এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জিন-প্রযুক্তি, হাইব্রিড শস্য ইত্যাদি

    Saikat Bandyopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩০ এপ্রিল ২০১৯ | ১০৯১৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • জিন প্রযুক্তি ঠিক আজকের ব্যাপার নয়। যদি ডারউইনের কথা ঠিক হয়, তো আজকের নানা প্রজাতির কুকুর মানুষের দীর্ঘদিনের সচেতন 'নির্বাচন'এর ফল। যদি ডায়মন্ড বা হারারের কথা ঠিক হয়, তো আজকের খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে ফলমূল সবই একই ভাবে গবেষণালব্ধ কাজকর্মের ফল। এবং এই গবেষণা খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে খ্রিষ্টজন্মের আগেই শেষ হয়ে যায়। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ আর নতুন কোনো খাদ্যশস্য তৈরি করতে পারেনি। এই খাদ্যশস্যগুলি, অর্থাৎ, ধান বা গম, প্রাথমিক অবস্থায় একেবারেই আজকের শস্যের মতো ছিলনা। ছিল ঘাসের বীজের মতো। তা থেকে জীববৈজ্ঞানিক কারিকুরি করে বানানো হয়েছে আজকের নানা প্রজাতির ধান বা গম। হাজার-হাজার বছর আগে এই গবেষণা ঠিক কীরকম ছিল সঠিক ভাবে বলা অসম্ভব, তবে মধ্যপ্রাচ্যে সত্যিই আবিষ্কৃত হয়েছে এক প্রাগৈতিহাসিক বীজরক্ষণাগার। জেরাড ডায়মন্ড যা বলেছেন, তাতে গবেষণার পদ্ধতি ছিল মোটামুটি এই, যে, মানুষের চারপাশে যে অজস্র প্রজাতির ঘাস ফলত, তার থেকে সংগ্রহ করা হত বীজ। সেই হাজার-হাজার বীজ থেকে বেছে নেওয়া হত কয়েকটি পছন্দসই বীজ। তা থেকে নতুন ঘাস গজালে আবার বেছে নেওয়া হত আরও কিছু অধিকতর পছন্দসই বীজ। এবং এইভাবে সমস্ত ঘাস নিয়ে গবেষণার পর কোনটা খাদ্য হতে পারে সে নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যেত। এটি, আন্দাজ করা যায়, একদম প্রাথমিক প্রক্রিয়া, তারপর ক্রস-ব্রিডিং এর মতো জটিল গবেষণা সম্ভবত চলেছে হাজার বছরের মাপে, যার ফলে আমরা পেয়েছি বাসমতি থেকে কালোজিরা, নানারকম উৎকৃষ্ট চাল।

    ফলের উৎপত্তিও এর চেয়ে আলাদা কিছু না। গ্রিক বা রোমান আমলের আপেল বা চেরি, আজকের চেয়ে অনেক অন্যরকম ছিল। নিপুণ ভাস্করের মতো তার রূপ বদলে আজকের আকার এবং স্বাদে নিয়ে এসেছেন প্রাচীন বিজ্ঞানীরা। বস্তুত ভারতবর্ষের অভিজ্ঞতাও এর চেয়ে আলাদা কিছু না। সুমিষ্ট নানা ধরণের আম সম্ভবত গবেষণারই ফসল। শুধু নির্বাচনের উপর ভরসা করা নয়, পুরোনো মালীরা কলম বা জোড় কলমের মতো জটিল প্রযুক্তিও জানতেন, আমাদের জীবৎকালেই তা আমরা দেখেছি বা শুনেছি।

    কাজেই জিন প্রযুক্তি একেবারে হাল-আমলের জিনিস তা নয়। আধুনিক 'বিজ্ঞান' এসে নতুন করে আবিষ্কার করেছে তাও নয়। এই প্রযুক্তি বহু মানুষের বহু হাজার বছরের সাধনার ফসল এবং এর মালিকানা কারো হাতে ছিলনা। গোটা মানবজাতিই এর ফল ভোগ করেছে। কারণ এই প্রযুক্তির একটি লক্ষ্য ছিল এই, যে, বারবার যেন চাকা পুনরাবিষ্কার করতে না হয়। অর্থাৎ একবার কেউ বাসমতির বীজ নিয়ে গিয়ে চাষবাস করলে পরেরবার যেন সে নিজের বীজ নিজেই বানিয়ে নিতে পারে, একশ মাইল ঠেঙিয়ে আবার কোনো 'বিশেষজ্ঞ'র কাছে চাইতে যেতে না হয়। আমের বাগান থাকলে এবং কলমের বিদ্যা অর্জন করলেই যেন নতুন গাছ থেকে পুরোনো গাছ বানিয়ে নেওয়া যায়। অর্থাৎ সম্পদ এবং জ্ঞানের অবাধ বিতরণ এবং বিচরণের একটি দর্শন এই প্রযুক্তির অংশ ছিল -- দর্শন বিহীন বিশুদ্ধ কোনো জ্ঞান হয়না।

    বিংশ শতকের 'বিজ্ঞান' এসে এই দীর্ঘদিনের কৃষি সংক্রান্ত জিন-প্রযুক্তিতে খুব হাতিঘোড়া পরিবর্তন কিছু ঘটিয়ে ফেলেছিল এমন না, অন্তত লিওন্তিন যা বলছেন। বদলেছে কিছু পদ্ধতি, আর অতি অবশ্যই দর্শনটুকু। খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে বিংশ শতকের নতুন বাজওয়ার্ড হল হাইব্রিড শস্য। হাইব্রিড শস্য বানানোর একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে, এই হাইব্রিড শব্দটিই সেই পদ্ধতির সূচক। সাধারণভাবে একটি খাদ্যশস্যের বীজ থেকে আবার গাছ তৈরি করলে গাছটি তার পিতা/মাতার বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়েই জন্মায় (বেঁটে, মোটা, সুস্বাদু ইত্যাদি)। হাইব্রিড পদ্ধতিতে এরকম দুটি পুনরুৎপাদন-সক্ষম ঘরানার শস্যকে আলাদা করে নিয়ে তাদের দীর্ঘদিন ধরে নিজের পরাগসঞ্চার করানো হয়। তারপর দুটির মধ্যে ক্রস-ব্রিড বা কাটাকুটি-প্রজনন করিয়ে নতুন বীজ তৈরি করা হয়। দুটি আলাদা ঘরানা নিজেরা আলাদা করে দারুন কিছু ফসল তৈরি করতে পারে তা নয়, কিন্তু এদের যোগফলটি হয় উচ্চফলনশীল বা উচ্চগুণসম্পন্ন। যেকোনো দুটি ঘরানার মধ্যে কাটাকুটি করলেই এরকম হবে তা নয়, কেবলমাত্র কিছু ঘরানার জুড়ির ক্ষেত্রেই এটা সম্ভব। এই জুড়িগুলিকে বেছে নেওয়াই হল গবেষণা। এই পদ্ধতির ফলাফলে চিরাচরিত বহু-হাজার বছরের বিপরীতে একটি জিনিস হয়। তা হল, একবার ফসল ফললে, তা থেকে আবার উচ্চফলনশীল বীজ তৈরি করা যায়না। বীজ অবশ্যই তৈরি করা যায়, কিন্তু সেই বীজ তার গুণাগুন এক বা একাধিক প্রজন্মে দ্রুতগতিতে হারাতে থাকে।

    অর্থাৎ, এই পদ্ধতি হয়তো উচ্চফলনশীল ফসলের জন্ম দেয়, কিন্তু চিরাচরিত প্রযুক্তির যে চাকা পুনরাবিষ্কার না করার ধারণা, সেটিকে এতে বিসর্জন দিতে হয়। অর্থাৎ, যে চাষী এই ফসল ফলাবে, সে চিরকালের জন্যই এই ফসলের বীজের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞর কাছে ঋণী হয়ে থাকবে। বারবার তাকে যেতে হবে বীজের 'আবিষ্কর্তা'র কাছে। নিজের বীজ নিজে উৎপাদন করার অধিকার থেকে সে বঞ্চিত হবে। অর্থাৎ প্রযুক্তির সঙ্গে এতদিন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল জ্ঞানের অবাধ বিতরণ এবং বিচরণের যে দর্শন, নতুন 'বিজ্ঞান' এসে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে চাষীর ক্ষেতের বাইরে বার করে দিল। কৃষির ক্ষেত্রে জন্ম নিল 'কপি প্রোটেকশন', যে বস্তুর সঙ্গে সফটওয়্যার বা বিনোদন-শিল্পের কারণে আমরা সকলেই জড়িত। যখন সফটওয়্যার ছিলনা, তখনও বিনোদন ছিল, এবং বিগত হাজার হাজার বছর ধরে গান-সাহিত্য-শিল্প রচিত হয়েছে। তাদের প্রতিলিপিকরণের বিরুদ্ধে কোনো আইন ছিলনা, কপিরাইট নেহাৎই হাল আমলের ধারণা। কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে কপি-প্রোটেকশন আরও পরে আসে। কিন্তু উভয়ের দর্শন একই। জ্ঞানের অবাধ বিচরণের সঙ্গে প্রযুক্তি আড়ি করে দেয় বিংশ শতকের 'বিজ্ঞান' এর যুগে। এর পক্ষে তৈরি হয় নানা যুক্তি। যেমন, যারা বিনিয়োগ করছে গবেষণায়, তাদের তো মুনাফা উঠে আসতে হবে, ইত্যাদি। এইটাকে, অর্থাৎ বাজারকেই একমাত্র এবং চিরস্থায়ী সত্য বলে তুলে ধরা হয়। যেন এই শিল্পবিপ্লব-চালিত যুগেই এই 'বিজ্ঞান' এর আবির্ভাব হল। তার আগে বিগত হাজার-হাজার বছর ধরে জিন প্রযুক্তি ছিলনা, ধান-গম-আপেল-কলা-আম সব প্রকৃতির দান। এ অনেকটা ঈশ্বর ছয়দিনে পৃথিবী তৈরি করেছেন উপকথার মতো। তবে এই উপকথাটি ধর্মীয় নয়, 'পুঁজিবাদী' এবং 'বৈজ্ঞানিক'।

    মনে হওয়া স্বাভাবিক, যে, এই নতুন পদ্ধতিটি জিন প্রযুক্তির জগতে একটি বিরাট লাফ। যে লাফের জন্য এইটুকু দাম তো দিতে হবেই। ১৯৯১ সালে লিওন্তিন লিখছেন, সত্যিই ভালো বা উচ্চফলনশীল ফসল উৎপাদনের জন্য হাইব্রিডই একমাত্র পদ্ধতি সে নিয়ে হয়তো তিরিশ বছর আগেও কেউ তর্ক করতে পারতেন। কিন্তু অন্তত তিরিশ বছর ধরে জানা আছে, সেটা সত্যি নয়, বাজারি মিথ মাত্র। অর্থাৎ ষাটের দশক থেকেই জানা আছে, যে, হাইব্রিড পদ্ধতি মোটেই উন্নততর কোনো পদ্ধতি নয়। চিরাচরিত 'নির্বাচন' পদ্ধতি একই মানের ফসল তৈরি করতে সক্ষম। সমস্যাটা প্রযুক্তির নয়, সমস্যাটা হল কেউ সেই গবেষণায় বিনিয়োগ করেনা। বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা করেনা। এমনকি আমেরিকা ও কানাডায় পাবলিকের পয়সায় যে সরকারি গবেষণা হয়, সেখানেও হাইব্রিডেরই জয়জয়কার। স্রেফ বাণিজ্যিক স্বার্থ একটি 'সত্য' উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে, যে, হাইব্রিড মানেই 'উন্নততর'। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্তোত্রের মতো পড়ানো হয় এই 'সত্য' এবং গবেষকরা, পরবর্তী প্রজন্মের 'বিশেষজ্ঞ'রা এই 'বিজ্ঞান বলেছে' প্রকল্পের অংশ হয়ে যান। ইতিহাসবিস্মৃত এই প্রজন্ম বিজ্ঞান নামক এই স্তোত্রে বিশ্বাস অর্পণ করে।

    বলাবাহুল্য, যে কোনো আলখাল্লাই চাপানো হোক না কেন, এই মিথ কেবল মিথই। লিওন্তিন বলছেন। তিনি বলেননি, কিন্তু তাঁর কথা ঠিক হলে এই সিদ্ধান্তে আসাই যায়, যে আদতে উন্নততর কোনো কিছু নয়, বাণিজ্যিক স্বার্থ নিজেই একটি দর্শন, তার খাতিরে চিরাচরিত 'জ্ঞানের অবাধ বিচরণ' এর দর্শনটিকে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে, এবং কেবল স্বার্থের দর্শনের কারণেই এই নতুন পদ্ধতির প্রচলন। সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে স্বার্থের দর্শনটি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল, এবং মুক্ত-সফটওয়্যার আন্দোলন চালুও হয়েছে। কিন্তু বীজ, ফসল, সব্জি, মুর্গি -- যেখানেই খাবার-দাবারের পুনরুৎপাদনের প্রশ্ন, সেখানে 'বিজ্ঞান' এবং 'বাজার' এই দুই 'সত্য' এর আড়ালে বাণিজ্যিক স্বার্থ তার নিজ্স্ব মিথ এখনও চালু রেখেছে। জৈব চাষের জনপ্রিয়তা কিছু বেড়েছে, বাড়ছে, কিন্তু কপি-প্রোটেকশনহীন মুক্ত বীজের সমবায় আন্দোলন এখনও পৃথিবী দেখেনি।

    পুঃ এই লেখক একটুও জেনেটিক্সের লোক নন। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ইতিহাসটুকু লেখা জরুরি মনে হওয়ায় এই নিবন্ধটি লেখা। একটু তাড়াহুড়ো করেই। বানান বা বাক্যগঠন ভালো করে দেখা হয়নি, ভুল থাকলে মার্জনীয়। জেনেটিক্সে পন্ডিত ও ইতিহাসাগ্রহী যে কেউ বিশদে এই নিয়ে কাজ করলে খুবই ভালো ব্যাপার হয়। এখানে জেনেটিক্সের তথ্য অবশ্য বানিয়ে লেখা নয়। হাইব্রিড শস্য সম্পর্কিত তথ্যগুলি কিংবদন্তী প্রতিম রিচার্ড লিওন্তিনের 'বায়োলজি অ্যাজ আইডিওলজি' গ্রন্থ থেকে নেওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষণগুলি বর্তমান লেখকের।
    প্রসঙ্গত লিওন্তিন যে সময়কালের কথা লিখেছেন, সে সময়ের রাজনীতিও খুবই আকর্ষণীয়। খুব কাছাকাছি সময়ে, বামপন্থী কৃষিবিদ হেনরি ওয়ালেস ছিলেন রুজভেল্টের উপরাষ্ট্রপতি। যে তিনজন বাম বা র‌্যাডিকাল ঘরানার মানুষের সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, ওয়ালেস তাঁদের মধ্যে একজন (বাকি দুজন হলেন ববি কেনেডি এবং বার্নি স্যান্ডার্স)। ওয়ালেসের কৃষি সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গী, বলাবাহুল্য বাণিজ্যিক বহুজাতিক দৃষ্টিভঙ্গীর চেয়ে একেবারে আলাদা ছিল। হয়তো সমাপতন নয়, যে, কৃষি সংক্রান্ত এইসব 'সত্য' যখন নির্মিত হচ্ছে, প্রায় তখনই ওয়ালেসের পতন হচ্ছে, তিনি মুছে যাচ্ছেন, মুছে দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক চালচিত্র থেকে। এসব বইয়ে পাওয়া যাবেনা। হয়তো পরে কখনও লিখব। কিন্তু এই ইতিহাস অন্যত্রও পাওয়া যায়। বীজের ইতিহাসের সঙ্গে যে কেউ দিনক্ষণ মিলিয়ে নিজেই পড়ে নিতে পারেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩০ এপ্রিল ২০১৯ | ১০৯১৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ishan's Friend | 237812.68.674512.247 (*) | ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ১০:১৯48102
  • "বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক ব্যাবহারের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা চলে যাবে প্রাইভেট করপোরেশনের হাতে। স্বত্ব পাওয়া কোম্পানি এসব শস্য বীজ সংরক্ষণ, উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করে দিতে পারবে। কৃষকদের নিজেদের জমিতে/খামারে বীজ সঞ্চয়, নবায়নকৃত ব্যবহার এবং বিক্রয় নিয়ন্ত্রিত হবে পেটেন্ট আইনের কারণে। অধিক উৎপাদনের আশায় কৃষকরা পেটেন্টেড শস্য বীজ উচ্চ দামে কোম্পানি থেকে কিনতে বাধ্য হবে ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। বেগুনের দাম বেড়ে যাবে অনেক। এই বীজ পুনরুৎপাদন করার যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ঐতিহ্যবাহী বেগুনে ছিল জিএম বেগুনে তা না থাকলে প্রতি চাষাবাদের আগেই কোম্পানি থেকে বীজ কিনতে হবে, ফলে লোকায়ত জ্ঞান হারিয়ে যাবে, বেগুনের যে বৈচিত্র্য তা হারিয়ে যাবে।

    "বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক ব্যাবহার বাংলাদেশে যে হরেক রকম জাতের বেগুন রয়েছে অর্থাৎ আমাদের বেগুনের জেনেটিক বৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিবে। বেগুন বীজের পেটেন্ট বহুজাতিকের কাছে থাকবে বলে এবং সরকারের পক্ষ থেকে অধিক ফলনের বিজ্ঞাপন দিয়ে বিটি বেগুন চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হলে শুধুমাত্র এই জিএম বীজের চাষাবাদে কৃষক নিয়োজিত থাকবে। কৃষকগণ নির্ধারিত কিছু জিই জাতের ফলনের দিকে নজর দিবে ফলে ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত জাতগুলোর জায়গা দখল করে নিবে জিএম বীজ। ফলে ধীরে ধীরে দেশি বীজের সংরক্ষণ ও পুনরুৎপাদন এর ধারাবাহিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হারিয়ে যাওয়ার আশংকা থাকবে এবং এসব হরেক রকম বেগুন বীজ হারিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত বীজের উপর কৃষকদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না বরং প্রতিষ্ঠিত হবে বহুজাতিক কোম্পানির মনোপলি নিয়ন্ত্রণ! ফলন বৃদ্ধির নামে শেষ পর্যন্ত খাদ্যের জন্য বহুজাতিক কোম্পানীর প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা তৈরী হবে।"

    (ফরহাদ মজহার)

    Full: https://www.facebook.com/notes/10201524504617246/
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন