এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • টাইম মেশিনে চড়ে

    Tan
    অন্যান্য | ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ৪৮৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • tan | 131.95.121.127 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২০:২২671640
  • প্রোফেসর শঙ্কু যে টাইম মেশিনটা লুইজি রন্ডির কাছ থেকে কনফিসকেট করে এনেছিলেন মানে ওখানের পুলিশ রন্ডি জেলে যাবার পরে শংকুকেই যেটা দিয়ে দিয়ে দেয়,সেটায় চড়ে অতীত ভ্রমণে যাবো বলে আমি ঋতম্ভরা শান্ডিল্য সেজে শংকুর শিষ্যা হয়ে যাই।
    ওনার কোনো ইয়ে ছিলো না মানে সন্দেহ ছিলো না,আমি অবশ্য খুব ভালো করেই ওনার কাছে বিজ্ঞানশিক্ষা করছিলাম,একেবারেই সব প্রিকন্সিভড নোশন ত্যাগ করে মুক্তচিত্তে কাজ করছিলাম,উনি আমার ঋ বলে ডাকতেন,সুবিধাও হতো।একাক্ষরী ডাক! ""প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া"" এই তিন পথের যেকোনো একটায় কাজ করবো ভেবেছিলাম তবে আমার প্রশ্ন বেশী হয়ে যেতে পারে তাতে উনি ক্ষেপে যেতে পারেন,এই ভয়ে তিনের কম্বিনেশান বানিয়ে কাজ করতাম।উনি ভালোমনেই নিয়েছিলেন।
    বেশ কবছর কাজ করার পরে যখন ওনার মনটা নরম হয়ে এসেছে,তখন সুযোগ বুঝে বলেই ফেললাম যে যাজ্ঞবল্ক্যের সঙ্গে দেখা করতে চাই(অ্যাই কেউ আবার ভেবে বসবেন না যে ঐ পলিগ্যামিস্টকে আমি অন্য কিছু প্রস্তাব প্রোপোজ করবো,নেহাৎ প্রশ্ন করতে যেতে চাইছিলাম),টাইম মেশিনে যাবো।
    প্রফেসর শংকু রাজী হয়ে আমায় দুখানা হেডফোন আর দুখানা মাইক্রোফোন দিয়ে দিলেন।ওতে ওনার নবতম আবিষ্কার ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সফর্মেশন ডিভাইস সংক্ষেপে LTD লাগানো আছে চিপে ভরে।নিজে একটা হেডফোন পরে একটা মাইক্রোফোন কামড়ে ধরে গিয়ে নেমেই নাকি যাজ্ঞবল্ক্যকে চেপে ধরে ওনার কানে অন্য হেডফোনটা লাগিয়ে হাতে মাইক্রো ধরিয়ে দিতে হবে,নইলে উনি আমার কথা কিছুই বুঝবেন না আর আমিও ওনার কথা কিছুই বুঝবো না।
    তো সেইমতো গিয়ে সীটে বসে পড়লাম। উনি চালাতে শুরু করলেন ক®¾ট্রাল প্যানেলে গিয়ে। গুমগুমগুমাগুম ঝিরঝির কিশকিশ ঝুম্‌ ম্‌ ম্‌ শব্দ হতে লাগতো, সঙ্গে লালনীল কমলা সবুজ আলোর নানা নাচানাচি। আমার একটু একটু ভয় যে করেনি তা নয়, যদি সময়ের গোল ফুটা দিয়ে হারিয়েই যাই আর না ফিরতে পারি? তবে সে বেশীক্ষণ না, খানিকক্ষণের মধ্যেই চেতনা হারিয়ে ফেললাম।
  • tan | 131.95.121.127 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০০:১৭671651
  • এইভাবে চেপে টেপে ধরে কানে হেডফোন লাগানোর মতন ভায়োলেন্স আমার ব্যক্তিগতভাবে একেবারে না পসন্দ। অথচ কোনো উপায় নেই,আমার এই ইটিকিটিমার্কা কিচিমিচি শব্দ উনি বুঝতে পারবেন না আর ওনার অং বহং অবঘট্ট মার্কা সমস্কিতো আমি বিন্দুবিসর্গ বুঝবো না,মাঝখান থেকে এই যাওয়া আসাই সার হবে।ইদিকে এতখানি বিদ্যুৎ খরচ! তার উপরে আনসার্টেনটি আছে,হয়তো গিয়ে পড়লাম আর্কিমিডিসের সময়ে ও দেশে।তখন? গ্রীক ভাষা না মার্শিয়ান ভাষা তফাৎ করতেই তো পারবো না!
    আমি প্রফেসরকে বল্লাম ঐ ছ ফুটিয়া ইয়োগা করা লোককে আমি হেডফোন লাগাবো কিকরে? উনি লাগাতে দেবেনই বা কেন?
    তাই শংকু আমার সঙ্গে ওনার নবতম লোহার রোবট অয়স্কান্তকে দিয়েছেন। অয়স্কান্ত সাড়ে ছ ফুট লম্বা, সে প্রথমে নেমে আগে হেডফোন মাইক্রোফোন সেট করে দিলে পরে আমার নামতে হবে,যদি বেগতিক দেখি তাইলে অয়স্কান্তকে বিকল করে দিয়ে সবুজকমলা হাফাহাফি করা এই সুইচটা টিপে দিয়ে আমার ফিরে আসতে হবে।
    এও আমার পছন্দ ছিলো না, এমন শান্ত শিষ্ট চকচকে রোবট অয়স্কান্তকে ফেলে আসতে হবে? ইয়ার্কি নাকি? কি ভালো ছেলে অয়স! অল্প বাংলাও বলতে পারে! বলে,"নোমোস কার। ক্যামোন আছেন?" তার উপরে ভালো চা বানায়, ভালো কফি বানায়, যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ করতে পারে!
    যাই হোক,আশা করেছি কোনো ঝামেলা হবে না,তাই সবকিছু নিয়ে চেপে বসেছি।

  • Pallab | 59.93.243.101 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০১:০৯671662
  • এবার কি এক্টু উঠবেন দিদিভাই! গল্পের টিনটা চ্যারের নিচেয় রাখা আচে -- এট্টু বার করে দিতে হবে, এক্কুনি!!!!

  • tan | 131.95.121.127 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২১:১৪671673
  • অ্যাই ছোঁড়া পল্লব,
    বলি গল্পের টিন কি অ্যাঁ? বল গল্পের চীনাংশুক!
  • Pallab | 59.93.247.76 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২১:৪৫671684
  • আরেকটু কিলিয়ার হয়না দি-ভাই? মানে, এটি কিসের চীনাংশুক? এরন্ডের নাকি তুঁতের?????
  • dd | 202.122.18.241 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২৩:০১671695
  • বৌমা
    এই উল্লিখিত বালকটি ই কি ঈশেন ? আমাদের ঈশেন ?

    যদি হয়, তাইলে তোমার প্রচ্ছন্ন ব্যাংগ রসিকতা আমার বিলকুল নাপসন্দ। তুমি দেখাচ্ছো এক চা সর্বস্ব নিদ্রাবিলাসী দায়িত্বজ্ঞানহীন অর্বাচীন বালককে।

    আর আমি দেখছি ডেলিগেশনে পারদর্শী, সমাজ সচেতন,নারী মুক্তি সমর্থক,দৃঢ় প্রত্যয়ী, কোনো বিশ্রী নেশামুক্ত দুরদর্শী এক ঝলমলে সি ই ও। এট্টু ভাবুক ও।
  • dd | 202.122.18.241 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২৩:০২671706
  • না না
    এটা যাবে " বেড়ানো মজার স্মৃতিতে"
  • Pallab | 59.93.246.155 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০০:০৭671717
  • একীইইইই taaan দ্যাকো কি কান্ড!!! তোমার টাইমমেশিন টই-মেশিন হয়ে গিয়ে লোকজনকে এক টই থেকে আরেক টইয়ে এনে ফেলছে! ক্কী ক্কান্ড!!!!!
  • tan | 131.95.121.127 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৩:৫৯671728
  • ঝিমঝিম শব্দটা মিলিয়ে গেছিলো মানে আমিই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।একসময় আবার শব্দ আলো ইত্যাদি ফিরে এলো,মাথা তুলে খাড়া হয়ে দেখি ভারী সুন্দর একটি নদীতীর,পলিউশন হীন ঝকঝকে নীল শরৎ আকাশ,বিরাট একটি বটগাছ নদীরে তীরে,জলের এত কাছে যে নামিয়ে দেওয়া ঝুরির অনেকগুলি জল ছুঁয়ে লকলক করছে, সূর্যোদয় হয়নি,তবে গোলাপী ঊষার আভা পুবের মেঘে।
    এক ভদ্রলোক মন্ত্র পড়তে পড়তে নদী থেকে স্নান করে উঠে আসছেন, বুঝতে পারছি না কী মন্ত্র,সম্ভবত ঊষার সম্পর্কিত কোনো স্তোত্র।
    অমা, সদ্যস্নাত সেই ভদ্রলোকের কাছে নেমে গিয়ে দেখি অয়স্কান্ত হাতজোড় করে হেসে বলছে,"নোমোসকার। ক্যামোন আছেন?"
  • Srijukta Babu Mahishasur Barujje | 59.93.214.41 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১০:৩৭671641
  • তাপ্পর tan তাপ্পর??
  • tan | 131.95.121.127 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৪:০৮671642
  • দেখতে দেখতে চারিদিক আলো হয়ে উঠলো,সূর্য উঠে পড়েছে,আকাশটাও ঝকঝকে নীল একেবারে। আমার কেন জানি দুর্গাপূজা মনে পড়ছে, কিন্তু আমরা তো বহু অতীতে চলে এসেছি তখন দুর্গাপূজা ব্যাপারটাই হয়তো জানা ছিলো না মোটে!
    ঊষাস্তোত্রপাঠরত ঋষিমশাই হঠাৎ সক্কালবেলা এমন এক কথাবলা লৌহমানবের সামনে পড়ে খুবই বোমকে গেছিলেন, কিন্তু খুব পোড়খাওয়া লোক,ঘাবড়েছেন যে এটা একেবারেই প্রকাশ করেন নাই। অয়স্কান্ত একগাল হেসে ওনাকে কানে ইয়ারফোন পরিয়ে হাতে মাইক্রোফোন ধরিয়ে ভালো করে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে মাইক্রোটা মুখের সামনে ধরে কথা বলতে হবে আর কানের জিনিসটা যেন খবরদার খুলে না ফেলেন!
    অবস্থা অনুকূলে বুঝে আমিও হেডফোন মাইক্রোফোন সজ্জিত হয়ে নেমে পড়লাম,এগিয়ে ওনাকে বাও করে বল্লাম,"নমস্কার। আমি ঋ(এসব শংকুর অডিভিডিতে উঠছে, তাই ঋ না বলে তো উপায় নেই!)।আপনার সময় থেকে প্রায় তিন সহস্র বৎসর ভবিষ্যৎ থেকে আসছি। অনুগ্রহ করে জানাবেন আমি কার সঙ্গে পরিচিত হবার সৌভাগ্য লাভ করছি?"
    ভদ্রলোক প্রথমে অত্যন্ত অবাক হয়ে গেলেন,তারপরে রেগে গেলেন, নিজের নামটাম কিচ্ছু না বলে বললেন,""আপনি তিন হাজার বছর ভবিষ্যৎ থেকে আসছেন? ইয়ার্কি মারার আর জায়গা পাননি, না?""
  • tan | 131.95.121.127 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৪:১৮671643
  • আমি আর অয়স্কান্ত দুজনে মিলে অনেক চেষ্টা করতে লাগলাম ওনার বিশ্বাস উৎপাদন করতে। অয়স্কান্ত নিজে তো জলজ্যান্ত একটি প্রমাণ,যন্ত্র-মানুষ,পুরোপুরি যন্ত্র নয় অথচ যন্ত্র। ভবিষ্যতের না হলে কিকরে এ জিনিস তৈরী হবে? এ কি অতীতের লোকে বানাতে জানতো? আরে রোবোটিকস তো সেদিনের ব্যাপার,আমাদের পক্ষেও নতুন!
    কিন্তু ভবী ভোলবার নয়, ঋষি টলবার নন। বলেন ""এসব ভেল্কিবাজী আমরাও জানি, রামায়ণে মহাভারতে এইধরনের যন্ত্রমানবের বর্ণনা অনেক আছে।""
    আমাদের গলদঘর্ম অবস্থা, কিকরে বোঝাই ঋষিকে,টাইম মেশিন ঝোপের আড়ালে,সে দেখানো যাবে না,উনি যদি ক্ষেপে টেপে গিয়ে ভেঙেফেঙে দেন! তাইলে সময়ের মধ্যে আটকে পড়ে যাচ্ছেতাই কান্ড হবে,তা আমি বা অয়স্কান্ত কেউই চাই না।
    ভাগ্যিস অয়স্কান্ত কোনো ভাষাই বিশেষ ভালো জানেনা, নইলে ভেল্কিবাজী শুনে খুব দু:খিত হতো।
    হঠাৎ মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেলো, মনে পড়ে গেলো রাজা রেবত ও রাজকন্যা রেবতীর উপাখ্যান,এনারা টাইম ট্রাভেল করেছিলেন। এইবারে বাপধন ঋষি,তুমি যাবে কোথা? তোমার অস্ত্রেই তোমায় করিব কাত!
  • tan | 131.95.121.127 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৭:১০671644
  • মনে পড়ামাত্র বীরবিক্রমে আমি রেবতী উপাখ্যান শুরু করে দিলাম।শুনতে শুনতে ঋষির কোঁচকানো ভুরু আস্তে আস্তে আলগা হয়ে আসছিলো,শেষে টুকরো হাসিও ফুটলো মুখে।
    গল্পটা হলো এইরকম:
    সুদৃঢ় পুরী কুশস্থলীর রাজা রেবতের একটি সুন্দরী মিষ্টি কন্যে ছিলেন,নাম রেবতী। এই কন্যা বড়ো হলে রাজা ভারী চিন্তায় পড়েছিলেন কার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন। অনেক চিন্তাভাবনা করে রাজা মেয়েকে নিয়ে একাদিন সোজা পিতামহ ব্রহ্মার সঙ্গে দেখা করতে চলে গেলেন,গিয়ে দেখেন ব্রহ্মলোকে ঝলমলে সভায় হাহা আর হুহু বলে দুই গন্ধর্ব অতি সুন্দর গান গাইছে। গানের মধ্যে তো আর ইন্টারাপ্ট করে বিয়ের কনসাল্টেশান চাওয়া যায় না,তাই রাজা ও রাজকন্যা আসন গ্রহণ করে গান শুনতে শুনতে মুগ্‌ধ হয়ে বুঁদ হয়ে গেলেন,সে অতি সুন্দর গান।গানটান শেষ হয়ে গেলে তাদের মনে হলো আহা এত সুন্দর গান এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো!
    এইবারে পিতামহ ব্রহ্মার সঙ্গে রেবতীর বিয়ে নিয়ে পরামর্শ চাইতেই সেখানে সকলে হেসে ফেললেন,পিতামহ বললেন এই ব্রহ্মলোকে আর ঐ পৃথিবীতে সময়ের গতি আলাদা। যতক্ষণ রেবত আর রেবতী এখানে গান শুনেছেন পৃথিবীতে ততক্ষণে বহুযুগ অতিক্রান্ত,ফিরে গেলে তারা ভবিষ্যতের দুনিয়ায় গিয়ে পড়বেন।সেখানে মানুষের মাপ পজ্জন্ত বদলে গেছে,আগে ছিলো একুশ হাত লম্বা,এখন হয়েছে সাড়ে তিন হাত!
    শুনেটুনে রাজা রেবত মাথায় হাত,এবারে কি হবে? একুশ হাত রেবতীর জন্য কোথায় উনি পাত্র পাবেন সাড়ে তিন হাত মানুষের দুনিয়ায়? কি বিপদ!
    ফিরে এলেন দুজনে নিজরাজ্যে,কুশস্থলী তখন দ্বারকা, সেখানে পাওয়া গেলো বলরামকে।বলরাম হলধর, তিনি রেবতীকে বেঁটে বানিয়ে সাড়ে তিন হাত করে বিয়ে করে ফেললেন আর রাজ রেবত তপিস্যে করতে চলে গেলেন।ভালোয় ভালোয় গল্প শেষ হলো।
    গল্পটা রুদ্ধশ্বাসে শুনিয়ে বললাম ""এখন বলুন আপনাদের কল্পনায় যদি এরকম অতীতের মানুষ ভবিষ্যতে চলে যেতে পারে তাহলে উল্টোবাগে গিয়ে কেন আমরা অতীতে আসতে পারবো না ভবিষ্যত থেকে? একটা যদি আপনার কল্পনায় হলেও মানতে পারেন, তাহলে অন্যটা কেন নয়? কল্পনাতেই তো প্রথমে আসে ঘটনা,পরে না সেটা বাস্তবে তৈরী হয়! আপনি এতবড়ো দ্রষ্টা ঋষি, আপনাকে আর কি বলবো বলুন! ""
    উনি হেসে ফেললেন,""বুঝেছি।ফাজিল মেয়ে কোথাকার! আর তেল দিতে হবে না। চলো আমার আশ্রমে নেমন্তন্ন। চলো। তোমার লৌহমানবটিকেও সঙ্গে নাও।এই সেরেছে তুমি বলে ফেলেছি,মাফ করুন।""
    ""আরে না না, "তুমি" ই বলুন।তুই ও বলতে পারেন।আমি কালের হিসাবে তো অনেক ছোটো।কিন্তু আপনার পরিচয় যে দিলেন না! আপনি কে? ""
  • tan | 131.95.121.127 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০০:১৮671645
  • উনি দাঁড়িয়ে পড়ে খানিকক্ষণ দাড়ি চুমড়িয়ে বললেন,"এই তো মুশকিল!আমি কে! এইটা বলা খুব কঠিন।শাস্ত্রে তো এই নিয়েই হুলুস্থূলু কান্ড।আত্মানং বিদ্ধি। নিজেকে জানো,জানো কে তুমি।আরে জানো বললেই কি জানা যায়! এতই সোজা।""
    আমি ফাঁপড়ে পড়ে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে ফেললাম।লোকটা ইয়ার্কি করছে নাকি? যদি করে থাকে তাহলে খুব দক্ষ বলতে হবে, মুখ একেবারে সিরিয়াস টাইপের গম্ভীর!
    কিন্তু দাঁড়িগোঁফের জঙ্গলের ফাঁকে অল্প একটু হাসি যেন দেখতে পেলাম।প্রাণে সাহস এনে বললম,""ঠিক আছে আপনি কে তা নাই বা জানলাম,শুধু বলুন আপনার নাম কি? লোকে আপনাকে কি নামে চেনে?""
    উনি এবারে হেসে ফেললেন,বললেন ""নামও তো অনেক।আমাদের সময়ে নিজের নাম ছাড়াও পিতামাতার নামের সঙ্গে ষ্ণিক গোছের প্রত্যয় জুড়ে ছেলেমেয়েদের অনেক নাম হতো,জানো তো! মহাভারতে দেখো নি? গঙ্গাপুত্র গাঙ্গেয় শান্তনুপুত্র শান্তনব,কুন্তীপুত্র কৌন্তেয় পৃথাপুত্র পার্থ ...""
    আমি যদিও থতমত খেয়ে আছি কিন্তু প্রকাশ করিনি,লোকটা যদি লেগপুলই করতে চায় তবে তৈরী আছি আমিও।হুঁ!
    শান্তগলায় বললাম,""একটা দুটো নাম যদি দয়া করে বলেন,দেখি যদি বাই চান্স চিনে ফেলতে পারি।""
    ""বাই চান্স কেন? এত হিসেব নিকেশ করে অতীতভ্রমণে এসেছ, স্থানকালপাত্র ঠিকঠাক করে কি আর আসো নি? তাহলে এই প্রশ্নের মানেই বা কি? নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করছো কি?""
    ও হরি! এ ভাবছে আমি জানি, ঢং করছি!
    খুলে বললাম,""দেখুন আমাদের এই প্রোজেক্ট এখনো বলতে গেলে পরীক্ষামূলক স্তরে। মোটামুটি একটা লক্ষ্য স্থির করে প্রোজেক্টাইল ছুঁড়ে দেওয়া হয়,যেখানে গিয়ে পড়ে,কাছাকাছি হলেও অনেক।তাছাড়া ফান্ডামেন্টাল আনসার্টেনটি ও তো আছে! সেটা তো শত টেকনিকাল উন্নতিতেও থাকবে।তাই জিজ্ঞেস করছি কোথায় কার কাছে এসে পড়লাম।""
    খানিকক্ষণ আমার মুখের দিকে চেয়ে থেকে উনি আস্তে আস্তে বললেন,""আমার একটা নাম দৈবরাতি,বাবার নাম দেবরাত ছিলো বলে।""
    আমি আত্মবিস্তৃত হয়ে দুই হাতের মুঠা আকাশে ছুঁড়ে দিয়ে "ইয়া আ আ হু" বলে লাফিয়ে উঠলাম মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি। শংকুর বুলস আই হিট করেছেন!
    আমার মাইক্রোফোন ছিটকে গেছে,হেডফোন খুলে পড়ে গেছে,ঋষি ভদ্রলোক দ্রুতগতিতে সমস্কিতে কি বলছেন বিন্দুবিসর্গ বুঝছি না,আমার ইয়াহু শব্দটা কি অনুবাদে কি বস্তু হয়ে ঋষির কানে গেছে খোদায় মালুম, দেখলাম অয়স্কান্ত তাড়াতাড়ি যন্ত্রপাতি কুড়িয়ে আমার কানে হাতে সেট করে দিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে বলছে,"নোমোসকার। ক্যামন আছেন?"" বেচারার এই শব্দ কয়টি ছাড়া সম্বল নেই,এদিকে মানুষের অনুভূতির অনেকটাই আছে!

  • Pallab | 59.93.240.240 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৩:০০671646
  • তাপ্পর?
  • tan | 131.95.121.127 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৪:০৪671647
  • ধাতস্থ হয়ে শুনি ঋষি দৈবরাতি বলছেন, ""হঠাৎ এত উত্তেজিত কেন? এইরকম আকস্মিক উত্তেজনা ভালো নয়, এরকম তিড়িংবিড়িং লাফও ভালো নয়। এতে গুরুমস্তিষ্কে ও হৃৎপিন্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে, আঘাত লাগতে পারে। এগুলো খুব ফাইন টিউনিং করে রাখা যন্ত্রপাতি, বিগড়ালে সাংঘাতিক ব্যাপার! ""
    আমি অপ্রস্তুত খানিকটা, অবস্থা সামাল দিতে তাড়াতাড়ি বললাম, ""মাফ করুন, আমি একটু বেশী উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলাম।আসলে দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তির ও উদ্বেগের পরে যখন প্রত্যাশিত গন্তব্যটি দেখা দেয়, সেখানে নিজেকে অবিষ্কার করে চিরকালই বিস্ময়ে আমি উদ্বেল হয়ে যাই। প্রথমে তো বিশ্বাসই হয় না নিজের চোখকানকে!""
    ঋষি হাসলেন, বললেন, "" একেবারেই অসিদ্ধ দেখছি। কাঁচা মন। পোড় খায় নি। আস্তে আস্তে হবে,বহুদিনের ব্যাপার। ঠিক আছে, এবারে তোমরা চলো আমার আশ্রমে। আজকের দিনটা অতিথি থাকো। তোমার লৌহ মানবটি তো দেখছি খুবই ভালো ঋ! সদাতৎপর আর হুঁশিয়ার!""
    সিরিয়াস হয়ে খানিকটা আরোপিত দু:খী-দু:খী গভীর গলায় বললাম, ""প্লীজ ওকে লৌহমানব বলবেন না স্যর, ওর নাম অয়স্কান্ত। মানব অনুভূতির অনেকগুলিই ওর আছে। লৌহমানব বললে ওর ভারী অভিমান হয়। অয়স্কান্ত শুনলে ও খুশী হয়ে ওঠে।""
    ""বা: সুন্দর নাম। অয়স্কান্ত। কে দিয়েছেন এই নাম? ""
    ""দিয়েছেন ওর নির্মাতা, ওর স্রষ্টা।তিনি আমার ও শিক্ষক। এই টাইম মেশিন ও অতীত ভ্রমণের প্রজেক্ট সবই তাঁর ব্রেইন চাইল্ড। এমনকি এই যে আমরা কথা বলছি যে যার নিজের ভাষয় অথচ কমুনিকেশনে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না সেই ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রানস্ফর্মেশন ডিভাইসও তাঁরই আবিষ্কার।"" এখানেও গলা আরোপিত সম্ভ্রমে ভারী করতে হলো যদিও শংকুকে আমি সত্যি সত্যিই শ্রদ্ধা করি। কিন্তু শ্রদ্ধা গলার স্বরে ফোটানো সোজা ব্যাপার না,ওটা স্পন্টেনিয়াসলি হয় না।
    আস্তে আস্তে আমরা তিনজন ওনার অশ্রমের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। চারি দিকে গাছগাছলি শরতের সোনার আলোয় ছলছল করছে।
    একঝাঁক ছোটো পাখি উড়ে আমাদের সামনে দিয়ে ডানপাশের আমবাগানে চলে গেলো। তিতির। মনে হলো ঋষির ভারী সাধের পাখী।উনি ওদের ওড়ার দিকে মুগ্‌ধ বালকের মতন তাকিয়ে ছিলেন। আমি দীর্ঘশ্বাস গোপণ করলাম একটা। এ পাখী আমাদের সময়ে লুপ্ত হয়ে গেছে। এখান থেকে কয়েক জোড়া টাইম মেশিনে তুলে নিয়ে যাওয়া কি উচিৎ না অনুচিত?
    কিন্তু এই দূষনহীন হাওয়া, ঐ নীল ধূলিহীন আকাশ,ঐ পবিত্র জলধারা! এসব তো নেওয়া যাবে না! আমরা যে যুগ যুগ ধরে বিষিয়েছি সবকিছু! অর্বাচীন অহংকারী আমরা!সাধনাহীন সিদ্ধির লোভে!
    ঋষি কিছু একটা অনুভব করলেন, আমার দিকে ফিরে বললেন,"" কি হলো?""
    আমি দ্রুত মাথা নেড়ে বললাম,""না কিছু হয় নি।আমাদের সময়ের পৃথিবী অনেক অন্যরকম কিনা,তাই খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করছি, মাঝে মাঝে বেমানান হচ্ছে। ঠিক হয়ে যাবে, ভাববেন না।""
  • Pallab | 59.93.201.165 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১২:১৪671648
  • তাপ্পর?
  • tan | 131.95.121.127 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২১:৪১671649
  • আশ্রমে ভারী শান্ত সুন্দর পরিবেশ। নিকোনো উঠানগুলি ঝকঝক করছে, মাঝে অগ্নিগৃহ আর তাকে ঘিরে কন্সেϾট্রক রিঙের আকারে নানা আবাসগৃহ। একপাশে বিরাট গোশালা।
    ঋষির শিষ্যরা নানা কাজে ব্যস্ত, আশ্রমে অদ্ভুত অতিথি আগমন সংবাদ মুহূর্তে ছড়িয়ে গেলো দাবানল হেন। অভ্যর্থনা করতে চলে এলেন ঋষির দুইজন স্ত্রী, দুজনেই ভারী সুন্দরী, তপ্তকাঞ্চনবর্ণা, ঈষৎ পিঙ্গলকেশা দীঘল তণ্বী রমণী। একজনের চুল জটা করে মাথার উপরে তুলে বাঁধা, বাঁধুনি ঘিরে রুদ্রাক্ষের মালা, অন্য কোনো অলঙ্কার বিশেষ নেই, পরণের কাপড়ের উপরে মৌঞ্জী তৃণের মেখলা ধারণ করে আছেন তিনি। তীক্ষ্ণ জ্বলজ্বলে বুদ্ধিদীপ্ত এঁর মুখ, সম্ভবত ইনিই সেই ব্রহ্মবাদিনী স্ত্রী। অন্যজন ও সুন্দরী তবে এত তীব্রদীপ্তি নন, শান্ত মিষ্টিমুখ মা-মা চেহারা। এঁর হাত দুটি ভারী সুন্দর, আঙুলগুলি মায়াময়।ইনি যূথীফুলের স্থূল একটি শুভ্র মালা চুলের উপরে দিয়েছেন,খুব ভালো লাগছে।
    ঋষিপত্নী দুজনকেই ভারী ভালো লাগলো আমার।
    অল্প ঝুঁকে পড়ে অভিবাদন জানালাম। কিন্তু এনাদের তো হেডফোন নেই, তাই সব কথা ঋষি নিজে অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিলেন।
  • Pallab | 59.93.201.29 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২২:২১671650
  • তাপ্পর !
  • tan | 131.95.121.127 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২৩:০১671652
  • তাপ্পর তাপ্পর করবে না,আরে ছুটি কাটাতে গেছি, এত তাপ্পর তপ্পর কল্লে চলে!
  • Pallab | 59.93.201.29 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২৩:০৫671653
  • ভ্যাঁ-য়্যাঁ-য়্যাঁ-য়্যাঁ
    গ-প্প-অ-অ-অ!
    তাপ্পর-????
  • tan | 131.95.121.127 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২৩:০৭671654
  • গপ্পো পরে হবে।
  • tan | 131.95.121.127 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৬:৫১671655
  • এখন আবার বাকী কিছুটা।

    দধি, কদমা, খই, চিপিটক, নারিকেল কোরা, খেজুর, মিষ্টান্নের দ্বারা প্রাতরাশ হলো। অতি চমৎকার সেসব খাবার।অয়স্কান্ত অবশ্য সেসব খেতে পারলো না, সে চুপ করে একপাশে বসে বসে আমাদের বিচিত্র কার্যকলাপ দেখতে লাগলো।
    এর পর ঋষি আমাদের ওনার অগ্নিগৃহ, গ্রন্থাগার, উদ্যান এইসব ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন। সবই খুব সুন্দর। (এইসব বানাতো কারা? ভালো ভালো স্থপতিও ছিলো এত? )
    উদ্যানে তিনি এসে সবুজ ঘাসের খোলা জমিতে দাঁড়াতেই চার পাঁচটা সেই সাদা তিতির উড়ে এলো। উনি ওঁর কাপড়ের খুট থেকে অনেক খই বার করে ছড়িয়ে দিতে লাগলেন,তিতিরেরা তুরতুর করে ঘুরে ঘুরে টুকিয়ে টুকিয়ে খাচ্ছিলো। একের পর এক আশেপাশের গাছপালা ঝোপঝাড় থেকে আরো আরো অনেক তিতির উড়ে আসতে লাগলো।
    আশ্বিনের এই সোনার আলোয়, নীল আকাশের নীচে এই প্রাচীন ঋষিকে যুবক হিসাবে দেখতে দেখতে আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছিলো, সত্যি দেখছি, নাকি স্বপ্নে দেখছি? এই সময়ভ্রমণের আগে বহুবার এই নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি, এটা সেইরকমই একটা স্বপ্ন নয় তো!
    দৈবরাতি আমার দিকে ফিরে হেসে বললেন,""ঋ, তোমাদের সময়ে এমন সব অদ্ভুত অদ্ভুত নাম হয় নাকি? একেক্‌জনের নাম ঋ বা ৯ বা এ বা ঐ? একাক্ষরী সব নাম?""
    আমি ও হেসে বললাম,""তা নয়, সবার নাম এইরকম এত ছোটো না। তবে বড়ো নাম হলেই সবাই শর্ট করে ফেলে। এই যেমন ধরুন কারু নাম উইলিয়াম জেফারসন, অমনি সবাই তাকে বিল বলে ডাকতে থাকে। ধরুন কারুর নাম প্রজ্ঞাপারমিতা, তো তাকে সবাই প্র ডাকতে থাকে। এইসব নামগুলো আজকাল ততটা গুরুত্বের নয়, প্রত্যেকের জন্য সংখ্যা আছে, সব নথিপত্রে সেই সংখ্যাটাই আসল। ""
    ঋষির ভুরু আবার কুঁচকে গেছে, বলছেন,""নাম কিছু না, সকলের উপরে সংখ্যার ছাপ মেরে দিয়েছে! কিরকম সেই সমাজ? সেখানে তোমাদের বিশ্বাস সংস্কৃতি মানুষে মানুষে সম্পর্ক এসব কিকরম? বিদ্যাবুদ্ধি বা যন্ত্রপাতিকৌশল তো উন্নত বোঝা যাচ্ছে, নইলে আর সময়ভ্রমণ করছো কিকরে।""
    ""সেতো বুঝিয়ে বলতে পারবো না, ব্যাপারটা খুব জটিল। আপনার এই সময়ের সমাজের তুলনায় অনেক বদলে গেছে সব কিছু।তবে এত দূর থেকে সবই কেমন অলীক লাগছে। অনেক ঘুরেছি,এখানে এই ছায়ায় একটু বসি, হ্যাঁ ঋষি?""
    আমি ওঁর অনুমতি না নিয়েই বসে পড়লাম আম গাছের ছায়ায়, কোথা থেকে একটা দোয়েল ডেকে উঠলো টী টী টী হুট টী টী হুট! পথ হারানো জঙ্গলে হঠাৎ চেনা চিহ্ন দেখতে পেলে মনটা যেমন আশায় উজল হয়ে ওঠে,তেমনি দোয়েলের এই চেনা স্রেলা শবদগুলো আমায় সাহস ফিরিয়ে দিলো।আমি বললাম,""ঋষি, একটুর জন্য আমি আপনাদের ঐ বিরাট বিখ্যাত সভাটি মিস করে গেলাম, জনকের বহুদক্ষিণ যজ্ঞ। আসলে অনেক ওয়ার্ল্ড লাইন অনুসরণ করার মতন ভালো টাইম মেশিন তো এখনো তৈরী হয় নি কিনা! ওখানে গেলে আপনাদের সবাইকে দেখতে পেতাম, আপনাদের বিখ্যাত ঝগড়া যা দিয়ে গাব্দা বই লেখা হয়ে গেলো তা শুনতে পেতাম আর বোনাস হিসাবে দেখতাম রাজাকেও।""আমি হাসতে থাকলাম, অস্থির ভাবটা কেটে যাচ্ছিলো।
  • Pallab | 59.93.241.222 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০২:১৭671656
  • তাপ্পর?
  • tan | 131.95.121.127 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৭:৪৭671657
  • ঋষি দৈবরাতি কৃত্রিম রাগে চোখ পাকিয়ে কইলেন,""এ ঈ ঈ ঈ ঈ ঈ ! কি হচ্ছে এসব! ঝগড়া করেছি নাকি আমরা! খুব গুরুত্বপূর্ণ তর্কবিতর্ক হচ্ছিলো! মোটেই ঝগড়া নয়।""
    ""ওরে বাবা,ঝগড়া নয়! আপনি তো শুনেছি গুন্ডার মতন হুমকীও দিয়েছিলেন! মুন্ডু খসিয়ে দেবেন বলে কাকে যেন।""
    একসঙ্গে দুজনেই এতজোরে হেসে উঠলাম যে সাদা তিতিরগুলি সব ফটফট করে উড়ে গেলো আকাশে।
    আমি বললাম,""ঋষি, আপনি যখন বললেন যে এই সোনাবাঁধানো শিঙ-ওলা হাজারটা গরু আপনি আপনার আশ্রমে লাগবে বলে নিয়ে নিয়েছেন, তখন শুনে অন্যরা ক্ষেপে গিয়ে বললো না আরে, লোকটা বলে কি! ওর আশ্রমে গরু লাগবে আর আমাদের আশ্রমে ছাগল দিয়েই কাজ চলে যাবে নাকি! বললো না এরকম!"" আমি হাসি চাপতে পারছি না, ফুরফুর করে ঢাকনি খোলা সোডার বোতলের মতন বেরিয়ে আসছে, উনি আমার মুখের দিকে থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইলেন তারপরে উনিও হাসতে হাসতে এসে পাশে বসে পড়লেন। আশ্বিনের রোদ্দুর চড়া হয়ে উঠেছে এতক্ষণে।
    অদ্ভুত একটা ভাবনা হঠাৎ মনে এলো, যদি টাইম মেশিন এখানেই রয়ে যায়,আমি আর অয়স্কান্ত না ফিরি আর? রোদেজলে রাতেদিনে মরচে ধরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে ও মেশিন একদিন ধুলায় মিশে যায়? আমাদের আইডেনটিটি তাহলে কিহবে? ভবিষ্যতের দুনিয়ার দুখানা এনটিটি তিনহাজার বছর অতীতের দুনিয়ায় গিয়ে জীবন কাটালো? কিহবে যদি আমরা অতীতে এমন কোনো পরিবর্তন করে দিই যা কিনা ভবিষ্যতের দুনিয়া পাল্টে দেবে? নাহ,ভাবতে পারছি না,ভাবতে ইচ্ছে করছে না, মাথাব্যথা করছে।
    ঋষি জিগালেন,""কি হলো? হঠাৎ কিসের ভাবনায় পড়ে কথা থামিয়ে দিলে?""
    বরুণমন্ত্রটা মনে পড়তেই শিউরে উঠে বললাম,""ঋষি সত্যিই আপনাদের সময়ে মানুষ বলি দিতো? শুন:শেপকে সত্যি যুপকাষ্ঠে বেঁধেছিলো বলি দেবে বলে? নাকি ওটা সিম্বলিক গল্প? বলুন,যে ওটা সিম্বলিক। নিশ্চয় সিম্বলিক। নইলে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।""
    একদম হাসি থামিয়ে আমার মুখের দিকে সটান তাকিয়ে আছেন ঋষি চোখের পাতা না ফেলে। উনি কি কোনো কারণে অফেন্ডেড হলেন নাকি?
    আমি এমনি এমনি বলতে থাকলাম, ""আমাদের উপরের বাঁধন উপর দিয়ে খুলে দাও, নীচের বাঁধন নীচ দিয়ে খুলে দাও, মধ্যের পাশ খুলে আলগা করে দাও। আমাদের মুক্ত হয়ে বাঁচতে দাও। অবাধমানি জীবসে।""
    ওঁর শক্ত মুখ শিথিল হয়ে গেলো,উনি বললেন,""কোথায় শুনলে এই মন্ত্র?""
    ""ঋষি, কত বছর পিছিয়ে গেলে ওঁকে দেখতে পাবো? যুপে বাঁধা বালক শুন:শেপকে? ""
    খুব সুদূর উদাস গলায় আস্তে আস্তে উনি বললেন,""মাত্র এক প্রজন্ম পিছিয়ে গেলেই। কিন্তু সত্যি সত্যি কি ঘটেছিলো সেই বিষয়ে নিশ্চিত কেউ নয়।হয়তো পুরোটাই সিম্বলিক!হয়তো কেন,সত্যিই।""
  • Indira | 59.93.193.36 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৫:১৩671658
  • ঋষি বললো, সিম্বলিক? তাপ্পর!! :)
  • tan | 131.95.121.127 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২১:৩২671659
  • পল্লবই তো ভালো ছিলো! খামোখা আমাদের প্রয়াতা ওনাকে ডেকে আনা কেন!
  • Pallab | 59.93.219.93 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৫:৪৯671660
  • ঘাট!
    ওকে?

    তাপ্পর? :)
  • tan | 131.95.121.127 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২০:২৩671661
  • আগে ঘুরেঘেরে দেখি,তারপরে তো লিখবো! লোকটা তো এখনও ওঁর বইপত্তর কিসু দেখায়ই নি!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন