এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ডিটেকটিভ গল্পঃ স্বপনকুমারের ছায়ায়

    ranjan roy
    অন্যান্য | ১৯ মে ২০১৩ | ৬৫২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 24.96.0.5 | ১৯ মে ২০১৩ ০০:৫৫612127
  • [ ডিটেকটিভ গল্প পড়ার শুরু ক্লাস থ্রিতে, স্বপনকুমারের বিশ্বচক্র সিরিজের 'জীবন-মৃত্যু', 'বিকেল ছ'টার শো'তে, বা ওঁর বাজপাখী সিরিজের 'নীল-সমুদ্রে বাজপাখী' ইত্যাদি দিয়ে।
    ডিটেকটিভ দীপক চ্যাটার্জি, তাঁর সহকারী রতনলাল, মলঙ্গা লেনের রেস্টুরেন্ট, কভারে মাথায় ফেল্ট হ্যাট, গ্লাভস পরা হাতে পিস্তল থেকে ওঠা ধোঁয়া আর টেবিলের ওপর মুখ থুবড়ে পড়া চেহারা থেকে চুঁইয়ে পরা রক্তের দলা আমার বালকবয়সে অপরাধ জগতের আলো-আঁধারির জন্যে কী যে শিহরণভরা আকর্ষণ জাগিয়েছিল তা আজ বোঝানো কঠিন। বহুদিন ধরে ভাবছি গুরুদক্ষিণা হিসেবে ওঁর মত কানের পাশ দিয়ে গুলি-বেরনো টান-টান মেলোড্রামাটিক গল্প লিখলে কেমন হয়!
    জানি, পারবো না। যতই হাসাহাসি করি না কেন, অমন লিখতেও একটা স্কিল লাগে আর একটুখানি সাহস। আমার যে দুটোরই বড় অভাব। আর বদলে গেছে সময়, বদলে গেছে পাঠকের রুচি। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কি? গাল দিতে হলেও সবাই একবার স্বপনকুমারকে মনে করবেই, সেটাই প্রাপ্তি।
    মুজতবা আলী পাঁচকড়ি দে'র ডিটেকটিভ গল্পের ভক্ত ছিলেন । আমি হরিদাস পাল নাহয় স্বপনকুমারের। না, কোন তুলনার প্রশ্নই ওঠে না। কোথায় নেতাজি আর কোথায় পেঁয়াজি!
    অনেক ভণিতা হল, এবার জয়গুরু বলে শুরু করছি "মিলেনিয়াম মল"।ঃ)))
  • ranjan roy | 24.96.0.5 | ১৯ মে ২০১৩ ০১:৪০612138
  • মিলেনিয়াম মল
    --------------------
    ১)
    আকাশ মেঘলা থাকায় দিল্লি-রায়পুর ইন্ডিগো ফ্লাইট মানা এয়ারপোর্টে প্রায় আধঘন্টা দেরিতে নেমেছে। বিমানসেবিকার ঘোষণা শেষ হতেই যাত্রীদের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে হ্যান্ডব্যাগ হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো ও মোবাইল অন করে জোরে জোরে কথা বলা শুরু হল। সিঁড়ি লাগতেই প্রায় ঠেলাঠেলি করে নামার পালা। আসতে আসতে সীটগুলো প্রায় খালি হয়ে এল। কিন্তু ২৬ A সীটের যাত্রীটির কোন হেলদোল নেই। সে অলস চোখে চারদিকে চোখ বুলিয়ে আবার হাতের ইংরেজি কাগজে ডুবে গেল। সিনিয়র এয়ার হোস্টেস স্মিতা রাঠোরের ভুরু কুঁচকে উঠেছে। হিসেব মিলছে না। ও এগিয়ে গিয়ে জিগ্যেস করল --ওয়েলকাম টু রায়পুর! মে আই হেল্প য়ু স্যর? এনি প্রবলেম?
    দীর্ঘকায় প্রৌঢ় লোকটি উঠে দাঁড়ায়। কাগজটি সীটের ওপর রেখে ল্যাপটপের ব্যাগটি তুলে হেসে বলে-- নো থ্যাংকস্‌! ইটজ অলরাইট।
    -- এভার বীন টু ছত্তিশগড়?
    লোকটি দু'সেকেন্ড চুপ করে যৌবনের শেষ সীমায় পৌঁছে যাওয়া মহিলাটিকে ঠান্ডা চোখে দেখে নেয়। তারপর এমন ভাবে মাথা নাড়ে যার অর্থ হ্যাঁ, না দুটোই হতে পারে।
    সপ্রতিভ বিমানসেবিকাও কেমন অপ্রস্তুত হয়ে সরে দাঁড়ায়। মাপা পায়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায় লোকটি।
    কনভেয়র বেল্টের সামনে বেশ ভীড়।
    দুটো কালো চারচাকাওলা স্যুটকেস আসতেই একজন মাঝবয়েসি তড়বড় করে একটি নামিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু পেছন থেকে একটি নির্লোম কঠিন হাত তার কব্জি চেপে ধরে।
    চমকে পেছন ফিরে তাকাতেই একটি পোড়খাওয়া দীর্ঘকায় চেহারা হেসে বলে--দ্যাটস্‌ মাইন। চেক দ্য স্লিপ প্লীজ।
    তাড়াহুড়ো করা ভদ্রলোক একনজর দেখে সরি বলে পিছিয়ে যায়। তারপর একই রকম আরো দুটো সুটকেস এগিয়ে গেছে দেখে আবার তড়বড় করে বেল্টের গোড়ার দিকে এগিয়ে যায়।
    লম্বা লোকটি অনায়াসে দুটো চাকাওলা সুটকেস ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসে।
    নতুন ঝাঁ-চকচকে টার্মিনাল। দিল্লির অনুকরণে তৈরি। কিন্তু বাইরে রোদ্দূর বড় কড়া। অগাস্টের শেষ। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কিন্তু গরম কমেনি। এগিয়ে আসা হোটেলের এজেন্ট ও পুলকারের দালালদের ও হাতের ইশারায় নিরুৎসাহিত করে। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে মোবাইলে মেসেজ চেক করে হ্যান্ডব্যাগ থেকে একটি গাঢ় নীল রঙের রোদচশমা পরে নেয়। আর তক্ষুণি একটি ছাইরঙা পুরনো এস্টিম গাড়ি এসে সামনে দাঁড়ায়। একজন সাদা রঙের হাফহাতা শার্ট ও প্যান্টপরা মাঝবয়েসি লোক নেমে এসে বলে-- মিঃ সদাশিবন?
    ও সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ে। ওর হাতের থেকে মালপত্র সব বিনাবাক্যবয়ে ডিকিতে উঠে যায়। ওর চোখ মেপে নেয় গাড়ির নম্বর, মেক ইত্যাদি।
    গাড়ি এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ভিআইপি রোড ধরে প্রায় ছয় কিলোমিটার চলার পর লোকটি প্রশ্ন করে--- আমরা কি মিলেনিয়াম মলের পাশ দিয়ে যাব?
    -- না স্যর! ওটা রিং রোড নম্বর থ্রির পাশে। আমরা একনম্বর দিয়ে সোজা শহরে ঢুকে যাব। এখন আপনি ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে রিল্যাক্স হবেন। বিকেলে মালিক নিজে এসে আপনাকে মল দেখাতে নিয়ে যাবেন। আমার ওপর সেই রকমই অর্ডার আছে।
  • ranjan roy | 24.96.126.205 | ২০ মে ২০১৩ ০২:০৯612149
  • ২)
    রায়পুরের বায়রনবাজার এলাকার যে রাস্তাটি সেক্রেটারিয়েটের দিকে গেছে তার ডানদিকে সেন্ট পলস স্কুলের পেছনে একটা প্রায় দু'একর জমির ওপর সাবেকি ধরণের বিশাল ভিলা। বড় রাস্তার থেকে টের পাওয়া যায় না যে ভেতরে এতটা খালি জায়গা নিয়ে এমন বিশাল বাড়ি আছে।
    ভিলা সাবেকি ধরণের হলেও বাউন্ডারি ওয়াল ও গেট একেবারে হাল আমলের। উঁচু গেট, পাশে গানম্যানের জন্যে খুপরি সেল, তাতে দেয়ালের গায়ে ছোট ছোট ফুটো। দরজা দিয়ে ঢুকেও সিসিটিভির ক্যামেরা কোথায় বসানো হয়েছে বোঝা যাবে না।
    ভেতরে সবুজ লন পেরিয়ে পোর্টিকো। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ছায়াঘেরা বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে তিনজন।সবচেয়ে বয়স্ক ভদ্রলোকের বয়স সত্তর পেরিয়েছে।হীরানন্দ গুলাবচন্দানী পরিবারের সর্বময় কর্তা।
    দেশভাগের দাঙ্গার পর পশ্চিম পাকিস্তানের সিন্ধ ছেড়ে দশবছর বয়সে বাবার হাত ধরে তৎকালীন সিপি অ্যান্ড বেরার ( সেন্ট্রাল প্রভিন্স ) এর একপ্রান্তে ছত্তিশগড় এলাকার সদর মহকুমা রায়পুরে পৌছেছিলেন। তখন বিদর্ভের রাজধানী ছিল নাগপুর। আর ছত্তিশগড় ছিল নাগপুর কমিশনারের অধীন। তার পর নাগপুর আর মূল বিদর্ভ গেল মহারাষ্ট্রে ঢুকে, আর ছত্তিশগড় রইল মধ্যপ্রদেশের অঙ্গ হয়ে। শেষে গত দশবছর হল ছত্তিশগড় আলাদা রাজ্যের মর্যাদা পেয়েছে ,আর রায়পুর হয়েছে রাজধানী।
    এই পরিবর্তনের সুফল পেয়েছে গুলাবচন্দানী পরিবার। একদিকে পূজ্য সিন্ধি পঞ্চায়েতের উনি গত দশবছর ধরে প্রেসিডেন্ট । বার্ষিক সাধারণসভা ও নির্বাচনের সময় ওঁর বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতে সাহস করেনি। আবার মানা টাউনশিপের কাছে শদানী দরবার ট্রাস্টের উনি কোষাধ্যক্ষ। প্রতিবছর গুরুর আবির্ভাব দিবস এবং ঝুলেলাল বা বরুণদেবের পূজোর সময় পাকিস্তান থেকেও প্রচূর তীর্থযাত্রী আসে, বিরাট মেলা হয়, বিদেশি জিনিসপত্র কেনা বেচা হয়। পুলিশ বা শুল্কবিভাগ দেখেও দেখে না।
    আবার মানা এয়ারপোর্টের একসপ্যানসনের টার্ন কী কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে বেনামে কাঁচামাল সাপ্লাইয়ের ঠিকেও উনিই পেয়েছিলেন। তবে পোড়খাওয়া লোক গুলাবচন্দানী বিনয়ী মানুষ। তিনি জানেন ঝুলেলালদেব মানুষের অহংকার সহ্য করেন না।
    এসব উনি বই পড়ে শেখেন নি। নিজের চোখে দেখেছেন।
    ১৯৪৮ সালে রায়পুর শহরের কালেক্টর ছিলেন মি; বায়রন। সুদূর স্কটল্যান্ড থেকে আসা কড়াধাতের মানুষ। এই পাড়াটা তখন ছিল ছোট্ট রায়পুর শহরের শেষ প্রান্ত। এর পর থেকেই দন্ডকারণ্যের এলাকা ষুরু। সন্ধ্যের পর হায়্না ও হুড়ারের উপদ্রব ছিল। একবার বায়রন সাহেব নিজের হাতে গুলি করে দুটো শেয়াল ও হুড়ার মেরেছিলেন।
    বলতেন-- আমাদের দেশে অভিজাত রাজপুরুষরা ফক্স-হান্টিং করত। আমিই বা বাদ যাই কেন!
    গুলাবচন্দানীর বাবা অল্পদিনের মধ্যেই ব্যবহারগুণে সায়েবের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। তাই এই কাঁটাঝোপ আর আগাছায় ভরা পাঁচ একর পতিত জমি একরকম নামমাত্র মূল্যে সায়েবের দয়ায় লীজ পেতে কোন অসুবিধা হয় নি।
    হটাৎ সাতদিনের ম্যালেরিয়ায় মেমসায়েব চল গেলেন। পরিহাসপ্রিয় মিঃ বায়রন , যিনি নিজেকে কবি লর্ড বায়রনের বংশাবতংস বলে পরিচয় দিতেন, কেমন যেন বুড়িয়ে গেলেন। তারপর তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশে ফেরার আগে গুলাবচন্দানীর বাবাকে একটি ট্যাংকঘড়ি দিয়ে যান। সেই থেকে ওঁদের পরিবারের উৎথান। তাই সেই ঘড়িটি ঠাকুরঘরে ঝুলেলালের বিগ্রহের পাশে এককোণায় একটি কাঠের আসনের ওপর লালশালু দিয়ে মুড়ে রাখা হয়। ঘড়িটিও রোজ পূজোর সময় পূজারীর হাত থেকে ফুল-বেলপাতা পায়।
    তবে গুলাবচন্দানীরাও অকৃতজ্ঞ ন'ন। ওঁদের চেষ্টায় মিউনিসিপ্যালিটি প্রস্তাব পাশ করে এই এলাকার গোটা তিনেক ওয়ার্ডের নাম বায়রনবাজার করে দেয়।
    কিন্তু শুরুতে রায়পুর শহরের নগরশেঠ বলা হত পাঞ্জাবী সতপাল সিং রণধাওয়াকে। ওই পরিবারের ছিল ট্রাক দিয়ে জঙ্গল থেকে সেগুন-শাল আর মহুয়া সোজা উড়িষ্যায় চালান করা।
    এছাড়া ওদের বড়ছেলের ছিল মেয়েমানুষের ব্যামো। গাঁয়ের দিকে কেউ চোখে ধরলেই উপঢৌকন নিয়ে দূত পৌঁছে যেত মেয়ের বাপের কাছে। কিছুদিন পর জামাকাপড় বাক্স-প্যাঁটরা দিয়ে আবার মেয়েটিকে বাপের বাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হত। লোকজন দেখেও দেখত না। কিন্তু বাদ সাধল এক ঢীমর পরিবার। ওরা মাছের ছোটখাট কারবারী। সতপাল সিংয়ের দূতকে ওরা লাঠিপেটা করে ফিরিয়ে দিল।
    রণধাওয়া কিল খেয়ে কিল হজম করার পাত্র ন'ন। কিছুদিন পর এক ভোরে দেখা গেল ঢীমরদের সদ্য লীজ নেয়া সাতটি পুকুরে ভেসে উঠছে মরামাছের দল। রাত্তিরে কে বা কারা পুকুরগুলিতে ডেমোক্রান না ফলিডল ঢেলে দিয়েছে।
    কিন্তু ভগবানের রাজত্বে " দের হ্যায়, পর অন্ধের নহীঁ" ( দেরি হতে পারে, কিন্তু অন্যায় অবিচার হবে না)।
    রণধাওয়ার কলেজে পড়া একমাত্র মেয়েটি বাড়ির ড্রাইভার ত্রিবেদীর সঙ্গে পালিয়ে গেল। তারপর আদালতে নিজের ও স্বামীর সুরক্ষা চেয়ে রাইফেল ও রিভলবার রাখার লাইসেন্স আদায় করল। শেষে সম্পত্তির ভাগ চেয়ে দেওয়ানি মামলাও করল। রণধাওয়া পক্ষাঘাতে অচল হলেন। ব্যবসায় মার খেল।
    সেই শিক্ষা গুলাবচন্দানী ভোলেন নি।
    আজ তাই বড় ছেলেকে জিগ্যেস করলেন--- উনি পৌঁছে গেছেন? খবর পেলে?
    -- হ্যাঁ, বাবুজি! ড্রাইভারের ফোন এসেছে। এখন বিশ্রাম করুক। বিকেলে চাঙ্গ হয়ে আমার সঙ্গে মিলেনিয়ম মল দেখতে যাবে।
    --ঠিক আছে, কিন্তু সত্যি কি এর দরকার ছিল। আমার এসব ভালো লাগে না।
  • Abhyu | 183.200.128.42 | ২০ মে ২০১৩ ০৬:১৩612160
  • অতঃ কিম?
  • কান্তি | 212.90.109.57 | ২০ মে ২০১৩ ০৯:৩৪612171
  • দুর্ভাগ্যক্রমে আমি প্রহেলিকা সিরিজ পড়ে বড় হয়েছি। স্বপনকুমার কখন পড়িনি।
    আধুনিক স্বপন কুমারের স্বাদ পাবার আশায় ছিলাম। কিন্তু এখন পর্য্যন্ত আমাদের
    প্রিয় রঞ্জন রায়ের সুগন্ধই প্রবল ভাবে পাচ্ছি।ভুল করছি কিনা কে জানে?
  • rivu | 78.232.127.201 | ২০ মে ২০১৩ ০৯:৩৭612182
  • ভালো হচ্ছে
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২০ মে ২০১৩ ১৪:০৯612193
  • রণজ্ন্দা তারপরে?
  • ranjan roy | 24.99.80.26 | ২০ মে ২০১৩ ২২:৪৪612204
  • ৩)
    শহরের এই এলাকাটা মাত্র কয়েক বছর আগে গড়ে উঠেছে। দুটো রিং রোড, এক আর দুই--এর মাঝে চাঁদের ফলার মতন যে নীচু জলাভূমি পড়েছিল , বছর পাঁচেক আগে দু-তিনটে কোম্পানির একটা কনসর্টিয়াম সেটাকে বুজিয়ে রাস্তা বানিয়ে গড়ে তুলেছে অনুপম নগর নামে একটি পশ কলোনি। এখনো সেখানে তেমন করে জনবসতি গড়ে ওঠেনি। কিছু ছাড়া ছাড়া বড় বাড়ি, খালি পড়ে থাকা শপিং কমপ্লেক্স। দু-একটা চায়ের দোকান, পান-সিগ্রেটের কিওস্ক, ব্যস। অটোরিকশা বা সাইকেল রিকশার কোন স্ট্যান্ড নেই। কিছু রাস্তায় সুরকি আর মোরাম ঢালা হয়েছে। পাকা হতে আরো দুটো বর্ষা পেরিয়ে যাবে। এখানে একটি ফাঁকা মাঠের পাশে ইংরেজি এল আকারের একটি সাদা বাড়ি, দোতলা।
    বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের চেনা সেই ছাইরঙা এস্টিম গাড়িটি। আর ঘন্টা দুই আগে এবাড়ির 'এল' এর ছোট ভাগে দোতলার স্যুট নম্বর 'ডি' তে ঠাঁই হয়েছে মিঃ সদাশিবনের। দস্তুরমত রেজিস্টারের পাতায় যথাবিধি নামগোত্র লিখে প্যান কার্ডের ফোটোকপি জমা দিতে হয়েছে। বাড়িটা গুলাবচন্দানি পরিবারের গেস্ট হাউস। কিন্তু রেজিস্টার দেখে সদাশিবন বুঝতে পেরেছেন যে এর অধিকাংশ স্যুট বছরের বেশির ভাগ সময় খালিই পড়ে থাকে।
    সাদামাটা বাড়িটার পেছন দিকে রয়েছে মস্ত বড় সবুজ ঘাসে ঢাকা লন। তাতে লুকনো ফোয়ারা আর আলোর ব্যব্স্থা রয়েছে। মাঝে মধ্যে সীমিত সংখ্যক লোকের জমজমাট পার্টি হয় বলে মনে হচ্ছে। একতলায় অতিথিদের জন্যে বড় ডাইনিং হল ও আলমারিতে সাজানো ক্রকারি দেখলে এই সিন্ধি ব্যবসায়ী পরিবারটির রুচির প্রশংসা করতেই হয়। পুরো বাড়িটার ব্যব্স্থাপনার দায়িত্ব রয়েছে রোশনলাল।
    চল্লিশ পেরনো রোশনলাল আদতে উত্তরপ্রদেশের আজমগড় এলাকার লোক। পাঁচবছর আগে এই গেস্ট হাউস তৈরির সময় থেকেই ও এর খানসামা, চৌকিদার ও গাড়ির শোফার। নীচের এক অংশে ও পরিবার নিয়ে থাকে।। গোটা পরিবারের সদস্যরা বাড়িটির সাফ- সাফাই বাগান ও লনে জল দেয়া, গাড়ি সাফ করা , রান্নাঘর ও বাথরুমের আবশ্যক কাজ, স্যুট গুলির বিছানা, টিভি , এসি সবগুলোকে ব্যবহারযোগ্য করে রাখা---সব কিছুতে যুক্ত থাকে।

    সদাশিবনের স্যুটটি মন্দ নয়। দুটো কামরা।পর্দা ঢাকা জোড়া জানালা। একজোড়া সামনের বারান্দার দিকে, আর একজোড়া পেছনের দেয়ালে খাটের কাছে। বাথরুমের গীজার, সিস্টার্ন, ঘরের ব্লু স্টার এসি সবই কাজ করছে। ফ্লোরের কার্পেট ও দেয়ালের ছবিগুলো খারাপ নয়।ওয়াড্রোবের ভেতরের ড্রয়ারে একখন্ড ভগবদগীতা রাখা। পাতা ওল্টাতেই চোখে পড়ল একটি পংক্তি কেউ হলুদ হাইলাইটার দিয়ে দেগে দিয়েছেঃ
    "কর্ম্মণ্যেব্যধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন"।
    সদশিবনের ঠোঁটে একটু মুচকি হাসি ফুটে উঠল। বইটি রেখে দিয়ে পেছনের দেয়ালের জানলার পর্দা সরিয়ে তাকালেন। চোখে পড়ছে নীচের লন, পাশে রাত্তিরে গাড়ি রাখার গ্যারাজ, উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল, তার পেছনে একটি পুকুরের আভাস
    সদাশিবন অভ্যস্ত পেশাদারি চোখে দূরত্বটা আন্দাজ করছিলেন, শোবার খাটটা অন্য কোনে সরাবার দরকার আছে কি না ভাবছিলেন।
    । কিন্তু বারান্দার দিক থেকে একটা হালকা খুটখাট আওয়াজে তাঁর মনোযোগ নষ্ট হল। পেছন ফিরে যা দেখলেন তা মস্তিষ্কে রেজিস্টার হতে ওনার দু'সেকন্ড সময় বেশি লাগল।
    সামনের বারান্দার দিকের জানলার পর্দা ফাঁক করে ঢুকে পড়েছে একটি বন্দুকের সরু নল, অন্ধের মত একটু এদিক ওদিক নড়ে যেন কিছু ঠাহর করার চেষ্টা করছে।
    দু'সেকন্ড।
    এর মধ্যে বহুবছরের ড্রিলে অভ্যস্ত শরীর মস্তিষ্কের কোষে ধরা বিপদের সিগন্যাল অনুধাবন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মাটিতে, আর নিজেকে গুটিয়ে গড়িয়ে ঢুকে গিয়েছে খাটের নীচে। এবারে ঘরের সন্নাটা খান খান হয়ে গেল এক কৃত্রিম ধাতব র‌্যাট-ট্যাট-র‌্যাট -ট্যাট শব্দে সঙ্গে বিদ্যুতের চমক। সঙ্গে বিচ্ছিরি খ্যা-খ্যা-খ্যা-খ্যা হাসি।
    কিন্তু-- কিন্তু আওয়াজটা কেমন যেন! নাঃ হিসেব মিলছে না। কোন ধোঁয়া বা কর্ডাইটের গন্ধ নেই।
    আর পাঁচ সেকন্ড। খাটের তলা থেকে বেরিয়ে এসে একঝটকায় উঠে পড়েছেন সদাশিবন আর তারপরেই দৌড়ে বেরিয়ে বারান্দায় এসে হতবাক।
    বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রায় বছর পনেরোর একটা ছেলে, জানলা দিয়ে একটি ফাইবারের খেলনা বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দিয়ে ট্রিগারে আঙুল চেপে একটা গা-শিউরানো হ্যা-হ্যা করে হেসে চলেছে।
    সদাশিবন সংযম হারালেন।
    কিছু ভাবার আগেই ওঁর উল্টোহাতের চড় খেয়ে ছিটকে পড়েছে ছেলেটি। আর ওর খেলনা বন্দুক হয়ে গেছে দু'টুকরো।
    অবাক ছেলেটি বারান্দায় শোয়া অব্স্থাতেই ফোঁপাতে থাকে। তারপর হঠাৎ গলার স্বর চড়িয়ে চিলচিৎকার জুড়ে দেয়।
    -- এ দাই ও! মোর দদা গ'। এ রাক্ষস মোলা মারিস্‌! মোর বন্দুক লা তোড় দিস্‌। মোর বন্দুক! মোর বন্দুক! এ দাদা গ', মোর বন্দুক লা!
    ( ও মা, ও বাবা! দেখ এসে, এই রাক্ষসটা আমায় মেরেছে, আমার বন্দুকটা ভেঙে দিয়েছে। ও বাবা গো, আমার বন্দুক!)
  • ranjan roy | 24.99.80.26 | ২০ মে ২০১৩ ২৩:১৩612215
  • সিঁড়িতে পায়ের শব্দ। দৌড়ে উঠে এসেছে রোশনলাল, ওর স্ত্রী , আর ভাই।
    - কা হইস সাহাব?
    তারপর ছেলেটার ফোঁপানো কান্নার মাঝে ভাঙা ভাঙা কথা আর সদাশিবনের চেহারায় যুগপৎ রাগ ও অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে ও ব্যাপারটা বুঝে নেয়।
    -- মাফি দেও সাহাব। গলতি মোর হবে, মোর বেটাকে নো হয়।
    ( ক্ষমা করে দিন সায়েব, দোষ আমার, আমার ছেলের নয়।)
    -- তোমার ছেলে?
    -- হ্যাঁ সায়েব, আমার একলৌতা বেটা, চমন। ওকে পাঠিয়েছিলাম আপনার সঙ্গে আলাপ করতে। বড়বাবুর নির্দেশ যে সব সময় আপনার ফাইফরমাশ খাটার জন্যে, ছোটখাট জরুরত দেখার জন্যে একজন লোক চাই। তা আমার ছেলেটা চটপটে , কথা শোনে। ভাবলাম ওকেই লাগিয়ে দিই। ছেলেটর সব ভাল।কিন্তু টিভি আর ভিডিও গেমস এর পোকা। সারাক্ষণ টিভিতে যত কমিক চ্যানেল-- ডোরেমন-পাকেমন আর কি কি সব দেখতে থাকে। ওর কোন বন্ধুটন্ধু নেই। ধাড়ি ছেলে খেলতেও যায় না। আর মনে মনে কখনো হী-ম্যান, কখনো ব্যাটম্যান হয়ে যায়। সিনেমা দেখবে তো ওইসব যুদ্ধ-টুদ্ধ। খালি বন্দুক-কামান, গোলাগুলি।
    --- তা বলে আমার জানলা দিয়ে অমনি করবে? আর বিকট আওয়াজ করে হাসবে?
    --- এটা ওর আপনার সঙ্গে আলাপ করার চেষ্টা। বন্দুকটা তিনবছর আগের জন্মদিনে ওর মা কিনে দিয়েছিল। আর হাসিটা ও ব্যাটমান ফিল্মের ভাঁড়ের। ও কিন্তু ভালো নকল করতে পারে।
    --- কিন্তু আমার সঙ্গে আলাপ করতে এইসব করল কেন?
    -- আপনি যে যুদ্ধ করেছেন। মিলেট্রির লোক। বন্দুক-কামানের ব্যাপারে ভাল জানেন।

    সদাশিবনের চোয়াল শক্ত হল।
    --- ওকে কে বলেছে আমি যুদ্ধ করেছি? তুমিই বা জানলে কি করে?
    --- বড়বাবু বলেছেন। মানে বড়া মালিকের বড়া বেটা রমেশ গুলাবচন্দানীজি।
    -- ঠিক কী বলেছেন?
    -- বলেছেন, আপনি মিলিট্রির পুরনো লোক। আপনি সিকিউরিট ভাল বোঝেন। এখন এই যে মিলেনিয়াম মল তৈরি হচ্ছে আপনি তার সুরক্ষা দেখভাল করবেন। আর বলেছেন যাতে আপনার কোন কষ্ট না হয়।
    সাহেব, ওকে মাপ করে দিন। ছেলেটা একটু বিমার আছে। আমি মাঝে মাঝে ওকে মীরা দাতারের দরগায় ঝাড়ফুঁক করাতে নিয়ে যাই। কিন্তু ও দিল সে সাচ্চা!
    বাবুজিকে কিছু বলবেন না। তাহলে আমাদের সবার চাকরি যাবে। আমি সব ঠিক করে দেব।

    সদাশিবন চুপ করে কিছু ভাবছেন।
    -- সাহাবজি, আমি বলতে এসেছিলাম যে একঘন্টা পরে আপনাকে নিতে বড়বাবু নিজে আসবেন। মল দেখাতে নিয়ে যাবেন। তৈয়ার থাকতে বলেছেন। ফোন এসেছিল।
    আমাদের গুস্তাখি মাফ করে দিবেন সাহেব।
  • ranjan roy | 24.99.20.13 | ২১ মে ২০১৩ ১৬:০৩612128
  • ৪)
    -- আসল সমস্যা হল ওই ডোমটা কে ঠিকমত ব্যালান্স করে বসানো। এইটার জন্যে সময় লাগছে। কিন্তু লুরুর সীমেক কোম্পানিকে বরাত দিয়েছি। খুবই প্রফেশনাল। স্কেডিউল ধরে কাজ করে। সময়মত কাজ তুলে দেবে। ডেডলাইন নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।
    --- এখনও তো অনেক কাজ বাকি। গ্রাউন্ড ফ্লোর ও ফার্স্ট ফ্লোর মোটামুটি হয়ে গেছে। কিন্তু সেকন্ড ফ্লোরের ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ শেষ হয় নি। আর থার্ড ফ্লোরের শপগুলোর তো মাত্র স্ট্রাকচার খাড়া হয়েছে। এটা অগাস্টের শুরু। আর আপনি চাইছেন নতুন বছরের প্রথম দিনে মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে এই মিলেনিয়াম মলের উদ্ঘাটন করাবেন।
    -- মুখ্যমন্ত্রী রাজি হয়েছেন। তারিখ পাকা। কোন নড়চড় হবে না।
    -- বেশ, ওসব আপনার আর সীমেক কোম্পানির প্রফেশনাল প্রবলেম। কিন্তু আমাকে কেন আনা হয়েছে , মানে এই কর্মকান্ডের মধ্যে আমার কী ভূমিকা তা এখনো বুঝতে পারছি না।
    --- আপনি এই প্রোজেক্টের সিকিউরিটির সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবেন।
    একটুক্ষণ চুপ করে থেকে সদাশিবন বললেন-- আমিই কেন? আপনার বাবার বন্ধু ছত্তিশগড় রাজ্যের প্রাক্তন ডিজি বিক্রমজিত কেন ন'ন? গুলাবচন্দানী সাম্রাজ্যের কাজ পেয়ে গেলে ছত্তিশগড়ের যে কোন রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসার বর্তে যাবে।
    -- তিনটে কারণ।
    প্রথমতঃ উনি আমার বাবার বন্ধু। সাধারণতঃ এ'ধরণের ক্রিটিক্যাল কাজে আমরা পারিবারিক বন্ধুদের যুক্ত করিনা। তাতে কাজ হয় না, উল্টে সম্পর্কে চিড় ধরে।
    দ্বিতীয়তঃ উনি শুধু পুলিশ অফিসার, আইপিএস। ওঁর অনার্স ছিল মডার্ন হিস্ট্রিতে। আপনি চেন্নইয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট, তায় ইলেক্ট্রিক্যাল। আমার প্রজেক্টে ইলেক্ট্রিক্যাল পার্টটাই খুব সেন্সিটিভ। ভুল হলে খুব বড় অ্যাক্সিডেন্ট হবে। আর স্যাবোটাজ হলে--!
    তৃতীয়তঃ আপনাকে এখানে কেউ চেনে না। ফলে স্থানীয় কোন ফ্যাক্টর আপনাকে প্রভাবিত করতে পারবে না। বলা উচিত, আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে পারবে না।

    সদাশিবন সামনে রাখা ড্রিংকসে দুটো বরফের কিউব ফেলে অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন। ঘন্টা দুই হল গুলাবচন্দানী পরিবারের 'বড়েবাবু' রমেশ গুলাবচন্দানী নিজে সঙ্গে করে গোটা মিলেনিয়াম মল ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। এবার এম জি রোডে ওঁর অফিসে বসে ওঁরা আলোচনায় মগ্ন।
    দু'সপ্তাহ আগে এক পুরনো বন্ধুর মাধ্যমে রমেশের সঙ্গে সদাশিবনের যোগাযোগ। কিছু কথাবার্তার পর রমেশ বললেন-- আপনি চলে আসুন। প্লেনের টিকেট আর পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এসে সব দেখেশুনে তারপর কন্ট্র্যাক্ট সাইন করবেন। ইচ্ছে না হলে করবেন না। কিন্তু আমি ভরসা করছি আপনি হ্যাঁ করবেন ধরে নিয়ে। পাঁচ-ছ'মাসের ব্যাপার। থাকাখাওয়ার দায়িত্ব আমাদের কোম্পানির। দায়িত্ব নিলে প্রতিমাস দু'লক্ষ টাকা । সাইন করতেই দু'মাসের টাকা অগ্রিম অ্যাকাউন্টে জমা হবে। যিনি আপনার কথা বলেছেন তিনি জানেন এই লাইনে আপনার সঙ্গে পাল্লা দেয়ার মত কেউ নেই।

    তোষামোদে কে না গলে?
    সদাশিবন দেখে আসতে ক্ষতি কী ভেবে চলে এসেছেন।

    এখানে এসে দেখলেন বিরাট ব্যাপার। ছত্তিশগড়ে গোটা চোদ্দ মল খুলেছে।কিন্তু রমেশ গুলাবচন্দানী যা করতে যাচ্ছেন তার ব্যাপ্তি বিশাল।
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.203.195.34 | ২১ মে ২০১৩ ১৬:২৩612129
  • কান্তিদার কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। কোথায় স্বপনকুমার? এতো রঞ্জন রায়। চরৈবেতি, আমরা ফলোয়িং।
  • Blank | 180.153.65.102 | ২১ মে ২০১৩ ১৭:৪৮612130
  • রঞ্জন দা, বেশ হচ্ছে লেখা। হুড়ার কি?
  • ranjan roy | 24.99.20.13 | ২১ মে ২০১৩ ১৯:৩৭612131
  • ব্ল্যাংকি,
    হুড়ার হচ্ছে বনবেড়াল আর হায়েনার মাঝামাঝি একটা জানোয়ার। ছোট বাচ্চা মুখে করে নিয়ে যায়। রাত্তিরে একা পেলে নিঃসঙ্গ মানুষকেও আক্রমণ করে।

    রূপংকরদা,
    আমি ফেল। চেষ্টা করে দেখলাম স্বপনকুমারের অনুকরণ আমার সাধ্যের বাইরে। আমার এক তুতো ভাই জানালো যে নেটে স্বপনকুমার পড়া যাচ্ছে।ঃ)))
  • শঙ্খ | 118.35.9.186 | ২১ মে ২০১৩ ১৯:৫৩612132
  • ইসে রঞ্জনদা,

    আম্মো হাফপ্যান্ট বয়েসে ঐ বিশ্বচক্র সিরিজ মানে বাজপাখি আর ড্রাগন সিরিজ গোগ্রাসে গিলেছি। সেই হিসেবে স্বপনকুমারের লেখার কিছু টিপিক্যাল জিনিস জানি যেগুলো এই লেখাতে দেখছি না, যেমন এত সংলাপের ব্যবহার, জায়গার এতো ডেসক্রিপটিভ ব্যবহার। এই সবের আদ্ধেকও স্বপনকুমারের লেখায় দেখেছি বলে মনে পড়ে না।

    কোথায় সেই চীনে রেস্টুর‌্যান্ট, বার্ম্মিজ সন্দেহজনক দেখতে লোক, কোথায় দীপককুমারের ব্যালকনিতে রতনলালের পরস্মৈপদী ব্রেকফাস্ট, কোথায় উড়োচিঠি আর ছঘরা রিভলভার। ওগুলি একেবারে সূত্র মেনে আসতো।

    তবে 'আপনার' লেখা বরাবরের মতই সুখপাঠ্য হচ্ছে। আপনার বেশ খুঁটিয়ে দেখার চোখ।
  • শঙ্খ | 118.35.9.186 | ২১ মে ২০১৩ ১৯:৫৩612133
  • ওহো আগের কমেন্টটা মিস করে গেছি ঃ-)
  • ranjan roy | 24.99.20.13 | ২১ মে ২০১৩ ২০:২১612134
  • কিন্তু এত লোক থাকতে সদাশিবন কেন? কোন চেনা লোকের সুপারিশ? ব্যস্‌? নাঃ, হিসেব মিলছে না।

    -- আচ্ছা, ব্লু-প্রিন্ট দেখান। বেসমেন্টের লে-আউট ?। ইলেক্ট্রিক্যাল কনেকশনের লে-আউট? সার্কিট ডায়াগ্রাম? কর্পোরেশন, আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট? ফায়ার ব্রিগ্রেডের রিপোর্ট? জমির টাইটেল ডীডের কপি? ত্রিশ বছরের ল্যান্ড রেকর্ডের সার্চ রিপোর্ট? সব আছে? ব্রোশার? আর্কিটেক্টের রিপোর্ট? সব আছে? বেশ, আমার এইসব রিপোর্ট, এই বিল্ডিংয়ের ছবি সব মিলিয়ে একটি সিডি চাই। আছে?

    -- এবার তাহলে সিকিউরিটির ওভার অল সুপারভিশনের কন্ট্র্যাক্ট সাইন করতে আপত্তি নেই তো? আমার লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট সব তৈরি করে রেখেছে। পড়ে নিন।
    রমেশ একটি ফোল্ডার এগিয়ে দিলেন।
    সদাশিবন পাতা ওল্টাচ্ছেন কিন্তু ক্লজগুলো দেখছেন না।
    এবার মাথা তুলে সোজা তাকালেন।

    --- মিঃ গুলাবচন্দানী! এসব তো হল। আমি সাইন করতে পারি। কিন্তু আগে একটি প্রশ্নের ঠিক ঠিক জবাব চাই। নইলে এখানেই গুডবাই। আপনাকে কাল দিল্লি ফেরার টিকিট আনিয়ে দিতে হবে।
    -- প্রশ্নটা কী?
    -- আমাকে নিয়ে আপনার আগ্রহের পেছনে আপনি তিনটে কারণের কথা বলেচেন। কিন্তু আমার ষষ্ঠেন্দ্রিয় বলছে একটা চতুর্থ কারণও আছে। সেটা কী আমি জানিনা। জানলে তবে সাইন করার কথা ভাবব।
    -- সেটা হল আপনার অনেস্টি ও অন্যায়ের সাথে আপোষ না করা। আমরা জানি আপনার কিছু সেট অফ ভ্যালুজ আছে। আর সেসব নিয়ে আপনি বেশ রিজিড। কোন কম্প্রো তে রাজি হন না। এর জন্যে আপনি আগের কিছু চাকরি ছেড়েছেন। শেষে গত একদশক ধরে এই সিকিউরিটি কনসালট্যান্টের কাজ করছেন।
    --- আর কী জানেন?
    -- সবই। বা অধিকাংশ ঘটনা। যেমন, আপনি নব্বইয়ের দশকে আই পি কে এফ এর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এর মেজর হিসেবে শ্রীলংকায় দু'বছর ছিলেন। সেখানে মেডিক্যাল কোরের সার্জন মেজর বিজয়লক্ষ্মী চৌহানের সঙ্গে আপনার গভীর সখ্যতা গড়ে ওঠে। দক্ষিণ জাফনায় একটি প্রত্যন্ত গ্রামে অপারেশনের পর যখন শ্রীলংকার সরকারি ফৌজ আপনাদের একটি অক্সিলিয়ারি টিমকে সঙ্গে নিয়ে ঢোকে তখন সেখানে সাধারণ তামিল গ্রামবাসী ও কিছু আহত ছাড়া কেউ ছিল না।
    কিন্তু সরকারি ফৌজের চোখে সবাই ছদ্মবেশি লিট্টে গেরিলা। ওরা দশজন পুরুষ ও তিনজন মেয়েকে ওদের দিয়েই ট্রেঞ্চ খুঁড়িয়ে তাতে নামিয়ে গুলি করে মারে।
    আপনি বারণ করেছিলেন। সরকারি কম্যান্ডার শোনে নি।আপনাকে বলে যে এগুলো মিলিটারি ট্যকটিক্যাল ডিসিশন। এগুলো আপনার এক্তিয়ারের বাইরে।
    তারপর ডঃ বিজয়লক্ষ্মী দুজন গর্ভবতী তামিল মহিলার ক্ষতে ড্রেসিং করে ইঞ্জেকশন লাগাতে গেলে দু'জন সৈনিক বাধা দেয়। বলে এইসব দামী ওষুধ্পত্তর সহজে পাওয়া যায় না। এগুলো দুশমনের ঘরের বৌদের জন্যে খরচ করা চলবে না।
    অসহায় বিজয়লক্ষ্মী কেঁদে ফেলেন। তখন আপনি ওই লংকান সৈনিকটির সংগে কথাকাটকাটি ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।
    শ্রীলংকার মিলিটারি পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করে। আর ভারতীয় দূতাবাস আপনাকে দেশে ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়।
    তারপর আর্মি হেড কোয়ার্টার কোর্ট মার্শাল করে আপনাকে সাসপেন্ড করে।
    ছোটবেলা থেকেই আপনি একটু জেদি আর মেজাজি। পরের বছর ডঃ বিজয়লক্ষ্মীর সঙ্গে আপনার পুরনো সম্পর্কও শেশ হয়ে যায়।
  • ranjan roy | 24.99.20.13 | ২১ মে ২০১৩ ২১:০৬612135
  • -- কথাটা শেষ করুন। আমার যা ক্যারেকটার তাতে তো আপনাদের সাম্রাজ্যে আমি পার্সোনা নন গ্রেটা !
    --- ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আমার স্বপ্নের এই মিলেনিয়াম মলের মুখ্যমন্ত্রীজির হাতে উদ্বোধনের আগে আপনি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। প্রোজেক্টটি যাতে নির্বিঘ্নে সুসম্পন্ন হয় সেটা দেখা আপনার কাজ।

    --অন্তর্ঘাতের আশংকা কোথায়? ভেতরে না বাইরে? মাওবাদী হামলা? বুবিট্র্যাপ?
    -- তেমন কিছু দেখছি না। খুলেই বলি।
    এই ডিজাইনটা দেখুন। এই ডোম। এবার এর আইসোমেট্রিক ভিউ দেখুন আর এখানে এই ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ারিং এর লে-আউট ও এই ব্রেকার গুলোর সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখুন।
    নববর্ষের দিন এই মলে খুব বড় কালচারাল নাইট হবে। বিশিষ্ট নিমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে নামকরা আর্টিস্ট দের নাচ-গান হবে। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীজি ফিতে কেটে গ্রাউন্ড ফ্লোরের উদ্ঘাটন করবেন।সেন্সর দেয়া দরজাটা অতিক্রম করে ডোমের নীচে এসে যেই উনি একটি রিমোটের বোতাম টিপবেন ডোমের ওপরটা আস্তে আস্তে খুলে গিয়ে আকাশ দেখ যাবে আর ডোমের থেকে উড়ে যাবে একশ' বেলুন, তাতে মিলেনিয়াম মলের নাম লেখা।
    এই আইডিয়াটা যেমন নভেল তেমনি রিস্কি। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী আছেন যখন। কোন কারণে কিছু হয়ে গেলে? আই জি রায়পুরের আপত্তি ছিল। কিন্তু আমি নিজের খরচায় দিল্লি থেকে
    আপনাকে নিযুক্ত করায় ওরা মত দিয়েছে।
    -- কিন্তু ভয়টা কোথায়?
    --- এই ফাইলটা নিন। নিজের রুমে গিয়ে পড়বেন। এতে সব আছে।
    -- এত দেখছি এক সুপুরুষ যুবকের ফাইল, রাজকুমার গুলাবচন্দানী।
    আপনাদের পরিবারের কেউ?
    --- আমার ভাই। অত্যন্ত মেধাবী, কূটবুদ্ধি, কিন্তু আস্ত শয়তান। আমি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়েছি। আপনি মেফিস্টোফিলিসের নাম শুনেছেন? বা ফাউস্ট? শোনেন নি?
    আচ্ছা, নিদেনপক্ষে ছোটবেলায় "ডঃ জেকিল অ্যান্ড মিঃ হাইড"? ছবিতে যা দেখছেন তা হল মুখোশ, আসল চেহারাটা ফাইলে আছে।
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২২ মে ২০১৩ ১১:৩২612136
  • রঞ্জন দা দারুন !!!!!!!!!
  • ranjan roy | 24.96.119.1 | ২৬ মে ২০১৩ ০০:৪২612137
  • ৫)
    'রাজকুমার গুলাবচন্দানী।
    জন্মঃ রায়পুর, ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬০।
    শিক্ষাঃ রাজকুমার কলেজ;ই স্নাতক-দূর্গা কলেজ রায়পুর। ল' গ্র্যাজুয়েট,নাগপুর। এল এল এম-- ব্যাঙ্গালোর; প্রথম বছরেই র‌্যাগিং ও একটি হিট অ্যান্ড রান কেসের ফলে সংস্থান থেকে বিতাড়িত।আই আই এম, ইন্দোরে এম বি এ কোর্সে ভরতি। লাইব্রেরিয়ানের মেয়ের প্রেগন্যান্সি ও আত্মহত্যার প্রচেষ্টার সঙ্গে নাম জড়ানোয় পড়া শেষ হওয়ার আগেই রায়পুরে প্রত্যাবর্তন।
    পেশাঃ বিভিন্ন ফাইন্যান্স কোম্পানির কনসালট্যান্ট। ৯০ এর দশকে আর্থিক উন্নতি। আয়ের উৎস স্পষ্ট নয়। রায়পুরের নহর পাড়ার হর্ষদ মেহতার ভাইয়ের সহপাঠী। সেই সুবাদে হর্ষদের বিভিন্ন ইনভেস্টমেন্টের নাগপুর ও ছত্তিশগড়ের অপারেশনের মুখ্য নায়ক বলে সিআইডির গোপন রিপোর্ট।
    হর্ষদ মেহতা জেলে গেলে তার পরিবারের খাইখরচ নিয়মিত যুগিয়েছিল।
    পুলিশ ওর পায়েল ভিডিও সেন্টার, শীলা লজ ও ভিলাইয়ের বসুন্ধরা হোটেলে কয়েকবার রেইড করে। নিয়মিত সাট্টা, জুয়ার বোর্ড, হুক্কাবার ও কলগার্ল র‌্যাকেট চালানোর অভিযোগ।
    দুই মুখ্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক।
    ব্যবহার মার্জিত, পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। চতুর ও সুযোগসন্ধানী।
    বড় ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয়। পৈতৃক বাড়িতে থাকে না। শহরের বাইরে রবিনগরের পাশে ফার্মহাউস ও নিজস্ব কার্যালয়।
    বিবাহঃ প্রথমবার ভাটাপাড়ার নামকরা রাইস মিলের মালিক হোতামল খয়ানীর ছোট মেয়ে অচলার সঙ্গে। তিনবছরের মাথায় রহস্যজনক মৃত্য। ছোটবাচ্চার দুধ গরম করতে গিয়ে কথিত
    রূপে গ্যাসস্টোভ থেকে কাপড়ে আগুন ধরে। তখন রাজকুমার বাড়িতে ছিলেন।উনিই ৫০ প্রতিশত জ্বলে যাওয়া স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ওঁর হাত-পা কিছুই পোড়েনি। পুলিশের সন্দেহ এটি হত্যা। মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রী স্বামীর পক্ষেই বয়ান দেয়ায় উনি ছাড়া পেয়ে যান।
    দুই বছর পরে নিজের ছোটশালীকে বিয়ে করেন।
    যৌনজীবন, নেশা ইত্যাদিঃ পরিমিত মদ্যপান। জুয়ায় আসক্তি, প্রতি তিনমাসে গোয়ার একটি ক্যাসিনোতে রুলে/ব্ল্যাকজ্যক খেলতে যান।
    নামে-বেনামে-পার্টনারশিপে প্রতিবছর আবগারী নিলামে দর লাগান।
    পুলিশের সন্দেহ গতবছর বিলাসপুরের তিনটি স্কুলে ছাত্রদের মধ্যে ব্রাউন সুগারের সাপ্লাই শুরু হওয়ার পেছনে ওঁর হাত রয়েছে।মদের ব্যবসা সামলাতে বিহার থেকে গোটা দশেক লাঠিয়াল রেখেছেন। তাদের জন্যে একটি মেসও নির্দিষ্ট আছে।
    কিন্তু তিনবছর আগে সেই মেসে একটি ১৯ বছরের ছেলে ৩৫ বছরের রম্মু পালোয়ানকে মাঝরাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় ২২ বোরের বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে মারে। যতদূর খবর জান যায় -- ছেলেটির ওপর যৌন-অত্যাচার চালানোর মালিক রাজকুমারের ও প্রশ্রয় ছিল। কিন্তু প্রমাণ হয় নি।
    দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গেও শীতল সম্পর্ক।
    রাজকুমারের এবার হাই উঠছে। আন-কমন কিছুই নয়।গোটা ফাইলে ফুটে উঠেছে একটি ধড়িবাজ ন্যায়্নীতিবোধহীন ধূর্ত লোভী ব্যক্তির চেহারা।
    ঠিক আছে। প্রায় রাত দুটো।এবার শুয়ে পড়া যাক। বাকি কাগজগুলো কাল দেখলেই হবে।
    টেবিল থেকে জলের গেলাস তুলে ঢকঢক করে খেয়ে উঠে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল আর একটি ছোটো ফোল্ডার। কখন বড় ফাইল থেকে মাটিতে পড়ে গেছে। নীচু হয়ে তুলতেই হাতে ঠেকল দুটো ছবি। একটি হল কোন স্কুলের প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশন ফাংশনের সময় মেয়রের পাশে দাঁড়িয়ে হ্যান্ড মাইক হাতে একজন শিক্ষিকা। সপ্রতিভ ব্যক্তিত্বময়ী। কিন্তু আরেকটি যে বড় চেনা। আধুনিক ফ্যাশনদুরস্ত পোশাকে হোটেলের অডিটোরিয়ামে এক পপ-গায়িকা। পাবলিকের উদ্দেশ্যে চুমু ছুঁড়ে দিচ্ছেন।
    এই ছবি এই ফাইলে কেন?
    সদাশিবনের রাতের ঘুম চটে গেল।
  • Abhyu | 85.137.1.117 | ২৬ মে ২০১৩ ০১:৪৮612139
  • বেশ। তারপর?
  • soumya | 127.227.8.112 | ২৬ মে ২০১৩ ১৫:৪২612140
  • jah baba.. aar lekha kothay? robbar dupur belata ki opekhha korei katbe?
  • Lama | 127.194.224.122 | ২৬ মে ২০১৩ ১৫:৫১612141
  • রঞ্জনদা, "রাজকুমারের এবার হাই উঠছে।"- এটা মনে হয় 'রাজকুমার' না হয়ে 'সদাশিবন' হবে।
  • ঐশিক | 132.167.74.222 | ২৬ মে ২০১৩ ২২:২২612142
  • রঞ্জন দা এট্টু হাত চালিয়ে ক্যাখেন আমার আবার কান কটকট মন chot ফট করে !!!!!!
  • PM | 181.6.207.108 | ২৬ মে ২০১৩ ২২:৩১612143
  • আমাদের সময় স্বপনকুমারের বাজার প্রায় শেষের দিকে। রেল স্টেশনের বৈয়ের দোকনেই শুধু দেখেছি। দু চারটে কাল-নাগিনি সিরিজ, বাজপাখী সিরিজ পড়েছি। ভালো লাগে নি। বরং জয়ন্ত-মানিক, বিমল-কুমারের খুব ভক্ত ছিলাম।

    স্বপনকুমার আপানার দ্বারা নামানো যাবে না রন্জনদা। চেষ্টাও করবেন না প্লিজ ঃ)। কিন্তু যেটা নামছে সেটা একঘর। অপেক্ষায় রয়েছি
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২৯ মে ২০১৩ ১৫:৪৭612144
  • আবার তুলে দিলুম
  • ranjan roy | 24.99.55.140 | ০১ জুন ২০১৩ ০১:৩৫612145
  • লামা,
    ঠিক বলেছেন। ওটা সদাশিবন হবে। আসলে তখন রঞ্জনেরই হাই উঠছিল।ঃ))
    কিছু লেখা ও রিপোর্ট তৈরির চাপ সামলে উঠেছি।
    কাল অবশ্যি লিখব, মাক্কালী!
  • ranjan roy | 24.96.96.202 | ০১ জুন ২০১৩ ১০:৪৬612146
  • ৬)
    কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙল সদাশিবনের। কাঁচ লাগানো ছোট্ট ফুটোয় চোখ লাগিয়ে দেখে শ্লথ পায়ে দরজা খুলে দিলেন। বেড টি ও স্ন্যাক্স নিয়ে ঘরে ঢুকেছে চমন।
    হেসে গুডমর্নিং বলে অভ্যস্ত হাতে টেবিল সাজিয়ে দেয়। খাওয়ার জল বদলে দেয়। তারপর দাঁড়িয়ে থাকে।
    -- একটু পরে এসে খালি ট্রে নিয়ে যেও।
    চমন নড়ে না।
    -- কি হল? কিছু বলবে?
    --- একটা কথা বলি? মারবে না?
    সদশিবন বিস্মিত।
    --মারার কথা উঠছে কেন?
    -- আরে বা! উসদিন ইতনা মারা, ইতনী জোর সে, ফির কহতে হো মারনে কী সওয়াল কিঁউ?
    সদশিবন একটু অপ্রস্তুত।
    -- সেদিন তুমি যে হরকত করেছিলে তাতে তোমার চাকরি যাওয়র কথা। গেস্টদের সঙ্গে কেউ অমন করে? সত্যি কথা বক্ল তো, কেন করেছিলে? মানে, কী ভেবে?
    -- গেস্টদের সঙ্গে কেন করব? এত্ত লোকজন আসে। কেউ কোনদিন শিকায়ত করেনি। কি যে বল ব্যাটম্যান?
    ---- ব্যাটম্যান?
    --- হাঁ, তুমি হলে আমার ব্যাটম্যান আর অমি তোমার রবিন।
    সদাশিবন হেসে ফেলেন। বেশ।
    --- কী ? মঞ্জুর তো? তব্‌ হাত মিলাও!
    উনি হেসে মাথা নাড়েন।
    -- সে কি? কাবর?
    --- আগে বল সেদিন অমন হরকত করেছিলে কেন?
    ---টেস্ট করছিলাম।
    -- কী টেস্ট করছিলে?
    -- এই যেমন, তুমি আমার মত রবিনের ব্যাটম্যান হওয়ার উপযুক্ত কি না! ক্লাউনের আক্রমণে গর্তে সেঁদিয়ে যাও, কি পালটা আক্রমণ কর, এইসব।

    কপট গাম্ভীর্যে মাথা হেলান সদশিবন।
    --রেজাল্ট কি ? পাস না ফেল?
    -- য়ু হ্যাভ পাসড্‌ দ্য টেস্ট উইথ ডিস্টিংশন, ডিয়ার ব্যাটম্যান!

    সদাশিবন ঘড়ি দেখেন।
    --অব মতলব কী বাত কর রবিন। মুঝে নাহা-ধোকে তৈয়ার হোনা হ্যায়।
    -- আমাকে দুপুরবেলা তোমার এই ঘরে এসে দেয়ালে টাঙানো বড় স্ক্রীনের টিভিতে কার্টুন দেখতে দেবে? আমি কিচ্ছু নষ্ট করব না।
    -- দেখ, দুপুরে তো আমি ঘরে থাকিনা। কাজেই সরি। সম্ভব নয়।
  • ranjan roy | 24.99.184.100 | ০২ জুন ২০১৩ ২৩:০১612147
  • ৭) আস্তে আস্তে চমনলাল সদাশিবনের রবিন হয়ে যায়।
    কবে থেকে যেন উনিও ওকে রবিন বলেই ডাকতে শুরু করেছেন। প্রথমে খেলার ছলে, পরে অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেল।
    -রবিন, যাও, লন্ড্রি সে মেরা কপড়া লেকে আও।
    --ক্যা রবিন? আজকাল খানা মেঁ কোঈ সোয়াদ নহীঁ হ্যায়, বড়া সিট্ঠা সিট্ঠা বন রহা হ্যায়? জরা দেখ লে না।
    -- রবিন, জলদি গাড়ি নিকালো। মিটিং মেঁ জানা হ্যাঁয়। জলদি করো।

    কিন্তু একদিন এই গাড়ি নিয়েই একটি ঘটনা ঘটে গেল।

    সেদিন মিটিং ভাল ভাবে শেষ হয়েছিল। ইন্টিরিয়র ডেকরের লোকজন কাজটা ভালই তুলে দিচ্ছে। ইলেক্ট্রিক্যালের সোমানীও সদাশিবনের সেফটি পয়েন্টের কতগুলো আপত্তির কথা মেনে ড্রয়িং এ কিছু মাইনর চেঞ্জ করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু হাতে অফুরন্ত সময়। সদাশিবন ইচ্ছে করেই এখানে কোন সোশ্যাল সার্কল গড়ে তোলেন নি। অফিসার্স ক্লাবে ব্রিজ খেলতে যান নি। রবিন সেখানে টেনিস কোর্ট আছে জানিয়েছিল। কিন্তু জেগে ওঠা ইচ্ছেটাকে উনি প্রফেশনাল ডিসিপ্লিনে বেঁধে ফেলতে জানেন।
    অন্য দিনগুলোয় উনি নিজের রুমে ফিরে টিভিতে নিউজ দেখেন, পছন্দসই গান শোনেন। সামান্য দু'পেগের পর খাবার না আসা অব্দি রবিনের সঙ্গে কম্পিউটারের সঙ্গে টিভির স্ক্রীন কনেক্ট করে চেস খেলেন। খাবারের প্লেট রবিন গুছিয়ে নিয়ে গেলে উনি দরজা বন্ধ করে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে ল্যাপটপ খুলে বসেন। টেবিলে বিছিয়ে নেন কনস্ট্রাকশনের ব্লু-প্রিন্ট। খুঁটিয়ে দেখতে থাকেন এক-একটি সার্কিট, লুপ, সিরিজ ও প্যারাল্যাল কনেকশনের জাল, লোড ডিস্ট্রিবিউশন।
    মনে মনে ভাবতে থাকেন কোথা দিয়ে আসতে পারে আঘাত। নিজেকে অদৃশ্য শত্রুর জায়গায় বসিয়ে ভাবতে থাকেন উনি ওই জায়গায় হলে কি করতেন।
    ঘুম আসে না। ধীরে ধীরে বার করেন প্রথম সপ্তাহে রাজকুমার গুলাবচন্দানীর ফাইল থেকে পড়ে যাওয়া দুটো ছবি। একটি স্কুলের ফাংশানে এক দিদিমণির আর একটি লাস্যময়ী পপ সিংগারের। চেনা হয়েও অচেনা। কত বছর? এক দশকেরও বেশি?
    জেগে থাকেন। ট্র্যাংকুলাইজার খান না। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙে সকাল সাতটায় বেড দিতে এসে বেল রবিন বেল বাজালে।

    সেদিন ইচ্ছে করছিল রুটিনের বাইরে কিছু করতে।
  • ranjan roy | 24.99.184.100 | ০২ জুন ২০১৩ ২৩:৫৮612148
  • -- গাড়ি ঘোরাও। এত তাড়াতাড়ি গেস্ট হাউসে যাব না।
    -- তাহলে কোথায়?
    -- কোন নতুন জায়গায় নিয়ে চল। একটু খোলামেলা।
    -- ঠিক আছে। যেদিকে নতুন রাজধানী গড়ে উঠবে সেইদিকে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি। দেখবেন সব চওড়া চওড়া রাস্তা। একদম সেই গুরগাঁও বা নয়ডার আদলে।
    --তুই কি করে জানলি? খালি বড় বড় কথা?
    -- কি যে বল ব্যাটম্যান! আমরা তো ওদিকেরই। পাঁচ বছর বয়সে এদিকে চলে আসি। রবিন কখখনো ব্যাটম্যানকে গুল দেবে না।

    খুব ভুল বলেনি চমনলাল। তেমনি চওড়া চওড়া ওয়ান ওয়ে আর মাঝখানের ডিভাইডারগুলো মূল শহরের রাস্তার থেকে বেশি চওড়া। তবে নির্মাণকার্য চলছে, তাই ধূলো বড্ড বেশি।
    ফেরার সময় আগে দুটো গাড়ি ধূলোর ঝড় তুলে যাচ্ছে দেখে সদাশিবন চমনলালকে বললেন --একটু স্লো কর। তাড়াহুড়োর কোন দরকার নেই।
    কিন্তু টার্নিংয়ের মুখে ডানদিকের রাস্তা থেকে বেশ স্পীডে বাঁক নিয়ে আচমকা এদের লেনে ঢুকে পড়েছে একটি সেডান। চমনলাল প্রাণপণে বাঁদিকে স্টিয়ারিং ঘুরিয়েই আবার ডানদিকে কাটতে চায়। কোনরকমে কান ঘেঁসে সেডান ব্রেক কষে। আর পেছনের দরজা খুলে এক ষন্ডামার্কা লোক দ্রুত নেমে এসে সদাশিবনের গাড়ির উইন্ডশিল্ডে চাপড় মেরে চেঁচাতে থাকে---- বাহর নিকল্‌ শালে! উতর্‌ বে রেন্ডি কে অওলাদ্‌ ! চমন দরজ না খুলে কাঁচ নামিয়ে জিগ্যেস করে -- হুয়া ক্যা? টাচ্‌ ভি তো নেহি লগা।
    কিন্তু দক্ষিণী সিনেমার ঢঙে ডোরাকাটা গেঞ্জি পরা লোকটি আধখোলা কাঁচের মধ্যে দিয়েই হাত চালিয়ে দেয়। আর দরজা খোলার জন্যে জোরাজুরি করতে থাকে।

    ইতিমধ্যে ঝটিতি দরজা খুলে নেমে এসেছেন সদাশিবন।
    লোকটির পিঠে ভারি হাত রেখে বললেন-- হোয়াটস্‌ আপ?
    চমকে উঠে লোকটি পেছন ফেরে, সদাশিবনের আপাদমস্তক দেখে। দু'পায়ে সমান ভর দিয়ে শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দীর্ঘদেহী ব্যক্তিত্বকে দেখে একটু থমকায়। তারপর আঙুল উঁচিয়ে বলে-- এ- এ সাহাব! জ্যাদা আংরেজি চোদনা নেহি। জ্যাদা আংরেজি শুননে সে আপন কা দিমাগ খারাপ হোতা হ্যায়।
    সদাশিবন নির্বিকার মুখে বললেন যে যখন কোন গাড়িরই কিছু হয় নি,তখন শুধু শুধু এখানে দাঁড়িয়ে মুখ খারাপ করে আমরা সময় নষ্ট করছি কেন?
    লোকটি জানায় যে হয় নি, কিন্তু হতে কতক্ষণ? বিশেষ করে এমন দিনকানা উল্লুর মত ড্রাইভারের হাতে স্টিয়ারিং থাকলে? আমার মালিকের গাড়ির মাত্র দুমাস হয়েছে, যদি একটু স্ক্র্যাচও লাগত, তাহলে আপনার এই গাড়ি এখান থেকে ফিরতে পারত না সেটা জেনে রাখুন।
    -- তোমার গাড়ির মালিক কে? তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
    সেডানের অন্যদিকের দরজা খুলে নেমে এসেছেন এক আকর্ষক ব্যক্তিত্বের পুরুষ, পরনে দামী সাফারি স্যুট। আঙুলে অনেকগুলো আংটি ও মণিবন্ধে দামি ঘড়ি চোখ এড়ায় নি সদাশিবনের।
    মুচকি হাসির সঙ্গে বললেন--- ইয়ে গাড়ি ইস নাচিস কা হি হ্যায়।
    তারপর চমনলালের দিকে যেন হটাৎ চোখ পড়ল এমনি ভাবে বললেন-- আরে চমন ড্রাইভার! তাই বলি নইলে এমন বোকার মতন গাড়ি কে চালায়? ড্রাইভার বদলে নিন হুজুর! নইলে কোনদিন--!
    নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠলেন।
    তারপর ভুরূ কুঁচকে সদাশিবনকে দেখে বললেন-- ও! আপনিই সেই বড়ে ভাইয়ার কাম কা আদমি!
    -- সে কি মশায়? শোলে দেখেন নি? গব্বর কে সামলাতে ঠাকুর আনত না লোকজন? সিপাহী? তা আমার ভাইয়াজীও খানিকটা সেই রকম। আমাকে সামলাতে কী কী করতে থাকেন।এই অমার কার্ডটা রাখুন। আসুন একদিন আমার গরীবখানায়। চমন চেনে।
    দেখবেন , আমি লোকটা তত খারাপ নই।
    -- আপনি?
    --- আমাকে রায়পুর শহরে সবাই রাজকুমার বলেই চেনে। রাজকুমার গুলাবচন্দানী।
    আচ্ছা, নমস্কার!
    ধূলো উড়িয়ে সেডানটি উল্টো দিকে বেরিয়ে গেল।
    --- ফিরে চল চমন।
    -- ব্যাটম্যান! এই হল তোমার "ডার্ক নাইট" সিনেমার ক্লাউন। এর ডেরায় আমি তোমাকে নিয়ে যাব না। মালিক রাগ করবেন।
  • ranjan roy | 24.99.219.22 | ০৩ জুন ২০১৩ ১৫:৫১612150
  • ৮)
    এখানে কথা খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায়।
    ডিনার সেরে শুতে যাবার আগে চমন এঁটো প্লেট ইত্যাদি নিয়ে যাচ্ছিল, সদাশিবন হেঁকে বললেন--শোন্‌, ওসব রেখে একটু আসবি। তোর সাথে কথা আছে।
    ও ফিরে এলে সদাশিবন নিজে উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করলেন, আগে উঁকি দিয়ে দেখে নিলেন যে করিডরে কেউ নেই।
    --- রবিন, একঘন্টা আগে আমার কাছে বড়মালিকের ফোন এসেছিল। উনি রাজকুমার গুলাবচন্দানীর সঙ্গে ঘটনাটা খুঁটিয়ে শুনতে চাইলেন। তারপর আমাকে একটু সতর্ক থাকতে বললেন। সেসব ছাড়ো। আমি জানতে চাই উনি জানলেন কি ভাবে? আমি বলিনি, জানা গেল রাজকুমার নিজেও বলেনি। তবু উনি এত তাড়াতাড়ি জেনে গেলেন? কে বলতে পারে? বাকি রইলে তুমি রবিন।
    চমন চুপ করে হাতে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে রইল।
    -- তার মানে আমার আন্দাজ সত্যি? এবার বলেই ফেল যে তোমাদের বড়ে বাবু রমেশ গুলাবচন্দানী কি তোমাকে আমার পেছনে খোচর লাগিয়েছে? হ্যাঁ কি না?

    চমনলাল একদিকে মাথা হেলায়।

    সদাশিবনের চোয়াল শক্ত হয়।
    -- ঠিক আছে। এবার আমার কথা শোন চমনলাল! না, কোন রবিন-টবিন না।আমি এ নিয়ে আজ রমেশবাবুর সঙ্গে কথা বলব। আমি এখানে আর আদৌ থাকব কি না সে দু'একদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যে কদিন আছি তুমি আমার ঘরের মধ্যে ঢুকবে না। আমার খাবার ডাইনিং হলে দিয়ে দেবে। ওখানেই খেয়ে নেব। আর বেড টি দরজার বাইরে নামিয়ে দিয়ে বেল বাজিয়ে চলে যাবে। ব্যস্‌! যা বললাম যেন অন্যথা না হয়।
    চমনলাল একটুখানি সময় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, কী যেন ভাবে, তারপর পেছন ফিরে চলে যায়।
    কিন্তু চৌকাঠে পা রাখার আগে আবার ফিরে তাকায়, তারপর দু'পা এগিয়ে আসে।।
    -- আপ নারাজ হো গয়ে স্যার! পর বুরা না মানো তো এক বাত বোলুঁ?
    রমেশবাবু আমাদের অন্নদাতা! উনি যা বলেছেন আপনার ভালোর জন্যেই বলেছেন।
    উনি বলেছেন--চমন , এই নয়ে সাব বহোত বড়ে আদমী। মস্ত জাঁবাজ লড়াকু ইনসান। পর ইঁহা উয়ো কিসীকো নহী জানতে হ্যাঁয়। ইসীলিয়ে ম্যাঁয় তুঝকো ইয়ে জিম্মেদারি সোঁপ রহা হুঁ কি উনকে উপর সে নিগহেঁ হটনা নহী চাহিয়ে। হমারা দুশমন উনপর হামলা ন করেঁ।
    তাই আমি ছোট ছোট জিনিসও ওঁকে রোজ রিপোর্ট করি। কিছু হয়ে গেলে উনি আমাকে মাফ করবেন না।
    আর উনি আমাদের ভগবান, অন্নদাতা। তাই বাবা আর আমি কখনো ওঁর বিরুদ্ধে যাব না। জানি, উনি কখনো গলত কোন কাজ করতে বলবেন না।
    --- কী করে জানিস?
    --- সে অনেক কথা। এখন ঘুমোন, কাল বলব।

    আজ রাত্তিরেও ঘুম এল না সদাশিবনের।
    গাড়ির গায়ে ধাক্কা লাগতে লাগতে বেঁচে যাওয়া? ব্যাপারটা স্টেজ ম্যানেজড নয় তো?
    রাজকুমার কী করে জানল যে ওই নির্জন এলাকাতে সদাশিবন তখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন? ওদিকে উনি কেন গেলেন? না, উনি তো খালি বলেছিএল্ন--বাড়ি ফিরব না। কোথাও নিয়ে চল। জায়গাটা তো চমনলাল ঠিক করেছিল।
    ব্যাটা আসলে কার লোক? যদি গোপনে রাজকুমারের হয়? তাকি রমেশ অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনার দিকে বার বার ইংগিত করছিলেন?
    নাঃ, ব্যাপারটা খুব সরল নয়। কাল রমেশের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন