এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাপসোহাগী

    Ishani
    অন্যান্য | ২২ জানুয়ারি ২০১৫ | ৬৫০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • - | 109.133.152.163 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:১৩657832
  • বাপসোহাগী কি শুধু মেয়েরাই হয়?
  • kiki | 125.124.41.34 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:৪৪657833
  • গী যে গ হলে হয়তো ছেলেরা হতে পারতো.............
  • pi | 122.79.38.175 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ১৫:৫১657834
  • আরে অচিরা তো আমার জুনিয়র।আর আমলাশোলের এই প্রোজেক্টটাতে এইডের সূত্রে কিছুটা জড়িয়ে ছিলাম। খুব ভাল লেগেছিল ওনাদের কাজকর্ম।
  • Ishani | 69.92.128.22 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ২০:৪৮657835
  • অচিরাকে দেখেছি ও যেদিন জন্মালো, সেইদিন থেকে | তারপর যখন হামা দেয় , আমি বলেছিলাম, "অচিরা অচিরেই কথা বলবে |" :))
  • Ishani | 69.92.128.22 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ২১:৪০657836
  • এবার যার কথা বলব , তাকে কোনদিন আক্ষরিক অর্থে চোখে দেখিনি | কিন্তু তবু সে আমার যে কী ভীষণ চেনা ! তার বাবার সূত্রে | তার বাবা আমার বন্ধু | অনেক দিনের | তিনি ঢাকার একটি বিখ্যাত সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত | এবং কবি | বাপসোহাগীর বয়স এখন কত হবে ? খুব বেশি হলে দশ বছর | এক্কেবারে রসগোল্লার মতো মিষ্টি | সব সময়ে হাসিমুখ | কী ভীষণ ঘন আর লম্বা তার চুল ! কী যে বাহার ! এলোচুলে বা দুটি লম্বা বিনুনিতে একেবারে রাপুনজেল | আমি তাকে চিনি না, সে আমাকে চেনে না | অথচ আমরা দুজনেই দুজনকে চিনি | আমি চিনি আমার বন্ধুর "মা " হিসেবে | সে চেনে ইন্ডিয়াতে সেই যে একটা আন্টি থাকে..যে জন্মদিনে ছড়া লিখে পাঠায় ....| আর আমরা পরস্পরকে চিনি..ফটোর মাধ্যমে |

    আমার বন্ধুটি বড়ই অভাগা | তার স্ত্রী এবং মা ..দুজনেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের রুগী | একই বাড়িতে কোনও মানুষের প্রিয় দুই নারী একই মারণ রোগের শিকার হলে মনের অবস্থা ঠিক কেমন হয় ? আমি জানি না | আমি সত্যিই জানি না | কিন্তু জানি ..কখনও কখনও খুব বিপর্যস্ত থাকলেও এই মানুষটি তার মধ্যেই কবিতা পড়েন , কবিতা লেখেন , অনর্গল কবিতা মুখস্ত বলেন | আর রবিগানে বুঁদ হয়ে থাকেন |

    ওঁর কি এই একটিই সন্তান ? না | আর একটি মেয়ে আছে | তার বয়স এখন ষোলো | কিন্তু সে ওঁর "মেয়ে", "মা"নয় |

    আমি একবার কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, " এই পক্ষপাত কেন ?"
    বলেছিলেন , " যে প্রথম এসেছিল , সে বড় কাঙ্ক্ষিত ছিল | নতুন কিছু নয় | সব সময়েই থাকে | সব নতুন বাবা-মায়ের কাছেই | তারপর যখন আমার স্ত্রীর দ্বিতীয়বার সন্তান সম্ভাবনা হয় , ও কিছু মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছিল | কিছুতেই মা হবে না | গর্ভপাত করাবেই | আমি ছলে বলে কৌশলে ডাক্তারকে হাত করে ওই অজাত শিশুটিকে বাঁচাই | ও জন্মাল | কন্যা সন্তান | আমার মনে হল, আমার মা ! অথচ আমার মা কিন্তু জীবিত | আমার তো আরও একটি কন্যা আছে | তবু...তবু...ভুলে গেলাম | ওই শিশুমুখ ..যার আসার পথে অজস্র অন্তরায় ছিল আর যে আমার বাসনাকুসুম ...কোন মন্ত্রবলে যেন আমার ইহকাল পরকাল ভুলিয়ে দিল | মনে হল, আমার দশ দিগন্ত আলো হয়ে গেল | কী ভাগ্যিস , আমি আমার স্ত্রীর খামখেয়ালিপনায় সমর্থন জানাইনি ! তাহলে এই অত্যুজ্জ্বল মুহূর্ত তো আসতই না আমার জীবনে |"

    ঠিক কথা | এই ছোট্ট মা তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে যতক্ষণ না ঘরে ফেরে , ঘুমোয় না | তার মা , দিদি ঘুমিয়ে পড়লেও | তার বুড়ো ছেলে কোনও কারণে বিপর্যস্ত থাকলে কোন মন্ত্রবলে তা টের পেয়ে মুখে কিছু না বলে পর্দার খুঁট ধরে দাঁড়িয়ে থাকে মলিন মুখে | বাবা অভুক্ত থাকলে তারও ক্ষুধামান্দ্য | আর তার বাবা ? কলকাতায় এসে দোকানপাট তোলপাড় করে ফেলেন পরীর জামার খোঁজে | খুদে পরী আবার পুতুল খেলে খুব | বার্বি ডল | আর ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন |

    আমার কাছে আচমকা ফোন আসে |
    -- কলকাতায় বা ব্যাঙ্গালোরে কোনো রেসিডেনশিয়াল স্কুল আছে ? ওদের দিয়ে দিই তাহলে | মৌলবাদীরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে | আমার গাড়ি ওরা ফলো করছে | যে কোনো সময়ে যা খুশি করতে পারে ওরা | আমার যা হয় হোক, বাচ্চারা বাঁচুক |
    --আপনার স্ত্রী কী বলছেন ?
    --ওই তো আপনাকে বলতে বলল | একটু দেখুন না প্লীজ | খুব বিপদ |
    --আপনি পারবেন , ছেড়ে থাকতে ?
    -- বড়টা বুঝলেন..খুব বুঝদার |
    -- আমি ছোটটার কথা বলছি |

    ফোনের ওপারে দীর্ঘ নীরবতা | তারপর মৃদু কন্ঠ |

    -- না:, থাক ..বুঝলেন | এখানেই প্রোটেকশন নিতে হবে |
    -- অত কথায় কাজ কী ! মাকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না ..এ তো জানা কথা |
    -- সত্যি পারব না ঈশানী , সত্যি পারব না | আমি ঘরে ফিরি | দরজায় ঘন্টির আওয়াজ পেয়ে ওই ছোট ছোট পায়ের শব্দ এসে আটকে থাকে পর্দার আড়ালে | উঁকি মারে টুলটুলে একটা হাসিমুখ | আমার সব ক্লান্তি মিলিয়ে যায় নির্মেঘ আকাশে | যেদিন সমস্যায় থাকি, দু:খে থাকি.. আমার কষ্টের জলে ভেজা চোখ মুছিয়ে দেয় দশটা কচি আঙুল | ও ঘুমোলে ওর চুলে মুখ ডুবিয়ে কী মধুর সেই ঘ্রাণ ! মায়ের গন্ধ ! ওর ঘুমের ঘোরে ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা খুশির দেয়ালা | অসম্ভব | আমি প্রোটেকশন চেয়ে দরকার হলে আইনের শেষ দেখে ছাড়ব, তবু..ওকে ছেড়ে থাকতে পারব না |

    এরপর..আমি যখনই আমার বাবাকে নিয়ে কোনও লেখা লিখেছি , আমার কাছে একটিই প্রশ্ন ঘুরেফিরে এসেছে
    |

    -- ঈশানী , লেখাটা পড়লাম | গলার কাছটা এমন পাকিয়ে পাকিয়ে উঠল | আচ্ছা , আমি থাকি বা না থাকি..আমার মেয়েটা ..আমার ছোট্ট মা ..হয়ত তখন অনেক অনেক বড় হয়ে যাবে..আমাকে মনে রাখবে ঈশানী ..ঠিক এমন করে ? আমার কথা ভাববে , ঠিক এভাবেই ? যেভাবে আপনি লিখেছেন ? আপনার বাবার কথা ? এই ইটার্নাল বন্ডিং ?
  • সে | 188.83.87.102 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৪657837
  • তুলে দিলাম।
  • Abhyu | 81.12.52.106 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৯:০০657838
  • https://gma.yahoo.com/dad-refuses-newborn-son-down-syndrome-221817795--abc-news-parenting.html

    Dad Refuses to Give Up Newborn Son With Down Syndrome
    By NICOLE PELLETIERE

    When Samuel Forrest of Armenia heard a baby crying from outside his wife's hospital room, he knew his life would change forever.

    Not only had he become a father, but he would soon receive some unexpected news about his newborn son.

    "This pediatrician walks out of the room with a little bundle -- that was Leo," Forrest said. "She had his face covered up and hospital authorities wouldn't let me see him or my wife. When the doctor came out, he said 'there’s a real problem with your son.'

    Forrest followed doctors and nurses into a room where he'd finally get to meet his baby.

    "When I walked into the room they all turned to me and said 'Leo has Down syndrome," he told ABC News. "I had a few moments of shock."

    After the news had sunk in, Forrest held Leo for the very first time.

    "They took me in see him and I looked at this guy and I said, he's beautiful -- he's perfect and I'm absolutely keeping him."

    Soon Forrest walked into his wife's hospital room with Leo in his arms.

    Her reaction was unlike one he ever expected.

    "I got the ultimatum right then," he said. "She told me if I kept him then we would get a divorce."

    Attempts to reach the hospital for comment weren't immediately successful. The baby's mother, Ruzan Badalyan, told ABC News that she did have a child with Down syndrome and she has left her husband, who has the child, but she declined to elaborate.

    Forrest, who's from Auckland, New Zealand, said he was completely unaware of the hospital practices in Armenia when it came to children.

    "What happens when a baby like this is born here, they will tell you that you don’t have to keep them," he said. "My wife had already decided, so all of this was done behind my back."

    Despite his wife's warnings, Forrest said he never had a doubt in his mind that he would hold onto his son.

    One week after his birth, Leo's mom filed for divorce.

    "It's not what I want," Forrest said. "I didn’t even have a chance to speak with her in privately about it."

    Forrest, who works as a freelance business contractor, has plans for he and Leo to move to his native country of New Zealand where he said they'll receive support from loved ones.

    In the meantime, he's enlisted for some help on his GoFundMe page titled "Bring Leo Home."

    "This really came out of the blue for me," he said. "I don’t have a lot, I have very little in fact. The goal is to raise enough for a year so I can get a part-time job so Leo doesn't have to be in daycare and I can help care for him. He's lost a lot in two weeks. It'd be different if he had his mommy."

    Forrest has recently been working with disability awareness groups to share his story in the hopes that parents will become better educated on children with special needs.

    "After what I've been through with Leo, I'm not going to sit back and watch babies be sent to orphanages," he said. "As a child with Down syndrome, that becomes somewhat of a label. If we can get around this label, we’ll see that they’re normal. They’re a little different from us, but they’re still normal.

    "They all have niches and I want to work hard to find out where Leo's special. This little guy is great."
  • শিবাংশু | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:৪৪657839
  • এই টইটা রোবু আর আলু'র মাঁঝ্খমাজ, জিও....
  • Ishani | 24.96.54.11 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৬657840
  • এবার যার গল্প বলব. আমি জানিই না তাকে আদৌ বাপসোহাগী বলা যায় কিনা |

    আমার মায়ের পিসতুতো দাদা | রমেশমামা | তার দুই বিয়ে | প্রথম বউ একটি টুকটুকে মেয়ে রেখে অতি অল্প বয়সে চোখ বুজলে ' আহা , রমেশ এই কাঁচা বয়সে বউ খুইয়ে কচি মেয়ে নিয়ে কি হাত পুড়িয়ে খাবে নাকি ' এই অজুহাতে দ্বিতীয়বার রমেশমামা বিয়ের পিঁড়িতে বসল | কালের নিয়মে এ পক্ষেও একটি মেয়ে | বাণী | রানী দেখতে যেমন নজরকাড়া , বাণী দেখতে তেমনই সাদামাটা | মানে সাদামাটা আমি রেখেঢেকে বললাম, আসলে একেবারেই ভালো নয় | আজব ব্যাপার হল, রানী তার বিমাতার চোখের মণি | বাণী , এখন থেকে তাকে বাণীদি বলি বরং, সে কার চোখের মণি..জানি না | তবে সকলেই বিভিন্ন কারণে তাকে চোখে হারায় | তার বাবা সবচেয়ে বেশি | রান্নাঘরে, ঠিকে ঝি কাজে না এলে হাতে হাতে বাসন মাজতে, কাপড় কাচতে, ঘর পরিষ্কারে, বাবার শার্টের বোতামে-মায়ের ব্লাউজের হেম সেলাইতে, রানীদির শাড়ির ফল বসাতে বাণীদি | ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়িতে থাকলে বাবার চা, জামাকাপড় ইস্ত্রী, বাবার জন্য ঝিরিঝিরি আলুভাজা, খোসা ছাড়িয়ে কমলালেবু, ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করা দুধের বাটি... আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না | রানী দেখতে ভালো বড্ড, এক দেখাতেই তার বিয়ের ঠিক হয়ে গেল | সম্পন্ন ঘরে | বাণীদি ? সে তার দিদির নতুন সংসার গুছিয়ে দিয়ে আসে | হাসিমুখে |
    আমার মা বলে , "বৌদি , এবার বাণীরও দ্যাখো |"
    মামী বলে , "ছাড়ান দাও | ওই তো রূপ ! এক কাঁড়ি টাকা লাগবে | তোমার দাদার হাল তো জানো | খরচ বেড়েছে সংসারে | রানীরা আসে যায়, নতুন কুটুম...আর বাণী ছাড়া তোমার দাদার চলবে ? চা, পান, জল, টাইমের ভাত ...সব তো ওই মেয়ে ! বাপ তো মেয়েকে চোখে হারায় | "
    বাণীদি হাসে খুব | আমার মাকে বলে, "পিসি, আমার আবার বিয়ে ! তুমি কি পাগল হলে ? বাবাকে কে দেখবে তাহলে ? মায়ের তো শরীর ঠিক থাকে না প্রায়ই |"
    রমেশমামা বড্ড সিগারেট খায় | সত্যিকারের নেশাড়ু ধোঁয়াখোর | চারমিনার | কাশে মাঝরাতে | মামী মুখঝামটা দেয় | বাণীদি উঠে দেয় কাফ সিরাপ | বুকের খাঁচাটা কেমন ওঠাপড়া করে কাশির দমকে | তেল মালিশ করে দেয় | বাবার বুকে | রোজ | রোজ |
    বাবার বড্ড কষ্ট | তাই আরও তিন চারটে টিউশনি নেয় | কেউ বিয়ের নামটি করে না |
    রমেশমামা বলে ,"বাণী বিয়ে হয়ে চলে গেলে আমার হাড়ির হাল হবে |''
    বাণীদি বলে, "বাবাকে ফেলে আমি বিয়ে করলে তো !"
    মামী বলে, "ওই এলেন বাপসোহাগী |"
    বাণীদির নামের সঙ্গে নতুন সার্টিফিকেট যোগ হয় | বাপসোহাগী | ভালোই হয় | মনকে চোখ ঠেরে থাকা যায় |
    রানীদি আসে মাঝেমধ্যে | ফলমূল, দু চারটে জামাকাপড় আর এক রাশ উপদেশের তত্ত্ব সাজিয়ে | বাণীদি হাসে | রাগ করে না | মামী বলে, "আহা, ক'দিন থাক এখানে রানী | শরীর সারুক | ওখানে বড্ড খাটুনি | "
    যদিও...সে বাড়িতে গুচ্ছের কাজের লোক |
    রানীদির ছেলেমেয়ে "মাসিমনি"বলতে অজ্ঞান | মাসিমনি তাদের আহ্লাদ আর আব্দারের ফুলবাগান |
    রমেশমামার কপাল মন্দ | বাসের ধাক্কা খেল | অন্যমনস্ক ছিল কিনা কে জানে ! বাঁচলই না লোকটা ! দিন তিনেক ছটফট করে মরে গেল |
    বাপসোহাগী কেঁদে ভাসাল | তারপর বিধবা মায়ের বাবা-মা সেজে বসল | একসঙ্গে | কে যে মা , কে যে মেয়ে..বুঝতে পারতাম না আমরা | মামী একটু কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল | বাণীদি আগলে রাখত | কী করে সংসার চলত ...জানি না | সামান্য জমানো টাকা, বাণীদির টিউশনি ...এই | টান পড়ত মাঝেমাঝে | কবে যেন রমেশমামা মেয়েকে বলেছিল, "পাশের বস্তির বাচ্চাগুলোকে একটু দেখিস"..ব্যস ! বাপসোহাগী অমনি দানছত্র খুলে বসল | ইস্কুলের মাইনে, ছেঁড়া ফ্রক বাতিল করে নতুন ফ্রক, শীতকালে ওদের নিয়ে চড়ুইভাতি ..লম্বা ফর্দ | মামী রাগ করলে বলে , "বাবা বলে গিয়েছে |" বাপসোহাগী !
    আমি তো কবেই প্রবাসে | আসি যখন, খবর নিই | মা যাতায়াত করে | বাণীদি আসে | একবার এসে শুনি, নিজেদের বাড়ি যেটা ছিল..সেটায় নাকি ইস্কুল করেছে..অবৈতনিক | ওই বস্তির ছেলেমেয়েদের জন্য | আর নিজেরা উঠে গেছে একটা ছোট এক কামরার আস্তানায় | বলেছে, "আমাদের অত দরকারটাই বা কী ! বাবার বড্ড শখ ছিল | ইস্কুলের |"
    এরপর বেশ ক'টা বছর চলে গেছে | মামী নেই | বয়স হয়েছিল |
    বাণীদি একা | কিছু ছাত্রছাত্রী ভরসা |
    একবার এসে শুনি , বাণীদিকে রানীদিরা নিয়ে গেছে নিজেদের কাছে | জোর করে | কারণ : ক্যান্সার | জরায়ুতে | জরায়ু সন্তানধারণ করেনি , মারণ রোগ ধারণ করেছে ঠিক !
    বাণীদি কি দিদির সংসারে থাকার পাত্রী ? কদিন বাদেই সে জোর করে চলে গেছে কোন আশ্রমে | সেখানে ওই অশক্ত শরীরে শ্রম দেয় | শ্রম না দিয়ে সে বিনিময়ে কিচ্ছু নেবে না ! রানীদির ছেলেমেয়ে বহুবার নিতে এসে ফিরে গেছে | সে নাকি আশ্রমের এত ছেলেমেয়ে ফেলে যেতেই পারবে না ! তার কত কাজ !
    দিনে দিনে শরীর ভাঙছে | প্রতিবার আসি | জিজ্ঞেস করি | খোঁজ নিই |

    এইবার ...এই প্রথমবার ..নিইনি | এত ভয় করছে জিজ্ঞেস করতে | কী জানি ! আছে, না নেই !
  • ranjan roy | 24.99.104.56 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:৩৮657842
  • উঃ! আর পড়তে পারছি না।
  • Ishani | 24.96.63.232 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:০৫657843
  • রঞ্জনদা , তাহলে আমি না হয় কলম তুলে নিলাম |
  • du | 74.233.173.155 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:৪১657844
  • না না, আপনি লিখুন আর রন্জনদাও না পড়ে বরম প্রেমে অপ্রেমে লিখুন
  • ranjan roy | 24.99.77.155 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২২:০৭657845
  • একি ঈশানী! আমার মন্তব্যটি কি ভুল বুঝলেন? হয়ত আমার বাংলা ব্যবহারের ভুল!!!
    আমি সেন্টিমেন্টাল লোক, তায় বয়স গেছে বেড়ে।
    আর আমারও দুই মেয়ে। বলতে গেলে আমার সব রসদ, মায় বইপত্তর ওরাই জোগায়।
    তাই আপনার এই সিরিজে কোন ঘটনা লিখলেই আমার কাজ হল গিন্নিকে বলা-- বাকি কাজ পরে, আগে এটা শুনে যাও। তারপর পড়ে শোনাই, প্রত্যেকটা। আর তারপর কোন কাজ করতে পারি না। চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে যায়।
    আপনার এই লেখাগুলো পড়ে এটাই বলি-- এত ভালবাসা! এত করে একজন আরেকজনকে ভালবাসতে পারে? একজন বাবা তার মেয়েকে? একজন মেয়ে তার বাবাকে? জন্মদাতা না হোক!
    আর তখনই সচেতন হই-- আমি কি রকম বাপ?
    একেবারে বন্ধ করবেন না। আপনার এই সিরিজ ও সে'র চাকরির অভিজ্ঞ্তা -- গুরুর সম্পদ বলেই মনে করি। গর্বিত বোধ করি আপনাদের মত মানুষের সঙ্গে গুরুচন্ডালির সূত্রে পরিচিত হতে পেরেছি বলে।
  • Ishani | 24.96.63.232 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২২:২৪657846
  • রঞ্জনদা ,

    ভাবলাম কী জানি ! বড্ড বেশি চাপের হয়ে যাচ্ছে কিনা | কিছু সুখের কথা যেমন আছে, কিছু দু:খকথাও তো মিশে আছে ! আমি এই সিরিজ লিখি যখন, ভাবি ....বয়সের বিকেলবেলা হয়ে এল , ২৮ বছর দাম্পত্যজীবন কেটে গেল ..এখনো আমার বাবাকে ছেড়ে থাকতে এত কষ্ট হয় ! আমার ছেলেরা সাবালক হল , আমি আর "বড় " হলাম না !

    আর যতদূর মনে পড়ছে...কল্লোলদার বাড়িতে চুক্তি হয়েছিল , আপনি আমাকে "আপনি" বলবেন না | মনে আছে ?
  • ranjan roy | 24.99.77.155 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:০২657847
  • মনে আছে।ঃ)))
  • সে | 188.83.87.102 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৩657848
  • হ্যাঁ হ্যাঁ, আরো হোক। আর কেউ না লিখলে আমি নিজেই কিন্তু লিখে লিখে সবাইকে বোর করে দেবো - হুমকি দিয়ে রাখলাম।
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৬:১৪657849
  • লেখো না বাপু
  • Nina | 83.193.157.237 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৭:৩৫657850
  • সে
    তুমিও লেখ প্লিজ----
  • সে | 188.83.87.102 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:২৯657851
  • হ্যাঁ এবার দাপিয়ে লিখব। কেউ আটকাতে পারবে না। হুম্‌ হুম্‌ হুম্‌কি!
  • Nina | 83.193.157.237 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১১657853
  • এত গর্জালে কি আর বর্ষাবে ঃ-(
  • Ishani | 24.96.43.47 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:২৬657854
  • আমরা , বাবা মায়েরা সন্তান আকাঙ্ক্ষা করি | অজাত সন্তান যতক্ষণ , যতক্ষণ সে মাতৃগর্ভে ...ঠিক কী কী চাই ? ফুটফুটে খোকা কিংবা খুকু , বংশের মুখ উজ্জ্বল করুক , সবকিছুতে চৌকস হোক | এই যে এতসব কিছু চাই , অর্থাত আমরা ধরেই নিই যে শিশুটি নিখুঁত সুস্থসবল হবে | এক মিনিট আর পাঁচ মিনিটে যার নিখুঁত আপগার স্কোর ১০ | কোত্থাও কোনো খামতি নেই | ভাবি তো , কিন্তু তা তো সবসময় হয় না | বাবা মায়ের স্বপ্নে ধেয়ে আসে মস্ত বড় কালো ডানার পাখি | ঢেকে দেয় শিশুটির ছোট্ট শরীর , মস্তিষ্ক বা দুই-ই | জন্ম নেয় অন্য ভুবনের বাসিন্দা ঈশ্বরের এই সব পুত্র কন্যারা | বিকলাঙ্গ, অসহায় ... শরীরে , মনে | আর আমরা বাবা মায়েরা ? আমরা আমাদের চোখের জলে ধুইয়ে দিই শিশুটির গাল | সে অবোধ শিশু সেই চোখের জলের ছোঁয়ায় হয়ত খিলখিল করে হেসে ওঠে | সে অবোধ , জড়বুদ্ধি , সবসময় নড়তে চড়তেও পারে না..কিন্তু আদর বোঝে, অবহেলাও বোঝে | আমি যে ক'টি এমন সন্তানকে দেখেছি , প্রত্যেকের বাবা মা বলেছেন, " আমরা যে ক'দিন আছি .. নিশ্চিন্ত | কিন্তু এরপর ? ওকে ফেলে যে মরতেও পারব না !"
    কী ভয়ানক সত্যি ! তার মানে এক নিষ্ঠুর সত্য দিনের আলোয় আসা |
    " আমরা থাকতে থাকতে ও চলে যাক !"

    আজকের গল্প এই নিয়েই | একটি শিশু | জন্মের সময় থেকেই অপুষ্ট , পঙ্গু | কন্যাসন্তান এবং একমাত্র | অধ্যাপক পিতা আর গায়িকা মা | নিবাস : কলকাতা | জন্মের পর থেকেই সে শুয়ে থাকে | সরু সরু হাত পা, হাড়ের বৃদ্ধি নেই , সব কিছু করিয়ে দিতে হয় ; এমনকি পাশ ফিরিয়ে দিতে হয় | শরীর অশক্ত , কিন্তু আশ্চর্য সচল তার মস্তিষ্ক | সে ওভাবেই লেখাপড়া শেখে , রবিগান শুনলে তার ঝকঝকে চোখ দু'টি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে , কথা যদিও সামান্য জড়ানো, কিন্তু অবোধগম্য পুরোপুরি নয় | সে জানালা দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে তাকিয়ে থাকে বাইরে | একদিন দু'দিন, বছরের পর বছর | প্রতিবার দুর্গাপূজার বোধন হয় , ঢাকে কাঠি পড়ে | ছেলে বুড়ো সব্বাই ওই জানালার পাশটি দিয়ে প্রতিমা দর্শনে যায় | পাড়ার চেনা রিক্সাওয়ালা সাধ্যসাধনা করে, " মামনি , চল, সাবধানে নিয়ে গিয়ে মায়ের মুখটি দেখিয়ে আনি | তোমার কষ্ট হবে না |" মেয়েটি তখন শৈশব পেরিয়ে বালিকা | সে বলেছিল, "পাগল হলে ? লোকে ঠাকুর ফেলে আমাকে দেখবে !" তার সমস্ত পৃথিবী ওই আয়তাকার চৌহদ্দিতে বন্দী | ২৪ বর্গফুট | লতাপাতার নকশী খাট !
    মুখে হাসিটি অটুট থাকে | কৈশোর পেরিয়ে যায় অজান্তে | তার একটিই চাহিদা | বই | একটিই শখ | গান | বাবা মা দিয়ে যান দু'হাত ভ'রে | অমৃতের পুত্রী | যৌবন আসে এভাবেই | জানান না দিয়েই | ওই শুকনো গাছের ডালে যেমন একটি দু'টি সবুজ পাতা | সরু বাদামী ডালপালা চোখে পড়ে | পাতা চোখে পড়ে না |
    বাবা মায়ের বয়স এগোয় | বরং বলা ভালো, ছোটে | বাবা মায়ের মুখে দুশ্চিন্তার বলিরেখা | কে দেখবে ওকে ? কিন্তু মৃত্যু তো মানুষের ইচ্ছাধীন নয় | সে নিজের মর্জিমাফিক আসে | উড়িয়ে পুড়িয়ে নিয়ে চলে যায় |
    এই সব সন্তান সচরাচর দীর্ঘজীবী হয় না | কিন্তু মা বাবা ওই যে মুখে বলেন , " আমরা থাকতে থাকতে ও চলে যাক " আর অবচেতনে শিউরে উঠে বলেন , " ষাট ষাট , ঠাকুর , ওকে রক্ষা কোরো"...এই পরস্পরবিরোধী কথায় অন্তত এই ক্ষেত্রে অবচেতন হারিয়ে দেয় যুক্তিবুদ্ধিকে | মেয়েটি বেঁচে থাকে | হিসেবের বাইরে অনেক ক'টা দিন | বাড়তি |
    তারপর সেই দিনটি আসে | যে দিনটি আসার কথা তো ছিল অনেক আগেই, কিন্তু ঘরে ঢোকার আগে চৌকাঠে থমকে দাঁড়িয়ে ছিল মৃত্যু | প্রথমে মৃত্যুর হালকা শ্বাস শোনা যাচ্ছিল , তারপর একেবারে দামাল ঝড় | মেয়েটি চলে গেল |
    এ পর্যন্ত গল্প নতুন নয় | সেদিন খবর পেয়ে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন , তাঁদের মধ্যে একজন আমাকে আজ এতদিন বাদে বড় অদ্ভুত একটি কথা বললেন | সেই জবানীতেই বলি :

    " আমরা যখন পৌঁছলাম , ওর দু'টি শীর্ণ হাতের ঠাণ্ডা আঙুল জড়িয়ে ধরে রেখেছেন ওর বাবা আর মা | খাটে , দু'জন ..দু'পাশে | কেউ কোনো কথায় নেই, কেউ কোনো কান্নায় নেই | শুধু..কী আশ্চর্য , দু'জনেরই মুখে ঠিক মাঝবরাবর লম্বালম্বি , প্রায় - অদৃশ্য একটি সূক্ষ্ম বিভাজনরেখা | ঠিক যেন সরু তুলি দিয়ে আঁকা | যে রেখার একপাশের যে মুখের অংশ তাতে আলো পড়েছে..সে আলো স্বস্তির আর নিশ্চিন্ততার | মুখের অন্য পাশটিতে কালচে সবুজ সরের মত ছায়া .. ব্যথার , সব ফুরিয়ে ফেলার , সব ফুরিয়ে যাওয়ার |"

    আমি শুনছিলাম আর ভাবছিলাম, আমরা ছায়ার হাত ধরে আলোয় পৌঁছই , নাকি আলো পেরিয়ে ছায়ায় ?
  • পুপে | 131.241.184.237 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:০৮657855
  • কি ভালো টই। চোখের কোনা দিয়ে টুপটুপ করে দু ফোঁটা, জলদি মুছে নিলাম যদিও, কেউ দেখে ফেল্লে! মাসোহাগীদের জন্যে এরম কোন টই নেই?
  • potke | 190.215.54.237 | ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৩:০৭657856
  • খুল্লেই তো হয়!
  • Ishani | 116.51.26.158 | ১৩ জুন ২০১৬ ১৬:১৬657857
  • আজ অনেক দিন পর এমন একজনের গল্প বলব. আমি জানিই না তাকে আদৌ বাপসোহাগী বলা যায় কিনা |

    আমার মায়ের পিসতুতো দাদা | রমেশমামা | তার দুই বিয়ে | প্রথম বউ একটি টুকটুকে মেয়ে রেখে অতি অল্প বয়সে চোখ বুজলে ' আহা , রমেশ এই কাঁচা বয়সে বউ খুইয়ে কচি মেয়ে নিয়ে কি হাত পুড়িয়ে খাবে নাকি ' এই অজুহাতে দ্বিতীয়বার রমেশমামা বিয়ের পিঁড়িতে বসল | কালের নিয়মে এ পক্ষেও একটি মেয়ে | বাণী | রানী দেখতে যেমন নজরকাড়া , বাণী দেখতে তেমনই সাদামাটা | মানে সাদামাটা আমি রেখেঢেকে বললাম, আসলে একেবারেই ভালো নয় | আজব ব্যাপার হল, রানী তার বিমাতার চোখের মণি | বাণী , এখন থেকে তাকে বাণীদি বলি বরং, সে কার চোখের মণি..জানি না | তবে সকলেই বিভিন্ন কারণে তাকে চোখে হারায় | তার বাবা সবচেয়ে বেশি | রান্নাঘরে, ঠিকে ঝি কাজে না এলে হাতে হাতে বাসন মাজতে, কাপড় কাচতে, ঘর পরিষ্কারে, বাবার শার্টের বোতামে-মায়ের ব্লাউজের হেম সেলাইতে, রানীদির শাড়ির ফল বসাতে বাণীদি | ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়িতে থাকলে বাবার চা, জামাকাপড় ইস্ত্রী, বাবার জন্য ঝিরিঝিরি আলুভাজা, খোসা ছাড়িয়ে কমলালেবু, ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করা দুধের বাটি... আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না | রানী দেখতে ভালো বড্ড, এক দেখাতেই তার বিয়ের ঠিক হয়ে গেল | সম্পন্ন ঘরে | বাণীদি ? সে তার দিদির নতুন সংসার গুছিয়ে দিয়ে আসে | হাসিমুখে |
    আমার মা বলে , "বৌদি , এবার বাণীরও দ্যাখো |"
    মামী বলে , "ছাড়ান দাও | ওই তো রূপ ! এক কাঁড়ি টাকা লাগবে | তোমার দাদার হাল তো জানো | খরচ বেড়েছে সংসারে | রানীরা আসে যায়, নতুন কুটুম...আর বাণী ছাড়া তোমার দাদার চলবে ? চা, পান, জল, টাইমের ভাত ...সব তো ওই মেয়ে ! বাপ তো মেয়েকে চোখে হারায় | "
    বাণীদি হাসে খুব | আমার মাকে বলে, "পিসি, আমার আবার বিয়ে ! তুমি কি পাগল হলে ? বাবাকে কে দেখবে তাহলে ? মায়ের তো শরীর ঠিক থাকে না প্রায়ই |"
    রমেশমামা বড্ড সিগারেট খায় | সত্যিকারের নেশাড়ু ধোঁয়াখোর | চারমিনার | কাশে মাঝরাতে | মামী মুখঝামটা দেয় | বাণীদি উঠে দেয় কাফ সিরাপ | বুকের খাঁচাটা কেমন ওঠাপড়া করে কাশির দমকে | তেল মালিশ করে দেয় | বাবার বুকে | রোজ | রোজ |
    বাবার বড্ড কষ্ট | তাই আরও তিন চারটে টিউশনি নেয় | কেউ বিয়ের নামটি করে না |
    রমেশমামা বলে ,"বাণী বিয়ে হয়ে চলে গেলে আমার হাড়ির হাল হবে |''
    বাণীদি বলে, "বাবাকে ফেলে আমি বিয়ে করলে তো !"
    মামী বলে, "ওই এলেন বাপসোহাগী |"
    বাণীদির নামের সঙ্গে নতুন সার্টিফিকেট যোগ হয় | বাপসোহাগী | ভালোই হয় | মনকে চোখ ঠেরে থাকা যায় |
    রানীদি আসে মাঝেমধ্যে | ফলমূল, দু চারটে জামাকাপড় আর এক রাশ উপদেশের তত্ত্ব সাজিয়ে | বাণীদি হাসে | রাগ করে না | মামী বলে, "আহা, ক'দিন থাক এখানে রানী | শরীর সারুক | ওখানে বড্ড খাটুনি | "
    যদিও...সে বাড়িতে গুচ্ছের কাজের লোক |
    রানীদির ছেলেমেয়ে "মাসিমনি"বলতে অজ্ঞান | মাসিমনি তাদের আহ্লাদ আর আব্দারের ফুলবাগান |
    রমেশমামার কপাল মন্দ | বাসের ধাক্কা খেল | অন্যমনস্ক ছিল কিনা কে জানে ! বাঁচলই না লোকটা ! দিন তিনেক ছটফট করে মরে গেল |
    বাপসোহাগী কেঁদে ভাসাল | তারপর বিধবা মায়ের বাবা-মা সেজে বসল | একসঙ্গে | কে যে মা , কে যে মেয়ে..বুঝতে পারতাম না আমরা | মামী একটু কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল | বাণীদি আগলে রাখত | কী করে সংসার চলত ...জানি না | সামান্য জমানো টাকা, বাণীদির টিউশনি ...এই | টান পড়ত মাঝেমাঝে | কবে যেন রমেশমামা মেয়েকে বলেছিল, "পাশের বস্তির বাচ্চাগুলোকে একটু দেখিস"..ব্যস ! বাপসোহাগী অমনি দানছত্র খুলে বসল | ইস্কুলের মাইনে, ছেঁড়া ফ্রক বাতিল করে নতুন ফ্রক, শীতকালে ওদের নিয়ে চড়ুইভাতি ..লম্বা ফর্দ | মামী রাগ করলে বলে , "বাবা বলে গিয়েছে |" বাপসোহাগী !
    আমি তো কবেই প্রবাসে | আসি যখন, খবর নিই | মা যাতায়াত করে | বাণীদি আসে | একবার এসে শুনি, নিজেদের বাড়ি যেটা ছিল..সেটায় নাকি ইস্কুল করেছে..অবৈতনিক | ওই বস্তির ছেলেমেয়েদের জন্য | আর নিজেরা উঠে গেছে একটা ছোট এক কামরার আস্তানায় | বলেছে, "আমাদের অত দরকারটাই বা কী ! বাবার বড্ড শখ ছিল | ইস্কুলের |"
    এরপর বেশ ক'টা বছর চলে গেছে | মামী নেই | বয়স হয়েছিল |
    বাণীদি একা | কিছু ছাত্রছাত্রী ভরসা |
    একবার এসে শুনি , বাণীদিকে রানীদিরা নিয়ে গেছে নিজেদের কাছে | জোর করে | কারণ : ক্যান্সার | জরায়ুতে | জরায়ু সন্তানধারণ করেনি , মারণ রোগ ধারণ করেছে ঠিক !
    বাণীদি কি দিদির সংসারে থাকার পাত্রী ? কদিন বাদেই সে জোর করে চলে গেছে কোন আশ্রমে | সেখানে ওই অশক্ত শরীরে শ্রম দেয় | শ্রম না দিয়ে সে বিনিময়ে কিচ্ছু নেবে না ! রানীদির ছেলেমেয়ে বহুবার নিতে এসে ফিরে গেছে | সে নাকি আশ্রমের এত ছেলেমেয়ে ফেলে যেতেই পারবে না ! তার কত কাজ !
    দিনে দিনে শরীর ভাঙছে | প্রতিবার আসি | জিজ্ঞেস করি | খোঁজ নিই |

    এইবার ...এই প্রথমবার ..নিইনি | এত ভয় করেছিল জিজ্ঞেস করতে ! কী জানি ! আছে, না নেই !
  • Ishani | 116.51.26.158 | ১৩ জুন ২০১৬ ১৬:২১657858
  • ও: , দু:খিত | এই টইতে অন্য একটা নতুন লেখা পোস্ট করতে গিয়ে পুরনো লেখা রি-পোস্ট হল | মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি |
  • Ishani | 116.51.26.158 | ১৩ জুন ২০১৬ ১৬:৩৫657859
  • এই আজকের গল্পটাকে ঠিক "বাপসোহাগী" টইতে দেওয়া যায় কিনা , জানি না | তবে যে সন্তান বাবা এবং মায়ের বুকের ভেতরের জমাট অন্ধকারে আলোর রেখা হয়ে আসে, সে "সোহাগী" তো বটেই ! বাবা এবং মায়ের |

    প্রকৃত নাম উহ্যই থাক। এই মেয়েটিকে প্রথম দেখি দিল্লিতে। ভালো ছাত্রী ছিল। আর নিজের বিষয় ইলেকট্রনিক্স শুধু নয় , অজস্র অন্যান্য বইপত্র পড়ত। প্রথম আলাপ হওয়ার দিনে সে ছিল শীতের
    বিকেল। ছাব্বিশ বছর আগের কথা। আমি তখন সন্তানসম্ভবা। কাজ থেকে ফিরতাম চার্টার্ড বাসে করে। অনেকটা পথ। সেদিন বাস আসেনি। খানিকটা পথ অটো করে এসে লাজপত নগরে আমার
    স্বামীর অফিসের রিসেপশনে বসে অপেক্ষা করছি। একসঙ্গে বাকি পথটুকু ফিরব। বড্ড তাড়াতাড়ি অন্ধকার হয়ে যায় তো, ভয় ভয় করে অটো নিতে। আমার হাতে বিমল করের “বাছাই গল্প”। খুব মন
    দিয়ে পড়ছি, ছায়া পড়ল একটা। চোখ তুলে দেখি, তন্বী শ্যামা একটি মেয়ে। আমার থেকে সামান্য বড়। বইয়ের যে পাতা খোলা, তার ওপরে বইয়ের নাম, গল্পের নাম কিচ্ছু লেখা নেই। বইয়ের আসল
    মলাট পর্যন্ত নেই। আর সে তক্ষুনি এসে দাঁড়িয়েছে আমার বইয়ের উল্টোদিকে। খুব খুব অল্প সময়।
    একটু হেসে বলল, “আমি তোমার সঙ্গে আলাপ করতে এলাম। কী গল্প পড়ছ জানি। সুধাময়। “
    এই বলে কটা ছত্র ঝরঝর করে বলে দিল আমাকে। আমাদের আলাপ হল। সুধাময় মারফত।

    এরপর আমরা প্রায় কাছাকাছি সময়েই দিল্লি ছেড়ে ব্যাঙ্গালোরে চলে এলাম। বাড়িও নিলাম কাছাকাছি। তবে ওই আর কী। এখানে ওখানে পুজোয় বা কমন গেট টুগেদার হলে দেখা হত।
    অনুযোগও…বাড়িতে না যাওয়া নিয়ে। গল্প হত। সুধাময় তো আর একা নয়! কত সুধাময় আমাদের!
    আজ স্বীকার করতে বাধা নেই, আমার যেতে কেমন সঙ্কোচ হত ওদের বাড়ি। আমার মতোই ওরও দুটি ছেলে। কিন্তু দুজনেই স্প্যাসটিসিটির শিকার। বয়সের তফাত বছর চারেকের। ভাগ্য এত নির্মম!
    এরপরেও ওরা স্বামী স্ত্রী হাসিমুখে কাজকর্ম করে, আদর আপ্যায়ন লৌকিকতা করে। শুধু চোখে উঁকি দিয়ে যায় বিষাদের ম্লানিমা।
    দু-চারবার পুজোমন্ডপে এনেছে ছেলেদের। কিন্তু লোকের এত প্রশ্ন, এত কৌতূহল, এত সমবেদনা… যেন দম বন্ধ করা! তাই পরের দিকে আর আনত না। মেয়েটির মা ওদের কাছে থাকতেন ওর বাবা
    মারা যাবার পর। তাই দিদার জিম্মায় রেখে আসত।
    আমার কেমন দ্বিধা হত ছেলেদের কথা জিজ্ঞেস করতে। একটা কেমন অজানা ভয়ও। কী জানি, কেমন আছে ওরা!

    কেমন থাকত এই দম্পতি? বুকে নিরন্তর ভয়, উদ্বেগ আর বেদনার পাথর নিয়ে? আমি জানি না। আমার বোধের ভুবন ওদের চোখের তারায় এসে থমকে যেত বারেবারে।
    মাঝে বেশ কটা বছর দেখা হয়নি। এই সেবার পুজোয় দেখি ওর কোলে একটি ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে। আমি জানতে চাইনি। ও বলল , ” আমার…আমাদের মেয়ে…ঈশানী। “
    আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
    “আমাদের ছেলেদুটো চলে গেছে। আমাদের ছেড়ে। এক বছরের তফাতে। একজন চলে গেল প্রথমে। বুঝিনি, অন্যজনের কাছে তার দাদার উপস্থিতি ওই সীমিত বোধেও কত অসীম ছিল। দুজনে দুজনের
    সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল তো! তাই হয়ত! একে দত্তক নিয়েছি আমরা। আমাদের বুকের ভেতরটা এত শূন্য… আর এই ছোট্ট মেয়েটা…অনাথাশ্রমেও তো শূন্যতাই…বল! তাই। ওর নাম রেখেছি সৌদামিনী।
    কালো মেঘে ঢাকা আকাশে আলোর ঝিলিক। “

    চোখের ছায়া মিলিয়ে যাচ্ছিল ওর। রোদ্দুর উঠছিল। একটু একটু করে।
  • sosen | 177.96.49.239 | ১৩ জুন ২০১৬ ২০:২৩657860
  • সুন্দর লেখা। কষ্টের, কিন্তু সুন্দর।
  • সে | 198.155.168.109 | ১৩ জুন ২০১৬ ২০:২৮657861
  • ঈশাণীদি এবার মায়েদের জন্য টই খোলো।
  • Ishani | 116.51.26.158 | ১৩ জুন ২০১৬ ২২:০৮657862
  • বেশ তো ! ক'দিন পরে না হয় !
  • Byaang | 132.172.16.152 | ১৪ জুন ২০১৬ ০৮:৩৮657864
  • ঈশানীর লেখা পড়তে ভালো লাগে। মনখারাপও হয়। আরেকটু বেশি লেখা যায় না?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন