এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিকি | ২৮ জুলাই ২০১৫ ০০:২০678555
  • ধুত্তেরি। সরি - এটা আমি।
  • ranjan roy | 192.69.53.253 | ২৯ জুলাই ২০১৫ ২০:৫৬678556
  • আমার মাথায় কেমন দুষ্টুবুদ্ধি খেলে যায়।
    --হ্যাঁ রে শংকর! এই চিঠিগুলো সত্যি পুড়িয়ে ফেলবি তো?
    -- মানে? মিথ্যে পোড়ানো আবার কিছু হয় নাকি!
    --- না, না! হয়ত তুই এগুলো যত্ন করে রেখে দিলি। আর কুসুমদিকে জানিয়ে দিলি যে ওগুলো তোর হেফাজতে সযত্নে রক্ষিত রয়েছে।
    --ধ্যেৎ, কেন এসব বলতে যাব?
    -- আজ না, ধর বেশ কিছুদিন বাদে কায়দা করে বলবি।
    -- তোর কথার মাথামুন্ডু কিস্যু বুঝতে পারছি না।
    -- মানে কুসুমদি এখন বিবাহিত, সুখের সংসার। বেশ প্রেমের জোয়ারে ভাসালে দোহারে গোছের ব্যাপার। কিন্তু ওই চিঠিগুলো যদি তোর জামাইবাবুর হাতে পড়ে--!
    -- কেন পড়বে? কী যা তা বলছিস?
    -- যাতে কোনদিন না পড়ে তার জন্যে কুসুমদি হয়ত তোকে বাড়ির ভাগ ছেড়ে দিতে পারে।
    ওর চোখের রং মরা মাছের মত। অনেক কষ্টে শ্বাস টেনে বলে-- তোর মন এত নোংরা! তুই আমার সম্বন্ধে এসব ভাবতে পারলি? আমি দিদিকে ব্ল্যাকমেল করব?
    -- সরি ইয়ার! ইয়ার্কি মারছিলাম।
    -- এমন ইয়ার্কি! কাল থেকে আমার বাড়িতে আর আসিস না রমেন।
  • ranjan roy | 192.69.53.253 | ৩০ জুলাই ২০১৫ ১৩:১৮678557
  • 'কিন্তু প্রথম যৌবনের বন্ধুত্ব অনেক উদার হয়,। শংকর রমেনকে মাপ করে দিয়েছিল। এত বছর বাদে সেই কথাটা শংকরের আদৌ মনে আছে কি?
    ---- প্রোমোটারকে পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল তুলতে দিয়ে ক'টা ফ্ল্যাট পেলি?
    --- দুটো; আমার দুই মেয়ে যে! আর কিছু টাকা। সেটা দিদিকে দিয়ে দিয়েছি।
    রমেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।সিগ্রেট ধরায়। শংকর হাত বাড়াচ্ছিল --কিন্তু শিকারী বাজের মত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ওর স্ত্রী।
    ---প্লীজ, প্লীজ রমেনদা! ওকে দেবেন না। আমি হাত জোড় করছি, ওর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়ে গেছে।
    রমেন থতমত খায়, শংকর যেন চুরির দায়ে ধরা পড়েছে।
    খানিকক্ষণ কারো মুখেই কথা জোগায় না।
    রমেন কিছু খেজুরে করার চেষ্টা করে। তার আগে দেখে নেয় বৌদি নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছেন কি না!
    --হ্যাঁরে আধলা, তোর সম্বন্ধে কিছু মজার গল্প শুনেছিলাম। সত্যি নাকি? আরে বল না! বৌদি রান্নাঘরে।
    কোন গল্প? শংকরের চোখ নেচে ওঠে।
    -- আরে তোকে নাকি সিপিএম এর অ্যাকশন স্কোয়াড তুলে নিয়ে যাচ্ছিল, মার্ডার করবে বলে। কিন্তু তুই নাকি ল্যাম্পপোস্ট আঁকড়ে ধরে বেঁচে গেছলি? সত্যি? জায়গাটা কোথায়?
    --শালা! মাজাকি হচ্ছে? আমাকে মার্ডার করবে বলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে সেটা তোর কাছে মজার ব্যাপার? চুতিয়া কোথাকার !তুই শালা হারামির হাতবাক্স!
    -- রেগে যাস না! তোকে নিয়ে যাচ্ছে মানে নিঘ্ঘাৎ কোলে তুলে? ভাবলেই হাসি পায়।
    -- আমার সব তাতেই তোর হাসি পায়! পাবলিকলি আওয়াজ দিস, তুই আমার কিরকম বন্ধু রে?
    --- অ্যাই, ফালতু কথা বলবি না, পাবলিকলি তোকে কোথায় আওয়াজ দিয়েছি? সে তো খগেনমাস্টারের মালকে সবার সামনে 'বৌদি' বলে ডেকেছিলাম। তারপর সে কী কিচ্যেন!
    -- ধ্যেৎ, সেসব ছেলেমানুষি এখনও মনে করে রেখেছিস? কাজটা ঠিক করিস নি।
    -- বেঠিক কী করেছি? তুই বালের কিচ্ছু জানতিস না। মাস্টার কোচিং চালাতে চালাতে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিল, ভেবেছিল শিবের বাবাও জানতে পারবে না।এদিকে মেয়েটার নীচের তলায় ভাড়াটে এসে গেছল। নবারুণ সংঘের ভলিবল মাঠে এসে আমাদের কাছে কেঁদে পড়ল। বাঙাল মেয়ে, বাবা-মা পাকিস্তানে; এখানে মামার বাড়িতে ঝি ছাড়িয়ে দিয়েছে।
    বলল-- আপনাগো দাদা কইত্যাছি-- বইনের ইজ্জত রাখেন। আমি খগেন মাস্টারমশায়ের সঙ্গে প্র্যাম করছি, সর্বস্ব দিয়া। আগে কইছিল বিয়া করব, আর এখন হারামজাদা খালি কথা ঘোরায়!
    তুই তখন ধূপগুড়ি না রাজাভাতখাওয়া কোথায় যেন মেশোর বাড়িতে মাংস ভাত সাঁটাতে গেছলি। সেদিন খালি আমি আর বিমল ছিলাম। ঠিক হল সবার সামনে খগামাস্টারের মুখোস খুলে দিতে হবে। মেয়েটা রাজি হল। কিচ্যেন হল। তারপর খগা বিয়ে করতে বাধ্য হল। এবার বল!
  • ranjan roy | 132.162.248.217 | ৩০ জুলাই ২০১৫ ১৯:২৩678558
  • -- কী আর বলব! হ্যাঁ, ছ'টা ছেলে আমাকে অরবিন্দনগরের দোকান থেকে গলায় ন্যাপলা ঠেকিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল, আমি বুঝলাম যে এখান থেকে নিয়ে বাঁশঝাড়টা পেরিয়ে পদ্মপুকুরের মাঠে নিয়ে ফেলতে পারলেই আমি খাল্লাস! শীতের সন্ধ্যে, কোন শালা জানতেও পারবে না। পরের দিন সকালে কাক-চিল ঠুকরে চোখ তুলে নেবে।
    কাশির দমকে ওর কথা বন্ধ হয়ে যায়। আমি জলের গেলাস এগিয়ে দিই। ইশারা করি নীচু গলায় আস্তে আস্তে বলতে।
    -- না, ওসব ল্যাম্পপোস্ট আঁকড়ে বেঁচে যাইনি। ওসব তোর জাতের যত ছ্যাবলা বন্ধুদের তৈরি চুটকি।
    -- তারপর?
    -- বেঁচে গেলাম বরাতজোরে। সেইসময় সুবীরদা অফিস ফেরত ছ'নম্বর বাস স্টপ থেকে হেঁটে ফিরছিল। ব্যাপারটা দেখে আন্দাজ করে জোর গলায় বলল-- শংকর না? কী ব্যাপার রে? এরা কারা, তোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
    হল কি, ওদের স্কোয়াডের ছেলেগুলো ছিল বে-পাড়ার,খালপাড়ের। পরে জেনেছি-- আমাদের পাড়ার সিপিএম এর ছেলেরা রাজি হয় নি, তাই ওই বাচ্চা বাচ্চা আনকাগুলোকে পাঠিয়েছে। দুটো কুচো রোয়াব দেখিয়ে বলল-- যান, যান! সোজা বাড়িতে ঢুকে পড়ুন, নইলে বাপের বিয়ে দেখিয়ে দেব।
    সুবীরদা কিরকম রগচটা জানিস তো! ক্ষেপে গিয়ে বলল-- অ্যাই, এ'পাড়ায় দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে রঙ নিয়ে কথা! একটা আওয়াজ দিলে গোটা পাড়া বেরিয়ে এসে তোদের ছিঁড়ে ফেলবে, এখান থেকে বেরোতে পারবি না। ওসব ন্যাপলা-রামপুরি তোদের পেছনে ভরে দেব। এদিকে সুবীরদার গলার চড়া আওয়াজ শুনে পিটুদা বেরিয়ে এল, তারপর অমল।
    ছেলেগুলোর প্রথম অ্যাকশন বোধহয়, ঘাবড়াতে লাগল। সুবীরদা গলা উঁচু করে বলল- যদি এভাবে বেপাড়ার ছেলেরা এসে আমাদের পাড়ার ছেলেকে তুলে নিয়ে যেতে পারে তাহলে আমাদের ঘরদোর বেচে দিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়া উচিত। সিপিএম এর লোকজনও বেরিয়ে এল। কিন্তু সুবীরদা নিজেই তো স্ট্রং সিপিএম। এখানে পাড়ার সেন্টু দিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে দিল। ছেলেগুলো কেটে পড়ল।
    এই হল গল্প।
    আমি নির্বাক। হ্যাঁ, ওর দিদিকে লেখা প্রেমপত্রের গোছায় সুবীরদার লেখাও ছিল, মনে আছে।
    --- তারপর
  • ranjan roy | 132.162.248.217 | ৩০ জুলাই ২০১৫ ২০:১৮678559
  • --তারপর বাবা আমাকে মাসির বাড়ি পাঠিয়ে দিল। মাসখানেকের মধ্যে যোগাযোগ করে পার্টির শেলটারে পালিয়ে গেলাম। মার তখনই বুকের ফিক ব্যথাটা বেড়ে গেল। বহুদিন কোলকাতার বাইরে ছিলাম। শেলটারগুলো এক এক করে ভেঙে যেতে লাগল। শেষে গোপনে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। হলদিয়ায় গিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করে ইরিগেশনের একটা অফিসে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হলাম। বেশ কয়েকবছর পরে কোলকাতায় ট্রানসফার হলে রাত্তিরে যাদবপুরের ইন্ট্রিগেটেড ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে চারবছর পড়াশুনো করে ইঞ্জিনিয়ারের পোস্ট পেলাম, একটু বয়সে বিয়ে করেছি, সংসারধম্মো করছি। ব্যস্‌।
    --- একটা কথা বুঝতে পারছি না। এত লোক থাকতে তোকেই ওরা তুলতে এল কেন? মানে তুই তো তখনো তেমন--।জীবনে কাউকে একটা থাপ্পড়ও তো মারিস নি।
    ও হাত তুলে আমাকে থামায়।
    -- তুইও! তুই তো শালা এ রাজ্যের বাইরে। কোলকাতার কিছুই খবর রাখিস না। তখন পদ্মপুকুর কান্ড হয়েগেছে, শুনেছিলি কিছু?
    --- কিছু একটা হবে, আবছা আবছা মনে পড়ছে। মানে তখন তো কত কিছুই ঘটছিল।
    --- ব্যাগড়া না দিয়ে চুপ করে শোন তাহলে। সিপিএম-নকশালদের মধ্যে তর্কবিতর্ক দল থেকে বের করে দেওয়া এসব গোড়ায় নেতাদের মধ্যেই আটকে ছিল। ছেলেছোকরাদের মধ্যে মতান্তর হলেও মনান্তর হয় নি।যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেওয়ায় আমরাও দুঃখ পেয়েছিলাম। মনে কর তুই আমাদের সকলকে নিয়ে সিপিএম এর ছাত্র প্রতিবাদ দিবস, যুব প্রতিবাদ দিবস সব্তাতেই মিছিলে গিয়েছিলি। একসাথে শ্লোগান দিয়েছিলি। কংগ্রেসি গুন্ডাদের সম্ভাব্য আক্রমণের আশংকায় একসাথে রাতজেগে পাহারা দিয়েছিলি। তখনও অমন কৌরব-পান্ডব হাল হয় নি। রাষ্ট্রপতি শাসনেও না।
    -- হুঁ!
    -- হল কখন? ১৯৬৯ এর মে'দিবসে মনুমেন্ট ময়দানে কানু সান্যালের পার্টি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করার দিন থেকে। সেই দিন পাশেই বিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সিপিএম এর বিরাট মিটিং। সেখান থেকে ওদের স্কোয়াডগুলো হামলা করে কানু সান্যালের মিটিং ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করল। আমাদের ছেলেরা প্রতিরোধ করল। উদোম ক্যালাকেলি! মারামারির রেশ ছড়িয়ে পড়ল ফেরার পথে, হুগলি অবদি।সেদিন থেকে দু'দলের ছেলেদের মধ্যে লক্ষ্মণরেখা টানা হয়ে গেল। শুরু হল পাড়ায় পাড়ায় এলাকা দখলের লড়াই। আজকের টিএমসি সিপিএম এর মত। কারা অন্যদের পাড়া ছাড়া করতে পারে তার কম্পিটিশন।
    সেই সময় একটা বড় ঘটনা ঘটেছিল।
    বিজয়গড় লায়েলকা এলাকায় সিপিএম ছেড়ে আমাদের সমর্থক হওয়া চারটে ছেলে বাঘাযতীন -রামগড় এলাকার সিপিএম এর স্কোয়াডের হাতে ধরা পড়ল। ওরা সকালবেলা মিছিল করে চারটে ছেলেকে হাত পিছমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় মারতে মারতে এনে বিধানপল্লী স্কোয়াডের হাতে তুলে দিল। ওরা হাতের সুখ করে নাকতলা স্কোয়াডের হাতে তুলে দেওয়া হল। নাকতলায় বিচারসভা বসল। দলত্যাগী রেনেগেডদের বিচার। শাস্তি ঠিক হল-- ডেথ সেন্টেন্স। যাতে অন্যেরা দলছাড়ার আগে দু'বার ভাবে। এবার যারা মিছিলে ছিল বেশিরভাগ সুট সুট করে কেটে গেল। দশজনের জল্লাদ বাহিনী ছেলে চারটেকে মশানে নিয়ে গেল। মশান মানে ওই বাঁশঝাড়ের পেছনে পদ্মপুকুর মাঠ, এখন পুকুর নেই। ফুটবল খেলা হয়, ক্লাবঘর হয়েছে।
    --- তারপর?
    --- এর পরেও? শোন, সেই ১৯৬৯ এর শেষে কারও কাছেই ফায়ার আর্মস ছিল না বল্লেই হয়। তাই আধমরা ছেলেগুলোকে মাছমারার কোঁচ আর চাকু দিয়ে মেরে ফেলে রাখল। ওদিকটায় এমনিতেই বাড়িঘর বিশেষ ছিল না। যে কয়টা ছিল তাদেরও দুয়োরে খিল। তুই কিছুই শুনিস নি?
    -- মনে পড়ছে, ঠাকুমা পরে বলেছিলেন। আমাদের বাড়ির রান্নার মাসি নেপালের মা ভর দুপুরে কাঁপতে কাঁপতে এসে বলেছিল-- পদ্মপুকুরের মাঠে চাইরটা জুয়ান ছেলেরে কাইট্যা ফালাইয়া রাখছে। দুইডা মইর‌্যা গেছে, বাকিগুলান খাবি খাইত্যাছে। জল জল কইরতাছে, কেডা দিব? ঠাকুমা বল্লেন-- চুপ, চুপ! রাও কইর না। ঈশ্বর মঙ্গল করুন।
  • 4z | 79.157.35.160 | ৩০ জুলাই ২০১৫ ২০:৩০678560
  • উফ্ফ
  • সিকি | ৩০ জুলাই ২০১৫ ২৩:৪১678561
  • 'বিগ্রেড' প্যারেড গ্রাউন্ড কি ইচ্ছাকৃত?
  • ranjan roy | 132.162.248.217 | ০১ আগস্ট ২০১৫ ১০:২৮678562
  • আমার ধন্দ তবু কাটে না। সে না হয় হল, কিন্তু এইআধলাটাকে ওরা কেন তুলে নিয়ে যাচ্ছিল! ও তো নকশালদের অ্যাকশন স্কোয়াডের ছেলে নয়। আর ১৯৬৯ এর শেষের দিকে নাকতলা এলাকায় ওদের অ্যাকশন স্কোয়াড-টোয়াড কোথায়? হাতে গোণা কিছু ছেলে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘোরে। যাকে তাকে চোতা ধরিয়ে দেয়, বকবক করে। বিপ্লব নাকি ডাকপিওনের মত দরজায় এসে কড়া নাড়ছে! লোকজন খালি চোখ কচলাছে। চোখে মুখে জল দিয়ে দরজাটা খুলছে না, এই আর কি!
    শংকর অনুচ্চারিত প্রশ্নটি বুঝতে পারে। জল খায়। ওর দৃষ্টি ব্যালকনিতে কাপড় শুকুতে দেওয়া দড়ির ওপর বসে দোল খাওয়া চড়াইটার দিকে। ওর গলা খাদে নামে।
    --- হ্যাঁ, আমি একটা দোষ করেছিলাম। ওদের চোখে ক্ষমার অযোগ্য। আমি ওদের বিচারসভায় চারটি ছেলেকে প্রাণদন্ডের আদেশ ঘোষণা করা বিচারপতি দি গ্রেট এর নাম প্রকাশ করে একটি লিফলেট এই এলাকায় বিলি করিয়েছিলাম। ওর শিরোনামে সলিল চৌধুরির একটি গানের লাইন টুকে দিয়েছিলাম-- বিচারপতি, তোমার বিচার করবে যারা---। ব্যস্‌।
    -- কে সেই মহাপুরুষ?
    --মহাপুরুষই বটে, নাম বললে পেত্যয় যাবি নে।
    --বালের মত কথা বলিস না। নামটা বল।
    --- জেনে কী করবি? অ্যাঁ, অ্যাদ্দিন বাদে? ওপর থেকে নীচে সব তো সাদা হয়ে গেছে। আর সেই মহাপুরুষও এখানে থাকে না। সিদ্ধার্থ রায়ের আমলে যখন বামদের খেদিয়ে যুব কংগ্রেসের বানরসেনারা পাড়ার দখল নিচ্ছিল তখন আমাদের ফুটবল ক্লাবের গোলকীপার, আরে ওই ছ'ফুটিয়া লম্বুটা, ওনাকে রাত্তির আটটা নাগাদ এসকর্ট করে বৌদি আর বাচ্চাদুটো শুদ্ধু একটা ট্যাক্সিতে তুলে দিল।
    --- ট্যাক্সি কোথায় গেল?
    --কোথায় গেল আমি কী জানি! তবে পরে জেনেছি উনি বেলঘরিয়ার দিকে কোনও একটা স্কুলে পড়াচ্ছিলেন।
    --- পড়াচ্ছিলেন? মানে আমাদের কোন মাস্টারমশায়?
    --হ্যাঁ রে বাল! হ্যাঁ। তোর প্রিয় একজন। তুই ওঁর ফেভারিট ছিলি। ১৯৬৬'র খাদ্য আন্দোলনের সময় যখন তুই চাঁদা তুলে নুরুল ইসলাম ও আর একটি ছোট বাচ্চার স্মরণে স্কুলের বাগানে শহীদ বেদী বানিয়েছিলি তখন উনি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বেদীটা এখনও আছে , বুঝলি। শুধু লোহার গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, দেখতে যাবি নাকি?
    --- ফালতু কথা ছাড়, সেদিন তিনজন স্যার বক্তব্য রেখেছিলেন। কোনজন?
    --ইংরেজির স্যার।
    বিশহাজার ভোল্টের শক্‌। দীনেনস্যার? না, হতে পারে না। অসম্ভব।
    শংকর আস্তে আস্তে মাথা নাড়ে। হ্যাঁ, সেই সময়টা । সেই সময়ে অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল। সেই সময়ে অন্ধেরা দলে দলে দেখতে পাচ্ছিল। আর যাদের দেখার চোখ ছিল তারা অন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। হ্যাঁ, পঙ্গুং লংঘয়তে গিরিম্‌ শুধু কথার কথা ছিল না। জলে শিলা ভেসে ছিল কি না জানিনা।কিন্তু বানরের গলায় গীত শোনা যাচ্ছিল। আর কিছু বাঁজা মেয়ে গর্ভবতী হয়েছিল।
    তবু দীনেনস্যার! উনি কাউকে মৃত্যুদন্ড দেবেন? এটা কী করে হয়?
    ত্রিপুরা থেকে আসা ফুলশার্ট আর ধুতি পরা রোগা লম্বাটে চল্লিশ ছুঁই ছুঁই মানুষটি ছিলেন হাস্যময়, প্রাণবন্ত। নাকতলার মোড়ে বিমলের বাবার চায়ের দোকানে বড়দের আড্ডা মাতিয়ে রাখতেন। কিশোর বয়স থেকেই উনি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত। বাঙাল টান সত্ত্বেও ইংরেজি ফার্স্ট পেপারটা ভালই পড়াতেন।
    আর রমেনকে গল্প শোনাতেন পুরনো দিনের কমিউনিস্ট আন্দোলনের।
    --- বুঝলি, রণদিভের বিপ্লব যখন ব্যর্থ হইল, কমিউনিস্ট পার্টি আর্মড স্ট্রাগল বন্ধ কইর‌্যা ১৯৫২র প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ক্যান্ডিডেট দিল তখন অন্ধ্রের থেইক্যা সরোজিনী নাইডুর আপন ভাই হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় আমাদের পার্টির হইয়া মেলা ভোটে জিইত্যা পার্লামেন্টে গেল, সোজা কথা না। কিন্তু কবি মানুষ, একটু পাগল পাগল। সংসদে বইস্যা নিজের লেখা হিন্দি গান গাইত-- সূর্য অস্ত হো গয়া, গগন মস্ত হো গয়া। আর নেহেরু তারে কিছু কইত না।
    -- কোন হারীন চ্যাটার্জি? ওই মেহমুদের ভূতবাংলো সিনেমার ভিলেন? কী যে বলেন স্যার!
    --- আরে হ', হেই মানুষটাই।সময়ের লগে বদলাইয়া গ্যাছে। হ্যাঁ, বেআইনি কমিউনিস্ট পার্টি আইনি হইল। তার মূল্য দিতে আর্মস সারেন্ডার করতে হইল। কিন্তু ত্রিপুরার পার্টি আর্মস সারেন্ডার করে নাই। অগো আর্মস স্কোয়াডের নাম ছিল 'গনমুক্তি পরিষদ'। প্রত্যেক নির্বাচনের সময় ভোটের আগের দিন রাইতে গনমুক্তি পরিষদ হাতিয়ার লইয়া মার্চ কইর‌্যা যায়। ব্যস্‌, পরের দিন ভোট নিয়া আর ভাবতে হইত না। হাঃ হাঃ হাঃ।
    বুঝলি রমেন, সত্য বীর্যবান। গান্ধীর সইত্য হইল কাপুরুষের সইত্য। যীশুর সইত্য? একগালে মারলে আর এক গাল আগাইয়া দাও? এইসব ছাতামাথা কইয়া জনতারে ভুলাইয়া রাখে।
    সেই দীনেনস্যার? নাঃ, সত্যি বিশ্বাস হয় না।
  • ranjan roy | 132.162.248.217 | ০১ আগস্ট ২০১৫ ১১:৩৮678564
  • কেন হয় না? সময়ের সঙ্গে সবাই পালটে যেতে পারে, হারীন চাটুজ্জেও বদলে যেতে পারে, আর উনি পাথরের দেবতা? আরো শোন। সে বছরের মাথায় আরো একটা ঘটনা ঘটে।
    নাকতলা স্কুলের মাঠে নবারুণ সংঘ ও খালপাড়ের মিলন সংঘের ফুটবল ম্যাচে ঝামেলা হয়। খালপাড়ের ছেলেরা মার খেয়ে এটাকে তড়িঘড়ি সিপিএম এর সংগে মারামারির রাজনৈতিক রং লাগায়। কারণ খালপাড়ের ক্লাবটা ছিল সিপিএম এর শক্ত ঘাঁটি। আর নবারুণ সংঘ হল পাঁচমিশেলি। ওরা রাত্তিরে তিনশো ছেলে নিয়ে এসে নবারুণ সংঘের ছেলেদের ঘর থেকে টেনে বের করে বেদম পেটায়। বাসু কে এমন মারে যে কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা করাতে হয়। এদের মাসখানেক পাড়া ছাড়া হতে হয়।
    -- ধ্যেৎ! ফুটবল মাঠের মারামারি কোন শালা নতুন ঘটনা। আর তাতে রাজনৈতিক রং লাগানো? সে তো হয়েই থাকে। এর মধ্যে স্যারকে টানছিস কেন?
    -- আরে শোন তো পাগলা! তোর স্কুলের বন্ধু অমলও একমাস পাড়াছাড়া ছিল। কখনও কখনও রাত্তিরে লুকিয়ে বাড়ি এসে জামাকাপড় বদলে খেয়ে যেত।
    -- ওসব সেন্টু মারাস না। অমল বলে আলাদা কিছু হবে নাকি! নবারুণ সংঘের মেম্বার বলে কথা।
    -- আরে শোন তো, ওর বিরুদ্ধে যাদবপুর থানায় এফ আই আর করা হল ও নাকি বোম আর রড নিয়ে হামলা করেছিল!
    -- সে কি রে! অমল তো কারো সঙ্গে ঝামেলায় যায় না। স্কুলেও কখনও হাতাহাতিতে জড়ায় নি!
    --- তা ঠিক, কিন্তু বড্ড একগুঁয়ে যে! ওরা মার্কসবাদী স্টাডি সার্কল শুরু করেছিল না? সেই যে রোববার রোববার পাশের প্রাইমারি স্কুল বিল্ডিংয়ে বসা? নেতাজী নগর থেকে বড় কমরেডরা ক্লাস নিতে আসতেন। তুইও তো একসময় যেতিস।
    --- হ্যাঁ, চ্যাংড়া ছেলে।বয়স্কদের বেয়াড়া প্রশ্ন করে কাঠি করতে ভাল লাগত।
    --- তোর সঙ্গে আমিও তো যেতাম। কিন্তু অমল যেত না। বলত -এত বড় বড় কথা আমার মাথায় ঢোকে না। কলেজের বইপত্তর নাড়াচাড়া করেই কুল পাইনে। তখনই ওকে ওরা কড়কে দিয়েছিল, দেখে নেবে। এই ঘটনায় মওকা পেয়ে কেস খাইয়ে দিল।
    --- যাঃ! এ আবার হয় নাকি? পাড়ায় ফিরল কী করে?
    -- আরে অমলের ন্যাংটোবেলার বন্ধু--থার্ড স্কীমের বিশ্ব, বান্টি সিনেমার কাছে থাকে। ও তখন ক্যান্ডিডেট মেম্বার থেকে পুরোদস্তুর পার্টি মেম্বার! হেব্বি ঘ্যাম! মাসিমা ওকে ধরলেন।ও অমলকে নিয়ে পার্টি অফিস, ক্লাব সবগুলো ঘুরল। বলল- এ আমার বন্ধু। এর গায়ে হাত তোলা মানে আমার গায়ে হাত তোলা। ওর হাতে তখন একটা ইউনিয়ন, ওকে কে ঘাঁটাবে?
    হ্যাঁ, এটা জেনে তোর ভাল লাগবে যে অমলের বিরুদ্ধে এফ আই আরটি করেছিলেন তোর শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাই দীনেনস্যার। আর জানিস তো ক্রিমিন্যাল কেস সহজে পেছন ছাড়ে না। দীনেনস্যারের কোন খবর নেই।অমলও রিটায়ার করেছে। কিন্তু পঁয়তাল্লিশ বছরের পুরনো কেসের ঠেলায় আজও ওকে বছরে দু-তিনবার গাঁটের কড়ি খরচা করে আদালতে হাজিরা লাগিয়ে নতুন তারিখ নিতে হয়।
  • ranjan roy | 125.117.222.244 | ০৬ আগস্ট ২০১৫ ০৯:২০678565
  • রমেন চুপ। খানিকক্ষণ কেউ কোন কথা বলছে না। রান্নাঘর থেকে বৌদি এসে উঁকি দিয়ে গেলেন। তারপর আবার চা এল।সুগন্ধি লিকার চা। রমেন অন্যমনস্ক ভাবে একটা সিগ্রেট ধরায়। গন্ধ বোধহয় রান্নাঘরে পৌঁছে গেছে। বৌদি বিরক্ত মুখে র আরও দুটো জানলার পাল্লা খুলে পাখার স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন। নাঃ, মিডিয়ার কল্যাণে সবাই প্যাসিভ স্মোকিং এর কুফলের ব্যাপারে সজাগ। রমেন সদ্য ধরানো সিগ্রেট নিভিয়ে অ্যাশ-ট্রে তে গুঁজে দেয়।
    শংকর মুচকি হাসে।
    -- কী হল? মাথার মধ্যে একটা বোলতা ঘুর ঘুর করছে? নাকি ঘুরঘুরে পোকা?
    --বোলতা।
    --- ছাড় ওসব পুরনো কথা। ভেবে লাভ নেই। আজ আমরা বেঁচে বর্তে আছি, হাত-পা-চোখ-কান সবই আস্ত আছে, সেটাই মোদ্দা কথা।আমার কথা তো অনেক শুনলি, তোর গল্প শুনি। তুই নাকি শংকর গুহনিয়োগীর মত ছত্তিশগড়ি মহিলাকে বিয়ে করেছিলি?
    -- ধ্যাৎ, যত্ত বাজে কথা।কোথায় গুহনিয়োগী আর কোথায় তোর বন্ধু এই হরিদাস পাল! আমার স্ত্রী বাঙালী, তবে প্রবাসী।
    -- একদিন নিয়ে আয় না! আর ছেলেমেয়ে?
    রমেন হাসে।
    --সেটা সম্ভব নয়।
    --কেন? আমরা অনেকদিন আলাদা হয়ে গেছি। ও মধ্যপ্রদেশের ভোপালে, স্কুলের প্রিন্সিপাল। দুই মেয়ে। ওরা মায়ের সঙ্গেই থাকে। বছরে দুয়েকবার জন্মদিন-টিনে টেলিফোনে কথা হয়। এই পর্য্যন্ত।
    --- সে কী রে! এটা কেমন হল?
    --- ওদের কোন দোষ নেই। আমি ভাল স্বামী, ভাল বাবা হতে পারি নি। উড়নচন্ডে স্বভাব। হস্টেল লাইফে বেশি স্বচ্ছন্দ। হয়ত বিয়ে করা উচিত ছিল না।
    -- আচ্ছা, এরপর কার সঙ্গে দেখা করবি? বিজনদার বাড়ি যাবি?শ্রীকলোনি বিজয়গড় পাড়ায়? হেঁটে বা রিকশায়, যেমন বলবি।
    --- তুইই বল।
    --তার আগে তোর মিশনটা কী সেটা বল। এমনি খেজুরে করতে আসিস নি সেটা বুঝতে পারছি।
    -- ধরেছিস ঠিকই, একটা কিছু আছে।
    --ভ্যান্তারা না করে বলেই ফেল।
    -- আমার মিশনের নাম--ফেরারি ফৌজ।
    শংকরের হাঁ-মুখ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়।
    --তুই বলে কিছু বলছি না, নইলে বলতাম--ফোট্‌ শালা! অমন চোটের হাবিলদার অনেক দেখা আছে। তা কমরেড, আপনার এই ফেরারি ফৌজে কতজন সোলজার থাকবে? কী ভেবেছেন?
    --- আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি সাতজন ঘোড়সওয়ারকে।
    --- সেভেন সামুরাই?
    -- না, না। কোন কুরোসাওয়া প্রজেক্ট নয়। সাতজন অশ্বারোহী।
    --ওরে বালস্য বাল, হরিদাস পাল! বখতিয়ার খিলজিরও তেরোজন অশ্বারোহী লেগেছিল হাড়খটখটি বুড়ো লক্ষণ সেনকে হারাতে। তোর সাতেই হয়ে যাবে?
    -- আরে আমার মিশন বঙ্গবিজয় নয়, ফেরারী ফৌজ--সেটা খেয়াল করিস।
    শংকর হাত উল্টে দেয়। তারচেয়ে বিজনদার বাড়ি চল। ও হয়ত তোর ফেরারী ফৌজের কর্নেল হতে রাজি হবে। নিদেনপক্ষে ব্রিগ্রেডিয়ার।
  • Abhishek | 132.163.68.223 | ০৬ আগস্ট ২০১৫ ১৮:০৬678566
  • আপনার আগের 'প্রেম - অপ্রেম ' লেখাটি ও পরেছি। এই লেখাটি ও পরছি ও মুঘ্ধ হচ্ছি।

    আগের লেখাটি তৈপত্তর থেকে চলে জবাই এক বন্ধুকে দেখাতে পারছি না। যদি লিন্কটা পাব যেত ভালো লাগত।
  • ranjan roy | 24.97.60.48 | ০৬ আগস্ট ২০১৫ ২১:৩২678567
  • অভিষেক,
    আপনার ই-মেইল আইডি পাঠান। আমি ইউনিকোডে বা পিডিএফ এ পাঠিয়ে দেব।
    আমারটাঃ [email protected]
  • aranya | 154.160.226.92 | ০৬ আগস্ট ২০১৫ ২১:৫২678568
  • জাস্ট টু গুড, রঞ্জন-দা
  • ranjan roy | 24.97.156.78 | ০৭ আগস্ট ২০১৫ ২১:৪৭678569
  • ৭)
    আগের সেই টিনের চাল আর চাটাইয়ের বেড়া নেই, থাকার কথাও নয়। প্রায় আটচল্লিশ বছর , কম কথা নয়। পিচের রাস্তা আর তার পাশে কালো হলুদের বর্ডার। অধিকাংশ বাড়ি পাকা। বিজনদার বাড়ি শেষ কবে এসেছিলাম? ওর ছোড়দির বিয়েতে। আমরা প্রায় পনের জন, পনের অশ্বারোহী। তার মধ্যে দুজন মেয়ে। একজন বিবাহিত। আমার সেলের কম্যান্ডার ও তার বৌ।
    আমার সেলের প্রশান্তর আলগা মুখ। একবার সেল মিটিংয়ে কম্যান্ডারকে বলে দিল-- নিজে তো পার্টনার পটিয়ে নিলে, আমাদের খালি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাচ্ছ? আমাদের কী হবে?
    --- বিপ্লবে প্রেম করা মানা নাকি? আমরা কি আনন্দমঠের সন্ন্যাসীর দল!
    -- তা কই? পার্টি কই?
    -- রিক্রুট কর। আমার বউ তো আমার রিক্রুট।
    --উঁহু, মেয়েদের রিক্রুট করা বহুত ঝামেলি। সুশান্তকে জিগাও।
    সেদিন লাজুক মুখচোরা সুশান্ত মুখ খোলেনি। কিন্তু বিয়েবাড়িতে সবার পেড়াপেড়িতে একরকম নিমরাজি হল।
    -- আমি কিছু বলব না। প্রশান্তই বলুক।ওই আমাকে ডুবিয়েছিল।
    সে কী?
    -- বলছি বলছি। সুশান্ত প্রেমে পড়ছিল, পাড়ারই মেয়ে। পাঁড় কংগ্রেসি বাড়ি। আমার কাছে এসে কিন্তু কিন্তু করে বলে ফেলল। ব্যস্‌, আমি ওকে গাইড করতে লাগলাম। বললাম-- প্রেমে পড়ে বিপ্লবকে ভোলা চলবে না। সলিউশন? কংগ্রেসি বাড়ির মেয়েকে রিক্রুট করে কমিউনিস্ট বানাতে হবে। মায়াকোভস্কি বলেছেন-- প্রিয়ার গোলাপি ঠোঁটে চুমু খাওয়ার সময়েও যেন রিপাব্লিকের লাল পতাকা পতপত করে উড়ছে দেখতে পাই। প্রশান্ত আমার কথা মত কাজ করতে লাগল। বিপ্লব বোঝাল, শ্রেণীসংগ্রাম বোঝাল, কৃষিবিপ্লবও বুঝিয়ে ফেলল। শেষে যখন ওকে দলে আসতে বলল তখন মেয়েটি বলল যে তোমরা ছেলেরা কত স্বাধীন,সন্ধ্যের পরে দেরি করে ফিরলেও বাড়িতে কিছু বলে না। আমরা মেয়েরা কী আর করতে পারি বল? সেদিন ওই মুখচোরা সুশান্তের জিভে দুষ্টু সরস্বতী ভর করেছিলেন। তারপর কানে আমার ফুসমন্তর! ও অনায়াসে বলল-- বেশি না, একটা কাজ তো করতে পারিস! কিছু না হোক আমার মত গোটা কয়েক বিপ্লবী তো পয়দা করতে পারিস। তারপর কী হইল জানে শ্যামলাল।
    তখন খাসির মাংস পাতে পড়েছে।
  • ranjan roy | 24.97.156.78 | ০৭ আগস্ট ২০১৫ ২১:৪৭678570
  • ৭)
    আগের সেই টিনের চাল আর চাটাইয়ের বেড়া নেই, থাকার কথাও নয়। প্রায় আটচল্লিশ বছর , কম কথা নয়। পিচের রাস্তা আর তার পাশে কালো হলুদের বর্ডার। অধিকাংশ বাড়ি পাকা। বিজনদার বাড়ি শেষ কবে এসেছিলাম? ওর ছোড়দির বিয়েতে। আমরা প্রায় পনের জন, পনের অশ্বারোহী। তার মধ্যে দুজন মেয়ে। একজন বিবাহিত। আমার সেলের কম্যান্ডার ও তার বৌ।
    আমার সেলের প্রশান্তর আলগা মুখ। একবার সেল মিটিংয়ে কম্যান্ডারকে বলে দিল-- নিজে তো পার্টনার পটিয়ে নিলে, আমাদের খালি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাচ্ছ? আমাদের কী হবে?
    --- বিপ্লবে প্রেম করা মানা নাকি? আমরা কি আনন্দমঠের সন্ন্যাসীর দল!
    -- তা কই? পার্টি কই?
    -- রিক্রুট কর। আমার বউ তো আমার রিক্রুট।
    --উঁহু, মেয়েদের রিক্রুট করা বহুত ঝামেলি। সুশান্তকে জিগাও।
    সেদিন লাজুক মুখচোরা সুশান্ত মুখ খোলেনি। কিন্তু বিয়েবাড়িতে সবার পেড়াপেড়িতে একরকম নিমরাজি হল।
    -- আমি কিছু বলব না। প্রশান্তই বলুক।ওই আমাকে ডুবিয়েছিল।
    সে কী?
    -- বলছি বলছি। সুশান্ত প্রেমে পড়ছিল, পাড়ারই মেয়ে। পাঁড় কংগ্রেসি বাড়ি। আমার কাছে এসে কিন্তু কিন্তু করে বলে ফেলল। ব্যস্‌, আমি ওকে গাইড করতে লাগলাম। বললাম-- প্রেমে পড়ে বিপ্লবকে ভোলা চলবে না। সলিউশন? কংগ্রেসি বাড়ির মেয়েকে রিক্রুট করে কমিউনিস্ট বানাতে হবে। মায়াকোভস্কি বলেছেন-- প্রিয়ার গোলাপি ঠোঁটে চুমু খাওয়ার সময়েও যেন রিপাব্লিকের লাল পতাকা পতপত করে উড়ছে দেখতে পাই। প্রশান্ত আমার কথা মত কাজ করতে লাগল। বিপ্লব বোঝাল, শ্রেণীসংগ্রাম বোঝাল, কৃষিবিপ্লবও বুঝিয়ে ফেলল। শেষে যখন ওকে দলে আসতে বলল তখন মেয়েটি বলল যে তোমরা ছেলেরা কত স্বাধীন,সন্ধ্যের পরে দেরি করে ফিরলেও বাড়িতে কিছু বলে না। আমরা মেয়েরা কী আর করতে পারি বল? সেদিন ওই মুখচোরা সুশান্তের জিভে দুষ্টু সরস্বতী ভর করেছিলেন। তারপর কানে আমার ফুসমন্তর! ও অনায়াসে বলল-- বেশি না, একটা কাজ তো করতে পারিস! কিছু না হোক আমার মত গোটা কয়েক বিপ্লবী তো পয়দা করতে পারিস। তারপর কী হইল জানে শ্যামলাল।
    তখন খাসির মাংস পাতে পড়েছে।
  • ranjan roy | 125.117.237.36 | ১০ আগস্ট ২০১৫ ০৯:২৭678571
  • বিজনদাকে চিনতে একটু কষ্ট হল। ছ'ফিট লম্বা একটু মঙ্গোলীয় ধাঁচের মুখে এক্ধরণের একরোখা ভাবটা এখন অনেক নরম, কারণ সামান্য মেদ জমেছে। একমাথা কোঁকড়ানো চুলের জায়গা দখল করেছে এক মরুভূমি। সেই ছিপছিপে ছিলেটানা ধনুক ভাব উধাও, সকাল-সন্ধে মুখবুজে টিউশন করতে করতে একটু নুয়ে পড়েছে পিঠ।
    কিন্তু হাসিটা আগের মতই প্রাণখোলা। তবে ঝক্ঝকে দাঁতে আগের মত নিকোটিনের ছাপ নেই।
    চারমিনার কি বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে? নিদেনপক্ষে পানামা? বিজনদা কি আজকাল নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে যায়? আগে তো ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁত চক্চকে করা, বিউটি পার্লারে গিয়ে রূপটান-- এসব তো বুর্জোয়া অবক্ষয়ের লক্ষণ ধরা হত। খেটে খাওয়া মানুষদের লড়াইয়ের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে ব্যক্তিগত সৌন্দর্যের নার্সিসিজমে বেঁধে ফেলার ডেকাডেন্ট কালচারাল কনস্পিরেসি!
    সবাই কেমন বিশ্বাস করত যে যারা বিউটি পার্লারে কাজ করে বা সেখানে ক্লায়েন্ট হয়ে যায় তাদের চরিত্র সন্দেহজনক।
    তবে বিজনদা ছিল ওদের মধ্যে সবচেয়ে পিউরিটান। কোন আঁশটে চুটকি বা কমেন্ট, অভিধান-বহির্ভূত শব্দের ব্যবহার একেবারে সহ্য করতে পারত না। রেগে গেলেও কারও মা-বাপ তুলত না।মেয়েদের মাল বা গুল্লি বলা মানে প্রচন্ড ধমক খাওয়া। আর মাগী শব্দ মুখ থেকে বেরোলে হাতাহাতি হবার সম্ভাবনা। আঠেরো বছর বয়সের রমেন একবার পথে একজন গর্ভবতী মহিলাকে দেখে বলে উঠেছিল-- দেখেছেন, ওর না নিচের তলায় ভাড়াটে এসেছে।
    দুজন সঙ্গী হ্যা-হ্যা করে হেসে উঠতে গিয়ে দেখল বিজনদাওর কলার মুচড়ে ধরে ঝাঁকাচ্ছে-- শালা! তোর লজ্জা করে না? অপদার্থ! তুই ওদের থেকে আলাদা কিসে?
    বিজনদা এগিয়ে এসে দুহাতে জড়িয়ে ধরেছে রমেনকে।
    --- কী রে! আমাদের ভুলে গেছলি? আর আমরও তো--।
    রমেন কোন কথা বলে না, শুধু হাসতে থাকে। শংকর এগিয়ে এসে বলে --- ওঃ, আবেগের দুধ উথলে উঠেছে। ওকে ছেড়ে দাও , অনেক কথা আছে। আগে তোমার ছাত্রছাত্রীদের ছুটি দাও।
    গোটাদশেক ছেলেমেয়ে চটপট খাতাবই ঢাউস ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে। বিজনদা রোববারের দিন এটা পুষিয়ে দেবে বলে অশ্বাস দেয়।
    শংকর বিজনদার থেকে একটা সিগ্রেট চেয়ে নিয়ে ধরিয়ে ফেলে।
  • Manish | 127.214.44.223 | ১১ আগস্ট ২০১৫ ১০:৪৬678572
  • Ranjan পড়ছি, লিখতে থাকো।
  • ranjan roy | 24.97.101.39 | ১১ আগস্ট ২০১৫ ১৩:১৬678573
  • আমি আপত্তি জানাই; ওর বারণ আছে। ধোঁয়া গিলে কার কি উবগার হবে শুনি?
    --কার বারণ, বৌয়ের? সেটা ঘরের মধ্যে। ঘরের বাইরে একটু অবাধ্য না হলে চলে?
    ---হ্যাঁ, হ্যাঁ; ঘরের মধ্যে অসভ্য আর ঘরের বাইরে অবাধ্য।
    আমি চমকে উঠি। এই রে, বিজনদা ঝাড় দিল বলে। কিন্তু বিজনদার ঝকঝকে দাঁতে অমলিন হাসি।
    শংকরের দিকে তাকাই। ও চোখ টিপে একটা ভঙ্গী করে বলল--চাপ নিস না, বিজনদাও লাইনে এসে গেছে।
    একটু অস্বস্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করি-- তো তুমি ঘরের মধ্যেই অবাধ্য কেন? বৌদি সিগ্রেট খাওয়া প্যাসিভ স্মোকিং নিয়ে কিছু বলে না?
    বিজনদা উত্তর না দিয়ে জোরে হেসে ওঠে।
    আমি ভ্যাবাচাকা। পালা করে দুজনের মুখের দিকে তাকাই।
    --- না রহেগা বাঁশ, ন বজেগী বাঁসুরী!
  • ranjan roy | 24.97.238.154 | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ২২:৫৮678575
  • --বুঝলি না ভ্যাবাগঙ্গারাম! বিজনদা বিয়েই করে নি।
    --ও!
    --মানে করে নি বললে ঠিক হবে না, বলা উচিত দ্বিতীয়বার করে নি।
    --আচ্ছা, প্রথমবারটা কবে?
    --- সেই যে রে! বিজনদার প্রথম রিক্রুট?
    ---রীনাদি! উনি এখন কোথায়?
    বিজনদা বাইরের দিকে তাকায়, আবার একটা সিগ্রেট ধরায়। ঘরের ঘুলঘুলিতে দুটো চড়াই পাখি ঘর বাঁধছে। কিচিরমিচির। গোটা কয়েক খড়কুটো এসে আমার গায়ে মাথায় পড়ে। বিজনদা পরম মমতায় সেগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। ওর হাত আমাকে ছোঁয়, খানিকক্ষণ ছুঁয়ে থাকে। ভাবি, কোলকাতায় এখনও চড়ুইদের দেখা পাওয়া যায়!
    আমি জল চাইলাম , বিজনদা উঠে ভেতরে গেল।
    -- এই শালা! চটপট বলে ফ্যাল দিকি কি কেলো?
    --- বিজনদা তখন বাঁকুড়া থেকে পুরুলিয়ার জেলে এসেছে। পার্টির শেলটার-ফেলটার ভেঙে ছত্রখান। যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে। আগের সমর্থকরা কেউ আর আমাদের মাথা গোঁজার জায়গা দিচ্ছে না। কাউকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। বেলেঘাটায় পুলিশের ঢোকানো মোলগুলো মুখোস পরে অ্যাকশন স্কোয়াডের ছেলেদের ধরিয়ে দিল।
    রীনাদি অন্য একটা উপদলে যোগ দিয়ে আমেরিকান লাইব্রেরিতে বোম ফাটিয়ে কাঁচ ভাঙল। একবার ধরা পড়ে বেইল জাম্প করল।
    -- বেইল পেয়ে গেছল? কী করে?
    --তখন পেটে ছ'মাসের বাচ্চা।তাই কোন বুড়ো সি জে এম--!
    আমি ছটফট করি, উল্টোপাল্টা বকবক করতে থাকি।
    -- আচ্ছা, পেটে বাচ্চা এল কেন? একটু সতর্ক হলে--।
    --তুই কি বুঝবি রে আবাল! তুই তখন শান্ত ছত্তিশগড়ে বসে বাপের হোটেলে খাচ্ছিস দাচ্ছিস আর ইডিওলজিক্যাল কনফিউশন মারাচ্ছিস।

    আমি হাসি। সে তো এখনও মারাচ্ছি। কিন্তু ওদের কি তখন "চার আনায় তিনটে" কেনারও পয়সা ছিল না?
    -- এটা একেবারে বোকা-দার মত বললি। আরে তখন তো আমরা ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ে বিশ্বাস করতাম না। মাও নিজে লং মার্চের সময় ফ্যামিলি প্ল্যানিং করেন নি। আর ভাবতাম এসব গরীবদের মূল সমস্যার থেকে চোখ সরিয়ে দেওয়ার সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। তর্ক করতাম--মানুষ শুধু পেট নিয়ে জন্মায় না, হাত-পা ও মাথা নিয়ে জন্মায়।
    -- তখন যদি কোন শালা বলত যে খোদ মাওয়ের চীনে সত্তরের দশকে প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাইয়ের নির্দেশে একাধিক বাচ্চা হলে প্রমোশন ইনক্রিমেন্ট আটকে দেওয়া হচ্ছে তো--।
    --সে শালার গুষ্টির তুষ্টি করে ছাড়তাম। সে ঠিক আছে, তারপর কী হল?
    -- রীনাদি এ বাড়ি সে বাড়ি ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে এমনকি নিজের মা-ভাইদের থেকেও রূঢ় ব্যবহার পেয়ে বদলে গেল।বিধবা সেজে উত্তরবঙ্গে একটা মাস্টারি যোগাড় করে চলে গেল। বিজনদার সঙ্গে কোন সম্পর্ক স্বীকার করে নি।
    আমি কী বলব বুঝতে পারি না।
    ঠিক এইসময় বিজনদা একটা থালার ওপর তিনকাপ চা দুটো লেড়ো বিস্কুট আর একগ্লাস জল নিয়ে ঢুকল। কী টাইমিং!
    আচ্ছা, আড়াল থেকে আমাদের কথাবার্তা শুনছিল নাকি!
  • ranjan roy | 192.69.150.184 | ১৬ আগস্ট ২০১৫ ২৩:০৯678576
  • আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে পুরনো দিনে ফিরে যাই। বিজনদার সঙ্গে প্রথম পরিচয় কবে যেন?
    হ্যাঁ, ১৯৬৭ সালের মে দিবস। বিজয়গড়ের থেকে মিছিল বেরোবে শুনে জুটে গেছি। তখন হায়ার সেকেন্ডারির ফল বেরোতে মাস দেড়েক বাকি। পুরোদমে টো টো করে ঘুরে বেড়ানো আর চারমিনার ফোঁকা চলছে। দুটো পায়জামা আর দুটো পাঞ্জাবী বানিয়েছি-- একটা গেরুয়া আর একটা কচি আমপাতা রঙের। পরে বেরোলে এখানে ওখানে আড্ডা দেওয়া উদ্বাস্তু কলোনীর দুরন্ত মেয়েরা আওয়াজ দেয়- দেখ দেখ, একজন নতুন কমরেড যাচ্ছে। কেউ কেউ পেছন থেকে কমরেড বলে চেঁচিয়ে ভালোমানুষ মুখ করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকত।ভালো যে লাগত এ নিয়ে কোন কথা হবে না।
    সেই মিছিল। বিজয়গড় এর একটি সাংস্কৃতিক চক্রের ছেলেরা মোড়ে মোড়ে ভ্যানরিকশায় চড়ানো মাইক নিয়ে সলিল চৌধুরির গান গাইছে -- আয় রে পরাণ ভাই, আয় রে রহিম ভাই।' গানটা প্রথম শুনলাম। তাতে কালো-নদীর-বান রোখার আহ্বানে বুকের মধ্যে কেমন করে উঠল। ছোটবেলায় পার্কসার্কাস পাড়ায় দেখা দাঙ্গার পরিবেশের ছবি ভেসে উঠল যেন।
    সেখানে তানুদা পরিচয় করিয়ে দিল পায়জামা ও সবুজ পাঞ্জাবী পরা অসম্ভব ফরসা বিজয়দার সঙ্গে। তারপর ঘনিষ্ঠ হয়ে দেখেছি কিরকম ঘোর সংসারী বিজয়দা। তখন চাল দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য। তখনও গলি গলিতে হাতরুটি বেলে বেলে মহিলারা বিক্কিরি করতেন না। আসলে বাঙালী তখনও রুটিকে শুধু জলখাবারের যোগ্য মনে করত।
    চালের কর্ডন জেলায় জেলায়। র‌্যাশনের চাল মুখে তোলা কঠিন। বিজয়দা সাইকেল করে গড়িয়া-নরেন্দ্রপুর পেরিয়ে রাজপুরের বাজার থেকে প্রতিকিলোয় কুড়ি নয়া পয়সা কম দরে চাল কিনে আনত।
    সেই বিজয়দা একদিন মা-বাবা-ভাই-দিদিকে ফেলে কিভাবে বিপ্লবের স্বপ্নে নিশির ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্ত সিংয়ের ডাকাতির দলে ভিড়ে গেল সেটা এক রহস্য। নিজে গেল তো গেল, আমাদের কয়েকজনকে ও নিয়ে গেল যে!
  • ranjan roy | 192.69.150.184 | ১৯ আগস্ট ২০১৫ ২২:০১678577
  • -- অ্যাই বিজনদা, এ শালাকে একটু বোঝাও তো! চল্লিশবছর দন্ডকারণ্যে বনবাস করে ওর ঘিলু কেমন ভসকিয়ে গেছে, সোজা কথাও বুঝতে পারছে না।
    বিজনদার মুখে প্রশ্রয়ের হাসি।
    --কী, হয়েছেটা কী?
    -- প্রথমতঃ আমি কোন বনবাসে ছিলাম না,ছত্তিশগড়ের স্টিল সিটি ভিলাই কি বন ? দ্বিতীয়তঃ--
    -- চোপ্‌ শালা! দন্ডকারণ্য কি ছত্তিশগড়ে নয়? দ্বিতীয়তঃ আমাদের ইংরিজির মাস্টারমশায় দীনেনস্যার যে গণ-আদালত বসিয়ে চারটে ছেলেকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন, সেই যে পদ্মপুকুর মাঠে গো, আর আমাদের অনেকের নামে খেলার মাঠের মারপিট নিয়ে মিথ্যে এফ আই আর করেছিলেন--সেটা ও কিছুতেই বিশ্বাস করছে না।
    -- কেন?
    --- ব্যাপারটা মেলে না, মানে ওঁর মাইন্ডসেটের সঙ্গে খাপ খায় না।
    -- ওরে আমার সাইকোলজিস্ট রে! হুঁ, মাইন্ডসেট! সব ব্যাপারে বাতেলার অভ্যেসটা এখনো যায় নি।
    --- সে তো তুই, বিজনদা সবাই।
    --- কোথায় খাপ খুলছিস ? বিজনদা দশবছর আগে সাইকোলজিতে মাস্টার্স করেছে, ইগনু থেকে। আবার ডিজার্টেশনের বিষয় নিয়েছিল-প্যাসিভ অ্যাগ্রেসন সিনড্রোম। বুঝলি? তুমি বল বিজনদা।
    --- হ্যাঁ, তোর খুব খারাপ লাগছে রমেন, কিন্তু কথাটা সত্যি। আমি তখন এদিকেই ছিলাম।
    -- হল তো! আমরা সবাই ছিলাম, উনি ছিলেন না, তবু এঁড়ে তক্কো। আমার ঠাকুমা বলতেন-- রেখে দে তোর দেখা কথা, আমি শুনে এলাম।
    ---কিন্তু বিজনদা, এটা কী করে হয় ?ওঁর মত শান্ত ব্যক্তিত্বের একজন নিরীহ মানুষ--। উনি সিপিএম ক্ষমতায় আসায় কী খরগোস থেকে সিংহ হয়ে যাবেন?
    -- আদ্দেকটা ধরেছিস। খরগোসের ক্ষমতায় আসা। ক্ষমতার সিপিএম-নকশাল-কংগ্রেস হয় না।সত্তরে যখন মানুবাবুরা যুব কংগ্রেসের পতাকার নীচে মাস্তানদের জড়ো করে কোলকাতাকে দুঃস্বপ্নের নগরী করে তুলেছিলেন তখন তোদের পাড়ার দত্ত বাড়ির ছ্যাবলা নিরীহ ছোটকা রাইফেল দিয়ে তোদের গাছ থেকে নারকোল টিপ করে পুকুরে ফেলে নি? পাড়ার চক্কোত্তি বামুনের ছেলে গামছায় শ্রাদ্ধবাড়ির চালকলা বাঁধা ছেড়ে বোমা বাঁধতে শুরু করেনি?
    "সিরাজদ্দৌল্লা" নাটকে দানশা ফকির চরিত্রটা দেখেছিস? যে ছোটবেলা থেকে খোঁড়া, ব্যঙ্গবিদ্রূপ সয়ে বড় হয়েছে , সে কেমন সুযোগ পেয়ে মহা ভিলেন হয়ে উঠল। সেই যে রে , সেই বিখ্যাত ডায়লগ--যেমন তেমন দানশা পাইছ!
    অবশ্য তোরা বোধহয় এসব পড়িস নি।
    --পড়েছি, কিন্তু গুলিয়ে গেছে-- কে যে লিখেছিল? গিরিশ ঘোষ, নাকি শচীন সেনগুপ্ত?
    --- ডি এল রায়ও হতে পারে, কি বল বিজনদা?
    --আঃ, ফালতু কথা ছেড়ে বল, কী বুঝলি?
    -- রমেন যে কিস্যু বোঝেনি, সে তো মুখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। আমি বুঝলাম যে তোমার দুটো উপপাদ্য।
    এক, ক্ষমতার সিপিএম -নকশাল হয় না। মানে যে যায় লংকায় , সেই হয় রাবণ।
    দুই, ক্ষমতা পেয়ে খরগোসের সিংহ হওয়া। অর্থাৎ, ক্ষমতা নামক বায়বীয় শক্তি বেড়ালকে পোঁদে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে বাঘ বানায়।
    কিন্তু মাস্টারমশায়, আমরা ছাত্র হিসেবে ব্যাকবেঞ্চার। একটু কষ্ট কইর‌্যা উদাহরণ সহকারে বুঝাইয়া দেন
  • ranjan roy | 192.69.150.184 | ১৯ আগস্ট ২০১৫ ২২:৪১678578
  • মাস্টারমশায়ের গম্ভীর মুদ্রা । নীচুগলায় বললেন--এসব কথায় অনেক সময় লাগে। ভাতে ভাত হয়ে গিয়েছে, ডাল করাই আছে। যখন খেতে বসব তখন তিনটে হাঁসের ডিমের বড়া ভেজে দেব। আর আছে লংকার আচার। চলবে তো?
    সেই আদি অকৃত্রিম বিজনদা, ঘোর সংসারী, পরিবারের সবার দিকে নজর, আমরা আড়ালে বলতাম-- বড়পিসিমা।
    --শোন, এবার অন্য শিবিরের এইরকম অকারণ হিংস্রতার একটা গল্প বলি? মানে নকশালদের? সেখানেও একজন মাস্টারমশায়, তবে স্কুলের না, কলেজের।
    -- কে বলত? আমরা চিনি?
    --খুব চিনিস, কিন্তু নাম বলব না। এখন শান্ত ভদ্র বুদ্ধিজীবি, কাগজে প্রবন্ধ-টবন্ধ বেরোয়।অ্যাকাডেমিক লাইনে ব্রিলিয়ান্ট। তবে--।
    বিজনদা আর একটা সিগ্রেট ধরিয়ে একমুখ ধোঁয়া ছাড়ে, তারপর ব্যোম মেরে যায়।
    --আরে কী হল?
    --দাঁড়া, ভাবছি কোত্থেকে শুরু করি। আচ্ছা রমেন, তুই তখন স্কটিশে ইকনমিক্স পড়তি না? রঘুবীর সেন তখন তোদের দু'ব্ছরের সিনিয়র ছিল, মনে আছে?
    -- খুব মনে আছে। হেব্বি আঁতেল। "অনীক" পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিল। "এস আর " লাইন মারাতো। ওর বাপবুড়ো ভাল বেহালা বাজাত।
    -- "এস আর" আবার কী?
    -- তুই শালা গড়িয়া কলেজের মাল, তুই কোত্থেকে জানবি? আমরা হলাম প্রেসিডেন্সি কনসোলিডেশনের, বল্লে হবে? "এস আর" হল সোশ্যালিস্ট রেভোলুশ্যন গ্রুপ। যারা মনে করত ভারতে কৃষিতে পুঁজিবাদ এসে গেছে, সামন্ততন্ত্র পিছু হটছে। তাই এদেশে চীনের মত পিডিআর বা পিপলস ডেমোক্র্যটিক রেভোল্যুশন হবে না। তখন সিপিএম ও সরকারী নকশালদের একই মত ছিল, ভারতে বিপ্লবের স্তর হল পিডিআর বা কৃষি বিপ্লব। রঘুবীর পরে বড় ইকনমিক্সের অধ্যাপক হল, বিদেশে রিসার্চ করল। ইদানীং রিটায়র করেছে শুনছি। এবার তুমি বল, বিজনদা।
    --- তখন রঘুবীর মাস্টার্স করতে সাউথ সিঁথির ইকনমিক্স বিল্ডিংয়ে গেছে। ওরা আটটা ছেলে চারটে মেয়ে; দুজন আজকের লব্জতে বেশ ঝিংকু। ওখানে তখন নকশালদের ইউনিট, মেয়েগুলিও তাই। রঘুবীরের একটু ইন্টুমিন্টু করার ইচ্ছে হল। ওর ব্যক্তিত্বের একটা আকর্ষণ তো ছিলই।
    কিন্তু ও বাবা! কোথায় কি! যেন গোখরো সাপের বিলে এসেছে। মেয়েগুলো ওকে খালি রাগী রাগী চোখে দেখে, ভাল করে জবাব দেয় না। শেষে ওর কাছে খবর এল যে ওকে "এস আর" গ্রুপের তাত্ত্বিক প্রবক্তা হিসেবে শ্রেণীশত্রু ঘোষণা করা হয়েছে। ওর বেঁচে থাকার অধিকার নেই। খতমের তালিকায় নাম উঠে গেছে। মেয়েদের কাছে নির্দেশ পৌঁছে গেছে, তাই ওদের অমন সাপের মত হিস হিস্‌।
    রঘুবীর বিশ্বাস করেনি যে ওকে মেরে ফেলা হবে। তবু সতর্ক হল। ভীড়ের বাসে বাড়ি ফিরতে লাগল। একা কোন গলিতে ঢুকত না।
    কিন্তু ওপর থেকে যে অধ্যাপক নেতাটি ওর অজান্তে বিচারসভা বসিয়ে ওকে মেরে ফেলার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন, তিনি অধৈর্য্য হয়ে উঠলেন। শেষে বেলেঘাটা ইউনিটকে দায়িত্ব দেওয়া হল। ওদের অ্যাকশন স্কোয়াড খুব দক্ষ।
    একদিন রঘুবীর কিডন্যাপ হয়ে গেল। ওকে মুখ বেঁধে ট্যাক্সির ডিকিতে হাত-পা শেকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় রাত্তিরে শেয়ালদা -ক্যানিং রেললাইনে ফেলে দিয়ে গেল। পুরো হিন্দি ফিল্ম।
    ঠিক সেভাবেই খবরটা পেয়ে ওর এক পুরনো বন্ধু একজনকে বোঝাল যে এস-আর হোক, যাই হোক --নকশাল তো বটেক। ওকে বাঁচাতে হবে। সেই পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল। তখনও কোন মালগাড়ি আসেনি। নইলে-। ওই অধ্যাপকটিও খুব ভদ্র, নরম স্বভাবের। কখনও কাউকে চড় মারেন নি।
  • ranjan roy | 132.161.206.24 | ২৪ আগস্ট ২০১৫ ১৭:৪৬678579
  • এখনও এদিকে দু'একটা টালির ছাদওলা বাড়ি রয়ে গেছে। ফুটপাথ সিমেন্টের, তাতে একপাশে কালো হলুদ দিয়ে সোঁদরবনের বাঘের মত ডোরাকাটা। আঙিনার ভেতর থেকে কখনও উঁকিঝুকি মারে দোলনচাঁপা, জবা বা টগরফুলের গাছ। আর কোথাও ফুটপাথের গায়েই পুরনো মাস্তানের মত মাথা তুলে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে একটা নারকোল গাছ। বয়সের ভারে হেলে গেছে।
    সন্ধ্যে নেমেছে অনেকক্ষণ।
    কিছু জিন্স ও লেগিংস পরা কিশোরী চলে যায় কলকল করতে করতে, পিঠে ঢাউস ব্যাগ, গন্তব্য সম্ভবতঃ কোন কোচিং ক্লাস। পাড়ার ভিতরে ত্রিফলাবাতি নেই।কিন্তু ল্যাম্পপোস্ট অগুনতি। বেশিরভাগের মাথায় আলো জ্বলছে।
    আমরা ফিরছি। অনেক অনেক আড্ডা হল। চলে আসার সময় বিজনদার বিষণ্ণ মুখ। আবার আসিস কিন্তু। তুই তো এখন কোলকাতাবাসী হয়ে গেছিস। অসুবিধে কী?
    -- হ্যাঁ, হ্যাঁ। আসবে না মানে? ওর ঘাড় আসবে।তুমি এমন রেঁধে বেড়ে খাওয়াবে আর ও আসবে না।
    --ধ্যাৎ, আমি কি খেতে পাই নে? নাকি হ্যাংলা?
    --দুটোই। তোর মত যেচে একা থাকার লোকেরা নিজেরা কত রেঁধে খায় আমার জানা আছে। তোদের দর্শন হল-- ভোজনং যত্র তত্র, শয়নং হট্টমন্দিরে।
    --- ভাগ শালা! তোর মত ফ্ল্যাটের মালিক নই, কিন্তু মাথার ওপর একটা ছাদ ঠিকই আছে। এজমালি তো কি?
    বিজনদা হাসে। বাগানের কাঠের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে বাইরে আসে। মনে হয় গলির মুখটা অবদি এগিয়ে দেবে।
    --কিছু মনে করিস না রমেন, ও তোকে হিংসে করছে। মানে তোর স্বাধীনতা, সে ওর কপালে নেই।
    --- ভুল বুঝছ বিজনদা! তোমরা দুজনই উমাহারা মহেশ্বর। শ্মশানে মশানে বাস। পুরনো দিনের গাঁজার ধোয়ার মৌতাতে তোমাদের জমবে ভাল।
    --- কাল আসতে পারবি?
    --না, না। কাল নয়। পরে আরেকদিন। ওর মিশন ফেরারি ফৌজ চলছে যে! খুঁজে বেড়াচ্ছে পুরনোদিনের সাত ঘোড়সওয়ারকে।
    --- ক'জনকে পেল?
    --- বিমলেন্দু, আমি আর তুমি। এখনও চারজন বাকি।
    -- তো কালকে কার ইন্টারভিউ নিবি?
    --- না, বিজনদা, ইন্টারভিউ-টিউ নয়। আমি দেখতে চাই তোমরা কেমন আছ? কী ভাবছ? প্রায় আদ্দেক শতাব্দী পেরিয়ে গেল যে! এই বদলে যাওয়া সময়টাকে বুঝতে চাইছি, ধরতে চাইছি।
    -- বেশ তো, কাল কার বাড়ি যাবি বল?
    --বুঝতে পারছি না। ভাবছি আমাদের চে গুয়েভারা সজলের খোঁজ নেব। সেই যে ছোটবেলা থেকেই হাঁপানীতে খুব ভুগত আর নিজেই দরকার মত ডেরিফাইলিন, অ্যামিনোফাইলিন ইঞ্জেকশন ঠুঁসে দিত। এর পরে প্রিয়ব্রতর বাড়ি। শংকর হটাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। বিজনদা অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে।
    এদিকে আজকাল গাছে গাছে ঝোপেঝাড়ে জোনাকিরা জ্বলে- নেভে করে না। কোথাও টিভিতে পুরনো ফিল্মি গান বাজছে-- রমাইয়া বস্তাবইয়া! রমাইয়া বস্তাবইয়া! তেলেভাজার দোকানের সামনে কিছু লোকজনের গজল্লা।
    --কী হল? অমন চুপ মেরে গেলে যে?
    -- কেন তুই জানতিস না?
    --কী জানব?
    --- ওরা দুজনেই নেই।
    --কোলকাতার বাইরে? আমার মত প্রবাসী বাঙালী?
    --- না, ওরা দুজনেই মারা গেছে। সেই সত্তরের প্রথম দিকে।
    --- সে কী? কী করে? কী হয়েছিল?
    -- ওসব শংকরের থেকে পরে শুনে নিস। তোরা এখন যা! ভালো লাগছে না।
  • ranjan roy | 192.69.107.40 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৩:৩৬678580
  • ৮)
    দুদিন পরে শংকর এসে হাজির হল আমার অস্থায়ী ডেরায়।
    আমার হাতের তৈরি কালো চা খেয়ে মুখ ভেটকে বলল -- সামান্য চা টাও ঠিক করে বানাতে পারিস না। তোকে নন্দিতাবৌদি আশকারা দিয়ে মাথায় তুলেছিল। পরে বুঝেছে যে এমন অপদার্থ লোককে মাথায় রাখলে বোঝা বাড়ে, তাই নামিয়ে দিয়েছে।
    আমি মুচকি হাসি। কিন্তু কোথায় যেন খচ্‌ করে লাগে। হয়ত আমার মুখের ভাবে সেটা কিছু ফুটে উঠেছে। শংকর অপ্রস্তুত।
    --সরি! অ্যাদ্দিন বাদে দেখা। এমন ইয়ার্কি করা ঠিক হয় নি। আগের দিন হলে তো--।
    --ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করিনি। ওর সঙ্গে সব চুকে বুকে গেছে, বললাম তো! কাটিয়ে দে।
    ও চুপ মেরে যায়। এদিক ওদিক তাকায়। কোথায় যেন তাল কেটে গেছে। তারপর আমি বাধা দেবার আগেই ফস করে একটা সিগ্রেট ধরায়।
    -- এটা কি ঠিক করলি? ডাক্তারের বারণ আছে না?
    --ছাড় তো! ডাক্তার? তিনকুড়ি পেরিয়ে গেছি, তুই আমি সব্বাই। এখন যা হবার তা হবে। দীর্ঘজীবন লাভ? তাহাতে কাহার কয় গাছি কেশ উৎপাটিত হইবে?
    --- তা বলে তুই ডাক্তারের কথা শুনবি না? বৌদির সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারবি? বা তোর দুই মেয়ের সামনে?
    -- ডাক্তারের সুপরামর্শ? নচিকেতা যমকে বলিলেন--ইহা কি অমৃত? যম নিরুত্তর। তখন নচিকেতা ঘোষণা করিলেন- যেনাহংমৃতস্যাম্‌, তেনাহং কিমকুর্য্যাম্‌? যাহা অমৃত নয়, তাহা লইয়া আমি কী করিব?
    --- টীকা করুন নীলকন্ঠবাবু! আমি মহামহোপাধ্যায়ের কথার পাঠোদ্ধার করিতে অপারগ।
    --- অর্থাৎ যে পথে গেলে বিপ্লব হইবে না তাহা শুনিয়া আমি কী করিব? তেরে অঙ্গনে মেঁ মেরা ক্যা কাম হ্যায়?
    --- তো কোন পথে গেলে বিপ্লব হইবে তাহা আপনি জানেন?
    -- আমি? বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে জিগাইলেন কঃ পন্থা? যুধিষ্ঠির বলিলেন-মহাজনো যেন গতঃ স পন্থা। কিন্তু আজকে এই একুশ শতকে আমার মনে হয়-- কোন মহাজন পারে বলিতে? কাউকে বিশ্বাস করি না। তোকেও না।
    শালা সাতটা ঘোড়সওয়ার খুঁজে বেড়াচ্ছেন! যেন বিষ্ণু দে পড়ে ঘুম থেকে উঠেছেন।
    --- যাক, তাহলে তোর এখনও বিপ্লব হওয়ায় বিশ্বাস আছে, বাঁচালি!
    -- অ্যাই, অ্যাই বানচোত্‌! আমার মুখে কথা বসাবি না।
    --- আমি বসাই নি। যদি বিশ্বাসই না থাকে তো খুঁজে বেড়াচ্ছিস কেন?
    --- আচ্ছা, তোর কেসটা কী বলত? তোর কোথায় খুজলি হচ্ছে?
    --- মানে?
    --- মানে খামোকা পুরনো ঘায়ের ওপর থেকে পাপড়ি টেনে তুলছিস কেন? ধান্দাটা কী?
    ---- ফের ভাট বকছিস! তার চেয়ে সজল আর প্রিয়ব্রত কী করে মারা গেল সেটা বল। বিজনদা বলল না তোর থেকে শুনে নিতে?
    ---- শুনে কী হবে রে গুষ্ঠির পিন্ডি?আচ্ছা, তুই কী বাঙালী?
    --- তবে না তো কি ছত্তিশগড়ি?
    -- হতেও পারিস, শালা দো-আঁশলা কোথাকার।
    -- এবার মার খাবি, তোর কি হল বলত?
    -- হবে আর কি? কোন শালা বাঙালীর চারদিকে যা ঘটছে তা নিয়ে কোন হেলদোল আছে? সবার শালা একই ফান্ডা-- শাকভাত খাই, পকপক দেই!
    আমি হেসে ফেলি।
    --- তুই মাইরি একই রকম রয়ে গেলি! কোন পরিবত্তোন নেই।
    গর্জে ওঠে বিজন-- না! পরিবত্তোন হয়েছে। সবার হয়েছে। তোর আমার সবার। এই বঙ্গে সবার নুনু গুটিয়ে দুপায়ের ফাঁকে সেঁদিয়ে গেছে। নইলে আজ এদিন দেখতে হয়!
  • ঐশিক | 71.12.16.18 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১১:১০678581
  • রঞ্জন দা, মন দিয়ে পড়ছি,
    একটা অনুরোধ Harindranath চট্টোপাধ্যায় নিয়ে অন্য সুতো-তে একটু লিখলে খুব ভালো লাগত
  • sm | 130.57.189.141 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১১:১৯678582
  • পরলাম কিছু কিছু লিঙ্ক ও করতে পারলাম , আলোচনা করার ইচ্ছা রইলো। লেখাটা অনেক পুরনো দিনের কথা মনে করালো। ভালোই লিখেছেন রঞ্জন বাবু ।
  • ranjan roy | 24.97.112.98 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২৩:১৬678583
  • --হ্যাঁ, বিজনদা বলেছে বটে। কিন্তু নিজে শালা মুখ ফুটে বলতে পারল না। ঘাটকাজের দায়টা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সটকে গেল। শালা বুড়ো ভাম!
    শংকর বিড়বিড় করতে করতে দুহাতের বুড়ো আঙুলের নখ ঘষতে থাকে।
    -- তোর কী হয়েছে বলত? বাবা রামদেবের চ্যালা হয়েছিস? এভাবে নখ ঘষলে টাকে দুগাছি চুল গজায় না কি যেন!
    --শোন রমেন। আজ যে প্রিয়ব্রত বেঁচে নেই এর জন্যে দুজন প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী। আমি আর বিজনদা।
    -- কী আটভাট বকছিস?
    -- না রে! আমরা দুজন প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।
    --অংক কঠিন লাগছে।
    ওর মুখ চোখের অবস্থা দেখে কুঁজো থেকে জল গড়িয়ে দিই। ঢকঢক করে খেয়ে একটু ধাতস্থ হয়ে ও মুখ খোলে।
    মনে পড়ে রমেন? ১৯৬৮র শেষের দিকে এক শীতের সন্ধ্যায় তুই আমাকে অনন্ত সিংয়ের ওই এমএমজি বা ম্যান-মানি-গান নামক দলের সদস্য বানালি।
    আর ছ'মাস পরে আমি রিক্রুট করলাম প্রিয়ব্রতকে।
    --খুব মনে আছে। ওটা একটা ডাকাতের দল ছিল, মানে সেই অনুশীলন-যুগান্তর দলের স্বদেশী ডাকাতদের মত। আসলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের রোমান্টিক খোঁয়াড়ি অনন্ত সিংয়ের বুড়ো বয়্সেও কাটেনি। কিন্তু দলটার ফর্ম্যাল নাম ছিল সি সি সি আর আই।সেন্ট্রাল কোঅর্ডিনেশন অফ কম্যুনিস্ট রেভোলুশনারিজ অফ ইন্ডিয়া না কি যেন! আর অনন্ত সিংয়ের নিক ছিল ওল্ড গার্ড, তাই না? একটু একটু মনে পড়ছে।
    --ধুস্‌! অনন্ত সিং একটি মানসিক রোগী ছিল। বড় বড় কথার আড়ালে শুধু অস্ত্র জোগাড় কর আর তার ট্রেনিং নাও। কোন রাজনৈতিক লাইনের ধার দিয়ে যেত না। ওর চোস্ত ইংরেজিতে লেখা সার্কুলারগুলো মনে আছে? সেই যে রে ওল্ড গার্ড নাম দিয়ে সাইন করে পাঠাত? তাতে শুধু গোপন আড্ডা আর সিক্রেসির কথা, যেন বিপ্লবী নয়, স্পাইদের সংগঠন!
    --ওসব থাক, প্রিয়ব্রতর কথা বল।
    --বলছি, দাঁড়া না। তোকে, আমাকে আর, প্রিয়ব্রতকে আলাদা ইউনিটে দেওয়া হল। প্রিয়ব্রতর ইউনিটের লিডার বিজনদা। অনন্ত সিং জানতে পারল যে প্রিয়ব্রত বিধবা মায়ের একমাত্র ছেলে। মা ভালই পেনশন পেতেন আর ব্যাংকে ওর বাবার
  • ranjan roy | 24.97.11.164 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:২৭678584
  • কিছু জমানো টাকা ছিল। বিজনদাকে দিয়ে ওকে বলানো হল যে ব্যাংক থেকে দশহাজার টাকা তুলে আনতে। অস্ত্র কিনতে লাগবে। ওর আর মায়ের জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট। মাকে ভুজুং-ভাজুং দিয়ে চ্কে সই করিয়ে টাকাটা তুলতে হবে, মা তো আর ব্যাংকে যাবে না।
    উনিশ বছর বয়স। প্রিয়ব্রত ডিসিপ্লিন ভেঙে আমার সঙ্গে দেখা করে জানতে চাইল কাজটা উচিত হবে কি?
    ততদিনে পার্ক স্ট্রীট পোস্ট অফিস ও রাসেল স্ট্রীটের স্টেট ব্যাংক ডাকাতি দুটো সফল। বুড়োর হাতে লাখদশেক টাকা এসেছে। তবে আবার এই টাকার খাঁই কেন?
    আমি গিয়ে বিজনদার সঙ্গে দেখা করলাম। সিক্রেসি ভঙ্গ করায় বিজনদা খুব রেগে গিয়ে প্রিয়ব্রতকে খুব বকল। বলল অবিনাশের নির্দেশ সংগঠনে কেউ কোশ্চেন করে না। উনি অগ্নিযুগের পোড়খাওয়া বিপ্লবী। এ টাকাটা চাওয়া হচ্ছে প্রিয়ব্রতর বিপ্লবী কর্মকান্ডের প্রতি ডেডিকেশন কতটা বোঝার জন্যে। কোন চাপ নেই। প্রিয়ব্রত ফিরে যেতে পারে। প্রিয় আমার মত জানতে চাওয়ায় তখন বলেছিলাম যে সংগঠনের আদেশের বাইরে আমার আলাদা করে কিছু বলার নেই।
    বিপ্লব থেকে বাদ পড়ে যাবে, দুধভাত হয়ে যাবে? উনিশ বছরের ছেলেটা নিজের সতীত্বের পরীক্ষা দিতে পরের দিন সন্ধেবেলা দশহাজার টাকা এনে বিজনদার হাতে তুলে দিল। অনন্ত সিং খুশি। সংগঠনে বিজনদার ধক বেড়ে গেল।
    কিন্তু এর ঠিক তিন মাস পরে তুই আমি বিজনদা সব্বাই ওই ডাকাতের দল ছেড়ে এম-এল পার্টিতে যোগ দিলাম। সেখানেও প্রিয় বিজনদার সঙ্গে সেঁটে রইল।
    ইতিমধ্যে চারু মজুমদারের "গেরিলা অ্যাকশন সম্পর্কে কয়েকটি কথা" দলিল বের হয়ে চারদিকে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে।
    বিজনদা আর প্রিয় ওই লেখাটা পড়ে বার খেয়ে চলে গেল সুন্দরবনের গোসাবা এলাকার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে।
    সেখানে একটা বাঘা জোতদারকে টার্গেট করল।
    কৃষ্ণপক্ষের রাত। ওরা ছ'জন। বিজনদা, প্রিয় আর চারজন ভূমিহীন ক্ষেতমজুর। পরে জেনেছিলাম যে আসলে ওরা হল তাড়িখেকো লুম্পেন প্রলেতারিয়েত।
    বিজনদা ও আর একটা ক্ষেতমজুর জোতদারের বাড়িতে দুদিন ধরে বাগানের ঘাস আর আগাছা সাফ করার অছিলায় ভাল করে রেকি করল।
    তারপর রাত্তিরে দুটো গুপ্তি আর ছুরি ও কাটারি নিয়ে হামলা করে বুড়ো জোতদারকে মাটিতে শুইয়ে দিল। কিন্তু বিজনদার তদন্তে ভুল ছিল।
  • ranjan roy | 24.97.11.164 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪২678586
  • ওরা জানতে পারে নি যে জোতদারের ঘরে বন্দুক আছে। দোতলার বারান্দা থেকে বুড়োর মাঝবয়েসি ছেলে গাদা বন্দুক থেকে ফায়ার করতেই একজন তাড়িখোর লুটিয়ে পড়ল। বাকিরা পালাল। কিন্তু শহুরে ছেলে প্রিয়ব্রত পারল না। অন্ধকারে আলপথে দৌড়তে গিয়ে খেজুর কাঁটা বিঁধে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। এদিকে ওদের বাড়ি থেকে 'ডাকাত পড়েছে ডাকাত পড়েছে' শোর উঠেছে। একটু একটু করে জ্বলে উঠছে কুপি আর লন্ঠন। জ্বলে উঠছে মশাল। ঘর ঘর থেকে লাঠি সোঁটা কুড়ুল নিয়ে লোক বেরিয়ে আসছে দলে দলে। প্রিয়ব্রতরা তিন জন ধরা পড়ে গেল। বিজনদা ও বাকি দুজন পালিয়ে গেল।
    ওদের ধরে এনে জোতদারের আঙিনায় থামের সঙ্গে বেঁধে শুরু হল গণধোলাই, একেবারে হাটুরে মার।
    এর মধ্যেই প্রিয়ব্রত চেঁচিয়ে বলতে লাগল-- ভাইসব, ভুল করছ। আমরা ডাকাত নই। আমরা তোমাদের বন্ধু। তাই জোতদারের শত্রু। এই পরিবারটি বছরের পর বছর তোমাদের ঠকিয়েছে। মিথ্যে কাগজ বানিয়ে জমি জিরেত দখল করেছে। তোমাদের ভিটেমাটি ছাড়া করেছে, তোমদের মা-বোনেদের দিকে কুনজর দিয়েছে। তাই ওকে শাস্তি দিতে এসেছিলাম।
    মার কমতে কমতে বন্ধ হল। দুজন ওদের বাঁধন খুলে দিতে গেল। কিন্তু এর মধ্যে বুড়ো জোতদারটা মুখে রক্ত তুলতে তুলতে নিথর হয়ে গেল আর ওর ছেলেটা প্রিয়র গায়ে গাদা বন্দুকের নল ঠেকিয়ে ঘোড়া টিপল। ওর বডি যখন পুলিশের গাড়িতে করে ওদের বাড়িতে পৌঁচে গেল তখন সেখানে বিজনদা বা আমি কেউ ছিলাম না। পরেও মাসিমা আমকে বারবার খবর পাঠিয়েছেন। হিম্মত হয় নি ওঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে, ওঁর চোখের দিকে তাকাতে।
    ভাবতে ভাল লাগে যে এতদিনে উনিও বোধহয় ওর ছেলের কাছে চলে গিয়েছেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন