এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বিশ্বাস অবিশ্বাস ধর্ম অধর্ম --- কিছু এলোমেলো ব্যক্তিগত কথন

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৩৭৯৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • আমার শৈশবের অনেকখানি আর কৈশোর ছিল ভারী একলামত| আমি যখন আট নয় বছরের মেয়ে, তখনই আমাকে প্রায় পূর্ণবয়স্ক মানুষ হিসেবে গণ্য করা হত| প্রায় বললাম, কারণ পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত আমার মতামত গ্রাহ্য করা হত না, কিন্তু কাজকর্মে, আচার আচরণে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত ব্যবহার আশা করা হত| আমি বুঝতে শুরু করেছিলাম ভাইয়ের আগে জন্মানোয় আমাদের প্রাচুর্য্যের সময়ের পুরোটা, আট বছর ধরে আমি ভোগ করেছি, কিন্তু ভাই মাত্র দুই বছর ----- তাই এখন আর আমার কিছুই প্রাপ্য নয়|

    নয় বছর বয়সেই আমার পাড়ার মাঠে খেলাধুলো একদম বন্ধ করে দেওয়া হয়, আমাকে বিকেলে বাড়ী থেকে বেরোতেই দেওয়া হত না, 'বড় হয়ে গেছি' এই অজুহাতে আমার বিকেলের খেলাধুলো বন্ধ হয়| আমার মামাবাড়ী আবার খুব ধার্মিক টাইপেরও ছিল| প্রতিদিন দুইবেলা নিত্যপুজো ছাড়াও প্রতি মাসে পুর্নিমার দিন সত্যনারায়ণ পুজো, দোল, জন্মাষ্টমী, বেশ কয়েকটা সংক্রান্তি, অরণ্যষষ্ঠী (যেটাকে জামাইষষ্ঠী বলে), ইতুপুজো হত| আর হত মাটির মূর্তি কিনে এনে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো আর সরস্বতীপুজো| এইসব পুজোর পরে আমাদের চরণামৃত নিতে ডাকত| এইখানে একটা মজা হত| আমি যদি আগেও পৌঁছে যেতাম তবু কিন্তু আমাকে কখনই আগে চরণামৃত বা প্রসাদ দিত না দিদা| ভাই আগে এলে ভাইকে দেবে, তারপর অপেক্ষা করবে কখন মামাতোদিদি আসবে, ওকে দিয়ে তারপর আমাকে| আর যদি মামাতোদিদি আগে পৌঁছয় তাহলে ওকে, তারপর ভাইকে তারপর সবশেষে আমাকে|

    তো এইসব দেখে দেখে আমি ক্রমশঃ ঠাকুরবিমূখ হয়ে উঠছিলাম| এদিকে আমার মা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে 'বৈধব্য' পালন করতেন, কতটা স্বেচ্ছায় আর কতটা কোনও এক অনির্দেশ্য পাপের ভয়ে তা সম্ভবতঃ উনি নিজেও তলিয়ে ভাবেন নি কোনওদিন| প্রতিদিন একবেলা আতপচালের ভাত আর মাসে দুটো একাদশীতে অন্নবর্জিত আহার মা'র পেটে সহ্য হত না, নানা গোলমাল লেগেই থাকত কিন্তু তাও নিয়মের পরিবর্তন হত না| বাড়ীতে বেড়াতে আসা সহানুভুতিশীল আত্মীয় প্রতিবেশীদের কেউ কেউ আবার মা'কে আমাদের জন্য মাছ মাংস রান্না না করবার সুপরামর্শ দিতেন --- 'বিধবা মানুষ তুমি কেন আবার আমিষ ঘাঁটবে?' মা যখন জানাতেন যে আমাদের এই বাড়বৃদ্ধির বয়সে মাছমাংস দরকার, তখন এঁরা বলতেন 'মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে, দুদিন বাদে শ্বশুরবাড়ী যাবে, ওকেই দাও ওগুলো রান্না করতে|' এইসময় দিদার একেবারে বাঁধা মন্তব্য ছিল 'হুঁঃ রান্না! সারাদিন বই মুহ বইস্যা থাকে, মেয়েরে শ্বশুরবাড়ীর সামনের দরজা দিয়া ঢুকাইয়া পাছদরজা দিয়া বাইর কইর্যাত দিবনে|' অতঃপর আগন্তুকরা এবং উপস্থিত আত্মীয়রা মিলে নয় দশ বছরের 'বুড়োধাড়ি' আমার বিবেক জাগ্রত করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন| এতেকরে ঠাকুর বাকুরের সাথে সাথেই আমি ক্রমশঃ রান্নাবান্নার প্রতিও বিতৃষ্ণ হয়ে উঠছিলাম| কিন্তু সে অন্য গল্প, এখন থাক|

    তো, বুড়োধাড়ি আমি রান্না করতে না এগিয়ে গেলে এই সব ঠাকুরেরা নাকি দেখে দেখে পাপ দেবে, মা আমাদের মত সেদ্ধ চালের ভাত খেলেও ঠাকুর পাপ দেবে| আবার ঠাকুর সম্পর্কে বা বড়দের কোনও কাজ সম্পর্কে বেশী প্রশ্ন করলেও ঠাকুর পাপ দেবে| সেই পাপের ফল কখনও যদি পরীক্ষায় খুব খারাপ নম্বর হয় তো কখনও তা বাবার নেই হয়ে যাওয়া,কখনও বা তা আরও অনুচ্চার্য্য অনির্দেশ্য কোনও ভয়| এদিকে ভয়ডর আমার প্রথম থেকেই বেশ কমসম আর সেটা বড়রা জানেও| আমার মায়ের নিয়ম ছিল সন্ধ্যের বাতি জ্বলার আগে ঘরে ঢুকতে হবে| আমার খুব ছোটবেলায়্ আমরা কটকে থাকতাম| সেখানে একবার বিকেলে খেলে ফিরতে দেরী হওয়ায় মা আমাকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়| সেই ঘরে মা'র ঠাকুরের ছোট ছোট ছবি, মুর্তি থাকত আর থাকত এটাসেটা সংসারের নানান জিনিষ, বাবার কিছু কাগজপত্র ইত্যাদি| তো, মা'র পরিকল্পনা ছিল আমি কান্নাকাটি করলে ভবিষ্যতে আর দেরী না করার কড়ারে খুলে দেবে| আমি নাকি কান্নাকাটি না করে নিশ্চিন্তে আসন থেকে তুলে ঠাকুর আর ঠাকুরের ছোট্ট ছোট্ট থালা গেলাস জানলা দিয়ে নীচে ফেলছিলাম| আমাদের বাড়ীর পেছনদিকটায় ছিল সুন্নি মুন্নিদের ঘর| একটা উঠোনের চারিদিকে গোলকরে পরপর কিছু ঘর, ৫-৬টা পরিবার থাকত| আমার এসব কিছুই মনে নেই, শুধু আবছা মনে পড়ে থালা গেলাসগুলো নীচের উঠোনে পড়ে একটা সুন্দর ঠননন ঠননন আওয়াজ হচ্ছিল| সুন্নিরা মেথর ছিল, তাই নাকি ভয়ে ঠাকুরের মুর্তি বা ছবিতে হাত না দিয়ে হাঁউমাউকরে চেঁচিয়ে মা'কে ডাকে| তা আমার বছর তিনেক বয়সের এই কালাপাহাড়সদৃশ কর্মটা এইসময় বারেবারে সবাই মা'কে মনে করিয়ে দিয়ে সাবধান করে দেয় যে আমার পাপের পরিমাণের একটা নিয়মিত চেক-ব্যালেন্স দরকার; নচেৎ নিজে তো পাপে ডুববোই সঙ্গে সঙ্গে মা আর ভাইকেও ডোবাবো|

    তো এইসব দেখেশুনে আমার ঠাকুর বাকুরে অভক্তি, বিতৃষ্ণা বাড়তে থাকে| অন্যত্র সেকথা লিখেওছি, এখানে আরেকবার টুকে দিই| ক্লাস নাইনে আমাদের সহায়ক পাঠ হিসেবে বাংলায় একটা গল্প আর একটা কবিতার বই ছিল, 'গল্পসংকলন' আর 'কবিতাসংকলন'| কবিতাসংকলনেই পড়ি 'চাঁদ সদাগর' কবিতাটা| এই কবিতাটা আমার একেবারে মাথায় গেঁথে যায়| আমার বাড়ীর খাতায় নীল আর কালো কালির কলম দিয়ে বড় বড় করে লিখে রাখি ----
    'শিখাইলে এই সত্য, তুচ্ছ নয় মনুষ্যত্ব, দেব নয় মানুষই অমর
    মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে করে দেবমহিমা নির্ভর'

    চন্নামিত্তি ও প্রসাদ বিতরণের ধরণ দেখে যে বিতৃষ্ণা শুরু হয়েছিল, মায়ের বৈধব্যপালন যার ভিৎ তৈরী করেছিল এই কবিতা তাকে শক্তপোক্ত চারটে দেওয়াল দেয়| তাই এরপরে অতি তুচ্ছ কারণে বড়মামা প্রচন্ড বকে এবং মা বলে 'ঠাকুরকে ডাক যাতে মানুষ হতে পারিস, অনেক বড় হতে পারিস' আমি প্রবল বিতৃষ্ণা ও বিরক্তিতে ভাবি ঠাকুর আবার কী! ঠাকুর ফাকুর সব বাজে কথা| এরপরে যখন দিদাও ছুতোনাতায় গল্প করা নিয়ে বকতে থাকে, পড়াশোনা না করা নিয়ে ব্কতে থাকে, তখন আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি, একদিন সুযোগ পেয়েও যাই| দিদাকে নিয়ে ব্ড়মামা, মাইমা আর মা মেজমামার বাড়ী তখন আমি দোতলার ঠাকুরঘরে এসে ঢুকি, ভেতর থেকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছোট খাট্ থেকে নামিয়ে আনি রামকৃষ্ণ, সারদামণি, অন্নদা ঠাকুর, কালীঠাকুর, গনেশঠাকুরের ছবি| দেয়াল থেকে পেড়ে আনি কৃষ্ণরাধার ছবি --- তারপর একটা একটা করে ছবির ওপরে উঠে দাঁড়াই, ছবির কাচ যাতে ভেঙে না যায় তাই ঐ ঠাকুরদের বিছানার তোষক নিয়ে ফটোর ওপরে রেখে তার ওপরে দাঁড়াই --- তোষক সরিয়ে ফর মুখগুলোতে পা ঘষি --- সব ফটো জায়গামত রেখে ধার থেকে টেনে আনি লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি --- এই দুটো ঠাকুরের মূর্তি এনে পুজো হয়, ভোগ দেওয়া হয় আর পুজোর পরের দিন আগের বছরের ঠাকুরের বিসর্জন দেওয়া হয়| এই মূর্তিগুলোর ওপরে দাঁড়ানো যায় না, তাই পা দিয়ে ওদের শাড়ি ডলে দিই, লক্ষ্মী সরস্বতীর মুখে ঘষে ঘষে পায়ের পাতা মুছি --- পায়ের আঙুল দিয়ে মূর্তির মাথার চুলগুলো রগড়ে দিই --- তারপর আবার উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসি --- আর মনে মনে বলে আসি যে ঠাকুরের দোহাই দিয়ে দিদারা এত অন্যায় করে, অন্যায় মিথ্যে বলে সেই ঠাকুরকে পা দিয়ে ডলে রগড়ে দিলাম --- ওদের দেখানো 'ঠাকুর দেখবেন ওপর থেকে' এই ভয় আমি মানি না| আমি বহন করি না, কোনওদিন করবও না ওদের উত্তরাধিকার|

    সরস্বতীপুজোর সময় অঞ্জলী দিতে হয় বাড়ীতে একবার আবার স্কুলে গিয়েও| বাড়ীতে আমি চেষ্টা করি না দেওয়ার, কিন্তু হয় না| মা জোর করে ধমক দিয়ে হাত বা চুল ধরে টেনে অঞ্জলী দেওয়াতে নিয়ে আসে, কিছুতেই মুখ দিয়ে বেরোয় না 'না আমি অঞ্জলী দেব না', বরং মুখ বুজে ফুল বেলপাতা হাতে নিই --- একটাও মন্ত্র উচ্চারণ করি না বরং মনে মনে আওড়াই 'মানুষই দেবতা গড়ে তাহারই কৃপার পরে করে দেব মহিমা নির্ভর' ---- আবার ফুল বেলপাতা ছুঁড়েও দিই মূর্তির পায়ের দিকে| মনে মনে যা তীব্রভাবে অস্বীকার করে চলি মুখে কিছুতেই তার প্রকাশ হয় না বরং দিব্বি সকলের মন পছন্দ কাজগুলো আপাতভাবে চালু থাকে --- মনে মনে বলি এই ঠাকুরটা আসলে কেউ নয় কিচ্ছু নয় আমরা ফুল বেলপাতা দিচ্ছি তাই --- কিন্তু তাহলে বাকীদের বলে দিচ্ছি না কেন? মা বকবে? মারবে? বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে বলবে 'জিজির বাড়ী চলে যা' --- হ্যাঁ বলতেও পারে ---- তাহলে আপাতত এসব না বলাই ভাল --- যখন স্বাধীন হয়ে যাব, চাকরি করব তখন বলব -- তখন কেউ কিছু বলতে পারবে না -- কিছু বললেও তখন আর আমার কিচ্ছু যাবে আসবে না --- অতএব মনের মধ্যে তৈরী হয়ে ওঠে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে আপাতত মিথ্যে ভান করে নেওয়া একটা চতুর মন --- নিজের এই মনটাকে আমি নিজেও ঠিক পুরোটা বুঝে উঠতে পারি কি না কে জানে! এই মন আমাকে দিয়ে চন্নামিত্তি নিয়ে মাথায় ঠেকানোর মত একটা ভঙ্গী করায় --- আমি দুধ-ঘী-মধুর সুস্বাদু তরল জিভ দিয়ে সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে হাতটা পায়ের তলায় মুছে ফেলি| নিজের মনে অবিরাম দ্বন্দ্ব চলতে থাকে, সকলের চোখের আড়ালে এ আমার কেমন প্রতিবাদ? এ তো ভন্ডামি --- মন বলে হ্যাঁ ভন্ডামিই তো, ইস্কুলে ইরাদি যখন বলেছিল 'তোমায় তো মা দেখিয়ে দেন ট্র্যানশ্লেসান' ত্খনও তো বলে ওঠো নি 'না না মা তো কিচ্ছু পড়া দেখায় না আমাকে' সেইটে ভন্ডামি ছিল না? আমি বলি আহা তখন ঐটে বললে মা তো ভীষণ রাগ করত, মন বলে আর এইটে বললে বুঝি ক্যাডবারি কিনে দেবে? আরও অনেক বেশী রাগ করবে| আমি বলি কিন্তু সত্যি যদি সরস্বতী জ্যান্ত হয়ে কম নম্বর পাইয়ে দেয়? মন বলে তাহলে তো বুঝেই যাবে আমরা মানুষরা বানাই না, আর ঠাকুররা রাগ করলে নম্বর কম হয়| আমি ব্যাজার হয়ে বলি তখন বুঝে কি ঘন্টা হবে আমার? মন খুশী হয়ে বলে বলে ধ্যুৎ চল তো আজ তো আর পড়াশোনা নেই, কেউ খোঁজ করবে না, এখন চুপিচুপি ওপরে গিয়ে প্রসাদ আর নবকল্লোলের ছবিগুলো দেখি বরং|

    তো, এইসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে স্কুল পাশ করে কলেজে ঢুকি আর আরো বেশী করে লোকজনের 'ঠাকুর ঠাকুর' দেখে দ্বিধা কেটে যেতে থাকে, নিজের প্রত্যয়ে স্থির হয়ে উঠতে থাকি| বাড়ীর ধমক, মায়ের হাতের থাপ্পড়, কিল কিছুই আর আমাকে কোনও ঠাকুরের সামনে মাথা নত করাতে, প্রণাম করাতে পারে নি| এইসব বকাবকির মধ্যে এইটুকু লাভ হয়েছে মা মাসে দুবার একাদশী করাটা বন্ধ করেছে আর আতপ চাল খাওয়াটাও| সাদা ব্লাউজ ছেড়ে অল্প কিছুদিন রঙীন ব্লাউজ, শাড়ীর পাড়ের সাথে রং মিলিয়ে, তাও পরতে শুরু করে| কিন্তু ঐটুকুই, ওর চেয়ে বেশী আর কিছু পরিবর্তন করাতে পারি নি, মাছ মাংস খাওয়াতে পারি নি| দীর্ঘ ১৫ - ১৬ বছরের অনভ্যাসে মা'র ততদিনে মাছে গন্ধ লাগে| দিদা, মা, অন্য আত্মীয় পরিচিতরা বলেছে সেরকম সেরকম বিপদে পড়লে ঠিক ঠাকুরকে ডাকবি| নাঃ ডাকি নি| বি এসসি অনার্সে উপর্যুপরি ফেল করে শুরু থেকে আবার শুরু করতে হয়েছে, চাকরী, একটা ভদ্রস্থ আয় হয় এমন চাকরীর জন্য দীর্ঘদিন লড়তে হয়েছে, মন্দার সময় চাকরী থেকে ছাঁটাই হয়ে গেছি ---- কিন্তু তবু কোনওদিন ঠাকুরবাকুরে বিশ্বাস আসে নি আর| এইসব লড়াইয়ের গল্প বলতে গেলে মস্ত উপন্যাস হয়ে যাবে ---- গাড়ী কিনে শোরুম থেকে আনতে গিয়ে দেখেছিলাম শোরুমের লোকজন একটা মোটা গাঁদার মালা, আস্ত নারকেল আর মিষ্টির বাক্স নিয়ে রেডী 'পুজা চড়হানেকে লিয়ে'| তা মালা আর নারকেল ফেরত দিয়ে মিষ্টিটা ওঁদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ায় অল্পবয়সী ছেলেমেয়েগুলো কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত কিঞ্চিৎ খুশী, কিন্তু ভারী অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন একটু বয়স্ক হোমরা চোমরাগণ| একই ব্যপার বাড়ী কিনে পুজো, গৃহপ্রবেশ, হাউস ওয়ার্মিং পার্টি কিচ্ছুটি না করায়| কিন্তু নাঃ আমার মা দিদাদের উত্তরাধিকার আমি আর বহন করি না|

    কথা হল এই অস্বীকার না করার জন্য আমার ওপরে যতটা সম্ভব মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু একেবারে প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয় নি| এতদূর যে যায় নি, সে কি নিতান্তই আমি অর্থনৈতিকভাবে এবং সর্বোতভাবে স্বাধীন বলে? না কি লোকজন আসলে অতটা গুরুত্ব দেয় নি, নিজেরা যে যেমন আছে বিশ্বাস আর গোঁড়ামি নিয়ে তেমনি থেকেই গেছে বলে? আমার অবিশ্বাস কাউকে বদলাতে বাধ্য করে নি, অন্য কারো জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলার তেমন সম্ভাবনা নেই বলেই কি আমার অবিশ্বাস আমি চর্চা করে যেতে পারি? পদাবলী কীর্তনকে পাঁঠাবলী কীর্তন বলে অভিহিত করেছি, দুই একবার থানায়ও ফোন করেছি আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে, কিন্তু কখনও জনমত সংগঠনের চেষ্টা করি নি এই শব্দ দানবের বিরুদ্ধে| বোঝানোর চেষ্টা করি নি ছোট ছোট বাচ্চাদের কানের কি ভীষণ ক্ষতি হয় এই বছরে তিরিশবার বিভিন্ন পুজোর সমাইক অত্যাচারে| যারা চেষ্টা করেছেন অন্যকে বোঝানোর, লিখেছেন অন্ধত্বের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রাণ দিতে হচ্ছে একে একে| মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা নরেন্দ্র দাভোলকর খুন হয়েছেন ২০১৩র আগস্টে, ২০১৫র ফেব্রুয়ারীতে খুন হয়েছেন অভিজিৎ রায়, খুন হয়েছেন তার পরে পরে আরো অনেকে| বিভিন্ন খুনের জাস্টিফিকেশান হিসেবে এসেছে তথাকথিত নাস্তিকতার অভিযোগ| আর অন্যদিকে উদ্দাম হয়ে উঠেছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের দাপাদাপি| একদিকে গোটা ভারত জুড়ে দাপাচ্ছে ব্রাহ্মণ্য ও উচ্চবর্ণের হিন্দুত্ব আর একদিকে প্রায় অর্ধেক পৃথিবী জুড়ে দাপাচ্ছে শারিয়া আইনের প্রবর্তনে উন্মুখ সালাফিজম|

    এই অদ্ভুত কালো দুঃসময়ে জোর গলায় বলবার সময় এসেছে আমি মানিনা আপনাদের এই ধর্ম ও তার উগ্র প্রচার| আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে প্রকাশ্যে উগ্র ধর্মাচরণ প্রবর্তনে বাধা দেব| আমি আপনার ঘরে ঢুকে দেখতে যাব না আপনার ফ্রীজে বা ভাঁড়ারঘরের মিটসেফে গরু কিম্বা শুয়োরের মাংস রাখা আছে কিনা, ঘরের কোণায় ঠাকুরের পট আছে নাকি নামাজের ব্যবস্থা --- কিন্তু প্রকাশ্যে চৌমাথার ওপরে আপনি এই নিয়ম প্রবর্তন করতে চাইলে আমি বাধা দেব| আমি বিচার চাই সবকটি হত্যাকান্ডের --- বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাকে মনে করিয়ে দেব যে বিচার হয় নি, আমি বিচার চাই| না ফাঁসি চাই না, বিচার চাই|
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৩৭৯৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • cb | 192.70.62.211 (*) | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:৪০57327
  • ranjan roy | 24.96.57.168 (*) | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:৫৮57328
  • "এই অদ্ভুত কালো দুঃসময়ে জোর গলায় বলবার সময় এসেছে আমি মানিনা আপনাদের এই ধর্ম ও তার উগ্র প্রচার় আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে প্রকাশ্যে উগ্র ধর্মাচরণ প্রবর্তনে বাধা দেব় আমি আপনার ঘরে ঢুকে দেখতে যাব না আপনার ফ্রীজে বা ভাঁড়ারঘরের মিটসেফে গরু কিম্বা শুয়োরের মাংস রাখা আছে কিনা, ঘরের কোণায় ঠাকুরের পট আছে নাকি নামাজের ব্যবস্থা --- কিন্তু প্রকাশ্যে চৌমাথার ওপরে আপনি এই নিয়ম প্রবর্তন করতে চাইলে আমি বাধা দেব় আমি বিচার চাই সবকটি হত্যাকান্ডের --- বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাকে মনে করিয়ে দেব যে বিচার হয় নি, আমি বিচার চাই় না ফাঁসি চাই না, বিচার চাই়"

    --- একশ'বার। জোরে জোরে ওপরের লাইনগুলো আওড়াচ্ছি।
  • Abhyu | 85.137.4.219 (*) | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:১০57329
  • অসাধারণ। চরিত্রের এই জোরটা বড় দুর্লভ।
  • sm | 53.251.91.253 (*) | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:৩৩57330
  • আমার তো মনে হয়; এত ঘৃনা কিভাবে জন্মালো? যে কোনো বিবেচক মানুষের সবচেয়ে বড় গুন হলো মনের মধ্যে এত ঘৃনা না পুষে রাখা। যে ঈশ্বর বিশ্বাসী বা যে নাস্তিক দুজনারই, নিজ স্বপক্ষে প্রচুর যুক্তি আছে। কেউ বিশ্বাস করে মনে শান্তি পান; কেউ অবিশ্বাস করেই মনে জোর পান।কেউ চালাক আর কেউ বোকা, এমন তো নয় ব্যাপার টা।কিন্তু ঘৃনা, কেবল তিক্ততাই বাড়িয়ে চলে।
    কারো দেবালয় পছন্দ না হলে সযত্নে এড়িয়ে চলুন। কিন্তু দেবালয়ে, শৌচ কর্ম করা কোনো কাজের কথা নয়।
  • amit | 202.84.89.152 (*) | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১০:০৫57331
  • খুব ভালো লাগলো পড়ে। নিজের ছোটবেলায়, আমাদের পরিবারেই একজন বিধবার সাথে এক-ই ধরনের অত্যাচার হতে দেখেছি। এ ছাড়াও দিদি দের সাথে বৈষম্য গুলো বড় বেশি চোখে লাগত। এসব দেখে দেখেই বড় হয়ে ওঠা একটা সাধারণ পরিবার এ যা হয় আর কি।
    কিন্তু মনের মধে বিতৃষ্ণা থেকে গেছিল। তাই যখন নিজের বিয়ে হলো আর আমাদের মেয়ে হলো, হয়ত সেই বিতৃষ্ণা থেকেই আমরা বিদেশে পাড়ি দিলাম, যাতে মেয়েরা মানুষ হিসেবে বড় হতে পারে, মেয়ে হিসেবে নয়। যখন 1-২ বছর এ একবার দেশে যাই, আশ্চর্য লাগে দেখে যে সেই মানসিকতা কিছু বদলায়নি, হয়ত পালিশ পরেছে অনেক, কিন্তু সময় সময় দাঁত নখ ঠিক বেরিয়ে পড়ে। এখনো বাড়িতে কোনো বিয়েতে, কোনো বিধবা বা divorced কোনো মেয়েকে খোটা দেওয়া হয় আড়ালে আবডালে, অনেক সময় সামনা সামনি তথাকথিত ভদ্রতার মুখোশ পড়ে। ফেরার কথা ভাবিও না আর।
  • 0 | 120.227.72.219 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৩০57339
  • নিরীশ্বরতা কোনো বিশ্বাস নয়। এটা শুধু একটা সত্য। প্রাকৃতিক, বৈজ্ঞানিক সত্য। আচার পালন করা বা না করায় কোনো সত্যই প্রভাবিত হয়না।

    হয়তো সঠিক তুলনা নয়, তবু এক্ষুনি আর কিছু মনে আসছেনা তাই এটাই লিখি :-)
    যেমন, বানানো গল্প, রূপকথা, এ'সব ভালো লাগা বা না লাগায় সেটা যে কল্পিত বা মিথ্যে সেইটে কোনোভাবেই বদলায় না।
  • Ekak | 113.6.157.185 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৩57340
  • "কল্পিত বা মিথ্যে" - এই ফ্রেজ টার মানে কী ? কল্পিত জিনিস মিথ্যে হতে যাবে ক্যানো ?
    যাঁরা মাটির "ঠাকুর' এ পা দিলে হই হই করে ওঠেন তাঁদের কল্পনাশক্তি ছোট -বাঁকা ও দুর্বল। সত্যি-মিথ্যের ব্যাপার না।
    প্রসঙ্গত, আমি কখনো দুর্গাপুজোয় কলকাতা যাইনা। আমাদের ফ্ল্যাট এর ঠিক বাইরের দেয়াল ঘেঁষে প্যান্ডেল আর পিলে চমকানো ঢাকের আওআজ। একবার ঘুম ভেঙ্গে লাফ দিয়ে উঠে মার শালা কে মুডে প্যান্ডেলে গিয়ে দেখি এক কাকু চক্ষু মুডে চেয়ারে আসীন। ঢাকি তাঁর নির্দেশে সকাল ছটায় পেটাতে শুরু করেছে। বোল্লুম এটা কী হচ্ছ্হা ? বলে , মায়ের পুজো , ঢাক বাজবেনা ? এট্টু শোলক ঝেড়ে বোল্লুম যিনি পিপড়ের পায়ের শব্দ শুনতে পান তাঁর পুজোয় এমন গাঁড়ফাটানো আওয়াজ না কল্লেই নয় ? তারপর ঝ্য়াম লেগে গ্যালো :/ বাড়ি তে বলেচে কী ইতর ভাষা আপনের ছেলের ::( আমার সত্যি ওই অসময়ে বিকট আওয়াজ শুনলে অসুস্থ্য লাগে। হাউসিং এ অনেক হার্ট -প্রেসার এর রোগী ও আছেন। কারো কথাই শুনবেনা। ধর্ম আমার কাছে ব্যক্তিগত যৌনতার মত। তুমি যা খুশি অরিয়েন্টেশন ও পসিষণ প্রাকটিস করো , দেয়ালের এপারে শব্দ এলে পুলিশে কল দেবোই। এই দেশ আগে এইটুকু সভ্য হবার দরকার। ধর্ম থাকা -না থাকা তো অনেক পরের।
  • cm | 127.247.99.62 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০০57341
  • ঈশ্বর একটি ধারণা, ২ সংখ্যাটির মত ওর সত্যি মিথ্যে হয়না। এসব ভারি ব্যাপারে ছোটদের মাথা না ঘামানই ভাল।
  • Ekak | 113.6.157.185 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০১57342
  • ছোটরা মাথা ঘামায় না । তাদের মাথায় গুঁতিয়ে ঢোকানো হয়। পুরো ব্যাপারটা প্রচন্ড অশ্লীল।
  • 0 | 120.227.72.219 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৮57343
  • কল্পিত মানে বাস্তবে যেটা নেই, খালি মানুষের কল্পনায় আছে। তাই মিথ্যে :-) সত্যিটা না জানলে মানুষ মিথ্যেকেই সত্যি ব'লে "বিশ্বাস" ক'রে ও হই হই করে।
    আর পাব্লিকের অসুবিধে ক'রে ধর্মাচার পুরোপুরি ব্যান করা উচিত।
  • riddhi | 117.217.133.50 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৪৪57344
  • মারাত্মক ভাল লাগল।
  • aranya | 83.197.98.233 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৮57332
  • ভাল লাগল
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৩57333
  • ঐ বয়সের মেয়েদের যদি পড়ানো যেত, যাদের অবস্থা এখনো একই ..
  • dd | 116.51.225.29 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪০57334
  • আমার অনেক বন্ধুর মধ্যেও দেখি - এই এক ধরনের সফট নাস্তিকতা। মানে কোনো রাগ মাগ নেই। যাস্ট খুব একটা ধর্ম আচরন মানে না। পৈতে দেয় না ছেলের। কিন্তু মা বাবার শ্রাদ্ধটা করে । প্রতি বছরের বাৎসরিক নয়, তবে এক বারই। সন্তান অজাতে বিয়ে করলেও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু পুরুত ডেকেই বিয়ে হয়। কোনো রকম তাবিজ/আংটি পরে না। হুলিয়ে গোমাংসো খায়। প্রায় কোনো ধর্মীয় কুসংস্কার মানা তো দুরের কথা - জানেই না।দুর্গা পূজায় অঞ্জলি দেয় - না দিলেও সেরকম আফশোষ নেই। যাস্ট তীর্থ করতে কোনো মন্দিরে যায় না।কিন্তু বেরাতে গিয়ে কোনো মন্দিরে গেলে প্রনাম করে, প্রসাদও খায়। ডেফিনিটলি কোনো গুরুদেব নেই।

    এই রকম। তাদের পরের প্রজন্মে ধর্মাচরনে অনীহা আরো বেশী। গুড ট্রেন্ড।
  • Tim | 108.228.61.183 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৩57335
  • প্রত্যেকের লড়াইই খুব ব্যক্তিগত, এর ভালো খারাপ হয়না। বাইরে থেকে আমরা আর কী বলতে পারি। মনের জোর, সাহস এগুলোকে প্রশংসা করতে পারি, ভালোয় ভালোয় সেসব দিন পেরিয়ে আসা গেছে ভেবে স্বস্তি পেতে পারি। ঐ একই পরিস্থিতিতে পড়লে কে কিভাবে রিয়াক্ট করতাম বলা যায়না। কতজনই তো তলিয়ে যায়।

    শেষের দুটো প্যারা খুব ভালো লাগলো। পাইকে ক দিলাম, এখন যারা ঐ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তারা এটা পড়লে খুশি হতো।
  • sm | 53.251.91.253 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:০১57336
  • একটা কথা খুব লক্ষনীয় ; লোকে উদর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে বা চাপাতে ভালবাসে ।ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান , লৌকিক আচার আর ঈশ্বর বিশ্বাস তো , ঠিক এক জিনিস নয়।ঈশ্বর বিশ্বাসী লোকজন কে এইসব পালন করতে হবে বা মানতে হবে; এমন দিব্যি তো কেউ দেয় নি।কিন্তুক, রাগটা গিয়ে পড়ছে, সেই ঠাকুর নামক মাটির পুতুলটির ওপর।
    অনেক বাচ্চার/কিশোরের পৈতের সমস্ত কিছু ভালো লাগে;খালি কান ফুটানো ছাড়া।তিনদিন অন্ধকার ঘরে থাকা , নিরামিষ খাওয়া ;সব ।কি করা যাবে; পসন্দ আপনা আপনা।পরিবর্তে ভালো উপহার পাওয়ার লোভ থাকে।
    বিয়ের লৌকিক আচার গুলোও তো অনেকের ভালো লাগে;খালি মন্ত্রোচ্চারণ ছাড়া।
    অনেকবয়স্কা মহিলা( বিধবা নন) পরিবারের মঙ্গল কামনায়, উপবাস /ব্রত করেন। কষ্ট করেন, তা কি করা যাবে?
    নিয়ম পালন করতে না চাইলে না করুন।নিজের মনে যেটা ভালো লাগে; সেটাই করুন।সমাজ ফমাজ কে থোড়াই কেয়ার করুন। আর পুতুল গুলোকে বেশি না পাত্তা দিলেও চলবে।ওগুলো কে পুতুল হিসাবেই দেখুন।
  • avi | 113.24.86.58 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৫57337
  • খুব ভালো লাগলো। ওই চাঁদ সদাগর কবিতাটা আমার ক্ষেত্রেও খুব প্রভাব ফেলেছিল। অত্যন্ত প্রিয়, বারবার আবৃত্তি করার মত পংক্তি ছিল, "সনকার আর্তনাদে, চম্পকনগর কাঁদে, ডুবে যায় চোদ্দ মধুকর,/ কৌপিন করিয়া সার, তোমার পুরুষকার, পথে পথে ফেরে দিগম্বর;/ অশ্রুবিন্দু নাই চোখে, দুর্বিষহ মহাশোকে, নেত্র তব উগারে অনল,/ শুধু তব জগদীশ, কণ্ঠে ধরেছেন বিষ, সর্ব অঙ্গে তোমার গরল।"
    আরো ছোটবেলায়, বস্তুত ইলিয়াড ওডিসি বাংলায় পড়ে প্রথম খটকা লেগেছিল মনে পড়ে। মনে হয়েছিল, এই দেবতারা তো হিংসুটে, কলহপরায়ণ, স্বার্থপর, এরাও হেরে যায়, পালিয়ে যায়, আহত হয় - তাহলে কিসে আলাদা? ওডিসিয়াসের ওপর পসেডনের রাগ আর তা সত্ত্বেও ওডিসিয়াসের লড়াই মাথায় গেঁথে গিয়েছিল, পরে চাঁদ সদাগরের গল্পে প্রায় এক অভিঘাত হয়।
    আপনার সামাজিক লড়াইকে কর্নিশ। শেষের পরিচ্ছেদে চুপ করে থাকতে হল।
  • | 24.97.150.162 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:২১57345
  • যাঁরা পড়েছেন সকলকে ধন্যবাদ।

    পাই, হ্যাঁ আমিও চাই ঐ বয়সী মেয়েদের পড়াতে, জানাতে ?যাতে তারাও সাহস পায়। কিন্তু উপায় কি জানি না।

    মনোজ,
    সুবর্ণলতার অবস্থা ভয়ানক ছিল আর ঠিক এই বিষটার সাথে সপর্কিত নয়। সে অবশ্য আপনিও বলেছেন। তবে সুবর্ণলতা পড়ে আমার উপলব্ধি হল কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হতে হয় যাতে প্রতিবাদের ইম্প্যাক্টটা আমি যেমন চাইছি তেমনই হয়।
    যাই হোক সে আলোচনা পরে কখনও।

    অভি, ইলিয়াড, ওডিসি তো বটেই আমি রামায়ণ পড়েও ভারী চস্টে গেছিলাম। মহাভারতের ঘটোৎকচ বা কর্ণের সাথে ব্যবহার দেখেও আমার ভারী রাগ হয়েছিল। তবে তখনও রামকে ঠাকুর বলে জানতাম না আর মহাভারতে তো কৃষ্ণই একমাত্র ঠাকুর। সেইদিক থেকে ইলিয়াড ওডিসি একেবারে ঠাকুরদেরই কান্ড কারখানা :-)

    এককের এই কথাটা ভারী সত্যি। ছোটদের মাথায় কানে জবরদস্তি গুঁর্তিয়ে ঢোকানোর চেষ্টা হয় এবং প্রশ্ন করার রাস্তা বন্ধ করারও চেষ্টা হয় সর্বতোভাবে।
  • | 24.97.150.162 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:২২57346
  • *এই বিষয়টার সাথে সম্পর্কিত নয়
  • pi | 233.231.35.186 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:৫৫57347
  • কিশোর কিশোরী বা লেট শৈশবকে টার্গেট করা পত্রপত্রিকাগুলোয় গেলে পৌঁছতো। এভাবে, কিম্বা গল্পের ফর্মে। ভেবে দেখো।
  • | 24.97.150.162 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:৫৮57348
  • হুঁ দেখি ....
  • rabaahuta | 215.174.22.20 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:২৬57349
  • অসম্ভব ভালো, স্ট্রং, যথারীতি - আর হ্যাঁ, অনেকে পড়ুক, ছোটরা বেশী করে।
  • sm | 53.251.91.253 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:১০57350
  • ছোটরা মাথা ঘামায় না । তাদের মাথায় গুঁতিয়ে ঢোকানো হয়। পুরো ব্যাপারটা প্রচন্ড অশ্লীল।
    ----
    বাচ্চাদের মাথায় তো অনেক কিছুই ঢোকানো হয়। মার্কসবাদী বাবা; সর্বদা ছেলের মাথায় মন্ত্র ঝাড়েন; মার্ক্সবাদ সর্ব শক্তিমান। ইহা একটি বিজ্ঞান। এটাও অশ্লীল?
    আবার কোনো কোনো বাবা তার বাচ্চা কে শেখায় , সোজা পথে হাঁটবে; বাঁকা পথ নেবেনা।পরের উপকার করবে। ইহাও অশ্লীল?
    নাকি ভালো করে শেখাবে; ধান্দা বাজ হও। নিজের আখের গোছাও। এর জন্য আইন বাঁচিয়ে পরের ক্ষতি হলেও; কুছ পরওয়া নেহি।
  • hu | 140.160.143.215 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:৪৬57351
  • আমার মনে হয় যা আপনি বাচ্চাকে শেখান অথচ নিজের জীবনে পালন করেন না সেটাই অশ্লীল। আমি আজ পর্যন্ত কোন ভগবানবিশ্বাসী বাবা-মাকে বলতে শুনিনি - ঠাকুরের ফুল পকেটে রাখলেই পরীক্ষায় পাশ করে যাবে, পড়তে হবে না। বিশ্বাসই যদি করেন তো পুরোপুরি করার ধক নেই কেন?
  • 0 | 11.39.137.24 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:২৭57352
  • মানুষের বিবর্তিত চেতনায় ঈশ্বরের ভ্রান্তকল্পনাও বহুকাল ধ'রে এভাবেই রূপ নিয়েছে।

    সফোক্লিস - "heaven ne’er helps the men who will not act"
    ইউরিপিডিস - "Try first thyself, and after call in God"
  • hu | 140.160.195.14 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:০১57353
  • 0 মনে হয় স্পিরিচুয়ালিটির কথা বলছেন। তার সাথে পকেটে ঠাকুরের ফুল গুঁজে দেওয়ার তফাৎ আছে।
  • Tim | 140.126.225.237 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:৩৫57354
  • না, পরীক্ষা পাশ করার জন্য পড়তে হয়, কিন্তু সুস্থভাবে পরীক্ষা দিতে যাতে পারে এবং খাতা যাতে ঠোঙা নাহয় বা পরীক্ষকের মুড ভালো থাকে তার জন্য পকেটে ফুল। অর্থাৎ প্রশ্নটা ইকুয়ালিটি, ফেয়ার সিস্টেম, আর জাস্টিসের। জাস্টিস কে করবে, না গভর্নিং বডি, তা তাদের বডি তো দেখাই যাচ্ছে, সলমন খানসম। অতএব নেক্সট ইন লাইন ভবগান (দরিয়াকে আদর ও সাইটেশন)। তা সে বস্তু না থাকলে কষ্ট করে আবার আপনি আচরি ইত্যাদি, কিন্তু সে ভারি কঠিন পথ, সোজা মেডিজি দরকার তাই আর সেসব হয়ে ওঠেনা। এইসব আর কি (এইটা আবার রাত্তিরদি/ইন্দোদাদের শ্রুতিনাটক শুনে থেকে ধরে গেছে, সুতরাং সাইটেশন)।
  • 0 | 11.39.113.216 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৯:৪০57355
  • যখন সত্য জানা নেই, তখন মানুষ মনগড়া মিথ্যেকে "বিশ্বাস" ক'রে যুক্তিচিন্তায় বা কাজের মধ্যে সেটাকে জায়গা দেবার চেষ্টা করে। আধ্যাত্মিকতার মূলেই তো মানুষের ভ্রান্তকল্পনা! যারা নিরীশ্বরতাকে একটা সাধারণ প্রাকৃতিক, বৈজ্ঞানিক সত্য ব'লে জানেন না, একমাত্র তাদের চেতনাতেই আপাতভাবে নির্দোষ আধ্যাত্মিকতা অথবা/এবং দোষের আচারপালনও জায়গা পায়, সে তিনি যেকোন যতবড় যুক্তিবাদী মনীষীই হো'ন না কেন, কিংবা পরিচিতিহীন সাধারণ মানুষ, তা'তে কিছু যায় আসেনা।

    এবার ঘটনাচক্রে বিভিন্ন স্বভাবের মানুষের বিভিন্ন চিন্তায় আর কাজে এই না-জানার এফেক্ট্‌ অবশ্যই আলাদা।
    যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষেরা এটা জানলে নিশ্চ'ই আধ্যাত্মিক চিন্তা থেকে সরে আসতেন। যারা শিল্পী-সাহিত্যিক তারাও আর আধ্যাত্মিকতা-নির্ভর শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতেন না। তেমনি অন্যান্যরাও আর না-জেনে অন্ধবিশ্বাসে কুসংসকারের কাজ/আচার পালন করতেন না।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১০:১৪57356
  • এইটা কিন্তু আরো অদ্ভুত ব্যাপার!!!! হাড় হারামজাদা শয়তান মানুষে মারধোর গন্ডগোল গালাগালি যুদ্ধ ইত্যাদি করে যাবে, আটকে রাখবে, ঠাটিয়ে চড় দিয়ে গাল ফাটাবে, কাপড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে ইত্যাদি ইত্যাদি আরো সব করবে, এদিকে লোকে বন্দুক তুলবে পাথরের মাটির কাপড়ের ঠাকুরদের দিকে।
    শয়তানেরা সেই ফাঁকে দুর্বলদের আরো পিটিয়ে নিজেদের আখের গুছোবে।
  • Tim | 140.126.225.237 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১০:২০57357
  • মানুষ যেমনই হোক, সে তো নিজের লোক। হয়ত বা পরিবারের লোক। এক, নিজের লোককে অবজেক্টিভলি দেখা খুউব কঠিন, স্নেহ অতি বিষম বস্তু। দুই, দীর্ঘদিনের সোশাল নর্ম/কন্ডিশনিং এর কাছে মানুষ তো অসহায়, কাজেই মানুষকে ভিলেন বানানোও সহজ না। মানে ভেবেচিন্তে করতে গেলে আটকাবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন