এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অন্ধ তত্ত্ব প্রতিবিপ্লবের হাত শক্তিশালী করে / ফরহাদ মজহার প্রসঙ্গে

    শুদ্ধ
    অন্যান্য | ০৫ মার্চ ২০১৩ | ৩৪১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শুদ্ধ | 127.194.228.244 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ০৭:১৬587153
  • "বিচার কর, কিন্তু ফাঁসি ছাড়া আর কোনো রায় মানি না —দাবি করলে সেটা হয় আদালতের নাম ভাঙিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর নির্দেশ চাওয়া। পিটিয়ে মানুষ মারার মতো হত্যায় আদালতকে অংশগ্রহণের জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। শাহবাগ এ ধরনের পাবলিক লিঞ্চিং বা গণঅংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে দাঁড়িয়েছে কি? হাটে কাউকে ছেলেধরা হিসেবে অভিযুক্ত করে রব তুললে সবাই মিলে পিটিয়ে যেভাবে তাকে হত্যা করে, তাকেই বলে পাবলিক লিঞ্চিং। আমি ভদ্র ভাষায় অনুবাদ করেছি গণঅংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। একেই কিছু গণমাধ্যম আখ্যা দিয়েছে ‘গণজাগরণ’।

    গণজাগরণ মঞ্চ বিচার নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চায়।"

    পড়ে বাক রহিত হলাম প্রথমে। পশ্চিমবঙ্গের এক প্রাক্তন নকশাল নেতার কথা মনে পড়ছে মজহারের কথায়। তিনি এখানে নন্দীগ্রাম আন্দলনের সময় অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ভাবে তৎকালীন শাসকদলের হয়ে মাঠে নেমে পড়েছিলেন এবং নানা বিপ্লবী তত্ত্বে একে ভূষিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এনাকেও দেখছি। আমি থাকি এ পার বাংলায়। এখান থেকেই এই অবসার্ভেশন নিয়ে কিছু কথা না বলে পারছি না।

    মজহার শুনেছিলাম মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট প্রিন্সিপ্যালে চলতেন এককালে। তাঁর কলম থেকে যখন এ সব কথা আসে তখন দু-একটা প্রশ্ন জাগে। হ্যাঁ, আমার মনেও জাগে। আমি যে, যে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট-এর বিরোধী তার-ও জাগে। কেন সে কথায় আসছি!

    যে কোনো রাষ্ট্র একটি বিচারালয় স্থাপন করে তার সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধান বানায় আইনসভা। আইনসভা, যদি সামান্য গণতান্ত্রিক মুখোশ পড়া ব্যবস্থাও হয় তাহলে নির্বাচিত হয়ে থাকে সাধারণত। এবারে নির্বাচন কতটা অবাধ হবে তা নির্ভর করে নানা পরিস্থিতির উপরে। রাষ্ট্রে বসবাসকারী জনগণের বিত্তের অবস্থা কি ও তার কতটা আদতেই স্বাধীনতা আছে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এগুলো খুব জরুরী গণতন্ত্রের মান বোঝার জন্য। এই উপমহাদেশের রাষ্ট্রগুলোর বেশীরভাগ জনগণই দরিদ্র। তারা বিত্তের যে জোর তা ভোগ করে না। জীবন ও জীবিকার ন্যূনতম সংস্থানের জন্য নির্ভর করে থাকতে হয় রাজনৈতিক দলগুলোর বদান্যতার উপরে, নিজের পেশাগত বা শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরে না। সেই সব দলগুলি যে যেখানে শক্তিশালী সে সেখানে রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালায়, ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেও আঞ্চলিক বা কেন্দ্রীয় স্তরে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং তাদের অনুগামী না হলে বা বাধ্য না হলে কাজ জোটা অত্যন্ত সমস্যার, অতএব তার বিত্তোৎপাদন-ও সঙ্কটের বিষয়। শিক্ষা স্বাভাবিক ভাবেই অতি কম। বিত্ত না থাকলে যা অত্যন্ত স্বাভাবিক (ভয়ঙ্কর) পরিস্থিতি। সুতরাং সেই জনগণের স্বাধীনতার কথা বলাই বাহুল্য হয়ে দাঁড়ায়।

    এবারে যে আইনসভাটি নির্বাচিত হয় সেখানে বেশী অংশটাই প্রভূত বিত্তশালী অংশের, মাঝারির চেয়েও কম হয় মধ্যবিত্ত। আর নিম্নবিত্তের যোগদান খুব বেশী হলে পঞ্চায়েত পর্যায় অব্দিই সীমাবদ্ধ এবং সেটাও আদতেই শারীরিক উপস্থিতি বেশীটাই। তা আইনসভা যে আইন করে তা বোধগম্যভাবেই সব সময়েই বেশীরভাগ অংশের দিকে যায় না। যে স্বার্থ সে পূরণ করে তা বিত্তশালী শ্রেণীর। তাত্ত্বিক ফরহাদ মজহারের এ কথা না জানার কোনো কারণ নেই। তিনি প্রথম দোহাই দিচ্ছেন সেই আইনসভার দ্বারা গঠিত আইনের দ্বারা চালিত বিচার ব্যবস্থার। তাহলে কি এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ একমাত্র রাষ্ট্র যেখানে আইনসভা ও আইন সমূহ জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে? উনিও জানেন এমন কথা সত্যি না। তবু বলছেন। কেন না যুক্তিকে লেজিটিমেট করাই ওনার উদ্দেশ্য। তাই, বিচার ও বিচার বহির্ভূত কথার আমদানী।

    এই প্রসঙ্গে বলা ভাল যে সব আইনসভাতেই কিছু আইন পাস হয় যা মানুষের কাজে লাগে। খুঁতো হলেও সেই সব আইন কিছু রক্ষাকবচ দেয়। না দিলে যে ভোলাটাইলিটি তৈরী হবে তা সাধারণভাবে শাসকেরা চান না বলেই এইটুকু ছাড় দেওয়া হয়। আর সেই আইনের বিষয়, বিচারালয়ের কিছু মানুষ অত্যন্ত জোর ও সাহসের সঙ্গে কাজে লাগাতে সচেষ্ট থাকেন। যেখানে যতটা গণতন্ত্রের প্রসার হয় সেখানে ততটাই এই চেষ্টা দেখা যায়। বাংলাদেশের আদালত-ও এর ব্যাতিক্রম নয়। কিন্তু যেহেতু গণতন্ত্রটি অতি দুর্বল ও বারবার নানা সামরিক স্ট্রাইফে আক্রান্ত তাই তার সামর্থ্য-ও সীমিত। এই ধরণের গণতন্ত্রে জনতার পূর্ণ অধিকার আছে বিচারালয়ের বাইরে থেকে বিচারকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করার। হ্যাঁ, এমনকি যে দাবীর সঙ্গে আমি সহমত নই সেই দাবীতেও। কেন না এটা আসে প্রতিক্রিয়ার থেকে। আইন আদালতকে বিত্তবানের বিত্ত, ক্ষমতাবানের ক্ষমতা যে খেলনা বানিয়ে ফেলতে চেষ্টা করে তার প্রতিক্রিয়া থেকে। এর সঙ্গে মজহারের কথা মত পাব্লিক লিঞ্চিং মানসিকতা জোড়া যায় না। জুড়লে তা অত্যন্ত অনৈতিহাসিক ও আরোপিত সিদ্ধান্ত।

    জনতা প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আন্দোলনে আসে না। একটি আন্দোলন, শাহবাগের মতন যা, তা ঘটে উঠতে আমাদের যে কোনো দেশেই সময় নেয় বেশ কয়েকদশক। কেন না এই আন্দোলনগুলোর ইতিহাস হচ্ছে এর প্রতি কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং আন্দোলন এক সময়ে ভেঙে যায়। কিছু ফসল ফলে, কিছু ফসল নষ্ট হয়। সেই নষ্ট হওয়ার জের কাটতে এক একটি রাষ্ট্রে দশক দু এক অতিক্রান্ত হয়। মোটামুটি এমনই গতি আমাদের জীবনের। সুতরাং শাহবাগ হতেও সময় লেগেছে ও এটা আকাশ থেকে পড়েনি।

    প্রাথমিক ভাবে এর আগের নানা ছোট-বড় আন্দোলনগুলো ও বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত শপথ ও প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ না হওয়া থেকে শুরু হয়েছে একদিকে স্থবিরতার চর্চা, অন্যদিকে কিছু মানুষ ক্রমাগত বিষয়গুলোকে সামনে এনেছেন, ভুলে যেতে দেননি মানুষকে। তার মধ্যেই সামরিক শাসন, মৌলবাদীদের উত্থান পুরোদস্তুর ঘুমিয়ে পড়ার উপায়-ও দেয়নি (যদিও তেমন ঘুম ঐতিহাসিক-ও না) বাংলাদেশকে। তরুণ প্রজন্ম দেখেছে একের পর এক শাসন আসছে ও দেশের হাল বদলাচ্ছে না। ঢাকা আকাশ ছুঁয়েছে, আর অন্যত্র মানুষ পরণের কাপড় সঙ্কটে। দেশের অবস্থা ঠিক হতে গেলে স্থায়ী সরকার চাই। এবং সেই সরকার চাই যে মান্যতা দেবে জনগণের। সামরিক শাসকেরা দেবে না। মৌলবাদীরাও দেবে না। তাহলে মূলত দুই শত্রুই বেশী সমস্যার। অন্য যারা, তারা বহু ভুল ভ্রান্তি ও নানা দিকে ভারসাম্য রক্ষা করতে করতে চলার চেষ্টার মধ্য দিয়ে গিয়েছে, যাচ্ছেও। মুক্তিযুদ্ধের সম্ভাবনা আর আজকের সঙ্কটের মধ্যেকার ফারাক তারা ঘুচিয়ে ফেলতে পারছে না। তারা দুর্বল। সব সময়ে বোধকরি স্বচ্ছও নয়, নীতিপ্রবণ-ও না। তবু তারা রাজাকার না, কিছু রাজাকার তাদের আশ্রয়ে নিশ্চিন্তে আছে এই অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও।

    তাই রাজাকারের বিচার চাইতে গেলে শুধু তাদের উপরেই নির্ভর করে বসে থাকলে চলছিল না। রাজাকারের বিচার কি খেতে দেবে? না দেবে না। কিন্তু বিক্ষত একটি দেশকে স্বান্তনা দেবে। আরো বেশী যেটা দেবে তা হল রাজাকারেদের মত যারা, যারা নিত্য নাগরিক অধিকার হরণকে, সামরিক বা ধর্মীয় শাসনের আওতায় জরুরী কাজ বলে মনে করে তাদের বাড়-বাড়ন্তকে একেবারে থামিয়ে দেবে বুঝি বা। তাহলে দেশে একটু স্থিতি আসবে। একটু নতুন করে ভাবা যাবে। আওয়ামীর সরকার যখন দোলাচলে তখনই এই প্রজন্ম রুখে দাঁড়িয়েছে। অত্যন্ত সঠিক ভবে দাঁড়িয়েছে। কেন না এখানে এবারেও দোলায়মান থাকলে দেশটা গ্রাস করে নেবে রাজাকারেরা। তারা শেষবারের মত দেখিয়ে দেবে তাদের ক্ষমতা কত! বুঝিয়ে দেবে তাদের হাতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এই সম্ভাবনা ভারী জীবন্ত। তাই অনেক সহ্য করার পরেই এই প্রজন্ম পথে নেমেছে। ক্ষণিক আবেগ থেকে নেমেছে। সাবধানীরা বলছেন হঠকারিতা। তা বেশ! কিন্তু হঠকারীরা তো তবু পথে নেমেছে, মরেছে। সাবধানীরা কই?

    তাঁরা তত্ত্বের সমুদ্রে হাবুডুবু দিচ্ছেন। কিসের জন্য? কোথাও কি তাঁরা জানেন যে এই লড়াই রক্তাক্ত হবে এবং সেটা বেশ ভয়াবহ হতে পারে? জানতেই পারেন। হচ্ছেও রক্তাক্ত। কিন্তু কখন রক্ত ঝরছে না? কোন দেশে ঝরছে না? কোণায় কোণায় প্রতিদিন যে কত রক্ত ঝরছে তার হিসেব কি হবে না? কবে হবে? শাহবাগের তরুণদের অ্যাজেণ্ডা ছিল কম? এক পয়েন্টের প্রোগ্রাম? তাই আপত্তি? কিন্তু তাঁরা কি ভেবে দেখেছেন তাঁদের হাজার পয়েন্টের প্রোগ্রামকেও এই প্রজন্ম বিশ্বাস করে না কেন? করে না তার কারণ তাদের সততা নিয়েই প্রশ্ন আছে। আছে কঠিন প্রশ্ন। তারা মনে করে না কেউ সৎ। এবারে কথা হচ্ছে কেউ সৎ হলে কি হবে? হলে সে সততার প্রমাণ রাস্তাতেই হবে। সেখানেই দিতে হবে। আগুণেই পরীক্ষা হবে লোহার। কিছু করার নেই। উপমহাদেশে যে ব্যাপক লুঠ ও অবিচার চলছে কয়েক শতক ধরে তা বিশ্বাস কেড়ে নিয়েছে তরুণদের থেকে। সঙ্গতভাবেই কেড়েছে। যদি সাবধানীরা কোনোদিন পথ না ছাড়তেন, যদি লড়াই করেই মরে যেতেন, তাহলেও মানুষ জানতো কেউ আছে, কেউ আছে। তাঁরা এক কল্পিত যুদ্ধে আছেন, যা অতি মহৎ, শুধু ফল প্রদায়ী হয়নি এতকাল। এটা তাঁদের ব্যার্থতা।

    আরেকটু বলি এ কথায়? শাহবাগের বেশ কদিন কেটে গেল। ফাঁসীর দাবী থেকে ধর্মকে রাজনীতির কারবারে নিষিদ্ধ করার দাবীও এসে পড়েছে। সরকার যে দুলছিল, সে শক্ত হবার দিকে ঝুঁকছে। কিসের জোরে? আমি যেখানে থাকি সেই পশ্চিমবঙ্গের বহু সচেতনতার গর্ব আছে। কিন্তু আজ অব্দি, বাবরি বা গোধরার নারকীয়তার পর অব্দিও এই ধর্ম নিষেধের দাবীতে পথে এভাবে জনসমাবেশ হয়নি, এত জোর গলায় দাবী ওঠেনি। দিল্লী বা উত্তর-প্রদেশ বা গুজরাতে তো ভাবাই যাচ্ছে না যে এ দাবী উঠবে। সেখানে বাংলাদেশ যা আজ-ও ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত সেখানে এই দাবী আসছে দেখলে সম্ভ্রমে মাথা নীচু হয়ে আসে। শ্লোগানটা অমূল্য।

    ধর্ম যার যার
    দেশ সবার।।

    সুতরাং সাবধানী বন্ধুরা, হাতে গরম ফল যখন পাওয়া যাচ্ছে তখন সংশয় রেখে মাঠে তৎপর হলে স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে তত্ত্বও পুষ্টই হবে বলে মনে হয়। মানে মানুষের সংস্পর্শেই মানুষের সমাজ-তত্ত্বের বিকাশ ঘটে।

    মজহার কি সাবধানী? না, তিনি জ্ঞাণী। বেশ কিছু গম্ভীর লেখা আছে তাঁর। তিনি এত জেনে বলছেন যে শাহবাগ আর পাব্লিক লিঞ্চিং মব একই। একে বলে সরলতা। কিন্তু কিছু কিছু সরলতা অত্যন্ত দুর্বোধ্য। কেন না সরল তো কিছু নেই। সরলরেখাও সরল না দুনিয়ায়। আমি একটি কল্পিত স্বর্গের নিরিখে দুনিয়ার সব যখন বিচার করতে বসি তখন অনেক কথা খেয়াল করি না। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কথা হল আমার কল্পিত স্বর্গটি বাকী দুনিয়ার মত গতিশীল না। সে আমার মডেল, তাকে আমি বানিয়েছি। সে স্থিতিশীল। তাহলে বাকী দুনিয়ার সঙ্গে তার তুলনাটা আমি টানছি কি ভাবে?

    আমার কথাই বলি। আমি তো ফাঁসীর বিরোধী। ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট-এর বিরোধী। তাহলে আজ যদি একটি যুদ্ধ হয়, আমার ভূখণ্ড কেউ অন্যায় ভাবে দখল করে নিয়ে আমাকে দাস বানাতে চায় আমি কি করবো? আমি কি সামগ্রিক হত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বলবো যে আমি যুদ্ধ করবো না, হে আক্রমক আমাকে দাস কর, তোমার যদ্দিন না সুবিবেচনা জাগে বা চিত্ত সংশোধিত হয়। সে বললে আমি মূর্খ মাত্র। আমি ভুলেছি যে আমি শুধু নিজে না অন্যের সর্বনাশ ডাকছি। হত্যার অধিকার আমার নেই, কিন্তু আত্মরক্ষার অধিকার আমার আছে। আর আত্মরক্ষা করতে গিয়ে বাধ্যত হত্যা করা দুঃখজনক, তবে অন্যায় হতে পারে না। কেন না নিজেকে বিলোপ করে আমি কারোর কোনো উপকার সাধন করবো না। বা অন্যকে বিলুপ্ত হবার প্ররোচনা দিয়ে আমি অপকার সাধনই করবো। তাও এমন এক শক্তির কাছে যে কিনা আদ্যন্তই অন্যায্য, তাই তার এত দখল পিপাসা। অর্থাৎ, সাদা কথায় আমি বাঘকে বাউল গান শুনিয়ে পার পাবার চেষ্টার পক্ষপাতী না। নিজেকে যাচাই করে দেখাই সবার আগে কাজ বলে আমি নিজেকে যাচিয়ে নিলাম প্রকাশ্যে।

    তাহলে আমি কেন এই ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট-এর বিরোধী সেটাও বলার দায় আমার বর্তায়। কারণটা খুব ছোট্ট করে বললে এ আমার নিজের অ্যানিম্যাল ইন্সটিঙ্কটকে সংযত রাখার ইচ্ছে মাত্র। কসাই মোল্লা যে মানুষের মত দেখতে একটি জন্তু সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। এবারে সে যে কাজ করতে পারে অবলীলায় সে কাজ আমি করতে পারি না। এটাই তার আর আমার মধ্যের পার্থক্য। বা এই ফারাক না থাকলে আমি নিজেকে মানুষ বলতে পারি না আমার মাপকাঠিতে। সে নিরস্ত্র মানুষের সঙ্গে কল্পনাতীত হিংস্রতা দেখাতে পারে, সে নিজের দেশ কালের সঙ্গে আদ্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, আমি পারি নে। তাই তার আর আমার অবস্থানের ফারাক থেকেই নিরস্ত্র তাকে আমি হত্যা করতে পারি না। চাই না। কিন্তু এখানে আমি বহু দূরের লোক। যাঁরা এ হিংস্র বর্বরতা সয়েছেন, যাঁদের পরিবার এর শিকার তাঁরা আমার থেকে অনেক অনেক বেশী এ বিষয়ে কথা বলার অধিকারী। আমি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখেই শুধু বলে যেতে চাই যে খাঁচায় পোরা বাঘটিও হত্যার যোগ্য না। যদিও সে মানুষ খেয়েছে।

    আর একটা জটিল কথা আছে। সে কথা হল বিচারের। কসাই মোল্লা কসাই হল কি ভাবে তার বিচার আমার কাছে জরুরী। রাতারাতি হয় না। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার স্রোতে হয়। সে স্রোতের আদি ধরাই মুশকিল কাজ। তবু যদি ধরি ৪৭-এর আগের ভারতের যে রাজনৈতিক-সামাজিক ও ধর্মীয় ইতিহাস সে তার সৃষ্টিও তাহলে সবটা ভুল বলা হবে না। তার বিচার ও শাস্তির সঙ্গে সঙ্গে ওই কুনাট্যের বাকী কুশীলবদের-ও শাস্তি প্রাপ্য। সব ধর্মের, সব পক্ষের স্বার্থান্বেষী ও দালালদের শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু তাদের অনেকেই এখন দেয়ালে দেয়ালে মহান নায়ক হয়ে শোভা পায়। কসাই মোল্লা বা তার মত কয়েকজন সবটা শাস্তিই পাবে এও কি জাস্টিস হবে? ইতিহাস জাস্টিস করতে পারে না বলেই তার বাইরেও থেকে যায় পোয়েটিক জাস্টিসের কথা। সে কথাও ভুলিনি আমি।

    কিন্তু সে সব কথা বলতে বেশ লজ্জা লাগছে আমার। অন্তত এই ফরহাদ মজহারের ফাঁসী না দেওয়া হোক চাওয়া, আর আমার চাওয়ার মধ্যে যে ফারাক আছে তা না জানিয়ে বুলতে পারছি না কথা। আরো স্পষ্ট করে জানি তাঁর কলমের বাণী থেকে। সেই বাণীটি পড়েই এই লেখা আরো লিখতে ইচ্ছে হল।

    "জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি অপছন্দ করি বলে কিংবা আমাদের অবচেতনে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ও ঘৃণা কাজ করবার কারণে এক্ষেত্রে সব ধরনের বিবেচনা ও মানবতাবোধ আমরা হারিয়ে ফেলতে পারি না।"

    লেখার থেকে টুকরো অংশ তুলে নিয়েই কথা বলছি। বলছি কেন না লেখার টানে ভাসতে চাইছি না একদম। ভাবান্দোলন নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। লিখেছেন। ইসলামের প্রাচীন সাম্যাদর্শ নিয়েও নিশ্চই জানেন ও ভাবেন। এবং সেই জন্য ধরে নিতে পারি যে ইসলামের সম্পর্কে তাঁর আর 'জনতার আফিম' গোত্রের কোনো ভাবনা নেই। তা হলে তিনি এও জানেন নিশ্চই যে ইসলাম সম্পর্কে যদি কোনো আতঙ্ক ও ঘৃণা থেকে থাকে সে ইসলাম কোন মিলিটারির বুটের ডগায় এসেছিল বাংলাদেশে? সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দু, বৌদ্ধদের বাড়ি তো আওয়ামী আর পুলিশ আক্রমণ করছে না? তাহলে তাদের অবস্থার কথা নেই কেন ওনার লেখায়? নেই, কেন না তিনি একটি সুখ স্বপ্নে সদ্য ভাসতে শুরু করেছিলেন বলে অনুমান করা যায়। তাঁর অসমাপ্ত বিপ্লব এবারে ইসলামের প্রাচীন সাম্যাদর্শ উদ্ধার করে আনবে। ভাবান্দোলনে যেমন হয় আর কি! মানুষে মানুষে দারুণ একটা ব্যাপার তৈরী করা হবে ইত্যাদি। কিন্তু সে পরিস্থিতিও যায় যায় এবারে। তাই তাঁর মসিহা হওয়ার সম্ভাবনা কমার রাগ হয়েছে। তিনি মানবতাবোধের কথা বলতে শুরু করেছেন। কিন্তু কি যে কাঁচা জায়গা থেকে বলছেন তা ভাবা যায় না!

    ধর্মের ইতিহাস এক আগ্রাসনের কথা-ও বলে অনেক কিছু মহৎ বিষয়ের পাশাপাশি। সেই সব আগ্রাসনে কোথায় মানবতা থাকে? বাঁচে? সেকালের সোমনাথ মন্দির লুঠ থেকে একালের বাবরি ভাঙা কোথায় আছে? ৪৭ পূর্ব ভারতে মুসলীম লীগের ডাইরেক্ট অ্যাকশন থেকে গোধরায় মোদীর নৃশংস গণহত্যা কোথায় আছে? বলবেন মজহার? গোটা একটা উপমহাদেশ ধর্মের কবলে পরে দাঙ্গায় দাঙ্গায় শেষ হয়ে যায়। বর্বরতা ও হিংস্রতায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, হচ্ছে বারবার। হিন্দু-মুসলমান, ব্রাহ্মণ-দলিত, শিয়া-সুন্নি কত কত রকমের ক্ষত। তারপরেও ধর্মকে রাজনৈতিক পরিসর থেকে সরাবার দাবীর সঙ্গে একমত হতে পারছেন না তিনি।

    গুজরাতের হত্যাকাণ্ডে বাড়ির মেয়ে-বৌ রা নির্লজ্জের মত আক্রান্তদের দোকান লুঠ করে কোন বর্বরতায়? সেই গুজরাতেই চূড়ান্ত সুবিধে পেয়ে- নির্লজ্জের মত মোটা মুনাফার রাস্তা পেয়ে শিল্পপতিরা বলে সুশাসন আর উন্নয়নের মুখ মোদী। তেমনই যে ইসলামের কথা তিনি বলছেন সেই ইসলামের প্রাচীন ভাবাদর্শকে প্রতিদিন ছিন্নভিন্ন করছে যে পেট্রোডলার তাকে সামলানোর ক্ষমতা আছে তো তাঁর? বাংলাদেশকে এর বাইরে ইসলামের শাসনে রাখতে পারবেন তো? কেউ পেরেছে? যে সব দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম সেখানে এসেছে তো মানুষে মানুষে সাম্য ও সুস্থিতি? এলে এত বিক্ষোভ কেন? এত ভয় কেন সে সব শাসকদের? এসব জানেন মজহার। কিন্তু বলেন না। কেন না তাতে তাঁর তত্ত্ব ও খোয়াব দুই বিপন্ন হবে।

    এবং এই প্রকাশ্য দ্বিচারিতায় তিনি যখন ফাঁসী বিরোধী হন, তখন আমার দায় বর্তায় জায়গাটা পৃথক করার। সত্য আংশিক দেখা বা দেখানোর চেষ্টা অন্যায়। সত্য কেউ সামগ্রিক দেখেন না। আমিও না। কিন্তু যতটা দেখি ততটা অন্তত বলার দায় আমার থাকেই। ফরহাদ মজহার নামের এক কলমচারী সেটা ভুলেছেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ভুলেছেন। ইতিহাস তাঁর এই অন্যায় ভুলে যাবে না।

    মজহারের লেখার লিঙ্ক আগ্রহীদের জন্যঃ http://bit.ly/13CEbu1

    [ রাতের বেলায় একটানে লিখেছি। আলগা থাকলো। তবে কথাগুলো ফুটছিল ভেতরে। তাই ভাগ করে নেওয়ার জন্য দিলাম এখানে।]
  • শুদ্ধ | 127.194.228.244 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ০৭:২৩587180
  • বন্ধু সোহেল হাসান গালিবের একটি নোট আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সেখান থেকে এই লেখাটির লিঙ্ক পেয়ে পড়ার পরে, আমার লেখার ইচ্ছে জাগা। এই কথাটা না জানানো অন্যায়।
  • বিপ্লব রহমান | 127.18.231.12 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ০৭:৫৮587191
  • এই টইটি আমি নিজেই খুলতে চেয়েছিলম। এখন #শুদ্ধ খোলায় সুবিধাই হলো। তাকে ধন্যবাদ।

    ফ.ম.র বিভ্রান্তি নিয়ে আমি নিজেও সদ্য একটি নোট লিখেছি। সেটি তুলে দিচ্ছি।

    চলুক।
  • pi | 78.48.231.217 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ০৮:০০587202
  • অন্য টইতে ঐ লেখাটি আমি দিয়েছিলাম। ওখানেও এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। আলোচনা চলুক।
  • বিপ্লব রহমান | 127.18.231.12 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ০৮:০১587213
  • মুখ ও মুখোশ…
    লিখেছেন: বিপ্লব রহমান
    __________________________________________

    রক্তের দামে কিনেছি বাংলা, কারো দয়ায় পাওয়া নয়
    ছাত্র অবস্থায় আপনার কবিতা পড়ে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। সদ্য যুদ্ধ ফেরৎ কবি, আপনি ১৯৭১ এর বারুদের সৌরভ ছড়িয়ে লিখেছিলেন:

    আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছো বিপ্লবের সামনে
    আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছো ইতিহাসের সামনে
    হাতে দিয়েছো স্টেনগান
    আঙ্গুল ভর্তি ট্রিগার
    এখন আমার আর ফেরার কোনো পথ নেই…

    নব্বইয়ের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের কালে সামরিক জান্তা এরশাদের পুলিশ বাহিনী ছাত্র মিছিলে ট্রাক তুলে দিয়েছিলো। ঘটনাস্থলেই ট্রাক চাপায় মারা গিয়েছিলেন ছাত্রকর্মী সেলিম-দেলোয়ার। আমাদের ইস্কুলের দেওয়ালে আন্দোলনকারীরা বেনামে চিকা মেরেছিলো: ট্রাক চাপা দিয়েছো, আন্দোলন থামেনি, ট্যাংক চাপা দিলেও আন্দোলন থামবে না। আর আপনি লিখেছিলেন, ‘লেফটেনেন্ট জেনারেলের ট্রাক!’

    কবিতার বইটি সেই সময় বইমেলায় খুব চলেছিলো। পরে সেটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে। আপনাকে জেলও খাটতে হয়। ১৯৮৬-৮৭ তে আমারদের সাংস্কৃতিক সম্মেলনে টিএসসি’র নীচতলার হলরুমটি ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। প্রয়াত লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছিলেন এর সভাপতি। তিনিই সম্মেলনের পোস্টারের মূল শ্লোগান লিখেছিলেন, এখনো মনে আছে। সেখানে লেখা ছিলো, শিল্প-সাহিত্য বিপ্লবকে দিক ভাষা, বিপ্লব শিল্প-সাহিত্যকে দেবে মুক্তি। সম্মেলনে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম আপনাকে। বক্তৃতার বদলে আপনি নিজেই হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে ছেঁড়া গলায় গান ধরেছিলেন, যুদ্ধ ফেরৎ স্বরচিত কবিতাকে সুর দিয়ে গানে বলেছিলেন,

    এই নষ্ট শহরে, নাম না জানা যে কোনো মাস্তান…

    বিনির্মাণকালে
    পরে এইসব গান, কথামালা, আবৃত্তি অডিও ক্যাসেট বন্দীও হয়েছিলো, সেটিও আমাদের সংগ্রহে ছিলো দীর্ঘদিন। আর এই গানটিই দেখুন, কিছুদিন আগে ‘দলছুট’ সঞ্জিব চৌধুরী গেয়ে কি সুনামই কুড়িয়েছেন! নতুন করে গাওয়া গানে সবই আছে, কিন্তু আমাদের কিশোর বেলায় আপনার কণ্ঠে যে শোনা গানে যে বিপ্লব স্পৃহা খুঁজে পেয়েছিলাম, তার ঘাটতি তাতে ধরা পড়ে মারাত্নক। দ্রুত আমাদের ছাত্রত্ব ফুরাতে থাকে, আমরা বড়ো হতে থাকি নানান পাঠ-পর্যবেক্ষণে, এমনকি আপনার লেখার চিন্তনেও। সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজে’ সে সময় নিয়মিত আপনার কলাম পাঠ ও এ নিয়ে বিতর্ক জমিয়ে তোলা আমাদের বৈকালিক অভ্যাসে পরিনত হতে থাকে। ততদিনে আপনি বিদেশী টাকা ও পরামর্শে খুলেছেন, উন্নয়ন বিষয়ক নীরিক্ষা ও গবেষণা — উবিনীগ। ‘চিন্তা’ নামে আপনার সম্পাদিত অনিয়মত পত্রিকাটিও আমাদের আড্ডায় প্রাণ পায়। মনে আছে, দিনাজপুরে ইয়াসমিন নামে কিশোরীকে পুলিশের গণধর্ষন করে মেরে ফেললে সারা দিনাজপুরে অভূতপূর্ব জনবিক্ষোভ ঘটে। সারাদেশে এর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘চিন্তা’ সে সময় খুব সাহসের সঙ্গেই ইয়াসমিন সংখ্যা প্রকাশ করেছিলো। জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’, ‘বিচিন্তা’ বা ‘খবরের কাগজ’ এ নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করতে সাহস পায়নি। এনজিও ঘেঁষা বলে আমাদের শ্রদ্ধা অনেকটাই টলে গেলেও আমরা তখনো আপনার মেধাবী লেখার ভক্তই ছিলাম।

    মাঝে আপনি অগ্রসর লেখক আহমদ ছফার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ছফাকে সেই প্রথম ও শেষবারের মতো ক্ষিপ্ত ও অশালীন ভাষায় আপনাকে পাল্টা আক্রমণ করে কলম ধরতে দেখি। আপনি নিয়মিত কলামে বলেছিলেন, এনজিওগুলো নাকি এদেশে সমাজ বিনির্মান করছে, যা রাষ্ট্র বিপ্লবকে এগিয়ে নিচ্ছে! আপনার এই নয়া তত্ত্বের বিরুদ্ধে ছফা খুব রূঢ় ভাষায় যা লিখলেন, ভদ্র করে বললে, তা দাঁড়ায় অনেকটা এরকম, গনিকার পুত্র হে, আপনি নিজে এনজিও ব্যবসা করছেন, করুন না, রাষ্ট্র বিপ্লবের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন কেনো?

    এ নিয়ে সেই সময় খুব হইচই হয়। আমরা আপনার সর্ম্পকে সেই প্রথম সতর্ক বার্তা পাই। ততদিনে আমরা প্রায় সকলেই অনেকটা কলম ঘষে সাংবাদিকতার কষ্টকর পেশায় নাম লিখিয়েছি। আমাদের কেউ কেউ ছফাকে সমর্থন করে সংবাদপত্রে পাঠ প্রতিক্রয়া লিখে থাকবে, আমরা এ-ও মনে করতে পারি।

    পরে আপনি মেতে ওঠেন লালন-চিন্তনে। কবি, আপনি কবিতা উৎসবে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করলেন নতুন কথা: নবীর যুগ শেষ, এখন কবির যুগ শুরু। …আমরা নড়েচড়ে বসেছি, আপনার কথা, কবিতা ও লেখনীতে আমাদের চিন্তার যাচাই-বাছাই বেড়েছে, মুগ্ধতা আর নয়, তার মেয়াদ ফুরিয়েছিলো রাষ্ট্র বিপ্লবের সঙ্গা নির্ধারণের কালেই । এমনকি আপনার নয়া কৃষি আন্দোলন নামক জৈব কৃষি ব্যবস্থার ‘প্রবর্তন’ বা লালন সাঁই কেন্দ্রীক ‘নব প্রাণ’ আমাদের মনে দাগ কাটেনি। তখনও আমরা আপনাকে ঢেঁড়া চিহ্নের নীচেই রেখেছি, একেবারে বাতিল করিনি।

    ব্রুটাস! তুমিও?
    সবশেষ ২০০৫ সালের দিকে লাদেন-তালেবান উত্থানের কালে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট ঘেঁসে মোল্লার বড় বড় সমাবেশ করতে থাকে। সরকারি আস্কারায় প্রকাশ্যে ম্লোগান ওঠে: আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান! পাঁচ টাকায় লাদেনের একে-৪৭ সহ নূরানী চেহারার পোস্টার বিকায় বিস্তর। আপনি প্রেসক্লবের সেমিনারে সে সময় বয়ান করে বলেছিলেন, তালেবানরা সকলেই নাকি মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে আপনারা যে কারণে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছিলেন, তালেবানরা নাকি একই কারণে মুক্তিযুদ্ধ করছে। …

    এ নিয়ে নানান মহলে আপনাকে তুলোধুনো করা হতে থাকে। আমরা তালাশ করে জানতে পাই, বিএনপি-জামাতী ঘুনপোকা বাসা বেঁধেছে আপনার করোটিতে। তারাই আপনাকে তখন চালিত করছে, তারাই আপনার মগজ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, ইসলামী বিপ্লবের মুখপত্র ইনকিলাবে কলাম লেখাচ্ছে। তালেবান সমর্থিত সভা-সেমিনারে কবিবর, আপনার ডাক পড়ছে নিয়মিত।… ইসলামী ব্যাংকের টাকায় করা দৈনিক ‘নয়া দিগন্তে’ কলামিস্ট হিসেবে আপনার কদর বাড়ে।

    আমরা তরুণ সাংবাদিকরা গোপন দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে তালেবানী তত্ত্বের ফেরিওয়ালা কবি, আপনার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করি, ১৯৭১ এর রক্তের দায় থেকেই। আমরা জেদ করে বসি, আপনাকে প্রকাশ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, মাফ চাইতে হবে।…ডান, বাম, মধ্যপন্থী তাবৎ বাঘা সাংবাদিকরা আমাদের সমর্থন জানিয়ে যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর দেয়। …আমরা মনস্চক্ষে দেখতে পাই, ‘৭১ এর স্টেনগান নয়, লাদেনের একে-৪৭ তাক করে আপনি কুৎসিত দেঁতো হাসি হাসছেন। বেগুনি রঙের শয়তানি আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে আপনার চশমার কাঁচ ভেদ করে।…

    না হে সাবেক কবি, ভুল মুক্তিযোদ্ধা, আপনি বক্তব্য ফিরিয়ে নেননি, মাফও চাননি। পাল্টা বিবৃতি দিয়ে পুরো ঘটনাই আপনি অস্বীকার করলেন। ধোঁয়াশা তৈরি করে দাবি করলেন, সংবাদপত্র নাকি আপনার বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করেছে। আদৌ আপনি ওই সেমিনারে তেমন কোনো বক্তব্যই দেননি!

    ইনকিলাব-নয়া দিগন্তের কলাম চাপা পড়তে থাকে আমাদের সকলের সম্মিলিত ঘৃণার স্তম্ভের নীচে। কবিরাজ (অব.) রাইসু এক্সপ্রেসের ভক্তিবাদের সুতোয় বিডিনিউজের মতামত বিভাগে আপনি পুচ্ছ নেড়ে আবার প্রগতির ভেক ধরেন। দৈনিক আমার দেশ নামক নিউজপ্রিন্ট ও অক্ষরের অপচয় সরকার বন্ধ করতে চাইলে আপনি মতামত জানান এভাবে, এটি সরকারের ডিজিটাল ফ্যাসিবাদ, বাক স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ — ইত্যাদি। আমাদের অনেকের কাছেও সে সময় এটিকে আওয়ামী বাড়িবাড়ি বলে মনে হয়। তবে আমরা এই তালেবানী দৈনিক ও আপনার ভাষ্য আদৌ আমলে নেই না; একে একরকম উপেক্ষাই করি। …

    তোমারে বধিবে যে…
    গণদাবিতে শাহবাগের মোহনায় গণজাগরণ-গণবিস্ফোরণে নতুন করে লেখা হতে থাকে অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমরা প্রজন্ম ‘৭১ ব্লগার, ছাত্র, সাংবাদিক, শিক্ষক, জনতা এক-দুজন করে জড়ো হতে হতে জনসমূদ্রে পরিনত হই। আমাদের আহার, ঘুম, বিশ্রামের সময় থাকে না…বউ-বাচ্চা, বন্ধু-বান্ধব, বৃদ্ধ বাবা-মা’সহ আমরা সদলবলে জড়ো হতে থাকি। তখন ও এখনকার মুক্তিযোদ্ধারা ওঙ্কার দিয়ে বলে: বিচার চাই! বিচার চাই!

    সারাদেশে, জেলায়, জেলায়, উপজেলায়, থানা শহরে, এবার বাংলায়, ওপার বাংলায়, পাহাড় ও সমতলে, দিকে দিকে, দশদিগন্তে জ্বলে ওঠে সব প্রাণ, ৪২ বছরের ঋণের শোধ চাই! সব হিস্যার অবসান চাই! লাল-সবুজ বাংলায় হায়নার পদচারণা আর নয়! …

    শোন মৌলবাদের নাতি
    তুমি যে ধর্মেরই হও,
    আমি নিরপেক্ষতাবাদী
    তুমি আমার বন্ধু নও।

    [কবির সুমন]

    ইতিহাসের অনিবার্য মিমাংসারকালে বাংলাদেশ যখন এই গুঢ় প্রশ্নের মুখোমুখি, দেশ মৌলবাদের লেজে মধ্যযুগে ফিরে যাবে, না প্রগতির পথে মুক্তির আলোয় হাঁটবে, তখন শেষ মরণ কামড় বসায় জামাত-শিবির। গলা কেটে ব্লগার খুন. জাতীয় মসজিদে হামলা, সাংবাদিকদের পিটিয়ে নাস্তানাবুদ, শহীদ মিনারে আগুন, পিটিয়ে পুলিশ হত্যা, তাণ্ডবের পর তাণ্ডব। …

    সবশেষ যুদ্ধাপরাধী বাঁচাতে জামাতি হরতালে সহিংসতায় পুলিশসহ নিহত হন প্রায় ৪০ জন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একে “১৯৭১ এর গণহত্যার সামিল” বলে আমাদের “গণহত্যা”র সঙ্গা শিক্ষা দেন। আমরা মেকাপ বিহীন ম্যাডামের সংবাদ সম্মেলনে যেনো বিএনপি’র জামাতে অবলুপ্তির ঘোষণাই শুনি। ম্যাডাম জিয়ার বয়ানে যেনো সেদিন গোলাম আজমই ১৯৭১ এর বর্বোরচিত “গণহত্যা”কে উপহাস করে দম্ভের সঙ্গে বলেন, “একাত্তরে আমরা ভুল করিনি!”

    আর আমাদের আলোচ্য ফসিলাইজড কবি, এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধেরকালে আপনিও কি না খোলস ছেড়ে, মুখোশ নামিয়ে, ওই ট্রাশ দৈনিকেই কলাম লিখলেন একই সুরে, দাঁড়ালেন গণজাগরণের বিপক্ষে:

    দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদির রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে পুলিশ যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে, তাকে ‘নির্বিচার গণহত্যা’ ছাড়া মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের দিক থেকে আর কিছুই বলা যায় না। বিক্ষোভ ও মিছিল দেখলেই গুলি করার নির্দেশ পালন করছে পুলিশ। মনে হচ্ছে বাংলাদেশে ‘হত্যার উত্সব’ চলছে। কাদের মোল্লার রায়ে কেন তাকে ফাঁসি দেয়া হলো না, এ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারির ছয় তারিখ থেকে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। দাবি করছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার নয়; যেভাবেই হোক ফাঁসি দিতে হবে। ফাঁসির রায় ছাড়া শাহবাগ ঘরে ফিরবে না। আদালতের ওপর এ অন্যায় চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এটা ঘটছে প্রকাশ্যে। পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ক্ষমতার চাপ।

    [লিংক]

    বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
    রাজনীতিকের ধমনী শিরায়
    সুবিধাবাদের পাপ।
    বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
    বুদ্ধিজীবীর রক্তে স্নায়ুতে সচেতন অপরাধ…

    [রুদ্র মুহম্মাদ শহীদুল্লাহ]

    এর চেয়ে অধিক বাক্যে আপনাকে ধীক্কার দিতে আর রুচি হয় না, হে আমাদের বালক বেলার স্বপ্নের কবি, ছিঃ!!
    ____________________
    http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=34083
  • বিপ্লব রহমান | 127.18.231.12 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ০৮:১৪587224
  • #pi,

    তাই? ওই টইটি নজরে আসেনি তো? সেটি খুঁজে দেখবো নিশ্চয়ই। আলোচনাগুলো একটি টই-এ হলেই বোধহয় একসঙ্গে পাঠের সুবিধা হয়, আলোচনা করতেও। এখন উপায়? (ভাবিত ইমো) :)
  • কল্লোল | 111.63.179.212 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ১০:২১587235
  • শাহবাগ আন্দোলনের ধর্মনিরপেক্ষতার দিকটি আমায় টানে। কিন্তু আমারও মনে হয় ফাঁসী চাওয়ার মধ্যে একটা ফ্যালাসি আছে। বিচার হোক, শাস্তি হোক, সে শাস্তি ফাঁসীও হতে পারে, নাও হতে পারে। কিন্তু কেউ যদি দাবী করেন বিচার হোক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাঁসীই চাই, তাহলে আর বিচারের দরকারই বা কি?
    আসলে যাদের বিচার চাওয়া হচ্ছে, তারা তো কোন বিচারের তোয়াক্কা করেনি। তাদের মনে হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ চাওয়া আর ইসলামের অপমান করা একই। তাই নৃশংসভাবে মানুষ মেরেছেন, ধর্ষণ করেছেন। এদের শাস্তিতো হয়ই নি বরং মন্ত্রী-শান্ত্রী হয়ে দিব্যি ছিলেন। এই অবিচার-অপমান মেনে নিতে পারেনি মানুষ। তাই আজকের এই লাভাস্রোত - শাহবাগ।
    কিন্তু বন্ধু, বিচার যাই হোক, ফাঁসী চাই বলে আপনারাও একই ভুল করছেন।
    ফারহাদ মাজহারের সাথে একমত নই। কিন্তু ফাঁসী চাওয়ার এই উন্মাদনা আমায় বিষন্ন করে। আমার মনে পড়ে যায় চারু মজুমদারীয় অবিমৃষ্যকারীতা (তাতে একসময় এই অধমেরও যোগদান ছিলো) - খতমই সমস্ত সমস্যার সমাধান।
  • aranya | 154.160.226.53 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ১১:৩৯587246
  • এই লোকটি, কাদের মোল্লা, মাত্র ৩০০ মত মানুষের মৃত্যুর কারণ। ধর্ষণ ইঃ সামান্য অপরাধ বাদ-ই দিলাম। শাহবাগের আন্দোলনকারীরা বোধহয় জানতে চায়, দেশের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি এর হবে না কেন ??? তাদের এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের মনে হচ্ছে যে ন্যায়বিচার হয় নি।
    আর ন্যায়বিচার যে অনেক সময় হয় না, তা আমরা সবাই জানি।

    বিপ্লব বা অন্য কেউ সম্ভব হলে কাদের মোল্লার বিচারের পূর্ণাঙ্গ রায় বা রায়ের সংক্ষিপ্তসার যদি এখানে পোস্ট করেন, ভাল হয়। কেন বিচারক একটা নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান দিচ্ছেন, সেটা সাধারণত রায়ে বলা থাকে।

    দেশের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি (সে ফাঁসী -ই হোক বা অন্য কিছু ) কেন এই 'কসাই'-কে দেওয়া হল না, জানতে ইচ্ছে হয়।
  • siki | 132.177.153.136 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ১১:৪৬587257
  • শুদ্ধ আর বিপ্লব, দুজনকেই ধন্যবাদ এই লেখাদুটির জন্যে।
  • কল্লোল | 111.63.152.133 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ১২:২৭587154
  • অরণ্য।
    আমরা বিচার চাইতেই পারি। বিচারের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে আবার বিচার চাইতে পারি (জেসিকা লাল মামলা দ্রষ্টব্য), কিন্তু নির্দিষ্ট শাস্তি চাইতে পারি কি?
  • ম্যাক্সিমিন | 69.93.199.120 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ১২:৫৩587165
  • @ বিপ্লব রহমান

    "দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদির রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে পুলিশ যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে, তাকে ‘নির্বিচার গণহত্যা’ ছাড়া মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের দিক থেকে আর কিছুই বলা যায় না। বিক্ষোভ ও মিছিল দেখলেই গুলি করার নির্দেশ পালন করছে পুলিশ। মনে হচ্ছে বাংলাদেশে ‘হত্যার উত্সব’ চলছে। কাদের মোল্লার রায়ে কেন তাকে ফাঁসি দেয়া হলো না, এ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারির ছয় তারিখ থেকে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। দাবি করছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার নয়; যেভাবেই হোক ফাঁসি দিতে হবে। ফাঁসির রায় ছাড়া শাহবাগ ঘরে ফিরবে না। আদালতের ওপর এ অন্যায় চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এটা ঘটছে প্রকাশ্যে। পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ক্ষমতার চাপ।"

    এর আগে একটা কোলোন আছে। তার আগে -- তোমারে বধিবে যে থেকে শুরু করে ম্যাডাম জিয়া অবধি -- বেশ কয়েক প্যারাগ্রাফ একটানা বিপ্লব রহমানের লেখা। পরের লাইনটি মিস হয়ে গিয়েছিল। ফিরে গিয়ে আরেক বার পড়লাম। আমার মনে হয় কোট দেওয়া নেহাত জরুরি। কারণ হল, কে কবে কী কী বলেছিলেন, তাঁর মতাদর্শ আগে কী ছিল, সবাই তা নাও জানতে পারে। তাছাড়া লোকজন মত বদলও করতে পারেন, করে থাকেন।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ২০:১১587172
  • #ম্যাক্সিমিন,

    পাঠ ও প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।

    টইয়ের এই এক অসুবিধা, ব্লগের মতো ব্লোল্ড, কোড, লিংক, ছবি -- কিছুই এখানে আসে না। মুক্তমনার লিংক ধরে মূল লেখাটি পড়লে দেখবেন, সেটি ঠিকই আছে, বুঝতে সমস্যা হয় না। উন্মোচন ডট নেট-এ একই নোট পড়তে পারেন। সেখানে ফ.ম সংক্রান্ত একটি মারাত্নক ছবি আর্কাইভ থেকে দেওয়া আছে; ছবির সূত্র, জামাতের ওয়েব সাইট :

    ______________________________
    মুখ ও মুখোশ…
    লিখেছেন: বিপ্লব রহমান • প্রকাশকাল: 5 মার্চ 2013 - 7:25পূর্বাহ্ন

    http://unmochon.net/node/2160
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ২০:১৪587173
  • ফরহাদ মজহার, আপনি আমাদের অনুভূতির সাথেও বেঈমানি করেছেন...
    লিখেছেন: ইরফানুর রহমান রাফিন • প্রকাশকাল: 5 মার্চ 2013 - 4:29পূর্বাহ্ন

    http://unmochon.net/node/2159
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ২০:২৪587174
  • আরেক টইয়ে # দ- এর একটি মন্তব্য ও আমার প্রতি মন্তব্য:

    ___________________________________________

    # দ, ["কিন্তু এইটা খুব খুবই অদ্ভুত, অন্তত জনা পাঁচেকের কাছে শুনলাম যে কিছু এক্সট্রিমিস্ট কম্যুনিস্ট গ্রুপ নাকি জামাতকে সাপোর্ট করে। এখনও তারা নাকি সক্রিয়ভাবেই হিংস্র কাজ কম্ম করছে।"]

    ____
    ভুল শুনেছেন। খুব নিশ্চিত হয়ে বলছি, বাংলাদেশের কোনো বাম বা উগ্র বাম বা কোনো কমিউনিস্ট গ্রুপ জামাত বা অন্য মৌলবাদকে সমর্থন করে না। আদর্শিকভাবে তো একেবারেই নয়।

    আর ফরদাদ মজহার কোনো কালেই কমিউনিস্টও ছিলেন না। বাম তাত্ত্বিক তো ননই। নিজের বিভ্রান্তিসমূহকে প্রগতির প্রলেপ দিতে তিনি মাকর্সবাদ ধার করেছিলেন [এখনো মাঝে মাঝে করেন] -- এইমাত্র। বিষয়টি এখনকার ঝিংচাক ব্যান্ড গ্রুপের গানের মতো। একটি 'ডিফরেন্ট টাচ' দিতে তারা যেমন বিকৃত সুর ও কথায় লালনের গান 'রিমিক্স' বা 'রিমেক' করেন, সেরকম। ...কিন্তু কোনোভাবেই সেগুলো বাউল গান বৈ তো নয়!

    ফ.ম. ও তাই। তার লেখায় মার্কসীয় উপাদান, বলা ভালো 'ফ্লেভার' থাকে। এটি হচ্ছে 'গনিমতের মাল' ফতোয়ায় ১৯৭১ এর গণধর্ষনকে জামাতী ফতোয়া বৈধতা দেওয়ার চেষ্টার মতোন। ফ.ম. এ অহরাত্র মার্কস টেনে বিভ্রান্তি বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

    এতে মূল বিভ্রান্তি সফল না হলেও 'কমিউনিস্ট' তকমাটি তো থেকে যায় [ সেটিও বিভ্রান্তির নয়া রূপ], এই যেমন এই টইয়ে কেউ কেউ তাকে বাম তাত্ত্বিক/মাকর্সিস্ট [ এর আগে কুলদা রায় তাকে চীনা কমিউনিস্ট] হিসেবে চিহ্নিত করেছেন! তবে রায় বাবুর ফ.ম ফোবিয়াটি প্রায় বিকারের পর্যায়ের, সেটি অবশ্য চলতি আলোচনায় অপ্রসঙ্গ। :ডি
    http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1362056208494#.UTYCzaLcoSs
  • ম্যাক্সিমিন | 69.93.199.120 | ০৫ মার্চ ২০১৩ ২১:৩১587175
  • হ্যাঁ উন্মোচন ডট নেট দেখে এলাম। ছবিও। ;)
  • শুদ্ধ | 127.194.240.251 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ০০:১৮587177
  • আমার বোধহয় অন্য টইতেই দেওয়া উচিত ছিল। তখন আর মাথায় ছিল না। যাই হোক, দিয়ে ফেলেছি যখন...

    কল্লোলদা,
    আপনি জানেন যে আমি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বিরোধী। এখানেও আমি ফাঁসী চাই এ কথা কিন্তু বলছি না। যে কথা বলছি তা আমার কাছে খুব পরিস্কার।

    এই যে ব্যবস্থা এখানে আদালত ও আইনী বিচার প্রক্রিয়া সমালোচনার উর্ধে না। হওয়ার কোনো কারণই নেই। তাই কোনো আদালত কোনো একটি রায় দিলেই তা আমি গ্রহণ করে নেব এমন একদম হবে না। আমি নিজে যদি সেই রায়ের সঙ্গে একমত হই তাহলেই তাকে গ্রহণ করবো নিজের যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে। এখানেও যেমন ফাঁসীর রায়টির সঙ্গে আমি একমত নই। এটা বোধহয় খুব দ্ব্যর্থহীন ভাষাতেই লিখেছি দাদা।

    কিন্তু এর মানে এই না যে আমি শাহবাগের দাবীক অশ্রদ্ধা করছি। বরং আমার সীমিত বোধ-বুদ্ধি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে দেখেছি যে এই হত্যা করার দাবী জনতার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবেই আসছে। কেন আসছে তার কারণ বলতে গিয়ে আমি আমার চারপাশের নির্মাণগুলিকে খতিয়ে দেখছি।

    যে কারণে, যে বর্বরতার কারণে বাংলাদেশ বা শাহবাগের মানুষ এত ক্ষিপ্ত তাকে আমি দেখছি। এত অজস্র হিংস্রতা যাঁরা সয়েছেন তাঁরা বললেই সে সব ভুলে যাবেন না। এবং প্রাথমিক ভাবে চারপাশের যে বলশালীর অত্যাচারলিপ্ত দুনিয়া সেখানে বল-ই যখন প্রধান অর্জন, সেখানে বলের মাধ্যমেই সমাধান চাইবেন। এখানে আমি তাঁর সঙ্গে একমত না হলেও আমার প্রথম কাজ হওয়া উচিত তাঁর কষ্টকে অনুধাবন করা বলেই আমি মনে করি। এবং সেটা করলে আমি প্রথমেই তীব্রভাবে তাকে আক্রমণ করার দিকে যাব না। কেন না সে আমার শত্রু না, বন্ধু। সে আহত। আগে আমি তাকে বলতে দেব, তারপরে তাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নেব। তারও পরে আমি বলবো যে আমি এই ভাবছি এই এই কারণে।

    শাহবাগ ফাঁসী চেয়েছে বহুকাল বহু কিছু সহ্য করে। বলশালীর বলের অত্যাচার সহ্য করে। নিজের অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে ফাঁসী চেয়েছে। দাবীটির সঙ্গে আমি একমত নই, কিন্তু তা বলে একে আমি পাব্লিক লিঞ্চিং মেন্টালিটি বলতে পারবো না। এই ধরণের তত্ত্বায়ণের গোড়ায় গলদ হচ্ছে এ লিনিয়ার যুক্তির কাঠামোয় চলে। যাকে যে মর্যাদা দেওয়া দরকার তা সে দেয় না। অনেকটা ছাগলের দাড়ি আছে ও রবীন্দ্রনাথের- অতএব রবীন্দ্রনাথ একটি ছাগল জাতীয় ফ্যালাসি।

    আমি দেখছি শাহবাগের যুক্তির সামাজিক-রাজনৈতিক ঐতিহাসিকতা। আমরা যারা ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট-এর সমর্থক নই তারা কতগুলো সমস্যা অন্যত্র বোধ করি। আমি সামগ্রিক হত্যার বিরোধী হলে স্রেফ জীবনধারণের জন্য বাঁচাটাই কঠিন। আমরা কেউ তা নই। আমরা কোনো না কোনো প্রাণ হত্যা করেই বেঁচে থাকি।

    কিন্তু মনুষ্যত্ব বিকাশের একটি স্তর হচ্ছে এই হত্যাকে প্রশ্ন করা। তার কারণ হত্যার ফাইনালিটি। একটি প্রাণকে ধ্বংস করলে তা ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের অসাধ্য। তাকে কমপেনসেট করার এক বাজারী মনোবৃত্তি ছাড়া আমাদের কোনো সম্বল নেই। তো যা আমি পুন;সৃজন করতে সক্ষম নই, তা ধ্বংস আমি কি করে করি? এই দ্বন্দ্বটা এড়ানো যায় না। জীবনের ক্ষেত্রে আমরা এটাকে এড়িয়েই জীবন ধারণ করে থাকি। তাহলে সমাজে বা রাষ্ট্রনৈতিক সংঘাতে কি করবো?

    একটা সমস্যার সমাধান করতে গেলে আগে আমার তো বাঁচা জরুরী। না হলে সেটা আমি আর সমাধান করবো কি করে? মানুষকে বাঁচতে হচ্ছে বলে সে প্রাণ ধ্বংস করছে। এবারে না ধ্বংস করে যদি কোনো উপায় আসে তার দিকে অবশ্যই নজর দেওয়ার দরকার। কিন্তু সব কাজ আমি একা করতে পারবো না। জীবনের শুরুর দিকেও যদি এই ভাবনাটা আসতো যে এটা একটা চূড়ান্ত মৌলিক সমস্যা তাহলে হয়তো একটা চেষ্টা করতে পারতাম, বিজ্ঞান নিয়ে আরো পড়ে-টড়ে। আজ আর উপায় নেই। অন্য কেউ কোনোদিন এর সমাধান করবেন এই আশায় ছেড়ে দেওয়া ছাড়া!

    কিন্তু রাষ্ট্রনৈতিক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আছে। সেই সমস্যা আমাদের অস্তিত্বের সমস্যা সব সময়ে না। কসাই মোল্লার মত লোকের শক্তি তার ব্যাক্তিগত সামর্থ্য না, ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকেই যদি বদলানো যায় তাহলে সে তো কীটাণূকীট। এই জায়গা থেকে শাহবাগের থেকে আমার পরবর্তী দাবীর প্রত্যাশা। তার ক্রোধকে সম্মান জানিয়েই প্রত্যাশা যে সে, যে জ্বলন্ত মানবতার আলো জ্বালতে চাইছে শাস্তি বিধান দিয়ে, তাকেও একবার প্রশ্ন করে দেখুক। কসাই মোল্লার ফাঁসী বড় না ব্যবস্থা বদল বড়।

    একটা ফাঁসী ব্যবস্থা বদলে দেবে না। কিছু ভয় দেখাবে মাত্র। তাও সেই ডেটারেন্ট-এ যে কাজ হয় না খুব বেশী তা এতদিনে আমাদের জেনে যাওয়ার কথা। ন্যুরেমবার্গের আদালত, হিটলার পর্ব পেরিয়ে যাবার পরেও নাজি-ফ্যাসিস্ট প্রবণতা পৃথিবীর শাসকদের মধ্যে কমেনি। তখনি কমবে যখন শাসক জানবে সে শাসকই না, শুধু সত্যি সত্যি প্রতিনিধি মাত্র। কথার কথায় নয়। তাহলে কসাই মোল্লার ফাঁসী কি সব বদলে দেবে? দিতে পারে? যদি ইতিহাস নিষ্ঠ থাকি তাহলে দেবে না বলেই আমি বুঝি। তাই ফাঁসীর বিরোধ।

    এটা ফরহাদ মজহারের মত লোকেরা জানেন। কিন্তু তারপরেও নিজেদের স্বার্থে পিছিয়ে যান না যুক্তিকে দুর্ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়াশীল তত্ত্ব বানাতে। এবং সবচেয়ে বড় কথা, এই স্ট্যান্ড এঁরা নিয়ে মানুষের সঙ্গে আমাদের কথা বলার সম্ভাবনাকে লোপ করে দেন। অন্যদিকের যারা প্রতিক্রিয়াশীল, যারা এই ধরণের ভীড়ের ভেতর লুকিয়ে রাখে নিজেদের দাঁত-নোখ, সময় মতন আন্দোলনকে ছিনিয়ে নেয়, তাদের সুবিধে করে দেয় এই কথাগুলোকে প্রতিক্রিয়াশীলতা হিসেবে চিহ্নিত করার। তাই এই বদ তত্ত্বকে আলাদা করার জন্যেই লিখেছি।
  • শুদ্ধ | 127.194.240.251 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ০০:১৮587176
  • আমার বোধহয় অন্য টইতেই দেওয়া উচিত ছিল। তখন আর মাথায় ছিল না। যাই হোক, দিয়ে ফেলেছি যখন...

    কল্লোলদা,
    আপনি জানেন যে আমি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বিরোধী। এখানেও আমি ফাঁসী চাই এ কথা কিন্তু বলছি না। যে কথা বলছি তা আমার কাছে খুব পরিস্কার।

    এই যে ব্যবস্থা এখানে আদালত ও আইনী বিচার প্রক্রিয়া সমালোচনার উর্ধে না। হওয়ার কোনো কারণই নেই। তাই কোনো আদালত কোনো একটি রায় দিলেই তা আমি গ্রহণ করে নেব এমন একদম হবে না। আমি নিজে যদি সেই রায়ের সঙ্গে একমত হই তাহলেই তাকে গ্রহণ করবো নিজের যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে। এখানেও যেমন ফাঁসীর রায়টির সঙ্গে আমি একমত নই। এটা বোধহয় খুব দ্ব্যর্থহীন ভাষাতেই লিখেছি দাদা।

    কিন্তু এর মানে এই না যে আমি শাহবাগের দাবীক অশ্রদ্ধা করছি। বরং আমার সীমিত বোধ-বুদ্ধি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে দেখেছি যে এই হত্যা করার দাবী জনতার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবেই আসছে। কেন আসছে তার কারণ বলতে গিয়ে আমি আমার চারপাশের নির্মাণগুলিকে খতিয়ে দেখছি।

    যে কারণে, যে বর্বরতার কারণে বাংলাদেশ বা শাহবাগের মানুষ এত ক্ষিপ্ত তাকে আমি দেখছি। এত অজস্র হিংস্রতা যাঁরা সয়েছেন তাঁরা বললেই সে সব ভুলে যাবেন না। এবং প্রাথমিক ভাবে চারপাশের যে বলশালীর অত্যাচারলিপ্ত দুনিয়া সেখানে বল-ই যখন প্রধান অর্জন, সেখানে বলের মাধ্যমেই সমাধান চাইবেন। এখানে আমি তাঁর সঙ্গে একমত না হলেও আমার প্রথম কাজ হওয়া উচিত তাঁর কষ্টকে অনুধাবন করা বলেই আমি মনে করি। এবং সেটা করলে আমি প্রথমেই তীব্রভাবে তাকে আক্রমণ করার দিকে যাব না। কেন না সে আমার শত্রু না, বন্ধু। সে আহত। আগে আমি তাকে বলতে দেব, তারপরে তাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নেব। তারও পরে আমি বলবো যে আমি এই ভাবছি এই এই কারণে।

    শাহবাগ ফাঁসী চেয়েছে বহুকাল বহু কিছু সহ্য করে। বলশালীর বলের অত্যাচার সহ্য করে। নিজের অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে ফাঁসী চেয়েছে। দাবীটির সঙ্গে আমি একমত নই, কিন্তু তা বলে একে আমি পাব্লিক লিঞ্চিং মেন্টালিটি বলতে পারবো না। এই ধরণের তত্ত্বায়ণের গোড়ায় গলদ হচ্ছে এ লিনিয়ার যুক্তির কাঠামোয় চলে। যাকে যে মর্যাদা দেওয়া দরকার তা সে দেয় না। অনেকটা ছাগলের দাড়ি আছে ও রবীন্দ্রনাথের- অতএব রবীন্দ্রনাথ একটি ছাগল জাতীয় ফ্যালাসি।

    আমি দেখছি শাহবাগের যুক্তির সামাজিক-রাজনৈতিক ঐতিহাসিকতা। আমরা যারা ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট-এর সমর্থক নই তারা কতগুলো সমস্যা অন্যত্র বোধ করি। আমি সামগ্রিক হত্যার বিরোধী হলে স্রেফ জীবনধারণের জন্য বাঁচাটাই কঠিন। আমরা কেউ তা নই। আমরা কোনো না কোনো প্রাণ হত্যা করেই বেঁচে থাকি।

    কিন্তু মনুষ্যত্ব বিকাশের একটি স্তর হচ্ছে এই হত্যাকে প্রশ্ন করা। তার কারণ হত্যার ফাইনালিটি। একটি প্রাণকে ধ্বংস করলে তা ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের অসাধ্য। তাকে কমপেনসেট করার এক বাজারী মনোবৃত্তি ছাড়া আমাদের কোনো সম্বল নেই। তো যা আমি পুন;সৃজন করতে সক্ষম নই, তা ধ্বংস আমি কি করে করি? এই দ্বন্দ্বটা এড়ানো যায় না। জীবনের ক্ষেত্রে আমরা এটাকে এড়িয়েই জীবন ধারণ করে থাকি। তাহলে সমাজে বা রাষ্ট্রনৈতিক সংঘাতে কি করবো?

    একটা সমস্যার সমাধান করতে গেলে আগে আমার তো বাঁচা জরুরী। না হলে সেটা আমি আর সমাধান করবো কি করে? মানুষকে বাঁচতে হচ্ছে বলে সে প্রাণ ধ্বংস করছে। এবারে না ধ্বংস করে যদি কোনো উপায় আসে তার দিকে অবশ্যই নজর দেওয়ার দরকার। কিন্তু সব কাজ আমি একা করতে পারবো না। জীবনের শুরুর দিকেও যদি এই ভাবনাটা আসতো যে এটা একটা চূড়ান্ত মৌলিক সমস্যা তাহলে হয়তো একটা চেষ্টা করতে পারতাম, বিজ্ঞান নিয়ে আরো পড়ে-টড়ে। আজ আর উপায় নেই। অন্য কেউ কোনোদিন এর সমাধান করবেন এই আশায় ছেড়ে দেওয়া ছাড়া!

    কিন্তু রাষ্ট্রনৈতিক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আছে। সেই সমস্যা আমাদের অস্তিত্বের সমস্যা সব সময়ে না। কসাই মোল্লার মত লোকের শক্তি তার ব্যাক্তিগত সামর্থ্য না, ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকেই যদি বদলানো যায় তাহলে সে তো কীটাণূকীট। এই জায়গা থেকে শাহবাগের থেকে আমার পরবর্তী দাবীর প্রত্যাশা। তার ক্রোধকে সম্মান জানিয়েই প্রত্যাশা যে সে, যে জ্বলন্ত মানবতার আলো জ্বালতে চাইছে শাস্তি বিধান দিয়ে, তাকেও একবার প্রশ্ন করে দেখুক। কসাই মোল্লার ফাঁসী বড় না ব্যবস্থা বদল বড়।

    একটা ফাঁসী ব্যবস্থা বদলে দেবে না। কিছু ভয় দেখাবে মাত্র। তাও সেই ডেটারেন্ট-এ যে কাজ হয় না খুব বেশী তা এতদিনে আমাদের জেনে যাওয়ার কথা। ন্যুরেমবার্গের আদালত, হিটলার পর্ব পেরিয়ে যাবার পরেও নাজি-ফ্যাসিস্ট প্রবণতা পৃথিবীর শাসকদের মধ্যে কমেনি। তখনি কমবে যখন শাসক জানবে সে শাসকই না, শুধু সত্যি সত্যি প্রতিনিধি মাত্র। কথার কথায় নয়। তাহলে কসাই মোল্লার ফাঁসী কি সব বদলে দেবে? দিতে পারে? যদি ইতিহাস নিষ্ঠ থাকি তাহলে দেবে না বলেই আমি বুঝি। তাই ফাঁসীর বিরোধ।

    এটা ফরহাদ মজহারের মত লোকেরা জানেন। কিন্তু তারপরেও নিজেদের স্বার্থে পিছিয়ে যান না যুক্তিকে দুর্ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়াশীল তত্ত্ব বানাতে। এবং সবচেয়ে বড় কথা, এই স্ট্যান্ড এঁরা নিয়ে মানুষের সঙ্গে আমাদের কথা বলার সম্ভাবনাকে লোপ করে দেন। অন্যদিকের যারা প্রতিক্রিয়াশীল, যারা এই ধরণের ভীড়ের ভেতর লুকিয়ে রাখে নিজেদের দাঁত-নোখ, সময় মতন আন্দোলনকে ছিনিয়ে নেয়, তাদের সুবিধে করে দেয় এই কথাগুলোকে প্রতিক্রিয়াশীলতা হিসেবে চিহ্নিত করার। তাই এই বদ তত্ত্বকে আলাদা করার জন্যেই লিখেছি।
  • কল্লোল | 125.241.82.28 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ০৭:৪৫587178
  • শুদ্ধ। আমি আগেই লিখেছি বিচারের রায় পছন্দ না হলে আবার বিচার চাওয়াই যায় (জেসিকা লাল মামলা)। কিন্তু আমি শাস্তি ঠিক করে দিতে পারি না। মানুষই যদি শাস্তি ঠিক করে দেবেন তো বিচারের প্রয়োজন কি?
    ওঁরা কেন ফাঁসী চাইছেন তা বুঝতে আমার কোন অসুবিধা নেই। তাও আগেই লিখেছি। কিন্তু এই চাওয়াটার মধ্যে একটা ফাঁক আছে। আমি একইসাথে বিচার ও বিচারন্তে শুধুই ফাঁসী চাইতে পারিনা। তা না হলে দাবী করতে হয় - বিচার-টিচার নয়। এদের অপরাধ যথেষ্ঠভাবে প্রমাণিত। তাই স্রেফ ফাঁসী। তা কিন্তু কেউই বলছে না।
    ফরহাদ মজহারের অবস্থান ঠিক নয় বলে আমি মনে করি। তিনি যে অবস্থান থেকে গোটা আন্দোলনের বিরোধীতা করছেন তা দ্ব্যার্থহীনভাবে নিন্দনীয়। কিন্তু আমার আপত্তি ফাঁসী, ফাঁসী শুধুই ফাঁসীতে। এবং সেটা মৃত্যুদন্ড বিরোধী বলে নয়। আমি জানি কেন চারুবাবু বলেছিলেন "খতমই সমস্ত সমস্যার সমাধান"। তার পিছনের ইতিহাসও ঐ অবিচার-অত্যাচার আর তার বিরুদ্ধে আন্দোলন থাকা সত্বেও তা নির্মূল না হওয়া। কিন্তু সময় প্রমাণ করে দিয়েছে - তিনি মারাত্মক রকমের ভুল ছিলেন। তাতে নকশাল আন্দোলন তার সততা ও মান্যতা হারায় না। কিন্তু ভুলটা ভুলই।
  • h | 127.194.236.89 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ০৮:১৩587181
  • আমার ভালো লাগে নি, ব্লগ যেরকম হয় প্রভূত ইমোশনাল গ্যাসে ভর্তি। অ্যানালিসিসের বালাই নাই।
  • h | 127.194.236.89 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ০৮:১৭587182
  • খুন করলেও সততা হারালো না টা কি করে হয় বুঝলাম না কল্লোল দা। শাহবাগ অন্তত চারুবাবুর থেকে সৎ, বিচার ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই যা চাইবার চেয়েছে এবং নিজেরা অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামে নি।
  • h | 127.194.236.89 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ০৮:১৯587183
  • শুদ্ধ আমারে একটা কথা কও। সামাজিক জীবনে জামাত কি খুব ই উৎপাত বাড়িয়েছে গত পাঁচ দশ বছরে? নইলে এই দাবী জনপ্রিয়তা পায় কি করে, বিশেষ করে অল্পবয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে, যারা স্বাভাবিক ভাবেই দেশের ভালো চায়?
  • | 24.97.170.76 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ০৮:২৬587184
  • হ্যাঁ বোধি বাড়িয়েছে। খুবই বাড়িয়েছে। কখনও খালেদা খালাম্মার আঁচলের পেছন দিয়ে কখনও সরাসরি
  • Ishan | 60.82.180.165 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ০৯:১২587185
  • চারুবাবু অসৎ কেন? বা চে গুয়েভারা। বা ক্ষুদিরাম সূর্য সেন। বা ধরুন লাদেন। বিচার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করলে নৃশংস, খুনি, নকশাল, সন্ত্রাসবাদী, বিপ্লবী যা খুশি হতে পারে। কিন্তু অসৎ কেন?
  • চান্দু মিঁঞা | 127.193.47.107 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ০৯:২৪587186
  • আবার প্রথম বর্গে প্রত্যাবর্তন, সৎ কারে কয়?
  • কল্লোল | 111.62.31.96 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ১০:২৮587187
  • হনু।
    চারুবাবু যা বিশ্বাস করেছেন, তাই বলেছেন, তাই করেছেন। তিনি মহামূর্খ, সন্ত্রাসবাদী, আবেগসর্বস্ব এমনকি হিপোপটেমাসও হতে পারেন। অসৎ নন। অদ্যোপান্ত সৎ। নিজের অবিমৃষ্যকারীতায় অটল থেকে শহীদ হয়েছেন।
    শাহবাগ বিচার চাইছে আগে থেকে শাস্তি ঠিক করে। এটা তাদের চাওয়াকে সামান্য হলেও ধূসরিত করেছে।
  • h | 213.132.214.156 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ১১:৩৩587188
  • গোঁয়ার কে কেন অসৎ বলব না বুঝিনি বলে। তার নিজের প্রতি সততার মূল্য এতটাই বেশি, যে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই, এটা কি ধরণের সততা বুঝলাম না। প্লাস আরেকটা কারণ আছে শুধু চারু বাবু কে না, বিভিন্ন নকু কে অসৎ বলার। আমি এখনো অব্দি কোনো নকু নেতার আত্মজীবনী পড়িনি বা শুনিনি, যিনি বলছেন আমি অমুক খুনটায় জড়িত ছিলাম ঃ-) হাউ ডু উই নো দেয়ার ইজ রিমোর্স, হোয়ার ইজ দ্য স্পেসিফিক কনফেসন? হাউ আর দে ডিফারেন্ট ফ্রম আদার ক্রিমিনাল্স?

    কিন্তু এগুলো অন্য প্রসংগ। ইসু এই যে শাহবাগ আন্দোলনে আমি চারটে কারণে মুগ্ধ আর গোটা তিনেক কারণে বিস্মিত।

    - স্বাধীনতা আন্দোলনের এতদিন পরে এত অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস কে এত গুরুত্ত্ব দিচ্ছে , ভাবা যায় না , টোটাল কুর্নিশ।

    -- মারামারি করে নি, ইন্ক্রেডিবল, রাজীব এর মৃত্যুর পরেও এই ছেলে মেয়েরা মারামারি করে নি। হ্যাঁ প্রশাসন কিছুটা প্রোটেকশন দিয়েচে, কিন্তু সত্যি কতটুকু দিতে পেরেছে সন্দেহ আছে, হরতাল এর সময়ে তো কত খুন জখম করছে, টুক টাক যা খবর পাচ্ছি, মহল্লার সাম্প্রদায়িক দের হুমকি উপেক্ষা করে হরতালের সময়ে কাজে গেছে। ভাবা যায় না।

    -- আওয়ামী লীগ সরকার কে প্রশ্ন করতে ছাড়ে নি। সরাসরি বলছে যে হোয়াট ইজ দ্য ডিল, কথার খেলাপ হচ্ছে কেন?

    --ছাত্র ছাত্রী ছাড়াও সমাজের অন্য অংশের একটা পপুলেশন কে পথে নামানোর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এবং এটা মনে করিয়েছে, যে আপনাদের আরেকবার স্যাক্রিফাইস করতে হতে পারে। এটা কম কথা না। যেখানে রাজনীতি মানেই কোরাপশন, সেখানে এই পার্টিসিপেশন এর সচেতনতা বাড়ানো এটা কম কথা না।

    যে কারণে আমি বিস্মিত সেগুলো এইঃ

    -- ফাঁসী চাওয়া , এটা নিয়ে এত কথা হয়েছে আর হ্যাজাতে পারছি না।
    -- এক্স্ট্রা জুডিশিয়াল অথরিটি হওয়ার প্রিসিডেন্স তৈরি করা টা ইম্যাচিওর্ড হয়েছে।
    -- দাবী আদায়ের ডেড লাইন ঘোষণা জাস্ট ভুল হয়েছে, জুরিস্প্রুডেন্স কখনো ডেড লাইন নিয়ে কাজ করতে পারে না।
    --অর্থনইতিক দাবী দাওয়া কে জুড়তে পারে নি। সেটা অরাজনইতিক ফোরামে হয়তো সব সময়ে সম্ভব না। কিন্তু একটা দেশে বেশির ভাগ মানুষ কে জুড়তে গেলে শুধু স্বাধীনতার স্পিরিট ইনভোক করলে হয় না। এতে যেটা হয়, য ট্র্যাডিশনাল দল গুলোর ভূমিকায় এরা ক্ষুব্ধ, তাদের কে তাদের খেলার জমি ছেড়ে দেওয়া হল। তারা এবার পুনরায় প্রশানএর বাস্তবতার নাম করে ঢ্যামনামো করবে, এবং লার্জিস ডিস্ট্রিবিউট করার জন্য নানা বাজে সোশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করবে এবং নেটওয়ার্কের বাইরের লোকের ডিস অ্যাফেকশন বাড়াবে।
    -- হোয়ার ইজ দ্য কল ফর ক্লোজার ওন উন্ড্স অফ সিভিল ওয়ার অর ক্রাইম এগেন্স্ট হিউম্যানিটি। মডেল ছিল না তা তো নয়, ট্রুঠ অ্যান্ড রিকন্সিলিয়েশন কমিশন মডেল ছিল।
    -- প্রতিবেশী দেশের সরকার বা প্রগতিশীল কারুর উপরেই কোনো ভরসা যে শাহবাগ করছে না, এটা পরিষ্কার করা উচিত ছিল। কারণ ইন্টারভেনশন এর লজিক জেনেরালি ঐতিহাসিক ভাবে ডেন্জারাস।

    অ্যানালিস্ট হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতার কথা বলি। আমি জিন্দেগী তে বাংলা দেশ যাই নি। যাব কিনা সন্দেহ। আমার প্রিয় বন্ধু র সংগে এখন আর যোগাযোগ নাই। সে কোথায় জানি না। তাছাড়া হঠাত করে একটা দেশে যাবই বা কেন কাজ না থাকলে বা বেড়ানোর পয়সা না থাকলে। জাস্ট জানি না। সুতরাং আমার কোন অথেন্টিসিটি নাই। দাবী করি ও নি। তাচাড়া এর আগে কখনো পুলিশ বা মিলিটারির ভূমিকা নিয়ে বিনা প্রশ্নের যুব আন্দোলন দেখিনি, আমি স্লাইটলি বিস্মিত। আমি ড্রিপ্ত ভংগিতে সংরক্ষনশীল বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো, আর পুলিশ বলবে, চিন্তা করবেন না কমরেড, আপনাকে কেউ ক্যালালে আমি আছি, এ আন্দোলন আমার কাছে নতুন। হতে পারে রাষ্ট্রে র এই অ্যাপারেটাস ও তিতি বিরক্ত , মৌলবাদী দের হাতে নিয়ন্ত্রিত হতে হতে। হতেই পারে। জানি না। তবে নতুন রকম।

    বাংআলী কেন কোন জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি তে আমার বিন্দুমাত্র ভরসা নাই। কালচারাল প্রোডাকশনের বড় মার্কেটের জন্য এটা ইম্পর্টান্ট হতে পারে, কিন্তু একটা দেশ কে সংহত রাখতে এটা যে না হলেও চলে এটা পৃথিবীর নানা দেশে প্রমাণিত। এক জাতি এক প্রাণ এক ভাষার দিন গিয়াছে। হ্যাঁ এটা মেনে নিতে অসুবিধে নাই, শাহবাগের যুবা দের হাতে সংখ্যা লঘুরা অনেক সেফ রাদার দ্যান এনি আদার পোলিটিকাল ফর্মেশন, বাট হোয়ার ইজ দ্য ক্লিয়ার আর্টিকুলেশন? মে বি দেয়ার ইজ, কিন্তু মূল দাবীর অন্তর্গত হলে ভালো হত।

    লাস্টলি শুদ্ধ যার লেখার সমালোচনা করেছে, সেটা সংগত কারণেই করেছে, তবে যে সব পোস্ট এ সুইপিং স্টেটমেন্ট কম দিয়েছেন সেগুলো বেশি ভালো লেগেছে। ইত্যাদি।
  • aranya | 154.160.130.16 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ১১:৫০587189
  • 'পুলিশ বলবে, চিন্তা করবেন না কমরেড, আপনাকে কেউ ক্যালালে আমি আছি, এ আন্দোলন আমার কাছে নতুন। '

    - আমার মনে হয় পুলিশ মোটের ওপর সরকারের নির্দেশে চলে, ভারতের পুলিশের মতই। সরকারে এখন আওয়ামী লিগ আছে যারা সামনের নির্বাচনে জিততে চায়, শাহবাগ আন্দোলনের ঘাড়ে ভর করে, তাই পুলিশকে অর্ডার দেওয়া আছে আন্দোলনকারীদের প্রোটেকশন দেওয়ার।

    'হ্যাঁ এটা মেনে নিতে অসুবিধে নাই, শাহবাগের যুবা দের হাতে সংখ্যা লঘুরা অনেক সেফ রাদার দ্যান এনি আদার পোলিটিকাল ফর্মেশন, বাট হোয়ার ইজ দ্য ক্লিয়ার আর্টিকুলেশন? মে বি দেয়ার ইজ, কিন্তু মূল দাবীর অন্তর্গত হলে ভালো হত।'

    - কোন একটা দাবীতে অসম্প্রায়দিকতা-র কথা আছে, যদ্দুর মনে পড়ছে।
  • dukhe | 212.54.74.119 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ১১:৫৬587190
  • চারুবাবু চে সূর্য সেন সবাই হেব্বি অসৎ নাকি? আমি এদের কারো আত্মজীবনী পড়ি নাই।
  • aranya | 154.160.130.16 | ০৬ মার্চ ২০১৩ ১১:৫৮587192
  • 'চারুবাবু অসৎ কেন? বা চে গুয়েভারা। বা ক্ষুদিরাম সূর্য সেন। বা ধরুন লাদেন। '

    - এই লিস্টিতে লাদেন ছাড়া অন্য কেউ কি কোন একটা দেশের সাধারণ মানুষকে র‌্যান্ডম মারতে চেয়েছে, যেমন লাদেন চেয়েছে আমেরিকার বা ভারতের মানুষ মারতে (সে মানুষ যে ধর্মের, যে শ্রেণীরই হোক না কেন) ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন