এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 192.69.73.221 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৮:৩৩678587
  • ৯)
    আমি আবার চা বানাই। শংকর পর পর চারটে সিগ্রেট খেয়ে প্যাকেট শেষ করে ফেলে। আমি চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিই যে এই শেষ, আজ আর নতুন প্যাকেট খোলা হবে না।
    ওর গলার স্বর ভাঙা ভাঙা।
    --- আজও নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি রে। বিজনদা নিজেকে দোষ দেয়, কিন্তু ও তো সব সময় আমার মত জানতে চাইতো।
    আমি কখনই চারু মজুমদারের ওই দলিলের লাইনটা মানতে পারিনি। সমানে তর্ক করেছি।
    তুই ভাব তো-- যে শ্রেণীশত্রুর রক্তে হাত রাঙায় নি, সে কম্যুনিস্ট নয় -- এটা কোন কথা হল? তাহলে তো মার্ক্স থেকে হো চি-মিন সবার হাত ধুয়ে ধুয়ে ল্যাব টেস্ট করে দেখতে হবে কার হাতে কতটা কিসের রক্ত লেগে আছে! এটা সায়েন্টিফিক লাইন? এ তো সেই কালীপূজো করা বাঙালীর কথা! বিপ্লবের নামে তন্ত্রসাধনা!
    ----চারু মজুমদারের পাগলামির প্রায়শ্চিত্ত ভদ্রলোক নিজের জীবন দিয়ে করে গেছেন। তার দায় তুই নিজের ঘাড়ে নিয়ে ফালতু অপরাধবোধে ভুগছিস কেন? বাকি লোকজন কী ছিঁড়ছিল? কানু-খোকন- কেশব --কদম? আর জংগল সাঁওতাল? পুলিশের কোডে ফোর কে অ্যান্ড ওয়ান জে! চীন ঘুরে আসা সৌরীন বসু? কাং শেং আর চৌ এন-লাইয়ের কাছ থেকে ঝাড় খেয়েও দেশে ফিরে সেসব সাধারণ কমরেডদের থেকে গোপন করে সিএম এর বন্দনায় নোট্স্‌ লিখলেন?
    ---- সে কথা বললে অনেকটা দায় তো চীনা পার্টির ওপরেও বর্তায়। রেডিও পিকিং আর পিপলস্‌ ডেইলি তো সমানে ভারতের আকাশে 'বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ' বলে চেঁচিয়ে আমাদের মাথা খারাপ করে দিল।
    কিন্তু আজ আমি করে খাচ্ছি। বৌ-মেয়েদের নিয়ে সংসার করছি। অথচ প্রিয়ব্রত নেই। বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আর আমার সাহস নেই ওঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াবার। নে, এই তো হাল তোর এক ঘোড়সওয়ারের। ভাল করে দেখে নে-- ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়া ভেঙে গেছে।
    শংকর হাসল না মুখ ভ্যাংচাল বোঝা গেল না।
  • ranjan roy | 192.69.73.221 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৯:০৪678588
  • -- এবার সজলের কথা বলবি? আমাদের নিজে নিজে হাঁপানির ইঞ্জেকশন নেওয়া গুয়েভারার কথা?
    --- কিছু বলার নেই। ওর গল্পে "মোটরসাইকেল ডায়েরি"র মত কোন রোম্যান্টিক স্বাদ নেই, নাটকীয়তা নেই। বর্ধমানের গলসি না কাঁকসা কোথা থেকে যেন ধরা পড়ে। জেলে মার খায়, ভূখ হরতাল করে। হাঁপানির রোগী। রাত্তিরে টান ওঠে। ভোরবেলায় জেলের হাসপাতালে পাঠানো হয়। ততক্ষণে অক্সিজেনে কম হয়ে যাওয়ায় টেঁসে গেছল।
    -- ওর বাবা-মাতো আগেই বাংলাদেশে মারা গেছলেন। এখানে জ্যাঠার বাড়িতে থেকে পড়াশুনো করত। আর জ্যাঠার ছিল সুদের আর বন্ধকীর কারবার। সেই নিয়ে একবার চোপা করায় উনি সজলকে বাড়ি থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করেছিলেন।
    --- হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে ওই বোধহয় সবচেয়ে আগে ঘরের মায়া ছেড়ে পথে নেমেছিল। তোর ফেরারি ফৌজের তিনজন অশ্বারোহীকে তো দেখলি। লিস্টির দুজন মৃত। এবার কাকে কাকে দেখতে যাবি?
    --- সৌম্যদাকে।
    --যাস না, গিয়ে লাভ নেই।
    --কেন?
    --ভুল দরজায় কড়া নাড়া হবে।
    -- মানে?
    --- ও রেনেগেড; বেইমান দলত্যাগী।
    -- এই তো তোদের দোষ। মতে না মিললেই রেনেগেড! ছাড় তো এসব! বড় হ! সৌম্যদা কি মিদনাপুর জেলে দুবছর কাটিয়ে আসে নি? ও কি তোদের মত ঘর ছেড়ে গাঁয়ে যায় নি? কৃষকের ঘরে একবেলা পান্তা খেয়ে অন্য বেলা জল খেয়ে পেট ভরায় নি? তবে?
    শংকর আস্তে আস্তে মাথা নাড়ে।
    -- ওসব ঠিকই বলছিস। কিন্তু ওটাই সবটা নয়। বলছি, শোন তা'লে। সৌম্য বানচোত হচ্ছে একটা ইঁদুর! ধাড়ি ও নয়, নেংটি ইঁদুর।
    -- কী যা তা বলছিস?
    -- ঠিকই বলছি রে! দেখ, জাহাজ ডোবার সংকেত সবার আগে কারা টের পায়?--ইঁদুরেরা। সৌম্য হল সেই জাত। ও আগেই টের পেয়েছিল যে আমাদের জাহাজ ডুবছে। আমরা কিছুই বুঝিনি। তখন চাকুলিয়া আর মাগুরজানে মিলিটারি পুলিশ ক্যাম্পে সফল অ্যাকশনের আনন্দে রায়বেঁশে নাচছি।
    ও বাড়িতে খবর পাঠাল। বাবা-কাকারা পুরনো কংগ্রেসি। সেখান থেকে পলিটিক্যাল প্রেশার এল। নিজে জেলারের সঙ্গে লাইন করল। একদিন দেখলাম ও আমাদের সেল থেকে সরে গেছে। তখনও বুঝতে পারিনি। ওর কী হবে ভেবে ভয় পেয়েছিলাম। পরে দেখলাম ও জেলের রাইটার না কি যেন হয়ে গেছে, গ্র্যাজুয়েট ছিল তো! হাতখরচা পেল, ভাল খাওয়াদাওয়া।
  • ranjan roy | 192.69.73.221 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২২:৩৪678589
  • -- সে কি রে! সৌম্যদা রাইটার?
    -- আশ্চর্য্যের কি আছে? আসলে বয়সে বড় বলে দাদা বলতাম, সম্মান দিতাম। কিন্তু ও ছিল হামবড়া কথার ফুলঝুরি। চটকদার ও হাসির কথা বলে আমাদের মত কমবয়েসিদের ইয়ার হয়ে যেত, কিন্তু মানুষটা ছিল ভেতরে ভেতরে ছ্যাবলা।
    আমি হেসে ফেলি।
    -- ঠিক বলেছিস , ও ছিল মহা বাতেলাবাজ।। সেটা মনে আছে? সেই যে ওদের পোড়ো বাগানে আর ক্ষেতে কাজ করতে কিছু সাঁওতাল লেবার এসেছিল আর ও ইউনিটের আড্ডায় বলল-- সাঁওতালদের বলেছি দিনের বেলায় ঠেসে ঘুমোতে আর রাত্তিরে আমাদের মোমবাতির আলোয় তির চালানো শেখাতে। মজুরি পুরো পাবে।
    এবার দুটো মাস অপেক্ষা করুন কমরেড্স্‌। মাত্র দুটো মাস। তারপর একদিন সকালবেলায় কোলকাতার ভদ্রজনেরা চায়ে চুমুক দেওয়ার আগে খবরের কাগজ খুলে চমকে উঠবেন। লুঙ্গিতে গরম চা ছলকে পড়বে। সমস্ত কাগজের প্রথম পাতায় ব্যানার হেডলাইন--" নকশালবাড়ির তির নাকতলায়"।
    ও আমাকে টিউশন পাইয়ে দিয়েছিল বাতেলা মেরে। আমাকে গুরুমন্ত্র দিল-- বেশি পড়াবে না। ঘন ঘন টেস্ট নেবে। সেই সময়টা ছাত্রের মার সঙ্গে গল্প করে কাটাবে। ব্যস্‌, কেল্লা ফতে। টেস্টের ভয়ে ছাত্র নিজেই কষে পড়বে আর নাম হবে তোমার। এদিকে বাচ্চার মা খুশি হলে পাবে মুখরোচক সব জলখাবার।
    আর মনে আছে --প্রেসি ও যদুপুরের কমরেডরা রিসার্চ করে এমন বোম বানিয়েছে যে তুমি আমি পোঁদ চেপে বসলেও কিছু হবে না। কিন্তু সিপিএম এর দীপু বসল কি---।
    কিন্তু সেবার বেলেঘাটায় খুব মার খেল না সিপিএম এর হাতে! সেই যে রে ---সিপিএম এর জাঁদরেল নেতা কে জি বসুর শালা খোকন নকশাল হয়ে নিজের জামাইবাবুকেই সব জায়গায় বেয়াড়া সব কোশ্চেন করে কাঠি করতে লাগল--- তখন বেলেঘাটার সিপিএম ক্যাডারা দুজনকেই পেঁদিয়ে বিন্দাবন দেখিয়েছিল। তখন সৌম্যদারও দুটো দাঁত পড়ে গেছল চ্যালাকাঠের বাড়ি খেয়ে।
    --- আর বামপন্থী নাটক করার সময়েও নিজেই পরিচালক আবার নিজেই হিরো।
    --- ও হো! তোর সেই খার অ্যাদ্দিনেও যায় নি? সেই চালের ব্ল্যাক ধরা নিয়ে পথনাটিকা! বাসভাড়া ও প্রত্যেক দিন পাঁচটাকার কড়ারে পেশাদার নায়িকা এলেন। রিহার্সাল চলছিল। মেয়েটার ইচ্ছে ছিল বিপ্লবী হিরোর রোল তুই করবি, কিন্তু শেষ সময়ে--।
  • ranjan roy | 192.69.73.221 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৯:৫৭678590
  • --ছাড় ওসব কথা। মোদ্দা ব্যাপার হল সৌম্য আদৌ অশ্বারোহী নয়। ও হল খচ্চরবাহন। ছোটবেলার প্রেমিকাকে বিয়ে করে 'সুখী গৃহকোণ, শোভে গ্রামোফোন' গোছের সংসার করছে। আমার পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটার কোন ইচ্ছে নেই।
    --- তা বেশ। কিন্তু একটা ব্যাপারে ধন্দ মিটছে না।
    --কোন ব্যাপারে?
    -- আমার ইংরেজির মাস্টারমশায় দীনেন স্যার! তুই বলছিস, বিজনদাও বললো, মানে ঘটনাটা সত্যি। কিন্তু কেন ঘটলো তার একটা ব্যাখ্যা থাকবে তো? অমন সাদামাটা নিরীহ গোছের ভ্দ্রলোক কেন দলত্যাগী বলে চারটে ছেলেকে মৃত্যুদন্ড দিলেন? কেন নিজের প্রাক্তন ছাত্রের নামে মিথ্যে ডায়েরি করলেন? এটার কোন ব্যাখ্যা তোদের কাছে আছে? ওই বেড়ালের পোঁদে ফুঁ দিয়ে বাঘ বানানো ঠিক যুক্তি হল না।
    --- আছে, ব্যাখ্যা আছে। কাকোল্ড কথাটার মানে জানিস তো?
    -- জানি, যার স্ত্রী অন্যের প্রেমিকা। ওই খানিকটা কাকের বাসায় কোকিলের ডিম পাড়া গোছের সিনড্রোম।
    -- উনি ছিলেন কাকোল্ড।
    -- সে একটা কোলকাতা ছাড়ার আগে শুনেছিলাম বটে! ওঁর অল্পবয়েসী স্ত্রীকে নিয়ে অনেকে রসালো মন্তব্য করত, ছেলেরাও। আমার রুচিতে বাঁধত। হয় প্রতিবাদ করেছি, নয় স্থানত্যাগ করেছি। কিন্তু একজন ক্রিশ্চান স্যার ছিলেন, গ্রামার পড়াতেন। জ্যাকব সার। উনি বৌদিকে নিয়ে কবিতা লিখতেন শুনেছি। ও'রম একটু আধটু ফ্লার্ট!
    -- ব্যাপারটা অনেক দূর গড়িয়েছিল। রোজ ঘরে এসে সময়ে অসময়ে সহকর্মী বৌকে লাইন দিচ্ছে, সবার সামনে। আর স্ত্রীও প্রশ্রয় দিচ্ছেন --কাঁহাতক সহ্য করা যায়। কিন্তু বৌদি বেশ টেঁটিয়া। একদিন স্বামী-স্ত্রীর তিক্ত তর্কাতর্কির পর উনি টিক-২০ খেলেন। এমন মেপে খেয়েছিলেন যে মরবেন না, কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হবেন।
    খবর শুনে গিয়ে দেখি স্যার ময়লা গেঞ্জি আর ধুতি পরে তালপাতার পাখা নেড়ে উনুন ধরাচ্ছেন আর ছোট ছোট দুটো বাচ্চা খিদেয় কাঁদছে। খুব খারাপ লাগল। গিয়ে আমার গার্লফ্রেন্ডকে পাঠালাম। ও গিয়ে স্যারকে সরিয়ে ভাতে ভাত, ডাল আর দুটো তরকারি রান্না করে দিল।
    এই ঘটনার পর স্যার গুম মেরে গেলেন। বৌদি হাসপাতাল থেকে ফিরে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠলেন। জ্যাকব স্যারের সঙ্গে এখানে ওখানে গিয়ে আলাদা করে দেখা করতে লাগলেন। আর দীনেনস্যারের ঘর-গেরস্তি সবার কাছে হাসির বস্তু হয়ে দাঁড়াল।
    এই হিউমিলিয়েশন দুর্বল ব্যক্তিত্বহীন পুরুষের অপবাদ বা ইঙ্গিত ওঁর ভেতরে বারুদ পুরে দিল। ফলে রাজনৈতিক হিংস্রতার দিনে যখন ওঁর কাছে ডিসিশন চাওয়া হল উনি একেবারে নির্মম এক অবতারের রূপ ধরলেন। নৃসিংহ অবতার।
    না, উনি নিজের কাজের জন্যে এতটুকু অনুতপ্ত ছিলেন না। কিন্তু ভায়োলেন্স এক দুধারি তলোয়ার--সেটা বুঝতে পারেন নি। তাই সিদ্ধার্থ রায়ের যুব কংগ্রেসের হামলার দিনে চুপচাপ সপরিবারে পাড়া ছেড়ে যাওয়ার সময় ওঁর চোখের মধ্যে ঠিক আতংক নয়, কেমন হতাশার ছাপ ছিল।
  • debu | 180.213.18.226 | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৫৮678591
  • রঞ্জন দা এটা কি সত্যি যে ৭০ এর দশক এর ৯০% CPM নেতা রা খুনি বা খুন এর সঙ্গে indirectly ভাবে involve ছিল ।
  • ranjan roy | 192.69.73.221 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৬:৫০678592
  • এটা সিপিএম নেতাদের দোষ নয়। ৭০ এর দশকের কং, সিপিএম, নক্শাল ও ফব, আর এস পি, এস ইউ সি--- সমস্ত দলই এলাকা দখলের জন্যে বোমা-পাইপগান-ছুরির ব্যবহারে বিশ্বাস রাখত।
    সেইসময়ের সমস্ত খবরের কাগজ, সাহিত্যে এর প্রতিফলন রয়েছে।
    কখনও নকশালরা , কখনও কংগ্রেস সিপিএমকে পাড়া ছাড়া করেছে। আমার কাকা, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু (আজও) সিপিএম এর তদানীন্তন পার্টিমেম্বার কয়েকবছর পাড়া ছাড়া ছিলেন। তেমনই সিপিএম এর হামলায় নকশাল/কংগ্রেসই শুধু নয়, আর এস পি, ফরোয়ার্ড ব্লক পাড়াছাড়া হয়েছিল। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার (মথুরাপুর, কুলতলি, জয়নগর, বিষ্ণুপুর) এলাকায় এসইউসি/সিপিএম লেগেই ছিল। সেটাকে বলা হত 'শরিকী সংঘর্ষ'। ১৯৬৯ থেকে শুরু।
    কোনো বিশিষ্ট নেতা (যে কোন দলের ) হাত রক্তে রাঙিয়েছেন কি না সেটা বড় কথা নয়, আসলে সমস্ত দলেরই ( নক্শাল তো বটেই) রণকৌশলগত দিক ছিল অস্ত্র দিয়ে সমস্যার মোকাবিলা। খানিকটা আজকের বীরভূম/বর্দ্ধমানে বিজেপি/তিনো সংঘর্ষের মত।
    অবশ্যই সমস্ত সিপিএম এর নেতা/ ক্যাডারের হাতে রক্ত লাগে নি। তবে সেটা ছিল সমস্ত পক্ষেরই অস্তিত্বের প্রশ্ন।
    ধরুন, চারু মজুমদার বোধহয় কোন হাতিয়ার চালান নি। কিন্তু 'খতম অভিযান' এর থিওরি ও নীতিগত প্রোজেকশানের দায় তো তাঁরই উপর বর্তায়।
    ঘরে ঘরে বোমা বাঁধা হত। কিছু ছেলের হাত ও চোখ এবং জান চলে যেত। পাইপগান তো কুটিরশিল্প হয়ে গেছল।
    এখন শহরতলীর সেইসব পাড়ায় সন্ধ্যেয় হেঁটে যাই, নিরবচ্ছিন্ন শান্তি। ৯০ এর দশক থেকেই সেই সব আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে। বরং ৮২ -৮৩ থেকেই।
    সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'ছেলে গেছে বনে' কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতায় চিত্রটি ধরা আছে।
  • ranjan roy | 132.162.250.249 | ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ১২:১২678593
  • ১০)
    হাতে রইল পেনসিল
    ----------------------
    হারাধনের ছিল দশটি ছেলে। নয়জন গেল কালের কবলে-- এক এক করে। শেষ ছেলেটি বোধহয় যমের অরুচি, তাই বেঁচেবর্তে রইল হারাধনের বংশের কুলপ্রদীপ হয়ে। কিন্তু সে পিদিমেরও তেল ফুরিয়ে গেছে। তাই যা হবার তা হল। প্রথমে ভেউ ভেউ করে খানিক কেঁদে নিল।
    তারপর ?--' মনের দুঃখে বনে গেল রইল না আর কেউ'।
    সে না হয় হল। কিন্তু আমরা ছিলাম আটজন, আট অশ্বারোহী। আমাকে বাদ দিয়ে ওরা সাতজন। না, মনের দুঃখে বনে যাই নি। এখনও ব্যাট করছি।
    কিন্তু সে তো টেল-এন্ডারের ব্যাটিং! একে নাইট -ওয়াচম্যান।তায় ফলো অন বাঁচানোর চাপ।তাই অন্যদিকে কে কে টিঁকে আছে খোঁজ নিতে বেরিয়েছি।
    কেন? উত্তর নিজেরও জানা নেই। শুধু ফলো অন নয়, একেবারে ইনিংস ডিফিটের ভয়। স্ট্র্যাটেজি যে ভুল ছিল সে তো বহু আগেই বুঝে গেছি। আসলে ক্যাপ্টেন টস জেতায় আমরা ভেবেছিলাম যে খেলাটাই জিতে গেছি।
    তো সাতজনের খোঁজ পেয়েছি। আসলে তিনজন। বিজনদা, শংকর আর বিমলে। দুজন বীরগতি প্রাপ্ত হইয়াছেন-- সজল ও প্রিয়ব্রত। একজন রেনেগেড আখ্যা লাভ করিয়াছেন--সৌম্যদা।
    রইলাম শুধু আমি।
    আমি মুক্তপুরুষ।বৌ ও দুইসন্তান আমার সম্বন্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করিয়াছে। ফলে মন-বলে-আর-কেন-সংসারে-থাকি কেস!
    কিন্তু একী হইল! ব্যাংকে কর্ম করিয়াও আমি পাটিগণিতে কাঁচা! যাদববাবু বা কে সি নাগ-- উভয়েরই স্নেহ হইতে বঞ্চিত। দুই আর দুইয়ে কত হয় জানিতেও ক্যালকুলেটরের বোতাম টিপিতে হয়! তাই খেয়াল করি নাই যে সাকুল্যে সাতজন হইয়াছে। একজন এখনও বাকি। অলকেশ। আমাদের সর্বকনিষ্ঠ ঘোড়সওয়ার। সে আজ কোথায়?
  • ranjan roy | 132.162.250.249 | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ১৯:১৯678594
  • শীতটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে।
    এতদিনে।
    এবার তো নভেম্বরের বিকেলেও সোয়েটার চড়াতে হয় নি। এখন ক্রিসমাস হাতছানি দিচ্ছে। একটা চোরাগোপ্তা উৎসব উৎসব ভাব। সূর্যডোবার আগেই আমার দু'কামরার আস্তানার দরজায় তালা ঝোলাই।
    হেঁটেই চলে যাবো মেট্রো স্টেশন গীতাঞ্জলি।হাজরায় একবন্ধুর ঠেকে ডানহাতের ব্যাপার ও কিছু কাজের কথা সেরে ফিরতে হবে বিজনদার ঘরে। একটা প্যাকেট নিয়ে আসতে হবে। কিসের প্যাকেট খোলসা করে বলে নি। মরুক গে! কিছু একটা হবে।
    তবে আমার মতলব আলাদা। আমি খোঁজ চাই অলকেশের। বিজনবুড়োকে খোঁচালে কোন সুলুক সন্ধান নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।
    পকেটে চাবি, মোবাইল আর এটিএম কার্ড আছে তো! হাত ঢুকিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে যাই।
    সিঁড়ি দিয়ে নামছি কি রামবিরিজের সঙ্গে দেখা। এই সাদামাটা ফ্ল্যাটবাড়ির একমাত্র সিকিউরিটি গার্ড ও ম্যানফ্রাইডে।
    আমাকে দেখলেই ওর মুখে কেমন একটা বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। ছোটবেলায় যুগান্তর পত্রিকায় কাফি খাঁর কার্টুনে এমনি এক মুখভঙ্গী দেখেছিলাম --নাপিতের চেহারায়। তার সঙ্গে ছিল দু'লাইন ছড়া।
    "ক্ষুর ঘষন্তি ক্ষুর ঘষন্তি চিড়িক চিড়িক পানি,
    তোমার যা মনের কথা সে তো আমি জানি"।

    হতভাগা! ও কী জানে?
    আমার মনের কথা ও কী জানে!!

    --চললেন রমেনবাবু? এগারটার মধ্যে ফিরবেন তো?
    -- মানে?
    -- জাড়া বহোত হ্যায়। আমি এগারটার পরে গেটে তালা লাগিয়ে শুয়ে পড়ি। বুড়ো হয়েছি। ঠান্ডা সয় না। তবিয়ত খারাপ হয়ে যায়।
    -- চিন্তা কর না। তুমি তোমার হিসেবে শুয়ে পড়। আমি এগারটা বাজলে অন্য বাড়িতে থেকে যাবো।
    -- রাগ করলেন বাবু? আসলে--।

    আমি উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যাই। এসব ওর ভড়ং। সোসাইটির প্রেসিডেন্টের আশকারা পেয়ে মাথায় চড়েছে। ও অন্যদের গাড়ি ধুয়ে দেয়। বাজার করে দেয়।বকশিশ পায়। আমার ওসব বালাই নেই। ফলে ওর চোখে আমি মহাফালতু লোক।
    আদ্দেক রাস্তা পেরিয়ে এসেছি সামনেই শ্রীগুরু আশ্রমের গেট। আর একটু এগোতেই থমকে দাঁড়াই। ওই ছোট্টমত ক্লাবের সামনে এই ভিড় কিসের?
    বর্তমান সরকারের বদান্যতায় ক্লাবে ক্লাবে ছয়লাপ। গলিতে গলিতে ক্লাব। সবাই সগর্বে ঘোষণা করে যে ওরা সরকারের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দপ্তরের সৌজন্যে দু'লাখ টাকা করে পেয়েছে।
    ভিড়টা অমনি এক ক্লাবের বিপরীতে বাঁধানো চাতালের সামনে।কিছু চ্যাংড়া ছোঁড়া কাউকে ঘিরে হো-হো করে হাসছে। সঙ্গে স্ট্যান্ডের জনাচারেক রিকশাওয়ালা।
    আমি পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করি।
    তবু দাঁড়িয়ে পড়তে হল। কানে এসেছে এক মহিলার কন্ঠস্বর। উনি কাউকে অনুনয়- বিনয় করছেন। কিন্তু ওই গলার স্বর যে আমার চেনা!
  • ranjan roy | 132.162.250.249 | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০০:১১678595
  • ভিড়ের মাঝে উঁকি মারি।
    হ্যাঁ, অনুনয়মাখা গলার স্বরের মালকিনকে আমি চিনি। আমার ফ্লোরে একটা ফ্ল্যাট বাদ দিয়ে দ্বিতীয় দরজাটি। দরজায় কার্সিভ হস্তাক্ষরে লেখাঃ
    কৃষ্ণা মাইতি, এম এ ;
    সুধীর মাইতি, পি এইচ ডি।
    উঠতে নামতে চোখাচোখি হয়েছে, আলাপ হয় নি। কোন স্কুলে পড়াতে যান। একবার আমার দরজায় বেল টিপে আমার ইস্ত্রি করা কাপড় দিয়ে গেছিলেন, আর একবার ডাকে আসা কিছু কাগজপত্র।
    সেদিন এসেছিলেন জানতে যে ফ্রিজ সারাইয়ের কোন দোকানের ফোন নম্বর জানা আছে কি না।
    রামবিরিজের সূত্রে খবর পেয়েছি যে সুধীরবাবু হটাৎ একদিনের জ্বর ও মাথাব্যথায় গত হয়েছেন। বছর দুই হল। উনি এখন একাই থাকেন। ছেলে মুম্বাইয়ে।
    কিন্তু ওঁর গলার স্বর! নারীকন্ঠের হিসেবে একটু মোটা ,তবে জোয়ারিটা বড্ড মিঠে। তাই ভিড়ের মধ্যে ওঁর অনুনয়ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
    কিন্তু উনি বারবার রিকোয়েস্ট করছেন কাকে? ওই ছোকরাগুলোকে? কেন? ওরা কি ওঁকে ভরা বিকেলে খোলা রাস্তায় বিরক্ত করছে?
    কালে কালে হল কী!
    প্রতিবেশিনীর প্রতি কর্তব্যবোধে সচেতন হয়ে এগিয়ে গেলাম।
    কী হয়েছে, ভাই?
    যা হয়েছে তার মাথামুন্ডু বুঝতে বেশ সময় লাগল।
    শানবাঁধানো রকে বসে এক থুড়থুড়ে বুড়ি। ধপধপে সাদা চুল ছোট করে ছাঁটা। পরনে সাদা থান, গায়ে একটা হাল্কা উলের ব্লাউজ। পাশে একটা থলি মত, আর আধখালি জলের বোতল। একে চলতে ফিরতে কয়েকবার দেখেছি। সকাল বেলা হাঁটি হাঁটি পা পা করে রোয়াকে এসে বসেন আর সূর্য ডুবলে পরে উঠে কোথায় যেন চলে যান। কারো সঙ্গে কথা না বলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকেন। চারপাশের লোকজন দোকানপাটের বিষয়ে যেন উদাসীন ।কখনও হাসতে দেখিনি। এতদিন পাগল ভেবে এড়িয়ে গেছি।
    তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছেন আমার প্রতিবেশিনী। সামনে নামিয়ে রেখেছেন এক বোতল দুধ, কিছু ফল আর প্লাস্টিকের টিফিন কৌটোয় কিছু রুটিতরকারি।
    কিন্তু বৃদ্ধা নির্বিকার পাথরপ্রতিমা।
  • ranjan roy | 192.69.15.84 | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ২২:১১678597
  • --মাসিমা, কিছু মনে করবেন না। রোজ দেখি শীতের মধ্যে একা একা এমনি খোলা জায়গায় বসে থাকেন। এই উলের ব্লাউজটা নিন, বেশ গরম। আর এই প্যাকেটে দুটো শাড়ি।
    বৃদ্ধা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
    --- মাসিমা, আমি আপনার মেয়ের মত। প্লীজ, এগুলো নিন। আর এই এক প্যাকেট বিস্কুট, সামান্য ফল, আর এই টাকাটা রাখুন।
    টাকার কথা কানে যেতেই বৃদ্ধা চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আধবোজা উনুনে যেন আবার আঁচ বেড়ে উঠছে। জোড়া হাত কপালে উঠলো।
    --ধন্যবাদ! আপনি কে জানি না। কিন্তু এসব কিছুই আমি নিতে পারবো না। দয়া কইরা ফেরত নিয়া যান।
    --কী বলছেন মাসিমা?
    -- ঠিকই শুনেছেন। আপনার দয়া দেখানোর কুনো দরকার নেই। আমি খুব ভালো আছি। আপনে যান।
    আমার প্রতিবেশিনী কৃষ্ণা ম্যাডাম এই রূঢ় প্রত্যাখানে অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে এদিক ওদিক দেখছেন। আমাকে যেন দেখেও দেখলেন না। শেষে তামাশা দেখা ছেলের দলকে ধরলেন।
    -- ভাই, আপনারা একটু বোঝান না! উনি কেন অমন করছেন?
    --- কাকিমা, কোন লাভ নেই। অমন আড়বুঝ বুড়ি এ তল্লাটে নেই। নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। উনি বোঝেন না।
    -- উনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি কি অন্যায্য কিছু বলেছি? আজ আমার স্বামীর বার্ষিকী। এই সময় প্রতি বছর এসব করে থাকি। এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয় নি।
    --- আরে উনি ওইরকমই।

    এবার আমি একটু নাক গলাই।
    -- শুনুন মাসিমা। আপনি থাকেন কোথায়? বাড়িতে কে কে আছে? রোজ ঠান্ডায় এমনি করে খোলা জায়গায় বসে থাকলে নিমোনিয়া হতে পারে। চলুন,আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।
    -- ধন্যবাদ! আমার কারো সাহায্যের দরকার নেই। এসব হইল জুতা মাইরা গরু দান।
    এবার আমার হতভম্ব হওয়ার পালা।
    --মানে?
    -- আপনেরা কিছুই জানেন না। এই ছোকরাগুলান জানে। ওই যে রাস্তার অইপারে যেখানে অগো নতুন ক্লাব ঘর উঠতাছে--সেইটা ছিল আমার জমি। সোয়ামি নাই, ছেলে এখানে থাকে না। কিন্তু অরা আমার ঘর ভাইঙ্গা দিছে, জমিন কাইড়া নিসে। আমারে নিঃস্ব করছে। এখন আপনেরা আইছেন দয়া দেখাইতে? কুনো দরকার নেই। আমি মরলে ওই ফলমূল ট্যাহা দিয়া আমার ছেরাদ্দ কইরেন, এখন যান।
    আমি শ্বাস টানি। একনজর ছেলেগুলোকে দেখি। ওরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাকে জরিপ করছে।
    আমি মাপা পায়ে ওঁর কাছে গিয়ে কৃষ্ণাকে সরিয়ে উবু হয়ে বসি।
    --মাসিমা, আপনার কাছে ওই জমির কোন কাগজ বা দলিল আছে? ধরেন কর্পোরেশনে ট্যাক্সের রসিদ? যা দেইখ্যা সবার বিশ্বাস হইব যে জমিনটা আপানর ছিল।
    বলামাত্র ক্লাবের ছেলেগুলো হা-হা করে হেসে উঠল।
    -- আপনে কি উকিল নাকি মেসোমশায়? ওসব আগেই অনেকে চেষ্টা করেছে। ওঁর গল্পটা সত্যি নয়। এসব বুড়ো বয়সের ভীমরতি।
    আমি মুচকি হাসি। ওদের দলটাকে স্ক্যান করে চশমা পরা ছেলেটিকে বলি-- না, উকিল-টুকিল নই। জানতে চাইছি ব্যাপারটা কী? তোমাদের সঙ্গে এনার কিসের ঝগড়া?
    ওদের চোখের সম্মিলিত চাউনি নরম হয়।
    চশমা পরা ছেলেটি বলে --এবার লাইনে এসেছেন কাকু। আমাদের দিকটা শুনে নিন। আমরা অত খারাপ লোক নই।
  • ranjan roy | 192.69.15.84 | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ২৩:২৩678598
  • -- না কাকু! এই দিদার জমি বা এক ইঁটের খুপরি ঘরটি ছিল সরকারি জমির উপর জবরদখল করে। তাই ওঁর কাছে কোন কাগজ বা পাট্টা নেই। থাকতে পারে না।সে দিক দিয়ে দেখলে ওই জমির উপর ওঁর কোন আইনি হক নেই।
    -- আপনিই বলুন কাকু, যখন করপোরেশন রাস্তার উপর জবরদখলি দোকান ভেঙে দেয় তখন কিসের জোরে ভাঙে। বে-আইনী বলেই তো!
    আমি গলা খাঁকরি দেই।
    -- এটা কি সত্যি যে তোমাদের নতুন ক্লাবঘর ওই মহিলার ভিটের ওপর তৈরি হচ্ছে? যদি তাই হয় সেটাও তো একরকম সরকারি জমিতে দখল, বেআইনি ভাবে। তাই তো?
    -- না কাকু! আমাদের পাট্টা আছে। ওই জমির টুকরোটি আমাদের ক্লাব সরকারের থেকে লীজ নিয়েছে, রেজিস্ট্রি করে। পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে। হ্যাঁ, এই সরকারের থেকে যে দু'লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছি তার থেকেই, বাকিটা ক্লাবঘর তৈরিতে লাগছে।
    -- কিন্তু জবরদখল জমিবাড়ি ভেঙে দিলেও আইনি ক্ষতিপূরণ দেবার বা বা পুনর্বাসনের ব্যব্স্থা আছে না? আর এই দিদার বয়েসটা দেখ!
    -- বলেছি না আমরা অমানুষ নই। আসুন, ওই দেখুন, পেছনের জমিতে অ্যাসবেস্টসের ছাদ আর এক ইঁটের দেওয়াল দিয়ে দিদার জন্যে আমরা একটা থাকার জায়গা করে দিয়েছি। ক্লাব থেকে তার টেনে একটা বাল্ব ও লাগিয়ে দিয়েছি। দেখবেন আসুন।

    ওরা খুব একটা বাড়িয়ে বলেনি।
    ঘরের মধ্যে একটি নেয়ারের খাটিয়ায় বিছানা করে কম্বল পেতে মশারি টাঙিয়ে দেওয়া আছে, কোণে একটি জলের কুঁজো ও গেলাস।
    কিন্তু দিদা যে ওই ঘরে যেতে চায় না!
    ফিরে যাই ওই বৃদ্ধার কাছে।

    -- মাসিমা, ছেলেগুলো আপনার নাতির মত। আপনাকে ভালবেসে ভাল ব্যবস্থা করেছে। কেন অভিমান করে মুখ ফিরিয়ে আছেন। আমার হাত ধরুন। সন্ধ্যে হয়ে এল। ঠান্ডা বাড়ছে, চলুন-- আপনার ঘরে নিয়ে যাই।
    উনি আমার দিকে এক অদ্ভূত চোখে তাকিয়ে রয়েছেন, পলক পড়ছে না; এক মিনিট । শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-- তোমারে বুঝাইতে পারি না। আমার ভিতরটা জ্বইল্যা যায়। ওরা ভাল ঘর ভাল বিছানা দিছে। কিন্তু সেই ঘরে আমার সোয়ামির গায়ের গন্ধ কই? আমার ছেলের ছোটবেলার মুতের কাঁথার ঝাঁঝ কই? কইলাম তো, কারো দয়া চাই না। এই বুড়া হাড় কয়খান জুড়াইতে আর বেশি দিন নাই। পারলে আমারে আগের জায়গাতেই মরতে দাও। আর না পারলে দূর হইয়া যাও, মাগনা কুয়ারা কইরো না!
  • ranjan roy | 24.97.152.227 | ০১ নভেম্বর ২০১৫ ০০:২৩678599
  • ১১)
    নীল সাদা শাড়ি, নীল রঙা ডায়েরি
    -----------------------------------
    সেদিনের সন্ধ্যেতে এক অচেনা বুড়ির বেয়াড়া জিদের কাছে হার মেনে ঘরে ফিরে এসেছিলাম। রাত্তিরে খেতে ইচ্ছে করছিল না।মুখের ভেতরে লংকাবাটার স্বাদ।
    কেন যে মানুষকে সুখে থাকতে ভূতে কিলোয়! বুড়ি বৈতরণী পেরোবে বলে এক পা বাড়িয়েই রয়েছে , তবু জমি নিয়ে জিদ গেল না। খামোকা কষ্ট পাচ্ছে। শুধু বেয়াড়া জিদের জন্যে। ফালতু ইমোশনাল অত্যাচার।
    একটুকরো জমি মানে একটুকরো জমিই, তার বেশি কিছু নয়। তবু তার মধ্যে ও সোয়ামির গায়ের গন্ধ, খোকার ছোটবেলার পেচ্ছাপের ভিজে কাঁথার ঝাঁঝালো গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছে। যত্তসব পাতি সেন্টু।
    ঠিক যেন নন্দীগ্রাম সিঙ্গুরের চাষী। ওদেরও সেই পাতি সেন্টিমেন্ট। আরে বাবা, তখন যদি টাটকে ওরা হাসিমুখে জমি দিয়ে দিত তো আজকে সিঙ্গুর আর অজ পাড়াগাঁ না থেকে একটি চিত্তরঞ্জন বা দূর্গাপুর, নিদেনপক্ষে একটা বেলঘরিয়া -টিটাগড় হয়ে যেত। পাতি সেন্টিতে সুড়সুড়ি দিয়ে বিরোধীরা ওদের হাতে তামাক খেয়ে গেছে, দোষ দেবে কাকে! ওরা তো আর পোঁছেও না।
    এখন মরগে যা!

    'ভালো রে ভালো করে গেলাম কেলোর মার কাছে,
    কেলোর মা বললে আমার ছেলের সঙ্গে আছে।
    যখন তোরা এত বছরের পুরনো দল ছেড়ে মা-মাটি-মানুষের নামে নেচে উঠেছিলি তখনই বলেছিলাম
    --আজ বুঝবি নে, বুঝবি কাল,
    পোঁদ চাপড়াবি পাড়বি গাল'।
    এসবই হল কালীদার কথা। আমাদের বাঙালপাড়ায় একজন খাস ঘটি। মোহনবাগানের সাপোর্টার।ও নাকি এ পাড়ার আদি বাসিন্দা কোন খানদানি জোতদার পরিবারের ছেলে। মাথাটা গেছে। কিন্তু আমরা ভালবাসি, কালীদা বলি। কেউ ওকে পাগল বলে খোঁচালে তাকে মারতে বাকি রাখি। কষে গাল দিয়ে ভূত ভাগিয়ে দিই।
    সে যুগে কাকদ্বীপ না কোথাকার সম্পন্ন বাড়িতে ওর বিয়ে ঠিক হয়। তখন ওর বয়েস বাইশ, বিয়ের আসরে ও চেঁচিয়ে ওঠে-- এ বিয়ে করবুনি, লিচ্চয় করবুনি। এরা ঠকিয়েছে। আমাকে অন্য মেয়ের ফটু দেখিয়েছিল।
    মেয়ের বাবা দিব্যি গেলে বললেন-- আমার একটিই মেয়ে। ওর ফটুই দেখেছিলে বাবা। হ্যাঁ, সে ফটু কোলকেতার পার্ক স্ট্রিটের সায়েবি দোকানে তোলা, সেটা মানছি।
    সবার পেড়াপিড়িতে কালীদা বিয়ে করে ফিরে এল বটে, কিন্তু গুম মেরে রইল। তারপর মাথায় ছিট দেখা দিল। বৌ বলল এসব আমাকে লুকনো হয়েছে। আমিই ঠকেছি। তারপর গয়নাগাটি কাপড়জামা নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেল। বরাবরের মত।

    এবার মাথার ছিট বিঘৎখানেক থেকে গজখানিক হল।
    পাবলিক মেনে নিল যে কালী হল মহাপাগল। কারণ ও ছিল ছোটদের খিস্তিমাস্টার। পয়সা নিয়ে খিস্তি করতে শেখাত। আমি ছিলাম এক মনোযোগী ছাত্র।

    আমতলার ঠেকে আসত কালীদা।
    এসেই হাত পাতত-- দে না চার আনা। এক প্লেট ঘুগনি খাব, অধীরের দোকানের। বড় ভালো বানায়।
    কেউ প্রথমে গা করল না দেখে বলল,
    --রমেন কোথায়? ও তোদের মত না, ঠিক পয়সা দেবে।
    সবাই হেসে উঠত।
    -এই যে কালীদা তোমার রমেন। তোমাকে দেখে মুখ লুকোচ্ছে।
    অগত্যা আমাকে এসে কালীদার হাতে চার আনা বা পঁচিশ নয়া পয়সা গুঁজে দিতে হত।
    একগাল হাসি নিয়ে কালীদা শুরু করল।
    --এই ধাঁধাটা বল দেখিঃ
    হেসে হেসে গেল মেয়ে পরপুরুষের পাশে,
    দেয়ার সময় উহু-উহু, দেয়া হলে হাসে।
    আমাদের বাকরুদ্ধ অবস্থা দেখে মিটিমিটি চোখে বলল--যা ভাবছিস তা নয়, এ হল শাঁখারির শাঁখা পরানো। মেয়েরা হাসি মুখে শাঁখা পরিয়ে দিতে বলে। কিন্তু হাত মুচড়ে একটু একটু করে চাপ দিয়ে পরানোর সময় লাগে বই কি, হয়ে গেলে খুশ।
    --রাখো তো কালীদা! ওসব মা-ঠাকুমার যুগের গপ্পো। আজকাল কোন মেয়ে শাঁখা পরতে শাঁখারির কাছে যায়?
    কালীদা দমে না।
    --বেশ, এটা বল।
    দেখেছি মায়ের, দেখেছি বোনের, শালীরও হয়েছে দেখা,
    কিন্তু বৌয়ের দেখতে যে পাব কপালে নেইকো লেখা!
    --কী আজেবাজে ঘটি জোক্‌!
    -- পারলি না তো! শোন।
    উত্তরটা হল -বিধবার নিরাভরণ হাত। আমরা মায়ের বোনের বা শালীর বৈধব্যও দেখতে পারি। কিন্তু বৌয়ের বৈধব্য? দেখতে হলে তো আগে আমাকেই পটল তুলতে হবে।
    কী যে ভাবছি! কোন মাথামুন্ডু নেই। রোদ্দূর উঠেছে, ঘুলঘুলি দিয়ে উঁকি মারছে। খিদে টের পাচ্ছি। কাল রাত থেকে খাইনি যে!
  • ranjan roy | 24.97.152.227 | ০১ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৪৬678600
  • এবেলা মুড়ি খেয়ে কাটিয়ে দিলেই হয়। রাত্তিরে মোড়ের থেকে রুটি আলুরদম আনিয়ে নেবখন।
    দরজায় মৃদু খটখট। সাতসকালে কে এল রে বাবা! লুঙি ঠিক করে গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে পড়েছি।
    প্রতিবেশিনী কৃষ্ণা মাইতি পি এইচ ডির বাঁ হাতে টি পট, ডান হাতে একটি ব্রাউন প্যাকেট।
    আচ্ছা, ফরসা মেয়েদের নাম কেন কৃষ্ণা হয়, আর কালোদের গৌরী?
    আর মাথায় ঘুরপাক দিয়ে বেজে উঠল ছেলেবেলার রেডিওতে শোনা অনুরোধের আসরের গান-- নীল শাড়ি তার অঙ্গে যেন আকাশ গঙ্গা ঝরা!
    উনি বেশ সপ্রতিভ ভাবে প্রায় আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়লেন।
    -- আচ্ছা লোক তো মশাই। দরজায় কলিং বেল লাগান নি। সকালে একটি ছেলে, সম্ভবতঃ ক্যুরিয়র, ঠক ঠক করে হার মেনে এই প্যাকেটটা আমার ফ্ল্যাটে ছেড়ে গেছে। আর দুটো কাপ নিয়ে আসুন তো। এই শীতের সকালে একাসঙ্গে একটু চা খাই। আমার আবার একা একা চা খেতে ভালো লাগে না। সবার সঙ্গে সহজে মিশতে পারি না, বুঝতেই পারছেন। কিন্তু কাল থেকে তো আমরা বন্ধু হয়ে গেছি তাই না?
    আমি বিনা বাক্যব্যয়ে আদেশ পালন করি।
    কে আবার বাজায় বাঁশি, এ ভাঙা কুঞ্জবনে!
    কিন্তু প্যাকেটের মোড়ক খুলে চমকে উঠি। একটি নীল রেক্সিনে বাঁধানো ডায়েরি, সঙ্গে বিজনদার হাতে লেখা চিরকুট।

    রমেন,
    তোর শেষ অশ্বারোহীর ডায়েরি। এতদিন আমার কাছে রাখা ছিল। তোকে দিয়ে হালকা হলাম।
    বিজনদা।

    ডায়েরির প্রথম পাতাতেই একটা আড়াআড়ি করে লেখা নোটঃ

    "এই ডায়েরি যেন আমার মৃত্যুর পরে কমরেডরা পড়ে। "
    অলকেশ রায়চৌধুরি,
    ১৭/১২/১৯৮৫

    ----- প্রথম খন্ড সমাপ্ত---
  • ranjan roy | 24.97.152.227 | ০১ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৫৫678601
  • ডিঃ প্রথম খন্ড নয়, প্রথম ভাগ হবে।
  • Manish | 127.214.45.1 | ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ১৬:২৯678602
  • Ranjan মনযোগ দিয়ে পড়লাম। খুব ভালো লাগলো পড়তে। আমি সাধারনত কিছুদিনের gap দিয়ে পড়ি, যাতে একসাথে অনেকক্ষানি পড়া যায়।

    দ্বিতীয় ভাগের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
  • ranjan roy | 24.97.229.206 | ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ১৬:৩২678603
  • মনীশ,
    ধন্যবাদ।
    এটা তিন বা চার ভাগে হওয়ার পরিকল্পনা আছে। শেষ ভাগ বর্তমান সময়ে । শীগ্গিরই শুরু করছি।
  • বেশ | 126.50.59.180 | ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ১৬:৫৪678604
  • অপেক্ষায় রইলাম। খুব ভালো লাগছে।
  • ranjan roy | 132.180.174.31 | ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৯:০৭678605
  • দ্বিতীয় ভাগ
    =======
    অলকেশের ডায়েরির কয়েকটি পাতা
    - - - - - - --------------------------
    ১)
    কালো বেড়াল
    -----------------
    বেড়ালটা আবার এসেছিল।কাল রাত্তিরে। জানলা দিয়ে দিব্যি গলে চলে এল। আমার খাটের পাশে ওষুধপত্তর ও নার্সের চার্ট রাখা ছোট সাদামত বিধবা টেবিলটার ওপর কেমন যেন অলস ভঙ্গিতে উঠে বসল। আমাকে দেখতে লাগল। পিত্তি-হলুদ চোখ।
    আমি হাত নেড়ে তাড়া দেব, সে সুযোগ নেই।হাত জোড়া আছে খাটের পাশে স্ট্যান্ড থেকে ঝোলানো রক্তের বোতলে। ব্লাড ট্রানসফিউশন। আগের কেমো হয়ে যাওয়ার পর প্লেটলেট কাউন্ট নাকি কমে গেছে। কোথায় কোন ব্লাড ব্যাংক থেকে এই রক্ত এসেছে জানি না। তবে আমার গ্রুপ এ নেগেটিভ; সহজে পাওয়া যায় না।
    আমি হুশ্‌ বলতে পারছি না। কথা বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক মাস।তাই যা বলার ইশারায় বলি। নয়তো কাগজে লিখে। মাথার কাছেই একটা রুলটানা খাতা আছে, আর একটা ডট্‌ পেন। কিন্তু এই অবস্থায় কী করে লিখব? কাকে লিখব? সিস্টার স্নিগ্ধা রক্তধারার স্পিড বেশ কমিয়ে দিয়ে ওদের রেস্ট রুমে গেছে। ঘন্ট-দেড় ঘন্টা পরে এসে দেখে যায়।
    ততক্ষণে বেড়ালটা চলে যাবে।
    কালকেও লিখে দিয়েছিলাম ওর কথা, পরশুদিনও। ওরা আমার খাতা দেখে ভুরু কুঁচকে আমার কপালে হাত দিল, প্রেসার মাপল। ঘুম হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করল। কীসব বলাবলি করল , কানে এল কোন একটা ওষুধের , হয়ত ঘুমের, ডোজ বাড়িয়ে দেবে।
    দিক গে, বাড়িয়ে দিক। আরও বাড়িয়ে দিক, আরও। এখন আর কিছু ভাল লাগে না। শুধু ঘুমুতে চাই। একটা হাতে নিডল্‌ ফুটিয়ে রাখা আছে, সেও কতদিন হয়ে গেল; আগে ডান হাত, এখন বাঁ-হাত। আর ভালো লাগে না।
    খেতে ভালো বাসতাম। আমাকে খাইয়ে সবাই খুশি হত। এখন সেই খাওয়াটাও এক তামাশা।গলা দিয়ে একটা পাইপ ঢোকানো হয়েছে। লিকুইড স্যুপ, অ্যান্টাসিড সব ওই পাইপের গায়ে একটা মোটা সিরিঞ্জ মতন জুড়ে তার মধ্যে ঢেলে দেয়। জলও খাই ওই ভাবে।
    এইসব আগড়ম বাগড়ম ভাবছি, তখন আমাকে চমকে দিয়ে বেড়ালটা কথা বলে উঠল।
    --- মন খারাপ করে না।তবুও বইটই তো পড়তে পারছ।তাই বা কম কি!
    ( শালা! তোর--)
    --অ্যাই খিস্তি করে না! ভদ্রঘরের লেখাপড়া জানা ছেলে কুলিমজুরের মত মুখ খারাপ করে না!
    ( চোপ শালা! বেশি মাজাখি করলে গাঁঢ় ভেঙে দেব। আমি তো মজদুর হতেই চাই, কোন শালা ভদ্দরলোক হতে চায়?)
    বেড়াল এবার ফিকফিকিয়ে হাসে। ল্যাজমোটা হুলো কোথাকার। আমার চোখে সবকটা কালো বেড়াল একই রকম দেখতে,--- কুচকুচে কালো, পিত্তিহলুদ চোখ। অবশ্যি সব চিনেম্যানদেরও আলাদা করে চেনা কঠিন। না, না! মাও আর চৌ কে ঠিক ভীড়ের মধ্যে চিনে নেওয়া যায়।
    আর লিন পিয়াও। খেঁকুরে, চোয়ালভাঙা।
    কিন্তু এই বেড়ালটাকে কেন চেনা চেনা লাগছে?আগে এই ছ্যাঁচড়া হাসিটা বন্ধ করুক।
    --- হাসির কথা শুনলে হাসব না? মন চেয়েছে মজদুর হতে! মন কত কী চায়, হেমা মালিনীকে বিয়ে করতেও চায়। শখের মজদুর হতেও চায়। চাইলেই হয় নাকি?
    ( কেন? হো চি-মিন ও তাঁর কমরেড্স হ্যানয়ের রাস্তায় রিকশা চালান নি?)
    --- তাতে হো চি-মিন রিকশাওয়ালা হয়ে যান নি।
    ( তুই শালা কে বল তো? কেন মনে হচ্ছে আগে কোথাও দেখেছি? আর আমার মুখে তো কথা ফোটে না। তবু মনে মনে যা বলছি তা শুনতে পাস কী করে?)
    --- ভাবো, ভাবো! ভাবতে ভাবতেই মনে পড়বে। এখন পালাই, সিস্টার স্নিগ্ধা আসছে। বোধহয় বোতলটা চেঞ্জ কারবে। কাল আবার।
  • ranjan roy | 132.162.242.198 | ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৫০678606
  • সিস্টার স্নিগ্ধা ঘুম চোখে এসে বোতলটার দিকে তাকিয়ে ভুরু কোঁচকালেন। বিড়বিড় করে স্পীড একটু বাড়িয়ে দিলেন। তারপর পাশের টুলটায় বসে পড়ে হাই তুলতে লাগলেন।
    আমি বুঝতে পারছি, ও অপেক্ষা করছে কতক্ষণে বোতলটার শেষ রক্তবিন্দু চুঁইয়ে নিঃশেষ হবে। তখন ও নিশ্চিন্ত হয়ে আর এক রাউন্ড গ্লুকোজ চালিয়ে দেবে, একটু স্পীডে; তারপর সব চুকে বুকে গেলে ঘুমোতে যাবে। রোজকার রুটিন। যাবার সময় মিষ্টি করে বলে দিয়ে যাবে-- -- আমি পাশেই আছি, চিন্তা করবেন না। কোন অসুবিধে হলে আপনার হাতের পাশে ওই বোতামটা টিপে দেবেন, ব্যস্‌।
    ঘরের মধ্যে একটা ডিমলাইট, টুলের ওপর ঝিমুতে থাকা এক নারী। রাত কত হল? উত্তর মেলে না। কিসের ডায়লগ যেন, নাটক না সিনেমার? দুর ছাই! কিছুই মনে পড়ে না।
    আচ্ছা, টুলের ওপরে আধো ঘুম আধো জাগরণে থাকা ওই নারী- - - না , না। নারী নয়, ও একজন নার্স। নার্স মানে? মানে যে নার্সিং করে।
    এটা কোন জবাব হল?
    এটাই জবাব।
    বেশ, নার্স কি নারী নয়?
    বলা মুশকিল।
    কেন?
    নার্স, নার্স! নার্সদের স্তন নেই!
    এটা আবার কোত্থেকে গেঁড়িয়েছ?
    গ্যাঁড়াবো কেন? বরানগরের কবি অমিতাভ দাশগুপ্তের লাইন।
    ও শালা! ভালো ভালো কথা মনে পড়ে না? আর এইসব লাইন বেশ মনে আছে মক্কেলের!
    আচ্ছা, আচ্ছা, ঝগড়া করে না, বল ডাব?
    ভাব, ভাব, ভাব!
    এ কিরে শালা? কালো বেড়ালটা আবার এসেছে নাকি?
    না,না! ও আসবে কাল রাত্তিরে।
    উঃ, কখন যে সকাল হবে।
    আচ্ছা, এক কাজ করি। ভেড়া গুণেও ঘুম আসছে না। বরং বোতল থেকে টিপ টিপ করে চুঁইয়ে পড়া রক্তবিন্দুগুলোকে গুণতে থাকি। আরে! ওদের টপকে পড়ার মধ্যে একটা ছন্দ, একটা রিদম আছে। যেন কেউ প্যারেডে মার্ক টাইম বা কদমতাল করছে।
    বেশ, এক দুই, এক দুই, এক দুই-----।

    রক্ত ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা।
    ধানক্ষেতের পাশে বনইমলি গাছের গোড়ায় পিঠ ঠেকিয়ে আমি। হাতে একটা দেশি কাট্টা বা পিস্তল। পাশে শুয়ে মূর্তি বা রমাইয়া। আসল নাম জানিনা, জানতে নেই। ওর হাতের রক্তমাখা গুপ্তিটা ছোটবার সময় কোথায় যেন পড়ে গেছে। কিন্তু বোমাটা ফেটেছে ওর হাতেই, দুটো আঙুল বোধহয় নেই। আর খানিকটা হাতের পাতাও। ওর শার্টের নীচে থেকে গেঞ্জি খুলে তাই দিয়ে একটা ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছি। কিন্তু ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুইঁয়ে পড়ছেই।

    ছত্তিশগড়ের ভাটাপাড়া রেলস্টেশন থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম গুটুরিয়া। আজ রাত্তিরে আমরা অ্যাকশনে নেমেছিলাম। এ রাজ্যের প্রথম জোতদার বিরোধী অ্যাকশন।
    পড়াশুনো করুন কমরেড। সুবে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার বাইরে কোথাও ভূমি ব্যবস্থায় বৃটিশের চাপিয়ে দেওয়া পার্মানেন্ট সেটলমেন্ট বা বাংলা ইতিহাসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেই। এদিকে আছে রায়তওয়ারি ব্যবস্থা। এটা অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশের ছত্তিশগড় অঞ্চল। বা প্রাচীন যুগের দক্ষিণ মহাকোশল।তাই এখানে কোন জোতদার নেই, আছে মালগুজার।
    ধেৎ, যাঁহা পায়েস তাঁহা পরমান্ন।
    এই গুটুরিয়া গ্রামের মালগুজার সুরজমল আগরওয়ালের বাড়িতে আমরা কাল সন্ধ্যেয় আশ্রয় নেই। বলি-- শেষ বাস চলে গেছে। রাত্তিরে শুধু শুতে চাই। সকাল বেলায় প্রথম বাস ধরে বিলাসপুর ফিরে যাবো। আমরা সাপ্তাহিক হাট-বাজারের গোরু-বাছুর-মোষের দালাল। আজ ১০ কিলোমিটার দুরের অর্জুনী গ্রামের হাট থেকে বিক্রিবাটা ফড়েগিরি করে কিছু পয়সাকড়ি গাঁটে বাঁধা আছে। তাই রাতটা এখানে কাটিয়ে যেতে চাই। আমরা তিনজন।
    বানিয়া ব্যাটা মাড়োয়ারি ব্যাটা কিছুই বোঝেনি। আমাদের বাইরের বারান্দায় খাটিয়া পেতে শুতে দিয়ে ওরা ভেতর থেকে দরজায় খিল তুলে দিল। কিন্তু কালনাগিনীর জন্যে লোহার বাসরেও ছ্যাঁদা থাকে।
    ও জানত না জে ওর ছোকর চাকরকে আমরা আগেই হাত করে ফেলেছি। তাই মাঝরাতে দরজা খুলে গেল বিনা বাধায়। ইশারায় বুঝে গেলাম ব্যাটা রক্তচোষা কোন ঘরে আছে।
    একে মাড়োয়ারি তায় জনসংঘী। এর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

    কমরেড মূর্তি মশারিটা তুলে সোজা ওর পেটে গুপ্তিটা ঢুকিয়ে দিল। তৃতীয় জন স্থানীয় ছেলে চৌহান বাইরে গার্ড দিচ্ছিল। আমি সিন্দুকের চাবিটা হাতড়াচ্ছিলাম। ওর চুলের মুঠি ধরে হ্যাঁচকা টানে খাটের বাইরে ফেলেছি কি বালিশের নীচে চাবির গোছা দেখতে পেলাম।
    কিন্তু তার আগে একটা বাচ্চার তারসপ্তকে চিৎকার!
    --হায় দদ্দা! দদ্দা কো মার ডালা! ছোড় দো, ছোড় দো হমারে দদ্দা কো।
    কী কান্ড! ব্যাটার নাতি যে দাদুর সঙ্গে ঘুমোয় কে জানতো?
    আমার হাত-পা কাঁপতে লাগলো।
    বাইরে গলার আওয়াজ। চৌহানের আতংকিত আওয়াজ--ভাগো কমরেড্স্‌! গাঁওবালে ঘের লেঙ্গে।
    সত্যিই পালানো সহজ হল না।
    আমার কাঁধে একটা বড় ব্যাগ, তাতে কিছু জামাকাপড়-দূরে গিয়ে পোষাক বদলাবার জন্যে। ্চৌহান কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে। মূর্তি আগে আগে, পেছনে আমি।
    কিন্তু দূরত্ব কমে আসছে যে! আমার শ্বাস ফুলে উঠছে, পারছি না। দুটো লোক প্রায় আমাকে ধরে ফেলে আর কি!
    মূর্তি দাঁড়িয়ে পড়ল। ওর ব্যাগের থেকে বোমা বের করে ছুঁড়ে দিল ওদের দিকে। দুজন পড়ল ছিটকে।
    বাপ রে! বম মারা! বম মারা!
    কেউ আর তাড়া করছে না।
    কিন্তু দ্বিতীয় বোমটা ফাটল মূর্তির হাতের তালুতে।
    পেছনের দলটা থমকে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। এবার ওরা দ্বিগুণ উৎসাহে ধাওয়া করতে লাগল।
    ওদের আরো কাছে আসতে দিলাম। তারপর আমার কাট্টা থেকে দুটো ফায়ার করলাম। আগুনের হলকা! কারো গায়ে লাগল কি না বুঝতে পরলাম না। কিন্তু নিমেষের মধ্যে মাঠ ফাঁকা।
    এবার আমাদের রাস্তা ছেড়ে কোথাও রাত কাটাতে হবে। ভোরের শুকতারা দেখে আন্দাজে যেতে হবে পটপর গাঁয়ে। আলো ফোটার আগেই। সেখানে শেল্টার আছে, ডাক্তারের চিকিৎসা পাওয়া যাবে।
    কিন্তু একী! রক্ত বন্ধ হচ্ছে না যে! যারা গুলি চালাতে বোম বাঁধতে শিখিয়েছে তারা তেমন করে ব্যান্ডেজ বাঁধতে শেখায় নি যে। রক্ত ঝরছে, ফোঁটা ফোঁটা, টপ টপ।
  • ranjan roy | 24.98.14.91 | ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ২২:৩৭678608
  • ২)
    আজ সকালে কেউ বাড়ি থেকে আমার খাবার নিয়ে এসেছে। কী আহ্লাদের কথা! যে নিয়ে এসেছে সে নাকি জানতো না যে আমাকে ওইভাবে খাবার দেওয়া বহুদিন বন্ধ হয়ে গেছে। আমি খাই লিকুইড
    ডায়েট, তাও গলায় ঢোকানো একটা রাবার টিউব দিয়ে।
    --আমি --আমি সত্যিই এসব জানতাম না অলকেশ। কেউ বলেনি।
    --- তোমাকে দোষ দিচ্ছি না চিত্রা, খালি ভাবছি হঠাৎ তুমি! কেন এলে? শেষ দেখা দেখতে?
    চিত্রার মুখটা কেমন বেঁকে উঠে ভেঙে চুরে যায়।
    --ওভাবে বল না অলকেশ! তুমি তো জান--!
    ও কথা শেষ করতে পারে না।

    ওর সত্যিই কোন দোষ নেই। আমরা আলাদা হয়ে গেছি বছর পনের আগে। মধ্যপ্রদেশের এক শহরে প্রবাসী বাঙালী পরিবারের মেয়ে আমার সঙ্গে কলেজে পড়ত। আমি কোলকাতা থেকে ছিটকে পড়ে আবার কেঁচে গন্ডুষ করে ছ'বছরের ছোট ব্যাচের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পড়াশুনো শুরু করেছিলাম। সেইসময় কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে স্থানীয় কিছু গুন্ডা কলেজের ক্যান্টিনে আড্ডা জমিয়ে ভর্তি হতে আসা নতুন ছেলেমেয়েদের থেকে তোলা আদায় করত। আমি তোলা দিতে অস্বীকার করে মার খেলাম।
    কিন্তু ওই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ আরও কিছু ছেলেমেয়েকে সাহস জোগাল। তাদের মধ্যে একজন চিত্রা ফনসালকর। ও নিজে জনাপাঁচেক মেয়েকে একজোট করে প্রিন্সিপাল স্যারের চেম্বারে ঢুকে হল্লা মচিয়ে দিল।
    তারপর ঘটনা কোত্থেকে কোথায় গড়াল ভেবে পাইনি। আমরা থানায় গেলাম, স্টাফ রুমে কথা বললাম। সবাই মৌখিক সহানুভূতি দেখালেন কিন্তু কোন কাজ হল না।
    ক্লাস চলছিল। এর মধ্যে একদিন গুন্ডাদের সর্দার লড্ডন খানের ডানহাত রবি তিওয়ারি বটানির এইচ ও ডি ডঃ মন্সরমানীর টাকমাথায় তবলা বাজিয়ে দিল। ওঁর অপরাধ ওঁর মেয়ে শোভা চিত্রার সঙ্গে প্রিন্সিপালের রুমে ও থানায় গুন্ডামির বিরুদ্ধে কমপ্লেন করতে গেছিল। অপমানিত প্রফেসর আমাদের সামনে এসে কেঁদে ফেললেন।
    আমরাও কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু ঘটনা ঘটে চলল। সেই সময় লড্ডন খান ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে দুই চ্যালার সঙ্গে এদিকে আসছিল। আমাদের দেখে এগিয়ে এল। দাঁত বের করে বলল-- আরে প্রফেসর! শেষে এই হিজড়েদের কাছে সাহায্য চাইতে এসেছেন! তাতে চিঁড়ে ভিজবে না। মেয়েকে বলুন থানা থেকে কম্প্লেন ফেরত নিতে। কী রে, ঠিক বলেছি না!

    আমার ভেতরে কিছু একটা ঘটে গেল।
    কলেজ বিল্ডিংয়ের রিপেয়রিং এর কাজ চলছিল। কিছু লোহার ছড়, বাঁশ,খুঁটি ও খোয়া কাছেই পড়ে ছিল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ঢালাই মিস্ত্রির কাঠের পাটা তুলে মারলাম সোজা লড্ডনের মাথায়।
    ও মাটিতে পড়ে গেল। সঙ্গীরা এগিয়ে আসতেই আমার সঙ্গের ছেলেরা লোহার ছড় তুলে নিয়ে ওদের তাড়া করল। মেয়েরাও বাদ গেল না। ওদের খোয়া বৃষ্টিতে ঘায়েল হয়ে গুন্ডার দল তখনকার মত পালিয়ে গেল। কিন্তু ওদের পেছনে কিছু স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবশালী লোকজন ছিল।
    পরের দিন কলেজ প্রাঙ্গণে দাঙ্গা করার অপরাধে আমরা চারজন গ্রেফতার হলাম। ওদের মধ্যে একজন চিত্রা ফনসালকর।
    হাওয়া বদলাতে শুরু করল।বিক্ষোভে ফেটে পড়ল ছাত্রছাত্রীরা। ওদের ধর্না ও অনশন খবরের কাগজে রোজ প্রথম পাতায় জায়গা পেল। প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে কড়া প্রতিবাদ করলেন কিছু অধ্যাপক। তাঁদের মুখিয়া ডঃ মন্সরমানী।
    শেষে আমরা ছাড়া পেলাম। ক্লাস শুরু হল। লড্ডন খান আর কলেজে ঢোকেনি। অজান্তেই আমি এবং চিত্রা অনেক কাছাকাছি এলাম। কলেজে আমরা প্রায় লিজেন্ড।
    পাশ করে দুজনেই চাকরি পেলাম এবং বিয়ে করলাম। দু'বছরের মাথায় অরুণ জন্মাল। আমাদের মত সুখী বোধহয় কেউ ছিল না।
    কিন্তু আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম যে আমাকে ফুলটাইম রাজনীতি করতে হবে। নইলে গতি নেই। চাকরি ছাড়লাম। চিত্রা প্রথমে মৃদু আপত্তি করেছিল।
    -- ওসব উগ্র লাইন কবে চুকেবুকে গেছে। তুমি ওদের সাপোর্ট কর, চাঁদা দাও, প্রবন্ধ লিখে দাও। ব্যাস্‌, হোলটাইমার কেন হতে চাও? আর আমাদের একটা ভবিষ্যৎ আছে না?

    আমরা বন্ধুর মত হ্যান্ডশেক করে আলাদা হয়ে গেলাম। কিন্তু ওর ইনকাম ট্যাক্সের রিটার্ন বানানো হোক কি অরুণের স্কুলের ফর্ম ফিল আপ করা সব ব্যাপারেই আমি থাকতাম। আর যেতাম অরুণের জন্মদিনে। কিন্তু আমাদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে কথাবার্তা তর্কবিতর্ক আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল। যোগসূত্র বলতে শুধু অরুণ।
    কিন্তু স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকে রামঝর্নায় সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে গেল অরুণ, আমাদের আট বছরের ছেলে।
    কয়েকদিন নিয়মিত ওর ঘরে গেলাম। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম যে চিত্রা আমাকে আর সহ্য করতে পারছে না। আকারে ইঙ্গিতে বলতে লাগল যে আমার খামখেয়ালিপনার জন্যেই নাকি আমরা অরুণকে হারিয়েছি।
    ও ট্রানসফার নিয়ে শহর ছেড়ে চলে গেল। আমিও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
    তারপর আজকে এই ব্যাপার। কেন এসেছে? যার শেষদিন ঘনিয়ে এসেছে তাকে করুণা করতে? আমি তো কারও করুণা চাই না।
    ও চলে গেলেই ভাল।
  • ranjan roy | 132.162.161.216 | ২০ নভেম্বর ২০১৫ ১৮:৩৪678609
  • এই সময় রোজ ঘুম ভেঙে যায়। আসলে ঘুম জিনিসটি কখনই ঠিক মত আসে না। কোত্থেকে আসবে! সারাদিন এত সব ওষুধ! বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি সব নাম। তারপর আছে কেমোথেরাপির এফেক্ট --সিসপ্ল্যাটিন, এপসোমাইড, ভিমব্লাস্টিন--- আরো কি সব! মনে রাখতেও চাই না। তারপর সারাদিন শুয়েই থাকি তো!
    একটা আচ্ছন্ন ভাব, একটু তন্দ্রামত, ও তো প্রায় সারাদিন চলে। কিন্তু রাত্তিরে ব্যথাটা হটাৎ ঝিলিক দিয়ে ওঠে। একদম জানলেবা! মনে হয় অজ্ঞান হয়ে যাবো বা কাউকে খুন করব।
    ইদানীং আমার জন্যে মরফিন ইঞ্জেকশন বরাদ্দ হয়েছে। নীট ফল ঘন্টাতিনেকের ঝিমুনি।
    কিন্তু চিত্রা এসে সেটুকুরও বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
    আর আশ্চর্য! আমি কি হিংসুটে হয়ে যাচ্ছি। চিত্রাকে হিংসা করব? ভাবতেও পারিনি। কিন্তু ওকে দেখে এত রাগ হচ্ছিল কেন? ভাবতে ভাবতে নিজের নগ্ন চেহারাটা দেখতে পেলাম।
    চিত্রা বেঁচে থাকবে, আর আমি চলে যাব? এখনও ওর শরীরের ভূগোল পুরুষের চোখে বেশ আকর্ষণীয়। সেই ভূগোলের কন্ট্যুর ম্যাপ আমার অতি পরিচিত।
    সেই শরীরের আমার আর কোন অধিকার নেই। বরং ওর শরীর, ও কাউকে দান করতেই পারে। আমার কি! কিন্তু আমি যে জ্বলে যাচ্ছি।
    সময় তোমাকে সব দান করে চলে গেছে বলে
    সুদর্শনা তুমি আজ মৃত।
    এই রকম লাইন কে লিখেছিলেন? জীবনানন্দ বোধ হয়।
    আচ্ছা, উনি কি নিজের নায়িকার মৃত্যু কামনা করেছিলেন? কবিরাও কি হিংসুটে হয়?
    -- কেন হবে না? কবিরাও মানুষ, ষড়রিপুর বশ।
    -- ও এসে গেছ? এসেই শালা জ্ঞান দিচ্ছ? ফিলজফি মারাচ্ছ? নিঘঘাৎ আজ তোমার কোথাও ভূরিভোজ জুটে গেছে। মাছের কানকো? নাকি নাড়িভুঁড়ি?
    --ছ্যাঁচড়ামি করছ কেন?
    --ভরাপেট না হলে কি কেউ মাঝরাত্তিরে ফিলজফি ঝাড়তে আসে?
    -- হিংসে কর না। তোমার পেটও এমন কিছু খালি নেই।গাল না দিয়ে দেখ, চিত্রা তোমার জন্যে কি এনেছে?
    -- কী আবার আনবে? আপেল, কমলা আর বেদানা! রোগীর সঙ্গে দেখা করতে এলে সবাই যা নিয়ে আসে! আমি সহ্য করতে পারি না। মনে হয় হবিষ্যির আয়োজন।
    -- তুমি এত অকৃতজ্ঞ কেন? ও এসে রেসিডেন্ট ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলেছে। জেনে গেছে তোমাকে রাইল টিউবে করে খাওয়ানো হয়। তাই ফলটল আনে নি।
    -- তবে কি এনেছে? কোকাকোলা?
    -- উঃ! নিজের বিষে নিজেই জ্বলে পুড়ে মরছ! শোন, ও জেনেছে যে রোজ তুমি দিনের বেলায় ব্যথা না থাকলে বই পড়। তাই ও দুটো পূজো সংখ্যা আর একটা অন্য বই নার্সের কাছে ছেড়ে গেছে। সকালে পেয়ে যাবে।
    --অন্য বই! সেটা আবার কী?
    -- ও তোমার জন্যে পন্ডিচেরির শ্রীমা'র ছোট্ট লকেট ও ওঁর জীবনী দিয়ে গেছে। স্নিগ্ধা সিস্টারকে বলে গেছে তোমায় বুঝিয়ে সুজিয়ে বইটা পড়াতে আর লকেটটা বালিশের তলায় রেখে দিতে!
    --- শালা! এটাই বাকি ছিল? যত ঢ্যামনামি! ও বুঝি আজকাল খুব পূজো আচ্চা করছে? পন্ডিচেরিতে নাড়া বেঁধেছে? সে করুকগে! কিন্তু আমার সঙ্গে এসব করার সাহস পেল কোত্থেকে? দশ বছর হয়ে গেছে , এখন এল ধর্মপত্নী মারাতে?
    -- আরে! ও বিশ্বাস করে যে শ্রীমার ফটো বালিশের তলায় রাখলে তুমি সেরে উঠবে। ওর ওই চাওয়াটুকুর কোন দাম নেই? এত অহংকার!
    যাকগে, তুমি এখন এসবের বাইরে। তারছেয়ে মূর্তি গাড়ুর গল্পটা শেষ কর। সেই যে রাত্তিরে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছিল? সেটা বন্ধ হল তো?
  • ranjan roy | 24.99.33.192 | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:১৭678610
  • -- না, বন্ধ হয় নি। হবে কী করে? ওর হাতের তালু চিরে গেছল, দুটো আঙুল নেই। ওই বীভৎস ক্ষতগুলো থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে সার্জারির দরকার ছিল। সেটা সম্ভব নয়। তাই আমার কমরেড মূর্তি গাড়ু ভোর ভোর শেষ বারের মত চোখ বুজল।
    --- বাজে কথা। ওর শেষবারের মত চোখ খোলা বা বোঁজা তুমি দেখ নি। তুমি কোন ডাক্তার নও। কী করে অমন গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পার যে তোমার কমরেড মূর্তি ঠিক কখন ভাটাপারা এলাকার হাওয়ায় শেষবারের মত শ্বাস টেনেছিল?
    তুমি সেটা দেখ নি। তুমি ওর বুকে হাত রাখনি, ধুকধুকি বন্ধ হয়ে যাওয়া টের পাওনি। ওর তাকিয়ে থাকা নিষ্প্রাণ চোখদুটোর পাতা বুজিয়ে দাও নি-- মানে সিনেমায় যেমনটি হয়। কারণ, তুমি তার আগেই পালিয়ে গিয়েছিলে। পরের দিন স্থানীয় পত্রিকায় নকশালপন্থী ডাকাত মূর্তির রক্তক্ষরণে মারা যাওয়ার খবরটা পড়েছিল।
    -- না, না; আমি পালাইনি।
    -- ও হো, পালাওনি। আমিই ভুল বলেছি। ওটা ছিল স্ট্র্যাটেজিক রিট্রিট। এবং তোমাকে মূর্তিই বলেছিল অমন করতে। বলেছিল তোমার জীবনের দাম বেশি। বলেছিল দুজনে ধরা পরার চেয়ে একজনের বেঁচে থাকা দক্ষিণ পূর্ব মধ্যপ্রদেশে পার্টির সংগঠন গড়ে তোলার জন্যে বিশেষ জরুরী।তাই তুমি মূর্তিগাড়ুকে গাছের নীচে শুইয়ে একটু একটু করে মরতে দিয়ে শেষরাত্তিরে পায়ে হেঁটে ভাটাপারার বাসরাস্তায় এসে কয়লার ট্রাকে করে জবলপুর চলে গিয়েছিলে।
    --- একদম তাই। এগুলো তো ডকুমেন্টেড। পার্টির কাছে রয়েছে।
    -- তাই বটে! সে ডকুমেন্ট তোমারই বানানো। তুমি পরে ঘটনাটির যে বিবরণ পার্টির স্টেট কমিটিতে পেশ করেছিলে সেটাই তো ডকুমেন্ট হয়েগেল। কিন্তু কমরেড অলকেশ, আমি তো জানি কী ঘটেছিল।
  • ranjan roy | 24.99.33.192 | ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:৩৮678611
  • --কী জানো, ক্কী জানো তুমি?
    -- কমরেড মূর্তি ওসব বড় বড় মেলোড্রামাটিক ডায়লগ ঝাড়েনি। ও বুদ্ধিজীবি ঘর থেকে আসেনি। ওর গলা শুকিয়ে আসছিল। শুকনো ঠোঁট চাটছিল। ও খালি 'নীর নীর' করছিল আর তোমার দিকে তাকাচ্ছিল। আর তুমি " লেকে আতা হুঁ" বলে সেই যে গেলে আর ফিরলে না। রিপোর্টে লেখা মূর্তির রিকোয়েস্টগুলো আসলে তোমার নিজের তৈরি, কমরেডকে ফেলে রেখে প্রাণ হাতে করে পালানোর জাস্টিফিকেশন, র‌্যাশনালাইজেশন।

    উঃ হাতের কাছে কিছু নেই যে বেড়ালটাকে ছুঁড়ে মারি। তবে সেই মুহুর্তে সিস্টার এসে গেল।
    --সিস্টার, জানলাগুলো বন্ধ করেন না কেন?
    -- সব বন্ধই তো আছে, অলকেশদা।
    এই ক'মাসে আমি অধিকাংশ সিস্টারের দাদা হয়ে গেছি। বেশ, রাগটাকে চেপে রেখে বললাম-- তাহলে বেড়াল ঢুকছে কোথা দিয়ে?
    -- বেড়াল? কোথায় বেড়াল?
    --আমি যে নিজের চোখে দেখলাম। হলদে চোখো কালোবেড়াল এতক্ষণ আপনার টেবিলের ওপর বসেছিল!
    -- ওঃ, সেই মস্ত হুলোটা? রাগ করবেন না অলকেশদা। ওটা আপনার হ্যালুসিনেশন, এই ওষুধের চোটে অনেকেই এরম অনেক কিছু দেখে।
    আমি পাশ ফিরে শুই।
  • ranjan roy | 24.99.132.94 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:৫৭678612
  • ৩)
    সকালের দিকে একটু ঘুম এল। ব্যথাও কমে গেছে। এমন সময় আমার বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালেন একজন, সাদা পোষাক। ডাক্তার এই অসময়ে কেন?
    ডাক্তার, আমাকে একটু ঘুমোতে দিন। ওসব আগড়ম বাগড়ম -- বডি টেম্পারেচার, প্রেসার, ইউরিন, প্লেটলেট কাউন্ট -- সব আমার ফাইলে আছে। নিন, সিস্টারের সঙ্গে কথা বলে সব জেনে নিন। আমাকে ঘাঁটাবেন না। কোন স্তোকবাক্য শোনাবেন না। সেদিন বেরিয়ে যেতে যেতে নীচুগলায় আপনি জুনিয়রকে বলছিলেন -- কিছু করার নেই, এক টন ক্যানসার নিয়ে এসেছে, স্টেজ ফোর, যে কদিন চলে।
    আমি চোখ বুঁজে ছিলাম। ঘুমুইনি, শুনে ফেলেছিলাম। তা হলে আর ন্যাকামি কেন? বরং আমার মরফিনের ডোজটা বাড়িয়ে দিন। আর সুন্দরী নার্সের সঙ্গে ফস্টিনষ্টি করুন। আমি কিছু মনে করব না।
    কী বললেন? আপনি এরকম করতে পারেন না। কেন পারেন না? ডাক্তার বলে কি আপনি পুরুষ নন? নারীর কাছে এলে আপনার চিত্তহারা, বক্ষে নাচে রক্তধারা হয় না? ফালতু ঢপ দেবেন না।
    হরি হরি! আপনি নারী। সরি সরি! কিছু মনে করবেন না, আপনার ওই বয়কাট চুল দেখে ভুল বুঝেছিলাম। আপনি নতুন এসেছেন? ইন্টার্ন? কিন্তু আপনার বয়্স তো অত কম নয়! এমবিবিএস করতে প্রত্যেক ইয়ারে দু-দু অ্যাটেম্প্ট ? বেশ, চেয়ারে বসুন, কেস হিস্ট্রি পড়ুন, আমাকে জ্বালাবেন না। একী, গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন? তার কোন দরকার নেই।
    না, আমার জ্বর টর আসে নি। জ্বর আসলে মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। কী বললেন? আপনিও একজন মা! তা হতেই পারেন। তাতে আমার কী! ও হো! আপনি পন্ডিচেরি থেকে এসেছেন? শ্রীমা ? মানে ওই যে ফটোটা চিত্রা আমার বালিশের নীচে রেখে গেছে। প্লীজ, আপনি পন্ডিচেরি ফিরে যান, নইলে আমার বালিশের নীচে ফ্রেমের ভেতরে ঢুকে যান।
    কিন্তু-- কিন্তু আমার সত্যি বড় ঘুম পাচ্ছে, আর ব্যথাও হটাৎ কমে গেছে। মা, আমার সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিন, ঘুম পাড়িয়ে দিন। একটু আরাম করে ঘুমুতে চাই।
  • ranjan roy | 24.99.163.28 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:০৪678613
  • সকালে টানা ঘুমোতে পারলে বেশ ভালো লাগে। কিন্তু জেগে উঠলে একটা আতংক চেপে ধরে---রাত্তিরে দু'চোখের পাতা এক করা যাবে না। মানে, ওষুধ খেয়ে অনেক সাধ্যসাধনা করে শেষে আসলেও আসতে পারে, তবে কোন গ্যারান্টি নেই। আর এক একটা রাত কাটানো-- দুঃসহ। যেমন আজকের রাতটা।
    দুঃসহ? কোথায় যেন প্রথম শুনেছিলাম শব্দটা? না, না শুনি নি। কেউ অমন সব শব্দ সাজিয়ে কথা বলে না। তবে? হ্যাঁ, পড়েছিলাম।
    সম্ভবতঃ রবি ঠাকুর। কী যেন? হ্যাঁ, 'কী যন্ত্রণায় মরেছে পাথরে দুঃসহ মাথা কুটে!"
    আরে, সুকান্তর প্রথম লাইনটাই তো---
    আঠের বছর বয়স কী দুঃসহ!
    স্পর্দ্ধায় নেয় মাথা তুলবার ঝুঁকি।

    এই স্পর্ধা কী জিনিস আমি জানি না। তবে 'আস্পর্দা' কী আমি জানি। আমার ছিল। আঠের নয়, সতের বছর বয়সেই। নাকতলা স্কুলে পড়ার সময় অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার সোমনাথবাবুর হাতের থেকে বেত কেড়ে নিয়ে ক্লাসরুমের জানলা গলিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
    -- এই যে ! এসে গেছ শ্রীমান! কাদের বাড়ির দুধের কেঁড়ে থেকে চুরি করে খেয়ে এসেছ?
    -- সবসময় চোর চোর করবে না তো! ক্ষিদের সময় কারো বাড়তি খাবার খেয়ে নিলে তাকে চুরি করা বলে না। আমার বাবা রোজ দুধটুকু চাই, বলে দিলাম হ্যাঁ।
    --- তুমি কী আফিংখোর না গুলিখোর? নাকি রোজ ভাঙ সেবন করিয়া থাক!
    --- নইলে রোজ রোজ দুধ চাই কেন? কমলাকান্ত না হয় আফিং খেত।
    -- কমলাকান্ত কে?
    -- এমন উদগান্ডু লোকের সঙ্গে আড্ডা জমে না। সব সেন্টেন্সে একটা করে ফুটনোট ? কোন কমলাকান্ত? আরে বংকিমের কমলাকান্ত! এই বাংলাবাজারে ক'টা কমলাকান্ত আছে?
    --- সারাক্ষণ সবজান্তা ভাব আর রাগারাগি! একটু শান্ত হলে খেয়াল করতে যে আরের জন কমলাকান্ত আছেন--সাধক কমলাকান্ত। যাঁর শ্যামাসঙ্গীত রামপ্রসাদের পাশেই ঠাঁই পায়।
    ধর, ' মজলো আমার মনভ্রমরা, শ্যামাপদ হৃৎকমলে,
    যত বিষয়মধু তুচ্ছ হল কামাদিকুসুম সকলে।'
    --- হয়েছে হয়েছে, বেশি ফান্ডা ঝাড়তে হবে না। মুখ বন্ধ রাখ।
    -- বেশ, তবে তুমি তোমার সেই স্যারের হাতের বেত কেড়ে নেওয়ার গল্পটা শেষ কর।
    -- ও এমন কিছু না। এখন সব ছেলেমানুষি মনে হয়। সোমনাথবাবু সেকেলে টিচার। ইংরেজি পড়াতেন। ওনার পড়ানো মানে একটা পুরনো নেসফিল্ড থেকে যত্সব কূটকচালি কোশ্চেন এনে আমাদের লিখতে দিয়ে চলে যাওয়া। মানছি, উনি স্কুল -অন্ত প্রাণ ছিলেন। ঘুরে ঘুরে দেখতেন কোন ক্লাসে টিচার নেই, সেখানে কিছু টাস্ক দিয়ে সবাইকে এনগেজ করে অন্য আরেকটা ক্লাসে যেতেন। শেষে ঘ্ন্টা পড়ার পাঁচমিনিট আগে এসে ক্লাসের ফার্স্টবয়কে দাঁড় করিয়ে ওর উত্তরগুলো জোরে জোরে শোনতে বলতেন। ভুল হলে ওর খাতায় কারেকশন করে দিয়ে ওকেই বলতেন বোর্ডে লিখে দিতে আর বাকি সবাইকে বলতেন --এবার টুকে নাও।
    --- খুব সিরিয়াস আর পরিশ্রমী স্যার পেয়েছিলে বল!
    -- ওসব ঠিক আছে, কিন্তু ওঁর থেকে ইংরেজি ভাষাটা কিছুই শিখিনি।
    -- তা হয় না। কিছু তো শিখে থাকবে, সেগুলোই শোনাও।
    -- উফ্‌! শোন তা'লে। কগনেট অবজেক্ট, কজিটিভ ভার্ব। জিরান্ড, প্রেসেন্ট পার্টিসিপল ও ভার্বাল নাউন। নাউন ইকুইভ্যালেন্ট, অ্যাডজেক্টিভ ইকুইভ্যালেন্ট, কোয়াসি-প্যাসিভ ভার্ব।
    --- বস করো রামদাস! পাগল হয়ে যাবো! কিন্তু গল্পটা?
    -- হ্যাঁ, লাস্ট বেঞ্চে বসে জানলা দিয়ে নীচের জামগাছের ডালে দুটো শালিকপাখির ফস্টিনস্টি দেখছিলাম। চোখে পড়ল গাছটার নীচে রামাবতার পুলিশের বউ আরো দুজন মহিলার সঙ্গে হাত লাগিয়ে একটা ছগলের পেট থেকে বাচ্চা টেনে বের করছে। পা বেরিয়েছে। এমন বায়োলজির প্র্যাকটিক্যাল ছাড়া যায়? ঠিকমত শিখলে গাঁয়ের দিকে ভেটারিনারি ডাক্তার নয় তো অ্যাসিস্ট্যান্ট হওয়া আটকায় কে!
    তো স্যারের চোখ গেল আমাদের দিকে। ওখানে কি হচ্ছে?
    আমরা যত বলি কিস্যু না, আপনি পড়ান আমরা শুনছি,---উনি মানবেন না। শেষে উনি গোটা কামরা পেরিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে জানলা দিয়ে ওই স্বর্গীয় দৃশ্যটি দেখলেন। ঝাড়া একমিনিট। তারপর আমাকে পেটাতে শুরু করলেন।
    আমার যে কী হয়েছিল? হটাৎ দেখলাম যে আমি স্যারের হাত থেকে বেত কেড়ে নিয়ে হাঁটুতে ঠেকিয়ে মট্‌ করে ভেঙে জানলা দিয়ে ফেলে দিয়েছি।
    গোটা ক্লাস একেবারে --সভা হল নিস্তব্ধ।
    এই আচমকা হামলায় ওঁর মুখে কথা ফুটছিল না। একবার হাঁ করছিলেন , ফের বন্ধ।
    আমি দেখলাম আধখ্যাঁচড়া কাজ করলে কেস খেয়ে যাব। সঙ্গে সঙ্গে মর‌্যাল স্ট্যান্ড নিলাম।
    -- আমরা কোন গরুছাগল না স্যার যে আমাদের পেছনে পাচনের বাড়ি লাগাবেন। যা বলার মুখে বলুন। আপনাদের দিন শেষ, পুরনো কারবার চলবে না।
    এটাই ছিল স্কুলে আমার প্রথম অ্যাকশন। গত মাসে স্কুলে স্টুডেন্ট ইউনিট ফর্ম হয়েছিল,নক্শালপন্থী। আমি সেক্রেটারি। আমরা এগারো জন। চারু মজুমদার জানলে নিশ্চয়ই গর্বিত হতেন।
  • ranjan roy | 24.99.106.201 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:৪০678614
  • -- আহা হা হা! গর্বিত হতেন! প্রথম অ্যাকশন? আর পরের গুলো?
    -- মানে? পরের তো কোন শেষ নেই। পরের পরে পরের পরে-- কোথায় থামবো?
    -- উট চলেছে মুখটি তুলে,
    দীর্ঘ-ঊ টি আছে ঝুলে!
    ন্যাকাষষ্ঠী!
    -- ফোট শালা! অনেকক্ষণ ধরে জ্বালিয়েছিস। ওষুধের টেবিলের ওপর ওই পেপারওয়েটটা দেখছিস? যদি মাথায় লাগে না--; আমার টিপ সহজে ফসকায় না।
    --- তো সেই টিপের কথাই হোক, বা প্রথম বোমা বানানো। প্রথম প্রেমে পরা, প্রথম কাউকে ঠ্যাঙানো। যেখান থেকে খুশি। একটা আসলেই আর একটা আসবে। আর পেপারওয়েট ছুঁড়ে মারার হুমকি চলবে না। ডান হাতটাই তো ছুঁচ বিঁধিয়ে বিঁধিয়ে গ্লুকোজ-ব্লাড-কেমো দিয়ে দিয়ে অসাড় হয়ে গেছে।

    হ্যাঁ, প্রথম ভালো করে বানিয়েছিলাম সমর বলে ছেলেটাকে। আজকালের ঘটনা হলে বলতাম--কেলিয়েছিলাম। আমাদের সময়ে ওটাকে ক্যালানো না বলে বানানো বলা হত।
    হল কি, আমরা নাকতলা স্কুলে একটা দেয়াল পত্রিকা বার করেছিলাম। তাতে আমার বন্ধু শুভ একটা ছোট্ট কবিতা লিখেছিল। ওই সম্পাদক।

    'কোলকাতা থেকে সায়গন কদ্দূর?
    পার হয়ে কোন রক্ত-সমুদ্দুর
    পৌঁছনো যাবে প্লেইমে'র জঙ্গলে?
    সেখানে মাটিতে শুনেছি যে সোনা ফলে,
    কেননা জমিন ঊর্বর বহু দস্যুর কংকালে।

    বল কতবার রক্ত ঝরালে গঙ্গার ঘোলা জল,
    হবে মেকংয়ের মত উদ্দাম দুর্বার উজ্বল?
    সেই দর্পণে প্রভাত সূর্য দেখবে তাহার মুখ,
    যদিও আজ তা মনে হয় কৌতুক।'

    স্যারেরা প্রশংসা করলেন। আমরা বার খেয়ে গেলাম।
    আরে, সালটা হল ১৯৬৯। হ্যানয়, হাইফং এ মুড়িমুড়কির মত বোমা পড়ছে, নাপামে বাতাসে আগুন ধরে যাচ্ছে। বার্ট্রান্ড রাসেল মার্কিন সরকারের যুদ্ধ অপরাধ নিয়ে আন্তর্জাতিক ওয়ার ট্রাইবুনাল বসিয়েছেন। আমরা ভিয়েতনাম থেকে আসা কিছু অ্যালবাম ও সাংবাদিক উইলফ্রেড বার্চেটের লেখা থেকে দেখছি মেরিন সেনারা যুবতীর স্তন কেটে নিয়েছে। সে ছিল স্ট্রিট ফাইটিং ডেজ।
    -- হয়েছে, হয়েছে। তুমি একটু লড়াই ক্ষ্যাপা আছ। ওসব ছেড়ে কাজের কথায় এস।

    - আমাদের ঐ ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় সংখ্যায় একটা প্রবন্ধ বেরোল-- "খাদ্যসমস্যা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ"। লিখেছে ক্লাস টেনের সমর বলে একটি ছেলে। লেখাটা কিছু ডেটা ও কুযুক্তি দিয়ে ভারত সরকারের পরিবার পরিকল্পনার প্রচার ছাড়া কিছু মনে হল না। আমার মাথায় আগুন ধরে গেল।
  • ranjan roy | 24.99.106.201 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:১৯678615
  • প্রথমে শুভর মা-মাসি করলাম-- কেন ও আমাকে না জানিয়ে এই প্রতিক্রিয়াশীল লেখাটি ছেপেছে?
    শুভ তো তো করে বলল-- লেখাটা বেশ ইয়ে, মানে ঝরঝরে।
    --- শালা! তোর ইয়ে ঝরঝরে করে দেব। এটা একটা থার্ডক্লাস লেখা। ছেলেটাকে চিনি। বড়লোকের বখা ছেলে, বন্ধুদের পকেট মানির পয়সায় সিনেমা দেখিয়ে ফোতো কাপ্তেন হয়েছে।
    একদিকে আমাদের সরকার আমেরিকার ইশারায় পানের দোকানে নিরোধ বিক্রি শুরু করেছে, পাঁচ পয়সায় দুটো! এসব যুবশক্তিকে বিপ্লবের রাস্তা থেকে সরিয়ে এনে শস্তা যৌনতার কানাগলিতে ঠেলে দেওয়া। কোথায় আমাদের পত্রিকা এই কনস্পিরেসিকে একস্পোজ করবে , তা না --।
    ওই ছেলেটাকে ডাক।
    --শোন, তার দরকার নেই। তুই ওর যুক্তিকে কাউন্টার করে একটা লেখা দে। পরের সংখ্যায় যাবে। ডিবেট জমে যাবে।
    -- শালা, আর তুমি একজন আঁতেল সম্পাদক হবে? ওকে ডাক। এদিকে ডেবরা-গোপীবল্লভপুরে রেড জোন তৈরি হয়েছে। অসীম-সন্তোষ-মিহির -লেবাচাঁদ টুডু, অমূল্য কালাপাহাড় এরা নতুন ইতিহাস তৈরি করছে। আর আমি এখন একটা ইয়ের সঙ্গে ডিবেট মারাবো? ওকে ডাকতে বলছি না?
    ছেলেটা বেশ অহংকারী। স্কুলছুটির পরে খেলার মাঠের বাইরে ওকে ধরলাম। বললাম যে ওরই উচিত এর খন্ডন করে প্রবন্ধ লেখা। বোঝালাম খাদ্যসমস্যার কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি নয়, ভিলেন হল মজুতদারের দল, যারা কালোটাকায় হোর্ড করে রাখে। যুক্তি দিয়ে বললাম--মানুষ শুধু পেট নয়, দুটো হাত আর একটা মাথা নিয়ে জন্মায়। উদাহরণ দিলাম যে দেবেন ঠাকুর ফ্যামিলি প্ল্যানিং করলে আমরা রবি ঠাকুরকে পেতাম না।
    এগুলো আসলে মূল কারণ শ্রেণীশোষণকে আড়াল করা। মার্ক্স বা কমরেড মাও-- কেউই ফ্যামিলি প্ল্যানিং করেন নি। কাজেই তুমি তোমার কম পড়াশোনা ও অল্পবুদ্ধির ফল ওই প্রবন্ধের পালটা প্রবন্ধ লিখে ফেল, আমরা আগামী সংখ্যায় ছাপতে চাই।
    ছেলেটা এতক্ষণ একটা কথাও বলেনি। একাগ্র হয়ে আমার কথা শুনছিল। আমার ভাল লাগছিল। চশমার ভেতর দিয়ে তাকিয়ে থাকা একজোড়া বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। নাঃ, ছেলেটা খারাপ নয়।
    আমি থামলে ও কিছু না বলে চশমা খুলে কাঁচ পরিষ্কার করতে লাগল।
    শুভ বলল,-- কী? রাজি তো? তাহলে শনিবারের মধ্যেই লেখাটা দিয়ে দাও। আমাদের সামনে প্রি--টেস্ট।
    -- আমি লিখতে পারব না।
    ওর সাহস দেখে আমরা অবাক।
    -- কেন?
    -- কারণ আমি আপনার সঙ্গে একমত নই।
    -- যেমন?
    --- যেমন মার্ক্সের সময় নিরোধ ছিল না, থাকলে উনি নিশ্চয় ব্যবহার করতেন, অন্ততঃ নিজের স্ত্রী জেনির স্বাস্থ্যের কথা ভেবে।
    আর চৌ এন-লাইয়ের সরকার চিনে সন্তান সংখ্যা দুইয়ের বেশি হলে সরকারি কর্মচারিদের ইনক্রিমেন্ট প্রমোশন বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত সরকার তো তবু "দো ইয়া তিন" বলেছে।
    এত মিথ্যে কথা সহ্য হয়? তাও নির্লজ্জের মত জোর গলায়?
    ছেলেটা প্রথমে অবাক হল, তারপর গোঙাতে লাগল।
    আমাকে স্কুল সাতদিনের জন্যে স্কুলে আসতে বারণ করল। আর আমাদের দেয়াল পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেল।
  • d | 144.159.168.72 | ২০ মে ২০১৬ ১২:০৩678616
  • এইটে রঞ্জনদার জন্য তুলে দিলাম। এবার এইটা এগোক ঐ গোলগোল .... বাদ দিয়ে।
  • ranjan roy | 192.77.55.126 | ২০ মে ২০১৬ ১২:৫২678617
  • ও কে দিদিভাইঃ), আপকী রাজঃ)))
    লেগে পড়ছি।
  • ranjan roy | 192.69.105.37 | ২০ মে ২০১৬ ১৮:০৯678619
  • ৪)
    --বেশ, দুটো হল; আর বাকি দুটো?
    -- কোন দুটো?
    --- মানে ওই প্রথম বোম বাঁধা আর প্রেমে পড়া? তার রোমাঞ্চ?
    -- উঃ; বড্ড নাছোড়বান্দা তো! ভাগ শালা। লেজ তুলে জানলা দিয়ে পালানোর আগে একটু স্নিগ্ধা সিস্টারকে ডেকে দে! গলা শুকিয়ে গেছে। ও এসে একটু রাইল টিউবে গ্লুকোজ মেশানো জল ঢেলে দেবে।
    -- আচ্ছা! আমি সিস্টারকে ডেকে দেব? মাথাটা একেবারে গেছে মনে হচ্ছে! বেড়াল কী করে সিস্টারকে ডাকবে? মানে কোন ভাষায়?
    -- কোন ভাষায়? ম্যাও ম্যাও ভাষায়! যত্তসব। জানলায় উঠে একটু ফ্যাঁস ফোঁস করে ডাক, দেখবি ও ব্যস্ত হয়ে আসবে। তোকে দেখতে পাবে না ঠিকই, কিন্তু আওয়াজ শুনতে পাবে। তাতেই কাজ হবে। এবার যা!
    --যাব না।
    -- মানে?
    -- মানে আবার কী? যাব না, ব্যস্‌।
    -- কেন?
    -- কেন আবার কী, আমি কি তোমার হুকুমের গোলাম নাকি! আগে ওই গল্প দুটো বল, তবে যাব।
    --- আচ্ছা খানকির ছেলে তো তুই! শালা, এদিকে আমার গলা শুকুচ্ছে ওদিকে ওনাকে গপ্পো শোনাতে হবে! তোর ঘটে কি কিছুই নেই? আগে সিস্টারকে ডেকে আমার গলা ভেজানোর বন্দোবস্ত কর, তবে তো গপ্পো শুনবি।
    -- তাই বল। এর জন্যে সিস্টারকে আসতে হবে কেন? ওই রাইল টিউবে গ্লুকোজ জল ঢেলে দেওয়ার কাজটা আমিই করে দিচ্ছি। তুমি গপ্পোগুলো মনে করতে থাক।
    -- তুই! তুই জল ঢেলে দিবি? টিউবে? কী করে?
    --সায়েন্স এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে। সবই সম্ভব। নিজেই দেখে নাও। করে দিচ্ছি।

    --আঃ, যেন জান মেঁ জান আয়ী! তুই কেরে ? হিন্দি সিনেমার ইচ্ছাধারী নাগিনের মত মায়াবী মার্জার? যখন জল খাওয়াচ্ছিলি তখন তোর গায়ের গন্ধ পাচ্ছিলাম। একবার যেন সিস্টারের মতন। কিন্তু যখন মুখ মুছিয়ে দিচ্ছিলি তখন যেন--?
    -- তখন যেন কী?
    -- না মানে একটা অনেক আগের ভুলে যাওয়া গন্ধের মতন। একটু পরে আর একটা ঝাঁঝালো তীব্র গন্ধ।
    -- মনে করিয়ে দিচ্ছি-- পরেরটা হল বোমা বেঁধে ফাটানোর পর সেই বারুদ গন্ধ। আর আগেরটা --!
    -- " বারুদগন্ধ বুকে নিয়ে আকাশে ওঠে জ্যোৎস্না,
    ময়লা হাতে ওকে যেন ছোঁস না।
    ওরে মন,
    পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন।"
    -- কোবতে না আউড়ে বোমা বাঁধার কায়দাকানুন বল দেখি!
    -- জেনে কী করবি?
    -- আমিও বাঁধব।
    -- কেন?
    -- মাঝে মাঝে মনে হয় চারদিকে বোম মেরে সব উড়িয়ে দিই!
    -- হাসতে হাসতে পড়ে যাব! কিন্তু হাত ক্ল্যাম্পের সঙ্গে বাঁধা! শালা! পারিস ও বটে! তোর মত ঢ্যামনা রুটি বানাবে?
    -- কায়দাটা বলবে?
    --আচ্ছা শোন তাহলে!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন