এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাপসোহাগী

    Ishani
    অন্যান্য | ২২ জানুয়ারি ২০১৫ | ৬৫০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ishani | 69.92.143.27 | ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ১৫:৫৪657775
  • আজকাল খুব ভয়ে ভয়ে থাকি | বাবা এখন ৮৩ | প্রায়ই বলে , " টিকিট কাটা আছে | তবে আর এ সি | অপেক্ষা করছি প্ল্যাটফর্মে | উঠে পড়ার | ট্রেনে | "
    আমার বাবা | স্মৃতি জুড়ে যে লোকটা সারাদিন কলেজে গলার শির ফুলিয়ে অর্গ্যানিক কেমিস্ট্রি পড়ায় আর বাড়ি ফিরে তার ছোট মেয়েটাকে পিঠে ফেলে চাপড়ে চাপড়ে ঘুম পাড়ায় বেসুর গানের কলি গুনগুন ক'রে | ঘর অন্ধকার | আমি বছর চার | বাবার হাতাওয়ালা গোপালের গেঞ্জিতে সার্ফ সাবানের হালকা গন্ধ | আমি মুখ গুঁজে পড়ে আছি কাঁধে মাথা এলিয়ে | একটা দুটো নয় | রাতের পর রাত |
    বাবার আলমারি ঘেঁটে বের করেছি বই | ইয়া মোটা | কেমিস্ট্রি বই | তখন বানান করে করে অক্ষরের নীচে আঙ্গুল সরিয়ে সরিয়ে পড়ি জোরে জোরে | উঠে বসেছি শোবার ঘরের জানলার ওপর চওড়া লাল সিমেন্টের ধাপিতে | নীচে রাস্তার কলে কাজের মাসীরা জল ভরছে , ঝগড়া করছে . অচেনা খিস্তি , নতুন শব্দভাণ্ডার তৈরী হচ্ছে আমার মনে | হাতে ইংরিজি বই | বুঝছি তো ছাই , খুলে রাখা চাই |
    বাবা কিনে আনে ফিনফিনে মসলিনের মতো কাগজে ছাপা রবীন্দ্র রচনাবলীর সঙ্গে তুতু ভূতু আর আমার ছড়া , সুখলতা রাও আর পুণ্যলতা চক্রবর্তীর ছোট্ট ছোট্ট গল্প | সবগুলো হামলে পড়ে দেখি | সবাই রাগ করে | এইটুকু বাচ্চার হাতে রবি ঠাকুরের দামী সেট ( তখনকার হিসেবে দামী তো বটেই ! )..যদি ছিঁড়ে যায় | বাবা শিখিয়ে দেয় কী করে ভারী বই ধরতে হয় |
    আমার তখন পাঁচ বছর |
    বাবার অ্যাক্সিডেন্ট হল | সায়েন্স কলেজের ল্যাবে আগুন ধরে গেছে | খোলা জানলা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছিল বাবা | ঠিক নীচে মাটিতে গাঁথা ছিল বড় বড় লোহার শিক | কয়েক ইঞ্চির তফাতে | তা না হলে শরীর গেঁথে যেত | বাঁ হাতের কনুই গেল পাউডার হয়ে | একটা পা সামান্য ছোট | মেডিক্যাল কলেজের জেনারেল ওয়ার্ডে শুয়ে থাকে লোকটা | একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পায়ের কাছে দরজার দিকে | আজ রবিবার | বিকেলে ছোট্ট মেয়েটা আসবে দেখতে | সারা সপ্তাহ অপেক্ষা | মেয়েটা মুখে আঙুল পুরে লোহার খাট ঘেঁষে দাঁড়িয়ে | ডান হাত দিয়ে বাবা মেয়ের ফুরফুরে চুলে বিলি কেটে দেয় | ফিসফিস করে বলে, " হ্যাঁ রে, রাতে মা পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় ?"
    মা শুনতে পেয়ে রাগ করে বলে, " আমার অত আহ্লাদেপনা নেই | মেয়ে যেন আর ভূভারতে কারো হয় না !"
    বাবার শরীরের ব্যথার ক্যানভাসে আলতো করে রং লাগে |
    "নেই-ই তো !"
    আমাদের বাড়িতে অর্থকষ্ট অনটন ছিল না | কিন্তু ফেলাছড়া প্রাচুর্যও ছিল না | দু 'বেলা যেমন ডাল ভাত মাছ রুটি তরকারী | তবে রেডিও ছিল , গ্রামোফোন ছিল আর বই ছিল | আর ছিল রবিবার দুপুরের মাংসের ঝোল ভাত খেয়ে বাবার পাশে শুয়ে হাতে হিজ মাস্টার্স ভয়েসের আর মেগাফোনের গানের বইয়ের ছত্র মেলানো | অনুরোধের আসর শুনতে শুনতে | ছিল মাসে দুটো রবিবারের বিকেলে পড়ন্ত সোনালী রোদ্দুর মেখে সবুজ ঘাসে পায়ে পায়ে হাঁটা আর চকোবার আইসক্রীম | ছিল অসুখবিসুখ করলে আওপাতালি নাকী সুরে , "বাবা , তুমি কই ! আমার কাছে এসে বস | " কিংবা সন্ধেবেলা বাবা দরজায় কড়া নাড়লেই ছুটে গিয়ে অনন্ত হ্যাংলামি ,"আমার জন্য কী এনেছ ?"
    এই "কী এনেছ" রোগের দৌলতে বইয়ের পাহাড় জমেছে বাড়িতে | এতদিনে ফেলে না দিলে কয়েক বস্তা মর্টনের টফি আর পার্লে লজেন্সের কাগজও |
    বুঝিনি..হয়ত কখনও অসুবিধাও হয়েছে | তবু আমার বই কেনায় ভাঁটা পড়েনি কোনও দিন |
    বাবার হাত ধরে স্কুল | আমাকে পৌঁছে দিয়ে বাবা কলেজে চলে যেত আর একটু এগিয়ে | এখনও কেউ কেউ হেসে বলে, "তোমাকে দেখেছি সাদা ইউনিফর্ম পরে বাবার হাত ধরে বাসস্টপে | একদিনের জন্যও দেখিনি..বাবা ছাড়া অন্য কেউ |" কী বোকার মতো কথা ! বাবা ছাড়া আর কারও সঙ্গে যাওয়া যায় নাকি !
    প্রবল শীত | আমি কলেজে পড়ি | আলিয়াঁজ -এ ফরাসী শিখি | শখে | সপ্তাহে তিনদিন | ক্লাস করে কলেজ যেতে হয় | তাই ভোর ৬ টার ক্লাস | ঘুটঘুটে অন্ধকারে বেরোতে হয় বাড়ি থেকে | ফার্স্ট বাস | লোক থাকেই না প্রায় | বাবা আসে | ওই ভোরে | আমাকে পার্ক স্ট্রিট -এ পৌঁছে দিয়ে ফিরে যায় | রোজ পিছু ডেকে বলে, "খেয়ে বেরোসনি কিছুই | ক্লাসের পর টিফিনবাক্স খুলিস কিন্তু | তেমন হলে কলেজ যাবার পথে বাসে বসে খেয়ে নিস |"
    বাবার কাছে অক্লেশে অজস্র কৌতূহল মেটানো | ওই একটাই জায়গা আমার | সিগারেট টানতে কেমন লাগে ? বীয়ার ক্যানে চুমুক দিতে ? নেপালে বেড়াতে গেছি..ক্যাসিনোতে রুলে , ব্ল্যাকজ্যাক আর পন্টুন ?
    মা রাগ করে খুব | ঠাকুমা বকে | বলে, "বাপের আহ্লাদে গোল্লায় গেল |"
    বাবা বলে, "কী আশ্চর্য ! ধরে বেঁধে শাসন করে ঘরে বন্ধ করে ছেলেপুলে মানুষ করাতে আমি বিশ্বাস করি না | "
    বাবা বিশ্বাস করত | বিশ্বাস করে | এমন অন্যরকম অনেক কিছুতে | এমনকি একশ' হাজার দোষের আকর এই আমাকেও | জানে, আমি এমন কখনও কিছু করব না, বা করার কথা ভাবি না..যাতে বাবা দু:খ পাবে | আবার এও জানে , যদি এমন কিছু করি কখনও , যা গতানুগতিকতা -বিরোধী , তা নিশ্চয়ই কোনও নির্ভেজাল স্বচ্ছ আর স্পষ্ট বিশ্বাস থেকেই করেছি | আর তখন..সমস্ত পৃথিবী উল্টে গেলেও আমি এই একটি জায়গা থেকে সমর্থন পাব | খুব দায়িত্ব নিয়ে কথাটা বললাম | এমনকি মাও যদি আমার বিরুদ্ধে যায় ...বাবা যাবে না | আমি জানি |
    বাবা মানে আমার আহ্লাদের রোদ্দুর , অভিমানের বৃষ্টিজল | একটু মন্দ মেয়ে হলেও সাত খুন …সঙ্গে সঙ্গে না হলেও …কিছুক্ষণ পরে মাপ হয়ে যাবে |
    বাবা মানে একটা বিশাল ঝুরি নামা বটগাছ | বাবা মানে ঠাণ্ডা লাল -কালো সিমেন্টের চৌখুপী মেঝেতে থেবড়ে বসে আঁকিবুকি | বাবা মানে খালি পায়ে ভোরবেলাতে শিশিরভেজা মখমল ঘাসে দৌড়ে যাওয়া | বাবা মানে রাত্তিরে দক্ষিণের বারান্দায় অন্ধকারে দাঁড়ালে সামনের ঝুপসি গাছের নীচে ইতিউতি উড়ে যাওয়া জোনাকিরা | বাবা মানে গ্রীষ্মে গলা বেয়ে নেমে যাওয়া একঘটি বরফ জল কিংবা শীতের জাড় কাটাতে গরম চা ভরা কাঁসার গ্লাস দুহাতে আঁকড়ে ধরার অনুভব |
    আজ আমার … এই যে বয়সের ..শরীর আর মনের বিকেল নেমেছে | কিন্তু ...সময় নিজের খেয়ালে থমকে আছে |
    কী আশ্চর্য এক জাদুমন্ত্রে
    আমি আর বাবা ...
    আমাদের দুজনেরই ...কারও কাছেই কারও ...কেন যেন ... একতিলও
    বয়স বাড়েনি !
    আর তাই...রোজ বাবার ওই কেটে রাখা ট্রেনের টিকিট মনে মনে কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলে উড়িয়ে দিই |
    পথচলতি হাওয়ায় |
  • Suhasini | 213.99.205.107 | ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:০২657786
  • কত্ত গুলো দিন হয়ে গেল... নিজের গলায় বাবা ডাক শুনিনি...
  • সিকি | 135.19.34.86 | ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:৩৪657797
  • তিনি বৃদ্ধ হলেন ...
  • b | 24.139.196.6 | ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:৫৬657808
  • বাপকে নিয়ে আমার প্যাকেজটাও অনেকটা ঈশানীর কাছ দিয়ে যায়। তবে আপনার মত অতটা ল্যাটিট্যুড পাইনি।

    ভালো লাগলো।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৪657819
  • কেপিআর একজন অসাধারন মানুষ। আমরা ওঁকে পেয়েছি ছাত্রী হিসেবে অর্গ্যানিক কেমিস্ট্রির ক্লাসে। আরো লেখো ঈশানীদি।
  • Ishani | 69.92.134.224 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:১৫657830
  • একটি বেসরকারী কলেজের অধ্যাপক ছিলেন এই মানুষটি | সংসারে একার রোজগার | দীর্ঘদিন যাবত তাঁর বাবা শয্যাশায়ী | সবে মেয়েটিকে পাত্রস্থ করেছেন | জামাইটি তেমন প্রতিষ্ঠা পায়নি তখনও | মেয়ের সংসারে ভর্তুকি দিতে হয় না যদিও , দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ে না | এমন সময়ে খবর এল , অবসর নেওয়ার জন্য বয়সের সময়সীমা ৬০ থেকে ৬৫ বছর করা হয়েছে | ৫ টা বছর আরও | পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা | বাড়ির লোকজন খানিক নিশ্চিন্ত | কিছুটা সুরাহা হবে |
    এবার কথোপকথন | স্ত্রীর সঙ্গে |
    - আমি এক্সটেনসন নেব না |
    - কেন ? শরীরে দেবে না ?
    -- না | স্বেচ্ছা -অবসর নেব | কলেজে জানিয়েছি | তোমাকেও জানালাম |
    -- কিন্তু ..এদিকে এত খরচ ...
    - মনে করে নাও , ৫ বছর বোনাস সময়টা পাওনি | ঠিক চলে যাবে |
    - কারণটা জানতে পারি ?
    - যদিও তোমাকে জানাতে আমি বাধ্য নই , তবু জানাবো | কারণ আমি না জানালেও কলেজের লোকজন তোমাকে জানাবে | কর্তৃপক্ষ আমাকে ছাড়তে চাননি | আমি ছাড়বই | কলেজের কাছে কখনো কোনো কিছু আবেদন করিনি | আজ করেছি | বলেছি, 'আমি ছাড়লে যে পদটি শূন্য হবে , তা অরুণ ঘোষকে দিন | অরুণ আমাদের ছাত্র , যোগ্যতা আছে , ওর অন্য চাকরি অসুবিধা কারণ একটি পা নেই ... পড়াতে ভালবাসে , নিজের কলেজ ওর প্রাণ , আমাদের দুজনের স্পেশালাইজেশন এক , আর অন্য কলেজে ? আর কোথায় ঘুরে ঘুরে বেড়াবে ও ? আমরা থাকতে ? আমি অবসর না নিলে বা কেউ মারা না গেলে এই বিভাগে একটি পদ খালি হতে আরও পাঁচ বছর ! ওর অসুস্থ বাপ , মা , একটা দিদি | রিসার্চ প্রজেক্ট থেকে কটা টাকা পায় ও ? আমার যা হোক করে চলে যাবে | কিন্তু এ চাকরিটা না পেলে সংসারটা ভেসে যাবে ছেলেটার | ইন্টারভিউ নিয়ে দেখুন | ওকে নিজের হাতে তৈরী করেছি | ঠকবেন না কেউ |' কলেজ রাজি হয়েছে | তুমি পারবে না , টেনেটুনে চালিয়ে নিতে ?
    - পারব | ভেব না |
    ছেলেটি চাকরি পেয়েছিল | প্রায় আঠেরো বছর অত্যন্ত জনপ্রিয় অধ্যাপক ছিল সে | তারপর হঠাত কলেজেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মারা যায় | পরিবার পেনশন পায় |
    এই প্রবীণ অধ্যাপক তখন সস্ত্রীক কলকাতার বাইরে | মেয়ের কাছে | বেড়াতে | কলেজের কেউ সাহস করে খবরটা দিতে পারেনি | অনেক পরে জানানো হয়েছিল | বাপসোহাগী মেয়ে সারা জীবন ..সেই ছোটবেলা থেকেই ...জানত ...সে বাবার প্রাণের পুতুল বটে , কিন্তু অরুণদার জায়গাটা আলাদা | ও নিয়ে হিংসে করা নিরর্থক |

    আর এও জানত , অরুণ ঘোষ একটি নাম মাত্র | অন্য যে কেউ হলেও তার বাবার সিদ্ধান্ত একই থাকত |

    ( বেসরকারী কলেজ : তাই এভাবে নিয়োগ করা সহজ ছিল তখন |
    অরুণের প্রকৃত নাম উহ্যই থাক |)
  • kumu | 11.39.35.2 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:৫৩657841
  • ঈশানী,আপনি ও আপনার বাবা দুজনেরি বিরাট ভাগ্য-এমন সম্পর্ক পৃথিবীতেই স্বর্গ রচনা করে।
    বাবাকে এক নগণ্য জৈবরসায়ন ছাত্রীর প্রণাম দেবেন।
  • Ishani | 69.92.134.224 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:২০657852
  • লিখছি যখন...এই লেখাটাও থাক | এখানেই | লিখেছিলাম ২১ শে সেপ্টেম্বর , ২০১৩ |

    আজ একুশে সেপ্টেম্বর | আমার বাবার বিরাশি পূর্ণ হল | বাবা মায়ের কাছে সন্তানের নাকি বয়স বাড়ে না .. আমার কাছে কিন্তু আমার বাবার বয়স বাড়েনি | কী ভাগ্যিস , চুল তেমন পাকেইনি বাবার ! মনের বয়সও বাড়েনি তেমন . তাই বাবা আকাশ আর নীলের " দাদু" হলেও এখনও টুকটুকের হরেকরকম বায়নাবাটি কান্নাকাটি সামলানোর বটগাছ হয়েই রয়ে গেছে |
    মায়েরা মেয়েদের খুব বন্ধু হয় ? কী জানি ! আমার তো চিরকাল বকুনি খেয়েই কেটে গেল | বকুনি চলছে তার নিয়মে , আমিও নিজের মনমর্জি | মা মানে শাসন , অঙ্ক কষা দুপুর , সন্ধেবাতি জ্বললে ছুট্টে বাড়ি ফেরা , পরীক্ষায় বিচ্ছিরি নম্বর হলে ম্যালেরিয়া জ্বর !
    বাবা মানে ছবির বই , ছড়া মুখস্ত , হাতে ধরে সাহিত্যের ওই রূপকথার রাজ্যের অদৃশ্য সোনালী সীমান্তরেখাটি পার করে দিয়ে রাজপুরীর একেবারে অন্দরমহলে পৌঁছে দেওয়া | বাবা মানে রবিবারের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ঘন সবুজ মাঠে সাদা ফ্রিল দেওয়া ফ্রক আর লাল রিবনে সাজুগুজু করা আমি হ্যাংলার মতো চকোলেট আইসক্রীম চাটছি , ফ্রকে চকোলেটের দাগ কিন্তু নো বকুনি , বাবা মানে রবিবারের দুপুরে বা বুধবারের রাতে আধুনিক বাংলা গানের অনুরোধের আসর আর সোম- শুক্কুরের রাতে রবিগান | আমি আর বাবা | ওখানে মা ঠাকুমা দাদুর প্রবেশ নিষেধ | বাবাই তো শিখিয়েছিল , বই পড়ে কেউ কক্ষনো বখে যায় না | আমার বইয়ের ঘরে কোনো পাহারাদার ছিল না | আমিও ওই একই মন্ত্র জপেছি ছেলেদের বড় করার সময়ে |
    বাবার কাছে পড়েছি রসায়ন | ভয়ে নয় , ভালোবেসে | এবং এখনো আমার কাছে বাবাই সেরা শিক্ষক | শিক্ষককে ছাত্রের মেধা অনুযায়ী নিজেকে পড়ানোর জন্য তৈরী করে নিতে জানতে হয় | বাবা জানতেন | এবং জানেন | এখনো | ( যদিও স্নাতক স্তরে আমার বিষয় হয়ে গেল পদার্থবিদ্যা , আজও আমার প্রিয়তম বিজ্ঞানের শাখাটি জৈব রসায়ন |)
    বাবার হাত ধরে তীর্থযাত্রা আমার | কলেজ স্ট্রীটের বই পাড়ায় | নতুন আর পুরোনো বই যত | বাবার সঙ্গে সেই সব দুপুরে আর বিকেলে দিলখুশ , মালঞ্চ, সিলভার ভ্যালি বা চাচা কেবিন |
    বাবা আর আমি | এখনো ফোনে বা মুখোমুখি নতুন ইংরিজি বাংলা বইয়ের খবর বিনিময় , দোকান বা ফ্লিপ কার্ট এবং তার পরেই অবধারিত কাড়াকাড়ি |
    এখনো.. কলকাতা গেলেই আমার জন্য বেশি বেশি মিষ্টি পান , টকমিষ্টি লজেন্স , ঘামতে ঘামতে ডিমভরা ট্যাংরা বা চিতলপেটি , ঝিরঝিরে বৃষ্টি পেরিয়ে বেশি করে নারকেলকুচি দেওয়া ঝালমুড়ি , ছাইরং আলোয়ান মুড়ি দিয়ে শীতের ধোঁয়াশা জড়ানো সন্ধেবেলায় গোল বাড়ির মাটন কাটলেট |
    বাবার হাত থেকে ছোঁ মেরে প্রথম সিগারেটে সুখটান | সে কী হুজ্জুতি মায়ের ! আমি তখন ষোলো | বাবা বলেছিল , " এভাবে কিছুই শাসন করে আটকানো যায় না | এরপর কো-এড কলেজ | আজ নয়তো কাল ..কৌতূহল হলে তা মেটাবেই | আমি শখ মিটিয়ে দিলাম | নইলে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো |" ঠিক কথা | আমিও এই একই আপ্তবাক্য সারাজীবন মেনে চলেছি আর তাই হয়ত আমার ছেলেদুটো আমায় বন্ধু ভাবে |
    খুব বই কিনছে বাবা | আর গুচ্ছের লারেলাপ্পা মার্কা হিন্দি ছবির ডিভিডি | বললাম, " তুমি যে বলেছিলে , রিটায়ারমেন্টের পর ধর্মেকর্মে মতি হয় ! "
    " আরে দূর , চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী | আর আমার অত ভড়ং নেই | যে বই , যে সিনেমা ভালো লাগে .. তাই তো দেখব ! জীবন এমনিতেই যুদ্ধ | চোখের জল, তিক্ততা , অশান্তি | আমার একান্ত সময়টুকু আমার নিজের ভালো লাগা ভালোবাসা নিয়েই না হয় থাকি |"
    বাবা এমনটাই | বাবার মেয়েও তথৈবচ | সে এখনো সুযোগ পেলেই বাবার কোলের কাছে , বাবার গালে চকাম চুমু , বাবা বাইরে থেকে ঘরে এলেই হামলে পড়া .." আমার জন্যে কী এনেছ..." , বাবার কথা ভেবে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে চোখের জল মোছা |
    বাবা বুড়ো হয়নি | বাবার মেয়ে সাবালিকা হয়নি |
    আমার মা জানে আমি বাপসোহাগী | হাসে | রাগ করে না |
  • Ishani | 69.92.134.224 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:২৪657863
  • একটি অনুরোধ করি | সকলকেই | এই পাতাটি থাকুক প্রত্যেকের নিজের হয়ে | সকলেই লিখুন | বাবার কথা | এভাবেই ..পরে আর একটি পাতা বরাদ্দ হোক মায়ের জন্য | সকলের মা |
  • সে | 188.83.87.102 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ১৮:৫২657776
  • ঈশানীদি, তুমি বললে বলে একটা পুরোনো লেখা এখানে সেঁটে দিলাম।

    বাবার সঙ্গে
    ------------
    পাড়ার মোড়ে সুধীরের চায়ের দোকান। সুধীর আমার বাপের চেয়ে বয়েসে বড়ো; ক্ষয়াটে চেহারার লোক। তার বৌ দুর্গা; সেও সমানে কাজ করে চলে দোকানে। ওদের ছোটোছোটো কয়েকটা ছেলেমেয়ে আছে, দুটো তিনটে বা চারটে - তারা সব আমারই মতো, হয়তো একটু বড়ো কি ছোটো। ওদের সবাইকেই কেন জানিনা প্রায় একইরকম দেখায়, আলাদা করে কে কোনজন তা চিনতে পারি না। সুধীরের বউ প্রকাণ্ড ডেচ্‌কিতে আলুর দম বানায়, প্রচণ্ড ঝাল। চারানা প্লেট। সঙ্গে একপিস্‌পাউঁউরুটি। আমি কিনিনা। পয়সা থাকলেও কিনিনা ঐ দোকান থেকে; যদি কথায় কথায় বাবাকে বলে দেয়? বলে দিলে বাবা আমায় ককখনো বকবে না সে আমি জানি, তবুও আমার খারাপ লাগবে। ছুটির দিনে বাবা এবং বাবার মতো বড়োরা সুধীরের দোকানে আড্ডা দেয় সকালবেলা থেকে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়। ওরা গল্প করেই চলে, করেই চলে। তারই মধ্যিখানে কত তর্ক হয়, চেঁচামেচি পর্যন্ত হয়ে যায়। ফুটপাথের ওপরে নড়বড়ে দুটো বেঞ্চি পাতা, তাতেই বসে থাকে আটদশজন মানুষ, তাদের হাতে হাতে ঘোরে বাংলা খবরের কাগজ। দোকানের উল্টোফুটে বেকারি। সেটার পাশ ঘেঁষে সরু একটা গলি, সেই গলির ভেতরে গেলে বেকারির চিমনিটা দেখা যাবে। গলির মধ্যেটায় বস্তি। ওখানেই সুধীরেরা থাকে। দুর্গা, মানে সুধীরের বউ, যাকে কিনা অনায়াসেই জেঠিমা বলে ডাকা যেতে পারে (যদিও তাকে আমি কোনো নামেই ডাকিনা), সে দোকানের সামনে ফুটপাথের ওপরে বিরাট মোটা একটা শিলে হরদম শুকনো লঙ্কা এবং আরো অনেক মশলা বাটে। তার দুহাতের তালুই কমলাটে রঙের, হাতের রংচটা চুড়িতে একগাদা সেফটিপিন আটকানো, পায়ের ফাটা গোড়ালিতে কালো ময়লা ভর্তি, মাথার চওড়া সিঁথিতে তেলমাখা সিঁদুর, কপালে ধ্যাবড়ানো সিঁদুরের টিপ ও তেলচিটে ঘাম। দুর্গার মুখ সবসময় রাগীরাগী। তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে সে মশলাবাটার ফাঁকেফাঁকে উল্টোফুটে নিজের সংসারের খুঁটিনাটিতেও নজর রাখে। হয়ত মেয়েটাকে রাস্তার কল থেকে একবালতি জল তুলে নিয়ে যেতে বলেছিলো, কিন্তু মেয়ে জল না তুলে কলের পাশে দাঁড়িয়ে কারো সাথে গল্প করে চলেছে; যেই না সেটা দুর্গার নজরে পড়বে, ব্যাস আর রক্ষে নেই, সে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করবে। কোমরে কাপড় গুঁজে উঠে দাঁড়িয়ে দুহাত নেড়ে চেঁচাবে দুর্গা, তার কপালের দুপাশের রগগুলো ফুলে ফুলে উঠবে, খ্যানখেনে গলায় সে চেঁচিয়েই চলবে অনেকক্ষণ, যদিও মেয়ে তার একছুটে বালতি নিয়ে সেঁদিয়ে মিশে গিয়েছে গলির ভেতরে। এই যে দুর্গা চেঁচালো, মেয়ে ছুটে পালালো, এইসমস্ত ঘটনায় কিন্তু কারো আড্ডায় আলোচনায় এতটুকু হেলদোল হয় না। সুধীরও নির্বিকার মুখে খুরিতে চা ঢেলে চলে, দাম নেয়, খুচরো পয়সার হিসেব মেলায়। বাবা ও অন্যরাও মেতে থাকে গল্পে, তার কতরকম বিষয়, হেমন্তবসু হত্যা মমলা, দণ্ডকারণ্য, সুপারসনিক এরোপ্লেন, সিয়েমডিয়ে, লবনহ্রদে ইন্দিরাগান্ধীর কুঁড়েঘর, ফুডকর্পোরেশনের গুদাম, সিমেন্টে গঙ্গামাটি, গানের নতুন রেকর্ড, না নতুন কোনো সিনেমা। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, তাই বাড়ী থেকে আমায় পাঠিয়েছে বাবাকে ডেকে আনতে। কিন্তু আমি হাঁ করে বসে যাই ঐ আড্ডায়। বাবাও হুট করে উঠে আসতে পারে নাজমে ওঠা আলোচনা মধ্যে থেকে। উঠে দাঁড়িয়েও আড্ডার বাইরে পা বাড়াতে পারে না বাবা, হাত ধরে টানতে থাকি আমি, , চলো চলো বাড়ি চলো না, ভাত বাড়া হয়ে গেছে, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে । এইসময়ে অন্যদেরও নজর পড়ে আমার ওপর। হয়ত সুনীতকাকু বলে উঠলো, "ডিটেকটিভ বই এসেছে, এখনো দেখাননি মেয়েদের? সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ।"
    - ডিটেকটিভ সিনেমা? বাচ্চাদের?
    বাবা একটু কুন্ঠিত ।
    - আরে না না, চিন্তা করবেন না । বাচ্চাদের সিনেমা, পরিস্কার বই । নারীভূমিকা বর্জিত । এইতো আমার মেয়েকেও দেখিয়ে আনলাম । এটার গল্পের বই ও আছে ।
    এটা বললেন ঢ্যাঙ্গা রোগা তারাপদকাকু ; আমরা জানি আগে উনি নকশাল ছিলেন । বাবাকে টানতে টানতে বাড়ির দিকে নিয়ে চলি আমি । বাবাকে জিগ্যেস করি, "নারীভূমিকা বর্জিত" মানে কী?
    - যে সিনেমায় মেয়েদের কোনো রোল নেই ।
    - রোল মানে?
    - রোল মানে, রোল মানে, ... যে সিনেমায় মেয়েরা অভিনয় করেনি ।
    - আর ডিটেকটিভ কী?
    - আমি বইটা এনে দেব তোমায় । পড়া হয়ে গেলে সিনেমা দেখবে ।
    পরের দিনই সন্ধ্যেবেলা দুটোবই কিনে আনে বাবা । গ্যাংটকে গন্ডগোল আর সোনার কেল্লা । ওমা! সোনার কেল্লার নাম তো আমি আগেই শুনেছি । চারিদিকে পোস্টার পড়েছে । আমি অনেক রাত জেগে জেগে বইগুলো পড়ি । সম্ভবত এই প্রথম লাইনের তলায় আঙুল না বুলিয়ে পড়ি । দুটো বইই পুরোপুরি পড়ে ফেলি মাত্র দুদিনে । পড়া হয়ে গেলে বুঝতে বাকি থাকে না ডিটেকটিভ গল্প কাকে বলে! গল্পের শেষের দিকে কেমন গায়ে কাঁটা দিয়ে বুক ঢিপ ঢিপ করে! সেই সঙ্গে ভক্ত বনে যাই ফেলুদার । তোপ্ শে কি সুন্দর করে লেখে ঘটনাগুলো । একটা অদ্ভুত জগতে নিয়ে যায় এই বইদুটো আমাকে । সবই এই কলকাতা বা আমাদের দেশের মধ্যেই , কিন্তু আমার এই পাড়া, এই উত্তর কলকাতার বদ্রিদাস টেম্পল স্ট্রীটের থেকে কত অন্যরকম । কিছুদিন পরে বড়জেঠুর চার ছেলেমেয়ে আমাদের জেঠুতুতো দাদাদিদিরা, বড়জেঠু নিজে, আমরা দুইবোন ও বাবামা, নজনে মিলে দেখতে গেলাম সোনার কেল্লা, রাধা সিনেমায় । ইনট্যারভালে ঠোঙায় করে ফিশ্ ফ্রাই, পাশে কুচোনো পেঁয়াজ-শসা-বিট-গাজরের স্যালাদ দেওয়া । ওই স্যালাদের জন্যেই ঠোঙা ভিজে যায়, অথচ খেতে ভালোও লাগে । গল্পতো আমার মুখস্ত । আমি ই পুরোটা জানি । জেঠুতুতো দাদাদিদিরা তখনো পড়েনি বইটা । বোন তো আমার চেয়েও ছোট, ও কিছুতেই পড়ে বুঝতে পারবে না । অবশ্য পুরোপুরি গল্পের মত করে সিনেমাটা বানায় নি, একটু পাল্টেছে , কিন্তু কি অসম্ভব ভালো করেছে । সিনেমার প্রথম দিকে মুকুলের মাকে অল্প একটু দেখালো, তোপ্ শের মাকেও সামান্য দেখিয়েছে, কিন্তু ঐটুকু বাদ দিলে নারীভূমিকা বর্জিত ই বলা চলে । তারাপদকাকু কোনো ভুল বলেননি ।
    এই ফেলুদা যেমন একটা জগৎ, তেমনি আরো অনেক টুকরো টুকরো জগৎ ও আছে আমার । যেমন নাটক। কোনো বিখ্যাত দলের নাটক নয়, নেহাৎই বাবার অফিসের অ্যানুয়াল ফাংশানের নাটক, কিংবা লাইব্রেরীর বাৎসরিক অনুষ্ঠানের নাটক । বাবার অফিসের নাটকগুলো নারীভূমিকায় ভর্তি । যেমন, সাহেব-বিবি-গোলাম, ময়ুরমহল। অফিস থেকে কার্ড পায় তো, তাই সকলে মিলেই দেখতে যাই । সাহেব-বিবি-গোলামে ছোটবৌ কীরকম মদ খেতে শুরু করলো, বাচ্চাদের নাটকে ওসব দেখায় নাকি? ওগুলো ছোটদের দেখবার মত নয় । বরং লাইব্রেরীর অনুষ্ঠানে যেগুলো হয়, সেগুলো ভালো । ছোটদের নাটক ও হয়, বড়দের নাটকও ছোটরা দেখতে পারে । লাইব্রেরীটা পাড়ার লাইব্রেরী নয় অবশ্য । আমাদের পাড়ায় কোনো লাইব্রেরী নেই । যেটা আছে সেটা একটু দূরে, গোয়াবাগানে । গোয়াবাগানে লাইব্রেরী, গানের ইস্কুল, মেথরপট্টি, পার্ক, দুর্গাপুজো, সিনেমাহল, অনেককিছু । আর আছেন প্রফেসর সত্যেন বোস । খুব বিদ্বান লোক, অঙ্কে একশোর মধ্যে একশো দশ পেয়েছিলেন , বাপ রে ।
    লাইব্রেরীর অ্যানুয়াল ফাংশানের জন্যে নাটকের রিহার্সাল হয়; সব বাবাদের মত বড়রা অফিসের পরে ওখানে গিয়ে রিহার্সাল দেয় । এরা কেউ মেয়ে নয় । যেসব মেয়েরা নাটকের রিহার্সালে আসে তারা কেউ লাইব্রেরীর মেম্বার নয়। শুধু ছেলে দিয়েই তো নাটক হবে না, মেয়েদের রোল ও থাকবেই, তখন যেসব মেয়েরা আসে তারা এরকম লাইব্রেরীর নাটকে, অফিসের নাটকে, যখন দরকার হয় অভিনয় করে করে অভ্যস্থ । একজনের মুখ তো চেনা হয়ে গেছে আমার । আমিও নাটক দেখবার পরে, বাড়িতে এসে তাকে হুবহু নকল করে করে অভিনয় করি, তাই দেখে সবাই কি হাসে! একদিন রাতের দিকে গোয়াবাগান থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম, তখন বাবার লাইব্রেরীর বন্ধুরাও কেউ কেউ ফিরছিলো ওই পথ দিয়ে । সেটা গরমকাল, বেশ মনে আছে আমার । বাবা একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো, আমিও সঙ্গে সঙ্গে লাফাতে লাফাতে চলেছিলাম । আকাশে চাঁদও চলেছিল আমাদের সঙ্গে । একপাশে ফুটপাথে বেশকিছু গরীব লোক শোবার বন্দোবস্ত করছিলো, কেউ কেউ শুয়েই পড়েছিলো ততক্ষণে । যেমন গরীবেরা থেকে থাকে । তাই দেখে, হঠাৎ বাবার সেই লাইব্রেরীর বন্ধুটা মন্তব্য করলো, " এরাই ফার্স্টক্লাস আছে, রাস্তায় থাকে, রাস্তায় ঘুমোয়, কোনো চিন্তা নেই, ভাবনা নেই, আজকের চিন্তা আজ, কালকের কথা কাল ভাববে, দেখে হিংসে হয় । উফ্, যদি এরকম পারতাম বেঁচে যেতাম।"
    একথা শুনে আমার রাগ ধরে গেল, মনে হল লোকটা ভীষণ মিথ্যে কথা বলছে, ওকি সত্যি সত্যিই ওই রাস্তার গরীবদের সঙ্গে ঘুমোতে চায় নাকি? আমি হুট করে বলে ফেলি, "আপনি এগুলো সত্যি সত্যি বলছেন, নাকি মিথ্যে করে বলছেন? সত্যি ঘুমোবেন রাস্তায়? কই ঘুমোন এখন!"
    লোকটা হ্যা হ্যা করে হেসে উঠে বলে, "কেন? তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?"
    আমিও কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে যাই, বিশ্বাস তো হচ্ছে না ই, কিন্তু কী উত্তর দেব বুঝতে পারিনা ।
    বাবা বলে, ছিঃ ওরকম বলতে নেই, নাও ক্ষমা চেয়ে নাও ।
    আমি ক্ষমা চাই না, ওই লোকটিও বলে ওঠে, " না না ক্ষমা চাইবে কি! ছোট বাচ্চা, যা ভেবেছে, তাই খোলাখুলি বলে দিয়েছে । আমি কিছুই মনে করিনি ।"
    এরপরে লোকটা ডানদিকে চলে যায়, আমরা বাঁদিকের মোড় ঘুরি । তারপরে রাধারমণ জিউ র মন্দিরটা পেরোনোর পরে, বাবাকে টেনে নীচু করে কানে কানে একটা কথা বলতে চাই ।
    বাবা বলে, "হিশু পেয়েছে?"
    - বাবা, লোকটা কি কংগ্রেস ?
    - কেন? কোন লোকটা?
    - তাহলে লোকটা কেন গরীবের দুঃখ কষ্ট বুঝতে চাইছিল না? হ্যাহ্যা করে হাসছিল? কমিউনিস্ট হলে এরকম করত না কিছুতেই ।
    আমার কাছে জগতে তখন দুরকমের লোক, কংগ্রেস আর কমিউনিস্ট । দেশে কংগ্রেসী শাসন, তাইত রাস্তায় গরীব দুঃখী শুয়ে থাকে, কতলোক খেয়ে পায় না, ভিক্ষে করে । সকলে কমিউনিস্ট হয়ে গেলে সব পাল্টে যাবে, পুজোয় সকলের নতুন জামা হবে, রাস্তায় কাউকে শুতে হবে না, ভিখিরি থাকবে না, গরীব থাকবে না, রিক্সাওয়ালাদের টিবি হবে না, বড়লোক গরীবে কোনো তফাৎ থাকবে না । কিন্তু এসব কথা তো জোরে বলতে নেই, তাই কানে কানে জিগ্যেস করছিলাম ।
    আরেকটু এগিয়ে দেখি একটা বিশাল দেওয়াল জুড়ে দেওয়াল লিখন । কোনো ভোটের প্রচার নয়, কোনো জিনিস বিক্রির বিজ্ঞাপন নয় । সবুজে মেরুনে লেখা, "লীগ শীল্ড বিজয়ী কে? মোহনবাগান ক্লাব, আবার কে!"
    আমার দুনিয়ায় তখন আরও দুরকমের ভাগ, ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান । ফুটবল বুঝিনা, কিন্তু সবুজ মেরুন আমার প্রিয় রং ।
    আমরা হাঁটতে হাঁটতে সার্কুলার রোডে পৌঁছে যাই, সামনে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, রাস্তা পেরিয়ে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রীটের দিকে এগোতে থাকি । একপাশে সার দেওয়া রিক্সা । রিক্সাওয়ালারা কেউ ছাতু খায়, কেউ ফুটপাথে বিছানা পাতে; এদের কারো বাড়ি ছাপরা জেলা, কারো হাজারিবাগ, দারভাঙ্গা, গয়া, মজঃফরপুর, মধুবনী। এদের একজন ও বাঙ্গালী নয়। লোকে এদের সঙ্গে তুই বা তুমি করে কথা বলে, হিন্দিতে। কে যেন একদিন বলেছিল, ওদের দেখে যত গরীব মনে হয়, ওরা তত গরীব নয় । ওরা নাকি মাসে মাসে অনেক টাকা মানি অর্ডার করে দেশে পাঠায়, শয়ে শয়ে টাকা । দেশ থেকে কলকাতায় এসেছে, রিক্সা টেনে টাকা রোজগার করতে । এরা প্রত্যেকে কংগ্রেসকে ভোট দেয় । বাবা অনেকসময় রিক্সাওয়ালাদের সঙ্গে গল্প করে তো, তখন আমিও শুনি; তাই এসব জানি । তবে ওই টাকা পাঠানোর ব্যাপারটা অন্য কে একটা বউ একদিন বলেছিল, আমি নিজের কানে শুনিনি ।
    প্রায় বাড়ির কাছে চলে এসেছি, ঠুন্ ঠুন্ ঘন্টি বাজাতে বাজাতে একটা রিক্সা চলে গেল পাশ দিয়ে । অনেক রাত হয়েছে তো, রাস্তা ফাঁকা । রিক্সাওয়ালা খুব উঁচু করে ধরে রয়েছে হাতলদুটো । রিক্সার ওপরে আধশোয়া কাৎ হয়ে আছেন, আমাদের পাড়ার নন্তু মিত্তির । আমাদের বাড়ির দুটো বাড়ি পরেই রাস্তার উল্টোদিকে লাল রঙের তিনতলা বাড়ি ওঁঁর । পরণে ধুতি পাঞ্জাবি । রোজ মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা ।
    ঠিক এমনি সময়ে ঝড়ের বেগে লালাবাগানের গলি থেকে ছটতে ছুটতে বেরিয়ে এলো শ্মশানযাত্রীরা ।
    বল হরি , হরি বোল, বল হরি , হরি বোল, ...
    কাঁধে খাটিয়া কোমরে গামছা বেঁধে ছুটে চলল ওরা নিমতলার দিকে । একজনের হাতে প্রকান্ড ঠোঙা, সে দৌড়চ্ছে আর খই ছড়াচ্ছে । গলির ভেতর থেকে পাড়ার কয়েকটা কুকুর তাজ্জব হয়ে দেখছে সেই ব্যাপারটা, বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আমিও উৎসুক দর্শক ।
    সুধীরের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ, কুকুরেরা শুয়ে পড়ল, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ধোঁযায় ঢেকে দিচ্ছে চাঁদকে । যারা জানেনা তারা ভাববে মেঘ করেছে বুঝি, কিন্তু আমি তো এপাড়ার ই মেয়ে, তাই জানি সারারাত বেকারীতে পাঁউরুটি তৈরী হবে, আর মাঝে মাঝেই চিমনি দিয়ে গলগল করে বেরিয়ে আসবে ধোঁয়া ।
  • Ishani | 69.92.134.224 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ১৯:০৫657777
  • অনেক ধন্যবাদ "সে" | এত সুন্দর লেখো তুমি ! খুব ভালো লাগল |
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৯657778
  • বাবার সঙ্গে প্যারিসে
    ----------------------

    এই লেখাটা লিখবার এইই উপযুক্ত সময়। হয়ত দুমাস আগে হলেও লেখাটা অসম্পূর্ণ হতো।
    কিন্তু গোড়াতেই কিছু ভূমিকা, অল্প হলেও, দরকার।
    বাবার খুব ফ্রান্সে বেড়াতে যাবার শখ ছিলো। বিশেষ করে প্যারিস। বাড়ীতে ছিলো বইয়ের পাহাড়। এগারোটা লোহার আলমারি ভর্তি বই ছাড়াও আরো প্রায় সমপরিমান বই ছিলো আলমারির মাথাগুলোর ওপরে প্রায় সিলিং অবধি উঁচু করে ডাঁই করে রাখা, ইজিচেয়ারের ওপরে, হাতলদুটোয়, টেবিলগুলোর ওপরেও ডাঁই করা, এবং বাড়ীর সর্বত্র, দেরাজে, দরজার ওপরের কুলুঙ্গিতে, দেয়াল আলমারিগুলোয়, সবকটা তাকে, খাটের নীচে, সর্বত্র। এই বইগুলোই বাবার শখ, বাবার বুকের পাঁজরের মতো প্রিয়। একবার গুণে গেঁথে রাখবার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। হাজার পনেরর পরে ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিই। অধিকাংশই আর্টের ওপরে, ইতিহাসের ওপরে, নানান ভাষা, সাহিত্য, এসবের। বাবা আর্ট ভালোবাসত। আর ভালোবাসত ভাষা শিখতে। দেশি বিদেশী মিলিয়ে যে কটা ভাষা শিখেছিলো তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিলো তার ফরাসী ভাষা। এটা আমরা সবাই জানতাম। বাবার খুব শখ ছিলো একবার যদি প্যারিসে যেতে পারে। আর্টের কদর ঐখানেই সবচেয়ে নাকি বেশি। বই পড়ে পড়েই সে দেশটা সম্বন্ধে গড়গড় করে সব বলে দিত। কেউ হয়ত প্যারিসে বেড়াতে যাবে, বা কাজের জন্যে যাবে - সে বাবার কাছে এসে শহরটা সম্পর্কে একটা ধারণা করে নিয়ে যেত। আমরা দেখতাম, সে মনোযোগ দিয়ে সব জেনে বুঝে নিচ্ছে, আর বাবা আলমারি খুলে বইটই বের করে তাকে নানান জিনিস দেখাচ্ছে বোঝাচ্ছে। কোথায় যাবে, কোনটা দেখবে, কোথায় সময় নষ্ট করে লাভ নেই, এই সমস্ত।
    বাবার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলেন আমাদের বারীণকাকু। সিনেমা করেছিলেন কয়েকটা। সেই বারীণকাকুও প্যারিসে যাবার আগে বাবার কাছে এসে সব এক এক করে জেনে বুঝে নিতেন। বাবা দিনের পর দিন ধরে সব বোঝাতো, নিজে তো যেতে পারবে না, বন্ধু যাচ্ছে, তাই তাকেই খুব করে বুঝিয়ে বলা, কোনটা কোনটা দেখতেই হবে, কোথায় কী কী খেতে হবে। হয়ত ক্যামেরাটা দিয়ে দিলো। এইরকম। তারপরে, সে ফিরে এলে তার কাছে সমস্ত বিবরণ শোনা। অথচ নিজে যাবার উপায় নেই। খরচ একটা বড়ো সমস্যা। এমনিতেই বই কিনে কিনে, ইন্স্‌টলমেন্টে পেমেন্ট করে করে পাওনাদারদের হিসেব মেটানো, তার ওপরে বিদেশ যাওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। আরেকটা সমস্যা ছিলো, সরকারী চাকরি। সেক্ষেত্রেও বিদেশযাত্রা একটা বাধা ছিলো তখনকার দিনে। অনেক বাধা নিষেধ। তাই বাবা ভাবত রিটায়ার করবার পরে নাহয় সুযোগ পেলে একবারের জন্যে হলেও প্যারিস ঘুরে আসবে।
    এসমস্ত কথা সবচেয়ে বেশি জানতাম আমি, কারন বয়সে তখন ছোট্টোটি হলেও বাবা তখন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। রোজ রাতে ঘুমিয়ে পড়বার আগে অবধি বাপ বেটিতে নানান গল্প হতো। সেসব গল্পের অধিকাংশই হয়ত অলীক স্বপ্ন, কিন্তু সেসব স্বপ্ন দেখতে বেশ লাগত আমার।
    তারপরেতো জীবন অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। বয়েস বেড়েছে, একসম বিদেশেও গেছি পড়াশুনোর অছিলায়। তবে তা প্যারিস নয়। সোভিয়েত দেশে পড়াকালীন পশ্চিম ইয়োরোপের অনেক দেশ ঘুরে এসেছি, ফ্রান্সকে সযত্নে এড়িয়ে। কেবলই মনে হতো, বাবার কাছে এত শুনেছি প্র্যারিস সম্পর্কে, শিল্প, সাহিত, ইতিহাস, সেসমস্ত বাবাকে বাদ দিয়ে কেমন করে দেখবো? বাবার মতো ভালো গাইড পাবো কোথায়? বাবা যদি সঙ্গে থাকত, তবে বেশ হতো। কিন্তু তাতো সম্ভব নয়।
    প্রায় চোদ্দো বছরের কিছু কম সময় ধরে আমার বাসস্থান সুইটজারল্যান্ড। ফ্রান্সে যখন তখন যাওয়া যায় একঘন্টার মতো লাগে গাড়ি করে। একেবারে যাইনি বললে ভুল হবে। গেছি। বিভিন্ন বর্ডার এরিয়ায়। হয়ত স্ট্রাসবুর্গ অবধি গেলাম, ফিরে এলাম। আরো ভেতরে যেতে ইচ্ছেই করল না। কিংবা জেনিভার দিক দিয়ে কিছু ভেতরে, বা খুব সরু প্রায় দুর্গম পাহাড়ী পথ দিয়ে পন্তার্লিয়ে অবধি। কিন্তু সেসব তো প্র্যারিস নয়, প্যারিস হচ্ছে অন্য একটা ব্যাপার। এর মধ্যে একটা ব্যাপার হলো বছর ছয়েক আগে। মেয়ের ইস্কুল থেকে এক্স্‌কার্শানে প্যারিসে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েতো মহাখুশী। সে তো আমার কাছে গল্প শুনেছে যে তার দাদুর কত ইচ্ছে ছিলো প্যারিসে যাবার। শুধু তাইই নয়, বাবার সেই বিপুল গ্রন্থসংগ্রহ কালের করাল কবল থেকে রক্ষা করা যায় নি। কিন্তু ছিটেফোঁটা যে কটা রয়ে গেছে, মেয়ে তারই মধ্যে থেকে একটা লারুসের ছোট্টো ডিকশনারী তার কাছে রেখে দিয়েছে। বইটার মধ্যে বাবার নিজের সই ও তারিখ, সোমবার, ৯ই মার্চ ১৯৫৯। ৫০৬ পাতার এই বইটাই তার দাদুর একমাত্র চিহ্ন। পাতাগুলোর রং ঘোলাটে হয়ে গেছে, ব্যবহার করতে গেলে হয়ত ঝুরঝুর করে ঝরে পড়বে। তবু। দাদুকে সে কোনোদিনো দেখেনি, কিন্তু ভালোবাসে। হয়তো সেই ভালোবাসার তাগিদেই খুব যত্ন করে ভাষাটা শিখে নিয়েছে মাতৃভাষার মতো করে। সাতদিনের এক্স্‌কার্শানের জন্য যা যা দরকার , ফর্দ মিলিয়ে তেমন করেই ওর ব্যাগ সাজিয়ে দেওয়া হলো। সঙ্গে ক্যামেরা নিলো। আজকাল তো ডিজিটাল ক্যামেরা। আমার খুব বারীণকাকুর কথা মনে পড়ছিলো। সেই কন্টাফ্লেক্স ক্যামেরাটা। কিন্তু সেসব ক্যামেরাতো অবসোলিট হয়ে গিয়েছে। হাইস্পীড ট্রেনে (TGV)করে চারঘন্টার মধ্যেই ওরা প্যারিসে পৌঁছে যাবে, হলো ও তাই।
    সফর শেষে অষ্টম দিনে প্যারিস ঘুরে আসা মেয়ের মুখে বিজয়ীর হাসি। কথা আর গল্প যেন ফুরোয়ই না। কোথায় গেছল, কী দেখেছে, সব অন্র্গল বলেই চলেছে। ভাবি, বাবা থকলে শুনত এসব গল্প, বড্ড আনন্দ পেত। মেয়ে এবার তার ফোটোর সম্ভার দেখায় আমাকে। অনেক জায়গার ছবি তুলেছে, কিন্তু খুব বেশি ছবি সে তোলেনি, বেশি সময়টা কাতিয়েছে দেখে। বেড়াতে গেলে নিজের ফোটো ও তো তুলতে হয় কয়েকখানা, সেসব কই?
    মেয়ে উত্তর দেয়, নিজের ছবি কি নিজে তোলা যায়?
    ঠিক কথা। কিন্তু তা বলে একটাও ফোটো নেই তোর নিজের?
    আছে একটা।
    মাত্র একটা? কই, দেখি!
    সে দেখায়, লুভ্রের সামনেটায় যেখানে সেই ছোট্টো পিরামিডটা আছে, সেটার সামনে হাতে কী একটা নিয়ে যেন সে দাঁড়িয়ে। কোনো বন্ধুকে অনুরোধ করায় সে তুলে দিয়েছে ফোটোটা।
    হাতে ওটা কীরে?
    কী বলোতো?
    বুঝতে পারিনা।
    মেয়ে ছবিটা বড়ো করে দেয়। দেখি সে হাতে ধরে রয়েছে, বাবার সেই ঝুরঝুরে ডিকশানারিটা। বাড়াতে বাড়াতে একসময় দেখা যায় যেন চামড়ার বাঁধাইয়ের ওপরে সোনালী জলে লেখা ক্ষয়ে যাওয়া নামটা।
    মেয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, দাদুর তো খুব প্যারিসে যাবার ইচ্ছে ছিলো, যেতে পারেনি, তাই তার বইটা নিয়ে গেছলাম আমার সঙ্গে করে।
    কী বলব এই মেয়েকে আমি?
    বাবার খুব ফ্রান্সে বেড়াতে যাবার শখ ছিলো। বিশেষ করে প্যারিস। ভেবেছিলো রিটায়ার করলে যাবে। পারেনি। রিটায়ার করবার অনেক অনেক বছর আগেই সে দুনিয়া থেকে রিটায়ার করে চলে গেছে। তার নাতনি তার একটা স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে ঘুরিয়ে আনল যেন আমার বাবাকেই প্যারিসে।

    বাবা পুনর্জন্মে বিশ্বাস করত কি করত না ভালো করে বুঝিনি। বড্ড ছোটো ছিলাম তো তখন। কিন্তু রাত্রে ঘুমোতে যাবার আগে যখন গল্প হতো, বলত - আমি নাকি তার বাবা। মানে আমার ঠাকুর্দা হচ্ছি আমি। তাই আমায় আদর করে ডাকত, "বাবা" বলে। বাইরের লোকে শুনলে হাসবে। মেয়েকে কেউ বাবা বলে? বাবা যদি মরে গিয়ে সন্তান হয়ে জন্মায় তবে তো সে ছেলে হয়ে জন্মাবে, মেয়ে হয়ে কেন? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আমাদের। বাইরের লোকে যা বলে বলুক, আমাদের তাতে কী?

    গত ক্রীস্টমাসের কিছু আগে, মেয়ে আমায় এসে বলল, শোনো প্যারিস যাবে?
    কীরকম?
    আমি নিয়ে ঘুরিয়ে সমস্ত দেখিয়ে আনব তোমায়।
    না, থাক।
    থাক কেন? ক্রেডিট কার্ড দাও।
    একঘন্টার মধ্যে ট্রেনের টিকিট, হোটেল, সমস্ত বুক করে প্রিন্ট আউট নেয়া হয়ে গেল। তারপরে ম্যাপ, প্ল্যান, ক্যাশ ইউরো, ইত্যাদিও ঝটিতি সংগ্রহ হয়ে গেল।
    পিঠব্যাগ নিয়ে মায়েতে মেয়েতে নির্দিষ্ট দিনে ট্রেনে চেপে বসলাম। অবশেষে চলেছি প্যারিস। চারটা ঘন্টা হুহু করে কেটে যায়, গার দু নর্দে ট্রেন পৌঁছয়। মেয়ের সব চেনা। সমস্ত নখদর্পণে। কোথায় কখন সাবধানে থাকতে হবে, কোন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করব, কোন খাবার কীরকম, সে গড়গড় করে বলে চলেছে। আজ সে ই আমার গার্জেন। আমার গাইড। দশটা টিকিটের গোছা কিনে ফেলি ট্রান্সপোর্টের। আমার কোনো ম্যাপ লাগে না, গাইড লাগে না। মেয়ে আমায় মেট্রোর লাইন পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে উড়িয়ে নিয়ে চলে হোটেলে। একেকটা জায়গায় আসি, সে অনর্গল বলে চলে ইতিহাস। বাস্তি এরিয়া, তার তাৎপর্য, ইতিহাস, ফরাসী বিপ্লব। হুহু করে কেটে যায় দিনগুলো, আর্ক দ ত্রিয়ম্ফ থেকে শঁজেলিজের ভয়ঙ্কর ভীড় ধরে হাঁটি অন্য প্রান্ত। ঈজিপ্টের জিনিস শঁজেলিজের একপ্রান্তে কী করে এলো? মমার্ত্র থেকে নোত্রদাম, নদীর ধারে কোন খানে আবার রয়েছে শেক্স্‌পীয়ার অ্যাং কোং , ঘুরে ঘুরে খাওয়া, বই কেনা আর গল্প। কেমন জানি মনে হয় আমার প্রিয় গাইডের অভাবে এতদিন প্যারিসে আসা হয় নি। এতদিনে গাইড পেয়েছি। বাবা যেমন প্যারিস যাত্রীদের সব বুঝিয়ে দিত, ঠিক তেমনি ঘটে চলেছে আমার সঙ্গে। এই গাইড লাল ওভারকোট পরা, মাথায় ফরাসী টুপি, বাবার মতোই হুহু করে যেন মাতৃভাষার মতো ফ্রেঞ্চ বলে চলেছে। আমি তার মেয়ে যন, সে ই আমার বাবা। বাবা যে মরে গিয়ে আমার পেটে মেয়ে হয়ে জন্মায় নি, কে বলতে পারে? মনে হয় অ্যাদ্দিনে বাবা সঙ্গে বেড়াতে এলাম প্যারিসে।
  • Ishani | 69.92.134.224 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৬657779
  • সে ,

    চোখে জল এসে গেল আমার |
  • 00 | 181.64.40.104 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৬657780
  • কোনো মন্তব্যে করা ও ধ্রষ্ট্তা হবে।
  • arindam | 127.194.34.27 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৭:৪৫657781
  • "বাবার সঙ্গে প্যারিস" কেমন লাগল পড়তে?
    ধুর কোন শব্দই যুৎসই লাগছেনা। এইরকম গদ্য একমাত্র সে ই পারে লিখতে। শুধু সে।
  • arindam | 127.194.34.27 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৭:৪৫657782
  • "বাবার সঙ্গে প্যারিস" কেমন লাগল পড়তে?
    ধুর কোন শব্দই যুৎসই লাগছেনা। এইরকম গদ্য একমাত্র সে ই পারে লিখতে। শুধু সে।
  • Nina | 83.193.157.237 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৮:১১657783
  • অনেকদিন আসার সময় পাইনি--আজ আসা একেবারে সার্থ্ক হল --এমন মনকাড়া টই আর তাতে আমার দুই প্রিয় লিখনেওালা ---দারুণ ভাল লাগছে --
    ঈশানী " সে" --আরও আরও লিখ----
  • dd | 132.171.118.132 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৮:৪৮657784
  • বিউটিফুল লাগলো
  • ranjan roy | 24.99.54.51 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:২৭657785
  • @সে,
    বারীণকাকু বারীণ সাহা ? সেই অসামান্য সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা ফিল্মটি? "তিন ভুবনের পারে"? যার সম্বন্ধে অনেক কথাই শুনেছি, পড়েছি, --দেখা হয়নি আজও?
  • ঐশিক | 24.96.181.239 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:৩৭657787
  • দারুন!!!!!!! দুজনেরই সোনার কলম হোক
  • aranya | 83.197.98.233 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:৪৩657788
  • আমারও চোখ-টা একটু ভিজে এল। বাবা-র কথা লিখতে হবে কখনও
  • aranya | 83.197.98.233 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:৪৫657789
  • খুব ভাল লাগল ঈশানী, সে। ভাল লাগল বললে কম বলা হয়
  • Ishani | 69.92.136.14 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:৩৭657790
  • মাঝে মাঝে কেমন ভুল হয়ে যায় আজকাল | সারাটা দিন কেটে যাবার পর মনে পড়ে , `আমি কেন আজ বাবাকে ফোন করিনি ? মায়ের সঙ্গে কথা হল ..বাবার কথা জিজ্ঞেসই করিনি ? এদিকে চিরটা কাল শুনে এলাম , আমি বাপের আহ্লাদী মেয়ে | বাপের প্রশ্রয় আজও আমায় বড় হয়ে উঠতে দিল না | কিন্তু দেখতে দেখতে আমার ছেলেরা কেমন সাবালক হয়ে গেল | আমি আসলে আজকাল কেমন ভয়ে ভয়ে থাকি | দুনিয়ার যত মরবিড চিন্তা আমার অলস মস্তিষ্কে বিনবিন করে জাল বুনে যায় | বাবা এখন তিরাশি | দেখে মনে হয় সত্তর | বাবা ইদানীং আমায় বলে, " এখন বুঝলি লাইফে এক্সটেনশন চলছে আমার |" তখন আমার একটা মনের মনে হয় বাবা এখনও চল্লিশে পা দেয়নি | বাবার বুড়ো হতে ঢের দেরী আছে | ঢের | আর আমার অন্য মনটা ..অন্য মরবিড মনটা বড় হতচ্ছাড়া ! সারাক্ষণ কু ডাক দেয় | বুকের ভেতরে একটা হিম হিম জলভরা মেঘের চাদর বিছিয়ে দেয় | ভয় দেখায় খুব | বাবা আছে..আমি আছি | বাবা যদি না থাকে..কেমন করে থাকব আমি ?
    বাবা কখনোই আক্ষরিক অর্থে আমার বন্ধু ছিল না | এখনও নয় | মাও তো বন্ধু ছিল না কখনও | মা প্রয়োজনে , পড়াশুনোয় , বকুনিতে, শাসনে , আর ভালোবাসায়ও তো অবশ্যই | কিন্তু মা কখনও মনে পড়ে না ..আমাকে অবিমিশ্র লাই দিয়েছে বলে | এখনও..এই বয়সেও কলকাতায় যাই যখন .. একটু পরেই খিটিমিটি বেধে যায় আমার সাড়ে বত্রিশভাজার মতো জীবনদর্শন নিয়ে | আমি আমার আলমারির মতোই অগোছালো , আমার কোনো দিকে হুঁশ নেই , আমি কোনো কাজে নিখুঁত নই ..এইসব পাঁচালি | কিন্তু বাবা ? বাবা ততক্ষণ চিরকুট খুঁজছে..নতুন বইয়ের লিস্টি লেখা , ছটফট করছে কতক্ষণে আমাকে জিজ্ঞেস করবে নতুন কি লারেলাপ্পা হিন্দি ছবি দেখেছি কিংবা টলিউডের লেটেস্ট গসিপ শোনানোর জন্য উশখুশ | আমিও হামলে পড়ে বলব..কী মাছ খাব, পানের মিষ্টি মশলা ..অন্তত ছ'প্যাকেটের কমে হবে না, আজ সন্ধেবেলা কিন্তু গোলবাড়ির কাটলেট | কাল সকালে যখন জিলিপি কিনবে..আমারটা যেন কড়া ভাজা আনা হয় | কিংবা , এই বয়সেও কোল ঘেঁসে বসে চুপিচুপি কে কে আমার সঙ্গে সামান্যতম খারাপ ব্যবহার করেছে, কে সাড়ে পাঁচ মাস আগে আমায় কড়া কথা বলেছিল..সেই নালিশ | অর্থাত ..
    বাবা মানেই অদ্ভুত এক বুড়ো গাছের মতো জড়িয়ে থাকে থাকা , ছড়িয়ে যাওয়া | ভিজে ভিজে ঠাণ্ডা ছায়া | লম্বা লম্বা পাকানো ঝুরি | ওই গাছের নীচে পা ছড়িয়ে বসে ফ্রকের খুঁট চিবোনো নির্বিকারে , ওই ঝুরি আঁকড়ে দোল খাওয়া ; আবার রাগ হলে ওই গাছের পাতাই কুচিকুচি করে ছেঁড়া | আমার গাছ | আমার একার গাছ | আর কারো নয় | যা করব , বেশ করব !
    বাবা না থাকা মানে ! যা : তাই আবার হয় নাকি ? সে তো চাঁদিফাটা রোদ্দুর, পায়ের নীচে চোরাবালি , সাঁতার না জানা আমি অল্প জলেই হাবুডুবু , এখানে সেখানে পোকামাকড় , সাপ বিছে.... বাবা না থাকা মানে তো মেলায় গিয়ে হারিয়ে যাওয়া , বাবা না থাকা মানে কী ভীষণ শীত ..আর আমি আমার লাল টুকটুকে উলের সোয়েটারটা ..কোথায় যে ফেললাম !
    আজকাল কত যে ফ্যাশন হয়েছে শুনি | ফাদার্স ডে | আমার কোনো নির্দিষ্ট ফাদার্স ডে নেই | আমার রোজ রোজ চব্বিশ ঘন্টা ফাদার্স ডে | বছরভ'র | ওই খুব চেনা গাছটা আরামে রয়েছে | দিব্যি ডালপালা ছড়িয়ে | তবে...মনের মধ্যে | উপায়ও তো নেই ! এতবড় বাগান নেই আমার , যে আগের মতো গাছটাকে বাইরে রাখি ! সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে যা খুশি তাই করি | ইচ্ছেসুখে বাঁচি ..আমি বাপসোহাগী বেটি | আমার এমনকি একটা বারান্দাও নেই ..যে নিদেনপক্ষে টবে বনসাই করে রাখি ... যখন খুশি হাত বোলাই পাতায় ..গাল ঠেকাই গাছের গালে ...|
    গাছটা তাই শরীরে থাকে অন্য কোথাও , অন্য কোনখানে | আমার চেনা , ফেলে আসা কলকাতার মাটিতে |
    আর চুপিচুপি সর্বক্ষণ .. আমার কাছে | এখানে | এই পরবাসে |
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:৪২657791
  • বারীণ সাহা। গড়পারে থাকতেন। ফিল্মের নাম - তেরো নদীর পারে। প্রিয়ম হাজারিকা অভিনীত। প্রিয়ম হাজারিকা ষাটের দশকের গোড়ায় দুই পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে উগান্ডায় চলে যান (তিনি একসময় ভুপেন হাজারিকার স্ত্রী ছিলেন) সেখানে রেডিওতে চাকরি নিয়ে। আমাদের বাড়ীতে রেখে গেছলেন দুটো প্রকাণ্ড ট্রাঙ্ক। অসম্ভব ভারী ছিলো সেই ট্রাঙ্কদুটো। সেগুলো বন্ধ অবস্থাতেই চিলেকোঠায় থাকত। ১৯৮৭তে সেই ট্রাঙ্কদুটো খোলা হয়েছিলো।
  • কল্লোল | 111.63.178.65 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৪৩657792
  • ঈশানী আর সে - কি বলবো! নাঃ কিচ্ছুটি না। ভাষার এতো সীমাবদ্ধতা যে কিছুই বোঝানো যাবে না। তাই.................
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৫৯657793
  • অন্যরাও লিখতে শুরু করে দিন একে একে। ঈশানীদি এটা একটা দারুন প্রোজেক্ট বানিয়েছে। এটা হবে আমাদের টিমওয়ার্ক।
  • Ishani | 69.92.136.14 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১৪:১০657794
  • সবাই লিখুন | থাকুক জড়ো করা সব স্মৃতি , ভাবনা , শাসন আর আহ্লাদ |

    কল্লোলদা , আপনি তো আমার বাড়িতে গল্পে গল্পে বলছিলেন আপনার বাবার কথা | লিখবেন না এখানে ?
  • dc | 133.201.213.50 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১৪:৩৪657795
  • আমি আমার বাবাকে খুব মিস করি। মানে অন্য কোন কারনে না, তবে এখন মনে হয় বাবার সাথে আরো গল্প করলে হতো। আমি অনেক বড়ো বয়স অবধি বাবাকে যমের মতো ভয় পেতাম। ছোটবেলায় তো নিজে থেকে কথা বলার প্রশ্নই ছিল না - পড়াশুনো নিয়ে বা কিছু নিয়ে বাবা কিছু জিগ্যেস করলে বেশীর ভাগ সময়ে হ্যাঁ-না দিয়ে সেরে দিতাম। তবে অ্যানুয়াল পরীক্ষার আগে একবার আমাকে পড়াতে বসত, সে এক ভয়ানক ব্যাপার ছিল। আর বছরে একবার পিটিয়ে লম্বা বানাত, বেশীরভাগ সময়ে রেজাল্ট বেরনোর পর ঃ-) আমার দাদা বা বন্ধুরাও ওরকম ছিল - আমরা কেউ বাবাদের কাছে ঘেঁষতাম না।

    বড়ো হয়ে চাকরি করার পরেও খুব যে বেশী গল্প করেছি তা নয়, আমার বাবা এমনিতেই খুব বেশী কথা বলত না। তবে বিয়ের পর কয়েকবার পুরো ফ্যামিলি শুদ্ধ কোথাও ঘুরতে গেছি, তখন বেশ খুশী থাকত, দুয়েকটা মজা করত। চেন্নাইতে এনে ছানির অপারেশন করিয়েছিলাম, সেবার প্রথমবার আমার হাত চেপে ধরে জিগ্যেস করেছিল, বেশী লাগবে নাতো রে? আর সেবছরই কলকাতা ফিরে গিয়ে দুম করে মরে গেল। চুল্লীতে ঢোকানোর আগে বাইরে যেখানে রাখা হয় সেখানে বাবার পাটা ধরে অনেকক্ষন বসে ছিলাম। খুব ভাললেগেছিল।

    এখন কোথাও ঘুরতে গেলে বা লং ড্রাইভে বেরোলে মনে হয় বাবার ছোটবেলার গল্প প্রায় কিছুই জানিনা। বাবা নাকি প্রথম চাকরি নিয়ে জলঢাকায় গেছিল। সেখানে কি করত, বন্ধুদের সাথে কোথায় কোথায় ঘুরত, সেসব জানতে খুব ইচ্ছে করে। এখন মনে হয় চান্স পেলে বাবার সাথে বসে বসে অনেকক্ষন গল্প করতাম।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১৪:৪৭657796
  • dc, অল্প কটা বাক্যে অনেক কথা লিখে ফেললেন।
  • - | 109.133.152.163 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১৮:৪৪657798
  • আমি একটু ট্রাঙ্কের ভিতরের ব্যাপারেও কৌতূহলী, সে-কে জানাই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন