এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ডিটেকটিভ গল্পঃ স্বপনকুমারের ছায়ায়

    ranjan roy
    অন্যান্য | ১৯ মে ২০১৩ | ৬৫২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 24.99.232.245 | ০৩ জুন ২০১৩ ২৩:৩৮612151
  • পরের দিনের মিটিংয়ে রমেশ কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করলেন না। সদাশিবন কথা তোলায় বললেন যে সাবধানের মার নেই। রাজকুমার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে অনেক নীচে নামতে পারে।
    এদিকে কাজ অনেক এগিয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধনের জোগাড়যন্ত্র চলছে। রমেশ চাইছেন যে অ্যায়সা রঙ্গারঙ্গ কালচারাল প্রোগ্রাম হোনা চাহিয়ে কি রায়পুরকে লোগ দেখতে হী রহ জায়েঙ্গে।
    মুখ্যমন্ত্রীর স্বাগত অনুষ্ঠানের জন্যে বিশেষ ব্যান্ড আসছে। সানাই ও সন্তুরের যুগলবন্দী থাকবে। ছত্তিশগড়ের খয়রাগড় সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির বিশেষ সম্মেলক গানের দল, ডঃ আশীর্বাদম এর শিষ্যদের কত্থক, সেরা লোকনাট্যের এক ঝলক, বস্তারের বাইসন মারিয়াদের নৃত্য কি নেই!
    পরের দিনের প্রোগ্রাম হল " অ্যান ইভনিং ফর ইয়ুথ"। এর জন্যে মুম্বাই থেকে ডিজে আনা হবে। মলের ড্যান্স ফ্লোরে যুগল হিপ-হপ বা সালসা নাচের কম্পিটিশন হবে। তার জন্যে এক মাস আগে থেকে ১০০০ টাকা ফি দিয়ে নাম রেজিস্টার করাতে হবে।
    কিন্তু এই সন্ধ্যার বিশেষ আকর্ষণ হল একজন নামকরা পপ সিংগারের প্রোগ্রাম। কে সে? কেউ জানে না। কিন্তু এখন থেকে হাইওয়ে, হোটল, কফিহাউস, কাছারি চৌক, সর্বত্র বড় বড় হোর্ডিং। সিটি কেবল এ অ্যাড-- দিল থামকে রহিয়ে। ছত্তিশগড় কে যৌবন কো ললকার নে আ রহী হ্যায়----???
    সির্ফ ১৫ দিন পহলে নাম বতায়া জায়েগা। সাসপেন্স!
    কাজেই কলেজ ক্যান্টিন, গান্ধী পার্ক, কফি হাউস সর্বত্র চর্চা শুরু-- কে তিনি যিনি সবার রাতের ঘুম কেড়ে নেবেন? আর কেন এই গোপনীয়তা?
    সবাই একমত যে এসব গুলাবচন্দানীদের শস্তা ক্যাম্পেন। এরা বড় কিপটে।শেষ সময়ে কমপয়সায় শাকিলা বানু ভোপালী গোছের কোন মাঝবয়সী কাওয়ালী কুইনকে আনিয়ে সবার কে-এল-পি-ডি করে ছাড়বে।
  • ladnohc | 116.216.122.145 | ০৪ জুন ২০১৩ ০১:৩১612152
  • তার্পর?
  • ranjan roy | 24.99.220.46 | ০৭ জুন ২০১৩ ১১:০২612153
  • সদাশিবন ও কৌতূহল চাপতে পারলেন না। খোলাখুলিই জিগ্যেস করে ফেললেন রমেশ গুলাব্চন্দানীকেঃ
    -- এই পপ সিংগারের ব্যাপারটা কি বলুন তো? এটা কি আপনাদের পাবলিসিটি স্টান্ট? মানে যেমন লোকজন বলছে? নাকি অন্য কিছু? সত্যিই কেউ আসবে নাকি? আপনার বাবুজি তো অর্থোডক্স হিন্দু, শদানী দরবারের মন্ত্র নেয়া শিষ্য। আর আপনি মিলেনিয়ামের মলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্যাবারে বা বেলি ডান্স করাবেন তা বাবুজি মেনে নেবেন?
    এবার রমেশের হাসিটা একটু যেন তেতো।
    --শুনুন, পপ সং মানেই ক্যাবারে বা বেলি ডান্স নয়। তাহলে তো ঠুংরি গালেই বাঈজির মেহফিল ধরে নিতে হয়। আর এই মিলেনিয়াম মলের প্রোজেক্টের দায়িত্ব বাবুজি তাঁর বড়ছেলেকে , মানে আমাকে দিয়েছেন। আমার টার্গেট গ্রুপ হল ইয়ং জ্কেনারেশন।আমি চাই এই মলে নতুন প্রজন্মের ভীড় প্রথম দিন থেকেই শুরু হোক। তাই পপ গায়িকা ও ডিজে মাস্ট। হ্যাঁ, তখন বাবুজি নিজে উপস্থিত না হয়ে শদানী দরবারে পূজোয় বসবেন।
    তবে, এটাও ঠিক, উনি যদি এই প্রোজেক্টটা ছোট ছেলেকে মানে রাজমুমারকে দিতেন তাহলে ও ঠিক ক্যাবারে বা স্ট্রিপ-টিজ গোছের কিছু করিয়েই ছাড়ত।ও হচ্ছে রসিকপুরুষ।

    ততক্ষণে সদাশিবনের চিন্তা অন্য খাতে বইতে শুরু করেছে।
    --- আচ্ছা, এই প্রজেক্টটা পাবার জন্যে রাজকুমার কোন চেষ্টা করেন নি?
    ---করে নি আবার? মানে চেষ্টা করেছে যাতে এই দায়িত্বটা আমি না পাই।
    --কেন?
    --- আপনাকে খুলেই বলি। হয়ত আগেই বলা উচিত ছিল।
    আগামী বছর মার্চ মাসে বাবুজি নতুন উইল করবেন। তারপর বিজনেস ছেড়ে সম্পূর্ণভাবে শদানী দরবারের কাজে লেগে পড়বেন। উনি ট্রাস্টি তো আগে থেকেই ছিলেন। সন্তজীও তাই চান।
    তখন এই গুলাবচন্দানী পরিবারের বিশাল এম্পায়ার যার মধ্যে অন্ততঃ বারোটি ট্রেডিং ও তিনটি ম্যানুফাকচারিং ইউনিট আছে, তার দায়িত্ব পাকাপাকি ভাবে আমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়া হবে।
    --এটাই তো স্বাভাবিক। এতে টেনশন কিসের?
    -- টেনশন এই জন্যে যে বাবুজি আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। এই মিলেনিয়াম মল হল তার কোশ্চেন পেপার।
    --- সে তো আপনার কোশ্চেন পেপার। আর ছোটামালিক রাজকুমারের? তার জন্যে কোন প্রশ্নপত্র সেট করা হয়েছে?
    -- এখনও বুঝতে পারেন নি? পরীক্ষাটা শুধু আমারই নেয়া হচ্ছে। ও তো আগে ভাগেই পাশ করে বসে আছে। মানে বাবুজির চোখে।
  • ranjan roy | 24.96.58.231 | ০৭ জুন ২০১৩ ১৩:৫৪612154
  • -- বুঝলাম না।
    -- দেখুন, বাবুজি ও অধিকাংশের চোখে ছোটভাই রাজকুমার হল বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ, ক্রাইসিস ম্যানেজার, ক্রিয়েটিভ। রিস্ক নেবার ক্ষমতা রাখে। আইন-কানুন ভাল বোঝে। অনেকবার ক্রিটিক্যাল সময়ে ওর পরামর্শ আমাদের কাজে এসেছে।
    --- আর আপনি?
    --- আমি? আমি হলাম বাঁধাগতে কাজ করা বাবুজির ছায়ায় বেড়ে ওঠা এক প্রতিভাহীন একমেটে মানুষ।
    --- তো?
    --তো বাবুজি এই কাজটা শুরুতে ছোটেকেই দিতে চাইছিলেন। আমি নিরুপায় হয়ে শেষে মাকে ধরলাম। মাতারামের অনুরোধ বাবুজি ঠেলতে পারেন না। তাই আমি দায়িত্বটি পেলাম, কিন্তু এক শর্তে।
    -- সেটা কী?
    -- যদি আমি ভালভাবে ঠিক সময়ে প্রোজেক্ট শেষ করে মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে মিলেনিয়াম মল নির্বিঘ্নে উদ্বোধন করিয়ে দিতে পারি। তাহলে গুলাবচন্দানী এম্পায়ারের প্রকৃত উত্তরাধিকারী আমিই হব। শুধু ম্যানেজিং ডায়রেকটরই নয়, ভেটো পাওয়ারও থাকবে। যা এতদিন শুধু বাবুজির আছে।
    ফিনান্সের ব্যাপারে আমার কথাই শেষ কথা হবে।
    --আর ছোটে?
    --- ও ওয়ান অফ দ্য ডায়রেকটর, আর হোটেল চেনগুলোর নিয়ন্ত্রক।
    ----আপনি ব্যর্থ হলে?
    ----- অবস্থা ছোটের চেয়েও খারাপ হবে। একটা ফিক্স্ড মাসোহারা পাব। দুটো গাড়ি, একটা বাড়ি। আমার ছেলে রায়পুর শহরের বাইরে একটা ফার্ম হাউস। বোর্ডের সদস্য থাকবো, ব্যস্‌। কোন বিজনিস ইউনিটের মালিক না।
    -- নট ফেয়ার, নট ফেয়ার অ্যাট অল!
    রমেশ ম্লান হাসলেন।
    ---- তাহলে বুঝতে পারছেন যে এই প্রজেক্টটা আমার কাছে কত ইম্পর্ট্যান্ট? এর ওপর আমার জীবন-মরণ নির্ভর করছে।
    --একইভাবে রাজকুমারজীর স্বাভাবিক স্ট্র্যাটেজি হবে এটা কে বানচাল করা। তা উনি এখন অব্দি কিছু করেন নি?
    ---- করেন নি আবার! গোড়া থেকেই লেগে আছে। ও চেষ্টা করেছিল যাতে মুখ্যমন্ত্রীর থেকে উদ্বোধনের ডেট না পাওয়া যায়। ওনার সেক্রেটারিয়েট থেকে বলল--- তারিখ বদলাতে। কিন্তু বাবুজি আবার শদানী দরবারের সন্তজীর কথায় চলেন। উনি গণনা করে যে শুভদিন ও মুহূর্ত ঠিক করেছেন বাবুজির কাছে তা একেবারে পত্থর কী লকীর। পাথরে উৎকীর্ণ দাগ, কোন পরিবর্তন হবে না।
    ব্যস। ছোটের দাঁও ভীষণভাবে লেগে গেল। মুখ্যমন্ত্রী মিলেনিয়াম মল উদ্বোধন করতে অস্বীকার করলেন। কারণ, ছোটের পয়সাখাওয়া সরকারী আমলারা আমার নামে মুখ্যমন্ত্রীর কানে রংচড়িয়ে অনেক কিছু বলেছিল।
    -- তখন কী করলেন আপনি?
    -- আমি কী করব? পাথরে মাথা ঠুকবো? শেষে আমার মিসেস ছোটের কলকাঠি নাড়ার কিছু প্রমাণ সহ গিয়ে বাবুজির কাছে দরবার করলেন।
    --- ছোটে বাবুজির কাছে এই প্রথম ভাল ঝাড় খেল। বাবুজির কাছে নিজেদের খেয়োখেয়ির জন্যে বাইরে কোম্পানিকে বদনাম করা খুব বড় অপরাধ। তারপর উনি নিজে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন। সব ঠিক হয়ে গেল।
    -- তাহলে ভাবীজির কাছে দেওর হেরে গেলেন?
    --- পুরোপুরি নয়। একটা ফাঁড়া কাটল। কিন্তু এই ঘটনায় ছোটে আমাকে প্রকারান্তরে , বিপরীত পরিস্থিতিতির মোকাবিলায় অক্ষমেক অসহায় পুরুষ হিসেবে দেখাতে পারল। সেইটা ওর স্ট্র্যটেজিক গেইন।
    --- এখন কি উনি কিছু করছেন?
    --- ও বাবুজির সামনে নিরাসক্ত ভাব দেখাচ্ছে। কিন্তু ও ড্যাম গুড ফাইটার ও ট্যাকটিশিয়ান-- মানতেই হবে।
    আমার ইঞ্জিনিয়র, ডিজাইনার, সুপারভাইজার, রিমোট সেন্সর ও ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম এক্সপার্ট, এমনকি অ্যাকাউন্টসের লোকদেরও ওর দালালেরা মোটা টোপ দিচ্ছে।
    --- স্বাভাবিক।
    -- এখন বলছেন স্বাভাবিক, কিন্তু আগে তো আপনি স্যাবোতাজের সম্ভাবনা বলায় আমাকে প্যারানয়েড ভাবছিলেন!

    সদাশিবন একটু অপ্রস্তুত। সেটা কাটাতে ফোল্ডার থেকে দুটো ফটো বের করে রমেশের সামনে রাখেন।
    রমেশ চমকে উঠেছেন।
    ---- এই ফোটোগুলো আপনি কোথায় পেলেন?
    --- আপনার দেয়া রাজকুমারের ফাইলের ভেতরে লুজলি রাখা ছিল। আপনি চেনেন এদের?
    ------ এদের? এগুলো সম্ভবতঃ একজনেরই। প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এই পপ -সিংগার আজ গানের জগতে বিশিষ্ট নাম। ওঁর চটুল চাউনি, লাস্য ও শরীরী বিভঙ্গে উনি নতুন প্রজন্মের কাছেও খুব বড় ক্রেজ।
    আরে, আসলে আমরা ইয়ুথ ইভনিং এ ওঁকেই আনতে চেষ্টা করছি। কিন্তু উনি আমাদের মোটেই ভাও দিচ্ছেন না। বিজ্ঞাপনে নাম ঘোষণা না করার এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। পাবলিস্টি স্টান্ট তো কথার কথা।
    --- কিন্তু এই ছবিগুলো মিঃ রাজকুমারের ফাইলে এল কি করে?
    --- বলেছি না, ও হল রসিয়া! হয়তো মেয়েটার পেছনে লেগেছিল। হতে পারে মেয়েটা যে আমাদের সঙ্গে কোন কথা বলছে না, টাকার কথাও না, হয়ত এর পেছনে ছোটর হাত রয়েছে। এসব আপনি দেখবেন বলেই না আপনাকে এখানে সিকিউরিটির দায়িত্বে নিয়ে আসা।।
    --- বেশ, অন্য কাউকে আনলেই হয়! গায়িকার কি অভাব আছে?

    ----- তাহলেও লোকসান। ছোটর কাছে হেরে যাব। এসব তো গোপন রাখা সম্ভব নয়। সবাই জেনে গেছে যে আমরা মিস ক্যামেলিয়ার জন্যে চেষ্টা করছি। ওর লোকজন গোপনে গোপনে প্রচার করে শহরের যুবজনতার প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন অন্য কাউকে আনলে হাঙ্গামা হবে। ইউথ চলে যাবে। মলে আসবে না।
    --- উনি তো মহা ঘুঁটে-হুয়ে পলিটিশিয়ান, ধড়িবাজ লোক।
    --- তা আর বলতে! বললে পেত্যয় যাবেন না ওর নেটওয়ার্ক নানান কায়দায় মিস ক্যামেলিয়া সেই সন্ধ্যায় কী কী গান গাইবেন তারও একটা লিস্টি শহরে সার্কুলেট করছে।
    --যেমন?
  • ranjan roy | 24.96.58.231 | ০৭ জুন ২০১৩ ১৪:১৪612155
  • -- যেমন, Baby, Baby! It's time'.
    বা You asked me only once
    আর It is no sin honey, we are in love।
    আর মনে নেই। কেন আপনি শোনেন নি? ও তো খুব হিট আজকাল ডিস্কোথেক এ।

    --- ধূর! কী বাজে লিরিক! নাঃ আমি শুনিনি। আসলে আমার গানের টেস্ট অন্য। কর্ণাটকী সংগীতের বাইরে আমার খুব একটা কিছু শোনা হয় না। সেই ত্যাগরাজা কৃতি, এম এল বসন্তকুমারী, বালচন্দরের বীণা, ড্কটর বালমুরলী কৃষ্ণ এবং অবশ্যই এম এস শুভলক্ষ্মী।
    -- তবু একটু খোঁজ টোজ নিয়ে দেখুন। উনিতো দিল্লিবাসী। আর আপনারও দিল্লিতে ভালই ঠেক আছে। দেখুন না , যদি কোন কানেকশানে রাজি করাতে পারেন। যিনি করাবেন তাঁকেও প্রাপ্য কমিশন দেব। উনি থাকেন হৌজ খাসে।

    সদাশিবন খুব মন দিয়ে ফটোগুলো দেখছিলেন। কি যেন মনে আসছে, কিন্তু ঠিক আসছে না। অনেক আগের একটি চেহারা, কুয়াশার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠছে, কিন্তু ধরা দিচ্ছে না। -- স্কুলের ফাংশনে টিচার, আবার লাস্যময়ী পপ সিংগার! একই জনের কি? ঠিক মিলছে না, আবার যেন কোথায় একটা মিল আছে।

    -- আচ্ছা, এই গায়িকাটি আগে স্কুল টিচার ছিলেন?
    -- হ্যাঁ, সেইরকম কিছু শুনেছিলাম।
    --- সেন্ট অ্যাগনেস স্কুল? হরিয়ানার ক্যায়থাল শহরে?
    সদাশিবন উত্তেজনা চাপতে পারছেন না?

    --- চেনা নাকি? আপনাদের বিচিত্র জীবন। চেনা বেরোতেও পারে। তাহলে আমাদের পড়ে পাওয়া লাভ পাঁচ সিকে! তবে আমি এতসব জানিনা। আপনার তো নেটওয়ার্ক আছে, খোঁজ নিয়ে দেখুন না!

    (প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত)
    (চলবে)
  • ranjan roy | 24.99.68.5 | ০৮ জুন ২০১৩ ২০:২৬612156
  • দ্বিতীয় অধ্যায়
    --------------
    ক্যামেলিয়ার কথাঃ
    ------------------
    সাত সক্কালে মেজাজ খিঁচড়ে গেল। কতবার নীতাকে বলেছি রোববার সকালে কাউকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিবি না। শনিবার বিছানায় গিয়ে হাত-পা ছড়াতে বেশ দেরি হয়ে যায়।
    বলেছি যেই হোক, রোববার সকালে আমি ফোন-টোন ধরবো না। নীতা রামানী আমার ম্যানেজার ও বন্ধু। বুঝদার মেয়ে। ও সাধারণতঃ দুপুর দেড়টা নাগাদ আসে। তখন আমরা বিছানায় পা ঝুলিয়ে আইরিশ কফি খাই। ও কিছু ফ্রুট নিয়ে আসে। এ দিন আমি জিমেও যাইনা।
    কফি খেতে খেতে ও সেদিনের কাকে কাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া হয়েছে জানিয়ে দেয়। আর ও হল দারুণ গসিপ। এই লাইনে নানা জায়গায়, বিজনেসের অলিগলিতে ওর অবাধ যাতায়াত। ও বলেও বেশ মজা করে। আমরা দুজনেই হাসি। হেসে গড়িয়ে পড়ি।
    এই সেদিন ও বলছিল কানের পাশে সাদাচুল , টেকো এক প্রবাদপ্রতিম নাট্যকারের কথা।
    গত গ্রীষ্মে একটি স্পন্সর্ড সেমিনারে ইউরোপ ঘুরে এসেছিলেন। দলের চ্যালাচামুন্ডাদের কাটিয়ে দিয়ে উনি ওঁর বুড়োবয়সের প্রেমিকা এক মেয়ের বয়েসী হুকারের সঙ্গে মাদ্রিদের একটি হোটেলে সাতদিন কাটিয়েছিলেন। কিন্তু বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ হলে যা হয়!
    শরীর চলে না কিন্তু ওই দিল-হ্যায়-কি-মানতা -নহীঁ। তারপর হাভাতের মত মদ গেলা! লুজ মোশন! কোথায় বেড়াতে যাবেন কি খালি পটি যাচ্ছেন আর আসছেন। বাঁ-হাত আর শুকোয় না। তো সেই মেয়েটি বিরক্ত হয়ে শেষের চারদিন ওঁকে সারাক্ষণ হাগিস্‌ পরিয়ে রাখল।
    কিস্‌সাটা নাকি দেশেও মেয়েদের কানেও পৌঁছে গেছে।
    হাসতে হাসতে আমার চোখে জল এসে গেছিল।
    --- সব পুরুষগুলো একরকম, না রে নীতা? মারাঠি, গুজরাতি, বাঙালী, তামিল, জাঠ, সর্দার সব এক। কতই তো দেখলাম , আলাদা কিছু তো পাইনি। অবশ্যি তোদের সিন্ধিদের কথা জানিনে। হয়তো--?
    --- 'জ্যাদা শোচোঁ মত জেসমিন! আলাদা কিছু না। পুরুষ হল এক বিচিত্র প্রজাতি। ভাল ভাল কথা, আর্ট-ফার্ট, সব কিছুর আড়ে একই চিন্তা, একই মতলব। তাই দেখনি শংকরজী কৈলাসপতির সিম্বল কী ? একটি উত্থিত লিঙ্গ। অ্যাপ্রোপিয়েট। কারণ এটা হল গোটা পুরুষ প্রজাতির লোগো।
    একবার হল কি, সমস্ত মেয়েরা কৈলাসে পার্বতীর কাছে জয়েন্ট পিটিশন নিয়ে গেল যে--'।
    আমি হেসে ফেলে হাত তুলে বাধা দিই।
    -- এই চুটকুলা আগেও শুনেছি। ওসব ছাড়। এবার কাজের কথা বল।
    ও চট করে ডায়েরি দেখে নেয়।

    --- আজ বেশি নেই। তিনটে তিরিশে ডারবান হোটেলের ম্যানেজার এগ্রিমেন্ট রিনিউয়ালের কাগজপত্র নিয়ে আসবে। ৫টায় সমশের। নতুন গানের লিরিক শোনাতে চায়। আর বুড়ো ডি কস্টা ছুটি চাইছে, একমাসের। বাইরে যাবে। তাই সন্ধে সাতটায় একজন অল্প বয়েসী ছেলেকে ফুরনে কাজ করার জন্যে নিয়ে আসবে। লীড গিটারে কাজ চালিয়ে নেবে।ব্যস্‌! তারপর ডিনার।
    ---- আর লা মেগাপোড? ওদের কি হল? ওদের এই উইক এন্ডেই আসার কথা ছিল না? ফোন করিস নি?
    --- ওরা কন্ট্র্যাক্ট রিনিউ করবে না, আজ জানিয়ে দিয়েছে।
    --- বাস্টার্ড! অ্যাদ্দিন ধরে ঝুলিয়ে রেখে এখন--! মরুক গে! ভবিষ্যতে ডাকলেও যাব না। আর দলবিন্দরের নামটা নোট করে রাখবি।
    আমার প্রোগ্রামের কোন ফ্রি-পাস ইন শালোঁ কো নহীঁ মিলনা চাহিয়ে।
    -- সওয়াল হী নহীঁ, প্রশ্নই ওঠে না।
    ইদানীং বড় ক্লান্ত লাগে। বয়স হচ্ছে বুঝতে পারি। সবগুলো রোববার কেমন একইরকম হয়ে যাচ্ছে।

    কিন্তু আজকের রবিবারটা যে অন্যরকম হবে কে জানত?
    নীতার জন্যে আলাদা করে রাখা মোবাইলটা কোঁ কোঁ করে বারবার এস এম এস পাঠাচ্ছে। ঘুমচোখে স্ক্রীনে নীতার নাম। ঘড়ি বলছে মাত্র সাড়ে দশটা।
    অবাক হওয়ার চেয়েও ভয় পেলাম বেশি। ওর অসুখ-বিসুখ? বা ইম্পর্ট্যান্ট কারো ডেথ?

    --- জেসমিন, আমি কল ফরওয়ার্ড করছি, কথা বলে নাও।
    -- এখন?, কী ব্যাপার? হয়েছেটা কী?
    --- আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কোন সিকিউরিটির মামলা। ভদ্রলোক তোমার সঙ্গে ডিরেক্টলি কথা বলতে চান।
    বিরক্ত হই।
    --তুই বললি না, বিকেল চারটের সময় কথা বলতে? আমাদের সিকিউরিটি নিয়ে কোন প্রবলেম নেই তো! কোন বাউন্সার বা কাস্টমারের সঙ্গে কোন ঝামেলা হয় নি। তাহলে তাড়া কিসের?
    --- না, জেসমিন, লোক্যাল কোন পেটি লফড়া না। এটা এসটিডি কল,। নাম বললেন সদাশিবন। কিসের একটা হাই সিকিউরিটির মামলা। বললেন মিস ক্যামেলিয়া যদি পূর্বজীবনে সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলের টিচার জেসমিন ম্যাম হন তবে যেন এই ফোনটা ধরেন। ভদ্রলোক কিন্তু বেশ নাছোড়বান্দা। আমার মনে হল মামলা অন্যরকম। তাই বলছি ফোনটা ধর।
  • kumu | 133.63.112.71 | ২৭ নভেম্বর ২০১৩ ১৭:২৩612157
  • তুলে দিলাম।
  • Ranjan Roy | ০৭ আগস্ট ২০১৪ ০১:২১612158
  • হ্যাঁ, ধরেছিলাম ফোনটা। নীতা রামাণীর কথা মেনে। ও আমার সেক্রেটারি বল্লে কম বলা হয়।
    একটা ভারি পুরুষালি গলা। সাতসকালে কেন জ্বালাচ্ছে বাবা! কী চায়?
    নাম বলছে সদাশিবন! সদাশিবন? সদাশিবন? কোন সদাশিবন? দক্ষিণী মন্ত্রীর পিএ? মুম্বাইয়ের ফিনান্সিয়ার?
    আবার জানতে চাইছে আমি আর হরিয়ানার ক্যাথালের সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলের মিস জেসমিন একই ব্যক্তি কি না?
    সতর্ক হয়ে যাই।সিকিউরিট? আই বি? স্পেশাল ব্রাঞ্চ? এই পরিচয় তো সবার জানার কথা নয়। সতের বছর আগে সেসব চুকে বুকে গেছে, আমি মনে রাখতেও চাই না।
    গলায় একটা প্রফেশনাল টোন আনি। বলি -- কাম কী বাত কীজিয়ে।
    আপনার এসব কথার উত্তর দেব কেন?
    ওদিক থেকে একটা শান্ত প্রত্যুত্তর এলো।
    -- না, না। বিব্রত হবেন না। আপনি জেসমিন ম্যাম না হলে আমি মাপ চাইছি। এই কনভার্সেশন ভুলে যান। আপনাকে একটুও বিরক্ত করতে চাইনি। কিন্তু আমি খুঁজছি এমন একজন মহিলাকে যাকে প্রায় ১৭-১৮ বছর আগে আমি স্কুল টিচার জেসমিন নামে জানতাম। পরে তিনি স্কুলের চাকরি ছেড়ে পেশাদারি গানের জগতে পা রাখেন।
    --তারপর?
    --তারপর আমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই, ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছি। আজ তাঁকে আমার খুব দরকার।
    -- বেশ। কিন্তু আপনার কেন মনে হল আমিই সেই ? আমাদের পেশাদারি গানের জগত বিশাল। অনেকেই আসে আবার হারিয়ে যায়। হরিয়ানার মফঃস্বল থেকে কোন মেয়ে আসতেই পারে। হয়তো টিকতে পারেনি। ফিরে গেছে। সেখানে খোঁজ করুন। আর আমি তো হরিয়ানার নই। বিলাসপুরের।
    -- না, মানে ওই মেয়েটিও বিলাসপুরের। ক্যায়থালের স্কুলে ঘটনাচক্রে চাকরি করছিল মাত্র।
    (লোকটা কি আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ছে? দেখাচ্ছি বাছাধনকে।)
    --শুনুন, আপনি আবার ভুল করছেন। ভারতে চার-চারটে বিলাসপুর আছে। পাঞ্জাবে, হিমাচল প্রদেশে, হরিয়ানায় এবং ছত্তিশগড়ে।আপনি যাকে খুঁজছেন সে হরিয়ানার বিলাসপুরের; আর আমি ছত্তিশগড়ের।
    -- আমার ভুল হয় নি। জেসমিন ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরের রেল কলোনির মেয়ে। চাকরিসূত্রে হরিয়ানার ক্যায়থালে। আমি ওকেই খুঁজছি।
    --- কেন? বলতে আপত্তি আছে?
    -- না, না! একসময় ওকে ছোটখাট সাহায্য করেছিলাম। আর আজ আমারই কিছু সাহায্যের দরকার।
    --- কী রকম সাহায্য? কিছু আর্থিক লেনদেন? ধারশোধ? আমার তো কারো কাছে কিছু ধারকর্জ নেই! যদি বড় রকম ডোনেশন এর কথা ভেবে থাকেন তবে তার জন্যে সাতসকালে আমার ঘুম ভাঙানোর দরকার ছিল না। নীতার সঙ্গে কথা বললেই পারতেন। ভালকথা , আপনার ট্রাস্টের নামটা কী ? ইনকাম ট্যাক্স বেনিফিটের জন্যে রেজিস্ট্রি করা আছে তো? নইলে বড় ডোনেশন দেওয়া সম্ভব হবে না।

    (আমি এত কথা বলছি কেন? লোকটার গলার আওয়াজ ভাল লাগছে বলে? না, অন্য কিছু? লোকটা আমার পুরনো জীবন সম্বন্ধে বেশ কিছু জানে বুঝতে পারছি। কিন্তু কতটা? আর মতলবটা কী? ব্ল্যাকমেল? কথা বলতে বলতে বোঝার চেষ্টা করছি।)
    -- ম্যাডাম। আর্থিক নয়। অন্যরকম সাহায্য দরকার। সেসব ফোনে সম্ভব নয়। যদি আগামীকাল এই সময় বা দুপুরে একবার সামনাসামনি কথা বলা যায়।

    (এবার বিরক্ত হই। লোকটা কি ঘ্যান ঘ্যান শুরু করেছে?)
    -- কাইন্ডলি আমার পিএ রামানীর সঙ্গে কথা বলুন। অ্যাপো ওই ঠিক করে দেবে। গুড ডে!
    --- আরে শুনুন, শুনুন! জেসমিন! আমার কোড ওয়ার্ড হল-- বেতলপুর চার্চ, ফাদার মনোহর লাল।
    (আমার শরীরে বিশহাজার ভোল্টের শক্‌। )
    ---আপনি সদাশিবন? এক্স-আইপিকে এফ অফিসার?
    -- যাক, চিনতে পেরেছেন তাহলে! তাহলে কাল দেখা হতে পারে?
    -- হ্যাঁ, দুপুরে আমার সঙ্গে লাঞ্চ করুন।

    (চলবে)
  • Ranjan Roy | ০৯ আগস্ট ২০১৪ ১৮:২৫612159
  • সদাশিবনের কথা
    -----------------
    আমার মনে কোন সন্দেহ ছিল না। ওরা দুজন নয়, একজন। হরিয়ানার ক্যায়থালের স্কুল টিচার জেসমিন ম্যাডাম আর দিল্লির ডিস্কো কুইন মিস্‌ ক্যামেলিয়া ।
    সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলে কিছু নিরীহ এনকোয়ারি -- যেমন জেসমিন ম্যাডাম কোন বছরে স্কুল থেকে রিজাইন করেছিলেন ; তারপর দিল্লিতে খোঁজখবর-- গানের লাইনে ক্যামেলিয়া কবে উদিত হলেন, প্রথম ম্যানেজার কে ছিল, ব্যস্‌। সব খাপে খাপে মিলে গেল। তবু সন্দেহ থেকে যায়। একই রকম পরিস্থিতি , একই নাম দুজন আলাদা ব্যক্তিরও হতে পারে। যেমন ভারতবর্ষে চার-চারটে বিলাসপুর। চার আলাদা রাজ্যে, তিনটে আবার পাশাপাশি। তেমনি একাধিক ক্যামেলিয়া হতে বাধা কোথায়?
    কিন্তু উল্টো কোশ্চেনের উল্টো জবাব দিতে গিয়ে ফাঁদে পড়ল ক্যামেলিয়া। বলেই বসল আসলে ও হরিয়ানার নয়, ছত্তিশগড়ের। এটাই ছিল ডিসাইডিং ফ্যাক্টর। আর তখনই আমাকে চিনতে পারল।
    ---আপনি সদাশিবন? এক্স-আইপিকেএফ অফিসার?
    ওর গলার আওয়াজে ছিল বিস্ময়, ভালোলাগা আর কি একটা যেন? ভয়? রাগ ? নাকি ঘৃণা? বুঝতে পারছি না।
    ভয় কেন হবে? আমি কি ব্ল্যাকমেলার?
    আর আমি তো কোন থ্রেট করিনি। বরং স্টার্টার শেষ হতে হতে বুঝিয়ে দিয়েছি ওর আগের জীবন, অর্থাৎ কনভেন্ট স্কুলে টিচারের প্রেডিক্টেবল ছায়ায় ঘেরা শান্ত জীবন ছেড়ে এই হাজার ওয়াটের আলোয় ঝলমলে উদ্দাম জীবনে আসার রোডম্যাপ নিয়ে আমার কোন কৌতূহল নেই।
    কথাটা কি বিশ্বাস করল? বুঝতে পারিনি। হয়ত ভেবেছে সবই আমার জানা। না জানার ভান করছি। আসলে সত্যিটাই বিশ্বাস করানো কঠিন।
    সেই একটা ঘটনা। তারপর থেকে কোন যোগাযোগ ছিল না। আমিই চাইনি। কোন উপায় ছিল না। চাকরি বদলে অনেক দূরে চলে গেছি। তাই আই পি কে এফ,--- জাফনায় যাওয়া।

    কিন্তু ও কথাটা কী বলল যেন?
    ---আপনি সদাশিবন? এক্স-আইপিকেএফ অফিসার?
    তার মানে ও বহুদিন আমার খবর রেখেছে। শুধু জাফনা যাওয়া নয়, সেখান থেকে বিতাড়িত হওয়াও, --হ্যাঁ, এক্স-আই পি কে এফ!
    কিন্তু আমি এখন রায়পুরের মিলেনিয়াম মল প্রোজেক্টের সিকিউরিটি কনসাল্ট্যান্ট। সেজন্যেই দিল্লি আসা। মিস ক্যামেলিয়াকে ওখানে পারফর্ম করতে রাজি করানো আর ওর সিকিউরিটির ব্যবস্থা। সবটাই আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
    কিন্তু তার চেয়েও বড় কৌতূহল ছিল -- কেন ও মিলেনিয়াম মল উস্বোধনের প্রোগ্রামে রায়পুর যেতে রাজি হয় নি। কেউ ভয় দেখিয়েচে? না যাওয়ার জন্যে আলাদা টাকার অফার করেছে? কে সে? রাজকুমার গুলবচন্দানী বা ওর লোক? আমাকে যে সব সম্ভাবনার কথাই খেয়াল রাখতে হবে। আঘাত যে কোথা থেকে আসতে পারে!
    হ্যাঁ, আঘাত আসবেই। আমি গন্ধ পাই।
  • Ranjan Roy | ১০ আগস্ট ২০১৪ ০১:৩০612161
  • ডিনারের সময় কিছু টুকটাক কথাবার্ত; বক্সিং রিংয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সতর্ক পদক্ষেপ। ছোট ছোট জ্যাব, ফেইন্ট, এক-দুবার ডাক করা, এর বেশি নয়।
    হ্যাঁ, এই ডিনারের তুলনা শুধু বক্সিং রিংয়ের সঙ্গেই চলে। দুজনেই স্বেচ্ছায় এসেছি; দুজনেই একে অপরের ক্ষমতা খানিকটা জানি। কিন্তু দুজনেরই টান টান স্নায়ু; জিততে হবে। অপরপক্ষকে মাটিতে পেরে ফেলতে হবে। ডিনার সার্ভ হল যেন প্রথম রাউন্ড শেষের বেল বাজল। ডিনার শেষ। জেসমিন একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়েসী ভঙ্গিতে রিং ছাড়ল। অর্থাৎ , তৃতীয় রাউন্ডের খেলা শুরু হল। আমি দ্বিগুণ সতর্ক। ওর চোখে চোখ রাখি। চোখ অনেক কিছু বলে।
    প্রথম ওপেনিংটা আমার।
    -- মিলেনিয়াম মলের প্রোগ্রামের অফার অ্যাক্সেপ্ট করলে না?
    সোজাসুজি একটি স্ট্রেট লেফট, ওর চোয়াল লক্ষ্য করে।
    একটু অবাক হলেও সামলে নিল।
    -- আপনার ইন্টারেস্ট?
    হিটটা সামলেছে ডানকাঁধের ওপর নিয়ে।
    --- বললাম না--আমি মলের ইনগারেশন প্রোগ্রাম শেষ হওয়া অব্দি গুলাবচন্দানীদের সিকিউরিটি কন্সালট্যান্ট। ভুলে যাচ্ছ কেন?
    চটুল ফুটওয়ার্কে আমি সার্কলটা ছোট করে আনি।
    --- ও!
    পিছিয়ে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে, ওপেনিং খুঁজছে।
    -- তাই কোনরকম অস্বাভাবিক কিছু দেখলে কারণ জানতে চাইব না?
    রাইট হ্যান্ড জ্যাব, বাঁদিকের রিবসে।
    --- অস্বাভাবিক কী দেখলেন?
    লেফট হুক, তৈরি ছিলাম। ডাক করে সামলে নিয়েছি। কিন্তু গার্ড নেমে গেছে।
    -- স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যে প্রোগ্রামে আসছেন তাতে লোকে ফি না নিয়ে পারফর্ম করতে চায়। অথচ তুমি রাজি হলে না। ফিরিয়ে দিলে। কারণটা কী? তুমি এখন অনেক বড় আর্টিস্ট, এদের নাগালের বাইরে? নাকি অন্য কোন কিছু?
    দ্রুত কয়েকটি পাঞ্চ, ও একেবারে দড়ির ওপর গিয়ে পড়ে। তারপর জড়াজড়ি করতে করতে দম নেয়।
    --- আমাকে কী ভেবেছেন? সম্মান ও আত্মমর্যাদা কম্প্রোমাইজ করে শুধু পয়সার জন্যে যে কোন জায়গায় যাব?
    আচমকা এক আপার কাট্‌! ঠিক থুতনির ওপর। হড়বড়িয়ে রোপের সাহায্য নিই।
    -- শুধু তাই?
    -- শারীরিক ক্ষতিরও সম্ভাবনা ছিল।
    একটি দুর্বল রাইট হুক; ইম্প্রেসড্‌ হইনি। কাউন্টার পাঞ্চে ওকে ঠেলে দিই।
    ---- ছোট ভাই? রাজকুমার গুলাবচন্দানি?
    এটা কনুই থেকে আচমকা হুক; তৈরি ছিল না। চোয়াল নড়ে যায়, শুধু মাথা নাড়ে।
    আমি ছাড়ি না। জয়ের গন্ধ পেয়েছি। দুর্বল হলে চলবে না। টেকনিক্যাল জিত নয়,আমি চাই নক আউট ।
    কিন্তু রাউন্ড শেষের বেল বাজে। ও ওয়াশ রুম থেকে ঘুরে আসার অনুমতি চায়।
  • avi | 113.24.86.58 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২০:৪০612162
  • এ বাবা, গোড়ায় খেয়াল করি নি গল্পটা অসমাপ্ত। পড়ে যাচ্ছিলাম, দিব্যি লাগছিল, জোর হোঁচট খেলাম। ঃ(
  • ranjan roy | 24.96.57.168 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০৪612163
  • অভি,
    খুব উৎসাহ নিয়ে লিখছিলাম। কিন্তু আমার ঘনিষ্ঠ নেক্স্ট জেনারেশনকে পড়ে শোনানোয় ওরা বলল--কিস্যু হচ্ছে না। বোঝা যাচ্ছে তুমি ক্যাবারে দেখনি বা তার সঙ্গে বার সিঙ্গারদের তফাৎ বোঝোনা। বিল্ড অন ইয়োর স্ট্রেন্থ। যে দুনিয়াকে জানো, সেটা নিয়ে লেখ,--- যেমন ছত্তিশগড়ের গ্রাম। এটা এখানেই ছেড়ে দাও, নইলে আরও ছড়াবে।
    আমি ভগ্ন মনে ছেড়ে দিলাম। ওদের বোঝাতে পারিনি যে স্বপনকুমার মানেই না দেখা কাল্পনিক দুনিয়া নিয়ে লিখে ছড়ানো।ঃ))
  • avi | 113.24.86.58 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৩৯612164
  • ছড়ানো থাকবে এই প্রত্যাশা নিয়েই পড়ে যাচ্ছিলাম। তেমন কিছু বুঝতেও পারি নি অবিশ্যি। ভালো লাগছিল।
    ইয়ে মানে, ধরুন প্রচুর ছড়ালেন। তাতেই বা কি? আপনার লেখার প্রসাদগুণের জোরেই দাঁড়িয়ে যাবে। আর চেষ্টা করলেও দুহাতে পিস্তল আর ঝাঁটা দিয়ে অন্য হাতে হ্যারিকেন ধরাতে পারবেন না, বা সাইলেন্সার লাগানো রিভলবার ব্যবহার করাতে পারবেন না।ঃ)
    অনেকদিন আগে লেখা বলে আবার লিখতে অনুরোধ করব কি না বুঝতে পারছি না। তবে কিনা, শরদিন্দু ১১-১২ বছর গ্যাপের পর কালের মন্দিরা লিখেছিলেন, তাই, ধরুন যদি----
  • ranjan roy | 24.99.149.189 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:৫৩612165
  • অভি,
    ওকে! আজ দুপুরেই দূগ্গা বলে ঝুলে পড়ব। মানে , আমাকে আগে প্রথম থেকে গোটাটা একবার পড়ে নিয়ে লিং সাজাতে হবে। এতদিনের গ্যাপ! দেখা যাক।
  • | 87.59.236.210 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:৩৮612166
  • ডিটেকটিভ গল্প পড়ব।
  • Ekak | 113.6.157.185 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:৫০612167
  • লেখাটা পড়ছিলুম। রঞ্জনদা যে বিশাল ছড়িয়েছেন তা না, প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ, তবে সুর দুর্বল আছে বিস্তর জায়গায়। সেটার কারণ সম্ভত লেখকের ধারণা যে "স্বপনকুমার মানেই না দেখা কাল্পনিক দুনিয়া নিয়ে লিখে ছড়ানো" । এটা নয়। স্বপনকুমার এর লেখার ধাঁচ ভেটেরান কমিক পাল্প ফিকশন রীডার রা ভালো বুঝবেন। সেসব কি লেখক ফলো করেন? প্রাইমারি কালার এবং মোশন ইফেক্ট দিয়ে এক্সপ্রেস করার একটা ব্যাপার আছে। প্রথমেই লেখক ঠিক করে নেন এই এই রংগুলো রাখব। বেসিক শেড এর বাইরে যাব না। ফিক্সড পকড় ।এবার শুরু হয় খেলা। লেখক এখানে মুন্সিয়ানা দেখাতে গিয়ে বেসিক শেড এর বাইরে পা রেখেছেন। ঐখানেই ছড়িয়েছেন। এবং এইখানেই "মোটাদাগের" ফিকশন রাইটার কেও অনুসরণ করে লেখা এত কঠিন। বাইরে থেকে বেসুর মনে হলেও তার একটা সুর থাকে। আমাদের দেশে তো সেরকম পরিচালক নেই নইলে স্বপনকুমার নিয়ে দুর্ধর্ষ সিনেমা হত !
  • Ekak | 113.6.157.185 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:৫৮612168
  • মানে , আমি এটা নিয়ে অনেকের সঙ্গেই কথা বলে দেখেছি যে তাঁদের ধারণা পাল্প ফিকশন রাইটার রা কম প্রতিভাসম্পন্ন বলে ওরকম লেখেন। তা ঠিক না। কমিক্স এর উদ্বর্তন এবং প্রিন্ট মিডিয়ার টেকনোলজি বিবর্তন কে খেয়াল করুন। কেন প্রাইমারি কালার ? কেন একটা নির্দিষ্ট থিকনেস এর মোশন লাইন ? কারণ সবচে সস্তার কাগজে সস্তার মাটেরিয়ালে দ্যাট কুড বি দ্য বেস্ট থিং ওয়ান ক্যান অফার। পুরো আর্ট ফর্ম টাই তাই ওভাবে ডিসাইনদ। সেম ফর পাল্প রাইটার'স । প্রাইমারি ইমোশন নিয়ে ডীল করা। বেসিক প্যাটার্ন এর বাইরে না বেরোনো যাতে ওই শ্রেনীর ক্রেতা-পাঠক চট করে এড্রেস করতে পারে। যিনি লিখছেন তার মাথার মধ্যে "প্যানেল " সিকোয়েন্স কাজ করে। স্বপনকুমার এর লেখা ভর্তি প্যানেল সিকোয়েন্স। এবং ক্লোসার আসছে একদম নিজস্ব কায়দায় যেটা কিছুটা হাস্যকর কিছুটা উত্তেজক , সব মিলিয়ে নিজস্ব স্টাইল তৈরী হচ্ছে । এই "প্যানেল" থিঙ্কিং টায় অভ্যস্ত হওয়া দরকার পাল্প রাইটার হতে গেলে।
  • cb | 208.147.160.75 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৫:৪১612169
  • আই আই এম ইন্দোর ১৯৯৬ তে শুরু রন্জনদা। তখন রাজকুমারের ৩৬ বছর হওয়ার কথা। সালটা/ইন্সটিটা কি একটু এদিক ওদিক হত?
  • ranjan roy | 24.99.49.78 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২২:৫৯612170
  • cb,
    হ্যাঁ, অন্ততঃ দশবছরের গরমিল।ঃ((
    এখানে তো শোধরানোর সুযোগ নেই। দেখি-- ভবিষ্যতে--ঃ)))
  • ranjan roy | 24.99.49.78 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২৩:০২612172
  • একক,
    কোন কথা হবে না।ঃ)))
    দেখি, চেষ্টা করে। বেসিক ইমোশন, প্রাইমারি কালার।
  • ranjan roy | 24.99.49.78 | ০১ মার্চ ২০১৬ ০০:০২612173
  • ২)
    উঃ, সেদিনের লড়াইটা যে এইভাবে শেষ হবে ভাবি নি। ওয়াশ রুম থেকে প্রায় আধঘন্টা পরে যে বেরিয়ে এল তাকে দেখে চমকে উঠলাম। এবার ও মেক আপ এবং শরীরী বিভঙ্গে রাজকুমারের ফাইলে দেখা লাস্যময়ী মিস ক্যামেলিয়া।
    না, এবার আর আগের সেই সতর্ক স্টেপিং, চিন্‌ গার্ড করে প্রদক্ষিণ , দু'পায়ে এল-শেপ বানিয়ে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা নেই। ও এগিয়ে এল যেন দু'হাতে জোরালো পাঞ্চ ছুঁড়তে ছুঁড়তে!
    ---আমি যে সদাশিবনকে চিনতাম সে যে এতবড় কাওয়ার্ড তা তো জানতাম না। পরে জাফনাতে যাক বা জ্যামাইকাতে , সিংহের খাল গায়ে দিয়েও শেয়াল চামড়ার রং লুকোতে পারে কি?
    --- কী বলছেন বুঝতে পারছি না।
    -- আপনার কোড ওয়ার্ডটাই আপনাকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি;-- বেতলপুর চার্চ, ফাদার মনোহর লাল। কিছু মনে পড়ছে?
    --- হ্যাঁ; ওই চার্চেই আপনার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। ফাদার মনোহর লালের মাধ্যমে।
    -- এগজ্যাকটলি!
    --- আমি ওই চার্চে সাতদিন ধরে লুকিয়ে ছিলাম। বিলাসপুরের পুলিশ আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। ওখান থেকে বেতলপুর চার্চের দূরত্ব মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার। ওরা এলিমিনেশন করতে করতে প্রায় ট্রেস করে ফেলেছিল। আমার আগের শেলটারে ওরা গন্ধ শুঁকে পৌঁছে গেছে দু'দিন আগে। এভাবে যেকোন সময়ে ওরা বেতলপুর চার্চে পৌঁছে যাবে --হয়ত আগামী কাল ভোর বেলায়। ফাদার ভয় পাচ্ছিলেন। চার্চের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে আমি ধরা পড়লে ওঁদের নিয়ে টানাটানি হবে।
    [আর আমি? ভয় নয় আতংক, হাত পায়ের আঙুল দুমড়ে কুঁকড়ে যাওয়া আতংক। কারণ, ঠেকেদার ভাটিয়া, থানার ওসি কাটরে ও সেকন্ড অফিসার পান্ডে পুলিশমহলে বলে রেখেছে --- একদফে কেরেস্তান শালী কো অন্দর তো হোনে দো, ফির দেখো হম বারী বারী মেঁ উসকী ক্যা গত বনাতে! অপনা সুরত নহীঁ পহচানেগী।
    কী যে ভাবে এই শকুনের দল! ক্রিশ্চান মেয়ে হলেই এত সহজে পাওয়া যায়!]
    -- তা আপনিও তো কম ন'ন। শহরের নামজাদা ঠেকেদারের ছেলেটাকে থাপ্পড় মেরে দিলেন!
    --- আরে রোজ রোজ স্কুলে এসে বিরক্ত করত। বলে স্কুল ফেরত আমার বাড়িতে চলুন। দুটো বাচ্চা কে ইংরেজি পড়াতে হবে। গাড়ি এসে নিয়ে যাবে , দিয়ে যাবে। ওর বউ নেই, দু'বছর আগে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়ে মরেছে। ওর স্বভাব গোটা বিলাসপুর শহর জানত।
    --- কিন্তু ওদের লম্বা হাত।
    ---সেই থাপ্পড় মারাই কাল হল, আমার গোটা জীবন বদলে গেল। থানায় কমপ্লেন করল যে আমি নাকি ওর দুটো বাচ্চার মার্কশীটে ব্লেড দিয়ে আগের নম্বর তুলে খুব নম্বর লিখে ফেল করিয়েছি। বাপের সঙ্গে সামান্য কথা কাটাকাটির জেরে বাচ্চাদের ওপর বদলা নিয়েছি। ব্যস্‌, ফ্রড ও ফোর্জারির দায়ে আমার বিরুদ্ধে নন-বেইলেবল ওয়ারেন্ট। ঘরে এলোমেলো সার্চ। থানার ভেতর থেকেই আগাম খবর পেয়েছিলাম যে আমকে গ্রেফতার করতে আসবে। প্রথম কয়দিন সেই পুলিশ কর্মচারির বাড়িতেই লুকিয়েছিলাম। ওরা এটা আন্দাজ করতে পারে নি। যখন গন্ধ পেল তখন কোন উপায় না দেখে ফাদার মনোহর লালের আশ্রয়ে এলাম। আর সেই কঠিন সময়ে আপনি এলেন । সেদিন ছিল শনিবার। কিছু ডোনেশন । আর? আর বোধহয় শনিবারে ফাদারের কাছে কনফেশন করতে। কী? ঠিক বলেছি না?
    জেসমিন হেসে ওঠে, ক্যামেলিয়া হাসি। আমি সতর্ক হই।
    --- হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন।
    --- তা আপনিও পাপ করেন? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি মিলিটারি পোশাকে একজন সেন্ট!
  • ranjan roy | 24.99.49.78 | ০১ মার্চ ২০১৬ ০০:৫৭612174
  • --প্লীজ জেসমিন, লিসন।
    -- নো-ও-ও! ইউ বেটার লিসন ফার্স্ট! You owe me an explanation! you moron,
    গর্জে উঠেছে জেসমিন; উত্তেজনায় নাকের পাটা ফুলে উঠেছে। বড় বড় শ্বাসের সঙ্গে উঠছে নামছে ওর বুক। কিন্তু আমি অনায়াসে অন্যদিকে চোখ ফেরাই।
    --- ও কে; শুট্‌!
    --- ফাদার তোমাকে আদেশ দিলেন আমাকে রাতারাতি হরিয়ানার ক্যায়থালে সেন্ট অ্যাগনেস চার্চে পৌঁছে দিতে। ওখানে স্কুলে ভ্যাকান্সি আছে। ওখানকার প্যাস্টর ইম্মানুয়েলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়ে গেছে। আমি অরফ্যান। আমার সমস্ত কাগজপত্তর এক অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে। আর তুমি তো জানতে আমি ছিলাম রেল কলোনির মেয়ে সুমতি সুসান। সেদিন থেকে হলাম জেসমিন অ্যালেক্স, বাপ-মা নেই, অরফ্যান।
    তুমি তখন রায়পুরে, এনসিসির কম্যান্ডান্ট--তিনবছরের জন্যে। কিন্তু তুমি আমাকে চার্চ অবদি নিয়ে যাও নি। ক্যাথালের বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি ট্যাক্সিতে আমাকে বসিয়ে দিয়ে ড্রাইভারকে আগাম পেমেন্ট করে গায়েব হয়ে গেলে। অথচ--!
    --- বাকিটা আমি বলছি। ফাদার তোমাকে বলেছিলেন যে উনি আমাকে রাজি করাবেন। মানে তোমাকে বিয়ে করতে।আগে চিঠি লিখে সেদিন আমাকে আনিয়েছিলেন। বলেছিলেন-- তোমরা একে অপরকে দেখে নাও। খোলাখুলি কথা বলতে পারো। মেয়েটি মা মেরীর মত পবিত্র। কিন্তু সেই শনিবার আমি ফাদারকে কনফেশনের সময় জানিয়েছিলাম কেন আমি এই বিয়ে করতে পারব না। উনি চমকে উঠেছিলেন, খালি বারবার বলছিলেন-- জেসাস সেভস্‌!
    -- দিল্লিতে একরাত আমরা হোটেলে ছিলাম। পুলিশের ভয়ে একই কামরায়। ফাদারের নির্দেশে স্পাউজ সেজে।
    আমি খাটে, কিন্তু তুমি ভীতুর ডিম সোফায় শুয়ে ছিলে। যদিও সেদিন তুমি যদি আমায় ছুঁতে বাধা দিতাম না। আমার মন ভরে ছিল কৃতজ্ঞতায়, ভালোলাগায়। তবু বলি-- তোমার ওই সংকোচ, ওই সাবধান হওয়া ভাল লেগেছিল।
    কিন্তু, পরদিন আমাকে ফেলে পালিয়ে গেলে কেন কম্যান্ডার সদাশিবন? কেন হিউমিলিয়েট করলে?
    --- আমার উপায় ছিল না।
    -- লায়ার! কেন উপায় ছিল না? ডিড য়ু লাভ সাম আদার গার্ল? টেল মি!
    -- নো নো! নো আদার গার্ল! আই ওয়জ কমপেল্ড। ফরগিভ মি?
    -- নেভার! আইদার য়ু টেল মি দ্য ট্রুথ, এল্স--!
    -- আই কান্ট! বিলিভ মি।
    --- বিলিভ য়ু? ডু য়ু নো ইয়োর কাওয়ার্ডিস হ্যাজ মেইড মি এ স্লাট?
    --- কী সব বলছ? শান্ত হও জেসমিন; হোঁশ মেঁ আও।
    --- আমি ঠিকই বলছি। তুমি যদি সেদিন ফাদারের কথা শুনে আমায় বিয়ে করতে তো আজ আমি ক্যামেলিয়া না হয়ে জেসমিনই থাকতাম, জেসমিন সদাশিবন। আ টিচার লাভড বাই অল।
    -- খুলে বল, ইট ইজ স্টিল ফগি।
    --- তুমি পালালে, আমি কাজ পেলাম, শেলটার পেলাম। কিন্তু দুজন জেনে গেছল আমার ট্রু আইডেনটিটি। আমি ব্ল্যকমেইলের শিকার হলাম, পালা করে। শেষে এমনি সব মেয়েদের যা হয়, অ্যাবর্শন করাতে হল। ব্যস্‌, চার্চের শেল্টার হারালাম। আমি এখন দিল্লির ফ্লাঅওয়ার ভাসে ক্যামেলিয়া। সব তোমার জন্যে। নাও ইট ইস ইওর টার্ন। টেল মি দ্য ট্রুথ।
    [ এই আচমকা রাইট হুকে আমি রিংয়ের কোনায় ছিটকে গেছি। ও এগিয়ে এসেছে নক আউট পাঞ্চের জন্যে। আমি কী করি? কোন উপায় নেই। একটা আপার কাট?]
    আমার ফুসফুসের সব হাওয়া বেরিয়ে গেছে। ধীরে ধীরে রিজার্ভ স্ট্রেংগথ থেকে ধার নিয়ে ওর চোখের দিকে তাকাই।
    --- তুমি ফাদার মনোহরলাল কে জিগ্যেস করলে পারতে, উনি সব জানেন।
    --নো! আই উড লাইক টু হিয়র ইট ফ্রম য়োর ওন মাউথ।
    --- জেসমিন। আমার--- আমার পক্ষে কোন মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
    জেসমিনের ভ্রূ কুঁচকে যায়, চোখ প্রথমে ছোট হয়ে তারপর আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে,। সে তীব্র দৃষ্তির সামনে আমি চোখ নামিয়ে নিই।
    --- হোমো? তুমি ছোট ছেলেদের বিছানায় ডেকে নাও?
    ---ওহ নো , নাথিং লাইক দ্যাট। অ্যাম নো পেডোফিল, বাট--
    ---- বাট গে?
    আমি চুপ। এক মিনিট। কেউ কোন কথা বলি না। রিস্টওয়াচের টিক টিক শব্দ শোনা যাচ্ছে। হটাৎ ও হো-হো করে হেসে ওঠে। তারপর হাত বাড়িয়ে দেয়।
    -- ও মি, ও মাই! হাউরিডিকুলাস! লেট আস বি ফ্রেন্ড্স্‌। এবার বল, ওই স্কাউন্ড্রেল রাজকুমারকে কী করতে হবে?
  • 4z | 217.245.236.104 | ০১ মার্চ ২০১৬ ০১:১৫612175
  • রঞ্জনদা এবারে সত্যি স্বপনকুমারের মত গোঁজামিল দিচ্ছেন। তাড়াহুড়ো না করে ধীরেসুস্থে লিখুন প্লিজ।
  • সে | 198.155.168.109 | ০১ মার্চ ২০১৬ ০১:২০612176
  • হোঃ হোঃ হোঃ
  • Manish | 127.214.47.238 | ০৩ মার্চ ২০১৬ ১০:৩৪612177
  • Ranjan পড়ছি।
  • ranjan roy | 24.96.65.156 | ০৪ মার্চ ২০১৬ ১৫:৫৬612178
  • ৩)
    ফিরেছি রায়পুরে, তিনদিন বাদে। দুপুরবেলা রমেশ গুলাবচন্দানির অফিসে গিয়ে ফোল্ডারটা সামনে রাখি। তাতে একটি একশ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তৈরি কন্ট্র্যাক্টে Camelia nee Jesmin Alex এর সিগনেচার, দুজন উইটনেস-- আমি আর ওর সেক্রেটারি নীতা রমানী। ফার্স্ট পার্টির জায়গায় রমেশের সিগনেচার আগে থেকেই করা ছিল। একটা কপি আমি জেসমিনকে আগেই দিয়ে এসেছি।

    সেদিন ডিনারের পর আমাদের কথাবার্তা অনেকক্ষণ চলেছিল। দুজনেই একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। জেসমিন জানতে চাইছিল আরো কিছু। যেন আমাকে বুঝেও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছিল না। দুজনেই অনেক কথা বলি। কি করে যেন আমাদের গার্ড নেমে গেছল। ও বলে রাজকুমার জেনে ফেলেছে ওর অতীত।
    ওকে ভয় দেখিয়েছে ফাঁস করে ওর প্রফেশনালি ক্ষতি করবে। ক্যামেলিয়া ওরফে জেসমিনের এখন দিল্লিতে ক্লাউট কম নয়। ও পাল্টা থ্রেট করে রাজকুমারকে নোংরা ব্ল্যাকমেল ও ক্রিমিন্যাল ডিফেমেশন এর দায়ে জেলে পুরতে পারে বলে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয় পায়। নীতা পরামর্শ দেয় ঝামেলা এড়াতে। তাছাড়াও রয়েছে শারীরিক ক্ষতির ভয়। দিল্লিতে রাজকুমার কিছুই পারবে না। কিন্তু রায়পুরে? ভাড়াটে লোক দিয়ে? অন্ততঃ মুখে অ্যাসিড?
    রাজকুমার আশ্বস্ত হয় যে রায়পুরে মিলেনিয়ম মলের উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনে মিস ক্যামেলিয়া আসছে না। কিন্তু রায়পুর শহরে পোস্টার আগের মতই চলতে থাকে। সবাই জানে যে ও আসছে।
    রমেশ আমাকে বললেন যে ছোটের মতলব হল প্রত্যাশা বাড়িয়ে শেষ মুহুর্তে আমাদের দিয়ে অন্য নাম ঘোষণা করিয়ে ইয়ুথ ক্ষেপিয়ে সব লন্ডভন্ড করা। তারজন্য তিনটে ক্লাবের ছেলেপুলেরা তৈরি হচ্ছে। নুন খেয়েছে যে!
    তাই আমদের স্ট্র্যাটেজি হওয়া উচিত ক্যামেলিয়াকে ঘোষিত সময়ে স্টেজে তোলা-- যেমনটি ছোটের লোকজনের শহরের দেওয়াল ভরে দেওয়া পোস্টারে লেখা আছে। আর ওই গান তিনটে অবশ্যই।
    ওই যে-- যেমন, Baby, Baby! It's time'.
    বা You asked me only once
    আর It is no sin honey, we are in love।
  • ranjan roy | 24.99.113.195 | ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ১৩:৫৫612179
  • কিন্তু আমার ঘুম উপে গেছে।রমেশের কথা শুনলে আমাকে জেসমিন এর ব্যক্তিগত সুরক্ষার ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক হতে হবে। আহত বাঘ অনেক বেশি খুংখার। নিজের জন্যে আমার বিশেষ মাথাব্যথা নেই। ও'রকম অনেক rogue আমার দেখা আছে। কিন্তু ক্যামেলিয়া যে সফ্ট টার্গেট।
    ও রাজকুমারের কথা মেনে আসতে রাজি হয় নি। রমেশ গুলাবচন্দানির লোভনীয় প্রস্তাবকে পাত্তা দেয় নি। নিজের সেফটি নিয়ে নিজের মত করে ডিসিশন নেওয়ার অধিকার সবার আছে। দিল্লিতে থাকলে ও নিশ্চিন্ত। কিন্তু আমি ওকে রাজি করিয়েছি রায়পুরে ইউথ ইভনিং প্রোগ্রামে প্রাইমা ডোনা হিসেবে আসতে। উস্কে দিয়েছি ওর মধ্যে সুপ্ত অ্যাডভেঞ্চার স্পৃহাকে, সুড়সুড়ি দিয়েছি পঙ্গা নেওয়ার বেহিসাবী উদ্ধত ইগোকে। তারপর?
    ওর যদি কিছু হয়ে যায়? অন্ততঃ কোন আওয়ারা ছোঁড়ার মুখে অ্যাসিড বাল্ব ছুঁড়ে দেওয়া? হ্যাঁ, ইডিয়ট ছোকরা বা স্থানীয় কোন মাওয়ালী ধরা পড়বে। থানায় ওর হাড্ডি-পসলি গুঁড়ো করে দেওয়া হবে। দশ বছর জেলে পচবে। কিন্তু রাজকুমারের টিকিটি ছোঁয়া যাবে না, তা জানি।
    কিন্তু জেসমিন? ওর জীবন যে শেষ হয়ে যাবে। মলিকা- এ-হুস্ন থেকে বীভৎস চেহারার এক পঙ্গু নারী-- সকলের অবজ্ঞা, ঘৃণা বা করুণা কুড়িয়ে বেঁচে থাকা! ও বাঁচতে পারবে? আর সদাশিবন তুমি নিজে? নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে? তোমার কাছে জেসমিন কি শুধুই একটি কোল্যাটারাল ড্যামেজ হয়ে স্মৃতিতে থেকে যাবে? অথবা তুমি ওকে মন থেকে পুরোপুরি ডিলিট করে দেবে? যেমন এতদিন দিয়েছিলে?
    একবার পালিয়ে গিয়ে ওকে সর্বনাশের মুখে ঠেলে দিয়েছিলে, আর এখন সেই নাটক আর একবার? তোমার কি রাইট আছে এসব নিয়ে ছেলেখেলা করবার?
    তারচেয়ে রমেশকে বল --এই জেসমিন ফ্যাক্টর তোমার কন্ট্রাক্টের অঙ্গ নয়। এর দায়িত্ব তুমি নিতে পারবে না। মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে মল এর ইনঅগারেশনের সময় যেন কেউ মাংকি রেঞ্চ থ্রো না করে সেটার দায়িত্ব তোমার। কাজেই এই কন্ট্রাক্ট বাতিল করা হোক। বা পরে অন্য অনুষ্ঠানে জেসমিনের প্রোগ্রাম করা হোক।

    রমেশ গুলাবচন্দানি এসব যুক্তি মাছি তাড়ানোর মত করে হাত নেড়ে উড়িয়ে দিলেন।
    -- আপনি কি ভয় পেলেন? আরে, রাজকুমার নিশ্চিন্ত যে জেসমিন আসছে না। কাজেই ও সমস্ত শক্তি ও এনার্জি খরচ করবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রোগ্রাম ভন্ডুল করতে। আপনার সহযোগিতায় আমরা সেটা ভালভাবে সম্পন্ন করব আর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার মত দ্বিতীয় দিন ক্যামেলিয়াকে হাজির করে ওর থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেব। আর ওই প্রোগ্রমের পর মিলেনিয়াম মল হয়ে উঠবে শুধু রায়পুর নয়, গোটা ছত্তিশগড়ের ইয়ুথের প্লেস অফ রাঁদেভূ! একবার ভেবে দেখুন। তারপর গুলাবচন্দানি সাম্রাজ্যের বড়ে শেঠজি নিজের ব্যাটন কার হাতে দেবেন সেটা সহজেই অনুমেয়। এক্ষেত্রে ওটাই হবে ন্যাচারাল জাস্টিস।
    সদাশিবন ভাঙলেও মচকাবেন না। উনি আবার এগ্রিমেন্টের কথা তুললেন।
    রমেশ গম্ভীর। খানিকক্ষণ কোন কথা বললেন না। টেবিলের কাঁচের নীচে রাখা কিছু নক্শার দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে একটা পেপারওয়েট নিয়ে খেলছেন। তারপর পূর্ণ দৃষ্টিতে সদাশিবনের দিকে তাকিয়ে নীচু গলায় কেটে কেটে বললেন--আপনার কন্ট্রাক্টটি ভালো করে পড়েছেন? সবগুলো ক্লজ? ঘরে গিয়ে আরেকবার দেখে নেবেন। পেজ নাম্বার 7, ক্লজ f। একটি ইনডেম্নিফাইয়িং ক্লজ। তাতে বলা আছে যে গোটা প্রোগ্রামটার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্যে আবশ্যক সুরক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আপনার এবং ওই প্রোগ্রামের খুঁটিনাটি নিয়ে আমার ডিসিশন ফাইনাল ও বাইন্ডিং। আপনার কাজ হল তার জন্যে সিকিউরিটির ছক তৈরি করা , সেটার এক্সিকিউশনের দায়িত্ব পালন করা ; আর সে জন্যে আপনি যা যা হেল্প চাইবেন তা পূর্ণ করা আমার দায়িত্ব এবং এ ব্যাপারে আপনাকে সবরকম লজিস্টিক সাপোর্টের ব্যবস্থা করা আমার জন্যে বাইন্ডিং।
    আপনি ঘাবড়াবেন না। শুরুতে তো একটুও ভয় পান নি! আসলে তখন জেসমিন আপনার আমার কাছে একটি ঘুঁটি মাত্র ছিল। যেই আপনার চেনা বেরোল অমনি আপনি আর ইম্পার্সোন্যাল থাকতে পারলেন না। এতে সিকিউরিটির ক্ষতির সম্ভাবনা।
    সদাশিবন চমকে উঠলেন।
    কিন্তু আরও বাকি ছিল।
  • Mmu | 99.87.178.253 | ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ১৭:১৬612180
  • রঞ্জন দা , ২০১৬ ছেড়ে এখানে কি করছেন ! ২০১৬ তে আপনাকে দরকার । আপনার পোস্ট দেখতে পেলে ভাল লাগত ।
  • ranjan roy | 24.96.39.149 | ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ১৩:৫৫612181
  • Mmu,
    আগেই বলে দিয়ে্ছি-- ১৯মের পরে বা রাত্তিরে মুখ খুলব।
  • ranjan roy | 24.96.39.149 | ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ১৪:৩২612183
  • ৪) দিনটা শুক্রবার। সেদিন সকাল থেকেই মিলেনিয়ম মলে আমি ব্যস্ত।
    চিন্তায় ফেলেছে থার্ড ফ্লোরের স্লো প্রগ্রেস। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকেই , মানে গণপতি উৎসবের সময় থেকেই ধীরে ধীরে কাজের প্রোগ্রেস ঢিমে চালে চলছে। প্রথমে ব্যাপারটা বোঝা যায় নি। এটা শুরু হয়েছিল আস্তে আস্তে। প্রথমে এক-দুজন ইলেক্ট্রিশিয়ন কমল, তারপর দু-একজন ওয়েল্ডার, তারপর দুজন সুপারভাইজার; শেষে একজন ইঞ্জিনিয়র।
    সবাই নাকি ছুটিতে যাচ্ছে। অনেকেরই বাড়িতে বিয়ে,। কারো কারো বাড়িতে নবজাতকের আগমন। প্রথমে কেউ গা করে নি।
    কিন্তু লক্ষ্যণীয় - অধিকাংশই দু-চারদিনের নাম করে ছুটি নিয়ে টেলিগ্রাম করে বা ফোন করে ছুটি বাড়িয়েই চলেছে।
    রমেশ প্রথমে পাত্তা দেন নি। এমন নাকি শরতের শেষে প্রতিবছরই হয়। এরপর ঠিকেদারের মজুররা ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেল।
    রমেশ অবিচল।
    -- এখন আমাদের উত্তরভারতের তেওহার বা পরবের দিন শুরু হয়ে যে! গণেশ চতুর্থী, দশেরা, দীপাবলী--ব্যস্‌। দেখবেন সব কাজে ফিরছে। আপনি চিন্তা করবেন না। সীমেক কোম্পানির কাছে প্রোজেক্টের পার্ট চার্ট দেখুন। এসব হিসেবের মধ্যে ধরা আছে।
    তাই হল।
    দীপাবলী গেল, এবার কাজের লোকজন ফিরতে শুরু করেছে।রমেশের মুখে একগাল হাসি। আমি কি সিকিউরিটি নিয়ে একটু প্যারানইয়াক?
    কিন্তু আমার মনটা কু-ডাক ডাকছে কেন? গত এক পক্ষ ধরে?
    এই কেন'র উত্তর আজ পেয়েছি।
    আজ সারাদিন ধরে সমস্ত ঠিকাকর্মীদের জন্যে জারি গেট্পাস আর মাস্টার রোলের রেকর্ড চেক করেছি। না, ওদের সংখ্যাতে কোন ইতরবিশেষ হয় নি। কিন্তু অনেকগুলো স্টাফ বদলে গেছে যে! সবাই নয়। কিন্তু বেশ ক'জন। সাধারণ মজদূর, ইলেক্ট্রিশিয়ান, ওয়েল্ডার ও আরও কয়জন সেমি-স্কিল্ড লেবার। কেন?
    এটাই নাকি দস্তুর। কিছু লোকের গাঁয়ে ক্ষেতিবাড়ি আছে। ওরা ধানকাটার পরে ফিরবে।
    এইসব নতুন লোকের ঢোকা কতদূর সেফ? এমন একটা হাই-রিস্ক প্রোজেক্টের জন্যে? এগুলো রমেশ এত সহজে নিচ্ছেন কেন?
    আর মাত্র দু'মাস বাকি। ক্রিসমাসের আগে সবটা কম্প্লিট করে সার্কিটগুলোর একটা রান করিয়ে দেখতে চাই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন