এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • টাইম মেশিনে চড়ে

    Tan
    অন্যান্য | ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ৪৮৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • vikram | 89.100.185.32 | ০৮ অক্টোবর ২০০৬ ১৬:৫০671664
  • অর্থহীন সাইট!

    বিক্রম
  • tan | 131.95.121.127 | ০৮ অক্টোবর ২০০৬ ২৩:২৯671665
  • কোন সাইট অর্থহীন? গুরু?
    তাতো বটেই,টাকাকড়ি তো এখানে কেউ পায় না! কি মুশকিল,ও ঈশেন,মাইনেকড়ি চালু করো!!
  • tan | 131.95.121.127 | ০৮ অক্টোবর ২০০৬ ২৩:৩৫671666
  • পল্লব,
    অ্যান্টি-রিলেটিভিটি সাইটটা একটা হোক্স,কিছু বাতেলাবাজ বোকাটে বদমাশ ওখানে হিজিবিজি গজল্লা করছে,তা ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না। সিরিয়াস কাজে এইসব চলে না।
  • tan | 131.95.121.127 | ০৮ অক্টোবর ২০০৬ ২৩:৫১671667
  • পা থেকে মাথা পজ্জন্ত জ্বলে গেলো AR সাইটটা দেখে!
  • tan | 131.95.121.127 | ০৮ অক্টোবর ২০০৬ ২৩:৫২671668
  • ইচ্ছে হয় ঐ AR সাইটে গিয়ে এই গালাগালির থ্রেডটা ঝেড়ে আসি! কিন্তু বুঝবে না তো! :-((((
  • Pallab | 59.93.243.132 | ০৯ অক্টোবর ২০০৬ ০৪:০২671669
  • এও একধড়নের পোমো-তা! বেশ ভালো লাগলো এই দেখে যে বুকের পা-টা কত্ত বড়! তোমরা ক্ষেপবে জানি বলেই দিলাম। কালই খুজে পেয়েছিলাম। দের সাইটের কিছু ইন্টার্নাল চেঞ্জ করার জন্য প্রোজেক্ট ফেলেছে, তাই পেলাম। হেবি পোমো কিন্তু যাই বল।
  • Pallab | 59.93.243.132 | ০৯ অক্টোবর ২০০৬ ০৪:০৩671670
  • ট্যাঁ তাপ্পর???
  • vikram | 134.226.1.136 | ০৯ অক্টোবর ২০০৬ ১৫:২৯671671
  • ক্যানো ফ্ল্যাট আর্থ সাইট দেখোনি?

    বিক্রম
  • tan | 131.95.121.127 | ২৯ অক্টোবর ২০০৬ ২২:৩৬671672
  • চারিদিক খুব শান্ত,এখন মাঝরাত। আমি শুয়ে আছি ঋষি দৈবরাতির অতিথিশালার মেঝেতে বিছানো পুরু কোমল আস্তরণের উপরে। পাশের সুবর্ণভৃঙ্গারে জল রাখা আছে, রাত্রে যদি তৃষ্ণা পায়,তাই।ঋষির গৃহকর্মনিপুণা স্ত্রীর সবদিকে নিঁখুত নজর।অত্যন্ত সুচারুভাবে অতিথিসেবা করেছেন তিনি।
    ঘুম আসে না,অবাক লাগে,কয়েক হাজার বছরের আগের একটি রাত্রি বয়ে যাচ্ছে,কোন্‌ ভবিষ্যদুনিয়া থেকে এখানে এসে পড়েছি আমরা!!! এ কি যুক্তিগ্রাহ্য কোনো কিছু? আমার জীবনরেখা ধরে পিছিয়ে গেলে উৎপত্তির সময়েই সেটি মিলিয়ে যায়,অয়স্কান্তের ক্ষেত্রেও নির্মাণের সময়েই সেটি মিলিয়ে যায়,কয়েক হাজার বছর আগের দুনিয়ায় আমরা তো ছিলাম না,অথবা হয়তো ছিলাম,অন্যরূপে,কে জানে!
    ঘরের ভিতর বন্ধ দরজার কাছে অয়স্কান্ত বসে আছে প্রহরায়। ওর ঘুমের দরকার হয় না, কেমন আশ্চর্য জীবন!খিদে নেই ঘুম নেই, ক্লান্তি ও কি নেই? স্মৃতি আছে, স্মৃতিবেদনা আছে কি?
    অয়স্কান্তায়স্কান্তের গলার কাছে দপদপ করে উঠলো সবুজ আলো।প্রথমে সবুজ তারপরে বাদামী।আমি বুঝতে পেরে উঠলাম শয্যা থেকে।ওর কাছে গিয়ে ওখানের বোল্ট ঘুরিয়ে ছোট্টো স্লাইডিং ডোর সরিয়ে ভিতর থেকে বের করে আনলাম ইন্টারটেম্পোরাল কন্ট্যাক্ট মেশিন। প্রফেসর কথা বলতে চাইছেন নিশ্চয়।

  • tan | 131.95.121.127 | ২৯ অক্টোবর ২০০৬ ২৩:০৭671674
  • কানে দিতেই সেই পরিচিত গলা,""হ্যালো হ্যালো ঋ, শুনতে পাচ্ছ? আমি শঙ্কু বলছি,গিরিডি থেকে। আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?""
    আমি একেবারে মন্ত্রমুগে্‌ধর মতন বললাম,""হ্যাঁ হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি।যদিও নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না।""
    ওনার হাসির শব্দ ভেসে এলো,""কেন,কানকে কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?""
    ""কয়েক হাজার বছর পার হয়ে আপনার গলা আসছে এই সুপ্রাচীন মধ্যরাত্রে, এ কি প্রথম ধাক্কাতেই বিশ্বাস করে ফেলা যায় নাকি?""
    ""হা হা,খুব ভালো, তোমার বিস্ময়বোধ নষ্ট হয় নি।কিন্তু তোমার ভ্রমণ কেমন চলছে? অয়স্কান্ত ই বা কেমন বুঝছে ব্যাপারটা?""
    ""ভ্রমণ ভালোই চলছে। এ ঋষিকে যতটা জার্ক টাইপের বলে মনে হয়েছিলো কাগজপত্তরের তথ্য থেকে,ইনি একদমই সেরকম না, বেশে সহজ সরল হাসিখুশী ই মনে হচ্ছে এখনো পর্যন্ত। কিন্তু ঐ ডিসাইসিভ সভায় কিরকম দেখা যেতো তা অবশ্য স্বাভাবিক সময়ের ঋষিকে দেখে বোঝা নাও যেতে পারে।খানিক ব্যাক গিয়ারে দিয়ে ওখানে মানে ঐ সভায় পাঠাতে পারেন?""
    ""আরে তা পারলে তো ওখানেই প্রথমে টার্গেট করতাম।শোনো,এক্সপেরিমেন্ট সাকসেসফুল যখন একরকম হয়েইছে, এইবারে ফিরে এসো।""
    ""সেকি? আরেকটু দেখবো না? ঋষি বলেছেন পাশের আশ্রমে নিয়ে যাবেন কাল, সেখানে ওনার গার্লফ্রেন্ড থাকেন।""কথা শেষ করে হেসে ফেলি।
    ""এই,বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে ইয়ার্কি করছো ঋ? এটা কি ঠিক ভদ্র ব্যবহার হচ্ছে?""
    ""না না মাফ করুন,ওনার সামনে তো আর এইসব বলবো না,উনি ক্ষেপেটেপে গেলে কেলেংকারী।সাধারণ বয়োজ্যেষ্ঠ্য তো না,কয়েক হাজার বছরের জ্যেষ্ঠ। উফ্‌ফ্‌ফ।ঠিক আছে,কাল আবার কথা বলবেন। এইবারে রাখি?""

  • tan | 131.95.121.127 | ২৯ অক্টোবর ২০০৬ ২৩:৩৭671675
  • আইটিসিএম এর সুইচ অফ করে ভাঁজ করে অয়স্কান্তের গলার সকেটে রেখে স্লাইডিং ডোর বন্ধ করে দিয়ে ফের এসে শুয়ে পড়লাম।ঘর অন্ধকার কিন্তু অয়সের দুখানা তর্জনীর ডগায় হাল্কা লাল আলো। জ্বলে নেভে, জ্বলে জ্বলে নেভে। ক্লান্ত অথচ ঘুম আসে না, ঐ জ্বলানেভা আলোর দিকে চেয়ে চুপ চুপ চুপ করে শিথিল হয়ে শুয়ে রইলাম, ছন্দময় সেই আলো একসময় ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
    একঘুমে রাত কাবার করে জেগে দেখি বাইরে শিশিরসিক্ত শরৎসকাল ঝলমল করছে, সূর্যোদয় হয়ে গেছে, অয়স্কান্ত পাশে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে পড়ে বলছে,""নোমোস্কার। কেমন আছেন?""
    উঠে পড়লাম, আশ্রম জেগে উঠছে আস্তে আস্তে, বেশ কিছু জায়্‌গায় তো জোরকদমে কাজ শুরুই হয়ে গেছে। কিছু কিছু লোক হয়তো ঊষামুহূর্তে বা তারও আগে উঠে পড়ে কাজ লেগে যান,কাজকর্ম তো কম নয় আর! সব কিছু ম্যানুয়ালি করতে হয়, কিছু পশুচালিত সরল যন্ত্র আছে বটে, যেমন গোশকট, গোচালিত লাঙল, সর্ষেদানা থেকে তৈলনিষ্কাশনের জন্য গোচালিত যন্ত্র, কিন্তু সে যৎসামাণ্য। বাকী সবই মানুষকে করতে হয়। রান্নাবান্না ধোয়ামোছা থেকে শুরু করে হাওয়া করা অবধি। কালকে দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে আমরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমার মুখে মেশিনে জামাকাপড় কাচা,ধোয়া শুকানো ইস্ত্রী করা মেশিনে বাসনামাজা মেশিনে পাখা ঘোরা এইসব শুনে ঋষির দুজন স্ত্রীই একেবারে অত্যন্ত অবাক হয়ে গেছিলেন। ঋষির হেডফোনটাই এনারা দুজন ভাগাভাগি করে একটু একটু করে শুনছিলেন আর যখন যিনি শুনছেন,তখন তিনি বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠে সপত্নীকে অনুবাদ করে বোঝাচ্ছিলেন।শুনে অপরজন আরো জোরে চিৎকার করে উঠছিলেন। ঋষি ছিলেন না, উনি দ্বিপ্রহরে বিশ্রাম নেন না, উনি পড়াতে চলে গেছিলেন দূরের অন্য কুটিরে।
  • tan | 131.95.121.127 | ০৫ নভেম্বর ২০০৬ ০৪:৩৩671676
  • কাত্যায়নীদেবীর রান্নাবান্না সত্যি লা জওয়াব।গতকাল মধ্যাহ্নভোজনে আর সায়মাশে এত ভালো ভালো সব সুস্বাদু রান্না পরিবেশন করেছেন কি বলবো!
    ভাত,লুচি,রুটি, পঞ্চশাক,পঞ্চব্যঞ্জন,ডাল, মাংসের নানা পদ, দধিমিষ্টান্নাদি, শেষে মুখশুদ্ধি মশলা পর্যন্ত পরিপাটী খাবার! পরিবেশনও কী শৈল্পিক! একেবারে দুইপরত কলাপাতা,এককোণে টুকরো লেবু আর নুন,আচার,লঙ্কাভাজা---কোনো কিছু বাদ পড়ে নি।সুগন্ধি পানীয় জল গেলাসে গেলাসে।অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে সকলেই আহার গ্রহণ করছিলেন!
    (ফিরে যাবার পরে প্রফেসর অডিভিডিতে সবই দেখবেন,কিন্তু এনিয়ে বেশী পোশ্নো কল্লেই কৌশলে এড়াতে হবে,নইলে উনি আসতে চাইবেন এই অতীতকালের নেমন্তন্নে)
    ঋষি দৈবরাতি লোকটা ভাগ্যবান! এমন সুগৃহিনী এক স্ত্রী আর অমন মেধাবিনী আরেক স্ত্রী! যদিও আমাদের কালে জন্মালে বিপদে পড়ে শ্রীঘরে যেতে হতো একাধিক স্ত্রী রাখার জন্যে,কিন্তু তাঁর আমলে তো ঐরকমই নাকি দস্তুর! ঠিক সময়ে ঠিক ঠিক মানুষের মধ্যে ঠিক ঠিক জায়গায় জন্মানো যে কতদূর প্রয়োজন তা বেশ বোঝা গেলো।
    ঘুমটুম ঝেড়ে ফেলে চোখমুখ ডলে উঠে পড়লাম,হাতমুখ ধুতে হবে।দরজা ঠেলা মেরে খুলতেই শব্দে দৌড়ে এসেছেন সদাব্যস্ত কিন্তু হাসিমুখ কাত্যায়নী।হাতে রুপোর ভৃঙ্গারে জল আর নিমডাল।বললেন নিমডাল দিয়ে দাঁতন করে মুখ ধুয়ে নিতে।আমি তো যাকে বলে টরেটম বনে গেছি! এরকম আগে থেকেই প্রয়োজন বুঝে জিনিসপত্র ঠিক করে রাখা তো খুবই সাংঘাতিক ব্যাপার! ইনিও তো দেখা যাচ্ছে কম মেধাবিনী নন!
  • tan | 131.95.121.121 | ০৭ মে ২০০৭ ০০:৩৭671677
  • প্রাতরাশের পরেই ঋষি তাঁর শিষ্যদের নিয়ে কিছু রিচুয়াল পালনের পরে সাদা তিতিরদের খই খাইয়ে এসে আমাকে কইলেন,""ঋ, চলো, গর্গের আশ্রমে।বাচক্‌ণবী থাকেন ঐ আশ্রমে,উনি নারী ঋষিদের সূক্তগুলির সংকলন করছেন ঋগ্বেদ থেকে। চলো, কথা বলে তোমার হয়তো ভালো লাগবে।চিন্তা নেই,তোমার এই জন্তরমন্তর তখন আমি খুলে ওনাকে দেবো।সরাসরি কথা কইতে পারবে,আমাকে থাকতে হবে না।""
    আমি সন্দিগে্‌ধর মতন ওনার মুখের দিকে তাকালুম,ইয়ার্কি না সিরিয়াস বোঝার জন্য,কিন্তু ওনার মুখে দুর্জয় গাম্ভীর্য। দৈবরাতির অদ্ভুত ক্ষমতা,গম্ভীরমুখে দিব্যি ইয়ার্কি ফাজলামো করে যান,কেউ ধরতেও পারে না।
    আমি,ঋষি আর অয়স্কান্ত বেরিয়ে পড়ার পর চলছি তো চলছিই,পথ আর ফুরায় না!মাঠের পর মাঠ,টিলা...তারপরে আবার মাঠ...
    ঘেমেঘুমে একাকার হয়ে যতবার জিগাই আর কদ্দুর? উনি মিহি হেসে বলে যান,এই তো আরেকটু।
    আমার দিল্লি দুরস্ত্‌ মনে পড়ছে,আদৌ গিয়ে পৌঁছাবো তো?
    দৈবরাতির ভ্রূক্ষেপ নেই,ওনার বোধহয় এসব পায়চারী করার সামিল।এদিকে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। যন্ত্র-সভ্যতা আমাদের যাতা করে ছেড়ে দিয়েছে।
    মাথার উপরে রোদ্দুর চড়ে উঠেছে,ওড়না মাথায় দিয়ে এবারে হাঁটতে হাঁটতে তেড়িয়া হয়ে কইলাম,""শুনুন ঋষি,আমি এখন একটু ঐ গাছতলায় বসবো।এত টানা হাঁটতে পারছি না।""
    উনি খুব অপ্রস্তুতমুখে হাসলেন,বললেন,""হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।""
    আমি গিয়ে জারুলফুলের মতন দেখতে ফুলফোটানো গাছটার গাঢ় ছায়ায় ক্লান্তভাবে বসে পড়লাম।অয়স্কান্ত নীরবে এসে আমার পাশে বসে পড়লো।
    ঋষি দৈবরাতি আস্তে আস্তে এসে বসে পড়ে মাফ চাইতে লাগলেন,এতটা হাঁটতে আমার কষ্ট হবে বুঝতে পারেন নি বলে।
    আমি তড়িঘড়ি ওনাকে থামিয়ে কইলাম,""তাতে কি আছে? হাঁটা ভালো,অনেক এক্সারসাইজ হয়।আমার নেহাৎ অভ্যেস নেই,তাই।তাবলে আমাদের আমলে সবাই আমার মতন এমন ঠুনকোপানা না ঋষি।এই তো আমার এক বন্ধু ছিলো,দুই ঘন্টায় ছাব্বিশ মাইল দৌড়াতো।""
    দৈবরাতি হাসছেন,মাফ চাওয়ার সময় ওনার মুখ কালছে লাগছিলো,এখন ফের রোদ্দুর রোদ্দুর লাগছে।
    আমি ওনার সঙ্গে গল্প জুড়লাম,""ঋষি, আপনি প্রায়ই যান বুঝি গর্গের আশ্রমে?""
    ""হ্যাঁ,নানা কাজে যেতে তো হয়ই।""
    ""একা যান,নাকি সঙ্গে শিষ্যেরা থাকে?""
    উনি সতর্ক হয়ে গেছেন,আমাকে একবার ভালো করে জরীপ করে কইলেন,""মাঝে মাঝে শিষ্যরা থাকে,মাঝে মাঝে একা।কিন্তু,একথা কেন জিজ্ঞাসা করছো?""
    আমি গলা ছেড়ে হেসে উঠে বললাম,""অমনি।জানতে ইচ্ছে হলো।""
    উঠে পড়লাম,বিশ্রাম নেয়া হয়ে গেছে।

  • Prantik | 132.186.106.33, 203.101.110.2 | ০৭ মে ২০০৭ ১৭:৪৮671678
  • অদ্ভুত ভালো হচ্ছে। অভিনন্দন!
  • tan | 131.95.219.24 | ০৮ মে ২০০৭ ০১:০৭671679
  • থ্যাংকু,প্রান্তিক।(সায়েবদের মতন বাও করে:-)))))
  • tan | 131.95.219.24 | ০৮ মে ২০০৭ ০১:১৪671680
  • আরো অনেকটা হেঁটে দুপুরবেলা গিয়ে পৌঁছানো গেলো গর্গের আশ্রমে।এটা দৈবরাতির বিশাল সেই আশ্রমের মতন অত বড়ো না,তবে সুন্দর খুব। গাছগাছালির ছায়ায় ছায়ায় কুটিরগুলি সুন্দর মানিয়েছে,সুন্দর সুন্দর ফুলফলের গাছপালা,পোষা ময়ূর ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুলের ঝাড়ের কাছে,কাজলজলের একটি স্নিগ্‌ধ দিঘি বটের ছায়ায়।
    আশ্রমের গেটে আমাদের অভ্যর্থনা করে কয়েকজন সঙ্গে করে নিয়ে চললেন অগ্নিগৃহের দিকে।ওরা অয়স্কান্তকে দেখে হকচকিয়ে গেছে। যেতে যেতে ঋষি ওদের কাছে আমার আর অয়স্কান্তের পরিচয় দিচ্ছিলেন।এত স্বাভাবিক স্বরে এমন ""এতো কিছুই না"" ভঙ্গীতে বলছিলেন হয়তো ওদের ভয় বিস্ময় ইত্যাদি কাটিয়ে দিতে,কিন্তু ওদের বিস্ময় উত্তরোত্তর বেড়েই চলছিলো।

  • Som | 169.200.204.17 | ০৮ মে ২০০৭ ০১:৩৪671681
  • দারুন, এইসব তপোবন মুনি ঋষির কথা পড়ে কেমন অহিংস ছাগল ছাগল লাগছে। আচ্ছা tan তুমি যে অতীতে গিয়ে জল ফল খেলে, বিছানায় শুলে ( ধরে নিলুম দু একটাঅ ছারপোকা মারলে তাতে তো আমাদের বর্তমান বদলে যেতে পারে। ( দ্রষ্টব্য রে ব্র্যাডবেরী-র সাউন্ড অফ থাণ্ডার)

    ব্যাপার-টা ভালো হবে কি তখন ?
  • tan | 131.95.121.121 | ০৮ মে ২০০৭ ০১:৪৬671682
  • কাকে বলো বর্তমান আর কাকেই বা বলো অতীত? ভবিষ্যৎ ই বা কি?
    ক্লাসিকালে এসব আলাদা করা যায়,কোয়ান্টামে সব ই হলো গিয়ে সম্ভাবনামাত্র। একটি একটি ঘটনার অজস্র অতীত,একটি একটি ঘটনার অজস্র ভবিষ্যৎ।একেবারে শংকু আকৃতি ব্যাপার।
    কিন্তু তাতে তোমার ছাগল-ছাগল লাগার তো কথা নয় হে সোম!:-)))))
  • Som | 169.200.204.17 | ০৮ মে ২০০৭ ০১:৫৫671685
  • এই রে .... ক্ষমা। কোয়ান্টাম থিওরি (হেঁচকি)। আমি খুব ই মুখ্‌খু মানুষ। এই সব বুঝি না। শুধু ভাবছিলেম যে ফল তুমি খেলে সেটা দু দিন বাদে হয়ত কোনো মুমূর্ষু পাখি, বানান বোধহয় ভুল লিখ্‌লাম, যাগ্গে, হাঁ সেই পাখি না খেতে পেয়ে মরে গেলো। ecosystem এ একটা বিকট গোলযোগ - হয়ত তুমি এখন যেখানে আছো সেটা একটা জানোয়ার অধ্যুষিত গহন অরণ্য!!!

    যাই হোক ... সে ভয় আর নেই। কি সব কোয়ান্টাম না কি আছে। সে সামলে নেবে।

    গপ্প চলুক... দারুণ হচ্চে।
  • tan | 131.95.121.121 | ০৮ মে ২০০৭ ০১:৫৫671683
  • মার্ক টোয়েনের ""এ কানে্‌কটিকাট ইয়াংকি ইন কিং আর্থারস কোর্ট"" পড়ো সোম,সেখানে বেশ সহিংস ডুয়েল টুয়েল আছে,দিব্যি নায়ক অতীতে রাজা আর্থারের সময়ে গিয়ে সংসার করে ফের ভবিষ্যতে ফিরে আসেন।নায়ক আবার ইয়াংকি ইঞ্জিনিয়ার,অতীতে গিয়ে বাস ফোন বানিয়ে হুলুস্থূলু কান্ড! আর দ্যাখো সেই কারণেই কিনা কে জানে বৃটিশের কি বোলবোলা ই না হলো!:-)))
  • Som | 169.200.204.17 | ০৮ মে ২০০৭ ০১:৫৮671686
  • পড়েছি ওটা।

    আচ্ছা তোমার ঘোরা হলে time machine টা একবার ধার দিও। কাল সাধের কাপটা ভেঙ্গে ফেলেছি। দেখি ফেরত পাই কি না।
  • tan | 131.95.121.121 | ০৮ মে ২০০৭ ০২:০৬671687
  • আরে আমিও এসব কিসসু বিশেষ জানিনে,আর মেশিনটা শংকুর,আমার না।
    এইসব কোয়ান্টাম ফোয়ান্টাম আপেক্ষিকতা নিয়ে ভালো রে বলে একজনকে জিগিয়েছি,সে আবার সর্বক্ষণ অংকে বুঁদ হয়ে থাকে হেরোইনের নেশার মতন,তো জিগিয়েচি কি জিগাই নি,উনি গোল্লা গোল্লা ছড়িয়ে যাওয়া রিঙের মতন কিসব এঁকে মারাত্মক সব অংক করতে শুরু করলেন। ইয়াল্লা বলে দৌড় মেরে পালালুম।:-)))
  • Som | 169.200.204.17 | ০৮ মে ২০০৭ ০২:০৯671688
  • :-)))))

    বিঘ্ন ঘটানোর জন্যে দু:খিত। এবার গপ্পটা।
  • tan | 131.95.121.121 | ০৮ মে ২০০৭ ০২:৩০671689
  • আশ্রমে আমরা আরো ভেতরে ঢুকতে ঢুকতেই খবর ছড়িয়ে গেলো।যোগাযোগের ব্যাপারে মানুষের উৎসুক কান ও মুখের মতন যন্ত্র খুব কমই আছে বলে হঠাৎ মনে হলো।খবর ছড়িয়ে যেতে তিন সহস্র বৎসর ভবিষ্যতের পর্যটকদ্বয়,তাদের মধ্যে আবার একজন মানবাকার যন্ত্রমানব,এদের দেখবার জন্য ভীড় বাড়তে লাগলো,তবে কিনা এরা সব ব্রহ্মচর্যব্রতধারণকারী শিক্ষার্থী,তাই সংযত ভদ্র আচরণ,মাত্রাছাড়া ব্যবহার দেখাচ্ছে না।বিস্ময় সীমা অতিক্রম করলেও তা প্রকাশ করছে না।
    নিজেকে বেশ সেলিব্রিটি সেলিব্রিটি লাগছিলো,অয়স্কান্তের নিশ্চয় এইসব অসুবিধা নেই। আর ঋষি দৈবরাতি তো নিজেই ততদিনে সেলিব্রিটি,ওনার এসব সয়ে গেছে।তাছাড়া পোড়খাওয়া লোক,সামান্য ব্যাপারে বিচলিতই বা হবেন কেন?
    অগ্নিগৃহের ভিতরে কোনো রিচুয়াল চলছিলো,সেখানেই বাচকণবী ছিলেন।খবর পেয়ে বেরিয়ে এলেন।এনার বেশবাস সন্ন্যাসিনীর মতন,কালচে বাদামী চুলগুলি জটা করে মাথার উপরে তুলে বাঁধা,গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, গৈরিকবসনের উপরে মৌঞ্জীতৃণের মেখলা।স্বর্ণাভ ঘৃতের মতন উজ্জল দেহবর্ণ,ছেনিকাটা সুগঠন মুখ,তীক্ষ্ণ নাসা,একজোড়া চোখ নীলকান্তমণির মতন জ্বলজ্বলে।একেই এত রোদ্দুরে এত হেঁটে এসে আমার অবস্থা কাহিল,তার উপরে এই সেলিব্রিটি অভ্যর্থনা,এরপরে এই অগ্নিময়ী সন্ন্যাসিনীকে দেখে আমার চোখে ধাঁধা লেগে গেলো।সাময়িক দৃষ্টিবিভ্রমের মতন,মনে হলো বেদীর শুভ্র হোমশিখা চলমান হয়ে অগ্নিগৃহের থেকে বেরিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
  • tan | 131.95.121.121 | ০৮ মে ২০০৭ ০৫:২০671690
  • ঋষি দৈবরাতি আমাদের পরস্পরের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমার চোখ ততক্ষণে সয়ে এসেছিলো, তখন আর ধাঁধা লাগছিলো না,অল্প নীচু হয়ে বাও করে বললাম, ""পরিচিত হয়ে ধন্য হলাম।""
    উনি যেন কি বললেন, আমার বোধগম্য হলো না, ঋষি দৈবরাতি অনুবাদ করে দিলেন,"ইনি বলছেন,ইনিও তোমার সঙ্গে পরিচিত হবার সৌভাগ্য লাভ করতে পেরে ধন্য।"
    অমা, এমন সময় কথা নেই বার্তা নেই অয়স্কান্ত এগিয়ে এসে রীতিমত বাও করে মহিলাকে বললো কিনা, "নোমোসকার, ক্যামোন আছেন?""
    আর একটুও অবাকটবাক বা বিরক্ত কিছু না হয়ে দিব্যি ঋষিও কথাটা অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিলেন মহিলাকে।
    বাচক্‌ণবী মৃদু হেসে আমাদের কি যেন অনুরোধ জানালেন।ঋষি বুঝিয়ে দিলেন ইনি ওনার পাঠকক্ষে আমাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
    সম্মত হয়ে আমরা ওনার সঙ্গে সঙ্গে চলাম অগ্নিগৃহের সামান্য দূরে অবস্থিত সুন্দর ছিমছাম কুটিরটির দিকে।একটি চিত্রল হরিণশিশু ছুটে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো,বাচক্‌ণবী নীচু হয়ে হরিণটার ঘাড়ে হাত বুলিয়ে কি যেন বলে দিলেন ওর কানে কানে অস্ফুটস্বরে,হরিণটা দৌড়ে চলে গেলো। কুটীরের বারান্দায় একটা বাচ্চা সিংহ বসে ছিলো,আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে উঠলো।একদম ছোটো,বাচকণবী নীচু হয়ে ওকে কোলে তুলে নিলেন।ঋষি দৈবরাতি আমাদের কইলেন,""সিংহের বাচ্চাটা একদম ছোটো থেকে আছে,ওর মা ফেলে চলে গেছিলো,আর খোঁজ নেয় নি।বাচকণবী তুলার পলতেয় করে দুধ খাইয়ে বাঁচিয়েছে। একটু বড়ো হলে বনে দিয়ে দেবে।এরকম প্রায়ই হয়। অনেক সিংহশাবককেই ওদের মা ফেলে জায় কমজোর দেখলে।""
    আমি একেবারে যাকে বলে থ,এসব আমার সময়েও আমি কখনো চোখের সামনে দেখিনি,জেনে গুডাল ডায়ান ফসী এদের কথা পড়েছি মাত্র,তাও দূর স্বপ্নদেশের ছবির মতন কাহিনি সেসব।এখন এখানে...
    বাচকণবী আমাদের ঘরে বসতে আসন দিয়ে কি যেন অনুমতি প্রার্থনা করলেন, অনুবাদে বোঝা গেলো সিংহাশাবকটিকে সরমার কাছে পৌঁছে দিয়েই তিনি আসছেন।
    সরমা নাকি আশ্রমের একটি পোষা মহিলা কুকুর।মা-হারা বিভিন্ন পশুশাবকদের নাকি সে দেখভাল করে।

  • tan | 131.95.121.121 | ১০ মে ২০০৭ ০০:৩০671691
  • বাচক্‌ণবীর পাঠকক্ষখানি খুব সুন্দর,না-গরম না-ঠান্ডা,নাতিশীতোষ্ণ।মাঝে মাঝে হাল্কা হাওয়া আসছে পাশের উদ্যান থেকে,তাতে অতি হাল্কা অতি মধুর পুষ্পসৌরভ।
    শীতলপাটি বিছিয়ে বসে আমরা কথা কইছিলাম,দৈবরাতি ওনার মাইক্রোফোন হেডফোন বাচকণবীকে দিয়ে দিয়েছেন, আমরা মানে আমি আর অয়স্কান্ত সারাদিন ও রাত্রির আতিথ্য স্বীকার করেছি,পরদিন সকালে আমাদের ফের নিতে আসবেন দৈরাতি।বাচকণবী ওনাকেও থাকতে বলছিলেন,কিন্তু ঋষি ভদ্রলোক একেবারে আঁতকে উঠে কইলেন,""বলো কি? আমার পড়ানো নাই? সকালের পড়ানো টড়ানো কিছুই হয়নি,দুপুরের পরও আমি না গেলে একেবারে দক্ষযজ্ঞ হয়ে যাবে ঐখানে।গিয়ে হয়তো দেখবো....কি দেখবো ভগবান জানেন...কিছু মনে কোরো না বাচক্‌ণবী, কিছু মনে কোরোনা ঋ, আলোচনার জন্য থাকতে পারলে আমার খুব ভালো লাগতো,কিন্তু নিরুপায়।ফিরতেই হবে। ঠিক আছে,আমি আসি তাহলে।""
    বাচক্‌নবী রেগে গেলেন,মুখ গনগনে করে কি যেন বললেন,বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে দৈবরাতি আমার দিকে ফিরে আক্ষরিক অনুবাদ করে দিতে লাগলেন,ঋ, উনি কইছেন ""অতিথি হয়ে এসে শুধু মুখে ফিরে যাবে ঋষি? আমার অধোগতি না ঘটালে তোমার মনের শান্তি হবে না, না? ঠিক আছে যাও,বয়েই গেছে তোমাকে কিছু খেতে দিতে আমার।""তারপরে দেখি উনি মহিলার দিকে ফিরে কইলেন,""সম্মনিত ভবিষ্যকালের অতিথির সামনে এসব বোলো না আমায়।উনি কি মনে করবেন?দাও,কি দেবে দাও,সরবৎ টরবৎ হলে ভালো হয়,বড্ড তৃষ্ণার্ত।ঋকেও দেবে,উনি এতটা হেঁটে অত্যন্ত পরিশ্রান্ত।সরবৎ খেয়েই আমি বিদায় নেবো,দেরি করে বাড়ীতে গেলে ফেরামাত্র ডবল সাঁড়াশী আক্রমণে আমি একেবারে বৃন্দাবন দেখবো।"" উনি হাসছেন কইতে কইতে।
    সরবৎ আনতে যেতে যেতে চোখ বাঁকা করে কিযেন বলে গেলেন বাচকণবী।এটা একটুও অনুবাদ করলেন না ঋষি।কিজানি বাবা,কিসের মধ্যে এসে পড়লাম হে মাকালি!
    সরবৎ খুব ভালো ছিলো,দধিশর্করা সহযোগে শীতল জলের সরবৎ,অমৃতহেন স্বাদ।
    সরবৎ খেয়েই দৈবরাতি উঠে পড়লেন।বিদায় নেবেন। আমরা একটু এগিয়ে ওনাকে গেটের কাছ অবধি পৌঁছে দিয়ে এলাম,উনি চলে যেতে যেতে একবার ফিরে তাকিয়ে হেসে কিযেন বললেন।
    ফিরে এসে পাঠকক্ষে আমরা আলোচনায় বসলাম।
  • tan | 131.95.121.121 | ১১ মে ২০০৭ ০০:২৬671692
  • দিনের কড়া আলো গবাক্ষপথে মধুর হয়ে এসে পড়েছে আমাদের শীতলপাটিতে,অয়স্কান্ত চুপ উদাস হয়ে মেঝেতে বসে আছে হাঁটুমুড়ে,আমি শীতলপাটিতে বাবু হয়ে বসে চুপ করে বসে বসে শুনছি বাচক্‌ণবীর কথা।উনি ঋগ্বেদের নারী ঋষিদের রচিত ঋকগুলি সংকলন করেছেন, সেইসব ঋকে তাঁরা কি বলতে চেয়েছেন, মানবহৃদয়ের কি প্রার্থনা উঠে গেছে উর্ধলোকের দিকে সেইসব পংক্তির মধ্য দিয়ে, সেসব কথা বুঝিয়ে বলছিলেন।
    সূর্যা, অপালা, বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা, যমী ...
    এনার কথা অদ্ভুত সুরেলা,যাদুর মতন। শুনতে শুনতে আমি যেন দেখতে পাচ্ছিলাম মন্ত্রোচ্চারণরত মানুষগুলিকে,কোনো এক সুদূর সকালে।
  • tan | 131.95.121.121 | ১১ মে ২০০৭ ০১:১৮671693
  • মিত্র বরুণ ইন্দ্র সূর্য জল মেঘ....আশ্চর্য প্রার্থনামন্ত্র সব, কী অদ্ভুত সুরেলা,কী আশ্চর্য সচ্ছন্দ দৃঢ় অথচ কী কোমল! এইজন্যেই কি ইনি নারী ঋষিদের রচনাগুলি সংগ্রহ করেছেন? জলের মতন টলটলে বয়ে যাওয়া এইসব ঋক,পুরুষদের ঋকগুলি হয়তো পর্বতের মতন কঠিন,আকাশস্পর্শী কিন্তু স্থানু।তারই পাশ দিয়ে কুলে কুলে মন্ত্রকথা কইতে কইতে এগুলো চলে গেছে কাজলরেখা নদীর মতন,তরল কোমল বেগবতী।
    বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির স্তবগান,সূর্যকে চন্দ্রকে মেঘকে আকাশকে পার্সনিফাই করে তাঁদের জন্য রচিত সূক্ত। কিন্তু কোনো একটা গভীর কথা কোথাও আছে,অনধিকারী অব্রতচারী আমি ধরতে পারছি না। এটা কি কথোপকথন? কোনো এক সবের মধ্যে কোথাও কোনো যোগসূত্র বোঝানোর জন্য? নাকি কেবল কবিতাই শুধু? শব্দের ফুলঝুরি,পোয়েটিক লাইসেন্স নেওয়া বানানো কথামালা? নাকি রহস্যাকারে কোনো অন্য কথা ভেতরে বলে দেওয়া?
    ভাবনায় পড়ে গেলাম।তিনহাজার বছর পরের আমরাও হয়তো এখনো একই উপাসনা করি, পদ্ধতিটা আলাদামাত্র। প্রাকৃতিক শক্তিকে জানার ও জেনে সেটাকে কাজে লাগাবার চেষ্টাই তো করছে সমস্ত বিজ্ঞান,তাই নয় কি? আমাদের অংকের আঁকিবুকিও তো সেসব না-চেনা মানুষের কাছে রহস্যবিদ্যাই মনে হবে!
    এখন ঋষি বাক্‌ এর কথা বলছেন বাচকণবী,ইনি যে ঋক রচনা করেছেন সে অসাধারণ উচ্চমার্গীয়,যোগযুক্তা হয়ে ইনি বলছেন, সৃষ্টির শুরুতে আমি ছিলাম, আমি আকাশকে প্রসব করেছি,আমিই সেই। অহং রাষ্ট্রী সঙ্গমণী,প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম।
    কথা শুনতে শুনতে আমি আবিষ্ট,উনি কথা থামালেও মন্ত্রগুলির সুরের রেশ কানে গুণ গুণ করে...
    হঠাৎ আমি সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম,""বাচক্‌ণবী, যদি কিছু মনে না করেন, আপনি শুন:শেপের কথা বলতে পারবেন আমায়?""
    উনি চমকে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন প্রদীপের মতন জ্বলজ্বলে দুখানা চোখ মেলে।

  • tan | 131.95.121.121 | ১১ মে ২০০৭ ০৬:২৮671694
  • অত্যন্ত সতর্ক ও শক্ত গলায় বাচকণবী বললেন, ""শুন:শেপের কথা কিকরে জানলে?""
    আমি যথাসম্ভব শান্ত গলায় বললাম,""জেনেছি এখানে আসার আগে এই কাল সম্পর্কে অনুসন্ধান করে।কিন্তু পুরানো মিথ-ইতিহাসে তো সবই মিশে থাকে,কোন্‌টা সত্যি হয়েছিলো কোন্‌টা রূপক অতদূর থেকে বোঝা যায় না।তাই আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি।""
    ""বুঝতে পারছি।কিন্তু আমাকেই বা কেন? ঋষি দৈবরাতি স্বয়ং আছেন,ওনাকে কেন জিজ্ঞাসা করোনি?""
    ""ওনাকে জিগিয়েছিলাম।উনি আপনার চেয়েও বেশী শক্ত হয়ে গেলেন। তাই আনকথা-বানকথা বুনে আমায় ব্যাপারটা থেকে ওনাকে সরাতে হলো।উনিও ওটা সিম্বলিক হতেও পারে বলে হাঁফ ছাড়লেন। কিন্তু আমার কৌতূহল যায় না,আর কাউকে ও তো জিজ্ঞাসা করা তো যাবে না,কেউ তো এইসময়ে নেই।সেই স্বার্থপর রাজা, সেই অদ্ভুত সন্তানবিক্রয়কারী বাপমা,সেই যুপে বাঁধা বালক, কালান্তক খড়্‌গ হাতে ঘাতক---কেউ তো নেই!কবেই তো তারা মিলিয়ে গেছে সেই পুরাতন রক্তসন্ধ্যাটির মতন। আপনি বলুন দেবী,যদি কোনো কিছু আপনার জানা থাকে।""
    উনি অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে রইলেন চুপ করে,তারপর খুব আস্তে আস্তে কইলেন,""কি হবে তোমার শুনে? তোমার জানা গল্প আর আমার জানা গল্প এক হোক,ভিন্ন হোক,দুইয়ের কাছেই তো গল্প মাত্র।সত্যি সত্যি চেনা চোখে দেখা কানে শোনা হাতে ছোঁয়া তো আমারও নয়!তবে আমার গল্প কেন বেশী বিশ্বাসযোগ্য হবে? ""উনি হাসছেন,কিন্তু তাতে এখন তাতে আর আগুন-আভা নেই,অশ্রুজলের মতন সে হাসি টলটল করছে।
    ডানহাত তুলে চোখ মুছতে মুছতে উনি বললেন সে বলেছিলো,অবাধমানি জীবসে।আমাদের মুক্ত হয়ে বাঁচতে দাও।খুলে দাও সব পাশগুলি।এটা কি সকলের ক্ষেত্রেই সত্য না? রূপক কি রূপক শুধু?
    ওর মা,ওর মা... ওর মা বলেছিলো এইটাকে দিয়ে দাও,ছোটোটাকে দেবো না,এইটাকে দিয়ে দাও...এইটাকে বলি দিক ওরা।
    ও কাঁদছিলো,খড়গ হাতে ঘাতক থেমে গেলো,বললো ""আমার ঘরেও ছেলেপুলে আছে,পারবো না এর গলা কাটতে।""
    তখন... তখন...ও: কী ভয়ংকর! তখন ভীড়ের থেকে ওর বাবা এসে বললো আরো অর্থ পেলে সে নিজেই ছেলেকে বলি দিতে পারে।
    এইবারে কান্নায় স্বর ডুবে গেলো,আমি অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়ে উপবিষ্ট ওঁর মৌঞ্জীমেখলার কাছে নত হয়ে বললাম, ""বলতে হবে না।ওসব বলতে হবে না।একদম কিচ্ছু বলতে হবে না আপনার। আমি খুব দু:খিত।আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।""

  • tan | 131.95.121.121 | ১২ মে ২০০৭ ২২:৫৫671696
  • উনি কাপড়ের প্রান্ত দিয়ে জলেভেজা মুখ মুছতে মুছতে বললেন,""না,না,ঠিক আছে।ঠিক আছে।সত্যি তো তুমি তো জানতে না।""
    ""আর,শেষ পর্যন্ত নিশ্চয় বলি দেয় নি,গল্পে তো তাই বলে,না?""
    ""না,তা দেয় নি।কৌশিক তো ওকে বরুণমন্ত্র শিখিয়ে দিলেন কিনা! স্বয়ং বরুণ এসে ওকে মুক্ত করে দিলেন তারপরে।""
    বৃষ্টির পরে রোদ্দুরের মতন এখন ঝলমল করছে বাচকণবীর মুখ,ঐ যে যখন শরতের নীল আকাশ আরো নীল হয়ে যায়,দ্রুত মেঘের পালকগুলি উড়ে উড়ে সরে যেতে থাকে,ঠিক সেইরকম।
    আমি বললাম,""দেবী,আপনি তাহলে জনকের যজ্ঞসভার গল্প বলুন।সেতো আপনার চোখে দেখা হাতে ছোঁয়া ঘটনা।""
    ""আচ্ছা,সময়ভ্রমণ যদি করতেই পারো,তবে নিজেই কেন সেখানে চলে যাচ্ছো না? সোজাসুজি গিয়ে দ্যাখো কিঅ হয়েছিলো।""উনি হাসছেন।
    আমিও হাসলাম,""সে দু:খের কথা আর বলেন কেন। অনেক ঝামেলা আছে।আমাদের যন্ত্র একদম রুডিমেন্টারি। অত নিঁখুত করে ওভাবে যাওয়া যায় না।""
    ""ঋ, সত্যি সত্যি যে সময়ভ্রমণ করছো,তাই বা এত নিশ্চিৎ হচ্ছো কিকরে? হয়তো এ তোমার স্বপ্নমাত্র।প্রমাণ কিকরে করবে?""
    ""না না,প্রমাণ তো করবো না!!!আমি তো এমনি-এমনি ঘুরছি। কি উদ্দেশ্যে ঘোরাচ্ছেন উনি, মানে যিনি যন্ত্র চালিয়ে আমাকে ওধার থেকে পাঠিয়েছেন, ওসব প্রমাণ ট্রমান তাঁর ব্যাপার। সত্য হোক আর স্বপ্ন হোক,আমার লাভ বৈ ক্ষতি কোথায়? ""
    উনি এবারে জোরে হেসে উঠলেন,""বাপরে,কিসব যুক্তি!""

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন