এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আমার টিউশানির গল্পসমূহ

    Abhyu
    অন্যান্য | ১০ মার্চ ২০১৩ | ৫৭৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ব্যাং | 132.167.126.86 | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ১৮:৫১586921
  • টেনে একটা চড় কষাতে হয় এই সময়ে। কিন্তু চিরটাকাল দেখে আসছি, সবচেয়ে খারাপ সময়গুলোতে আমার হাসি পেয়ে যায়। সারা জীবন ধরে এই হাসি পাওয়ার রোগের জন্য কত যে ভুগতে হল!

    ফ্যাক করে হেসে ফেললাম। ছাত্রটি মোটেও খুশি হল না, এহেন কথায় দিদিমণিটিকে হাসতে দেখে।
    এবার সে ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করল, আপনার কাছে আমি পড়ব না।
    কেন? আমার পড়ানো তুমি বুঝতে পার না?
    আমি মেয়েদের কাছে পড়তে চাই না।
    সে তো তুমি ছেলেদের কাছেও পড়তে চাও না। এর আগে যে দাদা তোমাকে পড়াতে এসেছিলেন, তার কাছেও তো পড়তে চাও নি।
    আবার তার মুখে একটু হাসি খেলে, উনি আমাকে ঠিক ম্যানেজ করতে পারতেন না।
    তাই? কেন পারতেন না?
    আমি যাই করতাম, সবটাতেই রেগে যেতেন, আর ভয় দেখাতেন শাস্তি দেবেন বলে, মায়ের কাছে বলে দেবেন বলে।
    তাতে কী হল? সত্যি করে তো শাস্তি দিতেন না, মায়ের কাছেও তো বলতেন না। তাহলে ওনার কাছে পড়লে না কেন?
    সে তো উনি এইদুটোকে ভয় পেতেন বলে সত্যি করে কিছু করতেন না। এদুটো না থাকলে কি উনি আমাকে ছেড়ে দিতেন!

    আবার, আবার এই কথা শুনে এরকম একটা বিতিকিচ্ছিরি মুহুর্তে আমার হাসি পেয়ে গেল।
  • ব্যাং | 132.167.126.86 | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ১৯:০৫586922
  • আপনি এত হাসেন কেন?
    খাতাটা আমি খুলে দিয়েছি, তুমি পেনটা কি হাতে ধরবে? না আমি তোমার স্কুলের খাতায় আমার হাতেরলেখায় লিখে দেব?
    লিখছি তো!
    কুকুরগুলোর পিঠ চুলকে লাভ নেই। ওদের এত ট্রেনিং করিয়েছ যে ওরা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে, ঐ দ্যাখো! আরে ও কী ওদের অমন পেন দিয়ে খোঁচা মারছ কেন? ওদের উপর অত রাগের কী হল?
  • ব্যাং | 132.167.126.86 | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ১৯:১৮586923
  • আজকে ওদের ঘুমিয়ে নিতে দাও, পরের দিন ওদের আরো ভালো করে ট্রেনিং দিও, কেমন? এখন চটপট এইগুলো লিখে ফ্যালো তো দেখি!!

    কী হল! অমন রাগ রাগ মুখ কেন? শোনো, বেশিদিনের পোষা কুকুর হলে তারা তো মানুষ চিনতে শিখে যায়, তাই ভালো লোকদের বেশি কামড়ায় না। হি হি হি। ওদের দিয়ে তোমার বেশি লাভ হবে না। তুমি অরণ্যদেবের মত নেকড়ে পুষে দেখতে পারো তো! হি হি হি। নেকড়ে হলে দিদিমণিকে কামড়াবেই কামড়াবে, দেখে নিও আমার কথা মিলিয়ে!! হি হি হি।
    এবার ছাত্রও হেসে ফেলে হ্যা হ্যা করে।

    গল্পের আর বিশেষ কিছু বাকি নেই। অরণ্যদেবের নামের ম্যাজিক আগেও দেখেছি, এবারও দেখলাম। প্রবল পরাক্রমী শত্রু থেকে শুরু করে ঠ্যাঁটা ছাত্র সবাই বশ হয়ে যায় ঐ মড়ার খুলির আংটির ছাপের কথা মনে করে। এবারও হল। পরের তিন বছর সে বেশ খুশিমনেই পড়তে বসত। কখনো কখনো পুরনো স্বপনকুমারের সাপ্লাই দিত।
  • ব্যাং | 132.167.126.86 | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ১৯:১৯586924
  • শেষ।।।
  • Abhyu | 107.89.23.207 | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ১৯:৫২586925
  • খুব ভালো লাগল। ব্যাংদি তোমার তো আরো গল্প আছে টিউশানির। ভাটে অল্প অল্প বলেছিলে। সেইগুলোও লেখো না?
  • Abhyu | 85.137.0.58 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১১:২৮586926
  • আর এটাও।
  • Abhyu | 34.181.4.209 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১১:২৩586927
  • এটাতে আরো গল্প দরকার।
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ০৪ মে ২০১৪ ০১:১৪586928
  • ও ব্যাঙদি? অন্যরা? কুমুদি কখনো টিউশানি পড়েননি/পড়াননি?
  • byaang | 122.79.39.47 | ০৪ মে ২০১৪ ০৪:৪৩586929
  • এই টইয়ের সুর-তাল কেটে দেওয়া একটা টিউশনির গল্প লিখব? চোখের কোনা শিরশির করা গল্প? হ্যাঁ অভ্যু?
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ০৪ মে ২০১৪ ০৪:৫৬586931
  • লেখো না।
  • Ekak | 24.96.248.77 | ০৪ মে ২০১৪ ০৫:২৪586932
  • কোই কোই ব্যাং আন্টি র গপ্প কোই ?
  • | ০৪ মে ২০১৪ ১০:৪৮586933
  • লেখো ব্যাঙ।
  • byaang | 120.224.221.99 | ০৪ মে ২০১৪ ১৬:১৮586934
  • লেখা শুরু করার আগে একটা অনুরোধ। এই লেখা পড়ে মানুষটিকে চেনা গেলে বা আমি কোন কলেজে পড়েছি জানা থাকলেও দয়া করে এই টইয়ে সেসব ডিটেল লিখবেন না বা জিজ্ঞেস করবেন না। এখানের কেউ কেউ হয়তো মানুষটিকে চিনতে পারেন, তবু ওনার পরিচয় নিয়ে খোলাপাতায় আলোচনা একদম চাই না।
  • byaang | 120.224.221.99 | ০৪ মে ২০১৪ ১৭:৪৮586935
  • আমাদের ইস্কুলে এগারো-বারো ক্লাস ছিল না, তাই এগারো ক্লাসে এক কলেজে ভর্তি হই। ভর্তি হয়েই নতুন এক সাবজেক্টের মুখোমুখি। অতএব টিউশন পড়া ছাড়া গতি নেই। ক্লাসের গুটিকয়েক ছাত্রছাত্রী মিলে ঐ সাবজেক্টটি যিনি পড়ান, তাঁর বাড়ি গিয়ে টিউশন পড়ার আব্দার রাখলাম। বিনা আয়াসেই আব্দার মঞ্জুর হয়ে গেল। স্যার রাজি হয়ে গেলেন আমাদের কয়েকজনকে পড়াতে। পরের মাস থেকে প্রতি রবিবার দুপুরবেলা তিনটে নাগাদ ওনার বাড়ি পড়তে যাব।

    পড়তে যাওয়া শুরু হওয়ার আগে কলেজে তো রোজই ওনার ক্লাস থাকে। সবে স্কুল পেরিয়ে কলেজে ঢুকেছি তখন, ক্লাস কাটা ইত্যাদিতে ততটা অভ্যস্ত হই নি। ওনার ক্লাসে পড়ানোটা ভালো ই লাগত। খুব ডিটেলে বোঝাতেন। মন দিয়ে সেই পড়া শুনলে টিউশন পড়ার দরকার হয় না। কিন্তু যে ক্লাসে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা একশোরও বেশি, সে ক্লাসের সব্বাইকে পড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখা রীতিমত চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। স্যার ঐ চ্যালেঞ্জটি ছুঁতে পারলেন না। ফলে আমরাও কিছুদিনে মধ্যে ছাড়া গরুর মতন আচরণ করতে লাগলাম, এবং ওনার পিরিয়ডটিকে একটি গোয়াল বানিয়ে তুলতে দেরি করলাম না। ওনার ক্লাসে যা ইচ্ছে করা যায়, ডেস্কের উপরে পা তুলে বসা যায়, পকেট রেডিওতে ফুল ভলিউমে ক্রিকেট কমেন্ট্রি চালিয়ে রাখা যায়, ক্লাসে নেড়িকুকুর ডেকে এনে রুটি খাওয়ানো যায়। ওনার ক্লাসে সবই চলে। মাড়োয়ারি ছেলেরা বলে "ছোড় ইয়ার, চলতা হ্যায়", বাঙালীরা বলে, "ক্যাবলাটা ডিজার্ভ করে।"

    র‌্যাগিংয়ে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠতে লাগলাম ঐ ষোলসতেরোবছর বয়সেই। র‌্যাগিং কি আর শুধু সিনিয়ররা জুনিয়রদের করে! নরম মাটি দেখলেই আঁচড়াতে হয় আর নরম মানুষ দেখলেই তাকে র‌্যাগিং করতে হয়। ইয়ার্কির নামে সব চলে। একদিন সকালে ক্লাসে এসে দেখা গেল - বিশাল দেওয়ালজোড়া ব্ল্যাকবোর্ডের একদম উপরে ডানকোনায় কে লিখে রেখেছে "নাচ মেরে (স্যারের নাম) কি পয়সা মিলেগা" পাশে একট ক্লাউনের ছবি আঁকা। মাধ্যমিকে বিশাল বিশাল নম্বর পেয়ে পড়তে আসা ছেলেমেয়েদের কারুর ইচ্ছে হয় না স্যার আসার আগেই বোর্ডটা মুছে দেওয়ার। সবাই হাসি চেপে অপেক্ষা করতে থাকে হাসির নাটক দেখার জন্য। কারুর মুখে ভয়ের বা লজ্জার লেশমাত্র নেই।

    স্যার আসেন। রোলকল করেন। রোলকল শেষ হলে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে এগিয়ে যান। পুরো ক্লাস ধৈর্য্য ধরে হাসি চেপে রাখে। স্যার ব্ল্যাকবোর্ডের বাঁদিক থেকে লেখা শুরু করে ডানদিকে যখন পৌঁছান, ছাত্রছাত্রীদের শিল্পকর্মটি দেখে থমকে দাঁড়ান। পুরো ক্লাস অট্টহাস্যে ভেঙে পড়ে। স্যারের কানে সেই হাসির আওয়াজ কতদিন ধরে বেজেছিল জানি না। আমাদের কারুর কারুর কানে আজও সেই আওয়াজ বাজে। স্যার শুধু একটি ছেলেকে (ধরে নেওয়া যাক তার নাম জয়, যারা স্যারের বাড়ি গিয়ে টিউশন পড়বে ঠিক করেছিল, তাদের একজন) ডেকে বলেন বোর্ডটা মুছে দিতে। বকেনও না, রাগেনও না, ক্লাস ছেড়ে বেরিয়েও যান না, প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে নালিশও করেন না।

    এইভাবে প্রথম মাসের মধ্যেই জেনে যাই, এনার সঙ্গে যা ইচ্ছে করা যায়, এনাকে যত খুশি আঘাত করা যায়, প্রত্যাঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

    পরের মাসের প্রথম রোববার ঠিকানা খুঁজে পড়তে যাওয়া হল স্যারের বাড়ি। ছোট্ট সংসার। নতুন সংসার। স্যারের এক বছরের ছেলে, স্যারের মিষ্টি বউ আর এক অতিবৃদ্ধা কাজের মাসি। স্যারের বউ কাছেই একটি গার্লস স্কুলে পড়ান। আমরা পড়তে গেলে আমাদের মিষ্টি খেতে দিলেন। স্যার পড়াতেন ছবির মতন। মুক্তোর মতন হাতের লেখায় যখন নোটস লিখতেন আমাদের খাতায়, সেই খাতা আর তাতে লেখা টু দা পয়েন্ট উত্তর, সংগ্রহে রাখার মতই জিনিস ছিল। পরে সেই খাতার জোরেই আমি নিজে কিছু ছাত্র পড়িয়েছি। যাই হোক স্যারের কথায় ফিরে আসি। মানুষটা ছিলেন অসম্ভবরকমের ভালো, প্রচন্ড চক্ষুলজ্জা আর সর্বংসহা। তা নয়তো ওনার সঙ্গে আমরা যা করেছিলাম, তা সহ্য করার কথা না। উনি ভাবটা এমন করতেন, যে আমরা কী কী বদামি করছি, তার কিছুই টের পাচ্ছেন না। কিন্তু তাই কি কখনো হয়! উনি যাতে টের পান, বিরক্ত হন, অসুবিধেয় পড়েন, তার জন্য তো আমরা কম চেষ্টা করতাম না। বিখ্যাত কলেজের কৃতী ছাত্র ছিলেন উনি, একদম বুদ্ধিশুদ্ধি না থাকলে আর কী করে অতদূর লেখাপড়া করেছেন! আজ একথা লিখছি বটে, কিন্তু ঐ বয়সে এটাই বিশ্বাস করতে স্বস্তি পেতাম, যে উনি এতটাই বোকা যে কিছুই বুঝছেন না। এই ভেবে অত্যাচারের মাত্রাটা আরো বাড়িয়ে দিতাম।

    কীরকম অত্যাচার! ধরুন, আমাদের পড়ার সময় রোববার দুপুর তিনটে থেকে। কিন্তু আমরা কয়েকজন প্ল্যান করে রোব্বার দুপুর দেড়টার সময় হাজির হলাম। হাজির হয়ে ঘরে বসে সেখানেই থেমে গেলাম না কিন্তু। স্যার হয়তো আমাদের দরজা খুলে দিয়ে বললেন, "তোমরা ছোট বেডরুমটায় বস, আওয়াজ কোরো না, বাপটু এক্ষুনি ঘুমিয়েছে পাশের বেডরুমে, উঠে না যায়!" বলে স্যার হয়তো বাথরুমে গেছেন আসন্ন দিবানিদ্রা তাড়ানোর জন্য চোখেমুখে জল দিতে, ততক্ষণে জয় স্যারের এক বছরের ছেলে বাপটুর খেলনা ড্রামটা গলায় পরে ধুম ধুম করে বাজাতে আরম্ভ করেছে। আর ছোট্ট বাপটু সেই ঢাকের আওয়াজ কানে যাওয়ামাত্রই তার ঢাক কে নিয়ে নিল সেই দুশ্চিন্তায় আকুল হয়ে কাঁদতে কাঁদতে এই ঘরে টলমল পায়ে দৌড়ে এসেছে। ফলে স্যারের বিশ্রাম, স্যারের বৌয়ের বিশ্রাম, সর্বোপরি অতটুকু ছেলের বিশ্রাম সব কিছুর দফারফা করে দিই আমরা। কিন্তু স্যার সব দেখেও আমাদের কড়া গলায় বকেন না, আমাদের বার করে দেন না, শুধু বলেন "কী জয়? লোভ সামলাতে পার নি? খেলনা দেখে হাত না দিয়ে থাকতে পার নি, তাই না?" বলে হাসেন। কথায় বলে ভাগ্যদেবী শুধু সাহসীদেরই সহায় হন। কিন্তু এমন ভীতু স্যারের সহায় কে হবে? ভাগ্যদেবী তো হনই না, ভগবানও বোধ হয় হন না। তাহলে আমাদেরই বা কীসের দায় পড়েছে!

    স্যার যখন পড়ান, তখন কিন্তু একদম নীরবতা নেমে আসে। আমাদের মনের প্রশ্নগুলো কীভাবে বুঝে নিয়ে নিজেই সবকিছু ব্যাখ্যা করে লিখে দেন আমাদের খাতায়, ফলে আমরা কথা বলার স্কোপও পাই না। তখন ঘরে একদম অন্যরকম পরিবেশ। পড়াশুনো নিয়ে মগ্ন মানুষটা শুধু কীভাবে নিজের পড়ানোটা আরো প্রাঞ্জল করা যায়, সেই চেষ্টা করে যান, আর আমরাও যতটা সম্ভব শুষে নিতে থাকি।

    এইভাবে একবছর পেরিয়ে যায়। দ্বিতীয়বছর থেকে আরো কয়েকটি অন্যান্য স্কুলকলেজের ছেলে আমাদের টিউশনের ব্যাচে এসে ভর্তি হয়। কয়েকদিনের মধ্যে দেখা গেল তারা আমাদের থেকেও কয়েক কাঠি সরেস। একদিন স্যার কাঁচুমাঁচু মুখে বলেন, "শোনো আমার বারোশোমতন টাকা হারিয়েছে, তোমরা কেউ দেখেছ?" আমরা তো সবাই মিলে আকাশটাকাশ থেকে পড়েটড়ে কেন ঐ টাকার হিসেব রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তার হিসেব দিলাম। মনে মনে সবাইই জানলাম এ ব্যাচে আসা নতুন ছেলে রজতের কাজ। রজতকে কয়েকদিন আগেই আমরা দেখেছি স্যারের ছেলে যে স্টিলের বাটি থেকে মুড়ি খাচ্ছিল, সেই স্টিলের বাটিটা নিজের ব্যাগে ঢোকাতে। কিন্তু আমরা না দেখার ভান করেছি কেউ কেউ, কেউ কেউ মজা পেয়েছি, রজতকে চোখ টিপেছি, যেন ভারি একটা রসিকতা হচ্ছে। কিন্তু স্যারকে কেউ কিচ্ছু বলি নি। ছিঃ এই বুড়ো বয়সে বন্ধুর নামে স্যারের কাছে নালিশ করব নাকি?

    দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা মাস কেটে যায়। শীতকাল এসে যায়। সামনেই টেস্ট পরীক্ষা, আর তারপর কলেজ বন্ধ, টিউশনও বন্ধ। স্যার পুরো সিলেবাস শেষ করে দিয়েছেন, বার তিনেক রিভিশন করিয়েছেন, সাজেশনও দিয়েছেন দুটো। এরপর রেগুলার টিউশন ক্লাস বন্ধ, তবে কেউ কোথাও আটকে গেলে স্যারের বাড়ির দরজা সবসময় খোলা। যখন খুশি সে এসে পড়া বুঝে যেতে পারে। টেস্ট পরীক্ষার ঠিক আগে স্যার বললেন, "টেস্ট হয়ে গেলে, সবাই মিলে আসবে রবিবার সকালবেলায়। এখানেই খাওয়াদাওয়া করবে, আমাদের পিকনিক হবে। তোমাদের বৌদি রাঁধবেন। আর আমি সেদিন তোমাদের এইচেসের জন্য ফাইনাল সাজেশন দেব।"

    সবাই মিলে গেলাম। স্যারের বৌ অতজনের জন্য মাংসভাত রাঁধতে নাজেহাল হচ্ছিলেন, গলদঘর্ম হয়ে যতটা সম্ভব আমাদের আদরযত্ন করছিলেন। খাওয়াদাওয়া হয়ে গেলে স্যারকে বলা হল, "স্যার একটু গড়িয়ে নিন আপনি, আমরা এই ঘরে আড্ডা দিই, এরপরে আবার কবে আমাদের দেখা হয় না হয়! আমাদের হয়ে গেলে আমরা কাজের মাসীকে বলে চলে যাব। আপনি চিন্তা করবেন না।" স্যারকে ভারি নিশ্চিন্ত করে আমরা আড্ডা দিতে লাগলাম। এমন সময় রজত স্যারের আলনা থেকে তুলে একটা খুব সুন্দর মনিপুরী চাদর গায়ে জড়াল। তার উপর চাপা দিল নিজের কাশ্মিরি শাল। উপর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে দুটো চাদর জড়িয়ে আছে, কয়েকেজন মিনমিন করে আপত্তি করলাম, "ছি ছি এটা করিস না। জামাকাপড় ঝাড়িস না।" বাকিদের সহাস্য সমর্থনে আপত্তি কোথায় তলিয়ে গেল। আড্ডা শেষ হলে রজত বলল, "আরে তোরা এগো! আমি চাদরটা রেখে আসাছি! তোরা কি ভেবেছিলি আমি সত্যিই চাদরটা ঝেড়ে দেব?"

    ততক্ষণে বিদায় নেওয়ার পালা শুরু হয়েছে, কে তখন রজতের চুরি করার মানসিকতা ইত্যাদি নিয়ে মাথা ঘামায়, ফলে সবাই মিলে হাসাহাসি করতে করতে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম, সেখানে আরেকপ্রস্থ আড্ডার পরে যখন বাসে উঠছি, ততক্ষণে রজত আর মৈনাক বাস্স্টপে পৌঁছেছে। চেঁচিয়ে বলল "স্যারের পাড়ার ভিডিও-ওয়ালাকে বলে স্যারের বাড়ি চব্বিশ ঘন্টার জন্য একটা ভিসিআর আর পাঁচটা ক্যাসেট পাঠিয়ে দিলাম। স্যার যা চমকানো চমকাবে না!"

    ওদের সঙ্গে সেই শেষ দেখা।

    স্যারের সঙ্গে আরো একবার দেখা হয়েছিল। তার বছর বারো পরে। স্যারের বাড়িতে। স্যার আমাকে দেখে চিনতে পারেন নি। স্যারের চোখের ঘোলাটে হিংস্র দৃষ্টি দেখে আমিও স্যারকে চিনতে পারি নি। স্যারের মিষ্টি সুন্দরী বৌয়ের চোখ বসে যাওয়া গালভাঙা মুখটা দেখেও চিনতে পারি নি। বাপটু তখন বছর তেরোচোদ্দর এক গোমড়ামুখো রোগা বালক, তাকে দেখেও চিনতে পারি নি। স্যারের আমাদের কলেজের চাকরিটা তখনও কাগজেকলমে থেকে থাকলেও স্যার আর যেতে পারেন না। স্যারের বৌ আজও সেই ইস্কুল্টাতেই পড়ান আর বাড়িতে কিছু মেয়েকে টিউশন পড়ান। বলেছিলেন "আরো অনেক বেশি ছাত্রী পেতাম, তোমার স্যারকে ভয় পায় বলে, অনেকের বাবামারা পাঠাতে চায় না।"

    বোঝো কান্ড! স্যারকে ভয় পায় স্যারের বৌয়ের টিউশনের ছাত্রীরা। অথচ সময় থাকতে স্যারের নিজের টিউশনের ছাত্রছাত্রীরা যদি স্যারকে ভয় পেত, তাহলে হয়তো!

    ফিরে এসে এক বন্ধুকে বলেছিলাম স্যারের কথা, স্যারের সংসারের কথা। সে বলল "এবাবা, তাই নাকি রে! এইসব মানসিক রোগের চিকিত্সার তো খুব খরচা, ওষুধবিষুধের খুব দাম। স্যারের বৌকে কিছুটা টাকা দিয়ে আসতে পারতিস! আহা রে, স্কুলের মাইনেয় কী করে ছেলের পড়ার খরচ, সংসার খরচ তার উপর এই চিকিত্সার খরচ চালাবেন উনি?"

    পরে বহুবার ভেবেছিলাম, আরো একবার যাব ওনার বাড়ি। স্যারের বৌকে বলব, ওনার পাশে আছি। আজ অব্দি যাওয়ার মতন, সেই সংসারে গিয়ে আরেকবার দাঁড়ানোর মতন সাহস জুটিয়ে উঠতে পারি নি।
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ০৪ মে ২০১৪ ২০:৩৭586936
  • দুঃখের ঘটনা :(
  • | ০৪ মে ২০১৪ ২০:৫৩586937
  • ইশশশ!

    কিন্তু চুরি করতে দেখেও এতগুলো ছেলেমেয়ে চুপ করে রইল!!! এইটাই সবচেয়ে আশ্চর্য্য লাগছে আমার। :'(
  • Ekak | 24.99.234.208 | ০৪ মে ২০১৪ ২০:৫৮586938
  • খারাপ লাগলো স্যারের কথা ভেবে । ফিরে যাওয়া যায় না ? একটাই তো জীবন । আগে নেই পরে নেই । কোথাও ভুলচুক থাকলে ফিরে তাকাতে .........জানি বলা সহজ করা নয় । তবু
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ০৪ মে ২০১৪ ২১:১৩586939
  • অন্য রকম গল্পও হয়। এক জন মাস্টার মশাই রিটায়ার করার পরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পেনশন ছিল না, রিটায়ারমেন্টের টাকায় বাড়ি বানিয়েছিলেন। ছাত্ররা ইগ্রুপ করে, ইমেল করে ওনাকে নানা ভাবে সাহায্য করেছিল। এমনকি উনি চলে যাবার পরেও ওনার স্ত্রীর খবর নিত কেউ কেউ। ব্যাংদি ভেবে দেখতে পারো।

    যাক অন্য গল্প বলি। আমরা পড়তে যেতাম সত্য স্যারের বাড়ি। একদিন রবিবারে দুপুর দুটোয় পড়তে যাবার কথা (অন্যদিন চারটেয় হয়) গিয়ে দেখি গেটে তালা। সুতরাং কলিং বেল বাজাবার উপায়ও নেই। ফিরে এলাম। চারটের সময় গিয়ে দেখি ঘটক বলে একটা মেয়ে বসে বসে অঙ্ক করছে। স্যার বললেন তোরা ছেলেরা কোনো কাজের না। দ্যাখ মৌমিতা কেমন পাঁচিল টপকে এসে আমাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে পড়তে বসে গেছে।
  • pi | 24.139.209.3 | ০৪ মে ২০১৪ ২১:৪৫586940
  • খারাপ লাগলো পড়ে। সত্যিই কি আর কিছু করা যায়না ? আর শুধু এই ঘটনার জন্যেই এরকম হয়েছে, তা তো নাও হতে পারে। সে যাই হোক না কেন, এখনো ঐ অভ্যু বা একক যা বললো, সেটা করা গেলে ভাল হত। অবশ্যই এটা বলা সোজা, করতে গেলে অনেক অসুবিধা থাকতে পারে।
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ০৪ মে ২০১৪ ২৩:১৫586942
  • এই গল্পটা আগেও বলেছি বোধহয়। চিন্ময় স্যারের বাড়িতে আমরা ইংরেজী পড়তে গেছি। উনি কিছু ট্রান্সলেশন করতে গিয়ে বাইরে গেছেন। একটা জিনিস আমরা কেউই ঠিক সুবিধে করতে পারছি না। শেষে সন্দীপ বলল - ধূর আমিই যদি সব করব তো স্যার কি করবেন?
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ০৪ মে ২০১৪ ২৩:১৫586943
  • *করতে দিয়ে বাইরে গেছেন
  • kumu | 132.161.137.184 | ০৪ মে ২০১৪ ২৩:২২586944
  • ব্যাংএর লেখা পড়ে স্তব্ধ হয়ে রইলাম।
  • সায়ন | 59.200.243.216 | ০৫ মে ২০১৪ ০০:০০586945
  • ধৈর্য্যের সীমা ছাড়ানো দুর্ব্যবহার কতই তো দেখলাম। নিজের চোখের সামনে। চেনা টিউশনির ক্লাসে। শান্তশিষ্ট মুখচোরা স্যারের বাড়ির বারান্দায়, ভেতরের ঘরে। পড়ানোর ক্লাসে একটি ছেলেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল এটা জানা যাওয়ার পর যে সে পড়তে আসার ছুতোয় প্রত্যেক অল্টারনেট দিনে নিজেদের ব্যাচের একটা মেয়েকে টিউশনির পর বাড়ি ফেরার রাস্তাতেও উত্যক্ত করে মারত। সে শোধ তোলে অন্যভাবে। স্যারের ওপর। স্যারের ওপর। অন্ধকারে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় স্যারের নাম করে গালি বর্ষণ। প্র্যাঙ্ক কল করা। বাইরে থেকে ঘরের মধ্যে লেসার টর্চ মারা... ব্যাঙদির এই ঘটনাগুলো রিলেট করতে তাই অসুবিধে হল না। তবে এমন করুণ পরিণতি হয়নি কারুর আর সেজন্য অজানা কাউকে থ্যাঙ্কস বলি। আশা করি, ব্যাঙদিদের এই স্যার ট্রীটমেন্ট পাচ্ছেন, এবং একদিন ভালো হয়ে উঠবেন।
  • a x | 86.31.217.192 | ০৫ মে ২০১৪ ০৫:০৩586946
  • কি ভায়োলেন্ট ঘটনা - ব্যাংএর ঘটনাটা।
  • | ০৭ মে ২০১৪ ২২:৫৬586947
  • হেঁইয়ো
  • byaang | 122.79.39.86 | ০৭ মে ২০১৪ ২৩:১২586948
  • এখানে লেখার পরে অভ্যু, একক, পাইয়ের মন্তব্য পড়ে থেকেই ছটফট করছিলাম, হাত কামড়াচ্ছিলাম। খোঁজখবর নিচ্ছিলাম। তো আজ কলেজেরই অন্য এক স্টাফের থেকে জানলাম, উনি সুস্থ হয়েছেন, কলেজের কাজও আছে। উনি কলেজে এসে ক্লাসও নেন। তবে আগের মতন আর সুন্দর করে পড়াতে পারেন না। আমি যে সময় ওনার বাড়ি গিয়ে ওনাকে দেখেছিলাম, তারপরে উনি একমাস হাসপাতালে ছিলেন তারপর আরো কিছুদিন/মাস বিশ্রাম নিয়ে উনি আবার কলেজ জয়েন করেন। যাই হোক উনি কর্মক্ষম আছেন, সুস্থ আছেন সেটাই বড় কথা।
  • | ১০ মে ২০১৪ ১৭:৩৯586949
  • বাঃ ভাল লাগল।
    আমি বিশ্বাস করি নিষ্প্রভাত রাত্রি হয় না।
  • ব্যাংদির হয়ে দমদির কথামতো | 85.137.10.215 | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২০:৩৯586950
  • আরে গল্প তেমন কিছু না! মানে আমার প্রেমের ধরণ দেখে নন্দনের ঐ গড়ানে মতন জায়গাটা, যেটা ঐ পুকুরটার এক্সটেনশন, সেখানে বসে যত লোকজন প্রেম করছিল, তারা বেজায় খচে গিয়ে "এ কী অসভ্যতা" জাতীয় গালাগালি দিচ্ছিল।

    গল্পের শুরুতে যাদবপুরের বাস্কেটবল কোর্টে বসে আমরা প্রেম করছিলাম। তৎকালীন প্রেমিক যাদবপুরে পড়তেন সেকেন্ড ইয়ার আর আমি স্কটিশ ফার্স্ট ইয়ার। এগারোটা নাগাদ ইন্ডোরে একটা কুইজ ছিল। তৎকালীন প্রেমিকের জালিবাজিতে সেই কুইজটায় হেরে গিয়ে আমার হেব্বি মেজাজ খারাপ ছিল। তো বেরিয়ে এসে বাস্কেটবল কোর্টে বসে প্রেমিক আমার মান ভাঙাচ্ছিল। সবে আমার হাতটা ধরে "বলছি তো আমি সরি। আরে বুঝতে পারি নি, তুই এত খচে যাবি। তাহলে করতাম না" বলেছে, এমন সময় আপনাদের সবার প্রিয় শ্রদ্ধেয় পিমিত্তির এসে "পাঁচটাকা দে, বিড়ি খাব" বলে তোলাবাজি করে আমাদের বাস্কেটবল থেকে তুলে দিল।
    (দেখে নিন সেই যুগেও বহিরাগতদের কেমন অত্যাচারিত হতে হত ইনসাইডারদের হাতে।)

    অতিষ্ঠ হয়ে বেরিয়ে এসে এইটবি থেকে কী একটা বাস ধরে নন্দনে যাওয়া হল কী একটা ইংরিজি সিনেমা দেখতে। তো তখন নন্দনের এসিটা এত শোঁ শোঁ করে চলত যে আমার কাঁপুনি এসে যেত, মাথা ধরে যেত। এদিকে সিনেমাটায় এত খটমটে ইংরিজি ছিল, যে আমি ডায়লগগুলোর বিন্দুবিসর্গ বুঝি নি। এদিকে ইংরিজিসিনেমাগুলো এমনিতেই ছোট হয় , তার উপর নন্দন কর্তৃপক্ষ আবার কেটেছেঁটে দেখাতেন বলে দুই ঘন্টার মধ্যেই সিনেমা গুটিয়ে গেল। আর আমার পয়সা উশুল হল না বলে আমার খিঁচড়ে থাকা মেজাজটা আরো খিঁচড়ে ছিল। হল থেকে বেরোনোর আগে অবশ্য আমার প্রেমিক আমার মানসিক অবস্থা আন্দাজ করে এবং তারপরে কী হতে যাচ্ছে অ্যান্টিসিপেট করে পিঠে একটা আলতো চাপড় মেরে বলেছিল "আরে ভুলে যা না বাপ! যা হয়েছে, হয়ে গেছে । এখন ফালতু ফালতু ক্যাচালটা টেনে বাড়াচ্ছিস কেন?" কিন্তু আমি প্রেমিকের এরকম বাণীতে তার মধ্যে অন্তর্নিহিত সাহস, অপ্টিমিজম, পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গী কোনো কিছু না দেখেই, তার উপর আরো খচে গেছিলাম। ফলে সিনেমা দেখে বেরোনোর সময়ে যেকোনো মুহুর্তে তান্ডব করে ফেলতে পারি এরকম মেজাজ নিয়ে বেরোলাম হল থেকে। বেরিয়ে দেখি বিকেলের আলো দিব্যি ক্যাটক্যাট করছে, বেজায় গরম, কিন্তু পুকুরের দিক থেকে ফুরফুরে হাওয়া আসছে।

    প্রেমিক বলল "বসবি?" আমার মুখে খারাপ গালাগালি আসছিল, কিন্তু কোনোরকমে রাগ সামলিয়ে চুপ করে থাকলাম। প্রেমিক মৌনং ইত্যাদি ভেবে নিয়ে ঐ গড়ানে জায়গাটায় গিয়ে বসে আমাকে বসতে ডাকল, "ওরে মা আমার! আর বাওয়াল না করে এসে বস এবার।"

    বসলাম। প্রেমিক ভাবল, তাহলে বোধ হয় আমার মাথা ঠান্ডা হচ্ছে, সে একটু উৎসাহিত বোধ করে খুশি গলায় বলল "উফ্ফ পারিসও মাইরি ! আচ্ছা আমি কী করলে তোর মন ভালো হবে বল, আমি করছি।"

    বললাম। বললাম, "তুই গুণে গুণে তিনটে ফ্রন্ট রোল আর তিনটে ব্যাক রোল খা এখানে। তাহলে মন ভালো হবে।" (এখানে বলে রাখা ভালো, আমি মোটেই এটা ভালো মনে বলি নি। প্রেমিকপ্রবর বেশ গুবলুগাবলু ছিলেন বলে, তিনি সহজে ডিগবাজি খেতে পারবেন না ভেবে, তাকে খিল্লিত করার ইচ্ছে নিয়ে কথাটা বলেছিলাম)

    তা সেই প্রেমিকের হিউমার সেন্সটা ভালো ছিল বলে, সে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গিয়ে ফটাফট দুটো ফ্রন্ট রোল আর ব্যাক রোল খেয়ে ফেলল। আশপাশে যারা বসে প্রেম করছিল, তারা নিজেদের প্রেম মাথায় তুলে আমাদের প্রেম দেখছিল হাঁ করে। আর আমি হ্যা হ্যা করে হাসছিলাম। আর প্রেমিকও আমাকে হাসাতে পেরে খুশি হয়ে আরো একটা ফ্রন্ট রোল খেল। যেই না পাল্টা ব্যাক রোলটা খাবে এমন সময়ে আমার লম্বা বেণী ধরে "হতচ্ছাড়া বাঁদর! ভালো ছেলেটাকে নিয়ে এইভাবে ইয়ার্কি দিচ্ছিস!" বলে একটা হ্যাঁচকা টান। না না বাবা, বড়মামা, কলেজের স্যার, পাশের বাড়ির জেঠু কেউ না। আমার কলেজের লাল্টুদা। অ্যাকাডেমিতে নিজের প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম করতে এসে নন্দন চত্তর দিয়ে শর্টকাট করে গগনেন্দ্র প্রদর্শনশালার গেট দিয়ে বেরিয়ে এক্সাইড মোড়ের দিকে যাচ্ছিল, এমন সময়ে লাল্টুদার প্রেমিকা নাকি লাল্টুদাকে দেখায় "ঐ দ্যাখ পাগলিটার বজ্জাতি" বলে। লাল্টুদা তাতেই খচে গিয়ে এসে আমার চুল ধরে টান দেয়, ঝাড় দেয়, আমার প্রেমিককে মানা করে দেয় আমার মত বদের ধাড়ির সঙ্গে প্রেম করতে। এদিকে ততক্ষণে আশপাশ থেকে সরু গলায় "কী অসভ্য মেয়ে বাবা!" ভাঙ্গা মোটা গলায় "ডেন্জার পীস একখানা" টাইপের কমেন্ট ভেসে আসছে। লাল্টুদা তখন ঘোষণা করল "তোদের এখান থেকে বার না করে, আমি এখান থেকে বেরোব ন।"

    আমরা দুইজন কী আর করি, বেরিয়ে গিয়ে ভিক্টোরিয়ায় লোকে কেমন করে প্রেম করে সে দেখতে গেলাম। আমার বেজায় খিদে পেয়েছিল বলে ঝালমুড়ি কিনলাম দুই ঠোঙা। তারপরে "বাবা গো ঝালমুড়িটা কী ঝাল!" বলে চারদিকে ঘাসের উপর ছড়িয়ে ছড়িয়ে ফেলতে লাগলাম ঝালমুড়ি। (আগেও একবার অনেক বন্ধুরা মিলে এসে এই কান্ডটা করেছিলাম ভিক্টোরিয়ায়। এবারেও সেবারের মতই একই রেজাল্ট হল) বিকেলে যত কাক কুলায় ফিরেছিল, তারা সবাই কা কা করতে করতে ভিক্টোরিয়ার গাছগুলোর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে এসে ঘাসে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝালমুড়ি খেতে লাগল। তখন কাকের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে সেখানে বসে যারা প্রেম করছিল, তারা আমাকে অভিশাপ দিতে দিতে উঠে বেরিয়ে গেল ভিক্টোরিয়া থেকে। আমরাও হ্যা হ্যা করতে বেরিয়ে এসে মেট্রো স্টেশনের দিকে হাঁটা দিলাম।

    সেই পাপেই বোধ্হয় আমার সেই প্রেমটা টিঁকল না। বছর দেড়েক নাকি দুয়েক বাদে কেটে গেল। কোলকাতায় প্রেম করার জায়গার সত্যিই খুব অভাব।
  • | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২০:৫৩586951
  • এইত্তো এইত্তো!

    এই যে ব্যাং এখানে লিখে ফেলো স্যারের পেমিকাকে থাবড়ানোর প্রস্তাব
  • byaang | 132.178.195.49 | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২১:৩৬586953
  • এই স্যারের সম্পর্কে আমি বিশেষ ডিটেলে কিছু লিখব না। শুধু ঘটনাটা বলি।

    আমরা পাঁচ-ছয়্জন এই স্যারের কাছে পড়তে যেতাম কলেজে পড়ার সময়। তো স্যার ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের বেশ মাইডিয়ার টাইপের।

    একদিন পড়া বোঝাতে বোঝাতে আমাদের একটা সমস্যা দিলেন। সমস্যাটা অনেকটা এইরকম - একটা ছেলে, আর একটা মেয়ে। একে অপরকে ভালোবাসে। কিন্তু দুজনেই ভাবে সেটা তাদের একতরফা প্রেম। সাহস করে একে অপরকে জানিয়ে উঠতে পারে না। ফলে দুজনেই নিজের নিজের জীবনে অনেকটা এগিয়ে যায়, থিতু হয়, সংসারধর্ম পালন করে ইত্যাদি। বেশ অনেক বছর বাদে মেয়েটা ছেলেটাকে ফোন করে জানায়, মেয়েটা ছেলেটাকে ভালোবাসে, এবং সে ছেলেটাকে বিয়ে করতে চায়। এখন ছেলেটার কী করা উচিৎ?

    আমার চিরকাল এই ধরণের প্রেমে বড় অ্যালার্জ্জী। আর তার উপরে বাগচী আমাকে সমানে কোঁতকা মেরে যাচ্ছিল, যাতে আমি ওকে আমার খাতা থেকে টুকতে দিই আগের দিনের নোটস। ফলে আমার মেজাজটা এমন সপ্তমে চড়ে গেল যে, অন্য কেউ স্যারের প্রশ্নের সুচিন্তিত উত্তর দেওয়ার আগেই আমি গাঁক গাঁক করে বলে উঠলাম, "এমন ন্যাকাষষ্ঠী মেয়েকে ঠাস ঠাস করে থাবড়ানো উচিৎ ননস্টপ। নেকু! অ্যাদ্দিন ধরে ন্যাকামো করছিল?"

    কথা শেষ হওয়ার আগেই বাগচী এবার আমাকে এত জোরে কোঁতকা মারল যে আমি টলে প্রায় পড়েই গেলাম, আর সম্পদ এত জোরে আমার পা মাড়িয়ে দিল যে আমি ওকে বললাম, "দাঁড়া আজ বাড়ি ফেরার সময়ে তোর হোস্টেলে ঢুকে তোর সুপারের কাছে যদি না তোর সব বদামোর কথা নালিশ না করে এসেছি, তো আমার নাম পাল্টে দিস। ও স্যার দেখুন না, সম্পদ আর বাগচী তখন থেকে আমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে!"

    বলে স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখি, জ্বলন্ত দৃষ্টিতে উনিই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছেন, কথা বলছেন না একটাও। সম্পদ আর বাগচীকে শাসন করা তো দূরের কথা। আমি তো ভেবেই পাই না কী হল ওনার। অর্ণব ওনাকে শান্ত করল, "ওটার কথা আপনি কানে নেন কেন? ননস্টপ ননসেন্স বকে যায়।"

    ক্লাস শেষ হওয়ার পর বাইরে এসে সবাই বলল ওরা নাকি শুনেই বুঝে গেছিল ছেলেটা কে। শুধু আমিই নাকি বুঝি নি। পার্ট ওয়ানের আগে আর সবাই আটটা প্রশ্নের সাজেশন পেলেও আমি যে কিছুতেই সেই সাজেশন পাব না, তাও নাকি ওরা বুঝে গেছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন