দেখে নেবেন কিন্তু।"

    রূপ্পনবাবুর বয়স আঠেরো। পড়ছেন ক্লাস টেন এ। পড়তে , বিশেষকরে ক্লাস টেন এ পড়তে উনি খুব ভালোবাসেন। তাই গত তিনবছর ধরে একই ক্লাসে রয়েছেন।
    উনি লোক্যাল নেতা। যাঁরা ভাবেন যে ইন্ডিয়াতে রাজনৈতিক নেতা হতে গেলে অনেক অভিজ্ঞ্তা ও পাকাচুল হওয়া দরকার, তাঁরা একবার রূপ্পনবাবুকে দেখুন,--- ভুল ভেঙে যাবে।
    ওনার নেতা, কারণ উনি সমদর্শী। সবাইকে একই চোখে দেখেন। এটাই ওনার ভিত্তি। ওনার চোখে থানার ভেতরে দারোগা আর লক্‌ আপের ভেতর চোর-- দুইই সমান।
    একই ভাবে, পরীক্ষায় টুকতে গিয়ে ধরা পড়া ছাত্র আর কলেজের প্রিন্সিপাল-- ওনার চোখে এক। উনি সবাইকে দয়ার পাত্র ভাবেন। সবার কাজে লাগেন, সবাইকে কাজে লাগান।
    লোকের চোখে ওনার স্থান এমন উঁচুতে যে পুঁজিবাদির প্রতীক দোকানদার ওনাকে জিনিস বেচে না, সমর্পণ করে। তেমনি শোষিতের প্রতীক টাঙ্গাওলা ওনাকে গাঁ থেকে শহরে পৌঁছে দিয়ে ভাড়া চায় না, আশীর্বাদ চায়। ওনার রাজনীতির হাতেখড়ির জায়গা ও রঙ্গমঞ্চ হল ওখানকার কলেজ। সেখানে একশ ছাত্র ওনার আঙুলের টুসকিতে তিল কে তাল বানাতে পারে , আবার দরকার হলে সেই তালগাছে চড়তেও পারে।
    উনি রোগাপাতলা, লম্বা গলা, লম্বাটে হাত-পা। কিন্তু লোকে ওনার সঙ্গে সহজে লাগতে চায় না।
    জনগণের নেতা হতে গেলে একটু উল্টোপাল্টা পোষাক দরকার বলে উনি ধুতির সঙ্গে রঙিন বুশশার্ট পরে গলায় রেশমি রুমাল বেঁধে ঘুরে বেড়ান। ধুতির কোঁচাটি আবার গলায় জড়ানো। দেখতে উনি একটা মরুটে বাছুরের মত, কিন্তু ঠ্যাকার যেন সামনের দু'পা তুলে চিঁহি করা ঘোড়া।
    উনি জন্ম থেকেই জনগণের নেতা, কারন ওর বাপও তাই। ওর বাপের নাম বৈদ্যজী।
    ------------------------------*******------------------------------
  • ranjan roy | 24.97.136.159 | ২৯ অক্টোবর ২০১২ ০৬:৪২574617
  • অধ্যায়-৩

    জেলা ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের ছেড়ে যাওয়া একটি ডাকবাংলা, তাতে গোটা দুই ছোটবড় কামরা। ওর পাশে গোটা তিন কাঁচা দেয়ালের মাথায় খাপরা লাগিয়ে তৈরি আস্তাবল।তার থেকে একটু দূরে পাকা ইঁটের দেয়ালের মাথায় টিন লাগিয়ে একটা দোকান-মতো। একপাশে রেল-ফটকের গুমটিঘরের মত কিছু। উল্টোদিকে একটা বড় বটগাছের নীচে শান-বাঁধানো কবরের মত। আস্তাবলের পাশে একটা নতুন ধরণের ঘর তোলা হয়েছে যার ওপর বড় বড় করে লিখে দেয়া--" সামুদায়িক মিলন কেন্দ্র, শিবপালগঞ্জ", অর্থাৎ কম্যুনিটি সেন্টার। এই বাড়িগুলোর পেছনদিকে তিন-চার একর পড়তি উষর জমি, তাতে দূব্বোঘাস লাগানো হয়েছে। কোথাও কোথাও ঘাস গজিয়ে উঠেছে।
    এইসব কাঁচাপাকা বাড়িঘর-আস্তাবল-গুমটিকে সম্মিলিত ভাবে বলা হয় " ছংগামল বিদ্যালয় ইন্টারমিডিয়েট কলেজ"।
    এখান থেকে যারা ইন্টারমিডিয়েট পাস করে বেরোয় তারা বিল্ডিং এর তুলনা করে গর্বের সঙ্গে বলতে পারে--- আমরা শান্তিনিকেতনের থেকেও এগিয়ে। আমরাই আসল ভারতীয় ছাত্র। আমরা জানিনা---- বিদ্যুত কী, কলের জল কী, পাকা মেজে কাকে বলে, স্যানিটারি ফিটিংস কী জিনিস। আমরা বিদেশি শিক্ষাও দেশি পদ্ধতিতে শিখেছি। তাই আমরা এখনো মাটির কাছাকাছি। এত পড়াশোনা করেও আমাদের হিসি গাছের গায়ে সহজে ঝরে পরে, বন্ধ বাথরুমে ঝরে না, মাথায় চড়ে।
  • ranjan roy | 24.96.162.186 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ০৬:৪৩574618
  • ছংগামল ভদ্দরলোক কোন একসময় ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। একটি জালি রেজোলুশন পাস করিয়ে উনি বোর্ডের ডাকবাংলোটা এই কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সম্পত্তি বানিয়ে দিলেন। তার আগে কলেজটার সম্পত্তি বলতে হাতে ছিল শুধু ওই ম্যানেজিং কমিটি। আর রেজোলুশনের শর্ত অনুযায়ী কলেজটার নাম হয়ে গেল ছংগামল বিদ্যালয়।
    কলেজটার প্রত্যেকটা বিল্ডিং এর আলাদা আলাদা ইতিহাস আছে। যেমন কমিউনিটি সেন্টার ভবন তৈরি হয়েছিল সরকারি পয়সায়, গ্রামসভার নামে আসা ফান্ড থেকে। কিন্তু ওটায় প্রিন্সিপালের অফিস আর ইলেভেন-টুয়েলভের ক্লাস চলে। আস্তাবলের মত দেখতে বাড়িটা গ্রামের লোকজনের শ্রমদানে গড়ে উঠেছে। টিনের শেডটা কোন মিলিটারি ছাউনির ভগ্নস্তুপ থেকে মাল ঝেড়ে এনে রাতারাতি দাঁড় করানো হয়েছে। লাঙলদেয়া উষর জমি কৃষিবিজ্ঞান পড়াতে কাজে লাগে। আর তাতে গজিয়ে ওঠা জোয়ারের দানা প্রিন্সিপালের পোষা মোষের কাজে লাগে। আমাদের দেশে ইঞ্জিনিয়র আর ডাক্তারের বড়ই অভাব। কারণ এই দেশের লোকজন বড্ড কবিস্বভাবের। কোন জিনিসকে ভাল করে বোঝার আগেই মুগ্ধ হয়ে কবিতা লিখে ফেলে। ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ দেখে ওদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে---" আহা! অঘটনঘটনপটু ঈশ্বর নিজের লীলা দেখাতে আবার ভারতভূমিকেই বেছে নিয়েছেন।"
    অপারেশন টেবিলে শোয়া যুবতীকে দেখেও ওরা বিদ্যাসুন্দর-গীতগোবিন্দ আওড়াতে পারে।
    কিন্তু সেন্টিমেন্টের এমন ঝঞ্ঝাবাতাসের মধ্যেও এদেশ থেকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়র জন্মায়।
    তবে তারা আসল ইঞ্জিনিয়র-ডাক্তার হবে আমেরিকা বা ইংল্যান্ড ঘুরে এলে। কিন্তু তার কিছু প্রারম্ভিক কাজকম্ম-- ওই টেক অফ্‌ স্টেজ আর কি--- এদেশেই হয়। সে জাতীয় কিছু কাজকম্ম এই "ছংগামল বিদ্যালয় ইন্টারকলেজ" ও করে যাচ্ছে।
  • ranjan roy | 24.96.162.186 | ০১ নভেম্বর ২০১২ ০৬:৫৯574619
  • ক্লাস নাইন। সায়েন্সের ক্লাস চলছে। মাস্টার মোতিরাম ছাত্রদের অপেক্ষিক ঘনত্ব বোঝাচ্ছেন। উনি একধরণের বি এস সি পাশ। বাইরে তখন এই ছোট্ট গাঁয়ের ছোটোলোকোমির অনুপ্রাসের ছটা ছেয়ে আছে। আখবোঝাই গরুর গাড়িগুলো চিনিকলের রাস্তায় এগিয়ে চলেছে। কিছু ক্ষয়াটে চেহারার ছোঁড়া পেছন থেকে টেনে টেনে আখ বের করে দৌড়ে পালাচ্ছে আর সামনে বসা গাড়ির গাড়োয়ানও টেনে গাল দিচ্ছে।
  • ranjan roy | 24.97.34.31 | ০৪ নভেম্বর ২০১২ ০০:১৫574620
  • গালাগালের আওয়াজ যত উঁচুতে ওঠে, তত তার সম্মান বাড়ে,-- উড়ন তুবড়ির মত। শেষে একটা গালি আকাশে অন্য গালির সঙ্গে কাটাকাটি খেলে জানলা দিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ করে। আজকেও তাই হচ্ছিল। ছেলেরা তামাশা দেখছিল আর সায়েন্স পড়ছিল।
    একটি ছেলে বলল, -- মাস্টারমশাই, আপেক্ষিক ঘনত্ব কাকে বলে?
    উনি বল্লেন--- আপেক্ষিক ঘনত্ব মানে রিলেটিভ ডেনসিটি।
    এবার অন্য একটি ছাত্র বলল,-- দেখুন, আপনি কিন্তু সায়েন্স ছেড়ে ইংরেজি পড়াচ্ছেন!
    মাস্টারসাহেব উবাচ-- সায়েন্স শালা ইংরেজি ছাড়া পড়ানো যায়?
    এবার ছেলের দল দাঁত বের করল। কারণ, হিন্দি-ইংরেজির দ্বন্দ্বযুদ্ধ নয়, মাস্টারমশাইয়ের মুখে "শালা" শব্দের ইডিয়মেটিক প্রয়োগ।
    -- এটা কোন হাসির কথা না।
    ছেলেদের বিশ্বাস হল না, ওরা আরও জোরে হেসে উঠল। এবার মোতিরাম মাস্টারও তাদের সঙ্গে হাসতে লাগলেন। ছেলেরা চুপ মেরে গেল।
    মাস্টার ওদের মাপ করে দিয়েছেন। বল্লেন,-- যদি রিলেটিভ ডেনসিটি বুঝতে না পারো, তো আপেক্ষিক ঘনত্বটা একটু অন্যভাবে বোঝার চেষ্টা করে দেখ। আপেক্ষিকের অর্থ -- অন্যের সঙ্গে তুলনা করে নিজের অবস্থা বোঝা। ধর, তুমি একটা গমপেষাইয়ের কল খুলেছ, আর তোমার ঘরের পাশে তোমার পড়শি আর একটা কল খুলেছে। তুমি হয়ত মাসে পাঁচশ টাকা আয় কর আর তোমার পড়শি চারশ'। তোমার লাভ ওর তুলনায় বেশি হল। একেই সায়েন্সের ভাষায় বলে তোমার আপেক্ষিক লাভ বেশি। বুঝেছ?
    একটি ছেলে বলে উঠল,-- বুঝতে পেরেছি মাস্টারমশায়, কিন্তু আপনার যে গোড়ায় গলদ। এ গাঁয়ে কেউই গমপেষাইয়ের দোকান চালিয়ে মাসে পাঁচশ রোজগার করতে পারবে না।
    মোতিরাম মাস্টার টেবিল চাপড়ে বল্লেন--- কেন পারবে না? মানুষ চাইলে কি না পারে?
    ছেলেটার এই কথায় আর কথা বলার কায়দায় একটুও হেলদোল হল না। বলল,--- কিচ্ছু পারে না। আমার কাকার গমপেষাই মেশিন হুড়ুম-দুড়ুম করে সারাদিন চলতে থাকে। কিন্তু কাকার মাসের আয় মাত্র দু'শ টাকা।
    --- কে তোমার কাকা?
    মোতিরাম মাস্টারের গলা যেন ঘামে ভিজে গে্ল। উনি ছেলেটাকে ভাল করে দেখতে দেখতে বলে উঠলেন,--- তুমি ওই বেইমান-মুন্নুর ভাইপো' নাকি?
  • ranjan roy | 24.97.34.31 | ০৪ নভেম্বর ২০১২ ০০:৩৬574621
  • ছেলেটা অহংকার লুকোনোর কোন চেষ্টা করল না। যেন কিছু যায় আসে না এমনি ভঙ্গিতে জবাব দিল,--- আমি নয়ত কে?
    বেইমান-মুন্নু ওনার গাঁয়ের প্রতিশ্ঠিত নাগরিক। যদিও গোলাপ ফুলে নামমাত্র গন্ধ হয়, তবু ইংরেজি সাহিত্য বলে যে গোলাপকে যে নামেই ডাক না কেন, ও আগের মতই সুগন্ধ ছড়াবে। তেমনি ওনাকে যে কোন নামেই ডাকা হোক , বেইমান-মুন্নু আগের মতই নির্বিকার চিত্তে আটা পিষতে থাকবেন, পয়সা কামাতে থাকবেন আর সম্মানিত নাগরিক হয়ে টিঁকে থাকবেন।
    তবে সত্যের খাতির এটুকু বলতেই হবে যে "বেইমান-মুন্নু' জনগণের দেয়া নাম নয়, পারিবারিক সূত্রে পাওয়া। ওনার বাপু ছোটবেলায় অতি-আহ্লাদে ওনাকে বেইমান বলে ডাকতো আর ওর মা আদর করে মুন্নু। ফলে দুটো জুড়ে ওর নাম হয়ে গেল "বেইমান-মুন্নু"।
    ইদানীং গোটা গাঁ ওকে বেইমান-মুন্নু বলে ডাকে। আর উনি বড় সহজভাবে এই উপনামকে স্বীকার করে নিয়েছেন, যেমন আমরা অনায়াসে আচার্য্য জে বি কৃপলানীকে "আচার্য্যজী", জে এল নেহরুকে "পন্ডিতজী" আর গান্ধীকে "মহাত্মাজী" করে নিয়েছি।
    মোতিরাম মাস্টার খানিকক্ষণ বেইমান-মুন্নুর ভাইপোর দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে রইলেন, তারপর নিঃশ্বাস ছেড়ে বল্লেন,--- যেতে দাও।
  • ranjan roy | 24.97.134.185 | ০৪ নভেম্বর ২০১২ ২০:৩১574622
  • তারপর উনি বইয়ের খোলা পাতায় চোখ রাখলেন। একটু পড়ে যখন চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেলেন ছেলের দল অনেকক্ষণ ধরে ওনার দিকেই তাকিয়ে আছে। উনি জিগাইলেন," কি ব্যাপার"?
    একটি ছেলে বলল," তো এটাই বোঝা গেল যে গম পিষে মাসে পাঁচশ টাকা ঘরে আসে না।"
    " কে বলেছে?", মাস্টারমশাই বলে চললেন," আমি নিজে গম পিষিয়ে মাসে সাত-সাতশ' টাকা পেয়েছি। কিন্তু বেইমান-মুন্নুর ঠ্যালায় সব ভোগে গেছে।"
    বেইমান-মুন্নুর ভাইপো বেশ ভদ্রভাবে বলল," এত হা-হুতাশ করার কি আছে? এটা বিজনেস। কখনো আসে কখনো যায়। কম্পিটিশনে এ'রম হতেই পারে।"
    " সৎ ও বেইমানের মধ্যে কিসের কম্পিটিশন? কি যে ফালতু বকবক কর?" মোতিরাম মাস্টার ধমকে উঠলেন। এমন সময় কলেজের চাপরাশি ওনার কাছে একটা নোটিস ধরিয়ে দিল। উনি পড়তে পড়তে বিড়বিড় করতে লাগলেন," যাকেই দেখ , একটা কিছু এনে পড়ে দিতে বলবে। পড়তে পারে একজন, তো পড়াতে চায় দশজন।"
    একটা চ্যাংড়া বলল, " ঘোর অন্যায়!"
    উনি চমকে উঠলেন, " কে বলল রে?"
    একটা ছেলে হাত তুলল," আমি মাস্টারমশাই! জিগ্যেস করছিলাম, আপেক্ষিক ঘনত্ব কি করে বের করতে হয়?"
    মোতিরাম মাস্টার উবাচ, " আপেক্ষিক ঘনত্ব বের করতে হলে বস্তুটির ওজন এবং আয়তন মানে ভল্যুম জানতে হবে--- তারপর আপেক্ষিক ঘনত্ব বের করার কায়দা বা পদ্ধতি জানতে হবে। পদ্ধতির কথা শুধোলে বলব ---যেকোন জিনিসের দুটো পদ্ধতি হয়। একটা সঠিক, অন্যটা বেঠিক। সঠিক পদ্ধতিতে ঠিক ফল পাওয়া যায় আর বেঠিক পদ্ধতিতে ভুল । একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা সহজে বুঝতে পারবে। ধর তুমি একটা গমপেষাইয়ের মেশিন বসিয়েছ। নতুন মেশিন, গ্রিজ-টিজ লাগিয়ে একেবারে ঝকঝক করছে। ইঞ্জিন
  • ranjan roy | 24.97.134.185 | ০৪ নভেম্বর ২০১২ ২১:০৬574624
  • ইঞ্জিন নতুন, বেল্ট নতুন। সবকিছু আছে, কিন্তু কারেন্ট নেই। তো ফল কি হবে?"
    প্রথমে কথা বলেছিল যে ছোকরা, সে বলল," তখন ডিজেল ইঞ্জিন লাগাতে হবে, মুন্নুচাচা তাই করেছিল।"
    মোতিরাম মাস্টার বল্লেন," একলা মুন্নুচাচার মাথাতেই ঘিলু আছে নাকি? এ গাঁয়ে সবার আগে ডিজল ইঞ্জিন কে এনেছিল? কেউ বলতে পারবে?"
    ছেলের দল হাত তুলে কোরাস গাইল, " আপনি স্যার ,আপনি"
    স্যার এবার প্রসন্নচিত্ত হয়ে মুন্নুর ভাইপোকে বল্লেন," শুনলে তো! বেইমান-মুন্নু আমার দেখাদেখি ডিজল ইঞ্জিন লাগালো বটে, কিন্তু আমার গমপেষা কল তো কলেজ শুরু হওয়ার আগের থেকে চলছে। আমার কল থেকেই গম পেষাতে আসা গ্রাহকদের থেকে কলেজ খোলার জন্যে সের-সের আটা দান নেয়া হয়েছিল। আমার মেশিনে পিষেই সেগুলো আটা হয়ে শহরে বিক্রি হতে গেল। আমার গমপেষাই কলের পাশে বসেই কলেজের বিল্ডিংয়ের নকশা তৈরি হল আর ম্যানেজার কাকা বল্লেন,' মোতি, কলেজে তুমি মাস্টার হবে, কিন্তু আসল প্রিন্সিপালগিরি তোমাকেই করতে হবে।' সব কিছু আমার কলঘরে হল আর এখন গাঁয়ে গমপেষা কল বলতে বেইমান-মুন্নুর! আমার কলটা যেন কিছুই না!"
    ছেলের দল মন দিয়ে শুনছিল। এই কথকতা এরা আগেও অনেকবার শুনেছে, এবং যেকোনো সময় শোনার জন্যে তৈরি আছে। ওদের আর এই নিয়ে কোন হেলদোল হয় না। তবে মুন্নুর ভাইপো বলল," চিজ তো আপনার বেশ ভাল, মাস্টারমশাই। আর মুন্নুচাচারটাও খাসা। তবে আপনার ধান-কুট্টিটার ওভারহলিং দরকার। ধান বড্ড ভেঙে যায়।"
    মোতিরাম মাস্টার নরম সুরে বললেন," এমন কিছু নয়। আমার মত ধান-কুট্টি মেশিন গোটা তল্লাটে নেই। কিন্তু বেইমান-মুন্নু ধানকোটা -- গমপেষার রেট সমানে কমিয়ে দিচ্ছে, তাই লোক ওদিকে চলে যাচ্ছে। সব হিন্দুস্থানীরই এক অবস্থা, কোথাও দু'পয়সা শস্তা দেখলেই পাগলের মত দৌড়ুবে।"
    " এতো সব জায়গাতেই হয়", ছেলেটা তর্ক জুড়ল।
    " মোটেই না, শুধু এদেশেই হয়। তবে ও রেট কমানোর লোকসানটা ওজনে মেরে পুষিয়ে নেয়।
    আর মোতিরাম মাস্টার আর যাই করুক, ওই কম্মটি কখনো করবে না।"
    একটা ছেলে জিগ্যেস করল," তো আপেক্ষিক ঘনত্ব বের করতে গেলে কি করতে হবে?"
    উনি ঝটপট বললেন, " তাই তো বলছিলাম!"
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন