এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ডিটেকটিভ গল্পঃ স্বপনকুমারের ছায়ায়

    ranjan roy
    অন্যান্য | ১৯ মে ২০১৩ | ৬৫২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • b | 135.20.82.164 | ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ১৪:৪৫612184
  • স্বপনকুমার হচ্চে না, রঞ্জনকুমার হয়ে যাচ্ছে।
  • ranjan roy | 24.96.39.149 | ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ১৫:২৫612185
  • ঃ))))
  • কান্তি | 55.126.160.185 | ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ১০:৪০612186
  • এত স্বপনকুমার দুই হবার বাসনা কেন? রঞ্জন কুমার কম কিসে?
  • ranjan roy | 24.99.129.85 | ২০ এপ্রিল ২০১৬ ২০:৩৫612187
  • বিকেলের দিকে মনে হল সব প্রশ্নের উত্তর এখানে পাব না। নিজের কামরায় গিয়ে কিছু ফাইল আর নক্শা মিলিয়ে দেখতে হবে। রবিনকে বললাম গাড়ি বের করতে, তাড়াতাড়ি ফিরব। ঘরে পৌঁছে স্নান করে কহি খেয়ে একটু পড়াশোনা করব।
    কিন্তু সেই সন্ধ্যেয় আর তাড়াতাড়ি ফেরা হল না। গাড়ি হাইওয়েতে ঢোকার আগে একটা সাদা গাড়ি হর্ন দিতে দিতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আর আমার মোবাইলও প্রায় একই সঙ্গে বেজে উঠেছে।
    -- রাজকুমার বলছি। আপনাদের ছোটে! পাশের সাদা গাড়িটায় উঠে বসুন। আপনার ওই ছোকরা ড্রাইভার আমার পেছনে পেছনে চলুক। চিন্তার কিছু নেই। কোন ফাউল প্লে নয়, জরুরী কিছু কথাবার্তা আছে।
    আমি রবিনকে আব্শ্যক নির্দেশ দিয়ে ওই রাজহাঁসের মত গাড়িটার কাছে যাই। পেছনের দরজা খুলে যায়। ভেতরে ঢুকে দেখি রাজকুমারের হাসি হাসি মুখ। দুধসাদা সীটে এলিয়ে না পড়ে সোজা হয়ে বসি। না, কোমরের কাছের ব্যারেটা রিভলবারে হাত ছোঁয়ানোর দরকার বোধ করি নি।
    গাড়ি ৩৬গড় মলের কাছে এয়ারপোর্ট যাওয়ার ভিআইপি রোড দিয়ে ছুটে চলে। চোখে পড়ে একের পর এক বিভিন্ন বিজনেস হাউসের বোর্ড লাগানো কিছু রিসর্ট। কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিশাল আশ্রমিক মঠ । ভারত সেবাশ্রমের প্রণবানন্দ অ্যাকাডেমি ও আশারাম বাপুর আশ্রম। স্বামীজি জেলে থাকায় কেমন হতশ্রী ভাব।
    এবার গাড়ি ঢুকছে রাজকুমার গুলাবচন্দানির নিজস্ব বাগানবাড়ি কাম অফিসে। সারা রাস্তা উনি গন্তব্যস্থল জানিয়ে দেওয়া ছাড়া একটাও কথা বলেন নি। কিছু ভাবছেন।কিন্তু মুখের বিদ্রূপাত্মক স্টেনসিল হাসিটি টোল খায় নি।
    পোর্টিকোতে গাড়ি দাঁড়াতেই জনা তিন কর্মচারী এগিয়ে এল। উনি তাদের ঠেট ছত্তিশগড়ি ভাষায় কিছু নির্দেশ দিয়ে মাছি তাড়ানোর মত করে হাত নাড়লেন।
    আমরা ওঁর ইশারায় অফিসের পাশে একটি অ্যান্টি রুমে আরাম করে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলাম।
    জানিয়ে দিলাম শুধু এককাপ কড়া কফি ছাড়া কিছু খাব না।
    উনি মাথা নেড়ে হেসে সায় দিলেন। আর পাশের ড্রয়ার থেকে দুটো ফোল্ডার বের করে কফিটেবলের ওপর রাখলেন।
  • ranjan roy | 24.99.129.85 | ২০ এপ্রিল ২০১৬ ২১:১০612188
  • -- প্রফেশনাল লোকজনের সঙ্গে ডীল করতে আমার খুব ভাল লাগে, বিশেষ করে আপনাদের মত মানুষ হলে।
    আমি তাকিয়ে রয়েছি দেখে বললেন-- কোন ন্যাকামি নেই। ডিসিশন নিতে দ্বিধা নেই। নিজের লক্ষ্যে স্টেপ বাই স্টেপ এগিয়ে যাওয়া। আরে আমরা আসলে একই নক্ষত্রে জন্মেছি, আমি আর আপনি। বড়ে ভাইয়ার কথা আলাদা। ওর বোধহয় কন্যারাশি, ভাবীজির কথায় চলে! বাবুজিও জেনে গেছেন যে গুলাবচন্দানি এম্পায়ার কেমন লোকের হাতে পড়লে ফেঁপে ফুলে উঠবে।
    -- আপনার সমস্যাটা কী? নিশ্চয় আপনি আমাকে নিজের বড়ভাইয়ের চরিত্রগাথা শোনাতে এখানে তুলে আনেন নি?
    মুচকি হেসে রাজকুমার একটু গলা তুলে বললেন-- আই প্রটেস্ট! 'তুলে আনা' কথাটা এখানে বেমানান। আপনাকে কোন কিডন্যাপ করা হয় নি। সে সাহস আমার নেই। আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে নিজেই গাড়ি থেকে নেমে আমার গাড়িতে উঠে বসেছিলেন।
    --তাই?
    -- উঃ! কারণ আপনার অদম্য কৌতূহল। আপনি আমার ডেরায় এসে আমাকে জরিপ করে দেখার পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা সুযোগটি হাতছাড়া করতে চান নি।
    --- আমার লাভ?
    -- সব কথা আমার মুখ দিয়েই বলাবেন? বেশ। স্ট্র্যাটেজি মশাই স্ট্র্যাটেজি! আপনাকে বড়ে ভাইয়া এনেছে আমার সম্ভাব্য চোরাগোপ্তা আক্রমণের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তুলতে। আপনি অভিজ্ঞ। সেপহটি-সিকিউরিটির সমস্ত খুঁটিনাটি সব ব্যবস্থা আপনি তন্নতন্ন করে স্ক্যান করেছেন। তবু আপনার মনটা খুঁত খুঁত করছে। কারণ আমার চালটা আপনি জানেন না।
    -- আপনার সঙ্গে কফি খেয়েই সব জেনে যা্বো?
    -- আপনার মত বুদ্ধিমানও যদি ওইসব ঘিসিপিটি inane কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করে--! আরে, আপনি আমার ডেরা দেখলে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বললে আমার কিছুটা আন্দাজ তো পাবেন।
    -- কফিটা ভাল।মনে হচ্ছে কেরালার কোন গার্ডেনের থেকে আনা সীড।
    -- থ্যাংকস্‌! এবার কাজের কথা।
    প্রথম, আমার সম্বন্ধে যা যা উল্টোপাল্টা কথাবার্তা শুনেছেন তা ভুলে যান।
    --যেমন?
    -- এই যেমন আমি মিলেনিয়ম মলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ভেস্তে দেওয়ার তালে আছি।
    -- আপনি নেই কি?
    রাজকুমারের চোখ জ্বলে ওঠে।
    -- ব্র্যাভো! আমার ঘরে বসে আমাকে প্রকারান্তরে মিথ্যেবাদী বললেন! আপনার সাহস আছে মানতে হবে।
    -- না, আমি শুধু একটা পার্টিনেন্ট কোশ্চেন করেছি। অ্যান্সারটা এখনও পেলাম না।
    --- শুনুন, ভাইয়া আপনাকে বলেছে যে আমি ওই প্রোগ্রাম বানচাল করে বাবুজির সামনে ভাইয়াকে অপদস্থ করে ওঁর গদিতে বসতে চাই। ভুল। একেবারে গোড়ায় গলদ। ভাইয়ার সঙ্গে আমার যাই থাক, আমি গুলাবচন্দানি সাম্রাজ্যের গায়ে দাগ লাগতে দেব না। আমিও তো গুলাবচন্দানি। নিজেদের ব্র্যান্ডনেমে দাগ লাগিয়ে গুড উইল লস করে ভাঙা সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হয়ে আমার লাভ? আমি স্বভাবে ঔরংজেব নই। এসব মাথায় ঢোকাচ্ছে ওই বড়েভাবী। এসেছে এক বানিয়া পরিবার থেকে। ইন্ডাস্ট্রির কিচ্ছু বোঝে না। ও কী বুঝবে আমাদের ফিলিং? sense of belonging? কিন্তু ভাইয়াকে ওই চালাচ্ছে।
    -- বেশ, এবার কী বলবেন? যেহেতু স্যাবোটাজের কোন আশংকা নেই, অতএব আমার উচিত ইস্তফা দিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাওয়া? আর আমার যা ফিনানশিয়াল লস হবে সেটা আপনি পুষিয়ে দেবেন, এই তো? তা আমার দাম কত ধার্য করেছেন?
    ঠহাকা মেরে হাসতে থাকেন রাজকুমার। হাসির শব্দে কেঁপে ওঠে দেওয়াল। হাতের ধাক্কায় কফি টেবলের ওপর জলের গ্লাস থেকে জল ছলকে পড়ে। তক্ষুণি প্রায়ান্ধকার এক কোণা থেকে একজন বেড়াল পায়ে এসে টেবিলটি মুছে দিয়ে গ্লাসটি সরিয়ে নেয়।

    ---- দাঁড়ান, দাঁড়ান! নট সো ফাস্ট! সব বলছি, একটু সামলে নিই?
  • ranjan roy | 24.99.129.85 | ২০ এপ্রিল ২০১৬ ২১:৩২612189
  • ৫)
    সেদিন একঘন্টার মধ্যেই ফিরে এসেছিলাম।

    রাজকুমার বললেন -- তাহলে আপনার দিল্লি সফর সফল হল না?
    আমি নিরুত্তর।
    তখন উনি একটি ফোল্ডার খুললেন। তাতে অনেকগুলো ফোটো। আমার এবং জেসমিনের। দিল্লির হোটেলের পোর্টিকোতে গাড়ি থেকে আমি নামছি। দুজনে ড্রিংক্স নিয়ে কথাবার্তায় মশগুল রয়েছি। একটিতে জেসমিনের আঙুল উঁচিয়ে আমাকে শাসানোর ছবি। আরেকটিতে জেসমিন ওয়াশ রুম থেকে ফিরে আমার টেবিলের দিকে এগিয়ে আসছে, এইসব।
    --- দেখছেন তো,
  • ranjan roy | 24.96.37.162 | ২১ এপ্রিল ২০১৬ ১৯:০৭612190
  • -- শুনুন। আপনি জেসমিনকে ভাইয়ার কথায় রাজি করাতে গেছলেন। পারেন নি। জেসমিন প্রফেশনাল। ফালতু গুলাবচন্দানিদের বাওয়ালে নাক গলিয়ে বকরী হবে কেন?
    -- তাহলে আপনার চিন্তা কিসের? কথাটা শেষ করুন, আমি ফিরে যাই।
    -- আরে তাড়া কিসের? আভি ভী রাত জওয়ান হ্যায়! আমি চাইছি আপনি এবার আমার কথাটা শুনে ভাইয়াকে রাজি করান।
    -- মাপ করবেন, আমি রমেশ গুলাবচন্দানির সিকিউরিটি কনসালট্যান্ট, কোন বিজনেস টাউট নই।
    -- এত তাড়াতাড়ি রেগে গেলে চলে? আমি তো একটা সন্ধি প্রস্তাব দিচ্ছি। সিজফায়ার। শর্তগুলো শুনে নিলে আপনারই লাভ।
    উনি হাতের ইশারায় আরেক কাপ কফি দিতে বললেন।
    -- আপনারটা?
    --- আমি এ'সময় অন্য কিছু খাই। আপ তো সাথ দেনে সে ইনকার কিয়ে। কোঈ বাত নহীঁ। যদি আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তো সেলিব্রেট করবো। সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি!
    -- শুনি।
    -- দেখুন, রমেশভাইয়ার ভয় আমি মুখ্যমন্ত্রী এসে মল উদ্ঘাটনের সময় কিছু খুরাপাত, কিছু হরকৎ করব। ওঁর আশংকা খুব অমূলক নয়। কিন্তু ভাবীজি গিয়ে ভারি দরবার করেছেন পিতাজির কাছে। ওল্ডম্যান আমাকে ডেকে দাবড়ানি দিয়েছে। এখন যদি আপনার বা কোন মিস্ত্রীর দোষেও সেদিন কোন ঘটনা ঘটে তো আমি সাজা পাবো। একেবারে নির্বাসন!
    বলার ভঙ্গিতে আমি হেসে উঠি। রাজকুমারও মুচকি হেসে কাঁধ ঝাঁকান।
    -- শুনিয়ে, ইয়ে হঁসনে কী বাত নহীঁ হ্যায়। ভাবীজি মোক্ষম চাল দিয়েছেন। আসলে ক্ষমতার শতরঞ্জ খেলায় প্রতিপক্ষ হলেম আমরা দুজন। ভাইয়া তো ডামি।
    এবার আমার পালা। আমি বলছি কোন হরকৎ কোন শরারৎ করব না। তবে আমিই লুজার কেন হব? আমারও শর্ত আছে। জেসমিন।
    প্রথম দিন ভাইয়া-ভাবীর। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ফিতে কাটা , বেলুন ওড়ানো , লেজার শো -- যা যা ওঁরা চান, সব নির্বিঘ্নে হয়ে যাবে।
    দ্বিতীয় দিন কিন্তু আমার হওয়া চাই। ইয়ুথ নাইট না কি--সেটা আমার মুতাবিক হবে। কোন দিল্লি থেকে আসা পপ সিঙ্গার নয়, আমি করাবো ছত্তিশগড়ি ফোক সং অ্যান্ড ফোক ড্যান্স।
    আসবেন চন্দ্রাকর সিস্টার্স, চন্দেনী গোন্দা, আরও সব--বাঁশগীত, ভরথহরি, পান্ডবানি। আর নামকরা যুবদলের পংথী, সুয়া ইত্যাদি নাচ। একদম শেষে বস্তার ব্যান্ড।
    -- আমার থেকে কি চান?
    -- এই প্রোপোজাল আপনি ভাইয়াকে দিন। প্রথম নাইট ওঁর, দ্বিতীয় আমার। বদলে পাবেন আমার ফুল কোঅপারেশন।
    --- উনি রাজি না হলে?
    -- আপনার কোন দায়িত্ব নেই। আপনি চেষ্টা করুন মিস জেসমিনের প্রোগ্রাম ইউথ নাইটে করাতে। কিন্তু ঝামেলা বাড়বে। আপনি জেসমিনকে কন্ট্রাক্ট সাইন করালেও ও ঠিক সময়ে রায়পুরে পৌন্চবে না-- সেটা আমার গ্যারান্টি। না, না; যা ভাবছেন তা নয়।মুখে অ্যাসিড ছোঁড়া জাতীয় কাঁচা কাজ নয়। ওঁর কোন ক্ষতি হবে না। শুধু উনি সময়মত রায়পুরে পৌঁছতে পারবেন না।
    -
  • ranjan roy | 24.96.91.121 | ২১ এপ্রিল ২০১৬ ২২:৫২612191
  • --আপনি এতটাই নিশ্চিত?
    -- ও হো! আপনার অহংকারে লেগেছে! অন এ সিরিয়াস নোট, আমি আপনাকে বুঝি। আপনি কী কী স্টেপ নিতে পারেন তার অংক কষে রেখে তবে খেলতে নেমেছি। বিশ্বাস হচ্ছে না?
    ধরুন, আপনি চিফ মিনিস্টারের প্রোগ্রামের দিনেই জেসমিনকে দিল্লি থেকে আনিয়ে কড়া সিকিউরিটি চেক এ রাখবেন। সেদিন আমার সীমিত শক্তি মূল প্রোগ্রামে মাংকি রেঞ্চ থ্রো করতে ব্যস্ত থাকবে। পরের দিন আপনি ওর জন্যে ভিআইপি সুরক্ষার বন্দোবস্ত করবেন। এটা প্ল্যান A।
    আর প্ল্যান B হল প্রোগ্রামের তিনঘন্টা আগে চার্টার্ড প্লেনে করে ওকে দিল্লি থেকে নিয়ে আসা। প্রোগ্রামের পরই সেই প্লেনে ওকে দিল্লি পৌঁছে দেওয়া।
    কিন্তু আমার কাউন্টার স্ট্র্যাটেজি আপনার অজানা।
    তার চেয়ে আমার ট্রুসের প্রোপাজাল নিয়ে ভাইয়ার কাছে যান। ওতে সবারই মঙ্গল।
    আমি উঠে দাঁড়াই।
    -- কেন ইতস্ততঃ করছেন ইয়ে হীলা-হবালা কা কোঈ জরুরত নহীঁ। আপনি কি ভাবছেন আপনার আমার সঙ্গে এই বৈঠকের ব্যাপারে ভাইয়া কিছু জানে না? আমার এই গেস্ট হাউসে পা রাখতেই আপনার ওই কিম্ভূত রবিন না কি যেন, ভাইয়াকে ফোনে সব জানিয়ে দিয়েছে। জেনে রাখুন, ও হল বড়ে ভাইয়ার জাসুস। মিনিটে মিনিটে খবর দেয়।
    এই ফোল্ডারটি রাখুন। আপনি জেন্টলম্যান , এটা খুলবেন না। সোজা ভাইয়ার হাতে দেবেন।
    -- এতে কী আছে?
    -- এতে আছে ফিউচার প্ল্যান। উনি আমার সন্ধিপ্রস্তাবে রাজি হলে দুপক্ষেরই কী কী লাভ হতে পারে সেগুলোর রোডম্যাপ ছকে দেওয়া।
    আর আপনি এবার নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে যান। শ্রীমান রমেশ গুলাবচন্দানী উর্ফ বড়ে ভাইয়া এতক্ষণে ছটফট করছেন আপনার মুখ থেকে সব শুনতে। আপনি যা যা কথা হল সবই বলবেন। কিচ্ছু লুকোনোর দরকার নেই। গুড নাইট।
  • ranjan roy | 24.96.120.218 | ২২ এপ্রিল ২০১৬ ২২:৪১612192
  • তৃতীয় অধ্যায়
    ========
    সদাশিবনের কথা
    (১)
    সেদিনের সন্ধ্যাকে ভোলা কঠিন।
    আমার গাড়ি রমেশ উর্ফ বড়ে ভাইয়ার পোর্টিকোতে দাঁড়াতেই উনি নিজে বেরিয়ে এলেন।
    -- ছোটের কাছে গেছলেন? আমাকে একবার ফোন তো করতে পারতেন!
    -- আসলে রাস্তায় হঠাৎ ওর ফোন এল। আপনাকে খামোকা টেনস করতে চাই্নি।
    --- তাই তো হল! সে যাকগে, এখন ভেতরে চলুন। কিছু খেয়েছেন? ফ্রুট্স নেবেন? নাকি সেই তিতকুটে কালো আইরিশ কফি?

    সব কথা বলে ফোল্ডারটি ওর হাতে দিলাম।
    --এবার তাহলে চলি?
    --চলি মানে? খেল তো সবে শুরু। বসুন। কোচকে লুকিয়ে স্ট্র্যাটেজি হয় নাকি!
    উনি ফোল্ডারটি খুলে কাগজ পাল্টে যেতে লাগলেন। বেশ ক'টি ডকুমেন্ট ও ফোটোগ্রাফ।
    আমি অন্যমনস্ক হবার ভান করে দেয়ালের ছবি ও পেইন্টিংগুলো দেখছিলাম।
    উমম্‌ !
    অঞ্জোলি এলা মেনন। বি প্রভা। অর্পিতা সিং। অপর্ণা কৌর। কিন্তু হাতে রিস্ট ওয়াচ বাঁধা ওই নগ্নিকা! এত জীবন্ত। আরে অমৃতা শেরগিল। আসল নাকি? অর্থের অহংকার? না কি শিল্পকলার মর্মজ্ঞ এক পরিশীলিত মন?
    --কী ভাবছেন? ওই পেইন্টিংগুলো আসল কি না? দূর মশাই! ক্ষেপেছেন? আমরা এগুলো কিনে পয়সা নষ্ট করার বান্দাই নই। এসব আমার শ্রীমতীজির মানে এবাড়ির বড়ী বহুরাণীজির পছন্দ। কিন্তু এসব ভোপালের ভারত ভবনের প্রশিক্ষিত শিল্পীদের দিয়ে করানো নকল, ব্যস্‌। এক-একেকটার পেছনে হাজার বিশেক গাঁটগচ্চা দিয়েছি।
    এবার ওসব ছেড়ে কাজের জিনিস দেখুন। এটা পড়ে বলুন, কী বুঝলেন?
    এই বলে ফোল্ডার থেকে একটি চার-পাঁচ পেজের ডকুমেন্ট উনি আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
    দশ মিনিট। তারপর চোখ তুলে ওঁর দিকে তাকালাম, আরে, উনি তো হাসছেন।
    --- ছোটের ঘোড়ার চালটা দেখলেন? ও হারা খেলা জিততে চায়! নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করে লাভ নেই বুঝে অন্য দিক দিয়ে ঘেরাবন্দীর চেষ্টা। প্রথম দিন নির্বিঘ্নে কেটে গেলে আমার বিশেষ কোন লাভ নেই। এ তো নিত্যিকর্ম; করলে পূণ্যি নেই, না করলে পাপ।
    কিন্তু ও হবে বাপের সুপুত্তুর। আমার স্ত্রীর করা অভিযোগ অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে। কিন্তু ওর টার্গেট হল যুবসম্প্রদায়। আমার আগে থেকে ঘোষণা করা প্রোগ্রাম ক্যানসেল করিয়ে লোক্যাল ট্যালেন্টদের চান্স দিয়ে ও ওদের চোখে আমাকে ছোট করবে আর নিজে উনলোগোঁ কী দিল পর রাজ করেগা।
    ওর গোপন মাদক ও সেক্স পার্লারের গ্রাহক তো এদের থেকেই আসে।
    এক তির পর দো শিকার! উসকী দিমাগ কী দাদ দেনী হোগী।
    --- আপনি কী করতে চান?
    -- আপনি নয়, আমরা। যো ভী করনা হ্যায় হম দোনো মিলকর করেঙ্গে। ঝুলেলাল কী কৃপা সে সব দাঁও সহী পড়েগা।
  • ranjan roy | 24.99.12.239 | ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ২১:০৩612194
  • --খুলে বলুন।
    -- আপাততঃ ওর সন্ধিপ্রস্তাব আমরা মেনে নেব। জেসমিনের জন্যে কোন প্লেনের টিকিট কাটা হবে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ইয়ুথ নাইট আমরা ওর জিম্মায় দিয়ে দেব। কোন ওয়াক ওভার নয়।
    --- তাহলে ?
    -- তাহলে জেসমিনকে অন্য পথে আনতে হবে। মিলেনিয়াম মল ইনঅগারেশনের রাতে ও দিল্লির কোন হোটেলে প্রোগ্রাম করবে। রাত্তিরে সেই হোটেল থেকে নিজের সুইটে ফিরে আবার একঘন্টা পরে নীচে নেমে অন্য গাড়ি করে রায়পুরের জন্যে রওনা দেবে। আর পরের দিন দুপুর নাগাদ রায়পুর শহরের বাইরে ধরসীবায় আমাদের একটি রিসর্টে উঠে বিশ্রাম করবে। তারপর সন্ধ্যেটা ওর।
    -- কী বলছেন! রাজকুমার কি এতই বোকা? শুধু মুখের কথায় বিশ্বাস করবে যে আপনি ওর শর্ত মেনে নিয়ে জেসমিনের প্রোগ্রাম ক্যানসেল করিয়েছেন? ও তো প্রমাণ চাইবে, সলিড প্রুফ!
    -- আমিও কি অতটাই বোকা? প্রমাণ দেব তো! প্রথম দিন মুখ্যমন্ত্রীর ফিতে কাটা এবং মলের ডোম খুলে আকাশে বেলুন উড়ে যাওয়ার পর মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করে দেব যে শারীরিক অসুস্থতার কারণে মিস ক্যামেলিয়া আগামী কাল ইউথ নাইটে আসতে পারছেন না। উনি আগামী মাসে কোন এক তারিখে আসছেন, বদলে কাল ছত্তিশগড়ি ফোক ড্যান্স ও সং হবে। ছলিউড তারকারা আসবেন। ফলে কোন গন্ডগোল হবে না। এ পর্য্যন্ত স্ক্রিপ্টটা ছোটের ছকে দেওয়া।
    কিন্তু পরের দিন নাটকীয় ভাবে ক্যামেলিয়া স্টেজে উঠলে একেবারে হলিউড-জলিগুড এফেক্ট হবে।
    আর তখন ছোটের মুখের চেহারা!

    আমার গলা শুকিয়ে ওঠে। এ আমি কোথায় এসেছি! কী সব পারিবারিক ষড়যন্ত্রের ভেতরে পার্টনার হতে যাচ্ছি। না, না! এসব ঠিক---।
    --- আপনাকে কিছু ভাবতে হবে না। গোটা ব্যাপারটা আমি ছকে ফেলেছি। দিল্লি থেকে জেসমিনকে আনার গাড়ি, ড্রাইভার ও সিকিউরিটির দায়িত্ব আমার নিজস্ব লোকজনের। আপনার দায়িত্ব শুরু হবে দ্বিতীয় দিন দুপুর বেলায় জেসমিন রায়পুর পৌঁছলে পরে। তখন আপনি ফ্রি। তাই জেসমিনের রায়পুরে এন্ট্রি, সন্ধ্যেয় প্রোগ্রাম ও পরের দিন দিল্লির জন্যে প্লেনে তুলে দেওয়া অব্দি আপনি ওর পার্সোনাল সেফটির জন্যে দায়ী থাকবেন। এর জন্যে আপনাকে বোনাস পেমেন্ট দেওয়া হবে। কাল আরেকটা এগ্রিমেন্ট তৈরি হবে। পরশু সাইন করে দেবেন।

    আমার ভাবার জন্যে একটু সময় চাই। চুপচাপ নিজের ঘরে ফিরে আসি।
  • ranjan roy | 24.99.12.239 | ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ২২:১৪612195
  • ২)
    আজ ২৬শে ডিসেম্বর। আর মাত্র সাতদিন বাকি। নাওয়া খাওয়া শিকেয় উঠেছে। সার্কিটগুলো কম্প্লিট। তিনদিন আগেই রান করিয়ে দেখেছি, চমৎকার। কাল থেকে রোজ একবার থরো ইন্স্পেকশন করব। রাজকুমারকে বিশ্বাস নেই।
    ২৪শে ডিসেম্বর রাত্তিরে গির্জায় গিয়েছিলাম। তখন রাত বারোটা। বাইরন বাজারের সেন্ট পলস্‌ গির্জা। একশ' বছরের পুরনো। আলোয় আলো। রায়পুর শহরে এত ক্রিশ্চান থাকে? কিন্তু সবকিছুতেই কেমন গেঁয়ো ছাপ। একে অন্যকে অভিবাদন করছে-- ঈশু! ঈশু!
    কারও কারও জামায় লেখা- জেসাস সেভস্‌! গিটার হাতে কয়েকটি ছেলেমেয়ে গাইছে -- খুশি খুশি মানাও,
    খুশি খুশি মানাও,
    বোলো প্রভূ কী জয় জয় জয়।
    এমন দিনে আমাদের কেরালার গ্রাম আর তার চার্চে কয়ার গানের প্রতিযোগিতা আর --! ধেত্তেরি! কিছু ভালো লাগছে না। মালবীয় রোড থেকে একটা বড় কেক কিনে নিয়ে এলাম। কাল রবিন মানে চমনলাল ও তার বাবাকে দেব।
    রাত্তিরে ঘরে ফিরে দেখি আমার জন্যে দুটো সুন্দর কেক আর সঙ্গে ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা লেখা দুটো কার্ড। একটা রমেশের আর একটায় রাজকুমারের নাম।
    মোবাইলে অন্ততঃ একডজন মেরি ক্রিসমাস। তার মধ্যে একটা দিল্লি থেকে জেসমিনের। সাতদিন পরে এই শহরে ওর শারীরিক সুরক্ষার পূর্ণ দায়িত্ব আমার ঘাড়ে; ও কি জেনে গেছে?
    চমকের আরও বাকি ছিল।
    শুতে যাওয়ার আগে রবিন বলল মেরি ক্রিসমাস ব্যাটম্যান! তারপর লজ্জা লজ্জা মুখ করে হাতে একটা ছোট প্যাকেট ধরিয়ে দিল। বলল -- আমি চলে যাওয়ার পরে দেখো ব্যাটম্যান।
    খুলে দেখি একটা ডিভিডি, তাতে মিস্‌ ক্যামেলিয়ার এক ডজন গান। ওই সব Baby, Baby, its time গোছের। কোন মানে হয়?
    গতকাল চমনকে চেপে ধরেছিলাম।
    ও বলল ও নাকি ক্যামেলিয়ার বিরাট ফ্যান। ওর সব গান ওর কাছে একটা পেনড্রাইভে তোলা আছে। ইউটিউবে শোনে। ওর মতে ক্যামেলিয়া নাকি প্রতিভায় শাকিরা বা আমাদের সময়ের ম্যাডোনাকে ছাড়িয়ে গেছে। দারুণ গায়,অসাধারণ স্টেজ প্রেজেন্স।
    -- ব্যাপার কী রবিন?
    -- না,না; যা ভাবছ তা নয়। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখবে--একদম দেবীর মত। ওঁর সম্বন্ধে হালকা কোন চিন্তা মাথায় আসতে পারে না। আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবে ব্যাটম্যান?
    --সেটা কী আগে শুনি।
    -- না, আগে কথা দাও রাখবে?
    --- সরি! আমি না শুনে আগাম কোন কথা দিই না।
    কিন্তু কিন্তু করে বলল-- যেদিন মিস্‌ ক্যামেলিয়া রায়পুরে আসবেন, সেদিন আমাকে ওঁর কাছে যেতে দেবে?
    আমি হেসে ফেলি। কী পাগলামি!
    -- আচ্ছা, অটোগ্রাফ নিতে চাস তো? আমি তোকে ওঁর সাইন করা ফোটোগ্রাফও দিইয়ে দেব।
    -- আরে সে তো আমার কাছে একডজন আছে। নেট থেকে ডাউনলোড করা আর ওঁর সেক্রেটারিকে মেইল করে আনানো। তোমাকে দেখাবো?
    -- না, না। আমাকে দেখাতে হবে না। কিন্তু তুই তাহলে কী চাস?
  • ranjan roy | 24.99.12.239 | ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ২২:৪৫612196
  • --আমি চাই ওঁর কাছে সারাক্ষণ থাকতে, মানে ওঁর খাওয়া দাওয়া, জলখাবার, ড্রিংক্স, লঁজারি , মেক আপ, স্টেজে যাওয়ার জন্যে গাড়ি সবসময়।
    -- ধেৎ, ওর জন্যে তো আলাদা আলাদা প্রফেশনাল লোক আছে।
    -- সে তো থাকবেই। দেবীজি কত বড় মাপের মানুষ। কোঈ এঁয়ড়ে গেঁয়ড়ে থোড়ি হী! কিন্তু আমি চাই তোমার লোক হিসেবে ওইসব দেখভাল মানে ওই কি যে বল--ম্যানেজারি করতে।
    -- ক্যামেলিয়া রায়পুরে আসছে তোকে কে বলল? কোথাও তো পোস্টার নেই। এখনও কিছু ঠিক হয় নি।
    --আরে গোটা রায়পুর জানে যে উনি ঠিক আসবেন। ওই ক্লাউন কথা ছড়াচ্ছে যে উনি আসবেন না; তুমি নাকি দিল্লি গিয়ে রাজি করাতে পারো নি। কিন্তু আমি তোমাকে জানি ব্যাটম্যান। তুমিই জিতবে। আর আমাকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে দেখ, কোন এদিক ওদিক হবে না। কোঈ মাঈ কা লাল পয়সেওয়ালেকো উনকে পাস হম ফটকনে নহীঁ দেঙ্গে।
    এক অস্বাভাবিক উত্তেজনায় চক্চক করে চমনলালের কৈশোর পেরোনো মুখ। আমার অবাক লাগে। ও কী ঠিক সুস্থ? কথাটা নতুন করে আবার মাথায় ঘুরতে থাকে।

    কিন্তু বেশিক্ষণ চমনলালের কথা মাথায় রইল না। আজ একটি নতুন ইলেক্ট্রিশিয়ানকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে কাজ দেখছিলাম। একটা সুইচ ঠিকমত কাজ করছে না। সঙ্গের প্রেশার গজের কাঁটা অনেক বেশি শো করছে। চিন্তা বাড়ল।
    আমার ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়র যে সেন্সর সিস্টেমটা ইনস্টল করেছে তাকে দেখাতেই চমকে উঠল।
    -- সুইচটা বদলে দেওয়া হয়েছে!
    -- কী বলছ! আরেকবার চেক করে দেখ।
    -- ঠিকই বলছি স্যার! আমি যে সুইচটা লাগিয়ে ছিলাম , সিমেন্স কোম্পানির, এটা সেইটা নয়।
    -- কে বদলে দিয়েছে?
    -- তা কী করে বলব?
    --- হয়ত ওই সুইচটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
    --- হলে আমি জানতে পারতাম। দু'বছরের গ্যারান্টি; আমাকে না জানিয়ে কেউ পাল্টে দেবে কেন?

    সন্ধ্যেয় রমেশকে জানালাম। কিন্তু ও বিশেষ পাত্তা দিল না। বলল-- সবসময় রাজকুমারের ভূত দেখবেন না। ও বুঝে গেছে যে এখন কিছু গড়বড় হলে দোষটা ওর ঘাড়েই পড়বে। আমার যাত্রাভঙ্গ করতে গেলে আগে ওর নাককাটা যাবে।
    আমি একটু আশ্চর্য হলাম। এত নিশ্চিন্ত হলেন কেন রমেশ?
    উনি যেন আমার মনের কথা পড়তে পারলেন।
    -- ও, আপনাকে বলতে ভুলে গেছি। ক্রিসমাসের দিন আমার বাবার বন্ধু রিটায়ার্ড ডিজি বিক্রমজিৎ নিজে এসে গোটা সিস্টেমটা বাবার অনুরোধে ইনস্পেকশন করে গেছেন।
    --- সে কী?
    -- ইয়েস্‌। আর উনি হাইলি স্যাটিসফায়েড। বাবাকে রিপোর্ট দিয়েছেন যে আমার তৈরি সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রফেশনালি এবং টেকনিক্যালি সাউন্ড। এতে ফাটল ধরাতে পারে শুধু ঈশ্বরের হাত। ব্যস-! আমার কোন চিন্তা নেই। ফার্স্ট রাউন্ডের খেলাটা মনে হয় জিতে গিয়েছি। আপনাকে ধন্যবাদ। বাকি আছে পরের রাউন্ড, ইয়ুথ নাইট।

    কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। শেষে উনি আমার কথামত ওই সেকশনের নতুন যোগ দেওয়া তিনজন স্টাফকে বদলে দিলেন। বদলে ওঁর বিশ্বস্ত পুরনো তিনজন স্টাফকে অন্য সেকশন থেকে এখানে নিয়ে আসা হল।
  • ranjan roy | 24.99.89.162 | ০৩ মে ২০১৬ ১২:১৭612197
  • ৩)
    অদ্যই শেষ রজনী। বছরের অন্তিম সন্ধ্যা। রাত বারোটা অব্দি বিভিন্ন মলে, বার ও রেস্টুরেন্টে অফিসার্স ও পোলিস ক্লাবে নতুন বছরকে বরণ করার ধূম। সবাই ডাকছে নবীন প্রজন্মকে। আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা-- নাচ-গান ও ফ্যান্সি ড্রেসের। অন্ততঃ গোটা ছয়েক মিস রায়পুর ও মিস ছত্তিশগড় প্রতিযোগিতা। আজ পানীয় কি্ঞ্চিৎ শস্তা , আর ড্যান্স ফ্লোরে সঙ্গিনী নিয়ে এলে কোন কোন হোটেলে এন্ট্রি ফি মাপ। গোটা শহর অধিকাংশ মহল্লা আলোয় আলোয় ঝলমল করছে। রাস্তায় উদ্দাম বেগে ছুটছে দ্বিচক্রযান, পেছনে বসে কখনো এক, কখনো দুই। পুলিশ দেখেও দেখছে না।
    কিন্তু মিলেনিয়ম হলে কী যে হচ্ছে তার মাথামুন্ডু বোঝা দায়।
    আজ রাত পোহালেই এলাকাটা হাই সিকিউরিট জোন হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী ফিতে কাটবেন আগামী কাল বেলা ১১টা বেজে ১৭ মিনিটে। দুজন জ্যোতিষশাস্ত্রী ও পূজ্য সিন্ধি পঞ্চায়েত মিলে এই শুভক্ষণটি বেছে নিয়েছে। শদাণী দরবারের সন্তজীও আশীর্বাদী ফুল পাঠিয়ে দিয়েছেন।
    মুখ্যমন্ত্রী সপারিষদ সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান, মানে ফিতে কেটে বাটন টিপে বেলুন উড়িয়ে গুলাবচন্দানী পরিবারের সঙ্গে একটা ফোটোসেশন করিয়ে তারপর ওঁদের পুরনো ব্যাংকোয়েট হলে লাঞ্চ সারবেন । উনি ফিরে গেলে একটা ফাঁড়া কাটবে। বিকেল চারটে থেকে মিলেনিয়ম মল সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত হবে।
    মলের মধ্যে ক্রিকেট প্রিয় কিশোরদের জন্যে থাকবে নেট ঘেরা জায়গায় টিকেট কেটে ব্যাটিং প্র্যাকটিস। একটি কৃত্রিম পিচের মধ্যে উইকেট বসানো। উল্টো দিকে বোলারের জায়গায় একটি বোলিং মেশিন। ব্যাটসম্যানের চাহিদামত ওই মেশিন থেকে ছটি টেনিস বল একের পর এক পূর্ব নির্ধারিত স্পিড ও লেংথে ছুটে আসবে। ভবিষ্যতের শচীন হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলেপুলের দল এখন থেকেই পাঁয়তারা কষছে। আর আছে হরেকরকম খাওয়াদাওয়ার ব্যব্স্থা। গ্রামীণ ছত্তিশগড়ের ছেলেমেয়েদের দল প্রচারের দৌলতে আগের থেকেই জেনে গেছে সিসিডি ও বরিশ্তার নাম।
    সে যাকগে। সন্ধ্যেয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও ভজন। কিন্তু আমার রক্তচাপ বাড়ার সময় সেটাই।
    এখান থেকেই জেসমিনের দিল্লি থেকে রওয়ানা হওয়াটা মনিটর করতে হবে।
  • de | 69.185.236.52 | ০৩ মে ২০১৬ ১২:৫৮612198
  • দারুণ হচ্চে - তাপ্পর?
  • ranjan roy | 24.96.52.90 | ০৩ মে ২০১৬ ১৪:৪৭612199
  • শীতের ভোর। নতুন বছরের প্রথম ভোর। সাড়ে চারটে? তার বেশি নয়। কুক কুক করে অ্যালার্ম বেজে উঠল। চোখ কচলে সোজা ওয়াশরুম। যে শুইয়া থাকে, তাহার ভাগ্যও শুইয়া থাকে।
    আজ তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে একঘন্টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ব। হতভাগা চমনলাল কোথায়? বেড-টি? আমার শরীর নামক যন্তরটির লুব্রিক্যান্ট?

    ভাবতে না ভাবতেই দরজায় মৃদু নক। সামান্য ঠেলে ট্রে হাতে চমনলাল। টি-পট, সুগার ইত্যাদি ও কিছু বিস্কিট সুন্দর করে সাজিয়ে এনেছে।
    শীতটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে বটে, তবে গরম চায়ের সঙ্গে আমার শরীরেও ধীরে ধীরে একটা আরাম ছড়িয়ে পড়ছে। চমনলালের দিকে তাকাই। মৃদু হাসির সঙ্গে বলি-- হ্যাপি নিউ ইয়ার!
    ও হেসে প্রত্যুত্তর দিয়ে গম্ভীর হয়ে যায়। এই ভাবান্তর আমার চোখ এড়ায় না। আমি অপেক্ষা করি। চায়ে চুমুক দিয়ে ক্রিম ক্র্যাকার চিবুই।

    --ব্যাটম্যান?
    -- ক্যা বাত হ্যায়?
    -- আমাকে একটা নিউ ইয়ার গিফট দেবে?
    -- কেন দেব না? কিন্তু আগে শুনি তো!
    -- আমাকে আজ তোমার সিক্রেট মিশনের টিমের সঙ্গে দিল্লি পাঠিয়ে দেবে? এরোপ্লেনে?
    আমি হতবাক।
    -- এসব কী বলছিস? তোকে হটাৎ দিল্লি পাঠাব কেন? আর সিক্রেট মিশন টিশন কী? আজকাল ব্যাটম্যান সিরিজের জায়গায় টম ক্রুজের ফিল্ম দেখছিস নাকি রে?
    --- কথা ঘোরাবে না, ব্যাটম্যান! ঠিক সে বতাও। মুঝে চান্স দেও গে কি নহীঁ? আমি জানি যখন সবাই চিফ মিনিস্টারের ফিতে কাটার ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকবে, তখন দুজনের একটা টিম তোমার নির্দেশে দিল্লি যাওয়ার জন্যে মানা এয়ারপোর্ট থেকে প্লেনে চড়বে। তোমার দুশমন ওই ক্লাউন টেরটি পাবে না। কী? ঠিক বলেছি তো?
  • ranjan roy | 229.64.77.194 | ০৩ মে ২০১৬ ১৮:২৫612200
  • আমার সারা শরীর ঝিমঝিম করে ওঠে। তারপর গোটা শরীরে একটা হাই পাওয়ার ভোল্টেজের শক খাওয়ার মতন অনুভূতি। কিছু বোঝার আগেই দেখি তিনলাফে দরজায় পৌঁছে গিয়ে লক্‌ করে দিয়েছি।
    এবার তাকাই চমনলালের দিকে । ও ভয় পেয়ে সরে গেছে দেওয়ালের দিকে, কিন্তু চোখে তেমন আতংকের ছাপ নেই।
    -- হল কী ব্যাটম্যান? আমায় মারবে?
    আমার হাত নিশপিশ করে। কিন্তু স্নায়ু ঠান্ডা রাখার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাই। হিমশীতল গলায় বলি-- সত্যি কথা বল্‌।
    --- মানে? মিথ্যে কথা কোথায় বল্লাম?
    আমার ডানহাত ওর গলার কাছে জামাটা খিমচে ধরেছে।
    -- কথা ঘোরাবি না চমনলাল। তুই কে? কী করে জানলি যে আজ কোন মিশনে আমার দুইজন লোক দিল্লি যাচ্ছে?
    ওর ফ্যাকাশে চেহারায় একটু হাসির আভাস।
    -- জামাটা ছেড়ে দাও। গলায় লাগছে। নাঃ ব্যাটম্যান। তোমার নার্ভ তত স্ট্রং নয়।
    আমার মুঠো একটু আলগা হয়।
    -- কে বলেছে? কার থেকে শুনেছিস?
    -- আরে যা ভাবছ সে'রম কিছু না। টেনশনে টেনশনে তোমার মাথাটা গেছে।
    -- কে বলেছে?
    আমি হিস হিস করে উঠি।
    ও ঝাঁঝিয়ে ওঠে।
    --- কে আবার! বড়ে মালিক।
    -- রমেশজী? কখন বলেছে?
    --- কাল রাত দেড়টা নাগাদ।
    ঘরের মধ্যে আচমকা সুনামির ঢেউ। তার ঝাপটায় আমি হাবুডুবু খেয়ে খানিকটা পিছিয়ে যাই।
    তারপর বলি।
    -- শোন, সবটা খুলে বল। যদি একটাও মিথ্যে কথা বলিস তো আজ এই ঘর থেকে স্ট্রেচারে করে বেরোবি।
    চমনলাল বেশ ধাতস্থ হয়ে উঠেছে।
    -- আরে লুকোতে যাব কেন? তখন তোমার ঘরের আলো নিভে গেছে। আমার মোবাইলে মালিকের নাম দেখা গেল। উনি এই বাড়িটার নীচে গাড়িতে বসে ছিলেন। বললেন-- শোন, চমন! একটা কাজ করতে পারবি? তুই এখন বড় হয়ে গেছিস । কাল রাত্তিরে তোকে দিল্লি যেতে হবে। প্লেনে চেপে। একা না, আরও দু'জন যাচ্ছে।কিন্তু ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস। কোন প্রশ্ন করবি না। টপ সিক্রেট।
    --- কিন্তু আমার সাহেব? ওকে না জানিয়ে?
    --- আরে ওই পাঠাবে। কাল সকালে বলিস। সাহেবও তোকে ভালবসে, বিশ্বাস করে। ঠিক পাঠাবে। বলেই দেখিস।
    উনি চলে গেলেন। আমার আনন্দের চোটে ঘুম হয় নি। কালকে রাত্তিরে দিল্লি যেতে হবে? সিক্রেট মিশনে? একটু ভাবতেই মনে হল। নিশ্চয়ই মিস্‌ ক্যামেলিয়া। তারপর আর ঘুম আসে? মনে হল ভগবান আমার কথা শুনেছে। তোমাকে বলেছিলাম-- পাত্তা দেও নি। এখন বড়ে মালিক নিজে বলছেন যেতে।
    --- সেটা আগে বলিস নি কেন?
    --- ভেবেছিলাম --থোড়া মজাক করুঁ। পর আপ তো আপ হী হ্যায়!

    আমার মন সন্দেহের দোলায় দোলে। কোথায় কিছু একটা গন্ডগোল হচ্ছে। ওকে ইশারায় চেয়ারে বসতে বলি। ও একটু অবাক হয়, তারপর বসে পড়ে।
    এবার দরজায় পিঠ দিয়ে ওর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে রমেশজীকে ফোন লাগাই।
    -- হ্যাঁ, আমিই কাল রাতে ওকে বলেছি তৈরি হতে, সকালে আপনাকে জানাতে।
    না, কাল রাতেই আইডিয়াটা এল। ওই দুজন পেশাদার বটে! কিন্তু আমার সহোদরটি অসম্ভব ধূর্ত। এখানে অধিকন্তু ন দোষায়।
    আর চমনকে খাটো করে দেখবেন না। ও হল আমার আপনার গ্রে হাউন্ড। ওর একটা অ্যাডভান্টেজ আছে। ও রাজকুমারের প্রায় সব লোককেই চেনে। ও তাদের আগে থেকেই স্পট করতে পারবে।
    আর একটা কথা বলি। ও একটু অ্যাবনর্মাল সেটা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। ও মিস ক্যামেলিয়ার ফ্যান, দরকার হলে ওর জন্যে জান লড়িয়ে দেবে।
    না, খালি হাতে যাবে না। একটা পুরনো পিস্তল। ওর নামেই লাইসেন্স, ছ'মাস আগে করিয়ে দিয়েছি। দরকার পড়বে না। তবু সাবধানের মার নেই।
  • ranjan roy | 24.99.112.77 | ০৩ মে ২০১৬ ২০:৫৫612201
  • ৪)
    আর আধঘন্টা। সতর্ক চোখে সব দেখে নিচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীর পাইলট কার ঢুকল। এর পর ডিজিপি ও সিআইডি বিভাগের ডিআইজি। লোকটা আমাকে দেখেও দেখল না। সে যাকগে। সবকিছুই নিয়মমাফিক হচ্ছে। আমার টিম প্রেসের লোকজনকে গরুতাড়া করে ওদের জন্যে নির্দিষ্ট কর্নারে ঢুকিয়ে দিল। এদিকে হোস্ট পরিবার বিশেষ সেজেগুজে হাজির। বড়ে বাবুজি ও বড়ী মা। রমেশ ও বড়ী ভাবীজি। ওঁর কিশোর বয়সের ছেলেমেয়ে দুটো বন্ধুদের নিয়ে অন্যদিকে সমানে সেলফি তুলছে। রাজকুমার এসে্ছে একা, ইম্পোর্টেড সানগ্লাস ও লাউড কালার কম্বিনেশনের স্যুট পড়ে।
    ইতিমধ্যে প্রায় নিঃশব্দে গড়িয়ে গড়িয়ে ঢুকে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ঢাউস গাড়ি। ভদ্রলোক এখনও সাফারি সুটের মায়া ছাড়তে পারেন নি। কিন্তু অসম্ভব জনপ্রিয়। আগামী নির্বাচনে ওঁর কুর্সীর কোন বিপদ নেই বলেই জনশ্রুতি।
    ওঁরা এগিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির দিকে। রমেশের হাতে একটি বিশাল গারল্যান্ড। এই প্রোগ্রামের জন্যে লুরুর কারিগর দিয়ে তৈরি করা। আমি তীক্ষ্ণ চোখে রাজকুমারকে দেখছি। কালো চশমায় ঢাকা ওর চোখের ভাষা কে পড়তে পারে!
    বেজে উঠছে পুলিশ ব্যান্ড। মাইকে ঘোষক কিছু বলে যাচ্ছে, আমার কানে সব কথা ঢুকছে না। আমার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়। তারজন্যে ডিজিপি নিজে ও সিআইডি বিভাগ রয়েছে। ওরা প্রতিটি মুভমেন্ট ছকে রেখেছে।
    আমার দায়িত্ব মিলেনিয়ম মলের সার্বিক সুরক্ষা। হ্যাঁ, তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাও খানিকটা রয়েছে বৈকি!
    ঘড়ির কাঁটা ঘুরে চলেছে। আমার হার্টবিট বাড়ছে।
    হ্যাঁ, সবাই ঠিক জায়গায় রয়েছে। আর পনের মিনিট।
    এবার মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে আসছেন , দুপাশে কালো সাফারি স্যুটে ব্ল্যাক ক্যাট কম্যান্ডো, দু'জন ছ'ফুটিয়া জাঠ জোয়ান। আগে আগে বড়ে বাবুজি। রমেশজি উত্তেজনা গোপনের চেষ্টায় কেমন যেন হয়ে গেছেন। রাজকুমার ওঁর পাশে পাশে চলছে।

    এবার মূল হলের কাঁচের দরজার সামনে একটি রূপোর থাঅলায় লাল ফিতে, কাঁচি, ধূপবাতি ও নারকোল নিয়ে এক সুন্দরী দীর্ঘাঙ্গী দাঁড়িয়ে। উনি নারকোল তুলে দরজার সামনে আঁকা আলপনার উপর মাটিতে আছাড় মারলেন। ঝুনো নারকোল সহজে ফাটলো না। বাবুজির ইশারায় রমেশজি তুলে দু'বার আছড়াতেই ফেটে জল বেরিয়ে এল। হাততালি। ফ্ল্যাশের চমক।
    এবার উনি তরুণীটির হাত থেকে ধূপবাতি নিয়ে জ্বালিয়ে ধরে দুবার শূন্যে ঘোরালেন। জনতা হর্ষধ্বনি করে উঠল। উনি কাঁচি দিয়ে লাল ফিতে কাটতেই মিউজিক লাউড হয়ে বেজে উঠল। কারো কথা শোনা যাচ্ছে না।
    আমি সতর্ক।
    উনি এগিয়ে চলেছেন এই শোয়ের জন্যে নির্মিত বিশেষ একটি প্যানেলের দিকে। সেখানে নির্ধারিত সুইচটি টিপে দিলেই উপরের গম্বুজ খুলে নানারঙের একগাদা বেলুন আকাশে উড়ে যাবে। এই শোয়ের কথা নিয়ে অনেক খবর প্রবন্ধ ছবিছাবা বেরিয়েছে। ফলে পাবলিকের ও প্রেসের একস্পেকটেশন তুঙ্গে।
    না, ভুলের কোন সম্ভাবনাই নেই। আমি কাল রাত্তিরেও ইঞ্জিনিয়রকে সঙ্গে নিয়ে রান করে দেখেছি। সব ঠিক আছে। খটকা যা ছিল আরেকটা বাটন নিয়ে। যেটা প্যাসেজের নাইন্টি ডিগ্রিতে বাঁক নেওয়া কোনাটায় আছে, মানে যেটা কেউ ভুল করে কিছুদিন আগে বদলে দিয়েছিল। সেই বাটনটা আগেই বদলে দেয়া হয়েছে।

    আমি কোন চান্স নিইনি। ওই বাটনটার সামনে একজন স্পেশাল অফিসার দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। ও রমেশজির বিশ্বস্ত লোক। জগন্নাথ দামলে।
    ওর একটাই কাজ। ওই প্যানেলটার কাছে কাউকে ঘেঁষতে না দেওয়া-- অন্ততঃ চিফ মিনিস্টার এখান থেকে চলে না যাওয়া পর্য্যন্ত। পাইলট কার ঢোকার আগে থেকেই ও ওখানে দাঁড়িয়ে আছে।আমি নিজে দেখে এসেছি। একটু আগেও মোবাইলে কথা বলে নিয়েছি।
    আমার চোখ ওই মেফিস্টো রাজকুমারের দিকে।
    না, অমন কালো চশমায় চোখ ঢেকে কাউকে ইশারা করা যায় না। ওর মোবাইল মনে হয় পকেটেই আছে। ওর শরীরের ভঙ্গিতে একটা একাগ্রতা, মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত নড়াচড়া যেন জরিপ করছে। না, হাত -টাত নাড়ছে না।
    বাবুজি ও মুখ্যমন্ত্রী কথা বলছেন। ঘোষক কিছু বলছে। উনি প্যানেলের সামনে দাঁড়ালেন। সবার দিকে তাকিয়ে একটু নার্ভাস হাসি। জনতার দিকে হাত নাড়লেন। ওঁর নামে জয়ধ্বনি উঠল।
    বোঝাই যাচ্ছে প্রতিটি মুহুর্ত উনি বেশ উপভোগ করছেন।
    প্যানেলের উপর ওনার হাত , ব্যান্ড বেজে উঠেছে। ওঁকে বোঝানো হয়েছে যে যেই মিউজিক একবার রিপিট হয়ে তারসপ্তক ছোঁবে তখনি উনি যেন সবুজ বোতাম টিপে দেন।
    উনি ভুরু কুঁচকে বলেছিলেন--এতসব মুশকিল। ঠিক আছে, যেই ব্যান্ড মাস্টারের লাঠি শূন্যে উঠবে তখনি--, কি? হবে তো?
    ব্যান্ডে মুখড়া রিপিট হল। অন্তরার সুর চড়ছে। টানটান উত্তেজনা।
    ব্যান্ডমাস্টারের ব্যাটন উঁচুতে উঠবে বোঝা যাচ্ছে। উনি তাকিয়ে।
    এমন সময় একটা টায়ার ফাটার মত আওয়াজ। মলের বন্ধ পরিবেশে কেঁপে কেঁপে উঠল। সবার চোখ আকাশে।
    মুখ্যমন্ত্রী বাটনে খালি হাত রেখেছিলেন কি টিপেছিলেন বোঝা গেল না, কিন্তু গোটা ডোমটাই একটা বিস্ফোরণে ফেটে গিয়ে উড়ে গেছে। এখান থেকেই আকাশ দেখা যাচ্ছে।
    ভাঙা ডোমের মলওয়া গুলো গড়িয়ে গড়িয়ে হলের মাঝ খানে পড়ছে। অল্প সাদা ধোঁয়া। না, প্যানেল থেকে একটু দুরে, তাই কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নি। কেউ আহত হয় নি। কিন্তু আকস্মিক এই ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
    কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশাল কম্যান্ডো বাহিনী মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে নিয়ে গাড়ি করে রাজভবনের দিকে বেরিয়ে গেছে। বাকি পুলিশ ঘিরে ফেলেছে মলের থেকে বেরনোর সবকটা দরজা।
    লোকজনের কান্নাকাটি চেঁচামেচিতে কানপাতা দায়।
    বাবুজি ও সমস্ত গুলাবচনদানি পরিবারের যেন পক্ষাঘাত হয়েছে।
    আর রমেশ? রক্তশূন্য ফ্যাকাশে মুখে বিড়বিড় করছেন। সব স্বপ্ন শেষ।
  • de | 24.139.119.173 | ০৪ মে ২০১৬ ১০:৫৫612202
  • উফ্‌! এখানে কেউ থামে রঞ্জনদা?
  • সে | 198.155.168.109 | ০৪ মে ২০১৬ ১৫:৫০612203
  • রংজংদা__!
  • ranjan roy | 24.99.224.91 | ০৪ মে ২০১৬ ১৬:৪৫612205
  • ৫)
    গোলমাল হয়ে গেল। আমার ভরসা ছিল সব হিসেব মত চললে অর্থাৎ কোন বড় গন্ডগোল না হলে আমি সাততারিখ নাগাদ রায়পুর ছাড়ব। ২ জানুয়ারি জেসমিনের প্রোগ্রামটা উতরে দিয়ে ওকে পরের দিন সকালে দিল্লির প্লেনে তুলে দিয়ে ভাল করে ঘুমবো। সন্ধ্যের মুখে একটা ছোট পার্টি, অবশ্যই নতুন মলে।
    ৪ জানুয়ারি রমেশ গুলাবচন্দানির সঙ্গে বসে হিসাব কিতাব বরোবর। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফাইনাল পেমেন্ট উইথ বোনাস অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলেই --গুড বাই রায়পুর! গুডবাই ছত্তিশগড়। একটা অ্যামাউন্ট সেন্ট পল্স্‌ চার্চে র নামে ডোনেট করে ৫ তারিখ সন্ধ্যের প্লেনে দিল্লি। ৬ তারিখ কোচি। সেখান থেকে নিজের গাঁয়ে সপ্তাহখানিক কাটিয়ে ফের দিল্লি গিয়ে কনসাল্টেন্সির অফিসে বসা। দিনগত পাপক্ষয়।
    বাট ম্যান প্রোপোজেস্‌, গড ডিস্পোজেস্‌।
    সমস্ত কিছু আট্ঘাট বেঁধেই করেছিলাম, দু'ভায়ের সাময়িক ট্রুস; তবু রাজকুমার বা ছোটে গুলাব্চন্দানিকে এতটুকু বিশ্বাস করিনি, কড়া নজরে রেখেছিলাম। কিন্তু বাঙালীদের লোহার বাসরে কালনাগিনীর গল্পটাই সত্যি হল।
    প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেল ওই যে আরেকটা কন্ট্রোলিং বাটন, যেটা প্যাসেজের নাইন্টি ডিগ্রিতে বাঁক নেওয়া কোনাটায় আছে, মানে যেটা কেউ ভুল করে কিছুদিন আগে বদলে দিয়েছিল। সেই যে-- যেটা আগেই সারিয়ে দেয়া হয়েছিল--- সেখানেই কেউ ফিউজের তার দিয়ে শর্ট সার্কিট করে কান্ডটা করেছে। এটা স্পষ্টতঃ স্যাবোতাজ, কোন দুর্ঘটনা নয়।
    ওখানে রমেশজির বিশ্বস্ত লোক জগন্নাথ দামলেকে পাহারায় রেখে আমরা নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু ও প্যাসেজের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সংজ্ঞাহীন, দু'মিনিটের জন্যে। ওর মাথায় কে বা কারা একটা ভারি জিনিস দিয়ে আঘাত করেছিল।
    আমার কিছু করার ছিল না। চুপচাপ জেসমিনকে মেসেজ করি-- টিভিতে নিউজ চ্যানেল গুলো দেখ। সবগুলো চ্যানেল ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রীর 'দুর্ঘটনাসে বাল বাল বচনে কা' খবর হেডলাইন করেছে। কেউ কেউ অন্তর্ঘাতের আশংকা প্রকাশ করেছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত মলের ছবি পর্দায় বড় করে দেখানো হচ্ছে। গুলাবচন্দানী পরিবারের কেউ মুখ খুলছেন না। শুধু বলছেন--শত্রুপক্ষের কাজ। তদন্ত চলছে। এর বেশি জানতে হলে পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের জিগান।
    ডিআইজি বলছেন-- তদন্ত চলছে। যারা মুখ্যমন্ত্রীজির উপর হামলা চালিয়ে ছত্তিশগড়ের উন্নয়ন রুখবে ভেবেছে , তারা খোয়াব দেখছে। খুব শিগ্গিরই আসল দোষী ধরা পড়বে-- এর বেশি এখন বলা সম্ভব নয়।
    মুষড়ে পড়েছে চমনলাল। দিল্লি থেকে জেসমিন উর্ফ মিস ক্যামেলিয়াকে নিয়ে আসার প্রোগ্রাম তৎক্ষণাৎ বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু এইসব টিন এজারদের ফ্যান্টাসি!
    আমার এখন কোথাও যাবার নেই। তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত আমি রায়পুর ছাড়তে পারব না, তাই আমার স্যুইটেই আছি। শুধু চমনলাল আসছে না।
    সকাল-দুপুর-রাত্তির। চা-জলখাবার-লাঞ্চ ইত্যাদি যন্ত্রের মত হচ্ছে। শুধু চমনলালের জায়গায় আমার কামরায় আসছে ওর বাবা-- এই বিল্ডিং এর কেয়ারটেকার।
    আমি গান শুনছি, টিভি দেখছি। আর কিছু করার নেই। কারণ তদন্তকারী দল আমার সমস্ত ফাইল, এগ্রিমেন্ট, বিল্ডিংয়ের নকশা, সার্কিট ডায়াগ্রাম, কম্প্যুটারের হার্ডডিস্ক সব জব্দ করেছে।
    কিন্তু মনের কম্প্যুর পর্দায় বারবার ঘুরিয়ে ফিরি দেখতে থাকি ঘটনাপরম্পরা,-- যখন রায়পুরে পা রেখেছিলাম-- সেদিন থেকে।
    ভুলটা কোথায়?
  • ranjan roy | 24.99.102.234 | ০৪ মে ২০১৬ ২০:০৮612206
  • ৬)
    শেষের দুটো দিন
    ===========
    আরো একটা দিন।
    একই রকম, একঘেয়ে। শুধু তফাৎ হল আজকে সদাশিবনকে যেতে হয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে, ডিজিপির অফিসে।
    সেখানে কফি বিস্কুট সার্ভ করার পর টানা তিনঘন্টা ধরে ইন্টারোগেশন। টিমের মুখিয়া ছিলেন ডি আই জি (সি আইডি) মালহোত্রা। ভদ্রলোক। সেদিন অবশ্যি উনি সদাশিবনকে দেখেও দেখেন নি।
    না। খুব নতুন কিছু নয়। ওরা সদাশিবনের ডোসিয়ার ভালো করে, প্রায় আতস কাঁচ দিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একইধরনের প্রশ্ন। শুধু কনট্র্যাক্টই নয়, কী ভাবে গুলাবচন্দানিদের সঙ্গে সদাশিবনের যোগাযোগ হল সেটা নিয়েও নানান কথা। তারপর টাকাপয়সা, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর, মোড অফ পেমেন্ট--কিছুই বাদ গেল না।
    হটাৎ একটা বেমক্কা প্রশ্ন।
    -- আপনি তো মিস ক্যামেলিয়া বা জেসমিনকে আগে থেকেই চিনতেন, তাই না?
    -- এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য?
    -- কিছু না, আমরা কতগুলো সারকামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্স বাজিয়ে দেখতে চাই, তাই। কিন্তু উত্তরটা?
    -- না, চিনতাম না।
    --- সে কী? আপনি ওঁকে বহু আগে আমাদের ছত্তিশগড় থেকে দিল্লি নিয়ে আসেন নি? একটু ভেবে বলুন। আমরা কী ভুল খবর পেয়েছি?
    সদাশিবন একটু দম নিলেন।
    -- না, আমি মিস ক্যামেলিয়া বা জেসমিনকে আগে থেকে চিনতাম বললে ভুল বলা হবে। আমি যাকে ছত্তিশগড় থেকে নিয়ে এসেছিলাম সে বিলাসপুর রেল কলোনির মেয়ে সুমতি সুসান। আর তাকে দিল্লি নয়, হরিয়ানার ক্যায়থাল শহরের কনভেন্টে পৌঁছে দিয়েছিলাম। তারপর তার সঙ্গে এতবছর কোন যোগাযোগ ছিল না।
    -- বেশ, আমাদেরই ভুল। তবে একটা কথা।
    --বলুন।
    -- গোটা শহর জানে দ্বিতীয় দিন ইউথ নাইটে মিস ক্যামেলিয়ার প্রোগ্রাম। সে হিসেবে ওঁকে তো প্রথম দিনই , মানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রোগ্রামের সময়ই নিয়ে আসার কথা। তাহলে?
    এবার কোণের থেকে আর একজন টিপ্পনী করলেনঃ
    মানে আপনি তো আর জানতেন না যে ওইরকম একটা দুর্ঘটনা হবে। তাহলে উনি প্রথমদিন থেকেই এলেন না কেন?
    -- ওঁর সেদিন আগে থেকেই অন্য প্রোগ্রাম বুক করা ছিল; দিল্লীতেই।
    -- দেখুন, মিঃ সদাশিবন। আপনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিলেও পুরনো আপরাইট অফিসার। নিজেও কিছু ইনভেস্টিগেশন করেছেন। জানেন তো, একটা ছোট্ট ঘটনাও তদন্তের স্বার্থে কত ইম্পর্ট্যান্ট হয়। আপনিও তো ভাবছেন-- কোথায় কোন লুপহোল আছে কী না? কাজেই নিঃসংকোচে যা জানেন বা যা ভেবেছেন--সব খুলে বলুন। আপনার থিওরিটাও শুনতে চাই।
    সদাশিবন তিনঘন্টা পরে ফিরে এলেন।
    বিকেলের দিকে কেয়ারটেকার রোশনলাল এসে খবর দিল -- রমেশ ডেকেছেন। ওর অফিসে। জরুরী মিটিং।
  • ranjan roy | 24.99.168.22 | ০৪ মে ২০১৬ ২৩:১৪612207
  • অবাক কান্ড; রমেশের চেম্বারে উত্সবের মেজাজ।

    অনেকগুলো ড্রাই ফ্রুটস আর মিষ্টির বাক্স। কিছু বোকে। বড়ে ভাবীজিও উপস্থিত। সবাই মিলে আইয়ে আইয়ে করে সদাশিবনকে খাতির করে টেবিলের উল্টোদিকের গদি আঁটা চেয়ারে ব্সালো।
    আস্তে আস্তে ব্যাপারটা খোলসা হল।
    আনন্দের কারণ দুটো।
    এক, ইনভেস্টিগেশন টিম রমেশ ও সদাশিবনকে ক্লিন চিট দিয়েছে। সদাশিবন চাইলেই কাল ভোরের প্লেন ধরতে পারেন।
    দুই, এই রিপোর্ট পাওয়ার পর বড়ে বাবুজি হীরানন্দ গুলাবচন্দানি ফর্মালি জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীমান রমেশ গুলাবচন্দানীকে ওঁর উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেছেন। আগামী মাঘীপূর্ণিমার দিন শদাণী দরবারে ঝুলেলালের পূজো করে ওঁর বিধিবৎ অভিষেক হবে।
    আর রাজকুমার? ছোটে ভাইয়া?
    এবার মুখ খুললেন বহুরাণী।
    -- বাবুজি তো বোল দিয়ে -- দেবরজি ইধার চেহরা ভী ন দিখায়ে। উনি আর কখনও ওর মুখদর্শন করবেন না। আমি তখন গিয়ে ওনাকে অনুরোধ করলাম। ইতনা কঠোর মৎ হোইয়ে! আপকা হী খুন হ্যায়! কিন্তু ওঁকেই বা দোষ দিই কী করে? কোঈ অগর জিস থালী মেঁ খানা উসী মেঁ ছেদ করেঁ তো?
    --তাহলে ইনভেস্টিগেশন টিমের রিপোর্টে ওঁরই নাম এসেছে?
    --না, না। রিপোর্ট স্পষ্ট করে কারও দিকে আঙুল তোলে নি। তবে বড়জনকে ক্লিন চিট দিয়েছে, কাজেই বাবুজির সন্দেহ পাক্কা হয়ে গেছে যে ছোটে বড়ে ভাইয়া কো নীচা দিখানে কে চক্কর মেঁ অপনা হী সত্যনাশ কিয়ে হ্যায়।

    সদাশিবন নির্বাক।
    সবাই চলে গেল। রমেশ সদাশিবনকে ইশারায় বসিয়ে রেখেছিলেন। এবার উঠে এসে দুহাত চেপে ধরলেন। আবেগে আপ্লুত স্বরে বললেন-- অনেক ধন্যবাদ। আপনি যা করলেন ভুলতে পারব না। আপনারই জন্যে আমার স্বপ্ন সফল হল। আপনি ছোটেকে কড়া চোখে রাখায় ও ললিপপ দেখানোয় ও কিছু করতে পারেনি।
    ওর সমস্ত জারিজুরি এখানে খাটল না। বুঝতেই পারল না কোথা থেকে ওর স্ট্যাটাস প্রায় ত্যাজ্য পুত্রের মত হয়ে গেল।
    -- মানে? সদাশিবন হতভম্ব।
    -- আরে আপনিই তো ক্লু দিলেন। বললেন না যে ছোটে বলেছে ও আদৌ চায় না যে গুলাবচন্দানী পরিবারের সম্মানে কালীর ছিঁটে লাগে? বলেনি যে এখন মুখ্যমন্ত্রীর প্রোগ্রামে কিছু গড়বড় হলে বাবুজি ওকেই সন্দেহ করবেন? সেদিন সন্ধ্যেয় এসে আপনিই তো বল্লেন।
    তখনি ফন্দীটা মাথায় এল। ব্যস। মঞ্জিল আসান হয়ে গেল।
    এখনও বুঝতে পারেন নি? আরে ছোটে তো আপনার প্রতাপে নড়তে পারেনি।
    ফিউজে কলকাঠি নেড়ে এক্সপ্লোজন ঘটিয়েছে আমার লোক জগন্নাথ দামলে।ওই মাথার চোট? বুঝতেই পারছেন! এতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না। ছোটে ঘোড়ার চাল দিয়েছিল। আমি বোড়ে কে কুইন করে দিলাম।
    এর জন্যে কৃতিত্ব আপনারই। তাই টিম ক্লিনচিট দেওয়া মাত্র আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বোনাসের একলাখ টাকা ট্রান্সফার করে দিয়েছি। না করবেন না! এটা কেউ জানে না। দামলে এখন প্রাইভেট নার্সিং হোমে আরাম ফরমা রহে হ্যাঁয়। ওর প্রাপ্য ওদের ফ্যামিলি অ্যাকাউন্টে গেছে।
    আর এই নিন কালকের সন্ধ্যের প্লেনের টিকিট। সকালে যাবেন না। দুপুরে বাবুজি লাঞ্চে আপনাকে ডেকেছেন যে!
  • ranjan roy | 24.99.168.22 | ০৫ মে ২০১৬ ০০:০৬612208
  • ৭)
    উপসংহার
    ===========
    মাঝরাত। মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। একবার, দু'বার, তিনবার; নাঃ থামছেই না।
    ঘুমজড়ানো চোখে সদাশিবন দেখলেন অপরিচিত একটি নম্বর, তাও ল্যান্ডলাইন।কব্জির ঘড়ির ডায়ালে 2.17 AM। কে হতে পারে?
    --হু ইজ ইট?
    -- আমি রমেশ; বড়েভাইয়া।
    -- সে কী? ল্যান্ডলাইনে? কোথায় আপনি?
    -- বলা যাবে না। শুনুন। খুব বড় বিপদ। শীগ্গির তৈরি হয়ে রায়পুর শহর ছাড়ুন। দিল্লি নয় অন্য কোথাও গা ঢাকা দিন , অন্ততঃ কিছুদিনের জন্যে।
    -- কী হয়েছে?
    -- আরে শুনুন তো! ছোটে মন্দিরে গিয়ে বাবুজির সামনে ঝুলেলালের বিগ্রহের পা ছুঁয়ে কসম খেয়েছে যে ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে ওর কোন যোগ নেই। বাবুজি প্রায় বিশ্বাস করেছেন।আর পুলিশ নর্সিংহোম থেকে অ্যারেস্ট করেছে দামলে কে। ডাক্তারি রিপোর্ট বলছে ওই চোট সামান্য । কেউ পেছন থেকে মারেনি। সম্ভবতঃ নিজে কোথাও মাথা ঠুকে করেছে।
    --- আমাকে এসব বলছেন কেন? আরে এটাও আপনারই কীর্তি। ডুবলে আপনার জন্যেই ডুবব।
    -- মানে?
    -- আপনি আমাকে না জানিয়ে ওই প্যানেলের দেয়ালের কোনায় একটি গুপ্ত ক্যামেরা ফিট করেছিলেন?
    -- হ্যাঁ; কারণ আমার সন্দেহ হচ্ছিল যে ভেতর থেকে কেউ , মানে বারবার লোক বদলানো দেখে, তাই সাবধানের মার নেই ভেবে--।
    --হয়ে গেল। সাড়ে সত্যনাশ! আমি জানি না, তাই জগন্নাথ দামলেও জানতে পারেনি। ওই ক্যামেরার ফুটেজ এখন পুলিশের হাতে। তাতে দেখা যাচ্ছে কোন বাইরের লোক নয়, ওসব দামলেই করেছে। এমনকি শেষে প্যানেলের বডিতে মাথা ঠুকে ওকে মাটিতে পড়ে যেতেও দেখা গেছে।
  • ranjan roy | 24.99.168.22 | ০৫ মে ২০১৬ ০০:৩২612209
  • -- আমি কেন পালাব?
    -- আরে হম যব ডুবেঙ্গে তো তুমকো ভী লেকে ডুবেঙ্গে সনম।
    পুলিশ আপনার অ্যাকাউন্টে আজকে আমার ট্রান্সফার করা অ্যামাউন্টটা ট্র্যাক করেছে। আমি ভেতর থেকে খবর পেয়েছি যে কাল আটটা নাগাদ পুলিশ ওয়ারেন্ট নিয়ে আসছে-- আমাদের দুজনের জন্যেই। কাজেই এখন কেউ কাউকে চিনি না। যত তাড়াতাড়ি পরেন রায়পুর শহর ছাড়ুন।
    লাইন ডেড।
    সদাশিবন দ্রুত চিন্তা করতে থাকেন। মানা অ্যারপোর্ট। দিল্লি নয়, সাউথের কোন প্লেন। বাকিটা পরে ভাবা যেতে পারে। একটা গাড়ি ডাকতে হবে। কীভাবে? চমনকে বলবেন ড্রাইভ করে ছেড়ে আসতে?
    কিন্তু মাঝরাত্তিরে চোরের মতন পালিয়ে যাওয়া? এর কৈফিয়ৎ? সে দেখা যাবে।
    দ্রুত হাতে স্যুটকেস প্যাক করতে থাকেন। জামাকাপড়, কাগজপত্তর, পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, ব্যাংকের কার্ড, পাসবুক।
    দরজায় মৃদু টোকা।
    -- আরে আও, আও! তোর কথাই ভাবছিলাম রবিন।
    -- রবিন না, আমি চমনলাল।
    -- সে কী? তবে আমিও ব্যাটম্যান নই? আমি তবে কে?
    -- তুমি একজন সাহিব, কাজে এসেছ। ব্যাটম্যান হবার মুরোদ তোমার নেই।
    -- কিঁউ?
    -- কী কিঁউ কিঁউ শুরু করেছ। ব্যাটম্যান একজন সাহসী বড় মনের আদমী। তোমার মত কায়র আর গদ্দার নয়।
    --কী বললে? আবার বল! গদ্দার?
    -- আমি কী বলব? গোটা শহর জানে যে তুমি ছোটে মালিকের টাকা খেয়ে গন্ডগোল পাকিয়েছ? গদ্দারি করেছ, দেবীর মতন মিস ক্যামেলিয়া, তাকে চালাকি করে রায়পুরে আসতে দিলে না।
    মাঝরাত্তিরে এই কথাকলি! সদাশিবনের ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠল। উল্টো হাতের চড় খেয়ে টেবিলের পাশে ছিটকে পড়ল চমন, কিন্তু দ্রুত উঠে দাঁড়াল।
    -- গাড়ির চাবিটা দে। আমি এখনই এই শহর ছেড়ে যাব। চুলোয় যাক তোদের রায়পুর, তোদের ছত্তিশগড়ার তোদের গুলাবচন্দানি পরিবারের এই থার্ড গ্রেড নৌটংকি!

    পরের দিন সকাল সাড়ে আটটায় বিশাল ফোর্স কালো ডগ্গা আর একটি জিপসি করে এসে গোটা গেস্ট হাউস ঘিরে ফেলল। তখন ওদের দরজা খুলে দিল কেয়ারটেকার রোশনলাল। দোতলায় স্যুইট নম্বর ডি'র দরজায় তালা লাগানো।
    ঢুকেই পুলিশ অফিসাররা বমির বেগ আটকাতে মুখে হাতচাপা দিলেন। স্যান্ডো গেঞ্জি ও আন্ডারওয়র পরা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন সদাশিবন। ওঁর দুপায়ের ফাঁকে সন্ধিস্থলে একটা বড়সড় পোড়া গর্ত মতন। রক্তের ধারা জমাট বেঁধেছে, বিছানা ও মেজেতে।
    খুব কাছ থেকে দেশি কাট্টা থেকে গুলি করা হয়েছে।
    টেবিলের উপর একটি এম পি থ্রি প্লেয়ার থেকে মহিলা কন্ঠের ইংরেজি গান ক্রমাগত বেজে চলেছেঃ
    Baby, Baby! Its time।
    (সমাপ্ত)
  • de | 24.139.119.174 | ০৫ মে ২০১৬ ১৫:৩৪612210
  • খুব মন খারাপ হোলো!

    কিন্তু ভালো হয়েছে লেখাটা - হাঁপ ছাড়তে দেয়নি -
  • de | 24.139.119.174 | ০৫ মে ২০১৬ ১৫:৩৫612211
  • অনেক কোচ্চেনও আছে কিন্তু-
  • Manish | 127.242.168.187 | ০৫ মে ২০১৬ ১৫:৪২612212
  • Ranjan,
    শেষের টা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো মনে হচ্ছে। শেষ করার কোনো তাড়া ছিলো কি?
  • ranjan roy | 24.96.120.149 | ০৫ মে ২০১৬ ১৮:৪৫612213
  • মনীশ,
    হ্যাঁ, আমি অন্য লেখাগুলো শুরু করতে চাইছিলাম ( ফেরারী ফৌজ ইত্যাদি)। এছাড়া গুরুর বাইরে কিছু প্রফেশনাল লেখাপত্তর ঘাড়ে চেপে বসেছে। আর মাস তিনেকের জন্যে ৭ তারিখ দিল্লি যাচ্ছি।
    সব মিলে ভজঘট অবস্থা!
    ফ্র্যাংকলি, সামলাতে পারছিলাম না।ঃ))
    মনে হচ্ছিল আর দেরি করলে ছড়িয়ে যাবে; টানটান ভাবটা একটু কমে যাবে, এই আর কি!
    সরি! বোধহয় আমার ক্ষ্যামতার বইরেঃ)))।অ
  • ranjan roy | 24.99.98.141 | ০৬ মে ২০১৬ ২০:১১612214
  • de,
    কোশ্নগুলো?
  • avi | 125.187.34.40 | ০৬ মে ২০১৬ ২০:২০612216
  • পড়ে ফেললাম। অন্য রকম। ঃ-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন