এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • টাইম মেশিনে চড়ে

    Tan
    অন্যান্য | ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ৪৮৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • tan | 131.95.121.121 | ১৩ মে ২০০৭ ২৩:২৫671697
  • ভরপুর মধ্যাহ্নভোজের পরে আমরা একটু বিশ্রাম করলাম পাঠকক্ষেই। একটু ঘুমানোর পরেই উঠে পড়ে ওনাকে ঘাড়ে নাড়া দিয়ে তুলে দিলাম কারণ উনি বলেছিলেন আমি জাগলেই ওনাকে জাগিয়ে দিতে। আমি ওনাকে জাগিয়েই দিব্যি হাত বাড়িয়ে ওনাকে বালিশের পাশে খুলে রাখা হেডফোন আর মাইক্রো কানে লাগিয়ে দিলাম।উনি হকচকিয়ে গেছিলেন প্রথমে, দ্রুত সামলে নিলেন।
    অয়স্কান্ত ঘরের কোণ থেকে হেঁটে এসে আমাদের বাও করে বললো, ""নোমোস্কার, ক্যামোন আছেন?""
    আমরা দুজনেই হাসছি,আমি বললাম,""অয়স্কান্ত,যাও না,ঘুরেঘেরে আশ্রমটা দ্যাখো না।এই দিদিমণির সঙ্গে আমার অনেকক্ষণ কথা কইতে হবে।তুমি শুধু শুধু বোর হবে,তার চেয়ে যাও না, ঘোরো না।""
    অয়স্কান্ত মুখ ব্যাজার করে খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো,তারপরে আস্তে আস্তে দরজা দিয়ে বাইরে গিয়ে চুপ করে বারান্দাতে বসে রইলো।কিছুতেই ও যাবে না এর থেকে বেশী দূরে।
    আমি বাচক্‌ণবীকে জিগালাম,""দেবী,তখন আপনি প্রমিস করেছেন জনকের বহুদক্ষিণ যজ্ঞের সভার ঐ তক্কোবিতক্কের কথা সব বলবেন।এখন বলুন।""
  • Prantik | 132.186.106.33, 203.101.110.2 | ১৪ মে ২০০৭ ১৬:১২671698
  • অহো! একটুও গ্যাস না দিয়ে বলছি, মনে হচ্ছে যেন সত্যিই সময় ভ্রমন করছি। সাধু!
  • tan | 131.95.121.121 | ১৪ মে ২০০৭ ২৩:০৭671699
  • ""দ্যাখো ঋ,আমি যদি ঐ যজ্ঞসভার গপ্পো তোমায় বলি,সেটা কি আর নিরপেক্ষ হবে? নিশ্চয় নিজের অজান্তেই নিজেকে ডিফেন্ড করে করে বলবো।দৈবরাতি আলোচনায় থাকলে উনি মাঝে মাঝে ওনার ভার্সনটা দিতে পারতেন,সে অনেক সুবিধে হতো।""
    ""কিন্তু আমাদের কি করার আছে? উনি নিজেই তো রাজী হলেন না থাকতে।পড়িমরি করে পালালেন।""
    বাচকণবী হেসে ফ্যালেন পড়িমরি করে দৈবরাতি দৌড়ে পালাচ্ছেন,পালাতে পালাতে পিছনে তাকিয়ে দেখছেন--- এইরকম একটা দৃশ্য কল্পনা করেই হয়তো।আমিও হাসতে থাকি,তারপরে বলি, "" উনি ঐ যজ্ঞের আগে থেকেই আপনাকে চিনতেন, তাই না? ""
    ""হ্যাঁ, চিনতেন।খুব একটা দেখাসাক্ষাৎ অবশ্য হয় নি, উনি খুব ব্যস্ত থাকতেন কাজকর্ম নিয়ে।""
    ""হুঁ,তাতো এখনো থাকেন দেখলাম।এরই মধ্যে দিব্যি তো সংসারও করছেন,দিব্যি দুই দুইজন স্ত্রী...""
    ""আসলে সংসার করা তো বারণ না!অনেক ঋষিই তো গৃহস্থ। চিরব্রহ্মচারীও অবশ্য অনেকে আছেন। যার যেমন অভিরুচি,যার যেমন পরিস্থিতি---সেই হিসাবেই সবাই চলেন।এই নিয়ে খুঁত ধরতে যাওয়া অর্থহীন।""
    ""তা ঠিক।কিন্তু নানা কথায় খালি অন্যদিকে চলে যাচ্ছি আমরা।এইবারে আপনি জনকের সভার গল্প বলুন।সত্যি সত্যি আপনি এত এত প্রশ্ন করেছিলেন যে দৈবরাতি বলেছিলেন মুন্ডু খসিয়ে দেবেন?"হাসতে হাসতে আমি মুখে ওড়না চাপা দিয়ে থামাতে চেষ্টা করছি,পারছি না।
    ভুরু কুঁচকে ভদ্রমহিলা রাগতে চেষ্টা করে হাসির বন্যায় ভেসে গেলেন,কইলেন,""আসলে আমি ওনাকে ক্ষ্যাপাতে চেষ্টা করছিলাম।যাতে ক্ষেপে গিয়ে প্যাঁচে পড়ে যান।কিন্তু ক্ষেপলো না,দিব্যি পয়েন্ট করে করে উত্তর দিয়ে গেলো। শেষে এসে বললো আর প্রশ্ন করলে নাকি আমার মাথা গুলিয়ে যাবে। আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছিলো, তাই নিজে না ক্ষেপে আমাকে ক্ষেপিয়ে দিলো।অথচ অল্পবয়সে চট করে রেগে যেতেন উনি,একবার তো রেগে গিয়ে নিজের কেরিয়ারের কথাও না ভেবে সো-ও-ও-জা নিজের গুরুকে ত্যাগ করে আরেক গুরুর কাছে চলে গেলো।"
    আমি অত্যন্ত কৌতূহলী,""সে আবার কি? কবে এসব হয়েছিলো? বলুন তো ডিটেলে।""
  • tan | 131.95.121.121 | ১৫ মে ২০০৭ ০২:৫৬671700
  • বাচক্‌ণবী গুছিয়ে বসলেন গল্প বলার মুডে।
    তারপরে বললেন,""দৈবরাতির গুরু তো ছিলেন ব্যাসদেবের শিষ্য বৈশম্পায়ন। তো, সেখানে ভালোই উনি বেদবিদ্যা ইত্যাদি শিখছিলেন, কিন্তু তখনো শেখেন নি কিকরে লোককে না চটিয়ে দিয়েও ঠিক ঠিক কমুনিকেট করা যায়।একদিন কি একটা প্রায়শ্চিত্ত ব্রত শিষ্যদের উপরে চাপিয়ে দেয়ায় শিষ্যরা ক্ষেপে গিয়ে আড়ালে অসন্তোষ প্রকাশ করতে লাগলো দৈবরাতির কাছে।এদিকে সরাসরি গিয়ে যে বুঝিয়ে বলবে তাও পারে না, বৈশম্পায়নের খুব পাওয়ার আর ইনফ্লুয়েন্স। স্বয়ং রাজা যুধিষ্ঠিরের সভায় গিয়ে মহাভারত পড়েন,সোজা কথা? তো, বৈশম্পায়ন তো আবার নাকি কিরকম আত্মীয় ছিলো দৈবরাতির। কিরকম মামা না কী যেন।তাই ওনাকে এসে বন্ধু সতীর্থরা কয় এ কি কান্ড! আমাদের দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করাবে কেন? আমরা কি করেছি? উনিও ভাবলেন তাই তো! সত্যি কথা! এরা তো কিছু করেনি!""
    উনি থামলেন,আমি রাখতে পারছি না কৌতূহল--"তারপরে? তারপরে বুঝি দৈবরাতি নিজেই পাওয়ারফুল বৈশম্পু-মামার কাছে গিয়ে হাজির সতীর্থদের হয়ে কথা কইতে!""
    ভদ্রমহিলা কৃত্রিমরাগে চোখ পাকালেন,""বৈশম্পুমামা আবার কি? শ্রদ্ধা করে কথা কও।""
    ""সরি সরি, ভুল হয়ে গেছে।আসলে আমাদের সময়ে এরকম চিম্পু চিম্পু নাম অশ্রদ্ধার নয়,ভালোবাসার প্রকাশ।যাকে যত বেশী ভালোবাসি তাকে তত চিম্পু চিম্পু নাম দিই।""
    "অ,তাই কও। তবে ও বুড়ো খুব সুবিধার লোক ছিলো বলে মনে হয় না।যাকগে,আমার কি? এসব আবার না কেউ শোনে।""বলে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিয়ে কইলেন, ""হ্যাঁ, তারপরে দৈবরাতি গিয়ে বৈশম্প্যায়নকে ব্যাপারটা নিয়ে বললেন।বললেন ওরা যখন দু:খ পাচ্ছে,আমাকেই পুরো কাজটা করতে দিন না।দ্যাখো এত ভালো একটা প্রস্তাব শুনে কোথায় বুড়া ছেলেটাকে ভালো কইবে,তা না ক্ষেপে রেগে চটে একাকার! কইলেন তোমার এত অহংকার! তুমি একা করতে চাও এতজনের কাজ! দাও,যা বিদ্যা দিয়েছি ফিরিয়ে দাও।তারপরে চলে যাও।""
    ""অ্যাঁ? সে কি কথা? বিদ্যা ফিরিয়ে দেবে কিকরে?""
    ""সেই তো কথা,কাউকে শিখিয়ে দিলেই বিদ্যা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না,স্মৃতি থেকে ওটা ঘষে তুলে ফেলবে কিকরে?""
    ""তারপরে? তারপরে কি হলো দেবী?""
    ""তারপরে তুমুল গন্ডগোল! উনি সব বিদ্যা ফিরিয়ে দিয়ে আশ্রম ছেড়ে চলে গেলেন।ওনার ফিরিয়ে দেওয়া সেই বিদ্যা হলো তৈত্তিরীয় উপনিষদ,উনি নিজে কোনোদিন এগুলো আর মনে করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করে চলে গেলেন।""
    উনি চুপ করে বসে রইলেন,আমিও চুপ করে রইলাম, দেখছিলাম গবাক্ষের বাইরে বেলা ঢলে এসেছে,সেই সাদা তিত্তিরিপাখিগুলি কিচিরমিচির করে গাছে ফিরে আসছে।
    আমার মনে হলো সেই পর্তুগীজ পরিত্যক্ত নাবিকের গল্প-দ্বীপের পাখিরা ওর কথা শুনে শুনে বুলি শিখেছিলো ""মা রী সি নী তুলুংসায়া,কাম হিয়ার হেল্প মী।""
    কি হয়েছিলো সেই নাবিকের? কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ কি ওকে তুলে নিয়ে দেশে ফিরিয়ে দিয়েছিলো? অথবা সে ঐ দ্বীপেই মরে গেছিলো? দ্বীপের পাখিরা কিন্তু ভোলে নি,ওরা একই ভাবে বুলি আওড়াতো মা আ আ রী ঈ ঈ ঈ সী নী তু উ উ লুংসায়া আ আ আ কা আ আ আ আ আম হিয়ার হেল্প মী ঈ ঈ ঈ।
    সমুদ্রদিগন্তে এমনি সন্ধ্যা নেমে আসতো,ঐ দিকচক্র থেকে আসতো কি কোনো জাহাজ?
    কাঁধে নাড়া খেয়ে চমক ভেঙে গেলো,""কি হলো ঋ? তোমার চোখে জল কেন?""
    অপ্রস্তুত আমি ওড়ানা তুলে চোখ ঘষতে থাকি,চোখে কিজানি পড়েছে কুটোকাটা!
  • tan | 131.95.121.121 | ১৫ মে ২০০৭ ০৩:৩১671701
  • আমি সামলে নিয়ে ওড়না গুছিয়ে কাঁধে ফেলে সফি হয়ে নিয়ে আবার কথা কইতে শুরু করলাম,""তারপরে দেবী? তারপরে কি হলো দৈবরাতির? উনি কোথায় গেলেন? ""
    ""এরপরে উনি অরুণ ঋষির আশ্রমে যান,তাঁরা ছিলেন আদিত্যবাদী। অরুণঋষি অনেক খোলামেলা মনের লোক ছিলেন,অনেক উদারপন্থী। সেখানে দৈবরাতি নিজেই স্বাধীনভাবে তপস্যা গবেষণা করে জ্ঞানসংগ্রহ করেন। সেখানেই উনি অনেক অনেক নতুন জিনিস রচনা করেন। অনেক গল্প চলে আসছে সেসব নিয়ে।স্বয়ং আদিত্য মানে সূর্য নাকি ওনাকে এসে বিদ্যা প্রদান করে যান বাজী অর্থাৎ ঘোড়ার রূপ ধরে।দৈবরাতি নিজের নামের আগে তাই বাজসনেয় শব্দটি যোগ করেন আর রচনা করেন বাজসনেয় সংহিতা।""
    আমি হেসে বললাম,""ভাগ্যিস উনি তখন পড়িমড়ি করে চলে গেলেন।নইলে এখানে থাকলে এসব শুনলে ভারী সংকুচিত হয়ে যেতেন।""
    ভদ্রমহিলা হাসতে হাসতে কইলেন,""এখানে উনি থাকলে এসব কথা উঠতেই দিতেন না।তার আগেই এমন সব কূটতর্ক উত্থাপন করতেন যে তার জট ছাড়াতেই দিনকাবাড় হয়ে... এইরে! সন্ধ্যে নেমে গেলো।এসো ঋ,সন্ধ্যারতি দেখবে না?"
    উনি উঠে পড়লেন,সঙ্গে সঙ্গে আমিও।
  • tan | 131.95.120.60 | ১৬ মে ২০০৭ ০৩:২১671702
  • পাঠকক্ষ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম,বারান্দা থেকে সঙ্গে সঙ্গে অয়স্কান্ত উঠে এসেছে।সে কিছুতেই আমাদের সঙ্গছাড়া হবে না। কিজানি,সেইভাবেই হয়তো প্রফেসর ওঁকে প্রোগ্রাম করে দিয়েছেন,আমায় তো সব খুলে কন নি আর।
    অপূর্ব দিনাবসান,পশ্চিমে মেঘগুলি রঙের মায়ায় ভরে দিয়েছে আকাশ মাটি গাছপালা সবই।বহুদিন আগের একটি এমনি আবীর মাখা শরৎসন্ধ্যা মনে পড়লো,সেইখানে মাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছিলো,মাঝের সুরকী বেছানো পথটা দিয়ে বাড়ী ফিরছিলো কত ক্লান্ত লোক,সবাই ঐ রঙে নেয়ে উঠে কেমন অপার্থিব হয়ে গেছিলো!
    বাইরে এসে উপরের দিকে তাকালাম,এত মধুর নরম বাতাসের ছোঁয়া আগে কোথাও পেয়েছি কি? কেন সমুদ্রের কথা মনে হয়? কেন সেই কবির নৌকাযাত্রা মনে পড়ে? মনের মধ্যে গুণ্‌গুণ করে "আঁধার রজনী আসিবে এখনি মেলিয়া পাখা/সন্ধ্যা আকাশে স্বর্ণ-আলোক পড়িবে ঢাকা...""
    হয়তো আমারই স্বপ্ন সব,হয়তো এই অতীতও এখুনি এখুনি তৈরী হওয়া অতীত! হয়তো আমাদের স্মৃতিও আসলে কেউ কপি করে দিয়েছে।আমি ভাবছি আমার স্মৃতি,সত্যি কি তাই? আমি ভাবছি সময়ভ্রমণ,কয়েক সহস্র বৎসর পিছনবাগে চলে এসেছি,সত্যি কি? যদি সময়ভ্রমণের মেশিন সত্যিও হয়,তবু আমার বর্তমানবিন্দু থেকে পিছিয়ে অজস্র সম্ভাবনার কোন্‌ বিন্দুতে এসেছি? প্রত্যেক ঘটনার কত কত কপি ছিলো?
    সত্যিকারের সত্য কি তা কে জানে!

    বড্ড ক্লান্ত লাগলো,কেমন অদ্ভুৎ অবসাদ! যেন দুহাতের মধ্যে ধরে দেখতে চাইছি আলোর স্রোতকে,সে অনায়াসে হাত ভেদ করে চলে যাচ্ছে।

    বাচকণবী আমার হাত ধরে সন্ধ্যারতির স্থানটির দিকে নিয়ে যেতে যেতে কোমল গলায় বললেন,""ঋ,আমি তো এইসব যন্তর পরে সন্ধ্যারতিতে অংশ নিতে পারবো না,কিন্তু তাহলে কিভাবে তুমি বুঝবে মন্ত্রে কি গাওয়া হচ্ছে?""

    আমি ওঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,""আমিও খুলে ফেলছি,কিছু দরকার নেই ট্রানফর্মেশানের।ধ্বনিগুলো শুনতে পেলেই হবে,অর্থের দরকার নেই দেবী।আমি সুর শুনতে পেলেই ধন্য হবো।""বলতে বলতে খুলে ফেললাম কানের যন্ত্র,উনিও খুলে আমার হাতে দিলেন,অয়স্কান্ত ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলো,আমি ওর দিকে ক্লান্তভাবে চোখ ফেরালাম,বললাম,""অয়স,ব্যস্ত হয়ো না,শান্ত হও।আমি জানি তুমি ভাবছো আমার অসুবিধে হবে,কিন্তু আমার অসুবিধে হবে না।""
    অয়স্কান্ত চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো,সন্ধ্যারতির স্থানের জ্বলে জ্বলে ওঠা প্রদীপশিখার আলো ওর ধাতব চোখের মণিতে কেমন তরল মায়া তৈরী করেছে,আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
    সন্ধ্যারতির বর্ণনা করতে পারবো না,আমি এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোখ কান ইত্যাদি সংবেদনযন্ত্রগুলো দিয়ে ঐ বিপুল ব্যপ্ত প্রার্থনার অতি সামাণ্যই ধরতে পেরেছিলাম। সেইটুকু অনুভবও বর্ণনা করতে পারি সে ভাষার জোর নেই। শুধু মাঝে মাঝে মনে পড়ছিলো,""জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে বন্ধু হে আমার ওগো রয়েছ দাঁড়ায়ে...নীরব নিশি তব চরণ নিছায়ে/ আঁধার কেশভার দিয়েছে বিছায়ে...""
    অদ্ভুত আশ্চর্য সুরেলা মন্ত্রে ওঁরা প্রার্থনাগান গাইছিলো, বাতাসের সঙ্গে আকাশের সঙ্গে মিশে মিশে যাচ্ছিলো সেই শব্দ সুর ও ছন্দ তাললয়...
    আমার বিভ্রম হচ্ছিলো,মনে হলও ঐ শত শত প্রদীপশিখাও যেন গান গাইছে,আলোর ভাষায়,দীপ্তির সুরে...মনে হলো একটি একটি করে ঐ যে গগণে তারাগুলি ফুটে উঠছে,তাও এই সুরের সঙ্গে সাড়া দিয়ে দিয়ে।
    ""আকাশ জুড়ে শুনিনু ঐ বাজে/তোমারি নাম সকল তারার মাঝে...""
  • tan | 131.95.219.140 | ১৮ মে ২০০৭ ০১:১৫671703
  • সন্ধ্যারতির শেষে আকাশ ভরে ফুটে ওঠা হাজার হাজার তারার নীচে অত্যন্ত আবিষ্ট চিত্তে ঘুমন্ত ঘাসেদের উপরে বসে পড়লাম আস্তে আস্তে।অয়স্কান্তও বসে পড়লো কাছেই। কী অপূর্ব হাওয়া আসছে কোথা থেকে!টলটলে জলের মধ্যে ছায়ার কাঁপুনির মতন উজল তারাগুলো বাতাসের মধ্যে কাঁপছে,""সাগর থেকে ফেরা"" মনে পড়ছে----,""হাওয়া বহে শনশন তারারা কাঁপে/হৃদয়ে কী জং ধরা পুরানো খাপে?..."" অত হাজার বছর আগে কনস্টেলেশানগুলি একটু একটু অন্যরকম ছিলো,তাও চেনা চেনাই লাগে। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা আরো গাঢ় হলে ছায়াপথ ফুটে উঠলো,হাল্কা শুভ্র ওড়নার মতন উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে গেছে।এত স্পষ্ট এত অনাবিল এত কোমল দীপ্তিতে উদ্ভাসিত কখনো দেখিনি আমার সময়ে,সেখানে বায়ুদূষন আলোক দূষন সবসময়েই ঢেকে রেখেছে ওর জ্যোতির্ময় দুর্দর্শরূপ। স্পেস টেলিস্কোপ থেকে যে ছবি আসতো তা অবশ্য হাই কোয়ালিটির,কিন্তু সেতো সরাসরি দেখা না,ইমেজ দেখা!
    বাচকণবী এসে হাত বাড়িয়ে মাইক্রোফোন হেডফোন চাইলেন,আবার আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য।আমি স্বয়ংচালিত যন্ত্রের মতন হাত বাড়িয়ে ওসব ওঁকে দিলাম,নিজেরগুলোও পরে নিলাম।

  • tan | 131.95.219.140 | ১৯ মে ২০০৭ ০০:২১671704
  • ছায়াপথের ওড়নাওড়া আকাশের নীচে কোমল রাত্রিবাতাসে ভিজে যেতে যেতে আমি বাচক্‌ণবীকে বললাম,""দেবী,ঐ যে ছায়াপথ,এখনো আমরা ছায়াপথই বলি,আমরা এখন জানি ও ছায়াপথ হলো হাজার হাজার কোটি তারার সমাহার, ওর কেন্দ্রে,ঐ যে ঐদিকে ওর কেন্দ্র" আমি ধনুরাশির দিকে হাত বাড়িয়ে দেখিয়ে বলি""আমাদের জ্ঞানীরা বলেন ওর কেন্দ্রে আছে আমাদের সূর্যের চেয়ে শতকোটিগুণ বেশী ম্যাস এর কৃষ্ণগহ্বর।সেসব নিয়ে অনেক অনেক গবেষণা চলছে। কিন্তু একদিন নতুন মানুষেরা এসে হয়তো আবার অন্যরকম বলবে।আমরা,আমাদের জানা ও অজানা আমাদের ধ্যান ও ধারণা সব বন্দী হয়ে আছে আমাদের নিজের নিজের যুগে। কালেকটিভভাবে দেখলেও আমরা সকলেই কালবন্দী। আপনি বলুন দেবী,আপনারা ঐ ছায়াপথকে কি মনে করেন? আমরা গল্প শুনেছি নচিকেতার,শুনেছি দেবযান পথ, সেই পথের কথা বলুন দেবী।""
    উনি ওঁর সুরেলা মনোরম গলায় মন্ত্রমুগ্‌ধ করে দিয়ে বলতে থাকেন দেবযানপথের কথা,সেই আদিত্য-উপাসনা,সেই প্রজ্ঞাময় সূর্য,সেই দিবারাত্রিচক্র ভেদ করে চলে যাওয়া-যখন দিবারাত্রির মালা ঘুরে যেতে থাকে চোখের সামনে... দ্যাবাপৃথিবীর কথা, নীলকান্তমণির মতন যে পৃথিবী অন্ধকার মহাকাশের বুকে দুলছে... ঘাসের উপরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে ছায়াপথের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে শুনতে থাকি। শনশন করে রাত্রি বয়ে যায়।

  • tan | 131.95.219.140 | ১৯ মে ২০০৭ ০০:৩৫671705
  • অয়স্কান্তের গলার মধ্যে আলো জ্বলে ওঠে,দপদপ করে প্রথমে উজল সবুজ,তারপরে বাদামী।প্রফেসর কথা বলতে চাইছেন আইটিসিএম এর মাধ্যমে।
    উঠতে ইচ্ছে করে না,এই মন্ত্রমুগ্‌ধ নক্ষত্ররাত্রি ছিঁড়ে যন্ত্রের মধ্যে যেতে ইচ্ছে করে না,হেডফোন মাইক্রোফোনও বিরক্তিকর লাগে,তবু আমি উঠে বসি,""সামান্যক্ষণ ক্ষমা করুন দেবী,আমায় যিনি সময়ভ্রমণে পাঠিয়েছেন,তিনি কথা বলতে চাইছেন।"" বাচকণবী চুপ করে গেছিলেন আগেই, এখন কৌতূহল-স্ফুরিতমুখে চেয়ে আছেন।
    অয়স্কান্ত এগিয়ে এসেছিলো,ওর গলার ছোট্টো খুপরি খুলে বার করে আনি ইন্টার টেম্পোরাল কন্ট্যাক্ট মেশিন,মুখের কাছে এনে বলি,""হ্যালো।""
    প্রফেসরের গলা শোনা গেলো-""ঋ?""
    ""হ্যাঁ তো,নইলে কে হবে?""
    --""ক্লান্ত নাকি? গলাটা কেমন শোনাচ্ছে যেন!""
    ""আপনি গলা শুনে ক্লান্তি বুঝতে পারেন নাকি? বড়ো অসময়ে ফোন করলেন আজ।এখন আমি গর্গের আশ্রমে, বাচকনবীর কাছে দেবযানপথের কথা শুনছি।""
    ---তাই নাকি? কেমন দেখছো সব?
    খুব ভালো,আজকে সকাল থেকে সারাদিন আমি আর অয়স্কান্ত এখানে।আপনার চিন্তা নেই,অয়স্কান্তকে খুব ভালো প্রোগ্রাম করেছেন,ও কিছুতেই আমার থেকে মিটার দুয়েকের বেশী দূরে যায় না।
    --কি হলো ঋ,রাগ করেছ নাকি? তুমি তো এক্সপেরিমেন্টের নিয়ম সব জানোই।তবে কেন ভুল বুঝছো?
    নাহ,রাগ না,এমনি।এখন নিজে এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে এসে পড়ে মনে হচ্ছে সব অর্থহীন।কোনো মানেই হয় না এইসবের।
    ---কী সর্বনাশ! তোমার কি হয়েছে ঋ?
  • tan | 131.95.120.60 | ২০ মে ২০০৭ ২২:০২671707
  • "কি আবার হবে? কিছুই হয় নি।"--আমি আশ্বস্ত করি প্রফেসরকে, কিন্তু কিছুতেই গলার স্বরে রিল্যাক্সড ভাব আসে না অনেক চেষ্টা সত্বেও।
    উনি বলেন,""ঋ,কখন ফিরে আসবে? আমি সত্যি সত্যি উদ্বিগ্ব।"
    সত্যিই ওঁর গলায় অন্যরকম মোচড়।
    আমি এবারে হাসলাম,বললাম,""আচ্ছা প্রফেসর,যদি আর নাই ফিরি আমি আর অয়স্কান্ত,তাহলে কি হবে? সত্যি কি পাল্টে যাবে আমাদের বর্তমান, যেখানে আমি আপনি টাইম মেশিন কিছুই নেই?""
    ""ঋ!!!! কিসব বলছো! সত্যি ব্যাপার সিরিয়াস মনে হচ্ছে,তোমাদের ফিরে আসা প্রয়োজন যত দ্রুত সম্ভব।""
    আমি ওঁর উদ্বেগস্বর উপভোগ করে বললাম,""মাফ করুন প্রফেসর,আমি এমনি ঠাট্টা করছিলাম,এখান থেকে আগামীকাল আমরা ফিরে যাবো সকালে যখন দৈবরাতি আমাদের নিতে আসবেন।ফিরে গিয়েই ওখানে আরেকদিন থেকে আমরা রওনা দেবো ফিরতি কালের পথে।এবারে ঠিক আছে তো,প্রফেসর?""
    উনি ক্ষীণ গলায় বললেন,""ঠিক আছে,তাই এসো।""
    আমি আইটিসিএমের সুইচ অফ করে অয়সের গলার খুপরিতে ঢুকিয়ে স্লাইডিং ঢাকনা বন্ধ করে দিলাম।

    তারপরে বাচক্‌ণবীর দিকে ফিরে আস্তে আস্তে বললাম,""হ্যাঁ দেবী,আপনি যে বলছিলেন দেবযানপথের সেই আলোর কথা,ঐ আলো হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা পরম আলো,অনাবিল দীপ্তি,সেইকথা আবার বলুন।""
    উনি চুপ করে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলেন খানিকক্ষণ।তারপর বললেন,""তুমি কিছুক্ষণ আগে বললে না যে মানুষেরা সম্মিলিত ভাবেও কালবন্দী,তা কিন্তু ঠিক নয়। কালের গন্ডী পার হয়ে যেতে পারে মানুষ, না কোনো যন্ত্রে না, অন্যভাবে।""
    আমি আমায় বিস্ময়বিশাল চোখ ওঁর চোখের উপরে মেলে বললাম,""কিভাবে? কিভাবে?""

  • tan | 131.95.219.156 | ২১ মে ২০০৭ ২১:০৮671708
  • প্রান্তিক,
    এতদিন দেখতে পেলেও বলা হয় নি।থ্যাংকু।(আবার বাও করে)
    :-)))))
  • tan | 131.95.219.156 | ২২ মে ২০০৭ ০৩:৪৫671709
  • কোমল হেসে মিঠে গলায় উনি বললেন,""তুমি কোন্‌টা শুনবে ঋ? দেবযান পথের কথা নাকি কালের গন্ডী পেরিয়ে যাবার কথা?""
    আমি চুপ করে ওঁর মুখের দিকে চেয়ে রইলাম,কথা বলতে পারছি না,এই নক্ষত্রবিভাময় অন্ধকারের মধ্যে বসে বসে সব কেমন অলীক লাগছে।
    আমি ওঁর হাতের উপরে নত হয়ে কপাল ঠেকিয়ে বললাম,""যেটা আপনার ইচ্ছে দেবী,যেটা আপনার ইচ্ছে।""
    আমি শুয়ে পড়লাম ফের ঘাসের উপরে,কোথা থেকে রাত্রে ফোটা ফুলের মিষ্টি গন্ধ আসছে।কি ফুল? শিউলি কি?
    আকাশভরা ছায়াপথকে মনে হয় সত্যিই কোনো শ্বেতাভ পথ,দূ উউ রে কোথায় চলে গেছে ঐ আকাশের ঘন গভীর মগ্ন বুকের মধ্য দিয়ে আরো আরো আরো গভীরতায়। আকাশের গভীরতা পৃথিবী থেকে বোঝা যায় না,ঐ যে উজল বা ক্ষীণ আভার তারাগুলো-সব কেউ হয়তো কাছে,কেউ দূরে,কিন্তু এখান থেকে মনে হয় সবাই আকাশের ঔ উলটানো বাটির ভেতরের গায়ে আটকানো।
    বাচকণবী মধুর স্বরে বলে যাচ্ছেন তাঁদের সঞ্চিত জ্ঞান ধ্যান ও ধারণার কথা, কখনো গানের মতন লাগে কখনো মন্ত্রের মতন-আমার অপূর্ব বিভ্রম হয়-মনে হয় আমি পড়ে যাচ্ছি ঐ তারাময় অন্ধকারের বুকের মধ্যে।আমার উপরে নীচে সামনে পিছনে ডাইনে বাঁয়ে ফুলঝুরির মতন তারারা উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে,ঘূর্ণী লেগেছে তারার রাশিতে।
  • tan | 131.95.121.123 | ২৬ মে ২০০৭ ০০:১২671710
  • কে যেন বলেছিলো বিশ্বের বাঁশীতে নাচের ছন্দ বেজে ওঠে,সেই ছন্দে বস্তুর ভার হাল্কা হয়ে যায়? সেই ছন্দের তালে তালেই গ্রহনক্ষত্রের দল ভিখারী নটবালকের মতন আকাশে আকাশে নেচে চলেছে?--- কে বলেছিলো? কে বলেছিলো? মনে পড়ে, পড়ে,তবু পড়ে না।
    যেন টলটলে জলের মধ্য থেকে চেয়ে আছি ছায়াপথের দিকে,হাওয়ায় হাওয়ায় টলমল করে কাঁপছে ঐ ফিনফিনে মহাকাশীয় ওড়না।
    কে যেন বলেছিলো রাত্রি কখনো সূর্যকে পায় না,কিন্তু তাতে ওর দু:খ নেই,রাত্রির আছে অনন্ত নক্ষত্রীবীথি।---কে বলেছিলো কে বলেছিলো? কিছুতেই মনে পড়ে না।স্মৃতি কি হারিয়ে ফেলছি?
    এরপরে কি ভ্রষ্টস্মৃতি মানুষের মতন খুঁজে ফিরবো কে আমি,কোথায় আমি,কোথায় আমি ছিলাম,কোথায় আমি যাবো?
    বাচক্‌ণবী বেদমন্ত্র বলছেন,আমি হেডফোনের মধ্য দিয়ে ট্রান্সফর্‌ম্‌ড অর্থ শুনছি--"বসুরা গায়ত্রী ছন্দে তোমাকে স্নিগ্‌ধ করুক, রুদ্ররা ত্রিষ্টুপ ছন্দে তোমাকে স্নিগ্‌ধ করুক, আদিত্যরা জগতী ছন্দে তোমাকে স্নিগ্‌ধ করুক""---এই তুমি কে? কে তাকে স্নিগ্‌ধ করবে,কেন করবে,কিভাবে করবে?
    অসহায় লাগে আমার খুব,অদ্ভুৎ শীতে কেঁপে উঠি। আমাদের সকল যুগের সঞ্চিত জ্ঞান কি হারিয়ে যায়? নতুন যুগে সেই অর্জিত জ্ঞানই পুনরাবিষ্কার করতে হয়? ঘুরে ঘুরে একই খেলা চলছে আর চলছে আর চলছে? সময়ের মহাবৃত্ত?
    আমাদের স্মৃতি ও কি বারে বারে তৈরী হয় নতুন করে? আমরা কি বারে বারে ফিরে ফিরে আসি পুনর্জাত হয়ে? এই মহাবিশ্বও কি পুনর্জাত হয়?
  • tan | 131.95.121.123 | ২৮ মে ২০০৭ ০০:২৯671711
  • বিরাট এক বনের মধ্যে পথ হারিয়ে এলোমেলো ঘুরছি,কেন যে অয়স্কান্ত সঙ্গে নেই বুঝতে পারছি না,কোন্‌দিকে যাবো তাও বুঝতে পারছি না,এখানে এলাম কিকরে তারও কোনো স্মৃতি নেই,কী অদ্ভুৎ অবস্থা!!!
    খানিকক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে হতাশ হয়ে এক অশ্বত্থ গাছের তলায় একখানা ঘাসলতায় আচ্ছন্ন পাথরের উপরে বসে পড়লাম।
    কিছুই করার নেই বলে এলিয়ে শুয়ে পড়ে গাছটাকেই দেখতে লাগলাম।প্রথমে অশ্বত্থ গাছ মনে হচ্ছিলো,কিন্তু দেখতে দেখতে অবাক হয়ে গেলাম, গাছটার পাতাগুলো অন্য গাছেদের মতন একেবারেই নয়,পাতাগুলো কেমন কোমল ভাঁজে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্রিকোণীপাত্রের রূপ নিয়েছে! ডালপালা পাতা সব মিলে অদ্ভুৎ স্পাইরালের মতন গঠনের হয়ে উপরে উঠে গেছে,নীচ থেকে দেখতে দেখতে আমি অত্যন্ত অবাক।
    উঠে গিয়ে গাছটার কান্ড স্পর্শ করতেই কি যে হলো কিছু মনে নেই,জ্ঞান ফিরে দেখি বন টন কিছু নেই,খোলা একটা জায়গা,দূরে অনেক লোকের জটলা,নানা উত্তেজিত কলরব কানে এলো,নিশ্চয় খুব ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটছে।

  • tan | 131.95.121.123 | ২৯ মে ২০০৭ ২০:২০671712
  • কাছে গিয়ে দেখি সে এক ঘোরতর কান্ড।একটা বাচ্চা ছেলেকে মাটিতে পোঁতা এক বিরাট কাঠের গুঁড়ির সঙ্গে দড়ি দিয়ে আচ্ছা করে বাঁধা।বেচারা ছেলেটা কাঁদছে। তার চারপাশ ঘিরে অনেক লোকে লোকারণ্য,একদম কাছে আগুনের ধুনির মতন জ্বলছে, জটামাথায় ঋষি পুরোহিত সব মহা উত্তেজিত হয়ে ঘুরছে,অনেক গয়না টয়না পরা একজন বলশালী ইয়া ভুড়িয়ালা লোকও আছে,দেখে মনে হল রাজা।
    এত লোকের ব্যারিকেড ভেদ করে কিকরে যে কন্দ্রস্থলে চলে গেলাম কেজানে!মনেও হলো না ঠেলাঠেলি করলাম,যেন মেঘ ভেদ করে এলাম। হচ্ছেটা কি? অথচ কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছে বলেও মনে হলো না।
    আরেকটু পরে বুঝলাম এই বাচ্চাটাকে বলি দেবে,একজন লাল পাগড়ী আর লাল কাপড় পরা লোক বিরাট খড়্‌গ নিয়ে ধার পরীক্ষা করছে।

  • `' | 10.153.103.97, 10.150.50.89, 10.150.50.89, 203.91.207.30 | ৩০ মে ২০০৭ ০৯:৪৩671713
  • ঠিক যেন জুল ভর্ণ। জব্বর ক্লাইম্যাক্স। তাপ্পর?
  • tan | 131.95.121.123 | ৩০ মে ২০০৭ ২৩:২০671714
  • নানা মন্ত্র টন্ত্র পড়ে চলেছেন দাড়িয়ালা ঋষিরা,দুজন ঋষি আগুনে কিসব কাঠপাতাধুনোগুঁড়ো ঘী ইত্যাকার জিনিসপত্র ছুঁড়ে দিচ্ছেন, মোটাসোটা ভুড়িদার রাজা উত্তেজনায় টকটকে মুখে চেয়ে আছেন,রক্তবসন ঘাতক খড়্‌গ পরীক্ষা শেষ করে খুঁটিতে বাঁধা বলির দিকে এগিয়ে আসছে---সব ফেড আউট হয়ে গেলো,দড়িবাঁধা বাচ্চা ছেলেটার মুখে আটকে গেলো চোখ---জলে ধোয়া পদ্মের মতন সুন্দর ছেলেটার গোলাপী-গোলাপী মুখ-চোখের দীর্ঘ পক্ষ্মগুলোতে বৃষ্টিকণার মতন জলে লেগে আছে-অভিমানে ওর ঠোঁট ফোলা--ওকে বাঁচাবার কেউ নেই। এত এত সব পূর্ণবয়স্ক লোক এইটুকু একটা বাচ্চা ছেলেকে বলি দিতে যাচ্ছে,ছি ছি ছি।
    ইচ্ছে হলো দৌড়ে গিয়ে ঘাতকের হাতের খড়্‌গটা কেড়ে নিয়ে দড়ির বাঁধন কেটে দিই বাচ্চাটার,তারপরে ওর হাত ধরে ছুটে পালিয়ে যাই। কিন্তু কিছু খেই পাচ্ছি না,আমি কি নিরবয়ব এখানে? কেউ আমার অস্তিত্ব অনুভব করছে বলে তো মনে হচ্ছে না।
    অবয়ব নেই,কিন্তু তবু আছে একটা তীব্র আর্ত আকাঙ্খা--ঐ বালকটিকে মৃত্যু থেকে বাঁচানোর জন্য... চিৎকার করে থামাতে ইচ্ছে করছে সব,কিন্তু স্বরযন্ত্র কোথায়?
    কিন্তু একটা চমকে ওঠা শব্দ জনতার মধ্য থেকে,ফিরে দেখি ঘাতক খড়গ ফেলে দিয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে মাটিতে বসে পড়েছে নতজানু হয়ে....
    আকাশের সবটুকু আলো মুছে দিয়ে তীব্র আঁধি ছুটে আসছে।দেখতে দেখতে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেলো।
  • tan | 131.95.121.123 | ৩১ মে ২০০৭ ০৫:৪৪671715
  • ঝড়ের তীব্র শব্দ ডুবিয়ে দিয়ে কে যেন চিৎকার করে উঠলো,কিছু দেখা যাচ্ছে না,ধুলায় বালিতে দুনিয়া অন্ধকার, অসংখ্য পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে,অসংখ্য শংখধ্বনি,আমি খুঁটির একদম কাছে বলে এখনো ছেলেটাকে দেখতে পাচ্ছি-ও চোখ বন্ধ করে চুপ করে আছে,হঠাৎ ঝড়ের মধ্যে হাতড়াতে হাতড়াতে কে যেন এগিয়ে এলো-কমলা রঙের পোশাক পরা একজন লোক,খুঁটিতে বাঁধা ছেলেটাকে দড়ি কেটে মুক্ত করে কোলে তুলে নিয়ে ঝড়ের অন্ধকারে কোথায় মিলিয়ে গেলো।
    ঘামে ভিজে জেগে উঠে বসলাম,অনেকক্ষণ ঠাহর পেলাম না কোথায় আছি,তারপরে মনে পড়লো,গর্গের আশ্রমে রাত কাটাচ্ছি আমি আর অয়স্কান্ত।ঐ তো অতন্দ্র অয়সকান্ত দরজার কাছে বসে আছে,ওর ধাতব হাতের আঙুলের ডগা থেকে সবুজ আলো জ্বলছে আর নিভছে জ্বলছে আর নিভছে। দৈবরাতির আশ্রমের আগের রাত্রির মতনই ঠিক।
    তাহলে কি দেখলাম? স্বপ্ন? স্বপ্ন এত স্পষ্ট হয়?
  • tan | 131.95.121.123 | ০১ জুন ২০০৭ ০২:০৬671716
  • বাচকণবী জেগে গেছেন পাশের শয্যায়, বালিশের পাশ থেকে হেডফোন মাইক্রোফোন তুলে পরে নিয়ে আমার এখানে এসে শিয়রের কাছে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কইলেন,"কি হয়েছে ঋ?"
    আমি ওড়না দিয়ে মুখ-গলা মুছে নিয়ে খানিক ধাতস্থ হয়ে তারপর হেডফোন মাইক্রোফোন পরে নিয়ে বললাম,""তেমন কিছু না দেবী,অদ্ভুৎ এক দু:স্বপ্ন দেখলাম।""
    উনি আমাকে পালকের পাখা দিয়ে হাওয়া করতে করতে বললেন,""কি স্বপ্ন? কাউকে স্বপ্ন বলে দিলে ভয় কেটে যায়।""
    অয়স্কান্ত আমাদের কাছে এগিয়ে এসেছিলো দরজার কাছ থেকে,ওকে "নমস্কার কেমন আছেন" বলার অবসর না দিয়েই আমি বললাম,""আমি ভালো আছি অয়স্কান্ত, আমার তেমন কিছু হয় নি।একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেছে কেবল,আর কিছু না।ব্যস্ত হয়ো না,তুমি তোমার জায়গায় যাও।"
    কিজানি মনের ভুল কিনা,মনে হলো ফিরে নিজের জায়্‌গায় যেতে যেতে অয়স্কান্ত ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে বললো,"স্বপ্ন? স্বপ্ন? স্বপ্ন?"
    মনের ভুলই হবে, অয়স্কান্ত তো ঐ তিনটে শব্দ ছাড়া অন্য কিছু উচ্চারণ করতে পারে না, প্রফেসর সেইরকমভাবেই প্রোগ্রাম করেছেন ওকে।নতুন কোনো কোয়ালিটি কিভাবে যোগ হবে? এখানের এনারা কিছু করেছেন নাকি? কিন্তু তাই বা কিভাবে হবে,এনারা রোবোটিক্সের কিছুই তো জানেন না,জানা সম্ভবও নয়।আমরা কয়েক হাজার বছর অতীতে এখন!
    বাচকণবী আমার এখানেই এলিয়ে শুয়ে বললেন,""ঋ,আমি এখানেই থাকি বাকী রাত।আর ঘুমুবো না,তোমার স্বপ্ন বলে দাও।হয়তো তোমার ভয় কেটে যাবে।""
    আমি আস্তে আস্তে স্বপ্নের এলোমেলো সাদা ধূসর সবুজ নীল ধুলোটে আগুন রঙ সব না-গাঁথা টলমল করে বেড়ানো ঘটনাগুলো আস্তে আস্তে যতদূর সম্ভব গুছিয়ে ওনাকে বলতে থাকি,বলতে বলতে সত্যিই নিজের ভিতরের একটা দমবন্ধ গুমোট ভাব কেটে যাচ্ছিলো,স্পষ্ট টের পেলাম।
  • tan | 131.95.121.123 | ০১ জুন ২০০৭ ০২:৪৪671718
  • সব শুনে উনি হাসলেন,তারপরে বললেন," এখন ঘুমাও ঋ,আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই।কালকে সকালে তোমাকে একজায়গায় নিয়ে যাবো দৈবরাতি এলে।একসঙ্গেই যাবো সবাই।যেখানে নিয়ে যাবো,সেখানে তুমি একজনকে দেখবে, তাঁকে দেখলে তোমার অনেক সংশয় দূর হয়ে যাবে।নাও,এখন ঘুমাও।""
    উনি আমার হেডফোন মাইক্রোফোন খুলে বালিশের পাশে রেখে আস্তে আস্তে হাতচাপড়ি দিতে থাকেন মাথায়, ঘুম পাড়াবার জন্য।আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে আসে দেহমন, কি যেন একটা গান গাইছেন বাচকণবী, খুব মৃদু এলানো স্নিগ্‌ধ সুর, গভীর রাত্রির সমুদ্রবাতাসের মতন একটা দোলানি সেই সুরে, হয়তো এই গান এনাদের সময়ের ঘুমপাড়ানি গান।
    আমি ভাবছিলাম কার সঙ্গে কাল সকালে দেখা হবে? কেনই বা তাঁকে দেখলে আমার সংশয় দূর হয়ে যাবে? কিন্তু বেশীক্ষণ ভাবতে পারলাম না, ঘুমিয়ে পড়লাম বোধহয় তারপরেই।
  • tan | 131.95.121.123 | ০১ জুন ২০০৭ ০৩:৪৫671719
  • শরৎসকালের সোনালী রোদে অভিস্নাত বনপথ দিয়ে আমরা চারজন চলেছি।অয়স্কান্ত,আমি,বাচকনবী আর দৈবরাতি।ঋষি সকাল সকাল আমাদের নিতে এসেছিলেন গর্গের আশ্রমে।কিন্তু এখন সঙ্গে নিয়ে না ফিরে যেতে হচ্ছে কোথায় সে ওনারা জানেন,আমি পুরো ক্লুলেস।
    ঊষামুহূর্তে স্নান সমাপন হয়ে যাবার পরে বাচকণবী আমাকে ওনাদের মতন পোশাক পরিয়ে মাথার চুলগুলো চুড়া করে মাথার উপরে তুলে বেঁধে দিয়েছেন।আমি বলেছিলাম আমি তো সন্ন্যাসিনী নই,কেন আমায় এই পোশাক আর হেয়ারস্টাইল দিচ্ছেন,লোককে বিভ্রান্ত করার জন্য? অমনি উনি হেসে উঠলেন,আর কোত্থেকে এক শিশিরে ভেজা জুঁইফুলের সদ্যগাঁথা মালা এনে ঝুঁটি ঘিরে পরিয়ে দিলেন সেই স্থূল যুথীপুষ্পের মালা।বললেন এতে আর লোকের নাকি কনফিউশান হবে না।
    অয়স্কান্ত খুব অস্বস্তিভরে এইসব সাজগোজপর্ব দেখছিলো, ঠিক যেন বারণ করার ইচ্ছে, কিন্তু করতে পারছে না।
    কুরুবকফুলের অবতংস মানে কানের দুল পরিয়ে দিতে ইচ্ছে ছিলো ওনার,কিন্তু হেডফোনে বাধা সৃষ্টি হবে বলে সেটা আর পারলেন না,কিন্তু আচ্ছা করে লোধ্ররেণুর পাউডার মুখে গলায় মাখিয়ে দিলেন।
    গলায় মালা দিতে চাইলে,আমি হেসে বাধা দিলাম, বললাম, ""দরকার নেই, এতেই যখন কনফুশন দূর হয়ে যাচ্ছে,তখন বাহুল্যের কি প্রয়োজন?"
    উনি নিরস্ত হলেন,একটু দূরে গিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে দেখলেন ভালো করে,তারপরে বেশ সন্তুষ্টের মতন কইলেন,""এতেই হবে।""
  • tan | 131.95.120.53 | ০২ জুন ২০০৭ ২০:৪৮671720
  • পাহাড়ের এলিয়ে পড়া পায়ের কাছে সবুজ কুঞ্জবন,সামনে একটা ভারী সুন্দর ফলের গাছ,রসে টসটসে এত্ত এত্ত বড়ো বড়ো ফল ধরে আছে,পাখিরা খুব খুশী হয়ে কলকল করতে করতে সেই ফলে প্রাতরাশ সারছে।
    আমরা সেই কুঞ্জবনে প্রবেশ করলাম,আরেকটু এগিয়ে একটি কুটির, লতায় পাতায় এমনভাবে আচ্ছন্ন যে ঠাহর হয় না প্রথমে। আমরা দাঁড়ালাম, ঋষি দরজা নক করলেন, কিন্তু ভিতর থেকে কোনো শব্দ নেই।
    আমি চঞ্চলচোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম।কী শান্তিময় নির্জন অরণ্যভূমি,পক্ষীকূজন,পত্রমর্মর আর দূরাগত ঝর্ণার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।একেই তপোবন বলে বুঝি?
    এদিক ওদিকে চাইতে চাইতে খানিকক্ষণ পরে দেখি বনের অন্যদিক থেকে এক প্রৌঢ় জটাধারী প্রচুর সাদা দাড়িওলা সন্ন্যাসী মানুষ ধীর পদক্ষেপে হেঁটে আসছেন,কাছে এসে আনন্দিত বিস্ময়ে কি যেন বলে উঠলেন,অমনি সকলে সেদিকে ফিরে তাকালো।ঋষি দৌড়ে গেলেন ভদ্রলোকের কাছে।
    এরপরে আবেগপ্রবণ কিছু মুহূর্তের বর্ণনা বাহুল্যবোধে আর দিলাম না।কিন্তু আমার প্রশ্নাচ্ছন্ন মন নিবৃত্ত হয় নি,কেন এখানে এনারা নিয়ে এলেন আমায়? এখানেই কি সংশয় কেটে যাবে আমার? কেমন করে? কে এই প্রৌঢ় সন্ন্যাসী?
  • d | 122.162.105.201 | ০৩ জুন ২০০৭ ১০:২০671721
  • এহেহে এইবার গল্পের গরু গাছে চড়ছে। পাখীরা খুশী হয়ে কলকল করে এত্ত বড় বড় ফল খাচ্ছে??? পাখীরাও হেসে ফেলবে যে।
  • tan | 131.95.121.135 | ০৩ জুন ২০০৭ ২০:৪৬671722
  • অমা,দমদি সেকী? তুমি হাসিখুশী কলকলানো পাখিদের চেনো না? আমাদের গেরামে তো হামেশাই পাখিরা এত কলকল করে যে কানপাতা দায়! গাছের ফল খাবার সময় তো বটেই, এমনিতেও যখন ছাতারেদের দল আসে মাঠে ঘাটে, কলকলানিতে টেঁকা দায় হয়। তারপরে স্টেশান- বাজারের গাছে গাছে সন্ধেবেলা যা হয়,তা শুনলে তো ডেসিবেলের আইনের ভদ্রলোক মুচ্ছো যাবেন!
    এসব তো তোমার দেখার কথা! তুমিও তো ও দিগড়ের লোক!

  • d | 122.162.103.145 | ০৩ জুন ২০০৭ ২১:২৯671723
  • আরে কলকল করতে করতে এত্ত বড় বড় ফল খায় না মোটেই। সকালে সন্ধ্যায় যখন কলকল করে, খেয়াল করে দেখো তখন ওরা খায় না। আর বড় বড় ফল মানে তো আম, নারকোল, পেয়ারা, তরমুজ ইত্যাদি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রঙের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ঠুকরে দেখে, খায় না। টিয়াপাখীতে পেয়ারা খায়, তাও পাকা হলে, খাওয়ার সময় কিচ্ছু করে না, উড়ে যাবার সময় ট্যাঁ ট্যাঁ করে।
  • tan | 131.95.121.135 | ০৩ জুন ২০০৭ ২১:৩৩671724
  • আরে আমাদের নোনফলগাছে গোলগোল ফলগুলো পাকলে প্রচন্ড ফিঙে দোয়েল কাক কোকিল ছাতারে আসতো! সে শয়ে শয়ে,খেতো ঠোকরাতো কলকল করতো ঝগড়া করতো,বাপরে! একদল যখন খাচ্ছে,আরেকদল প্রচন্ড কিচিমিচি করে তাড়াতে চেষ্টা করছে! পুরো আন্ত:প্রজাতি দ্বন্দ!:-)))
  • tan | 131.95.121.135 | ০৪ জুন ২০০৭ ০১:০২671725
  • অনুষ্ঠানপ্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দু:খিত।:-)))
    এইবারে আবার ব্যাক টু টাইম মেশিন।
  • tan | 131.95.121.135 | ০৪ জুন ২০০৭ ০১:১৩671726
  • পরিচয়পর্ব শেষ হলে তপোবনের স্নিগ্‌ধ আশ্রয়ে চিকরিকাটা পাতার ছায়াজাল আঁকা রোদ্দুরের মধ্য দিয়ে প্রৌঢ় ভদ্রলোককে অনুসরণ করে চললাম আমরা।
    দূরাগত ঝর্ণার শব্দ ক্রমে স্পষ্টতর হয়ে উঠতে লাগলো, বুঝলাম সেইদিকেই চলেছি আমরা।
    সেখানে পৌঁছে মুগ্‌ধ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম,অপূর্ব এক ঝর্ণা নেমে এসেছে পাথরের গা বেয়ে,অজস্র জলবিন্দু ছিটকে পড়ছে,নীচে একটি জলকুন্ড সৃষ্টি হয়েছে,সেখান থেকে ক্ষুদ্র একটি জলধারা বয়ে গেছে দূরে আরো দূরে। অপূর্ব!
    জলকুন্ডের কাছে সৌভঞ্জনবৃক্ষের ছায়ায় একখানি মসৃণ চওড়া চ্যাটালো পাথর। সেখানেই সকলে আসন গ্রহণ করলাম আমরা।

  • tan | 131.95.121.135 | ০৪ জুন ২০০৭ ০২:০১671727
  • হেডফোন-মাইক্রোফোন এখনো বাচকণবীর কাছেই, অয়স্কান্ত চুপচাপ আমাদের দেখছে,দৈবরাতি আর প্রৌঢ় ভদ্রলোক কিযেন কথা বলছেন,হঠাৎ আমার দিকে চেয়ে প্রৌঢ় কিযেন বলতেই এক অদ্ভুৎ ম্যাজিক হলো,বন ঝর্ণা বৃক্ষমূলের প্রস্তরাসন সব মিলিয়ে গেলো।
    দেখলাম এক খরাপীড়িত শুকনো অঞ্চলে একখানি কুটির, হতশ্রী অবস্থা সেই কুটিরের। মাটির দাওয়ায় ছোট্টো একটি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে চুপ করে বসে আছেন এক শীর্ণা মা,মাঝে মাঝে পথের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছেন,হয়তো উনি কারুর আগমনের প্রতীক্ষা করছেন।
    এ কি দেখছি? এ কি কোনো দুর্ভিক্ষের গল্প? নাকি অন্য কিছু?
    কিভাবে এসব দেখছি? কিভাবে আমি এসবের সঙ্গে রিলেটেড? অবাক লাগছে না কেন?
    মনে হলো ঐ উদ্বিঘ্ন দুর্ভিক্ষশীর্ণা মা,ওঁর কোলের নির্জীব শিশুটি,আহার্যসংগ্রহে বেরিয়ে পড়া ওঁর স্বামী-সবাইকে যেন চিনি।কিন্তু এতো অসম্ভব! কিভাবে আমি চিনি ওদের?

  • tan | 131.95.120.60 | ০৪ জুন ২০০৭ ০৬:৩৩671729
  • কুটিরের ভিতর থেকে আরো দুটি বাচ্চা ছেলে এসে দাওয়ায় মায়ের কাছ ঘেঁষে বসে পড়লো। এরাও অত্যন্ত শীর্ণ, চেহারা দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে খুব ক্ষুধার্ত ও দুর্বল। একটি ছেলে প্রায় কিশোর বয়সী, আরেকটি ছেলে আরেকটু ছোটো।
    দূরে দেখা গেলো একজন মধ্যবয়সী মানুষ আস্তে আস্তে হেঁটে আসছেন,হাতের ছোট্টো পুঁটলিটির মধ্যে হয়তো কিছু আহার্য্যদ্রব্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ছেলে দুটি আস্তে আস্তে দাওয়া থেকে নেমে লোকটির দিকে এগিয়ে গেলো।
    সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো,পশ্চিমের আকাশটা রক্তলাল হয়ে উঠছিলো।
    ভদ্রলোকের থলিতে ছিলো কিছু আলু আর বেগুন। উঠানে কাঠকুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে সেই আলু আর বেগুন পোড়ানো হচ্ছে এখন,ভদ্রলোক সাবধানে বেগুনগুলো উল্টেপাল্টে দিচ্ছেন,হয়ে গেলে আগুন থেকে সরিয়ে মৃৎপাত্রে রাখছেন।আলুবেগুনপোড়ার সুঘ্রাণ সন্ধ্যার বাতাসে, দুর্ভিক্ষপীড়িত ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর মন ভরিয়ে তুলছে আশায়, লাল আগুনের আভা এই বাচ্চাগুলোর আর ওদের বাপমায়ের আশামুগ্‌ধ চোখেমুখে খেলা করছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন